• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • হত্যা মামলার সাক্ষী টিয়াপাখি!

    যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে একটি হত্যা মামলায় টিয়াপাখিতে সাক্ষী করা হতে পারে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোষা এক আফ্রিকান বাদামি টিয়াপাখিকে সাক্ষী করার কথা ভাবছেন সরকারি আইনজীবী।
    সোমবার বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে নিউওয়েগোর বাসিন্দা মার্টিন ডারহ্যাম হত্যার জন্য তার স্ত্রী গ্লেনা ডারহ্যামকে (৪৮) অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সময় বাড নামে একটি টিয়াপাখি পুষতেন ঐ দম্পতি।
    মার্টিনের স্বজনদের দাবি, বাডের সাক্ষ্য নিলে হত্যাকাণ্ড ঘটার সময় তাদের মধ্যকার কথাবার্তা সম্পর্কে জানা যাবে। টিয়াপাখিটি সেসময়কার উচ্চারিত বুলিগুলো অনবরত আওরাচ্ছে।
    টিয়াপাখিকে সাক্ষী করার বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে জানান নিউওয়েগো কাউন্টির সরকারি আইনজীবী বরার্ট স্প্রিংস্টেড। তিনি বলেন, টিয়াপাখির বুলি থেকে নেয়া তথ্য কতটা নির্ভরযোগ্য হবে, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।

    স্বামী মার্টিন ডারহ্যামকে পাঁচবার গুলি করেন গ্লেনা। পরে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তিনি।

    টোকিওতে মুন্সিগঞ্জবিক্রমপুর সোসাইটির ইফতার মাহফিল

    রোববার ২৬ জুন ওইয়ামা বুনকা সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাপান প্রবাসীদের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটির ইফতার মাহফিল। কিছু সংখ্যক জাপানি, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।

    স্বল্প পরিসরে বিপুল সংখ্যক মানুষের আতিথেয়তা দিতে গিয়ে মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর সোসাইটির সদস্যদের হিমসিম খেতে দেখা যায়। তা সত্বেও মুখরোচক খাবার আর আতিথেয়তা সকলকে মুগ্ধ করে।

    অনেকেই মন্তব্য করেন “আজকেই মনে হচ্ছে ঈদ” বলে মন্তব্য করেন।

    সোসাইটির সভাপতি বাদল চাকলাদার, উপদেষ্টা খন্দকার আসলাম হীরা সহ মুন্সিগঞ্জ বিক্রপুর সোসাইটির প্রায় সকল সদস্যকে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

    ইফতারের পূর্বে রাষ্ট্রদূত সহ সংশ্লিষ্ট ২/৩ জন বক্তব্য রাখেন। এর আগের রোববার আওয়ামী লীগ জাপান শাখাও অনুরূপ বক্তব্যের আনুষ্ঠানিকতা না রেখে সকলের কাছে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিলো। অনেকের মন্তব্য ছিলো ইফতার মাহফিলে সাধারণ বক্তব্যের বদলে ধর্মীয় আলোচনাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত।
    অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে অনেকের ছবি তোলার প্রতিযোগীতা ছিলো দৃষ্টিকটু, এ সময় রাষ্ট্রদূতকেও বিব্রত হতে দেখা যায়।
    প্রবাসে বাংলাদেশের আন্তরিক আতিথেয়তার প্রমাণ রাখলেন বিক্রমপুরবাসীরা।

    রোবট প্রবীণদের সাথে কথা বলবে

    ওসাকা ভিত্তিক একটি স্বাস্থ্যসেবা গ্রুপ ফুজিমোতো হোল্ডিং কোম্পানি এবং খেলনা নির্মাতা উইজ কোঃ বৃদ্ধদের সাথে আলোচনার অংশীদার হওয়ার জন্যে তাদের রোবটের একটি আপগ্রেড ভার্সন বাজারে ছেড়েছে।

    নতুন উনাজুকি কাবুচান জুনের ১৭ তারিখ থেকে চালু করা হয়, এটিকে আরো উন্নত প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন ধরনের শব্দ ও বাক্যাংশ দিয়ে ভরপুর করা হয়েছে, এর শব্দ সংখ্যা এখন ৪৫০টিতে দাঁড়িয়েছে ফলে ব্যবহারকারীরা এখন আরো সঙ্গতিপূর্ণ জবাব পাবেন। পিপ এন্ড উইজ কোম্পানির পূর্বের মডেলটিতে ছিলো ৪০০ শব্দ ও বাকাংশ্য কিন্তু তা পরিস্থিতি অনুসারে যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হতো।

    রোবটটির খুচরা মূল্য ধার্য করা হয়েছে ২৭,০০০ ইয়েন, ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং নার্সিং কেয়ার শপ গুলোতে রোবটটি পাওয়া যাবে। উনাজুকি কাবুচান ১৩টি গানও গাইতে পারে, যা আগের ভার্সনের চেয়ে ৮টি বেশি, তা ছাড়া একবার সুইচ বন্ধ করলে পুনরায় সেটিং করার আর প্রয়োজন পড়ছে না বলে কোম্পানি জানিয়েছে।

    ২৮ সেন্টিমিটার রোবটটির ওজন ৬৮০ গ্রাম, একটি ৩ বছরের ছেলে শিশুর অনুকরণে এটি তৈরি।

    পিপ এন্ড উইজ এর জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মাসাৎসুগু ওকাজাকি বলেছেন “এটি নার্সিং কেয়ার সার্ভিস জন্যে তৈরি, আমদের প্রত্যাশা বোবটটি প্রবীণদের মানসিক সমর্থন যোগাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”

    শব্দ, আলো এবং ইশারা শনাক্ত করার জন্যে পাঁচ ধরনের সেন্সর রয়েছে, যখন কেউ কথা বলবে তখন রোবটি বলে “আমি শুনতে পাচ্ছি”, কেউ যদি রোবটির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তখন সে বলে উঠবে “আপনাকে ধন্যবাদ”।

    মানুষ যত বেশি সময় রোবটটির সাথে ব্যয় করবেন, রোবটটি তত বেশি সংখ্যক শব্দ উচ্চারণ করতে সক্ষম হবে বলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে।

    পশ্চিম জাপানের শহর ওকাইয়া’র একটি প্রকল্পের জন্যে ডিভাইসটির উন্নয়ন করা হয়েছিলো, কম মূল্যে নার্সং সেবা দিতে রোবটের ব্যবহারের ধারণা নিয়ে প্রকল্পটি বিবেচনা করা হয়।

    উনাজুকি কাবুচান সবচেয়ে প্রথমে চালু করা হয় ২০১১ সালের নভেম্বরে, শহর কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালে সেবাটি চালু করে।

    পিপ এন্ড উইজ বলেছে, তারা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছেন। প্রবীণরা বলছেন রোবটটি তাদের একাকীত্ব দূর করছে এবং তাদের পরিবার ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

    শেষ রক্ষা হলো না আর্জেন্টিনার, চ্যাম্পিয়ন চিলি

    কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চিলি।  নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও গোলের দেখা পায়নি দুই দল। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর তাতে ৪-২ গোলের ব্যবধানে জয় তুলে নেয় চিলিয়ানরা।
    চিলির ভিদাল পাড্রোর প্রথম শটটি বাঁ পাশে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টিনার রোমেরো। হতাশ করেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের বাঁ পায়ের স্পট কিক গোল পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। পরবর্তী চার কিকে গোল করেন চিলির নিকোলাস কাস্টিলো মোরা ও মারিয়ানো এবং আর্জেন্টিনার মাসচেরানো ও অ্যাগুয়েরো।
    নিজেদের চতুর্থ শটেও গোল আদায় করে চিলি। এমানুয়েলের পা থেকে আসে চতুর্থ গোল। কিন্তু আর্জেন্টিনার চতুর্থ শটে আবারো গোল মিস। এবার খলনায়ক রডরিগো বিগলিয়া। শিরোপা নির্ধারণী পঞ্চম শটে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন সিলভা গাজারডো।
    যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট রাদারফোর্ডের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় ম্যাচটি শুরু হয়। গত বছরের ফাইনালে এই চিলির কাছে হেরেই শিরোপা হারিয়েছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
    নির্ধারিত ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে বল পজিশনে আর্জেন্টিনার থেকে এগিয়ে ছিল চিলি। আর্জেন্টিনার ৪৪ শতাংশের বিপরীতে চিলি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বল রেখেছিল ৫৬ শতাংশ। কিন্তু গোল আদায় করতে ব্যর্থ তারা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনাও বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগ মিস করায় গোলের খাতা খুলতে পারেনি।

    কোলেস্টেরল সম্পর্কে জানুন

    খুব বেশি চর্বিযুক্ত খাবারে সঙ্গে আমরা প্রায়শ: কোলেস্টেরলকেও যুক্ত করি। তবে বেশিরভাগ কোলেস্টেরল; এই মোমসৃদর্শ বস্তুটি তৈরি হয় দেহের ভেতরেই। রক্তে বহমান কোলেস্টেরলের ৭৫% ভাগই তৈরি হয় যকৃতে। বাকি ২৫% আসে খাদ্য থেকে। স্বাভাবিক মান বজায় থাকলে কোলেস্টেরল দেহের জন্য সব উপকারী জিনিষ করতে থাকে। তবে পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য লোকের রক্তে কোলেস্টেরল মান বেশি।
    রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ হয়না। কিন্তু দেহের গভীরে ক্ষতিতো হতেই থাকে। কালক্রমে খুব বেশি কোলেস্টেরল রক্তে ধীরে ধীরে ধমনীর ভেতর চর্বিপুঞ্জ জমতে থাকে। ধমনী দৃঢ় ও কঠিন হয়ে যায়। একে বলে চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘এথারোস্ক্রোরোসিস’। এমন হলে করোনারি ধমনী দিয়ে রক্ত চলাচল ক্ষীণ হয়ে যায়। পরিনতিতে এক সময় হার্ট এ্যাটাক হয়। সুসংবাদ হলো উচুমান কোলেস্টেরল সনাক্ত করা সহজ। আর একে নামানোরও রয়েছে নানা উপায়।
    কোলেস্টেরল টেস্ট
    ২০ বছরের বেশি বয়স হলে কোলেস্টেরল চেক্ করানো উচিত এবং পাঁচ বছরে একবার করে টেস্ট করানো ভালো। টেস্টের নাম হলো ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল। ৯-১২ ঘন্টা উপবাস থাকার পর রক্তের নমুনায় বহমান বিভিন্ন ধরণের কোলেস্টেরল পরিমাপ করা। এই ফলাফল থেকে পাওয়া যাবে মোট কোলেস্টেরল, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এল.ডি.এল, হিতকর কোলেস্টেরল এইচ.ডি.এল মান ও ট্রাইগ্লিসারাইড মান।
    ক্ষতিকর কোলেস্টেরল
    রক্তের বেশিরভাগ কোলেস্টেরল যে প্রোটিন বহন করে একে বলে লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল। একে বলে খারাপ কোলেস্টেরল। কারণ এটি অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবরুদ্ধ করে রক্তনালী পথ। স্যাচুরেড ফ্যাট ও ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে রক্তে বেড়ে যায় এল.ডি.এল। বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে এলডিএল মান ১০০-এর নিচে হলে তা স্বাস্থ্যকর। তবে যাদের হূদরোগ তাদের এলডিএল মান এর চেয়ে কম হওয়া ভালো।
    ভালো কোলেস্টেরল
    রক্তের কোলেস্টেরলের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বহন করে হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল। একে বলে ভালো কোলেস্টেরল। কারণ ক্ষতিকর কোলোস্টেরল অপসারণে সহায়তা করে এইচডিএল। তাই ধমনীর দেয়ালে এটি জমা হবার সুযোগ পায়না। এইচডিএল মান যত উঁচু তত ভালো। যাদের রক্তে এইচডিএল খুব কম এদের হূদরোগ হবার সম্ভাবনা বেশি। স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন জলপাই তেল গ্রহণ করলে এইচডিএল বাড়তে পারে।
    ট্রাইগ্লিসারাইড
    শরীর বাড়তি ক্যালোরি, চিনি এবং এলকোহলকে ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তরিত করে। ট্রাইগ্লিসারাইড বা চর্বি রক্তে বহমান হয়ে সারা শরীরে মেদকোষে জমা হয়। যাদের শরীরে ওজন বেশি, নিষ্ক্রিয় যারা, ধূমপায়ী বা মদ্যপায়ী এদের রক্তে অনেক বেশি ট্রাইগ্লিসারাইড। যারা খুব বেশি শর্করা খান তাদের রক্তেও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি। ট্রাইগ্লিসারাইড মান ১৫০ এর বেশি হলে ঝুঁকি থাকে মেটাবলিক সিনড্রোমের। এই রোগ সমষ্টির জোরালো সম্পর্ক রয়েছে হূদরোগ ও ডায়াবেটিসের সঙ্গে।
    মোট কোলেস্টেরল
    রক্তে বহমান লাইপোপ্রোটিন কনা এলডিএল, এইচডিএল ও ডিএলডিএল একত্রে হলো কোলেস্টেরল। ক্ষতিকর এলডিএল কনার পূর্বরূপ হলো ডিএলডিএল। ভিএলডিএল তৈরি হয় যকৃতে এবং তা রূপান্তরিত হয় এলডিএল কনায়। সাধারণত: রক্তে মোটে কোলেস্টেরল মান ২০০ এর নিচে হলে তা স্বাস্থ্যকর। এর বেশি থাকলে হূদরোগের প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। মোট কোলেস্টেরল= এলডিএল+এইচডিএল+ভিএলডিএল।
    কোলেস্টেরল অনুপাত
    কোলেস্টেরল অনুপাত গণনা করার জন্য মোট কোলেস্টেরল মানকে এইচডিএল মান দিয়ে ভাগ করতে হবে। যেমন মোট কোলেস্টেরল ২০০ এবং এইচডিএল ৫০; তাই কোলেস্টেরল অনুপাত হলো ৪:১। চিকিত্সকের পরামর্শ অনুপাতটি ৪:১ বা এর নিচে থাকলো ভালো। অনুপাত যত কম তত ভালো। এই অনুপাতটি হূদরোগের ঝুঁকি অনুমানে উপকারী। তবে চিকিত্সা প্রদানে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক নয়। চিকিত্সা দেওয়া ও ফলোআপের জন্য রক্তের মোট কোলেস্টেরল, এইচডিএল ও এলডিএল মান প্রয়োজন।
    খাদ্যে কোলেস্টেরল
    কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, ডিমের কুসুম। কিন্তু এগুলো নিষিদ্ধ খাবার নয়। সীমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোলেস্টেরল আমরা খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করি এর সামান্যই প্রভাব পড়ে রক্তের কোলেস্টেরল মানের উপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। কিন্তু মানুষের উপর প্রভাব পড়ে বটে। তবে বেশিরভাগ মানুষের জন্য বড় বিপদ হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট। সুস্থ মানুষের দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণ মাত্রা হলো ৩০০ মিলিগ্রাম এবং যাদের খুব ঝুঁকি এদের জন্য ২০০ মিলিগ্রাম। একটি ডিমের কুসুমে আছে ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।
    কোলেস্টেরল এবং পারিবারিক ইতিহাস
    কোলেস্টেরল আসে দুইটি উত্স থেকে। শরীর এবং খাদ্য। দুটোই প্রভাব বিস্তার করে রক্তের কোলেস্টেরলের উপর। কোন কোন লোক এমন জীন উত্তরাধিকার হিসেবে পায় যা বেশি বেশি কোলেস্টেরল তৈরি হওয়াকে প্রনোদিত করে। অন্যদের জন্য খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল একটি পথ, কোলেস্টেরল রক্তে বেড়ে যাওয়ার। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল থাকে প্রাণীজ খাদ্যে: যেমন মাংস, কলিজা, মগজ, দুধজাত দ্রব্য, ডিম থেকে। খাদ্য ও জীনগত উত্তরাধিকার দুটো মিলে অনেক সময় রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায়।
    কিসে বাড়ে ঝুঁকি
    lস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য
    lউচু কোলেস্টেরল মানের পারিবারিক ইতিহাস
    lভারি ওজন বা স্থূল শরীর
    lবয়স্ক হওয়া
    কোলেস্টেরল ও জেন্ডার
    রজ:নিবৃত্তির কার্য পর্যন্ত সমবয়সী পুরুষদের চেয়ে কম কোলেস্টেরল থাকে মহিলাদের। তাদের রক্তে হিতকরী কোলেস্টেরল এইচডিএলও বেশি থাকতে পালে এর একটি কারণ হলো স্ত্রী হরমোন ইস্ট্রোজেন। সন্তান ধারণক্ষম বছরগুলোতে নারীদের ইস্ট্রোজেন মান থাকে তুঙ্গে। এর পর তা নেমে আসে রজ:নিবৃত্তি হলে। ৫৫ বছর উর্দ্দে নারীদের রক্তে উচু মান কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
    কোলেস্টেরল ও শিশুরা
    এমন তথ্য প্রমাণ আছে কোলেস্টেরল রক্তনালী পথে অবরোধ স্বষ্প করতে পারে শৈশব থেকেই। পরবর্তী জীবনে যা এথারোস্ক্রোরোসিস ও হার্ট এ্যাটাকে পর্যবসিত হয়। আমেরিকান হূদরোগ সমিতির পরামর্শ শিশু ও টিনএজার যাদের রক্তে উচুমান কোলেস্টেরল, এদের তা নামানো উচিত। আদর্শ:২-১৯ বছর বয়সীদের রক্তে মোট কোলেস্টেরল ১৭০ এর নিচে থাকা উচিত।
    উচুমান কোলেস্টেরল কেন বিপদের কারণ
    উচুমান কোলেস্টেরল হল করোনারি হূদরোগ, হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি। আলঝাইমার রোগের ঝুঁকিও উচুমান কোলেস্টেরল। আমরা জানি রক্তে উচুমান কোলেস্টেরল থাকলে ধমনীগ্রাত্রে চর্বি জমে, অবরুদ্ধ হয় রক্ত প্রবাহ। হূদরোগে পর্যবসিত হতে পারে তা। হূদপেশির বিশেষ অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে সে অংশটিতে ঘটে হার্ট এ্যাটাক।
    কোলেস্টেরল কমানো চাই
    কোলেস্টেরল মান কমাতে খাদ্যবিধি একটি উত্তম পন্থা। আঁশযুক্ত শস্য বেশ হূদবান্ধব। কিছু কিছু খাবারের দ্রবনীয় আঁশ, রক্তের এলডিএল কমাতে সহায়ক। দ্রবনীয় আঁশের ভালো উত্স হলো আটার রুটি, লাল ও হোলগ্রেন শস্য, ওটমিল, ফল, শাক সবজি ও কিডনি বীনস্।
    চিনতে হবে চর্বিকে
    প্রতিদিনে মোট ক্যালোরির ৩৫% এর বেশি আসা উচিত নয় চর্বি থেকে। তবে সব চর্বি যে সমান, তাতো নয়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট তা প্রাণীজ হোক বা উদ্ভিজ তৈল হোক বেশি গ্রহণ করলে বাড়ে রক্তে এলডিএল এবং কমায় হিতকর এইচডিএল।
    এই দুটো মন্দ চর্বি পাওয়া যায় বেকারিতে প্রস্তুত খাদ্য, ভাজা খাবার, ডোনাট, থ্রাই, চিপস, স্টিক মার্জাবিন এবং কুকিস বিস্কুটে। অসম্পূর্ন চর্বি কমায় এলডিএল এবং করে হিতকর কাজও। জলপাইতেল ও পিনাট তেলে আছে তেমন চর্বি।
    স্মাট প্রোটিন
    মাংস এবং পুরোচর্বিসহ দুধে আছে প্রচুর প্রোটিন। তবে আচে কোলেস্টেরলও। বরং সোয়াপ্রোটিন খেলে এলডিএল কমার সম্ভাবনা বাড়ে। আর একটি ভালো পছন্দ হলো মাছ। এতে আছে ওমেগা-৩ ও মেদঅম্ল; হূদবান্ধব। সপ্তাহে অন্তত: দুদিন মাছ খেতে পরামর্শ আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের।
    লোকার্বোহাইডেট ডায়েট
    এমন তথ্য প্রমাণ আছে যে, কোলেস্টেরলের উচুমান কমাতে লো-ফ্যাট ডায়েটের চেয়েও লো-কার্ব ডায়েট ভালো। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের দু’বছরের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, লোফ্যাট খাদ্য গ্রহণ করেছেন যারা তাদের চেয়ে লো-কার্ব খাদ্য বা কম শর্করা খাবার খেয়েছেন যারা তাদের হিতকর এইচডিএল মান অনেক ভালো।
    বাড়তি ওজন কমাতে হবে শরীরের ওজন বেশি হলে শরীরে ওজন হ্রাসের প্রোগ্রাম শুরু করতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। বাড়তি ওজন কমালে কমবে ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল ও মোট কোলেস্টেরল।
    মাত্র কয়েক পাউন্ড শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলতেও হিতকর কোলেস্টেরল বাড়ে, ৬ পাউন্ড ওজন কমালে বাড়ে এক পয়েন্ট।
    ধূমপান ছাড়তে হবে
    ধূমপান ছাড়া কঠিন হলেও ছাড়তে পারলে অনেক লাভ। ধূমপান ছেড়ে দিলে হিতকর এইচডিএল বেড়ে যাবে ১০%।
    ব্যায়াম হলো ভালো দাওয়াই
    সুস্থ আছেন তবে সক্রিয় নন জীবন যাপনে। এমন কেউ যদি এরোবিক ব্যায়াম প্রোগ্রাম শুরু করেন তাহলে প্রথম দুই মাসের মধ্যেই হিতকর কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে ৫%। নিয়মিত ব্যায়ামে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলও কমে।

    কিউশুতে ভারী বর্ষণ অব্যহত

    দক্ষিণ পশ্চিম জাপানে বিক্ষিপ্ত বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে, ইতিমধ্যেই এ অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ বর্ষণ হয়েছে।

    জাপানের আবহাওয়া বিভাগ বলেছে বায়ুমন্ডলের একটি লঘুচাপের ফলে দ্বীপটিতে ভারী বর্ষণ ঘটাচ্ছে।

    আবহাওয়া বিভাগ বলেছে অঞ্চলটিতে ৪০০ থেকে ৭০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।

    কিউশু’র কুমামোতো প্রিফেকচার এবং উত্তরে হোক্কাইদো’র কর্মকর্তারা বলেছেন যে সব স্থানে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে সে সব স্থানে মাটি আলগা হয়ে ভূমিকধস এবং নদী প্লাবনের আশংকা রয়েছে।

    আবহাওয়া বিভাগও সম্ভাব্য ভূমিধস এবং বন্যার সতর্কতা জারি করেছেন এবং হোক্কাইদো’র জনগনকে বৃষ্টি এবং জোর বাতাস থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

    জাপানের সাথে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন মার্কিন কমান্ডার

    জাপানে মার্কিন বাহিনীর প্রধান হত্যাকান্ড সহ সম্প্রতিক ঘটনাবলী ঘটা সত্বেও দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। সংঘটিত হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহ সাবেক এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তাকে জাপানের পুলিশ আটক করেছে।

    বৃহস্পতিবার ছিলো ওকিনাওয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭১ তম বার্ষিকী, ওকিনাওয়া যুদ্ধ ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ওই যুদ্ধে ২ লক্ষের বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

    প্রিফেকচারের শান্তি স্মারক উদ্যানে ১২,৫০০ মার্কিন সেনার নাম স্মৃতিস্তম্ভে নিহত জাপানি সেনা ও বেসামরিক মানুষদের নামের পাশে লেখা রয়েছে।

    লেফটেন্যান্ট জেনারেল লরেন্স নিকলসন্স যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে মার্কিন বাহিনীর উদ্যোগে আয়োজিত আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন।

    নিকলসন মার্কিন এবং জাপানি বাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতির কথা স্মরণে সময় ব্যয় করার আহ্বান জানান।

    তিনি বলেন আমেরিকা এবং জাপান নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৭১ বছর ধরে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।

    Untitled Post

    Posted by admin on June 22
    Posted in Uncategorized 

    সাদাকাতুল ফিতর আধা সা গম : হাদীস ও সুন্নায়, আছার ও ইজমায়

    মাওলানা মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ

    সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কিত এই প্রবন্ধটি আমার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে প্রস্ত্তত হয়েছে। মারকাযুদ দাওয়াহর ‘আততাখাসসুস ফিলফিকহি ওয়ালইফতা’ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মৌলভী ইমদাদুল্লাহ তা লিখেছে। মাশাআল্লাহ অত্যন্ত সুন্দরভাবে এতে প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলি একত্রিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাসআলাটির জটিল দিকসমূহ সহজ ভাষায় দলিলসহ আলোচনা করাা হয়েছে।

    প্রবন্ধের শেষে আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীলদের প্রতি একটি জরুরি পরামর্শ। সুখের বিষয় এই যে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গত ২১ জুন ২০১১ ঈ., মঙ্গলবার উলামা-মাশায়েখের সাথে এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার মতবিনিময় করেছে এবং এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এটি একটি পুরানো বিষয়। এতে নতুন ইজতিহাদের প্রয়োজন নেই। তাই পূর্বের ন্যায় হাদীস ও ফিকহে বিদ্যমান সাদকাতুল ফিতরের দুটি পরিমাপের কথাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হবে। অর্থাৎ খেজুর, কিসমিস, পনির এবং যবের ক্ষেত্রে কোনো একটির এক সা অথবা তার মূল্য এবং গমের ক্ষেত্রে আধা সা বা তার মূল্য। দুটির যে কোনো একটিকে পরিমাপ ধরে আদায় করলে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য যিনি সামর্থ্য অনুযায়ী যত বেশি আদায় করবেন তিনি তত বেশি ছওয়াবের অধিকারী হবেন।  

    এই সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশলীদের মুবারকবাদ জানাই। আশা করি, প্রবন্ধটি পাঠকদের এ বিষয়ে ইলমী (তথ্য ও জ্ঞানগত) প্রশান্তি দান করবে।  والتوفيق بيد الله تعالى 

    প্রবন্ধটিতে বারবার হাদীস ও ফিকহে বর্ণিত কিছু পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রচলিত পরিমাপ অনুযায়ী সে পরিমাণগুলোর হিসাব বুঝে নেওয়া দরকার। এতে প্রবন্ধটির পাঠোদ্ধার সহজ হবে।-তত্ত্বাবধায়ক

     

     

     

    সাদাকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রমযানুল মুবারকের শেষে ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করতে হয়। এটি যাকাতেরই একটি প্রকার, যার দিকে সূরাতুল আ’লায় (৪-১৫) ইশারা করা হয়েছে-

    قد افلح من تزكى وذكر اسم ربه فصلى

    রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস ও সুন্নাহয় তা আদায়ের তাকীদ করেছেন এবং এর নিয়ম-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এ কারণেই নবী যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ ইসলামের পাঁচ রোকন ও দ্বীনের অন্যান্য মৌলিক আমল ও ইবাদতের মতো ছদাকাতুল ফিতরও নিয়মিত আদায় করে আসছে। আমাদের এ অঞ্চলে তা পরিচিত ‘ফিতরা’ নামে।

    একটি যয়ীফ হাদীসে এই ইবাদতের দুটি হিকমত ও তাৎপর্য স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য। (সুনানে আবু দাউদ ১/২২৭)

    তাই সকলের কর্তব্য, খুশিমনে এই ইবাদতটি আদায় করা, যাতে আল্লাহর গরীব বান্দাদের খেদমত হয় এবং নিজের রোযার ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হয়। সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি ইবাদত আদায়ের সৌভাগ্য অর্জিত হয়।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সুন্নাহর আলোকে এই ইবাদতের বিস্তারিত আহকাম ও বিধান ফিকহের কিতাবে সংকলিত হয়েছে। সাদাকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব হয়, কাদের পক্ষ থেকে আদায় করতে হয়-এইসব বিবরণ হাদীস ও ফিকহের কিতাবে বিস্তারিতভাবে আছে।

    এই সাদাকার পরিমাণ সম্পর্কে হাদীস ও সুন্নাহয় দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে : তা হচ্ছে, صاع   (‘সা’) ও  نصف صاع    (নিসফে সা’)।

    যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক ‘সা’ এবং গম দ্বারা আদায় করলে ‘নিসফে সা’ প্রযোজ্য হবে।

     

    শরীয়তের দলীলে একথাও প্রমাণিত যে, উপরোক্ত খাদ্যবস্ত্তর পরিবর্তে সেগুলোর মূল্য আদায় করারও অবকাশ আছে। সেক্ষেত্রে উল্লেখিত খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্য থেকে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে। অর্থাৎ ঐ খাদ্যবস্ত্তর জন্য শরীয়তে যে পরিমাণটি নির্ধারিত-‘সা’ বা ‘নিসফে সা’ সে পরিমাণের বাজারমূল্য আদায় করলেও সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।

    এখানে একটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে, মূল্যের দিক থেকে ঐ খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্যে তফাৎ আছে, কোনোটির দাম বেশি, কোনোটির কম। তো সবচেয়ে কমদামের বস্ত্তকে মাপকাঠি ধরে কেউ যদি সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে তাহলেও আদায় হায়ে যাবে। তবে উত্তম হল, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্ত্তকে মাপকাঠি ধরে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।

    যেহেতু সহীহ হাদীসে গমকেও একটি মাপকাঠি সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আধা সা’ তাই আধা সা গম বা তার মূল্য আদায় করলে নিঃসন্দেহে সাদাকাতুল  ফিতর আদায় হয়ে যাবে।

    বর্তমান বাজার দর হিসাবে যেহেতু গমের দামই সবচেয়ে কম, তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতি বছর আধা সা গমকে মাপকাঠি ধরে ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ ঘোষণা করা হয়। টাকায় অংকটি নির্ধারিত হয় আধা সা গমের ঐ সময়ের বাজার-দর হিসাবে।

    গত বছর অর্থাৎ ১৪৩১ হিজরী রমযানে হঠাৎ করেই একটি নতুন ঘোষণা এল। ফাউন্ডেশনের এতদিনের নিয়ম ও তাদের প্রকাশিত ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখিত মাসআলার বিপরীত দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রচার করা হল যে, এবারের ফিতরা একশ টাকা। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল যে, ফিতরা কমিটি চালকে মাপকাঠি ধরেছে এবং খেজুর ইত্যাদির জন্য নির্ধারিত পরিমাণ-‘সা’ কে এর উপর প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এক ‘সা’ চাল ফিতরা হিসেবে আদায় করতে হবে। আর মধ্যম মানের এক ‘সা’ চালের বাজার-দর যেহেতু একশ টাকা তাই ফিতরা একশ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছর এবং এ বছরও যেহেতু আধা সা গমের বাজার-মূল্য থেকে চালের বাজার-মূল্য বেশি তাই কেউ ঐ হিসাবে ফিতরা আদায় করে থাকলে অবশ্যই তার ফিতরা আদায় হয়েছে; বরং যাদের সামর্থ্য আছে তারা যদি খেজুর, পনির ও কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করেন তাহলে তো খুবই ভালো। কিন্তু এর কোনোটিকে সর্বনিম্ন ফিতরা বা একমাত্র ফিতরা সাব্যস্ত করার অবকাশ কোথায়?

    ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ তো সেটিই, যা সুন্নাহয় উল্লেখিত খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্যে পরিমাণ ও বাজার-দরের বিচারে সর্বনিম্ন। টাকার অংকে সর্বনিম্ন ফিতরা ঘোষণা করতে হলে এই মানদন্ডের ভিত্তিতেই করতে হবে। অন্যথায় সুন্নাহ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো একটি পরিমাণকে অকার্যকর সাব্যস্ত করা হবে, যার অধিকার কারো নেই।

    ফলে ঐ সময়, ফাউন্ডেশনের ঐ ঘোষণার উপর আপত্তি উঠেছিল। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার পক্ষ থেতে এবং ব্যক্তিগত ও সম্মিলিতভাবে আরো অনেকে তখন আপত্তি করেছিলেন। সুখের কথা, ইসলামিক ফাউন্ডেশ উলামা-মাশায়েখের উপস্থিতিতে এ  বিষয়ে পুনরায় চিন্তা-ভাবনা করেছিল এবং আগের মতোই আধা সা গমের মূল্য হিসাবে ফিতরা ঘোষণা করেছিল। সাথে সাথে এ বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, ঘোষিত পরিমাণটি ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ। যার সামর্থ্য আছে, তিনি এক সা পরিমাণের খাদ্যবস্ত্তগুলোর কোনো একটিকে মানদন্ড ধরেও ফিতরা আদায় করতে পারবেন এবং এটিই তার জন্য উত্তম।

    এই পুনঃঘোষণার ফলে আলহামদুলিল্লাহ ঐ বিভ্রান্তির নিরসন হয়ে যায়। কিন্তু তখন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু নিবন্ধ এবং কারো কারো মৌখিক কিছু প্রশ্ন থেকে অনুমান করেছি যে, এ প্রসঙ্গে তাদের কিছু অমূলক ধারণা রয়েছে, সম্ভবত পুনরায় চিন্তা-ভাবনা করলে তা আর থাকবে না।

     

    তাদের ধারণাগুলো নিম্নরূপ :

    1.         হাদীস শরীফে ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ একটিই। তা হল এক সা। আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায় হওয়ার বিধান কোনো সহীহ হাদীসে নেই।

    2.         হাদীস শরীফে; বরং যে কোনো খাদ্যবস্ত্ত থেকে এক সা দেওয়ার কথা আছে, যার মাঝে গমও অন্তর্ভুক্ত।

    3.        আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা সর্বপ্রথম বলেন হযরত মুআবিয়া রা.। অথবা সর্বোচ্চ হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এ কথা বলেছেন। আর এটি তাঁরা নিজেদের ইজতিহাদ থেকেই করেছেন। এজন্য একে ফিতরা আদায়ের মাপকাঠি ধরা যায় না। তবে কখনো যদি আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুর ইত্যাদির সমান হয়ে যায় তখন হয়তো এর দ্বারা ফিতরা আদায় হতে পারে!

    4.         হাদীস শরীফে যে চারটি খাদ্যবস্ত্তর কথা বলা হয়েছে তা এজন্য বলা হয়েছে যে, ঐ সময় এগুলোই ছিল মদীনা শরীফে সাধারণ খাদ্যবস্ত্ত। এজন্য অন্য দেশের মানুষ, যাদের সাধারণ খাবার অন্য কিছু, তারা তাদের খাদ্যবস্ত্ত অনুযায়ী ফিতরা আদায় করতে পারবে; বরং এটিই করণীয়।

    মোটামুটিভাবে সদকাতুল ফিতরকে এক সা ধরার ক্ষেত্রে এই চারটি ধারণা বা যুক্তি তারা পোষণ করেন। কিন্তু ঐ সব বন্ধুদের জেনে রাখা উচিত যে, আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায়ের বিধান একাধিক সহীহ হাদীসে রয়েছে। এটি খোলাফায়ে রাশেদীন রা.-এর সুন্নাহ দ্বারাও প্রমাণিত। যদি কোনো সাহাবী ইজতিহাদ দ্বারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে থাকেন তবে তার সিদ্ধান্ত হাদীস ও সুন্নাহয় বর্ণিত বিধানের সাথে মিলে গিয়েছে এবং অন্যান্য সাহাবীও তার সাথে একমত হয়েছেন। এটি কোনো সাহাবীর একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, যাকে ইজতিহাদ; বলে খাটো করার চেষ্টা করা যায়। অথচ সাহাবীর ব্যক্তিগত ইজতিহাদও (যদি সেটি স্পষ্ট মারফূ হাদীসের পরিপন্থী না হয়) শরীয়তের দলীল।

     

    ঐ সকল বন্ধুদের আরো জানা দরকার যে, কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত কোনো শরঈ পরিমাপের কোনো একটি তাৎপর্য নিজে থেকে নির্ধারণ করে সেই তাৎপর্যটিকেই মানদন্ড বানিয়ে নেওয়া এবং কুরআন-হাদীসে বর্ণিত পরিমাপকে অকার্যকর করে দেওয়া প্রকৃতপক্ষে কুরআন-সুন্নাহর তাহরীফ ও বিকৃতি সাধন এবং গোটা উম্মতের ইজমা ও অবিচ্ছিন্ন কর্মধারার বিরুদ্ধাচরণ।

    বর্তমান নিবন্ধে বিষয়গুলোর উপর কিছুটা বিশদ ও বিশ্লেষমূলক আলোচনা করার ইচ্ছা আছে।

    আধা সা সম্পর্কে হাদীস, সুন্নাহ ও আছার

    1.         হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন সে যেন মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা করে যে-জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর সদকায়ে ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্ত্ত।

     

    أن النبي صلى الله عليه وسلم بعث مناديا ينادي في فجاج مكة : ألا إن صدقة الفطر واجب على كل مسلم، ذكر أو أنثى، حر أو عبد، صغير أو كبير، مدان من قمح، أو صاع مما سواه من الطعام.

     

    (জামে তিরমিযী ১/৮৫)। ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেন, হাদীসটি হাসান।

    ২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রমযানের শেষ দিকে বসরার মিম্বারের উপর খুতবা দানকালে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন এক সা খেজুর বা যব কিংবা আধা সা গম; গোলাম-স্বাধীন, নারী-পুরুষ ও ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর।

     

    فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه الصدقة صاعا من تمر أو شعير، أو نصف صاع من قمح على كل حر أو مملوك، ذكر أو أنثى، صغير أو كبير.

    (সুনানে আবু দাউদ ১/২২৯। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনে আবদুল হাদী আল হাম্বলী রাহ. বলেন, হাদীসটির সকল রাবী প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য। আল্লামা যাহাবী রাহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ শক্তিশালী।)

    ৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ছালাবা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের একদিন বা দুদিন আগে সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছেন। সে খুতবায় তিনি বলেছেন, তোমরা প্রতি দু’জনের পক্ষ থেকে এক সা গম অথবা ছোট-বড় প্রত্যেকের মাথাপিছু এক সা খেজুর বা এক সা যব প্রদান করো।

    أدوا صاعا من بر أو قمح بين اثنين، أو صاعا من تمر، أو صاعا من شعير على كل أحد صغير أو كبير.

    (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৮। আল্লামা যাইলাঈ রাহ. বলেন, এই হাদীসটির সদন সহীহ ও শক্তিশালী।)

    ৪. হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, যে মুদ (পাত্র) দ্বারা তোমরা খাদ্যবস্ত্ত গ্রহণ করে থাক এমন দুই মুদ (আধা সা) গম আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।

    كنا نؤدي زكاة الفطر على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم مدين من قمح، بالمد الذي تقتاتون به.

    (মুসনাদে আহমদ ৬/৩৪৬। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং এ সনদটি হাসান। শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ. বলেছেন, এই হাদীসের সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে উত্তীর্ণ, সহীহ।)

    ইমাম তহাবী রাহ. এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন-

     

    فهذه أسماء تخبر أنهم كانوا يؤدون في عهد النبي صلى الله عليه وسلم زكاة الفطر مدين من قمح، ومحال أن يكونوا يفعلون هذا إلا بأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم، لأن هذا لا يؤخذ حينئذٍ إلا من جهة توقيفه إياهم على ما يجب عليهم من ذلك.

     

     

    হযরত আসমা রা. জানিয়েছেন যে, নবী-যুগে সাহাবায়ে কেরাম সদকাতুল ফিতর দিতেন আধা সা গম। এ তো সম্পূর্ণ অসম্ভব যে, রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ ছাড়া তাঁরা এই কাজ করতেন। কারণ দ্বীনের বিষয়ে তাঁদের কর্তব্য কী তা জানার একমাত্র সূত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষা ও নির্দেশনা।

    ৫. হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন দুই মুদ (আধা সা) গম।

    فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم زكاة الفطر مدين من حنطة.

    (মারাসীলে আবু দাউদ পৃ. ১৬। আল্লামা ইবনে আবদুল হাদী আলহাম্বলী রাহ. বলেন, এ হাদীসের সনদ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট, সহীহ। তবে তা মুরসাল। আর সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-এর মুরসাল রেওয়ায়েতও দলিলযোগ্য হয়।)

    ৬. ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান ও উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ রা. প্রমুখকে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর আদায়ের আদেশ করেছেন এক সা খেজুর বা দুই মুদ (আধা সা) গম।

    أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم  بزكاة الفطر بصاع من تمر، أو بمدين من حنطة.

    (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ। নুখাবুল আফকার ৫/২২৫)

    ৭. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ, কাসেম ও সালেম রাহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন সদকাতুল ফিতরে এক সা যব বা দুই মুদ (আধা সা) গম আদায় করার।

    أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم في صدقة الفطر بصاع من شعير أو مدين من قمح.

    (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এটি সহীহ ও মুরসাল।)

    ৮. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এবং আবু বকর সিদ্দীক ও উমর ফারূক রা.-এর শাসনামলে সদকাতুল ফিতর দেওয়া হত আধা সা গম।

    كان الصدقة تعطى على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي بكر وعمر نصف صاع من حنطة.

    (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০। আল্লামা ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেছেন, এটি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. থেকে ছিকা রাবীগণ বর্ণনা করেছেন। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটির সকল রাবী ছিকা ও নির্ভরযোগ্য। আল্লামা আইনী রা. বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ।)

    ৯. হযরত আবু উবাইদ কাসেম ইবনে সাল্লাম রাহ. বর্ণনা করেন, আবদুল খালেক ইবনে সালামা আশশাইবানী রাহ. বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.কে সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তা ছিল মাথাপিছু এক সা খেজুর বা আধা সা গম।

    حدثنا إسماعيل بن  إبراهيم عن عبد الخالق بن سلمة الشيباني قال : سألت سعيد بن المسيب عن الصدقة. فقال : كانت على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم صاع تمر، أو نصف صاع حنطة عن كل رأس.

    (কিতাবুল আমওয়াল পৃ. ৫৬৪)

    ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শাইবা রাহ.ও বর্ণনা করেছেন যে, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.কে সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ছোট-বড়, গোলাম-স্বাধীন প্রত্যেকের মাথাপিছু আধা সা গম বা এক সা খেজুর বা যব।

    هشيم عن سفيان بن حسين، عن الزهري عن سعيد بن هشيم عن سفيان بن حسين، عن الزهري عن سعيد بن المسيب يرفعه أنه سأل عن صدقة الفطر. فقال : عن الصغير والكبير، والحر والمملوك نصف صاع من بر، أو صاع من تمر أو شعير.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১। শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা মুসান্নাফের টীকায় বলেন, এটি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-এর মুরসাল হাদীস, যা মুহাদ্দিসগণের নিকট বিশুদ্ধতম মুরসালের অন্তর্ভুক্ত।

     

    খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ

    ১০. আবু কিলাবা রাহ. বলেন, স্বয়ং ঐ ব্যক্তি আমাকে বলেছেন, যিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর নিকট এক  সা গম দ্বারা দুই ব্যক্তির সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৬)

    অন্য বর্ণনায় আছে, মামার রাহ. বলেন, আমার কাছে তথ্য পৌঁছেছে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. দুই মুদ (আধা সা দ্বারা) ফিতরা আদায় করেছেন।

    بلغني أن أبا بكر أخرج زكاة الفطر مدين.

    (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৬)

    ১১. নাফে রাহ বলেন, তিনি হযরত উমর রা.কে জিজ্ঞাসা করেছেন, আমি একজন ক্রীতদাস। আমার সম্পদের কি কোনো যাকাত আছে? উমর রা. বলেছেন, তোমার যাকাত তো তোমার মনিবের উপর। সে তোমার পক্ষ থেকে প্রতি ঈদুল ফিতরে এক সা যব বা খেজুর কিংবা আধা সা গম প্রদান করবে।

    إنما زكاتك على سيدك أن يؤدي عنك عند كل فطر صاعا من شعير أو تمر أو نصف صاع من بر.

    (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০; শরহু মুশকিলুল আছার ৯/৩৮)

    হযরত ছালাবা ইবনে আবু সুআইব রা. বলেন, আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর খেলাফত আমলে সদকাতুল ফিতর দিতাম আধা সা গম।

    كنا نخرج زكاة الفطر على عهد عمر بن الخطاب نصف صاع.

    (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০; শরহু মুশকিলুল আছার ৯/৩৯)

    ১২. আবুল আশআছ রাহ. বলেন, খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান রা. আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। ঐ খুতবায় তিনি বলেছেন, তোমরা যাকাতুল ফিতর আদায় কর দুই মুদ (আধা সা) গম।

     أدوا زكاة الفطر مدين من حنطة.

    (শরহু মুশকিলিল আছার ৯/৩৯। আল্লামা আইনী রাহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ ও শক্তিশালী। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এ হাদীসের সনদ ইমাম মুসলিমের শর্তে উত্তীর্ণ।)

    ১৩. হযরত আলী রা. বলেন, সদকাতুল ফিতর (এর পরিমাণ) হল, এক সা খেজুর বা এক সা যব কিংবা আদা সা গম। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৫; সুনানে দারা কুতনী ২/১৫২; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/৩৩৬)

    অন্য সাহাবীদের অভিমত

    ১৪. আলকামা ও আসওয়াদ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, (সদকাতুল ফিতর হচ্ছে) দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা খেজুর বা যব।

    مدان من قمح أو صاع من تمر أو شعير.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৪; সুনানে দারা কুতনী ২/১৫২)

    ১৫. হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, প্রত্যেক গোলাম-স্বাধীন, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, ধনী-গরীবের উপর সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য। মাথাপিছু এক সা খেজুর বা আধা সা গম।

    زكاة الفطر على كل حر أو عبد، ذكر أو أنثى،  صغير أو كبير، غني و فقير صاع من تمر أو نصف صاع من قمح. قال معمر : وبلغني أن الزهري كان يرفعه إلى النبي صلى الله عليه وسلم.

    (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১১। আল্লামা হাইসামী রাহ. এবং আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং মাওকূফ।)

    ১৬. আমর ইবনে দীনার রাহ. বলেন, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.কে মিম্বারের খুতবায় বলতে শুনেছেন, সদকাতুল ফিতর হল দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা খেজুর বা যব। গোলাম-স্বাধীন এই বিধানে সমান।

    زكاة الفطر مدان من قمح، أو صاع من تمر زكاة الفطر مدان من قمح، أو صاع من تمر أو شعير، الحر والعبد سواء.

    (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২। আল্লামা আলাউদ্দীন ইবনুত তুরকুমানী রাহ. বলেন, এটি একটি মর্যাদাপুর্ণ সহীহ সনদ س। هذا سند صحيح جليل جليل)

    ১৭. ইমাম আবদুর রাযযাক রাহ. আমর ইবনে দীনার থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন,  সদকাতুল ফিতর হল দুই মুদ (আধা সা) গম অথবা এক সা খেজুর বা যব। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৩।)

    ১৮. হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, মারওয়ান ইবনুল হাকাম হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর নিকট দূত পাঠান যে, আপনার গোলামের সদকায়ে ফিতর আমার কাছে পাঠান। আবু সাঈদ খুদরী রা. দূতকে বললেন, মারওয়ানের তো (বিধান) জানা নেই। প্রতি ঈদুল ফিতরে আমাদের প্রদেয় হচ্ছে, মাথাপিছু এক সা খেজুর বা আধা সা গম।

    إن مروان بعث إلى أبي سعيد : أن ابعث إلي بزكاة رقيقك، فقال أبو سعيد للرسول : إن مروان لا يعلم، إنما علينا أن نعطي لكل رأس عند كل فطر صاعا من تمر أو نصف صاع من بر.

    (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৪৯; শরহু মুশকিলুল আছার ৯/২৬। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, এ সনদটি সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এই হাদীসের সকল রাবী ছিকা ও বিশ্বস্ত।)

    ১৯. আবু যুবাইর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা.কে বলতে শুনেছেন, ছোট-বড়, গোলাম-স্বাধীন সকলের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অপরিহার্য, দুই মুদ (আধা সা) গম অথবা এক সা খেজুর বা যব।

    صدقة الفطر على كل مسلم صغير وكبير، عبد أو حر، مدان من قمح، أو صاع من تمر أو شعير.

    (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৫; মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২; সুনানে দারা কুতনী ২/১৫১)

    বিশিষ্ট তাবেয়ীদের অভিমত

    ২০. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন, রোযাদারের অবশ্য কর্তব্য সদকাতুল ফিতর আদায় করা; দুই মুদ (আধা সা) গম অথবা এক সা খেজুর।

    زكاة الفطر على من صام مدان من حنطة أو صاع من تمر.

    (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৮; শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫১। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, এ সনদটি সহীহ।)

    ২১. ইসমাঈল ইবনে সালেম রাহ. ইমাম শাবী রাহ.-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, (সদকাতুল ফিতর হল) আধা সা গম অথবা এক সা খেজুর বা যব।

    نصف صاع من بر، أو صاع من تمر أو شعير.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১)

    ২২. মুজাহিদ রাহ. বলেন, প্রত্যেকের প্রদেয় হচ্ছে গমের ক্ষেত্রে আধা সা। আর গম ছাড়া অন্যান্য খাদ্য যেমন খেজুর, কিসমিস, পনির, যব ইত্যাদিতে পুরা এক সা।

    عن كل إنسان نصف صاع من قمح، وما خالف القمح من تمر أو زبيب أو أقط أو شعير أو غيره فصاع تام.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৫। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, রেওয়ায়েতটি সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, এ রেওয়ায়েতের সকল রাবী ছিকাহ ও নির্ভরযোগ্য এবং বুখারী-মুসলিমের রাবী।)

    ২৩. হাসান বসরী রাহ. থেকেও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১। আল্লামা ইবনুত তুরকুমানী রাহ. বলেন, এটি সহীহ সনদ, এতে কোনো আপত্তি নেই।)

    ২৪. হযরত তাউস রাহ. বলেন, আধা সা গম অথবা এক সা খেজুর।

    نصف صاع من قمح نصف صاع من قمح أو صاع من تمر.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৪)

    ২৫. আতা রাহ.বলেন, দুই মুদ গম অথবা এক সা খেজুর বা যব।

    مدان من قمح أو صاع من تمر أو شعير.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০২; সুনানে দারা কুতনী ২/১৪২)

    ২৬. ইমাম শুবা রাহ. হাকাম ও হাম্মাদ রাহ. কে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। উত্তরে তাঁরা বলেছেন, نصف صاع حنطة আধা সা গম। শুবা রাহ. বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনুল কাসেম এবং সাআদ ইবনে ইবরাহীমকেও এ প্রশ্ন করেছি, ,  فقالا مثل ذلك  তারাও একই কথা বলেছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩; শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫১। আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, এটি একটি সহীহ সনদ।)

    ২৭. ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন, ছোট-বড়, গোলাম-স্বাধীন প্রত্যেকের পক্ষ থেকে প্রদেয় হচ্ছে আধা সা গম।

    عن الصغير والكبير، والحر والعبد، عن كل إنسان نصف صاع من قمح.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১। শায়খ শুআইব আরনাউত এর সকল রাবীকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।)

    ২৮. আবু হাবীব রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ রাহ.কে সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উত্তরে তিনি বলেছেন,نصف صاع من حنطة أو دقيق ن. আধা সা গম বা আটা। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩)

    ২৯. আউফ রাহ.বলেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. উমর ইবনে আরতাত রাহ.-এর নিকট পত্র লেখেন, যা বসরার মিম্বারে পঠিত হয়েছে, যাতে তাঁর প্রতি নির্দেশ ছিল-তুমি তোমার অধীনস্থ মুসলমানদেরকে এক সা খেজুর বা আধা সা গম সদকাতুল ফিতর আদায়ের আদেশ কর।

    أما أما بعد، فمر من قبلك من المسلمين أن يخرجوا صدقة الفطر صاعا من تمر، أو نصف صاع من بر.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৩। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটির সকল রাবী নির্ভরযোগ্য ও সহীহ-এর রাবী।’

    অপর একটি বর্ণনায় আছে, কুবরা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট সদকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ.-এর পত্র পৌঁছেছে, যাতে একথা ছিল যে, প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আধা সা বা তার মূল্য আধা দিরহাম ফিতরা (আদায় করতে হবে)।

    جاءنا كتاب عمر بن عبد العزيز في صدقة الفطر : نصف صاع عن كل إنسان أو قيمته : نصف درهم.

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৮)

    ৩০. আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি সকলকে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই এক সা খেজুর বা আধা সা গম ফিতরা দেওয়ার আদেশ করতেন।

    كان يأمر أن يلقي الرجل قبل أن يخرج صاعا من تمر، أو نصف صاع من قمح.

    (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩১৭)

    বিশিষ্ট তাবে তাবেয়ীগণের অভিমত

    ৩১. ইমাম আওযাঈ রাহ. বলেন,

    يؤدي كل إنسان مدين من قمح بمد أهل بلده. প্রত্যেকে প্রদান করবে নিজ দেশের মুদ (পাত্র) দ্বারা দুই মুদ। (আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ৪/১৩৯)

    ৩২. ইমাম লাইস রাহ. বলেন, গমের ক্ষেত্রে হিশামের মুদে (পাত্র) দুই মুদ আর খেজুর, যব ও পনিরের ক্ষেত্রে চার মুদ (বা এক সা)।

    بمد هشام، وأربعة أمداد من التمر والشعير والأقط. مدين من قمح

    (আততামহীদ ৪/১৩৯)

    বিশুদ্ধতা ও প্রসিদ্ধির ক্ষেত্রে আধা সা বিষয়ক হাদীসসমূহের অবস্থান

     

    এ পর্যন্ত উল্লেখিত আধা সা সম্পর্কিত হাদীস ও আছারের উপর চিন্তা করলে যে বিষয়গুলো পরিষ্কার বোঝা যায় তাই এই-

    ১. আধা সা সম্পর্কে একাধিক মারফূ হাদীস রয়েছে, যেগুলোর সনদ সহীহ বা হাসান।

    এ প্রবন্ধে যে হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর সাথে হাদীস বিশারদগণের মন্তব্যও উল্লেখ করা হয়েছে।

    ২. আধা সা সম্পর্কে সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-এর মুরসাল হাদীসটি দলীল হিসেবে যথেষ্ট ছিল। অথচ সেই মুরসাল হাদীসের সাথে শুধু এই প্রবন্ধেই উল্লেখ করা হয়েছে নয়টি মারফূ হাদীস, যার চারটি মুত্তাসিল এবং পাঁচটি মুরসাল; আরো উল্লেখ করা হয়েছে এগারটি আছারে সাহাবা এবং তেরজন তাবেয়ীর ফতোয়া। এই সকল হাদীস ও আছারের কারণে মূল বিষয়টিকে মাশহুর-মুস্তাফীয তো বটেই, মুতাওয়াতির বলা হলেও অতিশয়োক্তি হবে না। মুহাদ্দিস আহমদ আল গুমারী রাহ., যিনি বিগত শতাব্দীর হাতে গোনা কয়েকজন হাফেযে হাদীসের অন্যতম ছিলেন, তিনি এমন মন্তব্যই করেছেন।

     

    উল্লেখ্য, এ প্রবন্ধে উল্লেখিত বেশ কিছু হাদীস ও আছার একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। সনদের ভিন্নতার কারণে প্রত্যেকটি আলাদা হাদীস বলে গণ্য হবে।

    ৩. উপরোক্ত হাদীস ও আছারে বর্ণিত বিধানটির (অর্থাৎ খেজুর, যব ইত্যাদির এক সা আর গমের আধা সা) একটি বিশেষত্ব এই যে, তা ঘোষণা করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষক পাঠিয়েছিলেন, যা একাধিক রেওয়ায়েতে আছে। এ থেকে বোঝা যায়, বিধানটি ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি তা ব্যাপকভাবে অবগত করতে চেয়েছেন। এ থেকে আরো বোঝা যায়, এক সা ও আধা সা শরীয়তের দৃষ্টিতে দুটি স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। এজন্য উপরোক্ত হাদীসগুলোতে بعث بعث مناديا (ঘোষক পাঠিয়েছেন) أمر أمر مناديا مناديا (ঘোষককে আদেশ করেছেন) ইত্যাদি শব্দগুলো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

    ৪. এ বিধানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, তা বর্ণনা করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর একাধিক খলীফায়ে রাশেদ এবং কয়েকজন সাহাবী ঈদুল ফিতরের আগে আলাদাভাবে ভাষণ দিয়েছেন। পূর্বোক্ত হাদীস ও আছারে বর্ণিত خطب (ভাষণ দিয়েছেন)  শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রকৃত উত্তরসূরী আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ.-এ বিষয়ের বিধান সম্বলিত লিখিত ফরমান জারি করেছিলেন। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, তাঁর একটি ফরমানে শুধু আধা সা গম বা তার মূল্যের কথাই বলা হয়েছিল।

    ৫. খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল ও ফতোয়াও এই ছিল যে, গম দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করলে আধা সা দিবে। আর হাদীসে বর্ণিত বিধানের অনুকূলে যখন খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল ও সুন্নাহ পাওয়া যায় তখন তার অর্থ হয়, বিধানটি অটল ও মোহকাম, তা

    মানসূখ বা রহিত নয়; এবং তাতে ভিন্ন ব্যাখ্যারও অবকাশ নেই। তা নবী-নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত-عليكمعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدينا (তোমাদের জন্য অপরিহার্য, আমার সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাদেশীনের সুন্নাহকে অনুসরণ করা)।

    ৬. খোলাফায়ে রাশেদীন ছাড়া অন্যান্য ফকীহ সাহাবীও এই ফতোয়া দিয়েছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. এবং হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাহ.-এর ব্যক্তিগত আমল ভিন্ন হলেও তাঁরা কেউ এ কথা বলেননি, আধা সা গম আদায় করলে ফিতরা আদায় হবে না। তাঁরা আগ্রহী ছিলেন হাদীসে বর্ণিত খাদ্যবস্ত্ত দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে। আর ঘটনাক্রমে আধা সা সংক্রান্ত মারফূ হাদীস জানা না থাকায় তাঁরা সেটি দ্বারা ফিতরা আদায় করতে চাইতেন না। কিন্তু কখনোই তাঁরা এই ফতোয়া দেননি যে, আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায় হবে না; বরং ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আবু সায়ীদ খুদরী মারওয়ান ইবনুল হাকামকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-

    إن مروان لا يعلم، إنما علينا أن نعطي لكل رأس عند كل فطر صاعا من تمر أو نصف صاع من بر.

    মারওয়ানের তো জানা নেই। প্রতি ঈদুল ফিতরে আমাদের প্রদেয় হচ্ছে মাথাপিছু এক সা খেজুর অথবা আধা সা গম। (শরহু মাআনিল আছার ১/৩৪৯)

    তেমনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকেও বর্ণিত আছে যে, আবু মিজলায রাহ. তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন-

    إن إن الله قد أوسع، والبر أفضل من التمر؟

    আল্লাহ তাআলা স্বচ্ছলতা দিয়েছেন আর গম খেজুরের চেয়ে শ্রেয়। (অতএব আপনি গম দিয়ে ফিতরা আদায় করছেন না কেন?) উত্তরে ইবনে উমর রা. বলেছেন-

     إن أصحابي سلكوا طريقا، وأنا أحب أن أسلكه

    আমার সঙ্গীরা যে পথে চলেছেন আমিও সে পথে চলতেই পছন্দ করি। অর্থাৎ তাঁদের মতো খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করাই আমার কাছে পছন্দনীয়। তো প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজের পছন্দের কথা বলেছেন। প্রশ্নকারীর কথাকে খন্ডন করেননি কিংবা এ কথাও বলেননি যে, তা দ্বারা ফিতরা আদায় হবে না।

    সারকথা এই যে, আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায় হয়- এ বিষয়ে সকল সাহাবীর ইজমা ছিল। তো যে হাদীসের অনুকূলে ফকীহ সাহাবীগণ আমল করেছেন ও ফতোয়া দিয়েছেন, এরপর শীর্ষস্থানীয় মনীষী তাবেয়ীগণ আমল করেছেন ও ফতোয়া দিয়েছেন, যাদের মধ্যে মদীনা শরীফের সাত ফকীহ ও মুসলিম জাহানের বড় বড় ফকীহ তাবেয়ীও অন্তর্ভুক্ত, সে হাদীস যে متلقى بالقبول তথা সর্বজনগৃহীত সে বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ থাকতে পারে? আর এতো জানা কথা যে, ‘খবরে ওয়াহিদ’ শ্রেণীর কোনো হাদীসও যখন متلقى متلقى بالقبول (সর্বজনগৃহীত) হয়ে যায় তখন জুমহুর ফকীহ, মুহাদ্দিস ও উসূলবিদদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এই যে, তা মুতাওয়াতিরের মতো قطعي قطعي ও সন্দেহাতীত বলে গণ্য হয়। তাহলে যে হাদীস সনদের বিচারেও মাশহুর ও মুস্তাফীয তা যদি খাইরুল কুরূনের ফকীহদের নিকট تقلى بالقبول ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে তার বিশুদ্ধতার বিষয়ে কি কারো প্রশ্ন তোলারও  অবকাশ থাকে?

    এজন্য কেউ যদি আধা সা বিষয়ক হাদীসসমূহের উপর আপত্তি করে তবে সেটা হবে তার বিচ্যুতি, যদি না তার আপত্তি বিশেষ কোনো সনদের ক্ষেত্রে হয়। বলাবাহুল্য, কোনো বিষয়ে যদি বহু সংখ্যক হাদীস বিদ্যমান থাকলে আর সেগুলোর কোনো একটি হাদীস যয়ীফ হলে ঐ বিষয়টি প্রামাণ্য হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সংশয় প্রকাশ করা যায় না। তেমনি কোনো হাদীসের যদি অনেকগুলো সহীহ সনদ থাকে আর তা কোনো যয়ীফ রাবীও রেওয়ায়েত করে তাহলে তার রেওয়ায়েতের কারণে মূল হাদীসটিকে যয়ীফ বলা যায় না।

    আধা সা গম দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায়ের মাসআলায়ও তাই ঘটেছে। এ বিষয়ে অনেক হাদীস, আছার এবং সেগুলোর বহু সনদের মধ্যে দু’ একটি হাদীস এবং সনদ যয়ীফও রয়েছে। কারো দৃষ্টিতে কেবল এগুলোই ধরা পড়েছে ফলে তিনি বলতে শুরু করেছেন যে, আধা সা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়!! অন্যথায় যাদের দৃষ্টি বিস্তৃত এবং যাদের এ বিষয় সম্পর্কিত সকল হাদীস এবং রেওয়ায়েত সম্পর্কে নিরীক্ষণের সুযোগ হয়েছে তাদের মধ্য থেকে কোনো হাদীস বিশারদ আধা সা-এর বিশুদ্ধতার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেননি।

    বিশিষ্ট মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য

     

    এখানে আমরা নমুনাস্বরূপ কয়েকজন মুহাদ্দিস এবং ফকীহর বক্তব্য উদ্ধৃত করছি, যারা স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন যে, আধা সা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ সহীহ সূত্রে প্রমাণিত এবং গ্রহণযোগ্য। শেষের দিকে কয়েকজন সমকালীন আলেমের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, আমাদের দেশে যারা উক্ত বিষয়টিকে নতুন করে আলোচ্য বিষয় বানিয়েছেন তাদেরকে এদের ভক্ত লক্ষ্য করা যায়। আশা করি, এদের বক্তব্য দ্বারা তাদেরও আধা সা বিষয়ক হাদীসসমূহের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে ইতমিনান এবং প্রশান্তি হাসিল হবে।

    ১. ইমাম ত্বহাবী রাহ. আধা সা গম সম্পর্কে অনেকগুলো হাদীস ও আছার রেওয়ায়েত করার পর বলেন, এ পরিচ্ছেদে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, তারপর তাঁর সাহাবীগণ থেকে এবং তাঁদের পর তাবেয়ীদের থেকে যেসব রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছি, তা প্রমাণ করে যে, সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হল গম থেকে আধা সা আর গম ছাড়া অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী থেকে এক সা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো সাহাবী ও কোনো তাবেয়ী থেকে এর বিপরীত কিছু বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। সুতরাং এর বিরোধিতা করার অবকাশ কারো নেই। কারণ তা ছিল ইজমায়ী ও সর্বসম্মত বিষয়, হযরত আবু বকর সিদ্দীক, উমর ফারূক, উসমান ও আলী রা.-এর যমানা থেকে উপরোক্ত তাবেয়ীদের যামানা পর্যন্ত।

    هذا كل هذا كل ما روينا في هذا الباب عن رسول الله صلى الله عليه وسلم وعن أصحابه من بعده وعن تابعيهم من بعدهم كلها على أن صدقة الفطر من الحنطة نصف صاع ومما سوى الحنطة صاع، وما علمنا أن أحدا من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا من التابعين روي عنه خلاف ذلك، فلا ينبغي لأحد أن يخالف ذلك، إذ كان قد صار إجماعا في زمن أبي بكر وعمر وعثمان و علي إلى زمن من ذكرنا من التابعين.

    ২. ইমাম আবু উবাইদ কাসেম ইবনে সাল্লাম রাহ. (মৃত্যু : ২২৪ হি.) বলেন, গম, যব, খেজুর ও কিসমিস এগুলোর যে কোনোটি দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা যায়। খেজুর, কিসমিস বা যব দ্বারা আদায় করলে এক সা প্রদান করবে। আর গম দ্বারা আদায় করলে আমার মতে উত্তম হল, এক সা থেকে কম না দেওয়া। তবে আধা সা দিলেও ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। কারণ এক জামাত আলিম এই ফতোয়া দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের আরবী পাঠ নিম্নরূপ-

    وأما زكاة الفطر فإن صاحبها فيها بالخيار، إن شاء جعلها برا، وإن شاء جعلها تمرا، أو شعيرا أو زبيبا، فإن اختار التمر، أو الشعير، أو الزبيب فإن هذا المكوك يجزئ عن نفسين ونصف، لأنه صاعان ونصف، وإن اختار البر، فإن أحب الأمرين إلي له أن لا ينتقص من مكيلة الصاع شيئا، لأن أكثر الآثار عليه، وهو أفضل عندي من التمروالشعير،

    وإن جعله نصف صاع بر كان مجزيا عنه، لأنه قد أفتى به عدة من أهل العلم، وصاع تمر أو صاع شعير أحب إلي من نصف صاع بر، وإن كان مجزيا، لأنه هو أشد موافقة للاتباع.

    ৩. ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. (মৃত্যু : ৩৭০ হি.) বলেন, আধা সা গম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং হযরত আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, জাবির, আয়েশা, ইবনুয যুবাইর, আবু হুরায়রা, আসমা বিনতে আবু বকর, কাইস ইবনে সাআদ রা. প্রমুখ সাহাবী ও অধিকাংশ তাবেয়ী থেকে বর্ণিত হয়েছে। কোনো সাহাবী থেকে এ কথা বর্ণিত হয়নি যে, আধা সা গম প্রদান করলে ফিতরা আদায় হবে না।

    روي روي نصف صاع من بر عن النبي صلى الله عليه وسلم وأبي بكر وعمر وعثمان وعلي وابن مسعود وجابر وعائشة وابن الزبير وأبي هريرة وأسماء بنت أبي بكر وقيس بن سعد رضي الله عنهم أجمعين، وعامة التابعين، ولم يرو عن أحد من الصاحابة بأنه لا بجزئ نصف صاع من بر.

    (শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৩৪৫)

    ৪. ইমাম ইবনুল মুনযির রাহ. সম্ভবত আধা সা গম দিয়ে ফিতরা আদায় সংক্রান্ত মারফূ হাদীসমূহ তার নিকট পৌঁছেনি বা পৌঁছলেও সেগুলোর সনদের বিশুদ্ধতার দিকটি তাঁর নিকট স্পষ্ট হয়নি, ফলে তিনি সেগুলো প্রমাণিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর অভিমত ও সিদ্ধান্তের কারণে আধা সা-এর মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং নিজে তা গ্রহণ করেছেন।

    ফাতহুল বারীতে তাঁর বক্তব্য এভাবে উল্লেখিত হয়েছে-

     لا نعلم في القمح خبرا ثابتا عن النبي صلى الله عليه وسلم يعتمد عليه، ولم يكن البر بالمدينة ذلك الوقت إلا الشيء اليسير منه، فلما كثر في زمن الصحابة رأوا أن نصف صاع منه يقوم مقام صاع من شعير، وهم الأئمة، فغير جائز أن يعدل عن قولهم إلا إلى قول مثلهم، ثم أسند عن عثمان وعلي وأبي هريرة وجابر وابن عباس وابن الزبير وأمه أسماء بنت أبي بكر بأسانيد صحيحة أنهم رأوا أن في زكاة الفطر نصف صاع من قمح. انتهى، وهذا مصير منه إلى اختيار ما ذهب إليه الحنفية.

     অর্থাৎ গমের ক্ষেত্রে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস আমাদের জানা নেই এবং তাঁর সময়ে মদীনায় গমের ফলন খুব সামান্য ছিল। পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরামের যামানায় যখন গমের ফলন বৃদ্ধি পায় তখন তাঁরা আধা সা গমকে এক সা যবের স্থলাভিষিক্ত বলে মত দিলেন। আর তাঁরা হলেন উম্মতের অনুসরণীয় ব্যক্তি। সুতরাং তাঁদের বক্তব্য উপেক্ষা করে তাঁদের সমতুল্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারো মত গ্রহণ করা জায়েয নয়। এরপর ইবনুল মুনযির রাহ. বিশুদ্ধ সূত্রে হযরত উসমান, আলী, আবু হুরায়রা, জাবির, ইবনে আববাস, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর এবং তাঁর মাতা আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে, তাঁরা সকলেই সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ আধা সা গম মনে করেন। ইবনুল মুনযির রাহ.-এর বক্তব্য উল্লেখ করার পর ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন, এটা প্রমাণ করে, এ বিষয়ে তিনি হানাফীদের মত গ্রহণ করেছেন। (ফতাহুল বারী ৩/৪৩৭)

    ৫. আল্লামা ইবনে আবদুল হাদী আল হাম্বলী রাহ. (মৃত্যু : ৭৪৪ হি.) বলেন, ওয়াজিব ফিতরার ক্ষেত্রে আধা সা গমের সিদ্ধান্তটি একটি শক্তিশালী সিদ্ধান্ত এবং তা অনেক দলিল দ্বারা প্রমাণিত।

    القول بإيجاب القول بإيجاب نصف صاع من بر قول قوي، وأدلته كثيرة.

    (তানকীহু তাহকীকি আহাদীসিত তালীক ২/২৪৫)

    ৬. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.ও মনে করেন, আধা সা গম দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় হবে। তাঁর বিশিষ্ট শাগরিদ আল্লামা ইবনে মুফলিহ রাহ. কিতাবুল ফুরূতে স্বীয় উস্তাদের অভিমত এভাবে উল্লেখ করেছেন-

    واختار شيخنا بأنه يجزئ نصف صاع من بر، وقال : وهو قياس المذهب في الكفارة، وإنه يقتضيه ما نقله الأثرم.

    অর্থাৎ আমাদের শায়খ (ইবনে তাইমিয়া রাহ.) এ মত গ্রহণ করেছেন যে, আধা সা গম দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় হবে। তিনি বলেন, কাফফারার ক্ষেত্রে হাম্বলীদের যে মাযহাব তা একথাই বলে এবং ইমাম আছরাম রাহ. এর বর্ণনাও তা নির্দেশ করে। (আলফুরূ ১/৭০৯; যাদুল মাআদ ২/২০; আরো দেখুন : তামামুল মিন্নাহ ৩৮৬)

    ৭. আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. ‘‘যাদুল মাআদ’’ কিতাবে (২/১৮-২০) বলেন, আধা সা গমের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিক মুরসাল ও মুসনাদ হাদীস বর্ণিত আছে, যেগুলো সমষ্টিগতভাবে শক্তিশালী।

    وفيه عن النبي صلى الله عليه وسلم آثار مرسلة ومسندة يقوي بعضها بعضا.

    এরপর কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, আমাদের শায়খ (ইবনে তাইমিয়া রাহ.) এ মতটিকে শক্তিশালী আখ্যা দিতেন এবং বলতেন,  কাফফারার ক্ষেত্রে ইমাম আহমদ রাহ.-এর বক্তব্য যা বলে তা এই যে, গম থেকে সদকায়ে ফিতরের ওয়াজিব পরিমাণ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর অর্ধেক।

    وكان شيخنا رحمه الله تعالى : يقوي هذا المذهب ويقول : هو قياس قول أحمد في الكفارات، أن الواجب فيها من البر نصف الواجب من غيره.

    তিনি শুধু আধা সা গমের হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন এবং শাইখের অভিমত উল্লেখ করে ঐ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

    ৮. আল্লামা ছালেহ ইবনে মাহদী আলমাকবিলী রাহ. (মৃত্যু : ১১০৮ হি.) বলেন, এমন অনেক রেওয়ায়েত আছে, যা সম্মিলিতভাবে প্রমাণ করে যে, গমের ক্ষেত্রে ওয়াজিব ফিতরা হচ্ছে দুই মুদ বা আধা সা।

    وردت روايات يعمل بمجموعها أن الواجب من الحنطة مدان.

    (আল মানার ফিল মুখতার ১/৩৩১)

    ৯. আল্লামা আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সিদ্দীক আলগুমারী রাহ. বলেন, কেউ যদি বলে যে, আধা সা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়, যেমনটি ইবনুল মুনযির ও বাইহাকী রা.বলেছেন তাহলে এর উত্তরে আমরা বলব যে, বরং তা প্রমাণিত। কারণ তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীদের থেকে এত অধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, এরপর আর কোনো সংশয় থাকে না; বরং একে যদি মুতাওয়াতির বলা হয় তবুও অত্যুক্তি হবে না।

    فإن قيل : إن نصف صاع لم يثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم كما قال ابن المنذر والبيهقي؟ قلنا : بل هو ثابت لو روده عن النبي صلى  الله عليه وسلم والخلفاء الراشدين وغيرهم من الصحابة والتابعين، من طرق كثيرة لا يبقى معها شك في ثبوته، بل لا يبعد القول بتواتره. فقد ورد من حديث عبد الله بن عمرو بن العاص، وعبد الله بن عباس، وعائشة، وعبد الله بن ثعلبة، وأسماء بنت أبي بكر، وعبد الله بن عمر بن الخطاب، وجابر بن عبد الله، وزيد بن ثابت، وعصمة بن مالك، وعلي بن أبي طالب، وأبي هريرة، وأبي سعيد الخدري موصولا.

    وعن سعيد بن المسيب وأبي سلمة بن عبد الرحمن، وعبيد الله بن عبد الله بن عتبة بن مسعود، والقاسم بن محمد، وسالم بن عبد الله مرسلا.

    وعن أبي بكر، وعمر وعثمان وعلي وجابر وابن مسعود وابن الزبير وابن عباس ومعاوية وأبي سعيد الخدري موقوفا.

    وعن مجاهد وعطاء والشعبي وعمر بن عبد العزيز والحسن البصري وطاؤس وعبد الله بن شداد وإبراهيم النخعي والحكم وحماد مقطوعا.

    (তাহকীকুল আমাল ফী ইখরাজি যাকাতিল ফিতরি  বিল মাল ৬৩)

    ১০. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ. বলেন, আধা সা সম্পর্কে কয়েকটি মারফূ হাদীস রয়েছে এবং এ বিষয়ে অনেক মুরসাল ও মুসনাদ আছর রয়েছে, যেগুলো সমষ্টিগতভাবে শক্তিশালী। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. ‘‘যাদুল মাআদ’’ কিতাবে এমনটি বলেছেন এবং তিনি ঐসব আছার উল্লেখ করেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, গমের ওয়াজিব ফিতরা হল আধা সা। আর এটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া  রাহ.-এর অভিমত এবং ইবনুল কাইয়িম রাহ. এ দিকেই ঝুঁকেছেন। ইনশাআল্লাহ এটিই সঠিক মত।

    زاد فيه أحاديث مرفوعة إلى النبي صلى الله عليه وسلم وفي الباب آثار مرسلة ومسنده يقوي بعضها بعضا، كما قال ابن القيم في الزاد وقد ساقها فيه، فليراجعها من شاء، وخرجتها أنا في التعليقات الجياد. فثبت من ذلك أن الواجب في صدقة الفطر من القمح نصف صاع، وهو اختيار شيخ الإسلام ابن تيمية كما في الاختيبارات. ص : ٦٠ وإليه مال ابن القيم كما سبق، وهو الحق إن شاء الله تعالى.

      (তামামুল মিন্নাহ ৩৮৬)

    ১১. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ.-এর বিশিষ্ট শাগরিদ হুসাইন ইবনে আউদাহ আলআওয়াইশাহ বলেন, গমের ক্ষেত্রে সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ হল আধা সা। এটি ইমাম আবু হানীফা ও রাহ.-এর অভিমত এবং শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহ. ও আমাদের শাইখ (নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ.ও) এই মত পোষণ করতেন।

    তাঁর বক্তব্যের আরবী পাঠ এই –

    وأما وأما من البر : فنصف صاع، وهو قول أبي حنيفة، وقياس أحمد في بقية الكفارات، وبه يقول شيخ الإسلام وشيخنا رحم الله الجميع.

    عن عروة بن الزبير : أن أسماء بنت أبي بكر كانت تخرج على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم عن أهلها الحر منهم والمملوك ـ مدين من حنطة، أو صاعا من تمر بالمد، أو بالصاع  الذي يقتاتون به، أخرجه الطحاوي واللفظ له، وابن أبي شيبة وأحمد وسنده صحيح على شرط الشيخين، كما في تمام المنة.

    قال شيخنا فيه (٣٨٧) عقب أثر عروة ابن الزبير : فثبت من ذلك أن الواجب في صدقة الفطر من القمح نصف صاع، وهو اختيار شيخ الإسلام ابن تيمية كما في الاختيارات وإليه مال ابن القيم … وهو الحق إن شاء الله تعالى.

    (আলমাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলমুয়াসারাহ ৩/১৬৩)

    ১২. ড. মুহাম্মাদ আবদুল গাফফার আশশরীফ বলেন, হানাফী ইমামগণ আধা সা গম ফিতরা সম্পর্কে অনেক হাদীস ও আছার দ্বারা দলিল পেশ করেছেন। দলীলের প্রাচুর্য্য ও বিশুদ্ধতার কারণে আমার নিকট হানাফী ইমামদের বক্তব্যই অগ্রগণ্য। আর হানাফী ইমাম ছাড়াও খোলাফায়ে রাশেদীন, ইবনে মাসউদ, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ, আবু হুরায়রা, আসমা বিনতে আবু বকর রা. প্রমুখ সাহাবী এবং উমর বিন আবদুল আযীয রাহ.সহ বড় বড় তাবেয়ীগণ এ সিন্ধান্তই দিয়েছেন। এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমদ এবং ইবনুল মুনযির রাহ.সহ আরো অনেকেরই এই সিদ্ধান্ত ছিল।

    واستدل الحنفية بأحاديث وآثار كثيرة لوجوب نصف صاع من بر، … والراجح عندي مذهب الحنفية، لكثرة أدلتهم وصحتها … وقد قال بهذا القول عدا الحنفية الخلفاء الراشدون، وابن مسعود، وجابر بن عبد الله، وأبو هريرة، وأسماء بنت أبي بكر، وعمر بن عبد العزيز، وكبار التابعين وأحمد في رواية وابن المنذروغيرهم.

    (বুহুছ ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/২৭৬)

    ১৩. শায়খ মাহমুদ সাঈদ মামদূহ বলেন, আধা সা বিষয়ে একাধিক শক্তিশালী মুসনাদ হাদীস এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ অনেকগুলো মুরসাল হাদীস রয়েছে। ইমাম তাহাবী রাহ. তাঁর দুই কিতাব ‘‘শরহু মাআনিল আছার’’ ও ‘‘শরহু মুশকিলিল আছাওে’’ তা রেওয়ায়েত করেছেন। ইবনে আবদুল হাদী রাহ. ‘‘আততানকীহ’’ গ্রন্থে বলেছেন, আধা সা গম ওয়াজিব হওয়ার বক্তব্যটি শক্তিশালী এবং অনেক দলিল দ্বারা প্রমাণিত।

    وفي الباب مسندات قوية، ومراسيل غاية في الصحة أخرجها الإمام الطحاوي في كتابيه شرح معاني الآثار وشرح مشكل الآثار. وقد قال ابن عبد الهادي في التنقيح : ٢/١٤٧ القول بإيجاب نصف صاع من بر قول قوي، وأدلته كثيرة.

    (আততারীফ বিআউহামি মান কাসসামাস সুনানা ইলা সহীহিন ওয়া যয়ীফিন ৫/৩৮৯)

    আধা সা-এর পরিমাপটি কি নবী-যুগের পর নির্ধারিত হয়েছে?

     

    পূর্বোক্ত মাশহুর ও মুতালাক্কা বিলকবুল তথা প্রসিদ্ধ ও খাইরুল কুরূনের ইমামগণের মাঝে স্বীকৃত হাদীস ও আছারসমূহের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে কেউ কেউ এই বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন যে, সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, আধা সা-এর পরিমাপ হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে অথবা হযরত উমর রা.-এর যুগে নির্ধারিত হয়েছে।

    এ প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয় লক্ষ করুন।

    1.         যে রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, হযরত ওমর রা. আধা সা গমকে এক সা খেজুরের সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন এবং মানুষ সে অনুযায়ী আমল করতে শুরু করে তা একটি ‘মালূল রেওয়ায়েত’ তথা ভুল বর্ণনা। ইমাম মুসলিম রাহ. কিতাবুত তাময়ীযে সেটিকে বর্ণনাকারীর ওয়াহম ও ভ্রান্তি বলে চিহ্নিত করেছেন।

    ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. ইবনুল জাওযী রাহ. শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. এবং হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.ও উক্ত রেওয়ায়েতকে যয়ীফ বা মালূল বলেছেন।

    (দেখুন : আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ১৪/৩১৭-৩১৮; আততাহকীক লিআহাদীসিত তালীক, ইবনুল জাওযী ২/২৪৩; আততানকীহ ১/৪৮০; ফাতহুল বারী ৩/৪৩৫)

    2.         এ কথা ঠিক যে, কোনো কোনো সহীহ হাদীসে আছে, হযরত মুআবিয়া রা. তাঁর খেলাফত-আমলে হজ্ব বা উমরার এক সফরে মদীনা আগমন করেন। তখন তিনি বলেছিলেন-

    أرى أن إني أرى أن مدين من سمراء الشام تعدل صاعا من تمر.

    আমার মতে শামের দুই মুদ (আধা সা) গম এক সা খেজুরের সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম ১/৩১৮)

    এ বর্ণনা থেকে কিছু লোক মনে করেছে, আধা সা গম আদায়ের বিধানটির প্রচলন হযরত মুআবিয়া রা.-এর উক্ত প্রস্তাবনার পর থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে এর কোনো অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু তারা ভেবে দেখেননি যে, এ রেওয়ায়েতটি যেমন সহীহ, আধা সায়ের মারফূ হাদীসগুলো তো আরো বেশি সহীহ। তো এর কারণে ওগুলোকে অস্বীকার করা কিভাবে সঠিক হতে পারে? তাহলে তো কেউ এমনও বলে বসতে পারে যে, সহীহ মারফূ হাদীসে যেহেতু আধা সার কথা আছে তাই ঐ রেওয়ায়েতটি সহীহ নয়, যাতে বলা হয়েছে, আধা সা-এর (পরিমাণ) হযরত মুআবিয়া রা.-এর আগে ছিল না।

    কেউ কেউ বলে থাকে, আধা সায়ের হাদীস বুখারী-মুসলিমে নেই। পক্ষান্তরে এই পরিমাপ হযরত মুআবিয়া রা. শুরু করেছেন তা বুখারী-মুসলিমে আছে। তাই অগ্রগণ্য বর্ণনা হল, মুআবিয়া রা.ই আধা সা-এর উদ্ভাবক!!

    এই দাবি নিতান্তই বালখিল্যতা। কারণ যে সকল হাদীসের বিষয়বস্ত্ত সাহাবা-তাবেয়ীনযুগের মনীষী-মহলে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়ে যায় তাকে শুধু এই অজুহাতে গৌণ বা নগণ্য সাব্যস্ত করা যে, হাদীসটি বুখারী-মুসলিমে সংকলিত হয়নি, এর চেয়ে হাস্যকর বিষয় আর কী হতে পারে? তবে কি ফকীহ সাহাবী ও তাবেঈদের স্বীকৃতি এমনই তুচ্ছ বিষয় যে, পরবর্তীযুগে বুখারী-মুসলিমে সংকলিত হওয়া ছাড়া তার কোনো মূল্য নেই; বরং তা যয়ীফ বা গৌণ (অপরটির তুলনায় অগ্রহণযোগ্য) হয়ে যাবে? জেনে রাখা দরকার, এ জাতীয় চিন্তা-ভাবনা হাদীস অস্বীকারকারীদের জন্য রসদ যুগিয়ে থাকে!

    আর এই দু’ একটি রেওয়ায়েতের কারণে আপনি কতগুলো রেওয়ায়েতকে অস্বীকার করবেন? আধা সায়ের মারফূ হাদীস এবং এ সংক্রান্ত সাহাবা-তাবেয়ীদের আছারের সংখ্যা তো এসব রেওয়ায়েত থেকে অনেক গুণ বেশি। এই সকল রেওয়ায়েতকে শুধু এ কারণে প্রত্যাখ্যান করে দিবেন যে, কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে, উক্ত পরিমাপটি হযরত মুআবিয়া রা.-এর যামানায় নির্ধারিত হয়!?

    হযরত মুআবিয়া রা.-এর আগে যদি এই পরিমাপের কোনো অস্তিত্ব না থেকে থাকে তাহলে খোলাফায়ে রাশেদীন ও বড় বড় সাহাবী তা কোথায় পেলেন, যারা হযরত মুআবিয়া রা.-এর খেলাফত আমলের বহু আগেই ইন্তিকাল করেছিলেন? তাঁরা কীসের ভিত্তিতে এক সা যব ও খেজুরের সাথে আধা সা গমের ফায়সালা ও ফতোয়া দিতেন?

    আসল কথা এই যে, বুখারী-মুসলিমের ঐ রেওয়ায়েতের সাথে আধা সায়ের হাদীস ও আছারের এমন কোনো সংঘাত নেই যে, একটির কারণে অন্যটিকে অস্বীকার করতে হবে। ওই রেওয়ায়েতে শুধু এটুকু বলা হয়েছে যে, হযরত মুআবিয়া রা. এই প্রস্তাব দিয়েছেন যে, আধা সা গম এক সা খেজুরের সমতুল্য। অন্যরাও তাঁর সাথে একমত হয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবের সরল অর্থ হচ্ছে, আধা সা সংক্রান্ত মারফূ হাদীসগুলো তাঁর জানা ছিল না। আর এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিটি হাদীস প্রত্যেক সাহাবীর জানা থাকবে তা না অপরিহার্য, না বাস্তবে সম্ভব। এ কারণেই উসূলে হাদীসের কিতাবে এটি একটি স্বীকৃত বিষয়।

    হযরত মুআবিয়া রা.-এর প্রস্তাবের সাথে কেউ এজন্যই দ্বিমত পোষণ করেননি যে, বিশিষ্টদের জানা ছিল, তাঁর প্রস্তাব নতুন কিছু নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহর দ্বারা তা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত।

    এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, আধা সা সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদীস ও আছার হচ্ছে মৌখিক বর্ণনা। অর্থাৎ বিধানটি মুখে বর্ণনা করা হত, কিন্তু ঐ সময় মক্কা মদীনায় গমের প্রচলন কম থাকায় তা আমলের সুযোগ হত কম। সাধারণত খেজুর ও যব দ্বারাই ফিতরা আদায় করা হত, যার নির্ধারিত পরিমাণ এক সা।

    হযরত মুআবিয়া রা.-এর যামানায় গমের প্রচলন বৃদ্ধি পেলে তিনি মিম্বারের দাঁড়িয়ে গম দ্বারা ফিতরা আদায়ের উৎসাহ দিয়েছেন, তখন সাধারণ মানুষও তা জেনেছে এবং ব্যাপকভাবে আমলও করেছে। এর অর্থ এটা নয় যে, ইতিপূর্বে আধা সায়ের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। অস্তিত্বই যদি না থাকবে তাহলে এতগুলো সহীহ হাদীস এবং সাহাবা-তাবেয়ীনের এত আছার ও ফতোয়া এল কোত্থেকে?! (ফাতহুল কাদীর ২/২২৮; ফায়যুল বারী ৩/৫৯; ইলাউস সুনান ৯/১০৭; মাআরিফুস সুনান ৫/৩০৫-৩১০)

    আধা সা কি আলাদা পরিমাপ নয়?

    কেউ কেউ বলেন যে, সাহাবায়ে কেরাম আধা সা গম এক সা খেজুরের সমমূল্যের মনে করার কারণে তা দ্বারা ফিতরা আদায়ের ফতোয়া দিয়েছিলেন। আসলে তা ফিতরা আদায়ের আলাদা কোনো পরিমাপ নয়। বর্তমানে যেহেতু গমের দাম খেজুর ইত্যাদির চেয়ে কম তাই এখন আধা সা গম দ্বারা ফিতরা আদায় হবে না।

    এই বক্তব্যও ঐ ভুল ধারণা থেকেই উৎসারিত যে, আধা সা গমের পরিমাপ মারফূ হাদীসে নেই। অথচ ইতিপূর্বের আলোচনায় আমরা দেখেছি, সায়ের মতো আধা সাও একটি আলাদা পরিমাপ হিসেবে মারফূ হাদীসে বিদ্যমান আছে। খোলাফায়ে রাশেদীন ও খায়রুল কুরূনের ফকীহগণের ফতোয়াও তা-ই।

    দ্বিতীয় কথা এই যে, সাহাবায়ে কেরামের যুগেই যখন গমের দাম কমে গেল তখনও তাঁরা আধা সা গমই আদায় করেছেন। ঐ সময় হযরত আয়েশা রা. এবং হযরত আলী রা. পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেহেতু দাম কমে গেছে তাই এখন গমও এক সা-ই আদায় কর। উম্মুল মু’মিনীনের বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-

    أحب إلي أن إذا وسع الله على الناس أن يتموا صاعا من قمح عن كل إنسان.

    আমার নিকট পছন্দনীয় হল, আল্লাহ তাআলা যখন মানুষকে প্রাচুর্য দিয়েছেন তখন তারা মাথাপিছু এক সা গম সদকায়ে ফিতর আদায় করুক। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৫; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/৩৩৬)

     

    হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, হযরত আলী রা. এসে যখন মূল্য সস্তা দেখলেন তখন বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে প্রাচুর্য দান করেছেন। সুতরাং তোমরা যদি সব জিনিসই এক সা করে আদায় করতে (তবে তা উত্তম হত।)

    فلما قدم علي ورأى رخص السعر قال : قد أوسع الله عليكم فلو جعلتموه صاعا من كل شيء.

    (সুনানে আবু দাউদ ১/২২৯)

    বোঝা গেল যে, তাঁরা পুরা এক সা দেওয়া জরুরি বলতেন না, উৎসাহিত করতেন। আর এতে দোষের কিছু নেই। মানুষ নফল হিসেবে যত বেশি আদায় করতে চায় করতে পারে।

    আর এখন তো এক সা গমের মূল্যও এক সা খেজুরের চেয়ে কম তাহলে কি এখন এই ফতোয়া দেওয়া হবে যে, এক সা গম দ্বারাও ফিতরা আদায় হবে না?

    তৃতীয়ত ফিতরার ক্ষেত্রে মূল্যকে মানদন্ড ধরা হয়েছে-এ চিন্তা গোড়াতেই প্রশ্নবিদ্ধ।

    মূল্যই যদি মূল মাপকাঠি হত তাহলে সায়ের বদলে ছামান বা মুদ্রাই পরিমাপ হিসেবে নির্ধারিত হত। কিন্তু শরীয়ত তা করেনি। ছামান বা মুদ্রার স্থলে كيل বা মাপের ভান্ডকে মানদন্ড ধরা হয়েছে। আর كيل (পাত্র) এর পরিমাণ নির্দিষ্ট। তাতে কমবেশি হয় না। মূল্যই যদি প্রকৃত বিবেচ্য হত তাহলে নবী-যুগে এক সা খেজুরের স্থলে এক সা খেজুরের দাম দীনার-দিরহামে নির্ধারণ করে তাকে মাপকাঠি সাব্যস্ত করা হত। সেক্ষেত্রে কখনো কখনো দুই তিন সাও আদায় করতে হত।

    চতুর্থত ফকীহদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, নবী-যুগে এক সা খেজুর, যব, কিসমিস বা পনিরের মূল্য ও আধা সা গমের মূল্য সমান ছিল না। যথেষ্ট তফাত ছিল। সুতরাং সদকায়ে ফিতরের উক্ত পরিমাপের ক্ষেত্রে মূল্যকেই প্রকৃত বিবেচ্য সাব্যস্ত করা খুবই আপত্তিকর। (দেখুন : শরহু মুশকিলিল আছার, ইমাম তহাবী ৯/৩৫; আততাজরীদ, ইমাম কুদূরী ৩/১৪১৫)

    পঞ্চমত কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট কোনো বিধানে তত্ত্ব ও তাৎপর্যের ভিত্তিতে রদবদল করার কোনো অবকাশ নেই। এ কারণে মূল্যের ওঠানামার ভিত্তিতে শরীয়তের একটি মাপকাঠিকে অকার্যকর করে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

     

    মাসলাহাত ও উপযোগের ভিত্তিতে মানসুস আলাইহি তথা কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানে রদবদল সম্পূর্ণ অবৈধ

    শরীয়তের আহকাম ও বিধিবিধানের হিকমত ও মাসলাহাত তথা বিভিন্ন উপকার-উপযোগ সম্পর্কে যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয় তাকে ‘ইলমু আসরারিশ শরীয়া’ বলে। এটি অতি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল শাস্ত্র। এ প্রসঙ্গে একটি স্বীকৃত কথা এই যে, শরীয়তের অধিকাংশ বিধানের উপযোগ কুরআন-সুন্নাহয় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি; বরং এ বিষয়ের মনীষী লেখকরা নিজ নিজ প্রজ্ঞা অনুযায়ী ঐসব মাসলাহাত আলোচনা করেছেন। সুতরাং তাদের আলোচনা সম্পূর্ণ ভুলত্রুটিমুক্ত বা শরীয়তের সকল মাসলাহাত তারা আলোচনা করে ফেলেছেন-এমনটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃত বিষয় এই যে, আল্লাহ প্রদত্ত আহকামের পিছনে হাজারো মাসলাহাত ও উপযোগিতা থাকতে পারে, যা পুরোপুরি মানুষের বুঝে আসাও জরুরি নয়।

    এরপর কোনো বিধানের হিকমত ও মাসলাহাত যদি সুস্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে জানাও যায় তারপরও মূলনীতি এই যে, এসব হিকমত ও মাসলাহাত আহকাম ও বিধানের মানদন্ড নয়। বিধানের মানদন্ড হচ্ছে দলিল। সুতরাং শরীয়তের দলিল থেকেই শরীয়তের বিধান আহরিত হবে, মাসলাহাত বা উপযোগ থেকে নয়।

    আর এ সকল মাসলাহাতের কারণে কুরআন-হাদীসে বর্ণিত বিধানকে পরিবর্তন করা বা কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত শরয়ী পরিমাপের মধ্যে রদবদল করা তো সম্পূর্ণ অবৈধ।

    ইলমু আসরারিশ শরীয়াহ বিষয়ে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হল শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. (মৃত্যু : ১১৭৬ হি.) কৃত ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’। গ্রন্থকার তার গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় একথাগুলো পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন। তাঁর আরবী আলোচনার অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করছি।

    نعم كما أوجبت السنة هذه، وانعقد عليها الإجماع، فقد أوجبت أيضا : أن نزول القضاء بالإيجاب والتحريم سبب عظيم في نفسه، مع قطع النظر عن تلك المصالح. لإثابة المطيع وعقاب العاصي، وأنه ليس الأمر على ما ظُنَّ من أن حسن الأعمال وقبحها، بمعنى استحتقاق العامل الثواب والعذاب، عقليان من كل وجه … كيف ولو كان كذلك لجاز إفطار المقيم الذي يتعانى كتعاني المسافر، لمكان الحرح المبني عليه الرخص. ولميجز إفطار المسافر المترفّ. وكذلك سائر الحدود التى حدها الشرع.

    সামনে গিয়ে আরো বলেন, আর হাদীস শরীফ একথাও প্রমাণ করেছে যে, শরীয়তের আহকাম পালনের জন্য যখন তা নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয় তখন মাসলাহাত জানার অপেক্ষায় থাকা বৈধ নয়।

    কারণ বহু মানুষ নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি দ্বারা শরীয়তের বহু মাসলাহাত বুঝতে অক্ষম আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আমাদের বিদ্যা ও বুদ্ধির চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ আশ্রয়। এ কারণে এ শাস্ত্রের বিষয়ে অযোগ্য লোকের প্রতি কখনো ‘উদারতা’ প্রদর্শন করা হয়নি। এখানেও ঐ সকল শর্ত প্রযোজ্য, যা আল্লাহর কালামের তাফসীরের ক্ষেত্রে রয়েছে। এবং আছার ও সুনানের সহায়তা ছাড়া নিছক যুক্তির আলোকে এ শাস্ত্রে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ অবৈধ ও হারাম।

     

    কিতাবের প্রথমাংশের শেষে باب الفرق بين المصالح والشرائع শিরোনামে একটি আলাদ পরিচ্ছেদে তিনি এ বিষয়টি আরো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছেন। সেখানে পরিষ্কার লিখেছেন যে, সকল ফকীহ এ বিষয়ে একমত যে, মাসলাহাত ও উপযোগের ভিত্তিতে কিয়াস করা সহীহ নয়।

    তালিবুল ইলমগণ শাহ সাহেব রাহ.-এর এই ইলমী আলোচনাগুলো হযরত মাওলানা মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘রাহমাতুল্লাহিল ওয়াসিআহ’ থেকে (১/১০৮-১১১, ২/৪৫৩-৪৬৭) পাঠ করতে পারেন।

    যাইহোক, ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, এই নীতিটি একটি সর্বজনস্বীকৃত মূলনীতি। শাহ ছাহেব রাহ.ও বলেছেন, এই নীতি হাদীস ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত এবং এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম একমত।

    সারকথা সদকাতুল ফিতরের পরিমাণের ক্ষেত্রে একটি মুজতাহাদ ফীহ হিকমতের আশ্রয় নিয়ে কিয়াস ও ইজতিহাদের অবকাশ নেই। আর এর  পরিমাণ সংক্রান্ত হাদীসের স্পষ্ট কোনো বক্তব্যকে অকার্যকর করে দেওয়া যে  সম্পূর্ণ অবৈধ তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

    উপকার-উপযোগকে আহকাম ও বিধানের বুনিয়াদ বানানো সম্ভবও নয়

    শরীয়তের দলিল-প্রমাণ হচ্ছে আহকাম ও বিধানের বুনিয়াদ। আর উপকার-উপযোগ জানার সুফল হচ্ছে, এর দ্বারা চিন্তাশীল মানুষের ঈমান মজবুত হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি হয়। তবে, আগেই বলা হয়েছে যে, শরয়ী বিধানের কার্যকারণকে আহকামের ভিত্তি বানানোর কোনো অবকাশ নেই। আর বাস্তবে তা সম্ভবও নয়। কারণ সেক্ষেত্রে শরীয়ত বা শরীয়তের হুকুম থাকবে না, স্বেচ্ছাচারিতা ও মনগড়া মতামতে পর্যবসিত হবে।

    উদাহরণস্বরূপ যে পরিমাণ সদকায়ে ফিতর আদায় করা আবশ্যকীয় করে দেওয়া হয়েছে তার হিকমত ও বাহ্যিক উদ্দেশ্য সম্পর্কেই চিন্তা করা যায়। কিছু দুর্বল বর্ণনার উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে যে, এই বিধানের হিকমত ও উদ্দেশ্য হল, ঈদের দিন গরীব-মিসকীনদের খাবারের ব্যবস্থা করা।  উক্ত বর্ণনার শব্দ  طعمة للمساكين  দ্রষ্টব্য।

    ২. ঐ দিন তাদেরকে দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতা থেকে রক্ষা করা। অন্তত তাদের ঐ দিনের প্রয়োজন পূরণ করা। একটি রেওয়ায়েতের শব্দ-

    أغنوهم عن المسألة في هذا اليوم

    এখন যদি কেউ এই হিকমত ও উদ্দেশ্যকে বুনিয়াদ বানিয়ে বলতে থাকে, আমাদের আসল খাবার যেহেতু চাল তাই খেজুর বা গমের স্থলে চাল দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। আর তা হতে হবে এক সা। তাহলে প্রশ্ন হবে যে, খেজুর ও রুটি তো তরকারি ছাড়াও খাওয়া যায়, কিন্তু ভাত তো তরকারি ছাড়া খাওয়া যায় না। কাজেই এক সা চালের সাথে পরিমাণ মতো তরকারিরও ব্যবস্থা করতে হবে। আর তা মাছের তরকারি হলে উত্তম হয়।

    এছাড়া অনেক গরীব লোকের পরিবার বড়। পরিবারের সকল সদস্যের দু’ বেলা বা তিন বেলা খাবারের জন্য এক সা চাল যথেষ্ট নয়; বরং দুই, তিন সা প্রয়োজন। অতএব সামর্থ্যবানদের উপর ওয়াজিব, যে সকল গরীব পরিবারের নিকট ঈদের দিনের খাবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য পৌঁছেনি তাদের জন্য অতিরিক্ত চালের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের পক্ষে যদি এক সা রও বেশি চাল দিতে হয়  তা তাদেরকে দিতে হবে। কথা এখানেই শেষ নয়। ঐ দিন গরীবদেরকে অমুখাপেক্ষী করাই যদি ফিতরার বিধানের মূল নিয়ন্ত্রক হয় তবে তো বর্তমান সমাজের রেওয়াজ অনুযায়ী গরীব-পরিবারের নতুন কাপড়, নতুন জুতা ও বিবিধ প্রকারের মিষ্টান্তের ব্যবস্থাও ফিতরার মাধ্যমে করত হবে। এভাবে আরো নতুন নতুন প্রস্তাব আসতে পারে। তো আসল কথা এই যে, হিকমত ও উপকারিতাকে বিধানের নিয়ন্ত্রক বানানো অসম্ভব।

    গত রমযানে (১৪৩১ হি.) দৈনিক নয়া দিগন্তে সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে জনৈক প্রফেসরের একটি প্রবন্ধ নজরে পড়েছিল। তাতে তিনি লিখেছেন-‘সদকাহর ক্ষেত্রে ইসলামের মূল স্পিরিট হল গরীবদের স্বার্থ সংরক্ষণ। এর পাশাপাশি আদায়কারীর সামর্থ্যকেও বিবেচনায় রাখা বাঞ্ছনীয়। অতএব এই দুই মূলনীতির আলোকে আমরা বলতে পারি, আদায়কারীর সামর্থ্যকে বিবেচনায় রেখে এবং গরীবদের স্বার্থ সংরক্ষণের খাতিরে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ পলিসি গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।

    ক. ধনীদের জন্য এসব বস্ত্তর মধ্যে যার মূল্য সর্বোচ্চ তার এক সা পরিমাণ। যেমন কিসমিস।

    খ. উচ্চ মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে যে বস্ত্তর মূল্য মাঝামাঝি তার এক সা পরিমাণ। যেমন-খেজুর।

    গ. নিম্ন মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে যে বস্ত্তর মূল্য সর্বনিম্ন তার এক সা পরিমাণ। যেমন-গম বা যব হবে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণের ভিত্তি। (দৈনিক নয়া দিগন্ত, শুক্রবার ৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ঈ., ২৩ রমযান, ১৪৩১ হি.)

    এ প্রস্তাব নিছক প্রস্তাবমাত্র। একে শরীয়তের বিধান বানিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। অন্যথায় নতুন নতুন ‘শরীয়ত’ অস্তিত্ব লাভ করবে। কারণ ‘যুক্তি’র তো অভাব নেই। প্রত্যেকেই নিজ নিজ যুক্তিতে নতুন নতুন প্রস্তাব পেশ করতে থাকবে। তো কুরআন-হাদীসের বিধানের বদলে এমন এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সূচনা ঘটবে, যার রাশ টেনে ধরার কোনো উপায় থাকবে না।

    চাল দ্বারা যদি ফিতরা দেওয়া হয়

     

    চাল দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা হাদীস শরীফে নেই। এজন্য চালকে মানদন্ড ধরে ফিতরা আদায় জরুরি বলার অবকাশই নেই। তবে কেউ যদি ফিতরায় চাল দিতে চায় তাহলে তাকে অন্তত এ পরিমাণ চাল দিতে হবে, যার মূল্য আধা সা গম কিংবা এক সা খেজুর, কিসমিস, পনির বা যবের সমপরিমাণ হয়, এরচেয়ে বেশি চাল দিলে তা নফল দান বলে গণ্য হবে।

    এই কথা ঠিক নয় যে, আমাদের সাধারণ খাবার যেহেতু চাল আর ফিতরের পরিমাণ হল এক সা খাদ্যবস্ত্ত তাই চাল ও এক সা-ই দিতে হবে। কারণ কোনো সহীহ হাদীসে বলা হয়নি সকল অঞ্চলের লোকদের তাদের নিজ নিজ সাধারণ খাবার দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হবে। তেমনি একথাও কোনো সহীহ হাদীসে নেই যে, প্রত্যেক খাদ্যবস্ত্ততে সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ এক সা। বরং একাধিক সহীহ হাদীসে আছে, গম দ্বারা ফিতরা আদায় করলে তার পরিমাণ হল আধা সা। এজন্য যে কোনো অঞ্চলের, যেকোনো ব্যক্তি আধা সা গম বা তার মূল্য প্রদান করলে তার ফিতরা আদায় হবে।

    কেউ যদি শরীয়তের দলিল-প্রমাণ ছাড়া শুধু যুক্তির ভিত্তিতে চালের ক্ষেত্রেও এক সা দেওয়াকে জরুরি বলে সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্যকে বাতিল করে আধা সা গম ফিতরা আদায় থেকে বাধা দেওয়ার অধিকার সে কোথায় পেল? আর তার ঐ দলিলহীন যুক্তির-ই বা কী মূল্য?

    এরপর যদি কোনো সময় এক সা চালের মূল্য আধা সা গমের বরাবর বা এর চেয়ে কম হয় তখন তাদের ফতোয়া কী হবে?

    ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতি

     

    পরিশেষে আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীলদের কাছে নিবেদন করতে চাই যে, এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং এর নামের সাথে ‘ইসলামিক’ শব্দটি যুক্ত আছে। এদেশের মুসলমানদের অনেক আশা-ভরসা এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে। সঙ্গত কারণেই এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের উপর দায়িত্ব আরোপিত হয় যে, এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে কোনো সিদ্ধান্ত প্রচার করার আগে তারা অন্তত দুটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন এং নিশ্চিত হবেন : এক. সিদ্ধান্তটি কুরআন ও সুন্নাহর কোনো বিধান বা কোনো ইজমাঈ বিধানের পরিপন্থী নয়। দুই. সিদ্ধান্তটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্য বিনা কারণে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী নয়।

    এ ভূ-খন্ডে যখন থেকে ইসলামের আগমন, তখন থেকেই এর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধিবাসী হানাফী মাযহাব অনুসারে আমল করে আসছে। স্বয়ং ফাউন্ডেশন ফিকহে হানাফী মোতাবেক ফতোয়া ও মাসায়েল এবং সেগুলোর দলিল-প্রমাণের উপর বহু গ্রন্থ ও বইপত্র প্রকাশ করেছে। তাই ফাউন্ডেশনের জন্য

    ফিকহে হানাফীর কোনো দলীলভিত্তিক মাসআলার পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আদৌ সমীচীন নয়। ভবিষ্যতেও এদেশের মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশলীদের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেওয়া আবশ্যক।

    শরীয়তের সীমার ভেতরে থেকে শরীয়তের হিকমত ও মাসলাহাতের ভিত্তিতে ফাউন্ডেশন কোনো পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানা থেকে চলে আসা উম্মতের অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা দ্বারা প্রমাণিত কোনো মাসআলায় কোনোরূপ পরিবর্তন সাধনের অধিকার তার নেই। এদেশের মুসলমান কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী এবং ইজতিহাদী মাসআলাসমূহে ফিকহে হানাফী মোতাবেক আমলকারী। কারো নিজস্ব ইজতিহাদ বা ব্যক্তিগত মতামত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না আর তা হওয়া জরুরিও নয়। এ কারণে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা এড়ানোর স্বার্থেই ফাউন্ডেশনের কর্তব্য, সর্বসম্মত নীতি থেকে বিচ্যুত না হওয়া এবং সকল সিদ্ধান্তে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা।

    আল্লাহ তাআলা সর্বদা এ প্রতিষ্ঠানটিকে ইসলাম ও মুসলমানদের উপকারে নিয়োজিত রাখুন। আমীন ইয়া আরহামার রাহিমীন।

     

    প্রবল বৃষ্টিপাতে জাপানে ভূমিধস, নিহত ৬

    প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সৃষ্ট ভূমিধসে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। বুধবার ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে।
    জাপানের জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, দক্ষিণের প্রধান দ্বীপ কিউশুর কয়েক হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখানেই গত এপ্রিলে ভূমিকম্পের কারণে ৪৯ জন মৃত্যু হয়েছিল।
    আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া এক নারী এনএইচকে-কে বলেন, ‘আমাকে এতোটাই তাড়াহুড়া করতে হয়েছে যে, কেবল গায়ের পোশাক ছাড়া কিছুই আনতে পারিনি আমি।’
    নিহতদের মধ্যে এক দম্পতিও রয়েছে। কুমামুতো এলাকায় আশির দশকে তৈরি করা তাদের বাড়িটি মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। এর আগে কয়েকটি এলাকায় মাত্র আধা ঘন্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
    এদিকে সরকারি কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গত এপ্রিলে ভূমিকম্পের পর এ এলাকার ভূমি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে আরো ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে।

    রমযান ও রোযা : গুরুত্ব ও ফযীলত

    মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান

    হিজরীবর্ষের নবম মাসটির নাম রমযানুল মুবারক। এ মাসের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বলার অপেক্ষা রাখে না। এ মাস আল্লাহ তাআলার অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের উত্তম সময়, পরকালীন পাথেয় অর্জনের উৎকৃষ্ট মৌসুম। ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার এবং তাযকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত। মুমিন বান্দার জন্য রমযান মাস আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। তিনি এই মাসের প্রতিটি দিবস-রজনীতে দান করেছেন মুষলধারা বৃষ্টির মত অশেষ খায়ের-বরকত এবং অফুরন্ত কল্যাণ। মুমিনের কর্তব্য, এই মহা নিআমতের জন্য কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত হওয়া এবং এর কদর করা।

    এ মাসে বান্দা পার্থিব সকল চাহিদা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করবে, অতীতের সকল পাপাচার থেকে ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে ঈমানী জিন্দেগীর উত্তাপ গ্রহণ করবে, তাকওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে পুরো বছরের ইবাদত ও ইতাআতের শক্তি সঞ্চয় করবে, চিন্তা-চেতনা ও কর্ম-সাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবেÑএই হচ্ছে মুমিনের আনন্দ।

    তবুও কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে এবং হাদীস শরীফের বিস্তৃত বর্ণনায় রমযান মাসের যে গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, তার কিছু দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করব। এরপর পেশ করব এ মাসের প্রধান আমল সিয়াম বা রোযা সম্পর্কে কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফের কিছু নির্দেশনা।

    ১. সিয়াম ও কিয়ামের মাস

    মুসলিম উম্মাহর নিকট রমযান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত রোযা ও তারাবীহ’র বার্তা নিয়ে। এটি রমযান মাসের বিশেষ আমল। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এ দুই বিষয়ে যতœবান হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনÑ

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.

    হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকী) হতে পার। Ñসূরা বাকারা (২) ১৮৩

    হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেনÑ

    لَمَّا حَضَرَ رَمَضَانُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَ: قَدْ جَاءَكُمْ رَمَضَانُ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ، افْتَرَضَ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَتُغَلُّ فِيهِ الشَّيَاطِينُ، فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا، فَقَدْ حُرِمَ.

    যখন রমযান মাসের আগমন ঘটল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমযান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শিকলে বন্দী করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৭১৪৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৮৩৮৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৮৯৫৯

    ২. কুরআন নাযিলের মাস

    রমাযানুল মুবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হল তা কুরআন নাযিলের মাস। এই পবিত্র মাসেই আল্লাহ তাআলা পূর্ণ কুরআন মাজীদ লওহে মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। অতপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কুরআনের সর্বপ্রথম অহীও এ মাসেই নাযিল হয়। ইরশাদ হয়েছেÑ

    شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

    রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক্ব-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোযা রাখে। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৮৫

    ৩. মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস

    হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    مَا أَتَى عَلَى الْمُسْلِمِينَ شَهْرٌ خَيْرٌ لَهُمْ مِنْ رَمَضَانَ، وَلَا أَتَى عَلَى الْمُنَافِقِينَ شَهْرٌ شَرٌّ لَهُمْ مِنْ رَمَضَانَ، وَذَلِكَ لِمَا يُعِدُّ الْمُؤْمِنُونَ فِيهِ مِنَ الْقُوَّةِ لِلْعِبَادَةِ، وَمَا يُعِد فِيهِ الْمُنَافِقُونَ مِنْ غَفَلَاتِ النَّاسِ وَعَوْرَاتِهِمْ، هُوَ غنْم الْمُؤْمِن يَغْتَنِمُهُ الْفَاجِرُ.

    আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৩৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৮৯৬৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৮৮৪; তবারানী হাদীস ৯০০৪; বাইহাকী শুআবুল ঈমান, হাদীস ৩৩৩৫

    ৫. রহমতের মাস। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়…

    হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ، فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النّارِ، وَصُفِّدَتِ الشيَاطِينُ.

    যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৬৮৪; সুনানে দারেমী, হাদীস ১৭৭৫

    إِذَا كَانَ أَوّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَيُنَادِي مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النّارِ، وَذَلكَ كُلّ لَيْلَةٍ.

    যখন রমযান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জ্বিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেÑহে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮২; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস ৩৬০১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৫৭২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮৯৬০

    ৫. জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস এবং দুআ কবুলের মাস

    আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল এবং তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদেরকে এই শাহী ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা।

    হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

    إِن لِلّهِ عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءَ، وَذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ. وقال البوصيري : رجال إسناده ثقات

    অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমযান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে। Ñসুনানে ইবনে  মাজাহ, হাদীস ১৬৪৩, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২২০২, আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৮০৮৮; সুনানে বায়হাকী, হাদীস ৩৬০৫

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    إِنّ لِلّهِ عُتَقَاءَ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ،(يعني في رمضان). لِكُلِّ عَبْدٍ مِنْهُمْ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ

    অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমযান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দুআ কবুল করেন। Ñমুসনাদে আহমাদ হাদীস ৭৪৫০, মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৯৬২

    ৬. দানশীলতার মাস

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

    كَانَ رَسُولُ اللّهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَ أَجْوَدَ النّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ  مِّنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ.

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তাঁর দানশীলতা (অন্য সময় হতে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত রমযান মাসে, যখন জিব্রীল আ. তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। জিব্রীল আ. রমযানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তাঁরা পরস্পর  কুরআন শুনাতেন। তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬, সহীহ মুসলিম হাদীস ২৩০৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬১৬

    ৭. আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধির মাস

    রমযান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মাস মুমিনের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস এবং আখেরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছেÑ

    قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِامْرَأَةٍ مِنَ الْأَنْصَارِ…إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فَاعْتَمِرِي، فَإِن عُمْرَةً فِيهِ تَعْدِلُ حَجَّةً.

    وفي رواية أخرى لمسلم : فعمرة في رمضان تقضي حجة أو حجة معي.

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেন, বর্ণনাকারী বলেন, তার নাম ইবনে আব্বাস রা. উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আমি তা ভুলে গিয়েছিÑ(অন্য বর্ণনায় তার নাম উম্মে সিনান উল্লেখ করা হয়েছে) তুমি কেন আমাদের সাথে হজ্ব করতে যাওনি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দুটি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তাঁর ছেলে হজ্ব করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি বলেন, রমযান মাস এলে তুমি উমরা করবে। কেননা এ মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য। সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমযান মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্বের সমতুল্য (সওয়াবের হিসাবে)। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৮২, সহীহ মুসলিম ১২৫৬, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২০২৫

    ৮. পাপ মোচন ও গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস

    হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনÑ

    الصلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُن إِذَا اجْتَنبَ الْكَبَائِر.

    পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহকে মুছে দেয় যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩ (৩)

    ক্ষমা লাভের এমন সূবর্ণ সুযোগ পেয়ে যে ব্যক্তি নিজের পাপসমূহ ক্ষমা করাতে পারে না সে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত। হাদীস শরীফে তার জন্য বদ দুআ করা হয়েছে।

    হযরত কা’ব ইবনে উজরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সকলেই সেখানে উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখন বললেন, আমীন, যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন, যখন তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন।

    হযরত কা’ব ইবনে উজরা রা. বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ আমরা (মিম্বরে উঠার সময়) আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি, যা ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন, জিব্রীল আ. আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমযান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হল না। আমি বললাম, আমীন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হল অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পড়ল না। আমি বললাম আমীন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তারা উভয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারল না। আমি বললাম, আমীন। Ñমুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস  ৭৩৩৮; মাযমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ১৭৩১৭

    ৯. লাইলাতুল কদরের মাস

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে মুসলিম উম্মাহর জন্য আরেকটি বিশেষ দান হল এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনÑ

    لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ  تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ  سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

    ‘লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রীল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ Ñসূরা কদর (৯৭) : ৩-৫

    এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়।

    হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেনÑ

    دَخَلَ رَمَضَانُ، فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِن هَذَا الشهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ، وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّه، وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا مَحْرُومٌ.

    قال المنذري : إسناده حسن، إن شاء الله، وكذا قاله البوصيري.

    রমযান মাসের আগমন ঘটলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়। Ñসুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪৪

     

    রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত

    এ পর্যায়ে আমরা মরমযান মাসের প্রধান আমল রোযা সম্পর্কে আয়াত ও হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা পেশ করার চেষ্টা করছি।

    রমযনের রোযা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, নামায ও যাকাতের পরই রোযার স্থান। রোযার আরবি শব্দ সওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। পরিভাষায় সওম বলা হয়-প্রত্যেক সজ্ঞান, বালেগ মুসলমান নর-নারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোযাভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং রমযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরয। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনÑ

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৮৩

    কোনো শরয়ী ওযর ছাড়া কোন মুসলমান যদি রমযান মাসের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে তাহলে সে বড় পাপী ও জঘণ্য অপরাধীরূপে গণ্য হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসেবে পরিগণিত হবে। হাদীস শরীফে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীর জন্য কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।

    হযরত আবু উমামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এল। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের উপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দিব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌঁছালাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এ সব কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোযা ভেঙ্গে ফেলে। Ñসহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৪৪৮; সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস ৩২৮৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস ১৬০৯; তবারানী, হাদীস ৭৬৬৬

    রমযান মাসের একদিন রোযা না রাখলে মানুষ শুধু গুনাহগারই হয় না, ঐ রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখলেও রমযানের এক রোযার যে মর্যাদা ও কল্যাণ, যে অনন্ত রহমত ও খায়ের-বরকত তা কখনো লাভ করতে পারবে না এবং কোনোভাবেই এর যথার্থ ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না।

    হাদীস শরীফে বর্ণিত রোযার কিছু ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য এখানে উল্লেখ করা হলো :

    ১. রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই দিবেন এবং বে-হিসাব দিবেন

    প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

    كُل عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ، الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة ضِعْفٍ، قَالَ اللهُ عَز وَجَل: إِلَّا الصَّوْمَ، فَإِنَّه لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي.

    মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৩৮

    ২. আল্লাহ তাআলা রোযাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন

    হযরত আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত,

    إِنَّ الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَضَى عَلَى نَفْسِهِ أَنَّهُ مَنْ أَعْطَشَ نَفْسَهُ لَهُ فِي يَوْمٍ صَائِفٍ سَقَاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْعَطَشِ.

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জণ্য গ্রীষ্মকালে (রোযার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। Ñমুসনাদে বাযযার, হাদীস ১০৩৯; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৫০৯৫

    ৩. রোযা হল জান্নাত লাভের পথ

    عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ : أَتَيْتُ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ : مُرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنّةَ. قَالَ: عَلَيْكَ بِالصّوْمِ؛ فَإِنّهُ لَا عِدْلَ لَهُ . ثُمّ أَتَيْتُهُ الثّانِيَةَ فَقَالَ لِيْ: عَلَيْكَ بِالصيَامِ.

    হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আগমন করে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। তিনি বলেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় তার নিকট এসে একই কথা বললাম। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১৪৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৮৯৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৪২৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৫৩০

    ৪. রোযাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে

    হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

    إِنّ فِي الجَنّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرّيّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ : أَيْنَ الصّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ.

    জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোযাদারগণ? তখন তারা উঠে দাড়াবে। তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোযাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২৮১৮

    ৫. রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ

    হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    ‘আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন- রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দিব।’ Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৪৬৬৯; শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী, হাদীস ৩৫৭০

    হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    الصِّيَامُ جُنّةٌ، وَحِصْنٌ حَصِينٌ مِنَ النّارِ.

    রোযা হল (জাহান্নাম থেকে পরিত্রান লাভের) ঢাল এবং সুরক্ষিত দুর্গ। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস-৯২২৫;  শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস ৩৫৭১

    ৬. রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    “রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস ২০৮০; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস ১৯৯৪

    ৭. রোযাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়

    হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    مَنْ صَامَ رَمَضَانَ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

    যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৩৮, ২০১৪; সহীহ মুসলিম ৭৬০ (১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৭১৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮৯৬৮

    ৮. রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত

    হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ.

    সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১ (১৬৩); মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭১৭৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৫২৩; সুনানে ইবনে মাজাহ ১৬৩৮

    ৯. রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত

    হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    لِلصّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا : إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ، وَإِذَا لَقِيَ رَبّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ.

    وفى رواية : اذا لقى الله فجزاه فرح،

    রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দিবেন, তখন সে আনন্দিত হবে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৪, ১৮৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১ (১৬৩, ১৬৪, ১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯৪২৯, ৭১৭৪; সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৭৬৬

    ১০. রোযাদার পরকালে সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত থাকবে

    হযরত আমর ইবনে মুররা আলজুহানী রা. হতে বর্ণিত,

    جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النبِيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ شَهِدْتُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَأَنّكَ رَسُولُ اللهِ، وَصَلَّيْتُ الصلَوَاتِ الْخَمْسَ، وَأَدَّيْتُ الزَّكَاةَ، وَصُمْتُ رَمَضَانَ وَقُمْتُهُ، فممن أنا؟ قال:  من الصديقين والشهداء.

    এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি একথার সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল, আর আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, যাকাত প্রদান করি, রমযান মাসের সিয়াম ও কিয়াম (তারাবীহসহ অন্যান্য নফল) আদায় করি তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব? তিনি বললেন, সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে। Ñমুসনাদে বাযযার, হাদীস ২৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২২১২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৪২৯

    ১১. রোযাদারের দুআ কবুল হয়

    হযরত আব্দুুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    إِن لِلصائِمِ عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّ. قال البوصيرى : اسناده صحيح.

    ইফতারের সময় রোযাদার যখন দুআ করে, তখন তার দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দুআ কবুল হয়)। Ñসুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৫৩

    হযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

    ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الْإمَامُ الْعَادِلُ، وَالصّائِمُ حَتّى يُفْطِرَ… قال الترمذى : هذا حديث حسن.

    তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (অর্থাৎ তাদের দুআ কবুল করা হয়) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুআ; রোযাদার ব্যক্তির দুআ ইফতারের সময় পর্যন্ত এবং মজলুমের দুআ। তাদের দুআ মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এর জন্য সব আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, আমার ইয্যতের কসম! বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮০৪৩; সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৯৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৫২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৪২৮

    রমযান হল খালেস ইবাদতের মৌসুম। তাই এ মাসের সময়গুলো যতটা শুধু আল্লাহর সাথে কাটানো যায় ততটাই কল্যাণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমযান ও রোযার ফযীলত লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামীন।

    দুধের প্যাকেটে থাকা এক পরিবারের কাহিনী

    ছোটবেলায় বইয়ে পড়া জুতোয় থাকা এক বৃদ্ধার কথা এখন ভুলে যেতে পারেন; কেননা এখন একটি জাপানি পরিবার থাকছেন দুধের প্যাকেটে।

    মিরাসাকা হলো একটি শান্ত, অবর্ণিত গ্রাম্য একটি শহর, শহরকে ঘিরে রয়েছে মাঠ এবং অনেক গুলো অনুচ্চ বাড়িঘর। হিরোশিমা স্টেশন থেকে গাড়িতে করে দেড় ঘন্টার মতো দূরে। যদিও শহরটি শান্ত বলেই মনে হয়, এখানে রয়েছে একটি স্থানীয় স্থান নিদর্শন -যেটি শহরকে লক্ষনীয় করে তোলে, মানুষের দৃষ্টি এমন ভাবেই আকর্ষিত হয়েছে যে তা টিভি অনুষ্ঠানেও দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছে।

    আকার আর রংয়ে বাড়িটি যেন ঠিক “মাইনিচি গিউনিউ” বা “ডেইলি মিল্ক” ব্র্যন্ডের দুধের প্যাকেট। লাল-সাদা-নীল রংয়ের ভবনটি উচ্চতায় আশেপাশের অন্যান্য ভবন গুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

    এই আবাসিক ভবনে আছে একটি দুধের দোকান, যেটি পারিবারিক ভাবে পরিচালনা করা হয়ে থাকে, এখান থেক আশেপাশের এলাকা গুলোতেও দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য সরবরাহ করা হয়।

    দৈত্যাকার দুধের প্যাকেটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের একটি আকর্ষণীয় এলাকা হয়ে রয়েছে। এলাকাবাসীদের আশা আরো অনেক বছর এটি যেন তাদের দুধের উৎস হিসেবে থাকতে পারে।

    চীনের নৌতৎপরায় জাপান উদ্বিগ্ন

    জাপান সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র বলেছেন জাপানের সমুদ্রসীমার আশেপাশে চীনের নৌ-তৎপরতায় উদ্বিগ্ন।

    প্রধান মন্ত্রীপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা শুক্রবার বলেছেন সরকার জলসীমায় টহল অব্যাহত রাখবে।

    গত বৃহস্পতিবার চীনের একটি তথ্য সংগ্রহকারী জাহাজ ওকিনাওয়া প্রিফেকচার সংলগ্ন সমুদ্রে জরিপ চালায়। এর একদিন পরেই জাহাজটি জাপানের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করে।

    পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জানিয়েছেন জাপানের উদ্বেগের কথা ইতিমধ্যেই চীনকে অবহিত করা হয়েছে।

    প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গেন নাকাতানি বলেছেন চীনা জাহাজ গুলো জাপানি সমুদ্রসীমায় কোনো পূর্ব বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অনুপ্রবেশ করে। সামরিন জাহাজ কোনো দেশের জলসীমায় প্রবেশের পূর্ব অবশ্যই সেই দেশকে অবহিত করবে।

    মুসলমানদের মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত :ট্রাম্প

    ফের মুসলিম-বিরোধী কথা বলে বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মুসলিম সম্প্রদায়কে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।’  এ ব্যাপারে তিনি একটি শর্তসাপেক্ষে প্রস্তাবও দিয়েছেন বিজ্ঞানী ইলন মাস্ককে। মাস্ককে তিনি প্রস্তাব দেন, যদি তিনি তার রকেটে করে মুসলিমদের মঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে পারেন, তা হলে তাকে তার সরকারের পরিবহন মন্ত্রীর পদ দেবেন। ট্রাম্পের মতে, এতে যেমন মুসলিমদের উপকার হবে, তেমনই বিশ্বে শান্তির আবহ ফিরে আসবে।

    ট্রাম্প আরো বলেছেন, পৃথিবীতে শান্তি আনতে এবং আমেরিকাকে ধর্ষক মুক্ত করতে এর থেকে ভাল এবং কার্যকরী উপায় হতে পারে না। তবে এখানেই থেমে থাকেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করুন মুসলিমদের আমি ভালবাসি। আর সে কারণেই আমেরিকায় তাদের অনুপস্থিতি আমার হূদয়কে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে।’

    এদিকে, ট্রাম্পের এই মুসলিম বিরোধী মন্তব্যে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে মার্কিন রাজনীতি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছেন, ‘আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্প একজন মুসলিম-বিরোধী আইকন।’ উল্লেখ্য গত বছর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘পুরো আমেরিকায় মুসলিমদের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’

    ‘মুসলিমদের খারাপ না ভেবে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’

    আমেরিকান সকল মুসলিমদের খারাপ না ভেবে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে শনিবার মধ্যরাতে একটি নৈশক্লাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর সোমবার এ কথা বলেন হিলারি।
    নৈশক্লাবটিতে হামলায় ৫০ জন নিহত হয়। পুলিশের গুলিতে মারা যায় হামলাকারী ওমর সিদ্দিকী মতিন। আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন অভিবাসীর সন্তান ২৯ বছর বয়সী মতিনের জন্ম নিউ ইয়র্কে। তিনি ফ্লোরিডায় থাকতেন।
    হামলার পর রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোর উপর নজরদারি করার আহ্বান জানান। গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব দিয়েছিলন। ফ্লোরিডায় বন্দুক হামলার পর আবারো ওই প্রস্তাব দেন ট্রাম্প।
    অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী হিলারি বলেন, পক্ষাবলম্বন নয় বরং রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিন। বন্দুকধারীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে নিজের সমর্থন জানিয়ে হিলারি আরো বলেন, ইন্টারনেটে নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। আমেরিকান মুসলিমদের অধিকার সুরক্ষায় তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেও জানান হিলারি।
    টেলিভিশন চ্যানেল এমএসএনবিসি নেটওয়ার্কে হিলারি বলেন, আমরা একটি ধর্মকে সার্বিকভাবে খারাপ বলে এবং গলাবাজির মাধ্যমে সমর্থন আদায় করে ওই ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারি না। সেটা খুবই ভয়ঙ্কর হবে।
    যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নাগরিক নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে তারা যেন আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন হিলারি।

    কিউশুতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের সতর্কতা জারি

    জাপানের আবহাওয়া বিভাগ দক্ষিণ পশ্চিম জাপানের কিউশু অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে এবং সে কারণে তারা স্থানীয় জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

    কুমামোতো প্রিফেকচারের ইয়াৎসুশিরো শহরে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার ২ ঘন্টা পরেই গেন আওকি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। রোববার রাত ১০টায় সেখানে ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিলো ০ থেকে ৭ মাত্রার জাপানি স্কেলে ৫ এর কম।

    আওকি উপদ্রুত এলাকার জনসাধারণকে বৃষ্টি এবং ভূ-কম্পীয় তৎপরতা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ভূমিকম্প সেখানকার বাড়িঘর গুলোকে আরো নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে এবং ভূমিধসেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

    আওকি বলেন আগামী মাসের মধ্যে কিউশু’র মানুষ ৫ এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারেন।

    কর্মকর্তারা কিউশুর অন্যান্য স্থানেও শক্তিশালী ভূমিকম্পের সতর্কতার কথা উল্লেখ করেছেন, গত এপ্রিলে অঞ্চলটি ধারাবাহিক ভূমিকম্পের শিকার হয়।

    আওকি সকলকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।