• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • বাবা-মায়ের দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনতায় বনে হারিয়ে গেল সন্তান

    মাত্র সাত বছর বয়সী ছেলেকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন এক জাপানি দম্পতি। এর জন্য হোক্কাইডোর নির্জন বনের মধ্যে ছেড়ে আসেন ছেলেকে। আর এর পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
    খারাপ ব্যবহার করায় ছেলেকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন ওই দম্পতি। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করতে দিতে গিয়ে দুই দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও ছেলের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
    বনের যে এলাকায় শিশুটি হারিয়ে গেছে সেখানে বুনো ভালুকের আবাস রয়েছে।
    শিশুটিকে খুঁজে বের করতে জরুরি বিভাগের কয়েকশ কর্মী বনের ওই এলাকাটিতে তল্লাশি চালাচ্ছে। অনেক সময় পরও শিশুটি বন থেকে ফিরে না আসায় ওই দম্পতি প্রথমে পুলিশকে গিয়ে জানায়। তবে এসময় পুলিশকে মিথ্যা কথা বলে তারা। তারা বলে, সবজি সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের ছেলে বনে হারিয়ে গেছে।
    তবে এর একদিন পর তারা সত্য ঘটনা প্রকাশ করে। ওই বাবা-মা বলেন ছেলেকে ভদ্রতা শেখাতে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন তারা।

    কর বৃদ্ধি পেছানোকে সমর্থন করতে কোমেইতোকে আবে আহ্বান

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার ক্ষমতাসীন শরিক জোটের প্রধানকে ভোগ কর বৃদ্ধি পেছানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে অনুরোধ করেছেন।

    সোমবার আবে কোমেইতো পার্টি প্রধান নাৎসুও ইয়ামাগুচি’র সাথে বৈঠক করেন। এর আগে তিনি নিজ দল লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছিলেন।

    প্রধানমন্ত্রী ইয়ামাগুচি’কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন গ্রুপ ৭ ভুক্ত দেশ সমূহের নেতারা গত সপ্তাহে বিশ্ব অর্থনীতি একটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে অভিন্ন মত পোষণ করেছেন।

    তিনি বলেন জাপানের এখন প্রয়োজন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন।

    তিনি ইয়ামাগুচি’কে ভোগ কর ২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবটি ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার জন্যে সমর্থন প্রত্যাশা করেন।

    জাবাবে ইয়ামাগুচি বলেন তিনি দলের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি আরো বলেন তিনি এলডিপি’র সাথে এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান।

    প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ   

    আজ ৩০ মে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সৈনিকের হাতে তিনি নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৫ বছর। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। তার সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, কর্মমুখরতা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলি এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তার ঘটনাবহুল কর্মময় জীবন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন অলঙ্কৃত করে আছে। নানা কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সৈনিক। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে তার যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রনায়কের ভাগ্যে তা জোটেনি। মাত্র ছয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ অল্প সময়েই তার ওপর সাধারণ মানুষের অগাধ আস্থার তৈরি হয়েছিল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার ওপর মানুষের এই আস্থার কোনো কমতি ছিল না। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন রাষ্ট্রনায়ক। তিনি তার সততা ও প্রজ্ঞা দিয়ে এদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে জিয়াউর রহমান যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন, বিশ্বে দ্রুত অগ্রসরমান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই দেশী-বিদেশী চক্রান্তের অংশ হিসেবে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে প্রাণ হারান বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এই রাষ্ট্রনায়ক। তিনি যে কত জনপ্রিয় ছিলেন তা বোঝা গিয়েছিল ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার স্মরণকালের বৃহত্তম নামাজে জানাজায়। সেদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ’। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভালোবাসে তার কারণেই। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী থানার বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মনসুর রহমান কলকাতায় একজন কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। শৈশব ও কৈশোরের একটি সময় গ্রামে কাটিয়ে তিনি বাবার সাথে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন্ড লাভ করেন। সামরিক জীবনে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেও তিনি একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সাথে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সর্বোচ্চ খেতাব লাভ করে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্য তিনি নিজেও একটি পিস্তল উপহার পান। সৈনিক জীবনে তিনি যেমন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, ঠিক তেমনি জাতীয় সঙ্কটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যখন এদেশের নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, রাজনৈতিক নেতারা যে যেদিকে পারেন আত্মগোপন কিংবা পালিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, জিয়াউর রহমান তখন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের মানুষের এ ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে সমর্থনের আবেদন জানান। ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীর-উত্তম খেতাব লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করা হয়। জাতির ভাগ্যাকাশে তখন এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে, প্রকৃতপক্ষে সে সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। কোথা থেকে কী হচ্ছে তা জানতে পারছিলেন না কেউ। চারদিকে এক অনিশ্চয়তা-বিশৃঙ্খলার মাঝে আধিপত্যবাদের শ্যেনদৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিল গোটা জাতি। ইতিহাসের সেই ভয়াবহ ক্রান্তিকালে সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন। এর পর থেকে জিয়াউর রহমানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সততা, দৃঢ়তা ও অসাধারণ মেধার গুণে তিনি শুধুই এগিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দৃঢ় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা, নির্লোভ-নির্মোহ আত্মপ্রত্যয়, গভীর দেশপ্রেম প্রভৃতি গুণাবলি দিয়ে তিনি জাতির মধ্যে নতুন করে জাগরণের সৃষ্টি করেন। প্রতিদিন সারা দেশ চষে বেড়াতেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল তিনি বাংলাদেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান। দেশে সমন্বয়ের রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন। প্রথমে তিনি জাগদল গঠন করেন। এরপর তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একদিকে যেমন বামপন্থীরা স্থান পান, তেমনি ডানপন্থীরাও জায়গা করে নেন। একটি উদার ও মধ্যপন্থী দল হিসেবে বিএনপিকে গড়ে তোলেন তিনি, যা বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল। তার অমর কীর্তি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ সংযোজন করা। এ ছাড়া তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। নিজে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হলেও তিনি এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। জিয়াউর রহমান বিভক্তির রাজনীতি দূর করে ঐক্যের রাজনীতির ডাক দেন। তিনি উন্নয়ন এবং উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেন। রাজনীতিবিদদের তিনি জনগণের দোরগোড়ায় যেতে বাধ্য করেন। বিশাল কর্মকা-ের সূচনা করে জনগণের মধ্যে তিনি সাড়া জাগান। মাত্র ছয় বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পান শহীদ জিয়া। কিন্তু এ ছয় বছরেই তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে এ জাতিকে মুক্ত করেন। স্বজনপ্রীতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটসহ নানা অপকর্মে জাতির যখন ত্রাহি অবস্থা, ঠিক তখনই জিয়াউর রহমান শক্ত হাতে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তিনি সমগ্র জাতির মধ্যে এক নব জাগরণের সূচনা করেন। বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগান তিনি। তাকে নিয়ে অনেকেই আজকাল ইঙ্গিতে কটু কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু জীবদ্দশায় তাদের কেউ কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে পারেননি। এমনকি তার ব্যক্তিত্ব ও নির্লোভ চরিত্রের কাছে আজকের অনেকের চারিত্রিক দৃঢ়তা মøান হয়ে যেত। সাদামাটা জীবন যাপনের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ কেন সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ইতিহাসে বিরল। তার চরিত্রে কোনো কপটতা ছিল না। সময় ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তিনি নেতৃত্বে এসেছেন। কাউকে উৎখাত কিংবা উচ্ছেদ করে তিনি আসেননি। এখানেই জিয়াউর রহমান ও অন্যদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। জিয়াউর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন সত্যিকার স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। একটি বহুমাত্রিক সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়নের আগেই ঘাতকের বুলেটে প্রাণ হারান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী এবারে একটু ভিন্ন পরিবেশে পালিত হচ্ছে। শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির বহু নেতাকর্মীই বর্তমানে কারাগারে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে চিকিৎসাধীন বড় ছেলে তারেক রহমান মামলা মোকদ্দমার মুখোমুখি। সারাদেশের প্রায় সর্বস্তরের নেতাই বিভিন্ন মামলার আসামি। অতীতে কখনোই বিএনপিকে এতটা ঝড়-ঝাঁপটা মোকাবেলা করতে হয়নি। এত কিছু সত্ত্বেও জিয়াউর রহমান আজও তার অমর কীর্তিতে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে আছেন। তার আদর্শ এখনো কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে অম্লান হয়ে আছে। জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকী কর্মসূচি ঢাকার ৬০টি স্পটে খাবার বিতরণ করা হবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। কেন্দ্রের সাথে মিল রেখে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করবে দলটির নেতাকর্মীরা। এর আগে যৌথ সভা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। আজ সকাল ৬ টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে মাজারে পবিত্র কোরআনখানী ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সকাল ৯টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড্যাবের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষধ বিতরণ করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে শহীদ জিয়ার স্মরণে পোষ্টার সাটানো হয়েছে গ্রাম থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনায়। পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপি’র উদ্যোগে আজ থেকে ১ জুন পর্যন্ত টানা তিনদিন মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন বেগম খালেদা জিয়া। এছাড়া ১৫দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভা, চিত্র প্রদর্শনী, মিলাদ মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। যেসব স্পটে খাবার বিতরণ : রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল হল থেকে খাবার বিতরণ শুরু হবে। এরপর আদাবর থানা, সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টার (মেডিনোভার সামনে), আজিমপুর বটতলা, জাতীয় প্রেস ক্লাব (ছাত্রদল), আল-হাবিব কমিউনিটি সেন্টারের সামনে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে (জাসাস ও মুক্তিযোদ্ধা দল), পল্টন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে (স্বেচ্ছাসেবক দল), মতিঝিল কলোনী কমিউনিটি সেন্টার (আইডিয়াল স্কুলের বিপরীত পার্শ্বে), মাহবুব আলী মিলনায়তন (রেলওয়ে শ্রমিক দল), মির্জা আব্বাসের বাড়ির সামনে, শান্তিনগর বাজার (পল্টন বিএনপি), খিলগাও চৌরাস্তা (জোড় পুকুর খেলার মাঠ), দয়াগঞ্জ মোড় (তিন রাস্তার মোড় যাত্রাবাড়ি, আলম মার্কেট (জুরাইন), শ্যামপুর ঈদগা মাঠ (লাল মসজিদ), যাত্রাবাড়ি শহীদ ফারুক সড়ক, পোস্তগোলা (বটতলা) শ্যামপুর, ধোলাইপাড় বাস স্ট্যান্ড, ডেমরা থানা বিএনপি, বাংলামটর (হাতিরপুল) কলাবাগান থানা বিএনপি, কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১ম লেনের সামনে, সুত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার নতুন রাস্তা, নবাবপুর রোড-মদনপাল লেন মোড়, পোস্তামোড় (লালবাগ যুবদল), কোতয়ালী থানা যুবদলের কার্যালয়ের সামনে (নর্থ সাউর্থ রোড়), নয়াবাজার বিএনপি অফিস (বংশাল থানা), কাঠেরপুল গেন্ডারিয়া মোড় (ছাত্রদল দক্ষিণ), আজিমপুর ভিকারুন্নেছা নুন স্কুল সংলগ্ন, লালবাগ হাফেজ মুছা ব্রীজ, মৌলভীবাজার কমিউনিটি সেন্টার-চকবাজার, ঢাকা টেনারী মোড় (হাজারীবাগ), ঢাকাশ্বর বালু মাঠ, সাত মসজিদ রোড (ঈদগা রোডের পশ্চিম পাশে), গাউসিয়া চাঁদনী চকের গেট (নিউ মার্কেট), মালিবাগ ডিআইটি রোড (ফরচুন মার্কেট সংলগ্ন), আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, নয়াপল্টনে হোটেল ভিক্টোরীয়ার সামনে (তৃণমূল দল), খিলক্ষেত নিকুঞ্জ (রিজেন্সি হোটেলের পিছনে বটতলা), আমির কমপ্লেক্স (আজমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন), অনিক প্লাজার সামনে (পল্লবী), পল্লবী ১২নং বাসস্ট্যান্ড, ন্যাশনাল বাংলা স্কুল (মিরপুর ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন), শাহআলী মাজার (মিরপুর), বুদ্ধিজীবী শহীদ মিনার গেইট, শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড, রোকেয়া সরণী, মহাখালী ওয়ারলেস গেইট, টিএন্ডটি মাঠের সামনে (মানিক মিয়া এভিনিউ), মোল্লাপাড়া (মধ্যবাড্ডা), আল-আমিন সুপার মার্কেট (রামপুরা), বিশাল সেন্টার (মগবাজার), বালু নদীর পাড় (খিলক্ষেত থানা ৩০০ ফুট রাস্তা পূর্বাঞ্চল), কাওরান বাজার প্রগতি টাওয়ারের সামনে, সাত রাস্তার মোড়/নাবিস্কো মোড়, শাহ আলী মাজার গেইট সংলগ্ন (বাউল দল) ইত্যাদি । বাণী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যার নেপথ্যে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার এক বাণীতে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশুভ চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে এই বাণী পাঠানো হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোন ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না, বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তার অনন্য কৃতিত্বের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। মির্জা ফখরুল বলেন, একাত্তরে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়ার কালূরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে, ফলশ্রুতিতে দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করেন জিয়াউর রহমান। ব্যক্তিজীবনেও দুর্নীতি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও সুবিধাবাদের কাছে আত্মসমর্পণকে তিনি ঘৃণা করতেন। তার অন্তর্গত স্বচ্ছতা তাকে দিয়েছে এক অনন্য ঈর্ষণীয় উচ্চতা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করে গণতন্ত্রমনা মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

    প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর – রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা  

    জাপানে অনুষ্ঠিত জি-সেভেনের আউটরিচ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে এবং দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি দেশীয় নেতা থেকে নিজেকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বনেতৃত্বের আসনেÑআন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এমনটি মনে করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দিচ্ছে নতুন বার্তা। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার পর আসছে জাপানি বিনিয়োগ। সার্কের মধ্যে তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক প্রবাহ। জি-সেভেনসহ বিশ্ব নেতাদের কাছে শেখ হাসিনা এখন একটি নাম নয়, একটি প্রেরণা। আর তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনও বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পের অংশ হতে চান। ইইউ থেকে বের না হওয়ার বিষয়েও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ চান। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির ইনকিলাবকে বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অত্যন্ত গুরুত্ববহ। ইংরেজিতে এটাকে বলা যায় ‘বাংলাদেশ রিচআউট অ্যাট দ্য জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং’। আমাদের এখানে যা যা হওয়া সম্ভব প্রধানমন্ত্রী তা বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের সামনে হাইলাইট করতে পেরেছেন। সামাজিক ক্ষেত্রেও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বহুপাক্ষিক ফোরামে বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতাদের সাথে কূটনৈতিক সুযোগ প্রধানমন্ত্রী কাজে লাগিয়েছেন। আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপানÑএসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে আলোচনা রাজনৈতিক দিক থেকে অবশ্যই নতুন কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। সরকার আগের চেয়ে নৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে ওঠায় বিদেশীরাও আগের চেয়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এ ছাড়া জি-সেভেনের দেশগুলোতে আমাদের রপ্তানির ষাট ভাগ যায়। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এটার গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া জাপান-চীন আমাদের দেশের বড় প্রকল্পগুলোতে আগ্রহী। বর্তমান অবস্থায় তাদের সাথে আমাদের আলোচনার সুযোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।   জাপানে চার দিনের সফর শেষে গতকাল মধ্যরাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির সাত পরাশক্তির জোট জি-সেভেনের সম্মেলনের পরদিন ওই আউটরিচ মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব ‘স্পষ্ট হয়েছে’। এর ফলে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক সমাজে সরকারের অবস্থান আরো মজবুত হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জাপানের বিনিয়োগের নতুন নতুন খাত দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক যোগাযোগেরও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একরাশ আশা নিয়েই এবার দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর দেশে ফিরে আবার তিনি রওনা হবেন মুসলিম বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশ সউদী আরব সফরে। বিগত বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, অন্য কোনও সরকারপ্রধান সেটা দিতে পারেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রনায়করা যেমন তার আমলে বাংলাদেশ সফর করেছেন, দ্বিপাক্ষিক সফরে তিনিও সেসব দেশে গেছেন। আন্তর্জাতিক ফোরামে গৌরবময় উপস্থিতিতে তিনি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অবশ্য জি-সেভেনে বাংলাদেশের কোনো নেতার অংশগ্রহণ এই প্রথম নয়। ১৯৮৮ সালে ফ্রান্স যখন এই বৈঠকের আয়োজক, তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পার্থক্য এটাই যে, তিনি যেখানে শেখ হাসিনার মতো মর্যাদা পাননি, অর্থাৎ বাংলাদেশ সেই মাত্রায় সম্মানিত হয়নি, সমাদৃত হয়নি। সে কারণে দেশের অবস্থান কোথায়, নেতৃত্ব কে দিচ্ছেনÑঘুরেফিরে বিশ্ব দরবারে রাষ্ট্রের সম্মানের প্রশ্ন এলে এই প্রশ্নও আসে। সম্পদশালী শিল্পোন্নত সাত জাতির সংস্থা হলো জি-সেভেন। বাংলাদেশ এ সংস্থার কোনো কিছুই নয়। তবু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে সাত জাতির জি-সেভেন সম্মেলনে যোগদান করার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিয়েছেন। জি-সেভেনের নেতারা তাকে খুবই আহ্লাদে নিজেদের মাঝে বসিয়েছেন। আর বাংলাদেশকে তিনি কিভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন তার কাহিনী শুনেছেন। সম্মেলনে জি-সেভেনের নেতারা যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা কেউ তাদের স্ব স্ব জাতির নির্মাতা নন। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছেন এবং বহু পূর্ব থেকে তাদের রাষ্ট্রগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত। সুতরাং একটা নির্মীয়মান জাতির যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার কথা শুনার তাদের আগ্রহ অস্বাভাবিক নয়। তাকে যে সম্মান দেখানো হয়েছে তাও অস্বাভাবিক নয়। এ সম্মান বিশ্বসভায় তার পাওনা। আউটরিচ বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া যে দেশগুলেকে মিটিংয়ে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তাদের সবাই কোনো না কোনো গ্রুপকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের যে উল্লেখযোগ্য অবদান, সেজন্য বাংলাদেশকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। বিশ্ব নেতৃত্বের সারিতে বসে জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকসহ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ কর্মসূচিতে জাপানে তিন দিন ব্যস্ত সফর কাটিয়ে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আউটরিচের দুটি অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতা হিসেবে বিশ্বের সাতশ’ কোটি মানুষের উন্নয়নের বর্তমান অবস্থা, সে বিষয়ে ভাবনা ও দর্শনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশলাদি ও মতবিনিময় হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন, আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় শেখ হাসিনার। দুপুরে সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে। সে বৈঠকে ক্যামেরন বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে আগ্রহ প্রকাশ করেন এ উন্নয়নের গল্পের অংশ হওয়ার। ক্যামেরন ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়া-না হওয়ার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ চান। পরদিন ২৮ মে সকাল থেকেও শুরু হয় তার ব্যস্ততা। সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে। সে বৈঠকে বন্যাকবলিত শ্রীলঙ্কাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা। সিরিসেনা এসময় ঢাকা কলম্বো সরাসরি বিমানের ফ্লাইট চালুর অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ওষুধসহ পাটজাত দ্রব্য আমদানি করতে শ্রীলঙ্কার প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া সার্ক দেশগুলোর প্রবাসী শ্রমিকদের অর্থটা কীভাবে আমাদের দেশগুলোর মাধ্যমে প্রবাহিত করা যায় সেজন্য শ্রীলঙ্কার সাথে কাজ করবে বাংলাদেশ। এদিনই প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবের সঙ্গে। দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠকে আলোচনা হয় দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে। এসময় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শিনজো আবে। বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রস্তাব দেয়া হলে নতুন ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণেও সহযোগিতার কথা বলেন। বৈঠকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসাও করেন। এছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরলে শিনজো আবে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে তার দেশের সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিবদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল স্বাধীনতা বা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনেই নয়, উন্নয়নে এখনও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু, রূপসা সেতু নির্মাণ জাপানের সহযোগিতায় হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়নেও এগিয়ে এসেছিল জাপান। দেশে যখন কোনো আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ছিল না, তখন হোটেল সোনারগাঁও তৈরিতে জাপানই হাত বাড়িয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পে জাপান অর্থায়ন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের সমুদয় অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন আবের সাথে বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে। জাপানের ছয় বিলিয়নের মধ্যে চলতি বছর ১ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ‘সফট লোন’ আসবে। তাছাড়া জাপান ‘গুণগত’ অবকাঠামোর উপর গুরুত্বারোপ করেছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকায় এমআরটি, বঙ্গবন্ধুর সেতুর পাশে পৃথক রেললাইন স্থাপন এই ‘গুণগত’ অবকাঠামো উন্নয়নের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব। মেজবাহউদ্দিন বলেন, বৈঠকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই টার্মিনাল আংশিকভাবে চালু করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ২০২০ সালে পুরোপুরি চালু করার বিষয়েও তারা দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিষয়েও জাপানারে সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই বিমানবন্দর ঢাকা থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরত্ব এলাকার মধ্যে হবে। জানা গেছে, পদ্মার ওপারে চর জানাজাতে এই বিমানবন্দর নির্মাণ করা হতে পারে। তার আগে অবশ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও করবে জাপান। এছাড়া ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে’ জাপানের বিনিয়োগ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, শিনজো আবে শেখ হাসিনাকে বলেছেন, তার সরকার প্রতিশ্রুত ৬০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা বাংলাদেশকে দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের মধ্যে যার দেড়শ’ কোটি ডলার দেয়া হবে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, অঅবের সাথে বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ক্ষুদ্র মাঝারি ঋণ, জ্বালানি দক্ষতা, ন্যানো টেকনোলজি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী সহায়তাও চেয়েছেন; প্রতিটি বিষয় বিবেচনার আশ্বাস মিলেছে জাপানের পক্ষ থেকে। রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে রুলস অব অরিজিন শিথিল করায় জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক জোরদার করতে এটি করা হবে বলেও জানান শিনজো আবে। বাই-ব্যাক, মানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উৎপাদিত পণ্য ফের কিনে নেয়ার যে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বৈঠকে দেন তা খতিয়ে দেখা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করতে জাইকা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন শিনজো আবে। গত শনিবার বিকালে টোকিওতে জাপানে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭১৪ বর্গমিটার এলাকায় টোকিও’র কেন্দ্রস্থলে কিওইচো, ছিওদা-কু এলাকায় বাংলাদেশের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। সফরের চতুর্থ দিন গতকাল রোববার সকালে জাপানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য জাপানিদের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর দুপুরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সকালের প্রাতরাশ বৈঠকে জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। আমি চাই বাংলাদেশের এই ঊর্ধ্বমুখী সুযোগ এবং তারুণ্যদ্দীপ্ত জনশক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা আমাদের জাপানি বন্ধুরা ভোগ করুক। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শতাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কিছু আইটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি। এর মধ্যে ৩৩টির কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করছি, আগামী চার বছরে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদনে আরো এক কোটি মানুষ যুক্ত হবে। তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণখাতেও আগ্রহী হতে পারেন। আমাদের সমুদ্র অর্থনীতি আপনাদের সামনে তুলে ধরছে বিনিয়োগ সুযোগের বিশাল পরিধি। আপনারা নজর দিতে পারেন আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতেও। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সরকার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, জুট, মৎস্য আহরণ, টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং খাত নিয়েও কাজ করছে। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে ‘সবুজ’ হতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ বণ্টনের মতো নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেটানোর জন্য জাপান পা বাড়াতে পারে বলেও উল্লেখ করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর এই প্রথম জাপানের কাছে স্বীকৃতি পেলো। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা দুই দেশের প্রাইভেট সেক্টরে নতুন নতুন বিনিয়োগের পথ খুঁজতে পারব। জাপান সফরের শেষ দিন রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে টোকিওর ইমপেরিয়াল হোটেলে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনাদের একটা বড় অবদান রয়েছে। আপনাদের রেমিট্যান্স আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। উল্লেখ্য, জি-সেভেন জোটের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিজে আউটরিচ মিটিংয়ে অংশ নেন। পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জোটের বাইরে থেকে বিভিন্ন দেশকে আলাদা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একেই বলা হচ্ছে জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং। এবার বাংলাদেশের পাশাপাশি এশিয়া থেকে লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউ গিনি এবং আফ্রিকা থেকে শাদকে আউটরিচ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব, আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের প্রধানরাও।

    টোকিও নগরীতে নতুন চ্যান্সারী ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এখানে বাংলাদেশের নবনির্মিত চ্যান্সারী ভবন উদ্বোধনকালে আশা প্রকাশ করেছেন যে, বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার জাপানের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক দিনে দিনে আরো জোরদার হবে।
    তিনি বলেন, জাপান হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর অন্যতম এবং বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার। তাই, আমরা ঐতিহাসিক টোকিও নগরীর কেন্দ্রস্থলে আমাদের নিজস্ব একটি ঠিকানা পেয়ে নিঃসন্দেহে গর্বিত।

     

    বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে জাপান বি এন পি প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ

    বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের বিরূদ্ধে টোকিওতে অবস্হিত বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে জাপান বি এন পি এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

    জাপান বিএনপি র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ও সাধারন সম্পাদক মীর রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সভায় বক্ত্যব রাখেন কাজী এনামূল হক, আলমগীর হোসেন মিঠু, ফয়সাল সালাহউদদীন , নুর খান রনি, কাজী সাদেকুল হক বাবলু, আবুল খায়ের, জাকির মাসুম, সিরাজুল হক সহ প্রমুখেরা।
    নানা রকম ব্যানার, ফেস্টুন, প্লে কার্ড সহ জাপান বিএন পির নেতাকমীরা এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
    সমাবেশে নেতাকমীরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেন। সমাবেশে বক্তারা শেখ হাসিনার জাপান সফরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন। তিনি অবৈধভাবে প্রশাসনের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন। তারা অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আহবান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় তিনি যেখানে যাবেন সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। তারা বলেন,শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশে গনতন্ত্রের কবর রচনা করেছেন। আজ জনগনের ভোটের অধিকার নেই,গনমাধ্যমের সাধীনতা নেই,আইনের শাসন নেই। প্রতিদিন গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, রাহাজানি সহ দুর্নীতি, দলীয়করনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ অবস্হা বিরাজ করছে।
    এই অবস্হায় তারা বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক জনগনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃতে গনতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহবান জানান।
    এই প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশে জাপান বি এন পি এবং এর অংগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকমী অংশগ্রহণ করেন।

    যে সময়গুলো নষ্ট হচ্ছে সেগুলোই আসল সময়: আবু আবদুর রহীম মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

    এক এক মুহূর্তের সমষ্টিই তো জীবন। প্রতিটি মুহূর্ত সময়ের একটি অংশ। সময়ের আলাদা কোনো অস্তিত্ব যেহেতু মানুষ অনুভব করে না তাই সময়ের বয়ে চলাও অনুভূত হয় না।

    وإنا لفي الدنيا كركب سفينة * نظن وقوفا، والزمان بنا يجري

    আমরা দুনিয়ার বুকে যেন নৌকার যাত্রী। মনে হয়, ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। অথচ সময় আমাদের নিয়ে বয়ে চলেছে।

    নৌকা কিংবা গাড়ির আরোহী কোথাও যাওয়ার সময় মনে করেÑ সে বসে আছে। অথচ সে চলছে। ঠিক তেমনি সময়ও তার কাজ করে চলেছে। সময় শেষ হয়েই যায়। বয়স বাড়ার অর্থ জীবন কমে যাওয়া। অথচ আমরা একটুও ভাবি না। আমাদের অবস্থা হল, কবির ভাষায়-

    الوقت أنفس ما عُنِيت بحفظه * وأراه أسهل ما عليك يضيع

    সংরক্ষণ করা যায় এমন বস্তুর মধ্যে সময় সবচেয়ে মূল্যবান/অথচ দেখছি, এটিই সবচেয়ে সহজে তোমার কাছে নষ্ট হচ্ছে।

    আমার শ্রদ্ধেয় আম্মাজান (হাফিযাহাল্লাহু ওয়া রাআহা) কে সব সময় দেখেছি, যোহরের পর থেকেই তিনি বলতে থাকেন, নামাযের সময় চলে যাচ্ছে! প্রথমদিকে আরয করতাম, এইমাত্র আপনি নামায পড়লেন!? তিনি বলতেন, আসরের নামাযের সময় চলে যাচ্ছে! ঘড়ির কাটা পাঁচের কোঠা পার হলেই বলতেন, ছ’টা বেজে গেছে। অথচ ডিজিটাল ঘড়িতে ৫টা ৫৯ মিনিট হলেও তা ৫ টাই থাকে। আর এমনটিই হল সাধারণ ধারণা!!

    রমযানুল মুবারক শুরু হয়। বুদ্ধিমানেরা আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নেয়, কর্মের প্রস্তুতি গ্রহণ করে, আলাদা নিযামুল আওকাত তৈরি করে। এরপর রমযানের শুরু থেকেই প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগায়। আর কিছু মানুষ প্রথম দশক পর্যন্ত মনে করে, কেবল তো রমযান শুরু হল। আর অধিকাংশ মানুষ তো প্রথম দুই-চার দিনেই তাদের সব আগ্রহ-উৎসাহ শেষ করে ফেলে। আর সকলের কাছেই শেষ দশক যেন রমযানের পরিশিষ্ট, মূল রমযান তো আগেই শেষ হয়ে যায়! এ কারণে শেষ দশক কাটিয়ে দেওয়া হয় ঈদের প্রস্তুতিতে। এ সময়ের প্রধান ব্যস্ততা থাকে কেনাকাটা, ঘুরে বেড়ানো ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা। এই তো আমাদের অবস্থা!!

    কিন্তু আমাদের আকাবির কী করতেন? তাঁদের রমযান কেমন ছিল? শেষ দশক তারা কীভাবে কাটাতেনÑএসব তাদের জীবনী-গ্রন্থ থেকে পাঠ করা উচিত। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রাহ.-এর পুস্তিকা ‘আকাবির কা রমযান’ও অধ্যয়ন করা যেতে পারে।

    শেষ দশকের গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, এটিই হচ্ছে সুন্নত ইতিকাফের সময়। আর লায়লাতুল কদরেরও প্রবল সম্ভাবনা শেষ দশকেই হওয়ার। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে তো সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪৪)

    সুতরাং শেষ দশককে যে নষ্ট করে সে প্রকৃতপক্ষে নিজের সব কল্যাণ বিসর্জন দেয়।

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বর্ণনা করেন –

    كان رسول الله صلى الله عيله وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهد في غيره.

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে সবচেয়ে বেশি মেহনত করতেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৫

    তিনি আরো বলেন,

    كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيا الليلَ، وأيقظ أهلَه، وجّدَّ وَشَدَّ المِئْزَرَ.

    শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জাগতেন। পরিবারের লোকদেরকেও জাগাতেন। অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪

    আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

    من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه، ومن قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه.

    যে সওয়াবের আশায় রমযানের সওম আদায় করে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে সওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদরে জাগরণ করে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৪

    আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেনÑ

    قال رسول الله صلى الله عيله وسلم : التمسوها في العشر الأواخر، يعني ليلة القدر، فإن ضعف أحدكم أو عجز فلا يُغْلَبَنَّ على السبع البواقي.

    তোমরা শেষ দশকে লায়লাতুল কদর অন্বেষণ কর। তোমাদের কেউ দুর্বল কিংবা অক্ষম হলে সে যেন অবশিষ্ট সাত রাতের বিষয়ে পরাজিত না হয়। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫ (২৭৪১)

    অন্য বর্ণনায় তিনি বলেনÑ

    تّحَيَّنوا ليلة القدر في العشر الأواخر، أو قال : في التسع الأواخر.

    তোমরা শেষ দশ রাতে লায়লাতুল কদর তালাশ  কর। অথবা বলেছেন, শেষ নয় দিনে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫ (২৭৪৩)

    এই হাদীসের মতো অন্য অনেক হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, লায়লাতুল কদর নির্দিষ্ট কোনো রাতের নাম নয়, যে রাতে সবাই মসজিদে সমবেত হবে, কিছু কথা শুনবে, এরপর সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে দুআ করে চলে আসবে!!

    লায়লাতুল কদর লাভের জন্য গোটা রমযান বিশেষ করে শেষ দশকে পূর্ণ প্রস্তুত থাকা উচিত এবং এর খোঁজে নিজেকে পূর্ণ মনোযোগী রাখা উচিত। নফল নামায, দুআ-যিকির, ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত ও দরূদ শরীফ ইত্যাদি আমলে সময় কাটানো উচিত। যেন শবে কদরের বরকত হাসিল হয় এবং মাগফিরাতের নিআমত লাভ করা যায়।

    এজন্য প্রথম চেষ্টা হওয়া উচিত, শেষ দশকের ইতিকাফ। কমপক্ষে অধিকাংশ সময় মসজিদে ও ইবাদতে কাটানো। আর গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকা তো মুমিনের সবসময়ের কর্তব্য। রমযান মাসে বিশেষ করে শেষ দশকে তা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

    বর্তমান সময়ে সবচেয়ে অনর্থক ও অযথা যে কাজে এই মুবারক সময়টুকু নষ্ট করা হয় তা হল কেনাকাটা, ঘুরে বেড়ানো ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা।

    আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে এর অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন এবং রমযান থেকে তাকওয়ার নিআমত লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    প্রধানমন্ত্রীর জি আউটরিচ বৈঠকে অংশগ্রহণ

    শেখ হাসিনা শুক্রবার শিল্পোন্নত দেশসমূহের সম্মেলন জি-৭ এর আউটরিচ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
    জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং জি-৭ সম্মেলনের আয়োজক শিনজো আবে’র আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
    জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও জি-৭ এর সদস্য ব্যতীত বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে এই আউটরিচ বৈঠকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। যার মধ্যে রয়েছে- ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, শ্রীলংকা, পাপুয়া নিউগিনি ও আফ্রিকার দেশ চাদ। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল মনেটরি ফান্ড (আইএমএফ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
    দু’দিনব্যাপী জি-৭ সম্মেলন কেন্দ্রিয় জাপানের মনোরম শহর ইসে-শিমায় গতকাল শুরু হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আউটরিচ বৈঠকের আয়োজনস্থল শিমা কানকো হোটেলের ব্যাংকুয়েট হলে এসে পৌঁছলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁকে স্বাগত জানান।
    প্রধানমন্ত্রী আউটরিচ বৈঠকের দুটি পর্বের আলোচনায় অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, এশিয়া এবং বিশ্ববাসীর উন্নয়নে জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন এবং উন্নত অবকাঠামো বিনির্মাণে সহযোগিতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফটোসেশন এবং মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশগ্রহণ করেন।
    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার কারণেই জাপান বাংলাদেশকে এই বৈঠকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
    এই আউটরিচ বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও অংশগ্রহণ করবেন। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মেইথ্রিপালা শ্রিসেনার সাথে বৈঠক করবেন।

    ইসলাম সম্পর্কে আপনার ধারণা পুরোপুরি অজ্ঞতাপূর্ণ -সাদিক খান , আমি বোকা নই যে লন্ডন মেয়র আমার আইকিউ টেস্ট করবেন : ট্রাম্প ইসলাম সম্বন্ধে জানতে ট্রাম্পকে লন্ডন যাওয়ার দাওয়াত

    যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লন্ডন পরিদর্শনের প্রস্তাব দিয়েছেন নগরীর নবনির্বাচিত মেয়র সাদিক খান। একই সঙ্গে তিনি কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী বলে সর্বত্র নিন্দিত ট্রাম্পকে লন্ডন সফরের সময় সেখানে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ারও প্রস্তাব করেন। এর আগে সাদিক খান তাকে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। এবার তিনি লন্ডনেও মুসলমানদের জীবনযাপন সম্পর্কে তাকে সম্যক অবহিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে চান। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার অভিমত প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। তাই এবার ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে লন্ডনে পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করার আমন্ত্রণ জানালেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। বুধবার সকালে আইটিভির গুডমর্নিং ব্রিটেন অনুষ্ঠানে সাদিক খান বলেন, তিনি (ট্রাম্প) আইএসের মতো চরমপন্থীদের অনুরূপ আচরণ করছেন। এ সময় তিনি বলেন, আসুন আমার স্ত্রী ও মেয়েদের সাথে সাক্ষাৎ করুন, আমার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সাথে দেখা করুন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মরগানকে সাদিক খান বলেন, ইউরোপের রাজধানী শহরের মেয়র হিসেবে একজন মুসলমানের নির্বাচিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে ট্রাম্পভীতি ও ট্রাম্প বিরোধীদের ঐক্যের লক্ষণ। খান বলেন, ট্রাম্পের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে আমি বলছি ইসলাম সম্পর্কে আপনার ধারণা পুরোপুরি অজ্ঞতাপূর্ণ। পশ্চিমাদের উদার নীতি ও ইসলাম সব সময়ই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর আগে ট্রাম্প ইসলাম পশ্চিমা মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করায় এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন লন্ডনের নবনির্বাচিত মেয়র। এর আগের দিন একই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, সাদিক খানের আচরণ খুবই রুঢ়। আমি বোকা নই যে তিনি আমার আইকিউ টেস্ট করতে চাইবেন। লন্ডনের নব নির্বাচিত মেয়র বলেন, তার নীতির অর্থ হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ান লিচেস্টার যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে গেলেও তাদের তারকা খেলোয়াড় রিয়াদ মাহরেজকে নিতে পারবে না। এর অর্থ হচ্ছে বিখ্যাত কেক নির্মাতা নাদিয়া হুসাইন আমেরিকা যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লন্ডনে আমন্ত্রণ জানাই।

    এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ চুরিঃ তদন্তে পুলিশ

    ভূয়া ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন এটিএম থেকে প্রায় একের পর এক বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করার ঘটনা ঘটেছে।

    ইন্টারনেট ব্যাংকিং সিস্টেম সেভেন ব্যাংক পুলিশকে জানিয়েছে অর্থের পরিমান ছিলো ১৪০ কোটি ইয়েন বা ১ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারের সমপরিমান। মে মাসের ১৫ তারিখ বিভিন্ন স্থানের কনভেনিয়েন্স স্টোরের এটিএম মেশিন থেকে টাকা গুলো হাতিয়ে নেয়া হয়।

    পুলিশ বলেছে টোকিও সহ অন্য ১৬টি প্রিফেকচারে রাতে ৩ ঘন্টায় ১,৪০০ এটিএম এ একযোগে এই চুরি সংঘটিত করা হয়।

    তদন্তকারীরা মনে করছেন ১০০র বেশি মানুষ এই গন অর্থ উত্তলনের সাথে জড়িত ছিলো।

    পুলিশ বলছে সম্ভবত ১,৬০০ ক্রেডিট কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্যও ফাঁস করা হয়। এসব কার্ড গুলো ইস্যু করেছিলো একটি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাংক।

    মেশিন অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ সনাক্ত করার পর সেগুলোর ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। কার্ড গুলো চীনা অক্ষর বহন করছিলো।

    তদন্তকারীরা বের করার চেষ্টা করছেন কী ভাবে ক্রেডিট কার্ড বিতরণ করা হয়েছিলো, এবং সেগুলো দিয়ে অর্থ উত্তলণ করা হয়েছিলো।

    শবে বরাত মহিমান্বিত রজনী 

    মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী: আল্লাহ তা’আলা পরম দয়ালু। অসীম মেহেরবান। তিনি উদার ক্ষমাশীল। ক্ষমা তাঁর অন্যতম আদর্শ, শ্রেষ্ঠ গুণ। ক্ষমা করার জন্য ক্ষমা প্রার্থীর আবেদনের অপেক্ষায় থাকেন তিনি। বাতলে দিয়েছেন এর অসংখ্য পথ ও পাথেয়। স্বীয় বান্দাদেরকে প্রদান করেছেন তিনি ক্ষমার সুবর্ণ সুযোগ আর বিশাল বিশাল অফার। বরাদ্দ করেছেন ক্ষমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সময়। যে সময়ে তিনি মহা পাপীদের মুক্তি দেন, মর্যাদা বাড়িয়ে দেন- বাড়িয়ে দেন ভালো কাজের বিনিময় অনেক অনেক গুণে। মুছে দেন পাপীদের কালিমার সব চিহ্ন। এই মহা অফারসমূহের অন্যতম একটি হলো শবে বরাত। শবে বরাতে মুক্তি ও রহমতের দ্বার উন্মুক্ত থাকে শবে বরাত একটি মহিমান্বিত রজনী। এই রজনীতে পরম করুণাময় তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। পাপীদেরকে উদার চিত্তে ক্ষমা করেন। এ মর্মে একটি সহীহ হাদীস নি¤œরূপÑ “হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “আল্লাহ তা’আলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টিকুলের প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক বিদ্বেষী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। “সহীহ ইবনে হিব্বান” (১২/৪৮১, হাদীস নং ৫৬৬৫) ইমাম তাবরানী, কাবীর (২০/১০৯ হা. নং ২১৫), আওসাত (৭/৬৮ হাদীস নং ৬৭৭৬), বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান (৫/২৭২ হা. নং ৬৬২৮) হাদীস বিশারদ নির্ভরযোগ্য সব উলামায়ে কেরামের গবেষণা মতে এ হাদীসটি ‘সহীহ’ বিশুদ্ধ। উল্লিখিত বিষয়ে প্রায় এক ডজনের বেশি হাদীস নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে সংকলন করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি আছে সহীহ। কয়েকটি আছে ‘হাসান’ (গ্রহণযোগ্য উত্তম হাদীস) এ ছাড়া কিছু আছে দুর্বল। কিন্তু হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী হাদীস গ্রহণযোগ্য। এ মর্মে যেসব সাহাবায়ে কেরাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে তাঁদের অন্যতম কয়েকজন হলেন, হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.), হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.), হযরত আয়েশা (রা.), হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা.), হযরত আবূ সা’লাবা (রা.), হযরত আবূ হুরায়রা (রা.), হযরত আউফ ইবনে মালেক (রা.), হযরত কাসীর ইবনে মুররাহ (রা.), হযরত উসমান ইবনে আবীল আস (রা.) এবং হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (রা.)। উপরোল্লিখিত হাদীসটি যেসব বিশ্ব বরেণ্য হাদীস বিশারদ ইমামগণ সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাদের অন্যতম হলো, আরব বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গবেষক ও মান্যবর ইমাম হাফেজ নূরুদ্দীন হায়সামী (রহ.)। তিনি তাঁর নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ “মাজমাউয যাওয়ায়েদ”-এ লেখেনÑ“ইমাম তাবরানী স্বীয় হাদীস গ্রন্থ ‘কাবীর’ ও ‘আওসাত’-এ হাদীসটি সংকলন করেছেন। উভয় গ্রন্থে এ হাদীসের বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।” মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫ এ ছাড়া আরব ও অনারব অসংখ্য উলামায়ে কেরাম শবে বরাতের হাদীসগুলোকে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। আরব বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মান্যবর ইমাম আল্লামা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এবং আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীও শবে বরাত সম্পর্কীয় হাদীসগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন । ইকতিযা, পৃ. ৪৮৪ সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা ৩/১৩৫ আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী লেখেন “শবে বরাত সম্পর্কীয় হাদীসের ক্ষেত্রে সার কথা হলো, শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো সমষ্টিগতভাবে নিঃসন্দেহে ‘সহীহ’। হাদীস অত্যধিক দুর্বল না হলে আরো কমসংখ্যক সূত্রে বর্ণিত হাদীস সহীহ হিসেবে গণ্য হয়।” সিলসিলাতুস সহীহা ৩/১৩৮-১৩৯ শবে বরাত ভাগ্য বণ্টনের রাত হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ“নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবান রাতে (শবে বরাতে) যাবতীয় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ফায়সালা করেন। আর শবে কদরে তা নির্দিষ্ট দায়িত্বশীলের নিকট অর্পণ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) আরো বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা লওহে মাহফূজ থেকে পূর্ণ কুরআনে কারীম একত্রে অবতরণ করেন শবে বরাতে। আর অবতরণের ধারা সমাপ্ত করেন শবে কদরে। লুবাব, আবু হাফস উমর ১৭/৩১১, তাফসীরে রাযী ২৭/২৩৯, কুরতুবী ১৬/১২৬ বলাবাহুল্য, তাফসীর বিশারদ ইমামদের ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণ হয় শবে কদর এবং শবে বরাত উভয় রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তবে শবে বরাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভাগ বণ্টন করা হয়। তাই এর নাম মুবারক রাত বা ভাগ্য রজনী। তাফসীরে কাশশাফ ৪/২৬৪, রূহুল মাআনী ৯/১১২ শবে বরাতে রাত জেগে ইবাদত করা ও পরদিন রোযা রাখা হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। এতে তিনি এমন দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি মারাই গিয়েছেন। আমি যখন অবলোকন করি, তখন বিছানা থেকে উঠে নবীজী (সা.)-এর বৃদ্ধাঙ্গুলিতে নাড়া দিই। এতে করে তাঁকে সচেতন বুঝতে পারি, আমার বিশ্বাস হলো তিনি জীবিত আছেন। অতঃপর নিজ বিছানায় ফিরে এলাম। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠালেন। নামায সমাপ্ত করে তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কী ধারণা হয়েছে? নবী কী তোমার সাথে সীমালঙ্ঘন করেছে? আমি বলি, না, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! তবে আপনার দীর্ঘ সেজদার কারণে আমার মনে হয়েছে আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন। অতঃপর মহানবী (সা.) বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি জানো আজকের এ রাতটি কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত। নবীজী (সা.) বললেন, “এ রাতটি মধ্য শাবানের রাত (শবে বরাত)। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের দয়া করেন, তবে হিংসুক ব্যক্তিদের স্বীয় অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন।” বায়হাকী শুআবুল ঈমান ৩/৩৮৩, হা. ৩৮৩৫, আততারগীব ওয়াত তারহীব ২/৭৩-৭৪ ইমাম বায়হাকী (রহ.) উল্লিখিত হাদীসটি সংকলন করেছেন। তিনি এ হাদীসটি সম্পর্কে গ্রহণ করার মতো উত্তম মুরসাল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন। সাথে সাথে শবে বরাতের ফযিলতপূর্ণ অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে এই হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পাবে। সুনানে ইবনে মাজায় হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনÑ পনের শাবানের রাত যখন আসে, তোমরা এই রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোযা রাখো। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে আসেন আর বলেন, “কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিযিক অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিযিক প্রদান করব। আছে কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।” ইবনে মাজাহ সুনান পৃ. ৯৯ হা. ১৩৮৮, বায়হাকী শুআবুল ঈমান ৩/৩৭৮ হা. ৩৮২২ হাদীস বিশারদ ইমামগণের গবেষণা মতে এ হাদীসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। তবে এতে শুধু ইবনে আবী সাবূরা নামক এক ব্যক্তি রয়েছে, তার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে হাদীসটি আংশিক সামান্য দুর্বল বলে গণ্য হবে। এ ধরনের দুর্বল হাদীস ফাযায়েলের ক্ষেত্রে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য শবে বরাত শীর্ষক হাদীসগুলোকে সমষ্টিগতভাবে হাদীস বিশারদ ইমামগণ বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন, তাই এ হাদীসটিও গ্রহণযোগ্য হবে। শবে বরাতে যা বর্জনীয় এ রাতে নির্দিষ্ট কোনো আমল বা নির্দিষ্ট সংখ্যায় কোনো কাজকর্ম কুরআন-হাদীসে বর্ণিত নেই। নেই নামাযের কোনো নির্দিষ্ট রাক’আত সংখ্যা, ভিন্ন কোনো পদ্ধতি। এ রাতে নামায, দু’আ ও কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নফল আমলের অন্তর্ভুক্ত। আর যাবতীয় নফল আমল আপন আপন ঘরে একাগ্রচিত্তে পড়া উত্তম। তাই এ রাতে নফল নামায আদায়ের জন্য দলে দলে মসজিদে জমকালো আনুষ্ঠানিকতা সৃষ্টি করা ঠিক নয়। তবে কোনো ধরনের আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত মসজিদ নামাযের স্থান হিসেবে এতে সমবেত হয়ে গেলে কোনো আপত্তির কারণ নেই। অনুরূপভাবে হালুয়া-রুটি, মিষ্টি বিতরণ এবং বাসাবাড়ি, মসজিদ, দোকান, অফিস ইত্যাদিতে আলোকসজ্জা করা, পটকাবাজি, আতশবাজি, কবরস্থানে পুষ্প অর্পণ ও আলোকসজ্জা করা ইত্যাদির কোনো ভিত্তি নেই। নেই সাহাবায়ে কেরাম ও নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরামের অনুসৃত আমলের কোনো প্রমাণ। তাই এ সব কুসংস্কার পরিপূর্ণরূপে পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি। কবর যিয়ারতের বিধান হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এক রাতে বিছানায় পাইনি। তখন খোঁজ করার জন্য বের হয়ে তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে (কবরস্থানে) পাই। (এমতাবস্থায় কথা প্রসঙ্গে) তিনি বলেনÑ“মধ্য শাবান বা শাবানের পঞ্চদশ রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন এবং বনু কালব গোত্রের ছাগল ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন।” তিরমিযী, সুনান ১/১৫৬ হা. ৭৩৯, ইবনে মাজাহ-পৃ. ৯৯ হা. ১৩৮৯ হাদীসটির মূল সূত্রে এক স্থানে ধারাবাহিকতা ছিন্ন হয়েছে। তবে পূর্বোল্লিখিত শবে বরাত সম্পর্কীয় অসংখ্য হাদীসের সমন্বয়ে সমষ্টিগতভাবে হাদীসটি সহীহ পর্যায়ে গণ্য হবে। তাই হাদীসটি গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য। এ হাদীসে বিশেষভাবে লক্ষণীয় একটি বিষয় হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) শবে বরাতে জান্নাতুল বাক্বী (কবরস্থানে) গিয়েছিলেন। এতে কবরস্থানে যাওয়া এ রাতের একটি উল্লেখযোগ্য আমল হিসেবে প্রমাণ বহন করে। তবে উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ রাতে কবরস্থানে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনি তো একাকী গিয়েছিলেন। গিয়ে ছিলেন নির্জনে অনানুষ্ঠানিকভাবে। তাই কবর যিয়ারতের নামে দলবদ্ধ হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান করা, জমকালো অনুষ্ঠানে পরিণত করা, কবরে আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি, পুষ্পঅর্পণে লিপ্ত হওয়া, বিনোদন ও নারী-পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত করা ইত্যাদি শবে বরাতের নামে বাড়াবাড়ি ও ধর্মবিকৃতির নামান্তর। এ সবই ইসলামী আদর্শ বিবর্জিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাগণের অনুসৃত আমল থেকে দূরে-অনেক দূরে। তাই শরীয়তের যাবতীয় ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও চরমপন্থা পরিহার করে শরীয়তকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা একান্ত অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বোঝা ও আমল করার তৌফিক দিন। শাবান মাসে সবধরনের পাপাচার হতে মুক্ত থেকে এ মাসের যথাযথ মূল্যায়ন এবং কল্যাণ লাভে সবাইকে ধন্য করুন।

    আণবিক বোমার শিকার মানুষদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন না ওবামা

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ সপ্তাহে জাপান সফরে আসছেন। তার জাপান সফরের প্রাক্কালে তিনি এনএইচকে’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়তে তার প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট শনিবার ভিয়েতনাম’র উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেছেন।

    বুধবার তিনি ইসে শিমা’তে গ্রুপ৭ এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জাপানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।

    কেন তিনি হিরোশিমা সফরের সিদ্ধান্ত নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবামা বলেছেন, হিরোশিমা সফরের জন্যে এটিই উপযুক্ত সময়।

    তিনি বলেন “জি৭ সম্মেলন হিরোশিমা এবং শান্তি স্মারক পার্কের নিকটেই অনুষ্ঠিত হবে। আমার প্রথম জাপান সফরের সময়ে আমি বলেছিলাম আমি এ নিয়ে চিন্তা করছি এবং আমি এই সফরে আগ্রহী। আমার হাতে (মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে) আর মাত্র কয়েকমাস বাকী, তাই আমার মনে হলো এখন এই সফরে যাওয়ার জন্যে উপযুক্ত সময়।”

    ওবামা বলেন “আমার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র অতীত স্মৃতিচারণ নয়, বরং যুদ্ধে দু’পক্ষেরই অনেক নিরিহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আমাদের উচিত শান্তি ও সংলাপের জন্যে সব কিছু করার চেষ্টা করা।”

    ওবামা বলেন, আণবিক বোমায় বেঁচে যাওয়াদের প্রতি তিনি দুঃখ প্রকাশ করে কোনো বার্তা দেয়ার তার অভিপ্রায় নেই।

    তিনি বলেন “আমার মনে হয় এটা উপলব্ধি করা উচিত, যুদ্ধের মধ্যে নেতৃবৃন্দ সব ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা এবং পরীক্ষা করা হলো ঐতিহাসিকদের বিষয়। কিন্তু সাড়ে সাত বছর এই আসনে বসার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি নেতাদেরকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, বিশেষ করে যুদ্ধের সময়।”

    জাপানি পাসপোর্টের নক্সা পাল্টাচ্ছে 

    জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্টের ভেতরের পৃষ্ঠা গুলোর নক্সা পাল্টে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে ভিসা’র পাতায় কয়েক শতাব্দীর পুরোনো কাঠ খোদাই করে মাউন্ট ফুজির দৃশ্য প্রিন্ট করা রয়েছে।

    মন্ত্রণালয় বলেছে নতুন পাসপোর্ট গুলো ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে শুরু করে ১৯শ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত উকিয়ো-এ শিল্পী কাৎসুশিকা হোকুসাই’র মাউন্ট ফুজি’র ৩৬ রকম দৃশ্য থেকে ২৪টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

    এগুলো ভিসা পাতার পটভূমি হিসেবে থাকবে, যেখানে কোনো দেশে প্রবেশ বা বেরিয়ে যাওয়ার স্ট্যাম্প দেয়া থাকে।

    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত ভাবে পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এনে থাকে যাতে পাসপোর্টের নকল তৈরি করা সহজ সাধ্য না হয়।

    ভারতের ‘আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত: মরুভূমি হবে বাংলাদেশ  

    ‘আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। প্রকল্পটি বন্ধে সরকার তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে না পারলে গোটা দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভারত এই প্রকল্পের কাজ জোরালোভাবে এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় এ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও ভারতের এমন উদ্যোগে আপত্তি তোলা হয়েছে। চলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাওয়ার প্রস্তুতি। এদিকে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বীরপ্রতীক গতকাল বুধবার ইনকিলাবকে বলেছেন, ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রী উমা ভারতীর বক্তব্য আমাদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান। যদি না হয়, প্রয়োজনে আমরা বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলব। উল্লেখ্য, গত ১৬ মে বিবিসি জানায়, ভয়াবহ খরা সামাল দিতে ভারত সরকার তাদের বিতর্কিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যে প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী উমা ভারতীকে উদ্ধৃত করে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো থেকে পানি প্রত্যাহার করে খরাকবলিত এলাকায় সরবরাহ করার ওপর এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত সরকার। ১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট সরকার গঠনের পর প্রথম আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প হাতে নেয় ভারত। পরে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের আমলে পরিবেশবাদীদের বিরোধিতার কারণে তা এগোয়নি। ২০১২ সালে ভারতের উচ্চ আদালত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মতি দেয়। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নর্মদা ও শিপ্রা নদীকে খালের মাধ্যমে যুক্ত করার কাজের মধ্য দিয়ে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ভারতের এমন সর্বনাশা প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন দেশটির পরিবেশবাদীরাও। তারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে বলছেন, এভাবে নদীর পানি প্রত্যাহার করা হলে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশই শুধু নয়, ভারতের জন্যও তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, ভারত সরকার পরিবেশের ওপর এ প্রকল্পের প্রভাব সঠিকভাবে যাচাই না করেই ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। আর সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভার ও পিপল-এর সদস্য হিমাংশু ঠাক্কারকে উদ্ধৃত করে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদী সংযোগ প্রকল্পের মূল ধারণা হলোÑযেখানে পানির প্রবাহ উদ্বৃত্ত, সেখান থেকেই খরা প্রবণ এলাকাগুলোতে পানি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা চলছে, তাতে ভবিষ্যতে কোন নদীর কী অবস্থা হবে তা বোঝা সম্ভব নয়। আর কোন নদীতে কী পরিমাণ পানি উদ্বৃত্ত আছে, কোথায় ঘটতিÑসে বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাও নেই। এ রকম অবস্থায় প্রকল্পটি চালু করা হলে ভবিষ্যতে তা ভারতের জন্যও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ভারতের পরিবেশবাদী কর্মীদের এমন বিরোধিতা সত্ত্বেও উমা ভারতী বিবিসিকে বলেন, ‘নদী সংযোগ প্রকল্প আমাদের প্রাইম এজেন্ডা এবং এ বিষয়ে জনগণ আমাদের পক্ষে। দ্রুত এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাঁচটি খাল খননের কাজ এগিয়ে চলেছে এবং এর মধ্যে উত্তর ও মধ্য প্রদেশের কেন-বেতওয়া সংযোগ দিয়ে যে কোনো সময় পানিপ্রবাহ চালু করা সম্ভব হবে। ‘এরপর আমরা দামান গঙ্গা-পিঞ্জল সংযোগ চালু করতে পারব, সেক্ষেত্রে মুম্বাইয়ের সুপেয় জলের অভাব পূরণ করা সম্ভব হবে।’ আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ভারতের মিডিয়ায় ফলাও করে সংবাদ প্রচার হলে ওই সময় বাংলাদেশ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ওই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছিল, ভারতের এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশকে গভীর উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যপারে একটি ‘নোট ভারবাল’ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর পরই প্রকল্পটি নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে ওই সময় লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনা নিয়ে ভারতের এমন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করেছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রকল্প তারা নেবেন না। বিশেষ করে ‘বরাক নদীর উজানে টিপাইমুখ ড্যাম প্রকল্প’ এবং ‘আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ করার আগে তারা বাংলাদেশের অনুমতি নেবে। কিন্ত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প শুরু করা নিয়ে যে সংবাদ বিবিসিতে প্রচার হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীরবিক্রম বলেছেন, ভারতের এমন সর্বনাশা প্রকল্প বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে এ ধরনের প্রকল্প বন্ধে ভারত সরকারকে চাপে রাখা। জানা যায়, ভারতের ন্যাশনাল ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি প্রায় ২০ বছরের পর্যবেক্ষণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩৮টি নদীসহ বিভিন্ন নদীর মধ্যে ৩০টি সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার বিশেষ দিক হচ্ছে নদীর এক অববাহিকার উদ্বৃত্ত পানি অন্য অববাহিকায় যেখানে ঘাটতি রয়েছে সেখানে স্থানান্তর করা। এই ২৯টি সংযোগ খালের মধ্যে ১৩টি হিমালয় বাহিত আর ১৬টি পেনিনসুলার বা বিভিন্ন নদী ও উপদ্বীপ থেকে উৎসারিত। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত সারাদেশে ৭৪টি জলাধার ও বেশ কিছু বাঁধ নির্মাণ করবে। ফলে বর্ষার সময় সঞ্চিত পানি শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে কৃষি ও অন্যান্য কাজে সরবরাহ করবে। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমেও এসব সংযোগ খালের মাধ্যমে এক জায়গায় পানি আরেক জায়গায় নেয়া যাবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালের মধ্যে সংযোগ খালসমূহ খনন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৪টি লিংক তৈরি করা হবে। সেগুলো হচ্ছেÑকোচি-মেসি লিংক; কোচি-ঘাঘারা লিংক; গংদক-গঙ্গা লিংক; ঘাঘারা-যমুনা লিংক; সারদা-যমুনা লিংক; যমুনা-রাজস্থান লিংক; রাজস্থান-সবরমতি লিংক; ছনার-সোন ব্যারাজ লিংক; সোনড্যাম-গঙ্গা লিংক; মানস-সংকোশ-তিস্তা-গঙ্গা লিংক; জোগিঘোপা-তিস্তা-ফারাক্কা লিংক; ফারাক্কা-সুন্দরবন লিংক; গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা লিংক এবং সুবর্ণরেখা-মহানদী লিংক। মূলত এই লিংকগুলোর মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরে নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে প্রয়োজন মতো এক নদীর পানি অন্য নদীতে নিয়ে যাওয়া যায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খাল কেটে বৃষ্টি প্রধান উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পানি পশ্চিম ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ পশ্চিম ভারতে অপেক্ষাকৃত বৃষ্টিপাত কম হয় এবং সেখানে আবহাওয়া শুষ্ক। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি খাল কেটে রাজস্থান, গুজরাটসহ দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। আবার গঙ্গার পানি গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ১৭৪ বিলিয়ন কিউসেক পানি পশ্চিম ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে যার মাধ্যমে এসব রাজ্যের ১৬ লাখ হেক্টর জমিতে কৃষিকাজ করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো ভারতজুড়ে একটি নদীপথ তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে ভারতের উষ্ণাঞ্চলে পানির প্রবাহ নিশ্চিত হয়ে যাবে। দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তঃনদী সংযোগের ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ ভারতের অন্য অঞ্চলে চলে গেলে তার ভয়াবহ প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। ইতোমধ্যেই ফারাক্কা এবং গজলডোবার বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের একটি বিশাল অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আর যদি ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তাহলে গোটা বাংলাদেশই পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। ভারত প্রকৃত অর্থে কী করছে, আমরা তার টেকনিক্যাল দিকগুলো জানতে চাইবো। আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবো-কেন তারা এমন বিতর্কিত একটি প্রকল্প করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভাটির দেশ। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা বাধাপ্রাপ্ত হয় এমন কিছু করাটা ঠিক হবে না। তিনি জানান, ভারতের সাথে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। দু’দেশের স্বার্থেই ভারতকে এসব নদী বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতেই ভারতকে তার আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্প নিয়ে ভারতের পরিবেশবাদীরাও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের জন্যও এই প্রকল্প উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তার কারণ। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এর নিস্পত্তি না হলে বাংলাদেশ প্রয়োজনে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলবে। দেশের বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কাজেই সরকারকে রাজনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। একইভাবে যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত গঙ্গা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি সরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে পড়বে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ তার এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা বারবার ভারতকে জানিয়েছে।

    গরমের ফল তরমুজের উপকারিতা  

    গরমের অশ্বস্তি থেকে মুহূর্তেই প্রশান্তি আনে মৌসুমি ফল তরমুজ। শরীর ঠা-া রাখতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। তরমুজের নানান রকম উপকারিতা রয়েছে। এই ফলে শতকরা প্রায় ৯২ ভাগ পানি আছে। তাই নিদারুণ গরমের মধ্যে তরমুজ খেলে সহজেই মিটে পানির তৃষ্ণা। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম পানি, আঁশ ০.২ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম। এছাড়াও তরমুজে ক্যালসিয়াম রয়েছে ১০ মি.গ্রাম, আয়রন ৭.৯ মি.গ্রাম, কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি। তরমুজের বিশেষ কয়েক ধরনের অ্যামাইনো এসিড নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালী বজায় রাখে। উচ্চরক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। এতে বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণও অনেক। বিটা ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে। প্রতিদিন ২ কাপের মতো তরমুজ খেলে শরীরে ভিটামিন এ-র চাহিদা পূরণ হয়। তরমুজ খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ থাকে। কারণ ভিটামিন এ ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। তরমুজের ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১ শরীরে এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুই কাপ পরিমাণ তরমুজ খেলে শরীরে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি-র চাহিদা মেটে। তরমুজে আরও আছে পটাশিয়াম, যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। পটাশিয়াম শরীরে ফ্লুইড ও মিনারেলসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ২ কাপ তরমুজে ৩৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া পরিমাণে কম হলেও তরমুজে সোডিয়াম রয়েছে যা সহজেই শরীরের চাহিদা পূরণে কাজ করে থাকে। তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তরমুজ খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস জনিত অসুস্থতা কমে যায়। এছাড়াও নিয়মিত তরমুজ খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। ফলে শরীর থাকে সুস্থ ও সতেজ। তরমুজে আছে ক্যারোটিনয়েড। আর তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে এবং চোখের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যারটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আর তাই তরমুজ খেলে পেট ভরে যায় কিন্তু সেই অনুযায়ী তেমন কোনো ক্যালরী শরীরে প্রবেশ করে না। ফলে তরমুজ খেয়ে পেট পুরে ফেললে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা যৌনশক্তির দিক থেকে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। একটি তরমুজে প্রচুর পরিমাণে সিট্রোলিন নামের অ্যামাইনো এসিড থাকে যা ভায়াগ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তরমুজ হার্টের জন্য ভালো। রক্তবাহী ধমনীকে নমনীয় ও শীতল রাখে এটি। স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে এ ফলটি। কিডনির জন্য বেশ উপকারী ফল তরমুজ। কিডনি ও মূত্রথলিকে বর্জ্যমুক্ত করে ফলটি। কিডনিতে পাথর হলে, চিকিৎসকরা ডাবের পানি, তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া রোগাক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে দ্রুত সতেজ করে তুলতে ভূমিকা রাখে তরমুজ।