• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • হিমায়িত মাছ থেকে মাছের পোনা!!

    জাপানের গবেষকরা বলেছেন তারা হিমায়িত মাছের নমুনা থেকে মাছের পোনা পুনরুৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা বলছেন এই প্রক্রিয়া বিপন্ন প্রায় প্রজাতি গুলোর অস্তিত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে।

    টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানিরা ৩ বছর ধরে হিমায়িত করে রাখা রেইনবো ট্রাউট মাছ হতে জীবন্ত স্টেম সেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

    তারা অন্য একটি প্রজাতির ট্রাউট মাছের দেহে রেইনবো ট্রাউট মাছ থেকে সংগৃহীত স্টেম কোষকে প্রতিস্থাপন করেন। সেখান থেকে ডিম ও শুক্রাণু উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় মৌলিক রেইনবো ট্রাউট মাছের ছানা উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

    আগের একটি গবেষণায় দেখা গেছে হিমায়িত মাছের ডিম তাদের প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গবেষণা দলের নেতা গোরো ইয়োশিজাকি বলেন এই প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানিরা “জন্মের টাইম ক্যাপসুল” তৈরি করে ফেলেছেন।

    “ভবিষ্যতের পরিবেশকে মাছের জন্যে আরো বসবাসযোগ্য করতে আমি টাইম ক্যাপসুল নির্মাণ করতে চাই। তিনি বলেন আমি ক্যাপসুলের ঢাকনা খুলে পোনাদেরকে অবমুক্ত করতে চাই।”

    গবেষকরা একই প্রক্রিয়ায় বিরল প্রজাতির স্যামন প্রজাতিকে সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করছেন।

    তামীম পেরেছেন, পারেননি মুশফিক 

    দু’বন্ধু তামীম ও সাকিবের মধ্যে লড়াইটা জমে উঠেছে ভালোই। ওয়ানডে ক্রিকেটে চার হাজারী ক্লাবের সদস্যপদে বাংলাদেশের ২ ব্যাটসম্যান তারাই। তিন ভার্সনের ক্রিকেটে রান সংগ্রহের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদও তাদেরই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকেও অন্য উচ্চতায় তুলেছেন এই দুই বাঁ-হাতি। ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ভেন্যুতে ২ হাজার রান, কম কথা নয়। প্রেমাদাসায় জয়সুরিয়া (২৫১৪) ও সাঙ্গাকারা (২১৫৬) ছাড়াও সারজায় পাকিস্তান গ্রেট ইনজামাম (২৪৬৪) ও সাইদ আনোয়ার (২১৭৯) এবং মেলবোর্নে অজি গ্রেট রিকি পন্টিংয়ের (২১০৮)। সেই রেকর্ডের পাশে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এমন কৃতিতে সাকিব নাম লিখিয়েছেন দ. আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। বন্ধু তামীমকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। বছরের শেষ ম্যাচে এসে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এমন অধ্যায় রচনা করেছেন তামীম। এই বিরল কৃতিত্বে সাকিবের যেখানে লেগেছে ৬৫ ম্যাচ, তামীমের সেখানে বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেটে খেলতে হয়েছে একটি বেশি ম্যাচ। এমন মাইলফলকে সাকিবের পাশে নাম লেখানোর জন্য তামীমের প্রয়োজন ছিল গতকাল ১৭ রান, মুশফিকুরের সেখানে লাগত ৪০। মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে সদস্যপদ পেয়ে ছেড়েছেন তামীম। গতকালকের ৭৩ রানে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদে সাকিবকে (২০৫০ রান) টপকে গেছেন তামীম (২০৫৬)। এক ভেন্যুতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২ হাজার রান পূর্ণ করার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মুশফিকুর। তাহলে এক দিনে এক ভেন্যুতে দুই ব্যাটসম্যানের এমন কৃতি হয়ে যেত বিশ্বরেকর্ড। তবে ওয়ালারকে ডাউন দ্য উইকেটে লেট কাট করতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে কাঁটা পড়ে ২৮এ ফিরে যাওয়ায় ২ হাজার থেকে এখন ১২ রান দূরে মুশফিকুর। তবে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সৌম্যকে (৬৭২ রান) ছাড়িয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে এই বছরটিতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৬৭ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর। গত বছর ১৮ ম্যাচে সংগৃহীত ৭০৪ রানকে ছাড়িয়ে এবার সমসংখ্যক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। দারুণভাবে কাটিয়ে দেয়া বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সবোচ্চ ৭৪২ রান তামীমের। তবে ক্যারিয়ারে বছরওয়ারি পারফরম্যান্সের চেয়েও বেশি রানের অতীত আছে তামীমের। ২০০৮ সালে ২৬ ম্যাচে ৮০৭ এবং ২০১০ সালে ২৩ ম্যাচে করেছেন তিনি ৭৭৬ রান। বিশ্বকাপে উপর্যুপরি ২ সেঞ্চুরিতে বিস্ময়ের জন্ম দেয়া মাহামুদুল্লাহ রিয়াদও নিজেকে এ বছর চিনিয়েছেন অন্য রূপে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯ ও ৪-এর পর গতকাল ৫২।৩২ রানের মাথায় ক্রেমারকে কভারে পুশ করে নন স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান মাশরাফির কল না দেখে দিয়েছিলেন সিঙ্গলের জন্য দৌড়। কভারের ফিল্ডার সিকান্দার রাজার ডাইরেক্ট থ্রো স্ট্যাম্পে আঘাত হানার আগে জচ্চুরির আশ্রয় নিয়ে বলহীন গ্লাভস দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়ে উইকেটকিপার চাকাভা যে অনৈতিক কাজ করেছেন, তা না দেখেই ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা শুরু করেছিলেন মাহামুদুল্লাহ। ঠিক বাউন্ডারি রোপ যখন অতিক্রম করতে উদ্যত মাহামুদুল্লাহ, তখন ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসে মাহামুদুল্লাহকে থামিয়েছেন তামীম। অতঃপর টিভি রিপ্লেতে চাকাভার ওই অনৈতিক কা- পড়েছে ধরা Ñ তার জন্য টিভি আম্পায়ার এনামুল হক মনিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মিনিট পাঁচেক। ৩২ রানে থেমে, মাঠে ফিরে যোগ করেছেন রিয়াদ আরো ২০ রান এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার ১৪তম ফিফটিটি আবার দ্রুততম। ৩৮ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় প্রাপ্ত এই ফিফটির সুবাদে এ বছর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ পূর্ণ করে ছেড়েছেন মাহামুদুল্লাহ ওয়ানডেতে। বছরটি শেষ করেছেন বিশ্বকাপ হিরো ৫০৬ রানে। তবে এক বছরে এর চেয়েও বেশি রানের অতীত আছে তার এবং তা মাত্র ১ রান বেশি। ২০১০ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে করেছিলেন তিনি ৫০৭ রান। এক ভেন্যুতে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২ হাজার রানব্যাটসম্যান ভেন্যু ম্যাচ রান গড়জয়সুরিয়া (শ্রীলংকা) প্রেমাদাসা ৭১ ২৫১৪ ৩৮.৬৭ইনজামাম(পাকিস্তান) শারজাহ ৫৯ ২৪৬৪ ৫০.২৮সাইদ আনোয়ার (পাকিস্তান) শারজাহ ৫১ ২১৭৯ ৪৫.৩৯সাঙ্গাকারা (শ্রীলংকা) প্রেমাদাসা ৬২ ২১৫৬ ৪২.২৭রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া) মেলবোর্ন ৪১ ২১০৮ ৫৬.৯৭তামীম (বাংলাদেশ) মিরপুর ৬৬ ২০৫৬ ৩২.১৭সাকিব (বাংলাদেশ) মিরপুর ৬৮ ২০৫০ ৩৪.২৭

    টোকিওতে জরুরি ১১৯ নম্বর মিনিটের জন্যে অচল

    টোকিও দমকল বিভাগ বুধবার বলেছে একটি সিস্টেম সঠিক ভাবে কাজ না করায় মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে জরুরি বিভাগের ১১৯ নম্বরটি ৬ মিনিটের জন্যে অচল হয়ে পড়ে। এ সময় রাজধানীর ২৩টি ওয়ার্ডের কোথাও ১১৯ নম্বর ডায়াল করা যাচ্ছিলো না।

    দমকল বিভাগ বলেছে এ সময় ৭টি নম্বর থেকে ১১৯ নম্বরে ডায়াল করা হয়, যার সব গুলোই শেষ পর্যন্ত সংযোগ পেতে ব্যর্থ হয়। দমকল বিভাগ বলেছে রক্ষণাবেক্ষণ পরীক্ষার সময় অব্যাহত ভাবে সিস্টেমটি লগইন এবং লগ আউট করতে থাকলে সেখানে ত্রুটি দেখা দেয়।

    গত মার্চ ও এপ্রিল মাসেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো। দমকল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন বিগত ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গোটা ফোন সিস্টেম পাল্টানোর কাজ চলছে।

    সিরিজ বাংলাদেশের, অপেক্ষা বাংলাওয়াশের

    সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ৫৮ রানে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এবার স্বাগতিকদের সামনে বাংলাওয়াশের হাতছানি। এর মধ্য দিয়ে ঘরে মাঠে টানা পঞ্চম সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা।
    ২৪২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় ৭৮ রানের মাথায় ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। দলীয় ২২ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন হয় সফরকারীদের। আরাফাত সানির বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন রেজিস চাকাভা। এরপর দলীয় স্কোরে ১ রান যোগ হতে না হতেই সাজঘরে ফেরেন আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান চিবাবা। মাশরাফি বিন মোর্তজার বলে বোল্ড আউট হন তিনি। জিম্বাবুয়ের স্কোর যখন ৪৫, তখন নিজের প্রথম উইকেটের দেখা পান মুস্তাফিজুর রহমান।
    পরে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক চিগুম্বুরা ও সিকান্দার রাজা। এই দুই ব্যাটসম্যান ৭৩ রানে জুটি গড়ে স্বাগতিকদের বেশ চাপে ফেলে দেন। এ পর্যায়ে জাদু দেখান আল আমীন হোসেন। দলীয় ১৫১ রানের মাথায় সিকান্দার রাজা ও ১৫৬ রানের মাথায় চিগুম্বুরাকে ফিরিয়ে দলকে দারুণভাবে খেলায় ফিরিয়ে আনেন দীর্ঘসময় দলের বাইরে থাকা এই বোলার। দুই ব্যাটসম্যানই ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেন। ব্যক্তিগত তৃতীয় স্পেলে এক ওভারে জংই ও পানিঙ্গারাকে ফিরিয়ে দলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
    সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরা। ইমরুল কায়েসের ৭৬ ও নাসির হোসেনের ৪১ রানে ভর করে ২৪১ রান করতে সক্ষম হয় স্বাগতিকরা। সফরকারীদের পক্ষে তিনাসে পানিঙ্গারা ৩টি ও গ্রায়েম ক্রেমার ২টি উইকেট নেন।
    প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩২ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন হয় বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ১৯ রানে লুক জংউয়ের বলে উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাভার গ্লাভসবন্দি হন তামিম ইকবাল। এরপর ইমরুলের সঙ্গে জুটি গড়েন লিটন দাস। তবে তাদের সেই জুটিও বেশী বড় হয়নি। ব্যক্তিগত ৭ রান করে একাদশ ওভারে ফিরে যান তিন নম্বর ব্যাটসম্যান লিটন দাস। অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে তিনিও ধরা পড়েন চাকাভার গ্লাভসে। দলীয় ৭৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। এবার ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচে ৯ রান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবার ফিরেছেন ৪ রান করে। লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমারের বলে চাকাভার গ্লাভসবন্দি হন তিনি।
    এরপর ইমরুলের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন মুশফিকুর রহিম। তবে গত দিনের মতো ইনিংসটাকে বড় করতে ব্যর্থ হন মুশফিক। ব্যক্তিগত খাতায় ২১ রান যোগ করে গ্রায়েম ক্রেমারের বলে লুক জংউইকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। দলীয় ১৫১ রানের মাথায় ইমরুলও বিদায় নিলে আবারো চাপে পড়ে বাংলাদেশ। শন উইলিয়ামসের আগের বলে এগিয়ে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। পরের বলে এগিয়ে এসে লং অফ দিয়ে আবার উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে চেয়েছিলেন তিনি। এবার ফুলটস বলে গ্রায়েম ক্রেমারের হাতে ধরা পড়ে শেষ হয় তার ৭৬ রানের ইনিংসটি। শেষ বেলায় ব্যক্তিগত ৪১ রান করে দলীয় রানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন নাসির হোসেন।

    প্রথম ম্যাচে ১৪৪ রানের বড় জয় নিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আজ জিতলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে তাদের। অন্যদিকে সমতায় ফিরতে মরিয়া সফরকারীরা।

    মহাকাশ স্টেশনে নতুন ধরনের জীবনধারন পদ্ধতি বের করতে চায় জেএএক্সএ

    ২০২৪ সালের মধ্যে জাপানের মহাকাশ কেন্দ্র জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জেএএক্সএ) আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীদের জন্যে নতুন জীবনধারন পদ্ধতি নিয়ে আসতে চায়, প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্র এ কথা জানিয়েছে।

    কথিত পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনধারণ পদ্ধতির উন্নয়ন হবে মহাকাশ স্টেশনে জাপানের অবদান, যা পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী গবেষণাগারটিতে নভোচারী অব্যহত ভাবে পাঠানোর ব্যবস্থা চালু রাখবে। মহাকাশ স্টেশনটির কার্যক্রম ২০২০ সালের পর আরো বৃদ্ধি করা হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছে।

    আগামী বছর সরকার যখন পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটের খসড়া প্রণয়ন করবেন তখন এ নিয়ে সরকারি ভাবে ঘোষণা আসতে পারে।

    নতুন পদ্ধতিতে পানি এবং বায়ু শোধক অংশটির আকার হবে বর্তমানের এক-চতুর্থাংশ।

    বর্তমান সিস্টেমটি আমেরিকা ও রাশিয়ার প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে চলছে, জাপানি মহাকাশ কেন্দ্র বিদ্যুৎ খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে চায় এবং নতুন সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ কাজও হ্রাস করতে চায়।

    শুরুতেই বাংলাদেশের দাপুটে জয়

    শুরুতেই বাংলাদেশের দাপুটে জয়

    জিম্বাবুয়েকে প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৭৩ রানের জবাবে ১২৮ রানেই নয় উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে।

    উইকেটরক্ষক মুতুম্বামি ইনজুরিতে থাকার কারণে এতেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।

    শিশুদের ব্যবহারে স্মার্টফোনঃ কমে যাচ্ছে শিক্ষার গ্রেড

    তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ধক্য ও ক্যান্সার বিভাগের অধ্যাপক রিউতা কাওয়াশিমা বলেছেন “যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে আমরা একটি গুরুতর সমস্যার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। আজকের শিশুরা স্মার্টফোনের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং তাদের দাসে পরিণত হচ্ছে -বলাটা মোটেই অতিরঞ্জিত হবে না”

    শুকান শিনচো’তে লেখা এক প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে স্মার্টফোন শিশুদের কোমল মনের উন্নয়ন সহায়ক নয়।

    শিশুরা তাদের মোবাইল ডিভাইস গুলোর উপর এতোটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, ওয়েব কনসালটিং এসোসিয়েশনের পরিচালক মাসাশি ইয়াসুকাওয়া বলেন “যখন এরা বড় হবে ক্লাসের পুনর্মিলনীতে তারা আর কারো সাথে কথা বলবে না”।

    ২০১৩ সালে রিক্কিইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফলে গুরুতর রকমের ফলাফল দেখা গেছে। যারা দৈনিক ৩০ মিনিট বা তার কম স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে তারা পরীক্ষায় গড়ে ৬০.৭% নম্বর পেয়েছে অপর দিকে যারা দৈনিক ৪ বা তারও বেশি ঘন্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের গড় নম্বর ৪৩.৬%।

    ১২৪টি প্রাইমারি স্কুলের ১৭ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৬৩টি মাধ্যমিক স্কুলের ২৫ হাজার শিক্ষার্থী জরিপে অংশ নেয়।

    প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের যে সব শিক্ষার্থীরা দৈনিক এক ঘন্টা বা তার কম স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেছে তারা গড়ে ৬৫র বেশি নম্বর পেয়েছে, অপরদিকে দৈনিক ৪ ঘন্টা বা তার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীরা ৫৫র কম নম্বর পেয়েছে।

    জাপানি, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইংরেজি সহ সব বিষয়েই স্মার্টফোন ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীরা ব্যবহার না করা শিক্ষার্থীদের পেছনে পড়ে গেছে।

    এসব তথ্যের ভিত্তিতে কাওয়াশিমা বলেন, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মস্তিস্কের উপর প্রভাব ফেলছে -এ কথাটিকে আর উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই।

    সাংবাদিক তোশিমাসা ওতা বলেন “এখন হয়তো সময় এসেছে ভাববার যে আসলেই আমাদের স্মার্টফোনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা”।

    ‘চান্দ্রমাস’ : একটি পর্যালোচনা-৪

    হিলালের বিকৃতি এবং একসাথে বহু বিভ্রান্তি

     সম্মানিত পাঠকবৃন্দ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের এই দাবীর স্বরূপ তো প্রত্যক্ষ করেছেন যে, আয়াত ২ : ১৮৯-এর তরজমা ও তাফসীর (মাআযাল্লাহ) মুতারজিম ও মুফাস্সিরগণ বোঝেননি কিংবা পেশ করতে পারেননি; কেবল ইঞ্জিনিয়ার সাহেবই তা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন এবং পেশ করতে সমর্থ হয়েছেন!

    পাঠকগণ দেখেছেন, এটা তার নিছক দাবী, বাস্তবতার সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। এবং এই বিষয়টিও  পাঠকবর্গ লক্ষ্য করেছেন, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব যে সংস্কারের স্বপ্ন দেখছিলেন, তথা আয়াত ২ : ১৮৯-এর তরজমা কিনা তিনিই শুধরে দিয়েছেন এ শুধু তার আত্মতৃপ্তি। তার এই স্বপ্ন পৃথিবীর সবচে’ ব্যর্থ ও অবাস্তব স্বপ্নগুলোর একটি। হাকীকত হল, তরজমার যেটুকু তিনি সঠিক লিখেছেন তা পূর্ববর্তীদের লেখাতেও আছে। আর যা কিছু ভুল কথা লিখেছেন সেটা তার নিজের আবিষ্কৃত। তো নতুন ভুলের সূচনা করার নাম যদি হয় সংস্কার তাহলে নিঃসন্দেহে, তিনি একটি সংস্কার কর্মই আঞ্জাম দিয়েছেন বটে। এ নিয়ে যদি তিনি আনন্দিত হতে চান তবে সেটা তার মর্জি। (দেখুন,আলকাউসার, যুমাদাল উলা ও যুমাদাল উখরা সংখ্যা ১৪৩৬ হিজরী)

    এমনিভাবে আলকাউসার রজব ১৪৩৬ হিজরী সংখ্যায় পাঠকবর্গ এও পড়েছেন যে, অন্যায়ভাবে আল-বেরুনীর নাম ব্যবহার করে যেই দাবী করা হয়েছিল যে, আরবী চান্দ্রমাস অমাবস্যা থেকে শুরু হয়, তা কতটা অবাস্তব। আল-বেরুনী তার অনেক কিতাবে অনেকবার বলেছেন, ইসলামী চান্দ্রমাস অমাবস্যা শেষ হওয়ার পর দর্শনযোগ্য ‘হিলাল’ (Crescent moon) থেকে শুরু হয়। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, এটাই কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা এবং মুসলমানগণ এ হিসেবেই আমল করেন।

    এখন যে কথাটি পেশ করা উদ্দেশ্য, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তরজমা করতে ভুল করেছেন কিংবা জেনে-বুঝে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন শুধু তাই নয়; বরং তিনি আয়াতের উদ্দেশ্য এবং অনুসৃত তাফসীরকেই পাল্টে ফেলেছেন। আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তাআলা হিলালকে মীকাত বানিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ‘হিলালের’ অর্থই বদলে দিয়েছেন। যাতে আয়াতের অর্থ এবং তার সাথে সর্ম্পকিত বিধানসমূহ পরিবর্তনে আলাদা কসরত করতে না হয়। তো ‘হিলাল’-এর অর্থ পরিবর্তন-এটা এমন এক ভয়াবহ গোমরাহী, যা তার নিজের মধ্যে একসাথে বহু বিকৃতি এবং বহুসংখ্যক বিভ্রান্তিকে ধারণ করে আছে।

    ‘হিলাল’-এর অর্থ হল অমাবস্যা শেষ হওয়ার পর উজ্জ্বল ধনুকের আকৃতিতে প্রকাশ পাওয়া চাঁদ। যা দেখে ইসলামী মাস আরম্ভ হয় । কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার সাহেব একে বিকৃত করে ‘হিলাল’-এর অর্থ বানিয়েছেন ‘অমাবস্যা’ বা ‘অমাবস্যার চাঁদ’। এ হচ্ছে সকালকে সন্ধ্যা এবং দিনকে রাত বানানোর মতো ব্যাপার।

    চাঁদের ক্রমাগত তিথি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মাসে চাঁদ বিভিন্ন অবস্থা ও পর্যায় অতিক্রম করতে থাকে। চাঁদের যেই পৃষ্ঠ পৃথিবীর দিকে ফেরানো থাকে, তার আলোকিত অংশ বাড়তে-কমতে থাকে। এই হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে চাঁদের আকারের যে পরিবর্তন হয় তাকে ইংরেজীতে বলা হয়Phases of the moon আর বাংলায় চাঁদের কলা। চাঁদের কলাসমূহের কয়েকটি এই:

    ১)  الهلال   বহুবচন أهلة । অর্থাৎ দর্শনযোগ্য চিকন চাঁদ বা বাঁকা চাঁদ।

    অমাবস্যা শেষ হওয়ার পর চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে দর্শনযোগ্য হয়। তখন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পশ্চিমাকাশে চাঁদের যেই চিকন অংশ উজ্জ্বল ধনুকাকৃতিতে দেখা যায় তাকে ‘হিলাল’ বলা হয়। ইংরেজীতে এর নাম Crescent moon|

    ২)        التربيع الأول First Quarter বাংলায় অর্ধচন্দ্র।

    ৩)   المحدودب المتزايد Waxing Gibbous বাংলায় অর্ধাধিক।

    ৪)        البدر Full moon বাংলায় পূর্ণিমা।

    ৫)   المحدودب المتناقص Waning Gibbous

    ৬)        التربيع الأخير Last Quarter

    ৭)   الهلال الزائل Waning crescent

    ৮)   المحاق  Interlunar period বাংলায় অমাবস্যা। [1]

    কুরআন ‘হিলাল’কে (১ নং কলা) মিকাত বানিয়েছে অর্থাৎ ইসলামী মাস গণনা হিলালের মাধ্যমে শুরু করার শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বলেন, ইসলামী মাস ‘হিলাল’ থেকে নয়,অমাবস্যা (৮ নং কলা) থেকে শুরু হবে। যে কেউ-ই বুঝতে সক্ষম যে, এ কথা কুরআন-বিরুদ্ধ। কুরআন তো ‘হিলাল’কে মিকাত বানিয়েছে, ‘মিহাক’ বা অমাবস্যাকে নয়। এ জন্যই ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কৌশলে হিলালের অর্থই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘হিলালে’র অর্থ দর্শনযোগ্য চিকন চাঁদ নয়, এর অর্থ হল অমাবস্যা!!

    চাঁদের অর্থ বিকৃতি সাধনে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এই ছুতা পেয়ে গেলেন যে, কুরআন ও হাদীসের অনেক ইংরেজী অনুবাদে ‘হিলালে’র অর্থ ‘নিউমুন’ বলা হয়েছে। আর তিনি কোন ইংরেজী থেকে বাংলা অভিধানে ‘নিউমুনে’র অর্থ পেয়ে গেলেন অমাবস্যা। ব্যস, দু’টিকে মিলিয়ে তিনি এই আজগবি দাবী করে বসলেন, ‘হিলালে’র অর্থ হল অমাবস্যা।

    অথচ ইংরেজীতে ‘নিউমুনে’র সাধারণ ব্যবহার হল দর্শনযোগ্য চিকন চাঁদ বা Crescent moon -এর অর্থে। এটাই ‘নিউমুনে’র আভিধানিক অর্থ। এটাই তার পুরাতন ও মূল অর্থ। তবে এস্ট্রোনমির পরিভাষায় চাঁদের সংযোগ অবস্থা বা Conjunction কে ‘নিউমুন’ বলা হয় । অমাবস্যার সময় চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একই রেখায় অবস্থান করে এবং চাঁদ উভয়ের মাঝে থাকে, তখন চাঁদের আলোকিত অংশ সূর্যের দিকে থাকে এবং অন্ধকার অংশ পৃথিবীর দিকে থাকে। চাঁদের এই সংযোগ অবস্থাকে আরবীতে বলে ইকতিরান বা ইজতিমা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চান্দ্রমাসের শুরু যেহেতু ইকতিরান বা সংযোগ অবস্থাকে সাব্যস্ত করেন, তাই একে তারা ‘নিউমুন’ বলেন। বুঝা গেল, এটা এস্ট্রোনমিক্যাল নিউমুন যা আভিধানিক ও প্রচলিত নিউমুন থেকে ভিন্ন। [2]

    নিউমুন -এর মূল ও অনুসৃত অর্থ, যা শত শত বছর ধরে চলে আসছে, তা হচ্ছে এই শব্দের আভিধানিক অর্থ। তবে যেহেতু আজকাল মানুষের মধ্যে নিউমুন শব্দটি এস্ট্রোনমিক্যাল নিউমুন অর্থে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়েছে। এজন্য এখন ‘হিলাল’ -এর তরজমায় ‘নিউমুনে’র চেয়ে ‘ক্রিসেন্টমুন’ শব্দটি বলাই অধিক শ্রেয়।

    যাহোক, ইংরেজী কুরআন তরজমাগুলোতে সাধারণত ‘আল আহিল্লাহ’ الْأَهِلَّةِ  এর অর্থ ‘নিউমুনস’লেখা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য হলো আভিধানিক এবং প্রচলিত অর্থ। তথা ‘ক্রিসেন্টমুন’। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক দ্ব্যর্থবোধক শব্দের সুযোগ নিয়ে মানুষকে এ ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, কুরআনে আল্লাহ তাআলা অমাবস্যার মুহূর্তে শুরু হওয়া নতুন চাঁদ থেকে চান্দ্রমাসের সূচনা করতে আদেশ করেছেন, যা শুধুই হিসাবের মাধ্যমে জানা সম্ভব।

    এই অপকর্মকাণ্ডের জন্য তিনি কোন ধরনের ভূমিকা কিংবা কোনোরকম কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। উপরন্তু তিনি বাংলা ‘নতুন চাঁদ’ ও ‘নবচন্দ্র’ শব্দদু’টিকে তার বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি অমাবস্যার অর্থে ব্যবহার করেছেন। কখনো বা আরো বেশি দুঃসাহস দেখিয়ে বলেছেন, কুরআন চান্দ্রমাস শুরু করতে বলেছে অমাবস্যা থেকে!! আর কখনো একটু-আধটু ভয় জেগেছে, তাই ‘নতুন চাঁদ’ ও ‘ নবচন্দ্রকে’ নিজের উদ্ভাবিত অমাবস্যার অর্থে ব্যবহার করে বলেছেন, কুরআন নতুন চাঁদ থেকে চান্দ্রমাস শুরু করতে বলেছে!! তার মনের মধ্যে রয়েছে অমাবস্যার অর্থ। অথচ পাঠকবর্গ ভাবছেন, প্রথম রাতের চাঁদ!!

    সারা পৃথিবীতে রোযা ও ঈদ একই দিনে করানোর সার্থে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তো এমনিতেই বহু বিকৃতি ও মিথ্যাকথনের আশ্রয় নিয়েছেন। তার মধ্যে এক নিঃশ্বাসে একই সাথে যে তিনটি বিকৃতি সাধন করেছেন, সেগুলো এই:

    ১. হিলাল

    চাঁদের প্রসঙ্গে এর একমাত্র অর্থ, ক্রিসেন্টমুন। উদ্দেশ্য, অমাবস্যা শেষ হওয়ার পর পশ্চিমাকাশে দর্শনযোগ্য চিকন চাঁদ। একে বিকৃত করে তিনি বানিয়েছেন অমাবস্যার চাঁদ!!

    ২. নিউমুন

    আয়াত ২ : ১৮৯-এর তরজমায় ইংরেজী অনুবাদকগণ এই শব্দকে আভিধানিক এবং প্রচলিত অর্থে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ ক্রিসেন্টমুন, চান রাতের চাঁদ। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার সাহেব একে এস্ট্রোনমিক্যাল ‘নিউমুনে’ পরিণত করেছেন!!

    ৩. নতুন চাঁদ, নবচন্দ্র

    বাংলা ভাষায় এই দুই শব্দের অর্থ একটাই। তথা অমাবস্যা-পরবর্তী প্রথম রাতের চাঁদ। কিন্তু একেও তিনি অমাবস্যা বানিয়ে ফেলেছেন!!

    বিকৃতির উপর ভর করে তিনি খুবই নির্লজ্জভাবে আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর কালাম সম্বন্ধে পুরো বইয়ে বারবার এই মিথ্যা বলে গিয়েছেন যে, কুরআন হিসাবের মাধ্যমে, অমাবস্যার মাঝে শুরু হওয়া নতুন চাঁদ থেকে চান্দ্রমাস আরম্ভ করতে বলেছে! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।

    এবার এই ভয়ঙ্কর বিকৃতির শিকার তার কিছু বক্তব্য, (লা হাওলা পাঠ করে) দেখুন:

    ১. বইয়ের পর্ব ৪৪ এ ‘বাংলাদেশের চান্দ্রমাস গণনা ভুল হয়’ শিরোনামের অধীনে চান্দ্রমাসের হিসাবের একটি নকশা দিয়েছেন। ওখানে অমাবস্যার সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন যে, প্রকৃত চান্দ্রমাসের প্রথম তারিখ এটিই।

    এরপর অমাবস্যার পরবর্তী দিনকে সৌদী আরবের প্রথম তারিখ এবং তারপরবর্তী দিনকে বাংলাদেশের প্রথম তারিখ দেখিয়েছেন। এরপর নোট লিখেছেন,

    “অমাবস্যার মাঝখানে শুরু হওয়া নতুন চাঁদ ২ লক্ষ ৩৯ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত পৃথিবী থেকে ১২ ঘণ্টা পরে ছাড়া খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, বিধায় আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী (২ : ১৮৯) হিসাবের মাধ্যমে নতুন চাঁদ দিয়ে মাস শুরু করতে হবে। তাহলেই কেবল মাসের ১৪/১৫ তারিখে পূর্ণিমা পাওয়া যাবে এবং ২৯/৩০ তারিখে অমাবস্যা হবে।” (চান্দ্রমাস, পৃ. ৭১, নবম সংস্করণ)

    আরেক জায়গায় লিখেছেন,

    নতুন চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টার বেশি না হলে কখনো খালি চোখে দেখা যাবে না। তাই আল্লাহর হুকুম মোতাবেক হিসাবের মাধ্যমেই নবজাতক চন্দ্র দিয়ে চান্দ্রমাস শুরু করতে হবে। (চান্দ্রমাস, পৃ. ৬৩)

    ২. পর্ব নম্বর ৫৮ তে ‘খালি চোখে চাঁদ দেখে চান্দ্রমাস আরম্ভ করতে হবে না কেন? শিরোনামে লিখেছেন,

    “১৭। খালি চোখে দেখা আরবদের নতুন চাঁদ আর তৃতীয় বৎসরের অতিরিক্ত মাস গণনা, এর কোনটাই আল্লাহ গ্রহণ করেননি।

    ১৮। তাই অমাবস্যার মাঝখানে শুরু হওয়া অদেখা ১২ টা নতুন চাঁদ দিয়ে আল্লাহ ১২ টা চান্দ্রমাস আরম্ভ করতে বলেছেন (২ : ১৮৯) এবং তৃতীয় বৎসরের অতিরিক্ত মাস হিসাব করতে নিষেধ করেছেন (৯ : ৩৬, ৩৭)।

    ১৯। তাই ১২ টা নতুন চাঁদ দিয়ে হিসাবের মাধ্যমে ১২ টা চান্দ্রমাস আরম্ভ করতে হবে; খালি চোখে দেখে মাস শুরু করা যাবে না।” (চান্দ্রমাস, পৃ. ৯৭, পর্ব ৫৮)

    আরবরা ফিতরি (স্বভাবগত) তরীকা মোতাবিক চান্দ্রমাস আরম্ভ করতো চাঁদ দেখে। তাদের এই তরীকা সঠিক ছিলো। ইসলাম তা গ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মোতাবিক আমল করেছেন এবং উম্মতকে আমল করতে আদেশ করেছেন। এই বিষয়ে সহীহ এবং মুতাওয়াতির (অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় বর্ণিত) হাদীসসমূহ আমরা পড়েছি।

    হজ্বের সম্পর্ক যিলহজ্ব মাসের সঙ্গে। যা কিনা হিলালের উপর নির্ভরশীল চান্দ্রমাস। সে জন্য হজ্বের মৌসুম যথারীতি পরিবর্তন হতে থাকে। ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবদের মস্তিষ্কে এই কুফুরি চিন্তা সওয়ার হয়েছিলো যে, তারা হজ্বের মৌসুমকে ফিক্সড (নির্ধারিত) করে দিবে। অতএব তারা ইহুদীদের কাছ থেকে  نسىء :বিলম্বিতকরণ / মলমাস গণনার ধারা শিখে নেয়। যার একটি তরীকা ছিল এই যে, প্রতি তিন চান্দ্রবৎসর অন্তর অন্তর একটি মাস যোগ করে দেয়া হতো। এর ফলে হজ্বের মৌসুম তো ফিক্সড / সুর্নিধারিত হয়ে যেতো, কিন্তু স্বভাবতই এর দ্বারা হজ্বের প্রকৃত তারিখ পাল্টে যেতো। সূরা তাওবায় ৯ : ৩৬-৩৭ মাস বিলম্বিত করণকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ইসলামী পর্বগুলোতে এর কোন অস্তিত্ব বা কোনোরূপ প্রভাব নেই। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব (আল্লাহ তাআলা তাকে সুস্থ বিবেক এবং সিরাতে মুস্তাকীমের হেদায়েত নছীব করেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামকে আরবের মুশরিকদের কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছেন এবং বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তো আরবের মুশরিকদের তরীকা (হিলাল দেখে মাস আরম্ভ) গ্রহণ করেননি অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মত তথা সাহাবায়ে কেরাম,  তাবেয়ীন ও তাবে’ তাবেয়ীন- এঁরা কিনা ঐ তরীকাই অবলম্বন করলেন। আল্লাহ তাআলা স্বয়ং যেই তরীকা বাতিল করে হিসাবের সাহায্যে অমাবস্যার মাঝে শুরু হওয়া অদেখা চাঁদ থেকে মাস শুরু করতে হুকুম করেছেন; এঁরা আল্লাহর নিদের্শিত সেই পদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ কর্তৃক পরিত্যক্ত পন্থাই গ্রহণ করেছেন!!

    এই হল আমাদের টি এন্ড টি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সেই সংস্কার, যা নিয়ে তিনি গর্বিত। এবং যেই কীর্তির জন্য তিনি জাফরী সাহেব এবং আল-মারূফ সাহেবের স্তুতি বাক্যও পেয়ে যান (?!) ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন!

    জানি না, মানুষ কোন কিছু না পড়ে তার উপর প্রশংসাবাণী কীভাবে লেখে?!  [3]

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াত ২ : ১৮৯-এর ব্যাখ্যা তো করেছেন ‘চাঁদ দেখা’দিয়ে। আর তাঁর কৃত ব্যাখ্যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলার শেখানো বয়ান (১৯ : ৭৫)।  অথচ ইঞ্জিনিয়ার সাহেব শুধু ‘দেখা’ কে ‘হিসাব’ দিয়ে পরিবর্তন করে দিচ্ছেন তাই নয়; বরং ‘হিলালকেই’ ‘মিহাকে’ (অমবস্যায়) পর্যবসিত করেছেন (?!) আয়াত ২ : ১৮৯-এর এই ভয়ানক বিকৃতি পর্যন্তই তিনি থেমে থাকেননি; বরং আরো বিভিন্ন আঙ্গিকে তিনি এই আয়াতের বিকৃতি সাধন করেছেন। সম্ভব হলে সামনে এ বিষয়েও কিছু কথা পেশ করা হবে।

    আরো শুনুন তিনি কী বলেছেন,

    ৩. ‘আরব দেশে রাসূল (সা.) এর জন্মের পূর্ব হতেই খালি চোখে দেখা নতুন চাঁদ দিয়ে চান্দ্রমাস আরম্ভ করা হতো। রাসূল (সা.) সেটাকে অনুসরণ করেছেন মাত্র। কিন্তু কোন হাদীস দিয়ে সেটাকে সমর্থন দিয়ে যাননি। কারণ কোরআন তা বলে না। অতএব, হিসাবের মাধ্যমে অমাবস্যার মাঝে শুরু হওয়া নতুন চাঁদ দিয়েই চান্দ্রমাস আরম্ভ করতে হবে। তাহলেই কেবল ‘একক প্রকৃত বিশ্বহিজরী ক্যালেন্ডার’ পাওয়া যাবে।’ (চান্দ্রমাস পৃ. ২০৬, প্রশ্ন : ৬০-এর উত্তর প্রসঙ্গে আলোচনায়, নবম সংস্করণ)

    চিন্তা করুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল তো হাদীসই। যদি তিনি একটি তরীকা মোতাবিক আমল করে থাকেন তবে এটাই সেই তরীকার সমর্থন। আর যখন তিনি কোনো একটি তরীকা অনুযায়ী আমল করেছেন তখন এটা অসম্ভব যে সেই তরীকা কুরআনের পরিপন্থী হবে। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার সাহেব স্বীকার করছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখে চান্দ্রমাস শুরু করতেন সেহেতু তার একথা বলার অধিকার নেই যে, (তিনি এটা তাঁর হাদীস দ্বারা সমর্থন করেননি। কেননা রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল অবশ্য-অনুসরণীয় হাদীস। তাঁর হাদীস কেবল তার বাণী-কথনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। এমনিভাবে তার একথা বলারও অধিকার নেই যে,) ‘কুরআন এরকম বলে না। কুরআন অমাবস্যা থেকে চান্দ্রমাস আরম্ভ করতে বলে’। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজ তো কুরআনের শিক্ষা এবং কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করা এবং করানো। কুরআন পরিপন্থী আমল করা কিংবা কুরআনের খেলাফ কোনো তরীকা অনুসরণ নয়।

    যাই হোক, এই মুহূর্তে আসলে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বক্তব্য নিয়ে পর্যালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি দেখাতে চাচ্ছিলাম যে, তিনি পরিষ্কার ভাষায় দাবী করেছেন যে, কুরআন অমাবস্যার চাঁদ থেকে মাস আরম্ভ করতে বলেছে। হিলাল দেখার পরে নয়। তার এই দাবীর মধ্যে একই সাথে অসংখ্য বিভ্রান্তি লুকিয়ে আছে:

    প্রথম বিভ্রান্তি: হিলালের বিকৃতি

    প্রথম বিভ্রান্তি এই যে, ‘হিলাল’ যা হলো কুরআন ও সুন্নাহর একটি বিশেষ শব্দ। যার সাথে বহুসংখ্যক বিধান যুক্ত- তিনি এটাকেই বদলে দিয়েছেন। যদ্দরুণ একই সাথে কুরআন, সুন্নাহ ও ফিকহ তিনের সাথে সংশ্লিষ্ট ভাষ্য ও বক্তব্যসমূহ বিকৃতির অপরাধে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন। যে এই বিকৃতি মেনে নেবে, সে এক নিঃশ্বাসে এই সমস্ত শরয়ী বিধানকে বদলে ফেলবে, যা হিলালের সাথে সম্পৃক্ত। এসকল বিধানকে তখন হিলালের পরিবর্তে মিহাক (অমাবস্যা) -এর সাথে যুক্ত করে দেবে।

    দ্বিতীয় বিভ্রান্তি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান।

    তৃতীয় বিভ্রান্তি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কুরআন না বোঝার কিংবা কুরআনের বিরুদ্ধাচরণের অপবাদ।

    চতুর্থ বিভ্রান্তি: হাদীস ও সুন্নাহ -এর বিরুদ্ধাচরণ

    পঞ্চম বিভ্রান্তি: সাহাবায়ে কেরামসহ পুরো উম্মতের ‘ইজমা’ এবং সাবিলুল মু’মিনীন তথা মু’মিনদের সর্বস্বীকৃত পন্থার বিরুদ্ধাচরণ।

    ষষ্ঠ বিভ্রান্তি: কুরআনে উপর এই অপবাদ আরোপ যে, কুরআন জ্যোতির্শাস্ত্রীয় গণনার মাধ্যমে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জানতে বলেছে এবং এ উদ্দেশ্যে ২ : ১৮৯, ১০ : ৫, ১৭ : ১২, ৫৫ : ৫, মোট চারটি আয়াতের অর্থগত বিকৃতি সাধন!!

    বিকৃতির রাস্তা কীভাবে বের করলেন?

    এই ভয়ানক বিকৃতি করবার জন্য ইঞ্জিনিয়ার সাহেব চতুরতার সাথে বেশ কয়েকটি রাস্তা আবিষ্কার করেছেন। যেমন তিনি দেখলেন যে, কুরআনের ইংরেজী তরজমাসমূহে সাধারণভাবেالأهلة (আল আহিল্লাহ)-এর তরজমা করা হয়েছে, ‘নিউমুনস’। আর নিউমুন এর অর্থ হল, নতুনচাঁদ। এবার ধরুন বাংলা একাডেমীর অভিধান (ইংরেজী-বাংলা)  তিনি দেখেছেন। সেখানে তিনিপেয়ে গেলেন, নিউমুন: অমাবস্যা।

    ব্যস থেকেই তিনি বুঝে ফেললেনতার কেল্লা ফতে। এবং এখন তার জন্য বৈধ হয়ে গেলো এইদাবী করে বসা যেকুরআন অমাবস্যার 

    মাঝে শুরু হওয়া নতুন চাঁদ থেকে মাস আরম্ভ করতেবলেছে। কেননাএকে তো هلال (হিলাল)-এর অর্থ হল নিউমুন। আর নিউমুন অর্থ অমাবস্যা।দ্বিতীয়ত বাংলা কুরআন তরজমা  হাদীসের তরজমার কিতাবগুলোতে হিলাল’-এর অর্থ লেখাহয়েছে, ‘নতুন চাঁদ। আর তার বক্তব্য অনুযায়ীচাঁদ দর্শনযোগ্য হওয়ার পর্যায়ে আসতে আসতে পুরানো হয়ে যায়। অথচ কুরআন তো মাস আরম্ভ করতে বলেছে নতুন চাঁদ দিয়ে। অতএব অমাবস্যার সময়কার অদেখা চাঁদ থেকেই মাস শুরু করতে হবে। কারণ নতুন চাঁদ তো সেটাই!

    শরীয়তের সর্ববাদীসম্মত বিধানের বিপরীতে এ ধরনের ওয়াসওয়াসা যদি বাস্তবেই কারো মনে এসে থাকে তাহলে তার উচিত ছিলো আউযুবিল্লাহ এবং লা হাওলা পড়ে মন থেকে তা ঝেড়ে ফেলা। এবং এ কথা বিশ্বাস করা, কুরআন যে নতুন চাঁদ দিয়ে মাস আরম্ভ করতে বলেছে এটা আমার চেয়ে ঐ সকল মুতারজিমীনই ভালো বুঝবেন যাদের তরজমার উপর ভিত্তি করে আমি কথা বলছি। সুতরাং এ ক্ষেত্রে তাদের আমলটা কী? আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,অতঃপর সাহাবায়ে কেরামসহ গোটা উম্মত এখন পর্যন্ত চাঁদ দেখেই চান্দ্রমাস শুরু করেছেন ও করছেন; এতএব বোঝা গেল, দেখতে পাওয়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষার কারণে চাঁদ পুরানো হয়ে যায় না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার সাহেব নিজের ওয়াসওয়াসার প্রতিকারের পরিবর্তে খোদ ওয়াসওয়াসাকেই এলহাম মনে করছেন এবং সেটাকে উম্মতের সামনে পেশ করছেন আমলের উদ্দেশ্যে!!

    এই জনাবেরা যদি বুঝতেন, কুরআন মজীদের শব্দ ‘নিউমুন’ও নয়, ‘নতুন চাঁদ’ও নয়।কুরআনের শব্দ হলো ‘হিলাল’! সুতরাং আপনাকে এখানে দেখতে হবে هلال -এর অর্থ কী।

    হিলাল শব্দের ধাতুউৎপন্ন অর্থের মাঝে দু’টি জিনিস পরিলক্ষিত হয়: ক) প্রকাশ। খ) আওয়াজ।

    (ه ل ل) এই ধাতুমূল থেকে নিষ্পন্ন সমস্ত শব্দ ও তার প্রয়োগ-ক্ষেত্রের উল্লেখ আরবী বৃহৎঅভিধানগুলোতে বিশদাকারে বিদ্যমান। সেগুলো খোলামাত্রই এই দুইটা জিনিস সামনে এসে যায়।

    আরবরা যেহেতু প্রথম থেকেই অমাবস্যার পর দৃশ্যমান ক্রিসেন্টমুন (ধনুকাকৃতির চাঁদ) দেখে মাস আরম্ভ করতো, সেহেতু তারা তা পরস্পরে দেখা ও দেখানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিতো। যে কারণে আওয়াজ উচুঁ হতো। ‘ঐ যে চাঁদ, আরেকটু উপরে, একটু ডানে…’। এখনও আমরা চাঁদ দেখতে কালে এরকম আওয়াজ হয়।

    তৃতীয় যে জিনিসটি ‘হিলালে’র অর্থের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি মিশে আছে তা হল তার ধনুকের অবয়ব বা বক্রাকৃতি, ক্রিসেন্ট। যেহেতু অমাবস্যা-পরবর্তী চাঁদ যখন আলো ছড়াতে শুরু করে তখন তা ধনুকের আকৃতিই প্রতিবিম্বিত করে তাই আরবীতে ( ) এই চিহ্নের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘হিলালাইন’অর্থাৎ দুই হিলাল। এবং এরই ভিত্তিতে ‘হিলাল’-কে বিভিন্ন জায়গায় আলামত বা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোনো কোনো মুসলিম দেশের পতাকায় ‘হিলাল’-এর যে চিহ্ন আঁকা রয়েছে সেটা উজ্জ্বল ধনুকেরই আকৃতি, অন্ধকার চাঁদের ছবি নয়।

    মোটকথা ‘হিলাল’-এর ধাতু নিদের্শিত মূল অর্থ এবং তার প্রয়োগক্ষেত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করাই এটা বোঝার জন্য যথেষ্ট যে, অমাবস্যার চাঁদকে হিলাল বলার কোনোরকম অবকাশ নেই। এতে না‘প্রকাশ’ আছে আর না তা দেখার মতো অবস্থা আছে যে, দেখতে ও দেখাতে গিয়ে আওয়াজ হবে। আর না এতে আছে ক্রিসেন্ট রূপ।

    সারকথা এই যে, কোনো একটি শব্দের অর্থ যত উপায়ে নির্ধারণ করা সম্ভব সব উপায়ে ও সকল দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হলে কেবল মাত্র এই জ্বলজ্যান্ত বাস্তবতাই পরিদৃষ্ট হয় যে, অমাবস্যার পর্যায় অতিক্রান্ত হওয়ার পর চাঁদের যে উজ্জ্বল ধনুকাকার দর্শনযোগ্য হয় এবং মানুষ ২৯-এর দিবাগত রাতে যা দেখার চেষ্টা করে থাকে, কখনো দেখতে পায় কখনো বা পরবর্তী রাতে দেখে- আরবীতে এরই নাম ‘হিলাল’। যেহেতু মুসলমানদের এবং তারও আগে আরবদের কাছে নতুন চান্দ্রমাস এই হিলাল দিয়েই আরম্ভ হতো এজন্য হিলালের অর্থই হয়ে গিয়েছে উদূর্তে ‘নয়া চাঁদ’, ফারসীতে ‘মাহে নও’ বাংলায় ‘নতুন চাঁদ’ বা ‘নবচন্দ্র’ এবং ইংরেজীতে ‘নিউমুন’। (অথার্ৎ هلال  কে এসকল  ভাষায় নতুন চাঁদ বলার কারণ, তা দিয়ে নতুন মাস আরম্ভ হচ্ছে, এই হিসেবে। এ কারণে নয় যে তা বয়সে সদ্যজাত। দ্বিতীয় অর্থটাই ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের আবিষ্কার এবং তার উপরই তার সংস্কারকর্মের ভিত্তি। উল্লিখিত ভাষাসমূহে হিলালকে নতুন চাঁদ বলার এই প্রেক্ষাপটটি যদি তিনি বুঝতেন এবং গ্রহণ করতেন তাহলে অমাবস্যার মাঝে শুরু হওয়া চাঁদের সদ্যোজাত অদেখা আকারটিকে নতুন চাঁদ বলার জন্য গোঁ ধরতেন না এবং হিলালকে তা দিয়ে ব্যাখ্যার জন্য উঠে পড়ে লাগতেন না)।

    না হয় এই শব্দগুলোর (নয়া চাঁদ, মাহে নও, নতুন চাঁদ, নিউমুন) সরাসরি আরবী প্রতিশব্দ তোহলো القمر الجديد (আল-কামারুল জাদীদ), هلال (হিলাল) নয়।

    তো বিভিন্ন ভাষায় ‘হিলাল’-এর এই অর্থ (নতুন চাঁদ) প্রচলনের বাস্তবতা ও তার পরিপ্রেক্ষিতবিবেচনায় না নিয়ে এই অর্থ (নতুন চাঁদ) টিকেই هلال (হিলাল)-এর বিকৃতি সাধনের জন্য হাতিয়ারহিসেবে ব্যবহার করছেন। যদি তিনি এই বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট থেকে চক্ষু বন্ধও করেন তথাপি এথেকে কীভাবে চোখ বন্ধ করে থাকবেন যে, কুরআন ও হাদীসের শব্দ হলো أهلة (আহিল্লাহ) এবংهلال (হিলাল)। قمر جديد (কামারুন জাদীদ) বা أقمار جديدة (আকমারুন জাদীদাহ) নয় যে আপনিব্যস جديد (নতুন) শব্দ দিয়েই আয়াতের নববী অর্থ (নবী যে অর্থ বুঝেছেন) এবং হিলালের অনুসৃতঅর্থ বদলে দেওয়ার চক্করে পড়ে যাবেন। কুরআনের শব্দ তো হলো هلال (হিলাল)। আপনাকে এরযা অর্থ সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি তাফসীরে কুরআনের সমস্ত নির্ভরযোগ্য উৎস থেকেওআপনি দৃষ্টি সরিয়ে নেন, কেবল هلال (হিলাল)-এর অর্থ নিয়েই চিন্তা করেন তাহলেও ইনশাআল্লাহ,এই বিকৃতি থেকে আপনার বাঁচবার তাওফিক হয়ে যাবে।

    আল্লাহর বান্দা চিন্তা করে না, رؤية الهلال (চাঁদ দেখা) এই যে আরবী কথাটা এবংصوموا لرؤية الهلال وافطروا لرؤيته(হিলাল দেখে রোযা ও ঈদ করা) হাদীস, সুন্নাহ এবং ইসলামী শরীয়তের এই যে ধারাবাহিক অনুসৃত ভাষা- এখানেই তো এ বিষয়টি পরিষ্কার রয়েছে যে, ‘হিলাল’ অমাবস্যার সময়কালীন চাঁদ নয়; রবং অমাবস্যার পর্যায় অতিক্রম করার পর দর্শনযোগ্য চাঁদ। অমাবস্যার চাঁদ তো অন্ধকারাচ্ছন্ন, সেটা দেখা, বা না দেখার প্রশ্ন আসে না। এবং সেটা দেখার সাক্ষ্য দেওয়ারও কোনো প্রশ্ন ওঠে না। অতএব ‘হিলাল’ দৃষ্টিগোচর হওয়া বা না হওয়ার মধ্যেই এ ব্যাপারটি রয়েছে যে, হিলাল হচ্ছে অমাবস্যাপরবর্তী দৃশ্যমান চাঁদ। অমাবস্যার ভিতরের চাঁদ নয়। হিলালের এই অনুসৃত এবং সর্ববাদীসম্মত অর্থের স্বপক্ষে আরবী ভাষার অভিধান (আরবী -আরবী, আরবী – অনারবী, অনারবী – আরবী), কুরআন, হাদীস এবং ফিকহের শব্দাভিধান, সেই সাথে তাফসীরগ্রন্থ এবং হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ এবং অন্যান্য দ্বীনী কিতাবাদির শত শত সূত্রে প্রাচীন ও আধুনিক শত শত নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু এত সুস্পষ্ট একটি জিনিসের জন্য উদ্ধৃতির পর উদ্ধৃতি দিয়ে যাওয়া ভালো মনে হয় না। তারপরও নমুনাস্বরূপ বিশ-পঁচিশটি কিতাবের হাওয়ালা উল্লেখ করছি।

    ১. ‘কিতাবুল আইন’

    আল-খলীল ইবনে আহমাদ আল-ফারাহীদী (১০০ হিজরী- ১৭০ হিজরী) খ. ৪, পৃ. ৩২০-৩২১,দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন।

    ইমাম খলীল বলেন, الهلال غرة القمر حين يهله الناس في غرة الشهر অথার্ৎ হিলাল হচ্ছে চাঁদের শুভ্রঅংশ, মাসের প্রারম্ভে  মানুষ যা দেখে। ইমাম খলীলের এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানার জন্য দেখা যেতে পারে তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরিল কামুস (খ. ১৩, পৃ. ২২২, মাদ্দা غ ر ر)

    সামনে আমি শুধু উদ্ধৃতি উল্লেখ করবো। ভাষ্য উদ্ধৃত করবো না। কারণ ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় আরবী ভাষার প্রত্যেক ইমামে লোগাত (ভাষা বিশেষজ্ঞ) এই অভিন্ন কথাটিই বলেছেন। কেউ আরেকটু বিস্তারিত বলেছেন। আরবী ভাষায় ‘হিলাল’-এর ক্ষেত্রে ‘প্রকাশ’-এর অর্থ এতই ব্যাপক প্রচলিত যে, أهل الهلال এবং استهل الهلال -এর অর্থই হল অমুক হিলাল দেখেছে। এমনিভাবে هل الهلال এর অর্থ, হিলাল আত্মপ্রকাশ করেছে।

    সামনে যেসব গ্রন্থের নাম আসছে সেখানে  এ দু’টি এবং এ ছাড়াও বহু ব্যবহার উল্লেখ করে এ কথাই বলা হয়েছে যে, ‘হিলাল’ হচ্ছে মাসের শুরুতে দর্শনযোগ্য চাঁদ। এবং এই সমস্ত অভিধানে,এমনিভাবে অন্যান্য সকল অভিধানে অমাবস্যার জন্য  আলাদা শব্দ লেখা হয়েছে। যেমন, মিহাক,সিরার ইত্যাদি। অতএব পুনরুক্তি থেকে বাঁচার জন্য শুধু কিতাবগুলোর নাম উল্লেখ করে দেয়া হচ্ছে। যার ইচ্ছা দেখতে পারেন।

    ২. ‘কিতাবুল আলফায’

    ইবনুস সিককীত ইয়াকূব ইবনে ইছহাক (১৮৬ হিজরী- ২৪৪ হিজরী) পৃ. ২৮৭-২৮৯ বাবু আসমায়িল কামারি ওয়া ছিফাতিহী।

    ৩. ‘আদাবুল কাতিব’

    আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুসলিম ইবনে কুতাইবা (২১৩ হিজরী- ২৭৬ হিজরী) পৃ. ৬৯-৭১, (বাবু মা‘রিফাতি মা ফিস্ সামাই ওয়ান্ নুজূমি ওয়াল আযমান ওয়ার রিয়াহ)। দারুল ফিক্র বৈরুত, ১৩৮২ হি. মোতাবিক ১৯৬৩ খৃ.।

    ৪. ‘মাআনিল কুরআনি ওয়া ই‘রাবুহু’

    আবু ইসহাক আয্-যাজজায ইবরাহীম ইবনুস-সারি। (২৪১ হিজরী – ৩১১ হিজরী), খ. ১, পৃ. ২৫৮।

    এ অভিধানগুলোসহ অন্যান্য বহু সংখ্যক অভিধানে এটাও লিখেছে যে, চান রাত বা প্রথম রাতের চাঁদের নাম হল হিলাল। কিংবা প্রথম রাতের উদিত চাঁদের নাম হিলাল। দ্বিতীয়ার চাঁদকেও হিলাল বলা হয়। এক ব্যবহারে, তৃতীয়ার চাঁদকেও বলা হয়েছে- হিলাল…।

    এইসব বক্তব্যের দাবীও এটিই যে, হিলাল হচ্ছে অমাবস্যা শেষ হবার পর প্রকাশ পাওয়া চাঁদ। কেননা অমাবস্যার চাঁদ দৃশ্যমান হয় না তদুপরি অমাবস্যা চলাকালে Conjunction থেকে কিংবাConjunction -এর অব্যবহিত পর থেকেই যেই জ্যোতির্শাস্ত্রীয় নিউমুন -এর সূচনা হয়- তার কোন সুনিদির্ষ্ট সময় নেই। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো সময় তার সূচনা হতে পারে।  ভোর চারটায়,পাঁচটায়, সকাল দশটায়, দুপুর বারোটায়; বিকেল তিনটায়, অথবা রাত দুইটায়… একেক মাসে একেক সময় তার সূচনা হয়। সেজন্য “হিলাল হচ্ছে প্রথম রাতের চাঁদ”। এই বক্তব্যের মাঝে এ কথাও বিদ্যমান রয়েছে যে, অমাবস্যা বা জ্যোতির্শাস্ত্রীয় নিউমুনের নাম ‘হিলাল’ নয়। এটা তো দিন-রাতের যে কোন সময় আরম্ভ হতে পারে। পক্ষান্তরে হিলাল -এর সময় সুনির্দিষ্ট। অমাবস্যার শেষে সূর্যাস্তের পর পশ্চিমাকাশে তা দৃষ্টিগোচর হয়। [4]

    ৫. ‘জামহারাতুল্লুগাহ’:

    আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান ইবনে দুরায়দ আল-আযদি (২২৩ হিজরী- ৩২১ হিজরী), খ.১ পৃ.১২১, ১৬০, ১৬৯, ৩৭২; খ.২, পৃ. ৭৯২; খ. ৩, পৃ. ১৩০৯। পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা, ডক্টর রমযী মুনীর বা‘লাবাক্কী, দারুল ইলম, লিলমালায়ীন, বৈরুত, প্রকাশকাল: ১৯৮৭ খৃ.

    ৬. ‘আয্-যাহির ফি মা‘আনী কালিমাতিন নাস’

    আবু বকর আল-আনবারী মুহাম্মাদ ইবনে কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে বাশ্শার (২৭১ হিজরী- ৩২৮ হিজরী) খ.১, পৃ. ৪৬৮

    ৭. ‘তাহযীবুল্লুগাহ’

    আবু মনসূর আল-আযহারী মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ ইবনুল আযহার আল-হারাবী (২৮২ হিজরী- ৩৭০ হিজরী) খ. ৫, পৃ. ২৩৯-২৪৩, দারু ইহয়াউত্ তুরাছিল আরাবী, বৈরুত, লেবানন,প্রকাশকাল: ১৪২১ হি.

    ৮.‘আস-সিহাহ’

    আবু নসর আল-জাওহারী ইসমাঈল ইবনে হাম্মাদ (৩৯৩ হিজরী) খ. ৫, পৃ. ১৮৫১, তাহকীক : আহমদ আব্দুল গফুর আত্তার, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৩৯৯ হি. (পুণ:মুদ্রণ ১৪০২ হি.) সায়্যেদ হাসান আব্বাসের স্যেজন্যে।

    ৯. ‘আল মুহকাম ওয়াল-মুহীতুল আযম’

    ইবনে সীদাহ আবুল হাসান আলী  ইবনে ইসমাঈল (৩৯৮ হিজরী- ৪৫৮ হিজরী) খ. ৪, পৃ. ১০০-১০৩, পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা আব্দুল হামীদ, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ: ১৪২১ হি.

    ১০. ‘আল-মুখাসসিস’

    ইবনে সীদাহ (প্রাগুক্ত), খ. ২ পৃ. ৩৭৬-৩৮০ (ছিফাতুল কামারি ওয়া আসমাউহু) এবং খ. ৫ পৃ. ২১১ (বাবুত-তারিখ), দারু ইহয়াউত্ তুরাছিল আরাবী, বৈরুত, লেবানন, প্রকাশকাল: ১৪১৭ হি.।

    আল- মুখাসসিসের এই সব আলোচনার জন্য আল-মুখাসসিসের উন্নত ও মানসম্মত পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত গ্রন্থ ‘আল ইফসাহ ফি ফিকহিল লুগাহ’ পৃ. ৪৫৯-৪৬১ দেখা যেতে পারে। যা আব্দুল ফাত্তাহ আছ-ছঈদী (১৩১০ হিজরী -১৩৯১ হিজরী) এবং হুসাইন ইউসুফ মূসার প্রস্তুতকৃত। এর একটি ফটো সংস্করণ দারুল কুতুবিল ইলমিয়া বৈরুত থেকে ১৪০৭ হিজরীতে ছেপেছে।

    ১১. ‘মুফরাদাতু আলফাযিল কুরআন’

    আর-রাগেব আল আস্পাহানী আল-হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ ইবনুল মুফায্যাল (৫০২ হিজরী) পৃ. ৮৪৩ (ه ل ل), দারুল কলম দামেস্ক, এবং আদ-দারুশ শামিয়্যা, বৈরুত, প্রকাশকাল, ১৪১২ হিজরী

    ১২. ‘আসাসুল বালাগাহ’

    মাহমূদ ইবনে উমর জারুল্লাহ আয্যামাখশারী (৪৬৭ হিজরী- ৫৩৮ হিজরী) পৃ. ৫৮৩, ৫২২,২৯৩।

    ১৩. ‘আল ফায়েক্ব ফী গারীবিল হাদীস’

    জারুল্লাহ আয্যামাখশারী (পূর্বোক্ত) খ. ৪, পৃ. ১১০-১১১, দারুল ফিক্র, বৈরুত, প্রকাশকাল: ১৪১৪ হিজরী।

    ১৪. ‘মাশারিকুল আনওয়ার আলা সিহাহিল আছার’

    আবুল ফযল কাযী ইয়ায ইবনে মূসা আসসাবতী (৪৮৬ হিজরী- ৫৪৪ হিজরী) খ. ২, পৃ. ৩৩৭ (حرف الهاء مع اللام), দারুল ফিক্র, বৈরুত, প্রকাশকাল: ১৪১৮ হিজরী।

    ১৫. ‘আন নিহায়া ফী গারীবিল হাদীসি ওয়াল আছর’

    মাজদুদ্দীন ইবনুল আছীর আল-জাযারী আবুস সাআদাত আল মুবারাক (৫৪৪ হিজরী- ৬০৬ হিজরী) খ. ২, পৃ. ৯১০-৯১১,  দারুল মারেফা, বৈরুত, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪২৭ হিজরী।

    ১৬. ‘আত-তাফসীরুল কাবীর’

    ফখরুদ্দীন আর-রাযী মুহাম্মাদ ইবনে উমর (৫৪৪ হিজরী-৬০৬ হিজরী)  খ. ৫, পৃ. ১০২-১০৬,আয়াত ২ : ১৮৯-এর তাফসীরের অধীনে। দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, দ্বিতীয় প্রকাশ,১৪২৫ হিজরী।

    ১৭. ‘আল-ঊবাবুয-যাখির ওয়াল লুবাবুল ফাখির’

    রযিউদ্দীন আছ-ছগানী আল-হাসান ইবনে মুহাম্মাদ আল-লাহোরী (৫৭৭ হিজরী-৬৫০ হিজরী) এতে লিখেছে: الشكس – بالفتح- قبل الهلال بيوم أو بيومين وهوالمحاق অর্থাৎ شكس (শাকাস)-এর অর্থ হল মিহাক; অমাবস্যা, হিলালের এক দুই দিন পূর্বে, (হরফুস্-সীন, পৃ. ২২২)

    দারুশ-শুউনিল আম্মাহ আস-সাকাফিয়্যাতুল আম্মাহ, বাগদাদ, ইরাক থেকে এই বিশাল গ্রন্থটি ছেপেছে। এই ভাষ্যটুকু হরফুস-সীন খণ্ডে এসেছে। যা ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ হাসান আলে ইয়াসীনের তাহকীকে ছেপেছে। এখানে আরবী ভাষার বিখ্যাত পণ্ডিত ইমাম রযিউদ্দীন ছগানী বলেছেন যে, অমাবস্যা হয় ‘হিলাল’ -এর পূর্বে (হিলাল তার পরে), অমাবস্যার মধ্যে নয়।

    ১৮. ‘লিসানুল আরব’

    ইবনে মনযূর আল-ইফরিকী জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে মুকাররাম (৬৩০ হিজরী-৭১১ হিজরী) খ.১৫, পৃ. ৮৩-৮৫, দারে ছাদের, বৈরুত।

    ১৯. ‘আদ-দুররুল মাছূন ফী উলূমিল কিতাবিল মাকনূন’

    শিহাবুদ্দীন আস-সামীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে ইউসুফ (৭৫৬ হিজরী) খ.১, পৃ. ৪৭৮-৪৭৯, (আয়াত: ২ : ১৮৯-এর অধীনে), ভূমিকা: ডক্টর আহমাদ মুহাম্মাদ, উসুলুদ্দীন ফ্যাকাল্টি, জামেয়া আল-আযহার। দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, প্রথমপ্রকাশ: ১৪১৪ হিজরী।

    ২০. ‘আল মিছবাহুল মুনীর ফী গারীবিশ শারহিল কাবীর’

    আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আল ফাহয়ূমী আবুল আব্বাস (মৃত্যু ৭৭০ হিজরী -এর দিকে) পৃ. ৪০১,দারুল হাদীস, কায়রো, ১৪২৯ হিজরী।

    ২১. ‘আল কামুসুল মুহীত ওয়াল কাবুসুল ওয়াসীত’

    মাজদুদ্দীন আল-ফায়রুযাবাদী মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকূব (৭২৯ হিজরী- ৮১৭ হিজরী) খ. ৪, পৃ. ৭০,পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা ও টীকা: শায়খ নাছর আল হোরীনী। এর সঙ্গে ‘আলকামুস’ -এর বিশাল ভাষ্যগ্রন্থ ‘তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরিল কামুস’ও দেখুন। যা ভাষা বিশারদ, মুহাদ্দিস ও ফকীহ মুরতাযা (মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ হুসাইনী) যাবিদী (১১৪৫ হিজরী- ১২০৫ হিজরী) সংকলিত,কুয়েতের আলমাজলিসুল ওয়াতানী যা অনেকগুলি বিরাট ভলিউমে প্রকাশ করেছে। ‘হিলাল’ -এর উল্লেখ এই সংস্করণে ৩১ তম খণ্ডে (পৃ. ১৪৪-১৫৬) এবং ‘মিহাক’ (অমাবস্যা)-এর উল্লেখ  খ. ২৬ পৃ. ৩৭৮ এবং ‘সারার’ (‘মিহাক’ -এর আরেকটি প্রতিশব্দ)-এর উল্লেখ খ. ১২, পৃ. ১৬-১৭

    ২২. ‘বাছাইরু যাউয়িত তাময়ীয ফি লাতাইফিল কিতাবিল আযীয’

    মাজদুদ্দীন আল-ফায়রুযাবাদী (প্রাগুক্ত) খ. ৫, পৃ. ৩৩১-৩৩২, আল-মাকতাবাতুল ইলমিয়্যা,বৈরুত। এই গ্রন্থে ‘হিলাল’ -এর হাকীকত এবং এর নামকরণের সাথে সম্পর্কিত ঐ তিনটি বিষয় (প্রকাশ, আওয়াজ, ধনুকাকৃতি) একসঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

    ২৩. ‘গারাইবুল কুরআন ওয়া রাগাইবুল ফুরকান’

    নিযামুদ্দীন আল-হাসান ইবনে মুহাম্মাদ নিশাপুরী, (মৃত্যু ৮৫০ হিজরীর পর) খ.১, পৃ. ৫২৫,মাকতাবা দারুল বায, মক্কা মুকাররমা, ১৪১৬ হিজরী, তার ভাষ্যটি এই:

    وتسمى القطعة المرئية الصغيرة أول ما يبدو إلى ليلتين هلالا، ويجمع على أهلة، لأنه يتعدد اعتبارا.

    অর্থাৎ (অমাবস্যার পরে) চাঁদ প্রথম প্রথম যখন প্রকাশ পায় তখন তার যে ছোট্ট অংশটি নযরে পড়ে তার নাম হিলাল। প্রথম দুই রাতে একে ‘হিলাল’ই বলা হয়।

    ২৪. ‘আল-লুবাব ফী উলূমিল কিতাব’

    আবু হাফস উমর ইবনে আলী সিরাজ উদ্দীন দামেশকী (রচনাকাল: ৮৮০ হিজরী) (আয়াত ২ : ১৮৯ -এর অধীনে)

    ব্যস, এই মুহূর্তে শত শত উদ্ধৃতির মধ্য থেকে নমুনাস্বরূপ কেবল এই চব্বিশটি উদ্ধৃতিই উল্লেখ করলাম। অতিরিক্ত একটি উদ্ধৃতি শুধু উল্লেখ করি: খ্রিস্টান গবেষক পণ্ডিত লুয়াইস মালুফ (১২৮৪ হিজরী- ১৩৬৬ হিজরী মোতাবেক ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ- ১৯৪৬ খিস্টাব্দ)-এর কৃত আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ, যার প্রথম সংস্করণ ১৯০৮ খিস্টাব্দে ছেপেছে এবং এখন পর্যন্ত এর অনেক সংস্করণ বেরিয়েছে; এতে ‘হিলাল’-এর আলোচনা শেষ করা হয়েছে এ কথা দিয়ে:

    والهلال عند أهل الهيئة: ما يرى من القمر أول ليلة.

    অর্থাৎ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে হিলাল হচ্ছে চাঁদের সেই অংশ যা প্রথম রাতে দৃষ্টিগোচর হয়। (আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ, পৃ. ৮৭০, কলাম, ত্ব ৩৫)

    বোঝা গেল, আরব জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও ‘হিলাল’কে অমাবস্যার পর প্রকাশ পাওয়া দর্শনযোগ্য চাঁদ -এর অর্থেই ব্যবহার করেন। ইংরেজী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যেভাবে ‘নিউমুন’কে এর  আভিধানিক অর্থের বাইরে অন্য একটি  অর্থের জন্য পরিভাষার রূপ দিয়েছেন, আরব জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ এ ধরনের কাজ করেননি। রবং তাদের শাস্ত্রীয় পরিভাষাতেও হিলাল হচ্ছে অমাবস্যা-পরবর্তী সাধারণ দৃষ্টিতে দৃশ্যমান উদিত চাঁদ।

    মুহতারাম ইঞ্জিনিয়ার সাহেব! একটি সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ এবং অনুসৃত ও সর্বজনগ্রাহ্য ও সর্ববাদীসম্মত বিষয়ে এতগুলো রেফারেন্স শুধু আপনার স্বার্থেই দেওয়া হল। সাধারণ পাঠকগণ হয়ত নারায হচ্ছেন যে, প্রবন্ধকার কী তামাশা শুরু করেছেন। জানা এবং স্পষ্ট একটি বিষয়ে এত হাওয়ালা উল্লেখ করার কী প্রয়োজন ছিল? তারপরও আপনার জন্য আমি এরূপটি করলাম। আশা করি, সত্যানুসন্ধানের চেতনা নিয়ে যদি চিন্ত-ভাবনা করেন তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে সত্য উপলব্ধি করার এবং হককে কবুল করার তাওফীক দান করবেন। (হিলালের বিকৃতি বিষয়ের বাকী আলোচনা আগামী সংখ্যায়)

    [চলবে ইনশাআল্লাহ]


    [1] দেখুন, الموسوعة العربية العالمية  (Global Arabic Encyclopedia) খণ্ড ১৮, পৃষ্ঠা ৩২৬-৩২৭,দ্বিতীয় সংস্কারণ, প্রবন্ধ القمر

    আরো দেখুন, আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা ১৪১-১৪২, প্রফেসর এ. এম. এম. আবদুর রহমান (অব.) বি. এস-সি  (অনার্স, লন্ডন), এ. আর. সি এস. (লন্ডন) এম. এস-সি (ঢাকা) প্রাক্তন প্রফেসর,গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। তিতাস পাবলিকেশন্স, ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০

    [2] “When the moon is between the sun and the earth its sunlit side_the far side_ is turned away from the earth, Astronomers call this darkened phase of the moon a new moon.”  The World book Encyclopedia,  Vol- 13, P. 646h, World book- child craft international, Inc, © 1982  USA. & © 2005, Vol- 13, P. 784 .

     

    [3]এমনও হতে পারে যে, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ঐ অভিমতদাতাদের সামনে বইয়ের সেই কপিই কেবল পেশ করেছেন, যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিলো ৬৬। যাতে বিকৃতি ও অসংলগ্ন কথাবার্তা অনেক কম ছিলো। কিন্তু পরবর্তী প্রতিটি সংস্করণে তিনি ঐ অভিমতগুলো ব্যবহার করেছেন!

    [4]    ইবনুল হুমামের ভাষায়: والمفهوم المتبادر منه الرؤية عند عشية آخر كل شهر، عند الصحابة التابعين ومن بعدهم (ফাতহুল কদীর, খ. ২ পৃ. ৩১৩, পরিচ্ছদ: চাঁদ দেখা প্রসঙ্গ।)

    ব্যস থেকেই তিনি বুঝে ফেললেনতার কেল্লা ফতে। এবং এখন তার জন্য বৈধ হয়ে গেলো এইদাবী করে বসা যেকুরআন অমাবস্যার মাঝে শুরু হওয়া নতুন চাঁদ থেকে মাস আরম্ভ করতেবলেছে। কেননাএকে তো هلال (হিলাল)-এর অর্থ হল নিউমুন। আর নিউমুন অর্থ অমাবস্যা।দ্বিতীয়ত বাংলা কুরআন তরজমা  হাদীসের তরজমার কিতাবগুলোতে হিলাল’-এর অর্থ লেখাহয়েছে, ‘নতুন চাঁদ। আর তার বক্তব্য অনুযায়ীচাঁদ দর্শনযোগ্য হওয়ার পর্যায়ে আসতে আসতে পুরানো হয়ে যায়। অথচ কুরআন তো মাস আরম্ভ করতে বলেছে নতুন চাঁদ দিয়ে। অতএব অমাবস্যার সময়কার অদেখা চাঁদ থেকেই মাস শুরু করতে হবে। কারণ নতুন চাঁদ তো সেটাই!


    শনির চাঁদে অণুজীবের অস্তিত্ব থাকতে পারেঃ জাপানি বিজ্ঞানি

    শনির চাঁদ এনসেলেডাস এর গভীরে অণুজীবের অস্তিত্ব থাকতে পারে, সেখানে তারা থাকার উপযোগী কারণ চাঁদটি হাইড্রোজেন প্রস্তুত করছে যা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। একদল জাপানি বিজ্ঞানি এ কথা জানান।

    ২০০৯ সালে মার্কিন-ইউরোপীয় মানুষবিহীন মহাকাশযান ক্যাসিনি এনসেলেডাল’র দক্ষিণ মেরুতে বরফ ঢাকা সাগরের সন্ধান পেয়েছেন যেটির ব্যাস ৫০০ কিলোমিটার। সাগর থেকে বরফ কণা এবং সোডিয়াম লবণ বাষ্পীভূত হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করা হয়েছে।

    বরফ ঢাকা চাঁদ থেকে উদ্ভূত ন্যানোমিটার আকারের সিলিকা কণার সন্ধান পাওয়া গেছে। এক ন্যানোমিটার হলো এক মিটারের শত কোটি ভাগের এক ভাগ।

    টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইয়াসুহিতো সেকিনে এবং তার গবেষক দল গত মার্চে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখিয়েছেন সাগরের ৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে উদগত ধূম এবং হাইড্রোথারমাল বিক্রিয়ায় সিলিকা ন্যানো কণা গঠিত হতে পারে।

    মঙ্গলবার বৃটিশ বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল “নেচার কমিউনিকেশন” এ গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

    সিলিকা উচ্চতাপে গলে গিয়ে লোহা সমৃদ্ধ উল্কার মতো পাথর তৈরি হতে পারে যা পানির সংস্পর্শে বিপুল পরিমাণে হাইড্রোজেন নিষ্ক্রান্ত করতে পারে।

    আজ জেলহত্যা দিবস

    Posted by admin on November 3
    Posted in Uncategorized 

    আজ জেলহত্যা দিবস

    আজ ৩ নভেম্বর। শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাময় এক কলঙ্কিত দিন। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করতে আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিভৃত প্রকোষ্ঠে বন্দি মহান মুক্তিযুদ্ধের চার সিপাহসালার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং আবু হেনা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে এই দিনে জেলখানার অভ্যন্তরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতির পিতাকে হত্যা করার পর খুনি মোশতাকসহ ষড়যন্ত্রকারিরা এদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং এদেশ যাতে কোনদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান জেলখানার অভ্যন্তরে জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করা হয়। মানবতাবোধের চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুর সাক্ষী হচ্ছে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। দেশের আপামর জনতা যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এদেশেকে স্বাধীন করেছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব নগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এদেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঠিয়ে ধরেছে সেই চার নেতাকে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বরে হত্যা করা হয়। বাংলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ. এম কামারুজ্জামানকে আজীবন স্মরণ করবে। সেই থেকে ৩ নভেম্বর দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ তার দেয়া বাণীতে তিনি বলেন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন ও জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে জাতির পিতাকে হত্যার ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, একথা অনস্বীকার্য যে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কারাবন্দি অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। আবদুল হামিদ বলেন, ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। কিন্তু ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর আদর্শ চিরজাগরূক থাকবে। জাতি তাঁদের চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।তিনি জেলহত্যা দিবসে জাতীয় চারনেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেয়া বাণীতে বলেছেন মানবতা ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৩ নভেম্বর একটি কলঙ্কিত দিন। তিনি জাতীয় চারনেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন ১৯৭৫ সালের এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চারনেতার হত্যাকা- ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন এর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতারা পরবর্তী ২১ বছর দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র জাতির সাথে একাত্ম হয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে শোকাবহ এ দিবসটিকে স্মরণ ও পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ আজ ৩ নভেম্বর সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র সংগঠনের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ ধারণ। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল পৌনে ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ,ফাতেহা পাঠ,মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত। রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামরুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সর্বস্তরের দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল শাখা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল শাখার নেতা-কর্মী-সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

    সিউলে জাপান ও কোরীয় নেতার মধ্যে বৈঠক

    সিউলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে কোরিয়ান নারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ বৈরিতার অবসানে আলোচনার গতি বাড়াতে একমত হয়েছেন নেতারা।
    কোরিয়ায় জাপানের ঔপনিবেশিক শমাসনামলে কোরিয়ানদের ওপর নির্যাতন বিশেষ করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় কোরিয়ার নারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার জন্য জাপানকে ক্ষমা চাইতে ও ক্ষতিপূরণ দিতে দাবি জানিয়ে আসছে দক্ষিণ কোরিয়া।
    ধারণা করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চলাকালে প্রায় দুই লাখ নারীকে যৌন দাসী হিসেবে থাকতে বাধ্য করা হয়। কোরিয়া ছাড়াও চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান থেকে এদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
    গত সপ্তাহে এক সাক্ষাত্কারে পার্ক জিউন বলেছেন, এই ইস্যুটি সমাধানের ওপর অনেকাংশে জাপানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি নির্ভর করছে।
    এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র তাদের বিরোধ মেটাতে চাচ্ছে। তাদের এই বৈঠক আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রেক্ষাপটে দেশদুটিকে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

    ৯৭ বছরে হাইস্কুল ডিগ্রি

    পারিবারিক সমস্যার কারণে ৭৯ বছর আগে তাকে লেখাপড়া ছাড়তে হয়েছিলো। এরপর বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও স্কুলে ফেরা হয়ে ওঠেনি। সমস্যার কারণে তখন হাই স্কুল ডিগ্রি সম্পন্ন করতে না পারলেও হতাশ হতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ঐ ছাত্রীকে। আট দশক পরে হলেও সম্মানসূচক ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ হাজির হয়েছিলো ৯৭ বছর বয়সী মার্গারেট থমে বেকেমা’র বাড়িতে।

    গ্রান্ড র্যাপিডসের ক্যাথোলিক সেন্ট্রাল হাই স্কুল  কর্তৃপক্ষ মার্গারেটকে যখন সম্মানসূচক ডিগ্রি তুলে দেন তখন তার আত্মীয় এবং বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৩৬ সালে মায়ের ক্যান্সারের জন্য ছোট তিন ভাই-বোনকে দেখাশোনা করতে স্কুল ছাড়েন মার্গারেট। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মনে চাপা কষ্ট নিয়ে স্কুল ছাড়তে হলেও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন স্বীকৃতি দেয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্গারেট।

    সঙ্কট থেকে বাঁচতে আদর্শগত, রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন

    রবিবার সকালে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের মৃতদেহ বুঝে নিয়েছেন তার বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। এ সময় তিনি বলেন, কেবল আইনের বিচারে একের পর এক হামলা বা হত্যার সমাধান হবে না, এ সঙ্কট থেকে বাঁচতে আদর্শগত, রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। এ সময় মর্গে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, দীপনের শ্বশুর ডা. জালালুর রহমান ও বন্ধু আজিজুল ইসলাম ওয়ালি ।
    আগের দিন শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে এর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এই প্রকাশনী থেকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, যিনি নিজেও গত ফেব্রুয়ারিতে একই কায়দায় হামলায় নিহত হন। দীপনের লাশ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানীর লালমাটিয়ায় অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশনা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলা হয়। সেখানে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে হামলাকারীরা।
    আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ছেলের লাশ পাওয়ার পর দীপনের বাবা বলেছিলেন, লালমাটিয়ায় যারা হামলা করেছে, তারাই তার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে তার বিশ্বাস। এই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কোনো বিচার চাই না। আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, উভয় পক্ষ দেশের সর্বনাশ করছেন। উভয় পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।… জেল-ফাঁসি দিয়ে কী হবে।’
    রবিবার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ক্ষোভ থেকে তিনি ওই বক্তব্য দেননি; বলেছেন নিজের বিবেচনাবোধ থেকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের ভেতর যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হয় তাহলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিচার দিয়ে আইন আদালত দিয়ে আমরা শাস্তি দিতে পারি একজনকে। কিন্তু জাতীয় উন্নতি দরকার। সে জন্য গতকাল যে কথা বলেছি যৌক্তিক বিবেচনা করেই বলেছি। সেটা কোনো আবেগের উত্তেজনার কথা নয়।
    মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মামলা করব। আমি আইন মেনে চলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি বলেছে একটা দরখাস্ত লিখে দিতে। আমি আজ না পারলে আগামীকাল লিখে দেব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি এটার ওপর নির্ভর করি। আমি শুভ বুদ্ধির জাগরণ চাই। সমাজে, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে।

    এর আগে চলতি বছর চার লেখক-ব্লগার হত্যার ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধ্যাপক আবুল কাসেম বলেন, ঘটনা ঘটছে। এ জন্য সরকার চেষ্টা করছে রীতি অনুযায়ী। আমার কাছে মনে হয় এটা আদর্শগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। তারপরে আইনগতভাবে। তা না হলে এটা সমাধান হবে না।