সঙ্কট থেকে বাঁচতে আদর্শগত, রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন

রবিবার সকালে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের মৃতদেহ বুঝে নিয়েছেন তার বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। এ সময় তিনি বলেন, কেবল আইনের বিচারে একের পর এক হামলা বা হত্যার সমাধান হবে না, এ সঙ্কট থেকে বাঁচতে আদর্শগত, রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। এ সময় মর্গে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, দীপনের শ্বশুর ডা. জালালুর রহমান ও বন্ধু আজিজুল ইসলাম ওয়ালি ।
আগের দিন শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে এর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এই প্রকাশনী থেকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, যিনি নিজেও গত ফেব্রুয়ারিতে একই কায়দায় হামলায় নিহত হন। দীপনের লাশ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানীর লালমাটিয়ায় অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশনা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলা হয়। সেখানে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে হামলাকারীরা।
আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ছেলের লাশ পাওয়ার পর দীপনের বাবা বলেছিলেন, লালমাটিয়ায় যারা হামলা করেছে, তারাই তার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে তার বিশ্বাস। এই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কোনো বিচার চাই না। আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, উভয় পক্ষ দেশের সর্বনাশ করছেন। উভয় পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।… জেল-ফাঁসি দিয়ে কী হবে।’
রবিবার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ক্ষোভ থেকে তিনি ওই বক্তব্য দেননি; বলেছেন নিজের বিবেচনাবোধ থেকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের ভেতর যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হয় তাহলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিচার দিয়ে আইন আদালত দিয়ে আমরা শাস্তি দিতে পারি একজনকে। কিন্তু জাতীয় উন্নতি দরকার। সে জন্য গতকাল যে কথা বলেছি যৌক্তিক বিবেচনা করেই বলেছি। সেটা কোনো আবেগের উত্তেজনার কথা নয়।
মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মামলা করব। আমি আইন মেনে চলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি বলেছে একটা দরখাস্ত লিখে দিতে। আমি আজ না পারলে আগামীকাল লিখে দেব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি এটার ওপর নির্ভর করি। আমি শুভ বুদ্ধির জাগরণ চাই। সমাজে, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে।

এর আগে চলতি বছর চার লেখক-ব্লগার হত্যার ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধ্যাপক আবুল কাসেম বলেন, ঘটনা ঘটছে। এ জন্য সরকার চেষ্টা করছে রীতি অনুযায়ী। আমার কাছে মনে হয় এটা আদর্শগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। তারপরে আইনগতভাবে। তা না হলে এটা সমাধান হবে না।