আজ জেলহত্যা দিবস
আজ ৩ নভেম্বর। শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাময় এক কলঙ্কিত দিন। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করতে আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিভৃত প্রকোষ্ঠে বন্দি মহান মুক্তিযুদ্ধের চার সিপাহসালার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং আবু হেনা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে এই দিনে জেলখানার অভ্যন্তরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতির পিতাকে হত্যা করার পর খুনি মোশতাকসহ ষড়যন্ত্রকারিরা এদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং এদেশ যাতে কোনদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান জেলখানার অভ্যন্তরে জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করা হয়। মানবতাবোধের চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুর সাক্ষী হচ্ছে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। দেশের আপামর জনতা যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এদেশেকে স্বাধীন করেছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব নগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এদেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঠিয়ে ধরেছে সেই চার নেতাকে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বরে হত্যা করা হয়। বাংলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ. এম কামারুজ্জামানকে আজীবন স্মরণ করবে। সেই থেকে ৩ নভেম্বর দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ তার দেয়া বাণীতে তিনি বলেন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন ও জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে জাতির পিতাকে হত্যার ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, একথা অনস্বীকার্য যে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কারাবন্দি অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। আবদুল হামিদ বলেন, ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। কিন্তু ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর আদর্শ চিরজাগরূক থাকবে। জাতি তাঁদের চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।তিনি জেলহত্যা দিবসে জাতীয় চারনেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেয়া বাণীতে বলেছেন মানবতা ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৩ নভেম্বর একটি কলঙ্কিত দিন। তিনি জাতীয় চারনেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন ১৯৭৫ সালের এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চারনেতার হত্যাকা- ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন এর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতারা পরবর্তী ২১ বছর দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র জাতির সাথে একাত্ম হয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে শোকাবহ এ দিবসটিকে স্মরণ ও পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ আজ ৩ নভেম্বর সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র সংগঠনের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ ধারণ। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল পৌনে ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ,ফাতেহা পাঠ,মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত। রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামরুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সর্বস্তরের দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল শাখা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল শাখার নেতা-কর্মী-সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।