• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • বিপদের মধ্যেও কবুলিয়াত

    মাওলানা আলী আকবর ছাহেব, আমার মুহতারাম উস্তায। তিনি তাঁর শায়েখ ও মুরশিদ মাওলানা ইদ্রিস সন্দ্বীপী ছাহেব রাহ.-এর কাছে বসে কাঁদছেন আর বলে চলেছেন সদ্য ঘটে যাওয়া বিপদের কথা। মাদরাসায় ডাকাতি হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন। অপরদিকে সন্দ্বীপী রাহ. বর্ণনা শুনছেন আর মৃদু হাসছেন; কী যেন ভাবছেন। বিপদের মাঝে তিনি কিসের যেন সুসংবাদ শুনতে পাচ্ছেন। আল্লাহর উপর যার ঈমান পাহাড়সম তিনি বিপদেও আল্লাহকে দেখেন, বিপদ-পরবর্তী আল্লাহর সাহায্যে নিশ্চিত বিশ্বাস করেন। বর্ণনা শেষ হলে তিনি বললেন, মাওলানা ছাহেব! সুসংবাদ গ্রহণ করুন। এই বিপদের মধ্যে মাদরাসার কবুলিয়াতের আলামত দেখতে পাচ্ছি। এই মাদরাসার (মাদানী নগর মাদরাসা) শুরুতেও এমন বড় বড় বিপদ এসেছে। ডাকাত পড়েছে, শত্রু আক্রমণ করেছে। আরো কত কী! আজ আল্লাহর মেহেরবানী নিজ চোখে দেখুন, কেমন দ্বীনের খেদমত চলছে।

    তাঁর এই অমূল্য বাণীর মূল্য দীর্ঘ দেড় যুগ পরে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। বাক্যগুলো ছিল ভরপুর-ঈমানের চাদরে আচ্ছাদিত। যত দিন যাচ্ছে মাদরাসার ততই যেন তারাক্কী হচ্ছে। পড়া-লেখা থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপেই আল্লাহ তাআলার নুসরতের বারিধারা অব্যাহত। এ তো কবুলেরই আলামত।

    মাদরাসা প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ডাকাতি। তালিবুল ইলমরা সবে আসতে শুরু করেছে। মাত্র দুদিন হল মাদরাসার বয়স, ছাত্ররা ভর্তি হচ্ছে। অমনি ডাকাত পড়ল। তাও রীতিমত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। এক উস্তাযে মুহতারাম ও এক তালিবুল ইলম গুলিবিদ্ধ। পুরো মাদরাসায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিভাবক মহোদয়গণ নিজ নিজ পোষ্যকে নিয়ে ভাবনায় পড়ে যান। আসাতেযায়ে কেরাম নতুন করে ভাবতে শুরু করেন, কী করবেন, কী করা উচিত। এখানে এই বিপদ মাথায় নিয়ে থাকবেন নাকি অন্য কোথাও চলে যাবেন? এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে কানাঘুষা। মাদরাসা শুরু না হতেই ডাকাতি!

    হুযুরের সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন। বছরের পর বছরের মেহনতের ফসল অঙ্কুরেই ঝরে যাবে! হুযুর আর ভার নিতে পারছিলেন না, তাই চলে গেলেন ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান নিজের শায়েখ ও মুরশিদের কাছে। ঈমানী কথা শুনে, আল্লাহর তাআলার নুসরতের বাণী শুনে হুযুর শান্ত¡না পেলেন। ভাঙ্গা হৃদয় আবার ভরে উঠল ঈমানের শক্তিতে। মনে যেন  আর কোনো কষ্ট নেই। ভার নেই, দুঃখও নেই।

    মাদরাসায় এসে সকল তালিবুল ইলম ও আসাতেযায়ে কেরামকে একত্রিত করলেন। হৃদয় থেকে হৃদয়ে নিয়ে আসা সান্ত¡নার বাণী সবাইকে শোনালেন। হৃদয়ের পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে বললেন, বিপদের সময় আল্লাহকে স্মরণ করাই মুমিনের পরিচয়।

    আইয়ূব আলাইহিস সালাম বিপদে পড়ে আল্লাহকেই ডেকেছিলেন, আল্লাহ তাঁর বিপদ দূর করেছিলেন-

    وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ فَاسْتَجَبْنا لَهُ فَكَشَفْنا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ وَآتَيْناهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ مَعَهُمْ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنا وَذِكْرى لِلْعابِدِينَ.

    অর্থ : এবং স্মরণ কর আইয়ুবের কথা যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল, ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু!’ তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দুরীভ‚ত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সঙ্গে তাদের মত আরো দিলাম আমার বিশেষ রহমতস্বরূপে এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ। -সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৩-৮৪

    নিআমত ও সুখও আল্লাহ দেন, মুসিবত ও বিপদও আল্লাহ দেন। মুমিনের কর্তব্য নিআমতের শুকরিআ আদায় করা, আর বিপদেও আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

    وَما بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ثُمَّ إِذا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْئَرُونَ.

    অর্থ : তোমাদের নিকট যে সমস্ত নিআমত রয়েছে তা তো আল্লাহরই নিকট থেকে আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান কর। -সূরা নহল (১৬) : ৫৩

    বিপদে পড়লে মুমিনগণ আল্লাহকে ডাকে। আল্লাহ তাআলা এতে খুশি হন। বিপদ দূর করে দেন। অপরদিকে  দুর্বল ঈমানের মানুষ বিপদে পড়লে ঘাবড়ে যায়, হতাশ হয়ে পড়ে। অথচ নিরাশ হতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, (তরজমা) ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না’। -সূরা যুমার, (৩৯) : ৫৩

    ব্যস, কাজ হয়ে গেল। পুরা মাদরাসায় ফিরে এল চঞ্চলতা। শুরু হল কুরআনের দরস। সবার মুখে দেখা যাচ্ছে জ্বলজ্বল আলো। সর্বত্রই বিরাজ করছে আসমানী ইতমিনান ও প্রশান্তি।

    নামায ও ধৈর্য বিপদমুক্তির পথ

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ

    অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা নামায ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রয়েছেন ধৈর্যশীলদের সাথে। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৩

    পার্থিব জীবনের পরতে পরতে রয়েছে সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না। আবার এ থেকে উত্তরণের সহজ এবং কার্যকর পথ ও পন্থাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন। বান্দার জীবন যেন বিপদের কারণে থমকে না দাঁড়ায়। বিপদের ঘোর অমানিশায়ও যেন সমাধানের পথ খুঁজে পায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়লে এর প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়। হুযাইফা রা. বলেন,

    كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ، صَلَّى.

    অর্থ : যখন কোনো কঠিন বিষয় সামনে আসত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩১৯

    কুরআন ও হাদীসের উপর আমল ও তার বাস্তব উদাহরণ দেখেছি আমি জামিয়া সিদ্দিকিয়ায়। অসম্পূর্ণ নতুন ভবন। অঝোর ধারায় বাতাসসহ বৃষ্টিতে ভিতরের কাপড়-চোপড় ও বিছানা-সামগ্রী সব ভিজে যাচ্ছে। মুহতামিম ছাহেব হুযুর নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টিও থেমে গেল। সুবহানাল্লাহ! বিপদে নামায কত কার্যকর। মেহেরবান আল্লাহ বান্দার জন্য জীবন কত সহজ করে দিয়েছেন। বিপদে যদি পড়, নামাযে দাঁড়াও আর আল্লাহর সাহায্য প্রত্যক্ষ কর। সাহাবাদের জীবন-কর্ম এমনই ছিল। যে কোনো প্রয়োজন, বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখ, ও বালা-মুসিবতে নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন।

    আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    হিরোশিমার শান্তি সারস

    জাপানে জনশ্রুতি রয়েছে কেউ যদি এক হাজার কাগজের সারস তৈরি করতে পারে তবে তার মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। হিরোশিমা’র আণবিক বোমার শিকার ১২ বছরের সাদাকো সাসাকি বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে কাগজের হাজার সারস তৈরি করেছিলো কিন্তু ১৯৫৫ সালে সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সারা বিশ্বের শিশুদের বইয়ে সাসাকি’র করুণ কাহিনী সুপরিচিত হয়ে ওঠে।

    দুই ব্যক্তির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ বছর সাদাকো’র একটি সারস প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে।

    অর্ধ শতাব্দীরও বেশি আগে সাসাকি’র তৈরি ছোট্ট সারস তার ভাই মাসাহিরো সাসাকি আমেরিকার মিসৌরি রাজ্যের একটি লাইব্রেরিতে দান করেছেন। লাইব্রেরিটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান’র সম্মানে নির্মিত হয়েছিলো, যিনি ১৯৪৫ সালে জাপানে আণবিক বোমা নিক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছিলেন।

    “এটি আমাকে আনন্দে ভরিয়ে দিচ্ছে” মাসাহিরো বলেন “সত্যিই আমার পক্ষে এরচেয়ে খুশী হওয়া সম্ভব নয়”। ট্রুম্যান’র নাতি ক্লিফটন ট্র্যুম্যান ডানিয়েল এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। তিনি বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, তার হস্তক্ষেপেই লাইব্রেরির কর্মকর্তারা সারসটিকে সেখানে প্রদর্শনের জন্যে গ্রহণ করেন।

    হ্যারি ট্রুম্যান’র সবচেয়ে বড় নাতি হিসেবে ড্যানিয়েল মহান গর্ব অনুভব করে আসছিলেন। তিনি তার উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করার জন্যে দিনরাত কাজ করেছেন। কিন্তু ১৬ বছর আগে তার পুত্র সাদাকো সম্পর্কে একটি বই বাসায় আনলে তার চিন্তাভাবনা ওলট-পালট হয়ে যায়।

    ড্যানেল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন কেমন করে একটি ছোট শিশুর কাহিনী তার উপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। “আমার পিতামহ সব সময়েই বলতেন আণবিক বোমার ফলে যুদ্ধ স্বল্প স্থায়ী হয়েছিলো এবং বহু আমেরিকানের জীবন বেঁচে গিয়েছিলো। সত্যিই তা সব কিছুর মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বইটি পড়ে আমি আণবিক বোমার শিকার একজন মানুষের অনুভুতির কথা জানতে পারি।”

    ড্যানিয়েল আণবিক বোমায় বেঁচে যাওয়াদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন তিনি সাদাকো’র ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। ২০১০ সালে সাদাকো’র ভাই জাপান সফর করেন। “সবচেয়ে প্রথমে আমি ড্যানিয়েলকে জিজ্ঞেস করি যখন তুমি জানতে পারো তোমার পিতামহ এসবের জন্যে দায়ি তখন তোমার কেমন অনুভূতি হয়েছিলো?” মাসাহিরো বলেন “সে আমায় উত্তর দেয় কিছু সময়ের আমাকে তা পীড়া দিতে থাকে”।

    সাসাকি ডানিয়েলকে একটি ছোট্ট উপহার দেন।

    “সে একটি ছোট্ট কাগজের সারস বের করে, আমার হাতের তালুতে রেখে বলে এটিই ছিলো শেষ সারসটি যা মৃত্যুর আগে সাদাকো ভাঁজ করে গেছে” ড্যানিয়েল বলেন “আর সে সময় তিনি আমাকে হিরোশিমা ও নাগাসাকি সফর করতে বলেন ….আমি আর না বলতে পারিনি। সাদাকো এবং সারস গল্পের অনেক শক্তি”।

    দু’বছর পর ড্যানিয়েল হিরোশিমা ও নাগাসাকি সফর করেন। লোকজন যখন জানবেন তার পরিচয় তখন তারা কী করবেন তা ভেবে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন।

    কিন্তু আণবিক বোমায় বেঁচে যাওয়া মানুষরা কেউ তাকে কোনো দোষারোপ করলেন না কিম্বা ক্ষমাও চাইতে বললেন না। তারা শুধু পৃথিবীর আর কোথাও যেন আণবিক বোমা ফেলা না নয় -তার নিশ্চয়তা চাইলেন।

    “দু’পক্ষেরই ক্ষতি হয়েছে” ড্যানিয়েল বলেন। “দু’পক্ষের মানুষরাই কষ্ট সহ্য করেছেন এবং যদি উভয় পক্ষই তা মেনে নেয় তবে পারষ্পরিক সমবেদনা আর উপলব্ধি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে, এভাবেই এগিয়ে যেতে হয়”।

    গত মাসে সাসাকি যখন আমেরিকা গিয়েছিলেন সারস উপহার দিতে তিনি এবং ড্যানিয়েল মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।

    এক শিক্ষার্থী মাসাহিরো’কে প্রশ্ন রাখেন “অনেকের বিশ্বাস আণবিক বোমাই ছিলো যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র পথ -এ সম্পর্কে তোমার মত কী”?

    মাসাহিরো জবাবে বলেন “ঘটনা সম্পর্কে আমেরিকান শিক্ষা আর জাপানি শিক্ষার যে পার্থক্য সেটা বোঝাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ”।

    যুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭০ বছর পার হলো, সাদাকো’র ছোট্ট একটি প্রতীক মার্কিন ও জাপানি জনগনকে কাছে এনে দিয়েছে এবং পারষ্পরিক সৌহার্দের পথ দেখাচ্ছে।