• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • কানতো অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প

    সোমবার রাতে ৫.৬ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প টোকিও এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্প থেকে কোনো সুনামির সতর্কতা নেই।

    জাপানের আবহাওয়া বিভাগ বলেছে স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২৩ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো টোকিওর উত্তরে উত্তর ইবারাকি প্রিফেকচারের মাটির ৪০ কিলোমিটার গভীরে।

    ইবারাকি প্রিফেকচারের ওমিতামা শহরে জাপানি ০ থেকে ৭ মাত্রার জাপানি ভূমিকম্প স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৫ মাইনাস।

    এ ছাড়াও কানাগাওয়া, সাইতামা, ইয়োকোহামা, মিতো সহ কানতো অঞ্চলের বিস্তীর্ণ স্থান ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে ওঠে।

    পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশের পরিমাণু চুল্লী গুলোতে ভূমিকম্পের ফলে এখনো পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। অনেক স্থানে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে গেলেও পরে তা পুনরায় শুরু হয়।

    আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস   

    আজ ১৬ মে ৪০তম ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল এদেশের লাখ লাখ দেশপ্রেমিক জনতা। যার ডাক দিয়েছিলেন সারা বিশ্বের মজলুম মানুষের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আজ থেকে চার দশক আগে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ নেতা। ডাক দিয়েছিলেন ফারাক্কা লংমার্চের। নিযুত কণ্ঠের গগনবিদারী স্লোগানের মধ্যে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মারণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বিশ্ববাসী। সেদিনের ঘোষণা আজও পদ্মা অববাহিকার আকাশে-বাতাসে অনুরিত হয়। রাজশাহী তথা দেশবাসীর কাছে ১৬ মে এক ঐতিহাসিক দিন। মওলানা ভাসানীর আহ্বানে সারাদেশ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাখ লাখ মানুষ ছুটে এসেছিল ফারাক্কা লংমার্চে যোগ দেয়ার জন্য রাজশাহীতে। বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা মানুষের পদভারে রাজশাহীর আকাশ-বাতাস ছিল প্রকম্পিত। ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের অনেকদূর পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিল জনতা। যা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। মাদ্রাসা ময়দানের মঞ্চে বিখ্যাত তালের টুপি আর সফেদ লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরিহিত মওলানা ভাসানী লংমার্চ নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে যাওয়ার আগে দশ মিনিটের বজ্র নির্ঘোষ ভাষণ দেন, যা ছিল দিকনির্দেশক ও উদ্দীপক। নিযুত কণ্ঠের স্লোগানে একই আওয়াজÑমারণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। চল চল ফারাক্কা চল। এরপর তার নেতৃত্বে শুরু হয় ফারাক্কার উদ্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে যাত্রা। ফারাক্কা অভিমুখী লংমার্চের অংশগ্রহণকারীদের খিচুড়ি, চিড়া, গুড়, রুটি, মুড়ি দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগতম জানিয়েছিল এখানকার মানুষ। খরতাপ আবার কখনো ঝড়-বৃষ্টির ঝাপটা তোয়াক্কা না করে লংমার্চ এগিয়েছে। যার অগ্রভাগে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। প্রকাশ্যে মওলানা ভাসানী লংমার্চ করলেও এর পেছনের নায়ক ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি মওলানা ভাসানীর এ ইস্যুকে জাতিসংঘ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। মওলানা ভাসানী ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করে দিল্লির শাসকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তার লংমার্চ ফারাক্কা ব্যারাজ হতে বেশ কয়েক মাইল দূরে কানসাটে শেষ হয়েছিল। তখনই ভয়ে ভারত সরকার ওই সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছিল। মওলানা ভাসানী কানসাটে তার সমাপনী বক্তব্যে বলেছিলেন, ভারতের জানা উচিত বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। তিনি মজলুম জনতার আর্তনাদে সাড়া দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান। এতে ব্যর্থ হলে গোটা দুনিয়ার মানুষ ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, গঙ্গার পানি চাই। এটা আমাদের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার আমরা আদায় করে ছাড়ব। আফসোস লংমার্চের ছয় মাস পর ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান সেই মহাপুরুষ। মওলানা ভাসানীর লংমার্চের পর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে পাঁচ বছর মেয়াদি পানি বণ্টন চুক্তি করে। বিগত হাসিনা সরকারের আমলেও ত্রিশ বছর চুক্তি করে। কোনো গ্যারেন্টিক্লজ ছাড়া। পরিতাপের বিষয় আজ অবধি ভারত সরকার এ চুক্তির মর্যদা দেয়নি। চুক্তি মোতাবেক পানি বাংলাদেশ কখনো পায়নি। বরং পানি প্রবাহের হার সর্বনি¤œ পর্যায়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত রেখেই ক্ষান্ত হয়নি। তার পানি শোষণ নীতি আরো আঁটোসাঁটো করেছে। উজানে অসংখ্য স্থাপনা করে পানি প্রত্যাহার করে চলেছে। যার পরিণতিতে এপারের বাংলাদেশের পদ্মা নদীসহ অসংখ্য নদনদী খালবিল অস্তিত্ব হারিয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা নামের নদীটি এখন শীর্ণ খালে পরিণত। পদ্মা নামে নদীটি পানির নিচে চাপা পড়ে ফসিলের রূপ নিয়েছে। হারিয়েছে জীববৈচিত্র্য। আবহাওয়ায় ভর করেছে রুক্ষতা। পদ্মা পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবনজীবিকা আজ বিপন্ন। এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে এ অঞ্চলের মানুষ। শুধু ফারাক্কা নয় গজল ডোবাসহ অভিন্ন সব নদীকে পণবন্দী করে অসভ্য অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছে। গোটা দেশের মানুষকে ধ্বংস করার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে ভারত। এমন ভয়াবহ অবস্থায় ভারতের তাঁবেদার সরকার তো বটেই, কথিত দলকানা পোষমানা সুশীলরা এ নিয়ে কথা বলতে চান না। পাছে যদি দাদা-দিদিরা নাখোশ হয়। আজ ফারাক্কা দিবস হলেও তাদের মুখে ‘রা’ নেই। তেমন কর্মসূচিও চোখে পড়ে না। বেশীর ভাগ মিডিয়ায় উপেক্ষিত দিনটি। কারণ একই। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দেশপ্রেমিক হাতেগোনা কটি গণমাধ্যম স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে দিনটির কথা। সচেতন বুদ্ধিজীবীরা ঘরোয়াভাবে আলোচনার মধ্য দিয়ে ইতি টানছেন। কী করবেন দলকানা পোষমানাদের সংখ্যা যে বেশী। আর তাই আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণে আসছে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কথা। দেশের এই ক্রান্তিকালে তার মতো নেতার বড্ড প্রয়োজন। যিনি ভারতের এই পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে খামোশ বলে গর্জে উঠবেন। যার ডাকে সর্বস্তরের মানুষ ফারাক্কা লংমার্চের মতোই ছুটে আসবে। গণজমায়েত আজ এদিকে ফারাক্কা লংমার্চের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ফারাক্কা লংমার্চ উদযাপন কমিটি আজ রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পাড়ে আয়োজন করেছে বিশাল গণজমায়েতের। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞগণ বক্তব্য রাখবেন। যার মধ্যে রয়েছেন Ñ ড. এস আই খান, সাবেক পানি ও পানি বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আহ্বায়ক ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও প্রতিষ্ঠাতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রফেসর ড, জসিম উদ্দিন আহমদ সাবেক ভিসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কবি ফরহাদ মজহার গবেষক ও পরিবেশবিদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রকৌশলী এম ইনামুল হকসহ স্থানীয় পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

    নতুন ধরনের ভূমিকম্পঃ ঝুঁকির মুখে বহুতল দালানকোঠা

    গত এপ্রিল মাসে কুমামোতো’তে আঘাত হানা ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে গবেষকরা একটি সুনির্দিষ্ট ধরনের ভূতাত্বিক আন্দোলনের বিষয় সম্পর্কে জানতে পেয়েছেন।

    তারা বলছেন শক্তিশালী ভূমিকম্প দীর্ঘক্ষণ ধরে ভূমিকে আন্দোলিত করছিলো, যা অতীতে কখনো কোনো ফল্ট বিচ্যুতির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন আন্দোলন এতোটাই শক্তিশালী ছিলো যে তা বহুতল ভবনকেও ফেলে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিলো।

    কোগাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োশিআকি হিসাদা টোকিও’র একটি ২৯তলা ভবনের একটি সিমুলেশন তৈরি করে একই ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে কী ঘটতে পারে তা প্রদর্শন করেন।

    কুমামোতো ভূমিকম্পের অনুরূপ শক্তিশালী ভূমিকম্পে দীর্ঘ সময় ধরে ভূমি আন্দোলিত হওয়াতে ১৫০ মিটার উঁচু ভবনটি দেখে মনে হচ্ছিলো যেন তা সবলে নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

    তার তৈরি সিমুলেশনে ভবনের সবচেয়ে উঁচু তলাটি ৩.৫ মিটার পর্যন্ত সরে যেতে পারে বলে দেখানো হয়েছে। ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরও ভবনটি একদিকে হেলে থাকতে পারে।

    হিসাদা বলেছেন দীর্ঘ সময় ধরে ভূমির আন্দোলন, বহুতল ভবনের পরিকল্পিত ভূমিকম্প সহ্য ক্ষমতার তিনগুন বেশি শক্তিশালী। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে অনেক অবকাঠামো এ ধরনের কম্পনে টিকে থাকতে সক্ষম হবে না।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারের কর্মকর্তাদেরকে সক্রিয় ফল্টের নিকটে থাকা শহরাঞ্চলে ভূমিকম্প নিরাপত্তা জোরদারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।

    বাড়ছে পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি  

    দেশের পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি বাড়ানো হচ্ছে। তবে পাসপোর্ট বইয়ের পাতা আপাতত বাড়ানো হচ্ছে না। মেয়াদের ক্ষেত্রে ৫ ও ১০ বছর উভয় ধরনের ব্যবস্থা রেখে পাসপোর্টের মেয়াদ, পাতা ও ফি বাড়ানো হচ্ছে। ১০ বছরের পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি চার হাজার টাকা এবং জরুরি ফি সাত হাজার করার প্রস্তাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এই ফি সাড়ে পাঁচ হাজার আর ১১ হাজার টাকা নির্ধারণে মতামত দিয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে পাসপোর্ট ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভায় পাঠানোর জন্য তৈরি করা একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্টের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও পাসপোর্টসেবা কার্যক্রম সহজতর যুগোপযোগী করার জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ ও পাতার সংখ্যা বাড়ানো এবং এ-সংক্রান্ত পাসপোর্ট ফি নির্ধারণ ও পুনর্নিধারণ করা প্রয়োজন। পাসপোর্ট রুল ১৯৭৪-এর ৫৯১-০ অনুচ্ছেদে পাসপোর্টের মেয়াদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে পাসপোর্টের মেয়াদ ও নবায়ন উভয় ক্ষেত্রেই পাঁচ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করতে হলে বিধি সংশোধন করতে হবে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে দুই ধরনের পাসপোর্ট দেয়া হয়। এর একটি হলো জরুরি, অন্যটি সাধারণ। প্রতিটি পাসপোর্টের বই ৪৮ পৃষ্ঠার। জরুরি পাসপোর্টের বর্তমান ফি ছয় হাজার টাকা, এর সঙ্গে ভ্যাট দিতে হয় ৯০০ টাকা। সাধারণ পাসপোর্টের ফি এর অর্ধেক। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের পরিবর্তন সংশোধনের জন্য ৩০০ টাকা করে ফি দিতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ বাংলাদেশি শ্রমিক-অধ্যুষিত দেশগুলোর দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য অবিলম্বে পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো হলেও বইয়ের পাতার সংখ্যা ৪৮ থাকবে। কারণ, বর্তমানে এমআরপি বই সরবরাহের জন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার চুক্তিবদ্ধ। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বইয়ের পাতা বাড়ানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া কয়েক লাখ ছাপা বই মজুত করা আছে। পাতা বাড়ালে সেসব বই অব্যবহৃত হয়ে যাবে।

    মসজিদের সাথে সম্পর্ক

    মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান

    মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘরÑ এতে তাঁর যিকির ও ইবাদত হয়। তাঁর বড়ত্ব ও মহিমার বর্ণনা হয়। তাঁর তাওহীদ ও রুবুবিয়াতের আলোচনা হয়।

    আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) … সেইসব গৃহে, যাকে মর্যাদা দিতে ও যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ করে সেইসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামায কায়েম ও যাকাত আদায় থেকে গাফেল করে না…। Ñসূরা নূর (২৪) : ৩৬

    অন্যত্র বলেন, (তরজমা) আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দলের মাধ্যমে প্রতিহত না করতেন, তবে ধ্বংস করে দেওয়া হত (খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের) উপাসনাস্থান, গির্জা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ, যাতে আল্লাহর যিকির করা হয় বেশি-বেশি…। Ñসূরা হজ্ব (২২) : ৪০

    এক বেদুইন মসজিদে পেশাব করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মসজিদে পেশাব বা কোনো ধরনের ময়লার কোনো অবকাশ নেই। এ তো কেবল আল্লাহর যিকির, নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫

    পৃথিবীতে জায়গার কোনো শেষ নেই এবং সবখানে আল্লাহ তাআলার যিকির করা যায়। কিন্তু এসবের মধ্যে মসজিদ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এতে শুধু তাঁর যিকিরই করা যায়। যিকির পরিপন্থী কোনো কিছু তাতে জায়েয নয়। এগুলো মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পরিপন্থী। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি মসজিদে কাউকে হারানো বস্তু সন্ধান করতে শোনে সে যেন বলে, আল্লাহ তোমার কাছে তা না ফেরান। কেননা মসজিদ এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৮

    এজন্য মসজিদ আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এবং দিনরাত তাঁর রহমত নাযিলের ক্ষেত্র। হাদীসের ভাষায়Ñ ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান বাজার।’ Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭১

    এ থেকেই উপলব্ধি করা যায়, মসজিদের সাথে মুমিনের কী গভীর সম্পর্ক থাকা উচিত এবং সেটা তার জন্য কী উপকারী ও কল্যাণকর!

    বস্তুত মসজিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন আত্মিক প্রশান্তি লাভ, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও ঈমান-আমল উন্নত করার এক পবিত্র ও বরকতময় উপায়।

    সুতরাং মুমিনের কর্তব্য, মসজিদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং একে জ্ঞান ও আলো, হেদায়েত ও সফলতার কেন্দ্র মনে করা।

    সম্পর্কের কিছু দিক

    মসজিদের সাথে সম্পর্কের অনেক দিক আছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক আলোচনা করা হল১

    এক. অন্তরগত সম্পর্ক

    অন্তরগত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক আছে। যেমনÑ

    (ক) মসজিদের স্বরূপ উপলব্ধি ও বিশ্বাস

    আগে মসজিদের যে স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে সেটি গভীরভাবে উপলব্ধি ও বিশ্বাস করা কর্তব্য। মসজিদের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক নির্ভর করে এই উপলব্ধি ও বিশ্বাসের উপর। এটা যত গভীর ও আলোকিত হবে সম্পর্ক তত দৃঢ় ও সুন্দর হবে। তাই মসজিদের স্বরূপের যথার্থ উপলব্ধি ও বিশ্বাস অতি জরুরি।

    আল্লাহর যিকিরের বিস্তৃত অর্থ ও নানা অধ্যায় এবং আল্লাহর যিকির পরিপন্থী বিষয়াদি সম্পর্কেও সঠিক জ্ঞান ও উপলব্ধি অর্জন করা প্রয়োজন। যাতে মসজিদের হক আদায় হয় আর না-হক কাজ থেকে মসজিদ পবিত্র থাকে।

    (খ) মসজিদের সার্বিক কল্যাণ কামনা

    মসজিদের সার্বিক কল্যাণ কামনার অর্থ, প্রতিটি গ্রামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা হোক, এসব মসজিদ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক, মুসল্লী ও যিকিরকারী দ্বারা পরিপূর্ণ হোক এবং এর মাধ্যমে সবখানে হেদায়েতের আলো ছড়িয়ে পড়ুকÑ এ প্রত্যাশা করা। এটা মসজিদের সাথে সম্পর্কের শুধু গুরুত্বপূর্ণ দিকই নয়, ঈমানের অংশ। পক্ষান্তরে মসজিদের কোনোরূপ অকল্যাণ কামনা এর প্রতি চরম বেআদবি ও কুফরের পরিচায়ক।

    তামীম দারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দ্বীন হল কল্যাণকামিতা। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কার কল্যাণকামিতা? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলমানদের ইমামদের এবং সকল মুসলমানের। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৫

    এখানে যেসব ক্ষেত্রে খুলূস ও কল্যাণকামিতাকে দ্বীন বলা হয়েছে তার মধ্যে সবার আগে রয়েছে আল্লাহ তাআলার প্রতি খুলূস ও  কল্যাণকামিতা। আর এতে তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরীক না করা যেমন রয়েছে তেমনি মসজিদের কল্যাণকামনাও। কেননা মসজিদ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।

    (গ) মসজিদের সাথে অন্তরের সম্পর্ক

    কর্ম অবলম্বন শুধু মানবিক প্রয়োজনই নয়, হালাল পন্থায় হালাল কর্ম অবলম্বন  ইসলামের এক ফরয বিধান। এই কর্মব্যস্ততার মধ্যেও যদি মসজিদের সাথে অন্তরের সম্পৃক্ততা থাকে, তবে তা অত্যন্ত মর্যাদার বিষয়। হাদীসে এসেছে, সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাঁর (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ ইমাম (বাদশাহ)। ঐ যুবক, যে তার প্রতিপালকের ইবাদতে লালিত-পালিত হয়। ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে (এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত)…। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৩১

    মসজিদের সাথে অন্তর সম্পৃক্ত থাকার অর্থ, সে নামাযের সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। সময়মত মসজিদে গমন করে। নামাযের পর যখন মসজিদ থেকে বের হয় পরবর্তী নামাযের প্রতীক্ষায় থাকে। ফলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই সে স্বচ্ছন্দে মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করতে সক্ষম হয়।

    দুই. আমলগত সম্পর্ক

    আমলগত সম্পর্কেরও বহু দিক আছে। যথাÑ

    (ক) মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায়

    নামায শুধু একটি ফরয বিধানই নয়, ঈমানের নিদর্শন এবং ইসলামের শিআর। এজন্য প্রয়োজন ছিল তা প্রকাশ্যে সম্মিলিতভাবে আদায়ের ব্যবস্থা। এ জামাতের নামায বিধিবদ্ধ হওয়ার অন্যতম তাৎপর্য। আর এর জন্য জায়গা নির্বাচিত হয় মসজিদ। প্রত্যেক সুস্থ-সবল বালেগ পুরুষের কর্তব্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা।

    জামাতের ফযীলত ও উপকারিতা অনেক। এতে দৈনিক অন্তত পাঁচবার নিজের ঈমান-আমলের হিসাব নেওয়ার সুযোগ হয়। নিয়মিত নামায পড়ার সৌভাগ্য হয় এবং পারস্পরিক ঐক্য-সম্প্রীতি রক্ষার প্রেরণা জাগে ইত্যাদি।

    হাদীসে এসেছে, একা নামাযের চেয়ে জামাতের নামাযের মর্যাদা সাতাশ গুণ বেশি। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫০

    অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে সবচেয়ে দূর থেকে (মসজিদে) আসে তার নামাযের সওয়াব সবচেয়ে বেশি। তারপর যে তার চেয়ে কম দূর থেকে আসে। আর যে ইমামের সাথে নামায আদায়ের জন্য অপেক্ষা করে, সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি সওয়াব লাভ করবে যে নামায পড়ে ঘুমিয়ে যায়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬২

    এ থেকে বোঝা যায়, মসজিদ দূরে হলেও সেখানে গিয়েই নামায আদায় করতে হবে এবং দূরত্ব অনুযায়ী সওয়াবের পরিমাণও বেশি হবে।

    অপর এক হাদীসে আছে, ব্যক্তির জামাতের নামায ঘরে বা বাজারের নামাযের চেয়ে পঁচিশগুণ বেশি মর্যাদা রাখে। আর তা এ কারণে যে, সে যখন উত্তমরূপে অযু করে ঘর থেকে শুধু নামাযের উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার প্রতি কদমে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি আর একটি গুনাহ মাফ করা হয়। এরপর যখন সে নামায পড়ে তখন ফিরিশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে; যতক্ষণ সে নামাযের স্থানে থাকে। তারা বলে, ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করো, তার প্রতি রহমত নাযিল করো। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪৭

    পক্ষান্তরে জামাতের ব্যাপারে কোনোরূপ অবহেলা অতি নিন্দনীয়। হাদীসে এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার জান! আমার ইচ্ছে হয়, আমি লাকড়ি জমা করার নির্দেশ দেই। তারপর আযানের হুকুম করি। এরপর কাউকে ইমামতির আদেশ দেই। আর আমি ঐ সব লোকের কাছে যাই, যারা নামাযে আসে না। অতঃপর তাদেরসহ তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫১

    এ থেকে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন যে, জামাতের ব্যাপারে অবহেলা করা কত ভয়াবহ! নবী-যুগে এটাকে মুনাফিকের আলামত মনে করা হত। কারণ মুনাফিক বা অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ জামাতের নামায পরিত্যাগ করত না। বরং কোনো কোনো অসুস্থ ব্যক্তিও অন্যের কাঁধে ভর করে জামাতে অংশগ্রহণ করত। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৪)

    (খ) তালীমের মজলিশে উপস্থিতি

    মসজিদ শুধু নামায আদায় নয়, কুরআন-হাদীস, মাসআলা-মাসাইল ও ইসলমী শিক্ষা-নির্দেশনা শেখা- শেখানোরও জায়গা। নবী যুগ থেকে সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন ও পরবর্তী অনেক সময় পর্যন্ত এ কাজগুলো প্রধানত মসজিদেই সম্পন্ন হত। পরবর্তীতে এসবের জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হলেও মসজিদে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি এবং তা সমীচীনও নয়। কারণ মসজিদে উপস্থিতি এক স্বতন্ত্র আমল (দৈনিক অন্তত পাঁচবার)। তাই এর আগে বা পরে কিছু তালীম হওয়া শুধু সহজই নয়, বরকতময়ও বটে। হাদীসে এসেছে, যখন কিছু লোক আল্লাহর কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে তাঁর কিতাব তিলাওয়াত করে, এর ইলম অর্জন করে এবং তা পরস্পর আলোচনা করে তখন তাদের উপর ‘সাকীনা’ নাযিল হয়, রহমত তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফিরিশতারা তাদের বেষ্টন করে ফেলে এবং আল্লাহ তাঁর কাছে যারা থাকেন তাদের সাথে তাদের আলোচনা করেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯২৭৪

    সুতরাং সকলের কর্তব্য মসজিদে তালীমের ব্যবস্থা করা এবং তাতে নিয়মিত উপস্থিতির চেষ্টা করা। আর এই তালীমে ব্যাপকতা কাম্যÑ তালীমে দ্বীন, তালীমে কুরআন, দরসে কুরআন, তালীমে সুন্নাহ, তালীমে হাদীস, তালীমে ফাযাইল, তালীমে মাসাইল ইত্যাদি।

    (গ) মানুষকে মসজিদের দিকে আহ্বান

    নামাযের জামাত ও তালীমের মজলিশে অধিক পরিমাণে মানুষের উপস্থিতি, পুরো এলাকায় হেদায়েতের আলো বিস্তার মসজিদ আবাদের অংশ। এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত আয়াত দু’টি সামনে রাখা যায় :

    ১. (তরজমা) ..আল্লাহর মসজিদ তো আবাদ করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এরূপ লোকদের সম্পর্কেই আশা আছে যে, তারা হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। Ñসূরা তাওবা (৯) : ১৮

    ২. সূরা নূরের ৩৬ নং আয়াত, যা শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ ‘সেইসব গৃহে, যাকে মর্যাদা দিতে ও যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ করে সেইসব লোক…’।

    এ থেকে বোঝা যায়, প্রকৃত মসজিদ আবাদ কেবল বাহ্যিক কারুকার্যে নয়; বরং ক্রমাগত মুসল্লীর সংখ্যা-বৃদ্ধি, তাদের মধ্যে তাকওয়া ও খোদাভীতি সঞ্চার এবং সর্বত্র হেদায়েতের আলো ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদিতে। এ কারণে বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্য সত্ত্বেও তা যদি মুসল্লীশূন্য হয়, তবে সেটা বিরান হিসেবেই গণ্য হয়।

    মুফতী শফী রাহ. সূরা বাকারার ১১৪ নং আয়াত (অর্থাৎ যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে…)-এর অধীনে লিখেছেন, ‘(এ থেকে) বোঝা গেল যে, মসজিদ বিরান করার যত পন্থা আছে সবই নিষিদ্ধ। এতে খোলাখুলিভাবে মসজিদ বিধ্বস্ত করা যেমন শামিল তেমনি এমন কোনো উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করাও শামিল, যাতে তা বিরান হয়ে যায়। মসজিদের বিরান এই যে, তাতে নামাযের জন্য মানুষজন আসে না বা কম হয়। কেননা মসজিদের প্রকৃত আবাদ প্রাচীর বা কারুকার্য দ্বারা নয়, আল্লাহর যিকিরকারীদের দ্বারা…।’ Ñতাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১/৩০০

    সুতরাং মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নে যেমন চেষ্টা করা কর্তব্য তেমনি মানুষকে মসজিদমুখী করার ব্যাপারেও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি।

    পক্ষান্তরে মানুষকে মসজিদবিমুখ করা কিংবা তাতে আসতে বা যিকির-ইবাদত করতে বাধা দেওয়া খুবই অন্যায় এবং জঘন্য ধৃষ্টতা।

    আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে? অথচ এরূপ লোকদের জন্য তো সংগতই ছিল না যে, ভীত-বিহ্বল না হয়ে তাতে প্রবেশ  করে। এরূপ লোকদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি। Ñসূরা বাকারা (২) : ১১৪

    মসজিদে যিকির বা নামায থেকে বাধা দেওয়ার যেকোনো পন্থাই না-জায়েয। তার মধ্যে একটি পন্থা হচ্ছে মসজিদে যেতে বা তাতে যিকির-ইবাদত করতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা। আরেকটি পন্থা হচ্ছে মসজিদে হট্টগোল বা আশেপাশে গান-বাজনা করে মানুষের নামায বা যিকিরে বিঘœ সৃষ্টি করা। এমনিভাবে নামাযের সময় যখন মুসল্লীরা নফল নামায বা তাসবীহ কিংবা তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মশগুল থাকে তখন মসজিদে উচ্চস্বরে তিলাওয়াত বা যিকির করা, যাতে তাদের নামাযে বিঘœ সৃষ্টি হয়Ñ এটাও এক ধরনের বাধা প্রদান। তবে মসজিদে যখন মুসল্লী না থাকে তখন উচ্চস্বরে যিকির বা তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই। Ñদেখুন : তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১/২৯৯

    (ঘ) মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশগ্রহণ

    পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। মসজিদের ক্ষেত্রে তা আরো জরুরি। মসজিদ ইসলামের অন্যতম শিআর এবং সম্মিলিত ইবাদতের জায়গা।

    কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছি যে, তোমরা উভয়ে আমার ঘরকে সে সকল লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে এবং রুকূ ও সেজদা করবে। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৬৫

    এখানে বাহ্যিক নাপাকী ও ময়লা-আবর্জনা এবং বাতেনী নাপাকীÑ যেমন কুফর, শিরক  বিদাআত ইত্যাদিÑ সব কিছু থেকে পবিত্র করা উদ্দেশ্য।

    আর আয়াতটি কাবা ঘরের ব্যাপারে নাযিল হলেও ‘আমার ঘর’ বাক্যটি এ দিকে ইঙ্গিত করে যে, এ বিধান অন্যান্য মসজিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা সমস্ত মসজিদই তাঁর ঘর। Ñদ্রষ্টব্য : তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১/৩২৩

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মহল্লায় মসজিদ বানাতে, তা পরিষ্কার রাখতে ও তাতে সুগন্ধি লাগাতে আদেশ করেছেন। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৬৩৪

    অন্য এক হাদীসে এসেছে, আমার উম্মতের ভালো-মন্দ সব আমলই আমার কাছে পেশ করা হয়। তাদের ভালো আমলগুলোর মধ্যে একটি পেয়েছি, কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে সরানো। আর মন্দ আমলগুলোর মধ্যে একটি পেয়েছি, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু পরিষ্কার না করা। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৫৪

    সুতরাং মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বিবেচনা করে এর জন্য আলাদা খাদেম রাখা উচিত। এক্ষেত্রে সকলের কর্তব্য মসজিদকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করা। এভাবে সকলেই মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। আর সরাসরি অংশগ্রহণ তো আরো সৌভাগ্যের বিষয়।

    বড় বড় ক্ষেত্র না হয় বাদই, ছোট ছোটও এমন বহু ক্ষেত্র আছে যাতে স্বচ্ছন্দে সরাসরি অংশগ্রহণ করা যায়। যেমন কাগজের টুকরা পড়ে আছে, সেটা নির্দিষ্টি জায়গায় রেখে দেওয়া। কার্পেট বা তার উপরের চাদর এলোমেলো হয়ে আছে, তা ঠিক করে দেওয়া ইত্যাদি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রত্যেকের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা যে, আমার দ্বারা যেন মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ক্ষুণœ না হয়।

    (ঙ) ইতিকাফ

    মসজিদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে ইতিকাফের সম্পর্ক সুগভীর। ইতিকাফের মধ্য দিয়ে বান্দা যে একাগ্রচিত্তে তার প্রতিপালকের যিকির-ইবাদতে মশগুল থাকার সৌভাগ্য অর্জন করে সেটার কোনো তুলনা হয় না। তার উপর তা যদি হয় রমযানুল মুবারকে তাহলে তো নূরুন আলা নূর!

    যে খায়ের, বরকত ও ফযীলত নিয়ে রমযানুল মুবারাকের আগমন ঘটে, তা অর্জনের ক্ষেত্রে ইতিকাফের ভূমিকা অসাধারণ। রমযানুল মুবারকের এক বড় নিআমত লাইলাতুল কদর। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, এটি রমযানের শেষ দশকেরই কোনো এক রাত। এজন্য শেষ দশকে সাধ্য মত পুরো রাত ইবাদতে কাটানোর বিশেষ নির্দেশ রয়েছে, যা অধিকতর সহজ হয় ইতিকাফের মাধ্যমেই।

    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদানী জীবনে এক বছর ছাড়া২ বাকি সব বছর ইতিকাফ করেছেন এবং উম্মতকেও এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।

    এজন্য প্রতিটি মসজিদে অন্তত একজনের ইতিকাফ করা অবশ্যকর্তব্য। কেউ না করলে পুরো এলাকাবাসী সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়ার গুনাহগার হবে।

    (চ) আযান

    আযান ইসলামের অন্যতম শিআর এবং পূর্ণাঙ্গ ও প্রভাবক এক আহ্বান। এতে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো তথা তাওহীদ, রিসালাত ও মসজিদে নামায আদায়ের আহ্বান রয়েছে। এ দিক থেকে মসজিদের সাথে আযানের সম্পর্ক বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ। মুমিনের কর্তব্য বিশুদ্ধ আযান শিক্ষা করা এবং সময়-সুযোগ হলে আযান দেওয়া। আর মুয়াযযিন হওয়ার সৌভাগ্য হলে তো কোনো কথাই নেই!

    হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনদের ঘাড় সকলের চেয়ে উঁচু হবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮৭

    অন্য হাদীসে আছে, মুয়াযযিনের দূর-আওয়ায মানুষ বা জিন কিংবা যেকোনো বস্তু শুনে, কিয়ামতের দিন সে তার জন্য সাক্ষ্য দিবে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৯

    তিন. অর্থগত সম্পর্ক

    প্রতিটি গ্রামে একটি মসজিদ আবশ্যক এবং তা এতটুকু প্রশস্ত ও উন্নত হওয়া উচিত যাতে এলাকাবাসী সকলেই স্বচ্ছন্দে ও প্রয়োজনীয় আরামের সাথে নামাযসহ মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আমল করতে সক্ষম হয়।

    এর প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব সরকারের। দ্বিতীয় পর্যায়ে জনগণের। প্রত্যেকের কর্তব্য নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নে সহায়তা করা। যাতে যেসব গ্রামে মসজিদ নেই বা থাকলেও তেমন উন্নত নয় সেখানে একটি উন্নত মসজিদ নির্মাণসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হয়। এটি অত্যন্ত সওয়াবের কাজ এবং সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে, যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহর তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৪৫০

    কঠোর আইনে স্থায়ী ভাবে বন্ধ হলো জাপানের ৬ষ্ঠ পরমাণু চুল্লী

    শিকোকু ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি মঙ্গলবার তাদের প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো পশ্চিম জাপানের একটি পরমাণু চুল্লীর কার্যক্রম স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এরফলে ২০১১’র ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর প্রণয়নকৃত কঠোর আইনে আটকে জাপানের ৬ষ্ঠ পরমাণু চুল্লী বন্ধ হয়ে গেলো।

    মার্চ মাসেই ইউটিলিটি এহিমে প্রিফেকচারের ইকাতা পরমাণু কমপ্লেক্সে বর্তমানে নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকা ১নং চুল্লীকে ডিকমিশন করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেননা পুরোনো চুল্লীকে চালু রাখার খরচ অত্যাধিক হয়ে পড়ছিলো।

    কোম্পানির প্রথমিক হিসেবে ১৭ হাজার কোটি ইয়েন প্রয়োজন পড়তো চুল্লীকে পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে। ১৯৭৭ সালে চুল্লীটি চালু করা হয়।

    ধারণা করা হচ্ছে চুল্লীর ডিকমিশনিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩০ বছরের মতো সময় লাগবে এবং এর জন্যে ৪ হাজার কোটি ইয়েন খরচ হবে।

    নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর   

    জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। রাজুর নেতৃত্বে চার সদস্যের জল্লাদ দল এই দন্ডাদেশ কার্যকর করে। এরপর সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মৃধা পালস পরীক্ষা করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর কড়া নিরাপত্তায় লাশ নিয়ে গাড়ির বহর পাবনার সাঁথিয়ায় নিজামীর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এর আগে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের নির্বাহী আদেশ কারা অধিদফতরে পৌঁছায়। এরপরই কারা কর্তৃপক্ষের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে কারাগার ও এর আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কারাগারে নিজামীর মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকরে সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়। এর আগে রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা তার সাথে শেষ সাক্ষাতের জন্য কারাগারে প্রবেশ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা সাক্ষাতের পর তারা বেরিয়ে আসেন। এ সময় তারা সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী, বড় ছেলে ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন, বড় পুত্রবধূ, দুই নাতি, ছোট মেয়ে মহসীনা, নিজামীর চাচাতো ভাই, ভাইয়ের মেয়েসহ ২৪ জন নিকটাত্মীয় তার সাথে শেষ সাক্ষাৎ করেন। কারাগারের ভিতরে প্রবেশ করার পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে ফাঁসির সেলের (কনডেমড) সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে  প্রায় ৪০ মিনিট সাক্ষাতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা নিজামীকে ধরে কান্নাকাটি করেন। কারা সূত্র জানায়, অনেকটা অবিচল নিজামী তাদেরকে সান্ত¦না দেন এবং ভবিষ্যতে চলাফেরার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। কারা সূত্র জানায়, পরিবারের সদস্যদের পর্বের পরই একজন ডেপুটি জেলারকে দিয়ে আনন্দবাজার থেকে ২ সেট কাফনের কাপড় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ২টি অ্যাম্বুলেন্স কারাগারের ডিআইজি ঢাকা বিভাগের অফিসের সামনে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে, নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের আগেই রাত ১০টার দিকে কারাগারে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকার সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় এমপি, পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ছিলেন অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স ইকবাল হাসান, ডিআইজি প্রিজন্স ঢাকা বিভাগ গোলাম হায়দার, সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলম, কারা কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিৎসক সহকারী সার্জন শামসুদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কারা অভ্যন্তরে ফাঁসির মঞ্চের অদূরে টানানো ফ্ল্যাড লাইট ও সামিয়ানার নিচে তাদের বসতে দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই কারা কর্তৃপক্ষ রুটিনমাফিক তাদের কাজ শুরু করে। এশার নামাজ পড়ার পরই কারা জামে মসজিদের ইমাম মনির হোসেন মতিউর রহমান নিজামীকে ওজু করিয়ে তওবা পড়ান। তাকে রাতের খাবার দেয়া হলেও তিনি খাননি। এরপরই তাকে কনডেমড সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চের অদূরে বিশেষ একটি সেলে স্থানান্তর করা হয়। এরপরই জল্লাদ দলের কাজ শুরু হয়। সর্দার রাজুর নেতৃত্বে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করে জল্লাদরা। রাজুর নেতৃত্বে অংশ নেয় ৪ জন জল্লাদ। সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের পর সিনিয়র জেল সুপারের ইশারায় ৩ জন জল্লাদ সেলে গিয়ে নিজামীকে কালো জমটুপি পরিয়ে দেয়। এ সময় নিজামী নিজে জল্লাদদেরকে সহযোগিতা করেন। এরপর সঙ্গীয় ২ জল্লাদ নিজামীর ২ হাতের বাহুতে ধরে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেয়। এরপরই ফাঁসির মঞ্চে জল্লাদরা তার হাত ও পা বেঁধে ফেলে। নির্ধারিত সময়ের আগেই জমটুপির ওপর দিয়ে ফাঁসির রশি (ম্যানিলা রোপ) তার গলায় পরিয়ে দেয়া হয়। তখন সকলের দৃষ্টি পড়ে পাশে লাল রুমাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা জেল সুপারের ওপর। নির্ধারিত সময়ের জিরো পয়েন্টে গেলেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ইশারায় সিনিয়র জেল সুপার হাতের লাল রুমালটি মাটিতে ফেলে দেন। আর তখনই জল্লাদ তার ফাঁসির কপিকলের সুইচ টেপে। তাৎক্ষণিক ফাঁসিতে ঝুলে পড়েন নিজামী। কারা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৪ মিনিট ঝুলন্ত রেখে নিজামীর নিথর দেহ তুলে পাশের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। সেখানে সিভিল সার্জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাত-পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। এরপরই তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মৃত্যুর সনদপত্র দেয়া হয় মনোনীত অভিভাবকের কাছে। পাশাপাশি মৌলভী দিয়ে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে নিজামীর লাশ তুলে দেয়া হয় নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্সে। অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তোলার পর পুলিশ ও র‌্যাব প্রশাসন নিজামীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সতর্ক পাহারায় তার গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায় দাফনের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেন। পুলিশ, গোয়েন্দা ও র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্সের কঠোর নজরদারিতে কারাগার থেকে অ্যাম্বুলেন্স রওনা করে মতিউর রহমান নিজামীর গ্রামের বাড়ির  উদ্দেশে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকরের নির্বাহী আদেশও পৌঁছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি মতিউর রহমান নিজামী। তাই যেকোনো সময় তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। মঙ্গলবার বিকালেই জল্লাদ রাজুকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। ফাঁসি কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কারা কর্তৃপক্ষ। নিজামীর মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকরের জন্য একদিন আগে থেকে কারাগারের ভিতরে বাইরে নেয়া হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একই সাথে সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কারাগার সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন কারা কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলমসহ বেশ কয়েকজন কারা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে ফাঁসির মঞ্চসহ আশপাশের স্থান পরিদর্শন করেন তারা। বৈঠক শেষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল মো. ইকবাল বের হয়ে যান। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে মাওলানা নিজামীকে রায়ের কপি পড়ে শোনান সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির। এসময় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম হায়দার, জেল সুপার নেসার আলম এবং দুইজন ডেপুটি জেল সুপার উপস্থিত ছিলেন। একই দিন একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায় প্রকাশের পর সেটি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে রায়ের কপি যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারা কর্মকর্তাদের ব্যস্ত সময় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে কারা কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। সকালেই অফিসে চলে আসেন জেলার নেসার আলম। কারাফটকেই তার বাসা। এর পর আসেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল কারাগারে আসেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বের হয়ে যান। তবে অন্য কর্মকর্তারা কারাগারেই ছিলেন। কারাফটকে কয়েকজন কারারক্ষী জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সবাই ব্যস্ত সময় কাটায়। কারাগারের বাইরে যেমন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, ভিতরেও ছিল তেমনই। দুপুরের মধ্যেই কারাবন্দীদের নিজ নিজ সেলে প্রবেশ করানোর পর তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সোমবার থেকে কারাগারের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পর গতকাল তা আরও বাড়ানো হয়। কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নেয়। অন্যান্য ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে কারাগারের চারদিকের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে নিজামীকে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় পড়ে শোনানো হয়। এদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় প্রকাশ করেন। এরপর বিকেল ৫টার কিছু পর আপিল বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে লাল কাপড়ে মোড়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে রওনা হয়। পরে ৭টা ৫ মিনিটে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর রায়ের কপি নেন। গত রোববার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এক শব্দের এই রায় ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এর আগে, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম যুদ্ধাপরাধী হিসাবে কাদের মোল্লা এবং ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। এরপর গত বছরের ২১ নভেম্বর একই সঙ্গে কার্যকর করা হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড।

    প্রসঙ্গ-রাষ্ট্রধর্ম : বন্ধু! কলমের মর্যাদা রক্ষা করুন  

    যাদের0 হাতে কলম আছে তাদেরই কর্তব্য, কলমের মর্যাদা রক্ষা করা, সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে কলম পরিচালনা করা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, হাতে কলম এলে অনেকেরই বিচার-বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পাঠকজনকে তারা কী বিবেচনা করেন তা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

    সম্প্রতি রাষ্ট্রধর্মের প্রসঙ্গ নিয়ে খানিকটা তোলপাড় হয়ে গেল। হাইকোর্টের রিট আবেদন ও অবশেষে তা খারিজের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আপাতত স্তিমিত হয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির কলমবাজ লোকের কলমচালনা থেমে নেই। তাদের কেউ লিখছেন, ‘রাষ্ট্র একটি নিষ্প্রাণ সত্তা, তার আলাদা ধর্ম থাকতে পারার বিবেচনা যে কোনো ধর্মের মৌলবাণীর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, ইসলামের ক্ষেত্রে তা সমপরিমাণে সত্য।’

    ধর্ম-বিশারদ ও রাষ্ট্র-বিশারদ উভয় শ্রেণির জন্যই এ উক্তিটি এক অপূর্ব তোহফা বটে। রাষ্ট্র যেহেতু নিষ্প্রাণ সত্তা আর সেকারণে যদি তার আলাদা ধর্ম না হতে পারে তাহলে এই নিষ্প্রাণ সত্তার জন্য সংবিধান কেন? এবং সংবিধানের নানা আদর্শই বা কেন? এরপর এই নিষ্প্রাণ সত্তাকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বানাবারই বা এত কসরত কেন? কে না জানে, ‘ধর্ম-নিরপেক্ষতা’ শব্দবন্ধটি বর্তমান সময়ের এক কুফরী ধর্মেরই নাম!

    কেউ আবার ধমক দিয়ে লিখছেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার যুক্তি ও জোরে একটি বিশেষ ধর্মকে সব নাগরিকের স্বতন্ত্র সমান অধিকারের উপর স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আপনার অন্যান্য অধিকার, এমনকি আপনার ব্যক্তিগত ধর্মচর্চার ওপরে হস্তক্ষেপের যৌক্তিকতা আপনি নিজেই তৈরি করছেন।’

    কিন্তু বাস্তবতা এই যে, অন্তত মুসলিম ভূখ-গুলোতে সংখ্যা-গরিষ্ঠতার কোনো ‘জোর’ নেই, সুতরাং ‘যুক্তি’ও নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর ও যুক্তি থাকলে আমাদের এই কলমবাজ বন্ধুরা এভাবে কলম চালনা করতে পারতেন না। আর ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’? এ-ও আজকাল ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতা’র জোরে হয় না; হয় ‘পৃষ্ঠপোষকতা’র জোরে। শাহবাগে এক বৃদ্ধ মুসলিমের শুভ্র দাড়ির উপর যে অপবিত্র হস্তক্ষেপ হয়েছিল তা কি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর ও যুক্তিতে হয়েছিল না পৃষ্ঠপোষকতার যুক্তি ও জোরে? আরো অনেক দেয়া যাবে। কিন্তু থাক্ কথা কম বলাই নিরাপদ। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই আজ সবচেয়ে বেশি মাযলুম। ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। পক্ষান্তরে পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্তগণই সবচেয়ে বেশি শক্তিমান। ক্ষেত্রবিশেষে দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক।

    এখনকার বাকপটু কলমসমাজ বন্ধুদের প্রচারণায় কারো কারো মনে এ প্রশ্নও জাগতে পারে যে, ধর্ম-নিরপেক্ষতার মাধ্যমে তো সাম্প্রদায়িকতার পথ রুদ্ধ হয়। সুতরাং এতে দোষের কী আছে!

    ধর্ম-নিরপেক্ষতার এই মূল্যায়ন পৃথিবীর কোনো কোনো ধর্মের ক্ষেত্রে সঠিক হলেও ইসলামের ক্ষেত্রে সঠিক নয়। ইসলাম যেহেতু ন্যায় ও ইনসাফের ধর্ম তাই এর শিক্ষা-বিধানে কোনো প্রকারের যুলুমের অবকাশ নেই। সাম্প্রদায়িকতারও অবকাশ নেই।

    সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ে ইসলামের শিক্ষাগুলোর দিকে নজর দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইসলাম সাম্প্রদায়িকতাকে কীভাবে চিহ্নিত করে? একজন সাহাবী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন ‘আসাবিয়্যাত’ (সাম্প্রদায়িকতা) কী? জবাবে তিনি ইরশাদ করলেন, অন্যায় কাজে স্বগোত্র-স্বজাতির পক্ষে দাঁড়ানো। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৭৮

    অর্থাৎ অন্যায় ও যুলুমে কাউকে শুধু এ জন্য সমর্থন করা যে, সে তার নিজ দল, গোত্র, জাতি ও ধর্মের লোকÑ এটাই সাম্প্রদায়িকতা।

    সুনানে আবু দাউদের অন্য বর্ণনায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষকে আসাবিয়্যাত (সাম্প্রদায়িকতা)-এর দিকে আহ্বান করবে (অর্থাৎ অন্যায় কাজে নিজ দল, গোত্র, জাতিকে সাহায্য করতে বলবে) সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়। যে এমন সাম্প্রদায়িকতার কারণে মৃত্যুবরণ করবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৮০

    আর বিদায় হজ্বের বিখ্যাত ভাষণের কথা তো সকলেরই জানা। যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন, ভাষা, বর্ণ ও গোত্রের ভিত্তিতে কারো উপর কারো প্রাধান্য নেই। তিনি বলেছেন, কোনো আরব অনারবের উপর (শুধু ভাষার কারণে) প্রাধান্য পাবে না। কোনো সাদা (তার বর্ণের কারণে) কালোর উপর প্রাধান্য দাবি করতে পারবে না। প্রাধান্যের একমাত্র ভিত্তি হবে তাকওয়া। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৪৮৭

    উপরোক্ত হাদীসগুলো এবং কুরআন-সুন্নাহর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আয়াত ও হাদীস-আসারগুলো অধ্যয়ন করলে যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ উপলব্ধি করবেন যে, ইসলামের ব্যাখ্যায় সাম্প্রদায়িকতার আওতা কত বিস্তৃত এবং কত কঠোরভাবে ইসলাম এর নিন্দা ও বিরোধিতা করে।

    কিন্তু আধুনিক ইউরোপ মানুষকে দেশ, বর্ণ, দল ও ভাষার ভিত্তিতে বিভক্ত করে পুনরায় ইসলাম-পূর্ব জাহিলিয়াত-যুগেই নিয়ে গেছে। এখন দলের লোক, গোত্রের লোক, সম্প্রদায়ের লোক, নিজ পেশার বা গ্রুপের লোক কিংবা দেশের লোক যত অন্যায়ই করুক তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তার পক্ষই অবলম্বন করবে। অন্য পক্ষ যতই মাযলুম, অসহায়, নির্যাতিত হোক তার প্রতি সদয় হবে না । আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো, ছাত্রসংগঠনগুলো, বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায় এবং তাদের কর্মকা-ে তা স্পষ্ট। দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তি যত বড় মিথ্যা বক্তব্যই দিক তারা সেটা প্রচার করতে থাকবে। দলীয় পরিচয়ে কোনো নেতাকর্মী যত অপকর্মই করুক তারা সেটিকে দোষই মনে করবে না এবং বেশি চাপে পড়ে গেলে তা অস্বীকার করে দিবে। এমনিভাবে তাদের কোনো লোক কোনো সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ করলে বা তার জানমালের ক্ষতি করলেও তারা আক্রমণকারীর পক্ষেই যাবে এবং তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এরপরও ওরা ধর্মনিরপেক্ষ সুতরাং অসাম্প্রদায়িক!!

    ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম সংখ্যালঘুদের জানমাল তো মুসলমানদের মতোই। বিশ্বজিৎ হত্যাকা-ের পর আলিমগণ ইসলামী বিধানের আলোকেই এর প্রতিবাদ করেছেন। কোনো মুসলমানের পক্ষে যেমন দেশের আইন মেনে বসবাসকারী অমুসলিমের উপর কোনো ধরনের নির্যাতনের সুযোগ নেই তেমনি অন্য কোনো মুসলিমকে এমনটি করতে দেখলে সাধ্যানুযায়ী এ অন্যায় কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করাও তার দায়িত্ব। তা না করে উল্টো জালেমকে সমর্থন করলে সেটি হবে চরম সাম্প্রদায়িকতা।

    তো সাম্প্রদায়িকতা দমনের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে ইসলামী আদর্শে জাতিকে গড়ে তোলা, কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়াহ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা, সেক্যুলার রাষ্ট্রযন্ত্র কখনো সাম্প্রদায়িকতা-মুক্ত মানব জাতি উপহার দিতে পারে না।

    শুধু আমাদের দেশেই নয় প্রতিবেশী দুটি দেশের রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িক ঘটনা এবং পশ্চিমের দেশগুলোর স্কুল ও বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে অস্ত্রধারীদের গুলির ঘটনা ও আক্রমণকারীর বক্তব্য পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, রাষ্ট্র সেক্যুলার নামধারী হলেও জাতি সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হয় না। সুতরাং সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্তির জন্য চাই ইসলামী আদর্শ ও শিক্ষা, ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।

    আর একারণেই অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে মুসলিমগণ ধর্মনিরপেক্ষতাকে আত্মরক্ষার একটি কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। ঐ সকল অঞ্চলের উগ্র সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে এর যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু মুসলিম ভূখ-গুলোতে ইসলামী আদর্শই অমুসলিমদের জন্য অধিকতর স্বস্তি ও নিরাপত্তার উপায়। সুতরাং কলমবাজ বন্ধুদের বাস্তবতা-পরিপন্থী সমীকরণ-নীতি ও বাস্তবতা কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়।

    জানিনা কোন কারণে ২৮ বছর আগের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর বিরুদ্ধে রিট নতুনকরে শুনানি এনে জনমনে শংকা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে শস্তির বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞ আদালত রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন। এবার সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা কবে সরবে তার অপেক্ষা।

    নড়াচড়া শনাক্ত করে কাজ করবে টাচস্ক্রিন!

    ভবিষ্যতে স্মার্টফোনের স্ক্রিন স্পর্শ না করেই বিভিন্ন কাজ করা যাবে। মাইক্রোসফটের তৈরি নতুন প্রযুক্তির টাচস্ক্রিন কাজে লাগিয়ে এমনটি করা যাবে। ‘প্রি-টাচ সেন্সিং’ প্রযুক্তির টাচস্ক্রিনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের সেন্সর। এটি স্ক্রিনের ওপরে ব্যবহারকারীদের হাতের নড়াচড়া শনাক্ত করেই সম্ভাব্য কাজের ধরন শনাক্ত করতে পারে। অর্থাৎ স্মার্টফোনে চালু থাকা ভিডিও বন্ধ করতে স্ক্রিনের ওপর আঙুল নাড়ালেই ভিডিও প্লেয়ারের বিভিন্ন অপশন দেখা যাবে। নতুন এ প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

    আজ শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালনের আহ্বান জামায়াতের

    জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে আজ বোরবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে সর্বাত্মক হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার নিজামীর রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদ- বহালের আদেশ দেয়ার পরই জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান হরতালসহ ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে নিজামীর মুক্তির জন্য শুক্রবার দেশব্যাপী দোয়া দিবস ও গতকাল শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। হরতাল সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল। বিবৃতিতে বলা হয়, মাওলানা নিজামী শুধু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরই নন, তিনি দেশের একজন জাতীয় নেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলেমে দ্বীন। তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামী সমাজ কায়েমের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তার দেশপ্রেম এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজ সর্বমহলে স্বীকৃত। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের উন্নতি-অগ্রগতি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। দেশের জনগণ তাকে ভালবাসেন এবং তার মুক্তি চান। ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে কালবিলম্ব না করে তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিবৃতিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সর্বাত্মক হরতাল সফল করার জন্য আমি জামায়াতের সকল শাখা এবং কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, ওলামায়ে-কেরাম ও পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তথা দেশের আপামর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। তবে হরতালে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ী, হাসপাতাল, ঔষধের দোকান, ফায়ার সার্ভিস ও সংবাদপত্রের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

    আমেরিকার সাথে নিরাপত্তা চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে জাপানের পুনর্বিবেচনা করা উচিতঃ ইশিবা

    প্রতিরক্ষা নীতি বিশেষজ্ঞ একজন অভিজ্ঞ জাপানি আইনপ্রণেতা বলেছেন জাপান যদি তার যুদ্ধ বিরোধী সংবিধান সংশোধন করে তবে আমেরিকার সাথে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিকে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

    “বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভাবে বিবেচনা করা উচিত” শিগেরু ইশিবা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র মন্ত্রী সভার একজন সদস্য। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সুসংহত করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা চুক্তি এবং স্ট্যাটাস অফ ফোর্স এগ্রিমেন্ট পর্যালোচনা করার উপদেশ দেন।

    ১৯৬০ সালের চুক্তি পরিবর্তনে আবে প্রশাসন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়ায় সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইশিবা বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছেন।

    নিরাপত্তা চুক্তি অনুসারে কেবলমাত্রা আমেরিকা জাপানের প্রতিরক্ষায় দায়বদ্ধ।

    আবে সরকারের বক্ত বক্তব্য হচ্ছে, মিত্রবাহিনীর সুরক্ষায় জাপানের সেনাবাহিনী ব্যবহারের আইন সংশোধনটি প্রয়োজনীয় ছিলো -ইশিবা বলেন।

    যদি সংবিধান সংশোধন করাই হয় তবে জাপানের অবশ্য নিরাপত্তা চুক্তি এবং জাপানে মার্কিন বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনাকারী দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা পুর্নবিবেচনা করা উচিত।

    সামান্য কাজও সামান্য নয়

    মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

    মানুষের সব কাজ গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেÑ

    فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ    وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ .

    যে যাররাহ পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখতে পাবে। আর যে যাররাহ পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সেও তা দেখতে পাবে। Ñসূরা যিলযাল (৯৯) : ৭-৮

    আবু যর গিফারী রা. বলেন-

    قال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تحقرن من المعروف شيئاً ولو أن تلقى أخاك بوجه طلق.

    আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করো না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ।’

    ইমাম মুসলিম রাহ. “সহীহ মুসলিমে” ‘কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাহ’ শিরোনামের অধীনে এই হাদীসটি এনেছেন । হাদীস ও ফিকহের কিতাবে বিভিন্ন শিরোনামের শুরুতে ‘কিতাব’ শব্দটি আসে। এখানে ‘কিতাব’ মানে অধ্যায়। তাহলে ‘কিতাবুল বিররি ওয়াসসিলাহ’ অর্থ আলবির ওয়াস সিলাহ অধ্যায়। ‘আল বির’ (البر) অর্থ সদাচার। আর ‘আস সিলাহ’ (الصلة) অর্থ, সম্পর্ক রক্ষা। তো সহীহ মুসলিমের এই অধ্যায়টির শিরোনাম ‘সদাচার ও সম্পর্ক রক্ষা’।

    আমরা যদি হাদীসের কিতাবের শুধু শিরোনামগুলো মনোযোগের সাথে পাঠ করি তাহলে ইসলামের শিক্ষার বহু দিগন্ত আমাদের সামনে উন্মোচিত হবে। ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণাই খ-িত ও সীমাবদ্ধ। কেউ মনে করেন, শুধু ইবাদত-বন্দেগী হচ্ছে ধর্মের ও ইসলামের বিষয়। কেউ আরেকটু অগ্রসর হয়ে আরো কিছু বিষয়, বিবাহ-শাদী ইত্যাদিকেও ইসলামের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। কেউ আরো কিছু বিষয়কে। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, ইসলামের শিক্ষা অনেক বিস্তৃত। সহজে বোঝার জন্য বলতে পারি, ব্যাপক অর্থে জীবনের যত অধ্যায়, ইসলামের শিক্ষারও তত অধ্যায়। জীবনের প্রতিটি অনুচ্ছেদ-পরিচ্ছেদ ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের শামিল। আর জীবন শুধু ইহজীবন নয়, ইহজীবনের পর আছে পরকালের জীবন। এই উভয় জীবন তার পূর্ণ বিস্তৃতি সহকারে ইসলামী শিক্ষার বিষয়বস্তু। তো ইসলামের বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণা অর্জনের এক সহজ উপায় এই যে, বিষয়ভিত্তিক বিন্যাসে সংকলিত হাদীসের কোনো বড় কিতাব হাতে নিন, যেগুলোতে মুহাদ্দিসগণ ইসলামী শিক্ষার অধিকাংশ দিক সম্পর্কে হাদীস ও আছার সংকলন করেছেন। এরপর শুধু তার সূচিপত্রে নজর বুলান। তাহলেও বোঝা যাবে ইসলামী শিক্ষা কত বিস্তৃত।

    যাই হোক, সহীহ মুসলিমের একটি অধ্যায়ের নাম, ‘কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাহ’ সদাচার ও সম্পর্ক রক্ষা। এই অধ্যায়ে চল্লিশ-পঞ্চাশটি বা তারও বেশি শিরোনাম রয়েছে। আর প্রতিটি শিরোনামে রয়েছে এক বা একাধিক হাদীস।

    এই শিরোনামের কাছাকাছি আরেকটি শিরোনাম, ‘কিতাবুল আদব’ আদব-অধ্যায়। হাদীসের যে কোনো কিতাব হাতে নিন। বিশেষ করে কুতুবে সিত্তা; সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী ও সুনানে ইবনে মাজাহ এই সকল কিতাবের যে কোনোটি হাতে নিন, তাতে একটি অধ্যায় পাবেন কিতাবুল আদব বা আদব অধ্যায়। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু কী? এই অধ্যায়ে মুহাদ্দিসগণ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসকল হাদীস সংকলন করেছেন তা মৌলিকভাবে দু’টি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। এক. স্বভাব-চরিত্র। দুই. আচার-আচরণ। তাহলে হাদীসের কিতাব থেকে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও সীরাত থেকে জীবনের যেসব অধ্যায়ে আলো গ্রহণের প্রয়োজন তন্মধ্যে সদাচার, সম্পর্ক রক্ষা, আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদিও শামিল। শুরু থেকেই আমাদের মুহাদ্দিসগণ এ সংক্রান্ত হাদীস ও আছার সংকলন করে এসেছেন।

    ‘কিতাবুল বিররি ওয়াসসিলাহ’য় (সদাচার ও সম্পর্ক রক্ষা অধ্যায়ে) একটি অনুচ্ছেদ আছেÑ

    باب استحباب طلاقة الوجه عند اللقاء

    অর্থাৎ ‘হাসিমুখে সাক্ষাৎ কাম্য ও পছন্দনীয় হওয়া।’ সহীহ মুসলিমের এই অনুচ্ছেদ-শিরোনামগুলো ইমাম মুসলিম রাহ. দেননি; এসব শিরোনাম দিয়েছেন সহীহ মুসলিমের বিখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম নববী রাহ.। এই শিরোনামে হযরত আবু যর গিফারী রা.-এর ঐ হাদীস উল্লিখিত হয়েছে যে, আমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

    لا تحقرن من المعروف شيئاً ولو أن تلقى أخاك بوجه طلق.

    “তুমি কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করো না, যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ।”

    এই হাদীসে একজন মুসলিমের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎকেও ‘মারূফ’ ও ভালো কাজ বলা হয়েছে এবং এই ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবীকে এই বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। তাহলে ধর্মীয় দিক থেকে একজন মুসলিমের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ কাম্য।

    আমরা বিভিন্ন সময় ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মুস্তাহসান এই সকল পরিভাষা শুনে থাকি। শরীয়তের বিভিন্ন বিধানের পর্যায় ও গুরুত্ব বোঝাবার জন্য এই পরিভাষাগুলো ব্যবহৃত হয়। এই কাজটি ফরয, এই কাজটি ওয়াজিব, এই কাজটি সুন্নত, এই কাজটি মুবাহ, ইত্যাদি বিভিন্ন পরিভাষার মাধ্যমে শরীয়তে ঐ বিষয়টির বৈধতা ও কাম্যতার পর্যায় বোঝানো হয়ে থাকে। আমরা এই সকল বিষয়কে ধর্মীয় বিষয় মনে করি। যেমন আমরা বলি, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া ফরয। আমরা মনে করি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ধর্মীয় কাজ। আর ধর্মীয় বিধানের দিক থেকে তা অপরিহার্য। এটা আদায় করতেই হবে, ছাড়া যাবে না। এরকম বিভিন্ন কাজকে আমরা ওয়াজিব বলি, সুন্নত বলি, মুস্তাহাব বলি। এগুলোকে আমরা ধর্মীয় কাজ মনে করি। এই যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাবÑ এগুলোর গণ্ডিও অনেক বিস্তৃত। সচরাচর আমরা যেসকল কাজকে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব মনে করি এর বাইরেও অনেক ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব আছে। আমাদের লেনদেন ও সামাজিক জীবনের অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাবের পর্যায়ভুক্ত। তেমনি স্বভাব-চরিত্র ও আচার-আচরণগত অনেক বিষয় আছে, যা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত-মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।

    ইমাম মুসলিম রাহ. হযরত আবু যর গিফারী রা.-এর যে হাদীসটি এনেছেন এই হাদীসের উপর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নববী রাহ. Ñযিনি অনেক বড় ফকীহ ও মুহাদ্দিস ছিলেনÑ শিরোনাম দিয়েছেনÑ

    استحباب طلاقة الوجه عند اللقاء

    ‘হাসিমুখে সাক্ষাৎ কাম্য ও মুস্তাহাব হওয়া’। তাহলে হাসিমুখে সাক্ষাৎও একটি ধর্মীয় কাজ।

    দেখুন, এটা ইসলামের এক অনুপম বৈশিষ্ট্য। ইসলামী শরীয়ত মানুষের জীবনের প্রতিটি আচরণের উপর ধর্মীয় বিধান আরোপ করেছে। মানব-জীবনের কোনো আচরণ এমন নেই, যে সম্পর্কে ফরয, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ, মাকরূহ, হারাম ইত্যাদি বিধান আরোপিত হয় না।

    তাহলে এটাও জানা গেল যে, ধর্মীয় কাজ আমরা যতটা সীমাবদ্ধ মনে করি ততটা সীমাবদ্ধ নয়। শুধু নফল নামায পড়াই ধর্মীয় কাজ নয়। নিঃসন্দেহে নফল নামায পড়া অনেক বড় ধর্মীয় কাজ। দান-সদকা করা অনেক বড় ধর্মীয় কাজ। একইভাবে একজন মুসলিমের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও একটি ধর্মীয় কাজ। একটি মুস্তাহাব ও পছন্দনীয় আমল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সুন্নাহ। প্রিয় সাহাবী হযরত আবু যর গিফারী রা.-কে তিনি এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন।

    এ হাদীসে মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ হচ্ছে  একটি উদাহরণ। আল্লাহর রাসূল একটি মূলনীতি উল্লেখ করে এই বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে এনেছেন। মূলনীতিটি হচ্ছে

    لا تحقرن من المعروف شيئاً “তুমি কোনো ভালো কাজকেই সামান্য মনে করো না।” এটা করণীয় সম্পর্কে এক বড় মূলনীতি। কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করে ত্যাগ করো না। এটা যদি আমরা ভালোভাবে বুঝি তাহলে অনেক রকমের বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হতে পারি।

    সামান্য মনে করার বিভিন্ন কারণ হতে পারেÑ কাজটি ছোট বলে সামান্য মনে করা, নিজের অবস্থার নিরিখে কাজটিকে সামান্য মনে করা ইত্যাদি। অনেক মানুষের এমন ধারণা আছে যে, আমি তো অনেক গুনাহ করেছি, অনেক পাপ করেছি, আমার সামান্য নেক আমলে আর কী হবে? না, ইসলামী শরীয়ত বলে, তুমি সামান্য নেক আমলকেও সামান্য মনে করো না। হতে পারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই ভালো কাজের বিনিময়ে তোমাকে আরো ভালো কাজ করার তাওফীক দান করবেন এবং হতে পারে এই ভালো কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিবেন। সুতরাং কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করো না।

    ভালো কাজ কাকে বলে? ইবাদত-বন্দেগীও ভালো কাজ। এই মূলনীতি ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমি মসজিদে এসেছি। জামাত আরম্ভ হতে এক মিনিট সময় বাকী আছে। এক মিনিটে দুই রাকাত নামায পড়তে পারব না, কিন্তু আধা পৃষ্ঠা কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতে পারব। দশবার

    سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر.

    বলতে পারব। তো হাদীসের নির্দেশনা হল, এখন যেহেতু দশবার সুবহানাল্লাহ বলার সময় আছে, আধা পৃষ্ঠা কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করার সময় আছে, একে কাজে লাগাই এবং কিছু ভালো কাজ, কিছু ইবাদত করে নিই। যদি এই চেতনা থাকে তাহলে মসজিদে আসার পর অযথা গল্পগুজবে, গীবত-শেকায়েতে সময় নষ্ট হবে না। এই জন্য আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন তাদের সংশ্লিষ্টদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, মসজিদে এসেছ, এক মিনিট সময় আছে, একটি আয়াত তিলাওয়াত করার সময় আছে, কুরআন মাজীদ খুলে একটি আয়াত তিলাওয়াত কর। আল্লাহ পাক এই এক আয়াতের আজর ও সওয়াব তোমাকে দান করবেন। আর আখেরাতে কিয়ামতের দিনে এই এক আয়াতের আজর ও সওয়াবেরও প্রয়োজন হবে।

    এটা তো হল ইবাদত-বন্দেগী। এরকম মুআমালা-লেনদেন। লেনদেনের ক্ষেত্রেও ইচ্ছা করলে ছোট ছোট ভালো কাজ করা যায়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে রহম করুন, যিনি নরম ও কোমলÑ বিক্রি করার সময়, কেনার সময় এবং হক ও প্রাপ্যের তাগাদা করার সময়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২০৭৬

    তো বেচা-কেনার সময় এমন হতে পারে যে, একটি জিনিসের বাজার দর দশ টাকা। বিক্রেতা কিছু বেশি চাচ্ছেন। আমি জানি তিনি বেশি চাচ্ছেন। এখন আমার দিয়ে দিলেও কোনো অসুবিধা হবে না। অন্য কারো হকও নষ্ট হবে না। তাহলে ঠিক আছে তাকে কিছু বেশিই দিলাম। যিনি বিক্রি করছেন, তিনি ক্রেতার অবস্থা দেখে বুঝছেন, বেচারা এক টাকা কম দিতে চাচ্ছে। এক টাকা কম নিলে আমারও কোনো সমস্যা হয় না, আমার পাশের যেসব ব্যবসায়ী তাদেরও সমস্যা হবে না। এটা একটা সামান্য বিষয়। তো ঠিক আছে আমি এক টাকা কমেই তাকে দিয়ে দিলাম।

    আচ্ছা, এতে তো কিছু হলেও স্বার্থ-ত্যাগের ব্যাপার রয়েছে। স্বার্থত্যাগ ছাড়াও হাসিমুখে কথা বলে, ক্রেতার উদ্দিষ্ট দোকানটি দেখিয়ে দিয়ে, ভালো মানের জিনিস সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বা অন্য দোকান থেকে এনে দিয়ে, ভেজাল সম্পর্কে সতর্ক করে এবং আরো নানাভাবে একজন মানুষের উপকার করতে পারি। আমার প্রাপ্য আমি কারো কাছে পাই। আমি বুঝছি যে, এই মুহূর্তে তার দেওয়ার সামর্থ্য নেই, সে আসলেই অভাবী, তাকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়েও দিতে পারি। তার সাথে নম্র-কোমল ব্যবহার করতে পারি। এতে আমার ক্ষতি নেই। তার অনেক উপকার। তো লেনদেনের ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই মানুষের ছোট বড় উপকার করা যেতে পারে।

    আমরা রিকশায় চড়ি, বাসে চড়ি, রিকশাওয়ালা পাঁচ টাকা বেশি চাইল। রিকশার আরোহী যিনি তিনি হয়তো একটা হোটেলে বসে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। আবার পাঁচ হাজারের সাথে পঞ্চাশ টাকা বখশিশও দিয়ে দেন। কিন্তু রিকশাওয়ালা যখন পাঁচ টাকা বেশি চায় তখন তিনি অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। রিকশাওয়ালাকে যদি পাঁচ টাকা বেশি দিয়ে দেই তাহলে কী অসুবিধা? ঐ মানুষটার একটু উপকার হল, আমার কোনো ক্ষতি হল না। এ শুধু মানসিকতার ব্যাপার। ইচ্ছা করলেই আমরা তা করতে পারি। মাঝে মাঝে এমনও তো করতে পারি যে, তোমার ভাড়া বিশ টাকা। নাও, তোমাকে আরো বিশ টাকা বখশিশ দিলাম। আপনি ঐ সময় ঐ রিকশাওয়ালা গরীব মানুষটির ঘর্মাক্ত মুখে আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার যে অভিব্যক্তি দেখতে পাবেন অন্য অনেক স্থানে বিশ হাজার টাকা খরচ করেও তা পাবেন না। একজন গরীব মানুষের হাসিমুখের অনেক মূল্য।

    অনেক সময় দেখা যায়, বাসে হেল্পারের সাথে মারমুখী তর্ক-বিতর্ক। ভালো ভালো শিক্ষিত মানুষের দ্বারাও এটা হয়। এটা এখন এক ধরনের রেওয়াজ হয়ে গেছে। হেল্পারের সাথে, রিকশাওয়ালার সাথে তর্ক-বিতর্ক করা, কষাকষি করাকেই কিছু মানুষ বীরত্ব মনে করেন। আসলে এটা বীরত্ব নয়। বীরত্বের ক্ষেত্রগুলোতে আমরা অনেকেই বীরত্ব প্রদর্শন করতে পারি না। সমাজের দরিদ্র অভাবী অশিক্ষিত মানুষগুলোর সাথেই আমাদের বীরত্ব! এটা ঠিক যে, অশিক্ষিত হওয়ার কারণে ওদের আচরণও সব সময় সভ্য-শালীন হয় না। কিন্তু সে তো অশিক্ষিত। আল্লাহ পাক আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা দিয়েছেন। সভ্যতা ভব্যতা দান করেছেন। আমরা কেন ওদের পর্যায়ে নেমে আসব?

    সামাজিকতার ক্ষেত্রেও অনেক ছোট ছোট ভালো কাজের সুযোগ আমাদের সামনে আসে। এক গুরুত্বপূর্ণ ভালো কাজ, যা আমাদের জন্য খুব সহজ, কিন্তু প্রয়োজনগ্রস্তের জন্য অনেক বড়। তা হচ্ছে, আগন্তুককে পথ চেনানো। একজন মানুষ কোনো এলাকায় নতুন। যে বাসায় তিনি যাবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না। তার জন্য এটা অনেক বড় পেরেশানী। তার অনেক সময় ব্যয় হবে। অনেক পেরেশানী হবে। কিন্তু আমি যদি চিনিয়ে দিই, আমার জন্য খুব সহজ। আমি তো এই এলাকায়ই থাকি, এলাকার গলি কয়টা, বাসা কয়টা, কোন বাসা কোথায়, এগুলো সবই আমার জানা। আমি খুব সহজেই শুধু দু’টি বাক্য ব্যবহার করে, দুই মিনিট সময় ব্যয় করে এই ব্যক্তির সহযোগিতা করতে পারি। আমার জন্য খুবই সহজ। তার অনেক উপকার।

    এভাবে নিজের কোনো কাজের সাথে অরেকজনের একই ধরনের কাজটি করে দেওয়া সহজ। আমি টিউবওয়েল চেপে পানি নিচ্ছি বা অজু করছি, আরেকজন এল, দুই মিনিট সময় ব্যয় করে তার পাত্রটি ভরে দিলাম। দুটো চাপ দিয়ে তার অজু করা সহজ করে দিলাম। বাজার থেকে নিজের জিনিসের সাথে সঙ্গীর বা প্রতিবেশির টুকটাক জিনিসটি এনে দিলাম। এরকম কত কিছুই তো হতে পারে।

    বিখ্যাত মনীষী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছেÑ

    الجنة أقرب إلى أحدكم من شراك نعله، والنار مثل ذلك.

    ‘তোমাদের জুতার ফিতার চেয়েও জান্নাত তোমাদের হাতের নাগালে আর জাহান্নামও তেমনি।’ Ñসহীহ বুখারী, কিতাবুর রিকাক, হাদীস ৬১২৩

    আল্লামা ইবনুল জাওযী রাহ. বলেন, হাদীসের অর্থ, জান্নাতে যাওয়া খুব সোজা। শুধু নিয়ত শুদ্ধ কর আর আল্লাহর হুকুম মান। তেমনি জাহান্নামের যাওয়াও কঠিন নয়। মনমতো চল আর গুনাহ কর।

    ইবনে বাত্তাল রাহ. বলেন, উপরের হাদীসে এই বার্তা আছে যে, আল্লাহর ফরমাবরদারী জান্নাতে পৌঁছায় আর আল্লাহর না-ফরমানী জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরমাবরদারী ও নাফরমানী দুটোই হয় খুব সহজ কাজে।

    উপসংহারে সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন, সুতরাং প্রত্যেকের কর্তব্য, সামান্য ভালো কাজও সামান্য ভেবে ছেড়ে না দেওয়া। আর সামান্য গুনাহতেও সামান্য ভেবে লিপ্ত না হওয়া। কারো তো জানা নেই, কোন ভালো কাজটি তার জন্য আল্লাহর করুণা বয়ে আনবে। তেমনি কোন মন্দ কাজ তাকে আল্লাহর নারাজির শিকার করবে। Ñফতহুল বারী ১১/৩২১

    দেখুন, এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, মানুষ যখন একটি নেক আমল করে আল্লাহ পাক এর বিনিময় এভাবেও দান করেন যে, তার আরেকটি নেক আমলের তাওফীক হয়। সুতরাং ছোট ছোট ভালো কাজের মাধ্যমে বড় বড় ভালো কাজেরও তাওফীক হয়ে যায়।

    আর সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, ইসলামের এই যে এত সব শিক্ষা ও নির্দেশনা এর সারকথা কী? একজন বড় জ্ঞানী ব্যক্তি অনেক কিতাব-পত্রের মাঝে বসে গবেষণা করছেন। এক মাজযুব মানুষ এসে হঠাৎ করে সেই বড় আলিমকে জিজ্ঞাসা করলেনÑ

    هل تعلم ما تقول هذه الكتب؟

    আপনি জানেন কি আপনার চারপাশের এই বই-পত্র আপনাকে কী বলছে? আলিম সাহেব বুঝতে পারলেন, এই মানুষটির মনে বিশেষ কোনো ভাবের উদয় ঘটেছে। তিনি বললেন, আপনিই বলে দিন, এই সকল বই-পত্র আমাকে কী বলছে? ঐ মাজযুব বললেন, এই সকল বই-পত্র আপনাকে বলছেÑ

    كن رجلا صالحا

    ‘তুমি একজন ভালো মানুষ হয়ে যাও’।

    তো আমাদের সকল শিক্ষা-দীক্ষা, সেটা জাগতিক শিক্ষা হোক বা ধর্মীয় শিক্ষা, প্রকৃত অর্থে যা শিক্ষা তার সারকথা হচ্ছে كن رجلا صالحا ‘তুমি একজন ভালো মানুষ হও’।

    রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র হাদীসে এবং তাঁর মোবারক সীরাত ও জীবনাদর্শে আমাদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষাই দান করে গেছেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর সীরাত ও হাদীস থেকে নূর ও আলো গ্রহণের তাওফীক দান করুন। আমীন।

    পৃথিবীর ৯৯.৯৯ শতাংশ প্রজাতি এখনো অনাবিষ্কৃত   

    মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের সেরা হওয়ার যতগুলো কারণ আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে, মানুষই সর্বপ্রথম পৃথিবীর অন্য প্রাজাতির প্রাণীদের অনুসন্ধান করতে শুরু করে। সেই অনুসন্ধান এখনো চলছে। মানুষ গহীন জঙ্গলে, পর্বতে, গুহায়, গভীর সমুদ্রে যেমন খুঁজছে প্রাণের সন্ধান, তেমনি খুঁজছে মহাশূন্যে। কিন্তু পৃথিবীতে ঠিক কত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে সেই বিষয়ে মানুষের জ্ঞান যে অতি ক্ষুদ্র সেটা বেরিয়ে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। পৃথিবীর ৯৯.৯৯ শতাংশ প্রাণীই এখনো অনাবিষ্কৃত! ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে আরও এক ট্রিলিয়ন (এক হাজার কোটি) প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যার কথা বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত জানে না। অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ এখনো আমাদের অজানা। এই গবেষণা যদি সত্যি হয় তাহলে মোট প্রাণী প্রজাতির মাত্র ১ শতাংশ আমরা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পেরেছি। এই গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, গবেষকরা বলেছেন, প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা নির্ণয়ের এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে জেনেটিক সিকুয়েন্সিং টুল বা জিনের ধারাবাহিকতা নির্ণয়ক যন্ত্র দিয়ে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে একটি সম্প্রদায়ের সামগ্রিক প্রজাতি সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। গবেষণার লেখক এবং ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী জে লেনন এবং কেন লোসে অনু-পরমাণু পর্যায়ের ফাঙ্গাই থেকে শুরু করে বড় আকৃতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। ঐ তালিকার মিশ্রণ থেকে স্কেলিং ল বা পরিমাপ আইন ব্যবহার তারা প্রাণী ও উদ্ভিদের মোট প্রজাতির সংখ্যা বের করেছেন। লেনন বলেছেন, ‘জীবাণুদের মধ্যে যে কি পরিমাণ বৈচিত্র্য রয়েছে সেটা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।’ লেনন এবং লোসে আবিষ্কার করেছেন, এই পর্যন্ত যত জীবাণু আবিষ্কৃত হয়েছে তার এক লাখ গুণ বেশি জীবাণু এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আরও ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) জীবাণু নিয়ে গবেষণা করতে হবে। জনপ্রিয় বিজ্ঞান ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইএফএল সাইয়েন্স’কে বিজ্ঞানী লোসে বলেছেন, এই অনাবিষ্কৃত মাইক্রোঅর্গানিজম বা অতি ক্ষুদ্র জীবাণুদের নিয়ে গবেষণা করাটা মোটেই হেলাফেলার বিষয় নয়। কারণ এই গবেষণাই আমাদের নিজেদের উৎপত্তির কারণ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। লোসে বলেন, এটা অনেকটা মহাশূন্যের গালাক্সি কিংবা আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করার মত। মহাবিশ্বের বিশালত্ব নিয়ে অতি বৃহৎ গবেষণা আর ক্ষুদ্র জীবাণুর অতি ক্ষুদ্রতা নিয়ে গবেষণার একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কিন্তু মিলটা হচ্ছে দুটোই অসীম বৈচিত্র্যময়। পৃথিবীতে আমাদের আবির্ভাবের কারণ খুঁজতে হলে এই দুই গবেষণাই জরুরি।

    পবিত্র শবে মিরাজ

    Posted by admin on May 4
    Posted in Uncategorized 

    পবিত্র শবে মিরাজ   

    পবিত্র শবে মিরাজ। মহান আল্লাহ তায়ালার দীদার লাভ এবং সমগ্র সৃষ্টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবলোকনের জন্য আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় মহানবী (সা.)-এর বিশেষ ভ্রমণ বা ঊর্ধ্বগমনই পবিত্র মিরাজের ঘটনা। মহানবী (সা.) এর অসংখ্য মোজেজার মধ্যে পবিত্র মিরাজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোজেজা। মিরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। মক্কা শরীফ হতে বায়তুল মোকাদ্দাস (ফিলিস্তিন) এবং বায়তুল মোকাদ্দাস হতে ঊর্ধ্বে গমন, সপ্তআকাশ ভ্রমণ নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ, বেহেস্ত, দোজখ, দর্শন এবং সিদরাতুল মোনতাহা পর্যন্ত গমন। সিদরাতুল মোনতাহা থেকে রফরফের মাধ্যমে আরশে আযীমে গমন, সেখান থেকে লা-মাকান ভ্রমণ এবং আল্লাহর দীদার ও সান্নিধ্য লাভ। সেখান থেকে পুনরায় পৃথিবীতে (মক্কায়) আগমন। এই বিস্ময়কর সফর বা ভ্রমণকেই এক নামে মিরাজ বলা হয়। মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস, সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মোনতাহা তার ওপরে ৩৬ হাজার বছরের পথ পাড়ি দিয়ে আরশে গমন এবং সেখান থেকে ৭০ হাজার নূরের পর্দা অতিক্রম করে (এক পর্দা হতে অপর পর্দার দূরত্ব ৫শ’ বছরের রাস্তা) একেবারে নির্জনে দীদারে এলাহীতে পৌঁছে সেখানে আল্লাহ তায়ালার সাথে ৯০ হাজার বাক্যবিনিময় করে মহানবী (সা.) পুনরায় মক্কায় ফিরে এসেছিলেন। প্রিয় নবী নুরুন্নবী (সা.)-এর মিরাজ ছিল বাস্তব, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ঘটনা। মিরাজের বাস্তবতার সাক্ষী হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা ও তার পবিত্র কোরআন (সূরা বনী ইসরাইলের ১ম আয়াত ও সূরা নজমের ১ম থেকে ১৭ নং আয়াত) সাক্ষী হচ্ছেন স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর হাদীস শরীফ। এছাড়া ৩০ জন সাহাবী মোতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারাও মিরাজের বাস্তবতা প্রমাণিত তাফসীর গ্রন্থ কানযুল ঈমান। এছাড়া সাক্ষী হচ্ছে স্বয়ং জিব্রাইল (আঃ সা.) ও সকল ফেরেশতা (তাফসীরে জালালাইন শরীফের ২২৯ পৃষ্ঠা), আরো সাক্ষী হলেনÑ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.আ.) ও হযরত মা উম্মেহানী (রা. আনহা) আরো সাক্ষী হচ্ছে বিজ্ঞান। মিরাজের বিষয়ে কিছু কিছু তথাকথিত শিক্ষিত অজ্ঞরা বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিকগণ মাধ্যাকার্ষণ শক্তি বরাতে মিরাজ সম্পর্কে বিতর্ক প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ, শূন্যে অবস্থিত কোন স্থলবস্তুকে পৃথিবী মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা সর্বদা এবং সমভাবে আকর্ষণ করতে পারে না একটা প্রমাণিত সত্য। তাছাড়া পৃথিবী থেকে কোন বস্তুকে ৬.৯০ সেকেন্ডে ৭ মাইল বেগে ঊর্ধ্বে ছুঁড়ে মারলে অথবা পরিচালিত করলে সে বস্তু আর মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। বৈজ্ঞানিকদের হিসাবে ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুটতে পারলে পৃথিবী হতে মুক্তিলাভ সম্ভব। আর এ গতিকে বলা হয় মুক্তগতি। এ মুক্তগতিতেই মহাশূন্য গবেষণা হচ্ছে। এতো গেল জড়পদার্থের কথা, কিন্তু মহানবী (সা.)-এর মেরাজ বিষয়টি আর একটু ভিন্ন। কারণ, মেরাজের বাহন ছিল আল্লাহ তায়ালার কুদরতি বাহন। আর নবীজী (সা.) ছিলেন মানবরূপের নূরদেহী। তার সৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহতায়ালার জাতিনূর থেকে। তাইতো রাসূল (সা.)-এর দেহের কোন ছায়া ছিল না। রাসূল (সা.) নিজেই বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নূর হতে এবং সমুদয় সৃষ্টি আমার নূর হতে (সুবহান আল্লাহ)। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়িদার ১৫ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে আমার নূর ও স্পষ্ট কিতাব। মিরাজের বিষয়ে অক্সিজেন না থাকার যে যুক্তি প্রদর্শন করা হয় সে ক্ষেত্রে সহজ জবাব হচ্ছে, ডিমের ভেতর বা মাতৃগর্ভে একটি সন্তান কিভাবে জীবিত থাকে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে আল্লাহ তায়ালা নমরুদের অগ্নিকু-ে কিভাবে বেহেশতী পরিবেশে জীবিত রেখেছিলেন। মাছের পেটের ভেতর কিভাবে জীবিত রেখেছিলেন হযরত ইউনূস (আ.) কে। হযরত ইশা (আ.) কে আল্লাহ তায়ালা কিভাবে আকাশে নিয়ে রেখেছেন এবং তাঁকে আবার এ ধরণীতে এনে হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর সাথে একত্র করাবেন ইহুদী নির্মূলে এবং ইসলামী বিশ্ব প্রতিষ্ঠায়। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা করেন তাই হয়। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় নেই। নূরের যেমন কোন ওজন নেই তেমনি নূর দেহেরও কোন ওজন নেই। নূর দেহ আধ্যাত্মিকভাবে যখন যেখানে খুশি যেতে পারে। এটাও মেরাজের একটি যুক্তি। তাছাড়া একই বস্তু বা পদার্থ এক এক পরিস্থিতিতে একেক চরিত্র ধারণ করে। কয়লার চরিত্র এক এবং কয়লা থেকে প্রস্তুত হীরকের আর এক চরিত্র বা গুণ। পানি তরল পদার্থ। শক্ত অবস্থানে নিলে পানির বরফ দ্বারা ঘর তৈরি সম্ভব। আর যখন পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয় তখন সে মেঘলোকে উড়ে বেড়ায়। স্রষ্টা ছিলেন গুপ্ত, কিন্তু তিনি প্রকাশ হওয়ার জন্যই নবী করীম (সা.)কে সৃষ্টি করেছিলেন। আবার সমগ্র সৃষ্টিকে পরিপূর্ণরূপে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চেনানোর জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে মিরাজের মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করানো শেষে সামনা-সামনি সাক্ষাৎ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর আল্লাহ তায়ালার দীদার লাভ ঘটেছিল। আধ্যাত্মিক ও ইহলৌকিক বিষয়ে রাসূল (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ এটাই মেরাজের মূল কথা। তাই স্থান, কাল ও গতির ওপর মানুষের যে অপরিসীম শক্তি ও অধিকার আছে, জড়শক্তিকে মানুষ অনায়াসে আয়ত্ত করতে পারে। মানুষের মধ্যে যে বিরাট অতিমানব ঘুমিয়ে আছে মিরাজ একথাই আমাদের বুঝিয়ে দেয়। মিরাজের রাতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.) কে প্রশংসার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছিয়ে ছিলেন। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ, তার মহিমা এবং সৃষ্টির যাবতীয় রহস্য তন্ন তন্ন করে নবীজী (সা.)কে দেখিয়েছেন। এর চেয়ে বড় সম্মান, বড় প্রশংসা এবং বড় যোগ্যতা অন্য কোন পয়গাম্বরের ভাগ্যে জোটেনি। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.)ই আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত পরিচয়দাতা, চরম প্রশংসাকারী। এতেই রাসূল (সা.)-এর ‘আহমদ’ নাম সার্থক হয়েছে। মূলকথা মিরাজ আমাদের লক্ষ্যে ও গন্তব্যে পৌঁছার পথের সন্ধান দেয়। মিরাজের স্মৃতি আমাদের অন্তরে জাগ্রত হলে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব এবং তার নৈকট্য লাভ সম্পর্কে আমাদের ধারণা সুস্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন হয়। তাই সে মহামানবের প্রতি অগণিত দরুদ ও সালাম যিনি আমাদের জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত করে গেছেন।

    জাপান, ফ্রান্স সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকোয়িস হোল্যান্দে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ের পারষ্পরিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

    তারা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের চলমান সামরিকীকরণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, পাশাপাশি স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মতৈক্য প্রকাশ করেন।

    “আমরা কখনোই সন্ত্রাসবাদের ঘৃণ্য কাজকে অনুমতি দেব না” হোল্যান্দে’র সাথে আবে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন “ঘনিষ্ঠ সমন্বয় এবং নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে আমরা এক সাথে কাজ করে যাবো।”

    ইউরোপ ট্যুরের অংশ হিসেবে আবে ফ্রান্স সফর করছেন। মে’র শেষে জাপানে জি৭ গ্রুপের বৈঠকের প্রাক্কালে মত বিনিময়ের উদ্দেশ্যে তার এই সফর। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আলোচনায় অন্যতম প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।