• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

    স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্বমানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।
    জাতির জনকের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও।
    শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার পর প্রথমে প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
    এ সময় তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়।
    শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক,  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
    আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন শওকত আলী, ফারুক খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, শেখ হেলাল উদ্দিন ও আবদুস সোবহান গোলাপ।
    প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো.শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন মাজার প্রাঙ্গণে।
    শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট মাজার কমপ্লেক্সের পরিদর্শন বইতেও স্বাক্ষর করেন।
    মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রেসিডেন্টকে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি উপহার দেন শেখ হাসিনা।
    দিনটি উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ,  আলোচনা সভা এবং গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
    বেলা পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় শিশু সমাবেশ ও আলোচনা সভায় যোগ দেন।
    আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সরকারিভাবেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
    শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করবে
    টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

    গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা :
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করে শিশুদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভেতর একটি আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য জাতির পিতা শিশুকাল থেকেই যেমন নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে, ঠিক সেভাবেই শিশুদের গড়ে তুলতে হবে’।
    শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার সেই জীবনী অনুসরণ করে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকা, কি পেলাম, কি পেলাম না, সেই চিন্তা না করা। কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম সেই চিন্তাটা সবার মাঝে থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০১৭’ উদযাপন উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে আয়োজিত শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
    মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে মালেকা একাডেমি গোপালগঞ্জের পঞ্চম শ্রেণির ছোট্ট শিশু উপমা বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফারিয়াদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাগত বক্তৃতা করে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার এবং দুস্থদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক শ’ জনের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কোমলমতি শিশু-কিশোর, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
    সরকার প্রধান বলেন, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিনটিকেই আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তার চিন্তা-চেতনার ফসলই হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছিÑ একটি ছোট্ট শিশু বাবা-মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কখনো সেই সৌভাগ্য হয়নি, বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার। কারণ, যখন একটু জ্ঞান হয়েছে, তখন থেকেই কারাগারে যেতাম বাবার সঙ্গে দেখা করতে। বাবার দোষ ছিল একটাই, তিনি এ দেশের দুঃখী, দরিদ্র মানুষ যাদের পেটে ভাত নেই, পরনে কাপড় নেই, যাদের থাকার মতো একটু বাসস্থান নেই, যারা রোগে-শোকে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়, এক ফোঁটা ওষুধ পায় নাÑ সেই বঞ্চিত, শোষিত মানুষগুলোর কথা তিনি সবসময় বলতেন। আর যখনই বলতেন, তখনই তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো। কিন্তু তিনি দমে যাননি। এই টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে তার জন্ম। এই এলাকার ধুলোমাটি শরীরে মেখে মাটিতে খেলাধুলা করে, পাশে বয়ে যাওয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তিনি বড় হয়েছেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গ্রামবাংলার মানুষকে চিনতেন, জানতেন, অনেক কাছে থেকে দেখেছেন তাদের সমস্যা। কাজেই তিনি সবসময় নিজেকে একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। আদর্শটা হচ্ছেÑ জনগণের সেবা ও জনকল্যাণে কাজ করা। তাই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর মমত্ববোধ সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন স্কুলে পড়তেন তখনই তার একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যার কাজ ছিল ধানের মৌসুমে গোলায় যখন ধান উঠত সেই ধান বা টাকা-পয়সা জোগাড় করে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের বই কিনে দিয়ে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা, সাহায্য করা। এভাবেই সেই ছোট্টবেলা থেকেই তার দেশসেবার হাতেখড়ি।
    প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার দাদীর কাছ থেকে শোনা কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, তোমার বাবার জন্য প্রতি মাসেই হয়তো বই, নয়তো ছাতা, নয়তো কাপড় কিনতে হতো। কারণ, তার প্রাণপ্রিয় বড় খোকা এগুলো দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দূরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বেলাতেই ঘরে খাবার খেতে চলে আসতেন। খোকার ভাগেরটাই খোকা সবাইকে নিয়ে ভাগ করে খেলেও তার দাদী জানান, আদরের খোকার জন্য সে সময় থেকেই তিনি ভাগে একটু বেশিই রেখে দিতেন। তার খোকাতো কখনো একলা খেতে বসতো না।
    শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত কিছুর পরও আমার দাদী কোনোদিনও এতটুকু রাগ করেননি এবং আমার দাদা-দাদী তাকে এভাবেই মানুষ করে তোলেন। যে কারণে তার মনটা হয়েছিল অনেক বড়, অনেক উদার এবং দেশের প্রতি অনেক দায়িত্ববান।’ বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে দারিদ্র্যের প্রতি অসম্ভব একটি সহানুভ‚তি নিয়ে এভাবেই জাতির পিতা বড় হয়েছিলেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীনতার পর সংবিধান দিয়েছেন এবং মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার সময় খাদ্যাভাব, টাকার অভাব, তারপরও তিনি শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। ২৬ হাজার ৯৬টি স্কুল জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের চাকরি তিনি জাতীয়করণ করে দেন।
    বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ছোট্ট শিশুদের সবসময়ই মনে করতেন, এই শিশুরাই তো একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। কাজেই তাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার অসাধারণ। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের জন্য ১৯৭৪ সালে শিশু অধিকার আইন পাস করেন। আজকে আমরা যাই করছি, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই করে যাচ্ছি। আমরা ৩৬ হাজারের ওপর স্কুল জাতীয়করণ করেছি। আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে প্রাক-প্রাইমারি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য আনন্দ স্কুল করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। যাতে বাবা-মাকে এই বইয়ের বোঝা টানতে না হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এক কোটি ৩০ লাখ বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি, ‘মায়ের হাসি’ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত বৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মায়ের হাতে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। আর যে মা স্কুলে বাচ্চাকে পাঠাবে সেই মাও একটি ভাতা পাচ্ছেন। আমরা সেই ব্যবস্থাটা করে দিচ্ছি যেন একটা শিশুও স্কুলের বাইরে না থাকে।
    প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করার প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বাংলাদেশটাকে ভিক্ষুক মুক্ত করতে চাই। এ জন্য প্রশাসনকে আমরা ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছিÑ প্রতিটি এলাকায় কেউ যেন ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে না পড়ে। সেই সাথে আরেকটি জিনিস আমরা করার পদক্ষেপ নিয়েছিÑ একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। স্কুলে যাবে এবং পড়াশোনা করবে। পড়াশোনার সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। পথশিশু বলে কোনো শিশু থাকবে না, টোকাই বলে কেউ থাকবে না। প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখবে এবং যাতে কাজ করে খেতে পারে, তার বন্দোবস্ত আমরা করে দিচ্ছি। কারণ, সবাই উচ্চশিক্ষা পাবে তা নয়, লেখাপড়ার মধ্যদিয়ে কে কোন ধরনের কাজ করবে, সেই সুযোগও আমরা করে দিতে চাই।
    শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শিশু নির্যাতন ও শিশু পাচার বন্ধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ জন্য বিশেষ আইনও করেছে এবং স্কুলে যেন বাচ্চারা থাকে, সে জন্য স্কুলগুলোতে টিফিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের যে শিশুÑ তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারাই আগামীর দেশকে গড়ে তুলবে এবং জাতির পিতা সবসময় যেটা বলতেনÑ আমি সোনার বাংলা গড়তে চাই। সে জন্য আমার সোনার ছেলে-মেয়ে দরকার।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। আজকে আল্লাহর রহমতে দেশে খাদ্যাভাব নেই। আমরা শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি। প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ে শতভাগ শিশু আজকে বিদ্যালয়মুখী হয়েছে এবং কোনো এলাকায় যদি দেখা যায় শিশুরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথাÑ শিশুদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। শুধু খাদ্য নয়Ñ তার সঙ্গে পুষ্টিরও ব্যবস্থা থাকবে। সেই সাথে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চারও বন্দোবস্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ের মেয়েদের জন্য তার সরকারের উদ্যোগে চালুকৃত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এসবের আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। কারণ, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন কোনো কারণে বিপথে না যায়। তিনি বলেন, এখানে অভিভাবক এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন, আমাদের মসজিদের ইমাম, ওলামা-মাশায়েখগণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন রয়েছেন। আমি একটা অনুরোধ সকলকেই করব যে, বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা আমাদের করতে হয়। কিন্তু আমরা এ দেশের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে সকল ষড়যন্ত্রই মোকাবেলা করতে পারব। তিনি বলেন, আমি সকলের কাছে আহŸান জানাবÑ প্রত্যেক অভিভাবক ও শিক্ষক দেখবেন তাদের ছেলে-মেয়ে কাদের সঙ্গে মিশে। তারা বিপথে যাচ্ছে কি-না। কোনোরকম মাদকাসক্তি বা জঙ্গিবাদের পথে যাচ্ছে কি-না তা দেখবেন। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে অনুপস্থিত কি-না তা শিক্ষকরাও লক্ষ্য রাখবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনেও ভ‚মিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক সমাজের প্রতি আহŸান জানান।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। তাই বলে কারো মধ্যে ধর্মান্ধতা যেন না আসে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে কোনো ধর্মই মানুষকে খুন করার কোনো অধিকার দেয়নি বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, আমরা চাই না আর কোনো ছেলে-মেয়ে এভাবে একই দিনে পিতা-মাতা ও স্বজনহারা হোক। তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ এমনভাবে গড়ে উঠবে, যার স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যখনই ক্ষমতায় এসেছি দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নত-সমৃদ্ধভাবে মানুষ বাঁচার সুযোগ পায়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জাতির পিতা এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আমি তো বলব, সন্তান হিসেবে আমরা তাকে কাছে পাইনি। তার স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি। তবে, আমাদের থেকেও তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন এই বাংলার মানুষকে। এটাই আমি অন্তত বলতে পারি। তিনি দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। আর এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। তাই তার অসমাপ্ত কাজ, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকেটও অবমুক্ত করেন।
    পরে ‘বাঙালি পরশমনি’ শীর্ষক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

     

    মেজবান ও মেহমানের কিছু আদব

    মুহাম্মাদুল্লাহ ইবনে ইয়াকুব

    মেহমানদারি একটি মহৎ গুণ, যা আত্মীয়তার বন্ধনকে মজবুত করে, বন্ধুত্বকে করে সুদৃঢ় এবং সামাজিক সৌহার্দ সৃষ্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। মেহমানদারি মুসলিমের একটি বিশেষ গুণ। সাহাবা-চরিত অধ্যয়ন করলে আমরা মুসলিমের এ গুণের অনন্য নজীর দেখতে পাই। আনসার-মুহাজিরদের মেহমানদারির নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে মেলা ভার। আর তাঁরাই আমাদের পূর্বসূরী।

    মেহমানদারি ছিল আমাদের নবীজীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নবীজীর উপর সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হওয়ার পর যখন তিনি হয়রান-পেরেশান হয়ে খাদিজা রা.-এর কাছে আসলেন তখন খাদিজা রা. তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, আল্লাহ আপনাকে অপদস্থ করবেন না। এরপর নবীজীর যে উত্তম গুণাবলীর উল্লেখ করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল- وَتَقْرِي الضَّيْفَ ‘আপনি তো মেহমানের সমাদর করেন’। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ সুন্নতকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন তাঁর হাতেগড়া সাহাবায়ে কেরাম।

    হাদীস শরীফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টির প্রতি তাকিদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

    مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ.

    আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৬

    অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    لَا خَيْرَ فِيمَنْ لَا يُضِيفُ

    যে মেহমানদারি করে না তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৪১৯

    আরেক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে লক্ষ করে বলেন, …নিশ্চয়ই তোমার উপর তোমার মেহমানের হক রয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৪

    আর মেহমানদারির এ গুণে গুনাম্বিত ছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তাঁর মেহমানদারির বর্ণনা কুরআনে কারীমে উল্লেখিত হয়েছে। আজকের অবসরে প্রথমে কুরআনে বর্ণিত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মেহমানদারির ঘটনা এবং তা থেকে শিক্ষণীয় কিছু আদব আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। সাথে সাথে মেহমান ও মেজবানেরও কিছু আদব আলোচনা করব। যাতে আমরা মেহমানের যথাযথ সমাদর করতে পারি এবং মেহমানদারির ফযীলত লাভ করতে পারি।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

    هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ ضَیْفِ اِبْرٰهِیْمَ الْمُكْرَمِیْنَ،  اِذْ دَخَلُوْا عَلَیْهِ فَقَالُوْا سَلٰمًا  قَالَ سَلٰمٌ  قَوْمٌ مُّنْكَرُوْنَ، فَرَاغَ اِلٰۤی اَهْلِهٖ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِیْنٍ، فَقَرَّبَهٗۤ اِلَیْهِمْ قَالَ اَلَا تَاْكُلُوْنَ، فَاَوْجَسَ مِنْهُمْ خِیْفَةً   قَالُوْا لَا تَخَفْ، وَ بَشَّرُوْهُ بِغُلٰمٍ عَلِیْمٍ.

    (হে রাসূল!) আপনার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত অতিথিদের বৃত্তান্ত পৌঁছেনি! যখন তারা ইবরাহীমের কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম, তখন সেও বলল, সালাম এবং মনে মনে চিন্তা করল যে, এরা তো অপরিচিত লোক। অতপর সে চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটাতাজা (ভুনা) বাছুর নিয়ে আসল, এবং তা সে অতিথিদের সামনে রাখল এবং বলল,আপনারা খাচ্ছেন না যে! এতে তাদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হল। তারা বলল, ভীত হয়ো না। অতপর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল। -সূরা যারিয়াত (৫১) : ২৩-২৭

    সূরা হুদে  আছে-

    فَمَا لَبِثَ اَنْ جَآءَ بِعِجْلٍ حَنِیْذٍ، فَلَمَّا رَاٰۤ اَیْدِیَهُمْ لَا تَصِلُ اِلَیْهِ نَكِرَهُمْ وَ اَوْجَسَ مِنْهُمْ خِیْفَةً …

    অতপর সে (ইবরাহীম আ.) অবিলম্বে তাদের আতিথেয়তার জন্য একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসল। কিন্তু যখন দেখল তাদের হাত সেদিকে (অর্থৎ বাছুরের দিকে) এগুচ্ছে না তখন তাদের ব্যাপারে তার খটকা লাগল এবং তাদের দিক থেকে অন্তরে শংকা বোধ করল। -সূরা হুদ (১১) : ৬৯-৭০

    উপরোক্ত আয়াতগুলোর আলোকে উলামায়ে কেরাম মেহমানদারির কিছু আদব বর্ণনা করেছেন :

    ১. মেজবান নিজেই মেহমানের আপ্যায়ন করবে। কেননা, ইবরাহীম আ. মেহমানের জন্য নিজেই খাবার নিয়ে এসেছেন। অন্য কাউকে আদেশ করেননি। -জিলাউল আফহাম, পৃ. ১৭৪

    তাই পারতপক্ষে নিজেই আপ্যায়নের চেষ্টা করা উচিৎ। আর খাদেম বা অন্য কারো দ্বারা মেহমানদারি করালে নিজেও খাবার আনা নেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

    ২. মেহমান আসার পর দ্রুত মেহমানদারির ব্যবস্থা করা। -তাফসীরে কুরতুবী (৯/৪৩)

    উপস্থিত যা থাকবে তা দিয়েই আপ্যায়ন করা। চাই তা শরবত বা চা-বিস্কুটই হোক। এরপর সাধ্য ও সামর্থ্যরে ভেতরে ভারসাম্যপূর্ণভাবে আরো ভাল কিছু করার চেষ্টা করা। কেননা, প্রথমেই ঘটা করে আপ্যায়নের জন্য মেহমানকে অভুক্ত বসিয়ে রাখা আদবের পরিপন্থী। ইবরাহীম আ.-এর ঘটনা থেকে এই আদবটা পাওয়া যায়। সূরা হুদের আয়াতে বলা হয়েছে فَمَا لَبِثَঅর্থাৎ মেহমান আসার পর অনতিবিলম্বে তিনি ভুনা বাছুর নিয়ে এলেন।

    ৩. আপ্যায়নের জন্য উপস্থিত যা থাকবে তার মধ্যে উত্তম ও উৎকৃষ্ট খাবার দ্বারা আপ্যায়ন করা। হযরত ইবরাহীম আ. অতিথিদের জন্য অল্প বয়সী হৃষ্টপুষ্ট বাছুর ভুনা করে নিয়ে এসেছেন। যা একটি উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু খাবার। মেহমানদারির জন্য তাঁর কাছে যা কিছু ছিল তন্মধ্যে এটিই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট। -ইবনে কাসীর ৪/৩৬৩; রুহুল মাআনী ১২/৯৪

    ৪. মেহমানের সামনে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পরিবেশন করা। যেন খাদ্য স্বল্পতার কারণে তৃপ্তিসহকারে খেতে তার লজ্জাবোধ না হয়। আমরা উপরের ঘটনায় দেখেছি, ইবরাহীম আ. মেহমানের সামনে ভুনাকরা গোটা একটি বাছুর পেশ করেছেন। অথচ এক বর্ণনা মতে জানা যায়, মেহমান ছিলেন শুধু তিন জন। -রুহুল মাআনী ১২/৯৩; কুরতুবী ৯/৪২

    ৫. মেহমানকে যেখানে বসানো হয়েছে সম্ভব হলে খাবার সেখানেই পেশ করার চেষ্টা করা। ইবরাহীম আ.-এর ঘটনা থেকে আমরা এই আদবটা পাই। কেননা তাঁর মেহমানদারির বর্ণনায় আছে- فَقَرَّبَهٗۤ اِلَیْهِمْ ভুনা বাছুরটি তিনি তাদের কাছে নিয়ে এলেন।

    তবে প্রয়োজন হলে বা বিশেষ কারণ থাকলে এর ব্যতিক্রম করতেও দোষ নেই।

    ৬. মেহমানকে খাবার শুরু করার আবেদন করতে গিয়ে আদেশ বাচক শব্দ ব্যবহার না করা। বরং কোমল, মার্জিত ও নম্র ভাষা ব্যবহার করা। (গিযাউল আলবাব ২/১১৬) যেমন, ‘মনে হয় খাবার শুরু করা যায়’, ‘খাবার শুরু করলে কেমন হয়’, ‘খাবারের পর্বটা সেরে ফেলা যায় না!’ ইত্যাদি।

    খাবার পরিবেশনের পর ইবরাহীম আ. যখন দেখলেন, তারা খাচ্ছেন না তখন কোমল ভাষায় বললেন, اَلَا تَاْكُلُوْنَ আপনারা খাচ্ছেন না যে! -ইবনে কাসীর ৪/৩৬৩

    ৭. খাবার বা নাস্তা দিব কি না- এমন প্রশ্ন মেহমানকে না করাই ভালো। কোনো কোনো সময় মেহমানকে তা সংকোচ ও দ্বিধায় ফেলে দেয়। যেমন ইবরাহীম আ. মেহমানদের জিজ্ঞেস করেননি; বরং অনতিবিলম্বে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।

    তদ্রূপ খাবার নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে মেহমানের সামনে থেকে এমনভাবে উঠে আসা ভালো, যেন সে বিষয়টা টের না পায়। কারণ মেযবান খাবার নিয়ে আসতে যাচ্ছে- এই ভাব প্রকাশ মেহমানের জন্য চাপ ও সংকোচের কারণ হতে পারে। ইবরাহীম আ.-এর মেহমানদারির ঘটনায় খাবার আনতে যাওয়ার বিষয়টি বিবৃত হয়েছে এভাবে- فَرَاغَ اِلٰۤی اَهْلِهٖ। এ বাক্যে رَاغَ শব্দটি روغانক্রিয়ামূল থেকে এসেছে, যার অর্থ, চুপিসারে বা অগোচরে গমন। অর্থাৎ তিনি চুপিসারে মেহমানের সামনে থেকে উঠে স্ত্রীর কাছে গেলেন। -ইবনে কাসীর ৪/৩৬৩

    তবে যে ক্ষেত্রে মেহমানের সংকোচবোধের সম্ভাবনা থাকবে না, সেক্ষেত্রে জিজ্ঞেস করেও খাবার আনা যেতে পারে।

    ৮. খাবার শুধু পরিবেশন করার দ্বারাই মেযবানের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং মেহমান খাচ্ছেন কি না- সেদিক লক্ষ্য রাখাও কর্তব্য। তবে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেহমানের মুখ ও পাতের দিকে তাকিয়ে থাকবে না, এতে তার অস্বস্তি বোধ হতে পারে। বরং উড়াল দৃষ্টিতে লক্ষ রাখবে। এই আদবটাও উক্ত ঘটনা থেকে বুঝা যায়। -তাফসীরে কুরতাবী ৯/৪৯; মা’আরিফুল কুরআন ৪/৬৪৯

    এমনিভাবে খাওয়ার সময় কোন্ মেহমানের কী দরকার- সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা কর্তব্য। খাবার বা পানীয় না পেয়ে মেহমানকে যেন অপেক্ষা কিংবা খাবার সমাপ্ত করে ফেলতে না হয়। অনেক সময় এটা মেহমানের জন্য বিব্রতবোধের কারণ হয়।

    কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকেই আমরা মেহমানদারির আটটি আদব জানতে পারলাম। ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, ইবরাহীম আ.-এর ঘটনাসংবলিত উক্ত আয়াতে মেহমানদারির যে আদবগুলো এসেছে তা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট আদব। -জিলাউল আফহাম, পৃ. ১৭৫

    এ ছাড়াও মেহমানদারির আরো কিছু আদব রয়েছে। এখানে তার কয়েকটি পেশ করা হলো :

    ৯. মেহমান একাধিক হলে যিনি বয়স, ইলম বা মর্যাদায় বড় তার থেকে পরিবেশন শুরু করা। এরপর তাঁর ডানে যে থাকবে তাকে দেওয়া। তবে যদি উপস্থিত সবাই সমপর্যায়ের বা কাছাকাছি পর্যায়ের হয় তাহলে পরিবেশকের ডান পাশ থেকে শুরু করবে। -মিন আদাবিল ইসলাম পৃ. ৬১

    ১০. একাধিক মেহমানকে দাওয়াত দেওয়া হলে খাবারের সময় যদি দু’একজন অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাদের জন্য  এত বেশি অপেক্ষা না করা, যা উপস্থিত মেহমানদের জন্য বিরক্তিকর ও অসহনীয় হয়ে পড়ে।

    ১১. মেহমানের সাথে দস্তরখানে অংশগ্রহণের চেষ্টা করা। তবে কোনো কারণবশত না পারলে দোষ নেই।

    ১২. আপ্যয়নের ক্ষেত্রে বাহুল্য না করে সামর্থ্যরে মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণভাবে মেহমানের সমাদর করা। -ফিকহুল আখলাক ২/৩৪৬;মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৭০

    হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেছেন, ইসলামের সরলতা ও অনাড়ম্বরতার উপর আমাদের থাকা উচিত। মেহমানের জন্য কোনো আয়োজন করা হলে সেটা ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া চাই। -ইসলাহুল মুসলিমিন, পৃ. ১২৬

    ১৩. মেহমানের আগমনে বিরক্ত না হওয়া। বরং সওয়াবের আশা করে ও তার হক আদায়ের উদ্দেশ্যে যথাসাধ্য সমাদর করার চেষ্টা করা। কেননা, মেহমান যা কিছু গ্রহণ করেন সেটা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত রিযক। আমাদের তো এটাকে সৌভাগ্য মনে করা উচিত যে, আল্লাহর রিযক তারই বান্দা পর্যন্ত পৌঁছতে তিনি আমার মতো এক নগণ্যকে সামান্য শ্রম ব্যয়ের সুযোগ দিয়েছেন। যে শ্রমের বিনিময়ে তিনি আমাকে অশেষ নেকী দান করবেন। তাছাড়া মেহমানের সমাদর করা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক বড় সুন্নত। মুমিন তো তাঁর প্রিয় নবীর সুন্নত সৌভাগ্য মনে করে পালন করবে।

    ১৪. নামাযের সময় হলে কেবলার দিক জানিয়ে দেয়া। তদ্রূপ অযুর জায়গা ও হাম্মাম চিনিয়ে দেয়া। -ইহইয়াউল উলূম ২/১৫

    ১৫. অযুর পর হাত-মুখ মোছার জন্য মেহমানকে নিজেদের ব্যবহৃত গামছা বা তোয়ালে না দেয়া। বরং তার জন্য আলাদা পরিচ্ছন্ন তোয়ালের ব্যবস্থা করা।  -মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৭১

    কারণ, নিজেদের ব্যবহৃত গামছা অনেক সময় একটু অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে। তাছাড়া অপরের গামছা/তোয়ালে ব্যবহার করতে অনেকের রুচিতে বাঁধে।

    ১৬. মেহমানের জন্য যে হাম্মাম ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে যেন এমন কোনো কাপড়-চোপড় না থাকে যা দৃষ্টিকটু। -প্রাগুক্ত

    ১৭. ঘরের মানুষের আওয়াজ ও শব্দের কারণে মেহমানের নিদ্রা ও বিশ্রামের যেন ব্যঘাত না ঘটে সেদিকে পূর্ণ লক্ষ রাখা। -প্রাগুক্ত

    ১৮. মেহমানের খাতিরে ভাল পোষাক-পরিচ্ছেদ পরে পরিপাটি থাকা এবং সুন্দর বেশভূষা অবলম্বনের চেষ্টা করা। তবে অতিরঞ্জন না হয় সেটাও লক্ষণীয়। -প্রাগুক্ত

    ১৯. মেহমান যেই হোক পূর্ণ যত্ন ও রুচিশীলতার সাথে মেহমানদারি কাম্য। মেহমান পরিচিত বা ঘনিষ্ঠজন হওয়ার কারণে তার সমাদরের ক্ষেত্রে ত্রুটি না করা। -প্রাগুক্ত

    ২০. মেহমানের ব্যক্তিত্ব, অবস্থা, পরিবেশ ও স্থান কাল বুঝে তার সাথে কিছু সরস কথাবার্তা বলা।

    ২১. কারো কোনো অসংলগ্ন কথা, কাজ কিংবা অন্য কোনো কারণে মেহমানের সামনেই তার উপর রেগে যাওয়া উচিত নয়। হাঁ,তখনই বলা আবশ্যক হলে আড়ালে গিয়ে বলবে। -গিযাউল আলবাব ২/১১৭

    তেমনি ঘরওয়ালাদের সাথেও কোনো বিষয় নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করবে না; এতে মেহমান ভাবতে পারেন আমার আগমনে হয়তো ঘরওয়ালা বিরক্ত।

    ২২. মেহমানের সামনে সহাস্যবদনে থাকার চেষ্টা করা। -প্রাগুক্ত

    ২৩. খাবারের পর্ব পরিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ার আগেই দস্তরখান না উঠানো।

    ২৪. মেহমান বিদায়ের সময় দরজা পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দেওয়া এবং সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে না দেওয়া; বরং খানিকটা দূরে চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

    মেহমানের আদব

    মেযবানের মতো মেহমানেরও কিছু করণীয় ও আদব রয়েছে। নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হল-

    ১. কারো বাড়িতে প্রবেশের সময় দৃষ্টি অবনত রাখা, যেন ঘরের কোনো নারীর প্রতি দৃষ্টি না পড়ে যায়। -মিন আদাবিল ইসলাম,পৃ. ৩৪

    ২. (পরিস্থিতি বিবেচনা করা) মেযবান বসতে বলার আগে না বসা। তদ্রূপ নিজের থেকে কোনো জায়গায় বসে না পড়া। বরং মেযবান যেখানে বসতে বলবেন সেখানে বসবে। -মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৩৫

    ৩. যে ঘরে বা যে দিকে নারীরা অবস্থান করে সেদিকে দৃষ্টিপাত না করা।

    ৪. মেযবানের কাছে এত বেশি সময় অবস্থান না করা, যা তার জন্য কষ্টের কারণ হয়। -মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৩৯

    ৫. মেযবানের কাছে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের আবদার না করা। হাঁ, যদি তার সাথে উষ্ণ সম্পর্ক হয় এবং এই আবদারে তিনি খুশি হন তাহলে দোষ নেই।

    ৬. খাবার পর্ব শেষ হওয়ার পর বেশি কথাবার্তা বা আলাপচারিতায় লিপ্ত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব মেযবানের কাছ থেকে বিদায় নেয়া। -আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ৩/১৭৭

    ৭. মেজবানের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করা। এত বেশিদিন অবস্থান না করা, যে কারণে মেজবানের কষ্ট হয় এবং মেহমানকে খাওয়ানোর মতো ভালো কিছু তার কাছে থাকে না ।

    হাদীস শরীফে এসেছে,  কোনো মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের কাছে এত বেশিদিন অবস্থান করে যে তাকে গুনাহে লিপ্ত করে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এটা কীভাবে? নবীজী বললেন, মেহমান এতদিন অবস্থান করল যে তাকে খাওয়ানোর মত কিছু মেজবানের কাছে অবশিষ্ট থাকল না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮

    ৮. মেহমানের সাথে যদি অনিমন্ত্রিত কেউ যুক্ত হয় তাহলে মেযবানের কাছে তার ব্যাপারে অনুমতি নেয়া।

    ৯. মেযবানের জন্য দুআ করা। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন দুআ বর্ণিত হয়েছে।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আব্দুল্লাহ ইবনে বুস্র রা.-এর বাবার আতিথ্য গ্রহণের পর তার জন্য নি¤েœাক্ত দুআ করেছিলেন-

    اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيْ مَا رَزَقْتَهُمْ، وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ.

    হে আল্লাহ! আপনি তাদের রিযিকে বরকত দান করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি রহম করুন। -সহীহ মুসলিম,হাদীস ২০৪২

    তেমনি কারো কাছে ইফতার করলে বা আতিথ্য গ্রহণ করলে নিম্নের দুআও পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সা‘দ ইবনে উবাদার কাছে এলে তিনি তার সামনে খাবার পেশ করলেন। খাবার শেষে নবীজী দুআ করলেন-

    أفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ.

    রোজাদারেরা তোমাদের কাছে ইফতার করুন, নেক লোকেরা তোমার আতিথ্য গ্রহণ করুন এবং ফিরিশতারা তোমাদের জন্য রহমতের দুআ করুন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২১৭৭

    অন্য বর্ণনায় দুআটি এভাবে আছে-

    أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ  الْمَلَائِكَةُ، وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ

    -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৪০৬

    তেমনিভাবে যে পান করালো বা আহার করালো তার জন্য নিম্নোক্ত শব্দমালায় দুআ করা যেতে পারে-

    اَللّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أطْعَمَنِيْ، وَاسْقِ مَنْ سَقَانِيْ.

    হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল আপনি তাকে আহার দান করুন এবং যে আমাকে পান করাল তাকে আপনি পান করান। -সহীহ মুসলিম ২/২৮৪, হাদীস ২০৫৫ (ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপটে)

    এগুলোর সাথে সাথে বা এ সকল আরবী দুআ জানা না থাকলে নিজ ভাষায়ও মেজবানের জন্য দুআ করা যায়।

    ১০. মেহমানদারিতে কোনো অসঙ্গতি বা ত্রুটি দেখা দিলে কোনো মন্তব্য না করা এবং মনক্ষুন্ন না হওয়া; বরং হাসিমুখে বিদায় নেওয়া।

    মেহমান-মেযবানের কিছু আদব বর্ণনা করার পর মেহমানদারির অনন্য নজীর ও মেহমানদারির ফযীলত বিষয়ে এক সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করে শেষ করছি।

    নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোনো মেহমান আসলে তিনি আগে নিজে তার মেহমানদারির চেষ্টা করতেন অন্যথায় সাহাবীদের তার মেহমানদারির জন্য উৎসাহিত করতেন। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার নবীজীর কাছে এক মেহমান এল। নবীজী তাঁর স্ত্রীগণের ঘরে খোঁজ নিলেন- মেহমানদারির মত কিছু আছে কি না। কিন্তু জবাব এল- ঘরে পানি ছাড়া আর কোনো খাবার নেই। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ তার মেহমানদারি করতে পারো? এক আনসারী সাহাবী  বললেন, আমি আছি ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি মেহমানকে নিজের বাসায় নিয়ে গেলেন। স্ত্রীকে বললেন, নবীজীর মেহমানের কদর কর। স্ত্রী বললেন, আমাদের কাছে বাচ্চাদের খাওয়ার পরিমাণ খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। সাহাবী বললেন, খাবার প্রস্তুত কর এবং বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। আর আমরা খাবার শুরু করার সময় তুমি বাতি ঠিক করার বাহানা করে বাতি নিভিয়ে দিবে। স্ত্রী তাই করলেন। খাবারের সময় অন্ধকারে তারা এমন ভাব করলেন যেন মেহমানের সাথে তারাও খাচ্ছেন। মেহমান তৃপ্তিভরে খেলেন আর তারা উপোস রাত কাটিয়ে দিলেন। তাদের এ কাজে আল্লাহ খুশি হলেন। সকালে যখন সাহাবী নবীজীর কাছে আসলেন, তিনি বললেন, গত রাতে আল্লাহ তোমাদের প্রতি হেসেছেন এবং তোমাদের উক্ত কাজে খুব খুশি হয়েছেন। আয়াত নাযীল হল-

    وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ …

    এবং তারা অন্যদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম। [সূরা হাশর (৫৯) : ৯] -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭৯৮

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মেহমানদারির উসূল ও আদবের দিকে লক্ষ রেখে মেহমানের হক আদায় করা এবং আদর্শ মেহমান হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    চীনকে টপকিয়ে এশিয়ায় সেরা সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়

    চীনকে পেছনে ফেলে শিক্ষায় সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে গেলো ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুর। গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর (এনইউএস।
    টাইমস হায়ার এডুকেশন সাময়িকী তাদের এবছরের তালিকায় সিঙ্গাপুরের এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক নাম্বারে আসন দিয়েছে। যেখানে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নামী ও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এর পরের অবস্থানে রয়েছে।
    টাইমস সাময়িকীর সম্পাদক ফিল বেটি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের এ বিশ্ববিদ্যালয়টি মহাদেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাছাড়া সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পাওয়া এশিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মার্কিন ও গ্রেট ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা এলিটদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।’
    প্রভাবশালী লন্ডন ভিত্তিক এই নির্দেশিকাটি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৩টি কর্মক্ষমতা সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কর্মক্ষমতা এবং শিক্ষণ পরিবেশ নিয়ে বিশ্লেষণ পরবর্তী এই তালিকা প্রণয়ন করেছে।
    তবে প্রথম স্থান হারালেও এ তালিকায় পরের দুটি স্থানেই রয়েছে চীন। দ্বিতীয় হওয়া পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ও তৃতীয় আসন লাভকারী সিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয় দুটি দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত। তার পেছনে আবারো ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৌড়ে রয়েছে সিঙ্গাপুরের অন্য আরেকটি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান নানইয়াং টেকনোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি।
    তবে এ তালিকার সংক্ষিপ্ত অংশে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাই হয়নি। সিএনএন।

    পয়লা বৈশাখ : এখন যেমন

    মিরপুর বার নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে কালশি সাংবাদিক আবাসিক এলাকায় যাচ্ছি। রিকশায় বসে। ছোট্ট একটা প্রয়োজনে একটা দোকানের সামনে থামলাম। আমার সামনে দুজন লোক দাঁড়িয়ে দোকানদারের সঙ্গে কথা বলছেন। পেছন থেকে এক নজর দেখে একজনকে মনে হল, শীর্ণকায় হিন্দু বৃদ্ধ। পাঞ্জাবি, ধূতি পরা। কাছে যেতেই দেখি, সে আসলে এক যুবক। শহুরে হিন্দু যুবকরা এখন আর ধূতি পরে না বলেই এ দৃশ্য দেখে কিছুটা অবাক হলাম। আর সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষ্য করলাম, তার গায়ের ধূতিটা আসলে ধূতি নয়, ‘ধূতি-পায়জামা’। ধূতির মতোই কুচি, ধূতির মতোই স্ফীত। শুধু ধরে রাখার জন্য মাঝে একটা সেলাই। কথায় ও আচরণে বুঝতে পারলাম, ছেলেটা মুসলিম। ঘটনাটি দু’ বছর আগের এক পয়লা বৈশাখ সন্ধ্যার।

    দুই.

    আর কদিন পরই পয়লা বৈশাখ। সৌরবর্ষ কিংবা বাংলা বর্ষের হিসেবে নববর্ষ। শুরুতে গ্রাম বাংলা ও মফস্বলের হালখাতার এ দিনটি এখন রাজধানীসহ নগরজীবনে বিরাট আয়োজন করে পালিত হয়। চিত্রটি জাঁকালো হয়ে উঠেছে গত দুই-তিন দশকে। পান্তা-ইলিশ, মেলা, চড়ক, বিশেষ রঙের শাড়ি আর বিশেষ ধরনের পাজামা-পাঞ্জাবি পরা মানুষের থৈ থৈ স্রোত নামে রাস্তায়। একদিনের জন্য বাঙ্গালি সাজার একটা ধুম পড়ে যায়। দেখা যায়, বাঙ্গালি সাজার প্রতিযোগিতায় ছুটতে গিয়ে পোশাক-আশাক থেকে নিয়ে জীবন ও আচারের বহু ক্ষেত্রে ভিন্ন সম্প্রদায় ও প্রতিবেশী ধর্মের সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করতেও পিছপা হয় না নতুন প্রজন্মের মুসলিম নর-নারী। এ যেন এ প্রজন্মের দেশ ও জাতিপ্রেমের নতুন মহড়া। বাংলা সালের শেষ মাস চৈত্রের শেষ দিনে চৈত্র সংক্রান্তি থেকে নিয়ে নববর্ষ উদযাপনের ধাপে ধাপে ভিন্ন ধর্মের প্রতীক ও বিশ্বাস জড়িত আচরণে নিজেদের তারা সঁপে দিচ্ছে। বুঝে না বুঝে।

    তিন.

    পয়লা বৈশাখে আগে গ্রামগঞ্জে ও মফস্বলে ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান হত। মুসলিম ব্যবসায়ীরা নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু করে দোকানে দুআ করাতেন। হিন্দুরা পূজা-আর্চনা করে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালাতেন। বছরের প্রথম দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজ শুরুর একটা আনুষ্ঠানিকতা ঘোষিত হত, যার যার রীতিতে। কোনো কোনো গ্রামে হাতে বানানো জিনিসপত্র ও তৈজসপাতি বেচাকেনার হাট বসত। কেউ বেচতে যেত-কেউ কিনতে। নগরজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে তো দূরের কথা, সব গ্রামেও এ দিনটি নিয়ে তেমন কোনো মাতামাতি হতে দেখা যেত না। প্রধানত ব্যবসা ও দোকানদারির হিসাব শুরু-শেষের সঙ্গেই এর আনুষ্ঠানিকতা আবদ্ধ থাকত। কিন্তু গত দুই দশকে হঠাৎ-   বিস্তৃত গণমাধ্যম ও মুসলিম জাতিসত্তার সঙ্গে বৈরিতাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এ দিনটি ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতির ঠিকানা’ বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। নগরজীবনে হাঁসফাঁস করা মানুষের একটি অংশ উৎসবের গন্ধ পেয়ে এ দিনটিতে পথে নামতে শুরু করেছে।

    পরাণুকরণবাদী সুশীল, সংস্কৃতিকর্মী ও শেকড়ভুলা বাজারবাদী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের সুবাদে এ মিথ্যাটাই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যে, বাংলা বছরের পয়লা দিনটিকে উৎসব করে কাটাতে হবে হিন্দুয়ানী তথাকথিত বাঙ্গালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গগুলো আপন করে নিয়ে। এটাই বাঙ্গালি জাতির আবহমান কালের সংস্কৃতি। মুসলিম জাতিত্ব ও ইসলামের বৈশিষ্ট্য, বিধিবিধান ও রুচিবোধের কোনো প্রশ্ন এখানে উঠানো যাবে না। এখন ‘বাঙ্গালি’ নাম দিলেই হলো, কোনো আচরণ ও অনুষ্ঠানে নিজেদের সঁপে দিতে ঢাকা মহানগরীর একটি অংশের মানুষের আর কোনো আপত্তি নেই।

    চার.

    আরেকটি বিষয় এখানে বড়। সেটি হচ্ছে, অনুষ্ঠান ও উৎসব-প্রবণতা এবং এর সঙ্গে হুজুগ। এই উপাদানটা যেখানে যেখানে পাওয়া যায় সেখানেও এদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকাও থাকে বাতাস দেওয়া। এতে ষোলকলা পুরা হয়। গত দুই দশক ধরে এ অবস্থাটাই দেখা যাচ্ছে। শুধু পয়লা বৈশাখের মাতামাতির মধ্যে  চোখ আটকে রাখলে বিষয়টা বুঝতে সমস্যা হবে। একটু অন্যদিকেও চোখ ফেরানো যাক।

    এদেশে কি ৩১ ডিসেম্বর রাত বারটার পর কোনো অনুষ্ঠানের রেওয়াজ ছিল বিশ বছর আগে? ছিল না। মিডিয়াও সেটি নিয়ে কোনো ভূমিকা তখন রাখেনি। হঠাৎ মহানগরীর কোনো কোনো অভিজাত এলাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের খবর প্রচার হল। মিডিয়া দিল আরও বাতাস। শুরু হল প্রস্ত্ততি। বিশ্ব বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে সারাদেশে এ রাতটি সরগরম হয়ে উঠল। মনে হতে থাকল এটাই এ জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি। ইদানীং অবশ্য উন্মাদনা বেড়ে যাওয়ায় কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

    চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি ‘তথাকথিত’ ভালবাসা দিবসের কথা কি এ দেশে কেউ জানত? জানত না এবং কেউ ঘুণাক্ষরেও এ দিনটি নিয়ে কিছু ভাবত না। মিডিয়া বাতাস দিল। তরুণ-তরুণীদের গায়ে আগুন লেগে গেল। দেশব্যাপী এটা এমনভাবে পালিত হতে লাগল যে, মনে হতেই পারে-এটা এদেশের আবহমান কালের একটি সংস্কৃতি। এখন খুবই লজ্জা লাগে, এ দিনটি উপলক্ষে যখন অপরাপর বহু জিনিসের সঙ্গে বিশেষ ধরনের কনডমের বিজ্ঞাপনও পত্রিকার পাতায় চোখে পড়ে।

    ফুটবল বিশ্বকাপ আর ক্রিকেট বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। এমন হুজুগ আর মাতোয়ারা অবস্থা এদেশে ইদানীং তৈরি হয় যে, মনে হতে থাকে দেশবাসীর সামনে আর কোনো সমস্যাই নেই। ভাবা ও করার মতো কোনো কাজই বাকি নেই। এটাই সবার আচার-অনুষ্ঠান। এটাই সবার ধ্যান-জ্ঞান। তাহলে এসবও কি এদেশের সংস্কৃতির অঙ্গ?

    পাঁচ.

    হুজুগ পেয়ে গেলেই যে কোনো আচার-অনুষ্ঠান ও ইস্যুকে জোর করে সার্বজনীনতা দেওয়া বাংলাদেশের প্রভাবশালী মিডিয়ার একটি অভ্যাস হয়ে গেছে। এ কারণে তারা এসব হুজুগে ইস্যুকে দেশপ্রেম ও জাতির প্রতি বিশ্বস্ততার মাপকাঠি বানিয়ে ছাড়ে। পয়লা বৈশাখের কথাই বলুন, ক্রিকেট বিশ্বকাপের কথাই বলুন, এখানে কেউ স্রোতের উল্টা কিংবা নিস্পৃহ থাকলে তাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হতে থাকে। ভাবখানা এমন যে, এই স্রোতে ভাসলেই তিনি দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, উল্টোটা হলে তার মাঝে দেশপ্রেম নেই, সে দেশের শত্রু।

    সৈয়দ আবুল মকসুদ একজন সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। ১৪১৩ সালের দৈনিক সমকাল-এর ১ বৈশাখের ক্রোড়পত্রে তার ছাপা হওয়া একটি লেখার অংশ উদ্ধৃত করছি।

    ‘আমি আমার নিজের শৈশব ও কৈশোরের পহেলা বৈশাখকে যেভাবে দেখেছি, আজকের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে সেই নববর্ষ উৎসবের কোনো মিলই নেই। তখনকার নববর্ষের উৎসবের মধ্যে ছিল অকৃত্রিম প্রাণের আমেজ, তাতে ন্যূনতম কৃত্রিমতা ছিল না, আয়োজনে বিন্দুমাত্র মেকি বা লোক দেখানো বিষয় ছিল না। যা করা হত, তা হতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে, প্রাণের আনন্দে ও অকৃত্রিম জাতীয়তাবাদী আবেগে।

    আজ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? পহেলা বৈশাখের সকালে ঘটা করে রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে খুব বিত্তবান ঘরের মানুষ মাটির শানকিতে পান্তাভাত, খাট্টা ডাল, ইলিশ মাছের ঝোল, মুড়িঘণ্ট, খেজুর গুড়ের ক্ষীর হাপুস-হুপুস করে খাচ্ছে। এই যে রেওয়াজ শুরু হয়েছে, এটি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর প্রবর্তিত আয়োজন। এ জাতীয় জিনিস পহেলা বৈশাখে নববর্ষের চিরকালের চেতনা বিরোধী। কারণ এ সমাজের পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ খুবই দরিদ্র, তারা ক্ষুধার জ্বালায় পান্তাভাত, পঁচাডাল ও অখাদ্য জাতীয় জিনিস যা পায় প্রতিদিন তা-ই খায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান্তাভাত আর ইলিশের তরকারি, মুড়িঘণ্ট যারা খায়, তারা বস্ত্তত এক ধরনের সাংস্কৃতিক অপরাধ করে। এসব আচরণের মাধ্যমে তারা আসলে দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষকে পরিহাস করে।’

    পয়লা বৈশাখের বর্তমান রেওয়াজ ও মাতামাতি সম্পর্কে এ কথাগুলো কোনো মাওলানা সাহেবের বলা নয়। কথাগুলো যিনি লিখেছেন, তিনি কথিত বাঙ্গালি সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম মনে করেন। তারপরও সত্য স্বীকার করে তিনি কথাগুলো লিখতে বাধ্য হয়েছেন।

    ছয়.

    পয়লা বৈশাখের কথা আসলেই অবধারিতভাবে আসে সংস্কৃতির কথা। স্থানীয় সংস্কৃতির সূত্র ধরে জোরটা দেওয়া হয় ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতির’ ওপর। আর বাঙ্গালি সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে সামনে আনা হয় হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতীক ও আচার-অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে উপরের সূত্র ও নীতি অনুসরণ করে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা -না করার প্রস্ত্ততিকে চিহ্নিত করা হয় জাতীয়তার মিত্রতা ও শত্রুতা হিসেবে। এভাবে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরার জন্য একটা প্রবল ও গভীর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা হয় এদেশের সব স্তরের মুসলিম নাগরিকদের ওপর।

    প্রশ্ন হচ্ছে, এক্ষেত্রে আসলে মুসলমানদের করণীয় কী? স্থানীয় সংস্কৃতির নামে অপর ধর্মের বৈশিষ্ট্য ও প্রতীকসহ যে কোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ কি ইসলামে আছে? ইসলাম যে অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে, সেখানকার ভালোমন্দ সব সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার অনুমতি কি তার অনুসারীদের দেয়? হাদীস শরীফের ভাষ্য, সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং ইসলাম বিস্তারের দীর্ঘ হাজার বছরের ইতিহাস থেকে যে সত্যটি ফুটে ওঠে সেটি হচ্ছে, বিশ্বাস, ইবাদত ও জীবনাচারের মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ইসলাম যে পয়গাম নিয়ে এসেছে সে ব্যাপারে ইসলাম আপসহীন। জীবনাচারের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তার সুনীতি ও শুদ্ধির দীক্ষা দিয়ে কখনো কখনো সেসবের অনুষঙ্গগুলো স্থানীয় সংস্কৃতির ওপর ছেড়ে দেয়। মৌলিক বিষয়ে মিশে যাওয়া ও একাত্ম হওয়ার নীতি ইসলামে থাকতে পারে না। কারণ দূষণ দূর করে শুদ্ধতা আনাই ইসলামের কাজ। এ কারণেই অপর ধর্মের সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ও অপর ধর্মের পরিচায়ক কোনো বৈশিষ্ট্যকেও আপন করে নেওয়ার অনুমতি ইসলাম মুসলমানদেরকে দেয় না।

    পশু জবাই করার ইসলামী নীতি অনুসৃত হওয়ার পর সে পশুর গোশত ভুনা করে নাকি ঝোল করে নাকি কাবাব করে খেতে হবে-এ বিষয়ে ইসলামের কোনো চাপ নেই। স্থানীয় মানুষের রুচি ও সুবিধার ওপর তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাছের তরকারির ধরণ কী হবে, তাজা হবে নাকি শুটকি হবে, হালাল জিনিস দিয়ে বানানো রুটি বা পিঠার ধরণ কী হবে, মিষ্টি হবে নাকি ঝাল হবে-এ ব্যাপারে স্থানীয় সংস্কৃতি অনুসরণে কোনো বাধা নেই। তবে খাদ্য হালাল হওয়া, অপচয় না করা, খাওয়ার আদব ও সুন্নত পদ্ধতি বজায় রাখা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা ও প্রেরণা আছে। একইভাবে পোশাকের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের পোশাকের ইসলামী নীতি ও বিধান অনুসৃত হওয়ার পর তা মোটা হলো, না পাতলা হলো, তা এ দেশীয় কাপড়ে হলো না ভিনদেশি কাপড়ে হল তাতে ইসলামের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পোশাকের সীমা ও নীতি, আবরণ ও শালীনতা বজায় থাকার পর বাকি বিষয়গুলোতে স্থানীয়দের সুবিধা ও রুচি প্রয়োগের স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

    এভাবেই মুসলমানের জীবনাচারের সবক্ষেত্রে মৌলিক নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে ইসলামেরই। এক্ষেত্রে স্থান-কাল-ভাষা ও সংস্কৃতির কোনো কুহক দিয়ে ইসলামী নীতি ও চেতনাকে আহত করার অধিকার কোনো মুসলমান রাখেন না। সে হিসেবে পয়লা বৈশাখই হোক, আর অপর কোনো উৎসবই হোক, যদি তাতে ইসলামের নির্দেশনা অনুসৃত হওয়ার পরিবর্তে বিপরীত কোনো বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করা হয় তবে তাতে যুক্ত হওয়ার ও সমর্থন দেওয়ার সুযোগ মুসলমানের নেই। বাংলাদেশী মুসলমানদের আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে সাব্যস্ত করা বা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতি’ একক ও প্রধান কোনো তত্ত্ব হতে পারে না।  সেটা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিংবা সামঞ্জস্যশীল কি না অবশ্যই দেখতে হবে। কারণ এভাবে কেবল বাঙ্গালি সংস্কৃতির কথা বললে তো বলতে হবে-মন্দিরে গিয়ে পূজা করাও বাঙ্গালি সংস্কৃতি, উলুধ্বনি-কাশর ধ্বনিও বাঙ্গালি সংস্কৃতি, মঙ্গল প্রদীপ, সিঁথির সিঁদুর, পুণ্যার্থে গঙ্গাস্নান, গোমূত্রে পবিত্রকরণ-সবই বাঙ্গালি সংস্কৃতি। ওই অর্থে ধূতি পরা, পৈতা লাগানো, শাঁখা ব্যবহারও বাঙ্গালি সংস্কৃতি। এগুলো কি তাহলে ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতি’  হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মুসলমানদেরও অনুসরণ করতে হবে?

    মনে রাখা দরকার, কোনো মুসলমান যদি সচেতনভাবে শিরকের প্রতীকযুক্ত কোনো উৎসবে মুগ্ধ হয়ে যোগ দেয় তাহলে তার জন্য সেটা শিরিকে লিপ্ত হওয়ার গোনাহ হবে। আর কোনো কিছু না বুঝে হেলাফেলা করে এসবে জড়িত হলে অবশ্যই ফিসক-ফুজুরের সে মুরতাকিব হবে।

    হুজুগের অথৈ পাঁকে ডুবে না গিয়ে আত্মসচেতন মুসলমান হিসেবে এসব বিষয়ে একটু ভাবার চেষ্টা করা সবার দায়িত্ব।

    সাত.

    জুমআর নামাযে দাঁড়াবো। কাতার ঠিক করছি। এ সময় সামনের কাতারের এক যুবকের পায়জামার কুচির দিকে চোখ পড়ল। প্রথমে মনে হল, মেয়েদের পায়জামা বা সেলোয়ার পরে সে মসজিদে চলে এসেছে। পরেই লক্ষ্য করলাম, তার পায়জামার পুরোটা জুড়েই কুচি। একটা পয়েন্ট থেকে চারদিকে ভাঁজ ভাঁজ করে কাপড় ছড়িয়ে আছে। হঠাৎ মনে হল এটাতো দেখা যাচ্ছে, সেই সেলাই করা ধূতি। এরপর ঠিক আমার সামনে দাঁড়িয়ে‘ধূতি’ পরে এক মুসলিম যুবক জমুআ আদায় করল। যথারীতি নামাযের পর নিষ্ঠার সঙ্গে সে দুআ করল। সুন্নত পড়ল। তারপর মসজিদ থেকে ধীরে সুস্থে বের হল। মুসল্লী হিসেবে নিষ্ঠার কোনো কমতি তার নেই। আবার ‘ধূতি’ পরা নিয়ে তার মাঝে কোনো সংকোচ বা জড়তাও নেই।

    ঘটনা এই চৈত্রের।

    গত দু’ বছরে এরকম ‘ধূতি-পায়জামা’ আরো দু’-চারবার দেখেছি। তখন ততোটা চোখে বিঁধেনি। দেখেছি, রাস্তায়, দূর থেকে। কেমন তরুণ, কতোটা সচেতন কিংবা কী পরিমাণ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে জানা ছিল না তখন। রাস্তাঘাটে চোখে পড়া বহু অনভিপ্রেত দৃশ্যের মতো সেটাও ছিল গা-সওয়া। কিন্তু জুমআর নামাযে ‘ধূতি-পায়জামা’ পরে আসা এই যুবককে দেখে প্রচন্ড হোচট খেলাম।

    আট.

    এ প্রসঙ্গে দুটি বিষয় আমরা স্মরণ রাখতে পারি এবং দুটি কাজ করতে পারি। এক. বাংলা. হিজরী, ঈসায়ী যে কোনো বছরের শুরুতে, বা শুরুর দিনে বিগত বছরের ভুলত্রুটি, গোনাহ খাতার জন্য তাওবা-ইস্তেগফার করতে পারি। সামনের বছরটিতে দ্বীনী ও পার্থিব সব কাজের মঙ্গলের জন্য, সব ক্ষেত্রে খায়র-বারাকাতের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দুআ করতে পারি। ভালো নিয়্যত ও প্রত্যয়  গ্রহণ করতে পারি। এ কাজটি আমরা প্রতি মাসে, প্রতি সপ্তাহে, এমনকি প্রতিদিনও করতে পারি। মূলত কেবল বছর বছর নয়, কাজটি দৈনিক ভিত্তিতে করাই আমাদের জন্য কল্যাণকর। সময়ের ভাগটাকে গুরুত্ব না দিয়ে, আনুষ্ঠানিকতা ও উৎসব প্রবণতাকে এড়িয়ে আমরা জীবনের শুদ্ধ ও কল্যাণযাত্রার প্রতিজ্ঞা  যে কোনো সময়ই করতে পারি।

    দুই. সংস্কৃতির নামে জীবনাচার, অনুষ্ঠান, পর্ব ও উৎসবের যেসব ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে অথবা পরিকল্পিতভাবে অপর ধর্মের বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি থাকবে, সেসব ক্ষেত্র থেকে মুসলিম হিসেবে নিজেদের সরিয়ে রাখা। অপর ধর্মের অনুসারীদের জন্য তাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে সেটা তাদের কাছে গ্রহণীয় হতেই পারে, সেখানে বিরোধের কিছু নেই। কিন্তু কিছুতেই সেটিকে বাংলাদেশের সর্বজনগ্রাহ্য বা সার্বজনীন সংস্কৃতি মনে করে তার সঙ্গে মুসলমানরা একত্রিত হতে পারেন না। এতদঞ্চলের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য সংবলিত কোনো সংস্কৃতি আঞ্চলিক ও দেশীয় পরিমন্ডলে সার্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারে না। সেটি সবার জন্য অনুসরণীয়ও হতে পারে না। সে সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ধর্মানুসারীদের সংস্কৃতি হিসেবেই গণ্য হতে পারে। এ জাতীয় সংস্কৃতি সার্বজনীন নয়, বিভাজিত সংস্কৃতিরূপে সাব্যস্ত হতে পারে। কখনো সংখ্যাগুরুদের সংস্কৃতি, কখনো সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি কখনো সার্বজনীন বাংলাদেশী ‘সংস্কৃতি’ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। তবে এর সঙ্গেও থাকতে পারে সহাবস্থান ও সৌহার্দ্য। চাকমা, মগ, গারোদের বহু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা যেমন দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থা অনুসরণ করে থাকি, ঠিক তেমনি। তাদেরটা তারা করুন, কোনো সমস্যা নেই। সেটা আমাদেরও করতে হবে কেন? জুমআর নামাযে দাঁড়িয়ে সামনের কাতারে ‘ধূতি-পায়জামা’ পরা মুসল্লী দেখার আগ্রহ তো আমাদের থাকার কথা নয়।

    শততম টেস্টে জয় চায় বাংলাদেশ

    ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দেখতে দেখতে ৯৯টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভাল করলেও টেস্ট ক্রিকেটে এখনো নিজেদেরকে ঠিকমত মেলে ধরতে পারেনি টাইগাররা। ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণে এখনো তুলনামূলক দুর্বল হিসেবেই পরিচিত দলটি চলমান শ্রীলংকা সফরেই নিজেদের শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। স্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে বুধবার শুরু হতে যাওয়া মাইলফলক স্পর্শ করা ম্যাচে জয় দিয়ে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে চায় মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন টাইগাররা।
    চলমান সফরে প্রথম টেস্টে ২৫৯ রানে পরাজিত হয় দলটি। যা কিনা তাদের ৭৬তম ও এক নাগারে চতুর্থ পরাজয়।
    টেস্ট খেলুড়ে কোন দেশই এখন পর্যন্ত নিজেদের প্রথম একশ’ ম্যাচে এত বেশি পরাজয়ের স্বাদ পায়নি। বলতে গেলে গত ১৭ বছর যাবতই দীর্ঘ সংস্করণে ধুকছে বাংলাদেশ। অবশ্য নিজেদের প্রথম একশ’ ম্যাচে জয়ের ক্ষেত্রে সবার নিচে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিউইরা নিজেদের প্রথম একশ’ ম্যাচে জয় পেয়েছে সাতটিতে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ জিতেছে আটটিতে। তবে নিউজিল্যান্ড ড্র করেছে ৪৭টি, বাংলাদেশ করেছে ১৫টি।
    বাংলাদেশের আট জয়ের পাঁচটিই এসেছে নিজ মাঠে দুবর্ল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টাইগাররা বিদেশের মাটিতে ৪৬ ম্যাচের অন্য তিনটি জয়ের মধ্যে দু’টি এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও একটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টাইগাররা ২০০১-২০০৪ সালের মধ্যে এক নাগারে ২১ ম্যাচে হেরেছে। যে রেকর্ড অন্য কোন দলের নেই। তবে সম্প্রতি নিজ মাঠে প্রথম ম্যাচে পরাজয় সত্ত্বেও দ্বিতীয়টিতে জয়ী হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ। যা এ যাবত কালে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
    কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহে গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সঠিক কাজটিই করছি যে কারণে সব ম্যাচেই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আপনার প্রত্যাশা বেশি কেন? কারণ আপনি ভাল করছেন, আমি ঠিক বলছি কিনা?’
    বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মুখপাত্র জালাল ইউনুস বলেন, ‘সব কিছুই আমরা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছি। তবে শততম টেস্ট হওয়ায় অবশ্যই এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণও বটে।’
    ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে বাংলাদেশের উদ্বোধনী টেস্ট খেলা সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেন, সাবেক ইংল্যান্ড খেলোয়াড় জিওফ্রে বয়কটসহ অন্য সমালোচনাকারীদের ভুল প্রমাণ করতে দলকে অবশ্যই আরো বেশি বেশি ম্যাচ জিততে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘শততম টেস্ট উদযাপনে সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে এই ম্যাচে জয়ী হওয়া। অন্য অনেক দিক থেকেও এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় দরকার। সীমিতি ওভারের ক্রিকেটে আমরা এখন একটি শক্তিশালী দল। তবে আমাদের টেস্ট ম্যাচ জয়ের যোগ্যতারও প্রমাণ দিতে হবে।’
    বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য): মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মোমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি, শুভাশিষ রায়, রুবেল হোসেন।
    শ্রীলংকা দল (সম্ভাব্য) : রঙ্গনা হেরাথ (অধিনায়ক), দিমুথ করুনারত্নে, রিনোশান ডিকবেলা, উপুল থারাঙ্গা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, কুসল মেন্ডিজ, আসেলা গুনারত্নে, দিনেশ চান্ডিমাল, সুরঙ্গা লাকমাল, লাহিরু কুমারা, নুয়ান প্রদীপ, ভিকুম সঞ্জয়া বান্দারা, দিলরুয়ান পেরেরা, লহ্মণ সান্দাকান, মালিন্দা পুষ্পকুমারা।

    সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি ধর্মহীনতার ইঙ্গিত- আল্লামা আহমদ শফী

    বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে গ্রিক দেবী মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপন ধর্মহীনতার ইঙ্গিত বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর এদেশের মানুষ বেঈমান হয়ে যাবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে হবে। চিঠিপত্র দিয়ে হোক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হোক প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে মূর্তি অপসারণে সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ফেনী জেলা হেফাজতের উদ্যোগে শহরের মিজান ময়দানে আয়োজিত শানে রিসালাত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শফী আরো বলেন বিশ্বের বড় বড় বিধর্মী দেশগুলোতেও এ ধরনের কোন মূর্তি চোখে পড়েনি। আমেরিকা ও ইন্ডিয়ার  সুপ্রিম কোর্টে এ রকম মূর্তি চোখে না পড়লেও বাংলাদেশে সরকার কার ইশারায় মূর্তি সংস্কৃতি চালু করেছে তা জাতির বোধগম্য নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। সরকারকে ধর্মহীনতা থেকে সরে এসে এদেশের ৯৫ ভাগ মুসলমানের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার অনুরোধ করেন আহমদ শফী। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাও. আজিজুল হক ইসলামাবাদী । জেলা হেফাজতের সভাপতি মাও. আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে  মাও. ওমর ফারুক ও মুফতি ইলিয়াসের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মুফতি সাঈদ আহমদ, মাও. নুর ইসলাম আদীব, মুফতি শহীদুল্লাহ, মাও. আবুল কাশেম, আফজালুর রহমান, সাইফুদ্দিন কাসেমী, মাও. সাইদুর রহমান, আজিজুল্লাহ হেলাল, মুফতি আহমদুল্লাহ ও ফেনী আলীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও. মাহমুদুল হাসান প্রমুখ। সভায় বক্তাগণ বলেন, সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা নাস্তিক মুরতাদরা রাষ্ট্রধর্ম তুলে দিতে চাইছে। তারা তাদের বিদেশি প্রভুদের নুন-রুটি হালাল করার জন্য এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি গণমুখী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে। সরকারের বসন্তের কোকিল মন্ত্রীরা তওহিদী জনতাকে হুমকি দিয়ে কথা বলছেন। বাম নাস্তিক নেতাদের মুখেও কেবল গালাগালি শোনা যাচ্ছে। পাঠ্যক্রমে নাস্তিকতা ও সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে যারা নতুন প্রজন্মকে ঈমান ও ধর্মহীন করতে চেষ্টা করেছিল তারা এখন আবার চক্রান্ত শুরু করেছে। দেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর লক্ষ্যে ভিনদেশি দালালচক্র নানামুখি উস্কানি দিচ্ছে। হেফাজত নেতৃবৃন্দের নামে মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা এর স্পষ্ট আলামত। প্রধানমন্ত্রীকে সবদিক বিবেচনা করে ৯২ ভাগ মানুষের আশা আকাক্সক্ষা বহাল রাখতে হবে। দেশ ও জাতিবিরোধী অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। দেশের মানুষ হেফাজতের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ। ইসলাম ও দেশবিরোধী কোন চক্রান্তই তারা সফল হতে দেবে না। সম্মেলনে জেলার বিশিষ্ট আলেম ওলামা, ইসলামী ব্যক্তিত্ব, হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এ আহমদ শফী’র হাজার হাজার ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।

     

    পূর্ব চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের নৌ মহড়া

    উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের নৌবাহিনী পূর্ব চীন সাগরে যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে একথা বলা হয়।
    চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে এই মহড়া শুরু হয়। মহড়ায় জাপানের ডেস্ট্রয়ার এবং ইউএস নেভি কেরিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ অংশ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জাপানের সানকেই সিমবুন ডেইলি ও কিয়েটো নিউজ এ খবর জানায়।
    সানকেই জানায়, পরমাণু অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক সংকেত দিতে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে পূর্ব চীন সাগরে চীন ও জাপানের দীর্ঘদিনের বিরোধের প্রেক্ষিতে সামরিক শক্তির জানান দেয়াও এই যৌথ মহড়ার অন্যতম কারণ।

    ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

    সিলেটের বহুল আলোচিত কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুলকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ বিচারক আকবর হোসেন মৃধার আদালত এ রায় ঘোষণা করে। এদিকে, আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে খাদিজার পরিবার। এছাড়া উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছে বদরুলের আইনজীবী। তবে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন স্বয়ং খাদিজা আক্তার নার্গিস।
    এর আগে গত বছরের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা বদরুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। হামলার ঘটনায় খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদি হয়ে বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। গত ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। এছাড়া ঘটনার পর শাবি থেকে বহিষ্কার করা হয় বদরুলকে। গত ২৬ ফেব্রæয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দেন খাদিজা। পরে ১ মার্চ মামলাটি সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ৫ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেছিলেন। গতকাল ওই মামলার রায় প্রকাশ করেছেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ বিচারক আকবর হোসেন মৃধা।
    আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, আদালত বদরুলের অপরাধ আমলে নিয়ে তাকে যাবজ্জীবন দন্ডাদেশ দিয়েছেন। একইসাথে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছেন। তিনি আরো জানান, মামলায় ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। সাক্ষ্যপ্রমাণের মাধ্যমে বদরুলের অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে।
    এদিকে, খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালত ছিল জনাকীর্ণ। বদরুলের বিরুদ্ধে কি রায় হয়, সেটা জানতে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। রায় প্রকাশের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের পরিবার। খাদিজার চাচা ও মামলার বাদি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বদরুলের বিরুদ্ধে এমন রায়ে আমি, আমার পরিবার সবাই খুশি। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। কুদ্দুস আরো বলেন, আমরা আশা করছি, উচ্চ আদালতে যদি আসামিপক্ষ আপিল করে, তবে সেখানেও এই রায় বহাল থাকবে। এ রায়কে ‘যুগান্তকারী রায়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম শিবলী।
    রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বের হওয়ার সময় জনগণের উদ্দেশে চিৎকার করে বদরুল বলেন, জন্ম বাংলায়, মরব বাংলায়, জয় বাংলা।
    এদিকে, রায় প্রকাশের পর সিলেট সদর উপজেলায় খাদিজা আক্তার নার্গিসের গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকরা যান। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের খাজিদা তার প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বদরুল আলমের বিরুদ্ধে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নতুন করে জীবন গড়তে সব চেষ্টাই করব। রায়ে আমি খুশি।

    প্রচলিত ভুল

    একটি ভিত্তিহীন কাহিনী : দুই ব্যক্তির রূহ কবজ করতে মালাকুল মাউতের কষ্ট হয়েছে

    লোকমুখে প্রসিদ্ধ- আল্লাহ মালাকুল মাউতকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মালাকুল মাউত! বনী আদমের রূহ কবজ করতে কি তোমার কখনো কষ্ট হয়নি? মালাকুল মাউত উত্তরে বললেন, জী, দুই ব্যক্তির রূহ কবজ করতে আমার কষ্ট হয়েছে। এক. একবার জাহাজ ডুবে গেলে এক মহিলা কাষ্ঠখ- ধরে সমুদ্রে ভাসছিল। এমতাবস্থায় তার একটি ছেলে সন্তান প্রসব হয়। এমন সময় ঐ মহিলার মৃত্যুর সময় চলে আসে। তো ঐ সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর দিকে তাকিয়ে তার মায়ের জান কবজ করতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। দুই. শাদ্দাদের জান কবজ করতে আমার কষ্ট হয়েছিল; যখন সে তার দুনিয়ার জান্নাত বানায় এবং সেখানে প্রবেশ করার মুহূর্তে এক পা ভেতরে দেওয়ার সাথে সাথে আরেক পা বাইরে থাকা অবস্থায়ই তার মৃত্যুর পরওয়ানা চলে আসে আর আমি তার জান কবজ করে নিই।

    আল্লাহ বললেন, ওহে মালাকুল মাউত! সমুদ্রের মধ্যে যে শিশুর মায়ের জান কবজ করতে তোমার কষ্ট হয়েছিল সে শিশুটিই ছিল শাদ্দাদ!

    কেউ কেউ কিসসাটিকে এভাবেও বলে- (সংক্ষেপে) …জনমানবশূন্য মরুভূমির মধ্যে সদ্যভূমিষ্ঠ দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়ের জান কবজ করতে… এবং এক অশীতিপর বৃদ্ধ কামারকে তার লাঠির নিচের অংশে লোহা লাগিয়ে দিতে বলছিল, যাতে লাঠিটি অনেক বছর টেকসই হয়। এমতাবস্থায় বৃদ্ধের মৃত্যু চলে আসে আর আমি তার জান কবজ করি। তো এ কথা শুনে আল্লাহ বলেন, ঐ শিশু ও এই বৃদ্ধটি একই ব্যক্তি।

    কেউ কেউ এভাবেও বলে, আল্লাহ মালাকুল মাউতকে জিজ্ঞাসা করলেন, বনী আদমের রূহ কবজ করতে তোমার কখনো কান্না আসেনি? মালাকুল মাউত উত্তরে বললেন, হে আমার রব! বনী আদমের রূহ কবজ করতে গিয়ে আমি একবার কেঁদেছি, একবার হেসেছি এবং একবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছি। …জনমানবশূন্য মরুভূমিতে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর মায়ের জান কবজ করতে গিয়ে শিশুটির কান্না ও অসহায়ত্ব দেখে কেঁদেছি। আর ভয় পেয়েছি এক আলেমের জান কবজ করতে গিয়ে। আমি যখন তার জান কবজ করতে যাই তো তার কামরা থেকে এক নূর বের হয় তা দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। আল্লাহ বললেন, ঐ আলেমই হল মরুভূমির ঐ শিশু; তাকে আমি লালন-পালন করেছি।

    (মালাকুল মাউত বলেন,) আর এক ব্যক্তি মুচির কাছে তার জুতা দিয়ে বলল, এটা এমনভাবে সেলাই করে দাও যাতে এক বছর পরতে পারি। সে ঐ জুতা পায়ে দেয়ার পূর্বেই তার জান কবজ করেছি আর হেসেছি- কয়েক মুহূর্ত তার হায়াত নেই আর সে এক বছরের জন্য জুতা ঠিক করছে।

    যাইহোক এগুলো সবই ভিত্তিহীন কিসসা-কাহিনী। কোনো নির্ভরযোগ্য সনদে তা বর্ণিত হয়নি।

    ইতিপূর্বে এক সংখ্যায় আমরা শাদ্দাদের বেহেশত কেন্দ্রিক কিসসা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম- শাদ্দাদের বেহেশতের কাহিনীর কোনো ভিত্তি নেই, এর কোনো অস্তিত্ব নেই। (আলইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাউযূআত ফী কুতুবিত তাফসীর ২৮২-২৮৪)। তেমনি এই ঘটনায়ও আমরা শাদ্দাদের বেহেশতের আলোচনা দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং তা কখনোই সত্য হতে পারে না।

    এছাড়াও এ ঘটনায় আমরা আরেকটি বিষয় দেখতে পাচ্ছি, শাদ্দাদের মত নাফরমানের জান কবজ করতে মালাকুল মাউতের কষ্ট হচ্ছে; সে তার আল্লাহদ্রোহিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে চাচ্ছে এবং আল্লাহদ্রোহিতায় লিপ্ত রয়েছে অথচ মালাকুল মাউত তার জান কবজ করতে কষ্ট পাচ্ছেন। এটি এ ঘটনা বাতিল হওয়ার আরেকটি প্রমাণ।

    আল্লাহ আমাদের এ জাতীয় অলীক কিসসা-কাহিনী বলা ও বিশ্বাস করা থেকে হেফাজত করুন।

    আকাশে হোটেলএয়ারবাস ৩৮০ প্রথমবারের মতো জাপানে নিয়ে এলো ্যানা

    অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ কোঃ জাপানের প্রথম বিমান সংস্থা হিসেবে এয়ারবাস এ৩৮০’র ভেতর “আকাশে হোটেল” পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছে।

    বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমান নারিতা-হনলুলু রুটে ২০১৯ সালের বসন্তে বিমানটি চালু করবে বলে কোম্পানি মার্চের ৬ তারিখ জানায়।

    বিমানটির নির্মাতা ইউরোপিয়ান-ভিত্তিক এয়ারবাস স্যাস এবং বিমানটিতে ৫০০’র বেশি আসন রয়েছে।

    অ‌্যানা এ৮৮০’র শরীরে সামুদ্রিক কচ্ছপের রং দেয়া হয়েছে। হাওয়াইয়ান পৌরানিক অনুসারেই এটিকে কাছিমের রং দেয়া হয়েছে।

    রাশিয়া জাপান ও দ. কোরিয়া উদ্বিগ্ন উ. কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় টোকিও স্টকে পতন

    আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাপান সাগরে পর পর ৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির এ কর্মকাÐের ফলে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার চলমান যৌথ সামরিক মহড়ার জবাব হিসেবে এ সিরিজ পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এদিকে জাপান নিয়ন্ত্রিত পানি সীমায় উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এরইমধ্যে টোকিও স্টকে পতন দেখা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর জাপানি ইয়েনের মানের উল্লম্ফন ঘটায় শেয়ারবাজারে পতন ঘটেছে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপের পর জাপানের শেয়ারবাজার বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। টয়ো সিকিউরিটিজের কৌঁসুলি হিরোআকি হিওয়াদা জানান, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এরইমধ্যে ইয়েনের মান শক্তি অর্জন করেছে। ভ‚রাজনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কায় লেনদেন থেকে বিরত থাকছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এ পরিস্থিতি অতীতের মতোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেই মনে করছেন হিওয়াদা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে বলেন, এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা খুবই ভয়াবহ একটি উদ্যোগ। জাপান এ পরীক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ওয়াং কো-আন এ পরীক্ষাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সরাসরি হুমকি প্রদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি তিনি চীনের তীব্র বিরোধিতা সত্তে¡ও মার্কিন সহায়তায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা (থাড) স্থাপন প্রক্রিয়া দ্রæত এগিয়ে নিতে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। উত্তর কোরিয়ার সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় উদ্বিগ্ন ক্রেমলিনও। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, আমরা ভীষণ মাত্রায় উদ্বিগ্ন। উত্তর কোরিয়ার এ পরীক্ষার ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়ে উত্তেজনা ছড়াবে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষিতে তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম পালনের আহŸান জানান। এদিকে উত্তর কোরিয়ার সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার প্রেক্ষিতে মুখ খুলেছে চীনও। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন শুয়াং নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহনশীল আচরণ করার জন্য আহŸান জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় গত সোমবার সকালে উত্তর কোরিয়া-চীন সীমান্তের নিকটবর্তী তংচ্যাং-রি অঞ্চল থেকে জাপান সাগরে পর পর ৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। দেশটির মতে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভ‚খÐে আঘাত হানতে সক্ষম। পরীক্ষাকৃত ক্ষেপণাস্ত্রের ৩টি প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকায় (ইইজেড) গিয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাপান। চলমান দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়াকে নিজেদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি কিম জং-উন প্রশাসন চলমান সামরিক মহড়ার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। মহড়া বন্ধ না হলে কড়া জবাব দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এর পর পরই দেশটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সিরিজ পরীক্ষা চালাল। খবরে বলা হয়, টোকিও স্টকে লেনদেনে বেঞ্চমার্ক নিক্কেই ২২৫ সূচকের দশমিক ৫২ শতাংশ পতন ঘটেছে। সূচকটি ১০০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট হারিয়ে ১৯ হাজার ৩৬৮ দশমিক ৫০তে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে টপিক্স ইনডেক্স অব অল ফার্স্ট সেকশন ইস্যু হ্রাস পেয়েছে দশমিক ৩৫ শতাংশ। সূচক ৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট হারিয়ে ১ হাজার ৫৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি।

    জাপান সাগরে সিরিজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উ. কোরিয়ার 

    জাপান সাগরে একযোগে চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে উত্তর কোরিয়া। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার একজন সেনা কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জানিয়েছেন, এসব ক্ষেপণাস্ত্রের তিনটি প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (ইইজেড)-এর মধ্যে গিয়ে পড়েছে। এ ঘটনাকে উত্তর কোরীয় হুমকির একটা অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করেন শিনজো আবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক সূত্র জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার চীন সীমান্তের নিকটবর্তী তংচ্যাং-রি অঞ্চল থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইওনহ্যাপ জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সম্ভবত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র; যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখÐে আঘাত হানতে সক্ষম। কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার চলমান যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করা না হলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হবে বলে গত শুক্রবার হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল পিয়ংইয়ং। প্রতি বছর ওয়াশিংটন ও সিউলের মধ্যকার এ মহড়াকে উত্তর কোরিয়া তার ওপর হামলার প্রস্তুতি বলে মনে করে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রæয়ারিতে সর্বশেষ ব্যালাস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। পুকগুকসং-২ নামের ওই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন-এটি দেখাশোনা করছিলেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর কথা বিবেচনায় রেখে এটিকে উঁচু অ্যাঙ্গেলে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। সা¤প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়া নিজের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির নেতা কিম জং-উন দাবি করেন, তার দেশ পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। পিয়ং ইয়ং-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখÐে আঘাত হানতে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে; যে কোনও সময় এর পরীক্ষা চালানো হতে পারে। তবে ৩ ফেব্রæয়ারি ২০১৭ শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে পিয়ং ইয়ং-এর হুমকি নিয়ে কথা বলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আমাদের মিত্র দেশগুলোর ওপর যে কোনও হামলা পরাস্ত করা হবে। যে কোনও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে এমনভাবে জবাব দেওয়া হবে যেন তা কার্যকরী ও অপ্রতিরোধ্য হয়।’ ১৯৫৩ সালে সাময়িক অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরও এক রকম প্রাযুক্তিক সক্ষমতাজনিত যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী পরমাণু ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে উ. কোরিয়া। তবে দক্ষিণে থাড নামে পরিচিত উচ্চ প্রযুক্তির মিসাইল প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েন নিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে দেশটি। দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চতর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণার বিপরীতে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার বিপরীতে একে তারা যোগ্য জবাব বলে মনে করে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গত বছর দুটি পারমাণবিক পরীক্ষার পাশাপাশি ২০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া নিয়মিত যৌথ মহড়া দিয়ে থাকে। একে উস্কানিমূলক বলে অভিযোগ করে আসছে পিয়ং ইয়ং।

    ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ: রঙিন ভার্সনে সেই ভাষণ

    ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। সুদীর্ঘকালের আপসহীন আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের আজকের দিনে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
    এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে জাতির অবিসংবাদিত মহান নেতা বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
    ৭ মার্চ তাঁর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
    বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাত-কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষে।
    রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি-সংবাদপত্রসমূহ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করছে।
    দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

    জাপানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৯

    জাপানে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নয়জন আরোহীর সকলে প্রাণ হারিয়েছে। রবিবার একটি পাহাড়ে উদ্ধার মহড়া চলাকালে এটি বিধ্বস্ত হয়।
    সোমবার পুলিশের নাগানো পুলিশ মুখপাত্র বলেন, নাগানোর মধ্যাঞ্চলে বিধ্বস্ত এ হেলিকপ্টারের ধ্বংস্তুপের ভেতর থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পাইলটসহ অপর তিনজনের মৃত্যুর খবর রোববার নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার থেকে বরফে ঢাকা একটি পাহাড়ের পাশে দুর্ঘটনাস্থল চিহ্নিত করার পর তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলো।
    খারাপ আবহাওয়ার কারণে সোমবার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখা হয়। জাপানের সরকারি সম্প্রচার কেন্দ্র এনএইচকে জানায়, সরকার দুর্ঘটনাস্থলে তদন্ত কর্মকর্তাদের পাঠাবেন।

    ৮১ বছরের বৃদ্ধা তৈরি করলেন আইফোন অ্যাপ

     

    বয়স কোন বিষয় না, ইচ্ছে আর মেধার পরিচর্যা করার মনমানসিকতা থাকেলে সব কিছু করে দেখানো যে সম্ভব তা প্রমাণ করে দেখালেন এই জাপানি নারী। ৮১ বছর বয়সে অর্থাৎ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও অভিজাত ফোন আইফোনের অ্যাপ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
    জাপানি এ বৃদ্ধের নাম মাসাকো ওয়াকামিয়া। তার গল্পটা দারুণ। ৬০ বছর বয়সে কম্পিউটার চালাতে শিখেন, আশ্চর্য হলেও ঘটনাটি সত্য। এই বয়সে কম্পিউটার শেখার পর আর বসে থাকেননি তিনি। সেকেলে মানুষরা তরুণদের চেয়ে প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে ধারণা পাল্টে দিলেন মাসাকো।
    তার অ্যাপ বানানোর খবর বেশ প্রচারিত হচ্ছে গণমাধ্যমগুলোতে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় খবর হয়ে উঠেছে এটি।
    মাসাকো ওয়াকামিয়া ৪৩ বছর জাপানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। অনেক পরে এসে তিনি কম্পিউটারের ব্যবহার শিখেছেন। আর সেই শিক্ষাকে কাজেও লাগিয়ে গেলেন। বিশ্বের সবচে অভিজাত মুঠোফোন আইফোনের নিজেই তৈরি করলেন একটি অ্যাপ।

    গত সপ্তাহে ‘হিনাদান’ নামের ওই অ্যাপটির উদ্বোধন করা হয়। জাপানের গার্লস ডে উৎসবে তিনি উদ্বোধন করেন এই অ্যাপ। মানুষ কীভাবে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পুতুল সাজাবেন- তা শেখাবে হিনাদান অ্যাপ।
    উল্লেখ্য, ‘হিনা’ শব্দের অর্থ পুতুল। আর ‘দান’ মানে স্তর। আইফোন ডিসপ্লের চারটি স্তরে ১২টি পুতুল সাজানোর পদ্ধতি শেখাবে হিনদান। ঠিকঠাক মতো সাজাতে পারলেই এই গেম শেষ হবে।
    এই বয়সে এসেও বসে নেই তিনি। ওয়াকামিয়ার একটি ব্লগও রয়েছে, যেখানে তিনি ভ্রমন এবং শিল্পকর্ম তুলে ধরেন। তার সঙ্গে যোগ করেছেন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড।