• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • প্রযুক্তি : সেলফি

    বর্তমান সময়ে সেলফি-আসক্তি অনেকটা মনোরোগের পর্যায়ে চলে গেছে। মনস্তত্ববিদগণ এভাবেই তা ব্যাখ্যা করছেন। সেলফির বিচিত্র রূপ ও ব্যাপক বিস্তার সামনে রাখলে তাদের ব্যাখ্যার যথার্থতা বেশ বুঝে আসে।

    কিছু কিছু সেলফি আছে যা  সরাসরি নিজের প্রাণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। হিংস্র প্রাণীর সাথে সেলফি, চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি,পাহাড়ের চূড়ার প্রান্তে পা ঝুলিয়ে সেলফি, আরো কত রকমের সেলফি যে মানুষ তুলছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত-নিহত হচ্ছে তা একজন সাধারণ পত্রিকা-পাঠকেরও অজানা নয়। এখন তো সেলফির দৌরাত্ম্য ইবাদত-বন্দেগী পর্যন্তও পৌঁছে গেছে। মুসলমানের বহু কাঙ্ক্ষিত ইবাদত হজ্বে ও তাওয়াফেও সেলফির ছড়াছড়ি!

    সেলফির মূল কথাটি হচ্ছে নিজেকে বা নিজের বিশেষ কোনো মুহূর্তকে নিজে ধারণ করা। এই ধারণের প্রেরণা কী, উদ্দেশ্য কী?সাধারণত তা হয় মনের ইচ্ছা পূরণ, ক্ষণিকের আনন্দ এবং অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন ।

    মনের সকল ইচ্ছা পূরণ কি মানুষের জন্য কল্যাণকর? আর মানুষের কাছে  সবকিছু উপস্থাপন করে কী লাভ? নিজেকে ও নিজের সকল মুহূর্তকে উপস্থাপন করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। কুরআন মাজীদ আমাদের শেখাচ্ছে, ‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি রাব্বুল আলামীন।’

    আমার হজ্ব, আমার তাওয়াফ তো মানুষের জন্য নয়, আমার নিজের ইচ্ছা পূরণ বা বিনোদনের জন্যও  নয়, এ তো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার জন্য। আমি কি চিন্তা করেছি, সেলফির মতো সামান্য একটি ইচ্ছাপূরণের দ্বারা আমার ইবাদতটিই মাটি হয়ে যাচ্ছে? সেলফির দ্বারা তো ইবাদতের স্বরূপই বদলে যায়। বলুন তো ইবাদতের মধ্যে যে আল্লাহর বান্দা সেলফিগ্রস্ত হয় তার উদ্দেশ্য কি ইবাদত থাকে, না ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি? সে তো ইবাদত করছে না, ছবি  তোলার জন্য ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি করছে। কিংবা অন্তত আল্লাহকে ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই প্রাণহীন অঙ্গ-ভঙ্গির কী মূল্য তাহলে আল্লাহর কাছে হতে পারে?কুরআন মাজীদের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

    لَیْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ وَ لٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ الْكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ وَ اٰتَی الْمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ السَّآىِٕلِیْنَ وَ فِی الرِّقَابِ  وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ  وَ الْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عٰهَدُوْا وَ الصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیْنَ الْبَاْسِ اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا  وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ.

    পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্য (বান তো সে) যে, ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, শেষ দিবসের উপর, সমস্ত ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের উপর… -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭

    ঈমানদারের জন্যও এ আয়াতে এই গভীর শিক্ষা আছে যে, তার ইবাদত-বন্দেগীও যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে পর্যবসিত না হয়।

    আরেক জায়গায় মুমিনদের লক্ষ্য করে ইরশাদ হয়েছে-

    لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ  وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.

    আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তার (কুরবানীর প্রাণীর) গোশত ও রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া…। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৭

    অথচ কুরবানীর মতো ইবাদতও যারা ভিডিও করে থাকেন তারা কি কুরবানীর পশুর রক্ত-মাংসের মধ্যেই বাধা পড়ে গেলেন না?

    আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইবাদতের প্রাণ হচ্ছে ‘যিকরুল্লাহ’ আল্লাহর স্মরণ। একারণেই সালাত ও কুরবানী, হজ্ব ও তাওয়াফ সব ক্ষেত্রেই কুরআন-সুন্নাহয় ‘আল্লাহর স্মরণ’ কথাটি উল্লেখিত হয়েছে। ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদির মাধ্যমে ইবাদতের এই বড় অনুষঙ্গটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা তো বলাই বাহুল্য।

    দ্বিতীয়ত, সেলফি যদি হয় বিনোদন তাহলে ইবাদত-বন্দেগীতে সেলফিগ্রস্ততার দ্বারা কি ইবাদতকে বিনোদনে পরিণত করা হয় না?

    দ্বীন-ধর্মকে ক্রীড়া ও বিনোদনে পর্যবসিত করা তো অনেক বড় অপরাধ।

    তৃতীয়ত, সেলফিতে যখন যোগ হয় লোকের বাহবা পাওয়ার চিন্তা তখন এর মাধ্যমে ইবাদত রিয়াগ্রস্ত হয়, যাকে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘শিরকে আসগর’।

    চিন্তা করলে দেখা যায়, উপরের যে কোনো একটি বিষয়ই ইবাদতকে বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই সামান্য ইচ্ছা পূরণের জন্য হজ্ব-কুরবানীর মতো বাঞ্ছিত ও প্রতীক্ষিত ইবাদতকে নষ্ট করে ফেলা কত বড় নির্বুদ্ধিতা! দেখুন, শয়তান কত সহজে আমাদের বহু আকাক্সিক্ষত ইবাদতগুলো মাটি করে দেয়!

    এরপর আসুন ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি প্রসঙ্গে। যে সেলফির জন্য তরুণ-যুবকেরা জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলছেন তারা হয়তো সচেতন নন যে, এভাবে তারা একটি গর্হিত কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। শরীয়তের বিধানে এটা বৈধ নয়। এ তো উপযুক্ত কারণ ছাড়া নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা, যা পরিষ্কার নিষেধ। হাদীস শরীফে তো মৃত্যুর কামনা করতেও নিষেধ করা হয়েছে তাহলে নিজেকে মৃত্যু-ঝুঁকির মুখোমুখি করার তো প্রশ্নই আসে না।

    মানুষের জীবন অতি মূল্যবান। এই একটিমাত্র জীবনকে কাজে লাগিয়ে যেমন মানুষকে আখিরাতের চিরস্থায়ী মুক্তি ও সাফল্য অন্বেষণ করতে হয় তেমনি পৃথিবীর অনেক এবং অনেকের দায়-দায়িত্বও পালন করতে হয়। তাহলে অর্থহীন কাজে এই জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা মর্মান্তিক অবিবেচনা নয় কি? হায়! মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান যে মানুষকে কতভাবে প্ররোচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে!

    প্রিয় বন্ধু! আপনি কি একজন সাহসী যুবক? আপনি কি আনন্দ পান অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া বা আলাদা হওয়ার মধ্যেই?তাহলে আপনাকে স্বাগতম! ইসলাম আপনাকে স্বাগত জানায় অর্থহীন কাজে নয়, অর্থপূর্ণ কর্মের বিস্তৃত অঙ্গনে-মানবসেবায়,জাতিগঠনে, ন্যায়ের বিস্তারে, অন্যায়ের প্রতিরোধে। দেখুন, একজন বহু সাধ্য-সাধনা করে তেলতেলে মুলিবাঁশ বেয়ে উঠে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। এই কর্মে সে এমনই অভাবিতপূর্ব সাফল্য অর্জন করল যে, শুধু মাটির মানুষ নয়, গাছের বানরও অভিভূত হয়ে গেল; বলুন তো এতে তার কী প্রাপ্তি ঘটল?

    তাই আজেবাজে কাজ নয়, এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র হচ্ছে জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও কর্ম-কুশলতা। চলুন না, এই সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাই। আর এগিয়ে যাই একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করবার জন্য, একমাত্র যাঁর কাছেই আমাদের সকল কর্ম ও মুহূর্ত থাকবে চির অক্ষয়।

    টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

    স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্বমানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।
    জাতির জনকের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও।
    শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার পর প্রথমে প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
    এ সময় তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়।
    শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক,  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
    আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন শওকত আলী, ফারুক খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, শেখ হেলাল উদ্দিন ও আবদুস সোবহান গোলাপ।
    প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো.শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন মাজার প্রাঙ্গণে।
    শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট মাজার কমপ্লেক্সের পরিদর্শন বইতেও স্বাক্ষর করেন।
    মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রেসিডেন্টকে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি উপহার দেন শেখ হাসিনা।
    দিনটি উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ,  আলোচনা সভা এবং গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
    বেলা পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় শিশু সমাবেশ ও আলোচনা সভায় যোগ দেন।
    আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সরকারিভাবেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
    শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করবে
    টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

    গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা :
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করে শিশুদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভেতর একটি আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য জাতির পিতা শিশুকাল থেকেই যেমন নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে, ঠিক সেভাবেই শিশুদের গড়ে তুলতে হবে’।
    শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার সেই জীবনী অনুসরণ করে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকা, কি পেলাম, কি পেলাম না, সেই চিন্তা না করা। কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম সেই চিন্তাটা সবার মাঝে থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০১৭’ উদযাপন উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে আয়োজিত শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
    মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে মালেকা একাডেমি গোপালগঞ্জের পঞ্চম শ্রেণির ছোট্ট শিশু উপমা বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফারিয়াদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাগত বক্তৃতা করে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার এবং দুস্থদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক শ’ জনের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কোমলমতি শিশু-কিশোর, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
    সরকার প্রধান বলেন, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিনটিকেই আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তার চিন্তা-চেতনার ফসলই হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছিÑ একটি ছোট্ট শিশু বাবা-মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কখনো সেই সৌভাগ্য হয়নি, বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার। কারণ, যখন একটু জ্ঞান হয়েছে, তখন থেকেই কারাগারে যেতাম বাবার সঙ্গে দেখা করতে। বাবার দোষ ছিল একটাই, তিনি এ দেশের দুঃখী, দরিদ্র মানুষ যাদের পেটে ভাত নেই, পরনে কাপড় নেই, যাদের থাকার মতো একটু বাসস্থান নেই, যারা রোগে-শোকে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়, এক ফোঁটা ওষুধ পায় নাÑ সেই বঞ্চিত, শোষিত মানুষগুলোর কথা তিনি সবসময় বলতেন। আর যখনই বলতেন, তখনই তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো। কিন্তু তিনি দমে যাননি। এই টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে তার জন্ম। এই এলাকার ধুলোমাটি শরীরে মেখে মাটিতে খেলাধুলা করে, পাশে বয়ে যাওয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তিনি বড় হয়েছেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গ্রামবাংলার মানুষকে চিনতেন, জানতেন, অনেক কাছে থেকে দেখেছেন তাদের সমস্যা। কাজেই তিনি সবসময় নিজেকে একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। আদর্শটা হচ্ছেÑ জনগণের সেবা ও জনকল্যাণে কাজ করা। তাই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর মমত্ববোধ সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন স্কুলে পড়তেন তখনই তার একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যার কাজ ছিল ধানের মৌসুমে গোলায় যখন ধান উঠত সেই ধান বা টাকা-পয়সা জোগাড় করে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের বই কিনে দিয়ে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা, সাহায্য করা। এভাবেই সেই ছোট্টবেলা থেকেই তার দেশসেবার হাতেখড়ি।
    প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার দাদীর কাছ থেকে শোনা কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, তোমার বাবার জন্য প্রতি মাসেই হয়তো বই, নয়তো ছাতা, নয়তো কাপড় কিনতে হতো। কারণ, তার প্রাণপ্রিয় বড় খোকা এগুলো দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দূরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বেলাতেই ঘরে খাবার খেতে চলে আসতেন। খোকার ভাগেরটাই খোকা সবাইকে নিয়ে ভাগ করে খেলেও তার দাদী জানান, আদরের খোকার জন্য সে সময় থেকেই তিনি ভাগে একটু বেশিই রেখে দিতেন। তার খোকাতো কখনো একলা খেতে বসতো না।
    শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত কিছুর পরও আমার দাদী কোনোদিনও এতটুকু রাগ করেননি এবং আমার দাদা-দাদী তাকে এভাবেই মানুষ করে তোলেন। যে কারণে তার মনটা হয়েছিল অনেক বড়, অনেক উদার এবং দেশের প্রতি অনেক দায়িত্ববান।’ বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে দারিদ্র্যের প্রতি অসম্ভব একটি সহানুভ‚তি নিয়ে এভাবেই জাতির পিতা বড় হয়েছিলেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীনতার পর সংবিধান দিয়েছেন এবং মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার সময় খাদ্যাভাব, টাকার অভাব, তারপরও তিনি শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। ২৬ হাজার ৯৬টি স্কুল জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের চাকরি তিনি জাতীয়করণ করে দেন।
    বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ছোট্ট শিশুদের সবসময়ই মনে করতেন, এই শিশুরাই তো একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। কাজেই তাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার অসাধারণ। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের জন্য ১৯৭৪ সালে শিশু অধিকার আইন পাস করেন। আজকে আমরা যাই করছি, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই করে যাচ্ছি। আমরা ৩৬ হাজারের ওপর স্কুল জাতীয়করণ করেছি। আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে প্রাক-প্রাইমারি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য আনন্দ স্কুল করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। যাতে বাবা-মাকে এই বইয়ের বোঝা টানতে না হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এক কোটি ৩০ লাখ বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি, ‘মায়ের হাসি’ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত বৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মায়ের হাতে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। আর যে মা স্কুলে বাচ্চাকে পাঠাবে সেই মাও একটি ভাতা পাচ্ছেন। আমরা সেই ব্যবস্থাটা করে দিচ্ছি যেন একটা শিশুও স্কুলের বাইরে না থাকে।
    প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করার প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বাংলাদেশটাকে ভিক্ষুক মুক্ত করতে চাই। এ জন্য প্রশাসনকে আমরা ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছিÑ প্রতিটি এলাকায় কেউ যেন ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে না পড়ে। সেই সাথে আরেকটি জিনিস আমরা করার পদক্ষেপ নিয়েছিÑ একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। স্কুলে যাবে এবং পড়াশোনা করবে। পড়াশোনার সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। পথশিশু বলে কোনো শিশু থাকবে না, টোকাই বলে কেউ থাকবে না। প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখবে এবং যাতে কাজ করে খেতে পারে, তার বন্দোবস্ত আমরা করে দিচ্ছি। কারণ, সবাই উচ্চশিক্ষা পাবে তা নয়, লেখাপড়ার মধ্যদিয়ে কে কোন ধরনের কাজ করবে, সেই সুযোগও আমরা করে দিতে চাই।
    শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শিশু নির্যাতন ও শিশু পাচার বন্ধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ জন্য বিশেষ আইনও করেছে এবং স্কুলে যেন বাচ্চারা থাকে, সে জন্য স্কুলগুলোতে টিফিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের যে শিশুÑ তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারাই আগামীর দেশকে গড়ে তুলবে এবং জাতির পিতা সবসময় যেটা বলতেনÑ আমি সোনার বাংলা গড়তে চাই। সে জন্য আমার সোনার ছেলে-মেয়ে দরকার।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। আজকে আল্লাহর রহমতে দেশে খাদ্যাভাব নেই। আমরা শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি। প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ে শতভাগ শিশু আজকে বিদ্যালয়মুখী হয়েছে এবং কোনো এলাকায় যদি দেখা যায় শিশুরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথাÑ শিশুদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। শুধু খাদ্য নয়Ñ তার সঙ্গে পুষ্টিরও ব্যবস্থা থাকবে। সেই সাথে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চারও বন্দোবস্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ের মেয়েদের জন্য তার সরকারের উদ্যোগে চালুকৃত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এসবের আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। কারণ, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন কোনো কারণে বিপথে না যায়। তিনি বলেন, এখানে অভিভাবক এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন, আমাদের মসজিদের ইমাম, ওলামা-মাশায়েখগণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন রয়েছেন। আমি একটা অনুরোধ সকলকেই করব যে, বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা আমাদের করতে হয়। কিন্তু আমরা এ দেশের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে সকল ষড়যন্ত্রই মোকাবেলা করতে পারব। তিনি বলেন, আমি সকলের কাছে আহŸান জানাবÑ প্রত্যেক অভিভাবক ও শিক্ষক দেখবেন তাদের ছেলে-মেয়ে কাদের সঙ্গে মিশে। তারা বিপথে যাচ্ছে কি-না। কোনোরকম মাদকাসক্তি বা জঙ্গিবাদের পথে যাচ্ছে কি-না তা দেখবেন। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে অনুপস্থিত কি-না তা শিক্ষকরাও লক্ষ্য রাখবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনেও ভ‚মিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক সমাজের প্রতি আহŸান জানান।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। তাই বলে কারো মধ্যে ধর্মান্ধতা যেন না আসে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে কোনো ধর্মই মানুষকে খুন করার কোনো অধিকার দেয়নি বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, আমরা চাই না আর কোনো ছেলে-মেয়ে এভাবে একই দিনে পিতা-মাতা ও স্বজনহারা হোক। তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ এমনভাবে গড়ে উঠবে, যার স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যখনই ক্ষমতায় এসেছি দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নত-সমৃদ্ধভাবে মানুষ বাঁচার সুযোগ পায়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জাতির পিতা এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আমি তো বলব, সন্তান হিসেবে আমরা তাকে কাছে পাইনি। তার স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি। তবে, আমাদের থেকেও তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন এই বাংলার মানুষকে। এটাই আমি অন্তত বলতে পারি। তিনি দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। আর এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। তাই তার অসমাপ্ত কাজ, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকেটও অবমুক্ত করেন।
    পরে ‘বাঙালি পরশমনি’ শীর্ষক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।