• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • Untitled Post

    Posted by admin on February 27
    Posted in Uncategorized 

    আল্লার রহমতের আশা : পরকালের সফরে মুমিনের সম্বল
    শিববীর আহমদ

    দুদিনের এ পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক আনুগত্য ও ইবাদত করে গেছেন যিনি, তিনি যে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এ নিয়ে কি আর কোনো দ্বিমত আছে! তাঁর আমল-ইবাদত যে সকল মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ- তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তিনিও যদি বলেন, আমার আমল আমাকে নাজাত দিতে পারবে না; তাহলে আমরা নিজেদের ব্যাপারে কেমন এক নিরাশায় যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি! সৃষ্টিকুলের সেরা মানবকাফেলা আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামেরও যিনি সর্দার, তিনিই যদি নিজ আমল দিয়ে জান্নাতে যেতে না পারেন, তাহলে আমাদের কী দশা হবে! ভাবতেই কেমন শরীর কেঁপে ওঠে! অথচ এটাই বাস্তবতা। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠেই শুনুন-
    لَنْ يُدْخِلَ أَحَدًا عَمَلُهُ الْجَنَّةَ
    নিজ আমল কাউকেই জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে না!
    সাহাবায়ে কেরামের সচকিত প্রশ্ন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকেও নয়?! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
    لاَ، وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللَّهُ بِفَضْلٍ وَرَحْمَةٍ.
    না, আমাকেও নয়, যদি না আল্লাহ দয়া ও অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে জড়িয়ে নেন।
    নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথাটুকু থেকেই আমরা আশায় বুক বাঁধতে পারি। যে রাহমানুর রাহীমের দয়ায় তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন, দয়াময় সেই সত্তার নিকট তো রহমতের আশা আমরাও করতে পারি। হাদীসের শেষাংশটুকু লক্ষ করুন-
    فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا، وَلاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَزْدَادَ خَيْرًا وَإِمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعْتِبَ.
    তাই তোমরা ইবাদতে সঠিক পন্থা অবলম্বন করো এবং ইবাদত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থেকো। আর তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুর কামনা না করে। সে যদি সৎকর্মপরায়ণ হয় তাহলে সে হয়তো কল্যাণের পথে আরও এগিয়ে যাবে, আর যদি পাপীও হয় তাহলে হতে পারে, সে পাপ থেকে তওবা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৭৩
    আমাদের আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে এই একটি মাত্র হাদীসই যথেষ্ট, যেখানে বলা হচ্ছে- ১. নিজের যোগ্যতা ও আমল নয়, বরং আল্লাহ পাকের দয়া ও অনুগ্রহই হল সকল সফলতা ও মুক্তির মূল; ২. ইবাদত করতে গিয়েও নিজের সাধ্য ও সক্ষমতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, এড়িয়ে চলতে হবে সাধ্যাতিরিক্ত সকল পদক্ষেপ; ৩. মৃত্যু কামনা করতে পারবে না কেউ। ভালো হলেও নয়, খারাপ হলেও নয়। আর ভালো-মন্দ মিলিয়েই তো মানুষ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আশা দিয়েছেন- হায়াত দীর্ঘ হলে ভালো কাজ আরও বাড়তে পারে, আর মন্দ কাজ থেকে ফিরে আসার সৌভাগ্যও মিলে যেতে পারে।
    এ জীবনে টিকে থাকতে হলেও আশা অপরিহার্য। আশার পিঠে চড়েই মানুষ বিপদের পর বিপদ মাড়িয়ে যায়। সারা জীবনের সঞ্চয়ও যখন আকস্মিকভাবে হারিয়ে যায়, বাহ্যত সামনে এগিয়ে যাওয়ার সব অবলম্বনও যখন ‘নাই’ হয়ে যায়, তখনো মানুষ বুকভরা আশা নিয়ে দাঁড়ায়। কষ্ট করে হলেও সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে এবং সেই স্বপ্নের পথে চলার সাহস সঞ্চার করে। একজন সুস্থ মানুষ, যত বিপদেই সে পড়ুক, তা পাশ কাটিয়ে সামনে চলার স্বপ্ন সে দেখবে, আশায় ভর করে সে বিপদ থেকে উঠে দাঁড়াবে-এটাই স্বাভাবিকতা। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এ জীবন নিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখা- এক্ষেত্রে ধনী-গরীব সবাই সমান। একজন কোটিপতি যেমন নিজের ও পরিবার-পরিজনের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, মৃত্যু অনিবার্য জেনেও দুনিয়ার এ জীবনে কামনা করে আরও সুখের, আরও সম্পদের, আরও সম্মানের, তেমনি ‘দিন এনে দিন খায়’ এমন একজন বিত্তহীন মানুষও তার মতো করে স্বপ্ন দেখে আরেকটু সুখের, সম্পদের ও সম্মানের, আরেকটু আরামদায়ক জীবনের। এই স্বপ্ন এই আশাই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই যে কথায় বলে- জীবন থেমে থাকে না! জীবন চলবেই। আর আশাই হল সেই চলার চালিকাশক্তি। বারবার আশাহত হতে হতে কারও আশা কখনো দুর্বল হতে পারে, একসময়ের রঙ্গিন জীবনের পরিবর্তে এখন সে সাদামাটা ভবিষ্যতের আশা করতে পারে। কিন্তু আশা থাকবেই। এটাই বাস্তব। সামনে চলার জন্য এর বিকল্প নেই।
    এ তো পার্থিব জীবন নিয়ে কথা। আর পরকালীন জীবনে? সেখানেও আল্লাহর রহমতের আশাই সম্বল। পরকালীন জীবন যেন সমৃদ্ধ হয়, সুখকর ও আনন্দময় হয়, সেজন্যও আমলের সাথে সাথে আল্লাহর রহমতের আশাই আমাদের পাথেয়। পবিত্র কুরআনে কারীমে ও হাদীস শরীফে আমাদের জন্যে রয়েছে আশাজাগানিয়া অনেক বাণী। যে হাদীসটি আমরা উপরে উল্লেখ করেছি সেটিই আবার লক্ষ করুন- সুখী-সমৃদ্ধ পরকাল নির্মাণে কীভাবে আমাদের আশাকে সেখানে জাগিয়ে তোলা হয়েছে!
    আশার উপাদান যে কত ধরনের- তা গুনে গুনে হিসাব করা সহজ নয়। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ করুন-
    আল্লাহ পাক রাহমানুর রাহীম। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। কিন্তু তিনি কাকে ক্ষমা করবেন? কতটুকু অপরাধ ক্ষমা করবেন? কতবার ক্ষমা করবেন? কতক্ষণ ক্ষমা করবেন? এসবের উত্তরে এক কথায় বলা যায়- অপরাধ যত বড়ই হোক, অপরাধী যদি তওবা করে এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। এক্ষেত্রে কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। কোনো নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। শর্ত একটাই- আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা। তাহলেই তিনি ক্ষমা করবেন। অপরাধের ধরন যত জঘন্যই হোক, পরিমাণ যত বেশিই হোক- এগুলো কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত একটি ঘটনা বলি- বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি নিরানবক্ষইজন মানুষকে হত্যা করেছিল। এরপর সে তখনকার সেরা আলেমের সন্ধান করল। লোকেরা তাকে এক পাদ্রী দেখিয়ে দিল। পাদ্রীর কাছে গিয়ে সে জানাল- সে নিরানবক্ষইজন মানুষ হত্যা করে এসেছে। তার জন্য কি এখন তওবার কোনো সুযোগ আছে? পাদ্রী বলল : না, এমন পাপের তওবার কোনো সুযোগ নেই। লোকটি তখন পাদ্রীকেও হত্যা করল এবং খুনের সংখ্যা একশ পূর্ণ করল। এরপর সে আরেকজন সেরা আলেমের সন্ধান করল। লোকেরা তাকে আরেকজন আলেম দেখিয়ে দিল। তার কাছে গিয়ে সে জানাল- সে একশজন মানুষ হত্যা করে এসেছে। এখন কি তার জন্যে তওবা করার সুযোগ আছে? আলেম বললেন : কেন নয়, কে তার তওবাকে বাধা দিয়ে রাখতে পারে! এরপর তিনি তাকে বললেন : ‘তুমি এ এলাকা ছেড়ে অমুক অঞ্চলে চলে যাও। সেখানে কিছু মানুষ আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত করে। তাদের সঙ্গে তুমিও ইবাদত শুরু করে দাও। তোমার এ এলাকায় তুমি আর ফিরে এসো না। জায়গাটি ভালো নয়।’ কথামতো সে চলতে শুরু করল। এ আলেমের নির্দেশিত অঞ্চলটি এখন তার গন্তব্য। কিন্তু অর্ধেক পথ যখন সে অতিক্রম করল, তখনই তার মৃত্যু হল। মৃত্যুর পর শুরু হল আরেক দৃশ্য। তাকে নেয়ার জন্যে রহমতের ফেরেশতাদলও উপস্থিত, আজাবের ফেরেশতারাও উপস্থিত। তাকে নিয়ে দুই দল ফেরেশতার টানাটানি। রহমতের ফেরেশতাদলের বক্তব্য- সে তো তওবা করে আল্লাহর অভিমুখী হয়েই এখানে এসেছে। আর আজাবের ফেরেশতারা যুক্তি দিল- সে তো কখনোই কোনো ভালো কাজ করেনি। দুই দল ফেরেশতার বিবাদ মেটাতে আল্লাহ মানুষরূপে আরেক ফেরেশতা পাঠালেন। সবাই তাকে ফয়সালা করার ভার দিল। এ ফেরেশতা বললেন : তোমরা মেপে দেখ, সে যে অঞ্চলের কাছাকাছি হবে সেখানকার বলেই গণ্য হবে। এদিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অঞ্চল দুটিকে আদেশ করা হল- তার নিজ অঞ্চলটি যেন দূরে সরে যায় আর কাঙ্ক্ষিত অঞ্চলটি যেন কাছে চলে আসে। মাপার পর দেখা গেল, সে তার গন্তব্যের দিকে আধা হাত এগিয়ে আছে। তখন রহমতের ফেরেশতারা তাকে নিয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৬৬
    এমন রহমতের মালিক যে সত্তা, তাঁর কাছে তো আশা করাই যায়। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহগুলোর একটি। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুসারে, একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করা। অন্যায় হত্যা এতটাই জঘন্য! অথচ একে একে একশ জন মানুষকে হত্যা করার পর কৃত তওবাকে তিনি গ্রহণ করে নিলেন!
    কুরআনে কারীমে কত রকম পাপের শাস্তির কথা বলা হয়েছে! কোথাও শাস্তির পরিমাণ নির্ধারিত! আবার কোথাও শুধু বলা হয়েছে ‘মহাশাস্তি’র কথা, কিংবা ‘যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’র কথা। শাস্তির কথা বলে বলেও আবার রহমতের কথা বলেছেন। আশার বাণী শুনিয়েছেন। অপরাধ যত জঘন্যই হোক, খাঁটি মনে তওবা করলে তা কবুল করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। এই যে দেখুন, খ্রিস্টানরা কখনো হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর ছেলে বলে থাকে, কখনো বা ‘খোদা’ই বলে বসে। তাদের এই ধৃষ্টতা কুরআনেই বর্ণিত হয়েছে। সেই বর্ণনার পর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে স্বীয় রহমতের দিকে আহক্ষান করেছেন এভাবে-
    اَفَلَا یَتُوْبُوْنَ اِلَی اللهِ وَ یَسْتَغْفِرُوْنَهٗ  وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.
    তারা কি আল্লাহর কাছে তওবা করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭৪
    ফেরাউন তো নিজেকে খোদা বলেই দাবি করে বসেছিল! তার ঘটনাও পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে বর্ণিত হয়েছে। অথচ এই ভ- স্বঘোষিত খোদাকেও পরম করুণাময় আল্লাহ রহমতের দিকে ডেকেছেন। বিশেষ হেদায়েত ও নির্দেশনা দিয়ে তিনি তাঁর নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে এ ‘নকল’ খোদার কাছে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের একটি সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি-
    اِذْهَبْ اِلٰی فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰی، فَقُلْ هَلْ لَّكَ اِلٰۤی اَنْ تَزَكّٰی، وَ اَهْدِیَكَ اِلٰی رَبِّكَ فَتَخْشٰی، فَاَرٰىهُ الْاٰیَةَ الْكُبْرٰی، فَكَذَّبَ وَعَصٰی، ثُمَّ اَدْبَرَ یَسْعٰی، فَحَشَرَ فَنَادٰی، فَقَالَ اَنَا رَبُّكُمُ الْاَعْلٰی.
    ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। এবং বলো, তোমার কি আগ্রহ আছে যে তুমি পবিত্র হও আর আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথপ্রদর্শন করি, যেন তুমি তাকে ভয় কর? অতপর সে তাকে মহানিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে অস্বীকার করল এবং অবাধ্য হল। এরপর সে পেছনে ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল। সকলকে সমবেত করে উচ্চস্বরে সে ঘোষণা করে বলল : আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক! -সূরা নাযিয়াত (৭৯) : ১৭-২৪
    মিথ্যা প্রভুত্বের দাবিদার যে ব্যক্তি, তার জন্যও উন্মোচিত আসল প্রভুর রহমতের দুয়ার! এমন প্রভুর কাছে তো আশা করাই যায়। কত সুস্পষ্ট তাঁর ঘোষণা-
    قُلْ یٰعِبَادِیَ الَّذِیْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ  اِنَّ اللهَ یَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا  اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.
    হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। সন্দেহ নেই, আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু। -সূরা যুমার (৩৯) : ৫৩
    আল্লাহ তাআলার রহমত যে কত ব্যাপক- তা কল্পনা করার জন্যে একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
    جَعَلَ اللَّهُ الرَّحْمَةَ مِئَةَ جُزْءٍ فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ جُزْءًا وَأَنْزَلَ فِي الأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا فَمِنْ ذَلِكَ الْجُزْءِ يَتَرَاحَمُ الْخَلْقُ حَتَّى تَرْفَعَ الْفَرَسُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أَنْ تُصِيبَهُ.
    আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগ করেছেন। নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন নিরানবক্ষই ভাগ। একভাগ পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে। সেই এক ভাগের কারণেই পুরো সৃষ্টিজগত পরস্পরকে দয়া করে। এমনকি ঘোড়াও তার পা উঁচু করে রাখে যেন তার বাচ্চা কোনো কিছুতে আক্রান্ত না হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০০০
    এবার তাঁর রহমতের ভিন্ন একটি দিক লক্ষ করুন। তিনি আমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছেন- একথা কুরআনেও বলা হয়েছে। আবার সৃষ্টিগতভাবে তিনি আমাদের মাঝে কিছু বন্ধন জুড়ে দিয়েছেন। মানবিকতার টানেই আমরা সেই বন্ধন রক্ষা করি। জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেতে আমরা তাঁর ইবাদত করি। আমরা আমাদের শুধুই ইবাদত দিয়ে বেহেশতে যেতে পারব না ঠিক, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে আমাদের ইবাদতের সওয়াবকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন দেখুন- শবে কদরের একটি মাত্র রাত ইবাদতে কাটালে হাজার মাসেরও বেশি ইবাদতে কাটানোর সওয়াব পাওয়া যায়; জামাতে নামায পড়লে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব মেলে; মসজিদে হারামে এক রাকাত নামায পড়লে এর সওয়াব বেড়ে যায় এক লক্ষ গুণ ইত্যাদি।
    বলেছিলাম, আমরা আমাদের সুখময় ও সমৃদ্ধ পরকাল নির্মাণের জন্যে আল্লাহর রহমতের আশাবাদী। আমরা আশা করি, তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের সামান্য নেক আমলটুকু কবুল করে নেবেন। এগুলো ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নিজ দয়ায় তিনি ত্রুটিগুলো মুছে দিয়ে আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। এ আশা পোষণ করা ঈমানের দাবি।
    তবে মনে রাখতে হবে, নিজের সাধ্যটুকু বিলিয়ে দিয়ে আশা পোষণ করতে হবে। বীজ বপন না করে চারাগাছের আশা করা যেমন নির্বুদ্ধিতা, তেমনি নেক আমল না করে এবং গোনাহ ছেড়ে তওবা না করে পরকালীন মুক্তির জন্যে আল্লাহ পাকের রহমতের আশায় বসে থাকাও তেমনি বোকামি। আর আশা যদি হয় তওবার দরজা পেরিয়ে নেক আমলকে সঙ্গে নিয়ে, তাহলে সে আশাই পরকালের সফরে মুমিনের সম্বল।

    উচ্চ রক্তচাপে কলা

    Posted by admin on February 27
    Posted in Uncategorized 

    উচ্চ রক্তচাপে কলা

    উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বেলায় প্রাথমিক অবস্থাতেই ডাক্তাররা যে পরামর্শগুলো দিয়ে থাকেন সেগুলো প্রায়ই এ রকম অতিরিক্ত ওজন কমান, সকাল-বিকাল হাঁটুন, টেনশন কমান-রিলাক্স থাকুন। আর খাবারদাবারের বেলায় রয়েছে একগাদা নিষেধাজ্ঞা। কাঁচা লবণ খাবেন না, মদ-গাঁজা ছোঁবেন না, বিড়ি-সিগারেট ফুঁকবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। আর বেশি করে খেতে বলা হয় পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার-শাকসবাজি আর ফলমূল। এই পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস হলো কলা।
    আমাদের অতিপরিচিত ফলটি উচ্চরক্তচাপে কতটা জরুরি তা আর বলার নয়। ডাক্তাররা বলেন, উচ্চরক্তচাপে কলা ওষুধের মতো কাজ করে। বই পুস্তকে তো এই পটাসিয়ামসমৃদ্ধ ফলটিকে রীতিমতো চিকিৎসার অংশ হিসেবেই ধরা হয়েছে। সুতরাং নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এর গুরুত্ব। তাই বেশি বেশি কলা খান, যত পারুন। তবে সাবধান। খালি পেটে কলা না খাওয়াই ভালো। এসিডিটি হতে পারে।

    সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

    জাপান জুড়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বার্ষিক প্রবেশিকা পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে।

    জাপানের ১৫৯টি জাতীয়, প্রিফেকচারাল এবং পৌর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষা শনিবার থেকে শুরু হয়। জানুয়ারিতে সমন্বিত প্রাথমিক রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়।

    টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা সকাল ৮টার কিছু আগে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পরিবারের সদস্য ও স্কুলের শিক্ষকরা তাদেরকে উৎসাহিত করেন।

    টোকিও’র একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র বলেন তিনি তার ওয়ার্কবুক কঠিন ভাবে অধ্যায়ন করেছেন। তার বিশ্বাস তিনি যদি তার প্রকৃত ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারেন তবে পাস করবেন।

    দক্ষিণ পশ্চিম প্রিফেকচার ওইতা’র একজন ছাত্র বলেন তার পরিবার তাকে ইমেইল বার্তার মাধ্যমে উৎসাহ দিয়েছেন।

    মঙ্গলে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে বসতি স্থাপনের চিন্তা

    বেহরোখ খোশনেভিস, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই অধ্যাপক বলছেন- সৌরজগতে আমাদের প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলে মানুষের বসতি স্থাপন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
    কিন্তু তার আগে এমনসব রোবট তৈরি করে মঙ্গলে পাঠাতে হবে যেগুলো থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে এই লাল গ্রহের মাটিতে মানুষের বেঁচে থাকার সকল উপকরণ প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।
    তিনি বলেন, ‘চাঁদকে তুলে রাখার সময় হয়েছে, মানুষের পরবর্তী বড় পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে মঙ্গলের মাটিতে পা দেয়া এবং পৃথিবীর বাইরে তথা এই উষর গ্রহে বসতি স্থাপন করা।’
    সৌরজগতের চতুর্থ এই গ্রহটি এতোটাই ঠাণ্ডা যে সেখানকার শীত ঋতুতে তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৮৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। অক্সিজেনহীন গ্রহটির উপরিভাগ খুবই পাথুরে ও উষর।
    অধ্যাপক খোশনেভিস ২০১১ সাল থেকেই নাসার সঙ্গে মঙ্গলে বসতি স্থাপন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া ২০০৪ সালে তিনি বৈপ্লবিক থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির কনচ্যুয়ার ক্রাফ্টিং (সিসি) আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে একদিন সময়ের মধ্যে ২৫০০ বর্গফুটের একটি বিল্ডিং প্রিন্ট করা যায়।
    এছাড়া ২০১৬ সালেও তিনি নাসার কাছ থেকে পুরস্কৃত হন থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের আরো একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করে, যেটি মঙ্গলের মাটিতে প্রাপ্ত উপকরণ ব্যবহার করেই শূন্য ত্বরণে কোন অবয়ব বা কাঠামো প্রিন্ট করতে সক্ষম।
    ভারতে সম্রাট বাবর না আসলে কী হতো না হতো
    ভারতীয় উপমহাদেশে পরাক্রমশালী মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ছিলেন জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর। তার হাত দিয়েই ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের যাত্রা শুরু হয়।
    গতকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। কিন্তু এই দিনটি যে এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের জন্মদিনও বটে, সেটা খুব কম মানুষই জানেন।১৪৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি উজবেকিস্তানের আন্দিজানে জন্ম হয়েছিল সম্রাট বাবরের। তিনি শুধু ঐতিহাসিক চরিত্র নন, বিতর্কিতও বটে।
    বাবরকে নিয়ে বিবিস বাংলায় প্রকাশিত ্এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের একটা অংশের মানুষ সম্রাট বাবরকে আক্রমণকারী বলে মনে করে থাকেন। আর অযোধ্যায় তাঁর নামাঙ্কিত বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি নিয়ে বহু দশক ধরে বিতর্ক চলছে। আক্রমণকারী হোন অথবা বিজয়ী – কিন্তু বাবর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে খুব বেশী তথ্য নেই। মুঘল সম্রাটদের মধ্যে আকবর বা শাহজাহানের নামই সবচেয়ে বেশী আলোচিত হয়ে থাকে।
    ইতিহাসবিদ হরবংশ মুখিয়ার কথায়, সংস্কৃতি, সাহসিকতা আর সেনা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাবর নি:সন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যদি বাবর ভারতে না আসতেন, তাহলে এই দেশের সংস্কৃতি হয়তো এতটা বিচিত্র হওয়ার সুযোগ পেত না। ভাষা, সঙ্গীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য, পোশাক অথবা খাবার-দাবার – প্রতিটা বিষয়েই মুঘলদের অবদান অনস্বীকার্য বলে মনে করেন মুখিয়া।
    ১২ বছর বয়সে রাজ সিংহাসনে বসেছিলেন বাবর। হরবংশ মুখিয়ার মতে, বাবরের চিন্তাধারায় কখনও হার না মানার একটা মানসিকতা ছিল। তাঁর মাথায় সমরখন্দ দখলের স্বপ্ন ছিল। তিনবার দখল করেছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। যদি তিনি সমরখন্দ দখলে সফল হতেন আর সেখানকার রাজা হিসাবেই থেকে যেতেন, তাহলে হয়তো কাবুল বা ভারত দখল করে রাজত্ব করার কথা তিনি ভাবতেনও না।১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে বিজয়ের বাবর সেখানে একটি মসজিদ বানিয়েছিলেন, যেটা আজও রয়েছে।
    হরবংশ মুখিয়ার মতে সম্রাট বাবর হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম শাসক, যিনি নিজের আত্মজীবনী লিখেছিলেন। ‘বাবরনামা’-তে তাঁর জীবনের সাফল্য আর ব্যর্থতা – দুইয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
    তুর্কি ভাষায় কবিতা লিখতেন বাবর। বাবরনামায় ব্যবহৃত বেশ কিছু শব্দ এখন ভারতে প্রতিদিনের ভাষার অঙ্গ হয়ে গেছে। যেমন ‘ময়দান’ শব্দটা তাঁর জীবনীতেই প্রথমবার দেখা যায়। সেভাবেই অনেক তুর্কি আর ফার্সি শব্দ ভারতীয়দের মুখের ভাষায় ঢুকে গেছে।
    ইতিহাসবিদ মুখিয়ার মতে যুদ্ধ, সাম্রাজ্য পরিচালনার মধ্যেও নিজের পরিবারের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন বাবর।তার মা এবং নানির সঙ্গে যেমন গভীর সম্পর্ক ছিল, তেমনই বোনের কাছেও বাবর ছিলেন এক আদর্শ ভাই। আবার ছেলে হুমায়ূনের প্রতিও ছিল গভীর পিতৃস্নেহ।
    হুমায়ূনের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল, সেই সময়ে বাবর ছেলের শরীর ছুঁয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে পুত্রের অসুখ সারিয়ে দিয়ে তিনি যেন বাবরের প্রাণ কেড়ে নেন, বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, হুমায়ূন সে যাত্রা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু ওই ঘটনার কিছুদিন পরেই বাবর অসুস্থ হয়ে পড়েন আর তারপরেই মৃত্যু হয় তাঁর।
    ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যু পর্যন্ত লাগাতার যুদ্ধ করে গেছেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর।

    একটি ভিত্তিহীন কাহিনী : দুই ব্যক্তির রূহ কবজ করতে মালাকুল মাউতের কষ্ট হয়েছে

    লোকমুখে প্রসিদ্ধ- আল্লাহ মালাকুল মাউতকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মালাকুল মাউত! বনী আদমের রূহ কবজ করতে কি তোমার কখনো কষ্ট হয়নি? মালাকুল মাউত উত্তরে বললেন, জী, দুই ব্যক্তির রূহ কবজ করতে আমার কষ্ট হয়েছে। এক. একবার জাহাজ ডুবে গেলে এক মহিলা কাষ্ঠখ- ধরে সমুদ্রে ভাসছিল। এমতাবস্থায় তার একটি ছেলে সন্তান প্রসব হয়। এমন সময় ঐ মহিলার মৃত্যুর সময় চলে আসে। তো ঐ সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর দিকে তাকিয়ে তার মায়ের জান কবজ করতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। দুই. শাদ্দাদের জান কবজ করতে আমার কষ্ট হয়েছিল; যখন সে তার দুনিয়ার জান্নাত বানায় এবং সেখানে প্রবেশ করার মুহূর্তে এক পা ভেতরে দেওয়ার সাথে সাথে আরেক পা বাইরে থাকা অবস্থায়ই তার মৃত্যুর পরওয়ানা চলে আসে আর আমি তার জান কবজ করে নিই।

    আল্লাহ বললেন, ওহে মালাকুল মাউত! সমুদ্রের মধ্যে যে শিশুর মায়ের জান কবজ করতে তোমার কষ্ট হয়েছিল সে শিশুটিই ছিল শাদ্দাদ!

    কেউ কেউ কিসসাটিকে এভাবেও বলে- (সংক্ষেপে) …জনমানবশূন্য মরুভূমির মধ্যে সদ্যভূমিষ্ঠ দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়ের জান কবজ করতে… এবং এক অশীতিপর বৃদ্ধ কামারকে তার লাঠির নিচের অংশে লোহা লাগিয়ে দিতে বলছিল, যাতে লাঠিটি অনেক বছর টেকসই হয়। এমতাবস্থায় বৃদ্ধের মৃত্যু চলে আসে আর আমি তার জান কবজ করি। তো এ কথা শুনে আল্লাহ বলেন, ঐ শিশু ও এই বৃদ্ধটি একই ব্যক্তি।

    কেউ কেউ এভাবেও বলে, আল্লাহ মালাকুল মাউতকে জিজ্ঞাসা করলেন, বনী আদমের রূহ কবজ করতে তোমার কখনো কান্না আসেনি? মালাকুল মাউত উত্তরে বললেন, হে আমার রব! বনী আদমের রূহ কবজ করতে গিয়ে আমি একবার কেঁদেছি, একবার হেসেছি এবং একবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছি। …জনমানবশূন্য মরুভূমিতে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর মায়ের জান কবজ করতে গিয়ে শিশুটির কান্না ও অসহায়ত্ব দেখে কেঁদেছি। আর ভয় পেয়েছি এক আলেমের জান কবজ করতে গিয়ে। আমি যখন তার জান কবজ করতে যাই তো তার কামরা থেকে এক নূর বের হয় তা দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। আল্লাহ বললেন, ঐ আলেমই হল মরুভূমির ঐ শিশু; তাকে আমি লালন-পালন করেছি।

    (মালাকুল মাউত বলেন,) আর এক ব্যক্তি মুচির কাছে তার জুতা দিয়ে বলল, এটা এমনভাবে সেলাই করে দাও যাতে এক বছর পরতে পারি। সে ঐ জুতা পায়ে দেয়ার পূর্বেই তার জান কবজ করেছি আর হেসেছি- কয়েক মুহূর্ত তার হায়াত নেই আর সে এক বছরের জন্য জুতা ঠিক করছে।

    যাইহোক এগুলো সবই ভিত্তিহীন কিসসা-কাহিনী। কোনো নির্ভরযোগ্য সনদে তা বর্ণিত হয়নি।

    ইতিপূর্বে এক সংখ্যায় আমরা শাদ্দাদের বেহেশত কেন্দ্রিক কিসসা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম- শাদ্দাদের বেহেশতের কাহিনীর কোনো ভিত্তি নেই, এর কোনো অস্তিত্ব নেই। (আলইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাউযূআত ফী কুতুবিত তাফসীর ২৮২-২৮৪)। তেমনি এই ঘটনায়ও আমরা শাদ্দাদের বেহেশতের আলোচনা দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং তা কখনোই সত্য হতে পারে না।

    এছাড়াও এ ঘটনায় আমরা আরেকটি বিষয় দেখতে পাচ্ছি, শাদ্দাদের মত নাফরমানের জান কবজ করতে মালাকুল মাউতের কষ্ট হচ্ছে; সে তার আল্লাহদ্রোহিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে চাচ্ছে এবং আল্লাহদ্রোহিতায় লিপ্ত রয়েছে অথচ মালাকুল মাউত তার জান কবজ করতে কষ্ট পাচ্ছেন। এটি এ ঘটনা বাতিল হওয়ার আরেকটি প্রমাণ।

    আল্লাহ আমাদের এ জাতীয় অলীক কিসসা-কাহিনী বলা ও বিশ্বাস করা থেকে হেফাজত করুন।

    দিবসে জাপান স্টাডি সেন্টারের শ্রদ্ধা নিবেদন

    আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান স্টাডি সেন্টার।
    সকালে সেন্টারের পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত ছিলেন সেন্টারের প্রভাষক ড. দিলরুবা শারমিন, লোপামুদ্রা মালেক এবং নাসিয়া জামান।
    এ সময় সেন্টারের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মকচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

    গড় বয়স যে দেশে ৯০!

    Posted by admin on February 22
    Posted in Uncategorized 

    গড় বয়স যে দেশে ৯০!

    বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭০.৩। নারীদের ক্ষেত্রে ৭৩.১। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গড় আয়ু যথাক্রমে ৭৮.৭৪ ও ৮১.৫, সেখানে একটি দেশের গড় আয়ু ৮২.৩। তার থেকে অবাক করা বিষয়, দেশটির নারীদের গড় আয়ু ৯০ বছরের বেশি!
    এই দেশটির নাম দক্ষিণ কোরিয়া। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের চালানো জরিপ অনুসারে বিশ্বে সবচাইতে বেশি গত আয়ু থাকা নারী হবে দক্ষিণ কোরিয়ার। ৩৫টি দেশর ওপর জরিপ চালিয়ে তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের গড় আয়ু হবে ৯০ বছর। বর্তমানে তাদের গড় আয়ু ৯০ এর কাছাকাছি রয়েছে বলেও জানায় তারা।
    কিন্তু এই গড় আয়ু নিয়ে হওয়া গবেষণার ফলাফল দেখে দুশ্চিন্তায় পরতে পারে দক্ষিণ কোরিয়া। কেননা, তাদের বয়স্ক ভাতা ও পেনশন প্রদানের জন্য বড় আকারের বাজেট রাখতে হবে ভবিষ্যতে।
    গড় আয়ুকে দক্ষিণ কোরিয়ার এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাজিদ এজ্জাতি বলেন, অনেক দিক থেকেই সঠিক কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শিক্ষা ও পুষ্টির মত গুরুত্বপূর্ণ খাত গুলোতে সাম্য এনে উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে দেশটি।
    তিনি আরো বলেন, এগুলো ছাড়াও স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপ থেকেও নিজেদের দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে তারা।
    তাদের এই গবেষণা রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বে গড় আয়ুতে সবচাইতে এগিয়ে থাকা জাপান তার অবস্থান হারাবে। গড় আয়ু অনুসারে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা দেশটি নারীদের গড় আয়ুর ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া ও ফ্রান্সের পেছনে পড়ে যাবে। দেশটির পুরুষদের গড় আয়ুও ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে বলে গবেষণা রিপোর্টটিতে বলা হয়।

    প্রযুক্তি : প্রযুক্তির অপব্যবহার

    গত মাসের শেষের দিকে বিটিআরসি জানিয়েছে যে ‘বাংলাদেশে ইন্টারনেট-পর্নোগ্রাফি ও আপত্তিকর কন্টেন্ট প্রকাশ বন্ধের প্রক্রিয়ার শুরুতে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৫৬০ টি সাইট বন্ধ করেছে।’

    এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। ফাঁক ফোকর কতটুকু বন্ধ করা যাবে বা করা হবে সে আলোচনায় না গিয়ে আপাতত এই পদক্ষেপটিকে সাধুবাদযোগ্য বলা প্রয়োজন। প্রযুক্তির নামে এখন যে এক প্রকারের ‘হিস্টিরিয়াগ্রস্ততা’- এ অবস্থায় এ পদক্ষেপও কম নয়! এটা প্রমাণ করছে পরিস্থিতি আসলেই কত ভয়াবহ।

    একটি দৈনিকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেসরকারী সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ শতাংশ নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখছে। (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, পৃ. ১১)

    এই প্রজন্মের বর্তমান ও ভবিষ্যত নানা দিক থেকে চরম ঝুঁকিগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণেই হয়তো বাধ্য হয়ে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। যে কারণেই নেয়া হোক, এখন এই বোধোদয় প্রয়োজন যে, মানুষের জীবনে সংযমের কোনো বিকল্প নেই। সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য এ এক বিকল্পহীন ব্যাপার। মনের সকল ইচ্ছা পূরণ করা, এককথায় প্রবৃত্তিপরায়ণতা মানুষের সুস্থতা ও সুখী-সুন্দর জীবনের জন্যই হুমকি। আর এর জন্য যেমন দরকার ব্যক্তিগত চেতনা তেমনি দরকার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ।

    এই চেতনাও প্রয়োজন যে, যৌনতা জীবনের একটি অংশমাত্র; এটিই জীবন নয়। আর জীবনের এই অংশেও অতি প্রয়োজন সংযম রক্ষা । কারণ এক্ষেত্রের স্বেচ্ছাচারও একজন মানুষের শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

    ইসলাম এই সীমা-সরহদই স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, যা রক্ষা করা মানুষের নিজের স্বার্থেই প্রয়োজন। এ কারণে যে বন্ধুরা জীবন-যাপনে ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে অমনোযোগী এবং যারা ইসলামের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরোধী তাদের জন্য বেদনাবোধ হয় বৈকি।

    সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল অনেক বড় আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘৮০ থেকে ৭০ শতাংশ পারলেও বড় কাজ হবে।’ এই আগ্রহটা ইতিবাচক। সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করা উচিত। সদিচ্ছা ও নিষ্ঠা থাকলে কিছু সফলতাও যে আসবে না, তা নয়। কিন্তু একইসাথে এই কথাটিও মনে রাখলে ভালো হবে যে, এটি খুবই সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কিছু সুফল পাওয়ার মতো একটি ব্যবস্থা। গোটা সমাজ-ব্যবস্থা যখন এক ধারায় চলে তখন দু’এক জায়গায় কিছু বিধি নিষেধ বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না।

    এখানেই বড় পার্থক্য সমাজ-সংস্কারের ইসলামী ব্যবস্থা ও তথাকথিত প্রগতিবাদী ব্যবস্থায়। ইসলামেও দৃষ্টির সংযমের সুস্পষ্ট বিধান আছে। কিন্তু ইসলাম যখন দৃষ্টির সংযমের বিধান দিয়েছে তখন একটি মাত্র বিচ্ছিন্ন বিধান দেয়নি, ঐ ব্যবস্থাটাও দিয়েছে, যা এই সংযমের পক্ষে সহায়ক। ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থায় সতর থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের সম্পর্ক ও লেবাস-পোষাক পর্যন্ত নানা বিষয়ে এবং ব্যক্তি ও পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা-দীক্ষা,বিচরণ-উপার্জন, সংস্কৃতি-বিনোদন, পর্ব-উৎসব প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত এক ব্যবস্থা, যা দৃষ্টির সংযম থেকে শুরু করে চারিত্রিক শুদ্ধতা রক্ষা পর্যন্ত পবিত্রতার সব কিছুকেই সহজ করে তোলে। আর এই ব্যবস্থার সাথে রয়েছে ইসলামের খোদাভীতি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য, আখিরাতে জবাবদিহিতার অনুভূতির মতো গভীর চেতনা ও বিশ্বাসের পৃষ্ঠপোষকতা, যা একজন মানুষকে সংযমের বিধান পালনে স্বতঃস্ফূর্ততা দান করে। সারকথা এই যে, ইসলামে একেকটি বিধানের পেছনে একেকটি ব্যবস্থা কাজ করে তেমনি এর প্রতিটি বিধান ইসলামী চেতনা ও বিশ্বাসের গভীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। এটা তার সাফল্যের এক বড় কারণ। আর এ কারণে বর্তমান প্রতিকূল স্রোতেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর সাফল্যের উদাহরণ একেবারে কম নয়।

    পক্ষান্তরে এখনকার প্রগতিবাদী সমাজে অপারগতাবশত যে সকল সংযমের বিধান বা ব্যবস্থা কখনো কখনো আসছে এগুলো সাধারণত সাফল্যের মুখ দেখছে না। কারণ, এসব বিধান ও ব্যবস্থা ‘বিচ্ছিন্ন’ ও ‘আরোপিত’। অর্থাৎ বিশেষ কোনো ক্ষেত্রের ঐ বিধানটি এসংক্রান্ত ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সাংঘর্ষিক। যেমন, আলোচ্য বিষয়টিই ধরুন। এখানে বিশেষ একটি ক্ষেত্রে একটি বিধি-নিষেধ আরোপিত হলেও নারী-পুরুষের সম্পর্ক, মেলা-মেশা, লেবাস-পোষাক ও অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রচলিত ধারাটা ঐ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বরং বলা যায়, বিদ্যমান পরিবেশ-পরিস্থিতির একটি বড় অংশ দৃষ্টির স্বেচ্ছাচারের অনুকূল ও প্রেরণাদানকারী। এ অবস্থায় এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কোনো পদক্ষেপ কীভাবে সফল হতে পারে? তাছাড়া এই বিধি-নিষেধ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করার মতো শক্তিশালী কোনো চেতনা ও প্রেরণাও তো কার্যকর নেই। বরং নানাভাবে ঈমান ও তাকওয়ার চেতনাকেই দুর্বল ও বিলুপ্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ফলে এইসকল বিধি-ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে অনেকটাই ‘আরোপিত’ প্রকৃতির। কাজেই ফাঁক ফোকর খোঁজার ব্যাপারটা অনেক বড় ও ব্যাপকভাবেই এসে যাচ্ছে। এ কারণে সত্যিকার অর্থেই জাতি ও সমাজকে অশ্লীলতা ও তার কুফল থেকে রক্ষা করতে হলে ঈমান ও তাকওয়া;বিশ্বাস ও খোদাভীতির চর্চার কোনো বিকল্প নেই। চিন্তা-চেতনায়, বিশ্বাস ও কর্মে ইসলামী শিক্ষা ও জীবনধারা অনুসরণের দাওয়াতই আল্লাহর ইচ্ছায়- ব্যক্তি ও সমাজকে আত্মসংযমের পথে নিয়ে আসতে পারে। তখন দায়িত্বশীলদের পক্ষ হতে অন্যায়-অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ-আয়োজনগুলোও সফলতার মুখ দেখবে।

    এই সংযম ও নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই সত্যিকারের প্রগতি ও চিন্তার মুক্তির পরিপন্থী নয়; বরং তার সহায়ক ও পৃষ্ঠপোষক। দৃষ্টির সংযম থেকে শুরু করে চরিত্র ও নৈতিকতার শুদ্ধি পর্যন্ত গোটা ব্যবস্থাটা ব্যক্তি ও সমাজের সুস্থতার জন্যই প্রয়োজন। সমাজ যদি সুস্থ থাকে তবেই না প্রগতি ও প্রযুক্তি। অসুস্থ মৃতপ্রায় সমাজে প্রযুক্তি ও প্রগতি কী কাজে আসবে ?

    জাপানের আকাশসীমায় ঢোকার রেকর্ড রাশিয়া ও চীনের যুদ্ধবিমানের

    জাপানের আকাশসীমায় চীন ও রাশিয়ার বিমান ঢুকে পড়ার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর এপর্যন্ত এক হাজার বারের বেশি দেশটির আকাশসীমায় ঢুকে পড়া চীন-রাশিয়ার বিমানের গতিরোধ করেছে জাপানের বিমানবাহিনী। জাপানের স¤প্রচার সংস্থা এনএইচকে দেশটির সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৭৬ ভাগ ক্ষেত্রে চীনা এবং ২৩ ভাগ ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিমান জাপানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে। এসব বিমানের গতিরোধ করতে জাপানের বিমানবাহিনীর জেট বিমান পাঠাতে হয়েছে। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব চীনসাগরের দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বিরোধে জাপানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করায় চলতি মাসে উদ্বেগ প্রকাশ করে চীন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের মধ্যে এক বৈঠকে এ সমর্থন ঘোষণা করা হয়।

    রোহিঙ্গা ইস্যু : মানবিক না ধর্মীয় এ বিতর্ক কেন?

    আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। শান্তির বাণীর শ্লোগানধারী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সূচীর সরকারী বাহিনী সিনাজুরিও দেখিয়ে চলেছেন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা নিজেরা তদন্ত করে আরাকানে কোনো নির্যাতন হয়নি বলে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে দিয়েছেন। এ যেন পুলিশের মামলা পুলিশকে দিয়ে তদন্ত করানো।

    আজকের আলোচনা সে প্রসঙ্গে নয়। আজ ভিন্ন একটি বিষয়ে বলতে চাই। রোহিঙ্গাদের ওপর গত বছরের শেষের দিকে নির্যাতন শুরু হওয়ার পর সাধারণ ধারার বাইরে গিয়ে অনেক লেখক সংবাদিক, আইনজীবী ভাই-বোনও এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন-আওয়াজ তুলেছেন। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই। স্বদেশ-বিদেশের যে কোনো অন্যায়-অপরাধে তারা এভাবে সোচ্চার হলে জাতি উপকৃত হবে। কিন্তু তাদের অনেকের লেখায় ও কথায় একটি বিষয় উঠে এসেছে, তা হল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তারা বলছেন মানবিক বিবেচনায়, ধর্মীয় বিবেচনায় নয়। এ বাক্যে দোষ ছিল না যদি ঐ ব্যক্তিগণ ইসলাম ধর্মাবলম্বী না হতেন। কিন্তু একজন মুসলমানের জন্য এমন মন্তব্য কিছুতেই মানানসই নয়। কারণ ইসলাম এমন কোনো ধর্ম নয়, যাতে মানবিকতার কমতি আছে; বরং ইসলাম এসেছেই পূর্ণ মানব হওয়ার দাওয়াত নিয়ে, একজন বনী আদম কীভাবে পশুত্বের সকল দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত হয়ে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারে ইসলাম সে শিক্ষাগুলোই প্রদান করে। কথায় এবং শক্তি দিয়ে কারো নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটালে সে মুসলমানই হতে পারে না। মানুষজনকে কষ্ট-ক্লেশে ফেললে সে কিসের মুমিন। ইসলামের নবী সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাগুলোই বলে গেছেন। এক বিখ্যাত হাদীসে তিনি বলেছেন-

    المؤمن من أمنه الناس

    মুমিন সে, যার ব্যাপারে লোকেরা নিরাপদ থাকে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৫৬১

    বিক্ষুব্ধ অনিরাপদ বিশ্বে তিনি শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন আরো দেড় হাজার বছর আগে। গোষ্ঠী-গোত্রের দ্বন্দে হানাহানি-মারামারিতে লিপ্ত লোকগুলোকে মানবিকতার সকল গুণে গুণান্বিত করে গড়ে তুলেছিলেন স্বর্ণমানব হিসেবে। তারই প্রভাবে মুসলমানগণ হাজার বছর যাবৎ ইনসাফের রাজত্ব করেছেন পৃথিবীতে। নববী যুগের পর কয়েক শতাব্দী ব্যাপী সময়টি ‘খাইরুল কুরুন’ তথা স্বর্ণযুগ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে ঐ শ্রেষ্ঠ মানবদের কারণেই, যারা ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত ও ঈমানগুণে গুণান্বিত হয়ে নিজেদের মধ্যে ধারণ করেছিলেন মানবিকতার সকল গুণ।

    আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ঘোষণা তো এসেছে মাত্র গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে। সে থেকে ৬ দশক পার হলেও শান্তি আসেনি পৃথিবীতে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সমানাধিকার, এই স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা- কত শ্লোগান, কত শ্রম্নতিমধুর নাম শুনল বিশ্ববাসী। কিন্তু মানুষ পেল না তার মানবিক অধিকারগুলো। তাহলে বর্তমান বিশ্ব নিয়ে যারা চিন্তা করেন তাদের কি একবার ভেবে দেখা দরকার নয় যে, ঐ কারণটি কী ছিল, যার মাধ্যমে ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তির বিপস্নব ঘটিয়ে ফেললেন অল্প কয় বছরে। আর এখন কী নেই, যার কারণে সফলতা আসছে না। আজ সে বিষয়টি থাক। আমরা যে কথা বলছিলাম অর্থাৎ কর্ম ও মানবিকতা একজন মুসলমান নিজ ধর্ম নিয়ে যথাযথভাবে পড়াশুনা করলেই জানতে পারবে, ইসলাম যে মানবিকতা শিখিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে তার নজির না কেউ আগে আনতে পেরেছে, না এর চেয়ে ভাল কোনো পথ ও আদর্শ দেখানো সম্ভব। ইসলামে মানবাধিকারের সূত্র ও মূলনীতিগুলো আলোচনার জন্য তো দীর্ঘ পরিসর দরকার, এখানে নমুনা স্বরূপ দু-একটি মূলনীতি পেশ করা হল।

    কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

    یۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنٰكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّ اُنْثٰی وَ جَعَلْنٰكُمْ شُعُوْبًا وَّ قَبَآىِٕلَ لِتَعَارَفُوْا اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقٰىكُمْ   اِنَّ اللهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ.

    হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছু জানেন; সমস্ত খবর রাখেন। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১৩

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَلَا إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ، وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ، أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ، وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ، وَلَا أَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ، وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ، إِلَّا بِالتَّقْوَى.

    হে মানুষ! সাবধান তোমাদের রব একজন, তোমাদের বাবাও একজন। সাবধান! কোনো আরবীর শ্রেষ্ঠত্ব নেই আজমীর উপর; আর না কোনো আজমীর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে আরবীর উপর। না লালবর্ণের শ্রেষ্ঠত্ব কালো বর্ণের উপর, আর না কালো বর্ণের শ্রেষ্ঠত্ব লালবর্ণের উপর। শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাকওয়ার দ্বারা। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৪৮৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪৭৭৪

    তাহলে একজন মুসলমান ধর্ম ও মানবিকতাকে আলাদা করতে পারে কীভাবে। সে তো বলবে মানুষ যা কিছুকে মানবিকতা ভাবে ইসলাম এর চেয়েও ভালো ও সুন্দর মানবিক গুণাবলীর সবক দিয়েছে।

    আরেকটি কথা হল- একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের দুঃখে দুঃখী হওয়া এবং ন্যায়ের ক্ষেত্রে তার পক্ষে কথা বলা কি সাম্প্রদায়িকতা বা দোষের কিছু। হাতে গোনা তথাকথিত অতি ভদ্র কিছু মুসলিম নেতা, লেখক, বুদ্ধিজীবী ছাড়া অন্য ধর্মের লোকেরা কি তাদের ধর্মের লোকদের পক্ষে কথা বলতে, কাজ করতে কোনো সংকোচ বা লজ্জাবোধ করে? এই যে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি, সংবিধানের দিক থেকে যা সম্পূর্ণ সেক্যুলার, যেখানে আইনের বিচারে কোনো ধর্মের প্রাধান্য নেই; কার্যক্ষেত্রে বাস্তবতা যদিও ভিন্ন- সে দেশের সরকারও তো বিশ্বের কোথাও হিন্দুদের কিছু হলে গর্জে ওঠে। আশপাশের দেশগুলোর হিন্দুদের ঐ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়, এ নিয়ে তারা তো কোনো রাখঢাক করে না। কিন্তু আমরা নিজ ধর্মের নির্যাতিত লোকদের পক্ষে বলতে গিয়ে লজ্জায় মাথা নত করে ফেলি; পাছে কে কী বলে সেই ভয়ে আগেই বলে দেই- আমি মানবিক দৃষ্টিতে বলছি; ধর্মীয় বিবেচনায় নয়!

    আচ্ছা অত্যাচারী বর্মী হায়েনারা কি সেখানে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মের কাউকে নিপীড়ন করছে? রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তো মুসলিম হওয়ার কারণেই নিপীড়িত হচ্ছে।

    সবশেষে আমরা দেশের সকল মুসলমানদের মানবিকতা ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার এবং সম্ভাব্য সকল উপায়ে তাদের পাশে দাঁড়াবার আহক্ষান জানাচ্ছি। সম্ভব হলে তাদের দেশেও সাহায্য পৌঁছানো কর্তব্য। আর সহায্য-সহযোগিতা তাদের হাতে যেন পৌঁছে সে ব্যপারে সতর্ক থাকাও কর্তব্য।

    বপ্নময় শেষ দিনের অপেক্ষা
    হায়দারাবাদ (ভারত) থেকে : প্রথম ইনিংসে ৬৮৭/৬ স্কোরে ইনিংস ঘোষণার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করবে ভারত, এমনটা কি ভেবেছে কেউ? অথচ, হায়দারাবাদ টেস্টে সেই ভারতকেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হয়েছে! বাংলাদেশ ফলো অন এড়াতে পারেনি, তারপরও অশ্বিন-যাদেজার মতো সময়ের সেরা স্পিন জুটির ভয়ংকর ছোবল সামাল দিয়ে, ভারতের পেস অ্যাটাকের জবাব দিয়ে মুশফিকুরের সেঞ্চুরিতে (১২৭) ভারতের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর (৩৮৮), ৫৩৫ মিনিট ব্যাটিংয়ে কাটিয়ে দেয়া কি কম গর্বের? চতুর্থ দিনে শেষ ৪ পার্টনারশিপের ৬৬ এবং ১০৮ মিনিট কাটিয়ে দেয়ায়ও যে গর্বে বুক ফুলে যাবার কথা বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের। ঝটপট রান তোলার মন্ত্রে চতুর্থ ইনিংস ১৫৯/৪ স্কোর তুলে বাংলাদেশকে ৪৫৯ রানের চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছে কোহলীরা, চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে কিন্তু সে আশার প্রতিফলন দেখতে পারেনি ভারত। বরং চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে তামীম, সৌম্য, মুমিনুলকে হারিয়েও প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকে আছে বাংলাদেশ দল। চতুর্থ ইনিংসে ৪১৮’র বেশি চেজ করে জেতার অতীত নেই বলে এতোটা দুঃসাহস দেখানোর কথা নয় বাংলাদেশ দলের। তবে অবশিষ্ট ৭টি পার্টনারশিপের কাছে শেষ দিনটি কাটিয়ে দেয়ার দাবিটা খুব কি বড়?
    চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশকে ১২৫ ওভারের চ্যালেঞ্জ দিয়েছে ভারত। চতুর্থ ইনিংসে এরচেয়েও বেশি ওভার কাটানোর অতীত আছে বাংলাদেশের।  ২০০৫ সালে ১৪২ ওভার পাড়ি দিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট বাঁচানোর সেই অতীত থেকে টনিক পেতে পারে বাংলাদেশ দল। তবে ভারতের মাটিতে টেস্টে চতুর্থ ইনিংসের পরীক্ষায় ১৩৫ ওভার ব্যাটিংয়ে কাটিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর অতীত শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ডের,১৯৯৯ সালে মোহালীতে। চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে জাদেজা অশ্বিন যেভাবে পেয়েছেন টার্ন, সৌম্য (৪২) এবং মুমিনুল (২৭) সিøপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন, তাতে ৫ম দিনের উইকেটে না জানি বল কতোটা ঘোরে ? এটাই ভয়।
    ৮১ রানে ব্যাটিংয়ে থেকে তৃতীয় দিন শেষ করেও সেঞ্চুরির পথটা সহজ মনে হয়নি মুশফিকুরের। চতুর্থ দিনের প্রথম ওভারে ভুবনেশ্বরের সুইং ডেলিভারিতে মিরাজ বোল্ড আউটে (৫১) ফিরে এলে ক্যারিয়ারের ৫ম টেস্ট সেঞ্চুরির লক্ষ্য পূরনে একটু ঝুঁকিই নিতে হয়েছে মুশফিকুরকে। ৪৩ মিনিট সঙ্গ দিয়ে তাইজুল ফিরে আসায় নিয়ে অনোন্যপায় হয়ে ইশান্তকে ফাইন লেগের উপর দিয়ে ছক্কায় ৮৭ থেকে পৌছে গেছেন ৯৩এ। সেঞ্চুরির শটটি সেখানে বাউন্ডারিÑউমেষকে দর্শনীয় ফ্লিক শটে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫ম সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে লেগেছে তার ৩৪৩ মিনিট, ২৩৫ বলে ১৩ চার ১ ছক্কায় ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি থেমেছে ১২৭এ। অশ্বিনের লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচিং ডেলিভারিকে সুইপ করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে দিয়ে এসেছেন ক্যাচ মুশফিকুর রহিম। টেস্টের তৃতীয় দিনে ৩ হাজারী ক্লবের মাইলস্টোনে দিয়েছেন পা মুশফিক, তাকে ফিরে টেস্টে দ্রুততম আড়াইশ’ ক্লাবের সদস্যপদ পেলেন অশ্বিন। ৫২তম টেস্টে এসে ৩ হাজারী ক্লাবের মাইলস্টোনে দিয়েছেন পা, করেছেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিÑ ওয়েলিংটনে ১৫৯’র পর হায়দারাবাদে ১২৭। ৫টি সেঞ্চুরির মধ্যে ৪টিই আবার দেশের বাইরে মুশফিকুরের। ২০১৩ সালে গল টেস্টে ২০০, ২০১৪ সালে জ্যামাইকা টেস্টে ১১৬, ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে ১৫৯’র পর হায়দারাবাদে ১২৭।
    ভারতের বিপক্ষে টেস্ট রেকর্ডটা মুশফিকুরের দারুণ। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি উদযাপনে নিয়েছিলেন তিনি ভারতকে বেছে। তাও আবার প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরি। উদযাপন করেছিলেন তা ১৭তম টেস্টে এসে। ৫২ টেস্টে ইনিংসে গড় তার যেখানে ৩৪.৬৪, সেখানে ভারতের বিপক্ষে ৪ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরিতে ৩১৪ রানে গড়টা ৬২.৮০। রঙ ছড়ানো চতুর্থ দিনে তাসকিন (২/৪৩), সাকিব (২/৫০) নামতা গুনে ২টি করে শিকার করেছেন। দ্রুত রান তোলার প্রবনতায় তৃতীয় ইনিংসে ভারত টপ অর্ডার পুজারার হার না মানা ফিফটি (৫৪) ছিল উল্লেখযোগ্য।
    পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ দল তাকিয়ে মাহামুদুল্লাহ (৯), সাকিবের (২১) অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপের দিকে। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুরকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট আতিথ্যে যেভাবে এই চারটি দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে শেষ দিনকেও স্মরণীয় করে রাখার প্রত্যয় বাংলাদেশ দলের।

    ‘চান্দ্রমাস’ বই : একটি পর্যালোচনা : কী দিতে চান সে নিয়েই বিভ্রান্তি

    [নোট : সারা বিশ্বে একই তারিখে রোযা ও ঈদ পালনের দৃষ্টিভঙ্গির উপর একটি দীর্ঘ পর্যালোচনা পাঠকবৃন্দ ইতিপূর্বে মাসিক আলকাউসারে পড়েছেন, যার শিরোনাম ছিল ‘মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের এক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন; একই দিনে ঈদ-প্রসঙ্গ দায়িত্বশীলদের উপর ছেড়ে দিন’।  ঐ প্রবন্ধের শেষ অংশ ছিল ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ এনামুল হক সাহেবের বই ‘চান্দ্রমাস’-এর উপর পর্যালোচনা। সে সময় উক্ত বইয়ের উপর লিখিত পর্যালোচনা অসম্পূর্ণ রেখেই বিরতি দেয়া হয়েছিল। এখন এ বিষয়টি আবার আলোচনায় আসাতে ঐ বইয়ের উপর লিখিত পর্যালোচনার আরো কয়েকটি অনুচ্ছেদ ছেপে দেয়া মুনাসেব মনে হল। এরপর ইনশাআল্লাহ প্রবন্ধের সর্বশেষ অধ্যায় ছাপা হবে। আল্লাহ তাআলা এ প্রবন্ধকে আমার ও আমাদের সকলের জন্য উপকারী করুন। আমীন! -মুহাম্মাদ আবদুল মালেক]

    গোটা বইয়ে তিনি যা কিছু লিখেছেন তাতে তার মূল দাবি হচ্ছে, সারা বিশ্বে একই তারিখে রোযা শুরু করা ফরয এবং একই তারিখে ঈদ পালন করা ফরয!

    দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে যাবার চৌদ্দশ বছর পর যে জিনিসের কল্পনা সবেমাত্র অস্তিত্ব লাভ করেছে, তাকে শরীয়তে ইসলামীর ফরয কাজ বানিয়ে দেওয়া স্পষ্টতই এর প্রবক্তার সত্যতাশূন্য হওয়া কিংবা সুস্থমস্তিষ্ক বঞ্চিত হওয়ার প্রমাণ। তথাপি ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এতেই আনন্দ পান যে, এই ময়দানে তিনি অবতীর্ণ হবেন এবং দ্বৈততা ও স্ববিরোধিতার শিকার হতে থাকবেন! তিনি বড্ড পেরেশান, এই ডিম্বাকৃতির পৃথিবীময় একই তারিখে রোযা ও ঈদ পালনকে ফরয বলবার যে নতুন শরীয়ত উদ্ভাবিত হয়েছে, তার পক্ষে যুক্তি প্রমাণটা কোত্থেকে হাজির করবেন, আর এই একসঙ্গে শুরু ও একত্র পালনের ভিত্তি ধরবেন কোন জিনিসকে…?! ভালো হতো যদি তিনি নিজেই এই অস্থিরতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের একটা কিছু মীমাংসা করে নিতেন এবং নির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত একটি মতের উপর  থিতু হয়ে পাঠকদেরকে কিছু উপহার দিতেন। কিন্তু তা হয়নি। যা ঘটেছে তা রবং এর উল্টো! বইয়ের সর্বত্র স্ববিরোধী কথাবার্তা লিখে শুধু নিজের দ্বিধাদ্বন্দ্বেরই ঘোষণা দিয়ে গেছেন। শেষফল- শূন্য!

    কিসের ভিত্তিতে সমগ্র বিশ্বে একই সঙ্গে রোযা ও ঈদ পালন করা যাবে, এ ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আমাদের কতগুলি পরামর্শ দিয়েছেন- একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন :

    ১. সর্বপ্রথম  ‘দেখা’ ধর্তব্য হবে

    একাধিকবার তিনি বলেছেন, পৃথিবীর যে অঞ্চলে সর্বপ্রথম চাঁদ দৃষ্টিগোচর হবে তাকেই ভিত্তি ধরতে হবে। সর্বপ্রথম দেখাকে ভিত্তি মেনে সারা বিশ্বে একই তারিখে রোযা শুরু করা এবং ঈদ পালন করা জরুরি। তিনি লিখেছেন,

    ‘পৃথিবীর যে কোনো স্থানে প্রথম যখন নতুন চাঁদ দেখা যাবে তাকেই বলা হবে নবচন্দ্র’।

    ‘তাই একই পৃথিবীতে একই মাসে একাধিক নতুন চন্দ্রোদয়  হতে পারে না। অতএব, প্রথম চন্দ্রোদয় দিয়েই মাসের প্রথম দিন শুরু হবে; আর ২৪ ঘণ্টা পরে ২য় দিন আরম্ভ হবে।’

    ‘এভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারা পৃথিবীর মানুষ নতুন চন্দ্র দিয়ে রোযা আরম্ভ করবে এবং ঈদ উদ্যাপন করবে।’ (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৩০, প্যারা : ৫, ৮, ৯)

    একই কথা পৃষ্ঠা ৩২-৩৩, পর্ব ১৪-এ লিখেছেন। আরো দেখুন, পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৫, পর্ব : ১৬; পৃষ্ঠা : ৩৬, প্যারা : ৯; পৃষ্ঠা : ৮৮, প্যারা : ১০, ১১, ১৬; পৃষ্ঠা : ১১২, ৪৪/১২-১৩ এবং পৃষ্ঠা : ১৭৫, প্যারা : ২। পৃষ্ঠা : ৪৪/১৩, পৃষ্ঠা : ১১২ এবং ১৭৫ পৃষ্ঠায় এই বিধানকে আল্লাহ তাআলা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেয়া বিধান বলে উল্লেখ করেছেন। আর পৃষ্ঠা ৩২-৩৩সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বলেছেন, চার মাযহাব কিংবা তাদের অধিকাংশের এবং ও. আই. সির ফেকাহ একাডেমির সিন্ধান্তও এটাই।

    পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এখানে কয়টা কথা ঠিক আর কয়টা কথা বাস্তবতার খেলাফ; নিছক গায়ের জোরে বলা আর কি! আমি এখন শুধু তার বক্তব্যের স্ববিরোধিতার দিকটাই দেখাতে চাইছি। ভুল-ভালের বিচার তোলা রইল।

    যাইহোক, ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের প্রথম পরামর্শ দাঁড়ালো এই যে, সর্বপ্রথম দেখার ভিত্তিতে সমগ্র বিশ্ববাসীর আমল করা অপরিহার্য। দ্বিতীয় পরামর্শটি হল :

    ২. সৌদির দেখার অনুসরণ করা হোক

    এক জায়গায় লিখেছেন, ‘সৌদি আরব যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত সেহেতু ধারণা করা যায় যে, তারা প্রথম নবচন্দ্রের খবর নিয়েই রোযা/ঈদ পালন করছেন। সেক্ষেত্রে সৌদি আরবকে অনুসরণ করা যায়। তবে বাংলাদেশ যে নিয়মে রোযা/ঈদ পালন করছে তা ঠিক হচ্ছে না। তার চেয়ে সৌদি আরবকে অনুসরণ করা বেশি সমর্থনযোগ্য। তবে বিশ্বে সর্বপ্রথম নতুন চাঁদের শুরুকে অনুসরণ করাই উত্তম কাজ হবে’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৯৩)

    দেখুন, এই বেলায় সর্বপ্রথম দেখার অনুসরণকে বলছেন কেবল ‘উত্তম কাজ’। একটু আগে এটাকেই কুরআন ও সুন্নাহর রেফারেন্সে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর সৌদি আরব কিংবা মধ্যপ্রাচ্যেই প্রথম চাঁদ দেখা যায় এমন ধারণা জ্যোতির্শাস্ত্রের নীতিমালা অনুসারে ভুল এবং জ্যোতির্শাস্ত্রবিদদের স্পষ্ট বক্তব্যেরও পরিপন্থী। স্বয়ং আমার কাছেই আমার প্রশ্নের জবাবে শাস্ত্রজ্ঞদের দেয়া সমাধান উপস্থিত আছে। আর বাস্তব ঘটনার বিচারেও এর অবাস্তব হওয়া খুবই পরিষ্কার। নেটে মুন সাইটিংয়ে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতকৃত চন্দ্রগোলকের নকশার কিছু নমুনা যদি আপনি দেখেন, তাহলে লক্ষ্য করবেন যে, সাধারণত প্রথম দেখা প্রসঙ্গে দূর পাশ্চাত্যের উল্লেখ করা হয়েছে। আর বাস্তবেই চাঁদ দেখার সমীক্ষা নেয়া হলে এমনটাই প্রমাণিত হবে। তবে সেই পর্যালোচনায় যাওয়া এই মুহূর্তে আমার উদ্দেশ্য না। এখন শুধু তার বক্তব্যের স্ব-বিরোধিতার চিত্রটুকু দেখানো উদ্দেশ্য।

    তো প্রথম পরামর্শের বরখেলাফ তার দ্বিতীয় পরামর্শ দাঁড়াল এই যে, সৌদির চাঁদ দেখার অনুসরণ করা হবে। এ সম্পর্কে আরেক জায়গায় লিখেছেন, ‘এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর তা হলো রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সৌদি আরবকে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। শরিয়ার দৃষ্টিতে এই পরামর্শকে সম্পূর্ণ সঠিক বলা যাবে না। কারণ সৌদি আরবের দেখা নবচন্দ্র বিশ্বের জন্য প্রথম নবচন্দ্র নাও হতে পারে। আবার সেটা প্রথম নবচন্দ্র হতেও পারে, যেহেতু সৌদি আরব সেই এলাকায় অবস্থিত যেই এলাকার কোথাও না কোথাও প্রথম নবচন্দ্র দেখা যাবে। তাই বর্তমানে ২/৩ দিন পরে রোযা/ঈদ করে বাংলাদেশে আমরা যে ভুল করছি সেই ভুলের মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হলে সৌদি আরবের অন্ধঅনুকরণ করাটাই ব্যক্তিগত পর্যায়ের জন্য সর্বোত্তম উপায়’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৮৩)

    অথচ নিজেই ৩৬ পৃষ্ঠায় পর্ব ১৮-এর শিরোনাম করেছেন, ‘সৌদি আরবকে অন্ধঅনুকরণ করা যাবে না তবে…’। ‘তবে’র পর বইতেও এরকম কতগুলি ডট রয়েছে।

    অন্ধঅনুকরণ তো এমনিতেই খারাপ, তার উপর নিজেই লিখে এসেছেন যে, অন্ধঅনুকরণ করা যাবে না। এখন বলছেন, সৌদি আরবের অন্ধঅনুকরণই সর্বোত্তম উপায়!!

    সম্মানিত পাঠক! খেয়াল রাখুন, এখানে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব সৌদির দেখার অনুসরণ করতে বলছেন। তার আরেকটি পরামর্শ হলো, সৌদির দেখার পরিবর্তে সৌদি আরবের সরকারি ক্যালেন্ডার ‘তাকবীমু উম্মিল কুরা’ (উম্মুল কুরা পঞ্জিকা)-এর অনুসরণ করা। সেটা ভিন্ন আরেকটি পরামর্শ। তার আলোচনা সামনে আসছে।

    (সর্বপ্রথম দেখা এবং সৌদির দেখা) এই দুই পরামর্শে যাইহোক ইঞ্জিনিয়ার সাহেব চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোযা ও ঈদ পালনের কথা বলছেন। আর প্রথম পরামর্শে তো পরিষ্কার বলেছেন, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সর্বপ্রথম দেখা অনুসারে মাস আরম্ভ করা এবং রোযা ও ঈদ করা অপরিহার্য এবং এটাই আল্লাহ তাআলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম। কিন্তু বইয়ের অধিকাংশ জায়গায় একে রদ করেছেন এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেছেন, কুরআনে জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিাসাবের কথা বলা হয়েছে, ‘দেখা’র কথা নয়। আর হাদীসে যদিও ‘দেখা’র কথা আছে, কিন্তু এটা সেই কালের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে। এখন যামানা বদলে গেছে। অতএব এখন আর এ অনুযায়ী আমল করা চলবে না। বরং জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের নিরীখে মাস শুরু করতে হবে এবং সে অনুসারেই সকল স্থানে একই তারিখে রোযা ও ঈদ পালন করতে হবে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন!

    জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের প্রসঙ্গ তোলা হলে যে কথাটা প্রথমেই চলে আসে তা হলো, জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের বিচারে চান্দ্রমাসের গণনা তো বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং একেক গণনার ভিত্তিতে চান্দ্রমাসের শুরু ও শেষ একেক রকম হবে, তা-ই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হল, কোনো জাতি বা সম্প্রদায় যদি (আল্লাহ রক্ষা করেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষাকে বাদ দিয়ে নতুন চাঁদ দেখার পরিবর্তে জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের ভিত্তিতে রোযা ও ঈদ পালন করতে চায় তাহলে তারা কোন্ ধরনের গণনার অনুসরণ করবে?

    এ ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব উম্মতকে বেশ কয়েকটি উপায় নির্দেশ করেছেন। তার মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি উপায়কে তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম বলে উল্লেখ করেছেন। তারপর এই সবগুলো উপায়ের বিরোধিতা করে একটি নতুন উপায়ও তিনি উদ্ভাবন করেছেন। তারপর নিজেই আবার তার বিরোধিতা করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন!! সামনে দেখুন :

    ৩. এস্ট্রোনমিক্যাল নিউমুনের মাধ্যমে মাস শুরু

    এ বিষয়ে পাঠক তার বিভিন্ন বক্তব্য পর্যালোচনাসহ পড়ে এসেছেন। সেখানে দেখেছেন, এই ভিত্তিহীন বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য তিনি কত ধরনের বিভ্রান্তি ও ছলাকলার আশ্রয় নিয়েছেন এবং আয়াত- یَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِ  (২ : ১৮৯)-এর অর্থ বিকৃত করে কেমন ধৃষ্টতার সাথে একে তার সংস্কারকর্ম বলে দাবি করেছেন! কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার সাহেব যখন নিজেই তার সংস্কারকর্ম (?!)-এর বিরোধিতা করতে শুরু করেন, তখন কারই বা কী করার থাকে! পাঠক এও দেখছেন, তার বইয়ে তিনি কুরআনের তরজমাকারীদেরকে, তাফসীরকারদেরকে এবং গোটা উম্মতে মুসলিমাকে বারবার দোষারোপ করেছেন যে, তারা یَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِ-এর অর্থ বোঝেননি। আর কুরআনের তরজমাকারীগণও এর ভুল তরজমা করেছেন। তিনি বারবার গোঁ ধরেছেন যে, আয়াতে হিলাল বা নবচন্দ্র নয়, বরং অমাবস্যাকালীন দর্শনযোগ্য নয়- এমন চাঁদ দিয়েই মাস শুরু করতে বলা হয়েছে। এই মিথ্যা দাবির স্বপক্ষে দ্বিতীয় আরেকটি মিথ্যার অবতারণা করেছেন যে, কুরআন নবচন্দ্রের খোঁজ জানতে বলেছে হিসাবের মাধ্যমে!!

    এখন দেখুন, গ্রন্থকার নিজেই দু’টো কথার বিরোধিতা করেছেন। বইয়ে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের শুরুর দিকে আয়াত ২ : ১৮৯-এর নিজের বানোয়াট তরজমা লিখে ‘ব্যাখ্যাসহ মন্তব্য’-এর অধীনে লিখেছেন, ‘এর জবাবে আল্লাহ বলেছেন, এই নবচন্দ্র সারা বিশ্বের মানুষের জন্য মাসসমূহ  হিসাব করার মাধ্যম। নতুন চন্দ্রোদয় দিয়ে মাস আরম্ভ হবে। আর পরবর্তী মাস আরম্ভ হবে আরেক নতুন চন্দ্রোদয় দিয়ে’। (চান্দ্রমাস, নবম সংস্করণ, পৃষ্ঠা : ১১২, সপ্তম সংস্করণ, পৃষ্ঠা : ৫৫)

    আরো লিখেছেন, ‘তাই বিশ্বের যে কোনো স্থানেই নূতন চন্দ্রোদয় হলে সারা পৃথিবীতে চান্দ্রমাস আরম্ভ হয়ে যাবে’। (পৃষ্ঠা : ১১২) এ-ও লিখেছেন, ‘এই আরম্ভটা পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে নবচন্দ্র দেখার মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে’।

    দেখুন, নিজেই কত স্পষ্টভাবে বলছেন যে, আয়াতে নতুন চাঁদের প্রথম দেখার মাধ্যমে মাস শুরুর হুকুম দেয়া হয়েছে। এখন, অমাবস্যার চাঁদ তো দেখতে পাওয়া এমনিতেই সম্ভব নয়। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ভাষ্যমতে অমাবস্যার সময় চন্দ্রোদয় হয়ই না। তাহলে এখানে যে তিনি নতুন চন্দ্রোদয়ের মাধ্যমে মাস আরম্ভের কথা বলছেন নিশ্চয়ই সেটা অমাবস্যার চাঁদ নয়।

    আরেক জায়গায় লিখেছেন, ‘পূর্বাকাশে চন্দ্রোদয় এবং পশ্চিমাকাশে সূর্যাস্ত একই সময় সংঘটিত হলে পূর্ণিমা হয়। আর পশ্চিমাকাশে চন্দ্র-সূর্য একই সাথে অস্ত গেলে অমাবস্যা হয়। তাই প্রথম চন্দ্রোদয় দিয়েই পৃথিবীতে চান্দ্রমাস আরম্ভ হবে। বাকি দিনগুলোতেও চন্দ্রোদয় হবে। তবে তা হবে পুরাতন চন্দ্রোদয়। সূরা ইয়াসীন-এর আয়াত- ৩৯-এর মধ্যে এ বিষয়টা আল্লাহ পরিষ্কার করেই বলে দিয়েছেন। তারপর তো আর না বুঝার কিছু নেই’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৩৭, পর্ব : ১৯)

    এখানেও কুরআনের উদ্ধৃতিতে অমাবস্যার পর নতুন চাঁদের প্রথম উদয়কে ভিত্তি বানানোর কথা বলছেন। এরপর তাহলে কেন এই একগুঁয়েমি যে, কুরআন অমাবস্যার চাঁদ দিয়ে মাস আরম্ভ  করতে বলেছে?

    তার বক্তব্যের এই স্ববিরোধিতার দিকেই শুধু এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। দীর্ঘ আলোচনা নয়। তো কী দেখলাম? এক জায়গায় তিনি বলছেন একসঙ্গে রোযা ও ঈদ পালনের ভিত্তি হবে সর্বপ্রথম দেখা। আরেক জায়গায় বলছেন, তা করতে হবে এস্ট্রোনমিক্যাল নিউমুনের ভিত্তিতে। আবার দু’টোকেই বলেছেন কুরআনের নির্দেশ। দু’টোকেই আয়াত ২ : ১৮৯-এরই ব্যাখ্য ও বিধান বলে উল্লেখ করছেন। তবে নতুন চন্দ্রোদয়ের মাধ্যমে মাস আরম্ভ  হবার পক্ষে সূরা ইয়াসীন-এর আয়াত ৩৯-কে বাড়তি হাওয়ালা হিসেবে পেশ করেছেন। ঐ দিকে আবার প্রথম চাঁদ দেখা ছেড়ে সৌদির চাঁদ দেখাকে ভিত্তি বানাতেও বলছেন!

    ৪. চাঁদের আগে সূর্য অস্তমিত হওয়া

    ২১ পর্বে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের জন্য সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের নিখুঁত হিসাব বিজ্ঞানীদের কাছে করা আছে। একইভাবে চন্দ্রোদয় চন্দ্রাস্তের হিসাবও বিজ্ঞানীদের কাছে করা আছে। অতএব প্রতি মাসের শেষে যে কোনো স্থানে সূর্যাস্তের পরে যখন চন্দ্রাস্ত হবে তখনই পৃথিবীতে নবচন্দ্রের শুরু হয়েছে বুঝতে হবে। এর ভিত্তিতে চন্দ্রালোকের ভগ্নাংশের হিসাবসহ বাৎসরিক ক্যালেন্ডার বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই করে রেখেছেন’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৪০, প্যারা : ৭)

    কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমার লঙ্ঘন করে, চাঁদ দেখার পরিবর্তে তিনি যে হিসাবের ভিত্তিতে চান্দ্রমাস শুরু করাতে চান, সেই হিসাবের দ্বিতীয় মাপকাঠি তিনি এখানে এই উল্লেখ করলেন যে, প্রত্যেক মাসের শেষে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে চন্দ্রাস্ত যদি সূর্যাস্তের পরে হয় তাহলে তাই হবে চান্দ্রমাসের শুরু।

    আমরা বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করতে চাই, ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কাছে এ কথার কী অর্থ? তিনি কি একেই এস্ট্রোনমিক্যাল নিউমুন মনে করছেন? যদি তা-ই হয় তাহলে তো জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার দক্ষতার হাল-হাকীকত এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। কেননা জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাথমিক ছাত্রদেরও জানা আছে যে, জ্যোতির্শাস্ত্রীয় ‘নিউমুন’-এর চন্দ্রোদয় ও চন্দ্রাস্তের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ‘নিউমুন’-এর আসল ব্যাপার হল, মিলন বা সংযুক্তি (কনজাঙ্কশন)। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সরল রেখার উপর একত্রিত হওয়া, আর চাঁদ মাঝখানে এসে পড়া। ইতোপূর্বে উদ্ধৃতিসহ এর আলোচনা হয়েছে।

    চান্দ্রমাসের শেষের দিকে সূর্যের পরে চাঁদের অস্তমিত হওয়া অর্থাৎ সূর্যাস্তের কালে চাঁদের দিগন্তে বিরাজ করা- এটা কনজাঙ্কশানের আগেও হতে পারে এবং কনজাঙ্কশানের পর চাঁদ ‘হিলাল’-এর অবস্থায় পৌঁছার আগেও হতে পারে। আবার দর্শনযোগ্য নতুন চাঁদের রূপ নেয়ার পরও হতে পারে। যদি কনজাঙ্কশানের আগে এমনটা হয় তাহলে জ্যোতির্শাস্ত্রের পরিভাষায় এটা হল পুরানো চাঁদের অংশ। আর কনজাঙ্কশানের পরে যদি হয় তাহলে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যদিও তা নতুন চাঁদ, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত দর্শনযোগ্য না হবে ততক্ষণ তা ‘হিলাল’ নয়, যা দেখে রোযা ও ঈদ পালন করার বিধান।

    এখন, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব যে চান্দ্রমাসের শেষে সূর্যাস্তের সময় চাঁদের দিগন্তে বিরাজ করাকে নবচন্দ্র বা চান্দ্রমাসের সূচনা সাব্যস্ত করছেন, এটা কি এ জন্য যে, তিনি একেই জ্যোতির্শাস্ত্রীয় ‘নিউমুন’ মনে করছেন? আর তার কাছে তো কুরআনী ‘হিলাল’-এর অর্থ (নাউযুবিল্লাহ) ‘নিউমুন’-ই বটে। যদি তাই ভেবে থাকেন তাহলে তো এটা গলদ, কোনো সন্দেহ নেই। নাকি এজন্য যে, তিনি একে ‘নিউমুন’-এর মোকাবেলায় মাস শুরুর স্বতন্ত্র কোনো মাপকাঠি বিবেচনা করছেন? সে ক্ষেত্রে তার দলীল কী? কুরআন, হাদীস, ইজমা এবং শরয়ী কিয়াসের অন্তর্ভুক্ত এমন কোন দলীল কি আছে এর পক্ষে, যার আলোকে ইসলামে একে চান্দ্রমাসের শুরু গণ্য করা যাবে? উত্তর পরিষ্কার। কোনো ধরনের দলীল-প্রমাণ নেই। বরং এমন চিন্তাপোষণ শরয়ী প্রমাণাদির পরিপন্থী এক কর্মপন্থারই অনুসরণ। দলীল দ্বারা যা প্রমাণিত তা হলো, ‘দেখা’ই হবে ভিত্তি; হিসাবসর্বস্ব ‘নিউমুন’ও না, গণনানির্ভর উদয় ও অস্তও নয়। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের মত বিচারেও এটা কুরআন বিরোধী প্রতীয়মান হয়। কারণ তার মতে তো নাউযুবিল্লাহ কুরআন জ্যোতির্শাস্ত্রীয় ‘নিউমুন’ (অমাবস্যা)-এর মাধ্যমে মাস আরম্ভ করতে বলেছে (মাসের শেষে সূর্যাস্তের পরে চন্দ্রাস্ত দিয়ে নয়)!!

    ৫. উত্তর আমেরিকা ফেকাহ কাউন্সিলের ক্যালেন্ডার

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তার গ্রন্থের ৪২-৪৩ পৃষ্ঠায়, ২২ পর্বে ৪-১২ নম্বর প্যারায় উত্তর আমেরিকা ফেকাহ কাউন্সিলের  তৈরি করা ক্যালেন্ডার মোতাবিক আমল করতে বলেছেন। এ সম্পর্কে অন্যান্য বক্তব্যের সাথে এ-ও লিখেছেন যে, ‘এই মর্মে রাসূল (সা:) এর হাদীস মোতাবেক চন্দ্রদর্শনকে নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক তারিখরেখা বরাবর সূর্যাস্তের পূর্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে নবচন্দ্র শুরু হওয়ার পর হতেই পরবর্তী মাসের পহেলা তারিখ গুনতে হবে। কারণ পরবর্তী দিনে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পৃথিবীর কোনো না কোনো দেশে বা স্থানে অবশ্যই নবচন্দ্র দেখা যাবে’। ‘আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পরে নবচন্দ্রের শুরু হলে সেই দিনকে ঐ চান্দ্রমাসের শেষ দিন ধরতে হবে এবং পরের দিন হতে নতুন মাসের প্রথম তারিখ আরম্ভ হবে। এক্ষেত্রেও নবচন্দ্র দর্শনের ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকবে না। আমার প্রস্তাবের ভিত্তিও এটাই’।

    ‘এই মতকে ভিত্তি ধরে উত্তর আমেরিকার ফেকাহ কাউন্সিল কর্তৃক বিশ্বব্যাপী অনুসরণযোগ্য ‘বিশ্ব ইসলামী ক্যালেন্ডার’ যা একবিংশ পর্বের একাদশ ক্রমিকে উল্লেখ করা আছে, তাকে সার্বজনীনভাবে গ্রহণ করা হলে মুসলিম উম্মাহ সারা বিশ্বে একই বারে রোযা/ঈদ পালন করতে পারবে’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৪৩, পর্ব : ২২)

    এই ফেকাহ কাউন্সিলের মূল্য বা গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিন্তা-চেতনা ও ফিকহ-ফতোয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থানই বা কী- এসব নিয়ে আলোচনা এখন নয়। এবং ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এই কাউন্সিলের তৈরি ক্যালেন্ডারের মান সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন তা ঠিক কি ঠিক না, বা তার মান যাই হোক শরীয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণীয় কি না- এ বিষয়েও এখন কিছু বলতে চাই না। এখন শুধু এটুকু বলা উদ্দেশ্য যে, তিনি যে চাঁদ দেখার পরিবর্তে গণনার উপর নির্ভরশীলতাকে কুরআনের হুকুম বলে উল্লেখ করেছেন, সেই গণনার একটি উপায় তিনি এ-ও বর্ণনা করেছেন যে, উপরিউক্ত কাউন্সিলের অনুসরণ করে নাও, তো ব্যস্ এতেই চলবে!

    গণনার মাধ্যমে মাস আরম্ভ করা বিষয়ে এটা তাহলে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের তৃতীয় পরামর্শ হল।

    ৬. উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার অনুসরণ

    ১৮ পর্বে লিখেছেন, ‘অতএব সারা বিশ্বে প্রথম চাঁদ দেখার সময় হতে একই বারে রোযা রাখা এবং একইবারে ঈদ পালন করার কোনো বিকল্প নেই। ‘আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি’ও এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে’।

    ‘এতদসত্ত্বেও সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ যদি খানা-ই-কাবাকেই পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে মক্কা শরীফে সূর্যাস্তের পর চন্দ্রাস্তকে নবচন্দ্রের শুরু ধরে পরের দিন হতে বিশ্বব্যাপী একত্রে চান্দ্রমাস আরম্ভ করতে চায় তাতে চান্দ্রমাসের হিসাব সঠিকতার আনেকটা কাছাকাছি চলে আসবে। কারণ আমার প্রস্তাবের সাথে উম্মুল কুরা প্রস্তাবের তফাৎ খুবই কম। কিন্তু এই হিসাবের সাথে কোরআন পাকে বর্ণিত হিসাবের কোন পার্থক্য আছে কি না তা দেখতে হবে। তাছাড়া এই হিসাব অনুসরণ করা হলে সাপ্তাহিক দিন ও তারিখ নির্ধারণ নিয়ে বড়  রকমের বিশৃঙ্খলাসহ একই বারে সারা বিশ্বে কেয়ামত হওয়ার বিষয়টাও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তবে যারা সৌদী আরবকে অনুসরণ করেন তারা অবশ্যই ২/৩ দিন ধরে রোযা-ঈদ পালনকারীদের চেয়ে ভুল কম করেন এবং অধিকতর উত্তম কাজ করেন’।

    ‘এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, বিগত ৭০ বৎসর যাবতই বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার সাদরা দরবার শরীফ এবং পরবর্তীতে শতশত স্থানে এমনকি বিশ্বের অধিকাংশ স্থানে সৌদী আরবের সাথে রোযা ঈদ পালিত হচ্ছে।’ (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৩৬, প্যারা : ৯-১১)

    সম্মানিত পাঠক! একটু লক্ষ্য করুন, এ লোক যখন নিজেই স্বীকার করছেন যে, প্রথম দেখাই হল ভিত্তি, তখন ক্যালেন্ডার অনুসারে আমল করাকে তিনি কীভাবে বৈধতা দেন? তদুপরি উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার সম্পর্কে যে কথা বইয়ের নবম সংস্করণে রয়েছে তা হুবহু আগের সংস্করণ (২০০৮-এর সংস্করণ)-এও ছিল। প্রশ্ন হল, যখন তিনি নিজেই বলছেন যে, এই ক্যালেন্ডারের হিসাবের সাথে কুরআন পাকে বর্ণিত হিসাবের কোনো পার্থক্য আছে কি না দেখতে হবে- তো এটা তিনি নিজেই দেখে নিতেন। এতগুলি বছর পার হয়ে গেলো, অথচ তিনি এখন পর্যন্ত এটা দেখেনইনি। পাঠকদেরকেই বলছেন দেখে নিতে। ওদিকে এ অনুযায়ী আমলেরও অনুমতি দিচ্ছেন। তবে কি শরীয়ত তার দৃষ্টিতে শিশুর খেলনা, তা নিয়ে যেমন ইচ্ছা তামাশা করা যাবে?!

    কুরআন হিলালের মাধ্যমে মাস আরম্ভ করতে বলেছে, জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের মাধ্যমে নয়- এ কথা জানে না এমন কে আছে? কুরআনে যখন জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের মাধ্যমে মাস শুরুর প্রসঙ্গই নেই তখন ইবাদাতসমূহের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই হিসাবের উপর নির্ভরশীল ক্যালেন্ডারের গ্রহণযোগ্যতা যে প্রথম দফাতেই বাদ হয়ে যায়, তা বলে বোঝানোর দরকার নেই এবং এ নিয়ে কোনো দেন-দরবারেরও প্রয়োজন নেই। তার অবকাশও নেই।

    আর যে ব্যক্তির জ্ঞানের স্তর হল, ১০ মুহাররম কেয়ামত কায়েম হওয়ার হাদীসটি যে জাল, এটুকুও তিনি জানেন না এবং যার আকল-বুদ্ধি এই পর্যায়ের যে, তিনি কেয়ামত কায়েম করাকে শরীয়তের হুকুম মনে করছেন, অথচ এটা সরাসরি ‘তাকবীনী’ মুয়ামালা, যা একান্তই আল্লাহর কাজ। বেচারা এটা বুঝতে অক্ষম যে, শরীয়ত প্রদানকারী তো হলেন আল্লাহ। কিন্তু তার মুকাল্লাফ (পালনে আদিষ্ট) হচ্ছে মানুষ। মানুষের রব নন। এবং এটাও বুঝতে অপারগ যে, আল্লাহ তাআলার তারিখ জানার জন্য মাখলূকের ক্যালেন্ডারের সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি এও বুঝতে অপারগ যে, ঊর্ধ্বজগৎ এবং অধঃজগতের সময়সূচী এক হওয়া আবশ্যক না- তো এই যার বুদ্ধির দৌড়, তার কী অধিকার আছে কোনো বিষয়ে কলম ধরার?!

    বইয়ের এক জায়গায় তো তার যবান ও কলম থেকে একথাও বেরিয়ে এসেছে :

    ‘আমার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ অনুসরণ করা হলে কেয়ামতের দিন হবে মুহাররম মাসের ১০ (দশ) তারিখ শুক্রবার। আশুরার এই শুক্রবার দিন আন্তর্জাতিক তারিখ রেখায় সূর্য অস্ত যাওয়ার ঠিক পূর্বক্ষণে কেয়ামত সংঘটিত হবে। এভাবে একই বারে সারা পৃথিবীতে একসাথে কেয়ামত হলে শরীয়তের বিধান লংঘিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৯২)

    সম্মানিত পাঠক! এ এমনই এক অর্বাচীনের উক্তি, যার বিষয়ে মন্তব্য করার মতো শব্দ আমার কাছে নেই। আমি শুধু এটুকু বলবো যে, জনাবের তো তাহলে উচিত কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য ক্যালেন্ডার তৈরি করে দেয়া! কিন্তু সেই সময়টি তো কারোরই জানা নেই। নিজের কিয়ামত কখন ঘটে যায় সেই খবরই তো কারো জানা নেই। যে মানুষ ১৪৩৮ বর্তমান এই হিজরী বর্ষ পর্যন্ত ক্যালেন্ডারটিও এখনো তৈরি করতে পারেননি, তিনি কি না স্বপ্ন দেখছেন তার ক্যালেন্ডার মোতাবেক কিয়ামত সংঘটিত হবার! কিয়ামত ও শরীয়ত এ দু’য়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি নেই, এটাও মহোদয়ের অজানা। এরপর আমাদের আর কী বলার থাকে?! এবং সিঙ্গা ফোঁকার দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা সিঙ্গায় ফুঁক দেবেন কি সরাসরি আল্লাহর হুকুমে, নাকি ক্যালেন্ডার দেখে এইটুকু এলেমও জনাব রাখেন না। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের নিজের ব্যাপারে এ এক আশ্চর্য সুধারণা যে, ঐ ফেরেশতা তার চান্দ্র-ক্যালেন্ডার (এখন পর্যন্ত যার কোনো অস্তিত্বই নেই) দেখেই ফুঁক দেবেন সিঙ্গায়! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! ব্যস্ আল্লাহ আমাদেরকে কিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার তাওফীক দান করুন।

    بَلِ السَّاعَة مَوْعِدُهُمْ وَ السَّاعَةُ اَدْهٰی وَ اَمَرُّ

    আর এটা কত না হাস্যকর এবং দুঃখজনক কথা যে, কিয়ামতের সূচনা নাকি হবে আইডিএল অনুসারে! এমন গালগল্প আর এমন কল্পনাবিলাস মানুষ কী করে দেখায়! তাও আবার কিয়ামতের মতো বিষয়ে, যা কিনা আল্লাহ তাআলার কুদরতের বিশাল এক নিদর্শন!!

    যাই হোক, কথা হচ্ছিল উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার নিয়ে। তো এই ক্যালেন্ডার কেবল দাপ্তরিক কাজকর্মে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। খোদ সৌদিতেই রোযা, হজ্ব, কুরবানী ও অন্যান্য দ্বীনী কর্মকাণ্ডে এই ক্যালেন্ডারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই ক্যালেন্ডারে প্রত্যেক চান্দ্রমাসের প্রথম তারিখের নিচে এই সতর্কবাণী লেখা আছে যে,

    التقويم اصطلاحي مدني اعتمد في حسابه على إحداثيات المسجد الحرام، ويعتمد في حساب أوائل الأشهر على الرؤية الشرعية للهلال.

    অর্থাৎ “এ ক্যালেন্ডারটি আমাদের পারিভাষিক বিষয়। যা ব্যবস্থাপনাগত প্রয়োজন পূরণের জন্য। চান্দ্রমাসের প্রথম তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে হিলালের শরীয়তসম্মত ‘দেখা’-এর উপর নির্ভর করতে হবে।”

    যে কোনো বছরের উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার হাতে নিন, তাতে আপনি এই পরিষ্কার বিবরণ দেখতে পাবেন। যেহেতু এই ক্যালেন্ডার দাপ্তরিক কাজকর্মের জন্য তাই এর ফর্মুলাও তাদের এখানে পরিবর্তন হতে থাকে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের যদি তা জানা থাকতো তাহলে তিনি অবশ্যই বুঝতে পারতেন যে, ইবাদতের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই ক্যালেন্ডার শরীয়তের নীতিমালার আলোকেও সঠিক নয় এবং তার আবিষ্কৃত নিয়ম অনুসারেও নয়।

    উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডারে চান্দ্রমাস সূচনার মাপকাঠিতে কী কী পরিবর্তন এসেছে- সংক্ষেপে তা এখানে উদ্ধৃত করা ভালো মনে হচ্ছে।

    ১৩৪৬ হিজরী থেকে ১৩৯২ হিজরী (১৯২৭ ঈ. -১৯৭৩ ঈ.) পর্যন্ত মাপকাঠি ছিল এই যে, সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত থেকে চাঁদের উচ্চতা নয় ডিগ্রী বা তার চেয়ে বেশি হলে পরবর্তী দিন থেকে চান্দ্রমাস শুরু হবে।

    ১৩৯৩ হিজরী থেকে ১৪১৯ হিজরী (১৯৭৩ ঈ. -১৯৯৭ ঈ.) পর্যন্ত মানদ- ছিল, গ্রীনিচ মান সময় অনুসারে রাত বারোটা (সৌদির সময় অনুসারে রাত নয়টা)-এর আগে যদি চাঁদের জন্ম হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী দিন হবে চান্দ্রমাসের প্রথম দিন।

    ১৪১৯ হিজরী থেকে ১৪২২ হিজরী (১৯৯৮ ঈ.-২০০২ ঈ.) পর্যন্ত মাপকাঠি ছিল, মক্কা মুকাররমায় সূর্যাস্তের পর যদি চন্দ্রাস্ত হয় (চাঁদের জন্ম হয়ে থাকুক আর নাই হোক) পরবর্তী দিন চান্দ্রমাসের প্রথম দিন।

    ১৪২৩ হিজরী (মার্চ ২০০২ ঈ.) থেকে এ নিয়ম চালু রয়েছে যে, যদি সূর্যাস্তের আগেই চাঁদের জন্ম হয়ে গিয়ে থাকে এবং মক্কা মুকারমায় সূর্যাস্তের পর চন্দ্রাস্ত হয় তাহলে পরবর্তী দিন হবে চান্দ্রমাসের প্রথম দিন [1]১।

    সামনে এতে আরো কী পরিবর্তন আসে, সেটা তো আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করা হচ্ছে যে, নবচন্দ্র দেখা যাওয়ার সম্ভাব্য সময়কে মাপকাঠি বানিয়ে উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার তৈরি করা হোক।

    যাইহোক, আমি বলতে চাচ্ছিলাম, যেই ক্যালেন্ডারের ভিত্তি কোনো শরয়ী মাপকাঠির উপর নয়, সময় যত গড়াবে তাতে পরিবর্তন আসতেই থাকবে। তো এমন ক্যালেন্ডারকে ইসলামী ইবাদতের মানদ- বানানো কি ঠিক হয়? স্বয়ং এই ক্যালেন্ডার প্রণেতাগণ স্পষ্ট বলেছেন, এই ক্যালেন্ডার দাপ্তরিক ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট। ইসলামী মাস শুরু হবে শরীয়তসম্মত ‘দেখা’ অনুসারে। সেজন্য সৌদির ওলামা মাশায়েখ এবং সকল উমারা ও আম-জনতা সেখানকার চাঁদ দেখা কমিটির ফায়সালা অনুযায়ী আমল করে থাকেন।

    তো এই ক্যালেন্ডারটি শুধুই দাপ্তরিক কাজের জন্য। তা সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আমাদেরকে এই ক্যালেন্ডার মোতাবেক রোযা ও ঈদ করার দাওয়াত দিচ্ছেন। তবে কি ইবাদত কোনো দাপ্তরিক কিংবা ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কাজ?

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেব একদিকে এই দাওয়াত দিচ্ছেন, অন্যদিকে নিজেই আবার লিখে বসে আছেন, ‘ক্রমিক ১১-এর চার্ট হতে দেখা যাচ্ছে যে, নবচন্দ্র দর্শনকে নিশ্চিত করার জন্য সৌদী আরবের ‘উম্মুল কুরা’ (সৌদী সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান) পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের তুলনায় প্রায় প্রতি চান্দ্রমাস আরম্ভ করে একদিন পরে। এটা সমর্থনযোগ্য কাজ হতে পারে না’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৪১, প্যারা : ১৬)

    যে জিনিস সমর্থনযোগ্য হতে পারে না, সে অনুসারেই তিনি উম্মতকে আমল করতে বলছেন, এই হল তার সংস্কার! হিসাবের মাধ্যমে মাস শুরুর বিষয়ে এটা হলো ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের চতুর্থ পরামর্শ।

    ৭. বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার

    সপ্তম পরামর্শ হল, তার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডারে’র অনুসরণ করা। তিনি লিখেছেন,

    ‘এই পর্বের একাদশ প্যারায় প্রদত্ত চার্ট বা ছক পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পরে নবচন্দ্রের শুরুকে ভিত্তি ধরে আমি একটা সার্বজনীন ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ টেবিলের ডান পার্শ্বে নবম কলামে প্রস্তাব করেছি। এই প্রস্তাবে বিশ্বব্যাপী নবচন্দ্রের শুরু এবং নবচন্দ্রের দর্শন উভয়েরই মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা ব্যবধানের কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে’।

    ‘এই ক্যালেন্ডার সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা। তাতে বিশ্ব ইসলামী উম্মাহর মধ্যে একাত্মতা ও সাবির্ক সমন্বয় সাধিত হবে। একই সঙ্গে এই ব্যাপারে ইসলামী শরীয়াহ বিশ্বব্যাপী পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে’।

    ‘এই সমন্বিত ও প্রস্তাবিত ক্যালেন্ডারের মূল ভিত্তি কিন্তু কোরআন, হাদীস এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান, যা একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যাবে। তাছাড়া সার্বজনীন চিন্তা ও চেতনায় এর মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক পরিপূর্ণভাবে সারা বিশ্বে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা লাভের প্রকৃত আলামত অন্তর্নিহিত আছে’।

    ‘অতএব আমরা এই সমন্বিত প্রস্তাবকে ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। তাহলে বিভাজন ছেড়ে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যের পথে এগিয়ে যেতে পারবে’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৪১-৪২, প্যারা : ১৮, ১৯, ২০, ২২)

    উত্তর আমেরিকা ফিকাহ কাউন্সিলের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমলের অনুমতি দেওয়ার পর লিখেছেন, ‘তবে আমার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ বিভিন্ন দিক থেকে বিচার বিশ্লেষণের কারণে আরও বেশি তথ্যনির্ভর ও যুক্তিসঙ্গত’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৪৩, প্যারা : ১৩)

    এক জায়গায় এও লিখেছেন, ‘অতএব আমার দৃষ্টিতে উপায় একটাই। তা হল, আমার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’কে মানবজাতির জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ গ্রহণ করা এবং বিশ্বব্যাপী অনুসরণ করা’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৪৭, পর্ব ২৪, প্যারা : ৮)

    তার এই ‘বিশ্বহিজরী ক্যালেন্ডারে’র গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সেটা তার যবানীতেই শুনুন। পর্ব ৩৩, যা নিয়ে তার খুবই গর্ব, সেখানে তিনি অমাবস্যাকে অস্বীকারও করেছেন, আবার অমাবস্যার মাঝে শুরু হওয়া প্রথম নবচন্দ্রকে মাসের সূচনাও সাব্যস্ত করেছেন। তারপর লিখেছেন, ‘এই বিবেচনায় লেখকের প্রস্তাবিত বিশ্ব হিজরী  ক্যালেন্ডারে কদাচিৎ ক্ষেত্রে মাসকে একদিন এগিয়ে আনতে হতে পারে। হিসাবের নিখুঁততার খাতিরে এমন হওয়াটা মোটেই অসম্ভব নয়’।

    ‘কারণ নতুন চাঁদের শুরু দিয়ে মাস আরম্ভ করা হলে ২/১ ক্ষেত্রে চান্দ্রমাস একদিন আগে শুরু হওয়া বিচিত্র নয়’।

    ‘মূলে সূরা বাকারার আয়াত ২ : ১৮৯-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তাআলা এ কথাই ব্যক্ত করেছেন’।

    ‘আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান ও সহীহ বুঝ দান করুন।’ (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৫৮, প্যারা : ১৪-১৭)

    দেখুন, প্রথমে তো আয়াত বিকৃত করেছিলেনই, তারপর সেই বিকৃত অর্থের উপরও টিকে থাকতে পারলেন না। পুনরায় তাতে বিকৃতি সাধন করে সেটাকেও আল্লাহর কালাম বলে চালিয়ে দিলেন। কী আশ্চর্য দর্শন! হিসাব নিখুঁত হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই মাস শুরু করে দাও! সাথে আবার এ দাবিও জুড়ে দাও যে, কুরআন এরকমই বলেছে?!

    এখানে প্রসঙ্গত বলতে হয়, ‘আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তাআলা’-এর পরিবর্তে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা’ লেখা উচিত ছিল। আর যদি সর্বনামের পরিবর্তে তিনি (পরের বারও) সরাসরি ‘আল্লাহ’ এই মহান নামটি রাখতে চান তাহলে ‘সুবহানাল্লাহি’ লিখতে হবে। ‘সুবহানাল্লাহু’ নয়।

    যাই হোক, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ‘দেখা’কে বর্জন করে ‘হিসাব’-এর পথ ধরেছিলেন। কিন্তু হিসাবের ব্যাপারে তিনি যে পরস্পর বিরোধী প্রস্তাবের অবতারণা করেছেন, তার ধারাবাহিকতা এখনো শেষ হয়নি। সামনে ষষ্ঠ প্রস্তাবটি দেখুন :

    ৮. প্রকৃত বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার

    ৫৫ পর্বের শেষ প্যারায় তিনি লিখেছেন, ‘উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের জবাব দিতে না পারলে কোরআন, সুন্নাহ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরী করা ‘প্রকৃত বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ অনুসরণ করুন এবং বিশৃঙ্খলা বাদ দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাত ঠিক রাখুন’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৮৭)

    প্রকৃত বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার বলে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন পরিষ্কার নয়। যদি তার তৈরীকৃত ক্যালেন্ডার উদ্দেশ্য হয় তাহলে স্পষ্ট করে বললেই ভালো হত। আর যদি অন্য কোনো ক্যালেন্ডার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এটা তার আরেকটি প্রস্তাব বলে গণ্য হবে।

    ৯. একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার

    নবম প্রস্তাবটি এই যে, একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরি করে তার অনুসরণ করা হবে। তিনি লিখেছেন, ‘অতএব ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ গ্রহণ ও অনুসরণ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য একান্তভাবেই জরুরী’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৩৪, পর্ব : ১৫ প্যারা : ৭)

    আরো লিখেছেন, ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার না পাওয়া পর্যন্ত এবং OIC -এর সিদ্ধান্তও যদি মানতে না চাই, তবে ভুলের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ আপাতত সৌদি আরবকে অনুসরণ করতে পারে। বাংলাদেশ তা করছে না কেন?’ (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৮৭, প্যারা : ২৮)

    ৫৭ পর্বে লিখেছেন,

    ‘চাঁদের হিসাব ও দেখাকে যুক্ত করে একটা সমন্বিত উপায় উদ্ভাবন করা যায়’ (শিরোনাম)।

    ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব বলে, নতুন চাঁদের শুরুর (জন্মের) ১২ ঘণ্টা পরে ছাড়া তা দেখা কখনো সম্ভব নয়।’

    ‘এই অসম্ভব সময়টাকে ৩ ঘণ্টা বাড়িয়ে ১৫ ঘণ্টা ধরলে একটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’

    ‘নতুন চাঁদ মক্কার আগে শুরু হলে (জন্ম নিলে) IDL পর্যন্ত এর বয়স হবে ১৫ ঘণ্টার বেশী। এমতাবস্থায় পরের দিন হতে নতুন চান্দ্রমাসের শুরু ধরতে হবে।’

    ‘নতুন চাঁদ মক্কার পরে শুরু হলে (জন্ম নিলে) পরের দিনটাকে পুরাতন মাসের শেষ দিন ধরতে হবে। কারণ এই সময়ের মধ্যে নতুন চাঁদ IDL -এর আগে দেখা যাবে না’।

    ‘এভাবে হিসাবের মাধ্যমে নতুন চাঁদ দেখাকে সংযুক্ত করলে একটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে’।

    ‘এর ভিত্তিতে হিসাবের সাহায্যে একটা একক (Unifieb) বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী ও অনুসরণ করা যায়’।

    ‘২০১১ খৃষ্টাব্দে ঈদুল ফিতরের দিন/তারিখ থেকে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথেষ্ট যুক্তি আছে বলে আমার মনে হয়।’

    ‘তবে আমি হিসাবকে কোরআনের নির্দেশ মনে করি’।

    ‘মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের খাতিরে এমন একটা সিদ্ধান্তকে আপাততঃ মেনে নেওয়া যেতে পারে বলে মনে হয়’।

    ‘OIC-এর ইসলামী ফিকহ একাডেমি ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দে যেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে তার সাথে এই সমন্বিত ব্যবস্থার মিল আছে’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ৯৫-৯৬)

    ‘তবে আমি হিসাবকে কোরআনের নির্দেশ মনে করি’ তার এ কথার মতলব হল, এস্ট্রোনমিক্যাল নিউমুনের মাধ্যমে মাস শুরু করাকে তিনি কুরআনের নিদের্শ মনে করেন। যদি নিউমুন দর্শনযোগ্য হবার জন্য পনেরো ঘণ্টা অপেক্ষা করা হয় তাহলে এতে করে কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ  অবধারিত হয়ে যায়। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বলছেন, উম্মতের মাঝে ঐক্য সৃষ্টির খাতিরে কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ করে ‘দেখা’র সম্ভাবনার উপর নির্ভরশীল একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার মানতে তিনি প্রস্তুত আছেন!!

    আর তা সম্ভবত এ কারণে যে, এত শোরগোল এবং কথিত সংস্কারের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একসাথে রোযা ও ঈদ পালনের বাসনাটা পূর্ণ করা, ব্যস। শরীয়তের বিধান পালন বা তার দাওয়াত দেয়া এখানে মূল ব্যাপার নয়। আর তাই যেটাকে কুরআনের নির্দেশ বলে জ্ঞান করছেন তার ব্যত্যয় করাও বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে অনায়াসে!

    আর না হয় এ কারণে যে, তার তো জানাই আছে, তিনি হিসাব এবং অমাবস্যার যে কথা কুরআনের সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন, সেটা সম্পূর্ণ তার নিজের বানানো। না কুরআনে এমন নির্দেশ আছে, না শরীয়তের অন্য কোনো উৎসে। অতএব এর ব্যতিক্রম বা বরখেলাফ করা কী এমন ব্যাপার?!

    যাই হোক, তিনিই বুঝুন তার হিসাব। আমাদের প্রশ্নটা হল, সেই একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার  কোথায়? উপরে উল্লেখ করা কথাবার্তা থেকে মনে হচ্ছে, ঐ ক্যালেন্ডার এখনো তৈরী হয়নি। সেটা তৈরী করে তার অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু ৫৮ পর্বে তো বলেছেন, ‘এই আয়াত হতেই চন্দ্রের হিসাবে আমরা ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ পাব, যা আমি তৈরী করেছি’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা: ৯৭, প্যারা : ১৪)

    যদি এটা জনাবের কাছে তৈরী থাকেই তাহলে তো সেটা উম্মতের সামনে আসা চাই। কিন্তু কই সেটা? আপনি তো ‘উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডারই ছেপে যাচ্ছেন, ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ গেলো কোথায়?

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কাছে প্রশ্ন- কিসের নাম নবচন্দ্রের শুরু?

    নবম ও সর্বশেষ সংস্করণের ১৫০-১৫৫ পৃষ্ঠায় ইঞ্জিনিয়ার সাহেব শুধু তিন বছরের (১৪৩১-১৪৩৩ হিজরী) জন্য নিজের প্রস্তাবিত বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডারের একটি ছক পেশ করেছেন। ১৪৮-১৪৯ পৃষ্ঠায় এই ছকের পর্যালোচনা পেশ করেছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘তিন ঘণ্টা অন্তর সময়ের হিসাবের মাধ্যমে সূর্যাস্তের পর

    চন্দ্রাস্তকে নিধার্রণ করার জন্য পৃথিবীর বিষুবরেখাকে তিন ঘণ্টা অন্তর ৮ (আট) ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে’।

    ‘এই আটভাগে বিষুবরেখা বরাবর প্রতি মাসের শুরুতে সূর্যাস্তের পরেই চন্দ্রাস্তের বিবরণ দেখে নবচন্দ্রের শুরুর তারিখ বের করা হয়েছে। ইংরেজী মাস অনুযায়ী এই বিবরণসমূহ ইন্টারনেট থেকে নেওয়া হয়েছে’।

    ‘১৫০-১৫৫ পৃষ্ঠায় প্রদত্ত ছকের ১ থেকে ৮ কলামসমূহে নবচন্দ্রের আরম্ভের তারিখ বিষুবরেখার আটটি নির্দিষ্ট স্থানে আরবী ও ইংরেজী মাসের ভিত্তিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে’।

    ‘বিজ্ঞানীদের মতে নবচন্দ্রের আরম্ভের পর নবচন্দ্র দশর্নের জন্য কমপক্ষে বার ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়’।

    ‘তাই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (IDL) হতে পরবর্তী ৬ (ছয়) ঘণ্টা পর নবচন্দ্রের শুরুর তারিখ নিশ্চিত হওয়ার পরের দিনকে আরবী মাসের শুরু ধরা হয়েছে’।

    ‘এতে করে হাদীসের কথামত নতুন চাঁদ দেখার বিষয়টা নিশ্চিত হয়ে যাবে’।

    ‘IDL -এর পর ৬ (ছয়) ঘণ্টার মধ্যে নবচন্দ্রের আরম্ভকে শরীয়াহর ভিত্তিতে নিশ্চিত বা দৃঢ়করণের খাতিরে আমলে নেওয়া হয়নি’।

    সপ্তম সংস্করণে লিখেছিলেন এরকম :

    ‘বিজ্ঞানীদের মতে নবচন্দ্রের জন্মের পর নবচন্দ্র দর্শনের জন্য কমপক্ষে বার ঘণ্টার প্রয়োজন হয়’।

    ‘তাই দিবারম্ভের সূত্ররেখা (IDL) হতে পরবর্তী ৬ (ছয়) ঘণ্টার পর নবচন্দ্রের জন্ম তারিখ নিশ্চিত হওয়ার পরের দিনকে আরবী মাসের শুরু ধরা হয়েছে’। (চান্দ্রমাস, সপ্তম সংস্করণ, পৃষ্ঠা : ৪২)

    প্রশ্ন হল, আগে যেটাকে ‘নবচন্দ্রের জন্ম’ লিখেছিলেন এখন সেটাকে ‘নবচন্দ্রের শুরু’ বা ‘আরম্ভ’ কেন লিখছেন? আবার দু’টো কথাই বিজ্ঞানীদের বরাতে? যদি ‘জন্ম’ শব্দ এ জন্য পরিবর্তন করে থাকেন যে, উল্লেখিত মানদ- (মাসের শেষে সূর্যাস্তের সময় দিগন্তে চাদের উপস্থিতি কিংবা সূর্যাস্তের পর চন্দ্রাস্ত) বিজ্ঞানীদের মতে নবচন্দ্রের জন্ম নয়, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, নবচন্দ্রের জন্ম তবে কিসের নাম, তার মতে? ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বই এ ব্যাপারে একদম খামোশ কেন?

    দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, যদি এটা (সূর্যের পরে চাঁদের অস্তমিত হওয়া) নবচন্দ্রের ‘জন্ম’ নয়; বরং নবচন্দ্রের ‘শুরু’, তাহলে তো বিজ্ঞানীদের রেফারেন্সে জনাবের লেখা উচিত ছিল যে, অমুক অমুক বিজ্ঞানী একে নবচন্দ্রের শুরু আখ্যা দিয়েছেন? কিন্তু এমন কোনো রেফারেন্সের উল্লেখ তো আমরা বইতে পেলাম না!

    তৃতীয় প্রশ্ন : সারা বইয়ে কয়েক বার করে লেখা হয়েছে যে, নবচন্দ্রের শুরু হয় অমাবস্যার মাঝখানে। প্রশ্ন হল, অমাবস্যার মাঝখানটা কি সবসময় সূর্যাস্তের কালেই হয়, যে কারণে ঐ মুহূর্তে দিগন্তে চাঁদের উপস্থিতিকে জনাব নবচন্দ্রের শুরু আখ্যায়িত করছেন?!

    যদি বিষয়টা এরকম না হয় তাহলে দয়া করে আপনি বিজ্ঞানীদের রেফারেন্সে এই পাঁচটি জিনিসকে স্পষ্ট করুন যে, এর মধ্যে কোনটি বিজ্ঞানীদের মতে নবচন্দ্রের শুরু? এবং বিজ্ঞানীদের মতে যেটা শুরু, আপনার মতে শরীয়তে নবচন্দ্রের শুরু যদি সেটাই হয়ে থাকে তাহলে এর পক্ষে আপনি শরয়ী দলীলও পেশ করুন। যেমন :

    ১. চাঁদ সূর্যের পরে অস্তগমন

    ২. অমাবস্যার মাঝখান

    ৩. নবচন্দ্রের জন্ম

    ৪. অমাবস্যার পর নবচন্দ্রের উদয়

    ৫. নবচন্দ্রের প্রথম দর্শন

    এই পাঁচ জিনিসকে আপনি আপনার বইয়ে নবচন্দ্রের শুরু আখ্যায়িত করেছেন। এখন আপনিই বলুন, এই পাঁচ জিনিসের মধ্যে একটার সাথে আরেকটার কোনো পার্থক্য আছে কি নেই? এও বলুন, সংযোগ/সম্মিলন  (কনজাঙ্কশান) এবং নবচন্দ্রের জন্ম দু’টো একই বিষয়, নাকি জন্ম হলো কনজাঙ্কশানের অব্যবহিত পরের সময়ের নাম? জ্যোতির্শাস্ত্রীয় নিউমুন এবং হিলালকে তো আপনি বিকৃত করে এক বানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু গোটা বইয়ে কোনো একজন বিজ্ঞানীর রেফারেন্সে নিউমুনের পারিভাষিক সংজ্ঞা তো উল্লেখ করলেন না!!

    মেহেরবানী করে বলুন, উপরিউক্ত পাঁচ জিনিসের মধ্যে ‘নিউমুন’ এবং ‘নবচন্দ্র’ কোন জিনিসের নাম? যদি সবকটি বিষয়ই নবচন্দ্রের সংজ্ঞায় আসার মতো হয় তাহলে যেসব অঞ্চলে প্রথম রাতের চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়া সম্ভবই না, তারা যখন দ্বিতীয় রাতে নতুন চাঁদের দেখা পায়; তো তাদের এই চাঁদকে নবচন্দ্র বলতে আপনার এত অসুবিধা হচ্ছে কেন?

    চতুর্থ প্রশ্ন হল, যেহেতু আপনার মতে কুরআন অমাবস্যা থেকে মাস শুরু করতে বলেছে তাহলে আপনি নতুন চাঁদ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করার জন্য মাস কেন বিলম্বে শুরু করছেন?

    পঞ্চম প্রশ্ন হল, হাদীসে তো রোযা ও ঈদকে হিলাল দেখার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনার সাথে নয়। তাহলে শুধু দেখার সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনা করা হলে হাদীসের উপর আমল হবে কীভাবে?

    ষষ্ঠ প্রশ্ন এই যে, আপনার মতে যেহেতু চাঁদ দেখার হাদীসসমূহ কুরআন বিরোধী, আর আপনি নিজেই লিখেছেন, কুরআনের বরখেলাফ হাদীস অনুসারে আমল করা মানে কুরআনেরই বিরুদ্ধাচারণ করা; তাহলে আপনি ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’-এর নামে উম্মতের সামনে যে কাল্পনিক উপহার নিয়ে হাজির হয়েছেন (কাল্পনিক এজন্য যে, ঐ ক্যালেন্ডারের যেটুকু সামনে এসেছে তা কেবল ১৪২৮ হিজরী থেকে ১৪৩৪ হিজরী পর্যন্ত সময়কালের) যাকে আপনি শ্রেষ্ঠ নিআমত মনে করে গ্রহণ করে নেওয়াকে যাবতীয় সমস্যার একমাত্র সমাধান সাব্যস্ত করেছেন- তাকে চাঁদ দেখার সম্ভাবনার নীতির উপর কেন নির্ভরশীল করলেন?

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডারে’র পর্যালোচনায় আরো যা লিখেছেন, ‘উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডারে’র ১৪৩১, ১৪৩২ ও ১৪৩৩ হিজরী মাস আরম্ভের তারিখসমূহ ছকসমূহের কলাম ৯-এ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে’।

    ‘উত্তর আমেরিকা ফেকাহ কাউন্সিল’ প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব ইসলামী ক্যালেন্ডার’-এর তারিখসমূহ কলাম ১০-এ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে’।

    ‘সৌদী আরবের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ‘উম্মুল কুরা’ কর্তৃক তৈরি হিজরী ক্যালেন্ডারের তারিখসমূহ কলাম ১১-এ দেওয়া হয়েছে’।

    ‘বাংলাদেশে অনুসৃত অথবা সম্ভাব্য হিজরী ক্যালেন্ডারের তারিখসমূহ কলাম- ১২-তে দেওয়া হয়েছে’।

    ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তিতে IDL ও GMT -তে ‘চন্দ্রালোকের ভগ্নাংশের হিসাব’ অনুযায়ী ১৪৩১, ১৪৩২, ১৪৩৩ হিজরী সনের তারিখসমূহ ১৩ ও ১৪ কলামে দেখানো হয়েছে’।

    ‘৯ থেকে ১৪ নং কলামে প্রদত্ত ৬ খানা ক্যালেন্ডারের মধ্যে ৩ বা তার বেশী তারিখের সমন্বয়ের একটা ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ ১৫ নং কলামে দেওয়া হয়েছে। সবাই এটা অনুসরণ করলেও মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৪৮-১৪৯, প্যারা : ৯-১৪)

    এখানে প্রশ্ন হল, বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের মধ্য থেকে যদি তিনটার ফলাফল এক হয়ে যায় তাহলে একে স্বতন্ত্র ক্যালেন্ডার গণ্য করে ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ নাম দেওয়া- এটা শরীয়তের কোন নির্দেশের ভিত্তিতে কিংবা বিজ্ঞানীদের কোন নীতিমালার আলোকে করা হয়েছে?

    এদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পেয়েছি যে, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এখন বলছেন, ‘এভাবে কোনো ক্যালেন্ডার হয় না। আমি যদিও লিখেছি, তবে তা ঠিক হয়নি। বইয়ের আরো কোনো সংস্করণ বের হলে সেখানে হয়ত আর থাকবে না এটা’।

    অথচ তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘আমার প্রস্তাবের সাথে অন্যান্য সংগঠনের প্রস্তাবের পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত না হলেও পার্থক্য খুবই কম। যৌক্তিক কারণে আমার প্রস্তাব বেশী গ্রহণযোগ্য বলে আমি মনে করি’।

    ‘পৃথিবীকে ১ ঘণ্টা অন্তর মোট ২৪ ভাগে ভাগ করে প্রতি জায়গায় নবচন্দ্রের শুরুর তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করেও এ কাজ করা যেতে পারে’।

    ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তিতে নেওয়া হিসাব অনুযায়ী আমার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং অন্যদের তুলনায় বেশী নির্ভুল বলে আমি মনে করি। তবে ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ অনুসরণ করাকে আমি আরও বেশী সমর্থন করবো’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৪৯, প্যারা : ১৫-১৭)

    সেই যৌক্তিক কারণটি কী, যার জন্য আপনার ক্যালেন্ডার আপনার দৃষ্টিতে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, সেই সাথে অন্যদের তুলনায় বেশি নির্ভুল? তার উল্লেখ করাও তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল!

    তাছাড়া আপনার প্রস্তাবিত বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আপনি ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’-এর অনুসরণকে কেন আরও বেশি সমর্থন করবেন, অথচ তার তো কোনো যৌক্তিক ভিত্তিই নেই? তবে কি এই তামাশারই নাম শরীয়ত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সমন্বয়?

    এরপর লিখেছেন :

    ‘অতএব সার্বিক বিবেচনায় আমার প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ বিশ্বব্যাপী অনুসরণ করে মুসলিম উম্মাহ একই বারে ও তারিখে রোযা-ঈদ পালন করতে পারে। ইসলামী শরীয়াহকে বিশ্বব্যাপী সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এটাই হলো সর্বোত্তম প্রস্তাব’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৪৯, প্যারা : ১৮)

    খোদার বান্দা! একই পৃষ্ঠায় কি কেউ এতগুলো বিপরীতমূখী কথা বলে? আর একটি কল্পনাসর্বস্ব জিনিসের উপর এত বড় ও দীর্ঘ স্বপ্নের ইমারত দাঁড় করায়?

    কোথায় আপনার বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার? ১৪৩৮-১৪৪০ হিজরীও লাগবে না, শুধু ১৪৩৬-১৪৩৮ হিজরীর ক্যালেন্ডারই আমাদের দেখান!

    বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা পরিচ্ছেদের সর্বশেষ প্যারা দুটি পড়–ন:

    ‘OIC -এর অঙ্গসংগঠন ‘ইসলামিক ফিকাহ একাডেমি’ ১৯৮৬ সালেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে,

    (ক) বিশ্বের কোন দেশে নবচন্দ্র দেখা গেলে সকল মুসলমানকে অবশ্যই তা মেনে চলতে হবে। কারণ চাঁদ দেখার জন্য দেশের সীমানা কোন শর্ত নয়। তাছাড়া রোযা শুরু ও শেষের আদেশ বিশ্বজনীন।

    (খ) চাঁদ দেখা জরুরী। তবে হাদীসের সাথে মিল রেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের সহায়তা নেওয়া যাবে’।

    ‘অতএব চান্দ্রমাসের ক্যালেন্ডারকে একটা সম্ভাব্য প্রস্তাব হিসেবে নেওয়াই উত্তম’। (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৪৯, প্যারা : ১৯-২০)

    যখন দেখাটাই আবশ্যক তখন অগ্রীম ক্যালেন্ডারের আর কী প্রয়োজন? আর যখন কি না আপনি হিসাবের মাধ্যমে নবচন্দ্র সম্পর্কে অবগত হওয়াকে কুরআনের নির্দেশ বলে মনে করেন, তখন শুধু ফেকাহ একাডেমীর সিদ্ধান্তের কারণে তাকে ‘সম্ভাব্য’ বানিয়ে দেয়ার কী অর্থ?

    একটা জিনিসকে আপনি কুরআনের হুকুম মনে করেন, আবার কোন একাডেমীর কথায় আপনি সেটাকে শুধু ‘সম্ভাব্য’ প্রস্তাব বানিয়ে দিবেন- এটা কি কোনো ঈমান হলো?

    আপনি অমাবস্যা থেকে চান্দ্রমাস শুরু করাকে কুরআনের হুকুম মনে করতেন। সেটাকে ছেড়ে হিসাবের মাধ্যমে দেখার সম্ভাবনার উপর নির্ভরশীল ক্যালেন্ডারে এলেন, এখন হিসাবের উপর নির্ভরশীল ক্যালেন্ডারকেও আপনি কেবল সম্ভাব্য প্রস্তাব বলছেন। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত আপনার কাছে কুরআনের হুকুম এবং শরীয়তের মাসায়েলের মূল্য এ-ই?

    হায়! যদি আপনি আপনার সংস্কার দক্ষতাকে নিজস্ব বিশেষজ্ঞতার গ-ীতে ব্যবহার করতেন। আর কুরআন, হাদীস ও শরীয়তের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ লোকদের অনুসরণেই ক্ষান্ত থাকতেন! এতে করে নিয়ম-নীতির লঙ্ঘনও হতো না, আর এই পরিমাণ স্ববিরোধী ও বিপরীতধর্মী কথাবার্তাও বলার দরকার হতো না।

    সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :

    জনাবের পুস্তিকার প্রধানতম লক্ষ্য হল, রোযা শুরু ও ঈদ পালনে যা কিছু আগু-পিছু হয় সেটার অবসান ঘটিয়ে তাতে ঐক্য সৃষ্টি করা। কিন্তু ঐক্য সৃষ্টির জন্য আপনি একাই উল্লেখ করেছেন আটটি মানদ-। বলুন, যদি ঐক্য সৃষ্টির মানদ-ই এতগুলো হয় তাহলে ঐক্যের স্বপ্ন দেখা হবে কেমন শরমের কথা?

    দ্বিতীয় বড় লক্ষ্য, সংস্কারকর্ম সম্পাদন করা। প্রশ্ন হল, ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে স্ববিরোধী কথাবার্তা লিখে যাওয়ার নামই কি সংস্কার?

    আপনি লিখেছেন, আপনার প্রস্তাবিত ক্যালেন্ডার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। অথচ শুধু ১৪৩৩ হিজরীর ক্যালেন্ডারেই আপনার প্রস্তাবিত প্রথম তারিখের সঙ্গে উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার ও উত্তর আমেরিকা ফেকাহ কাউন্সিলের ক্যালেন্ডারের মিল নেই- এরকম ছয়টি মাস রয়েছে। বারো মাসের মধ্যে ছয় মাসেই যদি আপনার সূচনা অন্যদের সূচনা থেকে ভিন্ন হয় তাহলে এ তফাত কি একেবারে কম হলো?

    আবার এই ছয় মাসে আপনার প্রস্তাবিত ক্যালেন্ডারের প্রথম তারিখ আপনার ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ থেকে ব্যতিক্রম।

    ১৪৩০ হিজরীর ক্যালেন্ডারে ছয়টি মাসে ভিন্নতা রয়েছে। ১৪২৯ হিজরীতে পাঁচ মাসে এবং ১৪২৮ হিজরীতেও পাঁচ মাসে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই তিন বছরের ক্যালেন্ডার ‘চান্দ্রমাস’ সপ্তম সংস্করণে দেয়া আছে। অন্যান্য বছরের ক্যালেন্ডারগুলোতেও তারতম্য আছে। তো ক্যালেন্ডার তৈরিই করেছেন ১৪২৮ হিজরী থেকে ১৪৩৪ হিজরী এই মোট সাত বছরের। আর তার মধ্যেই এত ফারাক!!

    চান্দ্রমাস সপ্তম সংস্করণের আগের এক সংস্করণ, যা ৩০/৪/২০০৭ খ্রিস্টাব্দে তার দস্তখতসহ মারকাযুদ দাওয়াহতে এসেছিলো, তাতে ১৪২৮ হিজরী-এর ক্যালেন্ডারের প্রথম তারিখসমূহ অনেক মাসের বেলায় সপ্তম সংস্করণ থেকে ভিন্ন। পহেলা সফর সেখানে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ খ্রি.-এ আর সপ্তম সংস্করণে হল ১৮ তারিখে। পহেলা রমযান ওখানে ১৩/৯/২০০৭ খ্রি.-এ আর এখানে ১২/৯/০৭ তারিখে। পহেলা যিলহজ্ব ওখানে ১১/১২/২০০৭ খ্রি.-এ আর এখানে ১০/১২/০৭ তারিখে, এমনিভাবে পহেলা রবিউল আউয়াল ১৪২৯ হিজরী ওখানে ৯/৩/২০০৮ খ্রি.-এ আর এখানে ৮/৩/০৮ তারিখে। পহেলা যিলহজ্ব ১৪২৯ হিজরী ওখানে ২৯/১১/২০০৮-এ আর এখানে ২৮/১১/০৮ তারিখে।

    তাহলে এখানে তো ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের হিসাবেই গরমিল হয়ে গেল!! তবে কি এরকম শৃঙ্খলাহীন ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতেই আপনি সারা বিশ্বে একসঙ্গে রোযা ও ঈদ পালনের ব্যবস্থা করবেন? আর এভাবেই কি আপনি আপনার সংস্কার-স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবেন?

    ঐক্য সৃষ্টির অন্যান্য মানদণ্ডের কী হবে?

    এই কয়েকটি ক্যালেন্ডার তো যাইহোক আপনার প্রস্তাবিত। কিন্তু জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের মাধ্যমে মাসের শুরু ও শেষ নির্ধারণের জন্য ফর্মুলা এবং ক্যালেন্ডার তো শুধু এ কয়টিই নয়, আরো আছে। স্পষ্ট যে, আপনি যদি প্রমাণ ব্যতিরেকে হিসাবের উপরিউক্ত সুরতগুলোর কোনো একটিকে অবলম্বন করতে পারেন কিংবা হিসাবের উপর নির্ভরশীল কোনো ক্যালেন্ডারও গ্রহণ করতে পারেন, শুধু উত্তম-অনুত্তমের ফারাক, তাহলে অন্যান্য ফর্মুলা ও ক্যালেন্ডারকে আপনি কিসের ভিত্তিতে রদ করবেন?

    চিন্তা করুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেয়া মাপকাঠি- হিলাল দেখার মাধ্যমে হিলাল শুরু করা/চান্দ্রমাস আরম্ভ করা যদি আপনার পছন্দ না হয়ে থাকে তাহলে আপনি নবচন্দ্রের শুরু বলবেন কোন্ জিনিসকে?

    ১.  Tropical Month -এর শুরুকে?

    ২. Sidereal Month -এর শুরুকে?

    ৩. Anomalistie Month -এর শুরুকে?

    ৪. Nodical Month -এর শুরুকে?

    নাকি

    ৫. Synodie Month -এর শুরুকে?

    যদি এর শুরুকে ভিত্তি ধরা হয় তাহলে সেটা কি-

    ৫/ক. কেন্দ্রীয় সম্মিলন (Geocentric New Moon)-এর বিচারে করবেন? নাকি

    ৫/খ. উপরিস্থিত সম্মিলন (Topocentic New Moon)-এর বিচারে করবেন?

    যদি উপরিস্থিত সম্মিলন-এর বিচারে করেন তাহলে মক্কাকে ভিত্তি ধরবেন নাকি মদীনা অথবা কুদস (যেখানে মসজিদে আকসা অবস্থিত) অথবা চট্রগ্রাম অথবা ঢাকা- কোন জায়গাকে ভিত্তি ধরবেন? নাকি আই. ডি. এল রেখাকে? আর এটাও বলুন, চাঁদের ব্যাপারে আই. ডি. এল রেখাকে কেন ভিত্তি বানাবেন। এ ক্ষেত্রে ড. ইলইয়াসের প্রস্তাবিত আই. এল. ডি. এল (ইন্টারন্যাশনাল লুনার ডেট লাইন)-কে ভিত্তি বানাতে আপনার কী সমস্যা? এগুলো সব বাদ দিয়ে যদি এ বিষয়টাকে ভিত্তি ধরেন যে, মাসের শেষে সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় যদি দিগন্তে চাঁদের উপস্থিতি থাকে তাহলে এটাই নতুন চাঁদের সূচনাকাল; যদি এটাকে ভিত্তি ধরেন তাহলে বলুন, নবচন্দ্রের এই ব্যাখ্যা কে দিয়েছে? আরো বলুন, যদি এটাই ভিত্তি হয় তাহলে ভূ-পৃষ্ঠের কোন্ জায়গার বিচারে সূর্যের পর চাঁদের অস্তমিত হওয়াকে ভিত্তি বানাবেন? মক্কা মুকারমা নাকি অন্য কোন জায়গার, নাকি কোনো রেখার?

    এগুলোর মধ্য থেকে যেটাকেই ভিত্তি বানান, চাঁদকে তো হয়ত ভিত্তি ধরা হয়ে যাবে। কিন্তু ‘হিলাল’কে তো ভিত্তি ধরা হল না, কুরআন যাকে মীকাত ঘোষণা করেছে। এখন হিলাল (হিলাল দেখা), যা কিনা কুরআনের মানদ- এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা, তাকে যদি কেউ উপেক্ষা করে, যেমন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব করছেন তাহলে তিনি বাদবাকি সুরতের মধ্য থেকে কোনো একটিকে কোন্ দলীলের ভিত্তিতে গ্রহণ করবেন? এবং কোনো ব্যক্তি যদি অন্য আরেকটি সুরতকে অবলম্বন করতে চায় তাহলে তাকেই বা ফেরাবেন কোন্ দলীলের ভিত্তিতে? নববী নির্দেশনা থেকে বিমুখ হবার ফল দিশেহারা হয়ে ঘুরে মরা ছাড়া আর কিছু না!

    দ্বিতীয় কথা হল, জনাবের উল্লেখ করা সবগুলো ক্যালেন্ডারই হিসাবের উপর নির্ভরশীল, আর আপনার দাবি- কুরআন (নাউযুবিল্লাহ) হিসাবের মাধ্যমে চান্দ্রমাসের শুরু ও শেষ নির্ধারণ করতে বলেছে।

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বক্তব্য, কুরআনের হুকুম- হিসাবনির্ভর ক্যালেন্ডার যদি অবলম্বন করা হয় তাহলে উম্মতের মাঝে ঐক্য সৃষ্টি হয়ে যাবে। প্রশ্ন হল, এই সবগুলো ক্যালেন্ডারই কি কুরআনী হিসাব মোতাবিক ক্যালেন্ডার, নাকি এর মধ্য থেকে একটি কুরআনী হিসাব মোতাবিক আর বাকিগুলো তা নয়? যদি এই সবগুলো কুরআনী হিসাব মোতাবিক হয় তাহলে শুধু এগুলো কেন, ম্যাকন্যাটন (Macnaughton), জামালুদ্দীন আব্দুর রাযযাক, কাসসুম, ড. ইলিয়াস ও শওকত অওদা এই পাঁচ জ্যোর্তিশাস্ত্র বিশেষজ্ঞে’র ক্যালেন্ডারও নিশ্চয়ই কুরআনিক হবে? কেননা এগুলোও জ্যোতির্শাস্ত্রীয় হিসাবের উপর নির্ভরশীল। তাহলে আপনার প্রস্তাবিত ক্যালেন্ডারগুলো এবং এঁদের ক্যালেন্ডারগুলোর কোনো একটি অনুযায়ী যদি আমল করা হয় তাহলে আপনার মতে কুরআনী হিসাবের ক্যালেন্ডার (?) অনুযায়ী আমল হয়ে যাওয়ার কথা। এখন যেহেতু এসকল ক্যালেন্ডারে চান্দ্রমাসের শুরু নির্ধারণে বহু মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেহেতু যতক্ষণ অনুসরণের জন্য সারা পৃথিবীতে বরং সমগ্র বিশ্বে একটি মাত্র ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করা না হবে ততক্ষণ ঐক্য সৃষ্টি হবে কীভাবে? সুতরাং ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কি এই সকল কুরআনিক ক্যালেন্ডার  (?) থেকে কোনো একটি নির্বাচন করে নিদির্ষ্ট করে দিবেন, যাতে করে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে? সবই যদি কুরআনী হিসাবের ক্যালেন্ডার হয়, আর তা থেকে কোনো একটিকে তিনি নির্বাচন করতে চান, তো সেজন্য কিছু শরয়ী প্রমাণাদিও উল্লেখ করে দেবেন, মেহেরবানী করে। যেন শরীয়ত রচনার বদনাম থেকে বাঁচা যায়!

    আর যদি এগুলোর মধ্য থেকে শুধু একটি কুরআনী হিসাব মোতাবিক হয়, আর বাকীগুলো এমন কোন হিসাব-ফর্মুলার উপর নির্ভরশীল, যা কিনা কুরআনী হিসাব মোতবিক নয়; তাহলে সেটা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বলে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা বলেননি। বরং প্রত্যেকটি অনুযায়ী আমলের অবকাশ আছে উল্লেখ করায় জানা গেল, তার মতে এই সবগুলোই কুরআনী হিসাব মোতাবিক ক্যালেন্ডার। যদি তাই হয় তাহলে ঐক্যের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে কীভাবে? আর যখন ঐক্য হলই না তখন উম্মতের সদস্যদের মধ্যে কারো শুরুতে  ফরয রোযা ছুটে যাওয়া এবং কারো কারো শেষে ফরয ছুটে যাওয়া, আর কারো রোযার দিনে ঈদ করা এবং কারো ঈদের দিন পার করে ঈদ করা- এই সমস্ত সমস্যা আপন জায়গায় রয়ে গেল, যেগুলোর সমাধান করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার সাহেব সংস্কার-এর ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাহলে?!

    আরো শুনুন, ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ‘চান্দ্রমাসে’র ইংরেজী অনুবাদও ছেপে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ‘লাস্ট ওয়ার্ডস’ শিরোনামে একটি ছক দেয়া আছে, যা এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বাংলা কোনো সংস্করণে নেই। সেটা নিম্নরূপ :

    এর বংলা তরজমা দাঁড়ায় এরকম :

    ১. ক্যালেন্ডার : স্থানীয় চাঁদ দেখা ভিত্তিক ক্যালেন্ডার।

    ভিত্তি : প্রতি মাসের প্রথম দিন স্থানীয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

    মন্তব্য : গ্রহণযোগ্য নয়। (এটা মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে)

    ২. ক্যালেন্ডার : ক. আন্তর্জাতিকভাবে নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তৈরিকৃত ক্যালেন্ডার।

    খ. OIC কর্তৃক প্রস্তাবিত ক্যালেন্ডার।

    গ. উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার।

    ভিত্তি : জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নবচন্দ্র দর্শনের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত।

    মন্তব্য : ভালো (Good) অনুসৃত হওয়ার মত। এটা মুসলিম উম্মাহর মাঝে ঐক্য সৃষ্টি করবে।

    ৩. ক্যালেন্ডার : লুনার মান্থ বইতে প্রদত্ত আমার তৈরিকৃত ক্যালেন্ডার

    ভিত্তি : IDL থেকে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে সূর্যাস্তের পর নবচন্দ্র দর্শনের (সম্ভাবনার) ভিত্তিতে।

    মন্তব্য : তুলনামূলক ভাল (Better)

    ৪ ক্যালেন্ডার : কুরআনে কারীম নির্দেশিত হিসাবনির্ভর ক্যালেন্ডার, যা এখনো প্রস্তুত হয়নি।

    ভিত্তি : পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী।

    মন্তব্য : সবচে’ ভাল (Best)

    (‘লুনার মান্থ’, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ এনামুল হক, অনুবাদ : যাকির হুসাইন, পৃষ্ঠা : ১৪৮)

    এর উপর যতই আশ্চর্য প্রকাশ করা হোক সেটা সামান্য। তার মতে যেটা কুরআনিক ক্যালেন্ডার, তার বিপরীত পদ্ধতিগুলোকে তিনি ‘গুড’ এবং ‘বেটার’ বলছেন। আর কুরআনিক ক্যালেন্ডারের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তো তিনি উত্তর দিচ্ছেন ‘সেটা এখন পর্যন্ত কেউ তৈরি করেনি’? আপনিও না? ‘জ্বী না’। আপনি ‘চান্দ্রমাস’ বাংলা ও ইংরেজীতে ‘বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’ এবং ‘একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার’-এর নমুনা পেশ করেছেন। এটাও কি কুরআনিক ক্যালেন্ডার নয়? ‘জ্বী, না’। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

    আপনি তো এ বইয়ে প্রশ্ন ৫৪ করেছেন এভাবে :

    ‘আপনার কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মুসলমানদের চাঁদের হিসাব ভুল হচ্ছে, আর অমুসলমানদের হচ্ছে না। কারণটা একটু খুলে বলবেন কি?’ এরপর দীর্ঘ উত্তরের শেষ দিকে লিখেছেন :

    ‘কোরআন-হাদীসের সঠিক মর্মবাণী অনুধাবন করতে পারলে আমরাও নির্ভুল চান্দ্রপঞ্জিকা বা একক বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরণ করতে পারতাম। এ ব্যাপারে হাদীসের মর্মার্থকে খণ্ডিতভাবে দেখার কারণে কোরআনের নির্দেশ উপেক্ষিত হয়ে আছে। তা না হলে আমাদের চান্দ্রপঞ্জিকা আর অন্য ধর্মাবলম্বীদের চান্দ্রপঞ্জিকায় কোনো তফাৎ হত না। আমার পুস্তকে দেওয়া বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডারই এর একমাত্র সমাধান দিতে পারে। তাই আমাদের তা অনুসরণ করা উচিত’।

    (চান্দ্রমাস, পৃষ্ঠা : ১৯৮)

    আপনার এ কথায় কি পাঠকরা এটাই বুঝবেন না যে, আপনার প্রস্তাবিত বিশ্ব হিজরী ক্যালেন্ডার আপনার দৃষ্টিতে কুরআন ও হাদীসসম্মত ক্যালেন্ডার? অথচ আপনার মনের কথাটা হল, এটা কুরআনিক ক্যালেন্ডার নয়। কুরআনিক ক্যালেন্ডার এখনো তৈরি হয়নি। ইংরেজী পুস্তিকায় আপনি সেদিকে ইঙ্গিত করছেন এবং সাক্ষাতে বা ফোনেও মানুষকে বলছেন!! সম্মানিত পাঠক, আপনারাই  ফায়সালা করুন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের উপর কী পর্যালোচনা পেশ করা যায়?!

    দাবি তো ছিল সংস্কারের। কিন্তু যেটাকে বেচারা হক ও হাকীকতের  (সত্য ও বাস্তবতার) বিকৃতি করে কুরআনের হুকুম সাব্যস্ত করলো, তার উপর না নিজে আমল করল, না অন্যদেরকে আমলের সুযোগ করে দিল। বরং তার বিপরীত বহু জিনিসকে নিজের সংস্কারধর্মী বই ‘চান্দ্রমাসে’ উল্লেখ করে গেছেন। এবং রীতিমত সেটাকে ‘গুড’ ও ‘বেটার’ বলেও স্বীকৃতি দিয়েছেন।

    যদি এগুলো ‘গুড’ আর ‘বেটার’ই হয়  তাহলে কুরআন পরিপন্থী হয় কী করে? আর যদি কুরআন পরিপন্থী হয় তাহলে ‘গুড’ এবং ‘বেটার’ হয় কীভাবে?

    শত্রুতা হল শুধু নিজ নিজ এলাকার দেখা অনুযায়ী রোযা ও ঈদ করার সাথে! এটা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেন তা একদম হারাম!! খোদার বান্দা, যাকে আপনি ‘গুড’ এবং ‘বেটার’ বলছেন সেটা আপনার দৃষ্টিতে কুরআন পরিপন্থী হওয়া সত্ত্বেও তাকে এই স্বীকৃতি দিচ্ছেন। তাহলে প্রথম সুরতকে অন্তত মুবাহ বলুন। সেটা আপনার দৃষ্টিতে কুরআন পরিপন্থী হওয়ার চেয়ে কি বেশি কিছু যে, তাকে কোনোভাবেই বৈধ বলে স্বীকার করতে পারছেন না!!

    যাই হোক, আমি তো তার ইংরেজী বই থেকে ছক উদ্ধৃত করে দেখাতে চাচ্ছিলাম যে, তার সংস্কারের স্বরূপ কী? সার কথা হল, তিনি কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করে এক ফরয হুকুম উদ্ভাবন করেছেন, কিন্তু ঐ হুকুম অনুযায়ী আমলের কোনো রাস্তা তিনি দেখাননি। তদুপরি ঐ হুকুমের পরিপন্থী পদ্ধতিগুলোকে ‘গুড’ এবং ‘বেটার’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন!!

    এখন জনাবকে বিনয়ের সাথে কে জিজ্ঞেস করবে যে, আমরা তো আপনার বইটি আগ্রহ সহকারে পড়েছিলাম। আপনার দাবি অনুসারে মনে করেছিলাম, আপনি হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা ভুলের সংশোধন করে একটা আসল জিনিস আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম, আপনি আমাদেরকে কুরআন পরিপন্থী পথে পরিচালিত করতে চান!!

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেব! হাদীস, সুন্নাহ ও আইম্মায়ে দ্বীনের ইজমা এবং উম্মতে মুসলিমার সর্বস্বীকৃত পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে কুরআন বোঝার দাবি করা আগাগোড়া মিথ্যা। যার সর্বনি¤œ খেসারত এই যে, বৈপরিত্য ও স্ববিরোধিতার ময়দানে পেরেশান হয়ে ঘুরতে থাকা!!

    বৈপরিত্য ও স্ববিরোধিতা এই বইয়ের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য! এই সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনায় তারই কিছু নমুনা শুধু তুলে ধরা হল।

    যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজে অ্যাবে

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য মেরিল্যান্ডে এসেছেন  জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজে অ্যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানায় বিবিসি।
    এর আগে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় জানিয়েছিল, মেক্সিকোতে জাপানের গাড়ি তৈরির বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি টয়োটা একটি ফ্যাক্টরি তৈরি করলে তার উপর উচ্চহারে কর আরোপ করা হবে। ট্রাম্প জানান, গাড়ি তৈরির প্লান্ট তৈরি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হক। এতে এই দেশের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
    এই ভ্রমণে অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়েও আলোচনা করবে দুই দেশের প্রধান।
    উল্লেখ্য, ট্রাম্প জাপানের সমালোচনা করে এক সময় জানিয়েছিলেন, ন্যাটো ভুক্ত দেশ হিসেবে জাপানকে যে পরিমাণে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তার ফিরতি হিসেবে জাপান যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা প্রদান করছে না। এ ছাড়াও জাপানের ন্যাটো সদস্য হিসেবে আরো বেশি পরিমাণ টাকা দেয়া উচিত বলেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির বিক্রি না হওয়ার জন্যও দেশটির সমালোচনা করেছেন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

    খালি পেটে কাঁচা লিচু খেলে হতে পারে মৃত্যু!

    লিচু পছন্দ করে প্রায় সবাই। কিন্তু সুস্বাদু এই ফল কাঁচা থাকাকালে খালি পেটে খেলে যেতে পারে প্রাণও! ভারতের বিহারের মুজাফফরপুর জেলায় শিশুমৃত্যুর তদন্তে নেমে এই চাঞ্চল্যকর আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন একদল গবেষক।
    ২০১৪ সালে বিহারের মুজাফফরপুর জেলায় লিচু খেয়ে মৃত্যু হয় বেশ কয়েকটি শিশুর। সেই লিচুগুলো আদৌ অস্বাস্থ্যকর বা পচা ছিল না। তাহলে কীভাবে মৃত্যু হলো ওই শিশুদের? জানতে তদন্তে নামেন একদল গবেষক। আর তাতেই উঠে এসেছে ওই তথ্য।
    গবেষকরা বলছেন, লিচুতে এমন বিষ রয়েছে ‌যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। মিথাইলিনসাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন বা এমসিপিজি নামের এই রাসায়নিক শরীরে ঢুকলে মারাত্মক বমি হতে পারে। এমনকি, শিশু অপুষ্টির শিকার হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। পাকা লিচুতে এই রাসায়নিকের মাত্রা সহনসীমার মধ্যে থাকলেও কাঁচা লিচুতে থাকে ভয়ানক মাত্রায়, ‌যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
    গবেষণা বলছে, মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে জ্বর হতে পারে। শিশুরা খালি পেটে কাঁচা লিচু খেলে হতে পারে মৃত্যুও। মুজাফফরপুরে এমন ঘটনাই ঘটেছিল। সেখানে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিশুরা খালি পেটে কাঁচা লিচু খেয়ে ফেলেছিল বলে জানতে পেরেছেন ওই গবেষকরা।