• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ০+০+০=শূন্য

    ভারতকে যা দিয়েছি সারাজীবন মনে রাখবে : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

    সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন সম্পন্ন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তারাই নির্বাচন করবে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীণ সরকার হবে সংবিধান অনুযায়ীই। সংবিধানে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবেই ভোটের সবকিছু হবে। গতকাল গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ১৪ দলীয় জোট ও ২০ দলীয় জোটের বাইরে আরেকটি জোট হচ্ছে; আপনার মন্তব্য কি? জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই যে একটা হিসেব আছে না; ০+০+০= শূন্য। এটাও এমন হবে। তারপরও নির্বাচন উপলক্ষ্যে জোট হলে এটা অবশ্যই ভাল। তারা যদি এক হয়ে নির্বাচন করে তাহলে যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, দুর্নীতির দায়ে জেলে রয়েছে মানুষ তাদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না। প্রধানমন্ত্রীর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সফরের সফলতা জানানো উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা সাবেক প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ‘বদু কাকা’ সম্বোধন করে বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর বদু কাকাকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের নামে প্রহসন করেছিলেন। তিনি কি জিয়ার আমলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ৭৯ সালের নির্বাচনের কথা ভুলে গেছেন? ওই নির্বাচন ব্যবস্থা কী রকম ছিল? তখনও তো তিনি বিএনপির ওই ভোট চুরির সঙ্গী ছিলেন। এদের মুখে ভোটের কথা শুনলে, পাগলেও হাসবে। অবশ্য তাকেও বেশি দিন রাখেননি খালেদা জিয়া। বিদায় নিতে হয়েছে। এখন সব ভুলে গিয়ে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছেন। আসলে একটা কথা আছে না, ‘মেরেছে কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দিব না।’ দেশে নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। ভোট চোরদের কাছ থেকে শিখতে হবে না কীভাবে নির্বাচন হবে। কারণ নির্বাচনের আধুনিকায়ন করেছে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার। বি চৌধুরীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ভালো কথা, বি. চৌধুরী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছেন। কিন্তু কার কাছে মুক্তি চান? আমার কাছে মুক্তি চেয়ে লাভ কী? আমি কি তাকে কারাগারে পাঠিয়েছি? এতিমের টাকা চুরির দায়ে আদালত তাকে সাজা দিয়েছেন, সেখানে যান। আমার কাছে মুক্তি চেয়ে লাভ নেই।
    সিনিয়র একজন সাংবাদিক ভারতীয় একটি পত্রিকার খবরের সূত্র ধরে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছ থেকে কোন প্রতিদান আশা করেন কিনা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন পত্রিকা এসব নিউজ করেছে তা আমি জানি না। আমরা ভারতকে যেটা দিয়েছি তারা তা সারাজীবন মনে রাখবে। প্রতিদিনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বোমাবাজি গুলি থেকে আমরা তাদের শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। আমি কোনও প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে? আর কারও কাছে পাওয়ার অভ্যাস আমার কম। দেওয়ার অভ্যাস বেশি।
    প্রবীণ এক সাংবাদিকের প্রশ্ন করতে উঠে বলেন, ‘আপনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন, এখনো নোবেল শান্তি পুরস্কার আপনার অর্জন হয়নি। এটা আপনার প্রাপ্য। এজন্য অনেক প্রক্রিয়া, সেটি আমাদের এখনই অনুসরণ করা দরকার নয় কি’? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরণের প্রক্রিয়া চালানোর আমার কোনও ইচ্ছা নাই। লবিস্ট রাখার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। সামর্থ্য থাকলেও এসব আমি সমর্থন করি না। বাংলাদেশের মানুষকে শান্তি দিতে পারলাম কিনা সেটাই বড় বিষয়। গরিব মানুষের সুদের টাকায় নোবেল পাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।
    তিস্তা পানি চুক্তির জন্য ভারতের আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস করে বাংলাদেশ বসে নেই এমন তথ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা তিস্তা ব্যারেজ করলেন কেন? জানতেন না ব্যারেজ বানালে পানির সংকট হতে পারে। এখন পানি ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে। আমি নাকি এক বালতি পানিও নিয়ে আসতে পারি নাই। এক বালতি পানি রিজভীকে পাঠিয়ে দেয়া উচিত। আমি কোনও কিছুতেই কারও ওপরই ভরসা করে চলি না। আমার দেশের পানির ব্যবস্থা কীভাবে করতে হবে সেটা আমি করে যাচ্ছি। নদী ড্রেজিং করছি। পুকুর খনন করছি। পানি যাতে ধরে রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা করছি। তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে ভারতের আশ্বাসের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা কথা দিয়েছে। এজন্য অপেক্ষা করেন। আর তাদের পানি না দিলে কি আমাদের চলবে না? আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যবস্থা করছি। পানির সমস্যা যাতে নিজেরা সমাধান করতে পারি, সেই ব্যবস্থা করছি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় আসার প্রতি ইংগিত করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা মুচলেকা দেয় আমি সে দলে না। মুসলেকা দেইনি বলে সে সময় ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ভারত আমাকে ক্ষমতায় আনবে কী আনবে না, সেটা জানি না। কিন্তু গ্যাস আমাদের। আমেরিকান কোম্পানি আমাদের গ্যাস উত্তোলন করে ভারতে বিক্রি করবে। এ নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে আমি ‘না’ করে দেই। তিনি খালেদার শরণাপন্ন হন। পরে সেই গ্যাস পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ওরা বলে, আমরা নাকি এক বালতি পানিও আনতে পারিনি। অথচ গঙ্গার পানির চুক্তি আমরাই করেছি। আমি ৩০ বছরের চুক্তি করেছি।
    মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যত বড় গডফাদার হোক আর মাফিয়া ডন হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তিনি গডফাদার হোক, তিনি যে বাহিনীরই হোক, এটা আমরা দেখছি না। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি যখন যা ধরি, ভালো করেই ধরি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও অনেকে সমালোচনা করেছিল। সমালোচনার ভয়ে সে অভিযান বন্ধ হয়নি; মাদকবিরোধী অভিযানও বন্ধ হবে না। মাদক সমাজের জন্য একটা ব্যাধির মতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে আপনারা পত্রপত্রিকায় লিখেছেন। আপনারা কি চান, অভিযান চলুক নাকি বন্ধ হয়ে যাক? খুব স্বাভাবিক যে, এই ধরণের অভিযান চালাতে গেলে কিছু ঘটনা ঘটবেই। এ পর্যন্ত যে কয়টা ঘটনা হয়েছে, মনে হয় না একটাও নিরীহ ব্যক্তি শিকার হয়েছে। সমাজ থেকে মাদক দূর করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি বলেন, যখন পুলিশ-র‌্যাব একটা অভিযানে যায়, তখন তাদের একটা অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আর সে ঘটনায় যদি কোনও কিছু ঘটেই থাকে, আর সেখানে যদি অন্যায়ভাবে কিছু ঘটে থাকে, তাহলে তাদের কিন্তু বিচার হয়। এসব অভিযানে কোনও নিরীহ ব্যক্তি হয়রানীর শিকার হলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু সমাজ থেকে মাদক দূর করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু ও তিস্তা পানি চুক্তি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিস্তা-রোহিঙ্গা সব কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার আমি গিয়েছি বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে। তাই সেটিকেই জোর দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আশ্বাস দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য যথেষ্ট রিলিফ পাঠিয়েছে ভারত।
    লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তাঁর সা¤প্রতিক ভারত সফরের মধ্যদিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক হয়। এ সময় উভয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে স্থাপিত বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান আসানসোলে অবস্থিত ‘কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়’ জাতীয় কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তনে তাঁকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক বর্তমানে ‘সোনালী অধ্যায়’ অতিক্রম করছে। তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনেতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

    আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে মিলিত হচ্ছেন আবে ও ট্রাম্প

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করবেন।

    হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় জানান, দুই নেতা ৭ই জুন হোয়াইট হাউজে মিলিত হবেন।

    তিনি আরও লেখেন যে, সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের প্রত্যাশিত শীর্ষ বৈঠকের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

    ধারণা করা হচ্ছে যে, আবে ও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন এবং জাপানি নাগরিক অপহরণ সমস্যার সমাধানে একত্রে কাজ করার বিষয়টি পুনঃনিশ্চিত করবেন।

    যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে এই বৈঠকের পর তারা জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করবেন। ৮ই জুন কানাডায় এই সম্মেলন শুরু হবে।

    খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আজই আপিল: অ্যাটর্নি জেনারেল

    বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কুমিল্লায় হত্যা ও নাশকতার দুই মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আজই চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে।

    সোমবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।এর কিছুক্ষণ আগে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ দেন।

    উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই দিন থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তিনি।

    ওই মামলায় আপিলের পর খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত হয়ে যায়। তবে গত ১৭ মে জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

    সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে কারাবন্দি খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু দেশের বিভিন্ন আদালতে নাশকতা ও মানহানির মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। ফলে মুক্তি পেতে হলে তাকে এসব মামলায় জামিন পেতে হবে।

    এ রকম তিন মামলার মধ্যে দুটিতে সোমবার খালেদা জিয়া হাইকোর্টে জামিন পেলেও আরেকটিতে তার জামিন খারিজ হয়ে গেছে। এ কারণে বিএনপি নেত্রীর কারামুক্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

    ক্ষতিগ্রস্ত দাইইচি পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে জ্বালানি অপসারণের প্রস্তুতি

    জাপানের দুর্ঘটনা কবলিত ফুকুশিমা দাইইচি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালক কম্পানি, কেন্দ্রটি বাতিল করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ হিসেবে এর একটি চুল্লি ভবন থেকে জ্বালানি অপসারণের প্রস্তুতি আরম্ভ করেছে।

    টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কম্পানি টেপকো, দু নম্বর পরমাণু চুল্লি ভবনে সোমবার থেকে কাজ আরম্ভ করে। ভবনটির ওপরের তলার এক জলাশয়ে মজুদ ক’রে রাখা ৬শো ১৫টি জ্বালানি রডকে আরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

    দু নম্বর চুল্লিটি হচ্ছে ২০১১ সালে এই বিদ্যুত কেন্দ্রে মেল্টডাউনের দুর্ঘটনা কবলিত তিনটি পরমাণু চুল্লির অন্যতম। ভবনটির ভেতরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এখনো বেশি।

    টেপকো এই ভবনের দেওয়ালে প্রস্থে ৫ মিটার ও ৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গর্ত তৈরি করবে ভেতরে রোবোট পাঠিয়ে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপের জন্য।

    এই দেওয়াল ২৯টি ব্লকে বিভক্ত। প্রত্যেকটিতে হ্যান্ডেল লাগানো আছে যাতে সেগুলো টেনে খুলে আনা যায়। টেপকোর কর্মকর্তারা চুল্লি ভবন থেকে কিছুটা দূরে পরিচালনা কক্ষের ব্লক খোলার জন্য দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করেন।

    এই কাজ আগামী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    দুই মামলায় খালেদার জামিন, একটিতে খারিজ

    কুমিল্লায় হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের দুটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন আদালত। তবে নড়াইলে দায়ের মানহানির অপর মামলায় তার জামিন আবেদন উপস্থাপন হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
    সোমবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
    আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী ও এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
    এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন বহাল রেখে গত ১৬ মে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
    খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য উপরের তিনটিসহ মোট ৬টি মামলায় জামিন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

     

    তোচিনোশিন ওযেকি চ্যাম্পিয়নে উন্নীত

    জাপান সুমো সমিতি, জর্জিয়ার সুমো কুস্তিগির তোচিনোশিনকে ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়ার ২য় সর্বোচ্চ র‍্যাংক ওযেকিতে উন্নীত করার আলোচনা করতে আগামী বুধবার বোর্ডের একটি জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছে। উল্লেখ্য, এই বৈঠক আহ্বানের অর্থ হচ্ছে কার্যত পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।

    তোচিনোশিন, চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রথমবারের মত গ্র্যান্ড সুমো প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করেন।

    তিনি, সর্ব সাম্প্রতিক তিনটি প্রতিযোগিতায় ৩৭টি বিজয় লাভ করেন যা ওযেকি র‍্যাংকে উন্নীত হতে বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় জয়ের সংখ্যার চেয়ে বেশী।

    আগামী বুধবার সমিতির বোর্ডের বৈঠকের পর, আনুষ্ঠানিকভাবে তোচিনোশিনের পদোন্নতি হবে।

    উল্লেখ্য, তিনি হবেন ওযেকি র‍্যাংকে উন্নীত হওয়া জর্জিয়ার প্রথম সুমো কুস্তিগির।

    আজ, গ্রীষ্মকালীন সুমোর গ্র্যান্ড প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। ইয়োকোযুনা বা গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন কাকুরিউ, পরপর ২য় বারের মত চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জিতে নেন। তোচিনোশিন, ১৩টি জয় ও ২টি পরাজয় নিয়ে ২য় স্থান লাভ করেন।

    হিন্দু কবির কবিতায় মহানবীর প্রশংসা

    ভারতে যখন মুসলমানদের নামাজ পড়ার জায়গা ও ঐতিহাসিক মুসলিম ব্যক্তিত্বদের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করা নিয়ে উত্তেজনা চলছে তখন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশস্তি করে কবিতা (‘নাতিয়া শায়েরি’) রচনা করে চলেছেন এক হিন্দু পÐিত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
    যার কবিতায় উঠে এসেছে মহানবীর প্রশংসা, তিনি হচ্ছেন পÐিত রাম সাগর পৃথ্বিপাল ত্রিপাঠী। তিনি অবশ্য পরিচিতি শুধু সাগর ত্রিপাঠি নামে। তার পরিবার আবার অযোধ্যার রাম লীলা বিন্যাস মন্দির ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু ৬৮ বছর বয়সী সাগর ত্রিপাঠী নিজেকে পরিচিত করেছেন ভিন্ন ভাবে, শায়রি বা কবিতার মাধ্যমে। তার কবিতায় আসছে স্রষ্টার প্রশস্তির সঙ্গে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রশংসা। তিনি বিশ^ ব্রাহ্মণ পরিষদেরও সভাপতি।
    কেন? এর উত্তরে সাগর ত্রিপাঠী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “নবী মুহাম্মদ শুধু মুসলিমদের নন, তিনি বিশ্ব মানবের। তাই তার কাছে করুণা চাওয়ায় কোনো ভুল নেই।”
    একটি শের-এ তিনি বলেছেন, ‘সিরফ এক কওম কি নেহি হ্যায় ও/ রহমতে আলামিন হ্যায় আকা (তিনি শুধু একটি কওমের নন, তিনি সারা বিশে^র জন্য আল্লাহর রহমত)।
    ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে নয়, মুহাম্মদ (সা.)কে সাগর ত্রিপাঠী দেখেন মানবতার প্রতীক হিসেবে, সা¤প্রদায়িকতার স¤প্রীতির প্রচারক হিসেবে।
    টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মুম্বাইয়ের কোলাবায় সাগর মুখী যে ফ্ল্যাটে সাগর ত্রিপাঠী থাকেন, সেখানে তার অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কারের সঙ্গে রয়েছে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন, মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী। সেই সঙ্গে আছে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ গীতা ও রামায়ণ। তার বসার ঘরে বিশাল সোফার পেছনে রয়েছে কিছু জায়নামাজ, যাতে তার মুসলিম ভক্তরা এলে নামাজ পড়তে পারেন।
    সাগর ত্রিপাঠি উর্দু ও দেবনাগরীতে কবিতা রচনা করেন। তার কবিতায় গঙ্গা-যমুনা তাহজিব-এর (যৌথ সংস্কৃতি) প্রকাশ দেখা যায়।
    অযোধ্যার পÐিত পরিবারের একজন হয়ে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয়, আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।
    “তবে এটুকু বলতে পারি, যদি মানুষ তাদের অহমবোধ ছাড়ে, আর রাজনীতিকরা দ‚রে থাকে, তবে এই সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।”
    উত্তর প্রদেশের সুলতানপুর জেলায় জন্ম নেওয়া সাগর ত্রিপাঠীর কবি হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর পরিবার চাইছিল, তাদের ছেলে হবে সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু উর্দু কবি রঘুপতি সাহাই ফিরাক গোরখপুরীর প্রভাবে কবি জীবনই বেছে নেন সাগর ত্রিপাঠী।
    “আমার মনে হয়েছিল, আমি বরং তার জন্য চা-পানি আনা নেওয়া করব, আর তার কবিতা শুনব,” হাসতে হাসতে বলেন সাগর ত্রিপাঠী।
    তরুণ বয়সে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমানোর পর অর্থ রোজগার ভালোই করেছিলেন তিনি।
    “কিন্তু তার মধ্যেও আমি মনের মাঝে এক ধরনের শ‚ন্যতা অনুভব করতাম, মনে হত কী যেন নেই, আমার সেই শ‚ন্যতা ভরিয়ে দিয়েছে কবিতা।”
    ত্রিপাঠি তার বই বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ গরিব মুসলমান ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করেন।
    সাগর ত্রিপাঠীর প্রশংসা করে খ্যাতিমান উর্দু কবি আবদুল আহাদ সা‘জ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “সমকালীন উর্দু মুশায়রা (কবিতার আসর) জগতে সাগর সাহেব একটি গুরুত্বপ‚র্ণ নাম, তার অবদান প্রশংসার দাবি রাখে।”

    দুনিয়ার জীবন আখেরাতের জীবন

    প্রফেসর হযরত মুহাম্মাদ হামিদুর রহমান

    [দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। কথাটা নতুন। মোবাইল না হলে সম্ভবত এ কথাটা শোনা যেত না। মুঠোতে দুনিয়া ভরেও স্বস্তি মেলেনি। দুনিয়ার আগ্রহ আরও বেড়েছে। কমেনি। কমিউনিকেশন বাড়াতে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে। বাড়ির খবর বাইরে যাচ্ছে। বাইরের মানুষ ঘরে ঢুকছে। ঘর-সংসার ভাঙছে। গড়ছেও। ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি। এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। সব এখন মোবাইল।

    দ্বীনদাররা মোবাইলের ভালোটুকু নেওয়ার চেষ্টা করেন। সময়ের প্যাঁচে পড়ে এ চেষ্টাও অনেক সময় ব্যর্থ হয়ে যায়। টেকনোলজির এই এক সমস্যা। ব্যর্থতা নিয়েই আগে বাড়তে হয়। এরকম একটা চেষ্টা করলাম আমেরিকায় এসে। অনলাইনে বয়ান শোনার চেষ্টা। মোবাইলে। ভাইবার বা ইমোতে লাইভ হতে পারত। প্রফেসর হযরত কখনো স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন না। সুতরাং সেই সুযোগ নেই।

    হযরত নোকিয়ার পুরোনো মডেলের একটি সেট ব্যবহার করেন। তাতে ক্যামেরা নেই। ফাংশনও বেশি নেই। যা আছে, তার সবটুকুও হযরত জানেন না। জানতেও চান না। তবে এলার্ম দিতে পারেন। এখন মোবাইলের এলার্মই বেশি ব্যবহার করেন। ঘড়ির এলার্ম প্রয়োজন হয় না। অনেক আগে একবার এলার্মের জন্য তিনি একটি ঘড়ি কিনতে গেলেন। নিউমার্কেটে। তখন আজিমপুরের বাসায় কেবল উঠেছেন। ১৯৯৫-৯৬ সালের ঘটনা। আমি সঙ্গে ছিলাম।  নিউমার্কেটে হযরতকে আমি ঐ একবারই যেতে দেখেছি। রিকশা থেকে দক্ষিণের গেইটে নামলেন। তারপর সোজা ঘড়ির দোকানে। দোকানদার একটি ঘড়ি দেখাল। টেবিল ঘড়ি। হযরত দাম জিজ্ঞেস করলেন। কোনো দাম-দর করলেন না। দাম পরিশোধ করে আবার আজিমপুরের বাসায়। বাসায় এসে ঘড়িটাতে হযরত এলার্ম সেট করতে চাইলেন। পারলেন না। ঘড়িটাই নষ্ট। আর ফেরতও দেননি।

    । ২।

    হযরতের কাছে যারা বাইআত হন, তাদের কসদুস সাবিল কিতাব থেকে পড়ে শোনানো হয়। যারা শোনান, তারা এর সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু কথাও বলেন; শায়েখের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার গুরুত্ব, কেমন করে তা রাখা যাবে, না রাখলে কী হবে ইত্যাদি। কাছাকাছি থাকলে অনেক সময় আমাকেও জিজ্ঞেস করে। আমি তাদের হযরতের সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাব্য সব মাধ্যমের কথা বলে দেই। অভিজ্ঞতায় যা জেনেছি, সব। নতুনদের জন্য সহজ হয়। আমেরিকায় এসে আমার জন্যই বিষয়টি কঠিন হয়ে গেল। কিছুতেই হযরতকে পাচ্ছি না।

    হযরতের মোবাইলটা এখন বেশিরভাগ সময় সাইলেন্ট মুডে থাকে। এ মুডে থাকলেও হযরত ফোন ধরেন। আমি সম্ভাব্য সব সময়েই ফোন করলাম। পেলাম না। একটা সময় আমার জানা ছিল। সেটা কাউকে সাধারণত বলি না। বললেও অবশ্য সবাই সাহস করবে না। না করাই ভালো। আমার আর উপায় ছিল না। সে সময় ফোন করলাম। তখন হযরতের মোবাইল সাইলেন্ট মুডে থাকে না। সাইলেন্ট মুডে এলার্ম শোনা যায় না। তবে এ সময় ফোন করতে চাইলে মুজাহাদা লাগে। আমেরিকার সময় উল্টো। এখানকার পড়ন্ত বিকেলে বাংলাদেশে তাহাজ্জুদের সময়। কোনো মুজাহাদা করতে হয়নি। পাঁচটায় ফোন দিলাম। ছ’টার আগে ফজরের নামায হওয়ার কথা না। পেয়ে গেলাম। অযু করছিলেন। পরে কথা বললেন।

    আহা! সেই কণ্ঠ। ভোরের নিস্তব্ধতায় কণ্ঠস্বরের আওয়ায খুব পরিষ্কার। কোনো জড়তা নেই। সময় চাইলাম বয়ানের। দিলেন। বাংলাদেশে জুমার দিন সকাল ন’টা। ডালাসে তখন আগের দিন রাত ন’টা। এদেশ সময়ে পিছিয়ে আছে! সবকিছুতে আমেরিকা আগে বাড়তে পারেনি। সূর্যের আলো তাদের পরেই দেখতে হয়। দ্বীনের আলোও একদিন দেখবে। সূর্যের মতোই একদিন উদয় হবে। এখন না হলেও পরে হবে। হবেই- ইনশাআল্লাহ।

    । ৩।

    সময় ঘনিয়ে এল। ঘরে বসে আছি। একটু পরেই হযরতকে ফোন করতে হবে। ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে আমরা চারজন শ্রোতা। বক্তার সামনে কোনো শ্রোতা নেই। মাইক্রোফোন নেই। প্যান্ডেল নেই। শ্রোতারা মাত্র দশ হাজার মাইল দূরে! যারা চায়, তারা এমনি পায়। মোবাইল তখন হয়ে ওঠে নতুন জীবন। হযরতের মুরীদদের মধ্যে যারা দেশের বাইরে থাকেন, তারা এরকম আয়োজন করতে পারেন। করেন না। চান না যে এমন না। বিদেশে কাজ করে যে অবসর মেলে, তাতে আর কুলোয় না। এনজয়মেন্ট ছাড়া অন্যকিছু ভালো লাগে না। দ্বীনের কাজও যে আনন্দ দিতে পারে, এটা যদি সকলে বুঝত! -মুহাম্মাদ আদম আলী]

    হামদ্ ও ছানার পর

    আলহামদু লিল্লাহ। আমি একটি আয়াত প্রায়ই পড়ে থাকি। হাফেজ্জী হুযুর রাহ. আয়াতটি বার বার পড়তেন। আল্লাহ বলেন-

    وَ اتَّقُوْا یَوْمًا تُرْجَعُوْنَ فِیْهِ اِلَی اللهِ  ثُمَّ تُوَفّٰی كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَ هُمْ لَا یُظْلَمُوْنَ .

    ভয় কর সেদিনকে, যেদিন তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে আল্লাহ তাআলার কাছে। অতপর প্রতিটি প্রাণকে বদলা দেওয়া হবে- যা সে অর্জন করেছিল। তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না। – সূরা বাকারা (২) : ২৮১

    সুতরাং এ দুনিয়াতে আমরা যা অর্জন করছি, তা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পরিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এটা মনে রেখেইে আমাদের কাজ করতে হবে। এখন আপনারা আমেরিকায় বসে আমার কথা শুনছেন। আর আমি ঢাকা থেকে কথা বলছি। আমাদের এ কাজের লক্ষ্য- এ কথা মনে করিয়ে দেওয়া যে, আমাদের একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। এজন্য আমাদের তৈরি হতে হবে।

    এখন দুনিয়ায় তাঁকে দেখা যায় না। পাশ্চাত্যে আল্লাহর ব্যাপারে কোনো পরওয়া নেই। আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। এখন সেখানে মুসলমানরা আছে। নতুন নতুন মসজিদ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কয়টা মসজিদ? কয়জন মুসলমান? মুসলমানদের মধ্যে সাদা (American White Citizen)

    কয়জন আছে? এজন্য সেখানে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারটা সেকেন্ডারি। প্রাইমারি ব্যাপার হচ্ছে দুনিয়া। দুনিয়া আরও বেশি চাই। আরও বেশি চাই। আরও ভালো বাড়ি চাই। আরও ভালো খাবার চাই। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন-

    بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَیٰوةَ الدُّنْیَاؗ  وَ الْاٰخِرَةُ خَیْرٌ وَّ اَبْقٰی.

    না, তোমরা তো দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী। -সূরা আ‘লা (৮৭) : ১৬-১৭

    আখেরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। এটাকে আল্লাহ তাআলা সুন্দরভাবে সূরা রূম-এ বলেছেন। সূরা নম্বর ৩০।

    یَعْلَمُوْنَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا  وَ هُمْ عَنِ الْاٰخِرَةِ هُمْ غٰفِلُوْنَ .

    তারা দুনিয়ার বাহ্যিক দিক খুব ভাল জানে। কিন্তু আখেরাতের ব্যাপারে গাফেল। -সূরা রূম (৩০) : ৭

    তারা দুনিয়ার বাহ্যিক দিক খুব ভালে করে জানে। এখানে ‘যহিরান’ মানে, যা প্রকাশ্য। সবাই এটা দেখে। ‘হায়াতুদ দুনিয়া’ মানে দুনিয়ার হায়াত বা দুনিয়ার জীবন। They very well know the outworldly things of life । বড় বাড়ি, রাস্তা-ঘাটসব দেখা যায়। অথচ আখেরাত কত ভালো, কত সুন্দর। এখনকার মর্ডান টেকনোলজি দেখলে মনে হয়, আল্লাহ তাআলা এই ২০১৭ সালের জন্য এ আয়াত দিয়েছেন। কুরআন মাজীদে আরেক জায়গায় আল্লাহ অবিশ্বাসীদের কথা নকল করেন-

    وَ قَالَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكُ ِافْتَرٰىهُ وَ اَعَانَهٗ عَلَیْهِ قَوْمٌ اٰخَرُوْنَ  فَقَدْ جَآءُوْ ظُلْمًا وَّ زُوْرًا .

    যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা বলে, এটা (অর্থাৎ কুরআন) এক মনগড়া জিনিস ছাড়া কিছুই নয়, যা সে নিজে রচনা করেছে এবং অপর এক গোষ্ঠী তাকে এ কাজে সাহায্য করেছে। এভাবে (এ মন্তব্য করে) তারা ঘোর জুলুম ও প্রকাশ্য মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। -সূরা ফুরকান (২৫) :  ৪

    ইসলাম কী বলে, মুহাম্মাদ সা. কী বলেন, তাঁর সাহাবায়ে কেরাম কী বলেন, অথবা মুসলমানরা কী বলে- সব মিথ্যা! মুহাম্মাদ সা. এটা বানিয়ে নিয়েছে! আল্লাহ কি আশ্চর্য ভঙ্গিতে অবিশ্বাসীদের কথা নকল করছেন। কি চমৎকারভাবে আল্লাহ মুসলমানদের সামনে পরিস্থিতি তুলে ধরছেন!

    সূরা মূলক-এ আল্লাহ বলেন-

    تَبٰرَكَ الَّذِیْ بِیَدِهِ الْمُلْكُ ؗ وَ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْر

    অতি বরকতওয়ালা সেই সত্তা, সকল আধিপত্য যাঁর হাতে। সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান যিনি। -সূরা মূল্ক (৬৭) : ১

    তারপরের আয়াত,

    الَّذِیْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَ الْحَیٰوةَ لِیَبْلُوَكُمْ اَیُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا  وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْغَفُوْرُ .

    যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যুকে ও জীবনকে। তিনি পরীক্ষা করবেন তোমাদের মধ্যে আমলে কে সুন্দরতর। -সূরা মূল্ক (৬৭) : ২

    একই পারায় সূরা কিয়ামাহ-এ আল্লাহ বলেন-

    لَاۤ اُقْسِمُ بِیَوْمِ الْقِیٰمَةِ  وَ لَاۤ اُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ.

    আমি শপথ করছি কিয়ামত দিবসের। আমি আরো কসম করছি আত্ম-ভৎর্সনাকারী আত্মার! -সূরা কিয়ামাহ (৭৫) : ১-২

    আল্লাহ এখানে ‘নফসে লাওয়ামার’ কসম করেছেন। এটি একটি রহস্যজনক কসম। নফসে লাওয়ামা মানে যে অন্তর নিজেকে নিজে ধিক্কার দেয়। আল্লাহ কেন এই কসম করলেন? আমি এটার একটা উদাহরণ দিয়ে থাকি। আপনি অফিসে যাবেন। দেরী হয়ে গেছে। খুব তাড়াহুড়ো। এর মধ্যে আপনার বিবি কিছু একটা বলল। আর আপনি খুব ক্ষেপে গেলেন। জোরে জোরে কথা বললেন। বাড়ির দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন। আর মনে মনে ভাবছেন, ‘আমি কাজটা ঠিক করিনি। এতটা না ক্ষেপলেও চলত। সে এমন কিছু করেনি, যে জন্য আমি এত ক্ষেপে গেলাম।’ সে নিজেকে নিজে ধিক্কার দিচ্ছে। এটাকে বলে ‘নফসে লাওয়ামা’। আল্লাহ এই নফসের কসম করেছেন।

    তারপর আল্লাহ বলছেন-

    اَیَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهٗ.

    মানুষ কি ধারণা করে, তার হাড়গুলোকে আমি একত্রিত করব না?  -সূরা কিয়ামাহ (৭৫) : ৩

    এটা আরেক সূরায় এভাবে এসেছে-

    ءَاِذَا مِتْنَا وَ كُنَّا تُرَابًا  ذٰلِكَ رَجْعٌۢ بَعِیْدٌ.

    আমরা যখন মারা যাব এবং মাটিতে পরিণত হব তখনো কি (আমরা পুনরুত্থিত হব)? এ প্রত্যাবর্তন সুদূর পরাহত! -সূরা কফ (৫০) : ৩

    আল্লাহ তাআলা আবার অবিশ্বাসীদের কথা উল্লেখ করেছেন। এটা আমাদের দেশেও দেখা যায়। তারা কী বলে? ‘কী, আমরা মরে যাব এবং মাটি হয়ে যাব। তারপর আমাদের আবার জীবিত করা হবে? এটা কখনোই হবে না!’ আর সূরা কিয়ামায় আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষ কি ধারণা করে, তার হাড়গুলোকে আমি একত্রিত করব না?’ তারপর আল্লাহ নিজেই বলছেন-

    بَلٰى قٰدِرِیْنَ عَلٰۤی اَنْ نُّسَوِّیَ بَنَانَهٗ.

    না না, আমি তো এমন শক্তিমান যে, তাদের আঙুলের অগ্রভাগকেও পূর্বের অবস্থায় সৃষ্টি করব। -সূরা কিয়ামাহ (৭৫) : ৪

    এখন সারা দুনিয়ার এয়ারপোর্টগুলোর দিকে তাকাও। সেখানে মানুষের হাতের আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। কয়টা আঙুলের? জন এফ. কেনেডি এয়ারপোর্টে আঙুলের ছাপ নেয় কি নেয় না? প্রতিটি মানুষেরই আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইডেন্টিফিকেশন আইটেম হচ্ছে আঙুলের ছাপ। ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ কেন এই কথা বললেন?

    পুরো কুরআন মাজীদেই আল্লাহ অবিশ্বাসীদের উক্তি উল্লেখ করেছেন। এটা কুরআনের একটি মোজেযা যে, অবিশ্বাসীদের কথাগুলো মুমিনদের ঈমান বাড়ায়। সূরা ফুরকানেই আছে; ১৯ পারার প্রথম আয়াত-

    وَ قَالَ الَّذِیْنَ لَا یَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا لَوْ لَاۤ اُنْزِلَ عَلَیْنَا الْمَلٰٓىِٕكَةُ اَوْ نَرٰی رَبَّنَا  لَقَدِ اسْتَكْبَرُوْا فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ وَ عَتَوْ عُتُوًّا كَبِیْرًا .

    যারা আমার সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে না, তারা বলে, ফেরেশতারা আমাদের সামনে একটু আসে না কেন? অথবা খোদাকে একটু দেখি না কেন? -সূরা ফুরকান (২৫) : ২১

    সুতরাং অবিশ্বাসীদের অনেক উক্তিই কুরআনের আয়াত। কমেন্টগুলো কেমন লাগে? উপরের আয়াতের শব্দগুলো দেখ। لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا  মানে যারা আমার সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করে না; তারা বলে, আমাদের সামনে ফেরেশতারা নাযিল হয় না কেন? অথবা আমরা আল্লাহকে একটু দেখি না কেন? তারপর আল্লাহ যে কমেন্ট করেছেন, সেটা অনেক সুন্দর-

    لَقَدِ اسْتَكْبَرُوْا فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ وَ عَتَوْ عُتُوًّا كَبِیْرًا.

    তারা নিজেদের অন্তরে অহঙ্কার পোষণ করে এবং তারা গুরুতর সীমালংঘন করেছে।  -সূরা ফুরকান (২৫) : ২১

    আমরা বলি, আমি হামীদুর রহমান। আমি মিলিটারির প্রধান। আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আমি বেশি জানি। আমি যে কোনো বিষয়ে জানি। পুরো জাতি আমার জ্ঞানের মুখাপেক্ষী। মানুষ এভাবে চিন্তা করে। এটাই তাদের অহঙ্কারী বানায়। পবিত্র কুরআন এটাকেই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে, যা অন্তরকে স্পর্শ করে।

    আমি শুরুতে যে আয়াত পড়েছিলাম,

    (তরজমা) ‘ভয় কর সেদিনকে, যেদিন তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে আল্লাহ তাআলার কাছে। অতপর প্রতিটি প্রাণকে বদলা দেওয়া হবে- যা সে অর্জন করেছিল।’ এখানে অর্জন বলতে কী বুঝিয়েছেন আল্লাহ তাআলা? আজ আমরা যে কথাবার্তা বলছি, এটা আমদের একটি অর্জন। পবিত্র কুরআনে এ কাজে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন-

    وَ مَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَی اللهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ .

    তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে কিনা মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে, নিজে নেক আমল করে এবং বলে, আমি মুসলমানদের একজন। -সূরা ফুসসিলাত (৪১) : ৩৩

    সুতরাং আমি এখন যে কাজ করছি, simple telephone conversation (টেলিফোনে সাধারণ কথোপকথন), কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপনাদের আল্লাহ্র দিকে আহ্বান করা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুআযযিন প্রতিদিন পাঁচবার এটা বলে। আমেরিকায় আযান শোনা যায় না। মসজিদের বাইরে আযানের শব্দ যাওয়ার অনুমতি নেই। এ অবস্থা কি পরিবর্তন হয়েছে? এখনো হয়নি।

    আমি বলছিলাম, এই কাজ আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। কোন্ কাজ? মানুষকে আল্লাহ্র দিকে ডাকা। আমি এখন যেভাবে ডাকছি, এটাও একটা পদ্ধতি। মুআযযিন যেভাবে ডাকে, সেটা আরেক পদ্ধতি। মসিজদের ভেতরে অথবা মসজিদের বাইরে। প্রতিদিন পাঁচবার ডাকে। প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে আল্লাহ্র দিকে ডাকা। আমি এই টেলিফোনে কথা বলছি, এর প্রধান উদ্দেশ্যও সেটা। আল্লাহর উপর ঈমান আনো, তাঁকে মানো এবং তাঁর নির্দেশ অনুসরণ কর। তাঁর রাসূলকে অনুসরণ কর। আল্লাহ বলেন-

    قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ  وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

    আপনি ঘোষণা করে দেন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে মেনে চল। আমাকে অনুসরণ করে চল। আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন। তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বড় ক্ষমাশীল, বড় করুণাময়। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১

    রাসুলকে এভাবে কথাগুলো বলতে বলা হয়েছে। রাসূলের পথই পথ। সিম্পল রুল। মুহাম্মাদ সা.-কে অনুসরণ করতে হবে।

    আমেরিকায় মুআযযিনরা যেভাবে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকছে, তাতে ডাকার বিষয়টি ঠিক আছে। কিন্তু সুন্নাত ঠিক নেই। সুন্নাত কী? প্রকাশ্যে ডাকা। মসজিদের বাইরে। আযানের জন্য মাইক্রোফোন মসজিদের ভেতরে থাকতে পারে, বাইরেও থাকতে পারে। সুতরাং আমরা এক্ষেত্রে রাসূল সা.-কে অনুসরণ করতে পারছি না।

    পরবর্তী পয়েন্ট, যদি তুমি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে ‘আমাকে’ মানে রাসূল সা.-কে অনুসরণ কর। আল্লাহকে তো ভালোবাসতে হবে। কারণ তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এই অস্তিত্ব দিয়েছেন। তিনি আমাদের দেখার শক্তি দিয়েছেন। শোনার শক্তি দিয়েছেন। সুতরাং তাঁকে ভালোবাসতে হবে। কিন্তু আমরা তাকে ভালোবাসি না।

    যদি তুমি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে মুহাম্মাদ সা.-কে অনুসরণ কর। এটা একটি জেনারেল স্টেটমেন্ট।

    মুসলমান কেমন আচরণ করবে? যেমন মুহাম্মাদ সা. শিখিয়েছেন। তিনি যেমনভাবে নামায পড়েছেন, তেমন নামায পড়তে হবে। তিনি মানুষের সাথে যেমন আচরণ করেছেন, তেমন আচরণ করতে হবে। তিনি মানুষের প্রতি দয়ালু আচরণ করেছেন। আমাদেরও মানুষের প্রতি বিন¤্র আচরণ করতে হবে। কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে অনেক আয়াত আছে। আল্লাহ রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-

    فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ  وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ .

    (হে নবী!) এসব ঘটনার পর এটা আল্লাহর রহমতই ছিল, এজন্য তুমি মানুষের সাথে কোমল আচরণ করেছ। তুমি যদি রূঢ় প্রকৃতির ও কঠোর হৃদয় হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে গিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৫৯

    রাসূল সা. যদি কেবল মানুষকে বলতেন, তুমি এটা কেন করেছ, সেটা কেন করেছ? তাহলে সবাই তার চারপাশ থেকে চলে যেত। সুতরাং এই আয়াত থেকে দেখা যায় যে, তিনি মানুষের প্রতি খুব ন¤্র আচরণ করতেন। রাসূল পিতামাতার প্রতি ন¤্র আচরণ করতে বলেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন-

    وَ قَضٰی رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا  اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا.

    তোমার মাবুদের ফরমান, তুমি একমাত্র তাঁর ইবাদত করবে। আর তোমার মাতা-পিতার সঙ্গে করবে চরম সৎ ব্যবহার। তাদের মধ্যে একজন বা দু’জন যদি বুড়ো বয়সে তোমার কাছে থাকে, তবে তাদের সাথে উহ্ পর্যন্ত বলো না। তাদের ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে আদব ও ভক্তিপূর্ণ কথা বল। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ২৩

    মূলকথা হচ্ছে, মুহাম্মাদ সা. যা যেভাবে করতে বলেছেন, আমাদের তা সেভাবেই করতে হবে। তিনি যেভাবে কথা বলেছেন, মানুষের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছেন, আমাদের তা-ই অনুসরণ করতে হবে। তিনি তাঁর উম্মতকে ডান হাতে খেতে বলেছেন। যদি কেউ বাম হাতে খায়, তাহলে সে রাসূল সা.-কে অনুসরণ করছে না। প্রতিটি কজেই সুন্নাতকে অনুসরণ করতে হবে।

    আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে। এজন্য সূরা ফুরকানে বলা হয়েছে, ‘যারা আমার সাক্ষাৎ আশা করে না।’ তাকে ভালোবাসলে তার সাক্ষাতের আশা করা উচিত ছিল। আমরা আামাদের মা’কে ভালোবাসি। প্রতিটি শিশুই তার মাকে ভালোবাসে। মা তার জন্য কত কষ্ট করেছে। কুরআন ঘোষণা করছে-

    حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ كُرْهًا وَّ وَضَعَتْهُ كُرْهًا.

    তার মা তাকে বড় কষ্টে বহন/ধারণ করেছে। বড় কষ্টে প্রসব করেছে। -সূরা আহকাফ (৪৬) : ১৫

    পাশ্চাত্যে আল্লাহকে ভালোবাসতে শেখায় না। তারা বড় জোর মাকে ভালোবাসতে বলে। তারা বলে, O Mom, I love you so much! তুমি আমার জন্য অনেক করেছ।

    আমি একবার একটি বই কিনলাম। ২০১২ সালে আটলান্টার এক লাইব্রেরি থেকে বইটি কিনেছিলাম। বইয়ের নাম, ও ষড়াব সু গড়স (আমি আমার মাকে ভালোবাসি)। এটা আমেরকিায় খুব সাধারণ যে, প্রতিটি শিশুই তার মাকে ভালোবাসে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মাকে ভালোবাসার কথা শিক্ষা দেয়। কিন্তু কেউ আল্লাহর কথা মেনশন করে না। আল্লাহ কি তোমার জন্য কিছু করেননি, যাতে তোমার তাঁকে ভালোবাসা উচিত? তিনি আমাদের পানি দিয়েছেন। কীভাবে সল্ট ওয়াটার থেকে মিষ্টি পানি বর্ষিত হয়? আল্লাহ সমুদ্রের লবনাক্ত পানিকে মিষ্টি পানিতে রূপান্তর করেন। মর্ডান সাইন্স আমাদের জানায় যে, সমুদ্রের পানি ইভাপোরেশন হয়ে উপরে উঠে। মেঘাকারে ভেসে বেড়ায়। সেখান থেকে বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে বর্ষিত হয়। সেই পানি মিষ্টি। সমুদ্রের পানি সল্টিস। এটা সূরা ওয়াকিয়াতে বলা হয়েছে-

    اَفَرَءَیْتُمُ الْمَآءَ الَّذِیْ تَشْرَبُوْنَ ءَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْن.

    তুমি যে পানি পান কর তার স¤পর্কে ভেবে দেখেছ, তুমি এ পানিকে মেঘ থেকে নামাও, না আমি নামাই? -সূরা ওয়াকিয়া (৫৬) : ৬৮-৬৯

    আল্লাহর কথা বলো না। বলো নেচার। ক্রিয়েটার বলো। Allah is not mentioned (আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয় না)। Creator is mentioned (সৃষ্টিকর্তা বলা হয়)। তুমি কি কোনো টেক্সট বই পেয়েছ, যেখানে লেখা আছে, আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত? আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত, যিনি চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। আমরা বলি, Nature has created everything! স্টিফেন হকিংস, একজন পঙ্গু মানুষ। তার হাত-পা অবশ। ইন্টারনেটে তার ছবি দেখা যায়। আল্লাহ তাকে সর্বসময়ের বড় সাইন্টিস্ট বানিয়েছেন। কিন্তু তিনি আল্লাহকে বিশ্বাস  করেন না। দু-তিন বছর আগে তিনি এথিস্টদের দলের সদস্য হয়েছেন।

    আল্লাহ সূর্য বানিয়েছেন। চন্দ্র বানিয়েছেন। আকাশ তৈরি করেছেন। আল্লাহ তারকা বানিয়েছেন। সূর্য নয় লক্ষ ত্রিশ হাজার মাইল দূরে। আমেরিকায় মাইল বলে। তারা কিলোমিটার ব্যবহার করে না। চন্দ্র ২৩৮০০০ মাইল দূরে। সূর্য ৯৩ মিলিয়ন মাইল দূরে। নিকটবর্তী স্টার এত দূরে যে, সেটা মাইলে আর হিসেব করা যাবে না। নতুন স্কেল বানাতে হবে। স্কেল হচ্ছে লাইট ইয়ারস (Light Years, আলোকবর্ষ)। সাড়ে চার আলোকবর্ষ লাগে। আর আমাদের নক্ষত্রজগতে এরকম তারকার সংখ্যা দশ হাজার কোটি। আমাদের নক্ষত্রজগতের নাম মিল্কিওয়ে (বাংলায় বলে ছায়াপথ)। এখন নক্ষত্রজগতের সংখ্যা কত? বলে যে, দশ হাজার কোটি। সুবহানাল্লাহ। এত বড় আকাশ যিনি বানিয়েছেন, তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া হয় না। আমাদের উচিত তাঁর শোকর আদায় করা, তাঁকে ভালোবাসা। আর তাঁকে ভালোবাসার প্রধান উপকরণ, রাসূল সা.-এর পথ অনুসরণ করে চলা। আল্লাহ আমাদের নেক আমলের তাওফীক নসীব করুন- আমীন।

    ভারতে যৌথ প্রকল্পের বিষয়ে টয়োটা ও সুযুকির মতৈক্য

    টয়োটা ও সুযুকি,গতকাল প্রদত্ত এক ঘোষণায় কোম্পানি দুটি ভারতে যৌথ প্রকল্প এগিয়ে নিতে মতৈক্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে। উল্লেখ্য জাপানী মটরগাড়ি নির্মাতা কোম্পানি দুটি, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অংশিদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে।

    টয়োটা, ক্ষুদ্রাকারের এবং পরিবেশ বান্ধব ইঞ্জিন তৈরি করতে সুযুকিকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি কোম্পানির ভারতীয় কারখানায় সুযুকির কমপ্যাক্ট মটরগাড়ি তৈরি করবে।

    কোম্পানি দুটি, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে যৌথভাবে ভারতের বাজারে বৈদ্যুতিক মটরগাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা করছে।

    টয়োটা এবং সুযুকি, আফ্রিকায়ও জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করছে। কোম্পানি দুটি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার হয়ে চলায় মটরগাড়ির চাহিদা জোরদার হবে এমন আশাবাদ থেকে আফ্রিকা মহাদেশে মটরগাড়ি সরবরাহ এবং মেরামত সেবা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা আরম্ভ করতে যাচ্ছে।

    খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র পথ রাজপথ: মওদুদ

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, আইন আদালত ও শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়; আন্দোলন ছাড়া জনগণের কোনো দাবি কোনদিন কোনোভাবে আদায় করা হয়নি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র পথ রাজপথ। রমজান মাসের পরে আমাদেরকে কঠোর কর্মসূচির কথা চিন্তা করতে হবে। আর সেভাবেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। আমাদের আন্দোলন গণতন্ত্রের আন্দোলন। এটি অব্যাহত থাকবে।
    শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদী নাগরিক সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদ নাগরিক প্রতিবাদী সভাটির আয়োজন করে।
    মওদুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের একটি তলপিবাহক । সরকার যা চাইবে তারা তাই করবে। আচরণবিধি পরিবর্তন করছে। এখন সংসদ সদস্য প্রচারণা চালাতে পারবে। সংসদ সদস্য মানে তো আওয়ামী লীগের। এরা যেন প্রচারণা চালাতে পারে। এটির দূরভিসন্ধিমূলক লক্ষ্য আছে। তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি করেছে। তারা সংসদ রেখে আগামী নির্বাচন করতে চায়। তাই এই নিয়ম রেখেছে। সংসদ সদস্য থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য করেছে। আচরণবিধি পরিবর্তন করা ষড়যন্ত্রের অংশ।
    প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আশা করবো প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরবেন না। আমরা আশা করি তিনি তিস্তার পানি চুক্তি বাস্তবায়ন করেই ফিরবেন। আর না হলে আমরা বলবো- তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
    ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমরাও চাই মাদক নির্মূল করা হোক। এর দায় দায়িত্ব সরকারের। আমাদের এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। কিন্তু মানুষ মেরে মাদক নির্মূল করা যায় না। যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে এরা তো মালিক না। এরা তো বাহক। তারা বিক্রি করে মালিককেই দেয়। সেই মালিক কারা? তারা এই সরকারের মদদপুষ্ট। এভাবে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। মাদক ব্যবসা উচ্ছেদ হোক। কিন্তু মানুষ মারা চাই না।
    তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকার এতোদিন নিশ্চুপ ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাদের কাছে তালিকা আছে। তাহলে এই অভিযান আগে থেকে চালিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি কেন? কারণ হলো এই মাদক ব্যবসায় তাদের নেতারা জড়িত। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা এখান থেকে আয় করেছে। আর তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে নির্বিচারে মানুষ মারা শুরু করেছে সরকার। ৫৮ জন মানুষ মারা গেছে ৮ মে থেকে ২৫ মে- ১৭ দিনে। মানুষের কি জীবনের কোন মূল্য নেই?
    মওদুদ বলেন, খুলনায় নির্বাচন হয়নি। পুলিশি নির্বাচন হয়েছে। জনগণের নির্বাচন হয়নি। খুলনা প্রায় ১০০ কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টরা দাঁড়াতে পারেনি। এখন তারা খুলনা স্টাইলে গাজীপুরে নির্বাচন করতে চায়। তারা যদি সে চেষ্টা করে এবার আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সেটা প্রতিহত করার চেষ্টা করবো। আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তাদের বাধা দিবো।
    আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদী নাগরিক সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।

    জাপানের বেসরকারি খাতের কোম্পনিতে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে নিয়োগ দান

    জাপানে বেসরকারি খাতের চালানো এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে আগামী বছর মার্চ মাসে স্নাতক ডিগ্রী পেতে যাওয়া জাপানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি চলতি মাসের এক তারিখের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাকরিতে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে। জাপানের প্রধান ব্যবসায়ী ফেডারেশন কেইদানরেন নিজেদের সদস্য কোম্পানির জন্য নিয়োগ কর্মকাণ্ডের নির্দেশিকা ঠিক করে দিয়েছে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ জুন মাস থেকেই কেবল চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রদের সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু করতে পারবে। চাকরির সন্ধানে ছাত্রদের খুব বেশী সময় ব্যয় করা প্রতিহত করে লেখাপড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় এদের করে দেয়া হচ্ছে এই নিয়মের লক্ষ্য। তবে নিয়ম ভঙ্গকারীদের জন্য কোনরকম শাস্তির বিধান এতে রাখা হয়নি। ফলে অনেক কোম্পানি এই নিয়ম অবজ্ঞা করতে শুরু করেছে।

    সংবাদ বিশ্লেষণে আজ এখনকার এই প্রবণতার পটভূমি নিয়ে বলছেন এন এইচ কে’র ঊর্ধ্বতন ভাষ্যকার জুনকো ইমাই।

    সদস্য কোম্পানিগুলোর জন্য কেইদানরেনের ঠিক করে দেয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সূচীতে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে জুন মাসে এদের নিয়োগ সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করা উচিৎ এবং এর পরেই কেবল চাকরিতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব কোম্পানি দিতে পারবে।

    তবে জরিপে দেখা গেছে আগামী বছর মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় যারা শেষ করতে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি চলতি মাসের এক তারিখের মধ্যে আগামী বছর চাকরিতে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে।

    কেইদানরেন অনেকদিন থেকেই নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকা ঠিক করে আসছে। অনেকটা অলিখিত সম্মতির আকারে এগুলো ঠিক করে নেয়া হয় এবং এর ফলে লঙ্ঘনের বেলায় কোনরকম শাস্তিমূলক পদক্ষেপ এতে যুক্ত থাকে না। তবে তা সত্ত্বেও কেইদানরেনের সদস্যদের অনেকেই এটা মেনে চলছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমশ অনেক বেশী মাত্রায় নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

    সাম্প্রতিক এই প্রবণতার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, চাকরির বাজার ক্রমশ বিক্রেতার বাজার হয়ে উঠছে। জাপানে জন্মহার হ্রাস পেতে থাকায় তরুণদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আরও বেশী লোকজনকে নিয়োগ দেয়ায় কোম্পানিকে উদ্বুদ্ধ করায় কর্মী ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

    দ্বিতীয়ত, প্রধানত কলেজ ছাত্রদের লক্ষ্য ধরে নেয়া ইন্টার্ন বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বিস্তৃত হয়ে আসায় সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের সম্পর্কে আগে থেকে তথ্য পাওয়ার সুযোগ কোম্পানি লাভ করছে। এরকম অনেক কোম্পানি সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরুর আনুষ্ঠানিক তারিখের অনেক আগে থেকেই নিজেদের ইন্টার্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীদের কার্যত চাকরিতে নিয়োগের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছে বলে জানা যায়।

    অনেক বেশী জাপানি কোম্পানি আজকাল এরকম অভিযোগ করছে যে নির্দেশিকা মেনে চললে ভাল প্রার্থী তারা নিশ্চিত করতে পারবে না। কেইদানরেনকে এটা ২০২০ সালের নিয়োগ কর্মকাণ্ডের জন্য সময়সূচী পর্যালোচনা করে দেখা শুরু করার দিকে নিয়ে যায়। আমি আশা করছি নতুন এরকম একটি সময়সূচী ফেডারেশন নির্ধারণ করে নেবে, লেখাপড়া করার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের ব্যবস্থা যেটা ছাত্রদের জন্য করে দেবে।

    সংবাদ বিশ্লেষণে আজ জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির আগে থেকে ছাত্রদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার সাম্প্রতিক প্রবণতার পটভূমি নিয়ে বললেন এন এইচ কে’র ঊর্ধ্বতন ভাষ্যকার জুনকো ইমাই।

    আর্জেন্টিনার চূড়ান্ত দল ঘোষণা

    মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে অনন্য পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে ইন্টার মিলানকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার টিকিট পাইয়ে দিয়েছেন। ২৯ গোল করে হয়েছেন সিরিআ’র সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবুও মন গলল না আর্জেন্টিনার কোচ হোর্হে সাম্পাওলির। বিশ্বকাপ দলে মাউরো ইকার্দিকে রাখলেন না তিনি।

    ইতিমধ্যে রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছেন সাম্পাওলি। তাতে ঠাঁই হয়নি ইকার্দির। তবে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে বাজে পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে যাওয়া পাওলো দিবালা।

    অবশ্য ইকার্দিকে দলে না রাখা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে বলছেন, ২৪ বছর বয়সী এ গোলমেশিনকে না রেখে বড় ভুল করলেন আর্জেন্টিনা কোচ।

    ইনজুরির কারণে ফাইনালি দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল লুকাস বিগলিয়ার। তবে জাতীয় দলের ফিজিওর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর তাকে দলে রেখেছেন সাম্পাওলি।

    চোটের কারণে বিশ্বকাপ মিসের শংকায় ছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। ধীরে ধীরে সেরে উঠায় স্থান পেয়েছেন ম্যানসিটি স্ট্রাইকার। সঙ্গে রয়েছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। তিনটি ফাইনালে দৃষ্টিকটু মিস করার পরও তার ওপরই ভরসা রেখেছেন কোচ।

    গোলরক্ষক : সার্জিও রোমেরো, উইলি কাবাল্লেরো ও ফ্রাঙ্কো আরমানি।

    রক্ষণভাগ : গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো, ক্রিশ্চিয়ান আনসালদি, নিকোলাস ওতামেন্দি, ফেদ্রেরিকো ফাজিও, মার্কস রোহো, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, মার্কস আকুইনা ও এদুয়ার্দো সালভিও।

    মিডফিল্ড : হাভিয়ের মাসচেরানো, লুকাস বিগলিয়া, এভার বানেগা, জিওভানি লো সেলসো, ম্যানুয়েল লানজিনি, এঞ্জেল ডি মারিয়া ও ম্যাক্সি মেজা।

    ফরোয়ার্ড : লিওনেল মেসি, পাওলো দিবালা, সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইন ও ক্রিস্টিয়ান পাভন।

    স্থানীয় হেলাল দেখা অনুযায়ী রোযা ও ঈদ : কিছু প্রশ্নের উত্তর

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    খাইরুল কুরূন থেকে এ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ যুগ যুগ ধরে যে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত নিয়ম অনুসরণ করে আসছে এর উপর বিচ্ছিন্নতা অবলম্বনকারীদের তরফ থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এখানে এসব প্রশ্ন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।

    ১. রমযান আগে-পিছে হওয়ার কারণে শুরু রমযানে এক-দুইটি রোযা না রাখার গুনাহ হয়; বরং এক এক রোযার ষাট ষাট দিনের কাফফারা ওয়াজিব হয়। যা আদায় করা হয় না।

    ২. ঈদের দিন রোযা রাখা নাজায়েয। অথচ ঈদ আগে-পিছে হওয়ার কারণে এই নাজায়েয কাজটি করা হয়।

    ৩. তাকবীরে তাশরিকের কিছু অংশ থেকে যায়।

    ৪. আরাফার রোযা ঈদুল আযহার দিন রাখা হয়।

    ৫. যারা বারো তারিখে কুরবানী করেন তা প্রকৃতপক্ষে তেরো তারিখে হওয়ার কারণে তাদের কুরবানী শুদ্ধ হয় না।

    এই পাঁচটি অভিযোগই নানা কারণে ভিত্তিহীন। আলোচনার সহজার্থে শুধু একটি কারণ উল্লেখ করছি। আর তা এই যে, শরীয়তের ইজমায়ী তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যেসকল মাসআলায় ইমামদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে, তাতে যিনি যে মাযহাবের অনুসারী তার কর্মের হুকুম ঐ মাযহাব অনুযায়ী হবে, অন্য মাযহাব অনুযায়ী নয়। উদাহরণস্বরূপ :

    শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্ত বের হলে শাফেয়ী মাযহাবে অজু নষ্ট হয় না। সুতরাং শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী কোনো মুসল্লী রক্ত বের হওয়া সত্ত্বেও যদি নতুন করে অজু না করেন, আগের  অজুতেই নামায পড়েন, তাহলে হানাফী মাযহাবের অনুসারী কারো ঐ মুসল্লীকে এই অভিযোগে অভিযুক্ত করা জায়েয নয় যে, বিনা অজুতে নামায পড়েছেন তিনি। তেমনি এই বিধান আরোপ করাও জায়েয নয় যে, আপনাকে এই নামায আবার পড়তে হবে। অথচ হানাফী মাযহাবের কোনো অনুসারী এই কাজ করলে তাকে বলা হবে, আপনার অজু ভেঙ্গে গেছে; আপনি নতুন করে অজু করুন এবং নামাযটি আবার পড়ুন।

    আরেকটি উদাহরণ : শাফেয়ী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুকতাদীর সূরা ফাতেহা পড়া ফরয। হানাফী মাযহাবে ফরয তো নয়ই; বরং না পড়ার হুকুম। এখন শাফেয়ী মাযহাবের কারো জন্য জায়েয নয় কোনো হানাফী মুসল্লীকে এ কথা বলা যে, আপনি ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়েননি তাই আপনার নামায হয়নি; আপনাকে নামাযটি আবার পড়তে হবে। ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির দৃষ্টিতেও কোনো হানাফী মুসল্লীকে এমন কথা বলা কোনো শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীর জন্য জায়েয নয়।

    এই মাসআলা জানার পর এখন লক্ষ্য করুন, হানাফী মাযহাবের অগ্রগণ্য ও অনুসৃত অভিমত হচ্ছে, প্রত্যেক অঞ্চলের অধিবাসী নিজ নিজ অঞ্চলের হিলাল দেখার উপর আমল করবে। আর এটাই অন্যান্য মাযহাবের বড় বড় ফকীহের সিদ্ধান্ত। এরই উপর একমত ছিলেন খাইরুল কুরূনের অধিকাংশ ফকীহ। তাই এই নিয়ম অনুসারে যিনি রোযা ও ঈদ করছেন তাকে এই কথা বলা ভুল যে, আপনার একটি রোযা ছুটে গেছে! কারণ তার তো ঐ দিন রমযান শুরুই হয়নি। তদ্রƒপ তিনি যখন ত্রিশতম রোযা রাখছেন তখনও এ কথা বলা সঠিক নয় যে, আপনি ঈদের দিন রোযা রাখছেন। কারণ তার এখনো পয়লা শাওয়াল আসেনি।[1]

    তাকবীরে তাশরীক ও ৯ যিলহজে¦র রোযার ব্যাপারেও একই কথা। হাদীস শরীফে ইয়াওমে আরাফা বলে উদ্দেশ্য হল ৯ যিলহজ¦। ঐ সময় নয় যখন আরাফায় উকূফ চলছে। তার কারণ, ঈদুল আযহার জন্য কোনো ইসলামী শহরে স্থানীয় হেলালের পরিবর্তে উকূফে আরাফা বা মক্কার হেলালকে ভিত্তি বানানো হয়নি। নবী-যুগ ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে মাদীনাতেও নয় এবং পরবর্তী কোনো যুগে অন্য কোনো শহরেও নয়। বিস্তারিত জানার জন্য দেখা যেতে পারে ড. হামীদুল্লাহ-এর প্রবন্ধ। যা ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকার ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ ঈসাব্দ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এর উর্দূ অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘আলবালাগ’ করাচীর ডিসেম্বর ১৯৭৫ ঈসায়ীর সংখ্যায়। আরো দেখুন www.albalagh.net -এ প্রকাশিত হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানীর প্রবন্ধ Determination of Eid al-Adha । যা এ ঠিকানায় দেখা যেতে পারে-

    https://www.albalagh.net/qa/moon_qa.shtml ।

    তাছাড়া এদিকটিও চিন্তা করুন : আমাদের ও মক্কা মুকাররমার উদয়াস্তে কয়েক ঘণ্টার পার্থক্য। যদি নয় যিলহজে¦র রোযাকে মক্কার আরাফার সাথে যুক্ত করা হয় তাহলে যখন আমরা রোযা শুরু করব তখন তো আরাফা-দিবস শুরু হয়নি। তা শুরু হবে আরো তিন ঘণ্টা পর। তেমনি যখন ইফতার করব তখনও আরাফা-দিবস সমাপ্ত হয়নি। তখনও দিবসের তিন ঘণ্টা বাকি।

    এরপর আরাফা-দিবসে পৃথিবীর যেসকল অঞ্চলে রাত থাকবে তারা কি রাতেই রোযা রাখবেন? এরা যদি নিজেদের রাত শেষ হওয়ার পর রোযা রাখেন তখন তো আরাফা-দিবসও শেষ। হাজ¦ীরাও কেউ তখন আরাফার ময়দানে নেই, তারা তখন মুযদালিফায়।

    এ কারণে নিঃসন্দেহে আরাফার দিন রোযা রাখা বিষয়ক হাদীসের অর্থ ৯ জিলহজ¦ রোযা রাখা। যে অঞ্চলে যেই দিন ৯ জিলহজ¦ হবে ঐ অঞ্চলের অধিবাসীরা ঐ দিনই রোযা রাখবেন। খোদ হাজ¦ীদের জন্য তো আরাফার দিন রোযা রাখা মাসনূনও নয়।

    আরো চিন্তা করুন, পশ্চিমের যেসকল অঞ্চলে যিলহজে¦র হিলাল সৌদিয়ার এক দিন আগে দেখা যাবে, মক্কা-মুকাররমার আরাফা-দিবস হবে তাদের ১০ যিলহজ¦। ঐ দিন তাদের রোযা রাখতে বললে তা হবে ঈদুল আযহার দিন রোযা রাখা, যা নিষেধ।

    সুতরাং পরিশেষে একথাই বলতে হবে যে, প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষ নিজ নিজ হিলাল অনুসারে আমল করবেন। আর তারা যেহেতু শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নিজেদের হিলাল দেখা অনুসারে আমল করছেন তাই এতে আপত্তির কোনো অবকাশ নেই।[2]

    মোটকথা, উপরের পাঁচ অভিযোগ যদি শুধু কূটতর্কের জন্য না হয়; বরং ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়ে থাকে তাহলে আশা করা যায়, উপরের আলোচনা বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য যথেষ্ট। আর কাফফারার ব্যাপারটা তো একেবারেই অহেতুক। কাফফারা তো আসে ইচ্ছা করে রোযা ভাঙ্গার কারণে। তারা তো কোনো রোযা ভাঙ্গেনি; রোযা ছাড়েওনি। আপনি বলছেন তারা প্রথম রমযানের রোযা ছেড়ে দিয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। বরং তারা মূলত ৩০ শাবানে রোযা রাখেনি, প্রথম রমযানের রোযা তারা ঠিকই রেখেছে। যে ফকীহগণ উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য মনে করেন না তারাও তাদেরকে এই রোযার কাযা আদায়েরও আদেশ করবেন না, কাফফারা তো দূরের কথা।

    বারো তারিখের কুরবানীর ব্যাপারেও একই কথা। এই দিনটি কুরবানীকারীদের জন্য তেরো তারিখ নয়, বারো তারিখ। যেমন প্রথম দিন যারা কুরবানী করেছেন তাদের তারিখটিও ছিল ১০ যিলহজ¦, ৯ যিলহজ¦ নয়।

     

    অন্য দেশে সফরের কারণে রোযা ২৮ বা ৩১ হওয়া

     

    এই প্রশ্নও করা হয় যে, বিশ্বব্যাপী তারিখ এক না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে রোযা শুরু করে সৌদি গেলে এক রোযা কম হয় আর ওখানে রোযা শুরু করে এখানে এলে এক রোযা বেশি হয়।

    এই প্রশ্ন অযৌক্তিক। কারণ, এ তো নবী-যুগ থেকে অনুসৃত ‘প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য তাদের চাঁদ দেখা’- এই শরয়ী নীতির  অনিবার্য ফল। যা আগেও ঘটেছে, এখনও ঘটছে। এতে তো আপত্তির কিছু নেই। এর সমাধানও আগে থেকেই আছে। আর তা এই, যার রোযা আঠাশটি হয়েছে তিনি একটি কাযা রাখবেন। এর নজীর হযরত আলী রাযিআল্লাহু আনহুর রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়। তার যুগে একবার ২৮ রোযা রাখার পর চাঁদ দেখা গেল। তখন তিনি সকলকে ১ টি রোযা কাযা রাখতে বলেছেন। -আততারীখুল কাবীর, ইমাম বুখারী ২/৩৫৫, হুমাইদ ইবনে আব্দুল্লাহ আলআছাম্ম; আসসুনানুল কুবরা বায়হাকী, ৪/২৫১

    আলবেরুনীও এই রেওয়ায়েতের উল্লেখ করেছেন। (দ্র. আল আসারুল বাকিয়া, পৃষ্ঠা : ৬৭)

    আর যাদের রোযা বেশি হয়েছে তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। মাস একত্রিশের হয় না। বিশেষ অবস্থার কারণে ঐ ব্যক্তির একটি রোযা বেড়ে গেছে।

     

    শবে কদর কয়টি? জান্নাতের দরজা কয়বার খোলা হবে?

     

    একটি ভিত্তিহীন প্রশ্ন এই যে, শবে কদর কয়টি। জান্নাতের দরজা কয়বার খোলা হবে আর জাহান্নামের দরজা কয়বার বন্ধ করা হবে।

    এই বন্ধুরা ঊর্ধ্বজগতের বিষয়াদিকে নি¤œজগতের বিধিবিধানের সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন। অদৃশ্য-জগতের বিষয়গুলোকে দৃশ্যজগতের উপর কিয়াস করছেন। ঐ জগতের কাজ আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের উপর অর্পণ করেছেন এবং সে কাজের জন্য যে তাকভীনী নিয়ম দিয়েছেন সে নিয়মেই তারা তা পালন করবেন। এর সাথে মানুষকে দেয়া শরীয়তী বিধানের কী সম্পর্ক?

    এরপরও সহজতার জন্য হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (১৮৬৩-১৯৪৩ ঈ.)-এর বক্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি শবে কদরের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-

    ‘কিন্তু এ বিষয়ে কারো কারো মনে একটি প্রশ্ন জাগবে যে, এখন তো চাঁদের তারিখে ভিন্নতা আছে, কাজেই এখানে যা সাতাশের রাত কোনো কোনো জায়গায় তা আঠাশের রাত হবে তাহলে কি লাইলাতুল কদর দুইটা হচ্ছে আর যদি একটি হয়, তাহলে কার চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য? এর জবাব হচ্ছে, আপনার কি জানা আছে, ওখানে (ঊর্ধ্বজগতে) দিন-রাত নেই। আর এ তো বিজ্ঞান যারা পড়েছে তাদের কাছে স্বীকৃত যে, রাত-দিন হচ্ছে সৌরজগতের ব্যাপার। ঊর্ধ্বজগতে তো রাত-দিনের ভাগ নেই বরং ওখানে এক অবস্থা। …একারণে লায়লাতুল কদরের যে শান ও বরকত তা রাত-দিনের সাথে যুক্ত নয়; বরং তা আল্লাহ্র ইচ্ছার অধীন। আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত শরীয়ত মোতাবেক যে আমল করবে, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বজগতে তার জন্য এমন ব্যবস্থা দিয়ে দেবেন যেন কেউ মাহরূম না হয়। সুতরাং নিশ্চিন্ত মনে নিজ নিজ তারিখ অনুযায়ী কাজ করুন। আল্লাহ তাআলা সবার নিয়ত ও আমল দেখেন। তিনি সবাইকে তাদের হিসাব অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের বরকত দান করবেন। (বারাকাতে রমযান, ওয়াজ : ইকমালুল ইদ্দাহ, খুতবাতে হাকীমুল উম্মত, খ- : ১৬, পৃষ্ঠা : ৪২৭)

    আরো কথা হচ্ছে, শুধু তারিখের অভিন্নতার দ্বারাই কি এই প্রশ্ন দূর হবে? মনে করুন, গোটা পৃথিবীতে রমযান একই তারিখে শুরু হল, কিন্তু শবে কদর কি সব জায়গায় একসময়েই হবে? বাংলাদেশের মুসলমান যখন সাতাইশের রাত অতিবাহিত করছেন তখন তো কানাডার অধিবাসীরা ২৬ তম রোযা রাখছেন। এই রোযা শেষ করে যখন শবে কদর শুরু করবেন তখন তো বাংলাদেশবাসীর শবে কদর শেষ। শবেকদর তো সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত, চব্বিশ ঘণ্টা তো নয়। তো এদের মতো অর্থহীন প্রশ্ন যদি কেউ এভাবে করে যে, আসল শবে কদর কোন্টা? বাংলাদেশেরটা, না কানাডারটা। তাহলে এছাড়া এর জবাব আর কী হবে যে, প্রশ্নটাই ভুল ও অর্থহীন।

    আল্লাহ তাআলা জাযায়ে খায়ের দান করুন হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-কে তিনি এই বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কারো যদি সংশয় জাগে যে, শবে কদর তো একবারই হয় এবং এক রাতেই হয়। সময়ের ব্যবধান তো জানা কথা। কোথাও রাত থাকে আর কোথাও দিন। কিন্তু শবে কদর তো রাতের সাথেই সম্পৃক্ত। আর তা এক রাতেরই বিষয়। তো যেখানে রাত সেখানে শবে কদর, ঠিক আছে কিন্তু যেখানে দিন সেখানে শবে কদর কীভাবে হবে?

    এর জবাব হল, শবে কদর প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা আলাদা। যেমন আদালত খোলার সময় সকাল দশটায়। তো সব জায়গায় স্থানীয় সময় দশটা বাজেই আদালত খুলবে। কলকাতায় খুলবে কলকাতার সময় মোতাবেক, লন্ডনের সময় মোতাবেক লন্ডনে।

    হুকুক ওয়া ফারায়েজ, ওয়াজ : আলওয়াক্ত, খুতুবাতে হাকীমুল উম্মত, খ- : ৪, পৃষ্ঠা : ৪১৮

     

    বগুড়ার চাঁদ, কলকাতার চাঁদ পার্থক্য কোথায়?

    কেউ কেউ এভাবেও প্রশ্ন করে থাকেন :

    “যদি বগুড়ার চাঁদ দিয়ে ঢাকায় ঈদ হতে পারে তাহলে কলকাতার চাঁদ দিয়ে হতে পারবে না কেন?”

    এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে, ভূ-পৃষ্ঠের উপর বিভিন্ন দেশের যে সীমান্ত রয়েছে সেটা তো নতুন, সেটা স্থায়ী কিছু নয়; বরং পরিবর্তনশীল। অতএব এইসব সীমানা হিলাল বিষয়ক আলোচনার ভিত্তি হতে পারে না। যাকে কেন্দ্র করে বলা যাবে সীমান্তের এপারে হিলাল দেখা গেলে তা গ্রহণযোগ্য। আর ওপারে পাঁচ দশ কিলোমিটার দূরত্বে হিলাল দেখা গেলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কথা খুবই অযৌক্তিক।

    এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, এমন কথা তো কেও বলেনি যে, অন্য এলাকার হিলাল গ্রহণযোগ্য হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সীমানাগুলো মানদ-। এটা কেউ বলেনি, বরং নিকট ও দূরের যেই মাপকাঠি ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, তার বিচারে যেসকল অঞ্চল হিলাল দেখা যাবার স্থান থেকে নিকটে অবস্থিত সেগুলো নিকটবর্তী। হোক তা অন্য দেশের অন্তর্গত। আর যেসব অঞ্চল হিলাল দৃষ্টিগোচর হবার স্থান থেকে দূরে, সেগুলো দূরবর্তী বলেই গণ্য হবে। যদিও তা এক দেশভুক্ত হয়।

    আর সে কারণেই মাসআলা হল, কোনো বড় দেশে উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি শহর এমন হয় যে, একটি একেবারে পূর্ব প্রান্তে আর অন্যটি তার থেকে অনেক দূরে একেবারে পশ্চিম প্রান্তে; এবং শহরদু’টোর উদয়স্থলও সম্পূর্ণ ভিন্ন। তো এক্ষেত্রে মূল বিধান এই যে, পশ্চিমা শহরের হিলাল দেখা মোতাবিক আমল করা পূর্বের শহরের জন্য আবশ্যিক নয়। কিন্তু যদি সরকারপ্রধান কিংবা তার নিযুক্ত করা হিলাল কমিটি একেবারে পশ্চিমে দেখতে পাওয়া হিলালের ভিত্তিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য রোযা কিংবা ঈদের ফায়সালা করে দেন তাহলে এই ফায়সালা গোটা দেশবাসীর জন্য মানা বাধ্যতামূলক। কেননা ‘দূরবর্তী দেখা’ ধর্তব্য হওয়ার ক্ষেত্রেও যেহেতু কোনো কোনো ফকীহের মত রয়েছে, আর জানা কথা যে, সেটাও একটা মুজতাহাদ ফী মত- তাই সরকারপ্রধান কিংবা তার প্রতিনিধি যদি সেই অনুসারে ফায়সালা দিয়ে দেন তাহলে তা অবশ্যপালনীয় হবে। এই বিধান ফিক্হশাস্ত্রের ঐ স্বতঃসিদ্ধ নীতির কারণে, যাতে বলা হয়েছে حُكْمُ الحَاكِمِ يَرْفَعُ الخِلَافَ।

    এমনিভাবে কোনো অঞ্চল যদি হিলাল দেখা যাবার স্থানের একেবারে কাছে অবস্থিত হয়, কিন্তু হিলাল দেখা যাবার সেই স্থানটি পড়েছে সীমান্তের বাহিরে, তো এমন ক্ষেত্রে শুধু সীমানার বাহিরে হবার কারণে ওখানকার দেখা গ্রহণযোগ্য হবে না- এমন কথা কেউ বলেওনি, আর না বলা সম্ভব। বরং মাসআলা এটাই যে, যদি এ ধরনের কাছাকাছি অঞ্চলসমূহ (যেমন ঢাকা ও কলকাতা)-এর সংবাদ কিংবা সাক্ষ্য (যে ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি কাম্য) ‘তরীকে মুজিব’-এর মাধ্যমে হিলাল কমিটির কাছে পৌঁছে এবং পৌঁছার মাধ্যম সম্পর্কে ফিকহ ও ফতোয়ার আলোকে তারা এই মর্মে আশ্বস্ত হন যে, এটা ‘তরীকে মুজিব’ তাহলে হিলাল কমিটি অবশ্যই সে মোতাবেক ফায়সালা করবেন।

    এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো সংবাদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সংবাদদাতার ব্যক্তিসত্তা ও ন্যায়নিষ্ঠতা সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি তথা পূর্বশর্ত। যদি ফোনে সংবাদ দেয় তাহলে নিশ্চিত হতে হবে এই কন্ঠ তারই। আর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল, সাক্ষী ন্যায়পরায়ণ হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হয়ে ঐ সাক্ষ্য প্রদান করা। ফোনে সাক্ষ্য দান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। শরীয়তে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

    আশা করি, এই আলোচনা থেকে প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এখন যদি কেউ সৌদি, কানাডা কিংবা হাওয়াই দ্বীপকেই ঢাকার নিকটবর্তী বলতে শুরু করে তাহলে তার চিকিৎসা তো কারো কাছেই নেই। কিংবা যদি কেউ এ কথা বলতে আরম্ভ করে যে, সৌদির হিলাল কমিটির ফায়সালাই বাংলাদেশীদের জন্য যথেষ্ট- তো এই কথা যেমন শরয়ী বিধানের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি দুনিয়ার সাধারণ আইনেও তা কবুলযোগ্য নয়।

    কারণ প্রথম কথা তো হল, সৌদির হিলাল কমিটি যেই জায়গার হিলাল দেখার ভিত্তিতে ফায়সালা করেছে সেটা নিকট ও দূরের সকল মাপকাঠির বিচারেই বাংলাদেশ থেকে দূরে। সেজন্য ওখানকার দেখা বাংলাদেশের জন্য এমনিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

    দ্বিতীয় কথা, বাংলাদেশের উপর সৌদি হিলাল কমিটির কর্তৃত্ব নেই। সুতরাং এর সিদ্ধান্ত এখানের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটা তাদেরও ফতোয়া, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয় বলে মনে করেন। এ কারণেই শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম পরিষ্কার বলেছেন-

    “প্রশ্ন হল, কোনো ব্যক্তি কি এখানে (পাকিস্তান) সৌদি আরবের ফায়সালা অনুযায়ী আমল করতে পারবে? এর উত্তর, এখানে থেকে সৌদি আরবের ফায়সালা অনুযায়ী আমল করা জায়েয হবে না। কেননা সৌদি আরবের ফায়সালার এখানে কর্তৃত্ব নেই।

    (ইন্আমুল বারী, বুখারী শরীফের দরস সংকলন, মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, খ- : ৫, পৃ. ৪৯৭, মাকতাবাতুল হেরা, করাচী)।

    এটা তো সর্বস্বীকৃত যে, প্রত্যেক কাযী ও শাসকের ফায়সালা তার এখতিয়ারের গ-িতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। (আলআহকামুস সুলতানিয়্যাহ ওয়ালওলায়াতিদ দীনিয়্যাহ, ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদী, পৃষ্ঠা : ১৪১-১৪২, অধ্যায় : ৬, পরিচ্ছেদ : ৪; আলআহকামুস সুলতানিয়্যাহ, আল্লামা আবু ইয়ালা, পৃষ্ঠা : ৬৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা বৈরুত, ১৪২১হিজরী মোতাবেক ২০০০ঈসায়ী)

    বিশেষ করে হিলালের ফায়সালার ক্ষেত্রে তো অনেক কিতাবেই বিষয়টি স্পষ্ট বলা হয়েছে। দেখুন : ফাতাওয়া গিয়াছিয়্যাহ, পৃষ্ঠা : ৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, খ- : ৩, পৃষ্ঠা :৩৬৬; বাযযাযিয়া, পৃষ্ঠা : ৯৬ (আলমগীরী : ৪)

    আমরা এই প্রবন্ধে পিছনের সংখ্যাগুলোতে কয়েকবার হেদায়া গ্রন্থকারের কিতাব : ‘আত্তাজনীস ওয়াল মাযীদ’-এর হাওয়ালা উল্লেখ করেছি। সেখানে বলা হয়েছে কাযীর কর্মপরিধি যে শহর পর্যন্ত আবদ্ধ, তার হিলাল দেখা বিষয়ক ফায়সালা ঐ শহর ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট শহরতলীর যেসব পল্লী রয়েছে সে পর্যন্তই সীমিত থাকবে। অন্য শহর যদি নিকটবর্তী হয় তবু তা তার কর্মপরিধির সীমা বহির্ভূত হওয়ার কারণে তার সিদ্ধান্ত ওখানে সরাসরি কার্যকর হবে না। তবে নিকটতম হওয়ার কারণে ওখানকার কাযী তার উপর নির্ভর করে (যদি তার কাছে এই রায় শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়ে যায়) নিজ কর্মপরিধির ভিতর হিলালের ফায়সালা করে দেবেন। আর যদি দূরবর্তী হয় তাহলে ফায়সালা করবেন না।

    দেখুন : ‘আত্তাজনীস ওয়াল মাযীদ, ইমাম আবু বকর মারগীনানী, হেদায়া গ্রন্থকার খ. ২ পৃ. ৪২৩, ৪৩০-৪৩২।

     

    রাষ্ট্রীয় সীমানা হিলাল সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে প্রভাব ফেলে?

     

    উপরোক্ত প্রশ্নটিকে আরো ব্যাপক ভাষায় এভাবেও উপস্থাপন করে থাকেন :

    যদি মেনে নিই, উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য এবং এজন্য নিকটবর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলের পার্থক্যও স্বীকৃত। কিন্তু প্রশ্ন হল, সৌদির মত বড় রাষ্ট্রে রোযা ও ঈদ একই তারিখে করা হয় কেন? এত বড় দেশের সব অঞ্চলের উদয়স্থল কি অভিন্ন? অথচ সাধারণত এত বড় দেশের এক প্রান্তের উদয়স্থল অন্য প্রান্ত থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। আর এত বড় দেশে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দূরত্ব আলাদা আলাদা দুই দেশের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

    অন্যদিকে কাছাকাছি অঞ্চলের ক্ষেত্রে একই হিলালের ভিত্তিতে আমল করা অবশ্য-অনুসরণীয় হয়। তাহলে যশোর/বেনাপোল আর কলকাতায় কেন একই হিলাল দেখা অনুসারে আমল হয় না? শুধু সীমান্তের কাঁটাতারের এপার-ওপার হওয়ার কারণে হুকুম পরিবর্তন হয়ে যায়?

    এটা মূলত উপরোক্ত প্রশ্নের আরেকটি রূপ। এর উত্তরও সেই প্রশ্নের উত্তর থেকে বুঝে নেওয়া সহজ। তাও একটু বিস্তারিত বলছি :

    এর উত্তর বুঝার জন্য তিনটি মূলনীতি ভালভাবে বুঝতে হবে-

     

    প্রথম মূলনীতি

    হেলালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কার কাজ?

    ঐ বন্ধুরা চিন্তা করেননি যে, হেলালের সিদ্ধান্ত কে বাস্তবায়ন করবেন। রোযা ও ঈদের ঘোষণা কি নাগরিকসাধারণের কাজ, না রাষ্ট্রপ্রধান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য?

    সুন্নতে নববী, হাদীস ও আছার এবং ইসলাম ও মুসলমানদের ইতিহাসের উপর যাদের দৃষ্টি আছে, উম্মাহ্র অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা এবং উম্মাহ্র মুজতাহিদ ও ফকীহগণের ফতোয়াসমূহের বিষয়ে অবগতি আছে তারা জানেন, শরীয়ত রোযা ও ঈদকে ব্যক্তিগত ইবাদতের মতো ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেয়নি; শরীয়ত একে সম্মিলিত ইবাদত সাব্যস্ত করেছে এবং এর ব্যবস্থার ভার অর্পণ করেছে রাষ্ট্রপ্রধান ও তার নায়েবগণের উপর। আর জনসাধারণকে আদেশ করেছে তাদের আনুগত্যের। এ এক ইজমায়ী (সর্বসম্মত) মাসআলা, যাতে নির্ভরযোগ্য কোনো ফিকহী মাযহাবের ভিন্নমত নেই। নবী-যুগ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকে অবিচ্ছিন্ন কর্মধারায় এ নীতি অনুসৃত।

    এ প্রসঙ্গে হাদীস-আছার ও ফিকহের কিতাবসমূহের উদ্ধৃতি সহকারে বিশদ আলোচনা করা যায়, কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রবন্ধটি দীর্ঘ হয়ে পড়েছে; তাছাড়া প্রসঙ্গটিও আলাদা প্রবন্ধের দাবি রাখে তাই সংক্ষেপণের স্বার্থে শুধু ক’টি মৌলিক বিষয়ের দিকে ইশারা করছি :

    ১. হাদীসের যে কোনো কিতাব থেকে রমযান, শাওয়াল ও যুলহিজ্জাহ্র চাঁদ সংক্রান্ত হাদীস ও আছারগুলো পাঠ করুন এবং ফিকহ-ফতোয়ার যে কোনো কিতাবে সওম ও ঈদের মাসায়েল অধ্যয়ন করুন, তাহলে আপনার কাছে এ বাস্তবতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে।

    ২. হাদীসে দেখুন, যারা চাঁদ দেখেছেন তারা আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে সাক্ষ্য দিচ্ছেন আর তিনি সাক্ষ্য কবুল করে সওম ও ঈদের ফয়সালা করছেন এবং ঘোষক দ্বারা ঘোষণা করাচ্ছেন। একই অবস্থা ছিল খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও।

    ৩. ইতিহাস ও সীরাতের কিতাবসমূহ পাঠ করুন, দেখবেন, একই অবস্থা পরের আমীর ও খলীফাদের আমলেও ব্যাপকভাবে জারি। কেন্দ্রে এ ফয়সালা করছেন স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন, অন্যান্য অঞ্চলে সে জায়গার গভর্নর বা তার আদেশে প্রত্যেক শহরের কাযী (বিচারপতি)।

    ৪. ফিকহে ইসলামীর যে কোনো গ্রন্থে ‘কিতাবুস সওম’ অংশটি পাঠ করলে দেখবেন, চাঁদ সংক্রান্ত সকল মাসআলা এ মৌলনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত যে, চাঁদের প্রসঙ্গ কাযীর উপর ন্যস্ত। তার কাছেই সাক্ষ্য উপস্থাপিত হবে এবং তিনিই তা যাচাই করবেন ও ফয়সালা করবেন।

    ৫. সাহাবা-তাবেয়ীনের আছার ও চার মাযহাবের ফিকহের কিতাবসমূহে এ মাসআলা আলোচিত হয়েছে যে, এক বা একাধিক ব্যক্তি রমযানের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। কিন্তু ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান বা তার নিয়োগকৃত কাযী বা দায়িত্বশীল) কোনো কারণে তার সাক্ষ্য কবুল না করায় ত্রিশ শাবান ধরে সাধারণ জনগণ রোযা থেকে বিরত থাকল, এক্ষেত্রে এ ব্যক্তির করণীয় কী? তেমনি এ মাসআলাও এসেছে যে, দুই ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল, কিন্তু ইমাম কোনো কারণে সাক্ষ্য রদ করল তো এরা কি অন্যদের সাথে ত্রিশ রোযা রাখবে, না নিজে নিজে ঈদ করবে?

    এ বিষয়ক সকল রেওয়ায়েত ও সকল ফিকহী ইবারত পাঠ করুন, কোনো কোনো ফকীহ্র এটুকু কথা তো আপনি পাবেন যে, এ ব্যক্তি চুপে চুপে নিজের রোযা রাখবে, কিন্তু সে অন্যদেরও রোযা রাখার আদেশ করবে- এ অনুমতি কেউ দেননি। তেমনি ঈদের চাঁদের মাসআলাতেও অধিকাংশ ফকীহ বলেছেন, তাকে ত্রিশতম রোযা রাখতে হবে। রোযা না রাখারও অনুমতি নেই, ঈদ করারও অনুমতি নেই। আবার কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, সেদিন সে রোযা রাখবে না তবে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবে। ঈদ তো অবশ্যই করবে অন্য সবার সাথে, একা একদমই নয়।

    ৬. এসকল মাসাইল দ্বারা একদিকে যেমন পরিষ্কার হয় যে, রমযান ও ঈদের চাঁদের ফয়সালার অধিকার রাষ্ট্রপ্রধানের বা তার পক্ষ হতে নির্ধারিত ব্যক্তি বা মজলিসের; সাক্ষ্য তাদের কাছেই পেশ করা হবে এবং তারাই তা যাচাইয়ের পর শরীয়তের বিধান অনুসারে ফয়সালা জারি করবেন, তেমনি এ সকল মাসাইল থেকে এ-ও প্রতীয়মান হয় যে, ব্যক্তিবিশেষের অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ার অনুমতি নেই, এমনকি তারও না, যে নিজ ধারণায় চাঁদ দেখেছে ও তার সাক্ষ্যও দিয়েছে।

    ৭. ফিকহ ও ফতোয়ার গ্রন্থাদিতে এ মাসআলাও আলোচিত হয়েছে যে, অমুসলিম দেশগুলোতে অবস্থানকারী মুসলিমগণ রোযা ও ঈদ কীভাবে করবেন, যেখানে না আছেন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান, না কোনো মুসলিম কাযী। তেমনি গ্রামের লোকেরা কী করবেন, যেখানে কোনো কাযী থাকে না। ফিকহ-ফতোয়ার সমকালীন গ্রন্থাবলিতে এ মাসআলাও এসেছে যে, কোনো মুসলিম দেশে সরকারী হেলাল কমিটি আছে, কিন্তু চাঁদের ফয়সালার ক্ষেত্রে তারা শরীয়তের বিধিবিধান অনুসরণ করে না; বরং ফিকহে ইসলামীর ইজমায়ী ও সর্বসম্মত বিধানও লঙ্ঘন করে ফেলে, এক্ষেত্রে মুসলিম জনগণের করণীয় কী।

    ফিকহের এ সকল মাসআলাও প্রমাণ করে, চাঁদের ফয়সালার প্রকৃত হকদার হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান বা তার পক্ষ হতে নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ। এতে সাধারণ মানুষের না অনুপ্রবেশের হক আছে, না সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার।

    হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যদি তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে-একেবারেই পালন না করে বা খোলাখুলিভাবে শরীয়তের নীতি ও বিধান লঙ্ঘন করতে থাকে তখন আলিমদের অবশ্য-কর্তব্য, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আর সাধারণ মানুষের কর্তব্য, আলিমদের ফতোয়া অনুযায়ী আমল করা। তবে এক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতা ও বিশৃঙ্খলার অনুমতি নেই।[3]

    এ ফতোয়া শুধু ঐ আলিমদের নয়, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রাহ্য করেন; বরং এ ফতোয়া তাঁদেরও, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা অগ্রাহ্য করেন। এমনকি সমকালীন ঐসব আলিমেরও, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা অগ্রাহ্য করার মাযহাব থেকেও অগ্রসর হয়ে সরাসরি রোযা ও ঈদে ঐক্যের আহ্বান করেন।

    মুনাসিব মনে হচ্ছে, তাঁদের কয়েকজনের ফতোয়া এখানে উল্লেখ করি। আল্লাহ করুন, আমাদের ঐ বন্ধুদেরও সঠিক কথা বুঝে এসে যায়। তবে এর আগে হাদীস ও আছার থেকে আকাবিরে উম্মতের এ সর্বসম্মত ফতোয়ার দু-একটি সূত্র নমুনাস্বরূপ পেশ করা হচ্ছে :

    ১. তাবেয়ী ইমাম মাসরূক রাহ. বর্ণনা করেছেন, তিনি ও তার সাথী আরাফার দিন আয়েশা রা.-এর নিকটে গেলেন (ঐ দিনটি এমন ছিল, যা ‘ইয়াওমুন নাহর’ হওয়ারও সন্দেহ ছিল) আয়েশা রা. খাদেমাকে বললেন, তাদেরকে সুমিষ্ট করে ছাতুর শরবত পান করাও। আমি যদি রোযাদার না হতাম তাহলে আমিও পান করতাম। মাসরূক ও তার সঙ্গী বললেন, ‘আপনি রোযা রেখেছেন! আজ যদি কোরবানীর দিন হয়ে থাকে?!’ (মাসরূক এ কথাও বলেছিলেন, যে, আমি তো শুধু এই ভেবে রোযা রাখিনি যে, যদি আজ কোরবানীর দিন হয়?’) উম্মুল মুমিনীন বললেন-

    إنما يوم الأضحى يوم ضحى الإمام وجماعة الناس.

    অর্থাৎ কোরবানীর দিন তো সেটি যেদিন ইমাম ও জনগণ কোরবানী করে।[4]

    অন্য বর্ণনায় কথাটি এভাবে আছে-

    إنما النحر إذا نحر الإمام وعُظْمُ الناس، والفطرُ إذا أفطر الإمام وعُظْمُ الناس.

    অর্থাৎ কোরবানী তো তখন যখন ইমাম (মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধান) ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোরবানী করে এবং ইফতার (রোযা না-রাখা) তো তখন যখন ইমাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইফতার করে।[5]

    অন্য আরেক বর্ণনায় আছে-

    إنما يوم النحر يوم ينحرالناس، ويوم الفطر يوم يفطر الناس

    অর্থাৎ কোরবানীর দিন তো সেটি যেদিন লোকেরা কোরবানী করে এবং ফিতরের (ঈতুল ফিতরের) দিন তো সেটি যেদিন লোকেরা রোযা ছাড়ে।[6]

    (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৫৭, হাদীস ৭৩১০; মাসাইলু আহমাদ, আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ-আহকামুল ইখতিলাফ ফী রুয়াতি হিলালি যিলহিজ্জাহ, ইবনে রজব পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৫; কিতাবুল আছার, ইমাম আবু হানীফা, রেওয়ায়েত ইমাম আবু ইউসুফ পৃষ্ঠা : ১৭৯, হাদীস ৮১৮; আসসুনানুল কুবরা বাইহাকী ৪/২৫২)

    ইমাম ইবনে রজব রাহ. লেখেন-

    فهذا الأثر صحيح عن عائشة رضي الله عنها،إسناده في غايةالصحة، ولايعرف لعائشة مخالف من الصحابة.

    অর্থাৎ হযরত আয়েশা রা. থেকে এ বাণী প্রমাণিত। এর সনদ সর্বোচ্চ মানের সহীহ সনদ এবং এ সিদ্ধান্তে তাঁর সাথে কোনো সাহাবীর দ্বিমত পাওয়া যায় না। (আহকামুল ইখতিলাফ, ইবনে রজব পৃষ্ঠা : ৩৬)

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর এ বাণী তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল না; এ তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীরই প্রতিধ্বনি। সামনের হাদীসটি দেখুন-

    ২.         আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    الصوم يوم تصومون، والفطر يوم تُفْطِرُون، والأضحى يوم تُضَحّون.

    অর্থাৎ, সিয়াম সেদিন যেদিন তোমরা রোযা রাখ; ‘ফিতর’ সেদিন যেদিন তোমরা রোযা ছাড়। আর কোরবানী সেদিন যেদিন তোমরা কোরবানী কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭০৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৩২৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৬০; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৪/২৫১-২৫২)

    ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীসকে ‘হাসান’ বলেছেন, কিন্তু এর একাধিক সনদ আছে, যার সম্মিলনে তা ‘সহীহ’ হওয়া প্রমাণিত হয়। (আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব, নববী ৭/৪৪৫; আলআলামুল মানশূর, তকীউদ্দীন সুবকী পৃষ্ঠা : ১৮; ফয়যুল কাদীর, মুনাভী ৪/৪৪১; আততালীকুল মুগনী আলা সুনানিদ দারাকুতনী ২/২২৪; ইরওয়াউল গালীল ৪/১১)

    ইবনুল মুনকাদির-এর বর্ণনায় আছে, আয়েশা রা. নিজেই আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইরশাদ নকল করেছেন-

    عرفة يوم يعرف الإمام، والأضحى يوم يضحي الإمام، والفطر يوم يفطر الإمام

    আরাফা সেদিন যেদিন ইমাম আরাফায় উকুফ করে, কোরবানী সেদিন যেদিন ইমাম কোরবানী করে, আর ফিতর সেদিন যেদিন ইমাম রোযা ছাড়ে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৫/১৭৫, باب خطأ الناس يوم عرفة)

    রমযান ও ঈদ প্রমাণ হওয়ার বিষয়ে এ হাদীস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে বেশ কিছু মৌলিক মাসআলার দলীল রয়েছে। আমি শুধু দুটি মাসআলা উল্লেখ করছি :

    ক. রোযা, ঈদুল ফিতর, কোরবানী ও হজ্ব- এসব ইবাদতের সময় সম্পর্কে ফয়সালা করার অধিকার ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নয়, এ ফয়সালা করবেন ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) বা তাঁর নায়েব। যেদিন শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে ইমাম ও জনগণ রোযা শুরু করবে সেদিনই পয়লা রমযান। যেদিন তারা রোযা ছাড়বে সেদিন ঈদ। যেদিন আরাফায় উকূফ করবে তা হজ্বের দিন আর যেদিন কোরবানী করবে তা কোরবানীর দিন। এসকল বিষয়ে তাদের থেকে আলাদা হওয়ার অধিকার কারো নেই।

    ইমাম তিরমিযীর ভাষায়-

    وفسر بعض أهل العلم هذا الحديثَ، فقال : إنما معنى هذا : الصوم والفطر مع الجماعة وعُظْم الناس.

    এবং আবুল হাসান সিন্ধীর কথায়-

    الظاهر أن معناه أن هذه الأمور ليس للآحاد فيها دخل، وليس لهم التفرد فيها، بل الأمر فيها إلى الإمام والجماعة، ويجب على الآحاد اتباعهم للإمام والجماعة.

    (হাশিয়াতু সুনানি ইবনে মাজাহ, আবুল হাসান সিন্ধী খ- : ২, পৃষ্ঠা : ৩০৬, দারুল মারিফাহ, বৈরুত)

    খ. দায়িত্বশীলরা যখন শরীয়তের বিধান অনুসারে এসকল ইবাদতের মাসের চাঁদ সম্পর্কে ফয়সালা করবেন তো সেটা যদি বাস্তবসম্মত না-ও হয়, যা আমাদের অজানা, তো এ কারণে আল্লাহ্র কাছে কোনো জবাবদিহি হবে না। আল্লাহ তাআলা ইবাদত কবুল করবেন।

    ইমাম তকীউদ্দীন সুবকীর ভাষায়-

    وهذا معناه -والله أعلم- إذا اجتمع الناس علىذلك فلا يكلفون بما عسى أن يكون فينفس الأمر ولم يعلموا به. (العلم ا لمنشورص১৮)

    আরো জানার জন্য দেখুন : মাআলিমুস সুনান, ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবী (৩৮৮ হি.) ২/৮২; শরহুস সুন্নাহ, ইমাম বগভী ৬/২৪৭-২৪৯; তাহযীবু সুনানি আবু দাউদ, ইবনুল কায়্যিম ৩/২১৩-২১৪; নায়লুল আওতার, শাওকানী ৩/৩৮১; কিতাবুল ঈদাইন; মাআরিফুস সুনান, ইউসুফ বানূরী ৫/৩৫৬-৩৫৭

    এ ভূমিকার পর এবার আকাবির আলিমগণের ফতোয়া ভালোভাবে পড়–ন, সেগুলো এই প্রবন্ধে রজব ১৪৩৫হি. (মে ২০১৪ঈ.) সংখ্যায় পৃষ্ঠা ১৫-১৯-এ  প্রকাশিত অংশে উদ্ধৃত হয়েছে (শিরোনাম : ‘চাঁদের বিষয়ে স্বদেশবাসী থেকে আলাদা হওয়া জায়েজ নয়’)। তাঁদের মধ্যে যারা উদয়স্থলের বিভিন্নতা গ্রাহ্য করেন এবং যারা গ্রাহ্য করেন না, আর কিছু আলিম, যারা আরো অগ্রসর হয়ে ঈদ ও সিয়ামের ঐক্যের বিষয়ে উৎসাহ দান করেন তাদের সবাই এ বিষয়ে একমত যে, কারো জন্য নিজ দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও মুসলিম জনগণ থেকে রোযা ও ঈদের ক্ষেত্রে আলাদা হওয়া জায়েয নয়।

    হিলাল প্রমাণ ও হিলালের ফায়সালা বাস্তবায়ন করা দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দ্বীনী ইলম ও দ্বীনী সমঝের অধিকারী, আমানতদার, বিশ্বস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাজ। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতামতের কোনো ই‘তিবার নেই। এমনিভাবে নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল হিলাল কমিটির বিরুদ্ধে মুজতাহাদ ফীহ বিষয়ে শাখাগত মতপার্থক্যের কারণে আওয়াজ তোলাও ঠিক নয়। হাকীমুল উম্মত রাহ. ইমদাদুল ফাতাওয়ায় বড় তাকীদের সাথে এ বিষয়ে সর্তক করেছেন। তিনি বলেছেন-

    ظاہرا قواعد سے معلوم ہوتا ہے کہ قاضي کے ساتھ اختلاف نہ کرے نہ عملا نہ اعلاما يا اعمالا… الخ ج ২ ص ১৫৫ طبع جدید شعبان ১৪৩১

    প্রথম মূলনীতি হৃদয়ঙ্গম করার পর এবার দ্বিতীয় মূলনীতি পড়–ন!

     

    দ্বিতীয় মূলনীতি

     

    দ্বিতীয় মূলনীতিটি শরীয়তেরও মূলনীতি আবার সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির দ্বারাও তা সমর্থিত এবং বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সেই মূলনীতি হল, যে কোনো হাকিম (শাসক), যে কোনো কাযীর (বিচারক) হুকুম ও সিদ্ধান্ত তার কর্তৃত্বের সীমার মধ্যেই কার্যকর হয়। কর্তৃত্বের বাইরে কারো রায় বা হুকুম কার্যকর হতে পারে না। এই মূলনীতি যেহেতু অতি সুস্পষ্ট এইজন্য এই মূলনীতির বিষয়ে বেশি উদ্ধৃতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু হিদায়া লেখক ইমাম আবুল হাসান মারগীনানী রাহ.-এর কিতাব ‘আততাজনীসু ওয়াল মাযীদ’-এর উদ্ধৃতি পেশ করব।

    أهل مصر اشتبه عليهم الهلال، فشهد شاهدان عند القاضي برؤيته، وقضى بذلك، لا يظهر هذا الحكم في أهل أمصار أخر، ويظهر في أهل قرى المصر ومحاله.

    ولو شهد عند قاضي بلدة شاهدان ولم ير أهله الهلال، أن قاضي مصر كذا قضى بالهلال من وقت كذا، واستجمعت الشرائط، يقضي القاضي به، ذكره في مجموع النوازل.

    والمعنى فيه أن في الوجه الأول قاضي هذا المصر ليس له ولاية على مصر آخر، أما له ولاية على القرى، فيظهر قضاؤه على أهل قرى مصره، لا على أهل مصر آخر، وفي الوجه الثاني يلزمهم الصوم بإمضاء قاضي مصرهم، حكمَ قاضي ذلك المصر الأخر… .

    قال رضي الله عنه : وهذا إذا تقاربت مطالع البلدتين، أما إذا تباعدت ليس للثاني أن يمضي قضاء الأول في أهل مصره، مطالع سمرقند وبخارا قريب، فيمضي قاضي أحدهما قضاء قاض آخر.

    (التجنيس والمزيد ج২ ص ৪৩০-৪৩২، مسألة ১২৪৯، ১২৫০، طبع إدارة القرآن كراتشي)

    অর্থ : ১. কোনো শহরের অধিবাসীদের কাছে হিলালের বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে গেল। তখন দুজন সাক্ষী কাযীর দরবারে গিয়ে হিলাল দেখার সাক্ষ্য দিল। কাযী সেই সাক্ষ্য মোতাবেক ফায়সালা করে দিলেন। এই ফায়সালা অন্যান্য শহরের অধিবাসীদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। অবশ্য এই শহরের অন্তর্গত সকল গ্রাম এবং মহল্লায় কার্যকর হবে।

    ২. কোনো শহরের অধিবাসীরা হিলাল দেখল না। কিন্তু দুইজন সাক্ষী এসে ঐ শহরের কাযীর কাছে সাক্ষ্য দিল যে, অমুক শহরের কাযী অমুক সময়ে হিলালের ফায়সালা করেছেন। যদি উক্ত সাক্ষ্যে উপযুক্ত শর্তাবলী পাওয়া যায়, তাহলে এই শহরের কাযী সে মোতাবেক ফায়সালা দিয়ে দিবেন।

    ৩. হিদায়া লেখক বলেন, উল্লেখিত উভয় মাসআলা مجموع النوازل -এ আছে। উভয় মাসআলার হাকীকত হল, প্রথম ক্ষেত্রে অন্যান্য শহরে এই শহরের কাযীর রায় এজন্য কার্যকর হবে না যে, ঐ শহরে তো তার কর্তৃত্ব নেই। কিন্তু তার শহরে এবং শহরের সকল গ্রাম ও মহল্লায় তো তার কর্তৃত্ব আছে, এজন্য এখানে তার রায় কার্যকর হবে।

    আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হল, যখন এই শহরের কাযী অন্য শহরের কাযীর ফায়সালা (তার কাছে শরয়ী পদ্ধতিতে প্রমাণিত হওয়ার পর) এই শহরে কার্যকর করবেন, তখন এই শহরের অধিবাসীদের উপরও রোযা জরুরি হয়ে যাবে।

    ৪. হিদায়া লেখক বলেন, এই শহরের কাযী যে অন্য শহরের কাযীর ফায়সালা (প্রমাণিত হওয়ার পর) নিজের শহরে কার্যকর করবেন; এটা তখনই পারবেন, যদি উভয় শহরের উদয়স্থল কাছাকাছি হয়। যদি উদয়স্থল দূরে দূরে হয় তাহলে এই শহরের কাযীর জন্য ঐ শহরের কাযীর ফায়সালা নিজের শহরে কার্যকর করা ঠিক হবে না।

    ৫. হিদায়া লেখক বলেন, (উদাহরণস্বরূপ) সমরকন্দ আর বুখারার উদয়স্থল কাছাকাছি। তো এক্ষেত্রে এক শহরের কাযী অন্য শহরের কাযীর ফায়সালা নিজের শহরে কার্যকর করতে পারবেন।

    এই পুরো আলোচনা হেদায়া লেখক তার কিতাব ‘আততাজনীসু ওয়া মাযীদে’র খ- : ২, পৃষ্ঠা : ৪২৩-এ করেছেন। তাঁর পুরো আলোচনা এত স্পষ্ট যে, আমরা মনে করি এর চেয়ে বেশি স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন নেই।

    এবার তৃতীয় মূলনীতি পাঠ করুন,

     

    তৃতীয় মূলনীতি

    মুজতাহাদ ফীহ পর্যায়ের ইখতিলাফী মাসআলার ক্ষেত্রে হাকিম যদি কোনো এক মত অনুযায়ী ফায়সালা করে দেন তাহলে তার কর্তৃত্বের অধীন অন্য মতাবলবম্বীদের জন্যও তা কার্যকর হয়ে যায়।

    এটাও শরয়ী মূলনীতি। চার মাযহাবেরই ফুকাহায়ে কেরামের কাছে এই মূলনীতি স্বীকৃত। এই মূলনীতির শাস্ত্রীয় বাক্য হল,حكم الحاكم يرفع الخلاف। হাকিমের সিদ্ধান্ত তার কর্তৃত্বের সীমায় আমলের ক্ষেত্রে ইখতিলাফ শেষ করে দেয়। অর্থাৎ মুজতাহাদ ফীহ মাসআলার মধ্যে হাকিম যদি কোনো এক মত অনুসারে ফায়সালা করে দেন তাহলে তার এই ফায়সালা তার কর্তৃত্বের মধ্যে বসবাসকারী সকল মানুষের ক্ষেত্রেই  কার্যকর হবে। যদিও এই মাসআলায় তার অধীন কিছু লোক অন্য মতের অনুসারী হোক না কেন?

    উপরোক্ত মূলনীতির জন্য ফিকহ ও ঊসূলুল ফিকহের নিমে¥াক্ত কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে-

    ১. ‘বাদায়েউস সানায়ে’, ইমাম কাসানী হানাফী, খ : ৫, পৃষ্ঠা : ৪৫৭-৪৫৮

    ২. ‘আলফুরূক’, ইমাম কারাফী মালেকী খ : ২, পৃষ্ঠা : ১৯২

    ৩. ‘আলমানসূর ফিল ফাওয়ায়েদ’, ইমাম যারকাশী শাফেয়ী, খ : ১, পৃষ্ঠা : ৩০৫

    ৪. ‘আলমুগনী’, ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী, খ : ১১, পৃষ্ঠা : ৪৭৯

    ৫. ‘রদ্দুল মুহতার’, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী, খ : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৯৭

    ৬. ‘মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায’, খ : ২০, পৃষ্ঠা : ৪১৩

    ৭. ‘মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিল উসাইমীন’, খ : ৪১, পৃষ্ঠা : ১৯

     

    প্রশ্নের জবাব

    এই মূলনীতিসমূহের  আলোকে উক্ত প্রশ্ন নিয়ে পর্যালোচনা করা হলে জানা যাবে যে, এই প্রশ্নের সৃষ্টি-ই হয়েছে এ কারণে যে, সংশ্লিষ্ট এইসকল গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি জানা ছিল না; আর নয়তো মাসআলা বিলকুল পরিষ্কার। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে উল্লেখিত মূলনীতিগুলোর প্রয়োগের কথা তো দ্বিতীয় শতকের কোনো কোনো ফকীহও উল্লেখ করেছেন। ইমাম মালিক রাহ. (১৭৯হি.)-এর শাগরিদ আবদুল মালিক ইবনুল মাজিশুন (২১২ হি.)-এর বক্তব্য লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন-

    وإن كان إنما ثبت عند حاكمهم بشهادة شاهدين،لم يلزم ذلك من البلاد،  إلا من كان يلزمه حكم ذلك الحاكم ممن هو في ولايته. أويكون ثبت ذلك عند أمير المؤمنين، فيلزم القضاء جماعة المسلمين. قال: وهذا قول مالك.

    …এখানে ইবনুল মাজিশুন ইমাম মালেকের উদ্ধৃতিতে বলেছেন, যদি স্বয়ং আমীরূল মুমিনীনের কাছে হিলাল প্রমাণিত হয়ে যায় আর তিনি তার কর্তৃত্বাধীন সমস্ত অঞ্চলে এর ফায়সালা করে দেন তাহলে সবার জন্য তা অবশ্য-অনুসরণীয় হবে। -তাফসীরে কুরতুবী, খ. ৩ পৃ. ১৫৯; আলমুনতাকা, আবুল ওয়ালিদ খ. ২, পৃ. ৪৩০-৪৩১; আননাওয়াদিরু ওয়ায যিয়াদাত, ইবনে আবী যায়েদ কায়রাওয়ানী খ. ২, পৃ. ১১

    ইবনুল মাজিশুনের এই বক্তব্যের আলোচনা হাফেজ ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে করেছেন। আরো দেখুন, আলমুফহিম, শরহু সহীহি মুসলিম, ইমাম আবুল আব্বাস আলকুরতুবী (৫৭৮-৬৫৬ হি.), খ- : ৩, পৃষ্ঠা : ১৪২-১৪৪

    ইবনে হাজার মাক্কী শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। তিনি উদয়স্থলের বিভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার মতের প্রবক্তা। কিন্তু তিনি লিখেছেন, কোনো হাকিম যিনি উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য গণ্য করেন না, তিনি যদি তার মত অনুসারে হিলালের ফায়সালা করে দেন তাহলে তার কর্তৃত্বের অধীন সব মানুষের জন্য তার ফায়সালা অবশ্য-অনুসরণীয়। চাই কেউ উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার মতই অবলম্বন করুক। ইবনে হাজার মাক্কীর উক্ত আলোচনা ইবনে আবেদীন শামী রাহ. ‘তাম্বীহুল গাফিলি ওয়ালওসানান’-এ উদ্ধৃত করে এর সাথে সহমত ব্যক্ত করেছেন। মাজমুআয়ে রাসায়েলে ইবনে আবিদীন খ. ১ পৃ. ২৫৩

    হিজাযের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব মসজিদে নববীর মুদাররিস শায়খ আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালেমও তার কিতাব ‘আসসুয়াল ওয়াল জওয়াব ফিল কিতাব’ পৃ. ৫৯-এ আয়াত ২ : ১৮৯-এর অধীনে এ কথাই লিখেছেন। তার আরবী বক্তব্য হল-

    إلا أن الذي يجب التنبيه عليه هو أن القطر الواحد مهما تباعدت أطرافه، كالسعودية مثلا- شرقا وغربا شمالا وجنوبا فإن الرؤية فيه من أي بلد فإنها تلزم جميعا لبلدان، لوحدة الولاية والسلطان، ووجوب اتحاد المواطنين بَدْءًا وختاما”

    قال الراقم: قوله: ووجوب، كأنه كان الأنسب أن يقول: فيجب اتحاد…

    এটাই হল সেই বিষয়, যার জন্য এক দেশ যত বড় আর বিস্তৃত হোক না কোন সেই দেশের অধিবাসীদের একই দিনে রোযা ও ঈদ করতে হবে। এটা মূলত রাষ্ট্রপ্রধানের হুকুমের কারণে। যদিও সেই হুকুম বিশেষ কোনো মাযহাবের বিপরীতে হয় কিন্তু অন্য কোনো মাযহাব অনুযায়ী সঠিক। এরও দলীল আছে এবং মুজতাহাদ ফীহ অভিমতের অন্তর্ভুক্ত।[7]

    বাকী থাকল সেই প্রশ্ন যে, যেই হিলালের ভিত্তিতে সারা দেশের মানুষ পরস্পর দূর-দূরান্তে অবস্থান করেও রোযা ও ঈদ করছে। সেই ক্ষেত্রে শুধু সীমান্তের পার্থক্যের কারণে সীমান্তের ওপারের মানুষের জন্য এই হিলাল কেন ধর্তব্য হবে না?

    তো এর উত্তরও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিষয় এখানে এই নয় যে, ঐ হিলাল তাদের জন্য ধর্তব্য নয়। বরং হেলালের এই ফায়সালা তাদের জন্য ধর্তব্য নয়; কারণ তারা ফায়সালাকারীদের কর্তৃত্বের বাইরে।

    হিদায়ার আলোচনায় আমরা দেখেছি কাছাকাছি অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও শুধু কাযীর কর্তৃত্বের সীমানার বাহিরে থাকার কারণে তার ফয়সালা তাদের উপর কার্যকর হচ্ছে না। সুতরাং কাযীর কর্তৃত্বের বাইরে থাকার কারণে হিলালের সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া এক কথা আর সেই হিলাল ধর্তব্য না হওয়া ভিন্ন কথা।

    যদি দেশের সীমান্তের অপর পাশে এই হিলালের সাক্ষ্য সঠিক পদ্ধতিতে পেশ করা হয় আর সেখানকার দায়িত্বশীল সে অনুযায়ী ফায়সালা করে দেন তাহলে তাদের জন্যও ঐ হিলাল কার্যকর হয়ে যাবে। এটা কেউ অস্বীকার করে না। এ কথা কেউ বলে না যে, রাষ্ট্রের সীমান্তের এপারের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিলাল দেখার সাক্ষ্য দিলে গ্রহণযোগ্য আর সীমান্তের দশ হাত দূর থেকে এসে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিই কাযীর সামনে সাক্ষ্য দিলে সেটা অগ্রহণযোগ্য!

     

    সতর্কীকরণ

    রাষ্ট্রপ্রধানের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিকহী ইখতিলাফ খতম হয়ে যায় বলে যে কথা বলা হয়েছে সেখান থেকে কেউ যেন ভুল বুঝার শিকার না হয়। ইখতিলাফ খতম হয়ে যায়- এটা শুধু মুজতাহাদ ফীহ এবং মুখতালাফ ফীহ মাসায়েলের ক্ষেত্রে, মানসূস আলাইহি ও মুজমা আলাইহি মাসায়েলের ক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয়। সুতরাং দুর্ভাগ্যবশতঃ কোনো রাষ্ট্রপ্রধান যদি শরীয়তের ইজমায়ী হুকুম হিলাল দেখার বিধান অগ্রাহ্য করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের ভিত্তিতে চান্দ্রমাস শুরু করার ফায়সালা করে তাহলে তার এই ফায়সালা কার্যকর হবে না। এই ক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা কখনোই জায়েয হবে না।

    এক কথায় শরীয়ত-বিরোধী কোনো ফায়সালা এবং শরীয়ত-বিরোধী কোনো আইনের ক্ষেত্রে কারো আনুগত্য জায়েজ নেই। শরীয়তের অকাট্য হুকুম-

    لا طاعة لمخلوق في  معصية الله عز وجل.

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের উপর ইস্তেকামাত দান করেন এবং সকল প্রকার প্রান্তিকতা থেকে রক্ষা করেন- আমীন। হ


    [1] ১. একপক্ষ থেকে এই অন্যায় প্রশ্ন তোলা হলে তো অন্য পক্ষ থেকেও প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সৌদিআরবের অধিবাসীরা! আপনারা শা‘বানের ত্রিশ তারিখে কেন রোযা রাখছেন? রমযানের ঊনত্রিশ/ত্রিশ তারিখে কেন রোযা রাখেননি? আর রমযান মাসেই কেন ঈদ করে ফেললেন? ৯ যিলহজে¦ কুরবানী করছেন কেন? তো এই প্রশ্নগুলো যেমন অন্যায় ঐগুলোও অন্যায়। তবে হাঁ, যারা এ অঞ্চলে অবস্থান করে এখানের উলামা ও দায়িত্বশীলদের ছেড়ে সৌদির অনুসরণের দাবি করে তাদের ব্যাপারে এই প্রশ্নগুলো যৌক্তিক ও যথার্থ। কারণ, তাদের আমল কোনো মুজতাহাদ ফী মাসলাক অনুসারে নয়। বরং শায ও বিচ্ছিন্ন মতানুসারে হচ্ছে। তাই তাদের উপর এমন আপত্তি উত্থাপন করা যথাযথ হবে।

    [2] ২. এ বিষয়ে সুন্দর আলোচনা রয়েছে ‘ফাতাওয়া আসহাবুল হাদীস’ কিতাবে, যার লেখক শায়েখ আবু মুহাম্মাদ হাফেজ আব্দুস সাত্তার, পৃষ্ঠা : ২২০-২২১, আলকিতাব ইন্টারন্যাশনাল, জামেয়া নগর, নয়াদিল্লী। আরো দেখুন, মাসিক আলকাউসারের জানুয়ারী ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ্র প্রবন্ধ।

    [3] ৩. قال الراقم : ولا يغرن أحدا ما وقع في البحر ورد المحتار من أن هلال رمضان لا يدخل تحت الحكم، فإن عدم دخول شيء تحت الحكم أو القضاء من حيث الاصطلاح لا يلزم منه أن لا يكون ذلك الشيء من فرائض الحاكم والقاضي، فهلال رمضان وإن كان مما لا يدخل تحت الحكم فهو وهلال شوال لا ريب في كون الحكم بثبوتهما من فرائض الولاة أو نوابهم من القضاة والحكام، وهذا أمر معلوم من التاريخ ضرورة. وتأمل كم من مسألة في البحر ورد المحتار بنيت على أن أمر الهلال، هلال رمضان كان أو هلال شوال، إلى الخليفة أو نائبه من وال أو قاض، بل قد وقع التصريح بكون أمر العيد إلى السلطان في كتب العقائد أيضا، راجع منها على سبيل المثال كتاب >العقائد النسفية< للإمام أبي حفص عمر النسفي المتوفى سنة ৫৩৭هـ، ومعلوم أن هلال العيد (أعني عيد الفطر ) تابع لهلال رمضان، فكيف لا يكون أمر هلال رمضان من فرائض السلطان؟

    من أجل تلك العبارات المبهمة والموهمة التي وقعت في “رد المحتار” وغيره من كتبنا، وبعض كتب المذاهب الأخرى اشتبه الأمر على بعض المصنفين، فوقعوا في تخليط في هذا الباب، كما تراه عند بخيت المطيعي، ومحمد بن عبد الرزاق المَرّاكُشِي، وأحمد الغُماري وغيرهم، فلا تغتر بكلامهم وتذكر ما قاله العلامة السيد يوسف البنوري رحمه الله تعالى في معارف السنن ৫⁄৩৫৭ في باب ما جاء أن الفطر يوم تفطرون والأضحى يوم تضحون، تحت قول الإمام الترمذي : وفسر بعض أهل العلم هذا الحديث،  فقال : إنما معنى هذا الصوم والفطر مع الجماعة وعُظْم الناس.

    قال البنوري رحمه الله تعالى : ومن هنا أدار الفقهاء حكم ثبوت الهلال على قضاء القاضي، ثم ما يذكر في كتب الفقه من أن القضاء لا ينفذ إلا في المعاملات ولا مدخل له في العبادات، فقال الشيخ الإمام (أنور شاه الكشميري) : ليس هذا مطردا عاما، فإنا نجد لقضاء القاضي مدخلا في العبادات، ألا ترى أن إقامة الحج والأعياد وصلاة الكسوف مفوضة إلى الإمام والحاكم، …، وكذلك الصيام يحتاج ثبوتها إلى حكم القاضي على الشهادة أو الإخبار عند الغيم، فإن رد القاضي الشهادة لا يكون قوله حجة.

    [4] ৪. এ রেওয়ায়েতটি ইমাম ইবনে রজব রাহ. আহকামুল ইখতিলাফ ফি রুইয়াতি হিলালি যিলহিজ্জায় (পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৫) মাসায়েলে আব্দুল্লাহ আন আবিহীর সূত্রে সনদসহ নকল করেন, যা সহীহ। ইমাম আহমাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনাটি আব্দুর রহমান ইবনে মাহদীর মাধ্যমে নকল করেন-

    (ابن مهدي: عن سفيان، عن أبي إسحاق، عن أبي عطية ومسروق قالا: دخلنا على عائشة…)।

    [5] ৫. এ রেওয়ায়েত মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, খ- : ৪, পৃষ্ঠা : ১৫৭, রেওয়ায়েত : ৭৩১০-এ বর্ণিত হয়েছে। এ বর্ণনাও সঠিক।

    سوى أن جعفر بن برقان قال: >عن الحكم أو غيره عن مسروق<، فإن كان غير الحكم فهو مبهم، ولكن هذا ضعف خفيف لا يضر، فإن الرواية السابقة الصحيحة شاهدة لهذه الرواية، مع شواهد أخرى كثيرة مذكورة في كتاب ابن رجب وغيره (عبد المالك)

    [6] ৬. এটি রেওয়ায়েত করেছেন ইমাম আহমাদ, সনদ সহীহ।

    (أحمد عن ابن نمير وابن فضيل كليهما، عن الأعمش عن أبي إسحاق به)

    দেখুন ‘আহকামুল ইখতিলাফি ফী রুয়াতি হিলালি যিলহিজ্জা’, ইমাম ইবনে রজব, ‘মাসাইলু আহমাদ’ আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদের উদ্ধৃতিতে।

    [7] ৭.  যদি  খোশ  কিসমতের কারণে সমগ্র বিশ্বই এক মুসলিম শাসকের অধীনে চলে আসে তখন সময়ের ব্যবধানের কারণে এমনিতেই পৃথিবীকে ভাগ করতে হবে। সেখানে শুধু শুধু ফায়সালা করে দিলে কাজ হবে না। কারণ অতি বেশি দূর দূরান্তের অঞ্চল হলে তো সকল ফকীহের ইজমা অনুযায়ী এক জায়গার দেখা অন্য জায়গার জন্য প্রযোজ্য নয়। (আলইসতিযকার, মাআরিফুস সুনান, আততামহীদ) তাছাড়া সেটা কার্যক্ষেত্রে সম্ভবই নয়।

    প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের রূপকথার বিয়ে

    লন্ডনের উইন্ডসর কাসলে এক বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কলেকে স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
    সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল গির্জায় ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এবং ৬০০ নিমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিতিতে তারা বিয়ের শপথ-বাক্য পাঠ করেন এবং আঙটি বদল করেন।
    ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার ওয়েইট কেলারের তৈরি বিয়ের পোশাক পরে মেগান মার্কল যখন গির্জায় এসে হাজির হন তখন শ্বশুর প্রিন্স চার্লস তার হাত ধরে তাকে বিয়ের মঞ্চ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যান।
    বিয়ের পর প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কলের উপাধি হবে ডিউক এবং ডাচেস অফ সাসেক্স।
    বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমরিকান টকে-শো হোস্ট ওপরাহ্ উইনফ্রে, অভিনেতা জর্জ ক্লুনি ও তার স্ত্রী আমাল, সাবেক ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া, টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস এবং গায়ক এল্টন জন।
    এই বিয়ে উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষ উইন্ডসরে হাজির হন। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশনে এই বিয়ের অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করেন।
    যে মুহূর্তে মেগানের ঘোমটা খুললেন প্রিন্স হ্যারি।
    রানী এলিজাবেথ এবং তার স্বামী এডিনবরার ডিউক বাদে রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে প্রিন্স হ্যারির ভাই ডিউক অফ কেমব্রিজ উইলিয়াম, মামা আর্ল স্পেন্সার, ডাচেস অফ ইয়র্ক সারাহ্ ফার্গুসন এই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
    তবে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সহ কোন রাজনীতিককে এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কারণ এটি কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ছিল না।
    বিবিসির রাজপরিবার সংক্রান্ত সংবাদদাতা জনি ডাইমন্ড বলছেন, যেভাবে পুরো অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল, সেই বিবেচনায় এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক রাজকীয় অনুষ্ঠান।
    অন্যান্য বিয়ের অনুষ্ঠানের যেমনটি আগে দেখা গেছে, এই বিয়েতে বড় বড় কেক তৈরি করা হয়নি।
    রাজকীয় অনুষ্ঠানে গির্জার মধ্যে এবার গসপেল কয়্যার সামগান পরিবেশন করেছে।
    উইন্ডসর প্রাসাদে এই প্রথমবারের মতো সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে ১২০০ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
    ১৯৯৭ সালে প্রিন্স হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়ের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকে ‘পিপলস প্রিন্সেস’ অর্থাৎ জনগণের রাজকুমারী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
    কিন্তু নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বিয়েও জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে বলে জনি ডাইমন্ড বলছেন।-বিবিসি।

    নারুহিতো সিংহাসনে বসার এক মাস আগে ঘোষণা করা হবে নতুন যুগের নাম

    ২০১৯ সালের মে মাসের ১ তারিখ যুবরাজ নারুহিতো সিংহাসনে আরোহণের এক মাস আগে তার সময়কালের নাম ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

    তবে তারিখ আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

    ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখের পর ঘোষণা দেয়া হবে বলেই মনে করা হচ্ছে, ঐ দিন সম্রাট আকিহিতো’র রাজ্যাভিষেকের ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

    প্রাথমিক ভাবে সরকার এ বছরের গ্রীষ্মে নতুন যুগের নাম ঘোষণা করার কথা বিবেচনায় এনেছিলেন যাতে করে সব কিছুর দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়।

    কিন্তু পরে এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয় যে নতুন যুগের নাম আগেই ঘোষণা করা হলে জনমনে সম্রাট আকিহিতো’র চেয়ে সিংহাসনে বসার আগেই নতুন সম্রাট দিকে মনোযোগ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সে ধারণা থেকে দীর্ঘ সময় আগে নাম ঘোষণার পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়। আসাহি।