• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ‘ফরযে আইন ইলম শেখা ছাড়া ঈমান শেখা হয় না’

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    হাম্দ ও ছানার পর :

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ قُوْلُوْا قَوْلًا سَدِیْدًا  یُّصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕوَ مَنْ یُّطِعِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِیْمًا.

    একটি মাসআলা আমরা সবাই শুনেছি, দ্বীনী ইল্ম হাছিল করা ফরয। হয়ত অনেকে এভাবে শুনেছি যে, ফরযের দুটো স্তর। ফরযে আইন, ফরযে কেফায়া। কিছু পরিমাণ ইলম ফরযে আইন, কিছু পরিমাণ ইলম ফরযে কেফায়াহ। ফরযে আইন ইলম বলতে বোঝায়, যে পরিমাণ ইলম সবার জন্য শেখা ফরয। আর ফরযে কেফায়া ইলম হল সেটা দ্বীনের ইলম, যা সবার জন্য শেখা ফরয নয়, তবে কিছুসংখ্যক আলেম এমন থাকা জরুরি যারা ফিকহ ও দলীল-আদিল্লা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। যাতে কারো প্রয়োজন হলে তাঁদের কাছ থেকে শিখতে পারে ও জানতে পারে।

    আজকে আমরা ফরযে আইন ইলম সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

    প্রথমেই ঈমান, ইসলাম শিখতে হবে। এই শেখাটার প্রথম স্তর হল ফরযে আইন ইলম। আপনি যদি বলেন ঈমান শিখব, ইসলাম শিখব- এর মানেই হল যতটুকু ইলম ফরযে আইন ততটুকু শিখতে হবে। শেখার দুটি স্তর আছে। এক হচ্ছে, জ্ঞান অর্জন করা, আরেকটা হল প্রায়োগিক শিক্ষা। যা শিখবেন ওটার প্রয়োগ করার অনুশীলন করতে হবে। শুধু জ্ঞান অর্জন করলাম তাহলে এই শেখা পরিপূর্ণ হল না। ফরযে আইন যতটুকু ইলম, এর মধ্যেও দুটি স্তর আছে। একটা হল, জ্ঞান অর্জন আরেকটা হল, সেটার প্রায়োগিক শিক্ষা-অনুশীলন। তাহলে ফরয আদায় হবে। অন্যথায় ফরয আদায় হবে না। এই যে একটা শব্দ আমরা বলি, ‘ঈমান শেখা’ খুব দামী, কঠিন এবং গভীর একটা শব্দ। তো ঈমান শেখা বলতে গেলেই আমাকে ফরযে আইন ইলম শিখতে হবে। ফরযে আইন ইলম শেখার ব্যবস্থা না করে যতই ঈমান শেখার কথা বলি, ঈমান শেখা হবে না। এমনকি ফরযে আইনের উভয় পদ্ধতিতে; জ্ঞান অর্জন আর প্রায়োগিক অনুশীলন -এই উভয় স্তরের ফরযে আইন পরিমাণ ইলমের উপর মেহনত করলে ঈমান শেখা হবে, ইসলাম শেখা হবে।

    এখন বুঝতে হবে, ফরয আইন ইলমের অধ্যায়গুলো কী কী।

    ফরযে আইন ইলমের দুটো স্তর। জ্ঞান অর্জন ও প্রায়োগিক অনুশীলন। এখন বলছি ফরযে আইন ইলম দুই প্রকার। প্রথম প্রকার ইলম শুরু হয় ঈমান আনার পরেই। যে আল্লাহর মেহেরবানীতে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে সে শুরু থেকেই ঈমানওয়ালা, ইসলাম ওয়ালা। তো ঈমান আনার পর থেকে, ইসলাম সম্পর্কে বোধ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এই অংশের ইলম অর্জন শুরু করতে হবে। এক দিনের এক সপ্তাহের এক মাসে আমি শিখে শেষ করতে পারব না। ঠিক আছে। এক সপ্তাহে সব শিখে ফেল- শরীয়ত এটা বলে না। কিন্তু শিখতে থাকতে হবে। বাদ দেওয়া যাবে না। এমনিই তো আমরা ছুটি পাই। যেমন, আজকের দিন পুরা ইলমের জন্য আমরা ওয়াক্ফ করেছি, কিন্তু এর মধ্যেও কি ছুটি পাইনি আমরা? ছুটি দিতে হবে। ছুটি না দিলে আমরা লাগাতার কীভাবে কাজ করব? আমরা রোযা রাখি। তাতে কি ছুটি নেই? প্রথম ছুটি তো ইফতার। ইফতারের পর থেকে আবার সেহরীর শেষ পর্যন্ত ছুটি। নামায ফরযে আইন। কিন্তু ছুটি আছে। ফজরের নামাযের পর থেকে লম্বা ছুটি যোহর পর্যন্ত। যোহরের পর থেকে আছর পর্যন্ত মোটামুটি লম্বা ছুটি। আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ছুটি। মাগরিবের পর থেকে ইশা পর্যন্ত। আমাদের দেশে তো ইশা আগে আগে পড়ে, এজন্য কম ছুটি। ইশা আরো দেরীতে পড়লে আরো ছুটি। আর ইশার পর থেকে একেবারে ফজর পর্যন্ত ছুটি। আল্লাহ তাআলা কত আসান করেছেন। দ্বীন বুঝার, দ্বীন শেখার এবং দ্বীনের উপর চলার যদি কারো ইচ্ছা থাকে, নিয়ত থাকে তাহলে কি কঠিন? নিয়ত না থাকলে তো সহজ থেকে সহজ বিষয়ও কঠিন। যাই হোক, বলছিলাম দ্বীন শিখতে থাকতে হবে। দ্বীন শেখা বাদ দেওয়া যাবে না। মানে হল, আপনি ভুলে যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহে একটু শিখলেন, তারপর আর খবর নেই, ভুলে গেছেন। আমাদের ফরয ইলমের যে অনেক বাকি আছে, তার খবর নেই। ভুলেই গেছে। এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হবে না। চলতে থাকতে হবে। ছুটি নিতে পারব, কিন্তু একেবারে ভুলে যেতে পারব না। এক সপ্তাহ একটু শিখলাম তারপর তিন দিনের ছুটি বা আরো এক সপ্তাহের ছুটি, ঠিক আছে, এক সপ্তাহ পর আসুন। আরেকটু শিখুন। কিন্তু একদিন একটু শিখলাম, তারপর মাসকে মাস পার হয়ে গেল, বছরকে বছর পার হয়ে গেল, আর কোনো খবর নেই, এটা কি ছুটি নেওয়া হল, না ভুলে যাওয়া হল? ভুলে যাওয়া যাবে না। ফরযে আইন ইলমের যতক্ষণ একটা অংশও বাকি আছে, যেটা আমি শিখিনি, ততক্ষণ পর্যন্ত ভুলে যাওয়া যাবে না। চালিয়ে যেতে হবে। অবহেলা করতে পারবেন না। এটা হল এক প্রকার ফরয ইলম।

    আরেক প্রকার, যখন যে কাজ তখন সেটা শেখা ফরয। দেরি করা যাবে না। আগের প্রকার তো বললাম, সেটা ছুটি নিয়ে নিয়ে শিখতে থাকেন। কিন্তু অবহেলা করে ভুলে যাওয়া যাবে না। আরেক প্রকার ফরযে আইন ইলম হল, যেটা নগদ দরকার সেটা নগদ শিখতে হবে। দেরি করা যাবে না। একজন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু ব্যবসার মধ্যে তো দু’প্রকার আছে, হালাল ও হারাম। আরেক প্রকার আছে হারাম ও হালালের মিশ্রণ। এখন আমাকে জানতে তো হবে যে, এটা হালাল, এটা হারাম, এটা সন্দেহযুক্ত। এমন কিছু যদি করি যাতে হালাল-হারাম মিশ্রিত- এটা করা যাবে না। কিছু ব্যবসা আছে যা আগাগোড়াই হারাম। কাজেই কোনটা হালাল, কোনটা হারাম তা জানতে হবে। আমি ব্যবসা শুরু করব এখন আর শিখব এক বছর পর, এক বছর শেখা ছাড়াই ব্যবসা চালাব, এটা হয় না।

    ব্যবসার কিছু বিষয় আছে কৌশলগত। কিছু আছে ব্যবস্থাপনাগত। ব্যবস্থাপনাগত বিষয় আপনি অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীর কাছে শেখেন বা কিছুদিন বড় ভাইয়ের দোকানে বসে তার কাছ থেকে শেখেন। কিন্তু হারাম-হালালের বিষয়গুলো আলেমের কাছ থেকে শিখতে হবে। ব্যবসা খুলে দিলেন কিন্তু ব্যবসার হারাম-হালাল জানলেন না, ফরযে আইন লংঘন হল। ব্যবসায় ঢুকেননি তাহলে ব্যবসার হালাল-হারাম সম্পর্কে আরো দেরিতে জানলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু যখন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন তখন আর দেরি করার সুযোগ নেই। ব্যবসা শুরু করবেন এই সপ্তাহে, ব্যবসার হালাল-হারাম জানবেন কি এক সপ্তাহ পর, একমাস পর?  না এখনই। তো এটা হচ্ছে আরেক প্রকারের ফরযে আইন ইলম। মানে যা আমাকে এখনই জানতে হবে। দেরি করা যাবে না।

    একজন হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছে। তো হজ্বের পদ্ধতি শিখতে হবে না? এটা নগদ দরকার, দেরি করা যাবে না। হজ্বের ইহরাম বেঁধে ফেললাম, রওয়ানাও হয়ে গেলাম। কিন্তু খবর নেই যে, ইহরাম কাকে বলে। অনেকে মনে করে, সাদা দুটো কাপড় পরিধানের নামই ইহরাম। লোকে বলে ইহরাম বাঁধা। আর মনে করে কাপড় বাঁধাই হল ইহরাম বাঁধা। যেমন বলা হয় নামাযের নিয়ত বাঁধা। ওখানে কী বাঁধে? হাত বাঁধে। আসলে নিয়ত বাঁধা মানে নিয়ত করা। এই না যে, কোনো কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলা। তো ইহরাম বাঁধার মানে হল, হজ্বের ইহরাম করা। কীভাবে তা করবে আর এর কারণে নতুন কী কী বিধান আসবে, এগুলো জানতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, অনেকের এগুলো কিছুই জানা থাকে না।

    একবার বিমানবন্দরে গেলাম একজনকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। হজ্বে যাচ্ছিলেন। ওখানে একজন জিজ্ঞাসা করল, এক বেচারা ইহরামের কাপড় লাগেজে দিয়ে দিয়েছে। লাগেজ চলে গেছে ভেতরে। সঙ্গে ছোট ব্যাগে ইহরামের কাপড় রাখেনি। বাড়ি থেকে ইহরাম বেঁধে যায়নি। এটা ঠিক যে ইহরাম বাড়ি থেকে বেঁধে না আসারও অবকাশ আছে। ইহরাম বাঁধার শেষ একটা জায়গা আছে। যে যে দেশ থেকেই মক্কা শরীফে আসুক। একটা শেষ সীমানা আছে। ওখানে এসে ইহরাম বাঁধতেই হবে। ইহরাম না বেঁধে ওই মীকাত অর্থাৎ ঐ জায়গা অতিক্রম করা যায় না। বিমান ঢাকা থেকে রওয়ানা হলে পাঁচ ঘণ্টা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মত সময় লাগে। জিদ্দা পৌঁছার আগেই ঐ জায়গাটা এসে যায়। তো এখন কেউ বাসা থেকে ইহরাম বাঁধল না, বিমান বন্দর থেকেও করল না, কিন্তু জেদ্দায় পৌঁছার ঘণ্টা খানিক আগে তার ইহরাম বাঁধতে হবে। নতুবা তার ঐ সীমানা অতিক্রম করতে হবে ইহরাম ছাড়া; এটা নাজায়েয। এমন হয়ে গেলে কী করতে হবে সে মাসআালাও আছে। তো চাইলে এই অবস্থাতেও ইহরাম বাঁধা যায়, নিয়ত করে লব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক… বললে ইহরাম হয়ে গেল। কিন্তু সে তো সাধারণ পোষাক পরে আছে। ইহরাম অবস্থায় পুরুষ এই সাধারণ পোষাক পরে থাকতে পারে না। এখন করবে কী? এটা কি নগদ মাসআলা হল না? এটাও শিখেনি, হজ্বে রওয়ানা করেছে। এখন কে বলবে মাসআলা? তো একজন মুফতী সাহেব ছিলেন, বলে দিয়েছেন মাসআলা- যে আপনি বিমানে বসে ঘণ্টা দুয়েক পর নিয়ত করে তালবিয়া পড়বেন। আপনার ইহরাম শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এই ২/৩ ঘণ্টা ইহরামের পরিপন্থী হালতে থাকবেন এটা ওযর। এখন করবেন কী, ভুল হয়ে গেছে। ইস্তেগফার পড়তে থাকবেন আর ওখানে গিয়ে কাপড় হাতে পাওয়ার পরপরই ইহরামের কাপড় পরে নিবেন। আর কয়েকঘণ্টা ইহরাম পরিপন্থী হালতে ছিলেন এর জন্য যে জরিমানা আসে তা আদায় করবেন।

    তো ভালো যে, মুফতী সাহেবকে পেয়েছেন। না পেলে তিনি কী করতেন? অনেকে ইহরামের জন্য কাপড়কেই মূল মনে করে। কাজেই সে ভাবত যে, কাপড়ই যেহেতু নেই আমি আর কী করব? জিদ্দায় যাই, তারপর ইহরাম বাঁধব। অথচ ওটা করলে ডবল গুনাহ হত।

    তো আমি বলছিলাম, যে ইলম আপনার এখন দরকার, সেটা আপনাকে এখনই শিখতে হবে। একেক জনের একেক যরুরত। যে ব্যবসায় নামবে তার ব্যবসারটা দরকার। যে হজ্বে যাচ্ছে তার হজ্বেরটা দরকার। এরকম একেক জনের একেক বিষয়ের ইলম দরকার।

    একজন চাকরি নেবে, আগে কোথাও চাকরি করেনি। এই প্রথম চাকরি; তাকে চাকরির মাসায়েল জানতে হবে। আমি একজন চাকরিজীবি হিসেবে, একজন কর্মচারী বা কর্মকর্তা হিসেবে যেই স্তরের হই না কেন- আমার উপর তো কিছু দায়-দয়িত্ব আসে। কী কী দায়িত্ব আসে? সকাল এতটায় যেতে হবে, এতটায় ফিরতে হবে। অফিস সময়গুলো বলে দিল। এ সময়টা অফিসের দেওয়া সময়। এটা পালন না করলে শুধু কর্তা নারায হবে, মালিকপক্ষ নারায হবে, এইটুকু? না, এ সময়টা  অফিসে না দিলে আল্লাহও নারায হবেন? এই বিষয়টা তো আমাকে জানতে হবে। যার যে পেশা সেই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট বিধান জানতে হবে।

    একজন সেলুন খুলছে। এটা তার পেশা। কিন্তু কেউ কি সেলুন খোলার পর মুফতী সাহেবের কাছে যায় যে, হুযুর আমি একটি সেলুন  খুলেছি, এটা আমার আয়ের উৎস। আমাকে এ সংক্রান্ত মাসায়েল বলুন? কারণ হুযুরের কাছে গেলে হুযুর বলবেন যে, কারো দাড়ি কামাতে পারবে না। মানুষ এসে ভীড় করুক দাড়ি কামানোর জন্য, তুমি পারবে না। দাড়ি কামালে তো টাকা দেয়, সেটা হালাল না হারাম, কী হুকুম? এগুলি জানতে গেলে তো অসুবিধা! একজন দোকানদার কত পণ্য-সামগ্রী তার দোকানে রাখে। কোনটা দোকানে রাখা ও বিক্রি করা জায়েয, কোনটা জায়েয নয়- মাসআলা জানতে হবে। জানতে আসলেই হয়ে যায়। আমি যে আয়াত পড়লাম-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً

    হে ঈমানদারগণ! (যারা ঈমান এনেছো), তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮

    পূর্ণ ইসলামকে বিশ্বাস কর। পূর্ণ ইসলামকে গ্রহণ কর। পূর্ণ ইসলামকে মান। গ্রহণ করতে, মানতেই যদি অসুবিধা তাহলে তো ঈমান হল না। আর যদি গ্রহণ করে, মানে কিন্তু আমল করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যায়। বিভিন্ন কারণে করতে পারে না। নিজেকে অপরাধী মনে করে, তাহলে ঈমান আছে কিন্তু আমলের ত্রুটি। আর যদি গ্রহণই না করে এবং বলে নামায রোযার কথা হুযুররা বলে, ঠিক আছে, এখন দেখি আমার একটা সেলুন আছে, হুযুররা এটার উপরও কথা বলা শুরু করেছে, এটাও নাকি আমার হুযুুরদের কাছে শিখতে হবে? এটা তো শিখব ভালো নাপিতের কাছে। হুযুরদের কাছে এটা শেখার কী?

    শুনুন, ভালো নাপিতের কাছে শিখবেন, কীভাবে কাঁচি ধরবেন, কীভাবে চালাবেন- এগুলো। এটা নাপিতের কাছে যাওয়া ছাড়া শেখা যাবে না। একটা কিসসা বলি। এক নাপিত বাদশার চুল-মোঁচ ঠিকঠাক করত। একদিন বাদশা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তো  নাপিত এসে বাদশাকে ঘুমের মধ্যে রেখেই চুল কাটা শুরু করল। এবং যেভাবে করা দরকার করে দিল। ঘুম থেকে উঠে বাদশা আশ্চর্য হয়ে গেলেন, আরে! নাপিত এসেছিল? কীভাবে করল সে? আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, টেরই পেলাম না, ঘুমও ভাঙ্গল না! এ তো নাপিতদের বাদশা। হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. কিসসাটা বর্ণনা করেছেন। ঘটনা তো ঘটনাই্, সম্ভবত এটা বাস্তব ঘটনা হবে। তো বাদশা যখন সনদ দিলেন যে, ‘নাপিতদের বাদশা’, তো বাদশাহর কথা নাপিতের জন্য খুব সম্মানের বিষয়। কথাটা খুব মশহুর হয়ে গেল। এখন অন্যান্য নাপিতের স্ত্রীরা এসে এ নাপিতের বউকে, মোবারকবাদ জানাচ্ছে যে, বাদশা তোমার স্বামীকে ‘নাপিতের বাদশা’ বলেছেন। তখন এই নাপিত বা তার স্ত্রী মন্তব্য করল, বাদশা তো বাদশাই। কোন্ নাপিত তার পেশাতে বড়, এটা বাদশা বুঝবেন না, এটা তার বিষয় না। এই পেশার যারা গুরু তারা কেউ এই সনদ দিলে এর মূল্য ছিল। কিন্তু এই সনদ দিয়েছেন দেশের বাদশা। এটা তো তাঁর বিষয় নয়।

    বুঝতে পেরেছেন? বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান ছাহেব দা. বা. এই ঘটনা অনেক বলেন। আমরা বলি না যে, অমুক হুযুর অনেক বড় আলেম, অমুক হুযুর অনেক বড় বুযুর্গ। আমি কী বুঝি- তিনি অনেক বড় আলেম না ছোট আলেম। এটা তো আরেক আলেমই বুঝবেন। তো আমি বলছিলাম এই যে, এত পারদর্শিতা সে অর্জন করেছে যে, ঘুমন্ত অবস্থায় একজনের চুল-মোঁচ কেটে দিয়েছে, ঘুম ভাঙেনি, এটা কি ছোটখাট কোনো পা-িত্য? এটা কোনো হুযুরের কাছে শিখতে হবে? সেলুনওয়ালাদেরকে আমরা বলি না যে, এটা হুযুরের কাছে শিখতে আস। এটা তো নাপিতের কাছেই শিখতে হবে। হুযুুরের কাছে যা শিখতে হবে, তা হল, সেলুনের জন্য যদি সে দোকান ভাড়া নিয়ে থাকে সে ভাড়া সংক্রান্ত মাসআলা জেনে নিবে। একজন মহিলা এসে তার চুল ছোট করে দিতে বলল, এটা করা তার জন্য জায়েয হবে, নাকি হবে না- হুযুরের কাছে জানতে হবে। নাপিত হলো পুরুষ, এসেছে মহিলা; তাও আবার মাথার চুল ছোট করার জন্য?!

    চুলের বিভিন্ন ঢং দেখবেন সেলুনে। বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন ঢং ভালো লাগে। এগুলোর অনেকগুলোই অনুত্তম। কিছু কিছু আছে, নাজায়েয। ঢালাওভাবে সবগুলোকে না জায়েয বলা যায় না। আমরা যেভাবে চুল রাখি, হয় বাবরী চুল আর না হয় ছোট করে সামনে পেছনে বরাবর করে রাখি। একেবারে স্বাভাবিক। এটা হল সুন্দর পদ্ধতি। এর ব্যতিক্রম হলে হারাম হবে- তাও বলছি না। কিন্তু ব্যতিক্রমের মধ্যে যা যা আছে, সবগুলো জায়েয ফ্যাশনে পড়ে না। কিছু না জায়েযও আছে, সেটা জানতে হবে। যে এমন ফ্যাশন করতে চায় তারও জানতে হবে আর যে এমন ফ্যাশন করে দেবে তারও জানতে হবে।

    বিউটি পার্লার আছে না? ওখানে কী কী কর্মকা- হয়? কোনো পার্লারওয়ালা তো দারুল ইফতায় আসে না। ফরযে আইন লংঘন। আরে ভয় পাওয়ার কী আছে? তুমি মাসআলা জান। আমল যদি করতে নাই পার নিজেকে অপরাধী মনে কর। নিজেকে অপরাধী মনে করলেও তো গুনাহ কমল। কিন্তু না জায়েযকে জায়েয মনে করে করা? মানুষ জানতে ভয় পায়। জানতে ভয় পাওয়া ঠিক নয়। হালাল হারামের খোঁজ-খবর নেওয়া দরকার। আমলের মধ্যে যদি ত্রুটি হয়েও যায়, নিজেকে তো অন্তত অপরাধী মনে করব। এটুকু লাভ তো হল। কিন্তু যদি আমি না-ই জানি তাহলে তো হারামকে হালাল মনে করব। নাজায়েযকে জায়েয মনে করব। এটা তো আরো বড় সমস্যা। এজন্যই বললাম, যার যেটা পেশা, যার যেটা কর্মক্ষেত্র তাকে ঐ বিষয়ের ইলম অর্জন করতে হবে। তদ্রূপ যার যেই হক এখন তার উপর এসেছে- সে সম্পর্কে জানতে হবে।

    বাবা হয়ে গেলাম কিন্তু কোনো মাসআলা জানারই যরুরত মনে করলাম না। একজন স্বামী হয়ে গেল, কোন মাথাব্যাথা নেই তার মাসআলা জানার ব্যাপারে। মেয়েকে যখন বিয়ে দেওয়া হল, স্ত্রী হিসেবে তার উপর কী কী মাসআলা আসছে জানার যরুরত মনে করা হল না। বাবা ইন্তেকাল করেছে, মীরাসের মাসআলা জানার যরুরত মনে করা হল না। এরকম কত ক্ষেত্র, কয়টা বলব? কয়েকটি উদাহরণ দিলাম। যে যে পেশায় থাকুক সে পেশা সংক্রান্ত শরীয়তের মাসআলা থাকবে। কেউ কৃষক; এ বিষয়ে কত মাসআলা। আবার কেউ আইনজিবী; তারা শুধু লয়ারদের কাছেই প্র্যাকটিস করতে যায় কিন্তু তাদের কম লোকই হয়ত হুযুরদের কাছে আসা জরুরি মনে করে। আমার যদি মজবুত মাধ্যম থাকত সব আইনজিবী-উকিলদের কানে এই আয়াতের পয়গাম পৌঁছে দিতাম-

    وَ لَا تَكُنْ لِّلْخَآىِٕنِیْنَ خَصِیْمًا

    আর তুমি খেয়ানতকারীদের পক্ষ অবলম্বন করো না। -সূরা নিসা (৪) : ১০৫

    যদি উকিলরা এই বিধানটির উপর আমল করত তাহলে যেসব ক্ষেত্রে বাদি-বিবাদির এক পক্ষ নিশ্চিত জালিম, তার কি নিজের জন্য উকিল পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল?

    আমি একটা ইবাদত শুরু করলাম, কীভাবে করব? যে কাজ আমি করতে চাই, সে কাজের ক্ষেত্রে কী কী বিধান আছে, জীবনের কোন্ অবস্থায়  কী বিধান-  আরবীতে এটাকে বলে ‘ইলমুল হাল’, মানে নগদ অবস্থায় তোমার কী বিধান জানা দরকার; কী বিধান তোমার উপর আরোপিত হচ্ছে, সে বিধান সম্পর্কে জানা ফরযে আইন।

    নগদ ফরয। এটা ফরযে আইন ইলমের এক প্রকার। আরেক প্রকার যা এখনের বিষয় না, তখনের বিষয় না, সব সময়ের বিষয়। সেটা আস্তে আস্তে শিখে ফেলতে হবে। সেটা হল আকীদার বিষয়। এক নম্বরে আকীদা। এটা জানা ফরযে আইন। দ্বিতীয় নম্বর হল ফরযসমূহ; ইসলাম কী কী বিষয় ফরয করেছে। ফরযের তালিকা জানা থাকতে হবে। ইসলাম কী কী জিনিস হারাম করেছে, হারামের তালিকা জানতে হবে। তাহলে এক নম্বরে হল আকীদাতুল ইসলাম, যা মক্তবে পড়ে এসেছেন; ঈমানে মুজমাল-

    آمَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بأسمائه وَصِفَاتِه.

    আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম, আল্লাহ তাঁর নামসমূহ ও  গুণাবলীসহ যেভাবে আছেন। وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ أَحْكَامِه وَأَرْكَانِه এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম আমি মেনে নিলাম। এটা হল সংক্ষিপ্ত। আরেকটু বিস্তারিত হল ঈমানে মুফাসসাল-

    آمَنْتُ بِاللهِ، وملائكته، وَكُتُبِه، وَرَسُلِه، وَالْيَوْمِ الْاخِرِ، وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى، وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ.

    এগুলো ইসলামের আকীদা। আমরা চাই যে মক্তবে উস্তাদযী আমাকে যে আকীদার শুধু নামগুলো শিখিয়েছেন, ব্যস ঐটুকু নিয়েই কবরে যেতে। আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেশতার প্রতি ঈমান, কিতাবের প্রতি ঈমান এগুলো তো শুধু শিরোনাম। এগুলোর অর্থ কী? কী অর্থ আল্লাহর প্রতি ঈমানের? এই  যে বললাম كَمَا هُوَ بأسمائه وَصِفَاتِه ‘যেমন আল্লাহর নাম ও গুণাবলী’ সেভাবে আমি ঈমান আনলাম। কিন্তু সেই নাম ও গুণাবলী কী? মক্তবে তো তা বলা হয়নি। আর আপনি চাচ্ছেন এভাবেই কবরে চলে যেতে। এই আকীদার প্রত্যেকটি নামের অধীনে এর বিশ্লেষণ আছে। ঈমান বিল্লাহ কী? ১-২-৩-৪-৫ এগুলো সবকটা মিলে ঈমান বিল্লাহ। কুরআনের প্রতি ঈমান মানে কী? ১,২,৩,৪,৫ এই কতগুলো বিষয় নিয়ে কুআনের উপর ঈমান। বিস্তারিত আকীদা যদি অন্তরে থাকে তাহলে আল্লাহর প্রতি ঈমান হল, কুরআনের প্রতি ঈমান হল।  ভাই বলুন দেখি আল্লাহর প্রতি ঈমান মানে কী? তা তো জানি না। তো আকীদার শুধু নামগুলোই মুখস্থ করে কি কবরে যেতে চাই? কুরআন ও হাদীসে প্রতিটির যে বিশ্লেষণ আছে তা কি জানতে হবে না? এটা হল ‘আকীদাতুল ইসলাম’।

    ফরযে আইন ইলমের প্রথম বিষয় হল আকীদাতুল ইসলাম। দ্বিতীয় কথা ‘ফারায়েযুল ইসলাম’। কুরআন-হাদীসে আল্লাহ আমার উপর কী কী জিনিস ফরজ করেছেন, একজন মুসলিমের উপর কী কী জিনিস ফরয এগুলো জানতে হবে। তৃতীয়ত, ইসলাম তার অনুসারীদের উপর কী কী জিনিস হারাম করেছে? সগীরা গুনাহ, কবীরা গুনাহ সবই তো গুনাহ। হারাম, মাকরূহে তাহরীমী, মাকরূহে তানযীহী সবই তো বর্জনীয়। কিন্তু বর্জনীয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ কী? হারাম এবং মাকরূহে তাহরীমী। এগুলোর তালিকা আমার জানা থাকতে হবে না? তা হল- আকীদাতুল ইসলাম, ফারায়েযুল ইসলাম, মাহারিমুল ইসলাম এই বিষয়গুলো।

    আরেকটি শিরোনাম হচ্ছে ‘আদাবুল ইসলাম’-ইসলামের আদব। কোন্ ক্ষেত্রে কী আদব-কায়েদা ইসলাম জানিয়েছে এগুলো শিখে ফেলতে হবে। বলে, হুযুর আদব তো আর ফরয না। কোনো কোনো আদব আছে ফরযেরও দাদা। আদব পরিপন্থী কোনো কিছু করাকে কী বলে? বেয়াদবী বলে। সব বেয়াদবী কী জায়েয? কত বেয়াদবী আছে তো হারাম, কত বেয়াদবী আছে এর কারণে ঈমানই চলে যায়। তাহলে আদব শেখা কি মামুলী কথা, না গুরুত্বপূর্ণ কথা? ইসলামের আদবগুলো শিখতে হবে। কোন ক্ষেত্রে কী আদব শিখিয়েছে ইসলাম তা জানতে হবে। প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব আদব রক্ষা করা সব সময় জরুরি নয়। ফরয নয়। কিন্তু আদব জানা থাকা, ইসলামের আদব জানা থাকা ফরয। সব আদব এক মাপের নয়। কিছু আদব আছে ফরয, কিছু আদব আছে মুস্তাহাব। মুস্তাহাব যেটা সেটাতো আর ফরয নয়। কিন্তু আপনার জানা তো থাকতে হবে যে ঐ আদব ফরয আর এই আদব মুস্তাহাব। মুস্তাহাবটা দৈনিক আমল না করলে না করলাম। যেমন জামা গায়ে দেওয়ার সময় ডান হাত আগে ঢুকানো এটা মুস্তাহাব। ভুলে বাম হাত আগে ঢুকে গেছে এতে ফরয বা ওয়াজিব লংঘন হয়নি। কিন্তু মুস্তাহাব লংঘন হয়েছে। কিন্তু সওয়াব আছে না এতে? ইচ্ছাকৃত আদব পরিপন্থী কাজ করা কি ভালো? কিন্তু এটা মুস্তাহাব। আপনার জানা তো থাকতে হবে। আপনার জানা না থাকলে সব সময় তো উল্টা করবেন। মসজিদে ঢোকার সময় ডান পা আগে দেওয়া আদব এটা মুস্তাহাব। সুন্নত। ফরয ওয়াজিব নয় কিন্তু জানা তো থাকতে হবে। জানা না থাকলে দেখা যাবে বেশির ভাগই বাম পা আগে যায়। বের হওয়ার সময় ডান পা আগে বের হয়। এটা কি মুসলিমের জন্য ভালো, সেজন্য অনেকে ধারণা করে যে, এটা তো মুস্তাহাব, এটা তো নফল, না জানলে কী হবে? আরে মুস্তাহব ও নফলের ইলম অর্জন করাও কি শুধু মুস্তাহাবই, না একটি জরুরি কাজ?

    وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

    মেসি যাদু বনাম ফরাসি চমক- আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স টিকে থাকার লড়াই আজ
    ফ্রান্সের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সব ধরনের সম্পর্ক ভালো। একে অপরের সঙ্গে সব সময় সহযোগিতার হাত ধরে চলছে দুই দেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলে আজ এমন এক পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় বন্ধুত্বের কোনো মূল্য থাকবে না! রাশিয়ার কাজান স্টেডিয়ামের দুই গোলপোষ্টের মাঝে ১২০ গজে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ফুটবল লড়াই দুই দেশের শত বছরের পুরোন সম্পর্ক ভুলিয়ে রাখবে ৯০ থেকে ১২০ মিনিট পর্যন্ত। উভয় দল জানিয়ে দিয়েছে তারা ১২০ মিনিট পর্যন্ত খেলাটাকে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ কেউ কাউকে দেবে না। ৯০ নিমিটের আগেই নিশ্চিত করতে চায় কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার টিকিট।
    নকআউট পর্বের এই ম্যাচ উভয় দলের জন্যই হবে অগ্নি পরীক্ষা। মেসি যাদু না ফরাসি চমকে মুগ্ধ হবে সারাবিশ্ব-সেটাই এখন দেখার বিষয়। দুই দলের ফুটবল লড়াই উপভোগ করার জন্য বাংলাদেশের কোটি দর্শকও মুখিয়ে আছে। সমর্থকদের প্রত্যাশা-সি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স আজ ফরাসি ফুটবলের মোহনীয় সৌন্দর্য মেলে ধরবে। মেসি, মাচেরানো, ডি মারিয়াদের ঘায়েল করতে চমক দেখাবে মিশেল প্লাতিনি, জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরী সেমুয়েল, পগবা, গ্রিজম্যান, অলিভার, রাফায়েলরা। ফ্রান্সের আছে তারুণ্যের শক্তি, আছে স্পিড। গ্রুপে দুর্দান্ত লড়াই করে ফ্রান্স খুব ভালো মুডে আছে। কোনো খেলায় হারেনি। অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটা মাত্র গোল হজম করলেও সেটি পেনাল্টি  থেকে এসেছে।
    অন্যদিকে আর্জেন্টিনার অভ্যন্তরে যতই কোন্দল থাকুক তারা যে কোন সময় জ্বলে উঠতে পারে, চোখ রাঙ্গানি দিতে পারে! ফ্রান্স সেই ছবিটা দেখেছে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। কিভাবে ছোঁ মেরে খেলাটা নিয়ে গেল মেসিরা। ইউরোপীয়ান আর লাতিন আমেরিকার ফুটবলে পার্থক্য থাকলেও মেসিদের দলে যারা খেলেন তাদের সবাই প্রায় বছরজুড়ে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে খেলেন। তাই ইউরোপের পাওয়ার ফুটবলকে ঘায়েল করার মন্ত্রটা তাদের জানা থাকারই কথা। মেসি তো দুই দিন আগেই জানিয়েছেন ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ‘ফাইনাল ম্যাচ’ খেলবে। এ-ও বলেছেন দুই দলের ফিফটি ফিফটি চান্স থাকবে। মেসি যাই বলুক চাপে থাকবে তার দল।
    রাশিয়ায় ভলগা ও কাজানাক নদীর তীর ঘেষে কাজান শহর। সবুজ নির্সগ ঘেরা এর স্টেডিয়াম। মস্কো কিংবা সেন্ট পিটারসবার্গে যেমন ঠান্ডা ছিল কাজানে ঠিক তার উল্টো, খুবই গরম। কাজান শহরে সাড়ে তিন লাখ মুসলিম বসবাস করেন। আধুনিক এই শহরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবল লড়াই দেখার জন্য দর্শকের ভিড় বাড়ছে। কাজান জয় করতে ফ্রান্সের বিপক্ষে মেসিরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে গতকাল দুপুরেই পৌঁছেছে। দেশকে কিছু দিতে হবে। ট্রফি ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না তারা।
    ৭৮ ও ৮৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং ৯৮ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ১৯৩০ ও ১৯৭৮ সালে দুই বার বিশ্বকাপ ফুটবলে মুখোমুখি হয়েছিল। দুইবারই আর্জেন্টিনার জয় হয়েছে। আর্জেন্টিনার কোচ সাম্পাওলি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পাওয়া জয়ের পর সেই পুরোন একাদশটাই ধরে রাখতে চান। তার হিসাবে কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ১৪টি ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা। একাদশটাকে সেভাবেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে। ২৩ ফুটবলারের মধ্যে ১৯ জনকে খেলানো হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার সবেচেয়ে বড় দুর্ভাবনা হচ্ছে তাদের দলে হলুদ কার্ডের সংখ্যাটা। মেসি-মাচেরানোসহ ৬ জন হলুদ কার্ড দেখেছেন। আজকে ফ্রান্সের বিপক্ষে কেউ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেলেই পরের খেলায় (পর্তুগাল অথবা উরুগুয়ের সঙ্গে) সে আর নামতে পারবে না।

    ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ড পেল সুইডেনকে

    শেষ ষোলোতে প্রতিপক্ষ হিসেবে মেক্সিকোকে পেল ব্রাজিল। অপরদিকে এই গ্রুপ থেকে নকআউটপর্বে যাওয়া অপর দল সুইজারল্যান্ডকে খেলতে হবে সুইডেনের বিপক্ষে।
    বুধবার রাতে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে সাত পয়েন্ট নিয়ে ই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোতে পা রেখেছে পাঁচবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। কোস্টারিকার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়েছে সুইজারল্যান্ড। এখন এফ গ্রুপ থেকে নকআউটপর্বে যাওয়া দুটি দলকে মোকাবেলা করতে হবে এই দুটি দলের।
    বুধবার রাতে এর আগেই কোরিয়ার কাছে হেরে এফ গ্রুপ থেকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায় হয়ে গেছে। দিনের অপর ম্যাচে মেক্সিকোকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে সুইডেন। এই ম্যাচ হেরেও সুইডেনের সঙ্গী হিসেবে মেক্সিকো গিয়েছে নকআউট পর্বে। দু’দলই সমান ছয় পয়েন্ট করে অর্জন করলেও মেক্সিকো গোল ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে। তাই সুইডেন হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং মেক্সিকো রানার্সআপ।
    IMG0
    সেই হিসেবে ই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে মোকাবেলা করতে হবে এফ গ্রুপ রানার্সআপ মেক্সিকোর। অপরদিকে এফ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন সুইডেন খেলবে ই গ্রুপ রানার্সআপ সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে।

    জাহাজ কর্মচারীকে বিয়ে করতে পরিবার ছাড়ছেন জাপানের রাজকুমারী

    একজন জাহাজের কর্মচারীকে বিয়ে করতে রাজপরিবার ত্যাগ করছেন জাপানের রাজকুমারী আয়াকো। গত দুই বছরে দুইজন রাজকুমারী একই ঘোষণা দিলেন যারা সাধারণ নাগরিককে বিয়ে করছেন। খবর সিএনএনের
    জাপানের সম্রাট আকিহিতোর ভাতিজি এবং প্রয়াত প্রিন্স তাকামোদের তৃতীয় কন্যা আয়াকো গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, জাহাজ কোম্পানি এনওয়াইকে লাইন এর কর্মচারী ৩২ বছর বয়সী কেই মোরিয়াকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন তিনি। এক বছর আগে তাদের পরিচয় হয়। আগামী ১২ আগস্ট তাদের দুইজনের মধ্যে আংটি বদল হবে। ২৯ অক্টোবর টোকিওর একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিয়ে হবে।
    মোরিয়ার সঙ্গে আয়াকোর পরিচয় হয় মা প্রিন্সেস তাকামোদের মাধ্যমে। একটি সমাজ কল্যাণ সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে মোরিয়ার মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় প্রিন্সেস তাকামোদের। এরপর তাদের পরিবারের সঙ্গে রাজপরিবারের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
    এর আগে গত মে মাসে আরেক রাজকুমারী মাকো একই সিদ্ধান্ত নেন। রাজপরিবারের বিধান অনুযায়ী, নাগরিকদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করলে রাজপরিবারের উত্তরাধিকার ত্যাগ করতে হয়।

    সামুদ্রিক দূষণ মোকাবেলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে জাপান

    জাপানের চীফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সু’গা বলেছেন তার দেশ প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্যের ফলে সৃষ্ট সামুদ্রিক দূষণ মোকাবেলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

    মিঃ সু’গা সোমবার জাপান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবেশ মন্ত্রীবর্গের বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান।

    মন্ত্রীবর্গ চীনের সুচৌ শহরে রোববার বৈঠকে মিলিত হন এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিকসহ সামুদ্রিক আবর্জনার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মোকাবেলায় সহযোগিতা করার ব্যাপারে একমত হন।

    মিঃ সুগা চলতি মাসের শুরুতে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবের করা একটি মন্তব্যের উদ্ধৃতি দেন।

    মিঃ আবে বলেন, বিশাল পরিমাণের প্লাস্টিক বর্জ্য জাপানের সমুদ্র উপকূলে ভেসে আসছে।

    মিঃ আবে আরো বলেন, একটি দেশ একক প্রচেষ্টা চালিয়ে কিংবা সব শিল্পোন্নত দেশ একত্রে কাজ করেও সমুদ্র দূষণ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তিনি বলেন, এই সমস্যাটিকে মোকাবেলা করতে হলে উন্নয়নশীল দেশসহ সব দেশের জন্য একে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

    মিঃ সু’গা বলেন, জাপানের সরকার পুনর্ব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছে।

    তিনি বলেন, আগামী বছর জাপানে অনুষ্ঠেয় ২০ জাতি গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলনের আগে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কর্মকৌশল ঠিক করবে সরকার।

    আর্জেন্টিনার স্বপ্ন জিয়নের ম্যাচ

    হতাশা ভুলে স্বরূপে ফেরার রসদটা কি পেয়ে গেলেন লিওনেল মেসি?
    রোববার ছিল বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় তারকার ৩১তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে সতীর্থ-ভক্তদের অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হয়েছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক; বন্ধু, সতীর্থদের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রেরণাদায়ী বার্তা। তাতে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ভরাডুবির হতাশা কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিশ্চয় ভুলে থাকতে পেরেছেন ফুটবল জাদুকর। এবার নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বিশ্ববাসীর কাছে আবারো নিজেকে মেলে ধরার পালা।
    বিশ্বকাপের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে সেন্ট পিটার্সবার্গে আজ জিততেই হবে মেসিদের। শুধু জিতলেই অবশ্য হিসাবটা মিলে যাচ্ছে না, তাকিয়ে থাকতে হবে একই সময়ে রস্তভে অনুষ্ঠেয় আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিকে। সেখানে আইসল্যান্ড জয়হীন থাকলেই মিলবে আর্জেন্টিনার শেষ ষোলর টিকিট। আর আইসল্যান্ড জিতে গেলে চলে আসবে গোল ব্যবধানের হিসাব, যেখানে এক গোলে পিছিয়ে আর্জেন্টিনা। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে তাই বড় জয়ই কাম্য হোর্হে সাম্পাওলির শিষ্যদের।
    ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লজ্জাজনক ভরাডুবির পর মেসিকে কম সমালোচনা শুনতে হয়নি। তবে ফুটবল বোদ্ধারা কিন্তু আঙ্গুল তুলেছেন মেসি নয়, দলের কোচ সাম্পাওলির দিকে। ক্রোয়েট ম্যাচে তার পরিকল্পনা সমালোচকদের তোপের মুখে পড়ে। ফুটবলের চিরায়ত নিয়মই হলো দলের সেরা খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে এবং সে যেভাবে খেলতে পছন্দ করে সেভাবে পরিকল্পনা সাজানো। কিন্তু সাম্পাওলি হেঁটেছেন পুরোপুরি উল্টো পথে। যে কারণে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পাওয়াই যায়নি মেসিকে। পক্ষান্তরে ৩-৪-৩ ফর্ম্যাশনে দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে আর্জেন্টিনার জালে তিনবার বল পাঠান মড্রিচ-রাকিটিচরা। এছাড়া সাম্পাওলির দল নির্বাচনও বার বার হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
    রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর সাম্পাওলিকে এত বেশি সমালোচনা শুনতে হয়েছে যে তিনি সেচ্ছায় দায়ীত্ব থেকে সড়ে দাঁড়াতে চান বলেও খবর প্রকাশিত হয়। দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গেও নাকি তার সম্পর্ক ভালো নয়। তবে এসব খবর উড়িয়ে দিয়েছেন দলের সিনিয়র খেলোয়াড় হাভিয়ের মাচেরানো। সাম্পাওলির সঙ্গে দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্ক আগের মত বলেই জানান তিনি। নাইজেরিয়া ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেছেন, ‘সাম্পাওলির সঙ্গে সম্পর্কটা স্বাভাবিকই আছে, তবে আমরা যদি কোন ব্যাপারে অস্বস্তি বোধ করলে তাকে জানাই। এটা যেসব খেলোয়াড় বেঞ্চে থাকে এবং যারা মাঠে থাকে তারা সবাই করে।’ মাচেরানো আরো বলেন, ‘আমরা জানি পরিস্তিতিটা জটিল। আমাদের মতামত প্রকাশে এবং দল যাতে ভালো অবস্থায় মাঠে নামে এজন্য সম্ভব্য সব কিছু করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
    মাচেরানোর এমন বার্তাই খুশি হতে পারেন ভক্ত-সমর্থকরা। আর্জেন্টাইন সমর্থকরা খুশি হতে পারেন আরো একটি খবরে। এই ম্যাচে থাকছেন না আগের ম্যাচের অন্যতম খলনায়ক বারায়েরো। তার পরিবর্তে দেখা যাবে ফ্রাঙ্কো আরমানির। বিশ্বকাপ দিয়ে আর্জেন্টিনা দলে অভিষেক হতে যাচ্ছে রিভার প্লেটের ৩১ বছর বয়সী গোলরক্ষকের। এছাড়া একাদশে ফিরতে যাচ্ছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও মার্কোস রোহো। তবে বেঞ্চে বসে থাকতে হচ্ছে সার্জিও আগুয়েরো ও ক্রিশ্চিয়ান পাভোনকে।
    আগের ম্যাচের ছক বদলে মেসির প্রিয় ৪-৩-৩ ফর্ম্যাশনে খেলা হবে বলেও শোনা যাচ্ছে। রোহো ও ওটামেন্ডির সঙ্গে রক্ষণের দায়ীত্বে থাকবেন ত্যাগলিয়াফিকো ও সালভিও। মাঝমাঠ সামলাবেন বানেগা, মাচেরানো ও পেরেজ। বাম উইংয়ের দায়ীত্ব থাকবে ডি মারিয়ার কাঁধে। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শানাবেন মেসি। বল জালে পৌঁছে দেয়ার দায়ীত্ব থাকবে হিগুয়েইনের উপর। তবে ভালো কিছুর জণ্য যে আর্জেন্টিনাকে দল হিসেবে খেলতে হবে সেটা আরো একবার মনে করিযে দেন মাচেরানো, ‘প্রতিপক্ষ আমাদের ভোগাতে পারে, কিন্তু আমাদের দলীয়ভাবে লড়তে হবে।’
    এমন ম্যাচে দলের প্রাণভোমরা মেসিকেই যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে তা হয়ত না বললেও চলে। সকল সমালোচনা বুক পেতে নিয়ে নিজেকে জানান দিতে প্রস্তুত মেসিও। দুই বছর আগের সেই অবসরের ভাবনা পেছনে ফেলে জন্মদিনে দৃড়প্রতিজ্ঞা করেছেনÑবিশ্বকাপ না জিতে তিনি অবসরে যাবেন না। এজন্য বিশেষ দিনে বাড়তি প্রেরণাও পেয়েছেন বার্সা তারকা সাবেক সতীর্থ-বন্ধুদের কাছ থেকে। এই তালিকায় আছেন বিশ্বকাপ নিয়েই ব্যস্ত থাকা নেইমার-সুয়ারেজরা। সবচেয়ে বেশি প্রেরণাদায়ী বার্তা পেয়েছেন সাবেক বার্সা সতীর্থ কার্লোস পুয়েলের কাছ থেকে। সাবেক স্প্যানিশ তারকা টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন লিও! কখনোই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ো না, তোমার অর্জন করা হাজারো সাফল্যের সঙ্গে এই বিশ্বকাপ জয়ের সাফল্যটাও তোমার প্রাপ্য! আলিঙ্গন তোমাকে, দিনটা উপভোগ করো।’
    এতো এতো অভিনন্দন বার্তা মেসিকে প্রেরণা না জুগিয়ে পারেই না। প্রয়োজন কেবল আবারো বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে মেলে ধরার।
    তবে মেসিকে একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি কিন্তু দিয়ে রেখেছেন নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা আহমেদ মুসা। তার দৃষ্টিনন্দন জোড়া গোলেই আইসল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলর স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে আফ্রিকান সুপার ঈগলরা। ২৫ বছর বয়সী লেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘যখনই আমি আর্জেন্টিনা অথবা মেসির বিপক্ষে খেলি তখনই গোল করি। চার বছর আগে আমি জোড়া গোল করেছিলাম। যখন আমি লেস্টার সিটিতে যাই তখনও বার্সেলোনার (মেসির) বিপক্ষে দুই গোল করি। তাই আমি আশা করছি পরবর্তি ম্যাচেও এটা ঘটবে। সম্ভবত আমি আবারো জোড়া গোল করতে যাচ্ছি।’
    বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত চারবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল; চারবারই জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা। সর্বশেষ সাক্ষাতটা ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ম্যাচটি ৩-২ গোলে জেতে আর্জেন্টিনা। মেসি ও মুসা দুইজনই করেন দুটি করে গোল। মার্কোস রোহোর গোলে জয় নিশ্চিত করে সেবারের ফাইনালিস্টরা।

    এক গোলে দুই রেকর্ড গড়লেন নেইমার

    বাজে ধরণের ইনজুরি কাটিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে স্বরূপে দেখা দিতে পাচ্ছিলেন না ব্রাজিল সুপারস্টার নেইমার। অবশেষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে গতকাল শুক্রবার গোলের দেখা পেলেন তিনি। কোস্টারিকার বিপক্ষে ইনজুরি টাইমে কুতিনহোর গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জয়সূচক গোলটি করেন এই ২৬ বছর বয়সী তারকা। এই এক গোলেই তিনি দুটি দারুণ রেকর্ড গড়ে ফেললেন।

    ‘ই’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হেক্সা মিশনে থাকা ব্রাজিলকে ৯০ মিনিট আটকে রেখেছিল কোস্টারিকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেদের রক্ষণদুর্গ অটুট রাখতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৯১ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোল করেন ফিলিপ কুতিনহো। টানা দুই ম্যাচে গোল করলেন এই বার্সা তারকা। এরপর ম্যাচের ৯৭ মিনিটে গোল করেছেন নেইমার। ওই গোলে একটি ব্যক্তিগত, অন্যটি ফুটবল বিশ্বকাপের রেকর্ড গড়ে ফেললেন বিশ্বের সবচেয়ে দামী এই ফুটবলার।

    নেইমার ইনজুরি থেকে ফিরে ৪ ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন তার তিনটিতে। প্রীতিম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করে নেইমার রোমারিও থেকে এক গোল পেছনে ছিলেন। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে গোল করে উঠে যান রোমারিওর সমানে। আর রাশিয়া বিশ্বকাপে এসে নিজের প্রথম গোলে ব্রাজিলের হয়ে রোমারিওর ৫৫ গোলের রেকর্ড ভেঙে ৫৬ গোল করে ফেললেন নেইমার। ব্রাজিল তারকাদের মধ্যে তার সামনে এখন দুই সাবেক রোনালদো (৬২) এবং পেলে (৭৭)।

    এছাড়া নেইমার কোস্টারিকার বিপক্ষে ৯৭ মিনিটে যে গোলটি করেছেন তাতে হয়েছে বিশ্বকাপের এক রেকর্ড। সেকেন্ডের হিসেব ধরলে নেইমারের গোলটি ছিল ৯৬ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে হয়েছে। বিশ্বকাপে ১৯৬৬ সালের পর ৯০ মিনিটের ম্যাচে এর থেকে বেশি সময়ে গোল হয়নি আর।

    এই জয় না পেলে বিশ্বকাপে টানা ৪ ম্যাচে জয়হীন থাকার রেকর্ড হতো ব্রাজিলের, ছুঁয়ে ফেলত নিজেদের ইতিহাসে বিশ্বকাপে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়হীন থাকার রেকর্ড। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপ মিলিয়ে এর আগে ৪ ম্যাচ জয় বঞ্চিত ছিল ব্রাজিল।

    এ যেন অচেনা আর্জেন্টিনা

    ইমামুল হাবীব বাপ্পি : পুরো আর্জেন্টিনা তো বটেই, এমনকি বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকদের প্রতিনিধি হিসেবে একবুক স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ার পা রাখেন লিওনেল মেসি। লক্ষ্য বিশ্বকাপ অতৃপ্তি ঘোঁচানো। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খায় সেই স্বপ্ন। নিঝনি নভগোরোদে এসে পড়ল তা মুখ থুবড়ে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের ভাগ্য এখন আর নিজেদের হাতে নেই; এখন তা নির্ভর করছে অনেক ‘যদি-কিন্তু’র উপর।
    কিন্তু কেন এমন হলো? আর্জেন্টিনা কি গ্রæপ পর্বেই বাদ পড়ার মত দল? যে দলে রয়েছেন মেসি-আগুয়েরো-ডি মারিয়া-দিবালার মত বিশ্বের সেরা সব তারকরা সেই দলে কি এমন সমস্যা ছিল যে খাঁদের কিনারে গিয়ে ঠেকেছে? আসরের দুই ম্যাচেই দলের প্রধান তারকা মেসি ছিলেন নিষ্প্রভ। কিন্তু কেন? এর উত্তর একটাইÑ হোর্হে সাম্পাওলি।
    চিলি ও স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার হয়ে সাফল্যই আর্জেন্টিনার কোচ হতে সহায়তা করেছিল সাম্পাওলিকে। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ও বিশ্বের নামজাদা সব খেলোয়াড় হাতে পেয়েও দলটাকে গুছিয়ে নিতে পারেননি ৫৮ বছর বয়সী কোচ। খেলোয়াড়দের গাঁথতে পারেননি এক সুঁতোয়। বিশ্বকাপের মত আসরে এসেও তাকে ভাবতে হয় কোন ফর্ম্যাটে তিনি দলকে খেলাবেন!
    তার পরিকল্পনারই অংশ হিসেবেই পরশু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লুকাস বিলিয়া ও মার্কোস রোহোদের মত পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের একাদশে জায়গা হয়নি। বনেগা-লো সেলসোদের মত মিডফিল্ডারকেও পুরো সময় বসিয়ে রাখেন বেঞ্চে। এক কথায় যে খেলোয়াড় যেখানে খেলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তাদেরকে সেখানে খেলানো হয়নি। এছাড়া ফুটবলের প্রথা মেনে দলের তারকা খেলোয়াড়কে ঘিরেও রচিত হয়নি ম্যাচের পরিকল্পনা। তার খেসারত সাম্পাওলিকে দিতে হয়েছে ক্রেয়োশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে নাকানিচুবানি খেয়ে।
    আর্জেন্টিনা দলটি বড় ধাক্কা খায় তাদের এক নম্বর গোলকিপার সার্জিও রোমেরোকে হারিয়ে (ইনজুরির কারণে)। এদিন একাদশে ছিলেন উইয়ি কাবায়েরোকে। চেলসি বদলি গোলকিপার একসময় ভালো খেলোয়াড় ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই, বিশেষ করে যখন তিনি মালাগাতে খেলতেন। কিন্তু ৩৬ বছর বয়সে এসে তিনি যে কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছেন তার প্রমান তিনি দিয়েছেন সাম্পাওলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে।
    এদিন ৩-৪-৩ ফর্ম্যাশনে খেলেছে আর্জেন্টিনা। আধুনিক ফুটবলে যে কৌশল বড়ই অকেজো। কোচের এই কৌশলে যে খেলোয়াড়রা খুশি নন তা বোঝা গিয়েছিল ম্যাচ শুরুর আগে দলীয় সংগীতের সময়। এসময় বার বার ক্যামেরা খুঁজে নিচ্ছিল মেসির চিন্তিত মুখকে। ম্যাচ শেষেও কারো সঙ্গে মোলাকাত না করে একাকী সবার আগে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন ৩০ বছর বয়সী।
    মাঠেও এদিন মেসি ছিলেন একা। আর্জেন্টিনার কোন মিডফিল্ডারকে এদিন মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে হয়েছে তিনজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলছে আর্জেন্টিনা। শুনতে অবাক মনে হলেও প্রথমার্ধে মাঝমাঠ থেকে মেসির কাছে বল দেওয়া হয়েছে মাত্র দুইবার! ৬০০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে মেসি কখনো পড়েছেন বলে মনে হয় না। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক যা কয়েকবার বল পেয়েছেন সেটাও ক্রোয়েটরা সামলে নিয়েছে শক্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই। মাঝমাঠ থেকে বলের যোগান না পেলে কিভাবে আক্রমণে যাবেন মেসি? এই সহজ হিসাবটা সাম্পাওলি কেন মেলাতে পারেননি সেটা বড় একটা বিষ্ময় বটে।
    ম্যাচ শেষে বিবিসি ফুটবল বিশ্লেষণ কক্ষে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেসিরই একসময়ের ক্লাব সতীর্থ ও স্পেন মিডফিল্ডার সেস ফ্যাব্রিগাস। আর্জেন্টিনাকে তিনি ‘ভগ্ন দল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘মনে হলো তারা একে অন্যের জন্যে নয়, বিপক্ষে খেলছে।’ চেলসি তারকা বলেন, ‘এটা মেসির জন্য কঠিন। তার পিছনে তেমন কোন খেলোয়াড়ই ছিল না। সত্যিই সে এভার বনেগা অথবা গিওভানি লো সেলসোর অভাব বোধ করেছে।’ ফ্যাব্রিগ্যাস বলেন, ‘তার (মেসির) এমন কারো দরকার ছিল যে তাকে একটু হলেও সহায়তা করবে, খেলাটা গড়ে দেবে। আপনি সব সময়ই চাইবেন যত বেশি সম্ভব আপনার সেরা খেলোয়াড়কে বলের যোগান দিতে।’
    কিন্তু বাস্তবে মেসি কাল বলে পাঁ ছোঁয়াতে পেরেছেন মাত্র ৪৯বার! স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা আগুয়েরো ৫৪ মিনিট মাঠে থেকে বলে পা লাগাতে পারেন মাত্র ১৬বার! যে কারো কাছে যা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হওয়ারই কথা। পরিসংখ্যানটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। কৌশলের অংশ হিসেবে আক্রমণের ডান প্রান্তে ছিলেন মেসি, বাঁ প্রান্তে মেজা, মাঝে আগুয়েরো। নিয়ম মেনে মেসির দিক থেকেই বার বার আক্রমণে উঠা উচিত ছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু সাম্পাওলির কৌশল ছিল ভিন্ন। বার বার তাদেরকে মাঠের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করতে দেখা গেছে। যে কারণে মেসি ডান প্রান্তে শুধু হেটেই বেড়িয়েছেন বলের আশায়, কিন্তু পাননি। সাম্পাওলির পরিকল্পনা ছিল মেসিকে সামলাতেই ব্যস্ত থাকবে ক্রোয়েট রক্ষণ, সেই ফাঁকে তারা বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করবে। আইসল্যান্ড ম্যাচের পরে তিনি এমনটা জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনাটা যে ছিল একেবারেই যাচ্ছেতাই তা না বললেও চলে।
    এদিকে রক্ষণও ছিল ফাঁকা নড়বড়ে। কোচের পরিকল্পনায় ছিলেন তিনজন সেন্টারব্যাক। অথচ সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলতে অভ্যস্ত কেবল অটামেন্ডি। তাগিøয়াফিকো ও মার্কেদোরা হলেন ফুলব্যাক। ফুলব্যাক হয়ে সেন্টারব্যাকের কাজ তারা কিভাবে সামলাবেন তার চিন্তা কি করেননি সাম্পাওলি? যে কারণে বার বার তাদের রক্ষণ ফাঁকা হয়েছে। ফুলব্যাকের কাজই তো একটু উঠে গিয়ে আক্রমণে সহায়তা করা। মানজুকিচের মিস কিংবা ম্যাচের গোল তিনটার দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন কতটা অরক্ষিথ ছিল তাদের রক্ষণ। লুকা মড্রিচ ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছেন আয়েশি ভঙ্গিমায় ইচ্ছামত জায়গা তৈরী করে নিয়ে। রাকিটিচের সামনে তো গোলকিপারও ছিল না। আর প্রথম গোলটি তো ‘মিসটেক অব ফুটবল বিশ্বকাপ’ বললেও ভুল হবে না। এমনকি ক্রোয়েশিয়া আরেকটু আক্রমনাত্মক মানসিকতা নিয়ে খেললে গোলের সংখ্যা বাড়াতেও পারত।
    সাবেক আর্জেন্টাইন রাইট ব্যাক জাবালেতার তো নিজ দলের এমন পারফর্মান্স মানতেই পারছেন না, ‘এমন পারফর্ম্যান্স আমি মানতেই পারছি না। দলকে খুব অসহায় দেখাচ্ছিল। তারা এদিন কিছুই করতে পারেনি।’ আর সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালেন শিয়েরার বলেন, ‘মাঠে আর্জেন্টিনার কোন পরিকল্পনাই ছিল না।’
    এমন ভুলের পর সাম্পাওলির সমালোচনার মুখে পড়াটাই ছিল স্বাভাবিক। দেশটির গণমাধ্যম তো তাকে ধুয়ে দিচ্ছে। দলে মেসির মত তারকাকে কাজে রাগাতে না পারার কারণেও তাকে শুনতে হচ্ছে নানান সমালোচনা। অথচ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় শঙ্কায় পড়ার পর উল্টো খেলোয়াড়দের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন সাম্পাওলি!
    ম্যাচ পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু এই পরাজয় আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি পরিষ্কারভাবে খেলাটা পড়তে পারিনি। আসলে সব কিছুই হয়েছে দল ও দলের খেলোয়াড়দের দ্বারাই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোনো পরিকল্পনাই কাজ করেনি।’ তবে তিনি মেসিকে রেখেছেন আলাদা পাত্রে। তার মতে, দলের বাকিদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য না পাওয়াতেই মেসি প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাম্পাওলি বলেন, ‘বাস্তবতা হলোÑ লিও অকেজো ছিলো, কারণ তার সঙ্গে দলের অন্যদের যেভাবে পারফর্ম করা উচিত সেভাবে তা হয়নি।’
    কোচের এ বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলটির ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তার (সাম্পাওলি) যা ইচ্ছা বলতে দিন!’ চিন্তিত বদনে ৩০ বছর বয়সী বলেন, ‘আমার রাগ ও দুঃখ হচ্ছে। অবশ্য এখনো আমাদের সুযোগ আছে।’ এরপর কোচের প্রসঙ্গে আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি আগুয়েরো।
    একইসঙ্গে ব্যর্থতার দায় নিজের বলেও স্বীকার করেছেন সাম্পাওলি, ‘এটা আংশিক দায়িত্ব নয়, পুরো দায় কোচের। গোলকিপার উইলি কাবায়েরোর সমর্থনেও কথা বলেছেন সাম্পাওয়ালি। তিনি বলেন, ‘তাকে (গোলরক্ষক) দোষ দিয়ে লাভ নেই। যদি আমি ভিন্ন কিছুর পরিকল্পনা করতাম, তবে ভিন্ন কিছুই হতো। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তেমন কিছু করার আগেই গোল খেয়ে দল মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমাদের মূল চালিকা শক্তি লিও। কিন্তু দল তার কাছে বল পৌঁছাতে পারেনি। বলা যায় প্রতিপক্ষ তার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। তিনি বলেন, ‘এটা (পরাজয়) দেশ ও দলের জন্য লজ্জা ও কষ্টের। এটা আর্জেন্টিনার মানুষ আশা করেনি। দেশের হয়ে আমি এটা অনেক বছর থেকেই অনুভব করছি, আবারও তেমন কিছুই হতে যাচ্ছে। এটা আসলেই কষ্ট দেয়। দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারি না। আর্জেন্টিনার ভক্তদের খুশি করার পরিকল্পনা নিয়েই রাশিয়ায় এসেছিলাম। আমি আমার সামর্থ্যরে সবটুকুই দিয়েছি।’
    সাম্পাওলি অবশ্য নাইজেরিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে কোচ হিসেবে থাকবেন কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ম্যাচ শেষে নাকি দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা সাম্পাওলির অধীনে আর খেলতে চান না। অন্যথায় তারা অবসরে চলে যাবে। টুইটারে জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকজন ফুটবল সাংবাদিক।

    কম্পিউটার গেম মানসিক রোগ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

    কম্পিউটারে গেম খেলার প্রতি নেশাকে একটি মানসিক রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১১তম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডিতে এটিকে ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত খসড়া দলিলে এই গেমিং আসক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক ধরণের আচরণ হিসেবে, যা জীবনের আর সবকিছুর আকর্ষণ থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে নেয়। বিশ্বের কিছু দেশে গেমিং আসক্তিকে ইতোমধ্যে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
    যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশে তো ইতোমধ্যে এর চিকিত্সার জন্য প্রাইভেট এডিকশন ক্লিনিক পর্যন্ত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি তৈরি করেছিল। নতুন গাইডলাইনটি প্রকাশিত হবে এ বছরই।-বিবিসি।

    ইউরোপের রাজা রোনালদো

    আগের ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে হাঙ্গেরির ফেরেঙ্ক পুসকাসকে স্পর্শ করেছিলেন। বুধবার মরোক্কোর বিপক্ষে ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই গোল করে পুসকাসকে ছাড়িয়ে বনে যান ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিনি? কে আবারÑ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
    এই একটি গোলই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। অথচ পুরো ম্যাচে পর্তুগালকে ব্যস্ত থাকতে হয় নিজেদের রক্ষণ সামলাতেই। চলতি আসরে তার চতুর্থ ও ম্যাচের একমাত্র গোলে মরোক্কোকে বিদায় করে দিয়েছে রোনালদোর পর্তুগাল। ‘বি’ গ্রæপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইরানের কাছে একই ব্যবধানে পরাজিত হয় মরোক্কো।
    দেশের হয়ে ১৫২ ম্যাচে এটি ছিল রোনালদোর ৮৫তম গোল। একই সঙ্গে বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনার করা সর্বোচ্চ (৬) গোলের রেকর্ডেও ভাগ বসালেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের সামনে আছেন কেবল ইরানের আলি দাই। দেশের হয়ে ১৪৯ ম্যাচে অংশ নিয়ে রেকর্ড ১০৯ গোল করেন দাই। হাঙ্গেরি ও স্পেনের হয়ে ৮৫ ম্যাচে ৮৪ গোল করেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ স্ট্রাইকার পুসকাস।
    মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বলের দখল, সুযোগ তৈরী এমনকি লক্ষ্যে শটও বেশি ছিল মরোক্কোর। কিন্তু বাঁচা-মরার লড়াইয়ে কাঙ্খিত গোলের দেখাই পায়নি আফ্রিকার দলটি। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে হেড থেকে করা রোনালদোর ঐ একমাত্র গোলই ছিল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক। এরপর আর পাওয়াই যায়নি রোনালদোকে। বাকি ৮৬ মিনিটে মরোক্কোর পোস্টে মাত্র একবারই শট নিতে পারে ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। তবে আক্রমণ শানাতে না পারলেও মরোক্কোর মুহুর্মুহূ আক্রমণ ঠেকানোর কৃতিত্ব ফার্নান্ডো সান্তোসের শিষ্যদের দিতেই হয়।
    এর আগে দু’দলের একমাত্র দেখায় ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ৩-১ গোলে হেরেছিল পর্তুগাল। এই জয় তাই রোনালদের প্রতিশোধও বলা যেতে পারে। হাফ ছেড়ে বাঁচা এই জয়ে ভালোভাবে আসরে টিকিয়ে পর্তুগাল। গ্রæপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্পেনের সঙ্গে ৩-৩ ড্র করে তারা।
    ম্যাচের শুরুটা দারুণ ছিল পর্তুগিজদের। চতুর্থ মিনিটে জোয়াও মৌতিনিওর কর্নার নাগালে পেতে যখন ডি বক্সে সবাই লাফাচ্ছিল, ঠিক তখন সুযোগ সন্ধানী রোনালদো নীচু হয়ে বলের নাগাল নিয়ে দারুণ হেডে তা জালে পাঠিয়ে দেন। চলতি আসরে এটি তার চতুর্থ গোল। রাশিয়ার ড্যানিশ চেরিশেভকে (৩) পেছনে ফেলে এককভাবে এবারের আসরের গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে উঠে এলেন ৩৩ বছর বসয়ী স্ট্রাইকার।
    এর খানিক পর আরো একটি সুযোগ পেয়েছিলেন রিয়াল তারকা। কিন্তু তার নীচু শট দ্বিতীয় বার ঘেঁসে বেরিয়ে যায়। এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় মরোক্কো। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরী করে তারা। কিন্তু আক্রমণের শেষটা ভালো ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দারুণ দক্ষতায় ইউনেস বেলহান্দার হেড ফিরিয়ে দেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক রুই পাত্রিসিও। এরপরও বিচ্ছিন্ন বেশ কয়েক সুযোগ তৈরী করে তারা। কিন্তু করলে কি হবে, কাঙ্খিত সেই গোলের দেখাই যে পায়নি তারা। ম্যাচ শেষে মরোক্কো কোচ হার্ভে রেনার্ড বলেন, ‘২০ বছর পর আমরা বিশ্বকাপে ফিরেছি এবং দেখিয়েছি আমরা ফুটবল খেলতে পারি।’
    রোনালদো অবশ্য ভালো খেলা নয়, গোল পেয়ে ও দলের জয়েই খুশি, ‘আমি খুশি এই কারণে যে আমি গোল করেছি। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমরা ম্যাচটি জিতেছি। সামনে এগিয়ে যেতে আমাদের ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করতে হবে।’
    তবে জয় পেলেও সান্তোসকে খুব বেশি সন্তুষ্ট মনে হলো না, ‘এটা বিশ্বকাপ। প্রতিটা দলই শক্ত, যেমনটা ছিল মরোক্কো। তবে আমাদের আরো জেগে উঠতে হবে। আমরা ভালো রক্ষণ সামলেছি, ভালো খেলেছি, তবে আমাদের আরো ভালো হওয়া দরকার।’
    আগামী সোমবার ‘বি’ গ্রæপে ইরানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে পর্তুগাল। একই দিন স্পেনের প্রতিপক্ষ মরোক্কো।
    পর্তুগাল ১ : ০ মরক্কো

    ম্যারাডোনার রেকর্ডে ভাগ বসালেন রোনালদো

    স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর মরক্কোর বিপক্ষেও গোল পেয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আর এই গোলের সুবাদে ছুঁয়ে ফেললেন কিংবদন্তী দিয়েগো ম্যারাডোনার রেকর্ড। অধিনায়ক হিসেবে ছয় গোলের রেকর্ডটা অনেকদিন ধরেই ছিলো আর্জেন্টাইন কিংবদন্তীর দখলে।
    মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচের ৪ মিনিটেই দারুণ এক হেডে এগিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। কাল পর্যন্ত বিশ্বকাপে ছয়টি গোল করে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সবার ওপরে ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
    স্পেনের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র করেছিল পর্তুগাল। তিনটি গোলই ছিল রোনালদোর।

    ক্লিয়ারেন্স ছাড়াই রানওয়ে’তে ঢুকে পড়লো এএসডিএফ’র যুদ্ধ বিমান

    জাপানের পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে এয়ার সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের দু’টি যুদ্ধ বিমান ওকিনাওয়া’র নাহা বিমানবন্দরে ভুলবশতঃ সক্রিয় রানওয়ে’তে ঢুকে পড়ে, সে সময় একটি যাত্রীবাহী বিমান অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

    পরিবহন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। তারা বলছেন এই ভুল থেকে বড় রকমের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো।

    মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা বলেছেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু’টি এফ-১৫ যুদ্ধ বিমান এই ঘটনা ঘটায়।

    এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার যুদ্ধ বিমান গুলোকে রানওয়ের বাইরে অবস্থান করার নির্দেশ দেন, কারণ রিউকু এয়ার কমিউটার’র একটি বিমান এ সময় রানওয়ে থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ছিলো।

    জঙ্গী বিমান গুলো অমনোগোগী ভাবে রানওয়েতে প্রবেশ করে, কন্ট্রোলার এ সময় দ্রুত যাত্রীবাহী বিমানের অবতরণ অনুমতি বাতিল করেন। এএসডিএফ বিমান গুলো রানওয়ে থেকে সরে যাওয়া নিশ্চিত করার পর তিনি পুনরায় যাত্রীবাহী বিমানকে অবতরণের অনুমতি দেন।

    রিউকু এয়ার কমিউটার বিমানটি ২ মিনিট পর নিরাপদে অবতরণ করে।

    মন্ত্রণালয় বলেছে এই ঘটনায় সংঘর্ষ অনিবার্য ছিলো না কিন্তু একেবারে খারাপ পরিস্থিতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ছিলো।

    জাপান পরিবহন মন্ত্রণালয় নিরাপত্তা বোর্ড ৪ পরিদর্শককে বিমানবন্দরে ঘটনা তদন্তে পাঠিয়েছে। এনএইচকে।

    ইতিহাসের কারণে শ্রদ্ধার পাত্র আর্জেন্টিনা

    ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ সময়ের গোলে হৃদয়ভঙ্গ। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোটশের একমাত্র গোলে জার্মানির কাছে হেরে রানার্সআপ হয় লিওনেল মেসির দল। এবারের বিশ্বকাপে বাছাই পর্বটা মোটেও আশানুরূপ ছিল না আর্জেন্টিনার।

    রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়া নিয়েই এক সময় অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিল ডিয়াগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরীদের। বাছাই পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মেসির জাদুকরী হ্যাটট্রিকে একুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সব শঙ্কা কাটিয়ে বিশ্বকাপে উঠে হোর্হে সাম্পাওলির দল। বাছাইপর্বে ধুকলে কি হবে, বিশ্বকাপ ইতিহাসের কারণেই রাশিয়াতে শ্রদ্ধা পাবে বলে বিশ্বাস আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক উইলি কাবাইয়েরোর।

    তিনজন ভিন্ন কোচের অধীনে এই পথ পাড়ি দেওয়া দলটিকে বিশ্বকাপের মূল পর্বের টিকিট পেতে অপেক্ষা করতে হয় শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। তবে বড় মঞ্চে দলটির ভাল খেলার সুনামের কারণে আর্জেন্টিনা শ্রদ্ধা পাবে বলে মনে করেন চেলসির এই গোলরক্ষক, ‘আমি যখন বিশ্বকাপের গ্রুপ নির্ধারনের ড্র দেখছিলাম তখন আমি জাতীয় দলের বাইরে। চেলসির লকার রুমে আমার নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে গুঞ্জনটা ছিল এমন যে অনেক ভাগ্যের জোরে শেষ ম্যাচে এসে আর্জেন্টিনা কোয়ালিফাই করেছে। তারা ইতিমধ্যে ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করেছে। আর্জেন্টিনার বিগত বিশ্বকাপগুলো, তাদের যে খেলোয়াড় আছে, তারা যেভাবে খেলে এবং যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেসবের জন্য দলটিকে শ্রদ্ধা করা হয়। সম্ভাব্য লড়াইগুলোতেও তারা আমাদের অনেক সম্মান দেখাবে।’

    মস্কোয় বাংলাদেশ সময় শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে সাম্পাওলির দলের রাশিয়া বিশ্বকাপ মিশন। ‘ডি’ গ্রুপে তাদের অপর দুই প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া।

    Untitled Post

    Posted by admin on June 14
    Posted in Uncategorized 

    মাহে রমযান ও আমাদের ঈদ প্রস্ত্ততি

    হযরত মাওলানা মুফতি তকী উছমানী

    রমযান মাস মহান আল্লাহর অনন্ত রহমত ও বরকতের সেই ঋতুরাজ বসন্তকাল, যাতে বিশ্বচরাচরের মহান স্রষ্টার পক্ষ হতে দয়া ও অনুগ্রহের নানা বাহানা অন্বেষণ করা হয়, যে মাসে ঈমানের দৌলতে ধন্য মুমিনের উপর রহমতের বৃষ্টি মুষলধারায় বর্ষিত হয়। যে মাসে ক্ষমাশীল প্রভূ স্বীয় বান্দাদের পাপ মোচনের লক্ষ্যে সর্বদা ক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন। জানি না এ মসে কত অসংখ্য-অগণিত মানুষকে মাগফেরাত করে জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার শাহী ফরমান জারি করা হয়।

    মহান আল্লাহর পক্ষ হতে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি, নূরের স্রোত আমাদের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রান্ত হয়, কিন্তু আমরা অজ্ঞতা-অন্ধতার কারণে তার মাহাত্ম ও গুরুত্ব  বুঝি না। ফলে অতি বরকতপূর্ণ দামী মুহূর্তগুলোকে অবজ্ঞা-উপেক্ষা, গাফিলতি ও যাচ্ছেতাইভাবেই নিঃশেষ করে দিতে দ্বিধা বোধ করি না। হাদীসে বর্ণিত-‘ধ্বংস হোক সেই ব্যক্তি যে রমযান মাস পেল তারপরও তার গুণাহ মাফ হল না।’ সবার জন্য ক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত থাকার এই বিশেষ সময়েও যে ব্যক্তি নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারে না তবে তার অর্থ হবে এটাই  যে, সে ব্যক্তি নিজেকে খোদার রহমত হতে (নাউযুবিল্লাহ) নিজেকে স্বাধীন ও অমুখাপেক্ষী মনে করে। আর এই বেপরোয়া মানসিকতাই সবচেয়ে বিপদজনক বস্ত্ত, যার ব্যাপারে হযরত জিবরাঈল আ. ধ্বংসের বদদুআ করলেন আর নবীয়ে রহমত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সমর্থনে আমীন বললেন।

    এই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের মজলিসে সেই ধরনের কিছু অন্যায়-অবহেলার বিষয় উল্লেখ করাই উদ্দেশ্য, যা আমরা এই মুবারক মাসেও অব্যাহত রাখি। ভয় লাগে যে, আল্লাহ না করুক এই অবজ্ঞা-অবহেলার কারণে সেই ভয়াবহ হুমকি ও বদদুআর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে না যাই। (আল্লাহ এমন ফয়সালা না করুন)

    রমযান মাসে আমাদের সবচেয়ে ব্যাপক ও সীমাহীন অনৈতিক কর্ম এটাই যে, এই মুবারক মাসে নিজেদের দুনিয়াবি চাহিদা ও খরচের পরিধি সঙ্কুচিত করার পরিবর্তে আরো অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি করে দেই। ব্যবসায়ী মহোদয়গণ তো এই মাসকে বিশেষ উপার্জনের মাস ঘোষণা দিয়ে রাত-দিন সেই ধ্যানেই মগ্ন থাকেন। অনেক সময় এই ধ্যান-মগ্নতার কারণে নামাযও ‘কুরবান’হয়ে যায়।

    ‘ঈদের প্রস্ত্ততি’ আমাদের জন্য এখন একটা বড় ধরনের ফিতনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা ‘ঈদুল ফিতর’কে মুসলমানদের জন্য আনন্দ-উৎসবের দিন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সর্বজনীন বাৎসরিক আনন্দের বিশেষ দিবস হিসেবে মনোনিত করেছেন। এমনকি এ বিষয়টিও শরীয়তে স্বীকৃত ও প্রমাণিত যে, এই দিনে কোনো উত্তম থেকে উত্তম পোশাক কেউ যদি সহজে লাভ করতে পারে সে যেন তা পরিধান করে। কিন্তু বর্তমানে এ উপলক্ষে ‘উত্তম পোশাকের’ অজুহাতে যে অসীম-অগণিত বেহুদা খরচের জোয়ার সৃষ্টি করা হয়, অন্যায়-অপব্যয়ের যে মহা প্লাবণ বইয়ে দেওয়া হয় এবং সেটাকে ঈদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বলে মনে করা হয় তার সঙ্গে দ্বীন ও শরীয়তের কোনো সম্পর্ক নেই।

     

    বর্তমান যুগে এ বিষয়টি ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয়, (ঈদ পালনের জন্য) অতি আবশ্যকীয় জরুরি বিষয় মনে করা হয় যে, কোনো ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা থাকুক বা না থাকুক কিন্তু সে কোনো না কোনো উপায়ে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিত্য-নতুন ডিজাইন ও ফ্যাশনেবল পরিধেয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করবে। ঘরের প্রত্যেক সদস্যের জন্য জুতা-টুপি থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিস নতুন নতুন ক্রয় করবে। শুধু তাই নয় ঈদের প্রকৃত স্বাদ অনুভবের জন্য, ঘরের সাজ-সজ্জা ও শোভাবর্ধনের জন্য নিত্য-নতুন আসবাবপত্র ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের ফার্নিচারের ব্যবস্থাও করা হয়। দূর-দূরান্তে অন্যান্য শহরে বসবাসকারী আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের নিকট মূল্যবান গিফট ও দামি ঈদকার্ড প্রেরণ করা হয়। আর এসব কাজ এমন এক তীব্র প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা নিয়ে সম্পন্ন করা হয় যে, কেউ যেন কারো থেকে পিছে পড়ে না যায়। কেউ যেন কারো কাছে কোনো ক্ষেত্রে হেরে না যায়।

    এসবের অনিবার্য পরিণতি এটাই হয় যে, একজন মধ্যম স্তরের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির জন্য ‘ঈদের প্রস্ত্ততি’ একটি বাড়তি দুশ্চিন্তা ও আলাদা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় যখন সে দেখে যে, হালাল উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের সবার চাহিদা ও আবদার পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং বৈধ টাকা-পয়সা তার জন্য পর্যাপ্ত হচ্ছে না, তখন সে অবৈধ পথের সন্ধান করে। বিভিন্ন পন্থায় অন্যের পকেট মেরে টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করে। যা দ্বারা সেই লাগামহীন চাহিদা ও অন্তহীন কুপ্রবৃত্তির পেট ভর্তি করে।

    এসব বাদ দিলেও ‘ঈদের প্রস্ত্ততি’র সবচেয়ে ন্যূনতম ক্ষতি তো এটাই যে, মহামূল্যবান ও বিশেষ করে শেষ দশকের রজনীগুলো-যা একান্ত নীরবে, নিরালা পরিবেশে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও মুনাজাতের শ্রেষ্ঠতম সময়, খোদার সান্নিধ্য লাভের মোক্ষম সুযোগ ও অনন্য মুহূর্ত, তা বাজারের মধ্যে অতিবাহিত হয়ে যায়।

    এসব আলোচনার উদ্দেশ্য-আল্লাহ না করুন-কাউকে তিরস্কার করা, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা কিংবা সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা করা নয়; বরং অন্তরের দরদ ও সহানুভূতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে এ দাওয়াতী চিন্তা-চেতনা পেশ করা যে, এই অতি গুরুত্বপূর্ণ মাস আল্লাহ তাআলা কোন্ কাজের লক্ষ্যে সৃষ্টি করলেন, কী উদ্দেশ্যে এমন একটি শ্রেষ্ঠ মাস দান করলেন। আর আমরা সেটাকে কোন্ বেহুদা কাজে ব্যয় করি। অনর্থকভাবে সেটাকে বিনষ্ট করি।

    যদি আমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রদর্শিত পথ, শিক্ষা-দীক্ষা ও তার আদর্শের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও অনুরাগ থাকে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফায়াত লাভের তপ্ত বাসনা অন্তরে জাগ্রত থাকে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বদদুআকে সত্যিকারভাবেই বিপদজনক মনে করে ভয় করি তাহলে জামার আঁচলে মুখ ঢেকে আমাদের হিসাব করা উচিত এবং অতীত গাফিলতি হতে খাঁটি মনে তওবা করে এই অঙ্গীকার উচিত যে, এই পবিত্র মাসে সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকব। একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর দিকে ফিরে আসব। রমযানের এই অতি মূল্যবান সময়গুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির মধ্যেই ব্যয় করব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এ অঙ্গীকার পূরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    অনুবাদ : মুহাম্মদ আনছারুল্লাহ হাসান

    এসো হে বিশ্বকাপ

    Posted by admin on June 14
    Posted in Uncategorized 

    এসো হে বিশ্বকাপ

    প্রতি বাংলা বর্ষপঞ্জি ঘুরে একবার করে দেখা দেয় বৈশাখ। সে তুলনায় বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষাটা আরেকটু বেশি। চার বছর পর পর দেখা মেলে একটা বিশ্বকাপের। অবশেষে সেই অপেক্ষার প্রহর ফুরালো। চার বছর ঘুরে আবার দুয়ারে এলো বিশ্বকাপ ফুটবল। আবার বিশ্ব মেতে উঠবে এক ফুটবল উন্মাদনায়। আবার দেশজুড়ে শুরু হবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল নিয়ে উন্মাদনা, উড়বে পতাকা, রাস্তাঘাটে দেখা মিলবে নানান ধরনের জার্সি; কারণ শুরু হচ্ছে আজ থেকে বিশ্বকাপ।
    বিশ্বকাপ কেন গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ?
    এ নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। অলিম্পিককেও বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’। কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপ দাবি করে এই নামের যোগ্য অধিকারী তারাই। একটু অবাক লাগে। কারণ, ৩২টা দলকে নিয়ে এই আয়োজন পৃথিবী নামের গ্রহের সেরা আয়োজন কেন হবে! কারণ, এটা কেবল ৩২ দলের এক টুর্নামেন্ট নয়। এটা ২১১টি দেশের এক টুর্নামেন্ট।
    হ্যাঁ, এটাই সত্যি। ফিফার সদস্য সংখ্যা    জাতিসংঘের চেয়েও অনেক বেশি। জাতিসংঘের এখন সদস্য ১৯৩টি দেশ। সেখানে ফিফার সদস্য ২১১টি দল। আর এই ২১১টি দল নিয়েই কয়েক বছর আগে শুরু হয় প্রকৃত বিশ্বকাপ। বাছাইপর্ব নামে খেলা চলতে থাকে। আর যে বিশ্বকাপ আজ থেকে রাশিয়ায় হবে, ফিফার ভাষায় সেটা ‘ফাইনালস’। মানে, বিশ্বকাপ কেবলই এই একমাসের একটা আয়োজন নয়। এটা কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা এক উত্সব। এই উত্সবের ভাগীদার আমাদের দেশও, এই উত্সবের ভাগীদার আমি-আপনি সকলে।
    তারপরও একটা প্রশ্ন প্রায়শ শোনা যায়, কেন বিশ্বকাপ নিয়ে এতো মাতামাতি?
    এই প্রশ্নটার এক কথায় জবাব দেওয়া কঠিন। তবে এটা মানতে হবে যে, বিশ্বকাপের মতো আবেগ তৈরি করা আয়োজন দুনিয়ার ইতিহাসে আর আসে না। এটা কেবল মাঠের খেলা নয়। এটা মাঠের বাইরে ও মাঠে হাসি-কান্নার এক বিশাল আয়োজন। বিশ্বকাপের এই মহিমা যে, এটা খেলোয়াড়দেরও ঠেলে দেয় পেশাদার দুনিয়ার ওপরে কোথাও।
    এই বিশ্বকাপ আসরেই দেখা যায় দুই প্রিয় বন্ধু ওয়েইন রুনি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জাতীয় দলের স্বার্থে ‘শত্রু’ হয়ে উঠেছেন। এখানে মানুষ ক্লাবের আজীবনের ইতিহাস ভুলে যায়। কেবলই সামনে থাকে জাতীয় দলের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের জন্য খেলোয়াড়রা ক্যারিয়ারকে বাজি ধরতেও দ্বিধা করেন না। সেই গত বিশ্বকাপের লুই সুয়ারেজের কথা চিন্তা করুন। গোলরক্ষক পরাস্ত; বল ঢুকে যাচ্ছে জালে। নিশ্চিত লালকার্ড ও নিষেধাজ্ঞা জেনেও সুয়ারেজ বল হাত দিয়ে ধরে ফেললেন। এই দৃশ্য বিশ্বকাপ ছাড়া আর কোথায় পাবেন!
    আসলে ফুটবল খেলাটার চরিত্রই এমন।
    এই খেলা খেলতে লাগে না হাজার হাজার টাকার উপকরণ, নেই আইন-কানুনের ভুরি ভুরি খটমটে কথা। আছে কেবল সরল সোজা গোলের উত্সব এবং পাওয়ার আনন্দ ও না পাওয়ার বেদনা। তাই এই খেলা সারা পৃথিবীকে একটা সুতোয় বেঁধে ফেলতে পারে। আর সেই খেলার বিশ্বকাপ যখন, তখন সেই সুতোটা আরও শক্ত হয়ে পৃথিবীর সব মানুষকে আঁটোসাঁটো করে বেঁধে ফেলে।
    ফুটবলারদের জন্য বিশ্বকাপটা আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এখানে তারকা থেকে মহাতারকা হয়ে ওঠার সুযোগ থাকে। বিশ্বকাপই একজন পেলে কিংবা ম্যারাডোনাকে অসাধারণ করে তোলে। একটা বিশ্বকাপের স্পর্শ একজন তারকাকে করে তোলে পূর্ণাঙ্গ।
    লিওনেল মেসির কথা ধরুন। সারাটা ক্যারিয়ার বার্সেলোনায় কাটানো লিওনেল মেসি ক্লাবের হয়ে জেতেননি এমন কিছু নেই। পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরা ও পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। বার্সেলোনার হয়ে ৩২টি ট্রফি জিতেছেন। এর মধ্যে আছে ৯টি লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ছয়টি কোপা দেল রে। লা লিগায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। এ ছাড়াও লা লিগায় এক মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ইউরোপে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা, ইউরোপে এক বর্ষপঞ্জিতে সর্বোচ্চ গোলাদাতা; ভুরি ভুরি রেকর্ড তার দখলে। জাতীয় দল আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি। জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে ছয় শতাধিক গোল করেছেন।
    কিন্তু মেসি কী এই সবকিছু নিয়ে তৃপ্ত? মেসি নিজেকে কী ভিনগ্রহের ফুটবলার বলে ভাবতে পারেন? উত্তর-না। কারণ, তার জীবনের সবচেয়ে বড় অতৃপ্তিটা হলো জাতীয় দলের হয়ে কোনো মেজর ট্রফি জিততে পারেননি। যুবদলের হয়ে জিতেছেন, অলিম্পিক জিতেছেন; কিন্তু আর্জেন্টিনা মূল দলের হয়ে কিছু জেতা হয়নি। গত বিশ্বকাপে নিঃশ্বাস ফেলা দূরত্ব থেকে ফিরে এসেছেন। মাঝে অবসরও নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু একটা বিশ্বকাপ জিতবেন বলে ফিরে এসেছেন। এই ক’দিন আগেও বলেছেন, একটা বিশ্বকাপের জন্য   ক্লাবের হয়ে জেতা সব শিরোপা ফেরত দিয়ে দিতে পারেন।
    এই বিশ্বকাপ এমনই এক ব্যাপার।
    অবশেষে আমরা সেই বিশ্বকাপের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। এই প্রথম রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ২০১০ সালে তারা এই আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছে। সেই থেকে চলছে তোড়জোড়। আজ থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই আসর। রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে ৩২ দলের মোট ৬৪টি ম্যাচ। আর শেষ ম্যাচে বিশ্ব খুঁজে পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন।
    চলুন তাহলে ভেসে পড়া যাক বিশ্বকাপের আনন্দে।