• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • মুত্তাকীদের চার গুণ

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    সূরায়ে ক্বফের কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করেছি। সে আয়াতগুলোর সূ ধরে কয়েকটি কথা বলব ইনশাআল্লাহ। কথাগুলো দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং মজলিসে উপস্থিত সবাইকে ফায়দা পৌঁছান। আমীন। প্রথম আয়াতগুলো হচ্ছে :

    وَ اُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِیْنَ غَیْرَ بَعِیْد  هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِیْظٍ

    (তরজমা) জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে মুত্তাকীদের অদূরে। তোমাদের প্রত্যেক তওবাকারী ও সংরক্ষণকারীকে  এরই প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছিল। -সূরা ক্বাফ  (৫০) : ৩১-৩২

    মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত

    হাশরের ময়দানে একটি দৃশ্যের কথা এই আয়াতগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতকে অদূরে এনে উপস্থিত করা হবে। হাশরের ময়দান থেকে জান্নাত দেখা যাবে। ইশারা করে বলা হবে : هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ (এই জান্নাতেরই ওয়াদা করা হয়েছিল তোমাদের সাথে দুনিয়ায়।) দুনিয়াতে জান্নাতের ওয়াদা শুনেছি না আমরা? তখন ওখানে দেখিয়ে বলা হবে- এই জান্নাতেরই ওয়াদা করা হয়েছিল তোমাদের সাথে।

    কে পাবে এই জান্নাত? لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِیْظٍ ।  حَفِیْظٍ : যে নিজের সত্তাকে কলুষমুক্ত রাখে। নিজেকে শুদ্ধ ও সাফ-সুথরা রাখে। আল্লাহ তো আমাকে সাফ-সুথরা পয়দা করেছেন। জন্মের সময় গুনাহের ময়লা আমার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি আমাকে গুনাহের ময়লা থেকে, পাপের ময়লা থেকে, অপরাধের ময়লা থেকে সাফ-শুদ্ধ রাখব। حَفِیْظٍ -এর আরেক মর্ম, সংরক্ষিত। নিজেকে সংরক্ষণ করব সকল অপরাধ থেকে। حَفِیْظٍ  : সংরক্ষণ করব আমি আল্লাহর বিধানগুলোকে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বেধে দেওয়া হারাম-হালালের গণ্ডিকে। সংরক্ষণ করব আল্লাহর আহকামগুলোকে । حَفِیْظٍ  : আমি ভাল থাকব। নিরাপদ থাকব।

    তওবার মর্ম ফিরে আসা

    এরপরও আমরা মানুষ। গুনাহ হয়ে যেতে পারে। ভুল হয়ে যেতে পারে। হয়ে গেলে আবার গুনাহর উপর অনমনীয় থাকব না। আমাদের গুনাহর উপর দম ধরে থাকব না। এমন মনে করব না যে (নাউযুবিল্লাহ) গুনাহ-ই আমার জীবনের মিশন বরং গুনাহ হয়ে গেলেই সাথে সাথে আল্লাহর দিকে ঘুরে আসব। তওবার মাধ্যমে ফিরে আসব। গুনাহ করার মানেই হল আল্লাহর কাছ থেকে আমার চেহারা ফিরে গেল। আমি তো ঈমানের মাধ্যমে, কালিমার মাধ্যমে, তাওহীদের মাধ্যমে আল্লাহমুখি ছিলাম।

    وجهت وجهي للذي فطر السماوات والأرض.

    (আমি আমার চেহারা ওই সত্তার দিকে ঘুরিয়েছি, যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশ ও যমীন) আমি তো আল্লাহমুখি। মুওয়াহহিদ হওয়া আর কালিমা পড়ার অর্থ আমি আল্লাহমুখি। আমার দিল আল্লাহর দিকে, আমার চেহারা আল্লাহর দিকে। পক্ষান্তরে অপরাধ হওযা- গুনাহ হওয়া মানেই হল, আমি অন্যদিকে ফিরে গেলাম। আমার কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল। এখন তো শয়তানকে আমি আমার লক্ষ্য বানিয়ে ফেললাম। নাউযুবিল্লাহ। তওবার মাধ্যমে তাই ফিরে আসা হয়। তওবাকে তওবা এজন্যই বলা হয় যে, তওবার মাধ্যমে আবার ফিরে এসেছে। আমি তো অন্যদিকে চলে গিয়েছিলাম। না, আমার রাস্তা তো এটা নয়। আমার গন্তব্য তো এদিকে নয়। আমার কেবলা ভিন্ন। আবার ফিরে এসেছি। আবার তওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি। তওবার মানেই হল ফিরে আসা।

    গুনাহর রাস্তাটা আল্লাহর রাস্তা নয়। গুনাহ করার অর্থ হল, আল্লাহর দিক থেকে আমি অন্য দিকে চলে যাচ্ছি। তওবা করে আবার আল্লাহর দিকে ঘুরছি। আমরা বেশি বেশি আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। এক গুনাহর জন্য একশ’বার তওবা করি। এক গুনাহর জন্য একশবার ইস্তেগফার পড়ি।

    أسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأتُوبُ إلَيهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ.

    সকালে এবং সন্ধ্যায় পড়ব :

    اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ.

    এটি সাইয়েদুল ইস্তিগফার।

    অন্তরে থাকবে আল্লাহর ভয়

    لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِیْظٍ : এখানে এই দুটি গুণের কথা বলা হয়েছে। এ গুণ দুটি কিন্তু দেখা যাবে আমার সীরাত-সুরতে। আমি ‘হাফীয কি না এবং ‘আওয়াব’ অর্থাৎ গুনাহ হয়ে গেলে ফিরে আসছি কি না। এ দুটি গুণ মুমিনের দৃশ্য বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য। এ দুটি কখন হবে, যখন আরো দুটি অদৃশ্য বৈশিষ্ট্য মুমিনের মধ্যে থাকবে তখন। ওই দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা সামনে বলা হচ্ছে। مَنْ خَشِیَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَیْبِ  (রহমানকে যে না দেখেই ভয় করে) দেখেনি সে রহমানকে এখনো, কিন্তু সে রহমানকে ভয় করে। আসমায়ে হুসনা অনেকগুলো। আল্লাহর সুন্দর নাম অনেক। এখানে جبار  (প্রতাপশালী)  قهار (পরাক্রমশালী) এগুলো বলা হয়নি। বলা হয়েছে, রহমান। মনে হতে পারে- ‘জাব্বারকে কাহহারকে ভয় করে’ এভাবে বলা হলে বেশি মুনাসিব হত। কিন্তু আল্লাহ এভাবেই বলেছেন এবং বাস্তবেই ভয় তো রহমানকেই করা উচিত। আমি ইনসান। যিনি আমার সাথে দয়ার মুআমালা করেন, তাকেই তো আমার ভয় করা উচিত। এখানে ভয় মানে কী? ভয় মানে মহব্বত মিশ্রিত ভয়। মানুষের জন্য আমরা ‘শ্রদ্ধা’ শব্দ যেখানে ব্যবহার করি, মহান খালেকের জন্য সেখানে উপযোগী শব্দ যা হবে- এই ভয় দ্বারা সেটাই উদ্দেশ্য।

    وَ جَآءبِقَلْبٍ مُّنِیْبِ : (আল্লাহর দরবারে হাযির হয়েছে কলবে মুনিব -আল্লাহমুখি দিল নিয়ে) কলব যদি আল্লাহমুখি হয়, কলবের মধ্যে যদি রহমানের ভয় থাকে তাহলে আমলগুলোর মধ্যে দেখা যাবে حَفِیْظٍ (সংরক্ষণকারী, কলুষমুক্ত)-এর গুণটা প্রকাশ পাবে। আচার-আচরণ, লেনদেন, উঠাবসা যাবতীয় বিষয়ে এবং জীবনের যত অঙ্গন আছে সবগুলোর মধ্যে। আর বিপরীত কিছু হয়ে গেলেই তওবা-ইস্তেগফার করবে। এই চারটি গুণের সমষ্টি- ব্যক্তিত্বই হল মুত্তাকী।

    মুত্তাকীর জন্য চার গুণ

    মুত্তাকী কাকে বলে? মুত্তাকী হতে হলে এই চারটা গুণ লাগবে। দিলে আল্লাহর খাশিয়াত (ভয়) থাকা আর ওটার প্রভাবে হাফীয হওয়া। আল্লাহর বিধানকে খেয়াল করে চলা। বেদআত থেকে বেঁচে সুন্নাত মোতাবেক চলা। গুনাহ হলে তওবা করা। আল্লাহর দরবারে আল্লাহমুখি দিল নিয়ে হাযির হওয়া। এই চারটা বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে মুত্তাকী বলা হবে। ওই মুত্তাকী মুসলমানদেরকেই বলা হবে অদূরে বেহেশতের উপস্থিতির কথা। সেখানে নিশ্চিন্তে প্রবেশ করতে বলা হবে তাদেরকে। সেখান থেকে কেউ তাদের বের করবে না।

    ادْخُلُوْهَا بِسَلٰمٍ ؕ ذٰلِكَ یَوْمُ الْخُلُوْدِ

    (তরজমা) তোমরা সেখানে শান্তিতে প্রবেশ কর এবং এটিই চিরকালের আবাসস্থলে প্রবেশের দিন। -সূরা ক্বাফ (৫০) : ৩৪

    জান্নাতে যারা যাবে চিরকাল থাকবে। সেখান থেকে কেউ তাদের বের করবে না।

    لَهُمْ مَّا یَشَآءُوْنَ فِیْهَا وَ لَدَیْنَا مَزِیْدٌ

    (তরজমা) জান্নাতে যা তাদের মনে চায় সব পাবে এবং আল্লাহর কাছে আছে আরো বেশি।) -সূরা ক্বাফ (৫০) : ৩৫

    মানুষের মনের চাওয়াও এক সময় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর নিআমতের শেষ নেই। একথাই বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে আরো বেশি থাকবে’।  তাকওয়ার এই সিফাতগুলো অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা আমাদের পূর্ণ মুত্তাকী হওয়ার তাওফীক দান করুন। 

    [১৮ মে ২০১৫ তারিখে একটি মজলিসে প্রদত্ত বয়ান। অনুলিখন : শরীফ মুহাম্মদ]

    মঙ্গল গ্রহ নিয়ে গবেষণা এবং একটি পর্যালোচনা

    আমাদের এই পৃথিবী থেকে তিন কোটি ত্রিশ লাখ মাইল দূরের মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি গড়ে তোলার জন্য  নাসার বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার কোনো ত্রুটি নাই। মঙ্গল গ্রহে কীভাবে মানুষের স্থায়ী বসতি গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে তারা দিনরাত গবেষণায় ব্যস্ত। তারা মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি গড়ে তোলার বিরাট এক প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন; আর কিছুদিন পর পর এই প্রকল্পের অগ্রগতি বিশ^বাসীকে জানাচ্ছেন। এই প্রজেক্টের পিছনে খরচ করছেন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। নাসার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, আগামী ২৫/৩০ বছরের মধ্যে মঙ্গলে মানুষের স্থায়ী বসবাস গড়ে ওঠবে। নাসার এইসব বিজ্ঞানীদের মতে অচিরেই এই পৃথিবী মানব জাতির বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। তাই মানব জাতির অস্তিত্বের স্বার্থেই অন্য গ্রহে মানুষের বসতি গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ জন্যই এইসব বিজ্ঞানীদের এই নিরন্তর প্রচেষ্টা। মানবজাতির কল্যাণে পরিচালিত নাসার বিজ্ঞানীদের এই প্রচেষ্টাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তবে মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি গড়ে তোলাÑএকটি অবাস্তব, অপ্রয়োজনীয় এবং অসম্ভব বিষয়। প্রকৃতপক্ষে মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাস কোনদিনও সম্ভব নয়। বিজ্ঞান যতই উন্নতি করুক না কেন, এই পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষের বসবাস সম্ভব নয়। মঙ্গল গ্রহ নিয়ে আমার এই কড়া মন্তব্য শুনে তেলে বেগুনে জ¦লে ওঠার দরকার নেই। আর আমাকে ধর্মান্ধ, বিজ্ঞানবিরোধী এবং প্রগতিবিরোধী বলে গালি দেয়ারও প্রয়োজন নেই। আসুন ঠা-া মাথায় যুক্তির মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজি। বিজ্ঞানীদের মতে, এই মহাবিশে^ বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র রয়েছে। এই সব বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ নক্ষত্র কেন, কখন এবং কীভাবে সৃষ্টি হলো তার কোনো সঠিক উত্তর এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা খুঁজে পাননি। একইভাবে আমাদের বসবাসের এই পৃথিবীটা কেন, কখন এবং কীভাবে সৃষ্টি হলো তার সঠিক তথ্যও বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি। একইভাবে চন্দ্র সূর্যের সৃষ্টি রহস্যও বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা এই মহাবিশে^র সীমা-পরিসীমাও আবিষ্কার করতে পারেননি। একইভাবে এই মহাবিশে^র সৃষ্টি রহস্যও বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেননি। আবার এই পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহ-উপগ্রহে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে পারেননি। তার মানে মহাবিশে^র এই পৃথিবী নামক গ্রহটিতেই কেবল প্রাণের অস্তিত্ব আছে এবং এখানে মানুষসহ লাখো প্রাণী বসবাস করে। এই পৃথিবীর জলে, স্থলে এবং অন্তরীক্ষে কত ধরনের প্রাণীর বসবাস তাও এখনো সঠিকভাবে গণনা করা যায়নি। আবার এই পৃথিবীতে মানুষসহ এসব লাখো প্রাণীর আবির্ভাব কখন থেকে হলো, কীভাবে হলো তারও কোনো সঠিক উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। বিজ্ঞানীদেরই মতে এই পৃথিবীতেই মানুষসহ লাখো প্রাণীর বসবাস। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে মানুষসহ যে কোনো একটি প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত  অত্যাবশকীয় উপাদানের প্রয়োজন তার সবই এই পৃথিবীতে আগে থেকে বিদ্যমান আছে। জীবনের জন্য যা প্রয়োজন, তার সবই আয়োজন এই পৃথিবীতে আছে। যেমন প্রাণীর জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। সেই অক্সিজেন এই পৃথিবীতে এত বেশি পরিমাণে বিদ্যমান যে, আজ পর্যন্ত এই পৃথিবীর কোন ভূখ-ে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হয়নি এবং অক্সিজেনের অভাবে কোনো প্রাণী মারা যায়নি। প্রাণীর জন্য অপরিহার্য উপাদান পানি। সেই পানি পৃথিবীতে এত বেশি পরিমাণে বিদ্যমান যে, বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর মোট ভূখ-ের চার ভাগের তিন ভাগই পানি। এই যে প্রাণের জন্য অপরিহার্য দুটি উপাদানের কথা আমি উল্লেখ করলাম, তার কোনটিই কিন্তু মানুষ সৃষ্টি করেনি। বেঁচে থাকার জন্য মানুষেরা প্রতিদিন যে খাবার গ্রহণ করে- যেমন ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, তরিতরকারি, ফলমূল কোনটিই মানুষের নিজের হাতে সৃষ্ট নয়। হাজার ধরনের গাছপালা এবং পশুপাখিও মানুষের সৃষ্টি নয়। ধান, গম, আলু, মরিচ, পিয়াজ, আদা, হলুদ, রসুন, বেগুন, মুলা, সীম সহ বিভিন্ন ধরনের তরিতরকারি, নানা ধরনের শাক-সবজি, আপেল, কমলা, আঙ্গুর, তরমুজ, কলা ইত্যাদি কখন থেকে এবং কীভাবে আবাদ শুরু হলো তার কোনো সঠিক উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। একইভাবে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস, মুরগী এবং পানিতে বাস করা রুই, কাতলা, কই, মাগুর, ইলিশ, চিংড়ি, বোয়াল, কোরাল, রূপচাদাসহ হাজারো মাছ কখন এবং কীভাবে সৃষ্টি হলো তার কোনো সঠিক উত্তরও বিজ্ঞানীদের জানা নেই। আর এসবের কোনটিই মানুষের হাতে সৃষ্ট নয়। আবার এসবের প্রত্যেকটিই মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় এবং এসবের উপর নির্ভর করেই মানুষ জীবন ধারণ করছে। আজকের এই পৃথিবীতে মানুষের যেসব আবিষ্কার জীবনকে সহজ, সুন্দর এবং সাবলীল করেছে তার কোনটাই হঠাৎ করে একদিনে তৈরি হয়নি। শত শত বছরের পথ পরিক্রমায় হাজারো বিজ্ঞানীর অক্লান্ত  পরিশ্রমে ধীরে ধীরে এসব অর্জিত হয়েছে। বিদ্যুৎ, গাড়ি, বিমান, মোবাইল ফোন, টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার, কম্পিউটার সবই বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার। রোগ নির্মূলের জন্য আজকের পৃথিবীতে বিদ্যমান হাজারো ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবা ও বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। পরিধানের জন্য বিজ্ঞানীরাই তৈরি করেছেন হরেক রকম দৃষ্টিনন্দন কাপড়। পড়াশোনা করার জন্য গড়ে তুলেছেন  স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়। যাতায়াতের জন্য তৈরি করেছেন হাজার হাজার সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, রেলপথ ইত্যাদি। দ্রুত সময়ে পথ পাড়ি দেয়ার জন্য তৈরি করেছে মোটরসাইকেল, কার, বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ, জাহাজ এবং বিমানসহ অসংখ্য যানবাহন। বেড়ানোর জন্য গড়ে তুলেছে পার্ক, চিড়িয়াখানা এবং সমুদ্র সৈকতসহ অসংখ্য স্থাপনা। বিনোদনের জন্য তৈরি করছে গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি। সুরম্য অট্টালিকায় মানুষের যে বসবাস তাও একদিনে সম্ভব হয়নি। এসব আবিষ্কারের সাথে সাথে মানুষের জীবন হয়েছে সুন্দর, সহজ, সাবলীল এবং উন্নত। এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন এত উন্নত, সহজ এবং সুন্দর হলেও, এই পৃথিবীরই বিস্তীর্ণ ভূখ-ে কিন্তু এখনো মানব বসতি গড়ে ওঠেনি। যেমন সাহারাসহ অসংখ্য মরুভূমি, অ্যান্টার্টিকা মহাদেশ, উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুর বিশাল অঞ্চল, আমাজন বনভূমি, হিমালয়, আল্পস এবং কিলিমাঞ্জারুর চূড়াসহ অসংখ্য পাহাড় পর্বত, হাওর, নদী, সাগর, মহসাগরের বিশাল এলাকা ইত্যাদি। এসব এলাকা এই ভূখ-েরই সংযুক্ত অংশ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ সেখানে এখনো বসতি গড়ে তুলতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও বসতি গড়তে পারার সম্ভাবনা নেই। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে, এসব এলাকার আবহাওয়া এবং পরিবেশ মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়। অর্থাৎ পরিবেশ মানুষের অনকূল নয় বরং প্রতিকূল। যেমন কোথাও তাপমাত্রা বেশি গরম আবার কোথাও তাপমাত্রা বেশি ঠা-া। আবার কোথাও বা ধুধু বালু আবার কোথাও বা অথৈ পানি। আবার কোথাও বা পাহাড়ি ভূখ- আবার কোথাও বা রাশি রাশি বরফ খ-। আবার কোথাও বা হিং¯্র বন্যপ্রাণীর উপদ্রব আবার কোথাও বা প্রাণহীন নীরবতা। অথচ এসব ভূখ-ে আলো, বাতাস, অক্সিজেন, পানি সবই আছে। আছে এসব ভূখ-ে যাওয়া আসার ব্যবস্থাও। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এসব ভূখ-ে জনবসতি গড়ে তোলার কোনো ব্যবস্থা করছেন না এবং এসব ভূখ-কে মানুষের বসবাসের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য কাজও করছেন না। তবু যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম বিজ্ঞানীরা এক সময় মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলবেন এবং কিছু মানুষ মঙ্গল গ্রহে পাড়ি জমাবে। কিন্তু তারা মঙ্গল গ্রহে পৌঁছার পর করবেটা কী? আর সেখানে বাঁচবেই বা কী করে? তারা গৃহ বানাবে কী দিয়ে? সেখানে তো রড, সিমেন্ট, টাইলস, কাঠ নেই। জীবন ধারণের জন্য তারা খাবে কী? সেখানে তো কৃষিকাজ করা সম্ভব নয়। সেখানে তো মাছ, মাংস নেই। তাদের অসুখ হলে ডাক্তার এবং ওষুধপত্র পাবে কোথায়? সেখানে তো কোন হসপিটাল নেই। তারা পড়াশোনা করবে কোথায়? সেখানে তো বিদ্যুৎ নেই। বৈদ্যুতিক পাখা এবং এসি চালাবে কী করে? সেখানে তো মোবাইল এবং ইন্টারনেটও নেই। তারা পথ চলবে কীভাবে? সেখানে তো কোন গাড়ি নেই আবার রাস্তাঘাটও নেই। সেখানে তো কোন গাছপালা নেই। তাহলে ছায়া পাবেন কই? বিজ্ঞানীরা হয়তো বলবেন, মঙ্গল গ্রহে যেহেতু পানি পাওয়া গেছে সুতরাং সেখানে অক্সিজেন আছে এবং সেখানে কৃষিকাজ করা যাবে, ফসল  উৎপাদন করা যাবে এবং বসবাস করা যাবে। কিন্তু পানি থাকলেই তো আর বসবাস করা যায় না। যদি সম্ভব হতো তাহলে তো এই পৃথিবীর অ্যান্টার্টিকা মহাদেশে সবার আগে মানুষের বসবাস সম্ভব হতো। আর সত্যিই কথা হচ্ছে, মঙ্গল গ্রহে যাওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব হলেও বসবাস করা সম্ভব হবে না এবং এই পৃথিবীর সুন্দর জীবন ছেড়ে মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার জন্য কেউ যাবে না। যারা আজ মঙ্গলে যাবার জন্য নাম ঘোষণা করছে তারাও যাবে বলে মনে হয় না। এখানে একটি বিষয় সবার জানা দরকার আর সেটা হচ্ছে মানুষ কিন্তু ইচ্ছা করে এই পৃথিবীতে আসেনি। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এখানে পাঠানো হয়েছে। আর জীবন ধারণের সকল উপকরণ সৃষ্টি করেই মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। এজন্যই এই পৃথিবীতে মানুষসহ লাখো প্রাণীর বাস এবং তারা হাজার হাজার বছর ধরেই এই পৃথিবীতে বসবাস করছে। অপরদিকে মঙ্গল গ্রহে মানুষ চেষ্টা করে যেতে চাচ্ছে। আর সেখানে বসবাসের কোনো উপকরণ নেই। সুতরাং সেখানে বসতি গড়তে হলে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ মানুষকে সৃষ্টি করতে হবে, যা মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। আর তিন কোটি ত্রিশ লাখ মাইল দূরের পথ পাড়ি দেয়ার যাতায়াত খরচও তো মুখের কথা নয়। বিজ্ঞানীরা তো চাঁদ নিয়ে মানুষকে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু চন্দ্র বিজয়ের চার দশকেরও বেশি সময় তো পেরিয়ে গেছে। চাঁদে মানুষের বসবাসের অগ্রগতি কই? এখন তো চাঁদ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কোনো তৎপরতাও নেই। মঙ্গল গ্রহ নিয়ে  বিজ্ঞানীদের তৎপরতাও কিন্তু  একদিন বন্ধ হয়ে যাবে। তাইতো বলি-     ‘প্রকৃতির দানে প্রকৃতির মাঝে আমরা বেঁচে আছি    প্রকৃতিটা কার দান তাহা ভুলে গেছি।’ যেসব বিজ্ঞানী আমাদেরকে মঙ্গলে বসবাস করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য বলছি, আপনাদের এই স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না। বিজ্ঞানের চরম উন্নতি সত্ত্বেও তা কখনো সম্ভব হবে না। একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবেই এ কথা বলছি। কারণ বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান একজন মানুষের রোগ নিরাময়ে সক্ষম। কিন্তু তাই বলে মানুষকে অমরত্ব দানে সক্ষম নয়। নারী গর্ভে থাকা সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে তা প্রসবের আগে জানা সম্ভব। কিন্তু তাই বলে ইচ্ছামত ছেলে অথবা মেয়ে শিশুর জন্ম দেয়া সম্ভব নয়। মানুষ তার ইচ্ছামত দিন রাত্রিকেক যেমন বড় ছোট করতে পারে না, ঠিক তেমনি রোদ বৃষ্টি আর শীতকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মানুষ তার প্রয়োজনমত আবহাওয়াটাকে গরম এবং ঠা-াও করতে পারে না। একইভাবে ভূমিকম্প, অতি বৃষ্টি, ঘূর্নিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বন্ধ করার উপায়ও মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। কারণ হচ্ছে মানুষের জ্ঞান এবং ক্ষমতার একটি সীমারেখা আছে যা অতিক্রম করা কোন মানুষের পক্ষে কোনদিনও সম্ভব নয়। যারা মঙ্গলে বসতি গড়ার কথা বলছেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা আগে উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুতে বসতি গড়–ন। হিমালয় অথবা আল্পস পর্বতের চূড়ায় আগে মানুষের বসবাস গড়ে তুলুন। সাইবেরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল আর মরুভূমির বালুর রাজ্যে মানুষের বসবাস গড়ে তুলুন। একইভাবে এই পৃথিবীর তিনভাগ অঞ্চল জুড়ে বিস্তীর্ণ অথৈই জলরাশিকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করুন। লক্ষ কোটি মাইল দূরের মঙ্গল গ্রহÑযেখানে অক্সিজেন নেই, পানি নেই, গাছপালা নেই, কোনো ধরনের খাদ্য নেই, বিদ্যুৎ নেই, বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই, চাকরি নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, ডাক্তার নেই, ওষুধপত্র নেই সেখানে এত কষ্ট করে যাওয়ার দরকার কী এবং সেখানে বসবাস করারই বা দরকার কী? লক্ষ কোটি মাইল দূরের মঙ্গলে যাওয়া এবং সেখানে বসতি গড়ার চেয়ে এই পৃথিবীর বরফ আচ্ছাদিত ভূখ-, পাহাড়ী জনপদ এবং মরুভূমির প্রান্তরকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলা বিজ্ঞানীদের জন্য অনেক বেশি সহজ বিষয়। এছাড়া পৃথিবীর যেসব শহরে, গ্রামে মানুষ এখন বসবাস করছে সেগুলোকে আরো উন্নত করে আরো বেশি মানুষ কীভাবে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে সেই প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করুন। বিজ্ঞানীদের উচিত এইডস, ক্যান্সার এবং ইবোলার হাত  থেকে মানুষের জীবনকে রক্ষার জন্য কাজ করা। বিজ্ঞানীদের উচিত অশিক্ষা, দারিদ্র্যতা এবং বিভিন্ন ধরনের অসুখের হাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষার জন্য কাজ করা। কিন্তু তা না করে মঙ্গলে মানুষের বসতি গড়ার স্বপ্ন নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়, অবাস্তব এবং অসম্ভব একটি বিষয়। মানুষ লক্ষ কোটি মাইল দূরের মঙ্গল গ্রহে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, অথচ টাইটানিক ডুবে যাবার একশত বছর পেরিয়ে গেলেও, তারা এখনো সমুদ্রের মাত্র কয়েক শত ফুট নিচ থেকে জাহাজটিকেই তুলতে পারছে না। আর মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানটিও খুঁজে বের করতে পারেনি এবং বিমানটির যাত্রীদেরকেও বাঁচাতে পারেনি। এমনকি বিমানটির ধ্বংসাবশেষ এবং যাত্রীদের লাশও উদ্ধার করতে পারেনি। তাই মানুষের উচিত বাস্তবতায় ফিরে আসা, বাস্তববাদী হওয়া এবং এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে জানা। কীভাবে এই মহাবিশ^ সৃষ্টি হলো, কীভাবে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হলো, এই পৃথিবীতে আমাদের কাজ কী এবং মরণের পরে কী হবে সে সব বিষয় জানা এবং সেই অনুযায়ী পথ চলা সবার একান্ত কর্তব্য। তাহলেই কেবল মানুষের জীবন শান্তিময় এবং সুখের হবে।