• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • চিকিৎসা পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া -রিজভী

    বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না; এমন অভিযোগ দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর।
    তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে নিঃশেষ করার জন্যই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে পরিকল্পিতভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে এখন চিকিৎসার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। এটা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বহুমুখী চক্রান্তের অংশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
    আজ রোববার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
    রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সরকারি মেডিকেল বোর্ড মামুলি প্রহসনের এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করে ফিজিওথেরাপির সুপারিশ করেছে। একজন বয়স্ক নেত্রী যিনি দীর্ঘদিন ধরে হাঁটু ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন; তাকে কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখায় আরও বেশকিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
    খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং সম্প্রতি চোখের অপারেশনও হয়েছে। এমনকি সরকারি মেডিকেলের চিকিৎসক বোর্ড বলেছে তার এক্স-রে রিপোর্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে ঘাড়ে ও কোমরের হাড়ে সমস্যা আছে। এমন অবস্থায় আধুনিক চিকিৎসার যুগে এমআরআই-সহ উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া শুধুমাত্র এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ও সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়।
    দেশনেত্রীকে যেদিন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আনা হয়েছিলো সেখানে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ডাকা হলেও তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ ও পরামর্শ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
    খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য অতি দ্রুত তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারি হুকুমে কারসাজিমূলকভাবে খালেদা জিয়ার জামিনকে স্থগিত করা হয়েছে। এসব ঘৃণ্য চক্রান্ত বাদ দিয়ে খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি।
    এসময় রিজভী কর্তৃপক্ষকে খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।

    Untitled Post

    Posted by admin on April 15
    Posted in Uncategorized 

    ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তরালে

    প্রথমেই বলে রাখতে চাই যে, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তরালে ধর্ম আছে, তবে ইসলাম অনুপস্থিত। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের প্রবক্তাদের বলতে শুনেছি যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, বরং নির্বিঘেœ স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করে। তবে রাষ্ট্র কোনো একটি ধর্মের প্রতি পক্ষপাত করবে না। এই ভাবনাটি অতি উত্তম। কেননা, এই উদারতার নাম পরমত সহিষ্ণুতা। এতে মানব সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে। শান্তির ধর্ম ইসলাম এর পক্ষপাতী। কুরআন পাকে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “যারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের বন্দনা করছে, তোমরা তাদেরকে মন্দ বলিও না। কেননা, তাহলে তারা অজ্ঞানতা বশতঃ আল্লাহকে অতিরিক্ত মন্দ বলে ফেলবে”। (সূরা আনআম-১০৯)।

    এই আয়াত থেকে আমরা পরমত সহিষ্ণুতার শিক্ষা পাই। এটা না হলে বিভিন্ন মতামতের এই বিশ্ব অশান্ত হয়ে পড়ায় মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তো। এটা যে ধ্রুব সত্য, তার প্রমাণ আমাদের সামনে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই মানুষে-মানুষে সংঘাত, তার ফলে রক্তপাত। আর, সেকারণেই মানুষ শান্তির খোঁজে এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে অনুপ্রবেশ করে। বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানরা সেখানকার বৌদ্ধদের অত্যাচারে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ করছে। এটা যে পরমত-পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতার কারণে ঘটছে তাতে সন্দেহ নেই। তথাকথিত প্রগতিশীলদের চোখে যে জঙ্গী ধর্ম ইসলাম, সে ধর্মে এই বর্বরতার সমর্থন নেই।

    এর প্রমাণ আল্লাহর আসমানী কিতাব আল-কুরআনে রয়েছে। ইসলামের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন কাহিনী এবং তাঁর হাদীসে রয়েছে। একটু স্থির মস্তিষ্কে ভাবলে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, বিশ্বে যতো হানাহানি তার অন্যতম কারণ ধর্ম। সিরিয়ায় থাকতে পারে একদল লোকের ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্ব, কিন্তু প্রতিবাদীরা বলে ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠার কথা।

    সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ নিশ্চিত ইসলামের দুশমন। অথচ শতভাগ মুসলমানের দেশ সিরিয়া। সেখানকার মুসলমানদের মধ্যে কিছু ইসলাম দরদী মানুষ থাকতেই পারে। আধুনিকতা মনস্ক মানুষেরা প্রগতি আর ধর্মনিরপেক্ষতা বোঝে, কিন্তু বোঝেনা যা, তার নাম ইসলাম। তাই তাদের বিবেচনায় ইসলামের পক্ষে যারা থাকে তারা জঙ্গী। এ ভাবনার ফলেই তো মুসলিম অধ্যুষিত (শত ভাগ) দেশ তুরস্কে ইসলাম অবমানিত, মিশরেও তদবস্থা। মুসলমানের দেশে যদি ইসলাম এমন দুরবস্থায় থাকে, তাহলে অমুসলিম দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম কোন অবস্থানে রয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। পত্র-পত্রিকায় প্রয়শঃ সে সব দেশের খবর পাওয়া যায়। কোথাও মুসলমানী নাম রাখা চলবে না, কোথাও দাড়ি রাখা বিপজ্জনক, কোথাও মসজিদে মাইকে আযান নিষিদ্ধ, কোথাও গো-কুরবানী চলবে না, কোথাও মেয়েদের বোরকা-হিজাব নিষিদ্ধ। দেখা যায় ইসলাম ধর্ম এবং ইসলামী ভাবধারা ও সমাজ ব্যবস্থা সে সব দেশে চলতে না পারলেও অন্যান্য ধর্মের বেলায় এরূপ কড়াকড়ি নেই। বিদেশে কোথায়ও শিখেরা মার খাচ্ছে দাড়ির কারণে। কারণ, আক্রমণকারীরা জানে না (জানলেও মানে না) মুসলমান ব্যতীত অন্য কেউ দাড়ি রাখতে পারে। জানি না, এ যুগে ইহুদী-খ্রীস্টান কার্ল মার্ক্স, ফ্রেডারিক এঙ্গেলস, জর্জ বার্নাডশ’রা বেঁচে থাকলে দাড়ির জন্য বিপদে পড়তেন কি-না?

    বিশ্বের সর্বত্র (হোক ইয়াহুদী, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দুর দেশ, পাঁচ মিশালী দেশ, মুসলমানের দেশ) ইসলাম এবং ইসলামী ভাবধারা ও সমাজ ব্যবস্থার উপর খড়গহস্ত সেইসব দেশের প্রগতিশীল মানুষেরা। কিন্তু অন্য ধর্মের প্রতি এবং সেই সব ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থা এবং ভাবধারার প্রতি তাদের আপত্তি তো নেইই, বরং সমর্থনই থাকে। সেক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার বেরিকেড থাকে না। এই তো কিছুকাল পূর্বে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের (তবুও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম) সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী (গ্রীক দেশের) থেমিসের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। দেবী মূর্তি প্রায় ন্যাংটা হলেও শাড়ী পরিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু থেমিস নয়, দেবী ভেনাসও নেংটা। এ সব দেবী খ্রীস্টান দেশের প্রাচীন কালের নিদর্শন।

    ভারতীয় দেবী কালীও তো তেমনি বসনহীন। তাকে তার সেবকেরা মন্দিরে বসন পরিয়ে রাখেন। সে যাই হোক, আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ দেশে গ্রীক দেবী থেমিসকে সর্বোচ্চ আদলতের প্রাঙ্গণে স্থাপনের আবশ্যক কী? যদি বলা হয়, ন্যায় বিচারের প্রতীক, বলবো, বিচারালয়ে ন্যায় বিচার থাকলে প্রতীক প্রতিষ্ঠার আবশ্যক কী? প্রবাদ আছে চেনা বামুনের পৈতা লাগে না। আর, ন্যায় বিচারের প্রতীক বাংলাদেশে কেন গ্রীক দেশ থেকে আমদানী করতে হবে? ৯০% মুসলমানদের ন্যায় বিচারের নির্দিষ্ট প্রতীক রয়েছে দাড়ি পাল্লা। এই প্রতীক বিচারালয়ে প্রতিষ্ঠা করলে যদি হয় ধর্মীয় ব্যাপার, তাহলে দেবী থেমিস কেন ধর্মীয় হবে না?

    ২৮শে মে তারিখের (২০১৭ খ্রীস্টাব্দ) দৈনিক নয়াদিগন্ত সংবাদপত্রে প্রকাশঃ ‘হেফাজতের দাবি মেনে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের ভাস্কর্যটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানো দেশের জন্য আত্মঘাতী’, বলেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাদারণ সম্পাদিকা শিরীন আখতার এমপি। তারা আরো বলেন, ‘হেফাজতের ভাস্কর্য সরানোর দাবির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ভাস্কর্য আর মূর্তি পূজা এক নয়। …..হেফাজত ভাস্কর্য বা স্থাপনাকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিস্তার ঘটাতে চাচ্ছে’।

    জাসদ নেতাদের প্রতি বলছি, বাংলাদেশ কি গ্রীক দেবী থেমিসের উপর নির্ভরশীল যে, তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানো দেশের পক্ষে আত্মঘাতী হবে? আর এটাও তাদের জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সুদকে মুনাফা এবং ঘুষকে উপরি বললে তার চেহারা বদলায় না, তার ফলশ্রুতিও পাল্টায় না। তাই দেবী মূর্তিকে ভাস্কর্য বললেও, তা দেবীই থেকে যায়।

    মূর্তি ইসলাম বিরোধী কিনা, তা দ্বীনদার আলেম মুসলমানরাই ভালো জানেন; যারা নাস্তিক কিংবা মূর্খ্য, এটা তাদের জানার কথা নয়। কুরআন পাকে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মদ, জুয়া, মুর্তি এবং ভাগ্য নির্ধারক শর (জুয়া); এইসব অতি অপবিত্র শয়তানের কাজ। অতএব, তা হতে মুক্ত থাক, তবেই তোমরা মুক্তি পাবে’। (সূরা মায়েদা- ৯০ আয়াত)।

    ভাস্কর্য যদি মূর্তি হয়, কুরআনের ভাষ্যমতে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তার আদর ক্বদর পূজারই শামিল। হেফাজত মূর্তিকে (ভাস্কর্য) ইসলাম বিরোধী বলেনি, বলেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা। দ্বীনদার মুসলমান আল্লাহর কথা মেনে চলেন। কোনো নাস্তিক্যবাদী কিংবা কুরআন বিরোধী বাক্য তারা মানেন না বা মানতে প্রস্তুত থাকেন না। কুরআন পাকে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা লোকদেরকে নেক কাজের দিকে ডাকবে ও ভালো কাজের হুকুম দিবে এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করবে। এই সকল লোকই সফলকাম হবে’ । (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)।

    হেফাজতে ইসলাম আল্লাহর এই নির্দেশনায় কাজ করছে। এতে সাম্প্রদায়িক কেন, কোনো ধরণের রাজনীতির নাম গন্ধই নেই। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫এর ১৫ই আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত জাসদের ভূমিকা কী ছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখা আছে। বরং বিদেশী দেবী মূর্তির সমর্থনে আন্দোলন করে তারাই সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিচ্ছে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কিংবা একটু সরিয়ে নিয়ে থেমিস দেবী স্থাপনে তেমন একটা তফাত নেই। আমাদের দেশেও এ রকম দেবী মূর্তি রয়েছে। যদি তাদেরও আদালতের প্রাঙ্গণে কেউ স্থাপন করতে চাইলে, নিশ্চয় তাও এক সময় অন্যায্য মনে হবে না। যেমন আরব দেশের মক্কা শরীফের কাবা গৃহে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। সম্ভবতঃ তা’ একদিনেই হয়নি। নিশ্চয় ক্রমান্বয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশেও যে তেমনটি ঘটবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?

    সাম্প্রদায়িকতা (রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াই) এ কারণেই বিস্তার লাভ করার আশংকা রয়েছে। কুরআন মুতাবেক তাকে সাম্প্রদায়িকতা বলা যাবে না, সেটা দ্বীনদার মুসলমানের কর্তব্য কর্মের আওতায় পড়ে। বাংলাদেশে এখনও কিছু দ্বীনদার মুসলমান রয়েছেন, যারা অনৈসলামিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করবেন। আর, কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত কিছু দ্বীনদার মুসলমানের অস্তিত্ব থাকবে।

    এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলতে চাই যে, যদি ভাস্কর্যটি (থেমিস) দেবী মূর্তিই হয়, তাহলে যারা তার আরাধনাকারী, স্থাপিত করতে হবে তাদের মন্দিরে। এমনটি হলে কিন্তু দ্বীনদার মুসলমানদের প্রতিবাদ করার প্রয়োজন থাকতো না। আমাদের দেশে যাদুঘরে এবং মন্দিরে দেবী মূর্তি রয়েছে। কই, কখনোই কেউ তা তুলে নেবার জন্য আন্দোলন করেনি। তারা জানে, এদেশে মুসলমান ছাড়াও অন্যান্য ধর্মানুসারী মানুষের বসবাস রয়েছে। কুরআন পাকের নির্দেশনার প্রতি আস্থা থাকার কারণেই দ্বীনদার মুসলমান কখনো বিধর্মীদের ধর্মীয় ব্যাপারে নাক গলাতে যায় না।

    ইসলাম যেমন পরধর্ম সহিষ্ণুতার কথা বলে, তেমনি পরধর্মের সঙ্গে আপোষ করতে নিষেধ করে। এটা স্বাভাবিক, যারা স্বধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান, তারা পরধর্মের প্রতি কোনোরূপ অনুরাগ দেখাতে পারে না। হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থ গীতায় বলা হয়েছে, ‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্ম ভয়াবহ’। ধর্মপ্রাণ মানুষের স্ব-ধর্মের প্রতি অনুরাগী থাকাই বিধেয়। ইসলামের আসমানী কিতাব আল-কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, শক্ত করে ধর এবং তাতে যা আছে তা মনে রাখ, তাহলে তোমরা রক্ষা পাবে’। (সূরা বাকারাহ- ৬৩)।

    এখানে কুরআন পাকের কথা বলা হয়েছে। নির্দেশনা এসেছে তার বিধি-বিধান মেনে চলার। কাফিররা একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেকে বলেছিল, ‘তুমি আমাদের ধর্মও মেনে নাও, আমরাও তোমার ধর্ম মেনে নেবো’। অর্থাৎ- কাফিরদের সঙ্গে মিলে-মিশে ধর্মানুষ্ঠান। এ প্রস্তাবের উত্তর হিসেবে আল্লাহর তরফ থেকে ওহী নাযিল হয়। সেই ওহী ‘সূরা কাফিরূন’ এ সুস্পষ্ট জানা যায় যে, যাদের উপাস্য ভিন্ন তাদের সঙ্গে ধর্ম ব্যাপরে ঐক্যমতে আসার সুযোগ ইসলামে নেই।

    সুতরাং বক্তব্য একটাই, তা হলো, ‘লাকুম দ্বীনুকুম আলিইয়াদ্বীন’। ইসলাম ধর্ম অন্যান্য ধর্মের থেকে সুম্পূর্ণ বিপরীত। অন্যান্য ধর্মে মূর্তি এবং গান-বাদ্য-নাচ উপাসনার অঙ্গ। কিন্তু ইসলামে অইগুলি হারাম। ইসলাম ধর্মের কোনো আচার-আচরণ বিধর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে কিংবা তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করার সুযোগ মুসলমানদের নেই। ইসলামে উদারতা এ পর্যন্তই, অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করা। তদর্থে সুযোগ রাখা হয়নি, মুসলমানের ভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার। ধর্মের ভিন্নতার কারণে সম্প্রদায় থাকবে, কিন্তু কোনো ধর্মানুসারীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না, হিংসা করা যাবে না। এই মত ইসলামের। আর, এমন হলেই একই দেশে সকল ধর্মের লোকেরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানে বাস করা সম্ভব। পারস্পরিক মিলনের জন্য হিন্দুর মুসলমানকে বলার অবশ্যক নেই-

    গরু কোরবানী করা ছেড়ে দাও

                যদি মিঞা ভাই,

    সিনান করায়ে সিঁদুর পরায়ে

                তোরে মন্দিরে নিয়া যাই

    আর মুসলমানেরও হিন্দুকে বলার প্রযোজন নেই-

    যদি আল্লাহ মিঞার ঘরে

                নাহি লও হরিনাম,

    বলদ সহিত ছাড়িব তোমারে

                যাহা হয় হবে পরিনাম

    উল্লিখিত কবিতাংশ কাজী নজরুল ইসলামের প্যাকট কবিতা থেকে উদ্ধৃত করা হলো। নজরুলের জীবনাচার সম্পর্কে সকল শিক্ষিত ব্যক্তিরই জানা আছে। আর, তিনি যে সেকালে উভয় ধর্ম সম্প্রদায়ের কাছেই খুব সামাজিক কদর পাননি, তাও ওয়াকেফ মহলের জানা আছে। প্যাকট কবিতার উপসংহার এ রকম-

    মসজিদ পানে ছুটিলেন মিয়া

                মন্দির পানে হিন্দু,

    আকাশে উঠিল চির জিজ্ঞাসা

                করুন চন্দ্রবিন্দু।

    বস্তুতঃ এটাই সঠিক। এ জাতীয় প্যাকট কখনো টেকে না। সম্রাট আকবরও ‘দ্বীন-ই ইলাহী’ টেকাতে পারেননি, হাতে রাজদন্ড থাকা সত্ত্বেও।

    সেই সুলতানী যুগেও সম্ভবতঃ বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিল। বাংলাদেশের একদার শাসক সুলতান গিয়াসুদ্দীন একদিন শিকারের উদ্দেশ্যে তীর ছুঁড়ে ছিলেন। সেই তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এক বিধবার একমাত্র পুত্র সন্তানের শরীরে বিদ্ধ হয়। ফলে তার মৃত্যু ঘটে। ছেলেটির মা বিচারকের (কাজী) আদালতে সুলতানের বিচার চেয়ে নালিশ (মামলা) করেন। বিচারক সুলতানকে আদালতে তলব করেন। কাজী বিচার করে বিধাবাকে ক্ষতিপূরণ এবং আজীবন ভরণ-পোষণের রায় ঘোষণা করেন। সুলতান এ রায়ের প্রতি খুব সন্তুষ্ট হলেন। সুবিচারক কাজীর প্রতি সুলতান বললেন, ‘আপনি যদি আমাকে দেশের শাসনকর্তা ভেবে পক্ষপাত করে সুবিচার না করতেন, তাহলে এই তরবারী দিয়ে আপনাকে হত্যা করতা’।

    কাজীও সাহস করে সুলতানকে বলেন, ‘আপনি যদি আমার রায় অমান্য করতেন, তাহলে এই বেত মেরে আপনাকে রায় মানাতে বাধ্য করতাম’। এই বলে কাজী তার টেবিলের নীচ থেকে একটি বেত বের করে সুলতানকে দেখালেন। সুলতান কাজীর সুবিচার এবং সৎ সাহসে মুগ্ধ হয়ে তাকেও পুরষ্কৃত করেন।

    জানি না, আমাদের দেশের বিচারকদের সে রকমের স্বাধীনতা আছে কি-না। তবু দেশেবাসীর এটুকু জানা প্রয়োজন যে, সুপ্রিম কোর্টে গ্রীক দেবীর মূর্তিটি কার নির্দেশে স্থাপন করা হয়েছিল এবং কার নির্দেশে তা’ একটু সরিয়ে স্থাপন করা হলো? আর, এই দেবী মূর্তিটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে স্থাপনের হেতুটা কি? বিচারলয় তো বিচার কার্যের জন্য। এ ছাড়া তো বিচারালয়ের অন্য কর্ম থাকার কথা নয়। দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠাও কি তবে অধুনা বিচারালয়ের কার্য তালিকার অন্তর্গত করা হয়েছে?

    বাংলাদেশ সাংবিধান অনুসারে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলেও বাস্তবে মনে হয়, কার্যতঃ ইসলাম নিরপেক্ষ করার চেষ্টা চলছে। এখানে ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন, যেখানে ইসলামী গ্রন্থাদি প্রকাশিত হয় এবং ইমাম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেখানে অনুষ্ঠানে ইসলাম নিষিদ্ধ গান-বাজনা হয়। এখানে ইসলাম ধর্মীয় বিধানাবলী এবং ইসলামের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননাকর লেখা ব্লগাররা ব্লগে পোস্ট করে পার পেয়ে যায়। এখানে ফেসবুকে কা’বা শরীফের অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়। অথচ তার প্রতিবাদে তার নিবৃত্তি নেই। এমন একটি দেশকে ‘ইসলাম নিরপেক্ষ’ বলা অসঙ্গত হয় কিসে?

    পাশাপাশি বিজাতীয় বিধর্মীয় সংস্কৃতি ও ভাব ধারা অবাধ হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবীর আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। প্রতিবাদে খানিকটা স্থান পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু তাড়ানো গেল না।

    বাংলাদেশটা তো নিশ্চয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরও জন্মভূমি। সুপ্রিম কোর্ট তাদেরও। এ দেবী কোনো সর্বজনীন স্থানে থাকতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে অবশ্যই সরকারকে সকল ধর্মের প্রতি নিরপেক্ষ থাকতে হবে। শুধু ইসলাম নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না। কোনো ধর্মীয় অনুভতিতে আঘাত হানার কাজ সবারই পক্ষে পরিত্যজ্য। এবং এটা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই জরুরী। #