• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • প্রধানমন্ত্রীর জি আউটরিচ বৈঠকে অংশগ্রহণ

    শেখ হাসিনা শুক্রবার শিল্পোন্নত দেশসমূহের সম্মেলন জি-৭ এর আউটরিচ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
    জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং জি-৭ সম্মেলনের আয়োজক শিনজো আবে’র আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
    জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও জি-৭ এর সদস্য ব্যতীত বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে এই আউটরিচ বৈঠকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। যার মধ্যে রয়েছে- ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, শ্রীলংকা, পাপুয়া নিউগিনি ও আফ্রিকার দেশ চাদ। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল মনেটরি ফান্ড (আইএমএফ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
    দু’দিনব্যাপী জি-৭ সম্মেলন কেন্দ্রিয় জাপানের মনোরম শহর ইসে-শিমায় গতকাল শুরু হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আউটরিচ বৈঠকের আয়োজনস্থল শিমা কানকো হোটেলের ব্যাংকুয়েট হলে এসে পৌঁছলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁকে স্বাগত জানান।
    প্রধানমন্ত্রী আউটরিচ বৈঠকের দুটি পর্বের আলোচনায় অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, এশিয়া এবং বিশ্ববাসীর উন্নয়নে জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন এবং উন্নত অবকাঠামো বিনির্মাণে সহযোগিতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফটোসেশন এবং মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশগ্রহণ করেন।
    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার কারণেই জাপান বাংলাদেশকে এই বৈঠকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
    এই আউটরিচ বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও অংশগ্রহণ করবেন। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মেইথ্রিপালা শ্রিসেনার সাথে বৈঠক করবেন।

    ইসলাম সম্পর্কে আপনার ধারণা পুরোপুরি অজ্ঞতাপূর্ণ -সাদিক খান , আমি বোকা নই যে লন্ডন মেয়র আমার আইকিউ টেস্ট করবেন : ট্রাম্প ইসলাম সম্বন্ধে জানতে ট্রাম্পকে লন্ডন যাওয়ার দাওয়াত

    যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লন্ডন পরিদর্শনের প্রস্তাব দিয়েছেন নগরীর নবনির্বাচিত মেয়র সাদিক খান। একই সঙ্গে তিনি কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী বলে সর্বত্র নিন্দিত ট্রাম্পকে লন্ডন সফরের সময় সেখানে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ারও প্রস্তাব করেন। এর আগে সাদিক খান তাকে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। এবার তিনি লন্ডনেও মুসলমানদের জীবনযাপন সম্পর্কে তাকে সম্যক অবহিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে চান। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার অভিমত প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। তাই এবার ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে লন্ডনে পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করার আমন্ত্রণ জানালেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। বুধবার সকালে আইটিভির গুডমর্নিং ব্রিটেন অনুষ্ঠানে সাদিক খান বলেন, তিনি (ট্রাম্প) আইএসের মতো চরমপন্থীদের অনুরূপ আচরণ করছেন। এ সময় তিনি বলেন, আসুন আমার স্ত্রী ও মেয়েদের সাথে সাক্ষাৎ করুন, আমার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সাথে দেখা করুন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মরগানকে সাদিক খান বলেন, ইউরোপের রাজধানী শহরের মেয়র হিসেবে একজন মুসলমানের নির্বাচিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে ট্রাম্পভীতি ও ট্রাম্প বিরোধীদের ঐক্যের লক্ষণ। খান বলেন, ট্রাম্পের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে আমি বলছি ইসলাম সম্পর্কে আপনার ধারণা পুরোপুরি অজ্ঞতাপূর্ণ। পশ্চিমাদের উদার নীতি ও ইসলাম সব সময়ই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর আগে ট্রাম্প ইসলাম পশ্চিমা মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করায় এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন লন্ডনের নবনির্বাচিত মেয়র। এর আগের দিন একই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, সাদিক খানের আচরণ খুবই রুঢ়। আমি বোকা নই যে তিনি আমার আইকিউ টেস্ট করতে চাইবেন। লন্ডনের নব নির্বাচিত মেয়র বলেন, তার নীতির অর্থ হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ান লিচেস্টার যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে গেলেও তাদের তারকা খেলোয়াড় রিয়াদ মাহরেজকে নিতে পারবে না। এর অর্থ হচ্ছে বিখ্যাত কেক নির্মাতা নাদিয়া হুসাইন আমেরিকা যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লন্ডনে আমন্ত্রণ জানাই।

    এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ চুরিঃ তদন্তে পুলিশ

    ভূয়া ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন এটিএম থেকে প্রায় একের পর এক বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করার ঘটনা ঘটেছে।

    ইন্টারনেট ব্যাংকিং সিস্টেম সেভেন ব্যাংক পুলিশকে জানিয়েছে অর্থের পরিমান ছিলো ১৪০ কোটি ইয়েন বা ১ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারের সমপরিমান। মে মাসের ১৫ তারিখ বিভিন্ন স্থানের কনভেনিয়েন্স স্টোরের এটিএম মেশিন থেকে টাকা গুলো হাতিয়ে নেয়া হয়।

    পুলিশ বলেছে টোকিও সহ অন্য ১৬টি প্রিফেকচারে রাতে ৩ ঘন্টায় ১,৪০০ এটিএম এ একযোগে এই চুরি সংঘটিত করা হয়।

    তদন্তকারীরা মনে করছেন ১০০র বেশি মানুষ এই গন অর্থ উত্তলনের সাথে জড়িত ছিলো।

    পুলিশ বলছে সম্ভবত ১,৬০০ ক্রেডিট কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্যও ফাঁস করা হয়। এসব কার্ড গুলো ইস্যু করেছিলো একটি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাংক।

    মেশিন অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ সনাক্ত করার পর সেগুলোর ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। কার্ড গুলো চীনা অক্ষর বহন করছিলো।

    তদন্তকারীরা বের করার চেষ্টা করছেন কী ভাবে ক্রেডিট কার্ড বিতরণ করা হয়েছিলো, এবং সেগুলো দিয়ে অর্থ উত্তলণ করা হয়েছিলো।

    শবে বরাত মহিমান্বিত রজনী 

    মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী: আল্লাহ তা’আলা পরম দয়ালু। অসীম মেহেরবান। তিনি উদার ক্ষমাশীল। ক্ষমা তাঁর অন্যতম আদর্শ, শ্রেষ্ঠ গুণ। ক্ষমা করার জন্য ক্ষমা প্রার্থীর আবেদনের অপেক্ষায় থাকেন তিনি। বাতলে দিয়েছেন এর অসংখ্য পথ ও পাথেয়। স্বীয় বান্দাদেরকে প্রদান করেছেন তিনি ক্ষমার সুবর্ণ সুযোগ আর বিশাল বিশাল অফার। বরাদ্দ করেছেন ক্ষমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সময়। যে সময়ে তিনি মহা পাপীদের মুক্তি দেন, মর্যাদা বাড়িয়ে দেন- বাড়িয়ে দেন ভালো কাজের বিনিময় অনেক অনেক গুণে। মুছে দেন পাপীদের কালিমার সব চিহ্ন। এই মহা অফারসমূহের অন্যতম একটি হলো শবে বরাত। শবে বরাতে মুক্তি ও রহমতের দ্বার উন্মুক্ত থাকে শবে বরাত একটি মহিমান্বিত রজনী। এই রজনীতে পরম করুণাময় তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। পাপীদেরকে উদার চিত্তে ক্ষমা করেন। এ মর্মে একটি সহীহ হাদীস নি¤œরূপÑ “হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “আল্লাহ তা’আলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টিকুলের প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক বিদ্বেষী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। “সহীহ ইবনে হিব্বান” (১২/৪৮১, হাদীস নং ৫৬৬৫) ইমাম তাবরানী, কাবীর (২০/১০৯ হা. নং ২১৫), আওসাত (৭/৬৮ হাদীস নং ৬৭৭৬), বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান (৫/২৭২ হা. নং ৬৬২৮) হাদীস বিশারদ নির্ভরযোগ্য সব উলামায়ে কেরামের গবেষণা মতে এ হাদীসটি ‘সহীহ’ বিশুদ্ধ। উল্লিখিত বিষয়ে প্রায় এক ডজনের বেশি হাদীস নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে সংকলন করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি আছে সহীহ। কয়েকটি আছে ‘হাসান’ (গ্রহণযোগ্য উত্তম হাদীস) এ ছাড়া কিছু আছে দুর্বল। কিন্তু হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী হাদীস গ্রহণযোগ্য। এ মর্মে যেসব সাহাবায়ে কেরাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে তাঁদের অন্যতম কয়েকজন হলেন, হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.), হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.), হযরত আয়েশা (রা.), হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা.), হযরত আবূ সা’লাবা (রা.), হযরত আবূ হুরায়রা (রা.), হযরত আউফ ইবনে মালেক (রা.), হযরত কাসীর ইবনে মুররাহ (রা.), হযরত উসমান ইবনে আবীল আস (রা.) এবং হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (রা.)। উপরোল্লিখিত হাদীসটি যেসব বিশ্ব বরেণ্য হাদীস বিশারদ ইমামগণ সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাদের অন্যতম হলো, আরব বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গবেষক ও মান্যবর ইমাম হাফেজ নূরুদ্দীন হায়সামী (রহ.)। তিনি তাঁর নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ “মাজমাউয যাওয়ায়েদ”-এ লেখেনÑ“ইমাম তাবরানী স্বীয় হাদীস গ্রন্থ ‘কাবীর’ ও ‘আওসাত’-এ হাদীসটি সংকলন করেছেন। উভয় গ্রন্থে এ হাদীসের বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।” মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫ এ ছাড়া আরব ও অনারব অসংখ্য উলামায়ে কেরাম শবে বরাতের হাদীসগুলোকে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। আরব বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মান্যবর ইমাম আল্লামা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এবং আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীও শবে বরাত সম্পর্কীয় হাদীসগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন । ইকতিযা, পৃ. ৪৮৪ সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা ৩/১৩৫ আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী লেখেন “শবে বরাত সম্পর্কীয় হাদীসের ক্ষেত্রে সার কথা হলো, শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো সমষ্টিগতভাবে নিঃসন্দেহে ‘সহীহ’। হাদীস অত্যধিক দুর্বল না হলে আরো কমসংখ্যক সূত্রে বর্ণিত হাদীস সহীহ হিসেবে গণ্য হয়।” সিলসিলাতুস সহীহা ৩/১৩৮-১৩৯ শবে বরাত ভাগ্য বণ্টনের রাত হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ“নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবান রাতে (শবে বরাতে) যাবতীয় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ফায়সালা করেন। আর শবে কদরে তা নির্দিষ্ট দায়িত্বশীলের নিকট অর্পণ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) আরো বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা লওহে মাহফূজ থেকে পূর্ণ কুরআনে কারীম একত্রে অবতরণ করেন শবে বরাতে। আর অবতরণের ধারা সমাপ্ত করেন শবে কদরে। লুবাব, আবু হাফস উমর ১৭/৩১১, তাফসীরে রাযী ২৭/২৩৯, কুরতুবী ১৬/১২৬ বলাবাহুল্য, তাফসীর বিশারদ ইমামদের ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণ হয় শবে কদর এবং শবে বরাত উভয় রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তবে শবে বরাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভাগ বণ্টন করা হয়। তাই এর নাম মুবারক রাত বা ভাগ্য রজনী। তাফসীরে কাশশাফ ৪/২৬৪, রূহুল মাআনী ৯/১১২ শবে বরাতে রাত জেগে ইবাদত করা ও পরদিন রোযা রাখা হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। এতে তিনি এমন দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি মারাই গিয়েছেন। আমি যখন অবলোকন করি, তখন বিছানা থেকে উঠে নবীজী (সা.)-এর বৃদ্ধাঙ্গুলিতে নাড়া দিই। এতে করে তাঁকে সচেতন বুঝতে পারি, আমার বিশ্বাস হলো তিনি জীবিত আছেন। অতঃপর নিজ বিছানায় ফিরে এলাম। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠালেন। নামায সমাপ্ত করে তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কী ধারণা হয়েছে? নবী কী তোমার সাথে সীমালঙ্ঘন করেছে? আমি বলি, না, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! তবে আপনার দীর্ঘ সেজদার কারণে আমার মনে হয়েছে আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন। অতঃপর মহানবী (সা.) বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি জানো আজকের এ রাতটি কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত। নবীজী (সা.) বললেন, “এ রাতটি মধ্য শাবানের রাত (শবে বরাত)। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের দয়া করেন, তবে হিংসুক ব্যক্তিদের স্বীয় অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন।” বায়হাকী শুআবুল ঈমান ৩/৩৮৩, হা. ৩৮৩৫, আততারগীব ওয়াত তারহীব ২/৭৩-৭৪ ইমাম বায়হাকী (রহ.) উল্লিখিত হাদীসটি সংকলন করেছেন। তিনি এ হাদীসটি সম্পর্কে গ্রহণ করার মতো উত্তম মুরসাল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন। সাথে সাথে শবে বরাতের ফযিলতপূর্ণ অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে এই হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পাবে। সুনানে ইবনে মাজায় হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনÑ পনের শাবানের রাত যখন আসে, তোমরা এই রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোযা রাখো। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে আসেন আর বলেন, “কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিযিক অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিযিক প্রদান করব। আছে কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।” ইবনে মাজাহ সুনান পৃ. ৯৯ হা. ১৩৮৮, বায়হাকী শুআবুল ঈমান ৩/৩৭৮ হা. ৩৮২২ হাদীস বিশারদ ইমামগণের গবেষণা মতে এ হাদীসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। তবে এতে শুধু ইবনে আবী সাবূরা নামক এক ব্যক্তি রয়েছে, তার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে হাদীসটি আংশিক সামান্য দুর্বল বলে গণ্য হবে। এ ধরনের দুর্বল হাদীস ফাযায়েলের ক্ষেত্রে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য শবে বরাত শীর্ষক হাদীসগুলোকে সমষ্টিগতভাবে হাদীস বিশারদ ইমামগণ বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন, তাই এ হাদীসটিও গ্রহণযোগ্য হবে। শবে বরাতে যা বর্জনীয় এ রাতে নির্দিষ্ট কোনো আমল বা নির্দিষ্ট সংখ্যায় কোনো কাজকর্ম কুরআন-হাদীসে বর্ণিত নেই। নেই নামাযের কোনো নির্দিষ্ট রাক’আত সংখ্যা, ভিন্ন কোনো পদ্ধতি। এ রাতে নামায, দু’আ ও কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নফল আমলের অন্তর্ভুক্ত। আর যাবতীয় নফল আমল আপন আপন ঘরে একাগ্রচিত্তে পড়া উত্তম। তাই এ রাতে নফল নামায আদায়ের জন্য দলে দলে মসজিদে জমকালো আনুষ্ঠানিকতা সৃষ্টি করা ঠিক নয়। তবে কোনো ধরনের আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত মসজিদ নামাযের স্থান হিসেবে এতে সমবেত হয়ে গেলে কোনো আপত্তির কারণ নেই। অনুরূপভাবে হালুয়া-রুটি, মিষ্টি বিতরণ এবং বাসাবাড়ি, মসজিদ, দোকান, অফিস ইত্যাদিতে আলোকসজ্জা করা, পটকাবাজি, আতশবাজি, কবরস্থানে পুষ্প অর্পণ ও আলোকসজ্জা করা ইত্যাদির কোনো ভিত্তি নেই। নেই সাহাবায়ে কেরাম ও নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরামের অনুসৃত আমলের কোনো প্রমাণ। তাই এ সব কুসংস্কার পরিপূর্ণরূপে পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি। কবর যিয়ারতের বিধান হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এক রাতে বিছানায় পাইনি। তখন খোঁজ করার জন্য বের হয়ে তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে (কবরস্থানে) পাই। (এমতাবস্থায় কথা প্রসঙ্গে) তিনি বলেনÑ“মধ্য শাবান বা শাবানের পঞ্চদশ রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন এবং বনু কালব গোত্রের ছাগল ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন।” তিরমিযী, সুনান ১/১৫৬ হা. ৭৩৯, ইবনে মাজাহ-পৃ. ৯৯ হা. ১৩৮৯ হাদীসটির মূল সূত্রে এক স্থানে ধারাবাহিকতা ছিন্ন হয়েছে। তবে পূর্বোল্লিখিত শবে বরাত সম্পর্কীয় অসংখ্য হাদীসের সমন্বয়ে সমষ্টিগতভাবে হাদীসটি সহীহ পর্যায়ে গণ্য হবে। তাই হাদীসটি গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য। এ হাদীসে বিশেষভাবে লক্ষণীয় একটি বিষয় হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) শবে বরাতে জান্নাতুল বাক্বী (কবরস্থানে) গিয়েছিলেন। এতে কবরস্থানে যাওয়া এ রাতের একটি উল্লেখযোগ্য আমল হিসেবে প্রমাণ বহন করে। তবে উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ রাতে কবরস্থানে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনি তো একাকী গিয়েছিলেন। গিয়ে ছিলেন নির্জনে অনানুষ্ঠানিকভাবে। তাই কবর যিয়ারতের নামে দলবদ্ধ হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান করা, জমকালো অনুষ্ঠানে পরিণত করা, কবরে আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি, পুষ্পঅর্পণে লিপ্ত হওয়া, বিনোদন ও নারী-পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত করা ইত্যাদি শবে বরাতের নামে বাড়াবাড়ি ও ধর্মবিকৃতির নামান্তর। এ সবই ইসলামী আদর্শ বিবর্জিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাগণের অনুসৃত আমল থেকে দূরে-অনেক দূরে। তাই শরীয়তের যাবতীয় ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও চরমপন্থা পরিহার করে শরীয়তকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা একান্ত অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বোঝা ও আমল করার তৌফিক দিন। শাবান মাসে সবধরনের পাপাচার হতে মুক্ত থেকে এ মাসের যথাযথ মূল্যায়ন এবং কল্যাণ লাভে সবাইকে ধন্য করুন।

    আণবিক বোমার শিকার মানুষদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন না ওবামা

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ সপ্তাহে জাপান সফরে আসছেন। তার জাপান সফরের প্রাক্কালে তিনি এনএইচকে’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়তে তার প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট শনিবার ভিয়েতনাম’র উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেছেন।

    বুধবার তিনি ইসে শিমা’তে গ্রুপ৭ এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জাপানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।

    কেন তিনি হিরোশিমা সফরের সিদ্ধান্ত নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবামা বলেছেন, হিরোশিমা সফরের জন্যে এটিই উপযুক্ত সময়।

    তিনি বলেন “জি৭ সম্মেলন হিরোশিমা এবং শান্তি স্মারক পার্কের নিকটেই অনুষ্ঠিত হবে। আমার প্রথম জাপান সফরের সময়ে আমি বলেছিলাম আমি এ নিয়ে চিন্তা করছি এবং আমি এই সফরে আগ্রহী। আমার হাতে (মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে) আর মাত্র কয়েকমাস বাকী, তাই আমার মনে হলো এখন এই সফরে যাওয়ার জন্যে উপযুক্ত সময়।”

    ওবামা বলেন “আমার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র অতীত স্মৃতিচারণ নয়, বরং যুদ্ধে দু’পক্ষেরই অনেক নিরিহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আমাদের উচিত শান্তি ও সংলাপের জন্যে সব কিছু করার চেষ্টা করা।”

    ওবামা বলেন, আণবিক বোমায় বেঁচে যাওয়াদের প্রতি তিনি দুঃখ প্রকাশ করে কোনো বার্তা দেয়ার তার অভিপ্রায় নেই।

    তিনি বলেন “আমার মনে হয় এটা উপলব্ধি করা উচিত, যুদ্ধের মধ্যে নেতৃবৃন্দ সব ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা এবং পরীক্ষা করা হলো ঐতিহাসিকদের বিষয়। কিন্তু সাড়ে সাত বছর এই আসনে বসার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি নেতাদেরকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, বিশেষ করে যুদ্ধের সময়।”

    জাপানি পাসপোর্টের নক্সা পাল্টাচ্ছে 

    জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্টের ভেতরের পৃষ্ঠা গুলোর নক্সা পাল্টে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে ভিসা’র পাতায় কয়েক শতাব্দীর পুরোনো কাঠ খোদাই করে মাউন্ট ফুজির দৃশ্য প্রিন্ট করা রয়েছে।

    মন্ত্রণালয় বলেছে নতুন পাসপোর্ট গুলো ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে শুরু করে ১৯শ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত উকিয়ো-এ শিল্পী কাৎসুশিকা হোকুসাই’র মাউন্ট ফুজি’র ৩৬ রকম দৃশ্য থেকে ২৪টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

    এগুলো ভিসা পাতার পটভূমি হিসেবে থাকবে, যেখানে কোনো দেশে প্রবেশ বা বেরিয়ে যাওয়ার স্ট্যাম্প দেয়া থাকে।

    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত ভাবে পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এনে থাকে যাতে পাসপোর্টের নকল তৈরি করা সহজ সাধ্য না হয়।

    ভারতের ‘আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত: মরুভূমি হবে বাংলাদেশ  

    ‘আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। প্রকল্পটি বন্ধে সরকার তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে না পারলে গোটা দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভারত এই প্রকল্পের কাজ জোরালোভাবে এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় এ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও ভারতের এমন উদ্যোগে আপত্তি তোলা হয়েছে। চলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাওয়ার প্রস্তুতি। এদিকে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বীরপ্রতীক গতকাল বুধবার ইনকিলাবকে বলেছেন, ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রী উমা ভারতীর বক্তব্য আমাদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান। যদি না হয়, প্রয়োজনে আমরা বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলব। উল্লেখ্য, গত ১৬ মে বিবিসি জানায়, ভয়াবহ খরা সামাল দিতে ভারত সরকার তাদের বিতর্কিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যে প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী উমা ভারতীকে উদ্ধৃত করে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো থেকে পানি প্রত্যাহার করে খরাকবলিত এলাকায় সরবরাহ করার ওপর এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত সরকার। ১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট সরকার গঠনের পর প্রথম আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প হাতে নেয় ভারত। পরে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের আমলে পরিবেশবাদীদের বিরোধিতার কারণে তা এগোয়নি। ২০১২ সালে ভারতের উচ্চ আদালত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মতি দেয়। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নর্মদা ও শিপ্রা নদীকে খালের মাধ্যমে যুক্ত করার কাজের মধ্য দিয়ে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ভারতের এমন সর্বনাশা প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন দেশটির পরিবেশবাদীরাও। তারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে বলছেন, এভাবে নদীর পানি প্রত্যাহার করা হলে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশই শুধু নয়, ভারতের জন্যও তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, ভারত সরকার পরিবেশের ওপর এ প্রকল্পের প্রভাব সঠিকভাবে যাচাই না করেই ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। আর সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভার ও পিপল-এর সদস্য হিমাংশু ঠাক্কারকে উদ্ধৃত করে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদী সংযোগ প্রকল্পের মূল ধারণা হলোÑযেখানে পানির প্রবাহ উদ্বৃত্ত, সেখান থেকেই খরা প্রবণ এলাকাগুলোতে পানি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা চলছে, তাতে ভবিষ্যতে কোন নদীর কী অবস্থা হবে তা বোঝা সম্ভব নয়। আর কোন নদীতে কী পরিমাণ পানি উদ্বৃত্ত আছে, কোথায় ঘটতিÑসে বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাও নেই। এ রকম অবস্থায় প্রকল্পটি চালু করা হলে ভবিষ্যতে তা ভারতের জন্যও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ভারতের পরিবেশবাদী কর্মীদের এমন বিরোধিতা সত্ত্বেও উমা ভারতী বিবিসিকে বলেন, ‘নদী সংযোগ প্রকল্প আমাদের প্রাইম এজেন্ডা এবং এ বিষয়ে জনগণ আমাদের পক্ষে। দ্রুত এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাঁচটি খাল খননের কাজ এগিয়ে চলেছে এবং এর মধ্যে উত্তর ও মধ্য প্রদেশের কেন-বেতওয়া সংযোগ দিয়ে যে কোনো সময় পানিপ্রবাহ চালু করা সম্ভব হবে। ‘এরপর আমরা দামান গঙ্গা-পিঞ্জল সংযোগ চালু করতে পারব, সেক্ষেত্রে মুম্বাইয়ের সুপেয় জলের অভাব পূরণ করা সম্ভব হবে।’ আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ভারতের মিডিয়ায় ফলাও করে সংবাদ প্রচার হলে ওই সময় বাংলাদেশ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ওই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছিল, ভারতের এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশকে গভীর উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যপারে একটি ‘নোট ভারবাল’ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর পরই প্রকল্পটি নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে ওই সময় লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনা নিয়ে ভারতের এমন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করেছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রকল্প তারা নেবেন না। বিশেষ করে ‘বরাক নদীর উজানে টিপাইমুখ ড্যাম প্রকল্প’ এবং ‘আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প’ করার আগে তারা বাংলাদেশের অনুমতি নেবে। কিন্ত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প শুরু করা নিয়ে যে সংবাদ বিবিসিতে প্রচার হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীরবিক্রম বলেছেন, ভারতের এমন সর্বনাশা প্রকল্প বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে এ ধরনের প্রকল্প বন্ধে ভারত সরকারকে চাপে রাখা। জানা যায়, ভারতের ন্যাশনাল ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি প্রায় ২০ বছরের পর্যবেক্ষণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩৮টি নদীসহ বিভিন্ন নদীর মধ্যে ৩০টি সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার বিশেষ দিক হচ্ছে নদীর এক অববাহিকার উদ্বৃত্ত পানি অন্য অববাহিকায় যেখানে ঘাটতি রয়েছে সেখানে স্থানান্তর করা। এই ২৯টি সংযোগ খালের মধ্যে ১৩টি হিমালয় বাহিত আর ১৬টি পেনিনসুলার বা বিভিন্ন নদী ও উপদ্বীপ থেকে উৎসারিত। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত সারাদেশে ৭৪টি জলাধার ও বেশ কিছু বাঁধ নির্মাণ করবে। ফলে বর্ষার সময় সঞ্চিত পানি শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে কৃষি ও অন্যান্য কাজে সরবরাহ করবে। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমেও এসব সংযোগ খালের মাধ্যমে এক জায়গায় পানি আরেক জায়গায় নেয়া যাবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালের মধ্যে সংযোগ খালসমূহ খনন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৪টি লিংক তৈরি করা হবে। সেগুলো হচ্ছেÑকোচি-মেসি লিংক; কোচি-ঘাঘারা লিংক; গংদক-গঙ্গা লিংক; ঘাঘারা-যমুনা লিংক; সারদা-যমুনা লিংক; যমুনা-রাজস্থান লিংক; রাজস্থান-সবরমতি লিংক; ছনার-সোন ব্যারাজ লিংক; সোনড্যাম-গঙ্গা লিংক; মানস-সংকোশ-তিস্তা-গঙ্গা লিংক; জোগিঘোপা-তিস্তা-ফারাক্কা লিংক; ফারাক্কা-সুন্দরবন লিংক; গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা লিংক এবং সুবর্ণরেখা-মহানদী লিংক। মূলত এই লিংকগুলোর মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরে নদীগুলোর মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে প্রয়োজন মতো এক নদীর পানি অন্য নদীতে নিয়ে যাওয়া যায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খাল কেটে বৃষ্টি প্রধান উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পানি পশ্চিম ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ পশ্চিম ভারতে অপেক্ষাকৃত বৃষ্টিপাত কম হয় এবং সেখানে আবহাওয়া শুষ্ক। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি খাল কেটে রাজস্থান, গুজরাটসহ দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। আবার গঙ্গার পানি গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ১৭৪ বিলিয়ন কিউসেক পানি পশ্চিম ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে যার মাধ্যমে এসব রাজ্যের ১৬ লাখ হেক্টর জমিতে কৃষিকাজ করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো ভারতজুড়ে একটি নদীপথ তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে ভারতের উষ্ণাঞ্চলে পানির প্রবাহ নিশ্চিত হয়ে যাবে। দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তঃনদী সংযোগের ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ ভারতের অন্য অঞ্চলে চলে গেলে তার ভয়াবহ প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। ইতোমধ্যেই ফারাক্কা এবং গজলডোবার বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের একটি বিশাল অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আর যদি ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তাহলে গোটা বাংলাদেশই পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। ভারত প্রকৃত অর্থে কী করছে, আমরা তার টেকনিক্যাল দিকগুলো জানতে চাইবো। আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবো-কেন তারা এমন বিতর্কিত একটি প্রকল্প করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভাটির দেশ। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা বাধাপ্রাপ্ত হয় এমন কিছু করাটা ঠিক হবে না। তিনি জানান, ভারতের সাথে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। দু’দেশের স্বার্থেই ভারতকে এসব নদী বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতেই ভারতকে তার আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্প নিয়ে ভারতের পরিবেশবাদীরাও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের জন্যও এই প্রকল্প উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তার কারণ। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এর নিস্পত্তি না হলে বাংলাদেশ প্রয়োজনে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলবে। দেশের বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কাজেই সরকারকে রাজনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। একইভাবে যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত গঙ্গা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি সরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে পড়বে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ তার এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা বারবার ভারতকে জানিয়েছে।

    গরমের ফল তরমুজের উপকারিতা  

    গরমের অশ্বস্তি থেকে মুহূর্তেই প্রশান্তি আনে মৌসুমি ফল তরমুজ। শরীর ঠা-া রাখতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। তরমুজের নানান রকম উপকারিতা রয়েছে। এই ফলে শতকরা প্রায় ৯২ ভাগ পানি আছে। তাই নিদারুণ গরমের মধ্যে তরমুজ খেলে সহজেই মিটে পানির তৃষ্ণা। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম পানি, আঁশ ০.২ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম। এছাড়াও তরমুজে ক্যালসিয়াম রয়েছে ১০ মি.গ্রাম, আয়রন ৭.৯ মি.গ্রাম, কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি। তরমুজের বিশেষ কয়েক ধরনের অ্যামাইনো এসিড নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালী বজায় রাখে। উচ্চরক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। এতে বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণও অনেক। বিটা ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে। প্রতিদিন ২ কাপের মতো তরমুজ খেলে শরীরে ভিটামিন এ-র চাহিদা পূরণ হয়। তরমুজ খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ থাকে। কারণ ভিটামিন এ ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। তরমুজের ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১ শরীরে এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুই কাপ পরিমাণ তরমুজ খেলে শরীরে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি-র চাহিদা মেটে। তরমুজে আরও আছে পটাশিয়াম, যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। পটাশিয়াম শরীরে ফ্লুইড ও মিনারেলসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ২ কাপ তরমুজে ৩৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া পরিমাণে কম হলেও তরমুজে সোডিয়াম রয়েছে যা সহজেই শরীরের চাহিদা পূরণে কাজ করে থাকে। তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তরমুজ খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস জনিত অসুস্থতা কমে যায়। এছাড়াও নিয়মিত তরমুজ খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। ফলে শরীর থাকে সুস্থ ও সতেজ। তরমুজে আছে ক্যারোটিনয়েড। আর তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে এবং চোখের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যারটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আর তাই তরমুজ খেলে পেট ভরে যায় কিন্তু সেই অনুযায়ী তেমন কোনো ক্যালরী শরীরে প্রবেশ করে না। ফলে তরমুজ খেয়ে পেট পুরে ফেললে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা যৌনশক্তির দিক থেকে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। একটি তরমুজে প্রচুর পরিমাণে সিট্রোলিন নামের অ্যামাইনো এসিড থাকে যা ভায়াগ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তরমুজ হার্টের জন্য ভালো। রক্তবাহী ধমনীকে নমনীয় ও শীতল রাখে এটি। স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে এ ফলটি। কিডনির জন্য বেশ উপকারী ফল তরমুজ। কিডনি ও মূত্রথলিকে বর্জ্যমুক্ত করে ফলটি। কিডনিতে পাথর হলে, চিকিৎসকরা ডাবের পানি, তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া রোগাক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে দ্রুত সতেজ করে তুলতে ভূমিকা রাখে তরমুজ।

    কানতো অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প

    সোমবার রাতে ৫.৬ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প টোকিও এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্প থেকে কোনো সুনামির সতর্কতা নেই।

    জাপানের আবহাওয়া বিভাগ বলেছে স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২৩ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো টোকিওর উত্তরে উত্তর ইবারাকি প্রিফেকচারের মাটির ৪০ কিলোমিটার গভীরে।

    ইবারাকি প্রিফেকচারের ওমিতামা শহরে জাপানি ০ থেকে ৭ মাত্রার জাপানি ভূমিকম্প স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৫ মাইনাস।

    এ ছাড়াও কানাগাওয়া, সাইতামা, ইয়োকোহামা, মিতো সহ কানতো অঞ্চলের বিস্তীর্ণ স্থান ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে ওঠে।

    পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশের পরিমাণু চুল্লী গুলোতে ভূমিকম্পের ফলে এখনো পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। অনেক স্থানে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে গেলেও পরে তা পুনরায় শুরু হয়।

    আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস   

    আজ ১৬ মে ৪০তম ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল এদেশের লাখ লাখ দেশপ্রেমিক জনতা। যার ডাক দিয়েছিলেন সারা বিশ্বের মজলুম মানুষের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আজ থেকে চার দশক আগে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ নেতা। ডাক দিয়েছিলেন ফারাক্কা লংমার্চের। নিযুত কণ্ঠের গগনবিদারী স্লোগানের মধ্যে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মারণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বিশ্ববাসী। সেদিনের ঘোষণা আজও পদ্মা অববাহিকার আকাশে-বাতাসে অনুরিত হয়। রাজশাহী তথা দেশবাসীর কাছে ১৬ মে এক ঐতিহাসিক দিন। মওলানা ভাসানীর আহ্বানে সারাদেশ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাখ লাখ মানুষ ছুটে এসেছিল ফারাক্কা লংমার্চে যোগ দেয়ার জন্য রাজশাহীতে। বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা মানুষের পদভারে রাজশাহীর আকাশ-বাতাস ছিল প্রকম্পিত। ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের অনেকদূর পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিল জনতা। যা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। মাদ্রাসা ময়দানের মঞ্চে বিখ্যাত তালের টুপি আর সফেদ লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরিহিত মওলানা ভাসানী লংমার্চ নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে যাওয়ার আগে দশ মিনিটের বজ্র নির্ঘোষ ভাষণ দেন, যা ছিল দিকনির্দেশক ও উদ্দীপক। নিযুত কণ্ঠের স্লোগানে একই আওয়াজÑমারণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। চল চল ফারাক্কা চল। এরপর তার নেতৃত্বে শুরু হয় ফারাক্কার উদ্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে যাত্রা। ফারাক্কা অভিমুখী লংমার্চের অংশগ্রহণকারীদের খিচুড়ি, চিড়া, গুড়, রুটি, মুড়ি দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগতম জানিয়েছিল এখানকার মানুষ। খরতাপ আবার কখনো ঝড়-বৃষ্টির ঝাপটা তোয়াক্কা না করে লংমার্চ এগিয়েছে। যার অগ্রভাগে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। প্রকাশ্যে মওলানা ভাসানী লংমার্চ করলেও এর পেছনের নায়ক ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি মওলানা ভাসানীর এ ইস্যুকে জাতিসংঘ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। মওলানা ভাসানী ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করে দিল্লির শাসকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তার লংমার্চ ফারাক্কা ব্যারাজ হতে বেশ কয়েক মাইল দূরে কানসাটে শেষ হয়েছিল। তখনই ভয়ে ভারত সরকার ওই সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছিল। মওলানা ভাসানী কানসাটে তার সমাপনী বক্তব্যে বলেছিলেন, ভারতের জানা উচিত বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। তিনি মজলুম জনতার আর্তনাদে সাড়া দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান। এতে ব্যর্থ হলে গোটা দুনিয়ার মানুষ ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, গঙ্গার পানি চাই। এটা আমাদের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার আমরা আদায় করে ছাড়ব। আফসোস লংমার্চের ছয় মাস পর ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান সেই মহাপুরুষ। মওলানা ভাসানীর লংমার্চের পর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে পাঁচ বছর মেয়াদি পানি বণ্টন চুক্তি করে। বিগত হাসিনা সরকারের আমলেও ত্রিশ বছর চুক্তি করে। কোনো গ্যারেন্টিক্লজ ছাড়া। পরিতাপের বিষয় আজ অবধি ভারত সরকার এ চুক্তির মর্যদা দেয়নি। চুক্তি মোতাবেক পানি বাংলাদেশ কখনো পায়নি। বরং পানি প্রবাহের হার সর্বনি¤œ পর্যায়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত রেখেই ক্ষান্ত হয়নি। তার পানি শোষণ নীতি আরো আঁটোসাঁটো করেছে। উজানে অসংখ্য স্থাপনা করে পানি প্রত্যাহার করে চলেছে। যার পরিণতিতে এপারের বাংলাদেশের পদ্মা নদীসহ অসংখ্য নদনদী খালবিল অস্তিত্ব হারিয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা নামের নদীটি এখন শীর্ণ খালে পরিণত। পদ্মা নামে নদীটি পানির নিচে চাপা পড়ে ফসিলের রূপ নিয়েছে। হারিয়েছে জীববৈচিত্র্য। আবহাওয়ায় ভর করেছে রুক্ষতা। পদ্মা পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবনজীবিকা আজ বিপন্ন। এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে এ অঞ্চলের মানুষ। শুধু ফারাক্কা নয় গজল ডোবাসহ অভিন্ন সব নদীকে পণবন্দী করে অসভ্য অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছে। গোটা দেশের মানুষকে ধ্বংস করার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে ভারত। এমন ভয়াবহ অবস্থায় ভারতের তাঁবেদার সরকার তো বটেই, কথিত দলকানা পোষমানা সুশীলরা এ নিয়ে কথা বলতে চান না। পাছে যদি দাদা-দিদিরা নাখোশ হয়। আজ ফারাক্কা দিবস হলেও তাদের মুখে ‘রা’ নেই। তেমন কর্মসূচিও চোখে পড়ে না। বেশীর ভাগ মিডিয়ায় উপেক্ষিত দিনটি। কারণ একই। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দেশপ্রেমিক হাতেগোনা কটি গণমাধ্যম স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে দিনটির কথা। সচেতন বুদ্ধিজীবীরা ঘরোয়াভাবে আলোচনার মধ্য দিয়ে ইতি টানছেন। কী করবেন দলকানা পোষমানাদের সংখ্যা যে বেশী। আর তাই আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণে আসছে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কথা। দেশের এই ক্রান্তিকালে তার মতো নেতার বড্ড প্রয়োজন। যিনি ভারতের এই পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে খামোশ বলে গর্জে উঠবেন। যার ডাকে সর্বস্তরের মানুষ ফারাক্কা লংমার্চের মতোই ছুটে আসবে। গণজমায়েত আজ এদিকে ফারাক্কা লংমার্চের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ফারাক্কা লংমার্চ উদযাপন কমিটি আজ রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পাড়ে আয়োজন করেছে বিশাল গণজমায়েতের। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞগণ বক্তব্য রাখবেন। যার মধ্যে রয়েছেন Ñ ড. এস আই খান, সাবেক পানি ও পানি বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আহ্বায়ক ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও প্রতিষ্ঠাতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রফেসর ড, জসিম উদ্দিন আহমদ সাবেক ভিসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কবি ফরহাদ মজহার গবেষক ও পরিবেশবিদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রকৌশলী এম ইনামুল হকসহ স্থানীয় পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

    নতুন ধরনের ভূমিকম্পঃ ঝুঁকির মুখে বহুতল দালানকোঠা

    গত এপ্রিল মাসে কুমামোতো’তে আঘাত হানা ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে গবেষকরা একটি সুনির্দিষ্ট ধরনের ভূতাত্বিক আন্দোলনের বিষয় সম্পর্কে জানতে পেয়েছেন।

    তারা বলছেন শক্তিশালী ভূমিকম্প দীর্ঘক্ষণ ধরে ভূমিকে আন্দোলিত করছিলো, যা অতীতে কখনো কোনো ফল্ট বিচ্যুতির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন আন্দোলন এতোটাই শক্তিশালী ছিলো যে তা বহুতল ভবনকেও ফেলে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিলো।

    কোগাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োশিআকি হিসাদা টোকিও’র একটি ২৯তলা ভবনের একটি সিমুলেশন তৈরি করে একই ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে কী ঘটতে পারে তা প্রদর্শন করেন।

    কুমামোতো ভূমিকম্পের অনুরূপ শক্তিশালী ভূমিকম্পে দীর্ঘ সময় ধরে ভূমি আন্দোলিত হওয়াতে ১৫০ মিটার উঁচু ভবনটি দেখে মনে হচ্ছিলো যেন তা সবলে নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

    তার তৈরি সিমুলেশনে ভবনের সবচেয়ে উঁচু তলাটি ৩.৫ মিটার পর্যন্ত সরে যেতে পারে বলে দেখানো হয়েছে। ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরও ভবনটি একদিকে হেলে থাকতে পারে।

    হিসাদা বলেছেন দীর্ঘ সময় ধরে ভূমির আন্দোলন, বহুতল ভবনের পরিকল্পিত ভূমিকম্প সহ্য ক্ষমতার তিনগুন বেশি শক্তিশালী। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে অনেক অবকাঠামো এ ধরনের কম্পনে টিকে থাকতে সক্ষম হবে না।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারের কর্মকর্তাদেরকে সক্রিয় ফল্টের নিকটে থাকা শহরাঞ্চলে ভূমিকম্প নিরাপত্তা জোরদারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।

    বাড়ছে পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি  

    দেশের পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি বাড়ানো হচ্ছে। তবে পাসপোর্ট বইয়ের পাতা আপাতত বাড়ানো হচ্ছে না। মেয়াদের ক্ষেত্রে ৫ ও ১০ বছর উভয় ধরনের ব্যবস্থা রেখে পাসপোর্টের মেয়াদ, পাতা ও ফি বাড়ানো হচ্ছে। ১০ বছরের পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি চার হাজার টাকা এবং জরুরি ফি সাত হাজার করার প্রস্তাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এই ফি সাড়ে পাঁচ হাজার আর ১১ হাজার টাকা নির্ধারণে মতামত দিয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে পাসপোর্ট ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভায় পাঠানোর জন্য তৈরি করা একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্টের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও পাসপোর্টসেবা কার্যক্রম সহজতর যুগোপযোগী করার জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ ও পাতার সংখ্যা বাড়ানো এবং এ-সংক্রান্ত পাসপোর্ট ফি নির্ধারণ ও পুনর্নিধারণ করা প্রয়োজন। পাসপোর্ট রুল ১৯৭৪-এর ৫৯১-০ অনুচ্ছেদে পাসপোর্টের মেয়াদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে পাসপোর্টের মেয়াদ ও নবায়ন উভয় ক্ষেত্রেই পাঁচ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করতে হলে বিধি সংশোধন করতে হবে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে দুই ধরনের পাসপোর্ট দেয়া হয়। এর একটি হলো জরুরি, অন্যটি সাধারণ। প্রতিটি পাসপোর্টের বই ৪৮ পৃষ্ঠার। জরুরি পাসপোর্টের বর্তমান ফি ছয় হাজার টাকা, এর সঙ্গে ভ্যাট দিতে হয় ৯০০ টাকা। সাধারণ পাসপোর্টের ফি এর অর্ধেক। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের পরিবর্তন সংশোধনের জন্য ৩০০ টাকা করে ফি দিতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ বাংলাদেশি শ্রমিক-অধ্যুষিত দেশগুলোর দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য অবিলম্বে পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো হলেও বইয়ের পাতার সংখ্যা ৪৮ থাকবে। কারণ, বর্তমানে এমআরপি বই সরবরাহের জন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার চুক্তিবদ্ধ। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বইয়ের পাতা বাড়ানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া কয়েক লাখ ছাপা বই মজুত করা আছে। পাতা বাড়ালে সেসব বই অব্যবহৃত হয়ে যাবে।

    মসজিদের সাথে সম্পর্ক

    মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান

    মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘরÑ এতে তাঁর যিকির ও ইবাদত হয়। তাঁর বড়ত্ব ও মহিমার বর্ণনা হয়। তাঁর তাওহীদ ও রুবুবিয়াতের আলোচনা হয়।

    আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) … সেইসব গৃহে, যাকে মর্যাদা দিতে ও যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ করে সেইসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামায কায়েম ও যাকাত আদায় থেকে গাফেল করে না…। Ñসূরা নূর (২৪) : ৩৬

    অন্যত্র বলেন, (তরজমা) আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দলের মাধ্যমে প্রতিহত না করতেন, তবে ধ্বংস করে দেওয়া হত (খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের) উপাসনাস্থান, গির্জা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ, যাতে আল্লাহর যিকির করা হয় বেশি-বেশি…। Ñসূরা হজ্ব (২২) : ৪০

    এক বেদুইন মসজিদে পেশাব করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মসজিদে পেশাব বা কোনো ধরনের ময়লার কোনো অবকাশ নেই। এ তো কেবল আল্লাহর যিকির, নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫

    পৃথিবীতে জায়গার কোনো শেষ নেই এবং সবখানে আল্লাহ তাআলার যিকির করা যায়। কিন্তু এসবের মধ্যে মসজিদ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এতে শুধু তাঁর যিকিরই করা যায়। যিকির পরিপন্থী কোনো কিছু তাতে জায়েয নয়। এগুলো মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পরিপন্থী। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি মসজিদে কাউকে হারানো বস্তু সন্ধান করতে শোনে সে যেন বলে, আল্লাহ তোমার কাছে তা না ফেরান। কেননা মসজিদ এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৮

    এজন্য মসজিদ আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এবং দিনরাত তাঁর রহমত নাযিলের ক্ষেত্র। হাদীসের ভাষায়Ñ ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান বাজার।’ Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭১

    এ থেকেই উপলব্ধি করা যায়, মসজিদের সাথে মুমিনের কী গভীর সম্পর্ক থাকা উচিত এবং সেটা তার জন্য কী উপকারী ও কল্যাণকর!

    বস্তুত মসজিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন আত্মিক প্রশান্তি লাভ, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও ঈমান-আমল উন্নত করার এক পবিত্র ও বরকতময় উপায়।

    সুতরাং মুমিনের কর্তব্য, মসজিদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং একে জ্ঞান ও আলো, হেদায়েত ও সফলতার কেন্দ্র মনে করা।

    সম্পর্কের কিছু দিক

    মসজিদের সাথে সম্পর্কের অনেক দিক আছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক আলোচনা করা হল১

    এক. অন্তরগত সম্পর্ক

    অন্তরগত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক আছে। যেমনÑ

    (ক) মসজিদের স্বরূপ উপলব্ধি ও বিশ্বাস

    আগে মসজিদের যে স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে সেটি গভীরভাবে উপলব্ধি ও বিশ্বাস করা কর্তব্য। মসজিদের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক নির্ভর করে এই উপলব্ধি ও বিশ্বাসের উপর। এটা যত গভীর ও আলোকিত হবে সম্পর্ক তত দৃঢ় ও সুন্দর হবে। তাই মসজিদের স্বরূপের যথার্থ উপলব্ধি ও বিশ্বাস অতি জরুরি।

    আল্লাহর যিকিরের বিস্তৃত অর্থ ও নানা অধ্যায় এবং আল্লাহর যিকির পরিপন্থী বিষয়াদি সম্পর্কেও সঠিক জ্ঞান ও উপলব্ধি অর্জন করা প্রয়োজন। যাতে মসজিদের হক আদায় হয় আর না-হক কাজ থেকে মসজিদ পবিত্র থাকে।

    (খ) মসজিদের সার্বিক কল্যাণ কামনা

    মসজিদের সার্বিক কল্যাণ কামনার অর্থ, প্রতিটি গ্রামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা হোক, এসব মসজিদ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক, মুসল্লী ও যিকিরকারী দ্বারা পরিপূর্ণ হোক এবং এর মাধ্যমে সবখানে হেদায়েতের আলো ছড়িয়ে পড়ুকÑ এ প্রত্যাশা করা। এটা মসজিদের সাথে সম্পর্কের শুধু গুরুত্বপূর্ণ দিকই নয়, ঈমানের অংশ। পক্ষান্তরে মসজিদের কোনোরূপ অকল্যাণ কামনা এর প্রতি চরম বেআদবি ও কুফরের পরিচায়ক।

    তামীম দারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দ্বীন হল কল্যাণকামিতা। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কার কল্যাণকামিতা? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলমানদের ইমামদের এবং সকল মুসলমানের। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৫

    এখানে যেসব ক্ষেত্রে খুলূস ও কল্যাণকামিতাকে দ্বীন বলা হয়েছে তার মধ্যে সবার আগে রয়েছে আল্লাহ তাআলার প্রতি খুলূস ও  কল্যাণকামিতা। আর এতে তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরীক না করা যেমন রয়েছে তেমনি মসজিদের কল্যাণকামনাও। কেননা মসজিদ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।

    (গ) মসজিদের সাথে অন্তরের সম্পর্ক

    কর্ম অবলম্বন শুধু মানবিক প্রয়োজনই নয়, হালাল পন্থায় হালাল কর্ম অবলম্বন  ইসলামের এক ফরয বিধান। এই কর্মব্যস্ততার মধ্যেও যদি মসজিদের সাথে অন্তরের সম্পৃক্ততা থাকে, তবে তা অত্যন্ত মর্যাদার বিষয়। হাদীসে এসেছে, সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাঁর (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ ইমাম (বাদশাহ)। ঐ যুবক, যে তার প্রতিপালকের ইবাদতে লালিত-পালিত হয়। ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে (এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত)…। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৩১

    মসজিদের সাথে অন্তর সম্পৃক্ত থাকার অর্থ, সে নামাযের সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। সময়মত মসজিদে গমন করে। নামাযের পর যখন মসজিদ থেকে বের হয় পরবর্তী নামাযের প্রতীক্ষায় থাকে। ফলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই সে স্বচ্ছন্দে মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করতে সক্ষম হয়।

    দুই. আমলগত সম্পর্ক

    আমলগত সম্পর্কেরও বহু দিক আছে। যথাÑ

    (ক) মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায়

    নামায শুধু একটি ফরয বিধানই নয়, ঈমানের নিদর্শন এবং ইসলামের শিআর। এজন্য প্রয়োজন ছিল তা প্রকাশ্যে সম্মিলিতভাবে আদায়ের ব্যবস্থা। এ জামাতের নামায বিধিবদ্ধ হওয়ার অন্যতম তাৎপর্য। আর এর জন্য জায়গা নির্বাচিত হয় মসজিদ। প্রত্যেক সুস্থ-সবল বালেগ পুরুষের কর্তব্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা।

    জামাতের ফযীলত ও উপকারিতা অনেক। এতে দৈনিক অন্তত পাঁচবার নিজের ঈমান-আমলের হিসাব নেওয়ার সুযোগ হয়। নিয়মিত নামায পড়ার সৌভাগ্য হয় এবং পারস্পরিক ঐক্য-সম্প্রীতি রক্ষার প্রেরণা জাগে ইত্যাদি।

    হাদীসে এসেছে, একা নামাযের চেয়ে জামাতের নামাযের মর্যাদা সাতাশ গুণ বেশি। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫০

    অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে সবচেয়ে দূর থেকে (মসজিদে) আসে তার নামাযের সওয়াব সবচেয়ে বেশি। তারপর যে তার চেয়ে কম দূর থেকে আসে। আর যে ইমামের সাথে নামায আদায়ের জন্য অপেক্ষা করে, সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি সওয়াব লাভ করবে যে নামায পড়ে ঘুমিয়ে যায়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬২

    এ থেকে বোঝা যায়, মসজিদ দূরে হলেও সেখানে গিয়েই নামায আদায় করতে হবে এবং দূরত্ব অনুযায়ী সওয়াবের পরিমাণও বেশি হবে।

    অপর এক হাদীসে আছে, ব্যক্তির জামাতের নামায ঘরে বা বাজারের নামাযের চেয়ে পঁচিশগুণ বেশি মর্যাদা রাখে। আর তা এ কারণে যে, সে যখন উত্তমরূপে অযু করে ঘর থেকে শুধু নামাযের উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার প্রতি কদমে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি আর একটি গুনাহ মাফ করা হয়। এরপর যখন সে নামায পড়ে তখন ফিরিশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে; যতক্ষণ সে নামাযের স্থানে থাকে। তারা বলে, ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করো, তার প্রতি রহমত নাযিল করো। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪৭

    পক্ষান্তরে জামাতের ব্যাপারে কোনোরূপ অবহেলা অতি নিন্দনীয়। হাদীসে এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার জান! আমার ইচ্ছে হয়, আমি লাকড়ি জমা করার নির্দেশ দেই। তারপর আযানের হুকুম করি। এরপর কাউকে ইমামতির আদেশ দেই। আর আমি ঐ সব লোকের কাছে যাই, যারা নামাযে আসে না। অতঃপর তাদেরসহ তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫১

    এ থেকে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন যে, জামাতের ব্যাপারে অবহেলা করা কত ভয়াবহ! নবী-যুগে এটাকে মুনাফিকের আলামত মনে করা হত। কারণ মুনাফিক বা অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ জামাতের নামায পরিত্যাগ করত না। বরং কোনো কোনো অসুস্থ ব্যক্তিও অন্যের কাঁধে ভর করে জামাতে অংশগ্রহণ করত। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৪)

    (খ) তালীমের মজলিশে উপস্থিতি

    মসজিদ শুধু নামায আদায় নয়, কুরআন-হাদীস, মাসআলা-মাসাইল ও ইসলমী শিক্ষা-নির্দেশনা শেখা- শেখানোরও জায়গা। নবী যুগ থেকে সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন ও পরবর্তী অনেক সময় পর্যন্ত এ কাজগুলো প্রধানত মসজিদেই সম্পন্ন হত। পরবর্তীতে এসবের জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হলেও মসজিদে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি এবং তা সমীচীনও নয়। কারণ মসজিদে উপস্থিতি এক স্বতন্ত্র আমল (দৈনিক অন্তত পাঁচবার)। তাই এর আগে বা পরে কিছু তালীম হওয়া শুধু সহজই নয়, বরকতময়ও বটে। হাদীসে এসেছে, যখন কিছু লোক আল্লাহর কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে তাঁর কিতাব তিলাওয়াত করে, এর ইলম অর্জন করে এবং তা পরস্পর আলোচনা করে তখন তাদের উপর ‘সাকীনা’ নাযিল হয়, রহমত তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফিরিশতারা তাদের বেষ্টন করে ফেলে এবং আল্লাহ তাঁর কাছে যারা থাকেন তাদের সাথে তাদের আলোচনা করেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯২৭৪

    সুতরাং সকলের কর্তব্য মসজিদে তালীমের ব্যবস্থা করা এবং তাতে নিয়মিত উপস্থিতির চেষ্টা করা। আর এই তালীমে ব্যাপকতা কাম্যÑ তালীমে দ্বীন, তালীমে কুরআন, দরসে কুরআন, তালীমে সুন্নাহ, তালীমে হাদীস, তালীমে ফাযাইল, তালীমে মাসাইল ইত্যাদি।

    (গ) মানুষকে মসজিদের দিকে আহ্বান

    নামাযের জামাত ও তালীমের মজলিশে অধিক পরিমাণে মানুষের উপস্থিতি, পুরো এলাকায় হেদায়েতের আলো বিস্তার মসজিদ আবাদের অংশ। এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত আয়াত দু’টি সামনে রাখা যায় :

    ১. (তরজমা) ..আল্লাহর মসজিদ তো আবাদ করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এরূপ লোকদের সম্পর্কেই আশা আছে যে, তারা হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। Ñসূরা তাওবা (৯) : ১৮

    ২. সূরা নূরের ৩৬ নং আয়াত, যা শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ ‘সেইসব গৃহে, যাকে মর্যাদা দিতে ও যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ করে সেইসব লোক…’।

    এ থেকে বোঝা যায়, প্রকৃত মসজিদ আবাদ কেবল বাহ্যিক কারুকার্যে নয়; বরং ক্রমাগত মুসল্লীর সংখ্যা-বৃদ্ধি, তাদের মধ্যে তাকওয়া ও খোদাভীতি সঞ্চার এবং সর্বত্র হেদায়েতের আলো ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদিতে। এ কারণে বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্য সত্ত্বেও তা যদি মুসল্লীশূন্য হয়, তবে সেটা বিরান হিসেবেই গণ্য হয়।

    মুফতী শফী রাহ. সূরা বাকারার ১১৪ নং আয়াত (অর্থাৎ যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে…)-এর অধীনে লিখেছেন, ‘(এ থেকে) বোঝা গেল যে, মসজিদ বিরান করার যত পন্থা আছে সবই নিষিদ্ধ। এতে খোলাখুলিভাবে মসজিদ বিধ্বস্ত করা যেমন শামিল তেমনি এমন কোনো উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করাও শামিল, যাতে তা বিরান হয়ে যায়। মসজিদের বিরান এই যে, তাতে নামাযের জন্য মানুষজন আসে না বা কম হয়। কেননা মসজিদের প্রকৃত আবাদ প্রাচীর বা কারুকার্য দ্বারা নয়, আল্লাহর যিকিরকারীদের দ্বারা…।’ Ñতাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১/৩০০

    সুতরাং মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নে যেমন চেষ্টা করা কর্তব্য তেমনি মানুষকে মসজিদমুখী করার ব্যাপারেও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি।

    পক্ষান্তরে মানুষকে মসজিদবিমুখ করা কিংবা তাতে আসতে বা যিকির-ইবাদত করতে বাধা দেওয়া খুবই অন্যায় এবং জঘন্য ধৃষ্টতা।

    আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে? অথচ এরূপ লোকদের জন্য তো সংগতই ছিল না যে, ভীত-বিহ্বল না হয়ে তাতে প্রবেশ  করে। এরূপ লোকদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি। Ñসূরা বাকারা (২) : ১১৪

    মসজিদে যিকির বা নামায থেকে বাধা দেওয়ার যেকোনো পন্থাই না-জায়েয। তার মধ্যে একটি পন্থা হচ্ছে মসজিদে যেতে বা তাতে যিকির-ইবাদত করতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা। আরেকটি পন্থা হচ্ছে মসজিদে হট্টগোল বা আশেপাশে গান-বাজনা করে মানুষের নামায বা যিকিরে বিঘœ সৃষ্টি করা। এমনিভাবে নামাযের সময় যখন মুসল্লীরা নফল নামায বা তাসবীহ কিংবা তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মশগুল থাকে তখন মসজিদে উচ্চস্বরে তিলাওয়াত বা যিকির করা, যাতে তাদের নামাযে বিঘœ সৃষ্টি হয়Ñ এটাও এক ধরনের বাধা প্রদান। তবে মসজিদে যখন মুসল্লী না থাকে তখন উচ্চস্বরে যিকির বা তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই। Ñদেখুন : তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১/২৯৯

    (ঘ) মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশগ্রহণ

    পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। মসজিদের ক্ষেত্রে তা আরো জরুরি। মসজিদ ইসলামের অন্যতম শিআর এবং সম্মিলিত ইবাদতের জায়গা।

    কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছি যে, তোমরা উভয়ে আমার ঘরকে সে সকল লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে এবং রুকূ ও সেজদা করবে। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৬৫

    এখানে বাহ্যিক নাপাকী ও ময়লা-আবর্জনা এবং বাতেনী নাপাকীÑ যেমন কুফর, শিরক  বিদাআত ইত্যাদিÑ সব কিছু থেকে পবিত্র করা উদ্দেশ্য।

    আর আয়াতটি কাবা ঘরের ব্যাপারে নাযিল হলেও ‘আমার ঘর’ বাক্যটি এ দিকে ইঙ্গিত করে যে, এ বিধান অন্যান্য মসজিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা সমস্ত মসজিদই তাঁর ঘর। Ñদ্রষ্টব্য : তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১/৩২৩

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মহল্লায় মসজিদ বানাতে, তা পরিষ্কার রাখতে ও তাতে সুগন্ধি লাগাতে আদেশ করেছেন। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৬৩৪

    অন্য এক হাদীসে এসেছে, আমার উম্মতের ভালো-মন্দ সব আমলই আমার কাছে পেশ করা হয়। তাদের ভালো আমলগুলোর মধ্যে একটি পেয়েছি, কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে সরানো। আর মন্দ আমলগুলোর মধ্যে একটি পেয়েছি, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু পরিষ্কার না করা। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৫৪

    সুতরাং মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বিবেচনা করে এর জন্য আলাদা খাদেম রাখা উচিত। এক্ষেত্রে সকলের কর্তব্য মসজিদকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করা। এভাবে সকলেই মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। আর সরাসরি অংশগ্রহণ তো আরো সৌভাগ্যের বিষয়।

    বড় বড় ক্ষেত্র না হয় বাদই, ছোট ছোটও এমন বহু ক্ষেত্র আছে যাতে স্বচ্ছন্দে সরাসরি অংশগ্রহণ করা যায়। যেমন কাগজের টুকরা পড়ে আছে, সেটা নির্দিষ্টি জায়গায় রেখে দেওয়া। কার্পেট বা তার উপরের চাদর এলোমেলো হয়ে আছে, তা ঠিক করে দেওয়া ইত্যাদি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রত্যেকের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা যে, আমার দ্বারা যেন মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ক্ষুণœ না হয়।

    (ঙ) ইতিকাফ

    মসজিদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে ইতিকাফের সম্পর্ক সুগভীর। ইতিকাফের মধ্য দিয়ে বান্দা যে একাগ্রচিত্তে তার প্রতিপালকের যিকির-ইবাদতে মশগুল থাকার সৌভাগ্য অর্জন করে সেটার কোনো তুলনা হয় না। তার উপর তা যদি হয় রমযানুল মুবারকে তাহলে তো নূরুন আলা নূর!

    যে খায়ের, বরকত ও ফযীলত নিয়ে রমযানুল মুবারাকের আগমন ঘটে, তা অর্জনের ক্ষেত্রে ইতিকাফের ভূমিকা অসাধারণ। রমযানুল মুবারকের এক বড় নিআমত লাইলাতুল কদর। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, এটি রমযানের শেষ দশকেরই কোনো এক রাত। এজন্য শেষ দশকে সাধ্য মত পুরো রাত ইবাদতে কাটানোর বিশেষ নির্দেশ রয়েছে, যা অধিকতর সহজ হয় ইতিকাফের মাধ্যমেই।

    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদানী জীবনে এক বছর ছাড়া২ বাকি সব বছর ইতিকাফ করেছেন এবং উম্মতকেও এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।

    এজন্য প্রতিটি মসজিদে অন্তত একজনের ইতিকাফ করা অবশ্যকর্তব্য। কেউ না করলে পুরো এলাকাবাসী সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়ার গুনাহগার হবে।

    (চ) আযান

    আযান ইসলামের অন্যতম শিআর এবং পূর্ণাঙ্গ ও প্রভাবক এক আহ্বান। এতে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো তথা তাওহীদ, রিসালাত ও মসজিদে নামায আদায়ের আহ্বান রয়েছে। এ দিক থেকে মসজিদের সাথে আযানের সম্পর্ক বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ। মুমিনের কর্তব্য বিশুদ্ধ আযান শিক্ষা করা এবং সময়-সুযোগ হলে আযান দেওয়া। আর মুয়াযযিন হওয়ার সৌভাগ্য হলে তো কোনো কথাই নেই!

    হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনদের ঘাড় সকলের চেয়ে উঁচু হবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮৭

    অন্য হাদীসে আছে, মুয়াযযিনের দূর-আওয়ায মানুষ বা জিন কিংবা যেকোনো বস্তু শুনে, কিয়ামতের দিন সে তার জন্য সাক্ষ্য দিবে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৯

    তিন. অর্থগত সম্পর্ক

    প্রতিটি গ্রামে একটি মসজিদ আবশ্যক এবং তা এতটুকু প্রশস্ত ও উন্নত হওয়া উচিত যাতে এলাকাবাসী সকলেই স্বচ্ছন্দে ও প্রয়োজনীয় আরামের সাথে নামাযসহ মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আমল করতে সক্ষম হয়।

    এর প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব সরকারের। দ্বিতীয় পর্যায়ে জনগণের। প্রত্যেকের কর্তব্য নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নে সহায়তা করা। যাতে যেসব গ্রামে মসজিদ নেই বা থাকলেও তেমন উন্নত নয় সেখানে একটি উন্নত মসজিদ নির্মাণসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হয়। এটি অত্যন্ত সওয়াবের কাজ এবং সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে, যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহর তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৪৫০

    কঠোর আইনে স্থায়ী ভাবে বন্ধ হলো জাপানের ৬ষ্ঠ পরমাণু চুল্লী

    শিকোকু ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি মঙ্গলবার তাদের প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো পশ্চিম জাপানের একটি পরমাণু চুল্লীর কার্যক্রম স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এরফলে ২০১১’র ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর প্রণয়নকৃত কঠোর আইনে আটকে জাপানের ৬ষ্ঠ পরমাণু চুল্লী বন্ধ হয়ে গেলো।

    মার্চ মাসেই ইউটিলিটি এহিমে প্রিফেকচারের ইকাতা পরমাণু কমপ্লেক্সে বর্তমানে নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকা ১নং চুল্লীকে ডিকমিশন করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেননা পুরোনো চুল্লীকে চালু রাখার খরচ অত্যাধিক হয়ে পড়ছিলো।

    কোম্পানির প্রথমিক হিসেবে ১৭ হাজার কোটি ইয়েন প্রয়োজন পড়তো চুল্লীকে পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে। ১৯৭৭ সালে চুল্লীটি চালু করা হয়।

    ধারণা করা হচ্ছে চুল্লীর ডিকমিশনিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩০ বছরের মতো সময় লাগবে এবং এর জন্যে ৪ হাজার কোটি ইয়েন খরচ হবে।

    নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর   

    জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। রাজুর নেতৃত্বে চার সদস্যের জল্লাদ দল এই দন্ডাদেশ কার্যকর করে। এরপর সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মৃধা পালস পরীক্ষা করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর কড়া নিরাপত্তায় লাশ নিয়ে গাড়ির বহর পাবনার সাঁথিয়ায় নিজামীর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এর আগে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের নির্বাহী আদেশ কারা অধিদফতরে পৌঁছায়। এরপরই কারা কর্তৃপক্ষের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে কারাগার ও এর আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কারাগারে নিজামীর মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকরে সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়। এর আগে রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা তার সাথে শেষ সাক্ষাতের জন্য কারাগারে প্রবেশ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা সাক্ষাতের পর তারা বেরিয়ে আসেন। এ সময় তারা সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী, বড় ছেলে ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন, বড় পুত্রবধূ, দুই নাতি, ছোট মেয়ে মহসীনা, নিজামীর চাচাতো ভাই, ভাইয়ের মেয়েসহ ২৪ জন নিকটাত্মীয় তার সাথে শেষ সাক্ষাৎ করেন। কারাগারের ভিতরে প্রবেশ করার পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে ফাঁসির সেলের (কনডেমড) সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে  প্রায় ৪০ মিনিট সাক্ষাতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা নিজামীকে ধরে কান্নাকাটি করেন। কারা সূত্র জানায়, অনেকটা অবিচল নিজামী তাদেরকে সান্ত¦না দেন এবং ভবিষ্যতে চলাফেরার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। কারা সূত্র জানায়, পরিবারের সদস্যদের পর্বের পরই একজন ডেপুটি জেলারকে দিয়ে আনন্দবাজার থেকে ২ সেট কাফনের কাপড় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ২টি অ্যাম্বুলেন্স কারাগারের ডিআইজি ঢাকা বিভাগের অফিসের সামনে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে, নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের আগেই রাত ১০টার দিকে কারাগারে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকার সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় এমপি, পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ছিলেন অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স ইকবাল হাসান, ডিআইজি প্রিজন্স ঢাকা বিভাগ গোলাম হায়দার, সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলম, কারা কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিৎসক সহকারী সার্জন শামসুদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কারা অভ্যন্তরে ফাঁসির মঞ্চের অদূরে টানানো ফ্ল্যাড লাইট ও সামিয়ানার নিচে তাদের বসতে দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই কারা কর্তৃপক্ষ রুটিনমাফিক তাদের কাজ শুরু করে। এশার নামাজ পড়ার পরই কারা জামে মসজিদের ইমাম মনির হোসেন মতিউর রহমান নিজামীকে ওজু করিয়ে তওবা পড়ান। তাকে রাতের খাবার দেয়া হলেও তিনি খাননি। এরপরই তাকে কনডেমড সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চের অদূরে বিশেষ একটি সেলে স্থানান্তর করা হয়। এরপরই জল্লাদ দলের কাজ শুরু হয়। সর্দার রাজুর নেতৃত্বে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করে জল্লাদরা। রাজুর নেতৃত্বে অংশ নেয় ৪ জন জল্লাদ। সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের পর সিনিয়র জেল সুপারের ইশারায় ৩ জন জল্লাদ সেলে গিয়ে নিজামীকে কালো জমটুপি পরিয়ে দেয়। এ সময় নিজামী নিজে জল্লাদদেরকে সহযোগিতা করেন। এরপর সঙ্গীয় ২ জল্লাদ নিজামীর ২ হাতের বাহুতে ধরে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেয়। এরপরই ফাঁসির মঞ্চে জল্লাদরা তার হাত ও পা বেঁধে ফেলে। নির্ধারিত সময়ের আগেই জমটুপির ওপর দিয়ে ফাঁসির রশি (ম্যানিলা রোপ) তার গলায় পরিয়ে দেয়া হয়। তখন সকলের দৃষ্টি পড়ে পাশে লাল রুমাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা জেল সুপারের ওপর। নির্ধারিত সময়ের জিরো পয়েন্টে গেলেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ইশারায় সিনিয়র জেল সুপার হাতের লাল রুমালটি মাটিতে ফেলে দেন। আর তখনই জল্লাদ তার ফাঁসির কপিকলের সুইচ টেপে। তাৎক্ষণিক ফাঁসিতে ঝুলে পড়েন নিজামী। কারা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৪ মিনিট ঝুলন্ত রেখে নিজামীর নিথর দেহ তুলে পাশের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। সেখানে সিভিল সার্জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাত-পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। এরপরই তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মৃত্যুর সনদপত্র দেয়া হয় মনোনীত অভিভাবকের কাছে। পাশাপাশি মৌলভী দিয়ে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে নিজামীর লাশ তুলে দেয়া হয় নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্সে। অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তোলার পর পুলিশ ও র‌্যাব প্রশাসন নিজামীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সতর্ক পাহারায় তার গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায় দাফনের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেন। পুলিশ, গোয়েন্দা ও র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্সের কঠোর নজরদারিতে কারাগার থেকে অ্যাম্বুলেন্স রওনা করে মতিউর রহমান নিজামীর গ্রামের বাড়ির  উদ্দেশে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকরের নির্বাহী আদেশও পৌঁছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি মতিউর রহমান নিজামী। তাই যেকোনো সময় তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। মঙ্গলবার বিকালেই জল্লাদ রাজুকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। ফাঁসি কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কারা কর্তৃপক্ষ। নিজামীর মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকরের জন্য একদিন আগে থেকে কারাগারের ভিতরে বাইরে নেয়া হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একই সাথে সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কারাগার সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন কারা কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলমসহ বেশ কয়েকজন কারা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে ফাঁসির মঞ্চসহ আশপাশের স্থান পরিদর্শন করেন তারা। বৈঠক শেষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল মো. ইকবাল বের হয়ে যান। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে মাওলানা নিজামীকে রায়ের কপি পড়ে শোনান সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির। এসময় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম হায়দার, জেল সুপার নেসার আলম এবং দুইজন ডেপুটি জেল সুপার উপস্থিত ছিলেন। একই দিন একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায় প্রকাশের পর সেটি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে রায়ের কপি যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারা কর্মকর্তাদের ব্যস্ত সময় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে কারা কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। সকালেই অফিসে চলে আসেন জেলার নেসার আলম। কারাফটকেই তার বাসা। এর পর আসেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল কারাগারে আসেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বের হয়ে যান। তবে অন্য কর্মকর্তারা কারাগারেই ছিলেন। কারাফটকে কয়েকজন কারারক্ষী জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সবাই ব্যস্ত সময় কাটায়। কারাগারের বাইরে যেমন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, ভিতরেও ছিল তেমনই। দুপুরের মধ্যেই কারাবন্দীদের নিজ নিজ সেলে প্রবেশ করানোর পর তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সোমবার থেকে কারাগারের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পর গতকাল তা আরও বাড়ানো হয়। কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নেয়। অন্যান্য ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে কারাগারের চারদিকের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে নিজামীকে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় পড়ে শোনানো হয়। এদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় প্রকাশ করেন। এরপর বিকেল ৫টার কিছু পর আপিল বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে লাল কাপড়ে মোড়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে রওনা হয়। পরে ৭টা ৫ মিনিটে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর রায়ের কপি নেন। গত রোববার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এক শব্দের এই রায় ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এর আগে, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম যুদ্ধাপরাধী হিসাবে কাদের মোল্লা এবং ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। এরপর গত বছরের ২১ নভেম্বর একই সঙ্গে কার্যকর করা হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড।