• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • জাপানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থানান্তরের প্রতিবাদে ৭০,০০০ মানুষের বিক্ষোভ

    জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ওকিনাওয়া’য় একটি পরিকল্পিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থানান্তরের প্রতিবাদে সমাবেশ করতে সেখানে জড়ো হয়েছে ৭০ হাজার বিক্ষোভকারী। শনিবার এই বিক্ষোভ সমাবেশ মোড়ে তারা। খবর আল জাজিরার।
    খবরে বলা হয়, মার্কিন মারিন কর্পস এয়ার স্টেশন ফুতেনমা ঘাঁটিটি ওকিনাওয়া’র রাজধানী নাহা’য় স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে জাপান সরকারের। কিন্তু স্থানীয়রা এই ঘাঁটি স্থানান্তরের বিরোধী। তাদের ভাষ্যমতে, ঘাঁটিটি নাহা’য় স্থানান্তর করা পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর হবে। পাশাপাশি এতে স্থানীয়দের ইচ্ছাও অগ্রাহ্য করা হবে।
    স্থানীয়দের ইচ্ছা, ঘাঁটিটি পুরো ওকিনাওয়া দ্বীপ থেকেই সরিয়ে নেওয়া হোক।
    শনিবার ৭০ হাজার স্থানীয় ঘাঁটিটি স্থানান্তরের প্রতিবাদে নাহা’র একটি পার্কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও ভারী বর্ষণের মধ্যে তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যায়। বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওকিনাওয়ার গভর্নর, তাকেশি ওনাগার জন্য কয়েক মূহুর্ত নীরবতাও পালন করে তারা।
    ওনাগা ২০১৪ সালে গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হন। স্থানীয়দের দাবি বিবেচনায় না নেওয়ায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করতেন। এমনকি নতুন ঘাঁটি নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দকৃত জমির অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিতে একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন ওনাগা।

    শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকা বিমান বন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণকাজের উদ্বোধনকালে সরকারি কর্মচারীদের তাদের দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে প্রজন্মের আকাক্সক্ষানুযায়ী পালনের আহবান জানিয়েছেন।
    তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে, বিবেককে জাগ্রত করেছে। তাই আমি আশা করবো জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আকাক্সক্ষানুযায়ী সকলেই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবেন।’
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। ড্রাইভার ও হেলপারদেরও আইন মানতে হবে। ওভারটেকিং না করে লাইন দিয়ে বাস চালাতে হবে। ওভারটেক করতে গেলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
    শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
    তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশ মহাপরিদর্শকের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথভাবে নির্দেশ দিতে হবে যেন কোনরকম অনিয়ম না হয়।’
    সড়কে ট্রাফিক সম্পর্কিত অপরাধ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী অনেক সময় সনাক্ত করতে পারে না এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সকল সড়কে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন ও ডিজিটাল নম্বর প্লেট ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এর মাধ্যমে লেজার সিগন্যাল দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনিয়ম সনাক্ত করা যাবে বলেন তিনি।
    প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি কর্মচারীদের অহেতুক বিলম্ব পরিহারের আহবান জানিয়ে বলেন, এই আন্ডারপাস প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে দুটি অমূল্য প্রাণ হয়তো এভাবে ঝড়ে যেত না।
    তিনি শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম এবং আব্দুল করিম রাজিবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
    প্রধানমন্ত্রী শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল ও কলেজের সামনে নির্মাণাধীন আন্ডারপাস প্রকল্পে বিলম্বে উস্মা প্রকাশ করে বলেন, এই আন্ডারপাস আগেই ডিজাইন করা হলেও এতে একটি সামান্য সমস্যা ছিল এবং এটি জানার পর তিনি তা দূর করার উদ্যোগ নেন।
    তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন নির্মাণ কাজ করতে গেলেই জমির মালিকানা নিয়ে যে সমস্যায় পড়তে হয় সে সমস্যা এখানেও ছিল।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তা কার, জায়গা কার, জমি কার, লেক থাকলে পানি কার এগুলো নিয়ে একটা বিতর্ক থাকে, আমি আশাকারি এই সমস্যাগুলো আর হওয়া উচিত নয়। এরজন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।
    তিনি বলেন, টাকা কে দেবে এজন্য দীর্ঘদিন এই আন্ডারপাসের প্ল্যান করেও বসে থাকা হয়েছে। এখানে যখন রেডিসন হোটেল হলো, মেডিকেল কলেজ হলো, তারপরে স্কুল এবং ফ্লাইওভার করার পর থেকেই এই নকশা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
    শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করবো আমাদের এখানে বড় বড় আমলারা আছেন-তাদেরকে বলবো আপনারা যদি কোন সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, আমিতো রয়েছিই। আমাকে জানানো হলে সেই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারি।’ এজন্য প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব মোবাইল ফোনে বা অফিসে যোগাযোগের অনুরোধ করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন।
    প্রধানমন্ত্রী সকলকে যথাযথভাবে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহবান জানান। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘রাস্তা পারাপারের সময় অন্তত দাঁড়িয়ে একবার ডানে ও একবার বামে দেখে নিতে হবে কোন গাড়ি আসছে কিনা। আর রাস্তা পারাপারের জন্য যে জায়গাটি নির্দিষ্ট করা রয়েছে- কোথাও ফুটওভার ব্রীজ, কোথাও জেব্রা ক্রসিং, কোথাও আন্ডার পাস আছে- ঠিক সেইসব জায়গা দিয়েই রাস্তা পারাপার হতে হবে। এর বাইরে দিয়ে রাস্তা পার হওয়া মোটেই ঠিক নয়। আর কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
    তিনি বলেন, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি সড়কে চলতে পারবে না। হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ সংশ্লিষ্ট এলাকা এবং যেখানে বেশি মানুষের চলাচল রয়েছে সেখানে ফুটওভার ব্রীজ বা আন্ডারপাস করে দেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।
    অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বক্তৃতা করেন।
    এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামুদ্দিন আহমেদ এবং জ্যেষ্ঠ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
    সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকার প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উপস্থাপনায় জানান, সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং বিগ্রেড ৪৩ মিটার দীর্ঘ এই মাল্টিপারপাস অত্যাধুনিক আন্ডারপাসটির নির্মাণ কাজ ১ বছরের মধ্যে শেষ করবে। সরকারের অর্থায়নে এর ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

    এলডিপির নেতা হিসেবে পুননির্বাচিত হতে আবের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবে, তৃতীয় দফায় ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান পদে নির্বাচিত হয়ে সংবিধান সংশোধন করতে তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

    মিঃ আবে আজ, ইয়ামাগুচি জেলায় আয়োজিত এলডিপির এক বৈঠকে বক্তৃতা দেয়ার সময় উক্ত মন্তব্য করেন।

    মিঃ আবে, গত ৬ বছর আগে এলডিপির সভাপতি পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি বলে উল্লেখ করেন।

    তিনি, নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করার পর আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য এলডিপির সভাপতির পদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানান।

    মিঃ আবে, দেশের সংবিধান সংশোধনের সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি, জাপানের কয়েকটি বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইতে দেশের আত্মরক্ষা বাহিনীকে অসাংবিধানিক বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

    জাপানের সংবিধানের ৯ম অনুচ্ছেদে যুদ্ধ পরিহার করে জাপান কখনো সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে না বলে উল্লেখিত রয়েছে।

    মিঃ আবে, দেশের আত্মরক্ষা বাহিনীর অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ যোগ করা উচিৎ বলে আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

    চাঁদ দেখা গেছে সৌদি আরবে, ২০ আগস্ট পবিত্র হজ্ব

    সৌদি আরবে পবিত্র জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামী ২০ আগস্ট পবিত্র হজ্ব। গতকাল সৌদি আরবের সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে, আজ রবিবার ১২ আগস্ট আরব দেশগুলোতে শুরু হবে জিলহজ্ব মাস। এ তথ্য জানায় আরব নিউজ।

    আগামী ২১ আগস্ট সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। বাংলাদেশে ২২ আগস্ট ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

    এদিকে, হজ্বের অংশ হিসেবে হাজীরা ১৮ আগস্ট সন্ধ্যার পর মক্কা থেকে মিনা’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। ১৯ আগস্ট সারাদিন মিনাতে অবস্থান করে সেদিন রাতে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। ২০ আগস্ট আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেওয়া হবে। এ দিনটিকে বলা হয় আরাফার দিন।

    হজ্বের খুতবা শেষে জোহর এবং আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন হাজীরা। সেদিন সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে গিয়ে হাজিরা মাগরিব এবং এশার নামাজ আদায় করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থান করবেন এবং শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য তা সংগ্রহ করবেন।

    ফজরের নামাজ শেষে বড় জামারায় (প্রতীকী বড় শয়তানকে) পাথর নিক্ষেপ করতে মিনায় যাবেন। পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি দিবেন হাজীরা।

    উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজারসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৮ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ্বে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

    এদিকে গত ২৭ দিনে ২শ ৯৬টি ফ্লাইটে এক লাখ ৩শ ৮৪ জন বাংলাদেশী হজ্বযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১শ ৪৫টি ফ্লাইটে ৫১ হাজার ৬শ ৯০ জন এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের ১শ ৫১টি ফ্লাইটে ৪৮ হাজার ৬শ ৯৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে যান।

    এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ হাজার ৭শ ৬৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৩ হাজার ৬শ ১৭ জন হজ্বে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হাজীরা বর্তমানে পবিত্র মক্কা এবং মদিনায় অবস্থান করছেন।

    কুরআন ও সুন্নাহয় কুরবানী

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    বর্তমান প্রবন্ধে কুরআন হাদীস থেকে কুরবানীর দলীলসমূহ কিছুটা বিস্তারিতভাবে পেশ করা হয়েছে। কুরবানীর মত একটি স্বতঃসিদ্ধ ওয়াজিব আমল সম্পর্কে যা শাআয়েরে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত, এই দীর্ঘ ও গবেষণাধর্মী আলোচনার প্রয়োজন হওয়াটাও অতি দুর্ভাগ্যের বিষয়।

    যিলহজ্ব শব্দটির আরবী উচ্চারণ যুলহিজ্জাহ। বাংলায় ‘যিলহজ্ব’ উচ্চারণে প্রসিদ্ধ। এই মাস ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত চার মাসের অন্তর্ভুক্ত। এই পূর্ণ মাস, বিশেষত প্রথম দশ দিন অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আমল হজ্ব ও কুরবানী এ মাসেই আদায় করা হয়। হজ্ব হচ্ছে ইসলামের অন্যতম রোকন। তদ্রূপ কুরবানীও ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। এ থেকেও এ মাসের গুরুত্ব অনুধাবন  করা যায় ।

    আলকাউসারের যিলহজ্ব ১৪২৬ হিজরী, জানুয়ারি ২০০৬ঈ. সংখ্যায় ‘যিলহজ্ব মাস : ফযীলত ও করণীয়’ শিরোনামে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে কিছু লিখছি না। শুধু এটুকু আরয করছি যে, অন্তত হজ্ব ও কুরবানীর এই মাসে আমাদের হৃদয় বাইতুল্লাহ ও মিনা-আরাফার স্মরণে উদ্বেলিত হওয়া উচিত। দূর দেশে অবস্থানের যন্ত্রণা নিয়ে দুআ করা উচিত যে, ইয়া আল্লাহ! যে ভাইদের হজ্বে যাওয়ার তাওফীক হয়েছে তাদেরকে হজ্বে মাবরূর নসীব করুন, তাদের সকল কাজ সহজ করে দিন এবং তাদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন। আর আমরা যারা বাইতুল্লাহ থেকে দূরে, তাদেরকে সেখানে যাওয়ার তাওফীক দান করুন এবং বার বার উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন।

    আরাফার দিন আল্লাহর রহমতের সাগরে জোয়ার আসে এবং সেদিন তিনি হাজ্বীদের ক্ষমা করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরওয়ানা দান করেন। সেদিন তাদের ওসীলায় অন্য অনেক সৌভাগ্যবানও মাগফিরাতের নেয়ামত লাভ করেন। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই এই তামান্না থাকা উচিত  যে, সেই সৌভাগ্যবানদের তালিকায় আমার নামটিও যেন এসে যায়। পাশাপাশি এই চিন্তাও সদাজাগ্রত রাখা উচিত যে, এখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের বারিধারা বর্ষিত হচ্ছে। অতএব সতর্ক থাকা চাই এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকা চাই। আল্লাহ না করুন, রহমত ও মাগফেরাতের এই মৌসুমেও উদাসীনতার কারণে যদি বঞ্চিত থাকা হয় তবে তা হবে অতি দুর্ভাগ্যের বিষয়।

    বাইতুল্লাহর হজ্ব

    হজ্বের বিধান ও তাৎপর্য সম্পর্কে অনেক লেখা হয়েছে। ইতিপূর্বে আলকাউসারেও একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এখানে আমি শুধু হজ্বের তালবিয়া সম্পর্কে একটি কথা আরয করব।

    হজ্বের মধ্যে হাজীদের সার্বক্ষণিক অযীফা হল-

    لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكْ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكْ.

    নিয়ত ও তালবিয়া-পাঠের মাধ্যমে ইহরামের সূচনা হয়। তালবিয়ার মর্ম নিয়ে সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, এতে ঈমান, ইহসান, তাওহীদ, তাফবীয, শোকর, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সব-কিছুই বিদ্যমান রয়েছে। ঈমানের সর্বশ্রেষ্ঠ পর্যায় হল‘তাফবীয ও ইহসান’ অর্থাৎ নিজেকে ও নিজের সকল বিষয়কে আল্লাহ তাআলার হাওয়ালা করে দেওয়া এবং এই অনুভূতির সঙ্গে জীবনযাপন করা যে, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর সামনে উপস্থিত। এটাই তালবিয়ার মর্মবাণী। ঈমানের এই অবস্থা সৃষ্টি করা এবং এই পর্যায়ে উপনীত হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা আমাদের কর্তব্য। শুধু হাজ্বী সাহেবানের কর্তব্য নয়, সবার কর্তব্য। শুধু হজ্ব-মৌসুমের কর্তব্য নয়, সারা জীবনের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।

    কুরবানী

    কুরবানী ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং বিশেষ ধরনের ইবাদত। কুরবানীর একটি ইসলামী ধারণা এবং একটি জাহেলি ধারণা রয়েছে। জাহেলি ধারণা হল, কোন মূর্তি বা দেব-দেবীর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কিংবা জিন-শয়তান বা কোন অশুভ শক্তির কাল্পনিক অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের উদ্দেশ্যে কোন কিছু উৎসর্গ করা। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কুসংস্কার এবং সম্পূর্ণ শিরক ও হারাম। তাওহীদের ধর্ম ইসলামে এর কোনো অবকাশ নেই।

    পক্ষান্তরে ইসলামে কুরবানীর অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য শরীয়তনির্দেশিত পন্থায় শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোন প্রিয় বস্ত্ত, আল্লাহ তাআলার দরবারে পেশ করা এবং শরীয়ত-নির্দেশিত পন্থায় তা ব্যবহার করা।

    এই কুরবানী আদম (আ.)-এর যুগ থেকে বিদ্যমান রয়েছে। সূরা মায়েদায় (আয়াত ২৭-৩১) আদম (আ.)-এর দুই সন্তানের কুরবানীর কথা এসেছে।  প্রত্যেক নবীর শরীয়তে কুরবানীর পন্থা এক ছিল না। সবশেষে  সকল জাতি ও ভূখন্ডের জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত সবার জন্য যে নবী প্রেরিত হয়েছেন অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর প্রতি নাযিল হয়েছে সর্বশেষ ও চিরন্তন শরীয়ত, কুরআন ও সুন্নাহর শরীয়ত। এ শরীয়তে কুরবানীর যে পন্থা ও পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে তার মূল সূত্র ‘মিল্লাতে ইবরাহীমী’তে বিদ্যমান ছিল। কুরআন মজীদ ও সহীহ হাদীস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কুরবানীকে ‘সুন্নতে ইবরাহীমী’ নামে অভিহিত করা হয়।

    ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় ‘কুরবানী’ শব্দটি আরবী ‘কুরবান’ শব্দের স্থলে ব্যবহৃত হয়। ‘কুরবান’ শব্দটি ‘কুরব’ মূলধাতু থেকে নির্গত, যার অর্থ হচ্ছে নৈকট্য। তাই আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের জন্য শরীয়তসম্মত পন্থায় আদায়কৃত বান্দার যেকোন আমলকে, আভিধানিক দিক থেকে ‘কুরবান’ বলা যেতে পারে। তবে শরীয়তের পরিভাষায় ‘কুরবান’ শব্দের মর্ম তা-ই, যা উপরে উল্লেখিত হয়েছে। ইসলামী শরীয়তে এই পারিভাষিক অর্থে দু ধরনের কুরবানী রয়েছে।

    ১. যা হজ্বের মৌসুমে নির্ধারিত স্থানে (মক্কা ও মিনায়) হজ্ব ও উমরা আদায়কারীগণ আদায় করে থাকেন। তা ‘কিরান’ বা তামাত্তু হজ্ব আদায়কারীর ওয়াজিব কুরবানী হতে পারে কিংবা ‘ইফরাদ’ হজ্বকারীর নফল কুরবানী। হাজ্বী নিজের সঙ্গে করে নিয়ে আসা ‘হাদি’ হতে পারে কিংবা হজ্ব আদায়ে অক্ষম হওয়ার বা কোন নিষিদ্ধ কর্মের জরিমানারূপে অপরিহার্য কুরবানী। তদ্রূপ মান্নতের কুরবানী হতে পারে কিংবা দশ যিলহজ্বের সাধারণ কুরবানী। এ কুরবানীর বিধান মৌলিকভাবে এসেছে সূরা হজ্ব ২৭-৩৭, সূরা বাকারা ১৯৬, সূরা মায়েদা ২, ৯৫-৯৭, সূরা ফাতহ ২৫-এ। আর হাদীস শরীফে তা

    বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে।

    ২. সাধারণ কুরবানী, যা হজ্ব-উমরার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এবং এ কুরবানীর স্থানও নির্ধারিত নয়। তবে সময় নির্ধারিত। যে তারিখে হজ্ব আদায়কারীগণ মিনা-মক্কায় কুরবানী করে থাকেন, সে তারিখে অর্থাৎ যিলহজ্বের দশ, এগারো ও বারো তারিখে এ কুরবানী হয়ে থাকে। পৃথিবীর সকল মুসলিম পরিবারের জন্য; বরং প্রত্যেক মুকাল্লাফ মুসলমানের জন্য এই কুরবানীর বিধান রয়েছে। কারো জন্য ওয়াজিব, কারো জন্য নফল।

    এ কুরবানীর উল্লেখ এসেছে সূরা আনআমের ১৬১-১৬৩ আয়াতে এবং সূরা কাউসারের ২ আয়াতে। আর

    বিস্তারিত বিধি-বিধান রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতে।

    ৪. সূরা আনআমে আছে-

    قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ * قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ * لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ

    ‘আপনি বলে দিন, আমার প্রতিপালক আমাকে পরিচালিত করেছেন সরল পথের দিকে, এক বিশুদ্ধ দ্বীনের দিকে। অর্থাৎ একনিষ্ঠ ইবরাহীমের মিল্লাত (তরীকা), আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। আপনি বলুন, নিঃসন্দেহে আমার সালাত, আমার নুসুক এবং আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু- সমস্ত জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর ওই বিষয়েই আমাকে আদেশ করা হয়েছে। সুতরাং আমি হলাম আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম।’

    এ আয়াতে نُسُكٌ শব্দটি বিশেষ মনোযোগের দাবিদার। نَسِيْكَةٌ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ হল আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশু। এজন্য আরবী ভাষায় এবং শরীয়তের পরিভাষায়ও কুরবানীর স্থানকে            مَنْسِكٌ বলা হয়। আরবী ভাষার ছোট, বড় নতুন-পুরাতন যেকোন অভিধানে এবং লুগাতুল কুরআন, লুগাতুল হাদীস, লুগাতুল ফিকহের যেকোন নির্ভরযোগ্য কিতাবে نُسُكٌ  শব্দের উপরোক্ত অর্থ পাওয়া যাবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ কিছু প্রাচীন গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিচ্ছি- ‘আসসিহাহ’৪/১৬১২; লিসানুল আরব ১৪/১২৭-১২৮; তাজুল আরূস ৭/২৮৭; আলমুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন ৮০২; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীসি ওয়াল আছার ৫/৪৮; মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ৪/৭১৪-৭১৫; আলমিসবাহুল মুনীর ফাইয়ুমী ৩১১; আলমুগরিব, মুতাররিযী ২/৩০০

    সূরা বাকারার ১৯৬ আয়াতেও এ শব্দটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

    উপরোক্ত আয়াতের অর্থ পরিষ্কার। হযরত ইবরাহীম (আ.)কে যে খালেছ তাওহীদ ও সিরাতে মুস্তাকীমের প্রত্যাদেশ আল্লাহ তাআলা করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও তা নাযিল করেছেন এবং তাঁকে আদেশ করেছেন যে, বল, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সব আল্লাহর জন্য।

    উল্লেখ্য, আরবী ভাষায়  نُسُكٌ শব্দটি ইবাদতের অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এজন্য ইবাদতকারীকে نَاسِكٌ ও ইবাদতের পদ্ধতিকে منسكবলা হয়। সূরা আনআমের উক্ত আয়াতে যদি نُسُكٌ শব্দের অর্থ ইবাদত করা হয়, তবুও তাতে কুরবানী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদীসে ঈদুল আযহার কুরবানীকে نُسُكٌ বলেছেন। কুরবানীর পশু জবাই করার সময় যে দুআ পড়ার কথা হাদীসে এসেছে, তাতেও ওই আয়াত রয়েছে। হাদীসটি নিচে উল্লেখ করা হল।

    জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন দু’টি দুম্বা জবাই করেছেন। তিনি সময় যখন সেগুলোকে কেবলামুখী করে শায়িত করলেন তখন বললেন-

    إِنِّيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَىْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا وَّمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لا شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ، بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَّأُمَّتِهِ.

    -সুনানে আবু দাউদ ৩/৯৫, হাদীস ২৭৯৫; মুসনাদে আহমদ ৩/৩৭৫, হাদীস ১৫০২২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২৮৯৯

    কুরবানীর শুরুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আয়াত ও দুআ পড়া থেকে একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, কুরবানী খালেছ ইবাদত, তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, সূরা আনআমের ১৬২ নম্বর আয়াতে ‘নুসুক’ শব্দের অর্থ ঈদুল আযহার কুরবানী কিংবা ওই শব্দে কুরবানীও শামিল রয়েছে।

    অপর যে আয়াতে সাধারণ কুরবানীর উল্লেখ রয়েছে তা হল সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াত। ইরশাদ হয়েছে-

    إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ * فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ * إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ *

    এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর মাধ্যমে গোটা উম্মতকে সালাত (নামায) ও নাহর (কুরবানীর) আদেশ দেওয়া হয়েছে।

    ‘নাহর’ শব্দের মূল ব্যবহার উটের ক্ষেত্রে হলেও সাধারণত যেকোন পশু জবাই করাকেই ‘নাহ্র’ বলে। আয়াতে এমন জবাই উদ্দেশ্য, যা আল্লাহ তাআলার জন্য ইবাদত হিসাবে করা হয়। সেটা হচ্ছে হজ্ব ও উমরার কুরবানী এবং ঈদুল আযহার সাধারণ কুরবানী।

    এ কুরবানীর সময় যদিও তিন দিন, অর্থাৎ যিলহজ্বের দশ, এগারো ও বারো তারিখ, তবে উত্তম দিন হল দশ তারিখ। সাধারণ এ তারিখেই অধিকাংশ কুরবানী হয়ে থাকে। এজন্য দশ যিলহজ্বের ইসলামী নাম হল ‘ইয়াওমুন নাহর’। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৫০

    আয়াতে নামাযের যে আদেশ, তাতে ঈদের নামাযও শামিল রয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাহ্র মাধ্যমে এ আয়াতে নাযিল হওয়া ইলাহী নির্দেশের অনুসরণ-পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। একটি হাদীস লক্ষ করুন।

    সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে বহু সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন নামায পরবর্তী খুতবায় বলেছেন, এই দিনের প্রথম করণীয় হল সালাত আদায় করা। এরপর নহর (কুরবানী) করা। যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের পর নুসুক (কুরবানী) করল তার নুসুক পূর্ণ হল এবং সে মুসলিমদের পন্থা অনুসরণ করল। আর যে সালাতের আগে জবাই করল সেটা তার গোশতের প্রয়োজন পূরণ করবে; কিন্তু তা ‘নুসুক’ হিসাবে গণ্য হবে না।’

    এই হাদীস বহু সহীহ সনদে বিভিন্ন হাদীসগ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। কোথাও বিস্তারিতভাবে, কোথাও সংক্ষিপ্তভাবে। কিছু হাওয়ালা উল্লেখ করছি- সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫১, ৯৫৫, ৯৬৫, ৯৬৮, ৫৫৪৫, ৫৫৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬১, ৪, ৬, ৭; মুসনাদে আহমদ ৪/২৮১-২৮২, ৩০৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫০৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৯৪-৪৩৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৯০৭, ৫৯১০, ৫৯১১

    এই হাদীসে সূরাতুল কাউসারের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল থেকে পাওয়া গেল। সূরাতুল কাউসারে বলা হয়েছে-(তরজমা) সুতরাং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।’

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকে জানা গেল যে, নামায পড়ার আদেশে ঈদের নামায এবং কুরবানীর আদেশে ঈদুল আযহার কুরবানীও অন্তর্ভুক্ত।

    তদ্রূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল ও ইরশাদ থেকে একথাও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ঈদুল আযহার কুরবানী হচ্ছে ওই ‘নুসুক’ যা সূরা আনআমের ১৬২ আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। এটি আল্লাহ তাআলার ইবাদত হিসাবে আদায় করা হয়। এর উদ্দেশ্য গোশত খাওয়া বা গোশতের প্রয়োজন পূরণ করা নয়। তবে কুরবানী হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা সে পশুর গোশত কুরবানীদাতার জন্য হালাল করেছেন এবং দশ যিলহজ্ব থেকে মোট চার দিন রোযা রাখতে নিষেধ করে যেন তাঁর মেহমানদারী কবুল করার আদেশ দিয়েছেন।

    ঈদুল আযহার দিবস মুসলমানদের জন্য খুশির দিবস। তবে এই খুশির তাৎপর্য হচ্ছে আরাফা-দিবসের সাধারণ ক্ষমা, আল্লাহর দরবারে কুরবানী পেশ করার সৌভাগ্য এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া কুরবানী থেকে মেহমানদারি লাভ। বলাবাহুল্য, এই তাৎপর্য অনুধাবন করার জন্য অন্তরে ঈমানের মিষ্টতা এবং খালিক ও মালিকের প্রতি মহববত ও ভালবাসা থাকতে হবে। বস্ত্তবাদী ও যুক্তিপূজারী অন্তর দুঃখজনকভাবে এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত।

    সুন্নাহর আলোকে কুরবানী

    এ পর্যন্ত শুধু কুরআন মজীদ থেকে আলোচনা করা হল। যদি এ বিষয়ের ‘সহীহ’ ও ‘হাসান’ হাদীসগুলো একত্র করা হয় তবে একটি বৃহৎ গ্রন্থ তৈরি হবে। শুধু সহীহ ইবনে হিববানের ‘কিতাবুল উয্হিয়া’ বা কুরবানীর অধ্যায়টি হাদীসের ধারাবাহিক ক্রমিক নং অনুসারে ৫৮৯৭ থেকে ৫৯৩৩ পর্যন্ত বিস্তৃত। এগুলোতে সামান্য কিছু হাদীসের পুনরুল্লেখ রয়েছে। পক্ষান্তরে এ কিতাবের বাইরেও আরো সহীহ হাদীস অন্যান্য কিতাবে রয়েছে।

    উপরের হাদীসগুলো ছাড়া আরো কয়েকটি হাদীস পেশ করছি।

    ১. উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কুরবানীর ইরাদাকারী যিলহজ্বের চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর যেন তার নখ, চুল না কাটে কুরবানী করা পর্যন্ত।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭/৩৯-৪২; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬২-৪৩৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৮৯৭, ৫৯১৬, ৫৯১৭

    ২. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দ্বীন সম্পর্কে জানতে এসেছিল। ফিরে যাওয়ার সময় নবীজী তাকে ডাকলেন এবং বললেন-

    أمرت يوم الأضحى جعله الله عيدا لهذه الأمة

    ‘‘আমাকে ‘ইয়াওমুল আযহার’ আদেশ করা হয়েছে। (অর্থাৎ এ দিবসে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছে।) এ দিবসকে আল্লাহ এ উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। লোকটি বলল, আমার কাছে যদি শুধু পুত্রের দেওয়া একটি দুধের পশু থাকে আমি কি তা-ই কুরবানী করব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, না, বরং তুমি সেদিন তোমার মাথার চুল কাটবে (মুন্ডাবে বা ছোট করবে) নখ কাটবে, মোচ কাটবে এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে।’’ -মুসনাদে আহমদ ২/১৬৯; হাদীস ৬৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৭৭৩, ৫৯১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫

    ৩. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করল না (অর্থাৎ তার কুরবানী করার সংকল্প নেই) সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে।’-মুসনাদে আহমদ ২/৩২১; মুস্তাদরাকে হাকেম ৪/২৩১, হাদীস ৭৬৩৯

     

    ৪. আলী (রা.) বলেন-

    أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نستشرف العين والأذن وأن لا نضحي بمقابلة ولا مدابرة ولا شرقاء ولا خرقاء

    ‘আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন, আমরা যেন (কুরবানী পশুর) চোখ ও কান ভাল করে দেখে নিই এবং কান-কাটা, কান-চেরা বা কানে গোলাকার ছিদ্র করা পশু দ্বারা কুরবানী না করি।’ -মুসনাদে আহমদ ১/৮০, ১০৮, ১৪৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২৯১৪-২৯১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮০৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৭৩-৪৩৭৪

    ৫. বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

    أربع لا يضحى بهن : العوراء البين عورها، والمريضة البين مرضها، والعرجاء البين ظلعها، والعجفاء التي لا تنقي.

    ‘চার ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী করা যায় না- যে পশুর চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্ত, যে পশু অতি রোগা, যে পশু খোঁড়া আর যে পশু অতি শীর্ণকায়।’ -মুয়াত্তা মালিক ২/৪৮২; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৯১৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৭০-৪৩৭১; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৯৭

    কুরবানী সম্পর্কে আরো অনেক হাদীস ও আছার আছে। এখানে তা সংকলন করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধু আরেকটি হাদীস উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গ সমাপ্ত করছি।

    আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা আনতে বললেন, যার পা কালো, পেটের চামড়া কালো এবং চোখ কালো। দুম্বা আনা হলে নবীজী বললেন, আয়েশা, আমাকে ছুরি দাও। এরপর বললেন, একটি পাথরে ঘষে ধারালো করে দাও। তিনি ধারালো করে দিলেন। এরপর তিনি ছুরি হাতে নিলেন এবং দুম্বাটিকে মাটিতে শোয়ালেন। এরপর বিসমিল্লাহ বলে জবাই করলেন এবং বললেন-

    اَللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَّآَلِ مُحَمَّدٍ وَّمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ

    ‘ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মাদের উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৯১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯২

    অন্য হাদীসে আছে, কুরবানীর পশু জবাই করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়েছেন-

    بِسْمِ اللهِ، اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ، اَللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ

    ‘আল্লাহর নামে; ইয়া আল্লাহ! তোমার নিকট থেকে এবং তোমার উদ্দেশ্যে; ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১১৩২৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২১

    মোটকথা, পূর্ণ তাওহীদ ও ইখলাসের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার আশা নিয়ে কুরবানী করা উচিত। আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন করে কবুল হওয়ার প্রত্যাশা এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মেহমানদারীর সৌভাগ্য লাভের অনুভূতি বান্দার মধ্যে আনন্দও সৃষ্টি করে। আর এটাই হচ্ছে ঈদুল আযহার মর্মবাণী। কুরবানীর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুআ

    اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ

    ‘ইয়া আল্লাহ! তোমার নিকট থেকে এবং তোমারই উদ্দেশ্যে’ সম্পর্কে  চিন্তা-ভাবনা করলে খুব সহজেই বোঝা যায়, কুরবানীর হাকীকত কী। আল্লাহ-প্রদত্ত রিযিক ও আল্লাহর নেয়ামত আমরা লাভ করেছি, আর আল্লাহর হুকুমে তা কুরবানীরূপে তাঁর দরবারে পেশ করার সৌভাগ্য হয়েছে। অতপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মেহমানদারী হিসাবে তা গ্রহণ করার নির্দেশনা পেয়েছি।

    বলাবাহুল্য, কুরবানী নামায রোযার মতো ফরয আমল নয়, তবে এটি অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত কুরবানী করেছেন, কোন বছর বাদ দেননি। (আলইস্তিযকার, ইবনে আব্দিল বার ১৫/১৬৩-১৬৪)

    তদ্রূপ কখনো কখনো কুরবানী করার জন্য সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বণ্টন করেছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৫৫

    আর হযরত আলী (রা.)কে আদেশ করেছেন (ইন্তেকালের পরেও) তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করতে। তাই তিনি প্রতি বছর নিজের কুরবানীর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৪৩, ১২৭৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৭

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত উম্মতের মধ্যে এই ইবাদত ‘তাওয়ারুছ’ ও ‘তাওয়াতুর’এর সাথে চলমান রয়েছে এবং প্রতিবছর ‘শিয়ার’রূপে (ইসলামের একটি প্রকাশ্য ও সম্মিলিতভাবে আদায়যোগ্য ইবাদত হিসাবে) তা আদায় করা হয়েছে। অতএব কেউ যদি মনে করে, কুরবানী ইবাদত নয় এবং ইসলামী শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে সে শরীয়ত অস্বীকারকারী।

    ভুলে যাওয়া এক শহর নাগাসাকি

    ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোসিমা আর নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমার আঘাত হানা হলেও ইতিহাস মনে রেখেছে শুধু হিরোসিমার কথা। সেই হামলার বহু বছর পরও অবহেলিত রয়ে গেছে নাগাসাকি। নাগাসাকি হয়ে আছে ভুলে যাওয়া একটা শহরের নাম। ৭৩ বছরের ইতিহাসে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কোনো মহাসচিব নাগাসাকি পরিদর্শন করলেন। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট নাগাসাকি হামলার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সেখানে যান জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টেনিও গুতারেস।

    নাগাসাকিতে এটাই জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কোনো সফর। নাগাসাকি বিশ্বের সর্বশেষ শহর যেখানে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনী নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা চালায়। কিন্তু এর তিন দিন আগে পারমাণবিক হামলা হয়েছিল হিরোসিমাতে। একারণেই হয়তো হিরোসিমায় হামলার ঘটনাটি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলা রয়ে গেছে আলোচনার বাইরে। এর ফলে এই শহর ভুলে যাওয়া একটা শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। পারমাণবিক বোমায় দুটি শহরই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হিরোসিমা শহরে যত উচ্চ পর্যায়ের সফর হয়েছে সে পরিমাণ হয়নি নাগাসাকিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা ২০১৬ সালে জাপান সফরে গিয়ে হিরোসিমা সফর করলেও সফরসূচিতে ছিল না নাগাসাকি।

    নাগাসাকি আর হিরোসিমার ঐ ভয়াবহ পারমাণবিক হামলার কয়েক দিনের মাথায় ১৪ আগস্ট আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয় জাপান। ২ সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের ইতি ঘোষণা করা হয়।-বিবিসি

    সর্বোচ্চ সাজা ৫ বছর হত্যা প্রমাণে মৃত্যুদন্ড

    সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রেখে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
    নতুন আইন অনুযায়ী, বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে পকউ গুাংতর আহত বা নিহত হলে দন্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় মামলা দায়ের হবে। সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়া হবে। তবে তদন্তে যদি দেখা যায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন, তাহলে দন্ডবিধি ৩০২ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। অর্থাৎ সাজা হবে মৃত্যুদন্ড। তবে এটা তদন্ত সাপেক্ষে এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারা নির্ধারণ করবে। এসব বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর খসড়া চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
    গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সম্পূরক এজেন্ডা হিসেবে এ অইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এমন এক সময়ে সরকার এ আইনের খসড়া অনুমোদন করল, যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী চালকের মৃত্যুদন্ডের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন করছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
    বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, মোটরযান দুর্ঘটনায় আহত বা প্রাণহানি হলে পেনাল কোড অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, পেনাল কোডে যা কিছু থাকুক না কেন অবহেলাজনিত কারণে গুরুতরভাবে আহত বা প্রাণহানি হলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চালকদের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পাস হতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালাতে পারবেন না। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য বয়স হতে হবে ১৮ বছর। পেশাদার হলে বয়স হতে হবে ২১ বছর। প্রস্তাবিত আইনে চালকের ভুলের জন্য ১২টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে এসব পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট এভাবে শূন্য হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে যানবাহনের চালক, হেলপারসহ পরিবহনসংশ্বিলষ্ট শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হবে। এটি গেজেট বা প্রজ্ঞাপনে নেই। শ্রম আইন ২০০৬-এর সঙ্গে মিল করে কর্মঘণ্টা সরকার ঠিক করবে। আইনের নতুন ধারায় মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা, সীমানা নির্ধারণ, মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ, গতিসীমা, শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
    তিনি বলেন, নতুন আইনে দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল থাকবে। সেটা পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে। সরকার, চালক সমিতি, মালিক সমিতি মিলে এই বোর্ড গঠন করা হবে। নতুন আইনে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে : গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না, সিটবেল্ট বাঁধতে হবে, নারীদের আসনে অন্য কেউ বসতে পারবে না। ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ সংশোধন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে ২০১৩ সালে সরকার নতুন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
    মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, নতুন আইনানুযায়ী, গাড়ি চালানোর সময় কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ডের বিধান রয়েছে আইনে। সড়কের ফুটপাতের ওপর দিয়ে কোনো ধরনের মোটরযান চালাচল করতে পারবে না। যদি করে, তবে তিন মাসের কারাদন্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে।
    তিনি বলেন, আগে গাড়ি চালকদের লেখাপড়ার বিষয়ে কিছু না থাকলেও নতুন আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। কন্ডাক্টর বা চালকের সহযোগীকে কমপক্ষে লেখা ও পড়ার সক্ষমতা থাকতে হবে। যদি কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায়, তবে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কেউ এই অপরাধ করলে, তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ৩ মাসের কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স লাগবে। কন্ডাক্টারের লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে আগে শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা। আইনে মূল শাস্তি কারাদন্ড আগের মতোই আছে, জরিমানা ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে।
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ফিটনেস না থাকা মোটরযান চালালে আগে শাস্তি সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা রয়েছে। সেখানে এখন শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা। এ শাস্তি পাবে মূলত গাড়ির মালিক। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দন্ডবিধিতে যে শাস্তি রয়েছে, সেই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
    সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্তে দুর্ঘটনা যদি উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে প্রমাণিত হলে তা দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় (হত্যা, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড) যাবে। আর চালকের কারণে প্রাণহানি হয়ে থাকলে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী সাজা দেয়া হবে। তদন্ত কর্মকর্তাই ঠিক করবেন- অপরাধ কোন ধারায় যাবে।
    গত বছরের ২৭ মার্চ নতুন আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইন মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক পরিবহনে পাঠানো আইনটির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিল মন্ত্রিসভা। এখন আইনটি পাস করতে সংসদে তোলা হবে।

    জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো আজ ঢাকায় আসছেন

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে দু’দিনের সফরে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। এই সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু-সহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মিয়ানমার সফর শেষে বাংলাদেশে আসছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলবেন তারা।
    সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত ১৩ থেকে ১৬ মে টোকিও সফর করেন। সে সময় জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। সে অনুযায়ী  এ সফর হচ্ছে। এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় জাপানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মানবিক সহায়তা দেবে দেশটি। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য জাপান রকার মানবিক সহায়তা হিসেবে ২ কোটি ৩৬ লাখ ডলারও দিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাপান বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলেও জানিয়েছে। তার সফরের আগে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপানের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
    কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জাপান আগামী ২০২৫ সালের জন্য ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজন করতে চায়। এ কারণে বাংলাদেশের সমর্থন পেতে চায় দেশটি। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ মেয়াদে জাতিসংঘের  নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হতে চায় জাপান। এটা নিয়েও জাপান বাংলাদেশের সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়ে আসছে। ঢাকা সফরের সময় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
    বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্বস্ত বন্ধু  জাপান। ঢাকা-টোকিওর মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্কও রয়েছে। জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও  জোরদার হবে বলে আশা করছে উভয়পক্ষ।
    এদিকে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড দুই দিনের সফরে বুধবার ঢাকা আসছেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমনওয়েলথভুক্ত তিন দেশ সফরের অংশ হিসেবে তিনি শ্রীলঙ্কা ও ব্রুনাই’তেও যাবেন। প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন।

    আগামীকালও প্রাণঘাতী তাপমাত্রার সম্ভাবনা

    সমগ্র জাপানে, আজও তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার মাঝে কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। আগামীকালও প্রাণঘাতী তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    আজ দিনের বেলায়, গিফু, হিয়োগো এবং ওকাইয়ামা জেলার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি এবং কিয়োতো, নাগোয়া ও ওসাকার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

    আগামীকাল, নাগোয়া ও কিয়োতো শহর এবং সাইতামা জেলার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে বিপুল সংখ্যক লোকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এঁদের কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে।

    বিশেষজ্ঞরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার, প্রচুর পানি পান এবং দিনের বেলা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে লোকজনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

    ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সমতায় বাংলাদেশ

    তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারিয়ে সমতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫৯ রান সংগ্রহ করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
    এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম আউট হন। এরপর বাংলাদেশের ৪৮ রানে আউট হন সৌম্য সরকার। একে একে লিটন, মুশফিক, সৌম্য ফিরে গেলেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন তামিম। পরে সাকিবকে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেন তিনি। একপর্যায়ে জমে উঠে তাদের জুটি। দলীয় ১৩৮ রানের রাসেলের শিকার বনে ফেরেন তামিম। ফেরার আগে ৪৪ বলে ৬ চারের বিপরীতে ৪ ছক্কায় ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি ড্যাশিং ওপেনারের ৬ষ্ঠ ফিফটি।
    তামিম ফিরলেও থেকে যান সাকিব। ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে হার মানেন তিনি। কিমো পলের বলে মারতে গিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এর আগে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৭ম ফিফটি। ৩৮ বলে ৬০ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলার পথে তিনি হাঁকান ৯ চার ও ১ ছক্কা। শেষ পর্যন্ত ১৭১ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৩ ও আরিফুল হক ১ রানে অপরাজিত থাকেন।
    বাংলাদেশের দেওয়া ১৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরবোর্ডে ৫ রান তুলতেই উইকেট হারিয়ে ফেলে। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে এভিন লুইসকে ফিরিয়ে দেন টাইগার পেস সেনসেশন মোস্তাফিজুর রহমান।
    এর পর বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১০ বলে ১৭ রান করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।  ৩ বলে ১০ রান করা মারলন স্যামুয়েলসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩ উইকেটে ৪৮। এর পর রুবেলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১১ বলে ৫ রান করা রামদিন। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪ উইকেটে ৫৮। বাংলাদেশকে পঞ্চম সাফল্য এনে দেন নাজমুল ইসলাম অপু। দলীয় ১১৬ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার এন্ডু ফ্লেচারকে সাকিবের ক্যাচে পরিনত করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ফ্লেচার  ৩৮ বলে ৪৩ রান সংগ্রহ করেন। সাকিবের বল ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে গিয়েছিলেন কার্লোস ব্রাফেট। কিন্তু লিটনের দারুণ ক্যাচে ১১ রানে সাজঘরে ফেরেন ব্রাফেট। তার আউটের সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৬ উইকেটে ১৩১। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫৯ রান সংগ্রহ করতে পারে। ফলে বাংলাদেশ ১২ রানে জয় পায়।

    দেশজুড়ে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট, নেপথ্যে শ্রমিক ফেডারেশন

    রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় চলমান ছাত্র বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিনে ঢাকাসহ বেশিরভাগ জেলায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

    সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। সংগঠনটির সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

    পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সরাসরি ধর্মঘটের কথা স্বীকার করছেন না। তারা বলছেন, আন্দোলনরত ছাত্ররা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা বাস চালাচ্ছেন না।

    জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বেনাপোলসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

    এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী যুগান্তরকে বলেন, আমরা কাউকে গাড়ি বন্ধ করতে বলিনি। অনেক মালিকই নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালাচ্ছেন না। তবে কোনো ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়নি।

    প্রসঙ্গত, রোববার দুপুরে কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে নৌমন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানান।

    এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার পর সোমবার রাস্তায় নেমে আসেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

    এর পর গত ছয় দিন ধরে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছেন।

    শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে পদত্যাগ করবেন না বলে তিনি জানান।

    এর পর বিকাল থেকে মিরপুরে পরিবহন শ্রমিকদের মারমুখী অবস্থান দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশের সঙ্গে মিলে শ্রমিকরা তাদের পিটিয়েছেন।

    এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস মাঝপথে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে বলে খবর পাওয়া গেছে।

    পরে শুক্রবার ভোর থেকে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাসে বাধা দেন শ্রমিকরা। তারা যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাসগুলোকে সড়কের পাশে এলোপাতাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন।

    শ্রমিকদের বাধার মুখে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর প্রায় সব রুটেই বাস চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

    বাস চলাচলে বাধার বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম রসুলের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার সময় কুষ্টিয়া হয়ে ঢাকায় আসার পথে শ্রমিকরা আমাদের বাস ফেরত পাঠিয়ে দেন।

    গোলাম রসুল অভিযোগ করে বলেন, নিয়মানুযায়ী ধর্মঘট ডাকতে হলে মালিক-শ্রমিকরা একসঙ্গে বসে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু আমাদের কিছু বলা হয়নি। তাই আমরা যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করেছি। এখন যাত্রীদের নিতে বাস চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

    এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে শুক্রবার বাদ জুমা পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।

    বাস চলাচল বন্ধ রেখে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে শুক্রবার সকাল থেকে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্ষন্ত এ ধর্মঘট চলবে।

    পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, গত পাঁচ দিন ধরে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীতে তিন শতাধিক বাস ভাঙচুর ও অন্তত নয়টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ কারণে রাজধানীতে বাস চলাচল সীমিত ছিল।

    কিন্তু শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে শুক্রবার ভোর থেকে সারা দেশে একযোগে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন।

    আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি রোড, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জিয়া উদ্যান, শ্যামলী, কল্যাণপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১, ১০ ও ১১, পল্লবী, কালশী, মগবাজার, প্রগতি সরণি, তেজগাঁও, নাবিস্কো, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, বিমানবন্দর সড়ক, খিলক্ষেত, উত্তরা ও আবদুল্লাহপুরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে তেমন সাধারণ যান চলাচল চোখে পড়েনি।

    তবে রাজধানীর কিছু সড়কে বিআরটিসি ও ট্রাস্ট পরিবহনের বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এ দুই পরিবহনেরও খুব কমসংখ্যক বাস চলাচল করছে।

    অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর কোথাও একটি বাসের দেখা মিললে তাতে ওঠার জন্য শত শত যাত্রী হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কিন্তু পাঁচ-ছয়জনের বেশি যাত্রী কোনো বাসেই উঠতে পারছেন না। নারী যাত্রীরা এগিয়ে গেলেও বাসের ধারেকাছেও ভিড়তে পারছেন না তারা।

    সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুরজুড়ে প্রধান সড়কগুলোতে এলোপাতাড়ি বাস-মিনিবাস ফেলে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। কোনো গাড়ি চলাচল করলে তা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।

    মিরপুর সাড়ে ১১-তে এক দল শ্রমিক যুগান্তরকে জানায়, পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে। তারা কোনো গাড়ি চলতে দিচ্ছেন না।

    আব্দুল্লাহ নামে এক শ্রমিক যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে।

    মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের দৌঁড়ে প্রথম মুসলিম নারী

    একটি ব্যতিক্রমী দৃশ্য- স্যামন গোলাপি হিজাব পড়া একজন মহিলা ম্যাসাচুসেটসের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জায়গায় দাঁড়িয়ে রাস্তায় চলাচলরত গাড়িতে বিভিন্ন মানুষের কাছে তাকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত করার জন্য ভোট চাইছেন।
    তাহেরা আমাতুল-ওয়াদুদ নামের এই নারী প্রার্থী একজন পথচারীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন, বলছেন আপনি কেমন আছেন। বিরক্ত হয়ে অনেক গাড়ির চালক দীর্ঘ সময় হর্ন বাজাচ্ছে। কৌতূহলী হয়ে চালকরা জানালা দিয়ে মাথা বের করে খেয়াল করছে। কিছু চালক খেয়াল না করে চলে যাচ্ছে।
    আমাতুল-ওয়াদুদ সাত সন্তানের জননী, একজন আইনজীবী, একজন সমাজ কর্মী এবং একজন মুসলমান। তিনি সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং রোজা রাখেন।
    তার বয়স ৪৪ বছর। জীবনে অনেক বড় বাধার সম্মুখীন হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনী এলাকার বেশির ভাগ মানুষই শ্বেতাঙ্গ, এখানে খ্রিষ্টান ক্যাথলিক অধ্যুষিত এলাকায় প্রথম মুসলিম কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হওয়ার একটি বড় বাধা।
    কিন্তু এটি তার জন্য কোনো ধর্মের বিষয় না, এটি নীতি নির্ধারণের বিষয়। এটি ভালো প্রতিনিধিত্বের বিষয় এবং পশ্চিম ম্যাসাচুসেটস এলাকায় জীবনমান উন্নয়নের বিষয়। এই এলাকায় অন্যতম সমস্যা বেকারত্ব।
    এ ব্যাপারে তিনি এএফপিকে বলেন, আমি সবসময় ধর্মীয় কথা বলি না কারণ আমি ধর্মীয় আলোকে নেতৃত্ব করতে চাই না।
    এবছর কংগ্রেস সদস্যের দৌড়ে সদা হাসি মুখে থাকা আইনজীবী আমাতুল-ওয়াদুদ নারীর জাগরণের অংশ এবং তিনি একজন প্রগতিশীল ডেমোক্রেট ।যিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধী মনোভাবে উদ্বুদ্ধ।
    মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজিনটেটিভে প্রথম মুসলিম এই নারী মিনেসোটার কেইথ এলিসনের ১২ বছর পরে একজন মুসলিম নারী হিসেবে নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
    যদি তিনি জয়ী হন তাহলে তিনি হবেন তার জেলার এবং আফ্রিকান আমেরিকান প্রথম নারী কংগ্রেসম্যান। বাসস

    জাপান-যুক্তরাষ্ট্র নতুন বাণিজ্য আলোচনা

    জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন দফার একটি বাণিজ্য আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করে নিয়েছে। আগামী মাসের ৯ তারিখে ওয়াশিংটনে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

    আলোচনায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন জাপানের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন মন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগি এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার।

    গত সপ্তাহে সিনেটের এক শুনানিতে মি: লাইটহাইজার দ্বিপক্ষীয় একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে জাপানের সাথে আলোচনা শুরুর প্রবল ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। ওয়াশিংটন আরও বেশী মার্কিন গাড়ি ও খামার পণ্য কেনার জন্য জাপানের কাছে জানানো দাবী জোরদার করে নিতে পারে বলে জাপানি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন।

    ছাত্র বিক্ষোভে অচল রাজধানী

    বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী। দিনভর অচল ঢাকা। ফুটপাথে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক বাসচালকের ফাঁসি দাবি এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে তারা। গতকাল মঙ্গলবার টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এতে কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। কোনো কোনো স্থানে বিক্ষুব্ধদের দমাতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। তাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
    সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভে ঢাকার প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র মতিঝিল, ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট, কাকরাইল, তেজগাঁও, নাবিস্কো, বাড্ডা, রামপুরা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর-২, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, খিলক্ষেত, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও শান্তিনগরজুড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
    বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, মতিঝিল, কাকরাইল ও বাড্ডায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে উত্তরার জসীম উদ্দীন সড়কে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা এনা পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া এখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকায় লোকজনকে ভয়ে দিগি¦দিক ছুটতে দেখা যায়।
    অবরোধের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মোড় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় পুরো শহরের পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাতে পুরো রাজধানীই কার্যত অচল হয়ে যায়। দুপুরের আগেই পুরো রাজধানী থেকে সব ধরনের বাস উধাও হয়ে যায়। একপর্যায়ে গণপরিবহন সঙ্কটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন রাজধানীবাসী।
    এদিকে, ৯ দফা দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। জড়িত দোষীদের বিচার হবে, শাস্তিও হবে।
    বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে যোগ দেয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে এ অবরোধ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর একে একে বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর সড়ক, ফার্মগেট, মতিঝিল, কাকরাইল, রামপুরা এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা যতই বাড়ে, শিক্ষার্থীদের অবরোধের স্থানও ততই বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভে প্রথমে উত্তাল এবং পরে অচল হয়ে পড়ে গোটা রাজধানী।
    ধানমন্ডি
    বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজসহ ধানমন্ডি ও আশপাশের কয়েকটি কলেজের শত শত শিক্ষার্থী রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে। এতে আশপাশের সব এলাকায় যানচলাচল পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। এ সময় হিমাচল পরিবহনের একটি বাস সামনে যেতে চাইলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেটিতে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
    আন্দোলনকারী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা তালুকদার বলেন, প্রতিদিনই গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে অথচ চালকদের কোনো বিচার হচ্ছে না। আমরা অভিযুক্ত চালকদের যথাযথ শাস্তিসহ নিহত দুইজনের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
    ডিএমপির রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সায়েন্স ল্যাবরেটরির রাস্তাটি রাজধানীর একটি সেন্ট্রাল রাস্তা। এটি বন্ধ করে দিলে আশপাশের সব সড়ক অচল হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে মেনে নেয়নি। পরে বেলা আড়াইটার দিকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
    রামপুরা
    রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা হাতিরঝিল সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে। এ ছাড়া রামপুরা ব্রিজে রাজারবাগ এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং শান্তিনগর মোড়ে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু হেনা বলেন, প্রতিদিনই চাকার নিচে পিষ্ট করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। অথচ এর কোনো বিচার হয় না। আমরা ঘাতক চালকদের ফাঁসি দাবি করছি।
    মতিঝিল
    দুপুর ১২টার দিকে নটরডেম কলেজের প্রায় পাঁচ শাতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের সামনের সড়ক ও শাপলা চত্বর মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় যাত্রাবাড়ী, পল্টন, বিজয়নগর এবং শাহবাগ থেকে মতিঝিলে আসা ও যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘বিচার চাই’ ‘বিচার চাই’ বলে সেøাগান দেয়। এ সময় একটি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
    মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, নটরডেম কলেজের সামনের সড়কে ও শাপলা চত্বর মোড়ে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় পুরো এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদেরকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় একটি বাস ব্রেক ফেল করে মধুমিতা সিনেমা হলের বারান্দায় উঠে গেলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন আহত হয়।
    মিরপুর
    সকাল ১০টা থেকে মিরপুর কমার্স কলেজসহ আশপাশের বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। সাড়ে ১০টা থেকে তারা ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিছু বাস যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের তাড়ার মুখে তারা গতিপথ পরিবর্তন করে ভিন্ন রাস্তায় চলে যায়। তবে স্কুলগামী বাস ও শিক্ষার্থী বহনকারী প্রাইভেটকারগুলোকে যেতে দেয়া হয়।
    সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে মিরপুর-১, ২, ১০ নম্বর গোল চত্বর, কাজীপাড়া ও ১১ নম্বর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পুরো এলাকা স্থবির হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, সরকার জবাব চাই’, ‘আমার বোন মরল কেন, সরকার জবাব চাই’ এ জাতীয় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে আরো শিক্ষার্থী এসে এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে তারা দৌড়ে গিয়ে আশপাশের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়।
    মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির জানান, শিক্ষার্থীরা সনি সিনেমা হলের সামনে ও আশপাশের কয়েকটি সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তবে কোনো ধরনের ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
    তেজগাঁও
    সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফার্মগেট সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিজ্ঞান কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আশপাশের সবগুলো সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র আলী আহসান বলেন, রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটলেও সরকারের টনক নড়ছে না। আমরা অন্য কিছু চাই না, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হোক।
    বিক্ষোভকালে তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি জানায়। এর মধ্যে রয়েছে- শাজাহান খানকে সংসদীয় কমিটি, মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন ও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পেশাদার লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, বিগত দিনের সব দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় ওভারব্রিজ, সকল প্রকার দলীয় আচরণ ত্যাগ করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা। এদিকে, তেজগাঁও নাবিস্কোর সামনে মানববন্ধন করেন সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
    উত্তরা
    সকালের দিকে শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যারা শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে উত্তরাগামী বিভিন্ন বাসে তুলে দেয়। কিন্তু সাড়ে ১০টা বাজতে না বাজতেই রমিজ উদ্দিন কলেজসহ আশপাশের অন্তত ১০টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্রোতের মতো আসতে থাকে। পুলিশ জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে এক দফা ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়।
    সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সকাল থেকেই উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হতে শুরু করে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, টঙ্গী সরকারি কলেজ, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করতে চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের বাধা দেয়। দুপুরের দিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ঢল নামলে তাদের আর দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জসিমউদ্দিন রোড থেকে র‌্যাব-১ কার্যালয় পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে বিক্ষোভ করে ও প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় বুশরা ও এনা পরিবহনের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। বেলা সাড়ে ৩টায় উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ে বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচটি বাস এবং একটি পিকআপ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাসেল সিকদার জানান, জসীম উদ্দীন রোডে এনা ও বুশরা পরিবহনের দুটি বাসে শিক্ষার্থীদের আগুন দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়।
    যাত্রাবাড়ী
    দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানবন্ধন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি ফেরার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে তিন-চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
    যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
    গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তি
    এদিকে, বিক্ষোভের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। নিত্য কাজে বেরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহন না পেয়ে হেঁটেই কেউ কেউ পথ ধরেন নিজ গন্তব্যের। গতকাল রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক, কুড়িল, বিশ্বরোড, মিরপুর, মতিঝিল, উত্তরা ও ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনভোগান্তির এমন চিত্রই চোখে পড়েছে। গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সকাল থেকেই গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর মানুষ।
    সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কে বিভিন্ন স্টপেজে গণপরিবহনের অপেক্ষায় রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ভোগান্তির অন্ত নেই। সকালে অফিস সময়ে যানবাহন সঙ্কট দাঁড়ায় চরমে। অনেকে গন্তব্যে যেতে হেঁটে কিংবা উচ্চ ভাড়ায় রিকশায় চড়ে রওনা দেন। তবে মাঝে মধ্যে দুয়েকটা বাস এলেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এর মধ্যে কেউ কেউ উঠতে পারলেও বেশির ভাগই ‘গাড়ি ওঠার প্রতিযোগিতা’য় রীতিমতো হিমশিম খান, যা দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
    জানা গেছে, রাজধানীর অনেক এলাকার বাসিন্দারা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাননি। ভোগান্তি এবং রাস্তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন।
    আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি উত্তরা থেকে রামপুরা যাবো। কিন্তু এক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করে শেষে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছি।
    ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ বলেন, হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে কুর্মিটোলার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সড়ক ফাঁকা হয়ে যায়।
    উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হয়। আহত হয় আরো ১০/১২ জন। নিহতরা হলো- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা টানা তিন দিন ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।