• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ভোট জালিয়াতি ও চুরি করতেই সরকার ইভিএম ব্যবহারে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে -রিজভী

    ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির অফুরন্ত সুযোগ থাকবে বলেই বাংলাদেশের অবৈধ সরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ইভিএম ব্যবহারে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণার ও অনুসন্ধানের রিপোর্ট থেকে এটি সুস্পস্ট যে ইভিএম সহজে হ্যাক করা যায়, চাইলে একমূহুর্তের মধ্যে ইভিএম এর সবগুলো ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো-কমানো থেকে শুরু করে যে কোন প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকেও পাল্টে দেয়া যায়। ইভিএম-এ দূর থেকেও ম্যানিপুলেট করা যায়। ইভিএম দিয়ে ভোটারের নাম, বয়স, ঠিকানা, মোবাইল, পরিবার ইত্যাদিসহ যাবতীয় তথ্য একেবারেই পাওয়া যায়। এর অপব্যবহারের মাধ্যমে হুমকি-ভীতি প্রদান থেকে শুরু করে ভোটারের অনুপস্থিতিতে তার নামেও জালভোট দেয়া সম্ভব। ভোটারবিহীন সরকারের দিক থেকে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেই এখন ডিজিটাল মেশিন কারচুপির উপর নির্ভর করছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। আজ বুধবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
    রিজভী বলেন, নির্বাচনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারের চাহিদামত ইভিএম এর তথ্য বা ফল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এমনকি দলীয় লোকদের হাতেও এই ক্ষমতা চলে যেতে পারে। ইভিএম এর সফটওয়ার পরিবর্তন বা বন্ধ করে নির্বাচনে অস্থিতিশীলতা ও শূণ্যতা সৃষ্টি করা সম্ভব। অনেক স্বৈরতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে প্রহসন ও নির্লজ্জ কারচুপির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভোটারদের ইভিএম স্ক্রিনে দেখানো হয় তাদের ভোট সঠিক প্রার্থীর নামে যাচ্ছে। কিন্তু ইভিএম এর ভেতর তথ্য হিসেবে ভোট চলে যায় অন্য প্রার্থীর নামে।
    তিনি বলেন, একমাত্র সরকারীদল ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিকদল, সুধীজন, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অধিকাংশই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য মতামত পেশ করেছিল। ইসিও দীর্ঘদিন ধরে বলে এসেছে সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও শ্রেনী পেশার মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে তড়িগড়ি করে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ ও নানা ষড়যন্ত্রের কথা শুনা যাচ্ছে। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় দূরভিসন্ধিমূলক ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০ টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।
    নির্বাচন কমিশন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নামে এক বিতর্কিত মাধ্যম ব্যবহারের চিন্তা করছে যা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। ভারতেও দু’দিন আগে বিরোধী দলগুলো ইভিএম ব্যবহার না করতে সে দেশের নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের দূরভিস্বন্ধিমূলক পরিকল্পনা মূলত ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং রচনার পটভূমি। ইভিএম নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন হতাশা ও সমালোচনার ঝড় বইছে তখন এই ধরনের উদ্যোগ কার ইশারায় এবং কিসের ইঙ্গিতবাহি তা জাতির কাছে সুস্পস্ট। জনগণের দল হিসেবে জনমতের প্রতি বিএনপি’র চিরন্তন দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই আমরা এমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করছি যেখানে জনগণের স্বপ্ন, আকাঙ্খা ও দাবির প্রতিফলন ঘটবে।
    ইভিএম নিয়ে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ও আর্ন্তজাতিক গবেষণার ফলাফলের কিছু অংশ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ভারতের ইকোনোমিক টাইমস পত্রিকার অনুসন্ধানের রির্পোটে জানা যায় বিশ্বের ২০০ টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪টি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সেসব দেশেও ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো আজও পর্যন্ত ইভিএমের গ্রহণযোগ্য ব্যবহার ঘটেনি। যে সব অল্প সংখ্যক দেশে ইভিএম আংশিকভাবে ব্যবহার করা হয় সেখানেও ভোট প্রক্রিয়ায় ও ফল নির্ধারনে ভয়াবহ কারচুপির প্রমান মিলেছে। ভোট গ্রহণের এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সিকিউরিটি ও তথ্যের গোপনীয়তা নিয়েও গণতান্ত্রিক বিশ্বে সার্বজনিন ভীতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই প্রায় সব দেশেই নির্বাচনে ইভিএমকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ও জনবিরোধী মাধ্যম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
    তিনি বলে, আয়ারল্যান্ডে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে গবেষনার পেছনে ৫১ মিলিয়ন ইউরো খরচ করবার পর এটিকে অবৈধ নির্বাচনী যন্ত্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়। জার্মানির সুপ্রিমকোর্ট ইভিএমকে অসাংবিধানিক ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষনার মাধ্যমে এর ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করে। হল্যান্ডে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও ফলাফলের স্বচ্ছতার অভাবে ডাচ কাউন্সিল আইন করে ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এছাড়াও ইটালি ও প্যারাগুয়েতে ইভিএম নিষিদ্ধ করা হয়।
    যুক্তরাজ্যেও অনেক গবেষনা ও আলোচনা ভিত্তিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে, সুজারল্যান্ড-স্পেন-রোমানিয়া সহ বেশ কিছু দেশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আশাব্যঞ্জক ফল না ঘটায় এর আর প্রয়োগ ঘটেনি। নরওয়েতে কোন ভোটার কাকে ভোট দিচ্ছে, এই গোপনীয়তা ভঙ্গের ভয়ে পরিক্ষামূলক নির্বাচনে ভোটের পরিমান আসংখ্যাজণকভাবে কমে যায়। এটিকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি ও জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনা করে সেখানে ইভিএম প্রত্যাহার করা হয়। বিবিসির একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যুক্তরাস্ট্রের গবেষকরা মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ভারতের ইভিএম প্রক্রিয়া হ্যাক করে কয়েকটি কেন্দ্রের ফলাফল পরিবর্তন করা হয়। এবছরের মে মাসে ভারতের একটি স্থানীয় নির্বাচনে ১৫% এর বেশি ভোটিং মেশিন অকার্যকর হয়ে পড়ে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার ভোটারদের সাক্ষাতকার নিয়ে দেখে অধিকাংশ বুথেই ভোটের দিন ইভিএম নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিতর্কের মুখে ভারতের নির্বাচন কমিশন দাবি করে, গরমে উচ্চমাত্রার কারণে তাদের ইভিএমগুলো হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাখ্যা নিয়ে সর্বত্র হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। গত বছরেই ভারতের আরেকটি নির্বাচনে হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার অনুসন্ধানে নতুন বিতর্ক বেরিয়ে আসে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সবগুলো ভোট চলে যায় সরকার দলীয় প্রার্থীর নামে।
    এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

    উ. কোরিয়াকে এখনও মারাত্মক হুমকি মনে করছে জাপান
    যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাথে আলোচনা সত্ত্বেও টোকিও উত্তর কোরিয়াকে এখনও মারাত্মক হুমকি মনে করছে। কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা কমার পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো জাপানের বার্ষিক প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় এ কথা বলা হয়। খবর বার্তা সংস্থা তাসের।
    ২০১৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া পরিকল্পিতভাবে তিন দফা পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় এবং ৪০টি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে।
    জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক শ্বেতপত্রে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার এ ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড জাপানের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি। এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর শান্তি ও নিরাপত্তা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
    শ্বেতপত্রে আরো বলা হয়, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে উত্তর কোরিয়ার নেতা কোরীয় উপদ্বীপের নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন করতে তার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখিতভাবেও এমন প্রতিশ্রুতি দেন। পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
    জাপানের বার্ষিক ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পিয়ংইয়ংয়ের মোতায়েন করা কয়েকশ’ নদং ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের যেকোন স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম বলে আশংকা করা হচ্ছে।
    উল্লেখ্য, গত ১২ জুন সিঙ্গাপুরের সান্তোসা দ্বীপের কাপেলা হোটেলে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক হয়।
    সেখানে তারা একটি যৌথ চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে পিয়ংইয়ং কোরীয় উপদ্বীপকে নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দেয়। -বাসস

    বাংলাদেশে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

    বাংলাদেশে একটি অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যাতে দেশের জণগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র সময সোমবার ওয়াশিংটনের ফরেন প্রেস সেন্টারে ‘ইউ এস পলিসি ইন দ্য ইন্ডিয়ান ওশান রিজোন’ শীর্ষক এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনসহ চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে করা এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি (উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এলিস ওয়েলস। এক প্রশ্নের জবাবে শুরুতেই ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্বের সম্ভাবনার দিকগুলো নিয়ে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি। পাশাপাশি বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন-আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) সবসময়ই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে থাকি সেটা হলো- অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের কাছে দেয়া প্রতিজ্ঞা পূরণ করা। সে নির্বাচন হতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন।
    সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনকে স্বতস্ফূর্ত গণতান্ত্রিক বিক্ষোভ আখ্যা দিয়ে ডেপুটি অ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র বিক্ষোভগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি, সেখানে যা ঘটেছে সেটা হলো স্বতস্ফূর্ত গণতান্ত্রিক বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া নাগরিকদের সমাবেশ এবং সরকারের এসব বিষয়ে সাড়া প্রদানের বিষয়ও আমরা দেখেছি। মুক্তমত প্রকাশ এবং অবাধ রাজনৈতিক চর্চার সুযোগকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায় মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশে সব পক্ষের মুক্তভাবে মত প্রকাশের সুযোগ করে দেবার পক্ষপাতি এবং তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অবাধ অংশগ্রহণের পরিবেশকে উৎসাহিত করছি। সবার জন্য এমন সুযোগ তৈরি হোক যাতে কোন প্রকার ভয় বা প্রতিহিংসা মুক্ত থেকে সভা বা সমাবেশে অংশ নিতে পারে।

    কুরআনের হেদায়েত সবার জন্য

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    بعد…

    সংক্ষেপে তিনটি কথা আরয করছি।

    প্রথম কথা, মসজিদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেবল রমযান কেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়। মসজিদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে দায়েমী। দুনিয়াতে জান্নাতের নমুনা মসজিদ।

    দ্বিতীয় কথা, কুরআন মাজীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক যেন হয় দায়েমী। একবার একজনকে দেখেছি, তাঁর ভক্তদেরকে বলছেন, তিলাওয়াত করতে না পারলে কুল হুওয়াল্লাহ দুই শ বার পড়েন। এ কথাটা শুনে আমার বড় কষ্ট লেগেছে। সূরা ইখলাস দু শ বার কেন চার শ বার পড়। এক হাজার বার পড়। কিন্তু এটা পুরো কুরআন শেখার বিকল্প কীভাবে হয়? না পড়তে পারলে শিখেন- এ কথা বলতে হবে। মুসলমানকে কুরআন শিখতে হবে। পড়তে পারতে হবে।

    আমরা রমযানে তারাবীতে কুরআন শুনলাম। কুরআন শুধু শোনা- এটা কোনো মুমিনের শান হতে পারে না। মুমিনকে কুরআন শোনানোর যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এক সূরা, দুই সূরা, এক পারা, দুই পারা এভাবে পরিমাণ বাড়াতে হবে। পুরা কুরআন যেন তিলাওয়াত করতে পারে, দেখে দেখে পুরা কুরআন পড়তে পারে এমন যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এজন্য আমরা এই রমযান থেকেই মেহনত শুরু করি। প্রয়োজনে আলিফ বা তা ছা থেকে শুরু করি।

    কুরআন শেখা ফরয। সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শেখা সবার উপর ফরয। শেখার জন্যে এখন আপনাদের কোনো ওযর নেই যে, আমরা কুরআন শেখার জন্যে কোনো রাস্তা পাইনি। দশ বছর আগের বৌনাকান্দি আর এখনকার বৌনাকান্দিতে কত পার্থক্য! দশ বছর আগের হযরতপুর আর এখনকার হযরতপুরে কত পার্থক্য! পুরা কুরআন সূরা ফাতেহা থেকে নাস পর্যন্ত দেখে দেখে সহীহ-শুদ্ধভাবে পড়তে পারার যোগ্যতা যুবকদের সবাইকে অর্জন করতে হবে। অর্জন করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আর বুড়োরা ছোট ছোট সূরা দিয়ে শুরু করবেন। আর বড় বড় সূরা অংশ বিশেষ করে শিখতে হবে। শিখতে শিখতে কবরে যাব। শেখা বন্ধ করে কবরে যাওয়ার চেয়ে শিখতে শিখতে কবরে যাওয়া কি ভালো না?

    হযরত হারদুঈর ঘটনা। তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখতেন এমন এক জেনারেল শিক্ষিত লোক। হয়ত ডাক্তার হবেন। তিনি নাযেরা শিখেছেন। আগ্রহ হল, পুরা কুরআন হিফয করবেন। তার বুঝ হল, আমি যদি হিফয শেষ করতে নাও পারি, হিফয করতে করতে কবরে যাই…। ঠিক যখন তার এক পারা দুই পারা করে (সম্ভবত) আঠার পারা  হিফয হল, তখন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ডাক এসেছে। তিনি কবরে চলে গেছেন। তো এখন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কী আশা করতে পারি। শুরু করা তো আমার সাধ্যের ভেতরে আছে। শেষ করানো আল্লাহ্র কাজ। কুরআন শেখার ক্ষেত্রে এ কথা বড় অন্যায় যে, নামাযে তো কেবল আমার চার সূরা দরকার। আচ্ছা, কুরআন কি শুধু নামাযের জন্য, না যিন্দেগীর জন্য?

    তৃতীয় বিষয় হল, বুযুর্গদের একটি উক্তি আছে। বড় চমৎকার। পুরা বাস্তবসম্মত কথা- رب تال للقرآن والقرآن يلعنه অনেক মানুষ আছে এমন যে, সে কুরআন তিলাওয়াত করে আর কুরআন তাকে লানত করে। অর্থাৎ সে নিজেই কুরআনের ভাষায় নিজকে লানত করে চলেছে। কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে সে হয়ত পড়ছে  فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ্র লানত। ও লোক মিথ্যাবাদী। সে তিলাওয়াত করছে অথচ মিথ্যা ছাড়ছে না। সে হয়ত পড়ছে- أَلَا لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِينَঅত্যাচারীদের উপর আল্লাহর লানত অথচ সে নিজেই মানুষের উপর যুলম করে। যেখানেই তার ক্ষমতা থাকে সেখানেই সে যুলুম করে। এভাবে সে নিজেই নিজেকে কুরআনের ভাষায় লানত করে।

    তিলাওয়াত শব্দটা বড় তাৎপর্যপূর্ণ। তিলাওয়াত শব্দের মধ্যে এই কথাও আছে যে, যা পড়বে সে অনুসারে চলবে। তালা-ইয়াতলু- পেছনে পেছনে চলা। পড়ব আর যা পড়ছি ওটার পেছনে পেছনে চলব। কুরআনের হেদায়েতগুলো মেনে চলব। তিনটা কথা বলা হল আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন।

     

    দ্বিতীয় মজলিস

    আমরা যদি চিন্তা করি, এই রমযানে আমাদের দেশে কত খতম হয়েছে; তারাবীতে, তাহাজ্জুদে, নফলে; মসজিদের তারাবীতে, ব্যক্তিগত তারাবীতে…। আর যদি সারা বিশ্বের কথা ধরা হয় তাহলে তো বলতে হবে, খতম অনবরত চলতে থাকে। হারামে তারাবী চলছে। আরো পশ্চিমে আরো পরে তারাবী শুরু হবে। চব্বিশ ঘণ্টা সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে তারাবী চলতে থাকে।

    আমাদেরকে যে কথাটি মনে রাখতে হবে তা হল, তিলাওয়াত কুরআনের একটি হক, একমাত্র হক নয়। তিলাওয়াত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হক তবে কুরআনের আরো বড় বড় হক রয়েছে। কুরআনের সব হককে যদি এক কথায় বলতে চাই, তাহলে কুরআনের ভাষায়-

    وَ قَالَ الرَّسُوْلُ یٰرَبِّ اِنَّ قَوْمِی اتَّخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا.

    আর রাসূল বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যক্ত করে রেখেছিল। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৩০

    মক্কার মুশরিকরা যখন দাওয়াত কবুল করেনি তখন হয়ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শেকায়েত করেছেন- সেটা এখানে উদ্ধৃত হয়েছে, অথবা আখেরাতে শেকায়েত করবেন- সে কথা এখানে উদ্ধৃত হয়েছে। কুরআনকে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ কী, কীভাবে হয়? যত কিছু কুরআন ছেড়ে দেওয়ার অধীনে আসে তত কিছু হিজরানে কুরআনের আওতায় আসে।

    এর বিপরীত হল, কুরআনকে গ্রহণ করা। কুরআনের হক আদায় করা এবং যথাযথভাবে আদায় করা। যদি আমরা কুরআন তিলাওয়াতের হকের কথা বলি তাহলে শুধু তিলাওয়াতই আল্লাহ ফরয করেছেন- তা নয়। حَقّ تِلَاوَتَه… তিলাওয়াতের হক আদায় করে তিলাওয়াত করা জরুরি। তিলাওয়াতের হক আদায় করার জন্য কমপক্ষে তিনটা বিষয় দরকার। ১. তিলাওয়াত বিশুদ্ধ হতে হবে। ২. বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করতে হবে। ৩. তিলাওয়াত মোতাবেক আমল করতে হবে। তাহলে এটা হবে হক আদায় করে তিলাওয়াত করা।

    হক আদায় করে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে- এ কথার উপর এ আয়াত যে দালালাত করে এটা এ আয়াতের দালালাতুন নস। الدلالة بالطريقة الأولوية। দালালাতুন নস অনেক সময় ইবারাতুন নস থেকে অধিক শক্তিশালী হয়। আবলাগ হয়। কথাটা তালিবুল ইলম ভাইদের জন্য বলে রাখলাম।

    এই আমরা তিলাওয়াত শুনলাম, এটা যদি বুঝে শুনে হয়- চাই সেটা নির্ভরযোগ্য কোনো অনুবাদনির্ভর হোক- যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে দেখব যে, কুরআনের কত বিধান পরিত্যক্ত হয়ে আছে।

    প্রথম ঈমানের বিষয়টা ধরি। যেসব করণীয় সম্পর্কে কুরআন আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয়  ঈমান। কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঈমান সম্পর্কে যত আয়াত আছে আমরা আমাদের সমাজে তালাশ করে দেখি- কোন্ ঈমান আল্লাহ ফরয করেছেন আর সমাজে আছে কী? কত আকীদা কুরআন ফরয করে দিয়েছে আর আমাদের সমাজের বড় অংশ সে আকীদার কাছেধারেও নেই। কুরআনের তালীমগুলোকে ব্যাপকভাবে চর্চা করা দরকার।

    هُدىً لِلنَّاسِ কুরআন তো সবার জন্যে হেদায়েত। যাদের দিলে আল্লাহ্র ভয় নেই আখেরাতের ভয় নেই, তারা এখান থেকে হেদায়েত গ্রহণ করে না। এটা তাদের দুর্ভাগ্যের বিষয়। কিন্তু আল্লাহ তো দিয়েছেন সবার জন্যে।  হেদায়েত গ্রহণ করে, উপকার গ্রহণ করে কেবল মুত্তাকীরা- هُدًى لِلْمُتَّقِينَ । যদিও শুধু মুত্তাকীদের জন্য দেননি। দিয়েছেন সবার জন্যে।

    প্রয়োজন কুরআনে কারীমের সকল হেদায়েতের ব্যাপক চর্চা। বিশেষত ফরযে আইন শ্রেণির হেদায়েতগুলোর তো অত্যাবশ্যকভাবে ব্যাপক চর্চা দরকার। এমনিভাবে যে শ্রেণির মানুষের জন্য যে হেদায়েতগুলো বিশেষভাবে দেওয়া হয়েছে সে শ্রেণির মানুষের মাঝে ওই হেদায়েতগুলো বিশেষভাবে প্রচার-প্রসার করা দরকার।

    মুসলিম বিশ্বের যত দেশ আছে সব দেশের সরকারকে, প্রশাসনের লোকদেরকে কুরআন মাজীদ কী কী কথা বলেছে? বিচারকদেরকে কী বলেছে? আইনের লোকদেরকে কী বলেছে?

    যত অ্যাডভোকেট আছে সবাইকে কুরআন এক কথা বলে দিয়েছে-

    وَ لَا تَكُنْ لِّلْخَآىِٕنِیْنَ خَصِیْمًا.

    খেয়ানতকারীদের পক্ষে ওকালতী করতে যেও না। যে হকের উপর আছে তার পক্ষে তুমি সাফাই গাও। তাকে আইনি সহযোগিতা দাও। যে হকের উপর নেই, যে খেয়ানত করছে, তার পক্ষে তুমি দাঁড়াতে পারো না।

    তারা কি কুরআন পড়ে না? কুরআনের তরজমা পড়ে না? হয়ত না। হয়ত এমনও লোক থাকবে, যারা কুরআন ধরেও দেখে না। কিন্তু এ সকল বিধান সকলেই জানে।

    পুরো মুসলিম বিশ্বে যত আদালত আছে, কোর্ট আছে, বিচারপতি ও বিচারক আছে, সবাইকে কুরআন বলে দিয়েছে-

    اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِیَّةِ یَبْغُوْنَ   وَ مَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ یُّوْقِنُوْنَ.

    যারা ওহীর ইলম থেকে বঞ্চিত তোমরা কি তাদের বিধান চাচ্ছ? অথচ তোমরা দাবি কর তোমরা মুমিন। তোমরা মুসলিম। তাদের তাহযীব তামাদ্দুন, তাদের আইন ও সংবিধান কীভাবে তোমাদের আইন হয়? এর ভিত্তিতে কীভাবে তোমরা ফায়সালা কর? তুমি যদি মুমিন হয়ে থাক তবে কুরআনের চেয়ে ভালো বিধান তোমাকে কে দিবে? এর চেয়ে বড় আইন কে দেবে? কার কাছে যাচ্ছ? তোমার রব তো আল্লাহ। তোমার খালিক মালিক আল্লাহ। আল্লাহ্র বান্দাদের উপর হুকুমত করবে, আল্লাহ্র বান্দাদের ঝগড়া মিটাবে, মামলা মোকাদ্দমার ফায়সালা করবে, বিচার করবে, সেই বিচারের নীতি তুমি কার থেকে নেবে? তোমার খালিক থেকে নাও। তোমার মালিক থেকে নাও। যিনি মাবুদ তার কাছ থেকে নাও। সবকিছু কুরআনে আছে।

    وَ مَنْ لَّمْ یَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْن.

    আল্লাহ্র নাযিল করা বিধান মোতাবেক তুমি ফায়সালা করছ না, তুমি যালিম না হয়ে আর কী হবে?

    তুমি মুমিন। তোমার হেদায়েতের জন্য আল্লাহ কুরআন দান করেছেন, এর মধ্যে সবকিছু আছে। একজন বিচারকের জন্যে যা কিছু দরকার, একজন সরকার প্রধানের যা কিছু দরকার সব হেদায়েত ও নির্দেশনা এবং মূলনীতি দেওয়া আছে। একজন আইনজীবীর যা দরকার হয় আছে। একজন ব্যবসায়ীর যা দরকার হয় আছে। সামাজিক রীতিনীতির জন্য যা দরকার সব আছে। একটা ভালো সমাজের জন্যে যা দরকার সব আছে। যত শ্রেণির মানুষ এবং মানব জাতির যত ধরনের সমস্যা হতে পারে সবকিছুর হেদায়েত এবং সমাধান কুরআনে আছে। আল্লাহ তো তোমাকে ইলমে ওহী দান করেছেন। কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে এই উম্মতকে আল্লাহ ধনী বানিয়ে দিয়েছেন। তুমি কেন অন্যের দুয়ারে হাত পাতবে?!

    কুরআনে কারীম সকল ক্ষমতাধর শাসকগোষ্ঠীকে সম্বোধন করে নমুনা দিয়ে দিয়েছে-

    اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَ اَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَ نَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ  وَ لِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ.

    যাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ  দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহ্র এখতিয়ারে। -সূরা হজ¦ (২২) : ৪১

    কুরআন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে সেই নির্দেশও, যা আল্লাহ তাআলা দাউদ আলাইহিস সালামকে দিয়েছিলেন। তাঁকে আল্লাহ তাআলা নবুওতও দান করেছিলেন এবং বাদশাহীও দান করেছিলেন। বাদশাহী কী এবং কেন তা জানিয়েছেন আল্লাহ তাআলা তাঁকে। এবং সেই হেদায়েত কুরআনে নাযিল করে কিয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা সকলের জন্য বিধান করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-

    يٰدَاوٗدُ اِنَّا جَعَلْنٰكَ خَلِیْفَةً فِی الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَیْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعِ الْهَوٰی فَیُضِلَّكَ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ  اِنَّ الَّذِیْنَ یَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِیْدٌۢ بِمَا نَسُوْا یَوْمَ الْحِسَابِ.

    হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহ্র পথ হতে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কারণ তারা বিচারদিবসকে ভুলে আছে। -সূরা ছদ (৩৮) : ২৬

    কুরআন খতম তো সবাই করেছে, সব দেশের প্রশাসনের সব লোকেরা করেছে, আদালতের সব লোকেরা করেছে, পার্লামেন্টের সব লোকেরা করেছে। কুরআন কিন্তু সবাইকে সম্বোধন করে করে বলেছে, পথনির্দেশ দিয়েছে, দিয়ে যাচ্ছে। কুরআন বলেছে, সুদ ছাড়ো, ঘুষ ছাড়ো, ধোঁকা ছাড়ো। ভেজাল ছাড়ো। দুর্নীতি ছাড়ো। মাপে কম দিও না। ওয়াদা পুরা করো। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো না।…

    যুবকদেরকে কেমন পাক্কা ঈমানদার হতে হবে সে বর্ণনা আল্লাহ সূরা কাহফে দিয়েছেন-

    اِنَّهُمْ فِتْیَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَ زِدْنٰهُمْ هُدًی ، وَّ رَبَطْنَا عَلٰی قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَاۡ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلٰهًا لَّقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا.

    তারা ছিল একদল যুবক, যারা নিজ প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে হেদায়েতে প্রভূত উৎকর্ষ দান করেছিলাম। আমি তাদের অন্তর সুদৃঢ় করে দিয়েছিলাম। এটা সেই সময়ের কথা যখন তারা (রাজার সামনেই) দাঁড়াল এবং বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর মালিক। আমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে কখনোই ডাকব না। তাহলে তো আমরা চরম অবাস্তব কথাই বলব। -সূরা কাহ্ফ (১৮) : ১৩-১৪

    কোন্ শ্রেণীর মানুষ আছে, যে বলবে, আমার কথা কুরআনে নেই। বাচ্চাদের কথা বলুন, মা-বাবা তাদেরকে কীভাবে লালন পালন করবে সে কথা কুরআনে আছে। মৃত্যু এসে গেছে, কবরে কীভাবে সোপর্দ করবেন, কবরে গিয়ে তার কী হালত হবে। সব এসে গেছে কুরআনে। কুরআন হল যিন্দা কিতাব। কুরআন এমন জিনিস না যে, এটা গিলাফে ভরে তাকে রেখে দিবেন। কুরআন এমন কিতাব নয় যে, শুধু তিলাওয়াত করে ক্ষান্ত থাকবেন।

    তিলাওয়াত করার সময় আপনাকে কুরআন বলতে থাকবে। শুধু তিলাওয়াত করে চলে যাবেন এটা হবে না। গাফেল হয়ে কেউ কুরআন তিলাওয়াত করে চলে যাবে এটা হতে পারে না। কুরআন তাকে সজাগ করে দিবে। দিল খুলে, দিলের কান খুলে যে তিলাওয়াত করে, কুরআন তাকে গাফেল থাকতে দেয় না। আল্লাহ তাআলা এজন্যই  মুমিনের দায়িত্বে কুরআন তিলাওয়াত জরুরি করে দিয়েছেন। কুরআন তিলাওয়াত ঈমানী দায়িত্ব। এর দ্বারা মুমিনের ঈমান জাগ্রত হয়। ঈমানী তাকাযা জাগ্রত হয়। এই জিনিসটা আমরা খেয়াল করার চেষ্টা করি। যার সাধ্যে যতটুকু আছে, কুরআনের হেদায়েতগুলোকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।

    কুরআনকে আমরা যিন্দা কিতাব হিসাবে গ্রহণ করি। শুধু তিলাওয়াত করে খতম করব। এটা অনেক বড় সওয়াবের বিষয়। কিন্তু হক আদায় করে তিলাওয়াত শুধু খতম করা আর সওয়াব হাসিল করার নাম নয়। সবাই সবার সাধ্যের ভেতরে কুরআনের হেদায়েতগুলোকে বাস্তবায়নের  চেষ্টা করি। …وَ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ  এ আয়াতে আল্লাহ তার বান্দাদের গুণাবলী বলে দিয়েছেন।  قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ এখানে আল্লাহ মুমিন বান্দাদের গুণাবলি বলে দিয়েছেন। উলুল আলবাব- কারা কুরআনে বলে দেওয়া হয়েছে। মুত্তাকী কারা- বলে দেওয়া হয়েছে।

    গতকাল সূরা মাআরিজে তিলাওয়াত হল, মুসল্লি কেমন হবে। মুসল্লি এমন হবে, মুসল্লির সিফাত এই হবে। মুসল্লির মধ্যে চারিত্রিক পবিত্রতা থাকতে হবে। মুসল্লিদের গুণাবলি ওখানে বর্ণনা করা হয়েছে। মুসল্লিদের সম্পদে, যা আল্লাহ্র দেয়া, তাতে বঞ্চিতদের হক থাকে। কুরআনে বর্ণিত এ সকল সিফাত খুঁজে খুঁজে নিজের মধ্যে আনার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভরপুর তাওফীক নসীব করেন।

    আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকার  ও জিহাদের কত আয়াত কুরআন মাজীদে আছে। এসব আজ অবহেলিত। ইসলামী খেলাফত নেই। এ কথা আমরা বলি। এখন সরকারও বলে- দেশে ইসলামী খেলাফত নেই। ইসলামী হুকুমত নেই। ইসলামী হুকুমত না থাকার কারণে খেলাফত বিষয়ক যত ইসলামী বিধান আছে সব মাফ!! নাউযু বিল্লাহ!

    ইসলামী হুকুমত কীভাবে হবে? ইসলামী হুকুমত কি আসমান থেকে নাযিল হয়, যেমন ঈসা আ.-এর উম্মতের জন্যে আসমান থেকে তৈরি খাবার এসেছে? যাকে আল্লাহ ক্ষমতা দিয়েছেন সে যদি তার হুকুমতকে ইসলামী তরীকায় পরিচালনা করে তাহলে ইসলামী হুকুমত আসে। সে আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকারের চূড়ান্ত বিভাগ খুলবে। সে জিহাদের বিধান বাস্তবায়ন করবে। হুদূদ (ইসলামী দ-বিধি) বাস্তবায়ন করবে। তার অফিস আদালত সবকিছু কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক হবে। তাহলে ইসলামী হুকুমত অস্তিত্ব লাভ করবে। মুসলিম দেশের সরকার যদি বলে, আমাদের দেশে ইসলামী হুকুমত নেই। এজন্য এ সকল বিধান প্রযোজ্য না- এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর কী আছে!

    সকল মুসলিম দেশের প্রশাসনকে ডেকে ডেকে কুরআন বলে, তোমরা আমর বিল মারুফের কাজ কর। নাহি আনিল মুনকারের কাজ কর। ইবাদত নিজে কর। ইবাদতের পরিবেশ কায়েম কর। সালাত কায়েম কর। যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা কর। নিজে যাকাত দাও।  তোমার অধীনস্থরা যাকাত দিচ্ছে কি না সেটা তদারকি কর। শরীয়ত যে সকল হদ নির্ধারণ করে দিয়েছে সে হদগুলো কায়েম কর। চুরির কী শাস্তি? ফাহেশার কী শাস্তি? মদ্যপানের কী শাস্তি? কোন্টার কী শাস্তি সেটা বাস্তবায়ন কর। নিজের থেকে পণ্ডিতি করো না। শরীয়ত যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটা বাস্তবায়ন কর। সেটা বাস্তবায়ন করবে, সুফল পাবে। নিজের থেকে পণ্ডিতি করলে একে তো শরীয়তের বিধান লংঘন হবে, শরীয়তের বিপরীতে আরেক আইন দাঁড় করানোর মত কুফরী কাজ হবে, অপর দিকে ফায়দা কিচ্ছু হবে না। ক্ষতি আর ক্ষতি হবে।

    মাদরাসার মধ্যে কুরআনের পরিবেশ, ঘরের মধ্যে কুরআনের পরিবেশ- এটা যে আল্লাহ্র কত বড় নিআমত- এটা বুঝতে পারে সে, যার পুরো ঘর এক দিকে আর সে কুরআন  শিখেছে, কুরআনী যিন্দেগী, ঈমানী যিন্দেগী বোঝা শুরু করেছে এবং সেটা একটু বাস্তবায়ন করতে চায়। কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য পারে না। তখন বোঝা যায় পরিবেশটা কুরআনী হওয়া, পুরো পরিবারটা কুরআনী হওয়া কত বড় নিআমত।

    একটা ঘরে পর্দার পরিবেশ নেই। হঠাৎ একজন পর্দার বিধান জেনেছেন। আল্লাহ তার ঈমানী শক্তি জাগ্রত করে দিয়েছেন। মনে করুন, তিনি তার মায়ের কাছে বসা। এমন সময় তার কাছে আসতে চায় তার ভাবি বা এমনও হতে পারে, আপনার ভাবি ওখানে আর আপনি কোনো দরকারে ওখানে যেতে চান। তখন তাকে সরে যেতে হবে বা আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। এটা অনেক বড় একটা বাধা। কিন্তু যদি আপনিও পর্দার বিধান মানেন সেও পর্দার বিধান মানে তাহলে বিষয়টা সহজ। আপনার ভেতর যদি পর্দার বিধানের গুরুত্ব থাকে, আপনি যদি দ্বীন-ঈমান শিখে থাকেন তাহলে এই বাধার উপর আপনি খুশিই হবেন।

    আমি আমার ভাতিজাদের ঘটনা শুনিয়েছি। যখন রিয়াদ থেকে এসেছি, তারা একেবারে ছোট। আমি ঘরে ঢুকেছি। গ্রাম দেশে একটা ঘরের দুইটা পাশ থাকে। একটাকে বলে আতীনা। সামনের অংশ আর ভেতরের অংশ। আমি সামনের অংশ থেকে ভেতরের অংশে গিয়েছি। এখন বের হব। বাইরে উঠান। উঠান আবার দুই ধরনের, ভেতরের উঠান, বাইরের উঠান। আমি ভেতরের উঠানে যাব, আম্মার সাথে দেখা করার জন্য। যাওয়ার আগে আমি আওয়াজ দিব। কিন্তু আমি আওয়াজ দেওয়ার আগেই ভাতিজারা আমার ভাব দেখে বুঝতে পেরেছে আমি ওইদিকে যাব। তখন দুজনই দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমাকে নিষেধ করছে, এদিকে আসবেন না, আসবেন না; আম্মা ওখানে আছেন। কে তাদেরকে এটা শিখিয়েছে? এটা শিখিয়েছে তাদের পরিবেশ।

    আমাকে বাধা দিয়েছে এতে আমি খুশি। আমাকে যদি এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টাও দেরি করতে হয়, তাও আমি খুশি। কিন্তু যদি কারো কাছে এই বিধানের গুরুত্ব না থাকে তাহলে  সে এক-দুই ঘণ্টা  তো দূরের কথা বাধা দেওয়ার উপরেই নারাজ হয়ে যাবে। মাদরাসার তালিবুল ইলম যারা, তাদের পুরা পরিবারটাই যদি এমন মাদরাসী হয় তাহলে এক অবস্থা। আর যদি এমন হয়, পরিবারের মধ্যে সে একজনই মাদরাসায় পড়ছে তাহলে দেখুন কী দুর্দশা! ভাবীরা নারাজ। কারণ, তার সামনে এসে পড়লে সে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। সে হয়ত মায়ের কাছে বসা। হঠাৎ ভাবী না জানিয়ে সামনে এসে পড়লেন। তখন সে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল এবং উঠে চলে গেল। এতে উনারা নারায। কারণ, পর্দার বিধানের গুরুত্ব এখনো তাদের অন্তরে বসেনি।

    এখন তো অনেকে পর্দার বিধানকেই ভাগ করে ফেলেছে। খাস পর্দা আর আম পর্দা। শরীয়তে দুই ধরনের পর্দা নাই। শরীয়তে আছে পর্দার বিধান। কেউ পুরা মানে আর কেউ কিছুটা মানে। ঘরে পর্দা আছে, খাস পর্দা নাই- এর মানে হল, পর্দা নেই। এজন্য খালা শাশুড়ি, মামী শাশুড়ি কত ধরনের শাশুড়ি যে আছে। এই সব শাশুড়িরা পর্দার বিধানের আওতায়। এসব শাশুড়ির সাথে পর্দা করতে হবে। আসল শাশুড়ি তো হলেন আপনার স্ত্রীর মা। হাঁ, আপনি অন্যদের খোঁজ-খবর নেন ভায়া হয়ে। আপনার স্ত্রীর মাধ্যমে। সরাসরি তাদের সাথে কথাও বলতে যাবেন না। দেখা দেওয়া তো দূরের কথা। এ সমস্ত কথা কে মানে? এগুলো তিক্ত কথা। কঠিন কথা। এগুলোর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এমন পবিত্র পরিবেশই কুরআনী পরিবেশ।

    ঘরকে কবরস্তান বানাবেন না। কবরস্তানে কেউ কুরআন পড়ে না। ঘরকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করুন। রেডিও ছেড়ে, মোবাইল ছেড়ে কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে দিন শুরু করেছেন। সূরা ইয়াসীনের তিলাওয়াত  শোনার মধ্য দিয়ে দিন শুরু করেছেন। ভালো কথা, কিন্তু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না। সূরা ইয়াসীনের অর্থের প্রতি খেয়াল করুন। সূরা ইয়াসীনকে বলা হয়েছে কলবুল কুরআন। এ সূরায় পুরো কুরআনের হেদায়েতের সারসংক্ষেপ চলে এসেছে। অর্থ বুঝে বুঝে সূরা ইয়াসীন শুনুন এবং সে মোতাবেক আপনার দিনটা পরিচালিত করুন। আপনার ঘরটা, দোকানটা পরিচালিত করুন। তাহলে সূরা ইয়াসীন শোনা সার্থক। এক ধাপ আরো অগ্রসর হোন, সূরা ইয়াসীনের তিলাওয়াত শিখুন; নিজে তিলাওয়াত করুন। আরও সূরা শিখুন। পূর্ণ কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত শিখুন, তিলাওয়াত করুন এবং কুরআনের ইলম ও আমল গ্রহণ করুন।  আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক নসীব করুন- আমীন।

    জাপানে টাইফুনের আঘাত

    জাপানের ভয়াবহ বন্যার পর শুক্রবার আবার বড় ধরনের সামুদ্রিক ঝড় বা শক্তিশালী টাইফুন আঘাত হেনেছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জাপানের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টাইফুন সিমারন বৃহস্পতিবার রাতে জাপানি দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার। গত ৪৮ ঘণ্টায় সেখানে ৬০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, মুষলধারে বৃষ্টি ছাড়াও বন্যায় রাস্তা ডুবে গেছে, ঘরবাড়ির অবকাঠামো ভেঙে গেছে। বাতাসে লরি উল্টে গেছে। প্রচন্ড ঝড়ের কারণে এক লাখের বেশি পরিবার বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ৩০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বুলেট ট্রেনও সাময়িকভাবে বন্ধ। জাপানের আগুন ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর বলছে, টাইফুনে ১৩ জন আহত। অনেক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কথা বলা হয়। আবহাওয়া দপ্তরের প্রধান রুতা কুরোরা সেখানকার বাসিন্দাদের ভূমিধস, বন্যা ও জলোচ্ছ¡াস থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এনএইচকে।

    বিএনপি একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার দায় এড়াতে পারেনা

    একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার দায় বিএনপি এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট সড়ক ট্যানেল নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। শেখ হাসিনাই হামলাকারীদের প্রধান টার্গেট ছিল- উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা এই কিলিংয়ের টার্গেট ছিল। সারা দেশ জানে বিএনপির সরকার তখন ক্ষমতায়। হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায়, ডিজাইনে এটা হয়েছে। এগুলো এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়।
    আইভি রহমানসহ ২৪ প্রাণের প্রদীপ নিভে গেছে। শেখ হাসিনার ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল বলে বেঁচে গেছেন। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের রায় হতে যাচ্ছে। রায় কী হবে, কারা এতে জড়িত- সেটা বিচারালয় সিদ্ধান্ত নেবেন। আদালত রায় দেবেন, এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আদালত স্বাধীন। মন্ত্রী আরও বলেন, এই ঘটনাটির নীলনকশাকারী বিএনপি। সেই অবস্থায় আমরা বলতেই পারি, বিএনপি এর দায় এড়াতে পারে না। আমরা আশা করব, রায় বাস্তবতার নিরিখেই হবে। যা ঘটেছে সেই নিরিখেই বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে এই রায় দেবে। এবং সেজন্যই আমি বলেছি, বিএনপির অনেক নেতার জড়িত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

    যে বক্তব্যের কারণে মসজিদুল হারামের ইমাম গ্রেফতার হয়েছেন

    মক্কা মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শাইখ সালেহ আত তালিব হাফিজুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিডল ইস্ট মনিটর নামের একটি অনলাইনে এই সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। তবে অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যম থেকে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। যে বক্তব্যটি ইমাম সোশাল মিডিয়ায় দেন সেটি হলো- তোমরা আল্লাহর নাফরমান এবং যারা এই সমাজের মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে চালু করছে তাদেরকে বয়কট করো। যা আমাদের পূর্বসূরি বড় বড় উলামায়ে কেরামগণ বলে গেছেন। ঐ সমস্ত মানুষদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো যাদের কর্মপদ্ধতি সন্দেহযুক্ত, এবং যারা নারীদেরকে রাস্তায় বের করে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দেয়, যারা নারীদেরকে উলঙ্গপনার দিকে আহবান করে, যারা নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশার দিকে উৎসাহিত করে বর্তমান সমাজে ফাসাদ শুরু করেছে, তাদেরকে বয়কট করুন ৷ যারা নেশাযুক্ত পানীয়কে বৈধতা দান করে তাদেরকে বয়কট করুন । আপনারা পরিপূর্ণভাবে গান-বাজনা এবং কমেডি, কৌতুক ও সিনেমার অনুষ্ঠানকে বয়কট করুন । যদিও যারা এই সিনেমা ও কমেডি চালু করেছে তারা এটাকে নিছক বিনোদন মনে করে। এটা কেবল বিনোদন নয় বরং এই সিনেমার অনুমোদন দ্বারা একমাত্র উদ্দেশ্য হল পশ্চিমা চিন্তা-চেতনাকে লালন করা এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পশ্চিমা আদর্শ ও নীতিকে ঢুকিয়ে দেওয়া। যে নাচ গানের এবং কমেডি নাটক সিনেমার অনুমোদন একেবারে ইসলামী নেই। ইসলামী নীতিতে এই কাজ হারাম, ইসলাম এর অনুমোদন প্রদান করে না ।

    তাদের এই অসৎ উদ্যোগ পবিত্র এই ভূমির জন্য লজ্জাজনক বিষয়, এবং এই পবিত্র ভূমিকে লাঞ্ছিত করার শামিল, তাদের এই অসৎ উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত, এক সময় আসবে যখন এই বেহায়াপনায় ‘কুদওয়াতুন লিশ্শাবাব’ তথা যুবকদের উত্তম মডেল হিসাবে স্থান পাবে।

    জাপানের পশ্চিমাঞ্চলে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়

    জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের দিকে বৃহস্পতিবার একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
    জাপান আবহাওয়া সংস্থা জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিমারন বুধবার গ্রিনিজ মান সময় ২৩০০ টায় গোতো দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটির প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ২১৬ কিলোমিটার।
    সংস্থা জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে টাইফুনটি আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    তারা আরো জানায়, টাইফুনের প্রভাবে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জাপানের মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ ৮‘শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। -বাসস

    মওদুদকে কবর জিয়ারত করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে তার নির্বাচনী এলাকায় পীর ও দলীয় নেতাদের কবর জিয়ারতে বাধা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

    মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নে ছনখোলার দরবেশের মাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন মওদুদ আহমদ। তিনি এ ঘটনার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের দায়ী করেছেন।

    ঘটনাস্থলে উপস্থিত কবিরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মওদুদ আহমদকে কবর জিয়ারতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মীরা সঙ্গে থাকা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের মারধর করে।

    এতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল রাশেদ, যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক নূর আলম চৌধুরী ও ছাত্রদল কর্মী হাফিজ উদ্দিন আহত হন। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

    বিএনপি নেতা মওদুদ অভিযোগ করেন, বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি নির্বাচনী এলাকার কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুরে যান ‘ছনখোলার দরবেশ হুজুর’ এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম নিজাম উদ্দিনের কবর জিয়ারত করতে।

    তিনি সেখানে গিয়ে গাড়ি থেকে নামার পরই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু লোক সেখানে এসে হট্টগোল শুরু করে এবং তাকে গালমন্দ করে কবর জিয়ারতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।

    কিন্তু এরই মধ্যে তিনি কবর জিয়ারত শেষ করে ওই স্থান ত্যাগ করে কোম্পানীগঞ্জে ফিরে যান। মওদুদ বলেন, যে দলের লোকজন মাজার জিয়ারত করতে গেলে বাধা দেয়, সেই দল কীভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে, তা বোধগম্য নয়। তারা যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

    বিশ্বজুড়ে ঈদুল আজহা পালন

    বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করছে মুসলমানরা। মক্কায় চলছে পবিত্র হজের চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতাও। আলজাজিরা।
    বিশ্বজুড়ে মঙ্গলবার ঈদ পালন হলেও দক্ষিণ এশিয়াসহ কয়েকটি অঞ্চলে ঈদ হবে বুধবার।
    বিভিন্ন দেশে ঈদের নামাজ আদায়ের পর ছাগল, ভেড়া বা গরু কোরবানি দেন মুসলমানরা। এসব পশুর মাংস বিলিয়ে দেয়া হয় প্রতিবেশি ও গরীবদের মাঝে।

    প্রধানমন্ত্রীর ফেসবুক আইডি নেই

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুক এবং টুইটারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদের কোনো অফিসিয়াল বা ব্যক্তিগত আইডি নেই। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস  সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও সতর্ক করেছে আওয়ামী লীগ।
    বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ও একটি ভেরিফাইড টুইটার আইডি (www.twitter.com/sajeebwayed) এবং বঙ্গবন্ধুর আরেক দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের একটি ফেসবুক আইডি (www.facebook.com/radwan.siddiq) চালু আছে, যা তারা নিজেরাই পরিচালনা করে থাকেন।
    এছাড়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদের নামে যেসব আইডি বা পেইজ আছে তাদের কোন অনুমোদন নেই বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। ফেসবুকের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইতিমধ্যেই সায়মা হোসেন ওয়াজেদের নামে একটি আইডি ভেরিফাই করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা এখন ব্লক করে রেখেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এই ধরনের অননুমোদিত আইডি বা পেইজ থেকে সতর্ক থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোন সদস্য যদি কোন আইডি বা পেইজ খুলে তাহলে তা গণমাধ্যমে জানানো হবে।।
    ‘আল্লাহর মেহমানরা’ মিনার পথে
    নজিরবিহীন নিরাপত্তা
    প্রাণোৎসারিত উদ্বেল-আবেগ ঘিরে রেখেছে তাদের। দেহ মনে তাদের অপার্থিব রোমাঞ্চ, কণ্ঠে তালবিয়া। কেউ গাড়িতে; কেউ চলছেন পদব্রজে। গন্তব্য-মিনা। রচিত হয়েছে এক অভাবনীয়; অসামান্য দৃশ্যপট। পবিত্র মক্কা হতে মিনা’র পথ লাখো মানুষের পদভারে মুখরিত। আকাশ বাতাস মন্দ্রিত করছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হা’মদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা-শারিকা লাক।’ (আমি হাজির। ও আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই; সব প্রশংসা আর নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার, তোমার কোনো অংশীদার নেই।) এই তাঁবু নগরী মিনা থেকেই সূচনা হবে মুসলমানদের অন্যতম ফরজ ইবাদত-পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা।
    নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবী হতে আগত ২০ লাখের বেশি মুসলমান মসজিদুল হারামে (কাবা) শুক্রবার জোহরের সালাত আদায় করেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর হজযাত্রীরা নিজ নিজ আবাস এবং মসজিদুল হারাম থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনা’র উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। মিনায় যাত্রার মধ্য দিয়ে হজ পালনের সুচনা হয়, যা শেষ হবে ১২ জিলহজ শয়তানকে পাথর মেরে। অন্যান্য হাজিদের মতো বাংলাদেশের ১ লাখ ২৬ হাজার হাজিও রওনা হয়েছেন মিনার পথে। আগামীকাল ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত মিনার পথে মুমিন মুসলমান বান্দাদের এ কাফেলা চলবে। মিনায় পৌঁছে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন তারা।
    ৯ জিলহজ মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য প্রত্যূষে তারা যাবেন মহানবীর বিদায় হজের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত আরাফাত ময়দানে। সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা সেখানে থাকবেন। মূলত: ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। এদিনের নাম-ইয়ামুল আরাফা। সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন হাজিরা। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন।
    ১০ জিলহজ্ব মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ, আল্ল­াহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি, মাথা ন্যাড়া করা এবং তাওয়াফে জিয়ারত। অত:পর মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান ও প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
    এদিকে মিনার মাঠে অসুস্থ বাংলাদেশি হাজিদের চিকিত্সা দিতে ধর্মমন্ত্রনালয়ের ব্যবস্থাপনায় ৪০ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
    সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য মক্কায় পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ কয়েকটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মিনা,আরফাতের ময়দান ও মুজদালিফায অনেকগুলো হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
    এদিকে আবর নিউজ গতকাল জানিয়েছে, হজযাত্রীদের সুচারুভাবে হজ পালনের সুবিধার জন্য কয়েকটি সৌদি মন্ত্রণালয় সমন্বয় সাধন করছে। হজ্জ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের সাহায্য করার জন্য একটি বিশেষ সেল স্থাপন করেছে। স্থল সামরিক বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল ইব্রাহীম আল আসিক জানান,সৌদি রাজকীয় বাহিনীর কড়া নজরদারী বাড়ানো হয়েছেন।
    পাসপোর্ট দফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সুলাইমান বিন আব্দুল আজিজ আল-ইয়াহিয়া গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সারাবিশ্ব থেকে এপর্যন্ত ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬২৯ জন হজযাত্রীকে আমরা সৌদি আরবে স্বাগত জানিয়েছি। তারা এসছেন আমাদের আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র পথে।

    গ্রেফতার আতঙ্ক বাড়ছে

    দেশ-বিদেশ সর্বত্রই মুক্তি দাবি

    জোড়ালো হচ্ছে নিরাপদ সড়ক, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে অংশ নেয়া গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন এ দাবি আন্তর্জাতিকমহলসহ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ দেশের বিশিষ্টজনেরাও গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করছেন। একই সাথে তাদের ওপর ‘অমানবিক নিপীড়ন’ বন্ধে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আহŸান জানানো হয়েছে।
    একই সাথে এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক বাড়ছেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সরকারের সহিংস অভিযান নিয়ে যারা সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন, তাদের গ্রেফতারে কর্তৃপক্ষ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এই দফায় মূলত গ্রেফতার করা হচ্ছে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র ও সাংবাদিকদের। এতে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষ কথা বলতে ভয় পাচ্ছে।
    গতকাল বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে নিরাপদ সড়ক, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক। এর আগেও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ‘৯০-এর আন্দোলনের ছাত্রনেতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিগণ, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, প্রফেসর আনু মোহাম্মদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রফেসর ফাহমিদুল হক, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বাম ছাত্রজোট, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাদা দল।
    এদিকে, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার চলছেই। এর সাথে যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানী দেয়ার অভিযোগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘উস্কানী দেয়ার’ অভিযোগে ঢাকার বাইরে থেকেও শিক্ষার্থীদের ধরে আনা হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সহিংসতা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানী দেয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত ৫১টি মামলায় মোট আসামী ৩৯৬৭জন। এ পর্যন্ত ৯৭জন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ২২জনকে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার লুৎফুন নাহার লুমা নামের এক শিক্ষার্থীকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গত বুধবার লুমাকে সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় আনা হয়। শিক্ষার্থী ছাড়াও ফেসবুকে উস্কানী দেয়ার অভিযোগে অভিনেত্রী নওসেবাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়।
    এদিকে, শেষ হয়ে যাওয়া নিরাপদ সড়ক চাই ও অনেকটাই মীমাংসিত কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারিদের একের পর এক গ্রেফতারের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিন যতো যাচ্ছে আতঙ্ক ততোই বাড়ছে।
    অপরদিকে, গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি ক্রমেই জোড়ালো হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক নিরাপদ সড়ক, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ‘অমানবিক নিপীড়ন’ বন্ধে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। একই সাথে তাঁরা গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
    বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, গত কয়েক মাস যাবত রাষ্ট্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ কিছু নিপীড়নের ঘটনা সম্মন্ধে সবাই অবগত আছেন। গত ২৯শে জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে সংবাদ সম্মেলনকে উপলক্ষ্য করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবৃন্দের উপর নির্মম আক্রমণ চালানোর মধ্যে দিয়ে এই নিপীড়নের সূত্রপাত হয়। শুধু আক্রমণ নয়, এই আক্রমণে আহত ছাত্রদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হয়। এদেরকে গোপনে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, সরকারী হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে, এমনকি রাষ্ট্রীয় রোষানলের হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল পর্যন্ত এদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর এই ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব।
    বিবৃতিতে বলা হয়, এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে যুক্ত ১১ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে সাতজন এখনও কারাগারে। বাকীরা একরকম পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন ভিসির বাড়ি ভাংচুর, আইসিটি আইন লংঘন ইত্যাদি । কিন্তু এইসব অপরাধের সাথে এই গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা কিভাবে সম্পৃক্ত সেটি একেবারেই অস্পষ্ট রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, যেই প্রক্রিয়ায় তাদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেয়া হয়েছে সেগুলো আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীদের মতে সুস্পষ্ট মানবধিকার লংঘন। এদের মধ্যে আহতরা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয় নি এবং কেউ কেউ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও অনেক কম।
    বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা আন্দোলনের এই নির্মম অধ্যায়ের রেশ কাটতে না কাটতেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু হয় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় করুণ মৃত্যুর কারণে। স্কুল শিক্ষার্থীদের এই সুশৃঙ্খল আন্দোলন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করে। কিন্তু কিছুদিন পরেই আমরা দেখতে পাই স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে কোটা আন্দোলনের নির্মমতার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এই নিপীড়নের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠে নামলে তাদের ওপরেও অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন এবং বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল কিন্তু ছাত্র ছাত্রীরা থানা ঘেরাও করে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
    বিবৃতিতে দেশবরেণ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ বলেন, আন্দোলনে উস্কানি’র অভিযোগে ৫১ মামলায় ৯৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা সংবাদপত্রের চিত্রে দেখেছি গ্রেফতারকৃত ছাত্র ছাত্রীদের কোমড়ে দড়ি বেঁধে দাগী আসামীদের মতো আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এইসব অত্যন্ত গর্হিত মানবাধিকার লংঘন এবং একটি ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রয়াস। এই ছাত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, এরা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে রাস্তার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। কিন্তু এই গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা কিভাবে এই গুরুতর অপরাধগুলোর সাথে জড়িত তার প্রমাণ এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী গণমাধ্যমকে সরবরাহ করে নি। অথচ অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অপরাধী এবং অপরাধের প্রমাণ গণমাধ্যমে স¤প্রচার করতে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মতোও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সময় গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ঐ ধরনের কোনো প্রমাণ সাধারণ জনগণের কাছে প্রকাশিত হয় নি।
    বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক এই দুই আন্দোলনেই আমরা দেখেছি যে, যেইসব ছাত্ররা পুলিশ এবং সরকারী ছাত্র সংগঠন দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে, আহত হয়েছে, নিগৃহীত হয়েছে তাদেরকেই আবার সম্পূর্ণ বেআইনী প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করে নাজেহাল করা হয়েছে এবং হচ্ছে। পক্ষান্তরে যেই সরকারী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা এই ভয়ংকর নিপীড়ন সংঘটিত করেছে, তাদের বিস্তারিত পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরেও এখনও পর্যন্ত একজনের বিরুদ্ধেও কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। এই ধরনের নির্লজ্জ্ব পক্ষপাতমূলক আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধ। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এবং শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত এহেন হামলা ও নিপীড়নে আমরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।
    বিবৃতিতে শিক্ষকগণ বলেন, আর কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, এই উৎসব মুখর পরিবেশে নির্যাতিত এবং গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা এবং তাদের পরিবার নিশ্চিতভাবে খুবই উৎকন্ঠা, অনিশ্চয়তা এবং ভীতির মধ্যে দিয়ে যাবেন। এইরকম ভীতিকর এবং উৎকন্ঠাপূর্ণ পরিবেশ এই পরিবারগুলোর উপরে চাপিয়ে দেয়া অত্যন্ত অন্যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ঈদের ছুটিকে ধরপাকড়ের মওকা ধরে নেয়া হয়েছে, কারণ ছুটির মধ্যে সংগঠিত প্রতিবাদ হবার সম্ভাবনা কম।
    বিবৃতিতে গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করে বলা হয়, আমাদের সন্তানতুল্য এইসব শিক্ষার্থীদের প্রতি আইনের সঠিক প্রয়োগ চাই এবং অন্তত পক্ষে ঈদের আগে জামিনে তাদের মুক্তি চাই। এসব শিক্ষার্থীদের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজনের হাহাকার আমরা প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমে জানছি, পড়ছি এবং এগুলো আমাদের তীব্রভাবে ব্যথিত করছে। তাই আমরা অবিলম্বে আমাদের ছাত্রদের উপর এই অমানবিক নিপীড়নের সমাপ্তির জন্য সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহবান জানাচ্ছি।
    বিৃতিতে স্বাক্ষর প্রদানকারী শিক্ষকরা হলেন; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক, রুশাদ ফরিদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান, সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, সহকারি অধ্যাপক আশিক মোহাম্মদ শিমুল, সহকারী অধ্যাপক মোঃ সেলিম হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আলম, আর রাজী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক সাদাফ নূর, মাহমুদুল সুমন, গৌতম রায়, গোলাম হোসেন হাবীব, নাসরীন খোন্দকার, স্বাধীন সেন, মো.মাইদুল ইসলাম, সুবর্ণা মজুমদার, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, তাহমিনা খানম, কাজী মামুন হায়দার, গীতি আরা নাসরীন, সেলিম রেজা নিউটন, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, আইনুন নাহার, সুদীপ্ত শর্মা, আ-আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক, খাদিজা মিতু, বখতিয়ার আহমেদ, কাজী মারুফ,নাসির আহমেদ,আব্দুল মান্নান, এবং বুয়েটের হাসিবুর রহমান।
    এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনুসরণ করে গ্রেফতার ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা চলছেই। তবে পুলিশ বলছে, তারা গুজব ঠেকাতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গুজব ঠেকাতে পুলিশের হাতে যতগুলো মেকানিজম আছে, তার সবটাই আমরা প্রয়োগ করছি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে যারা গুজব ছড়িয়েছে, তাদের আইনের আওতায় এনে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। গত বুধবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। নিজস্ব ওয়েবপোর্টালে ডিএমপি বলেছে, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পরিেেপ্রক্ষিতে গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৯৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। গ্রেফতার হয়েছেন ১৬ জন। সিআইডি ফেসবুক পেজে উসকানিমূলক প্রপাগান্ডা ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে এমন মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য, পোস্ট, ফটো বা ভিডিওতে লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট না করার অনুরোধ করেছে।

    কুরআন মজীদ ও সহীহ হাদীসের আলোকে হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব ও ফযীলত

    মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান

    ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের পঞ্চমটি হল হজ্বে বায়তুল্লাহ। ঈমান, নামায, যাকাত ও রোযার পরই হজ্বের অবস্থান। হজ্ব মূলত কায়িক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর হজ্ব পালন করা ফরয। অর্থাৎ হজ্ব আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতি ও আসবাবপত্রের অতিরিক্ত হজ্বে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজ্ব আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে সক্ষম এমন সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্ব আদায় করা ফরয। হজ্ব প্রত্যেক মুসলমানের উপর সারা জীবনে একবারই ফরয হয়। একবার ফরয হজ্ব আদায়ের পর পরবর্তী হজ্বগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-

    يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم.

    হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১০; শরহে মুশকিলুল আছার, হাদীস : ১৪৭২; সুনানে দারাকুতনী ২/২৮১

    ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত অনুরূপ হাদীসে আরো বলা হয়েছে, হজ্ব (ফরয) হল একবার, এরপরে যে অতিরিক্ত আদায় করবে তা নফল হিসেবে গণ্য।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০৪; সুনানে দারিমী, হাদীস : ১৭৮৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭২১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ৩২০৯

    হজ্ব যেহেতু একবারই ফরয তাই যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যে কোনো বছর হজ্ব আদায় করে, তবে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজ্ব বিধানের মৌলিক তাৎপর্য, তার যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা। কারণ বিনা ওজরে বিলম্ব করাও গুনাহ। আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল ফরয হজ্ব আদায়ের প্রতি এমনভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন যে, কেউ যদি এই হজ্বকে অস্বীকার করে বা এ বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত ও হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

    ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين.

    (তরজমা) মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা ফরয। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।-সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭

    তাছাড়া যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। তাই হজ্ব ফরয হওয়ার পর বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তাআলার নিকট অপরাধী হিসেবেই তাকে হাজির হতে হবে। এজন্যই হাদীস শরীফে হজ্ব ফরয হওয়ামাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেওয়া হয়েছে।

    ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة.

    যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৩২; সুনানে দারিমী, হাদীস : ১৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৮৭; তবারানী, হাদীস : ৭৩৮

    অন্য বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له.

    ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/৩৪০

    উপরন্তু একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা যে স্বচ্ছল সামর্থ্যবান ব্যক্তি সত্ত্বর হজ্ব আদায় করে না তাকে হতভাগা ও বঞ্চিত আখ্যায়িত করেছেন।

    আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    يقول الله عز وجل : إن عبدا صححت له جسمه، ووسعت عليه في المعيشة تمضي عليه خمسة أعوام لا يفد إلى لمحروم.

    আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিযিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ১০৩১; তবারানী, হাদীস : ৪৯০; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৬২; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৫৯

    শুধু তাই নয়, একসময় বায়তুল্লাহ উঠিয়ে নেয়া হলে মানুষ হজ্ব করতে পারবে না এই আশঙ্কার কারণেও আল্লাহর রাসূল উম্মতকে তাড়াতাড়ি হজ্ব করার হুকুম করেছেন। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    استمتعوا بهذا البيت فقد هدم مرتين ويرفع في الثالثة.

    তোমরা হজ্ব ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ) গৃহের উপকার গ্রহণ কর। কেননা তা ইতিপূর্বে দু’বার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেওয়া হবে।-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৬৭১৮; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৬৫২

    হজ্ব করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ-বিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ্ব করে না তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন-

    من أطاق الحج فلم يحج فسواء عليه مات يهوديا أو نصرانيا.

    যে ব্যক্তি হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮

    তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছে হয় কিছু লোককে বিভিন্ন শহরাঞ্চল ও লোকালয়ে পাঠিয়ে দিই, তারা সেখানে দেখবে, কারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করছে না। তারা তাদের উপর কর আরোপ করবে। তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়।-প্রাগুক্ত

    যারা হজ্ব-উমরা না করে সন্ন্যাসী হওয়ার চেষ্টা করে ইসলাম তা কখনো অনুমোদন করে না। ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    لا صرورة في الإسلام.

    ইসলামে বৈরাগ্য নেই। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ্বের ক্ষেত্রে কোনো বৈরাগ্য নেই।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৩১১৩, ৩১১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭২৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৮৬; তবারানী, হাদীস : ১১৫৯৫; শরহু মুশকিলুল আছার, হাদীস : ১২৮২

    ইকরামা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল, সারুরা কী? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হজ্ব-উমরাহ কিছুই করে না অথবা যে ব্যক্তি কুরবানী করে না।-শরহু মুশকিলুল আছার ২/২১৫-১৬

    সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. বলেন, জাহেলী যুগে যখন কোনো ব্যক্তি হজ্ব করত না তখন তারা বলত, সে সারুরা (বৈরাগী)। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামে বৈরাগ্য নেই।-প্রাগুক্ত

    যারা হজ্বের সফরের সৌভাগ্য লাভ করেন তারা যেন আল্লাহর মেহমান। তাই প্রত্যেকের উচিত সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য ও তার ইশক-মুহববতের অনুভূতি নিয়ে সেখানে অবস্থান করা। বায়তুল্লাহ ও আল্লাহর অন্যান্য শেআর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। দ্বন্দ-কলহ, ঝগড়া-বিবাদ এবং অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে সর্বাত্মকভাবে দূরে থাকা। কুরআন-হাদীসে এ সম্পর্কে বিশেষ হুকুম নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

    الحج اشهر معلومات فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال في الحج، وما تفعلوا من خير يعلمه الله.

    (তরজমা) হজ্বের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধে) নিজের উপর হজ্ব অবধারিত করে নেয় সে হজ্বের সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবে আল্লাহ তা জানেন।-সূরা বাকারা (২) : ১৯৭

    উক্ত আয়াতে তিনটি বিষয় থেকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এক. ইহরাম অবস্থায় অশ্লীল কথা বলা। এমনকি স্ত্রীর সাথে যৌন উত্তেজনামূলক কথা বলাও নিষিদ্ধ। দুই. কোনো ধরনের গুনাহয় লিপ্ত হওয়া। ইহরাম অবস্থার বিশেষ গুনাহ যেমন শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম বা নখ কাটা, আতর বা সুগন্ধি লাগানো, পশু শিকার করা, শরীরে উকুন মারা থেকে যেরূপ বিরত থাকবে তেমনি সাধারণ অবস্থার গুনাহ যেমন অন্যকে কষ্ট দেওয়া, কু-দৃষ্টি ও গীবত শেকায়েত থেকেও বিরত থাকবে। তিন. ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া।

    এ ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা ও ঝগড়া-বিবাদমুক্ত হজ্বকেই হাদীস শরীফে হজ্বে মাবরূর বা মকবুল হজ্ব বলা হয়েছে এবং এর বিশেষ বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা উল্লেখিত হয়েছে। এখানে কিছু ফযীলত বর্ণনা করা হল।

    ১. হজ্ব পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মুছে দেয়

    আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    من حج فلم يرفث ولم يفسق غفر له ما تقدم من ذنبه.

    যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১১

    অন্য বর্ণনায় রয়েছে

    من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه.

    আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৮১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮১; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৪

    অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-

    من حج البيت فقضى مناسكه وسلم المسلمون من لسانه ويده غفر له ما تقدم من ذنبه.

    আতা ইবনে ইয়াসার রাহ. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ্ব করে, হজ্বের বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করে, মুসলমানরা তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮১৭; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩৫৮

    আমর ইবনুল আস রা. বর্ণনা করেন, (দীর্ঘ এক হাদীসে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

    أما علمت يا عمرو! أن الإسلام يهدم ما كان قبله، وأن الهجرة تهدم ما كان قبلها، وأن الحج يهدم ما كان قبله.

    হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম (গ্রহণ) পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে ফেলে। হিজরত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং হজ্ব অতীতের পাপসমূহ মুছে দেয়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৭৭৭; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস : ৫০৭

    ২. হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান হল জান্নাত

    আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة.

    এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৫৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮২

    আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    تابعوا بين الحج والعمرة، فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خيث الحديد، والذهب والفضة، وليس للحجة المبرورة ثواب إلا الجنة.

    তোমরা হজ্ব ও উমরা পরপর একত্রে পালন কর। কেননা এ দুটি (হজ্ব ও উমরাহ) দারিদ্র ও গুনাহসমূহ এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়। আর হজ্বে মাবরূরের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৩৬৬৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮০; সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস : ৩৬১০; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১২; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৪৯৭৬; তবারানী, হাদীস : ১০৪৬০

    জাবির রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة، قيل : وما بره؟ قال : إطعام الطعام وطيب الكلام.

    হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। জিজ্ঞাসা করা হল, হজ্বের সদাচার কী? তিনি বললেন, খানা খাওয়ানো এবং উত্তম কথা বলা (অর্থাৎ অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা পরিত্যাগ করা)।

    অন্য বর্ণনায় রয়েছে, খানা খাওয়ানো ও বেশি বেশি সালাম করা (সালামের বিস্তার ঘটানো)।-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ৩০৭২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪১১৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৪৮২; তবারানী আওসাত ১/১১৩; মুসনাদে আবু দাউদ, ত্বয়ালিসী, হাদীস : ১৭১৮; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৮১২; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮১৭

    ৩. সর্বোত্তম আমল হজ্বে মাবরূর

    হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

    سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم أي العمل أفضل؟ قال : إيمان بالله ورسوله، قيل : ثم ماذا؟ قال : الجهاد في سبيل الله، قيل : ثم ما ذا؟ قال : حج مبرور.

    নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, হজ্বে মাবরূর বা কবুল হজ্ব।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৫৯০; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৫৮; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১৫৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০২৯৬; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪২১১

    মায়িয রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

    سئل : أي الأعمال أفضل؟ قال : إيمان بالله وحده، ثم الجهاد، ثم حجة برة تفضل سائر الأعمال كما بين مطلع الشمس إلى مغربها.

    নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন আমল সর্বোত্তাম? তিনি বললেন, এক আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনা। তারপর জিহাদ করা। অতপর কবুল হজ্ব অন্যান্য আমল হতে এত উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ যেরূপ সূর্যের উদয়াচল হতে অস্তাচলের ব্যবধান।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯০১০; তবারানী ২০/৮০৯; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৬৩

    এ সম্পর্কিত অন্য একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আমর ইবনে আবাসা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    … ثم عملان هما أفضل الأعمال إلا من عمل بمثلهما : حجة مبرور أو عمرة.

    অতপর এমন দুটি আমল, যা অন্য সকল আমল হতে শ্রেষ্ঠ। তবে যে ব্যক্তি তার অনুরূপ আমল করে তা ব্যতীত : মকবুল হজ্ব অথবা মকবুল উমরা।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭০৭; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০১০৭; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৬১

    ৪. নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের জিহাদ হল হজ্ব ও উমরাহ

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

    يا رسول الله! نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد؟ قال : لا، لكن أفضل الجهاد حج مبرور.

    ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন, না। বরং তোমাদের নারীদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্বে মাবরূর।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৪২২; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৩৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৪৭১৭; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস : ৫৬০৯

    অন্য বর্ণনায় রয়েছে-

    আয়েশা রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদ করব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জিহাদ হল হজ্বে মাবরূর। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম থেকে এ কথা শুনার পর হতে আমি হজ্ব ছাড়িনি।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৬১; মুসনাদে আহমদ,  হাদীস : ২৪৪৯৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩২৬

    আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    إن كان قاله جهاد الكبير والضعيف والمرأة الحج والعمرة.

    বৃদ্ধ, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হল হজ্ব ও উমরা।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ৯৪৫৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৯৭০৯; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩; তবারানী আওসাত, হাদীস : ৮৭৪৬; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩৫০

    হুসাইন বিন আলী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

    جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : إني جبان وإني ضعيف، فقال : هلم إلى الجهاد لا شوكة فيه : الحج.

    এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমি ভীরু ও দুর্বল (জিহাদে যাওয়ার শক্তি-সামর্থ্য নেই)। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি অস্ত্র ও শত্রুর সাথে লড়াইবিহীন জিহাদ-হজ্ব পালন করতে এস।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮০৯; তবারানী, হাদীস : ২৯১০; সুনানে সাঈদ ইবনে মনসূর, হাদীস : ২৩৪২; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৫৮

    ৫. হজ্ব ও উমরাকারীর দুআ কবুল করা হয়

    জাবির রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    الحجاج والعمار وفد الله دعاهم فأجابوه وسألوه فأعطاهم.

    হজ্ব ও উমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দুআ করলে তাদের দুআ কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেওয়া হয়।-মুসনদে বাযযার, হাদীস : ১১৫৩; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৮৮; তবারানী, হাদীস : ১৭২১

    ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    الحجازي في سبيل الله، والحاج والمعتمر وفد الله دعاهم فأجابوه وسألوه فأعطاهم.

    আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী (গাযী), হজ্ব ও উমরা আদায়কারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দুআ করলে দুআ কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেওয়া হয়।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪৬১৩

    আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    وفد الله ثلاثة :الغازي والحاج والمعتمر

    তিন প্রকারের লোক আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি : গাযী, হজ্ব ও উমরাকারী।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১১; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৫৩; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/২৬২

    ৬. হাজীদের গুনাহ মাফ হয় এবং তারা যাদের গুনাহ ক্ষমা চায় তাদেরকে মাফ করা হয়

    আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    يغفر الله للحاج ولمن استغفر له الحاج.

    আল্লাহ তাআলা হাজীদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং হাজী যাদের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করেন, তাদেরকেও ক্ষমা করেন। -মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১১৫৫; তবারানী সগীর, হাদীস : ১০৮৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৬; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৫৪

    অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ্ব ও উমরাকারীগণ যখন দুআ করে, তাদের দুআ কবুল করা হয়। তারা যখন কারো জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৯২; সুনানে নাসায়ী, ৫/১১৩

    ৭. হজ্ব ও উমরার জন্য খরচ করার ফযীলত

    আয়েশা রা. হতে বর্ণিত-

    أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لها في عمرتها : إن لك من الأجر على قدر نصبك ونفقتك.

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করার সময় তাকে তার উমরা সম্পর্কে বলেছেন, তুমি তোমার পরিশ্রম ও খরচ অনুপাতে নেকি পাবে।-মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৭৭৬; সুনানে দারাকুতনী, ২/২৮৬

    আয়েশা রা. হতে অন্য বর্ণনায় আছে রয়েছে তুমি তোমার উমরার সওয়াব তোমার খরচ অনুপাতে পাবে।-মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৭৭৭; সুনানে দারাকুতনী, ২/২৮৬

    বুরাইদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    النفقة في الحج كالنفقة في سبيل الله بسبع مائة ضعف.

    হজ্বের জন্য খরচ করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মতই, যার সওয়াব সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৩০০০; শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী, হাদীস : ৪১২৫; তবারানী আউসাত, হাদীস : ৫২৭০

    অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    الحج سبيل الله، النفقة فيه الدرهم بسبع مائة.

    হজ্ব হল আল্লাহর রাস্তা। তাতে (আল্লাহর রাস্তায়) এক দিরহাম খরচের সওয়াব সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।-তবারানী, আউসাত, হাদীস : ৫৬৯০

    জাবির রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন-

    ما أمعر حاج قط، قيل لجابر : ما الإمعار؟ قال : ما افتقر.

    কোন হজ্বকারী ব্যক্তি নিঃস্ব হয় না। জাবের রা.কে ইমআর শব্দের উদ্দেশ্য কী জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, অভাব-অনটন। -মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৮০; তবারানী আউসাত, হাদীস : ৫২০৯

    ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

    ما ترفع إبل الحاج رجلا ولا تضع يدا إلا كتب الله بها حسنة أو محا سيئة أو رفع بها درجة.

    হজ্বে গমনকারী ব্যক্তির উট চলার পথে যখনই পা উঠায় এবং পা রাখে এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা ঐ হজ্ব কারীদের জন্য সওয়াব লিখে দেন। অথবা তার একটি করে গুনাহ মুছে দেন অথবা তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।

    ৮. হজ্ব ও উমরা পালনকালে মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত

    ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত-

    بينما رجل واقف مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بعرفة إذ وقع عن راحلته فأقعصته، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : اغتسلوه بماء وسدر، وكفنوه بثوبيه ولا تخمروا رأسه ولا تخطوه، فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا.

    এক ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে উফূফরত ছিলেন। হঠাৎ তিনি বাহন থেকে নীচে পড়ে গেলেন। এতে তার ঘাড় মটকে গেল এবং তিনি মারা গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বড়ইপাতা সিদ্ধকরা পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দিয়ে তাকে কাফন পরাও। তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কেননা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১২৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২০৬; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৫১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩০৮৪

    আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    من خرج حاجا فمات كتب له أجر الحاج إلى يوم القيامة، ومن خرج معتمرا فمات كتب له أجر المعتمر إلى يوم القيامة، ومن خرج غازيا فمات كتب له أجر الغازي إلى يوم القيامة.

    যে ব্যক্তি হজ্বের উদ্দেশ্যে বের হল, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কিয়ামত পর্যন্ত তার হজ্বের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি উমরার উদ্দেশ্যে বের হল, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হল কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য উমরার সওয়াব, লেখা হবে। যে ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হল, এবং তাতে তার মৃত্যু হল, কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মুজাহিদের সওয়াব লেখা হবে।-মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৬৩৫৭; তবারানী আউসাত, হাদীস : ৫৪৮০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ৫২৭৪

    ৯. তালবিয়া পাঠ ও উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের ফযীলত

    আবু বকর সিদ্দীক রা. হতে বর্ণিত-

    أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل : أي الحج أفضل؟ قال : الحج والثج.

    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, কোন হজ্ব সর্বোত্তম? তিনি বললেন, যে হজ্বে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা হয় এবং কুরবানী করা হয়। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮২৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯২৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩১; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৯৭; সুনানে দারিমী, হাদীস : ৮১৫১; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ৭১; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ১১৭

    সাহল ইবনে সা’দ রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    ما من مسلم يلبي إلا لبى من عن يمينه أو عن شماله من حجر أو شجر أو مدر حتى تنقطع الأرض من هاهنا إلى هاهنا.

    যে কোনো মুসলমান তালবিয়া পাঠ করল, তার তালবিয়া পাঠের অনুসরণে তার ডান ও বামের বৃক্ষরাজি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে, যতক্ষণ না যমীন তার এদিক তথা ডান ও বাম পার্শ্ব হতে ধ্বংস হয়ে যায়। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৯৮; সুনানে কুবরা, বাইহাকী, ৫/৪৩

    খাল্লাদ ইবনে যায়েদ, তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    أتاني جبريل فأمرني أن أمر أصحابي أن يرفعوا أصواتهم بالإهلال والتلبية.

    আমার নিকট জিব্রীল আ. আগমন করে এ মর্মে আদেশ করেছেন, আমি যেন আমার সাহাবীদের হুকুম করি যে, তারা তালবিয়া পাঠ করার সময় যেন উচ্চস্বরে পাঠ করে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৬৫৫৭; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮২৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯২২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৮০২; তবারানী, হাদীস : ৫১৭৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৯৪

    আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    أمرني جبريل برفع الصوت في الإهلال، فإنه من شعار الحج.

    জিব্রীল আমাকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের আদেশ করেছেন। কেননা তা হজ্বের নিদর্শন। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৩১৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬৩০

    যায়েদ ইবনে খালেদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    جاءني جبريل فقال : يا محمد مر أصحابك فليرفعوا أصواتهم بالتلبية، فإنها من شعار الحج.

    জিব্রীল আ. এসে আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার সাহাবীদের হুকুম করেন, তারা যেন তালবিয়া পাঠ করার সময় উচ্চস্বরে পাঠ করে। কেননা তা হজ্বের নিদর্শন। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২১৬৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯২৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৬২৮; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৮০৩; তবারানী কাবীর, হাদীস : ৫১৭০; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৯৫

    আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    ما أهل ومهل قط إلا بشر، ولا كبر مكبر قط إلا بشر، قيل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم بالجنة؟ قال : نعم.

    যে কোনো ব্যক্তি তালবিয়া পাঠ করলেই তাকে সুসংবাদ দেওয়া হয় এবং যে কোনো ব্যক্তি তাকবীর বললেই তাকে সুসংবাদ দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জান্নাতের (সুসংবাদ দেওয়া হয়)? তিনি বললেন, হ্যাঁ।-তবারানী আউসাত, হাদীস :৭৯৪৩; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ৫৩৭১

    আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোনো ব্যক্তি তালবিয়া পাঠ করে, সে দিনই (সূর্যাস্তের সাথে সাথে) তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।-শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৪০২৯

    ১০. বাইতুল্লাহ তাওয়াফের ফযীলত

    ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

    من طاف أسبوعا يحصيه وصلى ركعتين كان له كعدل رقبة قال وسمعته يقول : ما رفع رجل قدما ولا وضعها إلا كتب له عشر حسنات وحط عنه عشر سئيات ورفع له عشر درجات.

    যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করেন, একটি করে নেকী লেখেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৪৪৬২; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৫৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭৫৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৮৪২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৫৬৮৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ১২৮০৬

    মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    من طاف اسبوعا لا يلغو فيه كان كعدل رقبة يعتقها.

    যে ব্যক্তি সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে, তাতে কোনো ধরনের অনর্থক কাজ করবে না, তবে তার একটি গোলাম আযাদ করার সমপরিমাণ সওয়াব হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ১২৮০৭; তবারানী, হাদীস : ৮৪৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ৫৫০৪

    ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    ينزل الله كل يوم على حجاج بيته الحرام عشرين ومائة رحمة : ستين للطائفين وأربعين للمصلين وعشرين للناظرين.

    আল্লাহ তাআলা বায়তুল্লাহর হজ্বকারীদের উপর প্রতিদিন একশত বিশটি রহমত নাযিল করেন, তার ষাটটি তাওয়াফকারীদের জন্য, চল্লিশটি মুসল্লীদের জন্য এবং বিশটি দর্শকদের জন্য।-শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৪০৫১; তারগীব ১৭৮৬

    ১১. হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার ফযীলত

    ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন-

    سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن مسحهما كفارة للخطايا.

    আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানীর স্পর্শ পাপসমূহকে মুছে দেয়।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৫৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৫৭০১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৮৪২

    ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    والله ليبعثه الله يوم القيامة له عينان يبصر بهما، ولسان ينطق به ويشهد على من استلمه بحق.

    অবশ্যই আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে উঠাবেন। তার দুটি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখতে পাবে। একটি জিহবা বা মুখ থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যারা তাকে যথার্থভাবে স্পর্শ করেছে তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯৪৪; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৭২৩

    ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ হল জান্নাতের পাথর, তা দুধের চাইতেও বেশি সাদা ছিল, কিন্তু আদমসন্তানের গুনাহ একে কালো করে দিয়েছে। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮৭৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭৩০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৯২৫

    অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হাজরে আসওয়াদ বরকের চাইতে সাদা ছিল, কিন্তু শিরকপন্থীদের পাপ তাকে কালো বানিয়ে ফেলেছে। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৯৫; শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪০৩৪

    আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

    إن الركن والمقام ياقوتان من ياقوت الجنة طمس الله نورهما ولولم يطمس نورهما لأضاء تاما بين المشرق والمغرب.

    হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবারাহীমী জান্নাতের দুটি ইয়াকুত পাথর। এ দুটির জ্যোতি আল্লাহ তাআলা নিস্প্রভ করে দিয়েছেন। তিনি যদি এ দুটির জ্যোতি নিস্প্রভ না করতেন, তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিতো। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭০০০; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭১০; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭৩২; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৭০২

    ইয়াওমে আরাফার ফযীলত

    অব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    إن الله عز وجل يباهي ملائكته عتيبة عرفة بأهل، فيقول : انظروا إلى عبادي أتوني شعثا غبرا.

    আরাফার অধিবাসীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন এবং তাদেরকে বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তারা এলোমেলো চুলে, ধূলোমলিন অবস’ায় আমার কাছে এসেছে। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭০৮৯; তাবরানী, হাদীস : ৫৭৫; মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ৫৫৪৬

    অনুরূপ হাদীস হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৮০৪৭;  মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৭৫১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৮৩৯; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৮৫২

    আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبدا من النار من يوم عرفة وأنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائلكة فيقول : ما راء هؤلاء.

    আরাফার দিন অপেক্ষা এমন কোনো দিন নেই যেদিন আল্লাহ তাআলা অত্যাধিক পরিণামাণে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন এবং তিনি নিকটবর্তী হন। আর ফেরেশতাদের নিকট তাদেরকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, এরা কি চায়?-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩০১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৯২৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৬/২৫১।

    বসবাসের ‘অযোগ্য’ শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয়

    বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকার স্থান দ্বিতীয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পরই ঢাকার অবস্থান। বসবাসের জন্যে সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে খারাপের তালিকা প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা ই আইইউ।

     

    ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতি বছর এরকম একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। এবছর ১৪০টি শহরের উপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এবছরের তালিকায় বসবাসের জন্যে সবচেয়ে উপযোগী শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার নাম। এরপর আছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে কানাডার তিনটি শহর-ক্যালগারি, ভ্যানকুভার এবং টরেন্টো। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, তালিকার সবচেয়ে নিচের দিকে যে দশটি শহরের নাম এসেছে সেগুলো নির্বাচন করতে গিয়ে অপরাধ, সামাজিক অস্থিরতা, সন্ত্রাস এবং যুদ্ধের মতো বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।

     

    ঢাকার নাম নিচের দিক থেকে দু্?ই নম্বরে উঠে আসার কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তবে এতে মোটেই অবাক হননি নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই এই জরিপে ঢাকার অবস্থা এরকম। এ অবস্থার জন্যে দায়ী একই পরিমাণ জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোকের বসবাস। তিনি বলেন, মেলবোর্ন বা ভিয়েনার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে ওই দুটো শহরে জনঘনত্ব এতটাই কম যে, ওই দুটো শহরের সঙ্গে সরাসরি ঢাকার মতো অতি জনঘনত্বের একটি শহরকে তুলনা করা যায় না। সরকারি হিসেবে ঢাকায় বর্তমান জনসংখ্যা এক কোটি ৬৫ লাখ। আর প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কারণে ঢাকা শহর বারবার পিছিয়ে পড়ছে।

     

    কিন্তু যুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি শহর দামেস্কের পরেই কেন ঢাকার অবস্থান এই প্রশ্নের জবাবে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, ব্যাপক জনঘনত্বের কারণে সব ধরনের সেবা, সুযোগ, সম্ভাবনা সবকিছু একটা বড় রকমের চাপের মুখে পড়ে গেছে। আর একারণেই ঢাকার অবস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত অন্যান্য শহরের মতো। পাশাপাশি শহর পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের শিথিলতা এবং অদক্ষতাকেও দায়ী করেন তিনি। ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা কিংবা জঙ্গি তত্পরতার কারণে ঢাকা সম্পর্কে এরকম একটা ধারণা তৈরি হয়ে থাকতে পারে কিনা-এই প্রশ্নের জবাবে হাবিব বলেন, সেটি তুলনা করলে করাচি, লাহোর কিংবা অন্যান্য শহর কী কারণে আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। -বিবিসি