• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • লাটভিয়ায় নিষিদ্ধ হলো বোরকা  

    বোরকা নিষিদ্ধে আইন করেছে ইউরোপের দেশ লাটভিয়া। প্রকাশ্য স্থানে এই ধর্মীয় পোশাকটি পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জারিকৃত নতুন ওই আইনটি ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। দেশটিতে বোরকা পরিহিত নারীর মোট সংখ্যা তিনজন। লাটভিয়ার সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং পোশাকের আড়ালে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র বহন ঠেকাতেই নতুন এ আইনটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০১১ সালে প্রকাশ্য স্থানে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করে ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্স। চলতি সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের হেডস্কার্ফ বা হিজাব নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা জানিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভলস। লাটভিয়ার আইনমন্ত্রী জিনটার রাসনাকস জানান, মুসলিম নারীদের এই ঐতিহ্যগত পোশাকটি পরা ঠেকাতে নয়; বরং লাটভিয়ায় বিদেশিদের কাছে দেশের মূল্যবোধ তুলে ধরতেই আইনটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন আইনপ্রণেতার কাজ এসব বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া। আমরা শুধু লাটভিয়ার সংস্কৃতিই সংরক্ষণ করছি না, পুরো ইউরোপের সংস্কৃতিই সংরক্ষণ করছি। বোরাক নিষিদ্ধের বিষয়ে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে ফ্রেবারগা বলেন, এই সময়ে বোরকা পরা সমাজের জন্য বিপজ্জনক। বোরকায় লুকিয়ে যে কেউ একটা রকেট লঞ্চার পর্যন্ত বহন করতে পারে। উল্লেখ্য, লাটভিয়া ইউরোপের ছোট একটি দেশ। এর জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখ, যার মধ্যে মুসলিম রয়েছে এক হাজারের মতো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শরণার্থী পুনর্বাসন পরিকল্পনার আওতায় আগামী দুই বছরে ৭৭৬ জন শরণার্থী নেয়ার কথা রয়েছে দেশটির।

    কুমামোতো উদ্ধারাভিযানে শত শত স্বেচ্ছাসেবী

    শুক্রবার হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী কুমামোতো সহ দক্ষিণ পশ্চিম জাপানের ভূমিকম্প উপদ্রুত প্রিফেকচার গুলোতে হাজির হয়েছেন।

    কুমামোতো শহরে ১ হাজার মানুষ ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। কোনো কোনো উদ্ধারকেন্দ্রে মানুষের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে তা গুরুতর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

    ৬.৫ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর এক সপ্তাহ অতিক্রম করেছে।

    ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪৮ জন।

    টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন তিনি ভূমিকম্প উপদ্রুত কুমামোতো’তে শনিবার সফর করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে মিলে অপসারিত মানুষদের জন্যে অস্থায়ী বাড়ি নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

    হিজাব থাকায় মুসলিম মহিলাকে নামিয়ে দিল বিমান  

    পাশের যাত্রীকে নিয়ে অস্বস্তি হওয়ায় বিমানে নিজের আসন বদলানোর অনুরোধ করেছিলেন মাত্র। তাই বলে বিমান থেকেই নেমে যেতে হবে তাকে, ভাবতে পারেননি হাকিমা আবদুল্লে। মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা হাকিমা। গত বুধবার সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিমানে শিকাগো থেকে সিয়াটল যাওয়ার কথা ছিল তার। হাকিমা জানান, ওই দিন সব স্বাভাবিকই ছিল। নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে বিমানেও ওঠেন তিনি। তবে পাশের আসনে বসা ব্যক্তির আচরণে তার অস্বস্তি হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি বিমানবালাকে ডেকে অনুরোধ করেন, যাতে তাকে অন্য কোনো আসনে বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। হাকিমা জানাচ্ছেন, এর পরেই তাকে বিমান থেকে নেমে আসতে বলা হয়। কেন তাকে নেমে আসতে হচ্ছে তা বারবার জিজ্ঞাসা করলেও বিমানসংস্থার কর্মীরা তার কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এর পর তাকে টার্মিনালে বসিয়ে রেখে বিমান চলে যায় গন্তব্যে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরাও জিজ্ঞাসা করেন বিমান থেকে ওই মহিলাকে কেন নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে সংস্থার কর্মীরা জানান, বিমানে ওই মহিলার অস্বস্তি হচ্ছিল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হাকিমার প্রশ্ন, পরনে হিজাব থাকায় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বলেই কি তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন ওই বিমানকর্মীরা? এ দিনের ঘটনা নিয়ে বিমানসংস্থার কোনো যুক্তি মানতে নারাজ কাউন্সিল অব আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স। কাউন্সিলের এক অফিসারও বলেন, হাকিমাকে অযথা হেনস্থা করেছে বিমানসংস্থা। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন হাকিমার স্বামীও। তবে নিজেদের তরফে কোনো ভুল হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন সাউথওয়েস্ট বিমানসংস্থার মুখপাত্র ব্যান্ডি কিংগ। তিনি বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে যেটুকু তথ্য পেয়েছি তাতে নিয়মকানুন মানতেই ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।

    অবশেষে বিশ্ব উষ্ণায়ন চুক্তিতে সাক্ষর করলো জাপান

    জাপান সরকার মঙ্গলবার অবশেষে প্যারিস চুক্তিতে সাক্ষর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখা গ্যাস গুলোর নির্গমন হ্রাস করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা প্রস্তাবটি অবশেষে আলোর মুখ দেখছে।

    সাক্ষর অনুষ্ঠানটি নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সদরসপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়, এ সময়ে ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে আমেরিকা ও চীনা প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ৬০টি দেশের নেতারা চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন।

    ডিসেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে চুক্তির প্রস্তাব গ্রহন করা হয়। চুক্তির লক্ষ্য, বিশ্বের তামমাত্রা বৃদ্ধি ২ থেকে ৩ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।

    চুক্তিতে সাক্ষরকারী দেশ গুলোকে তাদের গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণ হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা করটুকু অর্জিত হলো তা জাতিসংঘকে প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর অবহিত করতে হবে।

    অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে হাজারো দুর্গত মানুষ  

    জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরপর তিনবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সেখানকার হাজার হাজার মানুষ এখন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বসবাস করছে। ওই অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে ও প্রচ- ঠা-া অনুভূত হচ্ছে। দু’দফা ভূমিকম্পে ৪০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে এবং শতাধিক আহত হয়েছে। এদিকে, ভূমিকম্পের পর জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় আসো পর্বতের আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা ও ছাই উদ্গীরণ শুরু হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার দুপুরে ধারণ করা এক ভিডিওচিত্রে প্রায় ১০০ মিটার উঁচুতে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবারের ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের পর আগ্নেয়গিরিটি সক্রিয় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১১ সালেও জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দেশটির অন্তত ২০টি আগ্নেয়গিরি সক্রিয় হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে যে, প্রায় দুই লাখেরও বেশি মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার আহ্বান জানানো হয়েছে। দু’দফা ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও তা আবার সরিয়ে নেয়া হয়। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধস ও আর ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা আশংকা করছেন ধ্বংসস্তূপে হয়তো আরো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। অনেকে বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রায় দুই হাজার মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং আহত দুইশো জনের অবস্থা ভালো নয় বলে জানা যাচ্ছে। জাপানের মাশিকিতে এক ভুতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাপান মিটিরোলজিক্যাল এজেন্সি গত শনিবার জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিট থেকে শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ২৫২ বার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এটি ১৯৯৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বশেষ জাপানে শক্তিশালী কম্পনের রেশ না কাটতেই কুমামতো প্রদেশে শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল সোয়া ৫টার দিকে আবারো ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ওই কম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩। কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির কুমামতো প্রদেশে আঘাত হানা ওই ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে, যার উৎপত্তিস্থল ছিল দেশটির কুমামতো-চিহি এলাকায়। এর আগে স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১টা ২৫ মিনিটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওই প্রদেশটিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এর কম্পনের মাত্রা ছিল ৭। আমেরিকান জিওলজিক্যাল সার্ভে জানায়, জাপানের কিউশু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দেশটির ইউকি শহর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই অঞ্চলে ৫ দশমিক ৮ এবং ৫ দশমিক ৭ মাত্রার আরো দুটি কম্পন অনুভূত হয়। এ নিয়ে ওই অঞ্চলে তিন দফা ভূমিকম্প হয়েছে। জাপানে দফায় দফায় ভূমিকম্পের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগের নির্দেশ দেন তিনি। আবে বলেন, সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জোর দিচ্ছি আমরা। এ ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। জনসাধারণকে যথাযথ তথ্য দ্রুততার সঙ্গে সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভূমিকম্পে কমপক্ষে দুই হাজার লোক আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। শনিবার জাপান কর্তৃপক্ষ জানায়, উদ্ধারকাজ ত্বরান্বিত করতে ২০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কুমামতো প্রদেশে ৯২ হাজারের বেশি লোক বাড়িঘর ছেড়েছে বলে জানা গেছে। প্রায় দুই লাখ বাড়িঘর বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, শনিবার ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে বড় ধরনের ভূমিধস হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার রাতে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন রাস্তা ও পার্কে ভয়ার্ত অবস্থায় রাত কাটিয়েছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

    পররাষ্ট্র কার্যালয়ে চাকরি পেল বিড়াল!

    যুক্তরাজ্যের বড় বড় সব কূটনীতিক ও মন্ত্রীদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা হলো লন্ডনের কিংস চার্লস স্ট্রিট ভবন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান এই কার্যালয়ে সব রথী মহারথীরা সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকেন গুরুত্বপূর্ণ কাজে। আর এই কার্যালয়েই কিনা ইঁদুরের উৎপাত! এমনকি এসব ইঁদুরের উৎপাত ঠেকাতে সেখানে নিযুক্ত কর্মচারীরাও রীতিমতো গলদঘর্ম হয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একটি বিড়ালকে। বিড়ালটির কাজ হবে পররাষ্ট্র কার্যালয়ের ভেতরে থাকা ইঁদুর তাড়ানো। তার পদের নাম ‘প্রধান ইঁদুর শিকারি’। খবর এনডিটিভি অনলাইনের।

    দুই বছর বয়সী ওই বিড়ালের নাম পালমারস্টোন। এখন থেকে বিড়ালটি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ওই ভবনেই থাকবে। পররাষ্ট্র কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিড়ালটি দেশটির কর দাতাদের জন্য মোটেও বোঝা হবে না। বিড়ালটি নিয়োগ দেওয়া হলেও এর খরচের জন্য জনগণের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হবে না।

    পররাষ্ট্র কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পালমারস্টোন এই কার্যালয়ের এক নতুন অতিথি। ‘প্রধান ইঁদুর শিকারি’ হিসেবে তার দায়িত্ব হবে কিং চার্লস স্ট্রিটে অবস্থিত এই কার্যালয়ে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণকারীদের কাজে সহায়তা করা ও ইঁদুরের সংখ্যা কমানো।

    বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিড়ালটিকে লন্ডনের একটি রাস্তায় পাওয়া গিয়েছিল। সে ছিল খুবই ক্ষুধার্ত ও কম ওজনের। খুব সম্ভবত সে তার মালিককে খুঁজে পাচ্ছিল না। যুক্তরাজ্যের অনেক সরকারি ভবনে ইঁদুরের উৎপাত আছে। তাই এসব ভবনে ইঁদুর মোকাবিলায় বিড়ালও বাস করছে।

    ২০১১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ইঁদুর মারতে ল্যারি নামের একটি বিড়ালকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ওই সময় বলেছিলেন, ল্যারি ইঁদুর ধরতে খুবই পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ল্যারি নামের ওই বিড়ালটির টুইটার অ্যাকাউন্টও আছে। টুইটারে তার ফলোয়ার সংখ্যা ৪৭ হাজার ৫০০ জন।

    এ ছাড়া ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের হাডার্সফিল্ড রেলস্টেশনের একটি বিড়ালও পদোন্নতি পেয়েছিল। স্টেশনের সব ইঁদুর তাড়ানোর কৃতিত্বের জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে জ্যেষ্ঠ পেস্ট কন্ট্রোলার হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছিল।

    দুর্গত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা, ৭০ হাজার লোক অন্যত্র স্থানান্তর জাপানে তৃতীয় দফা ভূমিকম্প, আরো ২০ জনের প্রাণহানি   

    জাপানে ব্যাপক হতাহতের মধ্যেই ফের কয়েক দফা ভূমিকম্পে আরো ২০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯-এ দাঁড়িয়েছে। আরো বহু সংখ্যক ব্যক্তি ধসে যাওয়া ভবনের নিচে আটকে আছে বলে জানা গেছে। আতঙ্কিত অধিবাসীরা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ভূমিকম্পে একটি বাঁধ ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েক দফায় এসব ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুমামতো শহরের মাইশি এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিহীন রয়েছে এই অঞ্চল। ভূমিকম্প দুর্গত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। প্রথম দফা ভূমিকম্পে নয়জন নিহত হওয়ার এক দিনের মাথায় জাপানে আবার আঘাত হানে শক্তিশালী ভূমিকম্প। স্থানীয় সময় রাত ১টা ২৫ মিনিটে এ ৭.৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পের পর জারি করা হয় সুনামি সতর্কতা। তবে সেই সতর্কতা পরে আবার তুলে নেওয়া হয়। কয়েক দফার এসব ভূমিকম্পে ২০১১ সালের সুনামির পর বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাপান সরকার। নতুন করে প্রাণহানির খবর না পাওয়া গেলেও আহত কয়েক হাজারের মতো বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুমামতো প্রদেশের এই ভূমিকম্পের তীব্রতা বৃহস্পতিবারের আঘাতের চেয়ে বেশি বলে জানানো হয়েছে। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কুমামতো শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। উৎপত্তিস্থলের মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে কিয়েশু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। একই এলাকার মধ্যে রয়েছে সেন্দাই পারমাণবিক কেন্দ্র। গভীর রাতে এই বিপর্যয় ঘটায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা করা কঠিন বলে জানিয়েছেন রুপার্ট উইংফিল্ড। তিনি জানান, হাজার হাজার ভীত সন্ত্রস্ত মানুষকে দেখেছি খোলা আকাশের নিচে, রাস্তায় বা পার্কে জড়ো হয়ে আছে। পরপর ভূ-কম্পনের আঘাতে তারা ভীষণ বিপর্যস্ত। উইংফিল্ড বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চোখে দেখতে না পেলেও আমরা ভেঙ্গে পড়া বাড়িঘরের নিচে আটকা পড়া মানুষ জনের সাহায্যের আবেদন পাচ্ছি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। উদ্ধার তৎপরতাও শুরু হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তর ইউএসজিএস এর তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাত ১টা ২৫ মিনিটে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭। বিভিন্ন ভবনের বাসিন্দারা জিমনেশিয়াম ও হোটেল লবিতে আশ্রয় নিয়েছে। প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি, গতকাল শনিবারও উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত আছে। কুমানাতো শহরের কর্মকর্তা তোমোইউকি তানাকা বলেন, প্রতি ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। ভূকম্পনপ্রবণ জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়াশিদা সুগা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকম্প মোকাবেলা করছি। প্রায় দেড় লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমরা সবাইকে বলেছি, নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, এটি নিঃসন্দেহে ২০১১ সালের পর বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবারের এই ভূমিকম্প আঘাত হানার পর রাতভর অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেয়। এর ১০ মিনিট পরই দ্বিতীয় দফায় ৫.৭ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে। স্থানীয় পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, গতকাল শনিবারের রাতের ভূমিকম্পে বেশি কয়েকটি বাড়ি ধসে পড়েছে। রাস্তাঘাটও ভেঙে গেছে। জাপানের গণমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে , কমপক্ষে ২ লক্ষ বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে না আক্রান্ত এলাকায়।

    জাপানে ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প

    বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টার মাথায় এবার জাপানে ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে গেছে কয়েকটি স্থানে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস জরিপে এ ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ২।
    বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯ টার ( বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) দিকে দেশটির কুমামতো ও কিয়েশু প্রদেশে এ ভূমিকম্প হলেও এতে পুরো জাপানই কেঁপে ওঠে। ইউএসজিএস এর তথ্যে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল জাপানের ইউকি শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে এবং গভীর সমুদ্রের ১০ কিমি এলাকা জুড়ে।
    কুমামতোর পুলিশ বলছে, একটি বাড়ি ধসে গেছে, আটকে গেছে কিছু মানুষ। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন  হওয়ার খবর আসছে।
    ওদিকে, প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছেন।
    তবে ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে সুনামি সর্তকতা জারি করেনি দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর।

    বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর অভিষেক ও মনোরম সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

    দীর্ঘ প্রতিক্ষা, আলোচনা, সমালোচনার শেষে জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিসিসিআইজে’র প্রথম নির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হলো গত রোববার তাকিনোগাওয়া বুনকা সেন্টারে। গত ১২ এপ্রিল প্রবাসীদের ভীড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হলটিতে বহু দর্শকদের দাঁড়িয়ে থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে দেখা গেছে।

    আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের প্রধান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুকিত মজুমদার বাবু, সাংবাদিক ও “সাপ্তাহিক” সম্পাদক গোলাম মোর্তজা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী স্টেট লিবারাল পার্টির সাংসদ সদস্য প্রার্থী রশিদ ভূঁইয়া।

    কামরুল হাসান লিপু’র বানানো চমৎকার মঞ্চটিতে বিকেল পাঁচটায় প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর উপস্থাপক নিয়াজ আহমেদ জুয়েলের চমৎকার উপস্থাপনায় মঞ্চে প্রথম নব নির্বাচিত সভাপতি বাদল চাকলাদার অনুষ্ঠানের সুচনা করেন। এরপর মঞ্চে আসেন কমিউনিটির পক্ষ থেকে বিসিসিআইজে’র প্রথম আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা প্রবাসী সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক।

    তিনি নব নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাকিম মোঃ নাসিরুলকে মঞ্চে আহ্বান করেন এবং প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তার কাছ থেকে প্রবাসী সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে একসাথে এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বিসিসিআইজে’র প্রতি অনুরোধ করেন। জনাব হাকিম চমৎকার জবাবের মাধমে দু’বছরের নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে পরবর্তী কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সবাইকে এক করে জাপান বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে গভীর করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এবং তিনি নব নির্বাচিত কমিটির এক একজনকে পরিচয় করিয়ে দেন।
    প্রবাসী মহিলারা একে একে সকলকে ফুল দিয়ে অভিষিক্ত করেন। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে ফুল ও ক্রস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। অতিথিরাও বক্তব্য রাখেন। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ফুল দিয়ে নতুন কমিটিকে অভিননন্দন জানান এবং বক্তব্য রাখেন। সকলের প্রত্যাশা নতুন কমিটি তাদের যোগ্যতা দিয়ে কমিটিকে নতুন মাত্রা পৌঁছে দেবে।

    বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ জাপান প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ দৌলার ভূমিকার কথা ভোলবার নয়। তার কথা উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। জাপানে নিজস্ব দূতাবাস করার উদ্যোগতাও তিনি।
    অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বটি ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কাজী এনামুল হল এবং সোমা। প্রথমে পুলক ও পরে কুমার বিশ্বজিৎ মাতিয়ে রাখেন পুরো অনুষ্ঠানটিকে।

    শুরুতে কুমার বিশ্বজিৎ এর তিন দশকেরও বেশি সময়ের সংগীত জীবনের উপর একটি ছোট্ট প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। এরপর দর্শকদের তুমুল করতালির মাধ্যমে মঞ্চে প্রবেশ করেন কুমার বিশ্বজিৎ। যেখানে সীমান্ত তোমার -গানটির মাধ্যমে শুরু করেন গান। তার জনপ্রিয় সব গানের মাঝে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলিক ভাষায় কৌতুকপূর্ণ বক্তব্য দর্শকরা দারুন উপভোগ করেন।

    তিনি চতুরদোলাতে দুলে দেখো ঐ বধু যায়, ডাক্তার, তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে আসতে, তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে সহ বেশ অনেক গুলো জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান। দর্শকরাও যেন গানের তালে মাতাল হয়ে ওঠেন। এদিন ড্রাম বাদক মিথুনের মাতোয়ারা তাল দর্শকরা সহজে ভুলতে পারবেন না। দর্শকদেরকে তালে তালে উত্তাল করে দিতে তিনি তারও অবদান কোনো অংশে কম ছিলো না।

    একটি গানে পুরো হলের বাতি নিভিয়ে সকল মা’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ গাইলেন “মাগো মা তোমার আঁচল” দর্শকরা এ সময়ে মোবাইলের আলো জ্বেলে ধরেন -গোটা হলটি যেন ভোরে গেলো তারায় তারায়।

    সাম্প্রতিক দিন গুলোর মধ্যে আয়োজিত অন্যতম সফল অনুষ্ঠানটি দর্শকরা ব্যাপক ভাবে উপভোগ করেন।

    সভ্যতা : ‘সভ্য’ বর্ণবাদের উল্লাস!

    ওয়ারিস রব্বানী

    শরণার্থীদের আশ্রয়শিবির। জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় শহর- বাউজেনে। ৩০০ শরণার্থীর জন্য একটি হোটেল। হোটেলটিকেই আশ্রয়শিবির হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সেই আশ্রয় শিবিরে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। আগুন যখন দাউ দাউ জ্বলতে থাকে তখন আসে দমকল বাহিনী। এসেই তারা দেখে অদ্ভুৎ একটি দৃশ্য! আগুন-জ্বলা আশ্রয়শিবিরের বাইরে একদল স্থানীয় জার্মান নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে। উৎসুক ও উৎফুল্ল। তারা কেউ আগুন নেভাতে যাচ্ছে না। আগুন নেভানো হোক- সেটাও চাচ্ছেন না। ভিনদেশী মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয়শিবিরে আগুন জ্বলার মজায় তারা দাঁত কেলিয়ে হাসছিল। নির্লজ্জভাবে করছিল উল্লাস। এমনকি দমকল বাহিনীর লোকদের বাধাও দিচ্ছিল। যেন তারা এগিয়ে গিয়ে আগুন নেভাতে না পারে। জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে তিনশত নারী-পুরুষ-শিশুর ভষ্মিভূত হওয়ার শংকা! এর মধ্যেই এই উল্লাস ও হিংসাত্মক আচরণ! এ-ও কি সম্ভব! কোন জঙ্গলের সভ্যতায় আমরা বসবাস করছি!

    জার্মান সরকারের আচরণ দুনিয়াবাসী জানে। শরণার্থীদের নিজ দেশে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মারকেলের ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশের ভেতরে বিরোধী পক্ষের বিরোধিতা ও সমালোচনা তাকে সইতে হয়েছে ঢের। তারপরও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে মানবিক ‘সংকটের আগুন’ উসকে দেওয়ার দায় থেকে তিনি নিজের দেশ ও জাতিকে মুক্ত ভাবতে পারেননি। তাই সাড়া দিয়েছেন। বাড়িঘর-হারা বিপন্ন আশ্রয়প্রার্থীদের জায়গা দিয়েছেন। একটু দম ফেলার। একটু বেঁচে থাকার। এভাবে বিপন্নের প্রতি সহানুভূতির ক্ষেত্রে জর্মানদের হয়ে এক ‘ইমেজনির্মাতা’ প্রতিনিধির ভূমিকাই পালন করতে চেয়েছেন। কিন্তু তার দেশের লোকেরা এ-ঘটনায় সেই ‘ইমেজের’ ভেতরের ছবিটা দেখিয়ে দিয়েছে। মানুষ কত নীচে নামতে পারে- দুনিয়াবাসী দেখেছে। মনে-প্রাণে তাদের মতো যারা, এতে তারা অবাক হয়নি, ক্ষুণ্ন হয়নি। কিন্তু সাধারণ বোধ-বুদ্ধি ও বিবেচনার মানুষেরা চমকে গেছেন। ভড়কে গেছেন। কারণ, বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা এত নগ্নরূপে ‘হেসে উঠতে পারে’- এ যেন কারো কল্পনাতেও ছিল না।

    ক’দিন আগে থেকেই নাকি স্থানীয় জার্মানদের ওখানকার আশ্রয়শিবিরগুলো ঘিরে বিভিন্ন রকম কুৎসিত আচরণ প্রকাশিত হয়ে আসছিল। ঘটনার কয়েকদিন আগে শ খানেক স্থানীয় বাসিন্দা শরণার্থীদের ‘বাড়ি চলে যা, বাড়ি চলে যা’ বলে শ্লোগান তুলেছিল। এরও আগে পাশের স্যাক্সনি শহরে শরণার্থীদের বহনকারী একটি বাসের পথ আটকে দিয়েছিল স্থানীয়রা। উদ্দেশ্য শরণার্থীদের উত্যক্ত করা। শরণার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যকে সংকুচিত, বিরক্তিকর ও ঘৃণার্হ্য করে তোলা। একশ্রেণির জার্মান এখন হাততালি বাজিয়ে সেটাই করছে। লজ্জা, সৌজন্য কিংবা মুখরক্ষারও কোনো দায় তাদের এই হিংস্রতা দমিয়ে রাখতে পারছে না। এজন্যই স্যাক্সনি শহরের গভর্ণর খুব লজ্জিত বোধ করেছেন। তিনি তার শহরের বাসিন্দাদের এ-জাতীয় বৈরী আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন- ‘এটা খুবই ঘৃণ্য এবং লজ্জাজনক কাজ।’ স্বজাতির এ-জাতীয় নগ্ন আচরণে লজ্জায়ই পড়তে হয়েছে তাকে। এই অভিব্যক্তি ছিল সে সলাজ দুঃখবোধের বহিঃপ্রকাশ।

    শরণার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো অস্বস্তিকর ঘটনাই ঘটেনি- ঘটনা এমন নয়। বিপন্ন সহস্র মানুষের মাঝেও লোভী-দুর্বৃত্ত দু-একটা লুকিয়ে থাকতে পারে। প্রায় সবযুগে, প্রায় সবকালে। সেজন্য তো সব বিপন্ন মানুষকে আরো বিপন্ন, আরো কোণঠাসা শ্রেণিতে পরিণত করা যায় না। এ ঘটনায় জার্মানদের একটি দলকে সেই কর্মটিই কি আমরা করতে দেখছি না? আসলে অনেক সময় বর্ণবাদী ও ভেতর-কুৎসিৎ বলে আমরা কেবল আমেরিকান, বিলেতি, রাশান, স্পেনিশ কিংবা ফরাসিদের দিকেই আঙ্গুল তাক করি। বুঝতে পারি না, কথিত পশ্চিমা সভ্যতার প্রায় পুরোটারই ভেতরের চেহারা কুৎসিত। তাদের সংস্কৃতি ও বোধবিশ্বাসের ভেতরেই এই ‘ক্রুসেড-হিংস্রতা’ বুনা আছে। সেখানে এই দেশ- সেই দেশ কোনো ব্যাপার না। সেখানে শরণার্থী আর অভিবাসীও কোনো আলাদা মাপকাঠি নয়। অমানবিক ‘মানুষদের’ ‘সভ্য’ বর্ণবাদ সবখানেই যেন সমানতালে উল্লাস করে চলে। বাউজেনের জার্মানরা সেই সত্যটিই আবার মনে করিয়ে দিল। তবুও এই বর্ণবাদী ভেতর-কুৎসিত সমাজের মধ্যেও যে কজন সুস্থ চিন্তার ‘মার্কেল’ আছেন- আমরা তাদের প্রতি অভিনন্দন জানাই!

    জি৭ বৈঠকে হিরোশিমা ঘোষণায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান

    শিল্পোন্নত সাতটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা সোমবার আণবিক বোমার অভিজ্ঞতা ভোগকারী জাপানের হিরোশিমা শহরে বৈঠক করেছেন। তারা বিভিন্ন দেশ নানান বৈশ্বিক সমস্যার মোকাবেলার প্রক্ষিতে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নতুন করে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

    একটি যৌথ ইশতেহারে তুরস্ক এবং বেলজিয়াম থেকে শুরু করে নাইজেরিয়া, আইভোরি কোস্ট এবং পাকিস্তান; উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা এবং ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং ইউক্রেইনের ক্রিমিন উপদ্বীপ রাশিয়ার “অবৈধ দখল” গ্রহণের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।

    আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়টি স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন মূল্যবোধের অংশীদার হয়ে থাকে, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন।

    “আজকে বিশ্ব অভিন্ন মূল্যবোধ পরিবর্তন করতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার মতো অবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে” তিনি বলেন।

    হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপির নববর্ষের কার্ড

    বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একটি শুভেচ্ছা কার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে ধানমণ্ডি যাচ্ছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। আজ রবিবার বেলা ১২টার দিকে চেয়ারপারসনের একটি কার্ড নিয়ে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছেন ওই দলটি।

    চার সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া। অন্য সদস্যরা হলেন, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহিন ও সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা। বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

     

    টোকিও উপসাগর মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক

    টোকিও উপসাগর থেকে ধরা ৮০ শতাংশ মাছের পরিপাক তন্ত্রের ভেতর প্লাস্টিকের বর্জ্য পাওয়া গেছে, গবেষকদের তথ্য থেকে এ কথা জানা যায়।

    এসব মাছে খেলে মানবদেহে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সমস্যা কম কিন্তু এটি জাপানের চারপাশে সাগর দূষিত হয়ে পড়ার শংকাকে বাড়িয়ে তুলছে, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক হিদেশিগে তাকাদা’র নেতৃত্বে গবেষক দল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।

    গবেষক দলটি গত বছরের অগাষ্টে ৬৪টি জাপানি এনচোভিস (মাছ বিশেষ) নিয়ে গবেষণা চালান এবং তাদের পরিপাক তন্ত্রে ৫ মিমিলিটার পর্যন্ত বড় ১৫০টি অণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক কণা দেখতে পান।

    খোঁটা দেওয়ার কুফল

    মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

    ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঈমানের দাবি এবং আল্লাহ তা‘আলার অত্যন্ত পসন্দনীয় কাজ। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

    خَيْرُ النَّاسِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ

    “যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।”

    মানুষের উপকার করা যায় বিভিন্নভাবে। অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং বিদ্যা দিয়ে। আল্লাহ তা‘আলা একেকজনকে একেকরকম যোগ্যতা দিয়েছেন। যার যেই যোগ্যতা আছে, সে যদি তার সেই যোগ্যতাকে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করে, তবেই তার সেই যোগ্যতা সার্থক হয়। এর দ্বারা সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে সাফল্যম-িত হয়। বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে যে-কোনও যোগ্যতা দেনই এজন্যে যে, সে তা মানব-সেবায় নিয়োজিত করে নিজ জীবনকে সফল করে তুলবে।

    পরোপকার যে পন্থায়ই করা হোক, আল্লাহ তা‘আলার কাছে তা কবুল হওয়া এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজরূপে গণ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল- ইখলাস থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে করা এবং পার্থিব কোনও উদ্দেশ্য না থাকা। পার্থিব উদ্দেশ্য বলতে- যার উপকার করা হল তার কাছ থেকে কোনও বদলা পাওয়া কিংবা সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন করা বা অন্য কোনও রকমের সুবিধাভোগ হতে পারে। মু’মিনের পরোপকার এইসকল উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। তার প্রাণের কথা হবে-

    اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللّٰهِ لَا نُرِیْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وَّ لَا شُكُوْرًا.

    অর্থ : ‘আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।’ -সূরা দাহ্র, (৭৬) : ৯

    মু’মিন তো এই ভেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে যে, আল্লাহর দেওয়া জান-মাল ও আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান-বুদ্ধিকে সে আল্লাহর বান্দার সেবায় ব্যয় করতে পারছে। এ ব্যয়ের লাভ তো শেষটায় নিজের ভাগেই আসবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তো মেহেরবানী করে তার প্রদত্ত জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে তার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন-

    اِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ .

    অর্থ : ‘আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও তাদের সম্পদ খরিদ করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে- এর বিনিময়ে।’ -সূরা তাওবা (৯) : ১১১

    এক হাদীসে আছে-

    مَنْ نَّفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَ مَنْ يَّسَّرَ عَلٰى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِىْ الدُّنْيَا وَ الْاٰخِرَةِ وَ مَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَه اللهُ فِىْ الدُّنْيَا وَ الْآخِرَةِ وَ اللهُ فِىْ عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدِ فِىْ عَوْنِ اَخِيْهِ.

    ‘যে ব্যক্তি কোনও মু’মিনের দুনিয়াবী সংকটসমূহ থেকে একটা সংকট মোচন করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার আখিরাতের সংকটসমূহের একটা সংকট মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনও অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৪৬; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৪২৭

    এ হাদীস জানাচ্ছে- পরোপকারের লাভ কেবল আখিরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও পাওয়া যায়। তবে তা পাওয়া যায় কেবল তখনই, যখন লক্ষবস্তু হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি।

    যে ব্যক্তি পরোপকার করে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য, পার্থিব স্বার্থে নয়, সে কখনও এদিকে লক্ষ করে না যে, সে যার উপকার করেছে তার পক্ষ হতে কি রকম আচরণ পাচ্ছে। তাই তার খোঁটা দেওয়ারও কোনও অবকাশ আসে না। খোঁটা দিতে পারে তো কেবল সেই, যে উপকার করে পার্থিব প্রাপ্তির আশায়। সে যখন তার আশানুরূপ ফল না পায়, তখন হতাশ হয়। সেই হতাশারই প্রকাশ ঘটে খোঁটাদানের মাধ্যমে।

    অনেক সময় ইখলাসের সংগে উপকার করার পরও নগদপ্রাপ্তির দিকে নজর চলে যায়। ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিনিময় তার পাওয়ার ছিল, তা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। কাজেই পরোপকারের সুফল লাভের জন্য শুরুর ইখলাসই যথেষ্ট নয়, পরবর্তী সময়ে সেই ইখলাসের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকাও জরুরি। অন্যথায় তার ইখলাসের সংগে কৃত পরোপকারও নিষ্ফল হয়ে যায়। তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ثُمَّ لَا یُتْبِعُوْنَ مَاۤ اَنْفَقُوْا مَنًّا وَّ لَاۤ اَذًی ۙ لَّهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۚ وَ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ.

    অর্থ : ‘যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না এবং কোনও কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান পাবে। তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ -সূরা বাকারা (২) : ২৬২

    এ আয়াতে জানানো হচ্ছে- আল্লাহর পথে কৃত ব্যয়ের সুফল লাভের জন্যে শর্ত হল, পরবর্তীকালে সেই দানের জন্য কোনওরূপ খোঁটা না দেওয়া এবং কোনও কষ্ট না দেওয়া। বলা বাহুল্য, কোনও দান আল্লাহর পথে হয় তখনই, যখন তাতে ইখলাস থাকে। তাহলে এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কেবল দানকালীন ইখলাসই যথেষ্ট নয়, বরং দানের পরও ইখলাস রক্ষা জরুরি। খোঁটা দেওয়া ইখলাসের পরিপন্থী। কেননা খোঁটা দেওয়াই হয় পার্থিব প্রত্যাশা পূরণ না হলে।

    খোঁটা দ্বারা কেবল দান-খয়রাত ও পরোপকারের ছওয়াবই নষ্ট হয় না; বরং এটা একটা কঠিন পাপও বটে। কেননা এর দ্বারা উপকৃত ব্যক্তির অন্তরে আঘাত দেওয়া হয়। মানুষের মনে আঘাত দেওয়া কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেওয়া ইসলাম ও ঈমানের সংগে সংগতিপূর্ণ নয়। কেননা মুসলিম বলাই হয় তাকে, যার হাত ও মুখ থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে (সহীহ বুখারী, হাদীস ১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪১)। আর মু’মিন সেই, যার ক্ষতি থেকে সকল মানুষ নিরাপদ থাকে (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৫৬১ )। এজন্যেই খোঁটা দেওয়াকে কুরআন মাজীদে কাফের-বেঈমানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقٰتِكُمْ بِالْمَنِّ وَ الْاَذٰی ۙ كَالَّذِیْ یُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَیْهِ تُرَابٌ فَاَصَابَهٗ وَابِلٌ فَتَرَكَهٗ صَلْدًا ؕ لَا یَقْدِرُوْنَ عَلٰی شَیْءٍ مِّمَّا كَسَبُوْا ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الْكٰفِرِیْنَ.

    অর্থ : ‘হে মু’মিনগণ! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকাকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ^াস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম, যেমন এক মসৃণ পাথরের উপরে মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সেটিকে পুনরায় মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না। আর আল্লাহ এরূপ কাফেরদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন না।’ -সূরা বাকারা (২) : ২৬৪

    অর্থাৎ খোঁটা দেওয়া কাফেরদেরই বৈশিষ্ট্য। তারা যেহেতু আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাই ছওয়াবেরও কোনও আশা থাকে না। আশা থাকে কেবল নগদপ্রাপ্তি। হয় সে ব্যক্তি তাকে আরও বেশি দেবে, নয় তার অনুরূপ উপকার তারও করবে। অন্ততপক্ষে তার গুণগান করে তো বেড়াবেই। যখন এর কোনওটা পায় না, তখন মনে করে- বৃথাই টাকা-পয়সা নষ্ট করল। এভাবে সে হতাশার শিকার হয় আর নিমকহারাম, অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি বলে গালাগাল করে। এখন মু’মিন-ব্যক্তিও যদি খোঁটা দিয়ে বসে, তবে তা কাফেরসুলভ আচরণই হল। এর দ্বারা প্রমাণ হবে- দান বা উপকার করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি তার উদ্দেশ্য ছিল না। যেমন কাফের ব্যক্তির সেরকম উদ্দেশ্য থাকে না। আর যে দান-খয়রাত আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য হয় না, তার পরিণাম সম্পর্কে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

    “হাশরের দিন আল্লাহ তা‘আলা এরূপ ব্যক্তিকে বলবেন- তোমাকে আমি যে অর্থ-সম্পদ দিয়েছিলাম, তা দ্বারা তুমি আমার জন্য কী করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি তা তোমার পথে ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি তো এজন্য করেছিলে যে, লোকে তোমাকে দাতা বলবে। তা বলাও হয়েছে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে দান করেছিলে তা পেয়ে গেছ। আজ আমার কাছে তোমার কোনও বদলা নেই। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৫২৮)

    অথবা প্রমাণ হবে- উপকার করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে সেই উদ্দেশ্যের উপর সুদৃঢ় থাকতে পারেনি। নজর চলে গেছে নগদপ্রাপ্তির দিকে। ফলে যেই ছওয়াব তার পাওয়ার ছিল, তা তো বরবাদ করে ফেলেছেই, উপরন্তু আমলনামায় কবীরা গুনাহ যোগ করেছে। কেননা নগদ-বদলা না পাওয়ার কারণে সে তাকে খোঁটা দিয়েছে, অকৃতজ্ঞ বলেছে। এভাবে তার মনে কঠিন আঘাত দিয়েছে।

    যে ব্যক্তি কারও উপকার নেয়, সে এমনিতেই মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। তার উপর যদি খোঁটা দেওয়া হয়, তবে তা তার অন্তরে রীতিমত রক্তক্ষরণ ঘটায়। সেই রক্তক্ষরণের বিপরীতে তার দান-খয়রাত ও উপকার কোনও ধর্তব্যেই আসে না। বরং আঘাতের উৎপত্তি যেহেতু ওই উপকার থেকে, তাই উপকারটাও উপকৃত ব্যক্তির পক্ষে হয়ে যায় এক পাষাণ ভার। যেন এই উপকার না করাই তার পক্ষে ভালো ছিল। তাই তো ইরশাদ হয়েছে-

    قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ وَّ مَغْفِرَةٌ خَیْرٌ مِّنْ صَدَقَةٍ یَّتْبَعُهَاۤ اَذًی ؕ وَ اللّٰهُ غَنِیٌّ حَلِیْمٌ.

    অর্থ : ‘উত্তম কথা বলে দেওয়া ও ক্ষমা করা সেই দান-সদকা অপেক্ষা শ্রেয়, যার পর কোনও কষ্ট দেওয়া হয়। আল্লাহ অতি বেনিয়ায ও সহনশীল।’ -সূরা বাকারা (২) : ২৬৩

    অর্থাৎ কেউ যদি কারও কাছে কোনও সাহায্য চায় এবং সে কোনও কারণে তা করতে না পারে, তবে তার উচিত নম্র ও ভদ্র ভাষায় তাকে জবাব দিয়ে দেওয়া। আর যদি অনুচিত পীড়াপীড়ি করে, সেজন্য তাকে ক্ষমা করা। আর এভাবে নম্রকথা বলে বিদায় করা ও ক্ষমা করা সেই দান অপেক্ষা বহু শ্রেয়, যে দানের পর খোঁটা দেওয়া হয় কিংবা অপমান করে কষ্ট দেওয়া হয়।

    খোঁটা দেওয়া যে কত গর্হিত এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে কত ঘৃণ্য, হযরত আবূ যর (রাযি.)-এর একটি হাদীস দ্বারা তা অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

    ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَ لَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ وَ لَا يُزَكِّيْهِمْ وَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ ثَلَاثُ مِرَارٍ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ : خَابُوْا وَ خَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ : اَلْمُسْبِلُ وَ الْمَنَّانُ وَ الْمُنْفِقُ سِلْعَتَه بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.

    ‘তিন ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যাদের সংগে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আবূ যর (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিন-তিনবার বললেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা, তারা তো সর্বস্বান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল? তিনি বললেন, (ক) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে; (খ) যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং (গ) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য চালায়।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৬

    খোঁটা দেওয়া যে কত গুরুতর অপরাধ, এ হাদীস দ্বারা তা আঁচ করা যায়। বস্তুত খোঁটাদানকারী নিজেকে মহানুভবতার উচ্চস্তর থেকে হীনতার গভীর খাদে নামিয়ে আনে। যে পরোপকার করে, সে তা আল্লাহর খলীফা হিসেবেই করে। সৃষ্টির উপর তার হাত যেন আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের হাত। এরূপ হাত সম্পর্কে হাদীস বলছে-

    اَلْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِّنْ اليَدِ السُّفْلٰى

    ‘উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’  -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪২৭

    অর্থাৎ দাতার হাত গ্রহিতার হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। খোঁটা দ্বারা দান-উপকারের এই মহিমা নষ্ট হয়। কারণ বিনিময়ের আশাবাদী হওয়ার কারণে সে আর আল্লাহর প্রতিনিধি থাকে না। বাহ্যদৃষ্টিতে সে উপকারকারী হলেও প্রকৃতপক্ষে সে উপকারলাভের ভিখারী। সে উপকার করেছিল স্বার্থচিন্তায় তাড়িত হয়ে। কিংবা উপকার করার পর এখন সেই তাড়না বোধ করছে। সে তার উপকারকে ছলনার স্তরে নামিয়ে এনেছে। শিকারী যেমন সশ্যদানা ছিটিয়ে পাখি বা মাছ শিকার করে, তেমনি সেও উপকারের দানা ছিটিয়ে পার্থিব স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তার হাত আর উপরের হাত থাকল না। নিচের হাত হয়ে গেল।

    বান্দার সব আশা ও চাওয়া-পাওয়া তো হবে কেবল আল্লাহরই কাছে। কিন্তু খোঁটা দেওয়ার দ্বারা প্রমাণ হয়- সে মাখলূকের কাছে আশাবাদী ছিল। মাখলূকের কাছে আশাবাদ মনুষ্যত্বের মর্যাদাকে খর্ব করে এবং দৃষ্টিকে করে সংকীর্ণ। মাখলূক কতটুকুই বা দিতে পারে! অথচ আসমান-যমীনের মালিক দান-উপকারের যে বিনিময় ঘোষণা করেছেন, তা সৃষ্টির কল্পনারও অতীত।

    খোঁটা দেওয়া একরকম অহমিকাও বটে। কারণ এর দ্বারা সে যাকে উপকার করেছে, তাকে নিজ কৃপাধন্য মনে করে। তাকে হীন ও ছোট ভাবে। অথচ দান-উপকার করা চাই ব্যক্তির মান-সম্ভ্রমের প্রতি লক্ষ রেখেই। অসম্ভব কি আল্লাহ তা‘আলার কাছে বিশেষ কোনও আমলের কারণে সে তার মত বহু দান-খয়রাতকারী অপেক্ষা উচ্চ মর্যাদা রাখে। তাই উপকার করা উচিত সেবার মানসিকতা নিয়ে। অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে। ভাবা উচিত তাকে উপকার করে প্রকৃতপক্ষে নিজে উপকৃত হচ্ছে। দান-উপকার গ্রহণ করে সে তাকে আল্লাহর কাছে বিপুল মর্যাদালাভের সুযোগ করে দিচ্ছে। যেই উপকারের সাথে এরকম মানসিকতা থাকে, খোঁটা দেওয়ার মত হীনতা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

    আসলে খোঁটা দেওয়া একরকম ধৃষ্টতা। কারণ মানুষ খোঁটা কেবল তখনই দেয়, যখন উপকার করতে পারাকে নিজ কৃতিত্ব গণ্য করে, আল্লাহর দান ও তাওফীকের দিকে দৃষ্টি না থাকে। কেবল সামর্থ্য ও ক্ষমতা থাকলেই তো উপকার করা যায় না। এর জন্য আল্লাহর তাওফীকের দরকার হয়। দান করার পরে খোঁটা দিলে সেই তাওফীকের অমর্যাদা করা হয় এবং করা হয় অকৃতজ্ঞতা। এই অকৃতজ্ঞতা ও ধৃষ্টতার কারণেই তো কিয়ামতের দিন সে আল্লাহ তা‘আলার সুদৃষ্টি, সুবাক্য ও পরিশোধন থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং তাকে ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি। যেমনটা উপরের হাদীসে ঘোষিত হয়েছে।

    খোঁটা দেওয়ারই পরিণতি যে, যার উপকার করা হয়, একসময় তার ও উপকারকারীর মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়ে যায়। আর এটা এখন এমনই ব্যাপক যে, বলাই হয়ে থাকে- তুমি কারও উপকার করলে প্রস্তুত থেকো একদিন সে তোমার অপকার করবে। আসলে এটা উপকার করার দোষ নয়; বরং খোঁটা দেওয়া ও নিয়ত সহীহ না থাকার পরিণাম। নিয়ত সহীহ না থাকলে বিনিময়ের প্রত্যাশা থাকে। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই বিনিময় না পেলে খোঁটা দেওয়া হয়। যার পরিণামে সৃষ্টি হয় মনোমালিন্য। একপর্যায়ে তা শত্রুতায় গড়ায়। আর তখন ভাবা হয়, এটা সেই উপকার করার পরিণাম। অথচ সহীহ নিয়তে উপকার করলে শত্রুতা সৃষ্টির প্রশ্নই আসে না; বরং শত্রুর সংগেও ভালো ব্যবহার করলে, তার কোনও উপকার করলে এবং আদর-আপ্যায়ন করলে সে বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-

    وَ لَا تَسْتَوِی الْحَسَنَةُ وَ لَا السَّیِّئَةُ ؕ اِدْفَعْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِیْ بَیْنَكَ وَ بَیْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِیٌّ حَمِیْمٌ.

    অর্থ : ‘ভালো ও মন্দ সমান হয় না। তুমি মন্দের জবাব দাও ভালোর দ্বারা। তাহলে যার ও তোমার মধ্যে শত্রুতা ছিল, সহসাই সে হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ -সূরা ফুস্সিলাত (৪১) : ৩৪

    বহু হাদীস দ্বারাও এ কথা প্রমাণিত। এবং অভিজ্ঞতাও তাই বলে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস (রাযি.) বলেন, “আমি যে-কোনও ব্যক্তির উপকার করেছি। পরে দেখা গেছে তার ও আমার মধ্যে এক স্নিগ্ধময় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে গেছে। আর যার প্রতি কখনও আমার দ্বারা মন্দ ব্যবহার হয়ে গেছে, পরে দেখতে পেয়েছি- তার ও আমার মধ্যে সম্পর্কে মলিনতা সৃষ্টি হয়েছে।” (উয়ূনুল-আখবার খ. ২, পৃ. ১৭৭)

    সুতরাং দান-খয়রাত ও উপকার করার পরিণাম কখনও খারাপ হতেই পারে না, যদি তাতে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য থাকে এবং পরে কোনও রকম খোঁটা ও কষ্টদান না করা হয়ে থাকে।

    উপরের আলোচনা দ্বারা বোঝা গেল, উপকার ও দান-খয়রাত করার পর খোঁটা দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এটা একটি মহাপাপ এবং বহু দোষের আকর। সর্বোপরি এটা ঈমান ও ইসলামের চেতনা-পরিপন্থী কাজ ও কাফের-বেঈমানদের বৈশিষ্ট্য। মু’মিনমাত্রেরই এর থেকে বিরত থাকা অবশ্য-কর্তব্য।

    বস্তুত উপকার করা অপেক্ষা কৃত উপকারকে হেফাজত করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এমনিতে উপকার করা তো একটি নফল কাজ, কিন্তু তার হেফাজত করা ফরয এবং নষ্ট করা মহাপাপ। সেই হেফাজতের জন্যই কর্তব্য খোঁটাদান থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقٰتِكُمْ بِالْمَنِّ وَ الْاَذٰی.

    অর্থ : ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের দান-সদকাকে প- করো না খোঁটাদান ও কষ্ট দেওয়ার দ্বারা।’ -সূরা বাকারা (২) : ২৬৪

    কারও উপকার করার পরে কোনও অবস্থাতেই যাতে খোঁটাদানের অপরাধ ঘটে না যায়, সেজন্যে কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে।

    ১. উপকার করার সময় এবং তার পরও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিলাভের চেতনাকে অন্তরে জাগ্রত রাখা। কিছুতেই পার্থিব কোনও বিনিময়ের আশাবাদী না হওয়া। সে বিনিময় বৈষয়িক হোক বা সুনাম-সুখ্যাতি হোক কিংবা হোক উপকৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা।

    ২. যার উপকার করা হবে, উপকার করার সময়ও এবং তার পরও তার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখা। মনে করতে হবে প্রকৃতপক্ষে সেই আমার উপকারকারী। কেননা আমার কাছে সাহায্য চেয়ে এবং আমার উপকার গ্রহণ করে সে আমাকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রাযি.)-এর একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন,

    “আমি তিন ব্যক্তির বদলা দিতে সক্ষম নই। (ক) যে আমাকে প্রথম সালাম দেয়; (খ) যে আমাকে মজলিসে বসার সুযোগ করে দেয় এবং (গ) যে সালাম-কালামের ইচ্ছায় আমার কাছে আসার জন্যে নিজ পদযুগলকে ধুলোমলিন করে। আর চতুর্থ এক ব্যক্তি আছে- আমার পক্ষ থেকে এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তাকে বদলা দিতে পারবে না। জিজ্ঞেস করা হল, সে কে? তিনি বললেন- ওই ব্যক্তি, যে কোনও বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, তারপর সারা রাত চিন্তা করেছে সাহায্যের জন্য কার কাছে যাবে। অবশেষে আমাকেই তার উপযুক্ত মনে করল এবং আমার কাছে এসে তার সেই মসিবতের কথা বলল।” (উয়ূনুল-আখবার খ. ২, পৃ. ১৭৭)

    অর্থাৎ কোনও বিপন্ন ব্যক্তি যদি সাহায্যের আশায় কারও কাছে যায়, তবে এটা তার প্রতি সেই ব্যক্তির বিশেষ আস্থা এবং তাকে বিশেষ মর্যাদা দানেরই পরিচয় বহন করে। এর মাহাত্ম্য অনুধাবন করা উচিত।

    ৩. নিজের দান-খয়রাত ও উপকারকে ক্ষুদ্র গণ্য করা। অর্থাৎ কল্পনা করতে হবে যে, তার যা প্রয়োজন সে অনুপাতে আমি অতি সামান্যই করতে পারছি এবং আমার যা করণীয় ছিল, সে অনুযায়ী যা করছি তা খুবই নগণ্য। আর খোদা না করুন, যদি এটা কবুল না হয়, তবে তো নিতান্তই তুচ্ছ। মানুষ মানুষের উপকারার্থে কতকিছুই করছে। সে হিসেবে আমি যা করছি তা কোনও ধর্তব্যেই আসে না। কথাটিকে এভাবে বলা যায় যে, দান করার সময় তা করতে হবে বিনয়ের সংগে এবং পরেও সেই বিনয়ভাব বজায় রাখা চাই।

    ৪. উপকারের বিষয়টাকে গোপন রাখা। অর্থাৎ যার যেই উপকার করা হবে, যথাসম্ভব তা গোপন রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেননা প্রকাশ করলে যেমন ইখলাস নষ্ট হতে পারে, তেমনি তা একরকম খোঁটায়ও পর্যবসিত হবার আশংকা থাকে। কেননা উপকারের কথা যদি প্রচার করে বেড়ানো হয় আর এভাবে তা তার কানে গিয়ে পৌঁছায়, তবে তা তার জন্যে নিশ্চিত পীড়াদায়ক হবে। এটাও একরকম খোঁটাই বটে। এ ব্যাপারে একটি হাদীস স্মরণ রাখা যেতে পারে। তাতে সাত ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে; হাশরের ময়দানে তারা আরশের ছায়াতলে জায়গা পাবে। তার মধ্যে এক ব্যক্তি হল-

    رَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَاَخْفَاهَا حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُه.

    ‘ওই ব্যক্তি, যে কোনও দান-সদকা করে এবং তা গোপন রাখে এমনকি তার বামহাত জানে না ডানহাত কী খরচ করে।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬০; সহীহ  মুসলিম, হাদীস ১০৩১

    ৫. উপকার করার কথা ভুলে যাওয়া। জনৈক ব্যক্তি তার সন্তানদের উপদেশ দিয়েছিল- তোমরা যদি কারও কোনও উপকার করো, তবে তা ভুলে যেয়ো। কেননা তা স্মরণ রাখলে খোঁটা দেওয়ার আশংকা থেকে যায়। আর খোঁটা দিলে উপকার নিষ্ফল হয়ে যায়।

    প্রশ্ন করা যেতে পারে, উপকৃত ব্যক্তিরও তো কর্তব্য উপকারকারীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা। কেননা হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

    مَنْ صَنَعَ اِلَيْكُمْ مَعْرُوْفًا فَكَافِئُوْهُ فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا مَا تُكَافِئُوْنَه فَادْعُوْا لَه.

    ‘যে ব্যক্তি তোমাদের কোনও উপকার করে, তোমরা তার বদলা দিও। যদি বদলা দেওয়ার মত কিছু না পাও, তার জন্য দু‘আ করো।’ -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৬৭২; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ২৫৬৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৪০৮

    তো কেউ যদি উপকার গ্রহণ করার পরে বদলা না দেয় বা দু‘আ না করে, এককথায় কৃতজ্ঞতা না জানায়, তবে স্বাভাবিকভাবেই খোঁটার ব্যাপারটা এসে যায় না কি? উত্তর হল, এটা সম্পূর্ণই তার ব্যাপার। উপকার লাভের পরে কৃতজ্ঞতা না জানালে সে দ্বীনের শিক্ষা অমান্য করল। এজন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে তার জবাবদিহি করতে হবে। যে ব্যক্তি উপকার করল, তাকে বলা হয়নি যে, তুমি তার কৃতজ্ঞতার অপেক্ষায় থেকো। বরং তাকে যেই চেতনার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা হচ্ছে-

    اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللّٰهِ لَا نُرِیْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وَّ لَا شُكُوْرًا.

    অর্থ : ‘আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।’ -সূরা দাহ্র, (৭৬) : ৯

    সুতরাং সে কৃতজ্ঞতা না জানালে খোঁটা দেওয়ার অবকাশ আসবে কেন? আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সবরকম জাহেরী ও বাতেনী ফিতনা থেকে রক্ষা করুন এবং সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন- আমীন।

    নতুন কক্ষপথে সফল ভাবে প্রবেশ করলো আকাৎসুকি

    জাপানের মহাকাশ সংস্থা বলেছে তারা সফল ভাবে শুক্র গ্রহের জন্যে পাঠানো নভোযানকে তার নতুন কক্ষপথে সফল ভাবে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে নভোযানটি শুক্র গ্রহ পর্যবেক্ষণের জন্যে দ্বিগুনেরও বেশি সময় পাবে।

    জাপান স্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি শুক্রবার আকাৎসুকি তার পরিকল্পিত কক্ষপথে সফল ভাবে প্রবেশ করতে পারার কথা ঘোষণা করেন।

    আকাৎসুকি’র ডিম্বাকৃতি কক্ষপথ কিছুটা প্রশস্ত করতে সোমবার চারটি ছোট ইঞ্জিন ১৫ সেকেন্ড ধরে চালানো হয়।

    কর্মকর্তারা বলছেন এই পরিবর্তনের ফলে পর্যবেক্ষণের সময় বর্তমান ৮০০ দিনের স্থলে ২০০০ দিনে বৃদ্ধি পাবে।

    ২০১০ সালে আকাৎসুকি উৎক্ষেপণ করা হয় কিন্তু মূল ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে নভোযানটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়।

    ইঞ্জিন সমস্যার ৫ বছর পর মহাকাশ যানটিকে গত ডিসেম্বরে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়।