নিজে ঘুমিয়ে বিশ্বকে জাগিয়ে গেল আয়লান
মানবাধিকার গোষ্ঠি ও স্বেচ্ছসেবী প্রতিষ্ঠানসমুহ আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবসে অভিবাসী শরণার্থীদের বিশেষ ভাবে স্মরণ করেছে। অন্যদেশে আশ্রয় লাভের জন্য যাওয়ার পথে যে হাজার হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী প্রতিকূল পরিবেশে জীবন হারিয়েছে গতকাল তাদের স্মরণ করা হয়। তারা ২০১৫ সালকে অভিবাসীদের জন্য সব চেয়ে প্রতিকূল ও দুঃখবহ বছর বলে উল্লেখ করেন। শরণার্থীদের সেই দুর্ভোগের ছবি দেখে ঠাঁয় দাঁড়িয়েই থাকতে হবে সকলকেই। পলক পড়বে না চোখে। যেমন, সমুদ্র সৈকতে ‘ঘুমিয়ে’ ছিল আয়লান। সমুদ্র সৈকতে শীতল হাওয়ায় ওর পাশে কেউ ছিল না। মায়ের কোলের নিস্তব্ধতা, নিরাপত্তা সব কিছু ছাপিয়ে আয়লান গোটা বিশ্বের ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। ওই ফুটফুটে শিশুটা গোটা বিশ্বের ঘুম ভাঙিয়েছে, নিজে নিদ্রামগ্ন থেকেই। সমুদ্রের ঢেউ ওকে স্পর্শ করতে ভয় পেয়েছে। ভয় হয়েছিল সেনারও। ঘুমিয়ে থাকা আয়লানকে কোলে নিতে হাত কেঁপেছিল তার। বন্দুক ধরতে, বুলেটে বুক ঝাঁঝরা করতেও যার ভয় হত না সে ভয় পেয়েছিল আয়লানের নিথর দেহটাকে সমুদ্র সৈকত থেকে তুলে আনতে। পৃথিবীর চোখে পানি ছিল সেদিন। স্রষ্টাও সেদিন বলেছিলেন গোটা পৃথিবী যাকে আশ্রয় দিতে পারল না, তার আশ্রয় শুধুু মৃত্যুর কোলে। গতকাল জাতিসংঘ ওয়েবসাইটে সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন বলেছেন, ২০১৫ সাল হলো এমন একটি বছর যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অভিবাসী ট্র্যাজেডির বছর হিসেবে মনে রাখতে হবে। তিনি বলেছেন, এই বছরে কমপক্ষে ৫ হাজার নরনারী ও শিশু শরণার্থী তাদের জীবন হারিয়েছেন, তারা দেশত্যাগী হয়েছিলেন সংরক্ষিত ও অপেক্ষাকৃত ভালো জীবনের জন্য কিন্তু তা তারা পায়নি তারা পেয়েছে মৃত্যুর স্বাদ। এ ছাড়া ১০ হাজারের মত মানবসন্তান লাঞ্ছিত হয়েছেন মানবপাচারকারীদের দুর্ব্যবহারে। বান কি মুন আরো বলেছেন, লাখ লাখ সাধারণ মানুষ শিকারে পরিণত হয়েছে। এছাড়া তারা বিদেশীদের উপর ভয় ও ঘৃণাদ্বারা আক্রান্ত হন। তিনি অভিবাসীদের নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালনের মুহূর্তে তুলে ধরা হয় অভিবাসী শরণার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়টিকে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বা আইওএম জানিয়েছে, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশত্যাগী অভিবাসীদের মৃত্যু কিংবা নিখোঁজের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৫ জন। আর বিষয়টি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সমান ভাব প্রতিভাত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে আইওএম একটি প্রচার অভিযানের আয়োজন করে সেটি হলো, ‘আমি শরণার্থী’। প্রচার অভিযানে শরণার্থীরা তাদের নিজ নিজ জীবনে কঠিন ও দুঃখবহ অবস্থার কথা বর্ণনা করেন।