ভোটের মাঠে শঙ্কা
নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে গতকাল আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু করেন প্রচারণা। অন্য দিকে, সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, আ স ম রবসহ বিএনপির অনেক নেতা। বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন; অতপর কোটালীপাড়ায় নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। অন্য দিকে, ড. কামাল হোসেন সিলেটে মাজার জিয়ারতের পর মাজারের পাশে উঠান-বৈঠকের জন্য যে চেয়ার বসানো হয়; সেটা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তিনি অন্য জায়গায় সমাবেশ করেছেন। সারাদেশে একই চিত্র। নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন; ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমে বাধার মুখে পড়ছেন। দুইদিনে প্রায় ৩০টি জেলায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধার মুখে পড়েন ধানের শীষ প্রার্থীরা। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতিও দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। ফলে নির্বাচন তথা ভোটে উৎসবমুখর প্রচারণা নিয়েই শঙ্কা রয়ে গেছে।
সারাদেশে নৌকার প্রার্থীদের নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালালেও ধানের শীষের প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় থেমে নেই। ধরপাকড়ের সঙ্গে ঘটছে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা। ১১ ডিসেম্বর ১৮টি জেলায় অর্ধশত স্থানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। গতকাল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কবির তালুকদার দুলুসহ শতাধিক গ্রেফতার এবং রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এমনকি ইসিতে অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে মোহাম্মদপুর থানার বিএনপির সভাপতি ওসমান গণি গ্রেফতার হন। গতকাল ফরিদপুরে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর ২৫টি নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা হয়। জয়পুরহাট, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাজী, বাগেরহাট, নাটোর, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী প্রচারণার সময় ধানের শীষের কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। কোথাও কোথাও প্রাথীরা পর্যন্ত আহত হন। ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ কোথাও পুলিশের ছত্রছায়ায় কোথাও পুলিশের পক্ষপাতিত্ব আচরণের কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। মাঠের পরিস্থিতি জানানে গতকাল সিইসির কাছে অভিযোগ নিয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। তবে এর আগে সিইসি কে এম নুরুল হুদা মির্জা ফখরুল ও ব্যারিস্টার মওদুদের ওপর হামলায় ‘আমরা বিব্রত’ বলে মন্তব্য করেন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত ইসির বিব্রত হওয়ার সুযোগ নেই। আইনি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ বলেন, মাঠ এখনো অসমতল। নির্বাচন কমিশনের বিব্রত হওয়ার সুযোগ নেই। তাদের ক্ষমতা রয়েছে সে ক্ষমতা ব্যবহার করাই শ্রেয়। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, মাঠে শুধু আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের লোকজন কাজ করছে। বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইসির ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইসি ইচ্ছা করলেই কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশাসনকে বার্তা দিতে পারে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় এবং হামলার অভিযোগ নিয়ে বিএনপির নেতারা নির্বাচন কমিশনে যান। ইসিকে বিএনপি অভিযোগ করে ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রচারণা শুরুর পরপরই বিএনপির মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রচারণায় বারবার হামলা করা হচ্ছে। ড. মঈন খানের এলাকায় হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী ও যুবলীগ মিলে এই হামলা করছে। অন্য দিকে, বিএনপির যারা জামিনে রয়েছেন তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর গায়েবি মামলায় ধরপাকড়ের পাশাপাশি ভয়ভীতি, হামলা-মামলাসহ বিভিন্নভাবে সারাদেশের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী এফ ই শরীফুজ্জামান জাহাঙ্গীর প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার ছেলে ওয়াহিদ জামান দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের বিএনপির প্রার্থী খোন্দকার আবু আশফাকের মিছিলে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এসময় প্রার্থী আবু আশফাকসহ ১০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। আহত হয় অন্তত ২৫ নেতাকর্মী। সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে বিএনপি নেতাকর্মীদের চোখ তোলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া। হুমকি-ধমকির এই ভিডিওটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তার উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই হুমকি দেয়া হয়। ঢাকা-আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস সংবাদ সম্মেলন করে জানান, তাকে হত্যার চেষ্টায় হামলা করা হয়। ঢাকা-৮ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে শাজাহানপুর বাসা থেকে বের হয়ে বাধা দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। পুলিশের ছত্রছায়ায় তারা প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে আটকে রাখে। গত কয়েক দিনে তার বাসার সমান থেকে অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেফতার করে আইন শৃংখলা বাহিনী।
সারাদেশের বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন কমিশন কার্যত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। সিইসি ‘পুলিশ ইসির বাইরে কিছুই করছে না’ বক্তব্যের পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে পুলিশ। চাঁদপুর, যশোর, ঢাকা, নেত্রকোনা, নাটোর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, রংপুর, পিরোজপুর, ঝিনাইদহ, বগুড়া, মুন্সিগঞ্জ, জয়পুরহাটসহ সারাদেশে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। অধিকাংশ জেলায় ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে; অথচ উল্টো পুলিশ ধানের শীষের কর্মীদের গ্রেফতার করছে। কাউকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে; কাউকে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।
রাজশাহী আ.লীগের বেপরোয়া আচরণ
বিএনপির প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন পুলিশের সহায়তায় আ.লীগের কর্মীরা বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে। তাদের ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা আর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ কর্মীদের গ্রেফতার করছে। সরকারি দল নির্বাচনী ক্যাম্প করলেও বিএনপিকে তা করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। রাজশাহীর বাগমারায় বেশ কিছু এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় বাধা ও যুবদল কর্মীকে হাত পা ভেঙে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থী আবু হেনা। রাজশাহী সদর আসনে প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুর নির্বাচনী ক্যাম্পে নৌকার সমর্থকরা ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এমন অভিযোগ করেন মিনুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ওয়ালিউল হক রানা। তিনি বলেন নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এ অপকর্ম করা হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ধানের শীষ কর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
রাজশাহী-৩ আসন পবা-মোহনপুরে ধানের শীষের প্রার্থীর পোস্টার কেটে ফেলার অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের নিকট জানিয়েছেন নির্বাচনী এজেন্ট মকবুল হোসেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে নাটোরে। আগে থেকেই এখানে বিএনপি কর্মীরা হামলা মামলায় কোণঠাসা ছিল। সদর আসনের প্রার্থী বিএনপির সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার খবরে বিএনপির ছাতনী ইউপি সদস্য বাবর আলীসহ নেতৃবৃন্দ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিল। নৌকারকর্মীরা সেখানে হামলা চালিয়ে পন্ড করে দেয়। এমনকি তবারক বোঝাই ডেকচি পর্যন্ত নিয়ে যায়। পুলিশের বক্তব্য খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিংড়া উপজেলায় হযরতপুর এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা সভা করার সময় খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবরের নেতৃত্বে একটি দল হামলা চালিয়ে কুপিয়ে আহত করে দুই নেতাকর্মীকে। আহত হন স্থানীয় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম। জয়কুড়ি বাজারে বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর ও যুবদল নেতাকে পিটিয়ে জখম করে। গুরুদাসপুরে নয়াবাজারে প্রচারণা চালাতে গিয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর ওপর হামলা করে নৌকার কর্মীরা। এসব হামলা ভাঙচুরের ব্যাপারে আ.লীগের নেতাদের বক্তব্য হলো বিএনপির নিজেদের কোন্দলের জেরে এমনটি হচ্ছে। আর পুলিশ বলছে, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
সাতক্ষীরায় প্রচারে বাধা, মারপিট গণগ্রেফতার
সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা, মারপিট ও গণগ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরা-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী ডা. শহিদুল আলম বলেন, আ.লীগ দলীয় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ এসব অতৎপরতা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার কোনো পরিবেশ নেই। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রচার মাইক ভেঙে দিয়েছে। দেবহাটায় ছাত্রদলের কামরুল ইসলাম ও ফিরোজ আহমেদসহ কয়েক নেতাকে মারপিট করেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষ প্রতীকের ব্যানার-ফেস্টুন কেড়ে নেয়া হয়েছে। আশাশুনি উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস ও বড়দল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মন্টুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ বাড়ি বাড়ি যেয়ে বিএনপি কর্মীদের খোঁজ নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাগেরহাটের হামলায় ধানের শীষের প্রার্থী আহত
বাগেরহাটের দু’টি সংসদীয় আসনে ধানের শীষের প্রার্থীদের গণসংযোগে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাগেরহাট-৪ সংসদীয় আসনে সকালে মোরেলগঞ্জে নির্বাচনী গণসংযোগ কালে সন্ত্রাসী হামলায় ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম ও তার তিন কর্মী আহত হয়েছেন। অপর দিকে, একই দিন দুপুরে বাগেরহাট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী এম এ সালাম গণসংযোগে বের হলে থানার কাছাকাছি এলাকায় তার সাথে থাকা বিএনপি ও যুবদলের দুই নেতাকে পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা।
সন্ত্রাসী হামালার বিষয় জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, সস্ত্রাসী হামলার ঘটনা দুটি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে দলের কাউকে এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি বলে জানা। বাগেরহাটের দুটি সংসদীয় আসনে ধানের র্শীষের প্রার্থীদের গণসংযোগে পৃথক সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান জেলা পুলিশ।
ফরিদপুরে বিএনপির ২৫টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের ২৫টি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার অপরাধে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাদা পোশাকে পুলিশ হয়রানি করছে বলে তারা অভিযোগ করেন। ফরিদপুর শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মিরাজ জানান, রাতের আধারে শহরের টেপাখোলা বেলতলা, বৈরাগী স্কুল, পশ্চিম খাবাসপুর মেডিক্যাল হাসপাতাল এলাকা, আদমপুর ও গঙ্গাবর্দী এলাকা বিভিন্নস্থানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রায় ২৫টি নির্বাচনী কার্যালয় একরাতের মধ্যেই ভাঙচুর করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চেয়ার-টেবিলসহ এসব কার্যালয়ে রক্ষিত বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর ও তছনছ করা হয়েছে। নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনের ব্যানার ও পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৈশপ্রহরী জানান, দু’টি মাইক্রোবাস ও প্রায় ২৫টির মতো মোটরসাইকেলে করে মুখোশে মুখ ঢেকে হেলমেট পরা অবস্থায় হামলাকারীরা নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরে অংশ নেয়। ফরিদপুর-৩ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এ ঘটনাকে কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের অন্যতম সদস্য নোমান আশরাফুজ্জামানের (২৫) ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। নোমান সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সকালে সে পরীক্ষা দিতে ইয়াছিন কলেজ কেন্দ্রে যায়। এ সময় তার ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ঝিনাইদহে মারধর গ্রেফতার ভাঙচুর
ঝিনাইদহের চারটি আসনে নৌকার সমর্থকদের ব্যাপক নৈরাজ্য, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের গণগ্রেফতার, মারধর ও প্রচার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে বিএনপি প্রার্থীরা। বিএনপির প্রার্থীরা জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর টেক্সটাইল কলেজের পাশে এবং গান্না ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে প্রচার মাইক হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। শহরের ওয়াজির আলী স্কুলের সামনে উপজেলা বিএনপির নেতা ডাকবাংলা এলাকার জাহাঙ্গীর, কামাল হোসেন ও শরীফুল ইসলামকে বিকালে নৌকার সমর্থকরা ব্যাপক মারধর করে। ঝিনাইদহ পৌরসভার কাউন্সিলর বিএনপি নেতা মহিউদ্দীনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম হিরণ ঘটনার বিষয়ে অস্বীকার করেন। ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ জানান, নৌকার প্রার্থী নিজে ও কালীগঞ্জ থানার ওসি বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এলাকা ত্যাগের জন্য হুমকি দিচ্ছে। ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী অ্যাড আসাদুজ্জামান আসাদ অভিযোগ করেন, শেখপাড়া বাজারে তার গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে অর্ধশত যানবাহন ভাঙচুর করেছে নৌকার ক্যাডার বাহিনী
বিএনপি কর্মীর হাত-পা ভেঙে দেয় জয়পুরহাটে
জয়পুরহাটের কালাইয়ে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত বিএনপি কর্মী পুনট ইউপি যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নানের (৪২) ওপর হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে সে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে কালাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন ফকির জানান, মার্কা বের হওয়ার পর থেকেই তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। মাহমুদপুর ইউপির মহব্বতপুর গ্রামে ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনকে পোস্টার লাগানোর সময় মারপিট করা হয়েছে। এ ছাড়া হান্নানকে মারা হলো। এভাবে তারা বিএনপিকে ভোট থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা মিনফুজুর রহমান মিলন জানান, আ.লীগের কর্মীরা এমন কাজ করেনি।
পটুয়াখালীর ও ঝালকাঠিতে হামলার অভিযোগ
নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্নস্থনে গোলযোগ এবং হামলার রেশ দক্ষিণাঞ্চলেও আছড়ে পড়ছে। পটুয়াখালীর ৪ নম্বর আসনের রাংগাবালী এলাকায় বিএনপির নির্বাচনী সমাবেশে হামলা চালিয়ে তা ভন্ডুল করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মহাজোট কর্মীদের বিরুদ্ধে। এখানে হামলায় বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হওয়া ছাড়াও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বরিশাল বিমান বন্দরে ঝালকাঠি-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জেবা আমীন খানের কর্মী-সমর্থকদের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সংঘর্ষ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আ.লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের রূপগঞ্জ এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
কিশোরগঞ্জে পথসভায় হামলা
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী শরিফুল আলমের নির্বাচনী পথসভায় হামলা চালিয়েছে পুলিশ। সন্ধ্যয় কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরর থানার ওসমাপুর ইউনিয়নের চৌমুরি বাজারে এ হামলা চালায় পুলিশ। হামলায় শরিফুল আলমসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানান বিএনপির প্রার্থী শরিফুল আলম। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় ওসমানপুর ইউনিয়নের চৌমুরি বাজারে পথসভা চলাকালীন সময় পুলিশ ও আ.লীগের নেতাকর্মীরাও পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তিনিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।