আমাজন ডটকমে বাংলাদেশের তানভীর

ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবেন। যখন স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছেন, তখনো এদেশে কম্পিউটার বিরাট অরাধ্য বস্তু। প্রথম কম্পিউটারের স্পর্শ পান বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকেই তার কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসার সূচনা।
সম্প্রতি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস আমাজন ডটকমে যোগ দিয়েছেন সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার। সুনামগঞ্জের ছেলে তিনি। নতুন কর্মস্থলে তার পদবি সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার।
ধাপে ধাপে যোগ্যতা ও মেধার পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়েছে এ পর্যন্ত। অনেকটা যেন লিটমাস পেপারে অম্ল-ক্ষারের পরীক্ষা। তানভীর পড়ালেখাতেও বরাবরই মেধাবী ছিলেন। ১৯৯৩ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে স্টার মার্কস, ১৯৯৫ সালে ইস্পাহানি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন। অবশ্য শুধু ভালো পড়াশোনা ছাড়াও তিনি কবিতা লিখতেন, গান শুনতেন ও গল্পের বইয়ে ডুবে থাকতেন। উচ্চমাধ্যমিকের পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে। কিন্তু, কবিমন নিয়ে মানিয়ে নিতে পারেননি পদার্থবিজ্ঞানের কাটখোট্টা বইপত্রের সঙ্গে।
শেষমেশ একবছর পর পুরোনো ইচ্ছাতেই ফিরে যান, কম্পিউটার সায়েন্সে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কম্পিউটারের জগতেই ব্যস্ত থেকেছেন। স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি হয়, পরে তাদের মাধ্যমেই চলে যান জাপানে। সেখানে থেকেই নিজের যোগ্যতাকে ঝালাই করেছেন। চাকরির পাশাপাশি সেখান থেকেই এমবিএ করেছেন যুক্তরাজ্যের লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকরিবদল করে জাপানের শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন। ব্যাংকিং আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করেছেন।
আমাজনে যোগ দেওয়ার আগে সর্বশেষ কাজ করেছেন জাপানের টেক জায়ান্ট রাকুটেনে, বিশ্বের বহুল ব্যবহূত ইন্সট্যান্ট ম্যাসেঞ্জার ‘ভাইবার’ এই প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন। মূলত তিনি সফটওয়্যার প্রকৌশলী হলেও বেশিরভাগ সময়ই কাজ করেছেন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে। এই বিষয়ে নিজে একটি বইও লিখেছেন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ব্লগে প্রায়শই গল্প-কবিতা লিখেন।
তানভীরের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা হলো কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা। এছাড়া, বড় কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হতে চান তিনি। দেশে ইলিমেন্টারি স্কুল খোলার স্বপ্নও দেখেন তিনি। তানভীরের ভাষায়, সব শিক্ষাকে পূর্ণতা দেয় নৈতিক শিক্ষা। সেই শিক্ষা না থাকলে সবই বৃথা।