জাপানি নারীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য
এক মাস পর কবরের সন্ধান, থানায় হত্যা মামলা
রাজধানীতে হিরোই মিয়াতা নামে জাপানের এক নাগরিকের মৃত্যু ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে খোঁজ মিলছিল না ৬১ বছর বয়সী এ নারীর। এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় জিডি হওয়ার পর পুলিশ ঘটনাটির তদন্তে নামে। পরিচিত লোকদের বক্তব্য অনুযায়ী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়। তবে সেক্ষেত্রে পুলিশ, স্বজন বা সংশ্লিষ্ট কাউকে না জানিয়ে কেন তার দাফন করা হয়-সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। ময়নাতদন্তে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে আশা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার বিধান ত্রিপুরা বলেন, জাপানের ওই নাগরিককে হত্যার কোনো তথ্য-প্রমান এখনও পুলিশের কাছে নেই। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন-চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় ছিলেন হিরোই মিয়াতা। সর্বশেষ কয়েক বছর তিনি উত্তরা-৬ নম্বর সেক্টরের সিটি হোমস নামে একটি আবাসিক হোটেলে থাকতেন।
পুলিশ জানায়, হিরোই মিয়াতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে গত ১৯ নভেম্বর জাপান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানায় জিডি করেন। পুলিশকে জানানো হয়, জাপানে থাকা মিয়াতার মা দূতাবাসকে বলেছেন, সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর মেয়ের সঙ্গে তার কথা হয়। এর পর থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছে না। এর সূত্র ধরে তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ সিটি হোমস হোটেলে যায় ও মিয়াতার পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলে। পোশাকের স্টক লট ব্যবসায় জড়িত দু’জন জানান, হোটেলে মিয়াতার অনেক টাকা বিল বাকি ছিল। হোটেল মালিক এ ব্যাপারে প্রায়ই তাগাদা দিতেন। এমন পরিস্থিতিতে আড়াই মাস আগে তারা মিয়াতাকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে গত ২৭ অক্টোবর তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। পাশের একটি ওষুধের দোকানের কর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে কিছু ওষুধ ও স্যালাইন খাওয়ানো হয়। তবে এতে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ২৯ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়। ২০০৬ সালে মিয়াতার বাংলাদেশের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়। এ কারণে তাকে কোনো হাসপাতালে নেয়ার সাহস করেননি বলেও জানান দুই ব্যবসায়ী। পরে বনানীর ১২ নম্বর সড়কের সিটি করপোরেশন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর বিষয়টি তার মাকে জানানো হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনাটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গোপনীয়তা ও অন্যান্য কিছু কারণে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।