‘চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ভয় পায় না’

চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একটি সংবাদপত্রে দাবি করা হয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ভয় পায় না চীন। ওই এলাকায় আরো যুদ্ধাজাহাজ পাঠানো হবে-যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিক্রিয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীনের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া আসলো। দেশটির কট্টর জাতীয়তাবাদী পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস অভিযোগ করেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন চীনকে উস্কানি দিচ্ছে। গতকাল বুধবার পত্রিকাটির এক সম্পাদকীয়তে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, চীনের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলে কাজ করা এবং একইসঙ্গে খারাপ কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা। খবর দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি ও ডনের।

পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে বলা হয়, হোয়াইট হাউসকে এটা বোঝানো যে, ইচ্ছা না থাকলেও চীন এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ভয় পায় না। চীন তার   সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। পত্রিকাটিতে আরো বলা হয়, এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের দ্বীপ নির্মাণের দাবিতে বাধা দেয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো দেশেরই নেই। চীনের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বস্থানীয় সংবাদপত্র দ্য পিপলস্ লিবারেশন আর্মি ডেইলির প্রথম পাতায় এক সম্পাদকীয়তে অভিযোগ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে ইরাক এবং আফগানিস্তানের মতো গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এতে আরো বলা হয়, প্রকৃত সত্য হলো, বিশ্বের যেসব দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করেছে সেখানে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো কোনো দেশে আবার সরাসরি এসব ক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে চরম ক্ষতি করেছে দেশটি।
মঙ্গলবার দক্ষিণ চীন সাগরের জলসীমা নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। চীন বলছে, তাদের এলাকায় মার্কিন নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজকে দেখার পর তারা ওই জাহাজটিকে সতর্ক করে দিয়েছে। জাহাজটি ওই সাগরে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা চীনের কয়েকটি দ্বীপের কাছাকাছি বিতর্কিত জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল।
চীনের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র লু কাং অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন ইচ্ছে করেই দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, যে কোন দেশের ইচ্ছাকৃত উস্কানির বিরুদ্ধে চীন শক্ত ব্যবস্থা নেবে। চীন তাদের আকাশ সীমা এবং সমুদ্র সীমার ওপর তীক্ষ নজর রাখছে। চীনের ‘সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্বার্থে’ আঘাত হানার বিরুদ্ধে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করে দেন। চীনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও মঙ্গলবার তলব করা হয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলছে, এটা রুটিন অপারেশন এবং আন্তর্জাতিক জলসীমা আইন মেনেই তা করা হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের যে বিতর্কিত অঞ্চলটিকে চীন তাদের সমুদ্র সীমা বলে দাবি করছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে থেকেই কিছু জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস লাসেন চীনের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপটির ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার কংগ্রেসে এক শুনানিতে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন না করে আমরা বিশ্বের যে কোনো জায়গায় উড়বো, পাল তুলবো এবং অভিযান চালাবো। যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়েছে জাপান।

চীন যাকে নিজের সমুদ্রসীমা বলে দাবি করছে, সেটিকে চীনের অনেক প্রতিবেশি দেশ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা হিসেবে। ২০১৩ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের ডুবন্ত কোরাল রীফের ওপর মাটি ফেলে চীন এই কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করে, এরপর সেখানে সামরিক ব্যবহারের উপযোগী রানওয়ে এবং লাইটহাউজও বসানো হয়। এসবের লক্ষ্য ছিল চীনের সমুদ্র সীমা দক্ষিণ চীন সাগরের অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত করা।