হাশিমাঃ পরিত্যাক্ত এক দ্বীপের কথা
দক্ষিণ জাপানের নাগাসাকি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পরিত্যাক্ত দ্বীপ হাশিমা যা গুনকানজিমা (রণতরী দ্বীপ) নামেই পরিচিত -শিল্পন্নোত জাপানের ইতিহাস যেন সে তুলে ধরছে। দ্বীপটি এখন নাগাসাকি প্রিফেকচারের ৫০৫টি বসতিহীন দ্বীপের একটি। দ্বীপটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য পরিত্যাক্ত এবং নির্বিঘ্ন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কংক্রিট অ্যাপার্টমেন্ট ভবন গুলো ও তার পার্শ্ববর্তী সমুদ্র প্রাচীর।
দ্বীপটি সমুদ্রতলদেশীয় কয়লা খনির জন্যে এক সময় সুপরিচিত ছিলো, ১৮৮৭ সালে কয়লা খনির কাজ শুরু হয় -যা জাপানের শিল্পায়নের সময় পরিচালিত হতো। ১৯৫৯ সালে ৬.৩ হেক্টর (১৬ একর) দ্বীপটির জনসংখ্যা শিখরে ওঠে, এ সময় জনংখ্যা ছিলো ৫,২৫৯ জন। কয়লা খনিটি ১৯৭৪ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তার অল্প পরেই দ্বীপবাসীরা দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে ও অনেক গুলো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তবে বাইরের ধসে পড়া দেয়ালের কোনো কোনো অংশকে আবার মেরামত করা হয়েছে।
কিছু মানুষের আগ্রহে চলতি শতাব্দীতে দ্বীপটি আবার মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে উঠে আসে এবং ধীরে ধীরে তা পর্যটকদের কাছেও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালের ২২ এপ্রিল পর্যটকদের জন্যে দ্বীপটি খুলে দেয়া হয়। এখন দ্বীপটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওয়ার জন্যে ইউনেস্কোর বিবেচনায় রয়েছে।
১৮৮৭ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কয়লা খনি থাকাকালীন দ্বীপটিতে মানববসতি ছিলো। দ্বীপটির প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রন ছিলো নাগাসাকির শহরের।
জাপানের শিল্পোন্নয়নের সময় কয়লা খনির ব্যাপক চাহিদা ছিলো। ১৮৯০ সালে মিৎসুবিশি দ্বীপটি কিনে নেয় এবং তার প্রকল্পের কাজ শুরু করে। তাদের সমুদ্রতলদেশীয় খনি থেকে কয়লা আহরণের পরিকল্পনা ছিলো। খনির জন্যে শ্রমিক আনা হয় জাপানি উপনিবেশ গুলো থেকে। সেখানেই জাপানের সর্বপ্রথম সুউচ্চ কংক্রিট অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়, উচ্চতা ছিলো ৯তলা। এটি নির্মিত হয় ১৯১৬ সালে। কোম্পানির কর্মীরা এখানে থাকতেন। তাইফুন থেকে রক্ষা পেতে চারপাশে নির্মাণ করা হয় উঁচু প্রাচীর। ১৯৩০ এর দশকে অনেক চীনা ও কোরিয়ানকে বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে এখানে আনা হয়েছিলো।
১৯৬০ এর দশকে পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে ধীরে ধীরে জাপান থেকে কয়লার ব্যবহার কমতে থাকে। হাশিমা’রও একই অবস্থা। মিৎসুবিশি ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে কয়লা খনি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়, আজকে দ্বীপটি জনশূন্য। ৩৫ বছর পরিত্যাক্ত থাকার পর ২০০৯ সালের ২২ এপ্রিল আবার তাতে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়।