• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো আজ ঢাকায় আসছেন

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে দু’দিনের সফরে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। এই সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু-সহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মিয়ানমার সফর শেষে বাংলাদেশে আসছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলবেন তারা।
    সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত ১৩ থেকে ১৬ মে টোকিও সফর করেন। সে সময় জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। সে অনুযায়ী  এ সফর হচ্ছে। এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় জাপানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মানবিক সহায়তা দেবে দেশটি। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য জাপান রকার মানবিক সহায়তা হিসেবে ২ কোটি ৩৬ লাখ ডলারও দিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাপান বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলেও জানিয়েছে। তার সফরের আগে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপানের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
    কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জাপান আগামী ২০২৫ সালের জন্য ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজন করতে চায়। এ কারণে বাংলাদেশের সমর্থন পেতে চায় দেশটি। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ মেয়াদে জাতিসংঘের  নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হতে চায় জাপান। এটা নিয়েও জাপান বাংলাদেশের সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়ে আসছে। ঢাকা সফরের সময় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
    বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্বস্ত বন্ধু  জাপান। ঢাকা-টোকিওর মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্কও রয়েছে। জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও  জোরদার হবে বলে আশা করছে উভয়পক্ষ।
    এদিকে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড দুই দিনের সফরে বুধবার ঢাকা আসছেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমনওয়েলথভুক্ত তিন দেশ সফরের অংশ হিসেবে তিনি শ্রীলঙ্কা ও ব্রুনাই’তেও যাবেন। প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন।

    আগামীকালও প্রাণঘাতী তাপমাত্রার সম্ভাবনা

    সমগ্র জাপানে, আজও তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার মাঝে কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। আগামীকালও প্রাণঘাতী তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    আজ দিনের বেলায়, গিফু, হিয়োগো এবং ওকাইয়ামা জেলার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি এবং কিয়োতো, নাগোয়া ও ওসাকার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

    আগামীকাল, নাগোয়া ও কিয়োতো শহর এবং সাইতামা জেলার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে বিপুল সংখ্যক লোকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এঁদের কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে।

    বিশেষজ্ঞরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার, প্রচুর পানি পান এবং দিনের বেলা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে লোকজনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

    ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সমতায় বাংলাদেশ

    তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারিয়ে সমতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫৯ রান সংগ্রহ করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
    এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম আউট হন। এরপর বাংলাদেশের ৪৮ রানে আউট হন সৌম্য সরকার। একে একে লিটন, মুশফিক, সৌম্য ফিরে গেলেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন তামিম। পরে সাকিবকে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেন তিনি। একপর্যায়ে জমে উঠে তাদের জুটি। দলীয় ১৩৮ রানের রাসেলের শিকার বনে ফেরেন তামিম। ফেরার আগে ৪৪ বলে ৬ চারের বিপরীতে ৪ ছক্কায় ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি ড্যাশিং ওপেনারের ৬ষ্ঠ ফিফটি।
    তামিম ফিরলেও থেকে যান সাকিব। ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে হার মানেন তিনি। কিমো পলের বলে মারতে গিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এর আগে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৭ম ফিফটি। ৩৮ বলে ৬০ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলার পথে তিনি হাঁকান ৯ চার ও ১ ছক্কা। শেষ পর্যন্ত ১৭১ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৩ ও আরিফুল হক ১ রানে অপরাজিত থাকেন।
    বাংলাদেশের দেওয়া ১৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরবোর্ডে ৫ রান তুলতেই উইকেট হারিয়ে ফেলে। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে এভিন লুইসকে ফিরিয়ে দেন টাইগার পেস সেনসেশন মোস্তাফিজুর রহমান।
    এর পর বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১০ বলে ১৭ রান করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।  ৩ বলে ১০ রান করা মারলন স্যামুয়েলসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩ উইকেটে ৪৮। এর পর রুবেলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১১ বলে ৫ রান করা রামদিন। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪ উইকেটে ৫৮। বাংলাদেশকে পঞ্চম সাফল্য এনে দেন নাজমুল ইসলাম অপু। দলীয় ১১৬ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার এন্ডু ফ্লেচারকে সাকিবের ক্যাচে পরিনত করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ফ্লেচার  ৩৮ বলে ৪৩ রান সংগ্রহ করেন। সাকিবের বল ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে গিয়েছিলেন কার্লোস ব্রাফেট। কিন্তু লিটনের দারুণ ক্যাচে ১১ রানে সাজঘরে ফেরেন ব্রাফেট। তার আউটের সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৬ উইকেটে ১৩১। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫৯ রান সংগ্রহ করতে পারে। ফলে বাংলাদেশ ১২ রানে জয় পায়।

    দেশজুড়ে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট, নেপথ্যে শ্রমিক ফেডারেশন

    রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় চলমান ছাত্র বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিনে ঢাকাসহ বেশিরভাগ জেলায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

    সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। সংগঠনটির সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

    পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সরাসরি ধর্মঘটের কথা স্বীকার করছেন না। তারা বলছেন, আন্দোলনরত ছাত্ররা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা বাস চালাচ্ছেন না।

    জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বেনাপোলসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

    এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী যুগান্তরকে বলেন, আমরা কাউকে গাড়ি বন্ধ করতে বলিনি। অনেক মালিকই নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালাচ্ছেন না। তবে কোনো ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়নি।

    প্রসঙ্গত, রোববার দুপুরে কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে নৌমন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানান।

    এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার পর সোমবার রাস্তায় নেমে আসেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

    এর পর গত ছয় দিন ধরে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছেন।

    শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে পদত্যাগ করবেন না বলে তিনি জানান।

    এর পর বিকাল থেকে মিরপুরে পরিবহন শ্রমিকদের মারমুখী অবস্থান দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশের সঙ্গে মিলে শ্রমিকরা তাদের পিটিয়েছেন।

    এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস মাঝপথে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে বলে খবর পাওয়া গেছে।

    পরে শুক্রবার ভোর থেকে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাসে বাধা দেন শ্রমিকরা। তারা যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাসগুলোকে সড়কের পাশে এলোপাতাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন।

    শ্রমিকদের বাধার মুখে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর প্রায় সব রুটেই বাস চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

    বাস চলাচলে বাধার বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম রসুলের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার সময় কুষ্টিয়া হয়ে ঢাকায় আসার পথে শ্রমিকরা আমাদের বাস ফেরত পাঠিয়ে দেন।

    গোলাম রসুল অভিযোগ করে বলেন, নিয়মানুযায়ী ধর্মঘট ডাকতে হলে মালিক-শ্রমিকরা একসঙ্গে বসে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু আমাদের কিছু বলা হয়নি। তাই আমরা যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করেছি। এখন যাত্রীদের নিতে বাস চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

    এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে শুক্রবার বাদ জুমা পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।

    বাস চলাচল বন্ধ রেখে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে শুক্রবার সকাল থেকে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্ষন্ত এ ধর্মঘট চলবে।

    পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, গত পাঁচ দিন ধরে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীতে তিন শতাধিক বাস ভাঙচুর ও অন্তত নয়টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ কারণে রাজধানীতে বাস চলাচল সীমিত ছিল।

    কিন্তু শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে শুক্রবার ভোর থেকে সারা দেশে একযোগে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন।

    আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি রোড, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জিয়া উদ্যান, শ্যামলী, কল্যাণপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১, ১০ ও ১১, পল্লবী, কালশী, মগবাজার, প্রগতি সরণি, তেজগাঁও, নাবিস্কো, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, বিমানবন্দর সড়ক, খিলক্ষেত, উত্তরা ও আবদুল্লাহপুরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে তেমন সাধারণ যান চলাচল চোখে পড়েনি।

    তবে রাজধানীর কিছু সড়কে বিআরটিসি ও ট্রাস্ট পরিবহনের বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এ দুই পরিবহনেরও খুব কমসংখ্যক বাস চলাচল করছে।

    অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর কোথাও একটি বাসের দেখা মিললে তাতে ওঠার জন্য শত শত যাত্রী হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কিন্তু পাঁচ-ছয়জনের বেশি যাত্রী কোনো বাসেই উঠতে পারছেন না। নারী যাত্রীরা এগিয়ে গেলেও বাসের ধারেকাছেও ভিড়তে পারছেন না তারা।

    সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুরজুড়ে প্রধান সড়কগুলোতে এলোপাতাড়ি বাস-মিনিবাস ফেলে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। কোনো গাড়ি চলাচল করলে তা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।

    মিরপুর সাড়ে ১১-তে এক দল শ্রমিক যুগান্তরকে জানায়, পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে। তারা কোনো গাড়ি চলতে দিচ্ছেন না।

    আব্দুল্লাহ নামে এক শ্রমিক যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে।

    মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের দৌঁড়ে প্রথম মুসলিম নারী

    একটি ব্যতিক্রমী দৃশ্য- স্যামন গোলাপি হিজাব পড়া একজন মহিলা ম্যাসাচুসেটসের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জায়গায় দাঁড়িয়ে রাস্তায় চলাচলরত গাড়িতে বিভিন্ন মানুষের কাছে তাকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত করার জন্য ভোট চাইছেন।
    তাহেরা আমাতুল-ওয়াদুদ নামের এই নারী প্রার্থী একজন পথচারীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন, বলছেন আপনি কেমন আছেন। বিরক্ত হয়ে অনেক গাড়ির চালক দীর্ঘ সময় হর্ন বাজাচ্ছে। কৌতূহলী হয়ে চালকরা জানালা দিয়ে মাথা বের করে খেয়াল করছে। কিছু চালক খেয়াল না করে চলে যাচ্ছে।
    আমাতুল-ওয়াদুদ সাত সন্তানের জননী, একজন আইনজীবী, একজন সমাজ কর্মী এবং একজন মুসলমান। তিনি সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং রোজা রাখেন।
    তার বয়স ৪৪ বছর। জীবনে অনেক বড় বাধার সম্মুখীন হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনী এলাকার বেশির ভাগ মানুষই শ্বেতাঙ্গ, এখানে খ্রিষ্টান ক্যাথলিক অধ্যুষিত এলাকায় প্রথম মুসলিম কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হওয়ার একটি বড় বাধা।
    কিন্তু এটি তার জন্য কোনো ধর্মের বিষয় না, এটি নীতি নির্ধারণের বিষয়। এটি ভালো প্রতিনিধিত্বের বিষয় এবং পশ্চিম ম্যাসাচুসেটস এলাকায় জীবনমান উন্নয়নের বিষয়। এই এলাকায় অন্যতম সমস্যা বেকারত্ব।
    এ ব্যাপারে তিনি এএফপিকে বলেন, আমি সবসময় ধর্মীয় কথা বলি না কারণ আমি ধর্মীয় আলোকে নেতৃত্ব করতে চাই না।
    এবছর কংগ্রেস সদস্যের দৌড়ে সদা হাসি মুখে থাকা আইনজীবী আমাতুল-ওয়াদুদ নারীর জাগরণের অংশ এবং তিনি একজন প্রগতিশীল ডেমোক্রেট ।যিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধী মনোভাবে উদ্বুদ্ধ।
    মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজিনটেটিভে প্রথম মুসলিম এই নারী মিনেসোটার কেইথ এলিসনের ১২ বছর পরে একজন মুসলিম নারী হিসেবে নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
    যদি তিনি জয়ী হন তাহলে তিনি হবেন তার জেলার এবং আফ্রিকান আমেরিকান প্রথম নারী কংগ্রেসম্যান। বাসস

    জাপান-যুক্তরাষ্ট্র নতুন বাণিজ্য আলোচনা

    জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন দফার একটি বাণিজ্য আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করে নিয়েছে। আগামী মাসের ৯ তারিখে ওয়াশিংটনে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

    আলোচনায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন জাপানের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন মন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগি এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার।

    গত সপ্তাহে সিনেটের এক শুনানিতে মি: লাইটহাইজার দ্বিপক্ষীয় একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে জাপানের সাথে আলোচনা শুরুর প্রবল ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। ওয়াশিংটন আরও বেশী মার্কিন গাড়ি ও খামার পণ্য কেনার জন্য জাপানের কাছে জানানো দাবী জোরদার করে নিতে পারে বলে জাপানি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন।

    ছাত্র বিক্ষোভে অচল রাজধানী

    বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী। দিনভর অচল ঢাকা। ফুটপাথে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক বাসচালকের ফাঁসি দাবি এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে তারা। গতকাল মঙ্গলবার টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এতে কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। কোনো কোনো স্থানে বিক্ষুব্ধদের দমাতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। তাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
    সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভে ঢাকার প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র মতিঝিল, ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট, কাকরাইল, তেজগাঁও, নাবিস্কো, বাড্ডা, রামপুরা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর-২, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, খিলক্ষেত, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও শান্তিনগরজুড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
    বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, মতিঝিল, কাকরাইল ও বাড্ডায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে উত্তরার জসীম উদ্দীন সড়কে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা এনা পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া এখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকায় লোকজনকে ভয়ে দিগি¦দিক ছুটতে দেখা যায়।
    অবরোধের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মোড় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় পুরো শহরের পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাতে পুরো রাজধানীই কার্যত অচল হয়ে যায়। দুপুরের আগেই পুরো রাজধানী থেকে সব ধরনের বাস উধাও হয়ে যায়। একপর্যায়ে গণপরিবহন সঙ্কটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন রাজধানীবাসী।
    এদিকে, ৯ দফা দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। জড়িত দোষীদের বিচার হবে, শাস্তিও হবে।
    বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে যোগ দেয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে এ অবরোধ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর একে একে বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর সড়ক, ফার্মগেট, মতিঝিল, কাকরাইল, রামপুরা এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা যতই বাড়ে, শিক্ষার্থীদের অবরোধের স্থানও ততই বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভে প্রথমে উত্তাল এবং পরে অচল হয়ে পড়ে গোটা রাজধানী।
    ধানমন্ডি
    বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজসহ ধানমন্ডি ও আশপাশের কয়েকটি কলেজের শত শত শিক্ষার্থী রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে। এতে আশপাশের সব এলাকায় যানচলাচল পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। এ সময় হিমাচল পরিবহনের একটি বাস সামনে যেতে চাইলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেটিতে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
    আন্দোলনকারী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা তালুকদার বলেন, প্রতিদিনই গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে অথচ চালকদের কোনো বিচার হচ্ছে না। আমরা অভিযুক্ত চালকদের যথাযথ শাস্তিসহ নিহত দুইজনের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
    ডিএমপির রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সায়েন্স ল্যাবরেটরির রাস্তাটি রাজধানীর একটি সেন্ট্রাল রাস্তা। এটি বন্ধ করে দিলে আশপাশের সব সড়ক অচল হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে মেনে নেয়নি। পরে বেলা আড়াইটার দিকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
    রামপুরা
    রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা হাতিরঝিল সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে। এ ছাড়া রামপুরা ব্রিজে রাজারবাগ এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং শান্তিনগর মোড়ে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু হেনা বলেন, প্রতিদিনই চাকার নিচে পিষ্ট করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। অথচ এর কোনো বিচার হয় না। আমরা ঘাতক চালকদের ফাঁসি দাবি করছি।
    মতিঝিল
    দুপুর ১২টার দিকে নটরডেম কলেজের প্রায় পাঁচ শাতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের সামনের সড়ক ও শাপলা চত্বর মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় যাত্রাবাড়ী, পল্টন, বিজয়নগর এবং শাহবাগ থেকে মতিঝিলে আসা ও যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘বিচার চাই’ ‘বিচার চাই’ বলে সেøাগান দেয়। এ সময় একটি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
    মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, নটরডেম কলেজের সামনের সড়কে ও শাপলা চত্বর মোড়ে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় পুরো এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদেরকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় একটি বাস ব্রেক ফেল করে মধুমিতা সিনেমা হলের বারান্দায় উঠে গেলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন আহত হয়।
    মিরপুর
    সকাল ১০টা থেকে মিরপুর কমার্স কলেজসহ আশপাশের বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। সাড়ে ১০টা থেকে তারা ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিছু বাস যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের তাড়ার মুখে তারা গতিপথ পরিবর্তন করে ভিন্ন রাস্তায় চলে যায়। তবে স্কুলগামী বাস ও শিক্ষার্থী বহনকারী প্রাইভেটকারগুলোকে যেতে দেয়া হয়।
    সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে মিরপুর-১, ২, ১০ নম্বর গোল চত্বর, কাজীপাড়া ও ১১ নম্বর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পুরো এলাকা স্থবির হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, সরকার জবাব চাই’, ‘আমার বোন মরল কেন, সরকার জবাব চাই’ এ জাতীয় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে আরো শিক্ষার্থী এসে এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে তারা দৌড়ে গিয়ে আশপাশের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়।
    মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির জানান, শিক্ষার্থীরা সনি সিনেমা হলের সামনে ও আশপাশের কয়েকটি সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তবে কোনো ধরনের ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
    তেজগাঁও
    সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফার্মগেট সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিজ্ঞান কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আশপাশের সবগুলো সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র আলী আহসান বলেন, রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটলেও সরকারের টনক নড়ছে না। আমরা অন্য কিছু চাই না, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হোক।
    বিক্ষোভকালে তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি জানায়। এর মধ্যে রয়েছে- শাজাহান খানকে সংসদীয় কমিটি, মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন ও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পেশাদার লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, বিগত দিনের সব দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় ওভারব্রিজ, সকল প্রকার দলীয় আচরণ ত্যাগ করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা। এদিকে, তেজগাঁও নাবিস্কোর সামনে মানববন্ধন করেন সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
    উত্তরা
    সকালের দিকে শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যারা শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে উত্তরাগামী বিভিন্ন বাসে তুলে দেয়। কিন্তু সাড়ে ১০টা বাজতে না বাজতেই রমিজ উদ্দিন কলেজসহ আশপাশের অন্তত ১০টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্রোতের মতো আসতে থাকে। পুলিশ জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে এক দফা ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়।
    সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সকাল থেকেই উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হতে শুরু করে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, টঙ্গী সরকারি কলেজ, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করতে চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের বাধা দেয়। দুপুরের দিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ঢল নামলে তাদের আর দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জসিমউদ্দিন রোড থেকে র‌্যাব-১ কার্যালয় পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে বিক্ষোভ করে ও প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় বুশরা ও এনা পরিবহনের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। বেলা সাড়ে ৩টায় উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ে বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচটি বাস এবং একটি পিকআপ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাসেল সিকদার জানান, জসীম উদ্দীন রোডে এনা ও বুশরা পরিবহনের দুটি বাসে শিক্ষার্থীদের আগুন দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়।
    যাত্রাবাড়ী
    দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানবন্ধন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি ফেরার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে তিন-চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
    যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
    গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তি
    এদিকে, বিক্ষোভের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। নিত্য কাজে বেরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহন না পেয়ে হেঁটেই কেউ কেউ পথ ধরেন নিজ গন্তব্যের। গতকাল রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক, কুড়িল, বিশ্বরোড, মিরপুর, মতিঝিল, উত্তরা ও ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনভোগান্তির এমন চিত্রই চোখে পড়েছে। গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সকাল থেকেই গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর মানুষ।
    সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কে বিভিন্ন স্টপেজে গণপরিবহনের অপেক্ষায় রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ভোগান্তির অন্ত নেই। সকালে অফিস সময়ে যানবাহন সঙ্কট দাঁড়ায় চরমে। অনেকে গন্তব্যে যেতে হেঁটে কিংবা উচ্চ ভাড়ায় রিকশায় চড়ে রওনা দেন। তবে মাঝে মধ্যে দুয়েকটা বাস এলেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এর মধ্যে কেউ কেউ উঠতে পারলেও বেশির ভাগই ‘গাড়ি ওঠার প্রতিযোগিতা’য় রীতিমতো হিমশিম খান, যা দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
    জানা গেছে, রাজধানীর অনেক এলাকার বাসিন্দারা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাননি। ভোগান্তি এবং রাস্তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন।
    আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি উত্তরা থেকে রামপুরা যাবো। কিন্তু এক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করে শেষে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছি।
    ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ বলেন, হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে কুর্মিটোলার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সড়ক ফাঁকা হয়ে যায়।
    উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হয়। আহত হয় আরো ১০/১২ জন। নিহতরা হলো- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা টানা তিন দিন ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

    জাপানের সমুদ্র উপকূলে দাবদাহ অব্যাহত    

    জাপান সাগরের উপকূলবর্তী জনগোষ্ঠী দাবদাহের মধ্যে সোমবার আরেকটি দিন অতিবাহিত করেছে।

    আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে পর্বতমালার উপর দিয়ে বয়ে চলা দক্ষিণের বায়ু জাপান সাগরের বিভিন্ন এলাকায় তপ্ত বাতাস নিয়ে আসছে।

    আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা এটাকে “বিস্ময়কর ফন ঘটনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এতে ইশিকাওয়া, গিফু, নি’গাতা এবং ফুকুই জেলার বেশ কিছু এলাকার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপর উঠে গেছে।

    মঙ্গলবারও এই দাবদাহ অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা হিট স্ট্রোক এড়ানোর জন্য লোকজনকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করার পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করার অনুরোধ জানাচ্ছেন।

    রাজশাহী ও বরিশালের ফল প্রত্যাখ্যান বিএনপির, বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ

    রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে আগামী বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
    মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
    তিনি বলেন, ‘জনগণ তিন সিটি নির্বাচনে সরকারি দলের সীমাহীন ভোট কারচুপি ও জবরদখল দেখেছে। এই সরকার এবং নির্বাচন কমশিন আবারও প্রমাণ করেছে, তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না’।
    মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা রাজশাহী ও বরিশালের ভোটের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ, এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি। ভোট চুরি নয়, ডাকাতি প্রতিফলিত হয়েছে। সেখানে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। ভোট কারচুপির প্রতিবাদে আগামী বৃহস্পতিবার সারাদেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ করা হবে।’
    এ সময় তিনি দাবি করেন, ‘সিলেটেও ব্যাপক ভোট কারচুপি হয়েছে। তা না হলে আরিফুল হক লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতেন’।
    সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘গতকাল (সোমবার) রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট এই ৩টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের নাটক শেষ হলো। এই নির্বাচনে আমাদের কথাই সত্য প্রমাণিত হলো- শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। প্রমাণিত হলো এই অযোগ্য নির্বাচন কমিশিনের পরিচালনায় কোন নির্বাচনেই জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়’।
    গাজীপুর ও খুলনার মতো এই তিনটি সিটি কর্পোরেশনে ভোট চুরি বা কারচুপি নয়, ভোট ডাকাতির মহাউৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিপক্ষ এই অবৈধ সরকারের প্রশাসন এবং অযোগ্য নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন পুলিশের মতোই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। শুধু নির্বাচনের দিনে নয়, সিডিউল ঘোষণার দিন থেকেই পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড মাঠে নেমেছে’।
    নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই আমরা বলে এসেছি- এই কমিশন আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট এবং অযোগ্য। তারা আচরণ বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে পুলিশকে বাধ্য করতে পারেনি’।
    তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করছে। লক্ষ্য একটি- একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ভিন্নরূপে প্রতিষ্ঠা করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা। আওয়ামী লীগ এখন একটি গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না বলেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে তারা জাতীয় সংসদের নির্বাচন করতে চায়। ২০১৪ সালের মতোই একতরফা নির্বাচন করার নীল নকশা করছে। জনগণ তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দিবে না’।
    তিনি আরও বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলীয় সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে। বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সরকারকে আহ্বান জানাবো কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে আামদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে’।
    সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসায় স্টেম কোষ ব্যবহারের পরীক্ষা শীঘ্রই আরম্ভ

    কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসার জন্য কৃত্রিমভাবে তৈরি বিভিন্ন কোষ উৎপাদনে সক্ষম স্টেম কোষ বা আইপিএস কোষ ব্যবহারের মাধ্যমে শীঘ্রই রোগীদের উপর পরীক্ষা আরম্ভ করবে।

    পারকিনসন্স হলো এমন এক রোগ যা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এবং এতে মস্তিষ্কের ডোপামিন উৎপন্নকারী কোষ কমে যাওয়ার ফলে স্নায়বিক কার্যকলাপের ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটে।

    জাপানে এই স্নায়ুরোগে আক্রান্ত প্রায় দেড় লক্ষ রোগী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই রোগের পরিপূর্ণ কোন চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি।

    কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় জাপানের আইপিএস গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অধ্যাপক রিয়োসুকে তাকাহাশি এবং কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপিএস কোষ গবেষণা ও প্রয়োগ কেন্দ্রের অধ্যাপক জুন তাকাহাশির নেতৃত্বাধীন গবেষক দল রোগীদের উপর পরীক্ষা চালানোর জন্য সরকারি অনুমোদন লাভ করেছেন।

    পরীক্ষায়, আইপিএস কোষের মাধ্যমে উৎপন্ন কোষগুলোকে রোগীদের মস্তিস্কে স্থাপন করা হবে। কোষগুলো তখন ডোপামিন-উৎপন্নকারী স্নায়ু কোষে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    গবেষক দলটি আশা করছে এই চিকিৎসাসেবা একসময় বৃহৎ পরিসরে ব্যবহৃত হবে এবং জাপানের স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থায় তা অন্তর্ভুক্ত হবে।

    জাপানে চোখের রেটিনার রোগের চিকিৎসায় আইপিএস কোষের ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের উপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এছাড়া সরকার এই কোষ ব্যবহারের মাধ্যমে হৃদরোগ চিকিৎসায় পরীক্ষা চালানোর অনুমোদন দিয়েছে।

    জাপানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারীর মৃত্যু

    বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী মিয়াকো চিইয়ো ১১৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার টোকিওতে তিনি মারা যান। মিয়াকো চিইয়ো নামের জাপানিজ এই বৃদ্ধা ১৯০১ সালের ২২ মে জন্মগ্রহণ করেন। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের ও বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন। খবর সিএনএনের।
    ২০১৫ সালের এপ্রিলে জাপানের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে মিসাও ওকাওয়া ১১৭ বছর বয়সে মারা যান। ওকাওয়া ১৮৯৮ সালের ৫ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তার মৃত্যুর পর চিইয়ো ছিলেন জাপান ও বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।
    গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস চিইয়োকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ও সবচেয়ে বয়স্ক নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরপরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
    এক বিবৃতিতে জানা যায়, ১১৭ বছর বয়সী চিইয়ো ধৈর্যশীল ও দয়ালু ছিলেন। এছাড়া পরিবারের সদস্যরা তাকে গল্পবাজ ‘দেবী’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জাপানিজ খাবার সুশি ও ইল মাছ খেতে পছন্দ করতেন। চিইয়ো ক্যালিওগ্রাফি করতেও ভালোবাসতেন।
    বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষও জাপানি নাগরিক। মাসাজো নোনাকা নামের ওই ব্যক্তি ২৫ জুলাই ১১৩ বছরে পা দিয়েছেন।

    ৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

    তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। শনিবার রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় মাশরাফি বাহিনী। নয় বছর পর এটি বিদেশের মাটিতে প্রথম কোনও ওয়ানডে সিরিজ জয় বাংলাদেশের। শুরুতে ব্যাট করে ছয় উইকেটে ৩০১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমেছে ছয় উইকেটে ২৮৩ রান করে।
    বাংলাদেশের ছূঁড়ে দেয়া ৩০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ক্রিস গেইল, শাই হোপ ও রোভম্যান পাওয়েল তিনজন হাফসেঞ্চুরি করেন। তাতেও কাজের কাজ হয়নি। এভিন লুইস ও ক্রিস গেইলের ওপেনিং জুটি ভাঙে ৫৩ রানে। এ সময় মাশরাফির বলে লুইস আউট হন ৩৩ বল থেকে মাত্র ১৩ রান করে। এরপর গেইল-হোপের ‍জুটি ভাঙে ১০৫ রানে। এ সময় গেইল ফিরেন রুবেলের বলে। তার আগেই ৬৬ বলে ছয়টি চার ও পাঁচটি ছক্কার মারে করেন গেইল করেন ৭৩ রান।
    এরপর হেটমায়ের-হোপের জুটি দলকে নিয়ে যান ১৭২ রান পর্যন্ত। ৩০ রান করা হেটমায়ের এ সময় মাশরাফির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। এর পরপরই কাইরন পাওয়েল রান আউট হয়ে যান। পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রোভম্যান পাওয়েল ও শাই হোপ দুর্দান্ত ব্যাট করলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে দলকে নিয়ে যেতে পারেননি। ৯৪ বল থেকে ৫টি চারের মারে ৬৪ রান করেন হোপ। অপরদিকে পাওয়েল ৪১ বল থেকে পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কার মারে ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন পাওয়েল। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি দুটি উইকেট নেন। এছাড়া রুবেল, মিরাজ ও মুস্তাফিজ একটি করে উইকেট নেন।
    এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম-মাহমুদউল্লাহর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে শেষ ও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ছয় উইকেটে ৩০১ রান করেছে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি করেছেন তামিম এবং আর ৪৯ বলে ৬৭ রানের হার নামা এক ইনিংস খেলেছেন রিয়াদ।
    তামিম ও বিজয় বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমে সতর্ক সূচনা করেও বেশিদূর যেতে পারেননি। দশম ওভারের তৃতীয় বলে এসে দলীয় ৩৫ রানে আউট হয়ে যান বিজয়। হোল্ডারের বলে আউট হওয়ার আগে ৩১ বল থেকে মাত্র ১০ রান করেছেন তিনি।
    এরপর তামিম-সাকিব জুটি বাঁধেন। দ্বিতীয় উইকেটে এ দুজন যোগ করেন ৮১ রান। সেই সুবাদে মন্থর সূচনা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২৫ ওভারে ১১ রান করে বড় স্কোরের আভাস দিচ্ছিল। ঠিক এমন সময়ই ২৬তম ওভারে হতাশ করেন সাকিব। দলীয় ১১৬ রানে নার্সের বলে ‍পলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে ৪৪ বল থেকে তিনটি চারের মারে সাকিব করেছেন ৩৭ রান।
    সাকিব আউট হওয়ার পর তামিমের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন মুশফিকুর রহিম। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ৩৬ রান যোগ করেন। এরপর ১২ রান করে মুশফিক আউট হয়ে যান। পরে তামিমের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন মাহমুদউল্লাহ। তিনজন সঙ্গী একপাশ থেকে বিদায় নিলেও সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছেড়েছেন তামিম। আউট হওয়ার আগে ১০৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি।
    ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে করেছিলেন হাফসেঞ্চুরি। এরপর দ্বিতীয়টিতে ১৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার তৃতীয় ম্যাচেও সেঞ্চুরি করলেন এই মারকুটে ওপেনার। এদিন ১২৪ বল থেকে সাতটি চার ও দুটি ছক্কার মারে তামিম করেন ১০৩ রান। এটি ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের ১১তম সেঞ্চুরি। তামিম যখন আউট হন তখন ৩৮.৫ ওভারে বাংলাদেশের দলীয় ২০০ রান।
    এরপর পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাঁধেন ও মাশরাফি। পঞ্চম উইকেটে এই দুজন করেছেন আরও ৫৩ রান। দলীয় ২৫৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন মাশরাফি। আউট হওয়ার আগে ২৫ বল থেকে চারটি চার ও একটি ছক্কার মারে করেন ৩৬ রান। এরপর মাঠে নেমে ৯ বল থেকে ১২ রান করে আউট হন সাব্বির। সবশেষ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে ৩০১ রান সংগ্রহ করে মাঠ ছাড়েন রিয়াদ। ৪৯ বল থেকে পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কার মারে ৬৭ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন রিয়াদ। আর সৈকত অপরাজিত থাকেন ৫ বল থেকে ১১ রান নিয়ে।
    ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে অ্যাশলে নার্স ও জেসন হোল্ডার দুটি করে উইকেট নেন।
    চলতি সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। এখন বাংলাদেশ দল স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে। আগামী ১ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে হবে এসব ম্যাচ।

    যে ঘটনা পৃথিবীতে একবারই ঘটবে

    পৃথিবী সৃষ্টির শুরু হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত কত শত সহস্র ঘটনা ঘটেছে তার হিসাব কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হাদিস শরিফের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী এমন একটি ঘটনার কথা জানা যায়, যা সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি আ.-এর আগমনের শুভ সঙ্কেত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ পর্যায়ে স্বভাবতই মনের কোণে উঁকি মেরে উঠে একটি প্রশ্ন যে, ঘটনাটি আসলে কি? হাদিস শরিফের আলোকে এর উত্তর হচ্ছে- ঘটনাটি হলো ‘সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ’। বছরে সাধারণত দু’বার সূর্যগ্রহণ এবং দু’বার চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু এ পর্যন্ত একই মাসে ১৫ দিনের মধ্যে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনাটি পৃথিবীতে মাত্র একবারই ঘটবে, দ্বিতীয়বার নয়। এই ঘটনাটি ঘটবে রমজান মাসের এক তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। যে বছর রমজান মাসে সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ হবে, সে বছরই সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি আ.-এর আবির্ভাব হবে। হাদিস শরিফে এ কথারও উল্লেখ আছে যে, মহাবিশ্বের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এরকম সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা মাত্র একটি বছরই ঘটবে। আসুন, এবার হাদিস শরিফের ভাষ্যে নজর দেয়া যাক। (১) আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদি গ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠায় আল্লামা মুত্তাকি আল হিন্দি রহ. একটি হাদিস উদ্ধৃত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে সূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটবে এবং রমজান মসের শেষের দিকে চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটবে।
    (২) আল কাওলুল মুখতাছার গ্রন্থের ৫৩ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস উল্লেখ রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘রমজান মাসে দু’টি গ্রহণের ঘটনা অনুষ্ঠিত হবে।’ (৩) ইমামুল আকবার আলী বিন ওমর আল দারাকুতনির সুনানে দারাকুতনিতে একটি হাদিস সঙ্কলিত হয়েছে। মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আল হানাফিয়্যাহ রহ. বলেছেন, সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি আ.-এর আবির্ভাবের দু’টি নিদর্শন রয়েছে, যা আকাশমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টির পর থেকে কখনো দৃষ্টিগোচর হয়নি। নিদর্শন দু’টি হলো- চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ রমজান মাসেই ঘটবে। (৪) ইমাম রাব্বানি রহ.-এর রাব্বানির পত্রাবলির ৩৮০ নম্বর পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- যে বছর রমজান মাসের প্রথম দিকে সূর্যগ্রহণ ঘটবে এবং রমজান মাসের ১৪ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে। (৫) ইমাম কুরতবি রহ. রচিত কিতাব মুখতাছার তাজকিয়াহ গ্রন্থের ৪৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি আ.-এর আগমনের পূর্বে দু’টি গ্রহণ রমজান মাসেই ঘটবে। (৯) নুয়ায়েম ইবনে হাম্মাদ রহ.-এর রচিত কিতাবুল ফিতান গ্রন্থের সতর্কতামূলক বাণী উল্লেখ করা হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে, তখন এক বছরের খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে রাখবে।
    উপর্যুক্ত আলোচনার নিরিখে জানা গেল যে এমন একটি বছর হবে, যে বছর রমজান মাসে ১৫ দিনের মধ্যে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটবে। সে বছরটা যে কবে হবে, তা পরবর্তী গবেষণায় জানা যাবে’, ওয়াছ ছালাম।

    জাপানে স্কুল বন্ধ, তাপদাহে নিহত ৮০

    জাপানে তাপদাহ চলতে থাকায় স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটি নতুন করে বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহে স্কুলগুলো খোলা হয়েছিল।
    মঙ্গলবার দেশটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইউশিহিডে ‍সুগা বলেন, ‘তাপদাহ চলছেই, আমাদের শিশুদের রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন একটি বড় ইস্যু।’
    এদিকে আজও তাপমাত্র ৪০ ডিগ্রির ঘরে ছিল বিভিন্ন শহরে। এতে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়ে ৮০ জনে পৌঁছেছে।
    দেশজুড়ে বিরাজমান এই প্রাণঘাতী তাপদাহকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ বলে ঘোষণা দিয়েছে আবহাওয়া সংস্থা। খবর বিবিসি’র।
    আবহাওয়া সংস্থার এক মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, জাপানের কিছু জায়গায় তাপদাহ নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত ‘’হিট স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ।  এদের বেশিরভাগই বৃদ্ধ বয়সের মানুষ।

    ব  য়া  ন : অল্পেতুষ্টির ক্ষেত্র কী?

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    আলহামদু লিল্লাহ, জুমার দিন আমরা জুমার জন্য মসজিদে আসি। সেই উপলক্ষে কিছু দ্বীনী কথা হয়।  দ্বীনী কথা, দ্বীনী আলোচনা শুধু জুমার দিনের বিষয় নয়। যে কোনো দিন, যে কোনো সময় হতে পারে। দিনে একাধিকবারও হতে পারে। কিন্তু আমাদের জীবন অনেক ব্যস্ত। তবে আফসোস, সেই ব্যস্ততার মূল বিষয় দ্বীন-ঈমান হল না। ওই চিন্তাধারা থেকেই মূলত জুমার দিনের এ আলোচনা। যেহেতু জুমার জন্য সকলে আসছেই; সেই উপলক্ষে কিছু দ্বীনী কথা হয়ে যাক। সেজন্য খুতবার আগে স্থানীয় ভাষায় কিছু দ্বীনী কথা হয়। খুতবা তো আরবী ভাষায় হওয়াটা নির্ধারিত। বাংলা এ আলোচনা জুমার নামাযের অংশ নয় এবং জুমার দিনের বিশেষ আমলও নয়। এ আমল যে কোনো দিন হতে পারে, জুমার দিনও হতে পারে। জুমার নামাযের পরেও হতে পারে। আপনাদের মনে থাকবে, যারা প্রথমদিকে এ মসজিদে জুমা পড়েছেন তখন এখানে বয়ান হত জুমার পরে, আগে না। যাই হোক, দ্বীনের কথা যেভাবেই হোক আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে কিছু না কিছু ফায়েদা হয়েই যায়।

    আমি বিভিন্ন ওযরের কারণে আসতে পারি না। আজকে এসেছি মুরব্বী অনেকদিন থেকে অসুস্থ; ডক্টর আনওয়ারুল করীম সাহেব। তার খেদমতে হাজির হতে পারি না, আপনাদের সাথেও দীর্ঘদিন সাক্ষাৎ হয় না। ভাবলাম যাই, দেখা-সাক্ষাৎ হোক। আল্লাহ কবুল করার মালিক। আল্লাহ্র কাছে মুহাব্বতের অনেক মূল্য, অনেক দাম। আমি আপনাদেরকে মুহাব্বত করি, আপনারা আমাকে মুহাব্বত করেন। এটা শুধু একটা প্রথাগত বিষয় নয়; এই মুহাব্বতটা যদি আল্লাহ্র জন্য হয় তাহলে এটাও একটা নেক আমল, গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল।

    যাইহোক, আজ আমি শুধু একটা কথা আলোচনা করব। আল্লাহ আমাকেও উপকৃত করুন আপনাদেরকেও উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। যে বিষয়টি আলোচনা করতে চাচ্ছি তা হল, মুমিনের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ গুণ ও সিফত থাকা দরকার। সেটি হল ‘অল্পেতুষ্টি’। আরবীতে বলা হয়- قناعة। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। তবে আমাদের জানতে হবে, অল্পেতুষ্টির ক্ষেত্র কী?

    অল্পেতুষ্টি মানে আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা। যা পেলাম, যদ্দুর হয়েছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট আলহামদু লিল্লাহ-আল্লাহ্র শোকর। তো এই অল্পতে তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহ্র শোকর আদায় করা- এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা গুণ। একজন মুমিনের মধ্যে এই গুণটা থাকা দরকার। কিন্তু এই অল্পেতুষ্টির ক্ষেত্রটা কী?

    এটার ক্ষেত্র হল দুনিয়া- জাগতিক বিষয়। জাগতিক যত বিষয় আছে, তাতে ‘কানাআত’ বা অল্পেতুষ্টি বাঞ্ছনীয়। অল্পেতুষ্টির বিপরীত হল, লোভ ও মোহ- বেশি থেকে বেশি উপার্জন করতে হবে, বেশি থেকে বেশি পেতে হবে। আমাকে ধন-সম্পদ বাড়াতেই হবে, আসবাব-পত্র বাড়াতেই থাকতে হবে- এমনটি বাঞ্ছনীয় নয়। যদ্দুর পেয়েছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট থাকব।

    এটা হল জাগতিক বিষয়ে। কিন্তু দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে, নেক আমলের বিষয়ে এর উল্টাটা। এখানে সামান্য একটু পেয়েই খোশ- হাঁ, আমি অনেক ইবাদত-বন্দেগী করে ফেলেছি, দ্বীন-ঈমানের অনেক মেহনত করে ফেলেছি; আর দরকার নেই, বেশি হয়ে গেছে। নাহ্, এমন নয়; বরং দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে, নেক আমলের ক্ষেত্রে, আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে হবে। জাগতিক বিষয়ে প্রতিযোগিতা নয়, অল্পেতুষ্টি। আর দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে, আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দরকার হল প্রতিযোগিতা। কত অগ্রসর হতে পারি আমি! ফরয নামাযের বাইরে, সুন্নাতে মুআক্কাদার বাইরে আমি দুই রাকাত নফল পড়ি। আচ্ছা নফল চার রাকাত পড়তে পারি কি না চেষ্টা করি। মাগরিবের পরে দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা তারপরে দুই রাকাত নফল পড়ি; সামনে থেকে চেষ্টা করি চার রাকাত পড়ার। এশার পরে দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা তারপরে বিতিরের নামায; বিতিরের আগে দুই রাকাত নফল বা চার রাকাত পড়া উত্তম এবং বেশ গুরুত্বপূর্ণ নফল নামায। অন্যান্য নফল থেকে এই নফলের অনেক গুরুত্ব। আমরা কিন্তু খেয়াল করি না। এশার পরে দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদার পরে আমরা বিতির পড়ে ফেলি। বিতিরের মূল সময় কিন্তু তাহাজ্জুদের পরে। শেষ রাতে যদি আমি জাগতে পারি; নিজের উপর ঐ আস্থা থাকে যে, ইনশাআল্লাহ জাগতে পারব তাহলে তো তাহাজ্জুদ পড়ে- চার রাকাত, আট রাকাত যেই কয় রাকাত তাহাজ্জুদ পড়া যায়, তাহাজ্জুদের পরে তিন রাকাত বিতির পড়ব। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে এশার পরেই আমি শোয়ার আগে বিতির পড়ে ফেলব। তখনও উত্তম নিয়ম হল, বিতিরের আগে দুই, চার, ছয়  যা পারি নফল পড়ে তারপরে বিতির পড়ব।

    হাদীস শরীফে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা মাগরীবের মতো বিতির পড়ো না।’ মাগরিবের আগে তো সুন্নত নেই। মাগরিবের আযান হলে একটু অপেক্ষা করে তারপরেই মাগরিবের ফরয পড়া হয়। ‘বিতির মাগরিবের মতো পড়ো না; لَا تَشَبّهُوا بِصَلَاةِ الْمَغْرِبِ বিতিরকে সালাতুল মাগরিবের সদৃশ করো না।’ সালাতুল মাগরিবের আগে যেমন কোনো নামায পড় না, তেমনি বিতিরের আগেও কোনো নামায পড়লে না, এমন করো না। বিতিরের আগে নফল পড়। দুই রাকাত পড়, তারপর তিন রাকাত তাহলে পাঁচ রাকাত হল। চার রাকাত নফল পড়, তারপর তিন রাকাত তাহলে সাত রাকাত হল- এভাবে। বিতির মানে তো বেজোড়; তিন রাকাত বেজোড়। এই বেজোড়টা যদি আগে কোনো নফল  ছাড়া হয় সেটাকে কোনো কোনো সাহাবী বলেছেন- بتر । একটা হল وِتْرٌ আরেকটা بُتْرٌ একটা শুরুতে ‘ওয়াও’ দিয়ে আরেকটা ‘বা’ দিয়ে। পড়লেন তো ‘বিতির’ হয়ে  গেল ‘বুত্র’। ب ت ر বুত্র মানে- অসম্পূর্ণ।

    عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، أَنّهُ كَانَ يَكْرَهُ أَنْ تَكُونَ ثَلَاثًا بُتْرًا، وَلَكِنْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا.

    -মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার, ইমাম বায়হাকী ৪/৭১, বর্ণনা ৫৫০৭

    তিন রাকাত পড়বে? বিতির তো তিন রাকাতই; তুমি এর আগে দুই রাকাত নফল পড়, চার রাকাত নফল পড়। তা না করে শুধু বিতির পড়লে এটা অসম্পূর্ণ। এতে বিতিরের হক আদায় হল না। বিতিরের হক আদায় হবে বিতিরের আগে যদি দুই রাকাত বা চার রাকাত নফল পড়ি। তো আমি প্রথম প্রথম বিতিরের আগে দুই রাকাত পড়ি, কিছুদিন পর চার রাকাত পড়ি- এভাবে এগুতে থাকি।

    আমার কেরাত কোনোরকম শুদ্ধ- ফরয আদায় হয়ে যায়; কিন্তু পুরো শুদ্ধ না। এত মারাত্মক ভুল হয়ত আমার কেরাতে নেই, যে কারণে নামাযই হবে না। এমন ভুল হচ্ছে না, কিন্তু এখনো অনেক ভুল আছে। ভুলে ভুলে তারতম্য আছে না? কিছু ভুল আছে কেরাত পড়ার সময় যদি সে ভুল হয় তাহলে অর্থ এমন বিগড়ায় যে, ঈমানের কথা হয়ে যায় কুফুর, হালালের কথা হয়ে যায় হারাম। নামায হবে? এত মারাত্মক ভুল হয়ত সবার নেই; কিন্তু আমাদের মধ্যে কিছু মানুষের এরকম মারাত্মক ভুল আছে; কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। কারণ আমি তো নিজের ভুলটা নিজে ধরতে পারব না। আরেকজনের কাছে শোনাতে হবে। যার তিলাওয়াত সহীহ-শুদ্ধ তার কাছে শোনাতে হবে। কিন্তু শুনাই না, নিজে ভাবি যে, আমার তিলাওয়াত ঠিক আছে। হাঁ, যদি মোটামুটি শুদ্ধ হয় তাও চলে। কিন্তু মোটামুটি শুদ্ধের উপর কেন ক্ষান্ত হব? চেষ্টা করব আরো উন্নতি করার।

    তো বলছিলাম, আমরা দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে অল্পতেই ক্ষান্ত হয়ে যাই। ব্যস! হয়ে গেছে, আর জরুরত নেই। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টায় দশবার দরূদ শরীফ পড়ি, আলহামদু লিল্লাহ; সামনে চেষ্টা করি বিশবার পড়ার, ত্রিশবার পড়ার; এই দশবারের উপর ক্ষান্ত না হই।

    এমন কিন্তু আমরা জাগতিক বিষয়ে করি না। হাদীসের শিক্ষা হল- তুমি জাগতিক বিষয়ে অল্পতে তুষ্ট হয়ে আলহামদু লিল্লাহ বল-শোকর আদায় কর; বাকি সময়টা বেশি বেশি দ্বীন-ঈমানের কাজে ব্যয় কর। তারপরও নিষেধ করা হয়নি; ঠিক আছে, জাগতিক ব্যস্ততা বাড়াও। নিষেধ করা হয়নি যে, জাগতিক ব্যস্ততা তোমাকে একেবারে এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; ছাড় আছে। কিন্তু এই ছাড়ের মানে কি ফরয নামায ছেড়ে দিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিব, ফরয রোযাতে অবহেলা করব? এই ছাড়ের মানে কি হালাল-হারামের তারতম্য রাখব না? আল্লাহ তো অনেক ছাড় দিয়েছেন। আল্লাহ্র সেই ছাড় গ্রহণ করে আমাকে আল্লাহ্র শোকর আদায় করতে হবে। সেই শোকর কীভাবে? দুনিয়ার ক্ষেত্রে অল্পেতুষ্টির পরে শোকর আর দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে শোকর আদায় করে ক্ষান্ত হব না; বরং অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে থাকব। আরো অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে থাকব। এটা হল হাদীসের শিক্ষা।

    এ বিষয়টি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। এর পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটা হাদীস, আপনারা শুনেছেন-

    انْظُرُوا إِلى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ، وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ، فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ.

    তোমাদের চেয়ে যারা গরীব-দুঃখী তাদেরকে দেখো তোমাদের চেয়ে যারা সুখী-সচ্ছল তাদেরকে নয়। এটা হবে তোমাদের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত নিআমতের শোকরগোযারির পক্ষে অধিক সহায়ক ও সম্ভাবনাপূর্ণ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৩

    জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে তুলনামূলকভাবে যার অবস্থা নি¤œমানের তার দিকে তাকাও আর দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে তোমার চেয়ে যার অবস্থা উন্নত তার দিকে তাকাও। জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে দুর্বল যে তার দিকে তাকাও, তাহলে আল্লাহ্র শোকর আদায় করতে পারবে- আমার তো যাক তাও একটা ঘর আছে আরেকজনের তো ঘর নেই, কোনোরকম একটা ছাপরা করে আছে। তোমার চাইতে জাগতিক দিক থেকে দুর্বল, বৈষয়িক দিক থেকে দুর্বল তার দিকে তাকাও যে, আল্লাহ তো তার থেকে আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। এরকম তো সবাই খুঁজে পাবে- তার চেয়ে আরো নি¤œমানের অবস্থা, দুর্বল অবস্থা- কে খুঁজে পাবে না বলুন? নিজের থেকে দুর্বলের দিকে তাকাও, তাকে একটু সাহায্য করতে পার কি না। দেখ আর আল্লাহ্র শোকর আদায় কর; আল্লাহ আমাকে ভালো রেখেছেন-

    الحَمْدُ لِلهِ الّذِي عَافَانِي مِمّا ابْتَلاَكَ بِهِ، وَفَضّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً.

    সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তোমাকে যে বিষয়ে আক্রান্ত করেছেন আমাকে তা থেকে নিরাপদ রেখেছেন আর তাঁর সব মাখলুকের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৩১

    আল্লাহ তোমাকে ভালো রেখেছেন তো আল্লাহ্র শোকর আদায় কর। আর দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে যারা তোমার চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে তাদের দিকে তাকাও- সে তাহাজ্জুদের জন্য নিয়মিত ওঠে, আমি তো মাসে একবার দুইবার জাগি, আর না হয় শুয়েই থাকি; কোনোরকম ফরযে যাই, ফজরের জামাতে শরীক হই। তো এখন আমি ফযরের নামায পড়ি, কিন্তু মসজিদের জামাতে আসি না; আমি খোশ! কেন? বলে, আরে কতজন তো ফজরের নামাযের জন্য ওঠেই না। ঐ আটটা-নয়টার দিকে যখন ওঠে, গোসল করে ফজরের কাযা আদায় করলে করল বা না করেই অফিসে রওয়ানা হয়ে গেল। যার যেই কাজ, কর্মস্থলে চলে গেল, ফযরের নামায বাদ!

    এখন বলে, সে তো ফজরের নামাযই  ছেড়ে দিল। আমি তো পড়ি, সময়মতো সূর্য ওঠার আগে আগে ফযরের নামায পড়ি। এজন্য আমি খোশ্। কেন? আমি অন্যদের দিকে তাকাচ্ছি, ঈমান আমলের দিক থেকে আমার চেয়ে যে দুর্বল অবস্থায় আছে তার দিকে তাকাচ্ছি। ও তো ফজর পড়েই না, আমি পড়ি। সেজন্য আমি খোশ! আমি চিন্তা করি না যে, আরে আমার পাশেই তো মসজিদ, মসজিদে যে দুই কাতার মুসল্লি এরা সবাই তো ফজরের নামায জামাতে পড়ছে, আমি তো জামাতে যাচ্ছি না, মসজিদে যাচ্ছি না, জামাতে পড়ছি না; আমার অবস্থা তো তাদের চেয়ে খারাপ, আমাকে আরো ভালো হতে হবে। আমি তো শুধু মাগরিবের নামায মসজিদে জামাতে পড়ি, বাকি চার ওয়াক্ত পড়ি না। অন্যরা তো দেখি পাঁচ ওয়াক্ত পড়ে, আমি তো তাদের থেকে পেছনে পড়ে আছি; আমাকে অগ্রসর হতে হবে।

    তো দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে ভালো যারা, ওদের দিকে তাকাও, তাহলে তোমার মধ্যে একটু অনুশোচনা আসবে- আহা! আমি তো পেছনে পড়ে আছি, আমাকে অগ্রসর হতে হবে। জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে  দুর্বল যারা ওদের দিকে তাকাও- আমাকে তো আল্লাহ ওদের চেয়ে ভালো রেখেছেন, আলহামদু লিল্লাহ-আল্লাহ্র শোকর।

    রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে বলে দিয়েছেন, যদি তুমি জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে ভালো যে তার দিকে তাকাও তুমি নিআমতের শোকর আদায় করতে পারবে না। আহা! ওর তো গুলশানে বাড়ী আছে, আমার গুলশানে বাড়ী নেই। ধানম-িতে আছে বহুত বড় সুন্দর বাড়ী, তাও শোকর আসে না; কেন? গুলশানে নেই। এজন্য শোকর আসে না। এটা অন্যায়। আল্লাহ্র শোকর আদায় করা উচিত, যা আল্লাহ দিয়েছেন এটার উপর আল্লাহ্র শোকর আদায় করা। যা নিআমত আমি অর্জন করেছি তা আল্লাহ্র দান। একথা মনে রাখতে হবে পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে কোন্ সূত্রে আমি সম্পদ হাসিল করেছি? অবৈধ পন্থায় যদি কোনো কিছু হাসিল করে থাকি ওটা শুধরিয়ে নেওয়া, পাক করে ফেলা।

    أَرْبَعٌ إِذَا كُنّ فِيكَ فَلَا عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدّنْيَا: حِفْظُ أَمَانَةٍ، وَصِدْقُ حَدِيثٍ، وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ، وَعِفّةٌ فِي طُعْمَةٍ.

    রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটা সিফাত, চারটা গুণ যদি তোমার মধ্যে থাকে, তাহলে কী আছে, কী নেই এটা নিয়ে আর পেরেশান হওয়ার দরকার নেই :

    ১. আমানত রক্ষা করা। খিয়ানত না করা।

    ২. সত্য বলা; সত্য কথা বলব, মিথ্যা বলব না।

    ৩. আখলাক সুন্দর, চরিত্র পবিত্র হওয়া এবং ব্যবহার সুন্দর হওয়া।

    ৪. খাবার হালাল হওয়া। রিযিকটা হালাল হওয়া। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৬৬৫২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪৪৬৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৮৭৬)

    তো চারটা গুণ অর্জন করতে হবে। কী কী?

    ১. حِفْظُ أَمَانَةٍ আমানত রক্ষা করা। যে কোনো ধরনের খেয়ানত, দুর্নীতি, ভেজাল এবং ধোঁকা সবকিছু থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

    ২. صِدْقُ حَدِيثٍ সত্য বলা, মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা।

    ৩. حُسْنُ خَلِيقَةٍ ভালো ব্যবহার এবং দিলের উত্তম অবস্থা। আরবী خليقة বা خلق শব্দের মধ্যে দুইটা দিক আছে :

    ক. দিলের অবস্থা ভালো থাকা; দিলের যেই ব্যাধিগুলো আছে সেগুলো থেকে দিলকে পাক করা। দুনিয়ার মুহাব্বত, দুনিয়ার মোহ, এটা একটা আত্মিক রোগ, আত্মিক ব্যাধি। কিব্র-অহংকার, উজ্ব, উজ্ব মানে নিজের সবকিছু নিজের কাছে ভালো লাগে, অপরের কোনোটাই ভালো লাগে না। নিজেরটাই সবচেয়ে ভালো; আমার কাছে আমার কথা সুন্দর, চাল-চলন সুন্দর, আমার সবকিছু সুন্দর। অপরের কোনোটাই ভালো লাগে না। এটা ব্যাধি, রোগ। এইসমস্ত অন্তরের রোগগুলো থেকে অন্তর পাক-সাফ থাকা এটাকে বলে حُسْنُ خَلِيقَةٍ।

    খ. আর মানুষের সাথে কথা-বার্তা, চাল-চলন, উঠা-বসা এগুলো ভালো করা। সবার সাথে, রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের সাথে, বাসের হেলপারের সাথে, তোমার ঘরের যে খাদেম আছে, কাজের লোক আছে তাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করা আর নিজের স্ত্রী-সন্তান সবার সাথে তো বটেই। আমরা অনেক সময় করি কী, বাইরের লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করি, আমার বসের সাথে আমি ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু আমার অধীনের যারা, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি না। বাইরে ভালো ব্যবহার করি, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু ঘরে গেলে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সুন্দর করে কথা বলি না, ধমকের সুরে কথা বলি।  এটা অন্যায়।

    তো حُسْنُ خَلِيقَةٍ -এর মধ্যে এই দুইটা বিষয় শামিল।

    ৪. عِفّةٌ فِي طُعْمَةٍ তোমার রিযিক হালাল হতে হবে। বাসস্থান, তোমার খাবার, এই যে লোকমা যাচ্ছে, এই লোকমাটার সাথে ইবাদতের সম্পর্ক আছে। এটা হালাল হতে হবে।

    তো চারটা জিনিস- আমানত রক্ষা করা, খেয়ানত  থেকে বেঁচে থাকা, সত্য বলা, আখলাক ভালো হওয়া, চরিত্র ভালো হওয়া, মানুষের সাথে আচার-ব্যবহার ভালো হওয়া, আর রিযিক হালাল হওয়া, পানাহার-বাসস্থান হালাল হওয়া। এগুলোতে যদি আমার মধ্যে ত্রুটি থাকে, আমার রিযিক যদি সন্দেহযুক্ত হয়ে থাকে, হারামের সাথে মিশে গিয়ে থাকে তাহলে হবে না।

    আর একটা কথা বলেই শেষ করছি, শুরুতে যে বললাম অল্পেতুষ্টির কথা, সে বিষয়ে আরেকটি কথা-

    আল্লাহ হজে¦র তাওফীক দিয়েছেন। এখন মুখে দাড়ি এসে গেছে, নামায ঠিকমতো আদায় করছি, অনেক আমল ঠিক হয়ে গেছে বা তাবলীগের চিল্লায় গেলাম, চিল্লা থেকে আসার পর অনেক কিছু সংশোধন হয়ে গেছে বা কোনো আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্যে গেলাম ওখান থেকে আমার মাঝে বড় পরিবর্তন এসে গেছে- এটা খুশির বিষয় না? খুশির বিষয়, আল্লাহ্র শোকর আদায় করার বিষয়। এসকল পরিবর্তন তো আমার মাঝে এসেছে, কিন্তু পিছনের কাফফারা আদায় করি না। পিছনের ভুলগুলোর, পেছনের জিন্দেগীর কাফফারা আদায় করি না। পিছনের জিন্দেগীর কাফফারা কী? কারো হক নষ্ট করেছি, এটা আদায় করি। বোনদের হক দেইনি, এখন বোনদের মিরাছ দিয়ে দেই। অনেক পাওনাদার আছে, ওদের পাওনা আদায় করিনি, ওরা চাইতে চাইতে বিরক্ত হয়ে চুপ করে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে দেই।

    তো পিছনের যামানার কাফফারা করা এটা খুব জরুরি। যদি এটা না করি তাহলে এটা তো কঠিন ধরনের অল্পেতুষ্টি হয়ে গেল, (অন্যায়ের উপর তুষ্টি) যেটা একেবারে গুনাহ, পাপ। আল্লাহ আমার মধ্যে পরিবর্তন এনেছেন এই পরিবর্তনের হক আদায় করতে হবে আমাকে। এই পরিবর্তনের হক এবং এর শোকর হল পিছনের জিন্দেগীর যা যা কাফফারা সম্ভব আমার দ্বারা তা আদায় করা।

    কাউকে খামোখা অন্যায়ভাবে থাপ্পর মেরেছি, খুব ধমক দিয়ে কথা বলেছি, গালি দিয়েছি, এখন গিয়ে ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাই তার কাছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিজেদের পিছনের জিন্দেগীর কাফফারা আদায় করার তাওফীক নসীব করুন, শুধরাবার তাওফীক নসীব করুন। দুনিয়ার বিষয়ে অল্পেতুষ্টির গুণ দান করুন; আখেরাতের বিষয়ে আরো আগে বাড়ার তাওফীক দিন।

    وآخر دعوانا أن الحمد الله رب العالمين.