ইতিহাস গড়তে চায় বাংলাদেশ

সময় ও সাফল্য মানুষকে কতোটা বদলে দিতে পারে তার একটা দারুণ উদাহরণ হলেন বাংলাদেশ কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে।
প্রথম যখন এক বছর আগে ঢাকায় এলেন মুখে মাপা হাসি, কাটা কাটা কথা। প্রশ্ন শুনলেই বোঝার চেষ্টা করতেন, আক্রমণ হচ্ছে কি না। সেই হাতুরুসিংহে এখন সংবাদ সম্মেলনে এসে সমানে রসিকতা করেন, চাপা হাসি হাসেন আর বারবার বলে দেন, সময়টা এখন তাদের।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরুর আগে প্রতিপক্ষ নিয়ে সর্বোচ্চ সম্মান দেখালেন। নিজেদের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বললেন। তবে দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড আর ইতিহাসের প্রশ্ন আসতেই চোয়ালটা শক্ত করে ফেললেন, মুখ গম্ভীর করে বললেন, তিনি ইতিহাস বদলাতে এসেছেন; ইতিহাসের স্রোতে গা ভাসাতে আসেননি!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ যাবত্ বাংলাদেশের একমাত্র অর্জন সেই ২০০৭ বিশ্বকাপের একটি জয়। উড়ন্ত ফর্মে সেই দলটির মুখোমুখি হওয়ার আগে হাতুরুসিংহে পরিষ্কার বলে দিলেন নিজের এই দর্শনের কথা, ‘আমি ইতিহাসে বিশ্বাস করলে এখানে বসে থাকতে পারতাম না। আমি তাহলে জিততেই পারতাম না। আমি ইতিহাসে বিশ্বাস করি না। ইতিহাস ব্যাপারটাই তৈরি হয়েছে বদলানোর জন্য। আমরা সেটা কীভাবে করবো, সেটা হলো বিষয়। আমরা ইতিহাসের অংশ হতে চাই না, আমরা ইতিহাস গড়তে চাই। আমরা অতীতে বাস করি না, আমরা বর্তমানে বাস করি।’
সেই বর্তমানটা যে শুধু ক্রিকেট দলের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য রোমাঞ্চকর, সেটাও বলে দিলেন জাতীয় দলের এই প্রধান কোচ, ‘আমার ধারণা, এটা পুরো বাংলাদেশের জন্যই রোমাঞ্চকর একটা সময় কাটছে। আমি মনে করি, জয় সবসময়ই ভালো অভিজ্ঞতা। তার ওপর আমরা যেভাবে জিতছি এবং খেলছি, সেটা বিশেষ রোমাঞ্চকর। এমন জয় তো আমাদের আগে খুব আসেনি, তাই অবশ্যই রোমাঞ্চকর।’
যেহেতু সময়টা খুব রোমাঞ্চকর, তাই শিষ্যদের এটা উপভোগ করারই অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছেন কোচ। আর এই উপভোগে অন্তত কোনো অন্যায় দেখেন না হাতুরুসিংহে, ‘আমি এই জয় উদযাপনে এখনও পর্যন্ত এমন কিছু দেখিনি যাতে তাদের মনোসংযোগ নষ্ট হতে পারে। তারা পা মাটিতেই রাখছে। তবে এটাও সত্যি যে, জয় ব্যাপারটা উপভোগ করতে হয়। এদের অনেকেই এই ধরনের জয় এর আগে কখনো পায়নি। ফলে তাদের নজিরবিহীন এই আনন্দ করতে দিতে হবে। তাদের সব ধরনের অধিকার আছে উপভোগ করার এবং উপভোগ করতে যে আত্মবিশ্বাস চাই, সেটাও আছে।’
এমনকি খেলোয়াড়রাও যাতে অতীত রেকর্ড নিয়ে মাথা না ঘামায়, সে জন্য নাকি কোচের চেষ্টার কমতি নেই, ‘খেলোয়াড়রা কী ভাবে, কী পড়ে; সেটা তো আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমি শুধু ওদের বলতে পারি, বর্তমান ও ভবিষ্যত্ নিয়ে ভাবতে। আমি সবসময় ওদের বলি, তারা কতোটা ভালো সেটা নিয়ে ভাবতে; আগে কী হয়েছে তা নিয়ে নয়।’
যে বাংলাদেশ এক বছর আগেও হারছিলো, তারা কিভাবে এতো বদলে গেলো, এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বোলিং আক্রমণ নিয়ে কোচের কথা শুনলে বুঝবেন, বৈচিত্র্যই এই বদলের রূপকার, ‘আমাদের দলে এখন স্পিন ও পেসের দারুণ একটা মিশ্রণ আছে। ঐতিহ্যগতভাবেই বাংলাদেশ পরিচিতি ভালো ভালো স্পিনারদের জন্য। এখনও তার অভাব নেই। আমাদের এখানে অনেক ফাস্ট বোলার হয়তো নেই, তবে অনেক বৈচিত্র্যময় ফাস্ট বোলার আছে। কেউ লম্বা, কারো অনেক বৈচিত্র্য আছে, কেউ অনেক সুইং করাতে পারে। এটা আমাদের জন্য একটা সুবিধা। আমরা যে কোনো পথ নিতে পারি। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং ভালো, ব্যাটিং খুব ভালো। এখন তারা স্পিনও ভালো খেলছে। একটা পূর্ণাঙ্গ দল। ওদের দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা আসলে আমাদের শক্তি অনুযায়ী খেলবো, ওদের দুর্বলতা অনুযায়ী নয়।’
তবে এসব সামগ্রিক কথায় হারিয়ে যাচ্ছে না হাতুরুসিংহের লক্ষ্য। একটা লক্ষ্য ছিলো, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা; সেটা প্রায় পূরণ হয়েছে। এখন সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলার আগে সেই আসর মাথায় রাখছেন তিনি। তবে আগে সিরিজ চাই তার, ‘অবশ্যই বিশ্বকাপ আমাদের মাথায় আছে। আমরা আমাদের দলের কম্বিনেশন ও গেম প্ল্যান কী হতে পারে, সেটা নিয়েও ভাবছি। আমাদের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, ভাবছি। তবে আপাতত আমরা এই সিরিজেই মন দিচ্ছি।