হৃদরোগের চিকিৎসায় আইপিএস কোষের ব্যবহার

এবারে রয়েছে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মত বিশ্বে এক স্বাস্থ্য গবেষণা চালায় যেখানে গুরুতর হ্রদরোগে ভুগছেন এমন এক রোগীর চিকিৎসার জন্য আইপিএস কোষ থেকে তৈরি কোষ তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
বুধবার জাপান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্যানেল প্রথমবার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। আগামী মাস পর্যন্ত এই প্যানেলের আলোচনা চলবে এবং এতে প্রধানত এই ধরনের গবেষণার নৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রশ্ন হল আইপিএস কোষ ভিত্তিক চিকিৎসা থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়? এই বিষয় নিয়ে আজ আমরা জাতীয় ইনস্টিটিউট অব হেলথ সাইন্সের কোষ ভিত্তিক চিকিৎসা পণ্য বিভাগের প্রধান ইয়োজি সাতোর সাথে কথা বলেছি। পুনঃউৎপাদন সংক্রান্ত চিকিৎসা বিদ্যার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও তিনি একজন বিশেষজ্ঞ।

মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের মত গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার উপরেই সাম্প্রতিক এই আলোচনায় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হয়। এই রোগের চিকিৎসার জন্য আইপিএস কোষ থেকে প্রথমে হৃৎপেশী কোষ গঠন এবং পরে এই কোষগুলোকে শিটের আকারে পরিণত করে তা রোগীর হৃৎপিণ্ডে প্রতিস্থাপন করা হয়।

হৃদরোগ হল এমন এক অবস্থা যখন হৃৎপিণ্ড সারা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। এরকমের পরিস্থিতিতে হৃৎযন্ত্রকে শুধুমাত্র একটি পাম্প হিসাবে দেখা হয় যার প্রধান কাজ হল রক্ত সরবরাহ করা। পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে দাঁড়ালে এই ধরনের রোগীর চিকিৎসার জন্য বর্তমানে একটি মাত্র উপায় হল হ্রদযন্ত্র প্রতিস্থাপন।সমস্যা হল প্রতিস্থাপন করা সম্ভব এই ধরনের হ্রদযন্ত্র তাৎক্ষণিক ভাবে সবসময় পাওয়া যায় না।

আইপিএস কোষ ব্যবহারের অন্যতম ইতিবাচক দিকটি হল এই কোষগুলো এমন এক দাতার শরীরে নির্মাণ করা সম্ভব যার রোগ প্রতিরোধের ধরণ রোগীর সাথে মিলে যায়। ভবিষ্যতে এর থেকে এমন এক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব যেখানে অঙ্গ প্রত্যাখানের ঝুঁকি অনেক কম। তবে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করা উচিত। আইপিএস কোষ থেকে গঠিত হৃদকোষগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এই ধরনের অস্ত্রোপচার কার্যকরী ফলাফল বয়ে আনবে কিনা সে বিষয়েও মনোযোগ দেয়া উচিত। আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে কোষগুলো ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, নবগঠিত হ্রদকোষগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো মানের কিনা এবং সেগুলোর গঠন প্রক্রিয়ার মত বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য পরীক্ষা চালাতে হবে।

সর্বশেষ গবেষণার আর একটি সমস্যা হল রোগী ব্যতীত বিভিন্ন লোক দান করা কোষের ব্যবহার। রোগী ব্যতীত অন্যান্য লোকজন দান করা প্রাথমিক কোষগুলোকে পুনঃউৎপাদন সংশ্লিষ্ট ওষুধ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের কোষ পাওয়ার ব্যাপারে জাপানে সঠিক আইনি ব্যবস্থা নেই।অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়ে জাপানে আইন থাকলেও পুনঃউৎপাদন সংশ্লিষ্ট ওষুধের বিষয়ে কোন আইনি ব্যবস্থা নেই। আমার ধারণা জনগণের সাথে বোঝাপড়া করার পর এই ধরনের ব্যবস্থা গঠন করা উচিত।নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সময় শুধুমাত্র উদ্ভাবনকারীদের চিন্তাভাবনাই নয় বরং বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী বিবেচনা করা উচিত।

এই ছিল আজকের সংবাদ বিশ্লেষণ। এতে আজ শুনলেন আইপিএস কোষ ব্যবহার করে হ্রদরোগের চিকিৎসা বিষয়ে জাতীয় ইনস্টিটিউট অব হেলথ সাইন্সের কোষ ভিত্তিক চিকিৎসা পণ্য বিভাগের প্রধান ইয়োজি সাতোর মতামত।