জাপানে ধুমপান নিষেধাজ্ঞার ভবিষ্যৎ

পরোক্ষ ধূমপান হচ্ছে অন্য মানুষের ধূমপান থেকে বাতাসে ছেড়ে দেয়া ক্ষতিকর উপাদান নিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে গ্রহণ করা। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমান করছে পরোক্ষ ধূমপানের ফলে প্রতি বছর দেশে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এরকম পরোক্ষ ধূমপান প্রতিহত করার লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া একটি বিল গত মাসে সংসদে পেশ করা হয়। দেশের প্রথম সেই পরোক্ষ ধূমপান বিরোধী বিলে লঙ্ঘনকারীদের উপর জরিমানা আরোপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে শুরু হতে যাওয়া টোকিও অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিকের আগে বিলটি যেন আইনে পরিণত করা যায়, সরকার সেজন্য সংসদের চলতি অধিবেশনে সেটা পাশ করিয়ে নিতে চাইছে। সংবাদ বিশ্লেষণে আজ পরোক্ষ ধূমপানের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে বলছেন এন এইচ কে’র ঊর্ধ্বতন ভাষ্যকার তোশিইয়ুকি ৎসুচিইয়া।

পরোক্ষ ধূমপান প্রতিহত করতে স্বাস্থ্য রক্ষা আইন সংশোধন করে নেয়ার একটি বিলে মন্ত্রীসভার অনুমোদন সরকার পেয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্কুল, হাসপাতাল এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যালয় নীতিগতভাবে ধূমপান-মুক্ত করে তোলা। অনেক মানুষের সমাবেশ যেখানে ঘটে, অফিস এবং দোকানের মত সেরকম জায়গার বেলায় এসব প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করে নেয়ার অনুমতি দেয়া শুধুমাত্র ধূমপানের জন্য নির্ধারিত কক্ষ ছাড়া ভবনের ভেতরের সব জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হবে।

রেস্তোরাঁ ও দোকান হিসেবে নির্ধারিত খাওয়া-দাওয়া করার অন্য জায়গাগুলোকেও সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা সেটা ছিল সবচেয়ে বড় এক বিতর্কের বিষয়। সরকার শেষ পর্যন্ত বরং এসব ব্যবসার আকারের উপর নির্ভর করে ভিন্ন নীতি প্রয়োগের বেশ জটিল এক পরিকল্পনা ঠিক করে নেয়। ছোট আকারের বিদ্যমান রেস্টুরেন্টের বেলায় নীতি সংক্রান্ত ঘোষণার সাইনবোর্ড এরা টাঙ্গিয়ে নিলে লোকজনকে ধূমপানের অনুমতি দেয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞায় এগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে একক ব্যক্তি কিংবা ছোট আকারের ব্যবসার পরিচালিত সেরকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে – বিনিয়োগ-কৃত পুঁজির পরিমাণ যেখানে হচ্ছে পাঁচ কোটি ইয়েন বা চার লক্ষ সত্তর হাজার ডলার পর্যন্ত এবং মোট জায়গার হিসাব যেখানে হচ্ছে ১০০ বর্গ মিটার কিংবা এর কম। এই শ্রেণী বিন্যাসের আওতায় যেগুলো পড়ে না, সেরকম রেস্টুরেন্টে ভেতরে ধূমপান ঠিক অফিসের মতই নির্ধারিত জায়গার বাইরে নিষিদ্ধ করা হবে। অনুমান করা হচ্ছে যে ৫০ শতাংশের বেশী খাওয়া-দাওয়া করার জায়গা ধূমপান নিষেধাজ্ঞা আওতা থেকে মুক্ত থাকবে।

তবে কেন এই জটিল ব্যবস্থা? এর পেছনে যা আছে তা হল, জনস্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব পালনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এল ডি পি’র মধ্যে চলা দেন-দরবার। ব্যবসার প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন এল ডি পি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন রেস্টুরেন্ট শিল্পের থেকে আসা বিরোধিতা বিবেচনায় নিয়েছে।

বিলটি এখনও খসড়া অবস্থায় আছে বলে সংসদে বিতর্ক চলার সময় এটা আরও ভাল করে নেয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় রেখে বিচার করে দেখলে বলা যায়, ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের আগে পরোক্ষ ধূমপান নির্মূল করা মনে হয় কঠিন হবে।

তবে এর বাইরে সবকিছু নির্ভর করছে জাপানের জনগণের উপর। যেসব দেশ ঘরের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে তারা বলছে রেস্টুরেন্ট শিল্পের উপর নেতিবাচক কোন প্রভাব তা ফেলেনি। এছাড়া জাপানের ক্রমশ অনেক বেশী সংখ্যক খাওয়া-দাওয়া করার জায়গা এরকম মনে করছে যে ধূমপান সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হচ্ছে সুবিধাজনক একটি দিক।

পরোক্ষ ধূমপানের ফলে প্রাণহানির সংখ্যা আমরা কতটা কমিয়ে আনতে পারি? আমি মনে করি এর সবটাই নির্ভর করে আমরা কিভাবে খাওয়া আর কাজের জায়গা বেছে নেই তার উপর।

সংবাদ বিশ্লেষণে আজ জাপানে পরোক্ষ ধূমপান বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে বললেন এন এইচ কে’র ঊর্ধ্বতন ভাষ্যকার তোশিইয়ুকি ৎসুচিইয়া।