ইন্টারনেট থেকে শীত নিবারণ!

শিরোনামটি অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর লাগতে পারে। মনে হতে পারে ইন্টারনেটের পক্ষে কিভাবে শীত নিবারণ সম্ভব। তবে এই প্রকল্পে জড়িতরা বলছেন, ইন্টারনেট নিজে না পারলেও এর ডাটাসেন্টারে উত্পাদিত তাপ ব্যবহার করে বাসিন্দাদের বাড়িঘর গরমের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ সরবরাহ করা সম্ভব। আর সেই চেষ্টাই করছে সুইডেন।

ইন্টারনেটের ডাটাসেন্টারে গেলে নজরে পড়বে ছিমছাম পরিচ্ছন্ন ঘরে হাজার হাজার কম্পিউটার সারি সারি রাখা। ভেতরে ঠান্ডা হাওয়া। অথচ আমরা ভালো করেই জানি একটি কম্পিউটার যখন চলে তখন পেছন দিক দিয়ে কি পরিমাণ গরম হাওয়া বের হয়। যারা কোলের উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন তারা বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের পান। তাহলে হাজার হাজার কম্পিউটার একসাথে দিনরাত ২৪ ঘন্টা বিরামহীন চললে কি পরিমাণ তাপ উত্পন্ন হয় তা সহজে অনুমেয়।  কম্পিউটারগুলোকে টানা চালু রাখতে গেলে এই তাপ শোষণ করে শীতল হাওয়া সরবরাহ করতে হয়।

সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত ডাটাসেন্টারের তাপ বের করে ভেতরের পরিবেশ শীতলীকরনের কাজ করে ফরটুম ভার্মি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেন্টারের চারপাশ দিয়ে বসানো আছে বিশেষভাবে তৈরী পাইপ। এই পাইপের ভেতর দিয়ে শীতল পানি প্রবাহিত হয়। ডাটাসেন্টারে উত্পন্ন হওয়া তাপ শোষণ করে এই পানি গরম হয়ে যায়। এরপর প্রচন্ড গরম এই পানি বহির্গমন পথ দিয়ে বাইরে চলে যায়। কিন্তু ফরটুম ভার্মি পরিকল্পনা করেছে এই গরম পানি ব্যবহার করে বিশেষ কায়দায় আগামী বছর নাগাদ স্টকহোমের ২৫০০ আবাসিক বাড়িতে শীত নিবারনের ব্যবস্থা করবে। ডাটাসেন্টারে উত্পাদিত তাপ অপচয় করতে রাজি নয় প্রতিষ্ঠানটি। আর দীর্ঘমেয়াদে তার লক্ষ্য ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের ১০ শতাংশ আবাসিক বাড়িতে ডাটাসেন্টারের তাপ ব্যবহার করা। সরকারি সূত্র জানায়, স্টকহোমের ২০ হাজার বাড়িতে শীত নিবারনের জন্য পর্যাপ্ত তাপ উত্পাদন করতে কমপক্ষে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ খরচ হয়। ফেসবুক ডাটাসেন্টারে ১২০ মেগাওয়াট শক্তি খরচ হয়।

এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আমরা এতদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও ইন্টারনেটের এই ‘উপজাত’ নিয়ে একটুও ভেবে দেখিনি। ডাটাসেন্টারে উত্পাদিত তাপ শত শত ফ্যান দিয়ে টেনে বাইরে বের করে দেয়া হতো। পরে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে তাপ শোষণ প্রযুক্তি ব্যবহার কর হয়। এখন এই তাপও যে মানুষের কাজে লাগানো যাবে সেটা অনেকের কল্পনাতেও ছিল না।