টোকিও মোটর শোঃ নতুন প্রযুক্তিতে গড়িয়ে যাওয়া
বিগত ৬০ বছর ধরে টোকিও মোটর শো গাড়ি প্রেমীদেরকে আকার্ষণ করে আসছে। গাড়ির সর্বশেষ প্রযুক্তি আগের চেয়েও আরও চাঞ্চল্যকর মডেল প্রদর্শন করছে দর্শকদের সামনে।
প্রদর্শনীটি গাড়ি নির্মাতাদেরকে তাদের সবচেয়ে উন্মত্ত ধারণাকে তুলে ধরার সুযোগ করে দিচ্ছে। টয়োটা তাদের গাড়ির বহিরাবারন খুলে ফেলে গাড়ির বিভিন্ন পার্টস ও এর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তুলে ধরেছে। এর নাম দেয়া হয়েছে “কিকাই” যার অর্থ “মেশিন”। নতুন প্রজন্মের যারা মনে করেন গাড়ি আসলে প্রয়োজনহীন একটি যন্ত্র -এটি তাদেরকে আকৃষ্ট করতেই এ ব্যবস্থা।
প্রদর্শনীতে ৭০টি নতুন মডেলের গাড়ি স্থান পেয়েছে। শো’র মূল লক্ষ্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা পরিবেশ-বান্ধব। উদাহরণ স্বরূপ “তাকে” ফুয়েল সেল এ ব্যবহার করা হচ্ছে গাড়িতে জমাকৃত হাইড্রোজেন এবং বাতাস থেকে সংগৃহীত অক্সিজেন -দু’টি মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ।
নতুন গাড়ির এই মডেলটি আবার জেনারেটর হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। এটি অন্য গাড়িকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম, এমন কি স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রীডেও তা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। ইলেক্ট্রিক মোটর গুলো গাড়ির চাকাতে সংযুক্ত বলে যাত্রীরা গাড়ির ভেতর আরো অনেকটা স্থান পাবেন বসার।
হোনদা ফুয়েল সেল গাড়ি ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারবে। আগামী বছর এটি বাজারে আসবে বলে তারা আশা করছে।
ভক্সওয়াগান’র সাম্প্রতিক স্ক্যান্ডালের কারণে অনেক গাড়ি নির্মাতা ডিজেল গাড়ির অতীতকে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। তারা নিজস্ব প্রযুক্তিতে ডিজেল পরিস্রুত করার কৌশল তৈরি করছেন।
অনেক দর্শনার্থী “মোবিলিটি ডিভাইস” বেছে নিয়েছেন হাঁটার বদলে যন্ত্রটিতে বসে আশেপাশটা ঘুরে দেখতে। পা ব্যবহার না করেই এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি!
আরেকটি গাড়ির মডেল গাড়িটিকে ভাঁজ করে ফেলার প্রযুক্তি তৈরি করেছে। পার্কিং স্পেস সমস্যাকে এটি অনেকখানি দূর করে ফেলবে বলেই ধারণা। এটি গাড়িটিকে মাঝ বরাবর ভাঁজ করছে, ফলে দু’চাকার মধ্যেকার ফাঁক অনেকটাই কমে যাচ্ছে। এক্স মাচিনা কোম্পানির প্রেসিডেন্ট গাড়িটিকে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের সময় ব্যাপক ভাবে বাজারজাত করতে চান।
চালকবিহীন গাড়ির প্রতি মানুষের দুর্বার আকর্ষণ তো আছেই। নিসসান তাদের সয়ংক্রিয় গাড়ি বাজারে ছাড়তে ইচ্ছুক। গাড়ি গুলো সামনে কী রয়েছে তা সনাক্ত করতে সক্ষম, পথচারী এলে তা সয়ংক্রিয় ভাবেই থেমে যাচ্ছে, এমন কি সামলে লেখাও দিচ্ছে “আফটার ইউ”।
নিসসান মোটরের সিইও কার্লোস ঘোসন বললেন “আপনি এখন স্টিয়ারিং হুইল থেকে নিশ্চিন্তে হাত সরিয়ে রাখতে পারেন। রাস্তা থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দিলেও অসুবিধা নেই। ইমেইল পাঠান, ভিডিও কনফারেন্স করুন -সব চলবে এখন। গাড়ির জীবন এখন পাল্টে যাবে। ক্রেতারা খুবই আগ্রহী গাড়িটির ব্যাপারে। তাই আমাদেরকে সব কিছু দ্রুততার সাথে করতে হচ্ছে”।
১০ দিন ব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজকরা আশা করছেন ৯ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রদর্শনীটি দেখতে আসবেন।