মুহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
হিজরী সালের প্রথম চান্দ্রমাস মুহররম। বিভিন্ন বিচার ও প্রেক্ষিতে এই মাসটি বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। সংক্ষিপ্তাকারে তার কিছু বিবরণ প্রদান করা হচ্ছেÑপৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে তাঁর সৃষ্টি জগতে আল্লাহ তা’য়ালা অনেক কিছু সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু তাতে তাঁর সৃষ্টি পূর্ণ হয়নি। তাই আপন মনের ইচ্ছাতে তিনি সৃষ্টি করলেন এই পৃথিবী। তা এই মুহররম মাসে। এরপরও তৃপ্তি নেই স্রষ্টার মনে। কী যেন অতৃপ্তি রয়ে গেছে তাঁর সৃষ্টির জগতে। সেই অতৃপ্তকে দূরীভূত করলেন তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করে। প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করলেন তিনি এই মুহররম মাসে। শুরু হলো হযরত আদম (আ.)-এর জান্নাতবাস। আর তা এই মুহররম মাসে।মুসলমানদের পুণ্যভূমি কাবাঘর। আর এটাই পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রথম গৃহ। তৈরি হয়েছিল হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টির আগেই। ফেরেশতাদের দ্বারা। তা এই মুহররম মাসে। হযরত নূহ (আ.)-এর জন্ম এই মুহররম মাসে। তাঁর সময়ে বিশ্বব্যাপী মহাপ্লাবনের সৃষ্টি হয় এই মাসেই। হযরত ইউনূস নবী (আ.)কে সামুদ্রিক মাছে গিলে খায়। এই অবস্থায় দীর্ঘদিন মাছের পেটে অবস্থান করার পর মুহররম মাসে তিনি মাছের পেট থেকে মুক্ত হন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা হযরত আইউব নবী (আ.)কে দুঃসহ কুষ্ঠ রোগ দিয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। দীর্ঘদিন যাবত অবর্ণনীয় রোগ ভোগের পর এই মুহররম মাসে তিনি এই কঠিন রোগ থেকে মুক্ত হন। ধর্ম প্রচারের অপরাধে কাফেররা হযরত ইবরাহিম (আ.)কে জ্বলন্ত অগ্নিকু-ে নিক্ষিপ্ত করে। আল্লাহর অশেষ রহমতে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থাতে তিনি উক্ত অগ্নিকু- থেকে বের হয়ে আসেন। এই ঘটনাটি যখন ঘটে, সেটা ছিল মুহররম মাস। মাবুদ আল্লাহর কঠিন পরীক্ষাতে অবতীর্ণ হয়ে হযরত নবী সুলায়মান হন রাজ্যহারা, সম্পদহারা, সর্বহারা একবারে নিঃস্বজন। ঈমানী পরীক্ষাতে উত্তরণ শেষে এই মুহররম মাসে তিনি রাজ্য, সম্পদÑসবকিছু ফিরে পান। আপন ভুলে হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহর রোষে পতিত হন। এজন্য তাঁকে দীর্ঘদিন অনেক দুর্দশা ভোগ করতে হয়। আপন ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে দুচোখের অশ্রুতে বুক ভাসিয়ে আল্লাহর কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন পর অবশেষে এই মুহররম মাসে রাহমানির রাহিম আল্লাহ মাবুদ এই মাসে তাঁকে ক্ষমা করে দেন। সাক্ষাতে আল্লাহ দীদার লাভের জন্য হযরত মূছা (আ.) তূর পাহাড়ের পাদদেশে যেয়ে নিরলস এবাদত-সাধনা করতে থাকেন। অবশেষে একদিন আল্লাহ পাক তাঁকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। তখন ছিল মহররম মাস। বাদশাহ ফেরাউন হযরত মূছা (আ.)কে নদীতে ডুবিয়ে মারতে চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা ফেরাউনের কুটিল চক্রান্ত থেকে মূছা (আ.)কে রক্ষা করেন। এ ঘটনাটাও ঘটেছিল এই মুহররম মাসে।হযরত ঈসা (আ.)-এর ধর্ম প্রচারে নাখোস হয় ইহুদীরা। এরফলে ঈসা (আ.)কে বিরাট ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয়। ভীষণ কষ্টের মধ্যে তাঁর দিন কাটতে থাকে। তাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ঈসা (আ.)কে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে তাঁর কাছে নিয়ে নেন। ওটি ছিল মুহররমের একটি দিন।মুসলমানদের রোজা রাখার প্রচলন হযরত আদম (আ.)-এর আমল থেকেই ছিল। কিন্তু ফরজ ছিল না। এক মুহররম মাসে মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে মুসলমানদের জন্য রমজানের একমাস রোজা রাখা ফরজ ঘোষণা হয়। ইয়াজিদ বাহিনীর সাথে হযরত ইমাম হাসান-হোসেনের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে হযরত ইমাম হাসান- হোসেন শহীদ হন এই মহররম মাসে।ইসরাফিলের শিংগা ফুৎকারে একদিন পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। সংঘটিত হবে কিয়ামত। মুহররম মাসেই এটি ঘটবে।