জাতীয় নিরাপত্তা বিলঃ নতুন স্তরে জাপানের নিরাপত্তা
জাপানের বহুল আলোচিত জাতীয় নিরাপত্তা বিল আইনে পরিণত হয়েছে যা দেশটির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন একটি মাত্রা দেবে।
আইনটি পাস হওয়ার ফলে জাপান-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন গতি সঞ্চারিত হবে এবং জাপান অস্থিতিশীল পূর্ব এশিয়ার উত্তেজনা মোকাবেলা করার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারবে।
উত্তর কোরিয়া তার উস্কানিমূলক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে, সাথে পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি পুরোদমে চলছে। কোরিয় উপদ্বীপ আকস্মিক কোনো ঘটনার পথেই যেন চলছে।
২০১০ সালের নভেম্বরে উ.কোরিয়া দ.কোরিয়ার ইয়ংপিয়েং দ্বীপে বোমাবর্ষণ করে। বেশ কয়েকজন ঐ ঘটনায় নিহত হন।
সে সময় আমেরিকা দ্রুত জাপানের কানাগাওয়া প্রিফেকচারের ইয়োকোসুকা ঘাঁটি থেকে সেখানে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করে, সেখানে দ.কোরিয়ার সাথে সামরিক মহড়ার মাধ্যমে উ.কোরিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করে।
জাতীয় নিরাপত্তা বিল পাস হওয়ার ফলে কোরিয়ান উপদ্বীপে কোনো ঘটনা ঘটলে জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোর্স মার্কিন রণতরীর ক্ষেত্রে অনুরূপ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে, মাইনসুইপার জাহাজ মোতায়েন করে নৌপথ নিরাপদ করতে পারবে।
তা ছাড়াও কোরিয়ান উপদ্বীপে জ্বালানি, রসদ সরবরাহের মতো কৌশলগত সহযোগিতা করতে সমর্থ হবে। অস্ট্রেলিয়াও তার তৎপরতা শুরু করেছে -জাপান তাদেরকেও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে পারবে।
যদিও বিরোধী দল গুলো দাবি করছে নিরাপদ সমুদ্র নিশ্চিত করতে এসডিএফ এর প্রয়োজন নেই কিন্তু অপোরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে নিরাপদ সমুদ্র খুবই জরুরি, জনগনের প্রাত্যাহিক প্রয়োজন মেটানোর উপকরণ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মনে করেন মধ্যপ্রাচ্যের হরমুজ প্রণালী দিয়ে আসার সময় ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ চীন সাগর এবং পূর্ব চীন সাগরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় এই সরবরাহ জাপানের অর্থনীতির প্রাণধারা বজায় রাখে।
নৌ সেলফ ডিফেন্স ফোর্স অতীতে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজ গুলোকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সহায়তা দিতে দু’টি ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করে।
চীনা সামরিক বাহিনী ওকিনাওয়া প্রিফেকচারের সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের নিকট ক্রমেই উস্কানিমূলক তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। ইতিমধ্যেই জাপানি জাহাজ গুলোর প্রতি রাডার লক এবং চীনা জঙ্গী বিমানের অস্বাভাবিক রকম নিকটে চলে আসার মতো ঘটনাও ঘটেছে। নিরাপত্তা আইনের ফলে এসডিএফ এবং মার্কিন বাহিনী একে অপরকে রক্ষার কাজে সহায়তা করতে পারবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধতণ কর্মকর্তা বলেছেন “চীনের সাথে যে কোনো ধরনের সাংঘার্ষিক অবস্থা এড়াতে জাপান ও আমেরিকা’র ঐক্যবন্ধন প্রদর্শন খুবই জরুরি”।
সরকার আইনটি পাস করতে বেশ তাড়াহুড়ো করেছে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র ভাষায় “জাপানের চারপাশের নিরাপত্তা পরিবেশ ক্রমেই গুরুতর হয়ে উঠছে”।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গেন নাগাতানি চীনের ক্রম ক্ষমতাধর হয়ে ওঠার ব্যাপারে উদ্বেগ করেছেন। চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রতিবছরই বিপুল ভাবে বাড়ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীন এখন সাগর ভরাট করে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে, যেখানে ফিলিপাইন সহ বিভিন্ন দেশ তাদের সার্বভৌমত্য দাবি করে থাকে।
উচ্চকক্ষের বিশেষ কমিটিতের বৈঠকে আবে বলেন “যদি কিছু ঘটে যাওয়ার পর আমরা এই আইন করি তবে তাতে অনেক দেরী হয়ে যাবে” তিনি বলেন “ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আমাদেরকে আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে”।