• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ‘বড় টিম’ হওয়ার জন্য ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে মাশরাফি

    বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে এখন আর দুর্বল কোন দল নয় । বরং সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় পারফরমেন্স দিয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে তারা ক্রমান্বয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে জানান দিয়ে আসছে টাইগাররা । তবে ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের পরিণত করতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে । আর এ জন্য দলের ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা-দায়ী অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ।
    মাশরাফি চান ক্রিকেটের বড় দলগুলোর মত তার দলের ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের ইনিংসগুলোকে বড় ইনিংসে উন্নীত করার মন্ত্র শিখে নিতে পারে ।
    ডাম্বুল্লায় প্রথম লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ওডিআই তে তামিম ইকবালের ১২৭ রানের ইনিংস বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর হিসেবে ৩২৪ রানের পাহাড় গড়ে দিতে সাহায্য করেছে। তামিমের এই লম্বা ইনিংস খেলার সময় সাকিব ও সাব্বির দুটি ঝরো ফিফটিও দারুণ সাহায্য করেছে।
    তামিম যদিও বাংলাদেশের ‘সেরা’ ব্যাটসম্যান তবুও তার ৫০ কে ১০০ তে উন্নীত করার হার বেশ করুণ । ৪২ টা ওডিআই ফিফটির বিপরীতে তামিমের শতক মাত্র ৮ টি। অন্যদিকে ৩৩ টা ফিফটির বিপরীতে সাকিবের আছে ৬ টি শতক। চারটি শতকের সঙ্গে মুশফিকের আছে ২৩ টি ফিফটি। তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে সৌম্য সরকার ২১ ওডিআই ম্যাচে চার ফিফটির বিপরীতে মাত্র ১ টি শতক করেছেন।
    দেশের বাইরে খেলার জন্য ব্যাটিং আমাদের শক্তি উল্লেখ করে দলীয় অধিনায়ক মাশরাফি বলেছেন, বড় স্কোর করতে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ৫০-৭০ রানের রান মার্ক পর করুক। এটাই এখন আমাদের জন্য শেখার সময় ।  সাব্বির মিস করলেও তামিম গত ম্যাচে শতক করেছে । যখন কেউ এমন বড় ইনিংস খেলে তখন ম্যাচ সহজ হয়ে যায়।
    মাশরাফি আরো বলেন, ম্যাচ শেষ করে আসাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।খেলোয়ারদের বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য থাকলে প্রতিপক্ষের গড়ে দেয়া বড় স্কোর দলীয়ভাবে অতিক্রম করা সহজ হয়ে ওঠে।
    গত নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কিছু কৌশলগত পরিবর্তন তাদের খেলায় যোগ করা শুরু করে।
    মাশরাফি জানান, দেশের মাটিতে সর্বশেষ ইংল্যান্ড সিরিজের পর থেকেই আমরা খেলোয়ারদের মধ্যে কিছু কৌশলগত টেকনিক নিয়ে কিছু কাজ করি। এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজে সেগুলো প্রয়োগ করা হলেও কিছু সুযোগ সৃষ্টি করা ছাড়া তেমন কিছু হয় নি। কিন্তু এখানে অামরা একটি টেস্ট ও ওয়ানডে ম্যাচ জিতে নিয়েছি। অন্তিমগুলোও বিদেশের মাটিতে জিততে সময় নেয়। আমরাও শিখছি। নিউজিল্যান্ডে হয়ত জিততে পারিনি কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের কাজে এসেছে।
    আগামীকাল একই ভেন্যুতে লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচে মুখোমুখি হবে মাশরাফি বাহিনী।

    জাপানে তুষার ধস : ৮ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার আশঙ্কা

    জাপানের উত্তর টোকিও এলাকার স্কি রিসোর্টে তুষার ধসের ঘটনায় ৮ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে উদ্ধারকারী দল। এর আগে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল ৩ শিশু তুষার ধসের পর নিখোঁজ রয়েছে। সোমবার সকালে উত্তর টোকিওর নাসু অনসেন ফ্যামিলি স্কি রোসোর্টে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
    জাপানের সংবাদ সংস্থা ‘কিয়োদো’র উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, ৮ শিশু নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু সংখ্যাটি আরো বেশি হতে পারে। উদ্ধারকারী দল এখনো সেখানে কাজ করছে।
    জাপানের একাধিক স্কুল থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্কি রিসোর্টটিতে এসেছিল। মোট ৫০ জন ধসের সময় রিসোর্টটিতে ছিল।
    এই ঘটনার পর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আরো কেউ নিখোঁজ রয়েছে কিনা, অথবা এই ঘটনায় আহত অবস্থায় আছে কিনা, তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে। বিবিসি।
    কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগুন : নাশকতা না দুর্ঘটনা
    হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৮০৮ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় এখনো বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ওই ঘটনার এক বছর পার হতে না হতে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের একটি ই-মেইল থেকে ব্যাংকগুলোকে ভুয়া বার্তা পাঠানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে একই বিভাগে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব ঘটনা কাকতালীয় না পরিকল্পিত তা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন-এটি শুধুমাত্র দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, নাকি ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতিবাজরা তাদের অপরাধ আড়াল করতে এই অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছেন। রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িতরা তথ্য-প্রমাণ পুড়িয়ে ফেলার জন্য তিন দিনের এক লম্বা ছুটির আগে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও অনেকের ধারণা। আগুনের ভয়াবহতা খুব বেশি না। তবে এ নিয়ে সন্দেহ অত্যন্ত তীব্র। ঘটনার পরপর বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে এ নিয়ে তীর্যক সমালোচনা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িতরা তথ্য-প্রমাণ গায়েব করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এমনটাই আলোচিত হয়েছে। এই ঘটনাকে পরিকল্পিত বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশের দুই ঘণ্টার মধ্যে আগুন লাগায় অনেকে নাশকতা বলতেও দ্বিধা করেননি। বিএনপি নেতারাও রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ না হওয়ায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আগুন লাগার ঘটনায় জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনার সাথে সরকার জড়িত বলেও উল্লেখ করেছেন। এদিকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দুই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে আগুন লাগার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে অগ্নিকান্ডের খবর বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির নিয়ামক এই প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভবনের অবকাঠামো অগ্নিনির্বাপক উপযোগী নয় বলেও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
    অর্থনীতিবিদ ড. আবু আহমেদ বলেন, একের পর এক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্ঘটনা রহস্যজনক। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন বেহাল অবস্থায় বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। রিজার্ভ চুরির পর বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হওয়া বিরল ঘটনা। এমতাবস্থায় সরকারকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
    বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেছেন, এটা বিদেশী ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে পাকিস্তানের। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তান পন্থীরাও এ ঘটনা ঘটাতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাকিস্তান আমাদের শত্রæ।
    রিজার্ভ চুরি ও আগুন লাগার দুটি ঘটনা কাকতালীয় নাকি উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকে। এমন প্রশ্নে বিব্রত অর্থপ্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্যে এর সাদৃশ্যের কথা স্বীকার না করলেও বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর তদন্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
    আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক তহবিল লোপাটের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা। চুরি হওয়া আট কোটি দশ লাখ ডলার চলে গিয়েছিল ফিলিপিন্সের ব্যাংক ও জুয়ার বাজারে। সে অর্থ ফেরত আনার জন্য তদ্বিরও করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিষয়টি এখন সে দেশে অনেকটাই স্থবির আছে।
    সূত্র মতে, রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে এমনিতেই সমালোচিত বাংলাদেশ ব্যাংক, এর ওপর বৃহস্পতিবারের আগুন লাগার ঘটনা বিষয়টিকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ দু’টি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। উভয় ঘটনার মধ্যে একটি সাদৃশ্য এ প্রশ্নটিকে আরও জোরালো করেছে, আর তা হচ্ছে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছিল ৩ দিনের ছুটির ফাঁকে, এবারও আগুন লাগার ঘটনার পরে রয়েছে তিন দিনের ছুটি। সঙ্গত কারণেই, দুটি ঘটনা কাকতালীয় নাকি উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টিকে রহস্যজনক মনে করছেন। তাদের মতে, রিজার্ভ চুরির ঘটনা ধামাচাপা বা নথিপত্র গায়েব করতেও কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ১৪ তলায় অবস্থিত বৈদশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ। আর এর ঠিক উপরের তলাতেই রয়েছে আরেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মনিটরিং দফতর। যেখানটায় বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ও দেশের ব্যাংক খাতের বড় বড় অনিয়মের নথিপত্র রয়েছে। অপরদিকে নিচের তলাতে ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ।
    অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি গতকাল তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, রিজার্ভের টাকা লুটের পর ই-মেইলে ভুয়া বার্তার ঘটনা। এর পরপরই একই বিভাগে আগুন লাগার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে নানান প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। পর পর কেনো এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে! এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো গাফিলতি আছে কি-না? সে বিষয়ে গভীরভাবে উচ্চতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ামক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’। এখানে একের পর এক দুর্ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার। বিশেষ করে এসব ঘটনায় অন্যকোনো লিংক আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না।
    বৃহস্পতিবার এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এসব কর্তাব্যক্তির উপস্থিতি বাড়তি গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্ব কেন? অবশ্যই কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত সুরক্ষিত থাকার কথা। এতে বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটলে উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। যদিও গতকাল এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এই ঘটনাকে স্বাভাবিক বলেই মন্তব্য করেছেন। এদিকে কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং দেশের আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ামক এই ব্যাংকের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন রাখেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান। তিনি বলেন, অগ্নিকাÐ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। ভবনের অবকাঠামো অগ্নিনির্বাপক উপযোগী নয়। তাছাড়া ফায়ার অ্যালার্মগুলোও অকার্যকর।
    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ গতকাল সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা মান্ধাতা আমলের। একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও অগ্নিনির্বাপণে কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। এলাকাবাসীর ফোনে তারা নিজ উদ্যোগে ছুটে গেছেন। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তদন্তে বিস্তারিত আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যেন জোরদার করা হয় সেজন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান। এছাড়া মাঝে মধ্যে অগ্নিকান্ড ঘটলে কী করণীয় সে বিষয়ে ট্রায়াল যেন নিয়মিত করা হয় সেই সুপারিশও থাকবে কমিটির পক্ষ থেকে। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপনে ফায়ার অ্যালার্মসহ দরকারি সরঞ্জামাদি রাখা এবং কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
    এদিকে, গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দুই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটির তিন সদস্য গতকাল সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় যান। সেখানে তারা দেড়-দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে সাংবাদিকদের তদন্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল সাংবাদিকদের বলেন, আগুন লাগার সময়ে ওই বিভাগের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। রাত ৮টার মধ্যে নিরাপত্তা বিভাগ নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব বিভাগের দরজা বন্ধ করে দেয়। আর রাত ৯টার পরে আগুন লাগে। বিষয়টা প্রথমে নিরাপত্তা বিভাগ জানতে পেরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাক ও তার সহকারীর দুইটি কক্ষই পুড়ে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় অন্যান্য ডেস্কের কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই দুই কক্ষে থাকা টেবিল, চেয়ার, সোফা ইত্যাদি পুড়েছে। কিন্তু ওইখানে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ খুবই সামান্য। তবে ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছে, তা স্পষ্ট করে তিনি বলেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব.) মো. মাহমুদুল হক খান চৌধুরী ও কমন সার্ভিসেস্ ডিপার্টমেন্ট-২-এর মহাব্যবস্থাপক মো. তফাজ্জল হোসেন।
    জানা গেছে, মহাব্যবস্থাপকের কক্ষে থাকা দু’টি কম্পিউটার, কয়েকটি চেয়ার, দু’টি টেবিল, একটি ফটোকপি মেশিন এবং মহাব্যবস্থাপকের ব্যক্তিগত কিছু ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, তদন্ত শেষ হলে অগ্নিকান্ডের প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন- বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হতে পারে। রিজার্ভ চুরির তথ্য আড়াল করা বা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে অগ্নিকান্ডরর যে কথা বলা হচ্ছে, তাও সঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভ্রান্তিকর কথা বলা হচ্ছে। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংকের যে বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের কক্ষে আগুন লেগেছে সেখান থেকে বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখান থেকে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদন হয়না, এমনকি আর্থিক লেনদেন সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যও থাকে না। এদিকে গতকাল দুপুরের পর পরই ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আগুন পোড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা বিকেল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এসময়ে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
    আলোচনায় রিজার্ভ চুরি ও ৩ দিনের ছুটি
    ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি দিবাগত রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম হ্যাকড করে রিজার্ভ ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা চুরি করা হয়। সেদিনটা ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দুইদিন শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি পালিত হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি। আবার ৭ ফেব্রæয়ারি (সোমবার) চীনের নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি ছিল ফিলিপাইনে। এই ছুটির ফাঁকে মার্কিন ফেডারেল ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে স্থানান্তর করা হয় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে। তিন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনের ছুটির দিনগুলোকে সমন্বয় করেই হ্যাকাররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এবার আগুন লাগার পরের দুইদিন বাংলাদেশে সাপ্তাহিক ছুটি, আবার রবিবার বিভিন্ন দেশের ছুটির সঙ্গে বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবসের ছুটিও রয়েছে।
    ছুটির ফাঁকে আগুন লাগার ঘটনায় রিজার্ভ চুরির সময়ের সাদৃশ্য থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা ঠিক হবে না। তবে আপাতত এমনটি মনে হচ্ছে না। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও উল্লেখ করেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বারবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা কোনওভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাকতালীয় হোক আর যা-ই হোক, এভাবে আগুন লাগার পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের আইসিটি বিভাগ, বুয়েট ও কম্পিউটার সায়েন্সের বিশেষজ্ঞদের দেখানো হবে। ঘটনা যা-ই ঘটুক, প্রকৃত ঘটনা সবাইকে জানানো হবে। এখানে ঢেকে রাখার কিছু নেই। সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি দেশবাসীকে সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান।
    রিজার্ভ চুরি নিয়ে বিবিসি বাংলা
    বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত। অপরাধীরা ঢাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিবিসি বাংলা ফিলিপিন্সের ইনকোয়ারার পত্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্যাক্সিম লুকাসের বরাত দিয়ে একটি সংবাদ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে। যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রথমে বিস্তারিত ফাঁস করে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। এই সংবাদ প্রকাশের দুই ঘন্টা পরই বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন লাগে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে- ফিলিপিন্সের কিছু কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, যারা এ অপরাধের সূচনা করেছিল তারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরের লোক। ফিলিপিন্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক ড্যাক্সিম লুকাসকে বলেছে- বাংলাদেশ অযথাই ফিলিপিন্সের ঘাড়ে বেশি দোষ চাপাচ্ছে। অপরাধীরা হয়তো ঢাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
    বাংলাদেশ ব্যাংকের জিডি
    বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্মপরিচালক নুরুল ইসলাম মতিঝিল থানায় জিডি করেন। মতিঝিল থানার এসআই ইব্রাহিম জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জিডিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৯ টা ২০ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয় ৩০তলা ভবনের ১৪ তলার বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আগুনের শিখা দেখা যায়। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ৩০ মিনিটের ভেতরের মধ্যে আগুনের শিখা নিভিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বন জানানো হয়েছে।
    উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার ২০ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মাসুদ বিশ্বাসের কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে রাত ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে। এ ঘটনা তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়। একটি তিন সদস্যের অন্যটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

    ২৫শে মার্চ: গণহত্যা দিবস আজ

    আজ সেই ভয়াল ও বীভত্স কালরাত্রির স্মৃতিবাহী ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। একাত্তরের অগ্নিঝরা এই দিনে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। এ রাতে বর্বর পাক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর এদিন বাঙ্গালি জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের এক নৃশংস বর্বরতা।

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ঢাকায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সেই বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হবে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘটানো গণহত্যার দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় ৪৬ বছর পর গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে সর্ব সম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য উল্লিখিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। সংসদে পাস হওয়ার পর গত ২০ মার্চ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ দিবসটি পালনে গত ২১ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে কেন গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, এর পেছনে সমস্ত তথ্য উপাত্ত, যুক্তি উপস্থাপনে ডকুমেন্টস তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে এসব তথ্য-উপাত্ত বিভিন্ন দেশ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তাই এটা শেষ হলেই ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের যুক্তিগুলো তুলে ধরে তারা পুরোদমে কূটনৈতিক তত্পরতা জোরদার করবে।
    কী ঘটেছিল সেদিন: ২৫ মার্চের সেই দিন শেষে নেমেছে সন্ধ্যা। গভীর হতে শুরু করেছে রাত। তখনো কেউ জানে না কী ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় রাত আসছে বাঙালির জীবনে। ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জীপ,  ট্রাক বোঝাই করে নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্যরা ট্যাঙ্কসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়লো শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠলো আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের মাধ্যমে পাক জল্লাদ বাহিনী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হলো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তান্ডব। হকচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে। মানুষের কান্না ও আর্তচিত্কারে ভারি হয়ে ওঠে শহরের আকাশ। মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হলো লাশের শহরে। ঢাকা শহরের রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে তারা বাঙালি নিধন শুরু করে। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল অর্ধ লক্ষাধিক বাঙালিকে। আর এর মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো কালিমালিপ্ত আরেকটি অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ববিবেক।
    শুধু নিষ্ঠুর ও বীভংস হত্যাকান্ডই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যমও সেদিন রেহাই পায়নি জল্লাদ ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা থেকে। পাক হানাদাররা সেই রাতে অগ্নিসংযোগ, মর্টার সেল ছুঁড়ে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেসক্লাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এ হামলায় জীবন দিতে হয় বেশ কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মীকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও জান্তাদের কালো থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য. ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয় শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাদের এই সশস্ত্র অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল একটি। আর তা হলো বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খাকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করা।
    ২৫ মার্চ রাত সোয়া ১টার দিকে এক দল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। তখন বঙ্গবন্ধু বীরের মতো দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়া হয়। এ সময় বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাতের জন্য বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। অবশ্য গ্রেফতার হওয়ার আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাত্ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তত্কালীন ইপিয়ারের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। আর এই ওয়্যারলেস বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছে। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙ্গর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। তখন চট্টগ্রামে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের তত্কালীন শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। এই রাত একদিকে যেমন বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করেছিল, তেমনি এ রাতেই সূচিত হয়েছিল জঘন্যতম গণহত্যার। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তাদের এ দেশীয় দোসর ঘাতক দালাল, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।
    নানা কর্মসূচী:জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে সেই কালরাতে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার বীর বাঙালীদের। রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। শোকাবহ জাতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশী দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিবসটি পালনে ২ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রর্দশনীসহ নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা। এই প্রদর্শনী চলবে দু’দিন। এছাড়া দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি রয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর লালবাগ আজাদ মাঠে এবং একই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের উদ্যোগে আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া
    আগামী ৩০ মার্চ যশোরের চুকনগর বধ্যভূমিতে বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। জনসভা দুটিতে নেতৃত্ব দিবেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
    আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারাদেশে সভা, সমাবেশ, পশাভাযাত্রা, আলোকচিত্র প্রদশর্নীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করার জন্য আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
    আবারো শীর্ষ ধনী বিল গেটস ট্রাম্পের পতন
    ফোর্বস সাময়িকীর সেরা ধনীদের তালিকায় আবারো শীর্ষস্থান দখল করেছেন টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তবে ধনীদের তালিকায় নিজের অবস্থান থেকে ২০০ ধাপ পতন হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। প্রভাবশালী সাময়িকীটি সোমবার বিশ্বের সেরা দুই হাজার ধনীর তালিকা প্রকাশ করেছে। ৮৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে এবার তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন বিল গেটস। গত চার বছর ধরেই তিনি তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছেন। তালিকার শীর্ষস্থানে থাকা ধনীদের মধ্যে বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর এর মধ্যে বেশিরভাগ ধনী ব্যক্তিই প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিল গেটসের পরেই রয়েছেনÑ বিলিয়নিয়র ওয়ারেন বাফেট। তার সম্পদের পরিমাণ ৭৫.৬ বিলিয়ন ডলার। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছেন অনলাইন ভিত্তিক পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সবচেয়ে বড় মার্কেট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। গত বছরের তুলনায় ২৭.৬ বিলিয়ন ডলার সম্পদ বৃদ্ধি হয়ে তার সম্পদের মূল্যমান হয়েছে ৭২.৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ তালিকার ৫ নম্বর এবং ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি অ্যালিসন রয়েছেন তালিকার সপ্তম অবস্থানে। ফোর্বস জানায়, তালিকায় থাকা ১৮৩ প্রযুক্তিবিষয়ক ব্যবসায়ীর সম্পদের মূল্যমান ১ ট্রিলিয়ন ডলার। বিলিয়নিয়রের তালিকায় ১৩ ভাগ নতুন সদস্য যোগ হওয়ায় এবার ধনীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৩ জন। সর্বোচ্চসংখ্যক ৫৬৫ বিলিয়নিয়র নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ৩১৯ জন বিলিয়নিয়র নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে চীন এবং ১১৪ জন বিলিয়নিয়র নিয়ে তালিকার তৃতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে জার্মানি।
    মুকুট ফিরে পেলেন সাকিব
    টেস্টে সেরা অল রাউন্ডারের লড়াইটা অশ্বিনের সঙ্গে ভালোই চলছে সাকিবের। টেস্টের সেরা অল রাউন্ডারের মুকুট হারিয়েছিলেন সাকিব ভারতের অশ্বিনের কাছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ে  অশ্বিন টেস্ট রেটিং পয়েন্টে (৪৯৩) এতোটাই উপরে উঠেছিলেন যে, নিউজিল্যান্ড সফরে ক্রাইশ্চার্চে ডাবল সেঞ্চুরিতে ক্যারিয়ার সেরা রেটিং পয়েন্টে (৪৪৩) পেয়েও অশ্বিনের পেছনে ছিলেন সাকিব। তবে পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি এবং ৬ উইকেটে (২ ইনিংস মিলে) টেস্ট অল রাউন্ডারের মুকুট ফিরে পেয়েছেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান সিরিজে ভারতের অশ্বিনের সর্বশেষ রেটিং যেখানে ৪০৮, সেখানে দুর্দান্ত অল রাউন্ড পারফরমেন্সে সাকিবের  সর্বশেষ রেটিং পয়েন্ট ৪৩১। এক সঙ্গে তিন ফরমেটের ক্রিকেটে সেরা অল রাউন্ডারের মুকুট লম্বা সময় মাথায় ছিল তার। সম্প্রতি টেস্ট অল রাউন্ডারের মুকুট হারিয়ে আবারো তা পুনরুদ্ধারে নতুন উচ্চতায় উঠে এলেন সাকিব। ওয়ানডে,টি-২০ এবং টেস্ট তিন ফরমেটের ক্রিকেটে এক সঙ্গে সেরা অল রাউন্ডারের মুকুট মাথায় উঠল আবারো সাকিবের।
    শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সিরিজ সেরা সাকিবের পারফরমেন্সে ব্যাটিং এবং বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়েও সাকিবের অবস্থানের উন্নতি ঘটিয়েছে। ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫ ধাপ উপরে উঠে সাকিবের অবস্থান এখন ২১তম। টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ৬৭৬ রেটিং পয়েন্টে অবস্থান করছেন তিনি। বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে সেখানে ১ ধাপ উন্নতি হয়ে ১৭তম অবস্থানে এখন সাকিব (৬৩৮ পয়েন্ট)।
    শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট পারফরমেন্সে ৯ ধাপ এগিয়ে ২৪ নম্বরে রয়েছেন তামিম ইকবাল। আইসিসি প্রকাশিত সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে তার রেটিং পয়েন্ট এখন ৬৫৪। একধাপ এগিয়ে ২৮ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন মুশফিক। তার রেটিং পয়েন্ট এখন ৬৪৪। বাংলাদেশের শততম টেস্টে দুর্দান্ত এক স্পেলে (৭-১-২৪-৩) শ্রীলঙ্কাকে কাঁপিয়ে দেয়া বাঁ হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান টেস্টে বোলারদের র‌্যাকিংয়ে ২০ ধাপ লাফিয়ে এখন অবস্থান করছেন ৪৭ নম্বরে। ক্যারিয়ার সেরা রেটিং পয়েন্ট (৩৬০) পেয়েছেন তিনি।
    টেস্ট এ ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার উপরে আছেন যথারীতি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ক্যারিয়ার সেরা রেটিং (৯৪১) পয়েন্ট পেয়েছেন তিনি। রাঁচি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিতে ভারতের টপ অর্ডার চেতশ্বর পুজারা ৪ ধাপ লাফিয়ে উঠে এসেছেন ২ নম্বরে। ক্যারিয়ার সেরা রেটিং পয়েন্ট ( ৮৬১)অর্জন করেছেন তিনি  বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান নড়চড় হয়নি, ভারতের বাঁ হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ক্যারিয়ার সেরাপ ৮৯৯ পয়েন্ট নিয়ে আছেন র‌্যাকিংয়ে সেরা অবস্থানে। তার পেছনে আছেন অশ্বিন (৮৬২)। এক ধাপ নীচে নেমে ৩ নম্বরে অবস্থান করছেন এখন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ (৮৫৪)

    জল আছে নতুন সাত ‘পৃথিবী’তে!

    নতুন সাত ‘পৃথিবী’ রীতিমতো তরল জলে টইটুম্বুর হয়ে আছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই সাত গ্রহে সাগর, মহাসাগর রয়েছে। আর সেই পানি ঢাকা নেই কোনো পুরু বরফের চাদরের তলায়। যে তাপমাত্রা থাকলে পৃথিবীর সাগর, মহাসাগরের পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে, ঠিক সেই তাপমাত্রা আছে নতুন এই সাত গ্রহে। তাই সদ্য আবিষ্কৃত নতুন সাত গ্রহের পানিও রয়েছে একেবারে তরল অবস্থায়।
    ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন নতুন সাত গ্রহের মূল আবিষ্কারক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মিশেল গিলন।
    তিনি জানান, আগামী বছর নাসা মহাকাশে পাঠাচ্ছে আরও বড়, আরও দক্ষ টেলিস্কোপ। যার নাম- জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)। তাই গিলনের প্রত্যাশা, ‘হয়তো আগামী বছরের মধ্যেই আমরা জানতে পারব ঠিক কতটুকু পানি আছে নতুন সাত গ্রহে।’
    গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতরে বসে পাঁচ বিজ্ঞানী ঘোষণা করেছিলেন ‘পৃথিবী’র মতো নতুন সাত গ্রহের আবিষ্কারের খবর।

    শততম টেস্টে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়

    শততম ওয়ানডের পর শততম টেস্টটা জয় দিয়ে স্মরণীয় করে রাখল বাংলাদেশ। কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কাকে উইকেট হারালো টাইগাররা।
    চতুর্থ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ১৯১ রানের জবাবে ৪ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। জয়সূচক রানটি আসে মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে। তার সঙ্গে ২২ রান করে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ইতিহাসের চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজেও সমতায় শেষ করল মুশফিকুর রহিমের দল।
    প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১২৯ রানের লিড টপকে সবক’টি উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার লিড হয় ১৯০ রান। আর দলীয় সংগ্রহ ৩১৯। ১৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২২ রানে একই সাথে সৌম্য ও ইমরুল কায়েসকে হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাব্বিরকে সঙ্গে নিয়ে তামিম ইকবাল ১০৯ রানের জুটি গড়ে তোলেন। পেরেরার বলে চান্ডিমালের হাতে ধরা পড়ার আগে ১২৫ বলে ৮২ রান করেন তামিম। দলীয় রান তখন ১৩১। দলীয় ১৪৩ রানে আউট হয়ে যান সাব্বির রহমানও। আউট হওয়ার আগে ৪২ রান করেছিলেন তিনি।
    পেরেরার বলে পঞ্চম উইকেট হিসেবে সাকিবের পতনের পরে আশঙ্কা জেগে ওঠে। দলের তখন প্রয়োজন আরো ২৯ রান। মোসাদ্দেকের সঙ্গে ২৭ রানের এক লড়াকু জুটি গড়ে সেই আশঙ্কা দূর করেন মুশফিক। ১৮৯ রানে মোসাদ্দেক হেরাথের শিকার হয়ে ফেরত যাওয়ার পরে সুইপ করে দুই রান তুলে নিয়ে শততম টেস্ট জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ।
    এর আগে কলম্বো টেস্টে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা করেছিলো ৩৩৮ রান। জবাবে সাকিব আল হাসানের দারুণ সেঞ্চুরি এবং মোসাদ্দেক, মুশফিক, সৌম্যদের ফিফটিতে ৪৬৭ রান করে বাংলাদেশ; লিড ১২৯ রানের। সেই লিডের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ধসের পরেও করুনারত্নের সেঞ্চুরি ও লোয়ার অর্ডারে দিলরুয়ান পেরেরার অর্ধশত রানে ১৯১ রানের লিড দিতে সক্ষম হয় শ্রীলংকা। কিন্তু শততম টেস্টটি স্মরণীয় করে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়েই পৌছে যায় সেই লক্ষ্যে।

    প্রযুক্তি : সেলফি

    বর্তমান সময়ে সেলফি-আসক্তি অনেকটা মনোরোগের পর্যায়ে চলে গেছে। মনস্তত্ববিদগণ এভাবেই তা ব্যাখ্যা করছেন। সেলফির বিচিত্র রূপ ও ব্যাপক বিস্তার সামনে রাখলে তাদের ব্যাখ্যার যথার্থতা বেশ বুঝে আসে।

    কিছু কিছু সেলফি আছে যা  সরাসরি নিজের প্রাণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। হিংস্র প্রাণীর সাথে সেলফি, চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি,পাহাড়ের চূড়ার প্রান্তে পা ঝুলিয়ে সেলফি, আরো কত রকমের সেলফি যে মানুষ তুলছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত-নিহত হচ্ছে তা একজন সাধারণ পত্রিকা-পাঠকেরও অজানা নয়। এখন তো সেলফির দৌরাত্ম্য ইবাদত-বন্দেগী পর্যন্তও পৌঁছে গেছে। মুসলমানের বহু কাঙ্ক্ষিত ইবাদত হজ্বে ও তাওয়াফেও সেলফির ছড়াছড়ি!

    সেলফির মূল কথাটি হচ্ছে নিজেকে বা নিজের বিশেষ কোনো মুহূর্তকে নিজে ধারণ করা। এই ধারণের প্রেরণা কী, উদ্দেশ্য কী?সাধারণত তা হয় মনের ইচ্ছা পূরণ, ক্ষণিকের আনন্দ এবং অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন ।

    মনের সকল ইচ্ছা পূরণ কি মানুষের জন্য কল্যাণকর? আর মানুষের কাছে  সবকিছু উপস্থাপন করে কী লাভ? নিজেকে ও নিজের সকল মুহূর্তকে উপস্থাপন করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। কুরআন মাজীদ আমাদের শেখাচ্ছে, ‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি রাব্বুল আলামীন।’

    আমার হজ্ব, আমার তাওয়াফ তো মানুষের জন্য নয়, আমার নিজের ইচ্ছা পূরণ বা বিনোদনের জন্যও  নয়, এ তো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার জন্য। আমি কি চিন্তা করেছি, সেলফির মতো সামান্য একটি ইচ্ছাপূরণের দ্বারা আমার ইবাদতটিই মাটি হয়ে যাচ্ছে? সেলফির দ্বারা তো ইবাদতের স্বরূপই বদলে যায়। বলুন তো ইবাদতের মধ্যে যে আল্লাহর বান্দা সেলফিগ্রস্ত হয় তার উদ্দেশ্য কি ইবাদত থাকে, না ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি? সে তো ইবাদত করছে না, ছবি  তোলার জন্য ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি করছে। কিংবা অন্তত আল্লাহকে ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই প্রাণহীন অঙ্গ-ভঙ্গির কী মূল্য তাহলে আল্লাহর কাছে হতে পারে?কুরআন মাজীদের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

    لَیْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ وَ لٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ الْكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ وَ اٰتَی الْمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ السَّآىِٕلِیْنَ وَ فِی الرِّقَابِ  وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ  وَ الْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عٰهَدُوْا وَ الصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیْنَ الْبَاْسِ اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا  وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ.

    পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্য (বান তো সে) যে, ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, শেষ দিবসের উপর, সমস্ত ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের উপর… -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭

    ঈমানদারের জন্যও এ আয়াতে এই গভীর শিক্ষা আছে যে, তার ইবাদত-বন্দেগীও যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে পর্যবসিত না হয়।

    আরেক জায়গায় মুমিনদের লক্ষ্য করে ইরশাদ হয়েছে-

    لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ  وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.

    আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তার (কুরবানীর প্রাণীর) গোশত ও রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া…। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৭

    অথচ কুরবানীর মতো ইবাদতও যারা ভিডিও করে থাকেন তারা কি কুরবানীর পশুর রক্ত-মাংসের মধ্যেই বাধা পড়ে গেলেন না?

    আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইবাদতের প্রাণ হচ্ছে ‘যিকরুল্লাহ’ আল্লাহর স্মরণ। একারণেই সালাত ও কুরবানী, হজ্ব ও তাওয়াফ সব ক্ষেত্রেই কুরআন-সুন্নাহয় ‘আল্লাহর স্মরণ’ কথাটি উল্লেখিত হয়েছে। ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদির মাধ্যমে ইবাদতের এই বড় অনুষঙ্গটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা তো বলাই বাহুল্য।

    দ্বিতীয়ত, সেলফি যদি হয় বিনোদন তাহলে ইবাদত-বন্দেগীতে সেলফিগ্রস্ততার দ্বারা কি ইবাদতকে বিনোদনে পরিণত করা হয় না?

    দ্বীন-ধর্মকে ক্রীড়া ও বিনোদনে পর্যবসিত করা তো অনেক বড় অপরাধ।

    তৃতীয়ত, সেলফিতে যখন যোগ হয় লোকের বাহবা পাওয়ার চিন্তা তখন এর মাধ্যমে ইবাদত রিয়াগ্রস্ত হয়, যাকে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘শিরকে আসগর’।

    চিন্তা করলে দেখা যায়, উপরের যে কোনো একটি বিষয়ই ইবাদতকে বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই সামান্য ইচ্ছা পূরণের জন্য হজ্ব-কুরবানীর মতো বাঞ্ছিত ও প্রতীক্ষিত ইবাদতকে নষ্ট করে ফেলা কত বড় নির্বুদ্ধিতা! দেখুন, শয়তান কত সহজে আমাদের বহু আকাক্সিক্ষত ইবাদতগুলো মাটি করে দেয়!

    এরপর আসুন ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি প্রসঙ্গে। যে সেলফির জন্য তরুণ-যুবকেরা জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলছেন তারা হয়তো সচেতন নন যে, এভাবে তারা একটি গর্হিত কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। শরীয়তের বিধানে এটা বৈধ নয়। এ তো উপযুক্ত কারণ ছাড়া নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা, যা পরিষ্কার নিষেধ। হাদীস শরীফে তো মৃত্যুর কামনা করতেও নিষেধ করা হয়েছে তাহলে নিজেকে মৃত্যু-ঝুঁকির মুখোমুখি করার তো প্রশ্নই আসে না।

    মানুষের জীবন অতি মূল্যবান। এই একটিমাত্র জীবনকে কাজে লাগিয়ে যেমন মানুষকে আখিরাতের চিরস্থায়ী মুক্তি ও সাফল্য অন্বেষণ করতে হয় তেমনি পৃথিবীর অনেক এবং অনেকের দায়-দায়িত্বও পালন করতে হয়। তাহলে অর্থহীন কাজে এই জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা মর্মান্তিক অবিবেচনা নয় কি? হায়! মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান যে মানুষকে কতভাবে প্ররোচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে!

    প্রিয় বন্ধু! আপনি কি একজন সাহসী যুবক? আপনি কি আনন্দ পান অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া বা আলাদা হওয়ার মধ্যেই?তাহলে আপনাকে স্বাগতম! ইসলাম আপনাকে স্বাগত জানায় অর্থহীন কাজে নয়, অর্থপূর্ণ কর্মের বিস্তৃত অঙ্গনে-মানবসেবায়,জাতিগঠনে, ন্যায়ের বিস্তারে, অন্যায়ের প্রতিরোধে। দেখুন, একজন বহু সাধ্য-সাধনা করে তেলতেলে মুলিবাঁশ বেয়ে উঠে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। এই কর্মে সে এমনই অভাবিতপূর্ব সাফল্য অর্জন করল যে, শুধু মাটির মানুষ নয়, গাছের বানরও অভিভূত হয়ে গেল; বলুন তো এতে তার কী প্রাপ্তি ঘটল?

    তাই আজেবাজে কাজ নয়, এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র হচ্ছে জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও কর্ম-কুশলতা। চলুন না, এই সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাই। আর এগিয়ে যাই একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করবার জন্য, একমাত্র যাঁর কাছেই আমাদের সকল কর্ম ও মুহূর্ত থাকবে চির অক্ষয়।

    টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

    স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্বমানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।
    জাতির জনকের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও।
    শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার পর প্রথমে প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
    এ সময় তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়।
    শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক,  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
    আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন শওকত আলী, ফারুক খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, শেখ হেলাল উদ্দিন ও আবদুস সোবহান গোলাপ।
    প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো.শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন মাজার প্রাঙ্গণে।
    শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট মাজার কমপ্লেক্সের পরিদর্শন বইতেও স্বাক্ষর করেন।
    মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রেসিডেন্টকে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি উপহার দেন শেখ হাসিনা।
    দিনটি উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ,  আলোচনা সভা এবং গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
    বেলা পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় শিশু সমাবেশ ও আলোচনা সভায় যোগ দেন।
    আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সরকারিভাবেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
    শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করবে
    টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

    গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা :
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করে শিশুদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভেতর একটি আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য জাতির পিতা শিশুকাল থেকেই যেমন নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে, ঠিক সেভাবেই শিশুদের গড়ে তুলতে হবে’।
    শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার সেই জীবনী অনুসরণ করে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকা, কি পেলাম, কি পেলাম না, সেই চিন্তা না করা। কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম সেই চিন্তাটা সবার মাঝে থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০১৭’ উদযাপন উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে আয়োজিত শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
    মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে মালেকা একাডেমি গোপালগঞ্জের পঞ্চম শ্রেণির ছোট্ট শিশু উপমা বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফারিয়াদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাগত বক্তৃতা করে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার এবং দুস্থদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক শ’ জনের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কোমলমতি শিশু-কিশোর, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
    সরকার প্রধান বলেন, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিনটিকেই আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তার চিন্তা-চেতনার ফসলই হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছিÑ একটি ছোট্ট শিশু বাবা-মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কখনো সেই সৌভাগ্য হয়নি, বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার। কারণ, যখন একটু জ্ঞান হয়েছে, তখন থেকেই কারাগারে যেতাম বাবার সঙ্গে দেখা করতে। বাবার দোষ ছিল একটাই, তিনি এ দেশের দুঃখী, দরিদ্র মানুষ যাদের পেটে ভাত নেই, পরনে কাপড় নেই, যাদের থাকার মতো একটু বাসস্থান নেই, যারা রোগে-শোকে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়, এক ফোঁটা ওষুধ পায় নাÑ সেই বঞ্চিত, শোষিত মানুষগুলোর কথা তিনি সবসময় বলতেন। আর যখনই বলতেন, তখনই তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো। কিন্তু তিনি দমে যাননি। এই টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে তার জন্ম। এই এলাকার ধুলোমাটি শরীরে মেখে মাটিতে খেলাধুলা করে, পাশে বয়ে যাওয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তিনি বড় হয়েছেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গ্রামবাংলার মানুষকে চিনতেন, জানতেন, অনেক কাছে থেকে দেখেছেন তাদের সমস্যা। কাজেই তিনি সবসময় নিজেকে একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। আদর্শটা হচ্ছেÑ জনগণের সেবা ও জনকল্যাণে কাজ করা। তাই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর মমত্ববোধ সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন স্কুলে পড়তেন তখনই তার একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যার কাজ ছিল ধানের মৌসুমে গোলায় যখন ধান উঠত সেই ধান বা টাকা-পয়সা জোগাড় করে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের বই কিনে দিয়ে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা, সাহায্য করা। এভাবেই সেই ছোট্টবেলা থেকেই তার দেশসেবার হাতেখড়ি।
    প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার দাদীর কাছ থেকে শোনা কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, তোমার বাবার জন্য প্রতি মাসেই হয়তো বই, নয়তো ছাতা, নয়তো কাপড় কিনতে হতো। কারণ, তার প্রাণপ্রিয় বড় খোকা এগুলো দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দূরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বেলাতেই ঘরে খাবার খেতে চলে আসতেন। খোকার ভাগেরটাই খোকা সবাইকে নিয়ে ভাগ করে খেলেও তার দাদী জানান, আদরের খোকার জন্য সে সময় থেকেই তিনি ভাগে একটু বেশিই রেখে দিতেন। তার খোকাতো কখনো একলা খেতে বসতো না।
    শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত কিছুর পরও আমার দাদী কোনোদিনও এতটুকু রাগ করেননি এবং আমার দাদা-দাদী তাকে এভাবেই মানুষ করে তোলেন। যে কারণে তার মনটা হয়েছিল অনেক বড়, অনেক উদার এবং দেশের প্রতি অনেক দায়িত্ববান।’ বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে দারিদ্র্যের প্রতি অসম্ভব একটি সহানুভ‚তি নিয়ে এভাবেই জাতির পিতা বড় হয়েছিলেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীনতার পর সংবিধান দিয়েছেন এবং মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার সময় খাদ্যাভাব, টাকার অভাব, তারপরও তিনি শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। ২৬ হাজার ৯৬টি স্কুল জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের চাকরি তিনি জাতীয়করণ করে দেন।
    বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ছোট্ট শিশুদের সবসময়ই মনে করতেন, এই শিশুরাই তো একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। কাজেই তাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার অসাধারণ। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের জন্য ১৯৭৪ সালে শিশু অধিকার আইন পাস করেন। আজকে আমরা যাই করছি, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই করে যাচ্ছি। আমরা ৩৬ হাজারের ওপর স্কুল জাতীয়করণ করেছি। আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে প্রাক-প্রাইমারি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য আনন্দ স্কুল করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। যাতে বাবা-মাকে এই বইয়ের বোঝা টানতে না হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এক কোটি ৩০ লাখ বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি, ‘মায়ের হাসি’ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত বৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মায়ের হাতে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। আর যে মা স্কুলে বাচ্চাকে পাঠাবে সেই মাও একটি ভাতা পাচ্ছেন। আমরা সেই ব্যবস্থাটা করে দিচ্ছি যেন একটা শিশুও স্কুলের বাইরে না থাকে।
    প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করার প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বাংলাদেশটাকে ভিক্ষুক মুক্ত করতে চাই। এ জন্য প্রশাসনকে আমরা ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছিÑ প্রতিটি এলাকায় কেউ যেন ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে না পড়ে। সেই সাথে আরেকটি জিনিস আমরা করার পদক্ষেপ নিয়েছিÑ একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। স্কুলে যাবে এবং পড়াশোনা করবে। পড়াশোনার সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। পথশিশু বলে কোনো শিশু থাকবে না, টোকাই বলে কেউ থাকবে না। প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখবে এবং যাতে কাজ করে খেতে পারে, তার বন্দোবস্ত আমরা করে দিচ্ছি। কারণ, সবাই উচ্চশিক্ষা পাবে তা নয়, লেখাপড়ার মধ্যদিয়ে কে কোন ধরনের কাজ করবে, সেই সুযোগও আমরা করে দিতে চাই।
    শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শিশু নির্যাতন ও শিশু পাচার বন্ধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ জন্য বিশেষ আইনও করেছে এবং স্কুলে যেন বাচ্চারা থাকে, সে জন্য স্কুলগুলোতে টিফিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের যে শিশুÑ তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারাই আগামীর দেশকে গড়ে তুলবে এবং জাতির পিতা সবসময় যেটা বলতেনÑ আমি সোনার বাংলা গড়তে চাই। সে জন্য আমার সোনার ছেলে-মেয়ে দরকার।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। আজকে আল্লাহর রহমতে দেশে খাদ্যাভাব নেই। আমরা শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি। প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ে শতভাগ শিশু আজকে বিদ্যালয়মুখী হয়েছে এবং কোনো এলাকায় যদি দেখা যায় শিশুরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথাÑ শিশুদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। শুধু খাদ্য নয়Ñ তার সঙ্গে পুষ্টিরও ব্যবস্থা থাকবে। সেই সাথে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চারও বন্দোবস্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ের মেয়েদের জন্য তার সরকারের উদ্যোগে চালুকৃত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এসবের আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। কারণ, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন কোনো কারণে বিপথে না যায়। তিনি বলেন, এখানে অভিভাবক এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন, আমাদের মসজিদের ইমাম, ওলামা-মাশায়েখগণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন রয়েছেন। আমি একটা অনুরোধ সকলকেই করব যে, বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা আমাদের করতে হয়। কিন্তু আমরা এ দেশের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে সকল ষড়যন্ত্রই মোকাবেলা করতে পারব। তিনি বলেন, আমি সকলের কাছে আহŸান জানাবÑ প্রত্যেক অভিভাবক ও শিক্ষক দেখবেন তাদের ছেলে-মেয়ে কাদের সঙ্গে মিশে। তারা বিপথে যাচ্ছে কি-না। কোনোরকম মাদকাসক্তি বা জঙ্গিবাদের পথে যাচ্ছে কি-না তা দেখবেন। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে অনুপস্থিত কি-না তা শিক্ষকরাও লক্ষ্য রাখবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনেও ভ‚মিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক সমাজের প্রতি আহŸান জানান।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। তাই বলে কারো মধ্যে ধর্মান্ধতা যেন না আসে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে কোনো ধর্মই মানুষকে খুন করার কোনো অধিকার দেয়নি বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, আমরা চাই না আর কোনো ছেলে-মেয়ে এভাবে একই দিনে পিতা-মাতা ও স্বজনহারা হোক। তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ এমনভাবে গড়ে উঠবে, যার স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যখনই ক্ষমতায় এসেছি দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নত-সমৃদ্ধভাবে মানুষ বাঁচার সুযোগ পায়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জাতির পিতা এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আমি তো বলব, সন্তান হিসেবে আমরা তাকে কাছে পাইনি। তার স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি। তবে, আমাদের থেকেও তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন এই বাংলার মানুষকে। এটাই আমি অন্তত বলতে পারি। তিনি দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। আর এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। তাই তার অসমাপ্ত কাজ, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকেটও অবমুক্ত করেন।
    পরে ‘বাঙালি পরশমনি’ শীর্ষক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

     

    মেজবান ও মেহমানের কিছু আদব

    মুহাম্মাদুল্লাহ ইবনে ইয়াকুব

    মেহমানদারি একটি মহৎ গুণ, যা আত্মীয়তার বন্ধনকে মজবুত করে, বন্ধুত্বকে করে সুদৃঢ় এবং সামাজিক সৌহার্দ সৃষ্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। মেহমানদারি মুসলিমের একটি বিশেষ গুণ। সাহাবা-চরিত অধ্যয়ন করলে আমরা মুসলিমের এ গুণের অনন্য নজীর দেখতে পাই। আনসার-মুহাজিরদের মেহমানদারির নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে মেলা ভার। আর তাঁরাই আমাদের পূর্বসূরী।

    মেহমানদারি ছিল আমাদের নবীজীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নবীজীর উপর সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হওয়ার পর যখন তিনি হয়রান-পেরেশান হয়ে খাদিজা রা.-এর কাছে আসলেন তখন খাদিজা রা. তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, আল্লাহ আপনাকে অপদস্থ করবেন না। এরপর নবীজীর যে উত্তম গুণাবলীর উল্লেখ করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল- وَتَقْرِي الضَّيْفَ ‘আপনি তো মেহমানের সমাদর করেন’। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ সুন্নতকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন তাঁর হাতেগড়া সাহাবায়ে কেরাম।

    হাদীস শরীফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টির প্রতি তাকিদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

    مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ.

    আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৬

    অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    لَا خَيْرَ فِيمَنْ لَا يُضِيفُ

    যে মেহমানদারি করে না তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৪১৯

    আরেক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে লক্ষ করে বলেন, …নিশ্চয়ই তোমার উপর তোমার মেহমানের হক রয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৪

    আর মেহমানদারির এ গুণে গুনাম্বিত ছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তাঁর মেহমানদারির বর্ণনা কুরআনে কারীমে উল্লেখিত হয়েছে। আজকের অবসরে প্রথমে কুরআনে বর্ণিত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মেহমানদারির ঘটনা এবং তা থেকে শিক্ষণীয় কিছু আদব আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। সাথে সাথে মেহমান ও মেজবানেরও কিছু আদব আলোচনা করব। যাতে আমরা মেহমানের যথাযথ সমাদর করতে পারি এবং মেহমানদারির ফযীলত লাভ করতে পারি।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

    هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ ضَیْفِ اِبْرٰهِیْمَ الْمُكْرَمِیْنَ،  اِذْ دَخَلُوْا عَلَیْهِ فَقَالُوْا سَلٰمًا  قَالَ سَلٰمٌ  قَوْمٌ مُّنْكَرُوْنَ، فَرَاغَ اِلٰۤی اَهْلِهٖ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِیْنٍ، فَقَرَّبَهٗۤ اِلَیْهِمْ قَالَ اَلَا تَاْكُلُوْنَ، فَاَوْجَسَ مِنْهُمْ خِیْفَةً   قَالُوْا لَا تَخَفْ، وَ بَشَّرُوْهُ بِغُلٰمٍ عَلِیْمٍ.

    (হে রাসূল!) আপনার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত অতিথিদের বৃত্তান্ত পৌঁছেনি! যখন তারা ইবরাহীমের কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম, তখন সেও বলল, সালাম এবং মনে মনে চিন্তা করল যে, এরা তো অপরিচিত লোক। অতপর সে চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটাতাজা (ভুনা) বাছুর নিয়ে আসল, এবং তা সে অতিথিদের সামনে রাখল এবং বলল,আপনারা খাচ্ছেন না যে! এতে তাদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হল। তারা বলল, ভীত হয়ো না। অতপর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল। -সূরা যারিয়াত (৫১) : ২৩-২৭

    সূরা হুদে  আছে-

    فَمَا لَبِثَ اَنْ جَآءَ بِعِجْلٍ حَنِیْذٍ، فَلَمَّا رَاٰۤ اَیْدِیَهُمْ لَا تَصِلُ اِلَیْهِ نَكِرَهُمْ وَ اَوْجَسَ مِنْهُمْ خِیْفَةً …

    অতপর সে (ইবরাহীম আ.) অবিলম্বে তাদের আতিথেয়তার জন্য একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসল। কিন্তু যখন দেখল তাদের হাত সেদিকে (অর্থৎ বাছুরের দিকে) এগুচ্ছে না তখন তাদের ব্যাপারে তার খটকা লাগল এবং তাদের দিক থেকে অন্তরে শংকা বোধ করল। -সূরা হুদ (১১) : ৬৯-৭০

    উপরোক্ত আয়াতগুলোর আলোকে উলামায়ে কেরাম মেহমানদারির কিছু আদব বর্ণনা করেছেন :

    ১. মেজবান নিজেই মেহমানের আপ্যায়ন করবে। কেননা, ইবরাহীম আ. মেহমানের জন্য নিজেই খাবার নিয়ে এসেছেন। অন্য কাউকে আদেশ করেননি। -জিলাউল আফহাম, পৃ. ১৭৪

    তাই পারতপক্ষে নিজেই আপ্যায়নের চেষ্টা করা উচিৎ। আর খাদেম বা অন্য কারো দ্বারা মেহমানদারি করালে নিজেও খাবার আনা নেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

    ২. মেহমান আসার পর দ্রুত মেহমানদারির ব্যবস্থা করা। -তাফসীরে কুরতুবী (৯/৪৩)

    উপস্থিত যা থাকবে তা দিয়েই আপ্যায়ন করা। চাই তা শরবত বা চা-বিস্কুটই হোক। এরপর সাধ্য ও সামর্থ্যরে ভেতরে ভারসাম্যপূর্ণভাবে আরো ভাল কিছু করার চেষ্টা করা। কেননা, প্রথমেই ঘটা করে আপ্যায়নের জন্য মেহমানকে অভুক্ত বসিয়ে রাখা আদবের পরিপন্থী। ইবরাহীম আ.-এর ঘটনা থেকে এই আদবটা পাওয়া যায়। সূরা হুদের আয়াতে বলা হয়েছে فَمَا لَبِثَঅর্থাৎ মেহমান আসার পর অনতিবিলম্বে তিনি ভুনা বাছুর নিয়ে এলেন।

    ৩. আপ্যায়নের জন্য উপস্থিত যা থাকবে তার মধ্যে উত্তম ও উৎকৃষ্ট খাবার দ্বারা আপ্যায়ন করা। হযরত ইবরাহীম আ. অতিথিদের জন্য অল্প বয়সী হৃষ্টপুষ্ট বাছুর ভুনা করে নিয়ে এসেছেন। যা একটি উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু খাবার। মেহমানদারির জন্য তাঁর কাছে যা কিছু ছিল তন্মধ্যে এটিই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট। -ইবনে কাসীর ৪/৩৬৩; রুহুল মাআনী ১২/৯৪

    ৪. মেহমানের সামনে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পরিবেশন করা। যেন খাদ্য স্বল্পতার কারণে তৃপ্তিসহকারে খেতে তার লজ্জাবোধ না হয়। আমরা উপরের ঘটনায় দেখেছি, ইবরাহীম আ. মেহমানের সামনে ভুনাকরা গোটা একটি বাছুর পেশ করেছেন। অথচ এক বর্ণনা মতে জানা যায়, মেহমান ছিলেন শুধু তিন জন। -রুহুল মাআনী ১২/৯৩; কুরতুবী ৯/৪২

    ৫. মেহমানকে যেখানে বসানো হয়েছে সম্ভব হলে খাবার সেখানেই পেশ করার চেষ্টা করা। ইবরাহীম আ.-এর ঘটনা থেকে আমরা এই আদবটা পাই। কেননা তাঁর মেহমানদারির বর্ণনায় আছে- فَقَرَّبَهٗۤ اِلَیْهِمْ ভুনা বাছুরটি তিনি তাদের কাছে নিয়ে এলেন।

    তবে প্রয়োজন হলে বা বিশেষ কারণ থাকলে এর ব্যতিক্রম করতেও দোষ নেই।

    ৬. মেহমানকে খাবার শুরু করার আবেদন করতে গিয়ে আদেশ বাচক শব্দ ব্যবহার না করা। বরং কোমল, মার্জিত ও নম্র ভাষা ব্যবহার করা। (গিযাউল আলবাব ২/১১৬) যেমন, ‘মনে হয় খাবার শুরু করা যায়’, ‘খাবার শুরু করলে কেমন হয়’, ‘খাবারের পর্বটা সেরে ফেলা যায় না!’ ইত্যাদি।

    খাবার পরিবেশনের পর ইবরাহীম আ. যখন দেখলেন, তারা খাচ্ছেন না তখন কোমল ভাষায় বললেন, اَلَا تَاْكُلُوْنَ আপনারা খাচ্ছেন না যে! -ইবনে কাসীর ৪/৩৬৩

    ৭. খাবার বা নাস্তা দিব কি না- এমন প্রশ্ন মেহমানকে না করাই ভালো। কোনো কোনো সময় মেহমানকে তা সংকোচ ও দ্বিধায় ফেলে দেয়। যেমন ইবরাহীম আ. মেহমানদের জিজ্ঞেস করেননি; বরং অনতিবিলম্বে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।

    তদ্রূপ খাবার নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে মেহমানের সামনে থেকে এমনভাবে উঠে আসা ভালো, যেন সে বিষয়টা টের না পায়। কারণ মেযবান খাবার নিয়ে আসতে যাচ্ছে- এই ভাব প্রকাশ মেহমানের জন্য চাপ ও সংকোচের কারণ হতে পারে। ইবরাহীম আ.-এর মেহমানদারির ঘটনায় খাবার আনতে যাওয়ার বিষয়টি বিবৃত হয়েছে এভাবে- فَرَاغَ اِلٰۤی اَهْلِهٖ। এ বাক্যে رَاغَ শব্দটি روغانক্রিয়ামূল থেকে এসেছে, যার অর্থ, চুপিসারে বা অগোচরে গমন। অর্থাৎ তিনি চুপিসারে মেহমানের সামনে থেকে উঠে স্ত্রীর কাছে গেলেন। -ইবনে কাসীর ৪/৩৬৩

    তবে যে ক্ষেত্রে মেহমানের সংকোচবোধের সম্ভাবনা থাকবে না, সেক্ষেত্রে জিজ্ঞেস করেও খাবার আনা যেতে পারে।

    ৮. খাবার শুধু পরিবেশন করার দ্বারাই মেযবানের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং মেহমান খাচ্ছেন কি না- সেদিক লক্ষ্য রাখাও কর্তব্য। তবে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেহমানের মুখ ও পাতের দিকে তাকিয়ে থাকবে না, এতে তার অস্বস্তি বোধ হতে পারে। বরং উড়াল দৃষ্টিতে লক্ষ রাখবে। এই আদবটাও উক্ত ঘটনা থেকে বুঝা যায়। -তাফসীরে কুরতাবী ৯/৪৯; মা’আরিফুল কুরআন ৪/৬৪৯

    এমনিভাবে খাওয়ার সময় কোন্ মেহমানের কী দরকার- সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা কর্তব্য। খাবার বা পানীয় না পেয়ে মেহমানকে যেন অপেক্ষা কিংবা খাবার সমাপ্ত করে ফেলতে না হয়। অনেক সময় এটা মেহমানের জন্য বিব্রতবোধের কারণ হয়।

    কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকেই আমরা মেহমানদারির আটটি আদব জানতে পারলাম। ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, ইবরাহীম আ.-এর ঘটনাসংবলিত উক্ত আয়াতে মেহমানদারির যে আদবগুলো এসেছে তা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট আদব। -জিলাউল আফহাম, পৃ. ১৭৫

    এ ছাড়াও মেহমানদারির আরো কিছু আদব রয়েছে। এখানে তার কয়েকটি পেশ করা হলো :

    ৯. মেহমান একাধিক হলে যিনি বয়স, ইলম বা মর্যাদায় বড় তার থেকে পরিবেশন শুরু করা। এরপর তাঁর ডানে যে থাকবে তাকে দেওয়া। তবে যদি উপস্থিত সবাই সমপর্যায়ের বা কাছাকাছি পর্যায়ের হয় তাহলে পরিবেশকের ডান পাশ থেকে শুরু করবে। -মিন আদাবিল ইসলাম পৃ. ৬১

    ১০. একাধিক মেহমানকে দাওয়াত দেওয়া হলে খাবারের সময় যদি দু’একজন অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাদের জন্য  এত বেশি অপেক্ষা না করা, যা উপস্থিত মেহমানদের জন্য বিরক্তিকর ও অসহনীয় হয়ে পড়ে।

    ১১. মেহমানের সাথে দস্তরখানে অংশগ্রহণের চেষ্টা করা। তবে কোনো কারণবশত না পারলে দোষ নেই।

    ১২. আপ্যয়নের ক্ষেত্রে বাহুল্য না করে সামর্থ্যরে মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণভাবে মেহমানের সমাদর করা। -ফিকহুল আখলাক ২/৩৪৬;মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৭০

    হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেছেন, ইসলামের সরলতা ও অনাড়ম্বরতার উপর আমাদের থাকা উচিত। মেহমানের জন্য কোনো আয়োজন করা হলে সেটা ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া চাই। -ইসলাহুল মুসলিমিন, পৃ. ১২৬

    ১৩. মেহমানের আগমনে বিরক্ত না হওয়া। বরং সওয়াবের আশা করে ও তার হক আদায়ের উদ্দেশ্যে যথাসাধ্য সমাদর করার চেষ্টা করা। কেননা, মেহমান যা কিছু গ্রহণ করেন সেটা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত রিযক। আমাদের তো এটাকে সৌভাগ্য মনে করা উচিত যে, আল্লাহর রিযক তারই বান্দা পর্যন্ত পৌঁছতে তিনি আমার মতো এক নগণ্যকে সামান্য শ্রম ব্যয়ের সুযোগ দিয়েছেন। যে শ্রমের বিনিময়ে তিনি আমাকে অশেষ নেকী দান করবেন। তাছাড়া মেহমানের সমাদর করা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক বড় সুন্নত। মুমিন তো তাঁর প্রিয় নবীর সুন্নত সৌভাগ্য মনে করে পালন করবে।

    ১৪. নামাযের সময় হলে কেবলার দিক জানিয়ে দেয়া। তদ্রূপ অযুর জায়গা ও হাম্মাম চিনিয়ে দেয়া। -ইহইয়াউল উলূম ২/১৫

    ১৫. অযুর পর হাত-মুখ মোছার জন্য মেহমানকে নিজেদের ব্যবহৃত গামছা বা তোয়ালে না দেয়া। বরং তার জন্য আলাদা পরিচ্ছন্ন তোয়ালের ব্যবস্থা করা।  -মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৭১

    কারণ, নিজেদের ব্যবহৃত গামছা অনেক সময় একটু অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে। তাছাড়া অপরের গামছা/তোয়ালে ব্যবহার করতে অনেকের রুচিতে বাঁধে।

    ১৬. মেহমানের জন্য যে হাম্মাম ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে যেন এমন কোনো কাপড়-চোপড় না থাকে যা দৃষ্টিকটু। -প্রাগুক্ত

    ১৭. ঘরের মানুষের আওয়াজ ও শব্দের কারণে মেহমানের নিদ্রা ও বিশ্রামের যেন ব্যঘাত না ঘটে সেদিকে পূর্ণ লক্ষ রাখা। -প্রাগুক্ত

    ১৮. মেহমানের খাতিরে ভাল পোষাক-পরিচ্ছেদ পরে পরিপাটি থাকা এবং সুন্দর বেশভূষা অবলম্বনের চেষ্টা করা। তবে অতিরঞ্জন না হয় সেটাও লক্ষণীয়। -প্রাগুক্ত

    ১৯. মেহমান যেই হোক পূর্ণ যত্ন ও রুচিশীলতার সাথে মেহমানদারি কাম্য। মেহমান পরিচিত বা ঘনিষ্ঠজন হওয়ার কারণে তার সমাদরের ক্ষেত্রে ত্রুটি না করা। -প্রাগুক্ত

    ২০. মেহমানের ব্যক্তিত্ব, অবস্থা, পরিবেশ ও স্থান কাল বুঝে তার সাথে কিছু সরস কথাবার্তা বলা।

    ২১. কারো কোনো অসংলগ্ন কথা, কাজ কিংবা অন্য কোনো কারণে মেহমানের সামনেই তার উপর রেগে যাওয়া উচিত নয়। হাঁ,তখনই বলা আবশ্যক হলে আড়ালে গিয়ে বলবে। -গিযাউল আলবাব ২/১১৭

    তেমনি ঘরওয়ালাদের সাথেও কোনো বিষয় নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করবে না; এতে মেহমান ভাবতে পারেন আমার আগমনে হয়তো ঘরওয়ালা বিরক্ত।

    ২২. মেহমানের সামনে সহাস্যবদনে থাকার চেষ্টা করা। -প্রাগুক্ত

    ২৩. খাবারের পর্ব পরিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ার আগেই দস্তরখান না উঠানো।

    ২৪. মেহমান বিদায়ের সময় দরজা পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দেওয়া এবং সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে না দেওয়া; বরং খানিকটা দূরে চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

    মেহমানের আদব

    মেযবানের মতো মেহমানেরও কিছু করণীয় ও আদব রয়েছে। নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হল-

    ১. কারো বাড়িতে প্রবেশের সময় দৃষ্টি অবনত রাখা, যেন ঘরের কোনো নারীর প্রতি দৃষ্টি না পড়ে যায়। -মিন আদাবিল ইসলাম,পৃ. ৩৪

    ২. (পরিস্থিতি বিবেচনা করা) মেযবান বসতে বলার আগে না বসা। তদ্রূপ নিজের থেকে কোনো জায়গায় বসে না পড়া। বরং মেযবান যেখানে বসতে বলবেন সেখানে বসবে। -মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৩৫

    ৩. যে ঘরে বা যে দিকে নারীরা অবস্থান করে সেদিকে দৃষ্টিপাত না করা।

    ৪. মেযবানের কাছে এত বেশি সময় অবস্থান না করা, যা তার জন্য কষ্টের কারণ হয়। -মিন আদাবিল ইসলাম, পৃ. ৩৯

    ৫. মেযবানের কাছে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের আবদার না করা। হাঁ, যদি তার সাথে উষ্ণ সম্পর্ক হয় এবং এই আবদারে তিনি খুশি হন তাহলে দোষ নেই।

    ৬. খাবার পর্ব শেষ হওয়ার পর বেশি কথাবার্তা বা আলাপচারিতায় লিপ্ত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব মেযবানের কাছ থেকে বিদায় নেয়া। -আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ৩/১৭৭

    ৭. মেজবানের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করা। এত বেশিদিন অবস্থান না করা, যে কারণে মেজবানের কষ্ট হয় এবং মেহমানকে খাওয়ানোর মতো ভালো কিছু তার কাছে থাকে না ।

    হাদীস শরীফে এসেছে,  কোনো মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের কাছে এত বেশিদিন অবস্থান করে যে তাকে গুনাহে লিপ্ত করে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এটা কীভাবে? নবীজী বললেন, মেহমান এতদিন অবস্থান করল যে তাকে খাওয়ানোর মত কিছু মেজবানের কাছে অবশিষ্ট থাকল না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮

    ৮. মেহমানের সাথে যদি অনিমন্ত্রিত কেউ যুক্ত হয় তাহলে মেযবানের কাছে তার ব্যাপারে অনুমতি নেয়া।

    ৯. মেযবানের জন্য দুআ করা। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন দুআ বর্ণিত হয়েছে।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আব্দুল্লাহ ইবনে বুস্র রা.-এর বাবার আতিথ্য গ্রহণের পর তার জন্য নি¤েœাক্ত দুআ করেছিলেন-

    اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيْ مَا رَزَقْتَهُمْ، وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ.

    হে আল্লাহ! আপনি তাদের রিযিকে বরকত দান করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি রহম করুন। -সহীহ মুসলিম,হাদীস ২০৪২

    তেমনি কারো কাছে ইফতার করলে বা আতিথ্য গ্রহণ করলে নিম্নের দুআও পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সা‘দ ইবনে উবাদার কাছে এলে তিনি তার সামনে খাবার পেশ করলেন। খাবার শেষে নবীজী দুআ করলেন-

    أفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ.

    রোজাদারেরা তোমাদের কাছে ইফতার করুন, নেক লোকেরা তোমার আতিথ্য গ্রহণ করুন এবং ফিরিশতারা তোমাদের জন্য রহমতের দুআ করুন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২১৭৭

    অন্য বর্ণনায় দুআটি এভাবে আছে-

    أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ  الْمَلَائِكَةُ، وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ

    -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৪০৬

    তেমনিভাবে যে পান করালো বা আহার করালো তার জন্য নিম্নোক্ত শব্দমালায় দুআ করা যেতে পারে-

    اَللّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أطْعَمَنِيْ، وَاسْقِ مَنْ سَقَانِيْ.

    হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল আপনি তাকে আহার দান করুন এবং যে আমাকে পান করাল তাকে আপনি পান করান। -সহীহ মুসলিম ২/২৮৪, হাদীস ২০৫৫ (ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপটে)

    এগুলোর সাথে সাথে বা এ সকল আরবী দুআ জানা না থাকলে নিজ ভাষায়ও মেজবানের জন্য দুআ করা যায়।

    ১০. মেহমানদারিতে কোনো অসঙ্গতি বা ত্রুটি দেখা দিলে কোনো মন্তব্য না করা এবং মনক্ষুন্ন না হওয়া; বরং হাসিমুখে বিদায় নেওয়া।

    মেহমান-মেযবানের কিছু আদব বর্ণনা করার পর মেহমানদারির অনন্য নজীর ও মেহমানদারির ফযীলত বিষয়ে এক সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করে শেষ করছি।

    নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোনো মেহমান আসলে তিনি আগে নিজে তার মেহমানদারির চেষ্টা করতেন অন্যথায় সাহাবীদের তার মেহমানদারির জন্য উৎসাহিত করতেন। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার নবীজীর কাছে এক মেহমান এল। নবীজী তাঁর স্ত্রীগণের ঘরে খোঁজ নিলেন- মেহমানদারির মত কিছু আছে কি না। কিন্তু জবাব এল- ঘরে পানি ছাড়া আর কোনো খাবার নেই। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ তার মেহমানদারি করতে পারো? এক আনসারী সাহাবী  বললেন, আমি আছি ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি মেহমানকে নিজের বাসায় নিয়ে গেলেন। স্ত্রীকে বললেন, নবীজীর মেহমানের কদর কর। স্ত্রী বললেন, আমাদের কাছে বাচ্চাদের খাওয়ার পরিমাণ খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। সাহাবী বললেন, খাবার প্রস্তুত কর এবং বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। আর আমরা খাবার শুরু করার সময় তুমি বাতি ঠিক করার বাহানা করে বাতি নিভিয়ে দিবে। স্ত্রী তাই করলেন। খাবারের সময় অন্ধকারে তারা এমন ভাব করলেন যেন মেহমানের সাথে তারাও খাচ্ছেন। মেহমান তৃপ্তিভরে খেলেন আর তারা উপোস রাত কাটিয়ে দিলেন। তাদের এ কাজে আল্লাহ খুশি হলেন। সকালে যখন সাহাবী নবীজীর কাছে আসলেন, তিনি বললেন, গত রাতে আল্লাহ তোমাদের প্রতি হেসেছেন এবং তোমাদের উক্ত কাজে খুব খুশি হয়েছেন। আয়াত নাযীল হল-

    وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ …

    এবং তারা অন্যদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম। [সূরা হাশর (৫৯) : ৯] -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭৯৮

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মেহমানদারির উসূল ও আদবের দিকে লক্ষ রেখে মেহমানের হক আদায় করা এবং আদর্শ মেহমান হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    চীনকে টপকিয়ে এশিয়ায় সেরা সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়

    চীনকে পেছনে ফেলে শিক্ষায় সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে গেলো ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুর। গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর (এনইউএস।
    টাইমস হায়ার এডুকেশন সাময়িকী তাদের এবছরের তালিকায় সিঙ্গাপুরের এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক নাম্বারে আসন দিয়েছে। যেখানে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নামী ও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এর পরের অবস্থানে রয়েছে।
    টাইমস সাময়িকীর সম্পাদক ফিল বেটি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের এ বিশ্ববিদ্যালয়টি মহাদেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাছাড়া সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পাওয়া এশিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মার্কিন ও গ্রেট ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা এলিটদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।’
    প্রভাবশালী লন্ডন ভিত্তিক এই নির্দেশিকাটি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৩টি কর্মক্ষমতা সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কর্মক্ষমতা এবং শিক্ষণ পরিবেশ নিয়ে বিশ্লেষণ পরবর্তী এই তালিকা প্রণয়ন করেছে।
    তবে প্রথম স্থান হারালেও এ তালিকায় পরের দুটি স্থানেই রয়েছে চীন। দ্বিতীয় হওয়া পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ও তৃতীয় আসন লাভকারী সিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয় দুটি দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত। তার পেছনে আবারো ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৌড়ে রয়েছে সিঙ্গাপুরের অন্য আরেকটি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান নানইয়াং টেকনোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি।
    তবে এ তালিকার সংক্ষিপ্ত অংশে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাই হয়নি। সিএনএন।

    পয়লা বৈশাখ : এখন যেমন

    মিরপুর বার নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে কালশি সাংবাদিক আবাসিক এলাকায় যাচ্ছি। রিকশায় বসে। ছোট্ট একটা প্রয়োজনে একটা দোকানের সামনে থামলাম। আমার সামনে দুজন লোক দাঁড়িয়ে দোকানদারের সঙ্গে কথা বলছেন। পেছন থেকে এক নজর দেখে একজনকে মনে হল, শীর্ণকায় হিন্দু বৃদ্ধ। পাঞ্জাবি, ধূতি পরা। কাছে যেতেই দেখি, সে আসলে এক যুবক। শহুরে হিন্দু যুবকরা এখন আর ধূতি পরে না বলেই এ দৃশ্য দেখে কিছুটা অবাক হলাম। আর সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষ্য করলাম, তার গায়ের ধূতিটা আসলে ধূতি নয়, ‘ধূতি-পায়জামা’। ধূতির মতোই কুচি, ধূতির মতোই স্ফীত। শুধু ধরে রাখার জন্য মাঝে একটা সেলাই। কথায় ও আচরণে বুঝতে পারলাম, ছেলেটা মুসলিম। ঘটনাটি দু’ বছর আগের এক পয়লা বৈশাখ সন্ধ্যার।

    দুই.

    আর কদিন পরই পয়লা বৈশাখ। সৌরবর্ষ কিংবা বাংলা বর্ষের হিসেবে নববর্ষ। শুরুতে গ্রাম বাংলা ও মফস্বলের হালখাতার এ দিনটি এখন রাজধানীসহ নগরজীবনে বিরাট আয়োজন করে পালিত হয়। চিত্রটি জাঁকালো হয়ে উঠেছে গত দুই-তিন দশকে। পান্তা-ইলিশ, মেলা, চড়ক, বিশেষ রঙের শাড়ি আর বিশেষ ধরনের পাজামা-পাঞ্জাবি পরা মানুষের থৈ থৈ স্রোত নামে রাস্তায়। একদিনের জন্য বাঙ্গালি সাজার একটা ধুম পড়ে যায়। দেখা যায়, বাঙ্গালি সাজার প্রতিযোগিতায় ছুটতে গিয়ে পোশাক-আশাক থেকে নিয়ে জীবন ও আচারের বহু ক্ষেত্রে ভিন্ন সম্প্রদায় ও প্রতিবেশী ধর্মের সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করতেও পিছপা হয় না নতুন প্রজন্মের মুসলিম নর-নারী। এ যেন এ প্রজন্মের দেশ ও জাতিপ্রেমের নতুন মহড়া। বাংলা সালের শেষ মাস চৈত্রের শেষ দিনে চৈত্র সংক্রান্তি থেকে নিয়ে নববর্ষ উদযাপনের ধাপে ধাপে ভিন্ন ধর্মের প্রতীক ও বিশ্বাস জড়িত আচরণে নিজেদের তারা সঁপে দিচ্ছে। বুঝে না বুঝে।

    তিন.

    পয়লা বৈশাখে আগে গ্রামগঞ্জে ও মফস্বলে ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান হত। মুসলিম ব্যবসায়ীরা নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু করে দোকানে দুআ করাতেন। হিন্দুরা পূজা-আর্চনা করে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালাতেন। বছরের প্রথম দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজ শুরুর একটা আনুষ্ঠানিকতা ঘোষিত হত, যার যার রীতিতে। কোনো কোনো গ্রামে হাতে বানানো জিনিসপত্র ও তৈজসপাতি বেচাকেনার হাট বসত। কেউ বেচতে যেত-কেউ কিনতে। নগরজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে তো দূরের কথা, সব গ্রামেও এ দিনটি নিয়ে তেমন কোনো মাতামাতি হতে দেখা যেত না। প্রধানত ব্যবসা ও দোকানদারির হিসাব শুরু-শেষের সঙ্গেই এর আনুষ্ঠানিকতা আবদ্ধ থাকত। কিন্তু গত দুই দশকে হঠাৎ-   বিস্তৃত গণমাধ্যম ও মুসলিম জাতিসত্তার সঙ্গে বৈরিতাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এ দিনটি ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতির ঠিকানা’ বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। নগরজীবনে হাঁসফাঁস করা মানুষের একটি অংশ উৎসবের গন্ধ পেয়ে এ দিনটিতে পথে নামতে শুরু করেছে।

    পরাণুকরণবাদী সুশীল, সংস্কৃতিকর্মী ও শেকড়ভুলা বাজারবাদী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের সুবাদে এ মিথ্যাটাই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যে, বাংলা বছরের পয়লা দিনটিকে উৎসব করে কাটাতে হবে হিন্দুয়ানী তথাকথিত বাঙ্গালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গগুলো আপন করে নিয়ে। এটাই বাঙ্গালি জাতির আবহমান কালের সংস্কৃতি। মুসলিম জাতিত্ব ও ইসলামের বৈশিষ্ট্য, বিধিবিধান ও রুচিবোধের কোনো প্রশ্ন এখানে উঠানো যাবে না। এখন ‘বাঙ্গালি’ নাম দিলেই হলো, কোনো আচরণ ও অনুষ্ঠানে নিজেদের সঁপে দিতে ঢাকা মহানগরীর একটি অংশের মানুষের আর কোনো আপত্তি নেই।

    চার.

    আরেকটি বিষয় এখানে বড়। সেটি হচ্ছে, অনুষ্ঠান ও উৎসব-প্রবণতা এবং এর সঙ্গে হুজুগ। এই উপাদানটা যেখানে যেখানে পাওয়া যায় সেখানেও এদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকাও থাকে বাতাস দেওয়া। এতে ষোলকলা পুরা হয়। গত দুই দশক ধরে এ অবস্থাটাই দেখা যাচ্ছে। শুধু পয়লা বৈশাখের মাতামাতির মধ্যে  চোখ আটকে রাখলে বিষয়টা বুঝতে সমস্যা হবে। একটু অন্যদিকেও চোখ ফেরানো যাক।

    এদেশে কি ৩১ ডিসেম্বর রাত বারটার পর কোনো অনুষ্ঠানের রেওয়াজ ছিল বিশ বছর আগে? ছিল না। মিডিয়াও সেটি নিয়ে কোনো ভূমিকা তখন রাখেনি। হঠাৎ মহানগরীর কোনো কোনো অভিজাত এলাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের খবর প্রচার হল। মিডিয়া দিল আরও বাতাস। শুরু হল প্রস্ত্ততি। বিশ্ব বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে সারাদেশে এ রাতটি সরগরম হয়ে উঠল। মনে হতে থাকল এটাই এ জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি। ইদানীং অবশ্য উন্মাদনা বেড়ে যাওয়ায় কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

    চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি ‘তথাকথিত’ ভালবাসা দিবসের কথা কি এ দেশে কেউ জানত? জানত না এবং কেউ ঘুণাক্ষরেও এ দিনটি নিয়ে কিছু ভাবত না। মিডিয়া বাতাস দিল। তরুণ-তরুণীদের গায়ে আগুন লেগে গেল। দেশব্যাপী এটা এমনভাবে পালিত হতে লাগল যে, মনে হতেই পারে-এটা এদেশের আবহমান কালের একটি সংস্কৃতি। এখন খুবই লজ্জা লাগে, এ দিনটি উপলক্ষে যখন অপরাপর বহু জিনিসের সঙ্গে বিশেষ ধরনের কনডমের বিজ্ঞাপনও পত্রিকার পাতায় চোখে পড়ে।

    ফুটবল বিশ্বকাপ আর ক্রিকেট বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। এমন হুজুগ আর মাতোয়ারা অবস্থা এদেশে ইদানীং তৈরি হয় যে, মনে হতে থাকে দেশবাসীর সামনে আর কোনো সমস্যাই নেই। ভাবা ও করার মতো কোনো কাজই বাকি নেই। এটাই সবার আচার-অনুষ্ঠান। এটাই সবার ধ্যান-জ্ঞান। তাহলে এসবও কি এদেশের সংস্কৃতির অঙ্গ?

    পাঁচ.

    হুজুগ পেয়ে গেলেই যে কোনো আচার-অনুষ্ঠান ও ইস্যুকে জোর করে সার্বজনীনতা দেওয়া বাংলাদেশের প্রভাবশালী মিডিয়ার একটি অভ্যাস হয়ে গেছে। এ কারণে তারা এসব হুজুগে ইস্যুকে দেশপ্রেম ও জাতির প্রতি বিশ্বস্ততার মাপকাঠি বানিয়ে ছাড়ে। পয়লা বৈশাখের কথাই বলুন, ক্রিকেট বিশ্বকাপের কথাই বলুন, এখানে কেউ স্রোতের উল্টা কিংবা নিস্পৃহ থাকলে তাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হতে থাকে। ভাবখানা এমন যে, এই স্রোতে ভাসলেই তিনি দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, উল্টোটা হলে তার মাঝে দেশপ্রেম নেই, সে দেশের শত্রু।

    সৈয়দ আবুল মকসুদ একজন সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। ১৪১৩ সালের দৈনিক সমকাল-এর ১ বৈশাখের ক্রোড়পত্রে তার ছাপা হওয়া একটি লেখার অংশ উদ্ধৃত করছি।

    ‘আমি আমার নিজের শৈশব ও কৈশোরের পহেলা বৈশাখকে যেভাবে দেখেছি, আজকের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে সেই নববর্ষ উৎসবের কোনো মিলই নেই। তখনকার নববর্ষের উৎসবের মধ্যে ছিল অকৃত্রিম প্রাণের আমেজ, তাতে ন্যূনতম কৃত্রিমতা ছিল না, আয়োজনে বিন্দুমাত্র মেকি বা লোক দেখানো বিষয় ছিল না। যা করা হত, তা হতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে, প্রাণের আনন্দে ও অকৃত্রিম জাতীয়তাবাদী আবেগে।

    আজ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? পহেলা বৈশাখের সকালে ঘটা করে রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে খুব বিত্তবান ঘরের মানুষ মাটির শানকিতে পান্তাভাত, খাট্টা ডাল, ইলিশ মাছের ঝোল, মুড়িঘণ্ট, খেজুর গুড়ের ক্ষীর হাপুস-হুপুস করে খাচ্ছে। এই যে রেওয়াজ শুরু হয়েছে, এটি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর প্রবর্তিত আয়োজন। এ জাতীয় জিনিস পহেলা বৈশাখে নববর্ষের চিরকালের চেতনা বিরোধী। কারণ এ সমাজের পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ খুবই দরিদ্র, তারা ক্ষুধার জ্বালায় পান্তাভাত, পঁচাডাল ও অখাদ্য জাতীয় জিনিস যা পায় প্রতিদিন তা-ই খায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান্তাভাত আর ইলিশের তরকারি, মুড়িঘণ্ট যারা খায়, তারা বস্ত্তত এক ধরনের সাংস্কৃতিক অপরাধ করে। এসব আচরণের মাধ্যমে তারা আসলে দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষকে পরিহাস করে।’

    পয়লা বৈশাখের বর্তমান রেওয়াজ ও মাতামাতি সম্পর্কে এ কথাগুলো কোনো মাওলানা সাহেবের বলা নয়। কথাগুলো যিনি লিখেছেন, তিনি কথিত বাঙ্গালি সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম মনে করেন। তারপরও সত্য স্বীকার করে তিনি কথাগুলো লিখতে বাধ্য হয়েছেন।

    ছয়.

    পয়লা বৈশাখের কথা আসলেই অবধারিতভাবে আসে সংস্কৃতির কথা। স্থানীয় সংস্কৃতির সূত্র ধরে জোরটা দেওয়া হয় ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতির’ ওপর। আর বাঙ্গালি সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে সামনে আনা হয় হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতীক ও আচার-অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে উপরের সূত্র ও নীতি অনুসরণ করে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা -না করার প্রস্ত্ততিকে চিহ্নিত করা হয় জাতীয়তার মিত্রতা ও শত্রুতা হিসেবে। এভাবে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরার জন্য একটা প্রবল ও গভীর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা হয় এদেশের সব স্তরের মুসলিম নাগরিকদের ওপর।

    প্রশ্ন হচ্ছে, এক্ষেত্রে আসলে মুসলমানদের করণীয় কী? স্থানীয় সংস্কৃতির নামে অপর ধর্মের বৈশিষ্ট্য ও প্রতীকসহ যে কোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ কি ইসলামে আছে? ইসলাম যে অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে, সেখানকার ভালোমন্দ সব সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার অনুমতি কি তার অনুসারীদের দেয়? হাদীস শরীফের ভাষ্য, সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং ইসলাম বিস্তারের দীর্ঘ হাজার বছরের ইতিহাস থেকে যে সত্যটি ফুটে ওঠে সেটি হচ্ছে, বিশ্বাস, ইবাদত ও জীবনাচারের মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ইসলাম যে পয়গাম নিয়ে এসেছে সে ব্যাপারে ইসলাম আপসহীন। জীবনাচারের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তার সুনীতি ও শুদ্ধির দীক্ষা দিয়ে কখনো কখনো সেসবের অনুষঙ্গগুলো স্থানীয় সংস্কৃতির ওপর ছেড়ে দেয়। মৌলিক বিষয়ে মিশে যাওয়া ও একাত্ম হওয়ার নীতি ইসলামে থাকতে পারে না। কারণ দূষণ দূর করে শুদ্ধতা আনাই ইসলামের কাজ। এ কারণেই অপর ধর্মের সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ও অপর ধর্মের পরিচায়ক কোনো বৈশিষ্ট্যকেও আপন করে নেওয়ার অনুমতি ইসলাম মুসলমানদেরকে দেয় না।

    পশু জবাই করার ইসলামী নীতি অনুসৃত হওয়ার পর সে পশুর গোশত ভুনা করে নাকি ঝোল করে নাকি কাবাব করে খেতে হবে-এ বিষয়ে ইসলামের কোনো চাপ নেই। স্থানীয় মানুষের রুচি ও সুবিধার ওপর তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাছের তরকারির ধরণ কী হবে, তাজা হবে নাকি শুটকি হবে, হালাল জিনিস দিয়ে বানানো রুটি বা পিঠার ধরণ কী হবে, মিষ্টি হবে নাকি ঝাল হবে-এ ব্যাপারে স্থানীয় সংস্কৃতি অনুসরণে কোনো বাধা নেই। তবে খাদ্য হালাল হওয়া, অপচয় না করা, খাওয়ার আদব ও সুন্নত পদ্ধতি বজায় রাখা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা ও প্রেরণা আছে। একইভাবে পোশাকের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের পোশাকের ইসলামী নীতি ও বিধান অনুসৃত হওয়ার পর তা মোটা হলো, না পাতলা হলো, তা এ দেশীয় কাপড়ে হলো না ভিনদেশি কাপড়ে হল তাতে ইসলামের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পোশাকের সীমা ও নীতি, আবরণ ও শালীনতা বজায় থাকার পর বাকি বিষয়গুলোতে স্থানীয়দের সুবিধা ও রুচি প্রয়োগের স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

    এভাবেই মুসলমানের জীবনাচারের সবক্ষেত্রে মৌলিক নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে ইসলামেরই। এক্ষেত্রে স্থান-কাল-ভাষা ও সংস্কৃতির কোনো কুহক দিয়ে ইসলামী নীতি ও চেতনাকে আহত করার অধিকার কোনো মুসলমান রাখেন না। সে হিসেবে পয়লা বৈশাখই হোক, আর অপর কোনো উৎসবই হোক, যদি তাতে ইসলামের নির্দেশনা অনুসৃত হওয়ার পরিবর্তে বিপরীত কোনো বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করা হয় তবে তাতে যুক্ত হওয়ার ও সমর্থন দেওয়ার সুযোগ মুসলমানের নেই। বাংলাদেশী মুসলমানদের আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে সাব্যস্ত করা বা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতি’ একক ও প্রধান কোনো তত্ত্ব হতে পারে না।  সেটা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিংবা সামঞ্জস্যশীল কি না অবশ্যই দেখতে হবে। কারণ এভাবে কেবল বাঙ্গালি সংস্কৃতির কথা বললে তো বলতে হবে-মন্দিরে গিয়ে পূজা করাও বাঙ্গালি সংস্কৃতি, উলুধ্বনি-কাশর ধ্বনিও বাঙ্গালি সংস্কৃতি, মঙ্গল প্রদীপ, সিঁথির সিঁদুর, পুণ্যার্থে গঙ্গাস্নান, গোমূত্রে পবিত্রকরণ-সবই বাঙ্গালি সংস্কৃতি। ওই অর্থে ধূতি পরা, পৈতা লাগানো, শাঁখা ব্যবহারও বাঙ্গালি সংস্কৃতি। এগুলো কি তাহলে ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতি’  হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মুসলমানদেরও অনুসরণ করতে হবে?

    মনে রাখা দরকার, কোনো মুসলমান যদি সচেতনভাবে শিরকের প্রতীকযুক্ত কোনো উৎসবে মুগ্ধ হয়ে যোগ দেয় তাহলে তার জন্য সেটা শিরিকে লিপ্ত হওয়ার গোনাহ হবে। আর কোনো কিছু না বুঝে হেলাফেলা করে এসবে জড়িত হলে অবশ্যই ফিসক-ফুজুরের সে মুরতাকিব হবে।

    হুজুগের অথৈ পাঁকে ডুবে না গিয়ে আত্মসচেতন মুসলমান হিসেবে এসব বিষয়ে একটু ভাবার চেষ্টা করা সবার দায়িত্ব।

    সাত.

    জুমআর নামাযে দাঁড়াবো। কাতার ঠিক করছি। এ সময় সামনের কাতারের এক যুবকের পায়জামার কুচির দিকে চোখ পড়ল। প্রথমে মনে হল, মেয়েদের পায়জামা বা সেলোয়ার পরে সে মসজিদে চলে এসেছে। পরেই লক্ষ্য করলাম, তার পায়জামার পুরোটা জুড়েই কুচি। একটা পয়েন্ট থেকে চারদিকে ভাঁজ ভাঁজ করে কাপড় ছড়িয়ে আছে। হঠাৎ মনে হল এটাতো দেখা যাচ্ছে, সেই সেলাই করা ধূতি। এরপর ঠিক আমার সামনে দাঁড়িয়ে‘ধূতি’ পরে এক মুসলিম যুবক জমুআ আদায় করল। যথারীতি নামাযের পর নিষ্ঠার সঙ্গে সে দুআ করল। সুন্নত পড়ল। তারপর মসজিদ থেকে ধীরে সুস্থে বের হল। মুসল্লী হিসেবে নিষ্ঠার কোনো কমতি তার নেই। আবার ‘ধূতি’ পরা নিয়ে তার মাঝে কোনো সংকোচ বা জড়তাও নেই।

    ঘটনা এই চৈত্রের।

    গত দু’ বছরে এরকম ‘ধূতি-পায়জামা’ আরো দু’-চারবার দেখেছি। তখন ততোটা চোখে বিঁধেনি। দেখেছি, রাস্তায়, দূর থেকে। কেমন তরুণ, কতোটা সচেতন কিংবা কী পরিমাণ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে জানা ছিল না তখন। রাস্তাঘাটে চোখে পড়া বহু অনভিপ্রেত দৃশ্যের মতো সেটাও ছিল গা-সওয়া। কিন্তু জুমআর নামাযে ‘ধূতি-পায়জামা’ পরে আসা এই যুবককে দেখে প্রচন্ড হোচট খেলাম।

    আট.

    এ প্রসঙ্গে দুটি বিষয় আমরা স্মরণ রাখতে পারি এবং দুটি কাজ করতে পারি। এক. বাংলা. হিজরী, ঈসায়ী যে কোনো বছরের শুরুতে, বা শুরুর দিনে বিগত বছরের ভুলত্রুটি, গোনাহ খাতার জন্য তাওবা-ইস্তেগফার করতে পারি। সামনের বছরটিতে দ্বীনী ও পার্থিব সব কাজের মঙ্গলের জন্য, সব ক্ষেত্রে খায়র-বারাকাতের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দুআ করতে পারি। ভালো নিয়্যত ও প্রত্যয়  গ্রহণ করতে পারি। এ কাজটি আমরা প্রতি মাসে, প্রতি সপ্তাহে, এমনকি প্রতিদিনও করতে পারি। মূলত কেবল বছর বছর নয়, কাজটি দৈনিক ভিত্তিতে করাই আমাদের জন্য কল্যাণকর। সময়ের ভাগটাকে গুরুত্ব না দিয়ে, আনুষ্ঠানিকতা ও উৎসব প্রবণতাকে এড়িয়ে আমরা জীবনের শুদ্ধ ও কল্যাণযাত্রার প্রতিজ্ঞা  যে কোনো সময়ই করতে পারি।

    দুই. সংস্কৃতির নামে জীবনাচার, অনুষ্ঠান, পর্ব ও উৎসবের যেসব ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে অথবা পরিকল্পিতভাবে অপর ধর্মের বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি থাকবে, সেসব ক্ষেত্র থেকে মুসলিম হিসেবে নিজেদের সরিয়ে রাখা। অপর ধর্মের অনুসারীদের জন্য তাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে সেটা তাদের কাছে গ্রহণীয় হতেই পারে, সেখানে বিরোধের কিছু নেই। কিন্তু কিছুতেই সেটিকে বাংলাদেশের সর্বজনগ্রাহ্য বা সার্বজনীন সংস্কৃতি মনে করে তার সঙ্গে মুসলমানরা একত্রিত হতে পারেন না। এতদঞ্চলের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য সংবলিত কোনো সংস্কৃতি আঞ্চলিক ও দেশীয় পরিমন্ডলে সার্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারে না। সেটি সবার জন্য অনুসরণীয়ও হতে পারে না। সে সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ধর্মানুসারীদের সংস্কৃতি হিসেবেই গণ্য হতে পারে। এ জাতীয় সংস্কৃতি সার্বজনীন নয়, বিভাজিত সংস্কৃতিরূপে সাব্যস্ত হতে পারে। কখনো সংখ্যাগুরুদের সংস্কৃতি, কখনো সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি কখনো সার্বজনীন বাংলাদেশী ‘সংস্কৃতি’ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। তবে এর সঙ্গেও থাকতে পারে সহাবস্থান ও সৌহার্দ্য। চাকমা, মগ, গারোদের বহু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা যেমন দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থা অনুসরণ করে থাকি, ঠিক তেমনি। তাদেরটা তারা করুন, কোনো সমস্যা নেই। সেটা আমাদেরও করতে হবে কেন? জুমআর নামাযে দাঁড়িয়ে সামনের কাতারে ‘ধূতি-পায়জামা’ পরা মুসল্লী দেখার আগ্রহ তো আমাদের থাকার কথা নয়।

    শততম টেস্টে জয় চায় বাংলাদেশ

    ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দেখতে দেখতে ৯৯টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভাল করলেও টেস্ট ক্রিকেটে এখনো নিজেদেরকে ঠিকমত মেলে ধরতে পারেনি টাইগাররা। ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণে এখনো তুলনামূলক দুর্বল হিসেবেই পরিচিত দলটি চলমান শ্রীলংকা সফরেই নিজেদের শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। স্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে বুধবার শুরু হতে যাওয়া মাইলফলক স্পর্শ করা ম্যাচে জয় দিয়ে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে চায় মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন টাইগাররা।
    চলমান সফরে প্রথম টেস্টে ২৫৯ রানে পরাজিত হয় দলটি। যা কিনা তাদের ৭৬তম ও এক নাগারে চতুর্থ পরাজয়।
    টেস্ট খেলুড়ে কোন দেশই এখন পর্যন্ত নিজেদের প্রথম একশ’ ম্যাচে এত বেশি পরাজয়ের স্বাদ পায়নি। বলতে গেলে গত ১৭ বছর যাবতই দীর্ঘ সংস্করণে ধুকছে বাংলাদেশ। অবশ্য নিজেদের প্রথম একশ’ ম্যাচে জয়ের ক্ষেত্রে সবার নিচে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিউইরা নিজেদের প্রথম একশ’ ম্যাচে জয় পেয়েছে সাতটিতে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ জিতেছে আটটিতে। তবে নিউজিল্যান্ড ড্র করেছে ৪৭টি, বাংলাদেশ করেছে ১৫টি।
    বাংলাদেশের আট জয়ের পাঁচটিই এসেছে নিজ মাঠে দুবর্ল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টাইগাররা বিদেশের মাটিতে ৪৬ ম্যাচের অন্য তিনটি জয়ের মধ্যে দু’টি এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও একটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টাইগাররা ২০০১-২০০৪ সালের মধ্যে এক নাগারে ২১ ম্যাচে হেরেছে। যে রেকর্ড অন্য কোন দলের নেই। তবে সম্প্রতি নিজ মাঠে প্রথম ম্যাচে পরাজয় সত্ত্বেও দ্বিতীয়টিতে জয়ী হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ। যা এ যাবত কালে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
    কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহে গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সঠিক কাজটিই করছি যে কারণে সব ম্যাচেই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আপনার প্রত্যাশা বেশি কেন? কারণ আপনি ভাল করছেন, আমি ঠিক বলছি কিনা?’
    বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মুখপাত্র জালাল ইউনুস বলেন, ‘সব কিছুই আমরা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছি। তবে শততম টেস্ট হওয়ায় অবশ্যই এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণও বটে।’
    ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে বাংলাদেশের উদ্বোধনী টেস্ট খেলা সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেন, সাবেক ইংল্যান্ড খেলোয়াড় জিওফ্রে বয়কটসহ অন্য সমালোচনাকারীদের ভুল প্রমাণ করতে দলকে অবশ্যই আরো বেশি বেশি ম্যাচ জিততে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘শততম টেস্ট উদযাপনে সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে এই ম্যাচে জয়ী হওয়া। অন্য অনেক দিক থেকেও এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় দরকার। সীমিতি ওভারের ক্রিকেটে আমরা এখন একটি শক্তিশালী দল। তবে আমাদের টেস্ট ম্যাচ জয়ের যোগ্যতারও প্রমাণ দিতে হবে।’
    বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য): মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মোমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি, শুভাশিষ রায়, রুবেল হোসেন।
    শ্রীলংকা দল (সম্ভাব্য) : রঙ্গনা হেরাথ (অধিনায়ক), দিমুথ করুনারত্নে, রিনোশান ডিকবেলা, উপুল থারাঙ্গা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, কুসল মেন্ডিজ, আসেলা গুনারত্নে, দিনেশ চান্ডিমাল, সুরঙ্গা লাকমাল, লাহিরু কুমারা, নুয়ান প্রদীপ, ভিকুম সঞ্জয়া বান্দারা, দিলরুয়ান পেরেরা, লহ্মণ সান্দাকান, মালিন্দা পুষ্পকুমারা।

    সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি ধর্মহীনতার ইঙ্গিত- আল্লামা আহমদ শফী

    বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে গ্রিক দেবী মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপন ধর্মহীনতার ইঙ্গিত বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর এদেশের মানুষ বেঈমান হয়ে যাবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে হবে। চিঠিপত্র দিয়ে হোক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হোক প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে মূর্তি অপসারণে সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ফেনী জেলা হেফাজতের উদ্যোগে শহরের মিজান ময়দানে আয়োজিত শানে রিসালাত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শফী আরো বলেন বিশ্বের বড় বড় বিধর্মী দেশগুলোতেও এ ধরনের কোন মূর্তি চোখে পড়েনি। আমেরিকা ও ইন্ডিয়ার  সুপ্রিম কোর্টে এ রকম মূর্তি চোখে না পড়লেও বাংলাদেশে সরকার কার ইশারায় মূর্তি সংস্কৃতি চালু করেছে তা জাতির বোধগম্য নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। সরকারকে ধর্মহীনতা থেকে সরে এসে এদেশের ৯৫ ভাগ মুসলমানের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার অনুরোধ করেন আহমদ শফী। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাও. আজিজুল হক ইসলামাবাদী । জেলা হেফাজতের সভাপতি মাও. আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে  মাও. ওমর ফারুক ও মুফতি ইলিয়াসের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মুফতি সাঈদ আহমদ, মাও. নুর ইসলাম আদীব, মুফতি শহীদুল্লাহ, মাও. আবুল কাশেম, আফজালুর রহমান, সাইফুদ্দিন কাসেমী, মাও. সাইদুর রহমান, আজিজুল্লাহ হেলাল, মুফতি আহমদুল্লাহ ও ফেনী আলীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও. মাহমুদুল হাসান প্রমুখ। সভায় বক্তাগণ বলেন, সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা নাস্তিক মুরতাদরা রাষ্ট্রধর্ম তুলে দিতে চাইছে। তারা তাদের বিদেশি প্রভুদের নুন-রুটি হালাল করার জন্য এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি গণমুখী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে। সরকারের বসন্তের কোকিল মন্ত্রীরা তওহিদী জনতাকে হুমকি দিয়ে কথা বলছেন। বাম নাস্তিক নেতাদের মুখেও কেবল গালাগালি শোনা যাচ্ছে। পাঠ্যক্রমে নাস্তিকতা ও সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে যারা নতুন প্রজন্মকে ঈমান ও ধর্মহীন করতে চেষ্টা করেছিল তারা এখন আবার চক্রান্ত শুরু করেছে। দেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর লক্ষ্যে ভিনদেশি দালালচক্র নানামুখি উস্কানি দিচ্ছে। হেফাজত নেতৃবৃন্দের নামে মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা এর স্পষ্ট আলামত। প্রধানমন্ত্রীকে সবদিক বিবেচনা করে ৯২ ভাগ মানুষের আশা আকাক্সক্ষা বহাল রাখতে হবে। দেশ ও জাতিবিরোধী অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। দেশের মানুষ হেফাজতের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ। ইসলাম ও দেশবিরোধী কোন চক্রান্তই তারা সফল হতে দেবে না। সম্মেলনে জেলার বিশিষ্ট আলেম ওলামা, ইসলামী ব্যক্তিত্ব, হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এ আহমদ শফী’র হাজার হাজার ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।