• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন: ফাইনালে লজ্জাজনক পরাজয় ভারতের

    জয়ের মঞ্চটা সাজানোই ছিল। অপেক্ষা ছিল কেবল উদযাপনের। শেষ ব্যাটসম্যান ফিরতেই শুরু হল উদযাপন। কিন্তু হঠাৎ তাতে বাধ সাধলেন অধিনায়ক সরফরাজ! আগে সৃষ্টিকর্তারকে স্বরণ করা যাক, তারপর উদযাপন করা যাবে।
    পাকিস্তানের এই উদযাপন ভারতকে গুড়িয়ে প্রথমবারের মত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। গ্রæপ পর্বে এই ভারতের কাছে হেরেই খাঁদের কিনারে চলে গিয়েছিল পাকিস্তান। তারাই এবার ১২৪ রানের হারের বদলা নিলো ভারতকে ১৮০ রানের নির্মম পরাজয়ের লজ্জা দিয়ে।
    পাকিস্তানের এই অর্জনে ক্রিকেট রোমান্টিকরা তো বটেই পাক ক্রিকেট ভক্তরাও কি একটু হলেও আশাহত? তা বলাই যায়। ফাইনালের মঞ্চে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী দুই দল। রোমাঞ্চে ঠাসা ঐতিহাসিক এক ম্যাচেরই তো সাক্ষি হতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু লড়াইটা এমন একপেশে হবে আর প্রতাপশালী ভারত যে এমন অসহায়ভাবে ধরা দেবে এমনটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপই কিনা মুখ থুবড়ে পড়ল মাত্র ১৫৮ রানে।
    রোমাঞ্চকর ১০০ ওভারের অপেক্ষার ইতি ঘটে মূলত ভারতের ইনিংসের শুরুতেই। মোহাম্মাদ আমিরের করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই শূন্য রানে এলবিডবিøউয়ের ফাঁদে পড়েন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী রোহিত শর্মা। ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই লড়াইটা একপেশে করে ফেলেন আমির। তৃতীয় বলে প্রথম ¯িøপে আজহার আলীর কাছ থেকে লাইফ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। পরের বলেই পয়েন্টে ফখর জামানের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত করে তাকে সাজঘরের পথ ধরান আমির। তখনই লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। বাকিটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা। সেনাপতির বিদায়ে বাকিরা ঘুরে দাঁড়াবে কি আরো অসহায়ভাবে দেখা দিলেন তারা। ৭২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ভারতীয় দর্শকদের কিছুটা অপেক্ষায় রেখেছিলেন হৃদিক পান্ডিয়া। সপ্তম উইকেটে ৯.৩ ওভারে ৮০ রানের জুটির পথে ৪৩ বলে ৬ ছক্কা ও ৪ চারে ৭৬ রান করে রানআউটের ভাগ্যে কাটা পড়েন এই পেসার অলরাউন্ডার। লেজটুকু গুটিয়ে ইনিংসের সমাপ্তি টেনে দেন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রকারী হাসান আলী।
    এর আগে পাকিস্তান ইনিংসে কেবলই ফখর জামানের গল্প। তার বীরত্বময় ব্যাটিংয়েই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীদের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৩৩৮ রান) সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেও যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শেষ ৫ ওভারে মাত্র তিনটি বাউন্ডারিতে আটকে না থাকলে সংগ্রহটা আরো বড় হত তা বলাই যায়।
    ক্যারিয়ারে এই প্রথম তিন অঙ্কের দেখা পেলেন ফখর। তাও আবার চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীর বিপক্ষে ফাইনালের মত মঞ্চে। এমন সেঞ্চুরির কথা নিশ্চয় ভুলবেন না ২৭ বছর বয়সী। চলতি আসরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকে বাহারী শটে ছোট্ট কিন্তু কার্যকরী ৩১ রানের ইনিংসের পর টানা দুই ফিফটি। এবার খেললেন ১০৬ বলে ১২টি চার ও ৩টি বিশাল ছক্কায় ১১৪ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস।
    আসরের প্রতিটা ম্যাচে পরে ব্যাট করেছে পাকিস্তান। তাদের সেই স্বাভাবীক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতেই টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কোহলির সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে ঝড়ো ব্যাটিয়ে উদ্বোধনী জুটিতেই ২৩ ওভারে ১২৮ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। দেড় দশক পর এই প্রথম টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি জুটির দেখা পেল তারা। ভুল বোঝাবুঝিতে আজহার আলী (৫৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কা)  রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন। ফখর হয়ত বুঝেছিলেন সতীর্থের রানআউটে তার দায়টাও কম নয়। এটাই হয়তো তাতিয়ে দিয়েছিল বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে। ৬০ বলে ফিফটি করা ফখর পরের ৫০ করেন ৩২ বলে। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে যখন দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তখন পাকদের সংগ্রহ পুরোপুরি ২০০। সাহসী ফখরের ভাগ্যটা ভালো বলতেই হয়। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বুমরাহ’র প্রথম বলে উইকেটের পিছনে ধোনির হাতে ক্যাচে দিয়েছিলেন। উদযাপনও শুরু করেছিলেন বুমরাহ, কিন্তু আম্পায়ারের নো বলের সংকেতে উদযাপন থেমে যায় ভারতের।
    পরে বাবর আজমের ৫২ বলে ৪৬ ও মোহাম্মাদ হাফিজের ৩৭ বলে ৫৭ রানের উপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৫৪ রানে উইকেটশূন্য থাকা আশ্বিন ১০ওভারে ৭০ রান দিয়ে এদিনও ছিলেন উইকেটশূন্য। শুরুর ৫ ওভারে মাত্র ১০ রানের দুর্দান্ত এক স্পেল উপহার দেয়া ভুবেনেশ্বর কুমার শেষ ৫ ওভারে দেন ৩৪ রান। ৮ ওভারে ৬৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন জাদেজাও।
    চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করা দলের পক্ষে কিন্তু ভাগ্য কথা বলেছে কমই। এ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ফাইনালেই কেবল প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছিল। বাকি ৫ আসরেই জয়ী হয়েছে পরে ব্যাট করা দল। তবে ২৬৫ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের কোন রেকর্ড ছিল না। জিততে হলে তাই রেকর্ড গড়ে হত ভারতকে।
    পাকিস্তানের জয়ের সাথে সাথে একটা দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে বাংলাদেশকে। পাকিস্তাকে জায়গা দিতে ছয় থেকে সাতে নেমে যেতে হয়েছে মাশরাফিদের। ভারতকে হারিয়ে ২ পয়েন্ট পেয়ে পাকিস্তানের পয়েন্ট এখন ৯৫। সেমিতে হেরে বাংলাদেশের পয়েন্ট এক কমে ৯৪। ফাইনালের হারে র‌্যাংকিংয়ের দুই থেকে তিনে নেমে যেতে হয়েছে ভারতকেও।

    তারাবীহ বিষয়ক দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

    প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়। তারাবীর নামায বিশ রাকাআত না আট রাকাআত এবং এ বিষয়ে ১ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ করা হয়। এ সম্পর্কে জানতে চাই।

    উত্তর : এটাতো অনেক পুরানো কাগজ। এখনো তারা এটাই বিলি করছে! প্রায় পাঁচ বছর আগে মাওলানা আবু তোরাব সাহেব এটার বিস্তারিত উত্তর লিখেছেন, যার শিরোনাম হল : বিভ্রান্তি থেকে সতর্ক থাকুন, হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে তারাবী বিশ রাকাআত, আট রাকাআত নয়। এটি আলআবরার ট্রাস্ট, বাংলা বাজার থেকে ছাপা হয়েছে।

    পরবর্তীতে যখন মাসিক আলকাউসারের প্রকাশনা শুরু হয় তখন তার অক্টোবর ও নভেম্বর ২০০৫ ঈ. সংখ্যায় এ বিষয়ে আমার একটি বিশ্লেষণধর্মী ও প্রামাণ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো আপনি সংগ্রহ করে বারবার পড়ুন, ইনশাআল্লাহ সকল সন্দেহ দূর হয়ে যাবে।

    প্রশ্ন : কেউ কেউ বলেন যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই নামায। রমযানে রাতের শুরুভাগে এক নামায (তারাবীহ) আর শেষভাগে আরেক নামায (তাহাজ্জুদ) এটা কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। কথাটা কি সঠিক?

    উত্তর : এটাই আমাদের গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের প্রথম চাল বা প্রথম ভুল। যেহেতু আট রাকাআত তারাবীহ কোনোভাবেই হাদীসে দেখানো সম্ভব নয় তাই তাহাজ্জুদের হাদীস দিয়ে তারাবীহর রাকাআত-সংখ্যা প্রমাণ করার জন্য তাদের এই অনর্থক কসরত। আল্লাহ সহীহ সমঝ নসীব করুন।

    তাহাজ্জুদের বিধান ইসলামের বিধান। ইসলামের প্রথম যুগেই কুরআন মজীদের সূরায়ে মুযযাম্মিল অবতীর্ণ হয়, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার অনেক আগে। ইতিহাস সাক্ষী, রমযানের রোযা ফরয হয়েছে হিজরতের পর। আর তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    كتب الله عليكم صيامه وسننت لكم فيه قيامه

    ‘আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন এবং এই মাসে রাত জেগে নামায পড়াকে সুন্নত করেছি।-নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ

    লক্ষ করুন, এ হাদীসে যে কিয়ামে রমযানকে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নত করেছেন, তা দ্বারা উদ্দেশ্য যদি তাহাজ্জুদই হয় তাহলে বাণীটিই অনর্থক সাব্যস্ত হবে। কারণ তাহাজ্জুদের বিধান তো পুরো বছরের জন্য আগ থেকেই আছে। রোয ফরয হওয়ার আগে কত রমযান গত হয়েছে তখন কি রমযানে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম তাহাজ্জুদ পড়তেন না?

    আরো লক্ষ্য করুন, তাহাজ্জুদের বিধান আল্লাহ রাববুল আলামীন সরাসরি কুরআন মজীদে অবতীর্ণ করেছেন। তাহলে এ ব্যাপারে হাদীসের এ বাণীটি-(আমি কিয়ামে রমযান অর্থাৎ তারাবীহকে সুন্নত করেছি) কিভাবে প্রযোজ্য হতে পারে? এটি এমন নামাযের ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে যার বিধান কুরআন মজীদের মাধ্যমে নয়; বরং হাদীসের মাধ্যমেই এসেছে। আর তা হল তারাবীহর নামায।

    তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ যে ভিন্ন ভিন্ন নামায তা আরো অনেক দলিল দ্বারা প্রমাণিত। বিস্তারিত জানার জন্য ফকীহুন নফস, মুহাদ্দিসে দাওয়ান হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়া পৃ. ৩০৬-৩২৩ দেখা যেতে পারে। তাছাড়া এই ভাইদেরকে আমাদের আরেকটি কথা বলার আছে। তারা ইমাম বুখারী রাহ.-এর অনুসরণের খুব দাবি করে থাকে। ইমাম বুখারী রাহ. কিন্তু তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে ভিন্ন ভিন্ন নামাযই মনে করতেন। রাতের প্রথম ভাগে তারাবীহ পড়তেন আর শেষভাগে তাহাজ্জুদ পড়তেন।

    তারাবীহর প্রতি রাকাআতে বিশ আয়াত করে পড়তেন এবং এভাবে তারাবীহতে কুরআন খতম করতেন। নির্ভরযোগ্য সনদে তারীখে বাগদাদে বিষয়টি (খ. ২, পৃ. ১২) বর্ণিত হয়েছে এবং মুকাদ্দামায়ে ফাতহুল বারীতে তা উদ্ধৃত আছে।

    এই ঘটনা থেকে যেমন একথা প্রমাণিত হয় যে, ইমাম বুখারী রাহ. অন্যান্য উলামায়ে সালাফের মতো তারাবীহকে তাহাজ্জুদ থেকে ভিন্ন নামায মনে করতেন সাথে সাথে একথাও প্রমাণিত হয় যে, ইমাম বুখারী রাহ. তারাবীহ আট রাকাআত নয় বেশি (বিশ রাকাআত) পড়তেন। কারণ তারাবীহ আট রাকাআত পড়লে রমযান মাস ত্রিশ দিনের হলেও প্রতি রাকাআতে বিশ আয়াত করে পড়ে কুরআন খতম করা সম্ভব নয়।

    মনে রাখবেন, গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের এ দাবির পিছনে কোনো দলীল নেই। তাই সহীহ হাদীস এবং উলামায়ে সালাফের তরিকা মতে রমযানে তারাবীহর প্রতি গুরুত্ব দিন, পূর্ণ বিশ রাকাআত পড়ুন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ুন।

    লন্ডনে আগুন : ‘আর কেউ বেঁচে থাকার আশা নেই’

    পশ্চিম লন্ডনে গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবিত কাউকে খুঁজে পাবার আর কোনও আশা নেই বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
    লন্ডন ফায়ার কমিশনার ড্যানি কটন বলছেন, নর্থ কেনসিংটনে অবস্থিত আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রেনফেল টাওয়ারের ভেতরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই হয়তো ‘নিখোঁজ অনেকে রয়ে গেছেন’। এই সংখ্যাটা এখনো অজানা। তবে ‘আর কেউ বেঁচে নেই’ বলে ধারণা উদ্ধারকর্মীদের। খবর এএফপি’র।
    ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় ১৭ জন নিহত হবার তথ্য নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।এদিকে নিখোঁজ বাসিন্দাদের বিষয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ চালাচ্ছেন স্বজন ও বন্ধুবান্ধবেরা। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ৭০ জনেরও বেশি মানুষকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশংকাজনক।
    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই জানালা দিয়ে নীচে লাফিয়ে পড়েছেন। এমনকি শিশু সন্তানকেও নিরাপদে রাখার জন্য জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। তারপরও ধোঁয়ার কারণে বহু মানুষ আটকা পড়েছিলেন ভবনটিতে, অনেকে বের হতে চাইলেও বের হতে পারেননি।
    বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার কমিশানর মিস কটন জানান, পুরো ভবনটিতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। কিন্তু আগুনে পুড়ে ভেতরে এমন ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে যার মধ্যে অভিযান চালানো হবে খুব ‘জটিল ও কষ্টকর’। আর যেহেতু ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে আগে সেই বিষয়টা ঠিক করে পরে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে অনুসন্ধান চালাতে হবে বলেও জানান মিস কটন। ওই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।
    তবে, ঠিক কি কারণে ও কিভাবে সেখানে আগুন লাগলো কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি। আগুন লাগার আগে নর্থ কেনসিংটনের ওই ভবনটিতে সংস্কার কাজ চলছিল। সেসময় ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই গুরুতর অগ্নিকাণ্ডে ঝুঁকির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সাবধান করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
    ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন ‘কিভাবে এমন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো তার পূর্ণ তদন্ত করা হবে।’ পশ্চিম লন্ডনে গ্রেনফেল টাওয়ার নামে বহুতল ভবনটিতে যখন আগুন লাগে তখন সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। লন্ডন সময় বুধবার প্রথম প্রহর, অর্থাৎ রাত একটার দিকে এ অগ্নিকুণ্ডের ঘটনা ঘটে। বাসস/বিবিসি।

    জাপানে বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাস

    জাপানে বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাস হয়েছে। তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বৃহস্পতিবার সকালে বিলটি পাস করে। এর আগে গতমাসে দেশটির শক্তিশালী নিম্নকক্ষে বিলটি পাস হয়।
    উল্লেখ্য, পার্লামেন্টের উভয়কক্ষেই প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এদিকে নতুন এই আইন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বলা হচ্ছে এই আইনের কারণে নাগরিক গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।
    নতুন আইন অনুযায়ী সন্ত্রাস কিংবা বড়ো ধরনের কোন অপরাধের জন্যে কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে তদন্তকারীরাই অভিযুক্ত করতে পারবেন। এতে বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ, জাপানের জাতীয় বার এসোসিয়েশন ও একাধিক শিক্ষাবিদ নতুন এ আইনের কড়া সমালোচনা করে বলেন, এর কারণে নিরীহ নাগরিকরা হয়রানির শিকার হতে পারেন। ক্ষুণ্ণ হতে পারে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও।
    এদিকে এ আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে রাস্তায় বিক্ষোভও চলছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টোকিওতে ২০২০ সালের অলিম্পিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস দমনের জন্যে এই আইন প্রয়োজনীয়। এএফপি।

    লন্ডনে টাওয়ারে আগুন: বাংলাদেশি এক পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু

    যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের নর্থকেনসিটনের গ্রিনফেল টাওয়ারে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের খৈসাউড়া গ্রামের মো. কমরু মিয়া নামের প্রবাসীর পরিবারের পাঁচজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
    ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রবাসী পরিবার এখনো দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। তারা ভাবতেই পারেননি যে লন্ডনের মত জায়গায় স্বজনরা আগুনে পুড়ে মারা যাবে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি সিলেটের ঘরে ঘরে এক মর্মস্পর্শী ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী কমরু মিয়ার চার সদস্যের পরিবার পুড়ে যাওয়ার ঘটনা এবং বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা কন্যা তামিমার আকুতি অনেকের মনে দাগ কেটেছে। ঘটনার নির্মমতায় মৌলভীবাজারের অনেকেই কেঁদেছেন।
    যদিও লন্ডন পুলিশ এখনো কমরু মিয়া নামের ওই প্রবাসী পরিবারের কোন সন্ধান দিতে পারেনি। তবে মৌলভীবাজারে তার স্বজনদের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে তারা অকুস্থলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরা গেছেন। কমরু মিয়ার আত্মীয় পরিজনদের সূত্রে জানা যায়, কমরু মিয়া তার পরিবারের চার সদস্য সহ দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। তবে তার বড় ছেলে সুজন মিয়া (৫০) ও দুই বিবাহিতা মেয়ে দেশে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
    বিভিন্ন সূত্র জানা যায়, আগুন লাগার পর হতে ভোর তিনটা পর্যন্ত কমরু মিয়া মোবাইল ফোনে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এর পর থেকে কমরু মিয়ার সঙ্গে বাহিরের টেলিফোন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হতভাগ্য পরিবারটি ওই ভবনের সপ্তদশ তলার ১৪৪ নম্বর ফ্লাট এ বসবাস করতেন। তারা আগুন থেকে বাঁচার জন্য বাথরুমের ভিতর আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। অগ্নিকাণ্ডে কমরু মিয়া (৮৫), তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৬০), ছেলে আব্দুল হানিফ (২৯), আবদুল হামিদ (২৬), ও মেয়ে হুসনা বেগম তানিমা (২২) মারা গেছেন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
    সিলেটের মৌলভীবাজারের একাটুনা ইউনিয়নের বিরইনবাদ গ্রামে কমরু মিয়াদের বাড়ী। তাদের এই নির্মম পরিণতিতে গ্রামের বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছে। পড়শি ও স্বজনরা এসে বাড়িতে ভিড় করেছেন। কারো মুখে কোন কথা নেই। মাঝে মধ্যেই কান্নার রোল পড়ে।

    জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় সৌম্য-মুস্তাফিজ-তাসকিনরা

    হার-জিতের হিসেব বাদ দিলে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে যতগুলো সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের তার অপর নাম মুস্তাফিজুর রহমান। এই ভারতের বিপক্ষেই তার সাড়া জাগানো আবির্ভাব। প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ১১ উইকেট নিয়ে গড়েছিলেন ইতিহাস। ২০১৫ সালে সেই সিরিজে ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট নেওয়ার পর এই প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছেন মুস্তাফিজ। তবে এই সময়ে দুবার খেলেছেন টি-টোয়েন্টি। দুটি অভিজ্ঞতাই ছিল হতাশার।
    ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ৪০ রান। কদিন পর টি-টোয়োন্টি বিশ্বকাপে ৪ ওভারে ৩৪ রানে দুটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন মুস্তাফিজ। তবে সেই ম্যাচ তো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিগুলো একটির। বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচে শেষের দিকে ভজকট পাকিয়ে হারে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ এখনও পোড়ায় অনেককে। তবে অতীত ভুলে, আপাতত কাটার মাস্টারের মন জুড়ে স্বপ্নের সেমি-ফাইনাল। জানালেন উপহার দিতে চান ভালো কিছু, ‘সেমি-ফাইনালে উঠতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে। ক্রিকেটাররা সবাই কম বেশি ভালো করেছে। ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল। সবাই ফুরফুরে মেজাজে আছে। আশা করি ভালো কিছু হবে।’
    চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অবশ্য এখনো ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফের ম্যাচে দারুণ ইয়র্কারে একটি উইকেট অবশ্য নিয়েছেন। এজবাস্টনকে ঘুরে দাঁড়ানো আর জয় করার মঞ্চ যদি তিনি বানাতে পারেন, তাহলে কিন্তু রচিত হবে আরও একটি রূপকথাই। তবে প্রতিপক্ষ যখন ভারত, ২০১৫ সালের সেই সিরিজের পর প্রথম ওয়ানডেতে মুস্তাফিজের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকবে অনেকের। তবে ভারত বলে আলাদা কিছু ভাবছেন না বাঁহাতি পেসার, নিজেকে উজার করে দিতে চান সবসময়ের মতোই, ‘বিশ্বাস সবসময়ই করি। আমি সবসময় যেটা ভাবি, সেটা করার চেষ্টা করি। বোলিংয়ে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি সবাই ভালো করতে পারি, ভালো কিছুই হবে।’ এই টুর্নামেন্টে এখনও অবশ্য দারুণ কিছু করতে পারেননি মুস্তাফিজ। জানালেন উইকেট একটি বড় কারণ, ‘শেখার শেষ নেই। আমার কাটার দেশের উইকেটে ভালো ধরে। এখানে অত বেশি হচ্ছে না। তবু চেষ্টা করছি ভালো করার।’
    মাশরাফি বিন মুর্তজাও কদিন আগে বলেছেন, ইংল্যান্ডের উইকেটে বোলিংয়ের ধরনটা শিখছেন মুস্তাফিজ। অধিনায়কের বিশ্বাস, ২০১৯ বিশ্বকাপে এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে মুস্তাফিজের। তবে দারুণ কিছুর সুযোগ আছে এবারও। মুস্তাফিজ আরেকবার জ্বলে উঠলে, ভারতকে হারাতে পারলেই চ্যাম্পিয়্স ট্রফির ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। মাঠে আসা সমর্থকদের, দেশের মানুষকে দারুণ কিছুই উপহার দিতে চান মুস্তাফিজ, ‘যারা আসে মাঠে সবাই দেশের খেলা বলেই দেখতে আসে। আমাদেরকে ভালোবাসে বলেই আসে। আমরা চেষ্টা করব ভালোবাসার সম্মান রাখার জন্য, দেশের মানুষের সম্মান রাখার জন্য।’
    ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে বোলিংয়ে ঝড় তুলেই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল আরেকজন, তাসকিন আহমেদের। আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগের কথা। ওটাও ছিল এই জুন মাসেই। ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সেদিন তাসকিন বাংলাদেশের জয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন দারুণভাবেই। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সে ম্যাচ বাংলাদেশ জিততে পারেনি। সেটি ভিন্ন আলোচনা। তবে তাসকিন সেদিন দারুণভাবেই দিয়ে রেখেছিলেন নিজের আগমনী বার্তাটা। এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৫ ওয়ানডেতে ১২ উইকেট তাঁর। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গ্রæপের শেষ ম্যাচে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে দারুণ রেকর্ডের ধারাবাহিকতাটা এজবাস্টনের সেমিফাইনালে বজায় রাখতে পারলে এই ম্যাচে বাংলাদেশের ভালোই সুযোগ আছে।
    মুস্তাফিজের টুইটার পেজে পোস্ট করা ছবির আরও একজন সৌম্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে সাতক্ষীরার এই তরুণের ব্যাটেই শুরু হয়েছিলে নতুন দিনের পথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলা। ভারতের বিপক্ষেও তাঁর রেকর্ড বেশ ভালো। চারটি ওয়ানডে ম্যাচে মোট রান ১৫৭- গড় ৩৯.২৫। ২০১৫ সালের জুনে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিনটি ম্যাচে তাঁর স্কোর ছিল যথাক্রমে ৫৪, ৩৪ ও ৪০। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালোই খেলেছিলেন। ডাবলিনে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আছে দুটি ফিফটি- একটি ৬১, অন্যটি ৮৭ রানের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরুটাও মন্দ করেননি। ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ভালো খেলতে খেলতে ২৮ রানে আউট হয়ে ফিরেছিলেন। দৃষ্টিনন্দন সব শটে সেদিন ওভাল মাতাচ্ছিলেন তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিষ্প্রভ তাঁর ব্যাট। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে সেই আপ্তবাক্য তো তাঁর জন্য দারুণভাবে প্রযোজ্য- এটাই সময় ঘুরে দাঁড়ানোর ও জয় করার।
    এজবাস্টনের সেমিফাইনাল বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরা জাতীয় কিছু নয়। তবে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তো বটেই। মুস্তাফিজ-সৌম্য-তাসকিনরা এই ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারছেন- এটা নিশ্চিত। এখন প্রয়োজন কেবল মাঠের সমীকরণটা মিলিয়ে নেওয়াই। নিজেদের ক্যারিয়ারকে ভিন্নমাত্রা দেওয়ার এক মস্ত সুযোগও এজবাস্টনের সেমিফাইনাল।
    আগামীকাল বার্মিংহামের ঐতিহাসিক এজবাস্টন মাঠে সেই অস্ত্রগুলোই ঠিকঠাক কাজ করলেই বিরাট কোহলির শক্তিশালী ভারতীয় দলের বিপক্ষে দারুণ কিছুর আশা বাংলাদেশ করতেই পারে। এই তিন অস্ত্রকেই এদিন গর্জে উঠতে হবে। এই ত্রয়ী কি পারবেন দেশবাসীর সেই প্রত্যাশা ভার কাঁধে তুলে নিয়ে বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে?

    আম উত্পাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম

    আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং মোট ফল উত্পাদনে বিশ্বে ২৮তম স্থানে রয়েছে। ফুড এন্ড এগ্রিকালচারের (এফএও) প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলে জাতীয় সংসদের কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয়।
    বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন। দশম জাতীয় সংসদের কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এটি ছিল ২৩তম বৈঠক।
    কমিটির সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. মামুনুর রশীদ কিরন, মো. নূরুল ইসলাম ওমর এবং এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
    বৈঠকে, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরিত ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বিল, ২০১৭’ পরীক্ষাপূর্বক রির্পোট প্রস্তুতকরণ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে এবং বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে বিদেশি ফল চাষের সম্ভাবনার ওপর আলোচনা করা হয়।

    লুটে পুটে চলে যান এদেশে থাকার আর সময় পাবেন না: খালেদা

    বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন চালের দাম ৭০ টাকা। আজকে কেন ৭০ টাকা কেজি চাল খেতে হয়। এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুই বেলা পেট পুরে খেতে পারে না। তারা রিলিফ পর্যন্ত দেয় না। রিলিফ চুরির অভ্যাস আওয়ামী লীগের স্বাধীনতার পর থেকে। তাদের এই অভ্যাস কোনো দিনও যাবে না। এরা চোর। এরা ভোটে চোর, গম চোর, চাল চোর আরো নানা বিধি চুরির অভ্যাস আছে।
    তিনি বলেন, আর কয়েকটা মাস আছে যত পারেন লুটে পুটে চলে যান এদেশে থাকার আর সময় পাবে না। আওয়ামী লীগের সময় শেষ। আর কয়েকটি মাস হাতে আছে। এরপর পালাতে হবে। সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। হাসিনার অধীনে নয়। ইনশাআল্লাহ ২০১৮ সাল হবে জনগণের বছর।
    রবিবার গুলশান-১ এর ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইফতারে অংশ নিয়ে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
    বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ হলো চোরের দল। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা রিলিফ, গম চুরি করছে। ভোট চুরি তাদের প্রধান চরিত্র। তারা জানে সুষ্ঠু ভোট হলে পালাতে হবে। কিন্ত তারা এত বেশি লুট করেছে যে পালানোরও সুযোগ পাবে না। বিএনপিকে বাদ দিয়ে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ গোপন খবর নিয়ে বুঝতে পেরেছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। তাই তারা চায়, নানা অপকৌশলে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে। কিন্তু বিএনপিকে বাদ দিয়ে আর কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নয়।

    বাংলাদেশে মুগ্ধ ক্রিকেট দুনিয়া

    ঠিক এক যুগ আগে এই সোফিয়া গার্ডেন্সে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বাংরাদেশ। তখনকার ‘মিনোজ’ দলটি আজ বিশ্বের আরেক নতুন পরাশক্তি। যার প্রমাণ এরই মধ্যে পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। বহুবার তাদের গর্জনে কেঁপেছে মাঠ, কেঁপেছে রাজপথ। ওয়ানডে খেলা প্রতিটি দেশকেই একাধিকবার হারানো, এমনকি হোয়াইট ওয়াশের স্বাদও পেয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ দলটি। গেল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে প্রথমবারেরমত কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা মাশরাফি বাহিনীর প্রসংশায় আজও পঞ্চমুখ সারা দুনিয়া। সেই রেশ থাকতে না থাকতেই আরেকবার বেঙ্গল-টাইগারের গর্জনে কাঁপল সারা বিশ্ব। গেলপরশু সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জোড়া সেঞ্চুরির সাথে পঞ্চম উইকেটে দু’জনের রেকর্ড ২২৪ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা ধরে রাখে টাইগাররা। বীরোচিত এমন জয়ের পর বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রশংসার জোয়াড়ে ভাসছে বাংলাদেশ দল।
    এ ম্যাচে সাকিব ১১৪ রানে ফিরলেও, ১০২ রানে অপরাজিত থেকে যান মাহমুদউল্লাহ। ১১৪ রানের ইনিংস খেলে কার্ডিফের এই ভেন্যুতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন সাকিব। তবে যৌথভাবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। কারন এই ভেন্যুতে ১১৪ রান আছে ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ানেরও। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৪ রান করেছিলেন ধাওয়ান। এই মাঠে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৭ রান করেছিলেন কোহলি। তবে চতুর্থ ও পঞ্চমস্থানে আছেন মাহমুদুল্লাহ ও মোহাম্মদ আশরাফুল। ঐতিহাসিক এই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ’র অপরাজিত ১০২ রান চতুর্থস্থানে জায়গা করে নেয়। আর ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশের ম্যাচ জয়ী ১০০ রান আছে পঞ্চমস্থানে।
    ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৩০৫ রান করেও বাজেভাবে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন। ঐ ম্যাচে প্রাপ্তি শুধুই তামিম ইকবালের ঝকঝকে এক সেঞ্চুরি। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেই তামিমের ৯৫ রানের ইনিংসের পরও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১৮২ রানেই গুটিয়ে যায় মাশরাফির দল। তবে এদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাছে নিশ্চিত হারের গøানি থেকে রক্ষা কবজ হয়ে আসে স্বস্তির বৃষ্টি। সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন এক যাত্রা। পরিত্যাক্ত ঐ ম্যাচের এক পয়েন্ট নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনা শুরু মাশরাফি-মুশফিকদের। স্মৃতির পটে ভেসে ওঠে গেল বিশ্বকাপে এই অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকেই এক পয়েন্ট পাওয়ার চিত্রনাট্য। টিকে থাকার লড়াইয়ে পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে দূর্দান্তভাবে হারিয়েই শুধু নয়, একেবারে বিদায় করেই কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটে বাংলাদেশ। সেই একই পটভূমি এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও। এবার বাংলাদেশের শিকার নিউজিল্যান্ড।
    কতটা স্বপ্ন বিভোর হলে মাত্র ৩৩ রানে চার টপঅর্ডারকে (তামিম, সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক) হারিয়েও মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের দূর্দান্ত জোড়া সেঞ্চুরিতে অবিস্মরণীয় এক জয়, সেটা আত্মবিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ। যা স্পষ্ট করেছেন দলের কোচ হাতুরুসিংহে, মাশরাফি এবং রূপকথার নায়ক মাহমুদউল্লাহ, সাকিবরা। এক টুইট বার্তায় ছেলেদের প্রসংশার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন কোচ হাতুরু। লিখেছেন, ‘গতকাল (গতপরশু) যা ঘটেছে, তা সত্যিই অপরমিয়ে বিশ্বাসের ফল, সামনে এগিয়ে যাবার পাথেয়। সাকিব এবং রিয়াদ তোমরা অপূর্ব।’ নিজেদের এই কৃতিত্বের ভাগ অধিনায়ক মাশরাফি দিলেন সমর্থকদের। ম্যাচ শেষে মাঠে দাঁড়িয়েই বলেলেন, ‘সমর্থকেরা দুর্দান্ত ছিলেন। তাঁরা সব সময় আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। ওভালে যখন খেলেছি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, তখনো অনেক সমর্থন ছিল; এখানেও তাই। অনেককেই লন্ডন কিংবা আরও অনেক দূর থেকে আসতে হয়েছে। তবু তাঁরা এসেছেন, সমর্থন দিয়েছেন। আশা করছি তাঁরা এটা চালিয়ে যাবেন। কারণ আমার ধারণা, তাদের কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে।’ জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহও আলাদা করে ধন্যবাদ দিয়েছেন এই আবেগী সমর্থকদের, ‘আবহটা খুব ভালো ছিল। সমর্থকদের আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁরা সবাই ইংল্যান্ড থেকে এখানে এসেছেন, তাদের ধন্যবাদ।’
    মুগ্ধতা শুধু বাংরাদেশ শিবিরেই নয়, ছড়িয়ে আছে পুরো ক্রিকেট দুনিয়াতেই।
    ‘একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ সফরে গিয়ে দলগুলো চাইত বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করুক। খেলাটা যাতে আগে শেষ হয়ে যায়। কী দারুণভাবেই না পরিস্থিতি পাল্টে গেছে’- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ের পর নিজের অফিশিয়াল টুইটারে এ কথাই লিখেছেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে।
    বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত ভোগলে এতেই থেমে থাকেননি। মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসানের ২২৪ রানের অবিস্মরণীয় জুটি নিয়েও মন্তব্য করেছেন। আলাদা আলাদা মন্তব্যে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবকে ভাসিয়েছেন প্রশংসায়। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দুই জয়ে একটা বিষয়ে দারুণ মিল- মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি।’ আর সাকিব সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে এল অন্যতম সেরা সেঞ্চুরিটি।’
    নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন দারুণ জয় অবশ্য ভোগলের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সেরা জয় নয়। তিনি এই দৌড়ে এগিয়ে রাখছেন ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টিকেই। যে জয় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার। ভোগলের মতে, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টা পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই জয়ের খুব কাছাকাছি থাকবে।’
    আকাশ চোপড়া টুইট করেছেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না এমন একজন ব্যাটসম্যান আইপিএলে কোনো দল পান না কীভাবে, ‘মাহমুদউল্লাহ-সুবহান আল্লাহ! তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি…সবগুলোই আইসিসির প্রতিযোগিতাতে। অবাক লাগছে, আইপিএলের কোনো দল মাহমুদউল্লাহকে নেয়নি কেন? বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দিন এটি।’
    সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের ২২৪ রানের জুটিতে মুগ্ধ। এমন জুটি তিনি অতীতে দেখেছেন কিনা মনে করতে পারছেন না সেটিও, ‘ওয়ানডে ক্রিকেটে এর চেয়ে সেরা জুটির কথা আমি মনে করতে পারছি না। ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেই। বল সুইং করছে এমন পরিস্থিতিতে এই জুটি।’ ভন নিজের টুইটে এই জুটি নিয়ে ‘বেস্ট এভার’ কথাটি লিখে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন।
    পাকিস্তান ক্রিকেটের সুপার স্টার শহীদ আফ্রিদি বাংলাদেশের এই জয়কে দেখছেন ‘দুর্দান্ত’ হিসেবেই। তিনি রীতিমতো চমকে গেছেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর বীরত্বে, ‘বাংলাদেশের দুর্দান্ত এক জয়। ঘুরে দাঁড়িয়ে চমকে দিল সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ।
    নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেছেন, ‘প্রচÐ চাপের মুখেও মাথা নত করেনি বাংলাদেশ।’ অস্ট্রেলিয় লেগ স্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন এমন জয়ের পর টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশকে।
    সঞ্জয় মাঞ্জরেকার মুগ্ধ সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে। বলেছেন, ‘এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ম্যাচজয়ী বেশ কিছু জুটি দেখলাম। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটি সেগুলোর অন্যতম।’
    সাবেক কিউই পেসার ড্যানি মরিসন নিজের টুইটে বাংলাদেশকে ‘বাংলা টাইগার্স’ সম্বোধন করে লিখেছেন, ‘সত্যিই দুর্দান্ত। মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব দলকে কী চমৎকার ভাবেই না বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাল।’

    রোজার উপর গবেষণা করে নোবেল জয় করলেন ভিনধর্মী ওসুমি

    মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ’সিয়াম’। খ্রিস্টানরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ’ফাস্টিং’। হিন্দু বা বৌদ্ধরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ’উপবাস’।
    বিপ্লবীরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ’অনশন’। আর, মেডিক্যাল সাইন্সে রোজা রাখকে বলা হয় ’অটোফেজি’।তবে মুসলিমদের রোজা রাখার ধরনের সাথে অন্যদের কিছু পার্থক্য আছে।
    খুব বেশি দিন হয়নি, মেডিক্যাল সাইন্স ’অটোফেজি’র সাথে পরিচিত হয়েছে। ২০১৬ সালে নোবেল কমিটি জাপানের ডাক্তার ’ওশিনরি ওসুমি’-কে অটোফেজি আবিষ্কারের জন্যে পুরষ্কার দেয়। এরপর থেকে আধুনিক মানুষেরা ব্যাপকভাবে রোজা রাখতে শুরু করে।
    ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাবেন । যেখানে রোজা রাখার জন্যে আধুনিক সচেতন নারী ও পুরুষেরা কেমন ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, দেখুন!!! শত হলেও, মেডিক্যাল সাইন্স বলে কথা!!যাই হোক, Autophagy কি? এবার তা বলি।
    Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ। Auto অর্থ নিজে নিজে, এবং Phagy অর্থ খাওয়া। সুতরাং, অটোফেজি মানে নিজে নিজেকে খাওয়া।
    না, মেডিক্যাল সাইন্স নিজের গোস্ত নিজেকে খেতে বলে না। শরীরের কোষগুলো বাহির থেকে কোনো খাবার না পেয়ে নিজেই যখন নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে, তখন মেডিক্যাল সাইন্সের ভাষায় তাকে অটোফেজি বলা হয়। আরেকটু সহজভাবে বলি।
    আমাদের ঘরে যেমন ডাস্টবিন থাকে, অথবা আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে। সারা বছর শরীরের কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে, ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না। ফলে কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায়।
    শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে, তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মত অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই।
    মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর আমাদের মত অলস হয়ে বসে থাকে না, তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে।
    কোষগুলোর আমাদের মত আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই বলে তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে। মেডিক্যাল সাইন্সে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।
    জাস্ট এ জিনিসটা আবিষ্কার করেই জাপানের ওশিনরি ওসুমি ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কারটা নিয়ে গেল।
    শুনেছি প্রোফেসর ওশিনরি নিজেও সপ্তাহে দুটি করে রোজা রাখেন। আমার আফসোস হলো তাদের জন্যে, যারা স্বাস্থ্যের কথা ভেবে রোজা রাখেন না।
    আমরা তো প্রতিবছর একমাস রোজা রেখে শরীরের অটোফেজি করে ফেলি। কিন্তু, আপনারা কিভাবে শরীরের অটোফেজি করবেন?

     

    ব্রিটিশ নির্বাচনে আবারো জয়ী টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও রুশনারা আলী

    বিপুল উৎসাহ ও কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনে মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে ফের নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক।
    টিউলিপ পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী ক্লেয়ার লুইচ লিল্যান্ড পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯০৪ ভোট। এর আগে ২০১৫ সালে মাত্র ১ হাজার ১৩৮ ভোটের ব্যবধানে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ। এবার সেই ব্যবধান বেড়ে হলো ১৫ হাজার ৫৬০।
    লেবার দলীয় প্রার্থী রূপা হকের প্রাপ্ত ভোট ৩৩ হাজার ৩৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী জয় মোরিসি পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৩০ ভোট। গতবার মাত্র ২৭৪ ভোটে জয় পাওয়া রূপা এবার জিতেছেন ১৩ হাজার ৮০৭ ভোটের ব্যবধানে। ২০১৫ সালে রূপা হক প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হঠাৎ করে মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ায় রূপা হককে দুই বছরের মাথায় আসনটি ধরে রাখার লড়াইয়ে নামতে হয়।
    বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনেও জয়ী হয়েছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী। তিনি ৪২ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির চার্লট চিরিকো পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৭৬ ভোট। ২০১০ সালে প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আসনটি তৃতীয় মেয়াদে ধরে রাখার জন্য লড়ে যাচ্ছেন। বিবিসি ও রয়টার্স।

    ঈসালে সওয়াব : কিছু মাসনূন পদ্ধতি

    ‘ঈসালে সওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস সাওয়াব’ (তবে এ ক্ষেত্রে আরবীতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ‘ইহদাউস সাওয়াব’)। এর আভিধানিক অর্থ হল সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ঈসালে সওয়াব হল কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা।

    ঈসালে সওয়াবের প্রেরণা

    কষ্টার্জিত আমলের সওয়াব যে কাউকে দান করা হয় না। এ সাধারণত তাকেই দান করা হয় যার প্রতি মহব্বত ও আন্তরিকতা আছে। প্রিয়জন আখেরাতের পথিক হয়ে গেলে তার জন্য এমন কিছু করা মানুষের স্বভাবজাত আগ্রহ, যা তার শান্তি-সফলতার পক্ষে সহায়ক হবে, তার জন্য আল্লাহর রহমত ও করুণার উপায় হবে। ফলে তিনি তার গোনাহ মাফ করে দিবেন, মর্যাদা উঁচু করবেন এবং সুখে-শান্তিতে ভরিয়ে তুলবেন।

    এই মহব্বতের একটি অনুষঙ্গ হল আত্মীয়তা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ঈমান, সৎকর্ম ও সদ্ব্যবহার। এজন্য পিতা-মাতা, দাদা-দাদী প্রমুখের জন্য যেমন ঈসালে সওয়াব করা হয়, তেমনি উস্তাদ-মুরব্বী, আলেম-উলামা, ওলী-বুযুর্গ ও নবী-রাসূলগণের জন্যও করা হয়; বরং ঈমান, সৎকর্ম ও সদাচারে যারা অগ্রগামী তাদের জন্যই বেশি ঈসালে সওয়াব করা হয়। আর তাতে সহযোগিতার চেয়ে সৌভাগ্য ও সাআদাত অর্জনের মনোভাবই কাজ করে বেশি। কোনো নেক লোকের সঙ্গে ঈসালে সওয়াবের সম্পৃক্ততাও সৌভাগ্য বৈকি?

    এ কারণে সবার গুরুত্ব ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত ঈমান, সৎকর্ম ও  উত্তম আচার-ব্যবহারে অগ্রগামিতা এবং তা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

     

    মূল বিষয়টি সম্পূর্ণ স্বীকৃত

    জীবিতদের দান করা আমল মৃতদের জন্য কল্যাণকর হওয়া আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর কাছে একটি স্বীকৃত বিষয়। মৌলিক দিক থেকে তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই; মতভেদ শুধু বিস্তারিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু মুতাযিলা সম্প্রদায় তা অস্বীকার করেছে। এদের মতে জীবিতদের দান করা কোনো আমলই মৃত ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর নয়, দুআ-ইস্তিগফার ও সদকাও নয়।

    এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাহর ইজমা-বিরুদ্ধ। এজন্য এর উপর কোনো মন্তব্য না করে সরাসরি ঈসালে সওয়াবের পদ্ধতিগুলো আলোচনা করা হল।

     

    ঈসালে সওয়াবের কিছু পদ্ধতি

    এক. দুআ

    ইবাদতের সারনির্যাস হচ্ছে আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ সমর্পণ এবং চূড়ান্ত বিনয় ও মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ। আর এটা দুআর মধ্যে সর্বোত্তমরূপে প্রকাশিত হয়। দুআ অর্থ ডাকা। নিজেকে অসহায় ও নিঃস্ব মনে করে কারো সামনে দু’হাত প্রসারিত করার চেয়ে বিনয় ও সমর্পণ আর কী হতে পারে? তাই দুআর মর্যাদা ও গুরুত্ব অসীম। হাদীসে দুআকে ইবাদত বরং ইবাদতের মগজ বলা হয়েছে।

    ইসলামী ভ্রাতৃত্বের একটি সাধারণ হক হল, আপনপর জীবিত-মৃত নির্বিশেষে সকল মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুআ করা। আর যারা না-ফেরার জগতে পাড়ি জমিয়েছেন তারা যেহেতু কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন এবং আমাদের আগে ঈমান এনেছেন তাই তাদের জন্য বিশেষভাবে কাম্য। দুআ জীবিত-মৃত সকলের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। এ কুরআন ও হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। নিম্নে কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করছি।

    ১. কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,

    وَ الَّذِیْنَ جَآءُوْ مِنْۢ بَعْدِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِیْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ۠ .

    এবং (ফাই-এর সম্পদ তাদেরও প্রাপ্য আছে ) যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা করুন আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো  হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু। Ñসূরা হাশর (৫৯) : ১০

    এখানে পূববর্তী মুমিনদের জন্য (যাতে জীবিত ও মৃত সকলই আছেন) দুআ করার প্রশংসা করা হয়েছে। দুআ যদি তাদের জন্য উপকারী না হয়, তবে এ প্রশংসার কী অর্থ থাকে?

    হাফেয সাখাবী রহ. (৯০২হি.) বলেন, এখানে পূর্ববর্তীদের জন্য দুআ করায় তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। বোঝা গেল যে, দুআ উপকারে আসে। Ñকুররাতুল আইন পৃ. ১২৩

    ২. অন্যত্র ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,

    رَبَّنَا اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ یَوْمَ یَقُوْمُ الْحِسَابُ.

    হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন। Ñসূরা ইবরাহীম (১৪) : ৪১

    ৩. অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,

    رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنْ دَخَلَ بَیْتِیَ مُؤْمِنًا وَّ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ  وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیْنَ اِلَّا تَبَارًا۠.

    হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও। Ñসূরা নূহ (৭১) : ২৮

    ৪. সূরা মুহাম্মদ-এ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে,

    فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ اللهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ.

    জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং ক্ষমাপ্রার্থনা কর নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য এবং মুসলিম নর-নারীদের জন্যও। Ñসূরা মুহাম্মদ (৪৭) : ১৯

    ৫. অন্যত্র ফিরিশতাদের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,

    اَلَّذِیْنَ یَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَ مَنْ حَوْلَهٗ یُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَ یُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَ یَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا  رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَیْءٍ رَّحْمَةً وَّ عِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِیْنَ تَابُوْا وَ اتَّبَعُوْا سَبِیْلَكَ وَ قِهِمْ عَذَابَ الْجَحِیْمِ رَبَّنَا وَ اَدْخِلْهُمْ جَنّٰتِ عَدْنِ ِالَّتِیْ وَعَدْتَّهُمْ وَ مَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآىِٕهِمْ وَ اَزْوَاجِهِمْ وَ ذُرِّیّٰتِهِمْ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ وَ قِهِمُ السَّیِّاٰتِ  وَ مَنْ تَقِ السَّیِّاٰتِ یَوْمَىِٕذٍ فَقَدْ رَحِمْتَهٗ  وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ.

    যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাঁর তাসবীহ পাঠ করে ও তাঁর প্রতি ঈমান রাখে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করে, হে আমাদের  প্রতিপালক! তোমার রহমত ও জ্ঞান সমস্ত কিছু জুড়ে ব্যাপ্ত। যারা তাওবা করেছে ও তোমার পথ অনুসরণ করেছে তাদের ক্ষমা করে দাও এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দাখিল কর স্থায়ী জান্নাতে, যার ওয়াদা তুমি তাদের সাথে করেছ এবং তাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে যারা নেক তাদেরকেও। নিশ্চয়ই তুমিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। এবং তাদের সকল অকল্যাণ থেকে রক্ষা কর। সে দিন তুমি যাকে অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবে তার প্রতি তো তুমি দয়াই করবে। আর এটাই মহাসাফল্য। Ñসূরা মুমিন (৪০) : ৭-৯

    এ দুআগুলোতে জীবিত-মৃতের পার্থক্য ছাড়া সাধারণ মুমিনদের জন্য দুআ করা হয়েছে।

    ৬. দুআ মৃতের পক্ষে কল্যাণকর হওয়ার সবচেয়ে বড় দলীল হল জানাযার নামায। জানাযার নামায বস্তুত সালাতরূপ দুআ। জানাযার নামাযে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব দুআ পড়তেন সেগুলো থেকেই তা পরিষ্কার। এজন্য নিষ্ঠার সাথে দুআ করা কাম্য।

    হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

    إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء.

    তোমরা যখন মাইয়িতের নামায পড়বে তখন তার জন্য নিষ্ঠার সাথে দুআ করবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৯৯

    এখানে জানাযার নামাযের দু-একটি দুআ উল্লেখ করা যেতে পারেÑ

    اللهم اغفر لحينا وميتنا، وشاهدنا وغائبنا، وصغيرنا وكبيرنا، وذكرنا وأنثانا، اللهم من أحييته منا فأحيه على الإسلام، ومن توفيته منا فتوفه على الإيمان.

    ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের জীবিত-মৃতদের মাফ করুন। আমাদের উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সকলকে মাফ করুন। ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখেন তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন আর যাকে মৃত্যু দেন তাকে ঈমানের উপর মৃত্যু দিন। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৮০৯

    اللهم اغفر له وارحمه، وعافه واعف عنه، وأكرم نزله، ووسع مدخله، واغسله بالماء والثلج والبرد، ونقه من الخطايا كما نقيت الثوب الأبيض من الدنس، وأبدله دارا خيرا من داره، وأهلا خيرا من أهله، وزوجا خيرا من زوجه، وأدخله الجنة، وأعذه من عذاب القبر.

    ইয়া আল্লাহ, তাকে মাফ করে দিন, তার প্রতি রহম করুন, তাকে নিরাপদে রাখুন, তার ভুলত্রুটি মার্জনা করুন। তার সম্মানজনক আপ্যায়ন করুন, তারা প্রবেশস্থলকে প্রশস্ত করে দিন। তাকে পানি, বরফ ও বৃষ্টি দ্বারা ধুয়ে-মুছে দিন এবং গোনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার করেছেন। তাকে দান করুন তার ঘরের চেয়ে উত্তম ঘর, তার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার এবং তার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী । তাকে জান্নাতে স্থান দিন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৬৩

    ৭. মৃত্যুর পরে বেশ কটি মনযিল রয়েছে। আর প্রত্যেকটি মনযিলই ভয়াবহ। প্রথম মনযিল হল কবর। এখানে দাফনপর্ব শেষে মাইয়িতের ‘সুয়াল-জওয়াব’ হয়। তাই এ সময় তার জন্য দুআ করা বিশেষভাবে কাম্য, যাতে আল্লাহ তাআলা তার ‘সুয়াল-জওয়াব’ সহজ করে দেন।

    উসমান ইবনে আফফান রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেনÑ

    استغفروا لأخيكم، وسلوا له بالتثبيت، فإنه الآن يسأل.

    তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা কর এবং সে যেন সুদৃঢ় থাকতে পারে সে দুআ কর। কারণ এখনই তাকে ‘সুয়াল’ করা হবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২২১

    ৮. কবর যিয়ারত আখেরাতের স্মরণে সহায়ক হওয়ায় হাদীসে এর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং যিয়ারতকারীর এক বড় করণীয় সাব্যস্ত করা হয়েছে মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার। এ ক্ষেত্রে হাদীসে বেশ কিছু দুআ বর্ণিত হয়েছে। একটি দুআ এ রকমÑ

    السلام على أهل الديار من المؤمنين والمسلمين، ويرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين، وإنا إن شاء الله بكم للاحقون.

    এই কবরস্থানের বাসিন্দা মুসলিম-মুমিনদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৪

    ৯. জানাযার নামায ও কবর যিয়ারতের বাইরেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করেছেন। উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সালামাকে দেখতে এলেন, তখন তার চোখ খোলা ছিল। তিনি চোখ বন্ধ করে দিয়ে বললেন, যখন রূহ কবয করা হয় তখন চোখ তার অনুসরণ করে। এ কথা শুনে লোকেরা কান্না শুরু করে দিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ভালো ছাড়া অন্য কিছু বলাবলি করো না। কারণ, তোমরা যা কিছু বল ফিরিশতারা তার উপর আমীন বলেন। তারপর তিনি এভাবে দুআ করলেন,

    اللهم اغفر لأبي سلمة، وارفع درجته في المهديين، واخلفه في عقبه في الغابرين، واغفر لنا وله يا رب العالمين، وافسح له في قبره، ونور له فيه.

    হে আল্লাহ! আপনি আবু সালামাকে ক্ষমা করে দিন, হেদায়েতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা উঁচু করুন, তার পরিবারের অভিভাবক হয়ে যান। হে জগতসমূহের প্রতিপালক! তাকে ও আমাদেরকে মাফ করে দিন। তার কবরকে প্রশস্ত ও নূরানী করে দিন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯২০

    একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আমের রা.-কে এক যুদ্ধে আমীর নিযুক্ত করে পাঠিয়েছিলেন। একটি তীরের আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তার আগে ভাতিজা আবু মূসা আশআরী রা.-কে বলে গেছেন, তিনি যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার সালাম পৌঁছান এবং তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে বলেন। আবু মূসা আশআরী রা. তা-ই করলেন। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনিয়ে অযু করলেন এবং দু’হাত প্রসারিত করে দুআ করলেনÑ

    اللهم اغفر لعبيد أبي عامر، اللهم اجعله يوم القيامة فوق كثير من خلقك أو من الناس.

    হে আল্লাহ! আপনি আবু আমেরকে মাফ করে দিন। তাকে কিয়ামতের দিন আপনার বহু সৃষ্টির উপর (বর্ণনাকারী বলেন, অথবা বলেছেন, মানুষের উপর) মর্যাদা দিন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯৮

    এই আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, দুআ জীবিত ও মৃত সকলের জন্য কল্যাণকর।

     

    দুই. সদকা

    আল্লাহ তাআলা নিজ ইলম ও হিকমতের ভিত্তিতে কাউকে করেছেন সচ্ছল, কাউকে অসচ্ছল। তবে সবার রিযিকের দায়িত্ব তাঁর হাতে। কিন্তু তা বান্দা পর্যন্ত পৌঁছার উপায় সকলের ক্ষেত্রে এক নয়; বরং বয়স, ব্যক্তি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিভিন্নতায় তা বিভিন্ন হয়ে থাকে। একটি উপায় হল সদকা বা দান-খায়রাত। এটা অনেক ফযীলত ও সওয়াবের কাজ। তবে এর একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে সামান্য সদকাও মূল্যবান। আর অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বিশাল সদকাও মূল্যহীন।

    এই সদকা জীবিতদের মত মৃতদের জন্যও করা যায় এবং এর সওয়াব তাদের কাছে পৌঁছে। এ বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এখানে কিছু হাদীস পেশ করা যেতে পারে।

    ১. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? বললেন, হাঁ। সাদ রা. বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মা’র জন্য সদকা। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৫৬

    عن ابن عباس رضي الله عنهما: أن سعد بن عبادة رضي الله عنه توفيت أمه وهو غائب عنها، فقال: يا رسول الله! إن أمي توفيت وأنا غائب عنها، أينفعها شيء إن تصدقت به عنها؟ قال: نعم. قال: فإني أشهدك أن حائطي المخراف صدقة عليها.

    ২. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একলোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন, কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সদকা করে যেতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন?  বললেন, হাঁ। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১০০৪

    عن عائشة أن رجلا أتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله! إن أمي افتلتت نفسها ولم توص، وأظنها لو تكلمت تصدقت، أفلها أجر، إن تصدقت عنها؟ قال: نعم.

    ৩. আবু হুরায়রা. থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে? বললেন, হাঁ। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৩০

    عن أبي هريرة أن رجلا قال للنبي صلى الله عليه وسلم: إن أبي مات وترك مالا، ولم يوص، فهل يكفر عنه أن أتصدق عنه؟ قال: نعم.

    ৪. আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, আস ইবনে ওয়ায়েল জাহেলীযুগে একশো উট যবাহ করার মানত করেছিল। অতপর (তার ছেলে) হিশাম তার পক্ষ থেকে ৫০টি উট যবাহ করে। (বাকি ৫০টি অপর ছেলে আমর যবাহ করতে চান।) এ ব্যাপারে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমার পিতা যদি তাওহীদ স্বীকার করত আর তুমি তার পক্ষ থেকে রোযা রাখতে বা সদকা করতে, তবে এ তার কাজে আসত। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৭০৪

    عن عمرو بن شعيب، عن أبيه، عن جده، أن العاص بن وائل نذر في الجاهلية أن ينحر مائة بدنة، وأن هشام بن العاص نحر حصته خمسين بدنة، وأن عمرا سأل النبي صلى الله عليه وسلم عن ذلك؟ فقال: أما أبوك فلو كان أقر بالتوحيد، فصمت وتصدقت عنه، نفعه ذلك.

    এ হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হল যে, সদকার সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে।

    মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ ও সদকা কল্যাণকর হওয়া উম্মাহর সর্বসম্মত মত। এতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর কোনো দ্বিমত নেই।

    ইমাম নববী রহ. (৬৭৬হি.) إذا مات الإنسان -এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় লেখেন,

    وفيه أن الدعاء يصل ثوابه إلى الميت، وكذلك الصدقة، وهما مجمع عليهما.

    এ থেকে প্রমাণ মেলে যে, দুআর সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে। এমনিভাবে সদকার সওয়াবও। এ দুটি সর্বসম্মত বিষয়। Ñশরহু সহীহ মুসলিম ১১/৮৫

    অন্যত্র এক প্রসঙ্গে লিখেছেন,

    ৃمن أراد بر والديه فليتصدق عنهما، فإن الصدقة تصل إلى الميت وينتفع بها، بلا خلاف بين المسلمين، وهذا هو الصواب، وأما ما حكاه أقضى القضاة أبو الحسن الماوردي البصري الفقيه الشافعي في كتابه >الحاوي< عن بعض أصحاب الكلام من أن الميت لا يلحقه بعد موته ثواب، فهو مذهب باطل قطعا، وخطأ بين مخالف لنصوص الكتاب والسنة وإجماع الأمة، فلا التفات إليه ولا تعريج عليه.

    …যে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে চাই সে যেন তাদের পক্ষ থেকে সদকা করে। সদকা মাইয়িতের কাছে পৌঁছে এবং তার উপকারে আসে। এতে কোনো দ্বিমত নেই। আর এটাই সঠিক। আর মাওয়ারদী কতক ‘আহলে কালাম’ থেকে যে কথা বর্ণনা করেছেন যে, মাইয়িতের কাছে কোনো সওয়াব পৌঁছে না, সেটা সম্পূর্ণ বাতিল ও ভুল। কিতাব-সুন্নাহ ও উম্মাহর ইজমা বিরুদ্ধ। সুতরাং তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। Ñশরহু সহীহ মুসলিম ১/৮৯-৯০

    আবুল হাসান আলী ইবনে মুহাম্মদ আলখাযিন (৭৪১হি.) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও ইবনে আব্বাস রা.-এর হাদীস দুটি উল্লেখ করে বলেন,

    وفي الحديثين الآخرين دليل على أن الصدقة عن الميت تنفع الميت ويصله ثوابها. وهو إجماع العلماء.

    وكذلك أجمعوا على وصول الدعاء وقضاء الدين، للنصوص الواردة في ذلك.

    হাদীস দুটিতে এ কথার প্রমাণ আছে যে, সদকা মৃতের উপকারে আসে এবং এর সওয়াব তার কাছে পৌঁছে। এটা আলেমদের সর্বসম্মত মত। এমনিভাবে তারা এ ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন যে, দুআ ও ঋণ পরিশোধের সওয়াবও পৌঁছে। কারণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীস রয়েছে। Ñতাফসীরে খাযিন ৪/২১৩

    ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ

    আজ ঐতিহাসিক ৭ জুন, ছয় দফা দিবস। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিবাদী আত্মত্যাগে ভাস্বর একটি দিন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনটি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে। আর এ ছয় দফার মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন। সেদিন পাকিস্তানের তত্কালীন সেনাশাসক জেনারেল আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফা মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ছয় দফার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভায় ৭ জুন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মাসব্যাপী ৬ দফা প্রচারে ব্যাপক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। ৭ জুন তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল বেভারেজের শ্রমিক সিলেটের মনু মিয়া পাকিস্তান স্বৈরশাসকের গুলিতে প্রাণ হারান। এতে বিক্ষোভের প্রচণ্ডতা আরো বাড়ে। তেজগাঁওয়ে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আজাদ এনামেল এ্যালুমিনিয়াম কারখানার শ্রমিক আবুল হোসেন ইপিআরের গুলিতে শহীদ হন।
    একই দিন নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের কাছে পুলিশের গুলিতে মারা যায় আরো ৬ শ্রমিক। আন্দোলনের প্রচণ্ডতায় লাখো বাঙালি মাঠে নেমে পড়ে। সন্ধ্যায় জারি করা হয় কারফিউ। রাতে হাজার হাজার আন্দোলনকারী বাঙালিকে গ্রেফতার করা হয়। এমনিভাবে ৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শহীদের রক্তে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্দোলন।
    কর্মসূচি
    ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং দুপুর আড়াইটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস পালন উপলক্ষে গৃহীত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের সকল শাখাসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
    রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
    ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঐতিহাসিক ৬ দফা শুধু বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণারও উত্স। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে তথা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি ৬ দফার দাবি আদায়সহ জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিহত সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
    বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহাসিক ৭ জুনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ জুন এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬-দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। তিনি বলেন, বাঙালির মুক্তিসনদ ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে এদিন আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তত্কালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। প্রধানমন্ত্রী এই দিনে ঐতিহাসিক ৭ই জুনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
    ঐশীকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন

    রাজধানীর চামেলীবাগে স্ত্রীসহ পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলায় তাঁদের মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

    আজ সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে এই আদেশ দেন।

    আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম। ঐশীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।

    ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন মাহফুজের ভাই মশিউর রহমান ওই ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন।

    এই মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড ও তাঁর বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

    একই বছরের ১৯ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে আসে। পরে তা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন ঐশী। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক (মামলাবৃত্তান্ত) প্রস্তুতের পর ওই বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য আসে। গত ১২ মার্চ এসবের ওপর শুনানি শুরু হয়, ৭ মে শুনানি শেষ হয়।

    জাপানে ছোট বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৪

    জাপানের মধ্যাঞ্চলে বরফে ঢাকা পর্বতে একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে চার জন নিহত হয়েছে। রবিবার স্থানীয় পুলিশ একথা জানিয়েছে। এক প্রপেলার বিশিষ্ট চেসনা বিমানটি চার আরোহী নিয়ে শনিবার জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় আলপসে বিধ্বস্ত হয়েছে। পুলিশ এক ব্যক্তির কাছ থেকে জরুরি ফোন পায়। বিমানের কোন আরোহী ওই ফোনটি করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিমানের আরোহীদের বয়স ২১ বছর থেকে ৫৭ বছরের মধ্যে। জরুরি ফোন পাওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার পৌঁছাতে পেরেছে।
    কুয়াশার কারণে উদ্ধার অভিযান চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। বাসস।