• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ভক্তদের চীন ঘুরিয়ে ফিরলেন সাকিব
    ঈদের ছুটিতে সাকিব আল হাসানের সাথে চীন ঘুরে এলো ভাগ্যবান পাঁচ ভক্ত। গত ২৯ জুন থেকে ৪ জুলাই বিশ্বের সেরা এ অলরাউন্ডারের সাথে তার ভক্তদের চীন সফরের আয়োজন করে হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রæপ। ‘সাকিবের সাথে চায়না, কে যেতে চায় না’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় সৌভাগ্যবান ৫ ভক্তকে। সফরে সাকিব আল হাসানে সাথে চীনে অবস্থিত হুয়াওয়ের কার্যালয়সহ চীনের ঐতিহাসিক এবং আধুনিক নির্দশনগুলো ঘুরে দেখেন ভক্তরা।

    জাপানের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় নিখোঁজ ১৫

    জাপানের দক্ষিণাঞ্চলে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে এবং অন্তত ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে পথঘাট পানিতে ডুবে গেছে ও গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ একথা জানিয়েছে।
    আবহাওয়া কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা জানান, প্রবল বর্ষণে ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পথঘাট কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে করে আটকা পড়া হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে সেনা ও উদ্ধারকারীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থার এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এর আগে এমন ভারি বৃষ্টিপাত দেখিনি।’তিনি আরো বলেন, ‘এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।’
    বৃহস্পতিবার চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিউশুর বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সাড়ে সাতহাজার পুলিশ, উদ্ধারকারী ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে তল্লাশি অভিযানের জন্য ৪০টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বহু মানুষ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’
    এদের মধ্যে একটি শিশু নদীতে ভেসে গেছে এবং এক দম্পতির বাড়ি ভেসে যাওয়ার পর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ফুকুওকা ও ওইতার কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে ১৫ জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে যে কয়েকটি অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আসাকুরা নগরীর তাদের অন্যতম। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে নগরীটির রাস্তাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
    আসাকুরা নগরীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা নাওহিসা ওউচিদা বলেন, ‘আমরা শুনেছি যে এখন পর্যন্ত ছয় থেকে সাতজন নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। শিশুটি বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে।’ বুধবার কিউশুর কয়েকটি অংশে ১২ ঘণ্টায় ৫০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এএফপি।
    চ্যাম্পিয়ন সেই জার্মানিই
    চার চারটি বিশ্বকাপ শিরোপা, তিনটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্সশিপ, গত শুক্রবার যোগ হয়েছে অনুর্ধ্ব-২১ ইউরো চ্যাম্পিয়ন্সশিপ শিরোপাও। বাকি ছিল কেবল কনফেডারেশন্স কাপের ট্রফিটা। এবার সেটাও স্থান পেল জার্মানির অর্জনের শোকেসে। পরশু সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে জার্মানি।
    কে ভেবেছিল, জার্মানির এই দলই আসরের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় চড়াবে? গেল বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা বধে অংশ নেওয়া মহানায়কদের কেউই ছিলেন না এই দলে। ম্যানুয়েল নয়্যার, মেসুত ওজিল, টনি ক্রুস, টমাস মুলার, জেরোম বোয়েটাংদের ছাড়াই তরুণ এবং অখ্যাত এক দল নিয়ে রাশিয়া মিশনে নাম লেখান কোচ জোয়াকিম লো। যে দলের গড় বয়সই মাত্র ২৪ বছর ৪ মাস! যুবা দল বললেও তাই মোটেও অত্যুক্তি হয় না। লোর সেই দলটিই কিনা জার্মানিকে উপহার দিলো প্রথম কনফেডারেশন্স কাপের শিরোপা! এমন একটি মুহুর্ত ফিফার আমন্ত্রণে মাঠে বসে উপভোগ করেছেন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের দুই কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনা এবং রোনালদো নাজারিও।
    ভাগ্য সহায়তায় টানা দুই কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারানো চিলি এদিন ভাগ্যকে পাশে পায়নি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যে রক্ষণকে তারা প্রধাণ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, সেই রক্ষণের ভুলেই এদিন কেঁদে মাঠ ছাড়তে হয়েছে চিলিয়ানদের। ম্যাচের ২০তম মিনিটে করা লার্স স্টিনডলের একমাত্র গোলটি ছিল চিলির রক্ষণের দেওয়া উপহার। মিডফিল্ডার মার্সেলো দিয়াজের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার পর চাইলে গোলরক্ষক ক্লাদিও ব্রাভোকেও পরাস্থ করতে পারতেন টিমো ভের্নার। কিন্তু তিনি বল বাড়িয়ে দেন ডানপ্রান্তে অরক্ষিত অবস্থায় থাকা স্টিনডলকে। ক্যারিয়ারের সহজতম ও স্বরণীয় গোলটি করতে ভুল করার কোন সুযোগই ছিল না বরুশিয়া ম’শেনগøাডবাখ স্ট্রাইকারের সামনে। কেননা, এগিয়ে যাওয়া ব্রাভো তার নাগালে পৌঁছুনোর আগেই জাল ছোঁয় বল। বিরতির আগ মুহূর্তে আবারো একই ভুলের মাসুল গুনতে হচ্ছিল চিলিকে। কিন্তু ব্রাভোর বীরত্বে সেবার তারা রক্ষা পায়।
    জার্মানির গোলটি ছিল একেবারেই ¯্রােতের বিপরীতে করা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক খেলতে থাকে চিলি। সপ্তম মিনিটে অ্যালেক্স ভিদাল ও একাদশ মিনিটে এদগার্দো ভার্গাস পোস্টের বাইরে মেরে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন। বিংশ মিনিটেও গোলরক্ষক মার্ক-টার স্টেডেগেনর নৈপুণ্যে রক্ষা পায় জার্মানি। মিনিটের কাঁটা না ঘুরতেই চিলির ঐ ভুলে জার্মানদের এগিয়ে যাওয়া।
    পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণের ধার আরো বাড়ায় অ্যালেক্সিস সানচেসরা। কিন্তু প্রতিবারই জার্মানদের রক্ষণে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই আক্রমণ। কখনো দেয়াল হয়ে দাঁড়ান জার্মানির বার্সেলোনা গোলরক্ষক টার স্টেগেন। জার্মানরাও প্রতি আক্রমণে ত্রাস ছড়ায়, কিন্তু ব্রাভো বাধা আর তারা পেরুতে পারেনি। শেষ দশমাংশে ম্যাচে ফেরার সহজতম সুযোগটি বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে নষ্ট করেন চিলির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অ্যাঞ্জেলো সেহাল। যোগ করা সময়ে সানচেসের দুর্দান্ত ফ্রি-কিকটি আরো দুর্দান্তভাবে প্রতিহত করেন স্টেগেন। অগোছালো ফুটবলের কারণে পরাশক্তি বধে চিলিও তাই এবার আর পেনাল্টি ভাগ্যকে পাশে পায়নি। জার্মানিও মাতে আসরের প্রথম শিরোপা উল্লাসে।
    এমন জয়ে নিজের বিষ্ময় লুকাননি জার্মান অধিনায়ক হুলিয়ান ড্রক্সলার, ‘আমরা ভালোই লড়েছি, আগের চেয়ে অনেক ভালো। ট্রফিটা সাথে করেই এখন আমরা সবাই ছুটিতে যেতে পারি।’ পক্ষান্তরে, চিলি অধিনায়ক ব্রাভোর কন্ঠের হতাশার বানী, ‘দু’দলের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। জিততে না পারায় আমরা মর্মাহত। তবে আমরা বিশ্বমানের একটা দলের কাছেই হেরেছি এবং ভুলগুলো থেকে আমাদের শিখতে হবে।’
    তরুণ দল নিয়েও চ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে লাগাতে পেরে উচ্ছ¡াসিত কোচ জোয়াকিম লো। এর পুরো কৃতিত্ব তিনি দিলেন শিষ্যদের, ‘আমি এবং আমার দল শিরোপা জিতে ভীষণ গর্বিত। আমলে কেউই আমাদের গোনায় ধরেনি এবং আমরা দারুণ সব দলকে হারাতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘এর দাম অনেক, কারণ এর আগে জার্মানরা এই শিরোপা জেতেনি। তাই এই দল ও জয় ইতিহাসে লেখা থাকবে।’ ট্রফি হাতে একটু মজা করলেন জার্মারির বিশ্বকাপজয়ী কোচ, ‘এটা বিশ্বকাপের চেয়েও ভারী।’
    জার্মানি ১ : ০ চিলি
    এক নজরে কনফেডারেশন্স কাপ ২০১৭
    স্বাগতিক দেশ রাশিয়া
    দল ৮টি
    ভেন্যু ৪টি
    চ্যাম্পিয়ন জার্মানি
    রানার্স-আপ চিলি
    তৃতীয় স্থান পর্তুগাল
    চতুর্থ স্থান মেক্সিকো
    মোট ম্যাচ ১৬
    মোট গোল ৪৩ (২.৬৯ প্রতি ম্যাচ)
    সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওন গোরেৎকা (জার্মানি)
    লার্স স্টিনডল (জার্মানি)
    টিমো ভের্নার (জার্মানি)
    (প্রত্যেকে ৩টি করে গোল করেন)
    টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হুলিয়ান ড্রক্সলার (জার্মানি)
    টুর্নামেন্ট সেরা গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভো (চিলি)
    ফেয়ার প্লে ট্রফি জার্মানি

    জাপান সাগরে ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো উত্তর কোরিয়া

    উত্তর কোরিয়া তার পশ্চিমাঞ্চল থেকে জাপান সাগরের দিকে আবারো ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ এ দাবি করে জানাচ্ছে, স্থানীয় সময় ৯টা ৪০ মিনিটে উত্তর পিয়ংগান প্রদেশ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
    দক্ষিণ কোরিয়ান বার্তা সংস্থা- ইয়োনহাপ সেদেশের সেনাবাহিনীর বরাতে জানাচ্ছে, টোকিও জানাচ্ছে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের অর্থনৈতিক সমুদ্রাঞ্চলে গিয়ে আঘাত করেছে। প্রায় ৪০ মিনিটে ৯৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে এটি।
    যদিও এর একদিন আগেই উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপরও আন্তর্জাতিক সকল নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ি আরোপের মধ্যেই একেরপর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েই যাচ্ছে নিভৃতকামী দেশ উত্তর কোরিয়া।

    সেক্স ডলের’ দিকে ঝুঁকছে জাপানি পুরুষরা

    ভালোবাসার কোনো রীতিনীতি নেই, ধর্ম নেই।সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে জাপানের অসংখ্য পুরুষ কৃত্রিম রোমান্সের দিকে ঝুঁকছে ও এদের সংখ্যাটাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
    প্রতি বছর দেশটিতে প্রায় দুই হাজারের মতো ‘ সেক্স ডল’ বিক্রি হয়, যার দাম অন্তত ছয় হাজার ডলার। মানুষের তৈরি এসব সঙ্গীদের সাথে মানসিক বন্ধনও গড়ে তুলেছেন অনেক ক্রেতা। জাপানের অনেক পুরুষ তাদের মানুষরূপী সঙ্গীদের নিয়ে অনেক খুশী এবং অনেকে বলছেন তারা আর কখনো কোনো মানুষের কাছে ফিরে যাবেন না।
    ৪৫ বছর বয়সী মাসায়ুকি ওজাকি বলছেন তাঁর ‘সেক্স ডলের’ প্রেমেই তিনি এখন মগ্ন হয়ে থাকেন। এমনকি কর্মক্ষেত্রে যদি কোনো কিছু ভালো না যায়, বা দিনটা যদি ভালো নাও কাটে তাতেও ওই পুতুলের প্রতি তার ভালোবাসা কমে না। ওজাকি বলেন, ‘সে সবসময় জেগে আছে, আমার জন্য অপেক্ষায় আছে এটা মনে করে আমি নিরাপদ বোধ করি’।
    সমালোচকেরা বলছেন পুরুষেরা যে একাকীত্ব বোধ করে সে কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিবিসি বাংলা।
    চীন কি সত্যই বিশ্ব নেতা হতে চলেছে
    বাণিজ্য ও পরিবেশ রক্ষার মত ক্ষেত্রগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করার পর সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বিশ্ব ব্যবস্থার এক অপছন্দনীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। হামবুর্গে জি ২০ শীর্ষ বৈঠকের আগে পর্যবেক্ষকরা চীনা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিশ্বায়নের দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন।
    জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার পর সবার নজর গিয়ে পড়ে চীনের উপর। বিশে^র বৃহত্তম গ্রীনহাউস গাস নির্গমনকারী কিন্তু নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে বৃহত্তম বিনিয়োগকারী চীন প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করার অঙ্গীকারের জন্য প্রশংসিত হয়।
    যুক্তরাষ্ট্র যখন প্যারিস চুক্তি থেকে পিছিয়ে যায়, তখন এ চুক্তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য চীন আরেকবার প্রশংসা লাভ করে। বিশ্লেষক ও মিডিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করে যে চীন বিশে^র নয়া জলবায়ু নেতা হতে চলেছে। তারা সম্ভবত বেশী আশাবাদী হয়েছিলেন।
    ট্রাস্প যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন চীনা নেতৃত্ব তখন চীন-ইইউ শীর্ষ বৈঠকে ব্রাসেলসে ছিলেন। তাদের ইউরোপীয় প্রতিপক্ষের সাথে প্যারিস চুক্তির প্রতি জোর সমর্থন জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। সেই খসড়া বিবৃতি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।
    পরিবেশবিদরা এতে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেন এবং তা ঘোষণার জন্য দু’ পক্ষের অপেক্ষায় থাকেন।
    কিন্তু তারা কখনোই তা ঘোষণা করেনি।
    চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াং বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার সাথে ‘বাজার অর্থনীতি মর্যাদা’য় চীনের প্রবেশ লাভের জন্য ইইউ-র সমর্থন লাভ করতে এ বিবৃতিকে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তা যখন হল না তখন তিনি জলবায়ু বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান।
    ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র অধিকতর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকায় চীন জলবায়ু ও বাণিজ্যের মত ক্ষেত্রগুলোতে এক অপছন্দনীয় বিশ^নেতা হিসেবে আলোচনায় প্রবেশ করে। এ জুলাইতে হামবুর্গে প্রধান শিল্পোন্নত ও উদীয়মান  অর্থনীতির জি ২০ শীর্ষ বৈঠককালে চীনের অবস্থান পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে ব্রাসেলস অধ্যায়ের মত বিশ^ নেতৃত্বের পথে চীনের যাত্রা হচ্ছে দু’পা এগোনো আর এক পা পিছানোর মত। পর্যবেক্ষকরা বলেন, স্বচ্ছতার অভাব ও আইনের বন্ধন প্রবণতার কারণে তার উচ্চাকাক্সক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
    সাংহাই বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাপক জিয়াং শিজু জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তার দেশের লড়াই প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গেøাবাল টাইমসকে বলেন, চীনের জন্য বিশ^ নেতৃত্ব গ্রহণ খুব বেশী, খুব দ্রæত হয়ে যায়।
    চীন গত বছর নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে ৭৮.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যা ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের চেয়ে  বেশী। ২০২০ সাল নাগাদ সে অতিরিক্ত ৩৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে এবং ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির বিশ^ব্যাপী কর্মশক্তির ৪০ শতাংশেরও বেশী নিয়োগ করেছে।
    কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, চীন পরামর্শ প্রদান, অন্যদের বোঝানো, অথবা আরো উপরে যাওয়া ও তার নিজের নির্ধারিত লক্ষ্য অতিক্রমের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় না।
    বিশ^ যখন নেতা হিসেবে চীনের ব্যাপারে কথা বলছে তখন সে অর্ধেক পথে রয়েছে।
    বার্লিনে চায়না ইনসিটিউট মেরিকস-এর মিক্কো হুয়োতারি বলেন, আমরা উপলব্ধির শক্তির অবমূল্যায়ন করেছি।
    ট্রাম্পের সংরক্ষণশীল ব্যবস্থার বিপরীতে চীন মুক্ত বাণিজ্যের একজন রক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরি করছে।
    চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানুয়ারিতে মুক্ত বাণিজ্য ও বিশ^ায়নের পক্ষে দাভোসে এক স্মরণীয় বক্তৃতা দেন যা তখন থেকে ‘সারমন অন দি মাউন্ট’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে।
    মঙ্গলবার চীনের দালিয়ান শহরে সামার দাভোস নামে পরিচিত এক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময় বক্তৃতায় একই ধারণার পুনরাবৃত্তি করেন। ট্রাম্পের সুষ্ঠু বাণিজ্য চুক্তি ও অতিরিক্ত শুল্ক বিষয়ে ট্রাম্পের উদ্যোগ প্রসঙ্গে লি বলেন, মুক্ত বাণিজ্যের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু বাণিজ্য। লি অঙ্গীকার করেন যে চীন তার নির্মাণ ও সেবা খাতে আরো উন্মুক্ত প্রবেশাকিার দেবে এবং বিদেশী ও দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সমমর্যাদা দেবে।
    সমালোচকরা বলেন, বাস্তবে চীন তার নিজের বাজারে অত্যধিক প্রতিবন্ধকতা বজায় রেখেছে। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো গত মাসে বলে, তারা চীনে ব্যবসা করাকে কঠিন মনে করে এবং তাদেরকে আগের চেয়ে কম স্বাগত জানানো হচ্ছে বলে দেখছে।
    অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উনানয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-র উপদেষ্টা জোয়ার্গ উটকি বলেন, ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে একটি বাণিজ্য কাঠামো তৈরি করেছে এবং আমরা এখন তা থেকে সরে আসছি।
    তিনি বলেন, এ প্রেক্ষিতে চীন কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে ঐকমত্য লাভের চেষ্টায় হয়ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পছন্দ করতে পারে।
    হুয়োতারি বলেন, চীন তার নিজের জন্য যেখানে প্রয়োজন সেখানে দায়িত্ব নেয় এবং তা নিজের শর্তে। তিনি বলেন, চীনের দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হবে দ্বিপাক্ষিক, অস্পষ্ট, ক্ষুদ্র দেশগুলোকে রক্ষার জন্য বেশী আইন বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া, তবে সে কøাবগুলোর সাথে যেগুলোর চালিকা শক্তি হিসেবে আছে চীন।
    এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এবং জাতিসংঘ শান্তি মিশনে চীনের অংশগ্রহণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে চীনা নেতৃত্বের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
    চীনের সর্বাপেক্ষা উচ্চাভিলাষী বিদেশ ও অর্থনৈতিক নীতি হচ্ছে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ যার লক্ষ্য ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা বরাবর বাণিজ্য ও অবকাঠামো সৃষ্টি।
    চীনে জার্মানির রাষ্ট্রদূত মাইকেল ক্লাউস চীনের বিদেশী সংবাদদাতা ক্লাবের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, এ উদ্যোগ নীতিগত ভাবে ইতিবাচক , কারণ তা বিশ^ায়নের বিস্তার করছে। এটা সে সব দেশের জন্য বিনিয়োগ নিয়ে আসছে যেগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় নয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড দেশগুলোর দু’তৃতীয়াংশের বিনিয়োগ গ্রেডের  নীচে সার্বভৌম ঋণ হার রয়েছে।
    তিনি বলেন, এ প্রকল্পের ব্যাপারে রক্ষণশীল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের এর সাথে অধিকভাবে জড়িত হওয়া এবং একে এক স্বচ্ছ, আইন ভিত্তিক ব্যবস্থায় আনা উচিত যা সামাজিক ও পরিবেশগত মানকে বিবেচনায় নেবে।
    ক্লাউস বলেন, এটি হচ্ছে চীনা বৈশিষ্ট্যের বিশ^ায়ন, অনুক্রমিক ও বেইজিং-এর সাথে বলিষ্ঠ ভাবে সংযুক্ত।
    শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজার সওয়াব:  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
    অল্পসংখ্যক নেকআমলের বিনিময়ে আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহের পাত্র হওয়ার জন্য নবী করিম (স)-এর মুখ নিঃসৃত অমিয় বাণীতে প্রদত্ত উত্তম পন্থাসমূহ থেকে একটি অতি সহজ পন্থা হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল বা ঐচ্ছিক সিয়াম পালন। বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ছয়টি নফল রোজা রাখবে, তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সওয়াব দিয়ে দেবেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণবছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম: ১১৬৪)
    শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারাটি বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান; এই হলো এক বছরের রোজা।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের  রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ (আহমাদ: ৫/২৮০, দারেমি: ১৭৫৫)
    জাগতিক কল্যাণকর কাজে মানুষের প্রতিযোগিতাস্বরূপ শাওয়ালের ছয়টি নফল সিয়াম পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়। মাহে রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখার ফজিলত কতই না মহান! কোনো ঈমানদারের পক্ষে সহজেই সম্ভব নয় এক বছর লাগাতার রোজা রাখা। অথচ এই নেকআমলটা বিরাট ফজিলতসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব। একদিন রাসূলুল্লাহ (স)-কে সারা বছর সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘নিঃসন্দেহে তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক বা অধিকার রয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন, মাহে রমজানের এবং তার পরবর্তী দিনগুলোরও প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখবে। সুতরাং যখন তুমি এই রোজাগুলো রাখবে তখন যেন তুমি সারাটা বছরই রোজা রাখলে।’ নবী করিম (স) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হজরত দাউদ (আ)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন এবং এক দিন বিনা রোজায় থাকতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
    বান্দার ওপর আল্লাহ কতই না পরম দয়ালু ও অশেষ মেহেরবান যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক সওয়াব দেবেন। বান্দা যখন আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সামান্যতম আমল তাঁর দরবারে পেশ করে, আল্লাহ তখন বান্দার এই আমলকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর পরম দয়া ও অনুগ্রহ বান্দারা তখনই লাভ করবেন যখন তারা নেকআমল করবেন। তাই মুসলমানরা যেন আল্লাহর খাস রহমতকে হাতছাড়া না করেন, বরং অল্প নেকআমলের বিনিময়েই যেন আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও অশেষ অনুগ্রহের অধিকারী হয়ে যান। সৎকর্ম সম্পাদনের প্রতিফল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ কোনো সৎকর্ম করলে সে তার ১০ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৬) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অনন্তর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সূরা আয-যিলজাল, আয়াত: ৭-৮)
    শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই হোক না কেন, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন যদি আল্লাহর দরবারে রোজা কবুল হয়। তবে যার ওপর মাহে রমজানের রোজা কাজা আছে, সেই ব্যক্তি আগে কাজা আদায় করবেন, তারপর শাওয়ালের ঐচ্ছিক সিয়াম পালনে ব্রতী হবেন। কারণ, ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে মাহে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখবে, আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরো করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।’ (মুগনি: ৪/৪৪০)
    রাসূলুল্লাহ (স) ফরজের আগে-পরে সুন্নত ও নফল প্রবর্তন করেছেন। যেমন- ফরজ নামাজের পূর্বাপর সুন্নতগুলো এবং মাহে রমজানের আগে ফজিলতময় শাবানের ঐচ্ছিক রোজা আর পরে বরকতময় শাওয়ালের নফল সিয়াম। এই নফল ইবাদতগুলো ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে দেয়। কারণ রোজাদার কখনো অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি খারাপ ও পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বাঁচতে পারে না, যা তার রোজার সওয়াব কমিয়ে দেয়। একজন মুমিন বান্দা যেন রমজান-পরবর্তী দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের শিক্ষা অনুসারে সর্বাবস্থায় মিথ্যাচার, পরচর্চা-পরনিন্দা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা, কপটতা-অসাধুতা, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিপরায়ণতা, আত্মকলহ, ঝগড়া-বিবাদ, সন্ত্রাস-সহিংসতা ইত্যাদি সামাজিক অনাচার জাতীয় শরিয়ত-গর্হিত ও অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিহার করে আত্মসংযমী হন। কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, সহিহ-শুদ্ধভাবে ফরজ ও নফল সিয়াম পালন এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার— এসব ইবাদতের মধ্য দিয়ে প্রাত্যহিক দিন অতিবাহিত করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর একজন খাঁটি আবেদ বা প্রিয় মকবুল বান্দা হিসেবে ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হবেন!
    লেখক: পরিচালক, এশিয়ান ইন্সটিটিউট, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। সম্পাদক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বার্তা
     
    হলি আর্টিজানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা
    গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার এক বছর পূর্ণ হওয়ায় সেখানে জঙ্গিদের হাতে নিহত দেশি-বিদেশিদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরাঁয় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নিহতদের পরিবারের স্বজনসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এক বছর আগে যে স্থানে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২২ জন, গুলশানের সেই ভবনে ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হল তাদের।
    সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে ও দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মিকিও হাতায়েদা ওই ভবনে গিয়ে ফুল দিয়ে স্মরণ করেন নিহতদের। সকাল ১১টার দিকে ফুল দিতে যান ঢাকায় ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমাসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ফুল দেয়ার পর একটি শোকবাণী পাঠ করেন ইতালি দূতাবাসের কর্মকর্তা। এসময় কয়েকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। ফুল দিয়ে পুলিশ পাহারায় তারা চলে যান। জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন বিদেশি; তার মধ্যে নয়জন ছিলেন ইতালির, সাতজন ছিলেন জাপানি। নিহত জাপানিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন। সকালে সাংবাদিকদের হলি আর্টিজানের ফটকের সামনে যেতে দেয়া না হলেও পরে সেখানে তাদের ঢুকতে দেয়া হয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করে ডিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশিদের অনুরোধ ছিল, তাদের ছবি তোলা যাবে না। সকাল ১১টার আগে শ্রদ্ধা মঞ্চে ফুল দেয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত আইজি মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে। সেদিন হামলা ঠেকাতে গিয়ে এখানে নিহত হয়েছিলেন পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও পরিদর্শক সালাউদ্দিন। পুলিশ কর্মকর্তা মোখলেছুর গুলশান হামলার ঘটনাটিকে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, সে ঘটনার পর জঙ্গিবাদের যে ব্যাপকতা দেখা গিয়েছিল, তা মোকাবেলা করতে পেরেছি। আমরা এমন ঘটনার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। আমরা সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেদের রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে সে ঘটনার মোকাবেলা করেছিলাম। সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হলি আর্টিজানে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শ্রদ্ধা জানানো শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিবাদ পুরোপুরিভাবে নির্মূল হয়নি, দুর্বল হয়েছে। শুধু ফোর্সের (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) উপর নির্ভর করলে চলবে না। দেশপ্রেমিক জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। সকাল ১১টার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধামঞ্চে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ইতিহাস বন্ধুত্বের। সেই জায়গা থেকে কখনও ভাবিনি বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনা আমাদের বিপুলভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সরকারের নানামুখী ভূমিকা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের  পথ রুখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফুল দেয়ার পর একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সাংবাদিকদের বলেন, যারা এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত তাদের দর্শন কোনো সাধারণ দর্শন নয়। শ্রদ্ধা জানান সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সেলিম রেজা নূর, আসিফ মুনীর, শমী কায়সার। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আজ ব্যথিত, মর্মাহত ও একইসঙ্গে ক্ষুব্ধ। ধর্মের নামে সেদিন মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখন সরকারের একটি সুচিন্তিত কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অপশক্তিতে মোকাবেলায় জনতা ও রাজনীতির এক সম্মিলিত রাজনৈতিক ঐক্য দরকার।
    হলি আর্টিজানের অন্যতম মালিক সাদাত মেহেদী জানান, এক বছর আগে এদিন এখানে অনেক দেশি-বিদেশি মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের স্বজনেরা শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। মূলত এ বিষয়টি মাথায় রেখে চার ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকি বাড়িটির সামনে সাদা কাপড়ে মোড়ানো লম্বা আকৃতির একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এদিকে হলি আর্টিজানের বর্ষপূর্তিতে শ্রদ্ধা জানাতে ইতালি সরকারের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। ইতালি দূতাবাস এবং বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে হবে ওই স্মরণ অনুষ্ঠান। জাপানের সাত নাগরিকের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করছে জাপান দূতাবাস ও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে নিহত হয় তিন বাংলাদেশি নাগরিকসহ ২০ জন। অন্যদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের এবং একজন ভারতীয়। এছাড়া জঙ্গিদের হামলার শুরুতেই  তাদের আক্রমণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। রেস্তোরাঁর ভেতরে রাতভর জিম্মি ছিলেন অন্তত ২৫ জন, যাদের প্রায় ১১ ঘণ্টা পর পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টের সময় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাতের বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয় আরও অন্তত ৭ জনকে। অপারেশন থান্ডারবোল্টের পর রেস্তোরাঁ থেকে ৫ জঙ্গিসহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পালাতে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক রেস্তোরাঁকর্মী। এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করছে।

    ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে

    ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকসহ শরণার্থীদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন না থাকলে এমনকি কোনো ধরণের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ছাড়া এই দেশগুলোর কোনো ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হবেন। এছাড়া তাদের ভিসাও বাতিল করা হতে পারে।
    গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই ইরান, ইয়েমেন, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া ও সুদানের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ জারি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তারপর থেকে দেশটির অনেক রাজ্যের আদালতে তা খারিজ হয়ে গেলেও, গত সপ্তাহে তা আংশিক বহালের পক্ষে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর পর থেকেই নড়েচড়ে বসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
    জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় রাত ৮টায় এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে চাচা, চাচী, ভাতিজা, ভাতিজি কিংবা দাদা-দাদীকে ‘ঘনিষ্ঠ’ আত্মীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।
    যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন বিদেশিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আগামী অক্টোবরে এ বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। বিবিসি।

    টাকা নিয়ে তোলপাড়

    সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানতের হিড়িক

    টাকা পাচার অস্বীকার করার উপায় নেই : ড. ফরাস উদ্দিন
    অবৈধ অর্থ লুকাতেই সুইস ব্যাংকে রাখছে : ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
    বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত কারণ বলতে পারবে : অধ্যাপক আবু আহমদ
    দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকাই দায়ী : অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল
    টাকা পাচারের প্রকৃত কারণ শনাক্ত জরুরী : অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন
    আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাই দায়ী : ড. ইফতেখারুজ্জামান
    স্টালিন সরকার : বাংলাদেশীদের সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে টাকা জমা রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার খবরে সর্বত্রই তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যপক হৈচৈ হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নানা তীর্যক মন্তব্য আসছে। দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী নেতারা টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে রাখার প্রবণতায় বিষ্ময় প্রকাশ এবং কারণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। সুশীল সমাজের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা যাচ্ছ। তারা বৈধ-অবৈধ পথে দেশ থেকে টাকা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, আস্থাহীনতা, ব্যাংকগুলোতে অর্থ রেখে মুনাফা না পাওয়া, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, বিনিয়োগ করলেও নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করাকেই দায়ী করেছেন। ব্যবসায়ী নেতাদের মতে দেশে বিনিয়োগ অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে অর্থপাচার কমে যাবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, অবৈধ অর্থ আড়ালের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থাহীনতাও সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার কারণ। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, জগন্ন্াথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতির বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে সুচিন্তিত বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
    ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমে গেলেও এক বছরে বাংলাদেশ থেকে জমা রাখার পরিমাণ বেড়েছে। এই সময়ে জমার পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২০ শতাংশ। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ তথ্য হলো- এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশীদের এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ২০১৫ সালে ছিল ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ। সেটা ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ (এক সুইস ফ্রাঁ = বাংলাদেশের ৮৬ টাকা)। শুধু সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমা রাখাই নয়; বাংলাদেশীরা বিদেশে যে বিপুল পরিমান অর্থ পাচার করছে তা গত বছর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারীতেও উঠে আসে। গত বছর পানামা ভিত্তিক আইন প্রতিষ্ঠান মোসাক ফোনসেকোর অভ্যন্তরীণ পৌনে তিন টেরাবাইট নথি ফাঁস হয়ে যায়। জার্মানির একটি স্থানীয় পত্রিকা সে তথ্য প্রকাশ করে। পত্রিকাটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনমূলক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসর (আইসিআইজে) অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করে। অর্থ পাচারের তালিকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৬ জন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ পায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে এ নিয়ে নাকানিচুবানি খেতে হলেও তালিকায় থাকা বাংলাদেশী কারো বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। বরং সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমার রাখার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের যে অর্থ জমা রাখার পরিমাণ বলা হচ্ছে তার পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে গেছে বিষয়টি এমন নয়। দেশের বাইরে বৈধ ভাবে যারা ব্যবসা বাণিজ্য করছেন, বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী ও সুইজারল্যাÐে বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও সে দেশের ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।
    সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ জমা রাখা প্রবণতা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, সুইচ ব্যাংকে টাকা পাচার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে বক্তব্য দিয়েছে তারা কিসেই ভিত্তিতে তা দিয়েছে আমি জানি না। তবে বিগত ১১ বছরে দেশ থেকে যে ৬ হাজার ৫শ কোটি ডলার পাচার হয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে বাংলাদেশী যারা প্রবাসে থাকেন তাদের অনেকেই সম্পদশালী। তারা আগ থেকেই সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখেন। সেখানে অর্থ টিআইএম দিয়ে রাখলে শতকরা ১০ সুদ এবং এমনিতেই রাখলে শতকরা ১৫ সুদ দেয়। ব্যাংকে অর্থ জমা রেখে এই মুনাফা হয়। এটাও ঠিক ২০১৪ সালে আÐারইনভয়েসিং এবং ওভারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৯শ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকা রেখে খুব বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং আমানতকারীদের মূলধন লোকসান হচ্ছে। এ কারণে যাদের সুযোগ আছে তারা টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের একটি শ্রেণী অবৈধ অর্থ লুকানোর জন্য বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে পণ্যের কম অথবা অতিমূল্য ঘোষণার মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ জমার বিষয়টির প্রকৃত কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ভাল বলতে পারবে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশীদের এ ধরণের অর্থ পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমা রাখার কথা অস্বীকারও করছে না। বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে তাতে বাংলাদেশীদের এই অর্থ প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ কেন বাংলাদেশ থেকে গেলেও কিছুই করার নেই। অতীতে আইন দিয়ে টাকা পাচার আটকানো সম্ভব হয়নি; হবেও না। জগন্ন্াথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতির বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রিয়বত পাল ইনকিলাবকে বলেন, দেশের অর্থ যদি বিদেশের ব্যাংকে চলে যায়, এটা অবশ্যই দু:খজনক। এটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ ওই অর্থ যদি দেশের বিনিয়োগ হতো তাহলে দেশের অর্থনীতি ভাল হতো। এতে বুঝা যায় দেশে বিনোয়োগ পরিবেশের অভাব। যেখানে পার্শ্ববতী দেশে ভারতেও বিদেশের ব্যাংকে অর্থের পরিমাণ কমছে; সেখানে আমাদের মতো গরীব রাষ্ট্রের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াটা অর্থনীতির জন্য উদ্ধেগের। তবে সব টাকা কিন্তু বৈধ উপায়ে যাচ্ছে না। বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশে বিনোয়োগ না করে দেশের বাইরে করছেন। ক্ষমতাসীনরাসহ অনেকে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা অপব্যবহার করে বাড়ি গাড়ি কিনছেন। এজন্য সরকারের উচিত সর্বপ্রথম দেশে বিনোয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা। সরকারের বির্ভিন্ন পর্যায়ে জবাবদিহেতা না থাকায় ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিদেশের ব্যাংকের টাকার পাহাড় গড়ছেন। অর্থ মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ ব্যক্তিরা জানেন ব্যাংক খাতসহ সকল পর্যায়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়; কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেন না। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে অর্থপাচার কমে যাবে। তখন আর কেউ বিদেশের ব্যাংকে অর্থ রাখতে আগ্রহী হবে না। অনেকেই বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখার পর আর তার হদিস পান না। সরকার এখন ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে। ফলে অর্থপাচার কমে যাবে। শুধু আইন করে, সাজা কার্যকর করে অর্থপাচার প্রতিরোধ সম্ভব নয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশে ঘাটতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের অর্থ জমার পরিমান বৃদ্ধি বিশ্বের অন্যদেশগুলোর অন্যতম। দেশের অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে এর পরিমান বাড়তেই থাকবে। সরকার চাইলে আÐার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যারা বিদেশে অর্থ পাচার করছে তাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে পারে।
    বিএফআইইউয়ের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, এই টাকার পুরোটাই কিন্তু দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা নয়। এ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য অনেক দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আছে, যারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা অনেকেই বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে রাখেন। এদের সবার তথ্য আমাদের পক্ষে কেন, কোনো দেশের পক্ষেই বের করা সম্ভব নয়। আমরা কেবল যাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ বা সন্দেহ করছি, তাদের তথ্য চাইতে পারি। এরই মধ্যে অনেকের তথ্য আনাও হয়েছে। বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে বসে সুইজারল্যান্ডের কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে যারা সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার করছে, তারা সুইজারল্যান্ডে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে এসে অর্থ পাচার করছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এভাবে বিদেশে অ্যাকাউন্ট খোলাও অবৈধ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দুর্নীতি আর লুটের টাকা বিদেশে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা। জনগণ বিশ্বাস করে টাকা পাচারের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা জড়িত। তা না হলে অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসহায়ের ভুমিকায় অবর্তীণ হতেন না। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা রাখার পরিমাণ আরো বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইচ ব্যাংকে। অথচ সারা দুনিয়া থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমেছে। জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচারের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও সম্পর্ক নেই। রাজনীতি করে কেউ এমন কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর এবং কোনও আপোস হবে না। অর্থ পাচারের রেকর্ড বিএনপির আছে দাবী করে তিনি বলেন, তাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এফবিআই সাক্ষী দিয়ে গেছে। কোকোর টাকার কথা সিঙ্গাপুরে প্রমাণিত। তাদের মানি লন্ডারিং বিষয়টি সবার কাছে সুপরিচিত এবং আদালতে প্রমাণিত। অর্থ পাচারকারীদের খুঁজে বের করতে সরকারী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন, স্বচ্ছতার প্রয়োজনে যা করার দরকার তা করতে আমরা রাজি আছি। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি দেখবে। সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার উদ্বেগজনক কথাটা অসত্য নয়। উদ্বেগজনক বলেই তো আমরা তদন্ত করতে বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, যারা অবৈধ, অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে অর্থ আয় করেন তারা অর্থ বিদেশে পাঠায়। কানাডার বেগম পাড়া বা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ট হোম করে এমন ব্যাক্তিরাও বিদেশে টাকা পাচার করছে। আবার অর্থ সম্পদশালী যারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে চায় অথচ দেশে সেটা সম্ভব হয় না তারা বিদেশে টাকা পাচার করে। সুইচ ব্যাংকের বাংলাদেশীদের রাখা সব টাকা যে অবৈধ আয়ের তা বলা মুশকিল। তাছাড়া রাজনৈতিক ভাবে হয়রানীর কারণে অনেকেই নিজেদের অর্থ নিরাপদে রাখতেই বিদেশে পাচার করে। ভারত সরকার যেমন সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ্যের সঙ্গে চুক্তি করেছে তাদের দেশের কারা অর্থ জমা রাখে তাদের তালিকা দেয়ার ব্যাপারে। বাংলাদেশ সরকারও সে ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে। তবে এ ধরনের প্রক্রিয়ায় ভারত থেকে বিদেশে টাকা পাচার কমে গেছে এমন নয়। কেন বিদেশে টাকা পাচার হয় এর কারণগুলো খুঁজে বের করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

    বিদায় রমযান, বিদায় ঈদ : কী পেলাম, কী হারালাম

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    রমযান মাস পুরোটাই কল্যাণ ও বরকতের মাস। এই মাস আমাদের উপর মেঘমালার মতো সুশীতল ছায়া দান করছিল, এ মাসের রোযা তাকওয়ার অনুশীলন দান করছিল। মেহরাবগুলোতে হাফেয সাহেবদের সুমধুর তেলাওয়াতের ধ্বনি, যা মূলত মুমিনদের উদ্দেশ্যে রাহমানুর  রাহীমের আহবান, মস্তিষ্ককে সুশোভিত আর অন্তঃকরণকে আলোকিত করছিল, তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ, যিকির ও দুআ অন্তরকে আল্লাহর নৈকট্যের অনুভূতিতে সিক্ত এবং চোখ থেকে খোদাভীতির অশ্রু ঝরাচ্ছিল।

    দেখতে দেখতেই এই ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তি ঘটল। যেন ইবাদতের সেই বিশেষ রুখ পরিবর্তিত হল এবং ১ শাওয়ালে রোযা নয়, ইসলামী শিক্ষা মোতাবেক ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নির্দেশ এল এবং এরই মাধ্যমে বান্দা তার গোলামির পরিচয় তুলে ধরার নির্দেশ পেল।

    শাওয়ালের ২ তারিখ থেকে এক বছরের জন্য এই দুই নেয়ামত রমযান ও ঈদ আমাদের কাছ থেকে চলে গেল। যদি হায়াত পাই আর আল্লাহ তাআলার তাওফীক হয় তাহলে পুরো এক বছর পর আবার এই দু্ই নেয়ামত আমরা ফিরে পাব।

    এ পর্যায়ে একজন মুমিনের ভেবে দেখা উচিত যে, রমযান ও ঈদ থেকে সে কী পেল এর কী কী প্রভাব ও ক্রিয়া অন্তর ও মস্তিষ্কে, বোধ ও বিশ্বাসে, কর্ম ও চরিত্রে অবশিষ্ট রইল এবং রমযানের বিদায়ে কী কী খায়ের-বরকত সে হারাল।

    এটা বাস্তব যে, যে ব্যক্তি রমযানের হক যত বেশি আদায় করেছে, রমযানের আদবসমূহের প্রতি যত বেশি যত্নবান থেকেছে সে তার কর্মজীবনে রমযান ও ঈদের প্রভাব ও ক্রিয়া ততবেশি অনুভব করবে। আর যে ব্যক্তি ত্রুটি করেছে সে তার ত্রুটির মাত্রানুপাতে প্রভাব ও ক্রিয়াতেও ত্রুটি উপলব্ধি করবে।

    রমযানের সবচেয়ে বড় প্রভাব (যদি রোযা রাখা হয়ে থাকে এবং রোযাকে গুনাহমুক্ত রাখা হয়ে থাকে) তাকওয়া, যা বান্দাকে প্রতিমুহূর্তেই রাহনুমায়ি করে, কল্যাণের দিকে আহবান করে, কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং অকল্যাণের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। অকল্যাণ থেকে বিরত থাকার তাগিদ সৃষ্টি করে। তাকওয়ায় পরিপূর্ণ অন্তর নসীহত দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয় এবং সামান্য সতর্ক করার দ্বারা অমঙ্গলের পথ থেকে ফিরে আসে।

    আমরা যদি রমযান ও রোযার পুরো হক আদায় না করে থাকি তাহলে তাকওয়ার সেই বিশেষ স্তর আমাদের অর্জিত হয়নি। তবুও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা, প্রতিটি মুমিনের অন্তরে সামান্য পরিমাণে হলেও তাকওয়ার স্ফুলিঙ্গ অবশ্যই থাকে। আর রোযার মাধ্যমে তাতে কিছু না কিছু বৃদ্ধি অবশ্যই ঘটে থাকে। এখন যদি তা সযত্নে লালন করা হয় এবং সে মোতাবেক ধীরে ধীরে আমল করা হয় তাহলে এগুণ দৃঢ়তর এবং উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকবে। গুণাবলি ও যোগ্যতাসমূহের এটাই সহজাত নিয়ম এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টিকারী সৎগুণাবলির ব্যাপারে একথা অধিক সত্য এবং অধিক প্রযোজ্য।

    আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে নিজেই ইরশাদ করেছেন, আমার বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা রাখে আমি তার সাথে সেরূপ আচরণ করি এবং বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গী হই। যদি সে আমাকে একাকী স্মরণ করে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। যদি সে আমাকে জামাতে সমবেতভাবে স্মরণ করে আমিও তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জামাতে স্মরণ করি। যদি বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হই তাহলে আমি তার দিকে চার হাত অগ্রসর হই। আর যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।-সহীহ মুসলিম ২/৩৪১

    এখন যদি অন্তরে কোনো নেক কাজের আগ্রহ সৃষ্টি হয় বা নেক কাজের দিকে অন্তর ধাবিত হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রভাব। এর কদর করতে হবে এবং কালবিলম্ব না করে এই আগ্রহ মোতাবেক আমল করতে হবে। তেমনিভাবে কোনো গুনাহর ব্যাপারে যাতে আমরা দুর্ভাগ্যবশত লিপ্ত রয়েছি, যদি অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি হয়, তা পরিহার করার তাগাদা যদি অন্তরে উপলব্ধি হয় তাহলে বুঝতে হবে এটা অন্তর্নিহিত তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রভাব। এর কদর করা এবং সাথে সাথেই সে গুনাহ পরিত্যাগ করত খাঁটি মনে তাওবা করে নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে কালবিলম্ব করা এজন্যও ভয়াবহ যে, দুর্বল তাকওয়ার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং বার বার অন্তরের এরূপ আগ্রহকে কদর না করলে তা আরো দুর্বল হয়ে যায়, যা একজন মুমিন বান্দার জন্যে খুবই দুভার্গ্যের বিষয়।

    মোটকথা, তাকওয়ার গুণ যার যতটুকুই অর্জিত হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণ করা, সযত্নে তা লালন করা করে সেটি আরো শক্তিশালী করাই হবে রমযানের নেয়ামতের যথার্থ হক ও শোকর আদায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে  তাওফীক দান করুন। আমীন।

    আল্লাহর যেসব বান্দা রমযানের রোযাও রাখেনি এবং ঈদও ভিনজাতির মতো কেবল অনুষ্ঠান-সর্বস্বরূপেই পালন করেছে, রমযানের শেষ দশক, যা পুরো মাসের রূহ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় সময়, একেও যারা ঈদ-মার্কেটের পেছনে ক্ষয় করেছে, তাদের কাছে এখন রমযান ও ঈদের কিছু থেকে থাকলে আছে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আর জুতো এবং বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু গিফট আর ঈদ কার্ড!

    তেমনি যারা রমযানে জিনিসপত্রের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রোযাদারদের থেকে অন্যায়ভাবে অধিক মুনাফা লুটে সম্পদের পাহাড় গড়েছে অথবা বিতাড়িত শয়তানের শৃঙ্খলিত থাকা সত্ত্বেও যারা এই মুবারক মাসে অন্যায়-অপরাধ, দুর্নীতি-সন্ত্রাস ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিল-এদের জন্য এখনও পথ খোলা রয়েছে। রাববুল আলামীন অসীম দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর দয়ার দুয়ার সব সময় বান্দার জন্য খোলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত বাণীটি একটু হৃদয়ের কান দিয়ে শুনুন-আল্লাহ তাআলা রাতে তাঁর রহমতের হাত প্রসারিত করেন (বান্দার তাওবা কবুল করার জন্য উন্মুক্ত থাকেন) যাতে দিনের অপরাধী তওবা করে (কৃতকর্মের ব্যাপারে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে) এবং আল্লাহ তাআলা দিনে তাঁর রহমতের হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের অপরাধী তওবা করে। যত দিন না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয় (কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এ সুযোগ অবারিত)।-সহীহ মুসলিম ২/৩৫৮

    তাই কোনো রকম বিলম্ব না করে এই সূবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। খাঁটি মনে তওবা করে কল্যাণের পথে প্রত্যাবর্তন করা উচিত এবং আগামী রমযানের কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য নিজেকে প্রস্ত্তত করা উচিত।

    এ ব্যাপারে শেষ কথাটি হল, আমরা রমযান মাসে যেমন আল্লাহর বান্দা ছিলাম এখনও আল্লাহর বান্দা। তাই তখন যেমন গুনাহ পরিহারের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতাম, নামাযের প্রতি খেয়াল রাখতাম, জামাতের সাথে নামায আদায়ের চেষ্টা করতাম সে ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রাখা উচিত।

    গুনাহ যখনই করা হোক তা গুনাহ। তাই রমযান মাস চলে গেলে গুনাহর কাজে লিপ্ত হওয়া যায় এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। তাছাড়া নামায তো রোযার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ফরয এবং প্রতি দিনের আমল। ঈমান ও ইসলামের নিদর্শন। যে মুমিন অন্তত এটুকু চিন্তা করবে যে, নামাযের মাধ্যমে মাটি দ্বারা সৃজিত এই দুর্বল মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা ও মালিকের দরবারে হাজিরা দিতে পারছে, তার প্রিয় প্রেমাষ্পদ রহমান ও রহীমের সঙ্গে কথোপকথনে সক্ষম হচ্ছে, তার পক্ষে নামাযের ব্যাপারে কোনো শিথিলতা প্রদর্শন করা সম্ভব হবে না; বরং অতি দুর্লভ অথচ সহজপ্রাপ্তি ভেবে মনেপ্রাণে নামাযের ব্যাপারে যত্নশীল হবে।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুন। নামাযের গুরুত্ব বোঝার এবং একে জানদার বানানোর প্রচেষ্টায় আমাদের নিয়োজিত রাখুন। আমীন ইয়া রাববাল আলামীন।

    জাপানে আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর

    রোববার জাপানে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মোবারক।

    যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারা বিস্ভে মুসলমানরা এদিন তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।

    ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানে পুরো এক মাস রোজা পালন করে এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

    জাপানের বিভিন্ন মসজিদে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

    দিনটি রোববার থাকায় এবার বেশির ভাগ জাপান প্রবাসীই ঈদের দিনটিতে ছুটি পাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে সপ্তাহ জুড়ে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন ঈদ অনুষ্ঠানের।

    জয়ে শেষ কৃষ্ণাদের জাপান সফর
    এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চুড়ান্ত পর্বকে সামনে রেখে বর্তমানে জাপানে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে বাংলাদেশ কিশোরী দল। ওসাকায় সাকাই একাডেমির বিপক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর অবশেষে জয়ের মুখ দেখলেন কৃষ্ণা রানী সরকাররা। গতকাল সাকাই একাডেমি মাঠে তিন প্রস্তুতি ম্যাচের শেষটিতে বাংলাদেশ ৩-১ গোলে হারায় সেইসো স্কুল দলকে। বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচের ২৮ মিনিটে অধিনায়ক কৃষ্ণা রাণী সরকার, ৫৫ মিনিটে অনুচিং মগিনি এবং ৮৫ মিনিটে মারজিয়া একটি করে গোল করেন। ম্যাচের ৫০ মিনিটে স্বাগতিকদের একটি গোল শোধ দেন কাহো মাগোচি। এই সফরের প্রথম ম্যাচে সাকাই একাডেমির বিপক্ষে কৃষ্ণারা ৪-২ গোলে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে একই দলের কাছে তারা ৫-০ গোলে হারে। আর শেষ ম্যাচে সেইসো স্কুলকে হারিয়ে বাংলাদেশ কিশোরী দল জয়েই শেষ করলো জাপান সফর। আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে মাঠে নামার আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের কিশোরীরা দ্বিতীয়বারের মতো জাপান সফরে গেছে। এ ছাড়া কৃষ্ণা বাহিনী সিঙ্গাপুর ও চীন সফরও করেছে। জাপান থেকে ফিরে তারা জুলাই-আগষ্টে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামে যাবে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে। এএফসির চুড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের প্রতিতপক্ষ জাপান, অষ্ট্রেলিয়া ও উত্তর কোরিয়া।

    অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে গেলে কেমন হবে পৃথিবী?

    পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের গড়ে ৯৮ ভাগই প্রায় দুই কিলোমিটার পুরু বরফাবৃত। পেঙ্গুইন, সিল, নোমাটোড, টার্ডিগ্রেডের মতো প্রবল শৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম উদ্ভিদ এবং প্রাণীরাই কেবল এখানে টিকে থাকতে পারে। এক কোটি ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই বরফাবৃত অঞ্চলকে পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। সেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ২০০ মিলিমিটার। তবে মাঝে মধ্যেই বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়া সম্পর্কে সাবধান করছেন পৃথিবীর মানুষকে। বরফ গললে কী হতে পারে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।

    পুরো অ্যান্টর্কটিকার বরফ গেলে স্বাভাবিকভাবেই পানির পরিমাণ বেড়ে যাবে পৃথিবীতে। আর এই বাড়তি পানিতে কেমন হবে পৃথিবীর মানচিত্র সেটা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। বরফ গলে সমুদ্র স্তরের উচ্চতা সর্বোচ্চ ২১৬ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এটি ঘটলে এখনকার স্থলভাগের যে মানচিত্র রয়েছে তা বদলে যাবে। তবে এখনই এটি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ পৃথিবীতে থাকা পাঁচ মিলিয়ন কিউবিক মাইল বরফ গলতে পাঁচ হাজার বছরের বেশি সময় লাগবে। বর্তমান পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে যাবে। পুরো আটলান্টিক সমুদ্রতীর, এমনকি ফ্লোরিডা এবং উপসাগরীয় উপকূল তলিয়ে যাবে। অন্য মহাদেশের তুলনায় আফ্রিকা কম পরিমাণ ভূমি হারালেও মিশরের আলেকজেন্দ্রা এবং কায়রো ভূমধ্যসাগরে হারিয়ে যাবে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডস সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ডেনমার্কের বেশিরভাগ অংশও তলিয়ে যাবে পানিতে। ভূমধ্যসাগরের পরিধি বেড়ে গিয়ে তা কৃষ্ণসাগর এবং কাস্পিয়ান সাগরের সাথে মিশে যাবে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনের ছয়শ কোটি মানুষ এবং বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বন্যার কবলে পড়বে। ভারতের উপকূলীয় অনেক এলাকাও এই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

    ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

    একটি মসজিদে ‘ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ’ শিরোনামে একটি তালিকা নজরে পড়ল। তাতে কিছু আছে ইসলামে স্বীকৃত মহিমান্বিত দিবস-রজনী, আবার কিছু আছে আবিষ্কৃত রসম-রেওয়াজ এবং ইসলামী ইতিহাস বিষয়ে না জানার ভুল। সমাজের বিভিন্ন মহলে এসব দিবস-রজনী বিশেষভাবে পালিত হতেও দেখা যায়। কোনো কোনো দিবস এমন আছে, যেগুলোতে সরকারী ছুটি থাকে অথচ ইসলামে সে সকল দিবস স্বীকৃত নয়। আর এসব দিবস-রজনী বিভিন্ন অনির্ভরযোগ্য পুস্তক-পুস্তিকায়ও দেখা যায়। তাই তালিকাটির উপর একটি পর্যালোচনা সংগত মনে হল। এ পর্যালোচনায় তালিকার ভুলগুলোও যেমন উল্লেখ করা হয়েছে তেমনি ইসলামে স্বীকৃত দিবস-রজনী বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কথাও আলোচনা করা হয়েছে। যাতে স্বীকৃত বিষয়েও কেউ ভুলের শিকার না হন। প্রথমে তালিকাটি উল্লেখ করছি।

    ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ

    (যেমনটা ঐ তালিকায় দেওয়া হয়েছে)

    ১. ১ লা মুহাররম : হিজরী নববর্ষ

    ২. ৯ ই মুহাররম : আশুরার রোযা

    ৩. ১০ ই মুহাররম : আশুরা

    ৪. সফরের শেষ বুধবার : আখেরী চাহার শোম্বাহ

    ৫. ১২ই রবিউল আউয়াল : নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম ও ওফাত দিবস

    ৬. রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার  : লায়লাতুর রাগায়েব

    ৭. ১৫ই রজব : শবে এস্তেফতাহ

    ৮. ২৭ শে রজব : লাইলাতুল মিরাজ

    ৯. ১৫ই শাবান : লাইলাতুল বরাত

    ১০. ২১, ২৩, ২৫,২৭ ও ২৯ শে রমযান : লাইলাতুল কদর

    ১১. ১লা শাওয়াল : ঈদ-উল-ফিত্র

    ১২. ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব : আইয়ামে তাশরীক

    ১৩. ৯ই যিলহজ্ব : ইয়াওমুল আরাফা হজ্ব দিবস

    ১৪. ১০ই যিলহজ্ব : ঈদ-উল-আযহা

    ১৫. প্রতি মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ : আইয়ামে বীজ (রোযা রাখা সুন্নত)

    এই তালিকার শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল, ‘ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী’। কারণ প্রতিটি দিনই পবিত্র, কোনো দিনই অপবিত্র বা অশুভ নয়। হাঁ, দিনসমূহের মধ্যে ঐ দিনগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ, কুরআন হাদীসে যেগুলোর বিশেষ ফযীলত উল্লেখিত হয়েছে। সুতরাং পবিত্র না বলে ফযীলতপূর্ণ বলা উচিত। নিচে এই তালিকার উপর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা পেশ করা হল ।

    ১. ১ লা মুহাররম : হিজরী নববর্ষ

    প্রথম কথা হল, ১লা মুহাররম হিজরী বর্ষের প্রথম দিন। কিন্তু এটা ‘ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ’ বা ‘ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী’ শিরোনামে আসবে কিনা সেটা ভাববার বিষয়। ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস হতে হলে কুরআন-সুন্নাহয় তার আলাদা ফযীলত উল্লেখ থাকতে হবে।  এছাড়া এখানে হিজরী নববর্ষ শব্দ থেকে কেউ বুঝতে পারে যে, অন্যান্য জাতি যেমন নববর্ষ উদযাপন করে, হিজরী নববর্ষও মুসলমানদের জন্য সে রকম উদযাপনের দিবস। অথচ ইসলামে নববর্ষ, বর্ষপূর্তি কিংবা জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার কোনো বিধান নেই।   তবে চান্দ্রমাস ও বছরের সাথে যেহেতু  রোযা, হজ্ব, ঈদুল ফিত্র, ঈদুল আযহা ও যাকাতসহ বহু ইবাদাত ও শরয়ী বিধিবিধান সম্পৃক্ত এ জন্য এর হেফাযত ও চর্চা রাখা ফরযে কেফায়া। এবং এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করা জাতীয় আত্মমর্যাদাবোধ হ্রাস বা বিলুপ্তিরই নামান্তর।

    ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোযের দিন (নববর্ষের দিন) আলী রা.-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোয উপলক্ষে ফলে) আলী রা. বললেন, ‘‘নওরোযুনা কুল্লা ইয়াওম’’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। (আখবারু আবি হানিফা,সয়মারী) অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে।

    ২-৩. ৯ ই মুহাররম : আশুরার রোযা, ১০ ই মুহাররম : আশুরা

    এই উপস্থাপন থেকে মনে হয় যে, ৯ই মুহাররম আশুরার রোজা আর ১০ই

    মুহাররম শুধুই আশুরা;এই দিনে রোজার কোনো বিষয় নেই। আসলে আশুরার রোযা তো মূলত ১০ই মুহাররমের রোযা। কারণ সেদিনই হল আশুরা। তবে ইহুদীদের সাদৃশ্য থেকে বাঁচার জন্য হাদীসে আশুরার দিনসহ তার আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে দুইটি রোজা রাখার কথা এসেছে। (দ্র. সহীহ মুসলিম ১/৩৫৯; মুসনাদে আহমাদ ১/২৪১)

    উল্লেখ্য, ১০ ই মুহাররমের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথা বলে থাকেন। যেমন, এ দিনে হযরত ইউসুফ আ. জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইয়াকুব আ. চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। অনেকে বলে, এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইদরীস আ.কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে ইত্যাদি। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। -আল আসারুল মারফুআ, আবদুল হাই লখনবী ৬৪-১০০; মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ ফী আয়্যামিস সানাহ ২৫৩-২৫৭

    এ দিনের একটি সহীহ ঘটনা হল, আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুদরতে বনী ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরেছেন।-সহীহ বুখারী ১/৪৮১

    আর এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হুসাইন রা.। বলাবাহুল্য, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয় । কিন্তু একে কেন্দ্র করে তাজিয়া, শোকর‌্যালি, শোকগাঁথা পাঠ, বুক চাপড়ানো, হায় হোসেন হায় হোসেন করা -এগুলো সবই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত হোসাইন রা. ও আহলে বাইতের আদর্শের পরিপন্থী।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা মুখ চাপড়ায়, কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলী যুগের কথাবার্তা বলে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা.৪৩৬১

    ৪. সফরের শেষ বুধবার : আখেরী চাহার শোম্বাহ

    বহু মানুষ সফর মাসের শেষ

    বুধবারকে একটি বিশেষ দিবস গণ্য করে এবং এতে বিশেষ আমল আছে বলে মনে করে। ‘মকসুদুল মোমিনীন’ ও ‘বার চান্দের ফযীলত’ এবং এ জাতীয় যেসব অনির্ভরযোগ্য পুস্তক-পুস্তিকা এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তাতে এই বিষয়টি রয়েছে।

    (মকছুদুল মুমিনীন, বার চান্দের ফযীলত জাতীয় অনির্ভরযোগ্য বইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী) সফর মাসের শেষ

    বুধবারকে আখেরী চাহার শোম্বাহ বলে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে একবার এক ইহুদীর যাদুর কারণে ভীষণ অসুস্থ হন এবং এই দিনে একটু সুস্থতা বোধ করেন এবং গোসল করেন ও মসজিদে জামাতে শরিক হন। খুশি হয়ে হযরত ওসমান রা. তাঁর নিজ খামারের ৭০টি উট জবাই করে গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। খুশিতে আত্মহারা সাহাবীগণ আনন্দ প্রকাশ ও শুকরিয়া আদায় করেছিলেন রোযা রেখে, নফল নামায পড়ে এবং হামদ-নাত গেয়ে। সুতরাং এটা মুসলমানদের খুশির দিন এবং তা উদযাপনের একটি দিবস।

    এ ছাড়াও এ জাতীয় বইগুলোতে এ দিনের বিভিন্ন করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন যেমনটি ভিত্তিহীন উপরোক্ত বিবরণ। কারণ-

    ১. হাদীস বিশারদ ও ইতিহাসবিদ কারো মতেই সুস্থতার তারিখ সফরের আখেরী চাহার শোম্বা ছিল না। (দ্র. ফাতহুল বারী ১০/২৩৭ : আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ২/১৫৪; শরহুয যুরকানী ৯/৪৪৬-৪৪৭)

    ২. জাদুর ঘটনা হাদীস ও সীরাত-গ্রন্থসমূহে বিস্তারিতভাবে এসেছে। কিন্তু কোথাও জামাতে শরীক হতে না পারা ও জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার পর গোসলের কথা নেই।

    ৩. রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়েছে সোমবারে। এর চার-পাঁচদিন পূর্বে তাঁর সুস্থতার জন্য যে সাত কুঁয়া থেকে সাত মশক পানি আনা হয়েছিল এবং সুস্থতার জন্য তার দেহ মোবারককে ধৌত করা হয়েছিল তা কি বুধবারের ঘটনা না বৃহস্পতিবারের? ইবনে হাজার ও ইবনে কাছীর একে বৃহস্পতিবারের ঘটনা বলেছেন। (দ্র. ফাতহুল বারী ৭/৭৪৮, কিতাবুল মাগাযী ৪৪৪২; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/১৯৩; সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী ২/১১৩)

    ৪. যদি বুধবারের ঘটনা হয়ে থাকে তবে সফর মাসের শেষ বুধবার কীভাবে হচ্ছে? রসমের পৃষ্ঠপোষকতাকারীগণ সকলে ইন্তেকালের তারিখ বারো রবিউল আওয়াল বলে থাকেন। সোমবার যদি বারো রবিউল আওয়াল হয়ে থাকে তাহলে এর পূর্বের বুধবার তো সফর নয়, রবিউল আওয়ালেই হচ্ছে।

    ৫. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অনেক মুসিবত এসেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নাজাত দিয়েছেন। তায়েফ ও অহুদে আহত হয়েছেন, আল্লাহ তাকে সুস্থ করেছেন। একবার ঘোড়া থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছেন, যার কারণে মসজিদে যেতে পারেননি, আল্লাহ তাঁকে সুস্থ করেছেন। তাঁর সুস্থতা লাভের এই সব আনন্দের স্মৃতিগুলোতে কি দিবস উদ্যাপনের কোনো নিয়ম আছে? তাহলে আখেরী চাহার শোম্বাহ, যার কোনো ভিত্তি নেই, তা কীভাবে উদযাপনের বিষয় হতে পারে?

    আলকাউসার মার্চ ২০০৮ সংখ্যায় ‘প্রচলিত ভুল’ পাতায় ‘আখেরী চাহার শোম্বাহ কি উদযাপনের দিবস’  শিরোনামে এ বিষয়ে আরো   বিস্তারিত  লেখা হয়েছে।

    ৫. ১২ই রবিউল আউয়াল : নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম ও ওফাত দিবস

    ইতিহাস ও সিরাতের কিতাবের উপর যাদের নযর আছে তারা জানেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাতের তারিখ কোনোটিই নিশ্চিতভাবে ১২ রবিউল আওয়াল বলা ঠিক নয়। অনেক গবেষকই জন্মতারিখ ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার ও ওফাতের তারিখ ২ রবিউল আউয়াল সোমবার-কে তারজীহ দিয়েছেন (সবচেয়ে সহীহ বলেছেন)। (দ্র. ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসকালানী খ. ৮ পৃ.৭৬৩ কিতাবুল মাগাযী,বাব ৮৩; রাহমাতাল লিল আলামীন, কাজী মুহাম্মাদ সুলাইমান সালমান মানসুরপুরী খ.১ পৃ.৩৫; আসাহহুস সিয়ার পৃ.৫৫০-৫৫২; মাকালাতুল কাউছারী পৃ. ৩৬২-৩৭০;আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া খ. ৪ পৃ. ২২৭-২৩০

    সে যাই হোক ইসলামে জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করার কোনো অনুমতি নেই। কোনো সাহাবী, তাবেয়ী, ইমাম, উলামায়ে উম্মাহ কেউ এমনটি করেন নি; বরং করাকে বিদআত বলেছেন। সুতরাং তা পরিত্যাজ্য। আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার রসম-রেওয়াজ ও বিদআত থেকে হেফাজত করুন। এগুলোর পিছনে না পড়ে পুরোপুরি সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন।

    ৬. রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার  : লায়লাতুর রাগায়েব

    এটা একটা আবিস্কৃত রজনী। শরীয়তে এর কোনো  ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে প্রথম কথা হল, এখানে বৃহস্পতিবারকে লাইলাতুর রাগায়েব বলা হয়েছে। অথচ ‘লাইলাতুন’ অর্থ রাত। ফলে একটি ভুল বিষয় বলতে গিয়ে আরেকটি ভুল করেছেন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত-এর স্থলে সরাসরি বৃহস্পতিবার বলে দিয়েছেন। আর যে ভিত্তিহীন বর্ণনার আলোকে তা আবিষ্কার করা হয়েছে তা এই-

    ১. যারা রজব মাসে রোযা রাখে তাদের গুনামাফীর জন্য ফেরেশতাকুল রজবের প্রথম জুমআর রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুআয় মগ্ন থাকেন।

    ২. যে ব্যক্তি রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার রোযা রাখে অতপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে দু’ রাকাত করে (বিশেষ পদ্ধতিতে) বার রাকাত নামায আদায় করে তার সকল প্রয়োজন  পূরণ করা হয় এবং তার সকল গোনাহ মাফ করা হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, বালুকণা, পাহাড়ের ওজন এবং বৃক্ষের পাতার সমপরিমাণ হয়। আর কিয়ামতের দিন সে তার পরিবারের সাতশ গোনাহগার জাহান্নামের উপযোগী মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

    এ দুই বানোয়াট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রয়োজন পূরণের কথিত এ রাতের নাম রাখা হয়েছে ‘লাইলাতুর রাগায়েব’ আর বিশেষ পদ্ধতির নামাযের নাম রাখা হয়েছে ‘সালাতুর রাগায়েব’।

    ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেছেন, সালাতুর রাগায়েব ও এর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস বানোয়াট ও মিথ্যা। আবু ইসমাইল আনসারী, আবু বকর সামআনী, আবুল ফযল ইবনে নাসির, ইবনুল জাওযী সকলেই এ সংক্রান্ত রেওয়ায়াতকে ভিত্তিহীন বলেছেন।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১; মা সাবাতা বিস্সুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ,পৃ. ১৮০

    ৭. ১৫ই রজব : শবে এস্তেফতাহ

    ‘শবে এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করার রজনী। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করা।

    এখানেও ১৫ রজব বলতে ১৫ এর দিবস উদ্দেশ্য নয়; বরং রাত। অর্থাৎ ১৪ই রজব দিবাগত রাত।

    একটি জাল বর্ণনার উপর ভিত্তি করে এ রাতের আবিষ্কার। বর্ণনাটি হল, ‘এ রাতে চার রাকাত নামায বিশেষ নিয়মে আদায় করে নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরূদ, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল আদায় করলে আল্লাহর পক্ষ হতে তার নিকট এক হাজার ফেরেশতা পাঠানো হয়। যারা ঐ ব্যক্তির জন্য নেকী লিখতে থাকেন এবং ঐ রাত পর্যন্ত যত গুনাহ সে করেছে সব মাফ করে দেন। অবশেষে তার কাঁধে হাত রেখে একজন ফেরেশতা বলেন, তুমি নতুন করে আমল শুরু কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন …।’

    গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নতুন করে আমল শুরু করার এই বানোয়াট বর্ণনার কারণেই সম্ভবত এই রাতের নাম রাখা হয়েছে   ‘শবে ইস্তেফতাহ’।

    উল্লেখিত বর্ণনা ছাড়াও এ রাত সম্পর্কে এ ধরনের আরো ভিত্তিহীন বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল, শরীয়তে ‘শবে ইস্তেফতাহ’ নামে বিশেষ কোনো রাতের অস্তিত্বই নেই। ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন, রজব মাসের বিশেষ পদ্ধতির নামাযের কোনো বর্ণনাই প্রমাণিত নয়।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১

    ৮. ২৭ শে রজব : লাইলাতুল মিরাজ

    এ রাতকে লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ বলা হয়ে থাকে। কোনো কোনো পুস্তক-পুস্তিকায় স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে তা প্রসিদ্ধ যে, মিরাজের ঘটনা রজব মাসের ২৭ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। এ কথাটি শুধু ইতিহাসের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যার সনদ সহীহ নয়। অন্যথায় এটি কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস দ্বারাও প্রমাণিত নয়, হাদীস শরীফ কিংবা কোনো সাহাবীর উক্তি দ্বারা তো নয়ই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুধু এটুকুই পাওয়া যায় যে, মিরাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মাস, দিন, তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল নেই।

    অনেক আলেম বলেছেন, মিরাজের রাত নিঃসন্দেহে একটি বরকতময় রাত ছিল কিন্তু এই রাতে যেহেতু বিশেষ কোনো আমল বা ইবাদত উম্মতের জন্য বিধিবদ্ধ হয়নি তাই  এর দিন-তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত থাকেনি। -আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, ইমাম ইবনে কাছীর ২/৪৭১; লাতাইফুল মাআরিফ, ইমাম ইবনে রজব ১৩৪; ইসলাহি খুতুবাত, আল্লামা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ১/৪৬-৪৮

    রজব মাস যেহেতু কুরআনে বর্ণিত চার সম্মানিত মাসের একটি সুতরাং এর পুরোটাই বরকতময়। তাই এ মাসের সবকটি দিন ও সবকটি রাতেই ইবাদাত বন্দেগীর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ। কিন্তু এর ২৭ তারিখ যেহেতু শবে মিরাজ হিসেবে প্রমাণিত নয় তাই এ রাতকে বিশেষ ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট না করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রসম রেওয়াজও ত্যাগ করা উচিত।

    ৯. ১৫ই শাবান : লাইলাতুল বরাত

    ১৫ই শাবান অর্থাৎ ১৪ই শাবান দিবাগত রাত। হাদীস শরীফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ বলা হয়েছে। এর ব্যাপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান  হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে তার সবগুলোকে ‘মওযূ’ বা ‘যয়ীফ’ মনে করা যেমন ভুল তেমনি এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও একটি ভিত্তিহীন ধারণা। বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি কোনটিই উচিত নয়। যতটুকু ফযীলত প্রমাণিত এ রাতকে ততটুকুই গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং এ কেন্দ্রিক সকল রসম-রেওয়াজ পরিহার করা উচিত।

    এ রাত ও তার আমল সম্পর্কে হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা নিম্নরূপ :

    ১.

    عن مالك بن يخامر عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن، رواه ابن حبان وغيره ورجاله ثقات وإسناده متصل على مذهب مسلم الذي هو مذهب الجمهور في المعنعن ولم يجزم الذهبي بأن مكحولا لم يلق مالك بن يخامر كما زعم وإنما قاله على سبيل الحسبان، راجع : سير أعلام البلاء.

    মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’- সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

    হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিববান একে ‘কিতাবুস সহীহ’এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘হাসান’ বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

    ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন, আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১১৮, ৩/৪৫৯; লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫; শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১

    বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা’’ ৩/১৩৫-১৩৯-এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন-

    وجملة القول أن الحديث يمجموع هذه الطريق صحيح بلا ريب والصحة تثبت بأقل منها عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث.

     

    ‘‘এ সব রেওয়ায়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়।’’ এরপর শায়খ আলবানী রাহ. ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোনো ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই।

    ২. ‘‘হযরত আলা ইবনুল হারিস রাহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

    هذه ليلة النصف من شعبان إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.

    ‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’-শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩

    ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন-

    هذا مرسل جيد

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওযীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাআত হতে হবে, প্রতি রাকাআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়, হাদীস শরীফে এসব নেই; এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকাআত করে যত রাকাআত সম্ভব হয় এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইসতেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমানোর প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

    ১০. ২১, ২৩, ২৫,২৭ ও ২৯ শে রমজান : লাইলাতুল কদর

    এখানে বলা উচিত, ২১ থেকে ৩০ এর রাত পর্যন্ত শবে কদর অন্বেষণ ও ইতিকাফ।

    অনেকের মনে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সাতাশের রাতই হচ্ছে শবে কদর। এই ধারণা ঠিক নয়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। তাদের ওই ঝগড়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হতে পারে, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলত) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০২০, সহীহ মুসলিম ১১৬৫/২০৯

    অন্য হাদীসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর  তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫

    তাই সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।

    রমাযানের শেষ দশকের ফযীলতই সবচেয়ে বেশি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭১

    ১১. ১লা শাওয়াল : ঈদ-উল-ফিত্র

    ১২. ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব : আইয়ামে তাশরীক

    এটি ঠিক যে, ৯ই যিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ই যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর প্রত্যেক বালেগ নর নারীর উপর একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। তাকবীরে তাশরীক হল,

    الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد

    তবে এই সবগুলো দিনকে পরিভাষায় ‘আইয়ামুত তাশরীক’ বলে না। পরিভাষায় নয় যিলহজ্বকে ইয়াওমু আরাফা-১০ যিলহজ্বকে ইয়াওমুন নাহর এবং ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্বকে আইয়ামুত তাশরীক বলে। (দ্র. উমদাতুল কারী শরহু সহীহিল বুখারী খ. ৬ পৃ. ২৮৯; রদ্দুল মুহতার, খ. ৬ পৃ. ৩১৬; আলমিসবাহুল মনীর, পৃ. ১৬২; আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত, খ. ৭ পৃ. ৩২০)

    ১৩. ৯ই যিলহজ্ব : ইয়াওমুল আরাফা হজ্ব দিবস

    আরবী ব্যাকরণের হিসেবে ‘ইয়াওমুল আরাফা’ বলা ঠিক নয়। বলতে হবে, ইয়াওমু আরাফা। আর এর সাথে ইয়াওমু আরাফা (৯ই যিলহজ্বের) রোযার কথা বলে দিলে ভালো। হাদীস শরীফে এসেছে, আরাফার দিনের (৯ই যিলহজ্ব) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মিটিয়ে দিবেন। -সহীহ মুসলিম হাদীস ১১৬২

    ১৪. ১০ই যিলহজ্ব : ঈদ-উল-আযহা

    ১৫. প্রতি মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ : আইয়ামে বীজ (রোযা রাখা সুন্নত) অর্থাৎ প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ।

    উপরোক্ত তালিকায় সমাজে প্রসিদ্ধ সহীহ বা ভুল দিবস-রজনীর অধিকাংশ এসে গেছে। এর বাইরেও কিছু আছে যা এই তালিকায় আসেনি। যেমন-

    * আশারায়ে যিলহজ্ব (যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন)।

    আল কুরআনুল কারীমে সূরা ফাজর-এর শুরুতে আল্লাহ তায়ালা এই দশ রাতের শপথ করেছেন (তাফসীরে ইবনে কাছির ৪/৫৩৫) হাদীস শরীফে এসেছে- আল্লাহর নিকট যিলহজ্বের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোন দিনের আমল নেই…। – সহীহ বুখারী, হাদীস: ৯৬৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ২৪৩৮

    * ইয়াওমুল জুমুআ (প্রতি সপ্তাহের জুমার দিন)

    আল কুরআনুল কারীমে জুমার দিনের আলোচনা এসেছে এবং ‘সূরা জুমুআ’ নামে একটি আলদা সূরাও রয়েছে। জুমআর দিনের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে বহু হাদীস এসেছে।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমুআর দিন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। -সহীহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৪

    *এ ছাড়াও সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবারের ফযীলত ও রোযার কথা হাদীস শরীফে এসেছে।

    রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমি চাই যে, আমার আমল পেশ করার মুহূর্তে যেন আমি রোযা অবস্থায় থাকি। -জামে তিরমিযী, হাদীস.৭৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস.৭৬৩৯

    আরেক হাদীসে আয়েশা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। – জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৩৮

    আর এ তালিকার বাইরে কিছু ভুল দিবস-রজনী বিভিন্ন পুস্তিকায় পাওয়া যায়। যেমন-

    * ফাতিহায়ে ইয়াযদহম (রবিউস সানীর ১১ তারিখ)

    ‘ইয়াযদাহম’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘একাদশ’। আর ফাতিহায়ে ইয়াযদাহম অর্থ রবীউস সানীর এগারো তারিখে কৃত ফাতেহা বা ইসালে ছওয়াব মাহফিল। বলা হয়ে থাকে, এ তারিখে শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রহ.-এর ইন্তেকাল হয়েছিল। এজন্য তাঁর ওফাতদিবস পালন করার উদ্দেশ্যে এই রসমের সূচনা করা হয়। ওই আল্লাহর বান্দারা চিন্তা করেনি যে, ইসলামে না জন্মদিবস পালন করা হয়, না মৃত্যুদিবস। না শায়খ জীলানী রহ. তাঁর কোনো শায়খের জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস পালন করেছেন, না তার কোনো খলীফা বা শাগরিদ তা পালন করেছেন।

    এদিকে মজার বিষয় এই যে, গিয়ারভীর এই রসম এ তারিখে এ জন্যই পালন করা হয় যে, এটা শায়খ জীলানীর ওফাতদিবস। আল্লাহর কী শান, এই ভিত্তিহীন রেওয়াজের উদযাপন দিবসের জন্যও একটি ভিত্তিহীন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।

    আমরা তারীখ ও রিজালের অনেক গ্রন্থে শায়খ জীলানীর জীবনালোচনা পড়েছি। কোথাও এগারো রবীউস সানীর কথা নেই। আট, নয় বা দশ রবীউস সানী ৫৬১ হিজরীর কথা উল্লেখিত হয়েছে।

    -(দেখুন : সিয়ারু আলামিন নুবালা,  যাহাবী ১৫/১৮৯; আলমুনতাযাম, ইবনুল জাওযী : ১৮/১৭৩; যায়লু তবাকাতিল হানাবিলা, ইবনে রজব ১/২৫১; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/৩৯৫; শাযারাতুয যাহাব, ইবনুল ইমাদ ৪/২০২; তারীখুল ইসলাম, যাহাবী ৩৯/৬০)

    মোটকথা, এ তারিখ যদি সহীহও হতো তবুও তো জন্মদিবস-মৃত্যুদিবস পালন করার কোনো অনুমতি ইসলামে নেই।

    * ফাতিহায়ে দোয়াযদহম (রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ)

    দোয়াযদহম অর্থ দ্বাদশ। ফাতিহায়ে দোয়াদহম অর্থ রবীউল আউয়ালের ১২ তারিখে কৃত ফাতেহা বা ইসালে ছওয়াব মাহফিল। এটা আরো গর্হিত বেদআত।

    উপরের আলোচনায় দুই ধরনের দিবস-রজনীর কথা এসেছে : এক. শরীয়তের দলীল দ্বারা যেগুলোর আলাদা ফযীলত ও বিশেষত্ব প্রমাণিত। দুই. যেগুলোর আলাদা বিশেষত্বের ধারণা ভুল ও নবউদ্ভাবিত। নীচে দুইটি আলাদা তালিকায় তা উপস্থাপিত হল :

    সঠিক দিবস-রজনী

    ১. ইয়াওমু আরাফা (৯ই যিলহজ্ব,রোযা রাখা সুন্নত)

    ২. ঈদুল-আযহা (১০ই যিলহজ্ব)

    ৩. আইয়ামে বীজ (প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ,রোযা রাখা সুন্নত)

    ৪. লাইলাতুল বারাআত বা লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান (১৫ই শাবান)

    ৫. লাইলাতুল কদর অন্বেষণ ও ইতিকাফ  (রমযানের শেষ দশক)

    ৬. ঈদুল-ফিত্র (১লা শাওয়াল)

    ৭. আইয়ামে তাশরীক (১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব)

    ৮. আশুরা (১০ ই মুহাররম; ৯-১০/১০-১১) তারিখে রোযা রাখা সুন্নত)

    ৯. আশারায়ে যিলহজ্ব (যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন)

    ১০. ইয়াওমুল জুমুআ (প্রতি সপ্তাহের জুমার দিন)

    ১১. সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার (রোযা রাখা সুন্নত)

    ভুল দিবস-রজনী

    ১. আখেরী চাহার শোম্বাহ (সফরের শেষ বুধবার)

    ২. লায়লাতুর রাগায়েব (রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার)

    ৩. শবে এস্তেফতাহ (১৫ই রজব)

    ৪. লাইলাতুল মিরাজ (২৭ শে রজব)

    ৫. ফাতিহায়ে ইয়াযদহম (রবিউস সানীর ১১ তারিখ)

    ৬. ফাতিহায়ে দোয়াযদহম (রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ)

    ৭. ১২ই রবিউল আউয়াল।