• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • বদলী হজ্বের মাসায়েল

    হজ্ব একটি কঠিন ইবাদত। একে জিহাদের সাথেও তুলনা করা হয়েছে। এ কারণে এতে ছওয়াবও বেশি এবং উপকারিতাও অনেক। বিধানগত দিক থেকে হজ্ব আদায় করা সহজ, কিন্তু যেহেতু এর জন্য সফর করতে হয় এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশেষ বিশেষ স্থানে একসাথে এই ইবাদত আদায় করে থাকে তাই তা কঠিন ও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে অনেক মানুষের আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শারীরিক অক্ষমতার কারণে তা আদায়ের সামর্থ্য থাকে না। এ ধরনের মাজুরদের প্রতি মেহেরবানী করে আল্লাহ তাআলা বদলী হজ্বের অবকাশ দান করেছেন।

    বদলী হজ্বের নাম শুনলেই অনেকে মনে করতে পারেন তা আদায়ের জন্য বোধ হয় আলাদা কোনো নিয়ম আছে। তা ঠিক নয়। যেভাবে নিজের হজ্ব আদায় করা হয় সেভাবেই বদলী হজ্বও আদায় করা হয়। পার্থক্য শুধু এইটুকু যে, নিয়ত ও তালবিয়ার সময় বদলী হজ্বে প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে হজ্বের নিয়ত করা হয়। এরপর হজ্বের সকল কাজ এক ও অভিন্ন।

    হজ্বের নিয়ম এক হলেও বদলী হজ্ব সংক্রান্ত কিছু বিষয় এমন আছে, যা বদলী হজ্বে প্রেরণকারী ও প্রেরিত উভয়েরই জানা থাকা জরুরি। বর্তমান নিবন্ধে ঐ মাসআলাগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে।

    বদলী হজ্বের জরুরি মাসায়েল

    মাসআলা : যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে এবং হজ্ব আদায়ের শারীরিক সক্ষমতাও আছে তার নিজে হজ্ব করা জরুরি। এক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলী হজ্ব করানো জায়েয নয়। বদলী করালে এর দ্বারা তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না।-হিদায়া ১/২৯৬; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৪

    মাসআলা : যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে এবং হজ্ব আদায়ের সক্ষমতাও ছিল, কিন্তু শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করেনি। অতপর হজ্ব আদায়ের সক্ষমতা হারিয়ে মাজুর হয়ে পড়েছে এমন ব্যক্তির উপর ফরয নিজের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করানো অথবা মৃত্যুর সময় তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করানোর অসিয়ত করে যাওয়া।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, বিদায় হজ্বে খাছআম গোত্রের একজন নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি এত বৃদ্ধ যে, বাহনের উপর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারব?’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ। (তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারবে)।’-সহীহ বুখারী ১/২০৫; সহীহ মুসলিম ১/৪৩১

    হযরত আলী রা. অতিশয় বৃদ্ধ লোক সম্পর্কে বলেছেন-

    يُجَهِّزُ رَجُلاً بَنَفَقَتِهِ فَيَحُجُّ عَنْهُ

    সে তার পক্ষ থেকে হজ্ব করাবে এবং এর খরচ বহন করবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৫৯৯

    দেখুন : আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬১; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৩৪

    মাসআলা : কারো উপর হজ্ব ফরয হয়েছে এবং সে হজ্বের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফে পৌঁছেছে, কিন্তু হজ্বের মূল সময়ের আগেই তার মৃত্যু এসে গেছে-এই ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর সময় তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্বের অসিয়ত করার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে তার উপর থেকে হজ্ব রহিত হয়ে যায়। কেননা, সে হজ্ব আদায়ের সুযোগ পায়নি।-ফাতহুল কাদীর ২/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৪; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩

    যেসব কারণে নিজে হজ্ব আদায়ে অক্ষম গণ্য হয়

    ১. ফরয হওয়ার পর আদায়ের সুযোগ পাওয়ার আগেই মৃত্যু এসে গেলে। এ ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি থেকে হজ্ব রহিত হয়ে যায়। সুতরাং তার জন্য মৃত্যুর সময় হজ্বের অসিয়ত করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

    ২. কেউ জোরপূর্বক আটকে রাখলে বা হজ্বের সফরে যেতে না দিলে।

    ৩. এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে, যা থেকে সুস্থতা লাভের আশা নেই। যেমন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে, অন্ধ বা খোড়া হয়ে গেলে কিংবা বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা এত বেশি হলে যে, নিজে বাহনের উপর আরোহন করতে

    পারে না।

    ৪. রাস্তা অনিরাপদ হলে। অর্থাৎ সফর করতে গেলে যদি জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

    ৫. নারী তার হজ্বের সফরে স্বামী বা উপযুক্ত মাহরাম পুরুষ সঙ্গী না পেলে।

    এসব কারণে ঐ ব্যক্তিকে মাজুর বা অক্ষম গণ্য করা হবে এবং সে নিজের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাতে পারবে।-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৩৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২১

    মাসআলা : যার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করা হবে বদলী করানোর সময় তার উপর হজ্ব ফরয হতে হবে। হজ্ব ফরয না হওয়া অবস্থায় নিজের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করালে তা নফল হজ্ব বলে গণ্য হবে এবং এর দ্বারা ফরয হজ্ব আদায় হবে না। সুতরাং পরবর্তীতে হজ্বের সামর্থ্য হলে তাকে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে। আর নিজে আদায় করতে না পারলে পুনরায় অন্যকে দিয়ে বদলী করাতে হবে।-মানাসিক, ৪৩৫

    মাসআলা : যেসব ওজরে বদলী হজ্বের অনুমতি আছে সেগুলো দেখা দেওয়ার আগে বদলী হজ্ব করানোর যাবে না। ওজরহীন অবস্থায় বদলী হজ্ব করালে তা হবে নফল হজ্ব। এর দ্বারা তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না। যেমন কারো উপর হজ্ব ফরয হয়েছে এবং তার নিজে হজ্ব আদায়ের শারীরিক সক্ষমতাও আছে, কিন্তু সে এ অবস্থায় নিজে আদায় না করে অন্যের দ্বারা বদলী করিয়েছে তাহলে এর দ্বারা তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না। সুতরাং তাকে ঐ হজ্ব নিজে আদায় করতে হবে। যদি নিজে আদায় না করে এবং  পরে অক্ষম হয়ে পড়ে তাহলে পুনরায় অন্যের দ্বারা বদলী হজ্ব করাতে হবে, আগের বদলী যথেষ্ট হবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৫; মানাসিক ৪৩৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২

    মাসআলা : হজ্ব আদায়ে অক্ষমতার ওজর দুই ধরনের হতে পারে : ক) যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। খ) স্বাভাবিক অবস্থায় যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

    যে ওজর দূর হওয়ার সম্ভাবনা আছে যেমন অসুস্থ, পাগল বা কারাবন্দি হওয়া; স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বদলী হজ্ব জায়েয হওয়ার জন্য শর্ত হল, ওজরটি মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হতে হবে। সুতরাং এ ধরনের ওজরে বদলী হজ্ব করানোর পর যদি ঐ ওজর অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয় তাহলে তার ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বদলী হজ্ব করানোর পর মৃত্যুর আগে ওজর দূর হয়ে গেলে ঐ হজ্বটি নফল হয়ে যাবে এবং তাকে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।

    আর দ্বিতীয় প্রকারের ওজর, অর্থাৎ যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, যেমন অন্ধ বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া। এক্ষেত্রে বদলী হজ্ব জায়েয হওয়ার জন্য তা মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া শর্ত নয়। অর্থাৎ এ জাতীয় ওজরের কারণে অন্যের দ্বারা বদলী হজ্ব করানোর পর আল্লাহ তাআলার খাছ কুদরতে যদি দৃষ্টিশক্তি বা চলৎশক্তি ফিরে পায় তাহলে তাকে পুনরায় ফরয হজ্ব করতে হবে না। পূর্বের বদলী হজ্বের মাধ্যমে তার ফরয হজ্ব আদায় হয়ে গেছে।-আলবাহরুর রায়েক ৩/৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৯; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২১; যুবদাতুল মানাসিক ৪৪৮

    মাসআলা : মাহরাম পুরুষ ছাড়া মহিলাদের হজ্বের সফরে যাওয়া জায়েয নয়। অন্য মহিলাদের সঙ্গী হয়েও হজ্বে যাওয়া নাজায়েয। তারা স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। যদি মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হয় আর এভাবেই এমন বার্ধক্য এসে যায় যে, নিজে হজ্ব করার শক্তি না থাকে তাহলে ঐ সময় কাউকে পাঠিয়ে বদলী হজ্ব করিয়ে নিবে বা বদলী হজ্বের অসিয়ত করে যাবে।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না।’ জনৈক ব্যক্তি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অমুক অমুক বাহিনীর সাথে জিহাদে যাওয়ার ইরাদা করেছি। এ দিকে আমার স্ত্রীও হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছা করেছে (আমি এখন কী করতে পারি?) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমিও তার সাথে (হজ্বে) যাও।’-সহীহ বুখারী ১/২৫০; সহীহ মুসলিম ১/৪৩৪

    বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেছেন, ‘নারী মাহরাম ছাড়া হজ্ব করবে না।’

    রাই-এর অধিবাসিনী একজন নারী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর নিকট পত্র লিখলেন যে, তিনি একজন বিত্তবান নারী। কিন্তু তার স্বামী নেই এবং কোনো মাহরাম পুরুষও নেই। আর ইতিপূর্বে তিনি হজ্ব করেননি। (এখন তিনি কি স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ্বে যেতে পারবেন?) উত্তরে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. লিখেছেন-

    إِنَّ هَذَا مِنْ أَمْنِ السَّبِيْلِ الَّذِيْ قَالَ اللهُ، وَلَيْسَ لَكِ مَحْرَمٌ فَلاَ تَحُجِّيْ إِلَّا مَعَ بَعْلٍ أَوْ مَحْرَمٍ.

    ‘মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা হওয়া হজ্বের সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদের এই আয়াতে বলেছেন-

    وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا

    অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (কাবা ঘরে) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্ব করা ফরয। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭) আপনার তো মাহরাম পুরুষ নেই। স্বামী বা মাহরাম ছাড়া আপনি হজ্বে

    যাবেন না।’

    অনুরূপ সিদ্ধান্ত তাউস, আমের, ইকরামা ও উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. প্রমুখ বিখ্যাত মনীষী তাবেয়ীদের থেকেও বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৬৩৬-৬৪১)

    -ফাতহুল কাদীর ২/৩৩০; মানাসিক ৪৩৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৫

    মাসআলা : যার বদলী হজ্ব আদায় করা হবে তার পক্ষ থেকে আদেশ বা অনুমতি থাকতে হবে। তার আদেশ বা অনুমতি ছাড়া কেউ তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করলে এটি তার নফল হজ্ব গণ্য হবে। এর দ্বারা তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না।-মানাসিক ৪৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৯

    মাসআলা : কোনো ব্যক্তির উপর হজ্ব ফরয ছিল, কিন্তু সে তা আদায় করেনি এবং তার পক্ষ থেকে আদায়ের অসিয়তও করেনি। এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার পক্ষ থেকে ওয়ারিশদের বদলী হজ্ব করা বা করানো জরুরি নয়। তবে কোনো ওয়ারিশ বা অন্য কেউ স্বেচ্ছায় তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করলে এর দ্বারা ঐ মৃত ব্যক্তির ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাওয়ার আশা করা যায়।

    হযরত বুরাইদাহ রা. বলেন, জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা ইন্তিকাল করেছেন। তিনি হজ্ব করেননি। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করো।’ (সহীহ মুসলিম ১/৩৬২)

    হযরত আতা রাহ. বলেছেন, ‘অসিয়ত না করলেও মৃতের পক্ষ থেকে হজ্ব করানো যাবে।’

    উল্লেখ্য, উপরোক্ত ক্ষেত্রে ওয়ারিশগণ যদি মাইয়্যেতের অবণ্টিত পরিত্যক্ত সম্পদ দ্বারা বদলী হজ্ব করাতে চান তাহলে দুটি শর্ত অবশ্যপালনীয় : ক) বদলী হজ্বের অসিয়ত না করার কারণে মৃতের সকল সম্পদের বর্তমান মালিক যেহেতু ওয়ারিশগণ তাই উক্ত সম্পদ দ্বারা বদলী হজ্ব করাতে হলে সকল ওয়ারিশের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি থাকতে হবে। খ) ওয়ারিশদের কেউ যদি নাবালেগ হয় কিংবা কোনো ওয়ারিশের যদি সম্মতি না থাকে তাহলে তার অংশ থেকে বদলী হজ্বের জন্য কিছুই নেওয়া যাবে না।

    দেখুন : মানাসিক ৪৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৯; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২২, ৩২৮

    মাসআলা : বদলী হজ্ব করার জন্য কোনো প্রকার বিনিময় বা পারিশ্রমিক লেনদেন করা যাবে না। কেননা হজ্ব একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় নেওয়া ও দেওয়া দুটোই নাজায়েয। তাই বদলী হজ্বের জন্য পারিশ্রমিক দেওয়া হলে প্রদানকারী ও গ্রহণকারী দুজনই গুনাহগার হবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রেরণকারীর হজ্ব আদায় হয়ে যাবে বটে তবে হজ্ব আদায়কারী পারিশ্রমিকরূপে যা কিছু নিয়েছে তা ফেরত দেওয়া ওয়াজিব। সে শুধু হজ্বের খরচ নিতে পারবে। অতিরিক্ত কিছুই নিতে পারবে না।-আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৯; মানাসিক ৪৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০০

    মাসআলা : মহিলাকে দিয়েও বদলী হজ্ব করানো জায়েয যদি তার সাথে স্বামী বা মাহরাম পুরুষ থাকে। আর বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার, যার মাধ্যমে বদলী হজ্ব করানো হচ্ছে তিনি হজ্বের মাসায়েল সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত কি না।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, বিদায় হজ্বে খাছআম গোত্রের একজন নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি এত বৃদ্ধ যে, সওয়ারীর উপর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। সুতরাং আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারব? রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ।’ (সহীহ বুখারী ১/২৫০; সহীহ মুসলিম ১/৪৩১)

    দেখুন : আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৮; মানাসিক ৪৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৫/২৭

    মাসআলা : যার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করা হচ্ছে হজ্বের অধিকাংশ খরচ তাকেই বহন করতে হবে। যদি কেউ সম্পূর্ণ নিজের খরচে কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করে তাহলে এর দ্বারা প্রেরণকারীর ফরয হজ্ব আদায় হবে না। তবে প্রেরিত ব্যক্তি কিছু খরচ নিজের পক্ষ থেকে বহন করলে অসুবিধা নেই।

    হযরত আলী রা. অতিশয় বৃদ্ধ লোকের সম্পর্কে বলেছেন, সে কাউকে তার পক্ষ থেকে হজ্বে পাঠাবে এবং হজ্বের খরচ বহন করবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৫৯৯; সুনানে বায়হাকী ৫/২৬; মানাসিক ৪৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০০

    মাসআলা : বদলী হজ্বে প্রেরণকারী যদি এই বলে টাকা দেয় যে, ‘আপনি এ টাকা স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে খরচ করতে পারবেন, কিছু বেঁচে গেলে তা ফেরত দিতে হবে না’ তাহলে হজ্ব আদায়ের পর হজ্বের প্রয়োজনে কেনা কাপড়-চোপড়, সামানপত্র ও উদ্বৃত্ত টাকা-পয়সা প্রেরণকারীকে ফেরত দিতে হবে না। এসব বস্ত্ত সে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।

    তবে যদি প্রেরণকারী টাকা দেওয়ার সময় এ রকম কিছু না বলে এবং তার কথাবার্তা বা অবস্থা দেখে বোঝা যায়, উদ্বৃত্ত টাকা-পয়সা ও হজ্বের প্রয়োজনে কেনা বস্ত্তসামগ্রী প্রেরণকারীকে ফেরত দিতে হবে তাহলে প্রেরিত ব্যক্তির উদ্বৃত্ত টাকা ও অন্যান্য সামানপত্র রেখে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্যই তা প্রেরণকারীকে ফেরত দিতে হবে। হ্যাঁ, ফেরত দেওয়ার পর তিনি যদি খুশি মনে তা দিয়ে দেন তাহলে সেগুলো গ্রহণ করতে অসুবিধা নেই।

    বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, ‘কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করার পর যদি প্রেরিতের নিকট প্রেরকের দেওয়া কিছু অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাহলে সে প্রেরণকারীকে বিষয়টি জানাবে। সে দিয়ে দিলে প্রেরিতের গ্রহণ করতে বাধা নেই। অন্যথায় প্রেরণকারীকে তা ফেরত দিতে হবে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৫৪১) -শরহু মুখতাছারিত তহাবী ২/৪৯৫; মাবসূত, সারাখসী ২৭/১৭২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৭; মানাসিক ৪৫৯; আলবাহরুল আমীক ৪/২৩৭৮, ২৩৮১

    মাসআলা : বদলী হজ্বে প্রেরণকারী যদি বদলী আদায়কারীকে টাকা-পয়সার হিসাব-নিকাশের ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখার জন্য বলে, ‘আমি আপনাকে হজ্বের জন্য প্রদত্ত টাকার মালিক বানিয়ে দিলাম বা আপনাকে হাদিয়া দিলাম তাহলে ঐ টাকায় আদায়কৃত হজ্ব দ্বারা প্রেরকের ফরয হজ্ব আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া করার কারণে বা মালিক বানিয়ে দেওয়ার কারণে সে ঐ টাকার মালিক হয়ে গিয়েছে এবং হজ্বটি তার নিজের টাকায় সম্পন্ন হয়েছে। এ কারণে বদলী হজ্বের জন্য টাকাটা প্রেরকের মালিকানায় রেখেই প্রেরিত ব্যক্তিকে হজ্বের খরচ হিসাবে প্রদান করতে হবে। আর হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য পূর্বোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রেরণকারী টাকা দিয়ে একথা বলে দিবে যে, কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা আমাকে ফেরত দিতে হবে না বা কোনো হিসাবও আমাকে দিতে হবে না।-যুবদাতুল মানাসিক ৪৫৯

    মাসআলা : বদলী হজ্বের জন্য নিজ দেশ থেকেই কাউকে পাঠাতে হবে। নিজ দেশ থেকে কাউকে পাঠানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশে অবস্থানরত কাউকে দিয়ে বদলী হজ্ব করানো হলে প্রেরণকারীর ফরয হজ্ব আদায় হবে না। এক্ষেত্রে নিজ দেশ থেকে পুনরায় বদলী হজ্ব করাতে হবে।-মানাসিক ৪৪০; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৫

    মাসআলা : মৃত ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্বের অসিয়ত করে গেলে নিয়ম হল, তার কোনো ঋণ থাকলে প্রথমে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তা আদায় করা। এরপর অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে বদলী হজ্বের অসিয়ত কার্যকর করা। এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা মৃতের আবাসস্থল থেকে হজ্বের জন্য পাঠানো সম্ভব হলে তার এলাকা থেকেই কাউকে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ থেকে কাউকে দিয়ে হজ্ব করালে মৃতের অসিয়ত ও ফরয হজ্ব আদায় হবে না। কিন্তু এক তৃতীয়াংশ  সম্পদ দ্বারা যদি মৃতের এলাকা থেকে হজ্ব করানো সম্ভব না হয় তাহলে ঐ টাকা দিয়ে যেখান থেকে হজ্ব করানো যায় সেখান থেকেই করাবে। অবশ্য ওয়ারিশগণ চাইলে নিজ সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে মৃতের এলাকা থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবে। (প্রাগুক্ত)

    মাসআলা : মাইয়েত যদি বদলী হজ্বের অসিয়ত করে না যায় আর ওয়ারিশগণ স্বেচ্ছায় তার বদলী হজ্ব করাতে চায় সেক্ষেত্রে মৃতের এলাকা থেকে বদলী করানো জরুরি নয়। তারা অন্য দেশ যেমন- সৌদি আরব বা তার কাছাকাছি কোনো দেশ থেকেও মাইয়েতের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও তার দেশ থেকে কাউকে পাঠিয়ে হজ্ব করানো উত্তম। কারণ এভাবে করলে মাইয়েতের উপর যেভাবে হজ্ব ফরয হয়েছিল সেভাবে আদায় করা হয়।-আলবাহরুল আমীক ৪/২৩৪৮; মাআরিফুস সুনান ৬/৩১৬; মানাসিক ৪৩৬; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৫/৪১

    মাসআলা : বদলী হজ্বের ইহরাম বাঁধার সময় প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে নিয়ত করতে হবে। এর জন্য উত্তম হল, মুখে এভাবে বলা যে, আমি অমুকের পক্ষ থেকে হজ্বের ইহরাম করছি বা নিয়ত করছি, এমনকি তালবিয়া বলার সময়ও তার নাম যুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন এভাবে বলবে, লাববাইক আন ফুলান (ব্যক্তির নাম)।

    যদি তার নাম জানা না থাকে বা স্মরণ না থাকে তাহলে এভাবে বলবে যে, যিনি আমাকে বদলী হজ্বের জন্য প্রেরণ করছেন বা যার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করছি তার পক্ষ থেকে হজ্বের নিয়ত করলাম। ইহরামের সময় একবার এই নিয়ত করা যথেষ্ট। হজ্বের প্রতিটি কাজে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে নিয়ত করতে হবে না।

    বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করলে তালবিয়া পড়ার সময় তার নাম নিয়ে একবার এভাবে বলাই যথেষ্ট যে,

    لَبَّيْكَ عَنْ فُلَانٍ

    (অমুকের পক্ষ থেকে লাববাইক।)

    অনুরূপ বক্তব্য হযরত আতা রাহ. থেকেও বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/২৩৪)

    দেখুন : মানাসিক ৪৪২; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৩

    মাসআলা : যদি মুখে প্রেরণকারীর নাম উল্লেখ করতে ভুলে যায়, কিন্তু মনে মনে তার পক্ষ থেকে নিয়ত করেছে, তাহলেও কোনো অসুবিধা নেই।

    অন্তরের নিয়তই যথেষ্ট।

    হযরত হাসান বসরী ও আতা রাহ. বলেছেন-

    إِذَا حَجَّ الرَّجُلُ عَنِ الرَّجُلِ فَنَسِيَ أَنْ يُسَمِّيَهُ فَقَدْ أَجْزَأَ عَنْهُ الْحَجُّ، فَإِنَّ اللهَ قَدْ عَلِمَ عَمَّنْ حَجَّ.

    যদি কেউ কারো পক্ষ থেকে (বদলী) হজ্ব করে আর সে (ইহরামের সময়) প্রেরকের নাম উচ্চারণ করতে ভুলে যায় তাহলেও তার হজ্ব আদায় হবে যাবে। কারণ আল্লাহ তাআলা জানেন, সে কার পক্ষ থেকে হজ্ব করেছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮-/২৩৫)

    দেখুন : আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৩; মানাসিক ৪৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৯

    মাসআলা : বদলী হজ্ব আদায়কারী যদি ইহরাম বাঁধার সময় প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে নিয়ত করতে ভুলে যায় তাহলে হজ্বের কাজ শুরু করার আগেই প্রেরকের পক্ষ থেকে নিয়ত করে নিবে। যদি নতুন করে প্রেরকের পক্ষ থেকে নিয়ত না করে হজ্বের আমলসমূহ করতে শুরু করে দেয় তাহলে তখন আর নিয়ত করার সুযোগ থাকে না। তখন এই হজ্ব হবে আদায়কারীর নিজের হজ্ব। প্রেরণকারীর টাকা ফেরত দেওয়া তার জন্য অপরিহার্য।-মানাসিক ৪৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৯; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৫

    মাসআলা : মৃত ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট কাউকে দিয়ে তার বদলী হজ্ব করানোর অসিয়ত করে থাকে যে, অমুক আমার বদলী হজ্ব করবে, অন্য কেউ করতে পারবে না, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে তার বদলী হজ্ব করানো জায়েয নয়। আর যদি অসিয়তের সময় কারো নাম বললেও অন্য কাউকে দিয়ে করাতে নিষেধ না করে থাকে অর্থাৎ শুধু এতটুকু বলেছে যে, অমুককে দিয়ে আমার বদলী হজ্ব করাবে, এক্ষেত্রে উত্তম হল ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দিয়েই হজ্ব করানো। তবে ঐ ব্যক্তি যদি রাজি না হয় বা কোনো কারণে করতে সক্ষম না হয় তাহলে অন্য কাউকে দিয়েও করাতে পারবে।

    তদ্রূপ ঐ ব্যক্তির অসম্মতি বা অক্ষমতা ছাড়াও যদি তাকে না পাঠিয়ে অন্য কাউকে পাঠায় তাহলেও মৃতের ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।-আলবাহরুল আমীক ৪/২৩৮৭; মানাসিক ৪৫১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০০; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৮

    মাসআলা : মৃত ব্যক্তি যদি শুধু এটুকু অসিয়ত করে যে, আমার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাবে, কিন্তু কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ করেনি তাহলে সকল ওয়ারিশ একত্র হয়ে পরামর্শক্রমে যেকোনো ব্যক্তিকে বদলী হজ্বের জন্য পাঠাতে পারবে। এতে মৃতের ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।-মানাসিক ৫৫১; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৮

    মাসআলা : যদি কোনো বদলী হজ্বকারী তাওয়াফে যিয়ারত না করেই দেশে চলে আসে তাহলে এ কারণে হজ্ব বাতিল হবে না। তবে তাকে নিজের খরচে মক্কা মুকাররমায় গিয়ে অবশ্যই তাওয়াফে যিয়ারত করতে হবে। অন্য কাউকে দিয়ে তা করানোর সুযোগ নেই।-মানাসিক ৪৫১

    মাসআলা : বদলী হজ্বকারী শুধু এক হজ্বের ইহরাম করবে। তার জন্য একত্রে দুই হজ্বের নিয়তে ইহরাম করা-একটি প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে আর অপরটি নিজের জন্য-এটি জায়েয নয় এবং এর দ্বারা প্রেরণকারীর হজ্ব আদায় হবে না। তবে নিজের নিয়তে যে হজ্বের ইহরাম করেছে তা যদি ছেড়ে দেয় তাহলে প্রেরকের বদলী হজ্ব আদায় হবে।

    মাসআলা : বদলী হজ্বকারী নির্দিষ্ট এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইহরাম করবে। একই হজ্বের ইহরাম দুই ব্যক্তির পক্ষ থেকে করা জায়েয নয়। যদি এমনটি করে তাহলে দু’জনের কারো হজ্ব আদায় হবে না। এটি আদায়কারীর নিজের হজ্ব হবে। সুতরাং ঐ দুই ব্যক্তি যদি তাদের পক্ষ থেকে হজ্ব করার জন্য তাকে টাকা দিয়ে থাকে তাহলে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।-মানাসিক ৪৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৭, ৬০১; গুনয়াইতুন নাসিক ৩২৫, ৩২৭

    মাসআলা : বদলী হজ্ব আদায়কারী ইহরাম করবে প্রেরণকারীর মীকাত থেকে। অর্থাৎ প্রেরণকারীর দেশ থেকে মক্কা মুকাররমা যেতে যে মীকাত পরে সেখান থেকে বদলী হজ্বের ইহরাম করবে। যেমন-বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মক্কাগামী হজ্বযাত্রীদের জন্য মীকাত হল ‘কারনুল মানাযিল’ ও ‘যাতু ইরক’। এই স্থানদ্বয় অতিক্রমের আগেই ইহরাম করতে হবে। সতর্কতার জন্য বিমানে ওঠার আগে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরাম করে নেওয়া ভালো।-মানাসিক ৪৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৬০০; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩২

    মাসআলা : প্রেরিত ব্যক্তি প্রেরণকারীর আদেশের উল্টো করবে না। যেমন-প্রেরক হজ্বে ইফরাদ করার আদেশ করেছে, কিন্তু আদায়কারী প্রথমে নিজের জন্য উমরাহ করেছে। তারপর প্রেরকের পক্ষ থেকে হজ্ব করেছে। এমনটি করলে প্রেরকের হজ্ব আদায় হবে না। আর আদায়কারীকে অবশ্যই প্রেরকের টাকা ফেরত দিতে হবে।-মানাসিক ৪৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/৬০০; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৩

    মাসআলা : কেউ কেউ ঈসালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হজ্বকেও বদলী হজ্ব বলে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে, এটি পারিভাষিক বদলী হজ্ব নয়। বদলী হজ্ব শরীয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা।

    ঈসালে ছওয়াবের হজ্ব আর বদলী হজ্ব দুটো এক নয়। বদলী হজ্ব হল নিজে হজ্ব আদায়ে অক্ষম কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় কাউকে হজ্বের খরচ দিয়ে তার পক্ষ থেকে ফরয হজ্ব আদায়ের জন্য প্রেরণ করা বা মৃত্যুর সময় তার ফরয হজ্ব আদায়ের অসিয়ত করে যাওয়ার ফলে তার পক্ষ থেকে আদায়কৃত হজ্ব।

    আর নিজ খরচে কারো পক্ষ থেকে হজ্ব করলে বা করালে সেটিকে পারিভাষিক অর্থে বদলী হজ্ব বলা হয় না। এতে বদলী হজ্বের বিশেষ বিধানগুলো লক্ষণীয় নয়। এটি হল মুলত ঈসালে ছওয়াবের হজ্ব। এক্ষেত্রে হজ্ব আদায়ের সময়ই ঐ ব্যক্তির নিয়তে আদায় করা যায়। আবার আদায়ের পরও তাকে ছওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা যায়। উভয় ক্ষেত্রেই ঐ ব্যক্তি এর ছওয়াব পেয়ে যাবেন।

    মাসআলা : প্রেরক অনুমতি দিলে বদলীকারীর জন্য তামাত্তু বা কিরান হজ্ব করাও জায়েয। তদ্রূপ বিশেষভাবে ইফরাদ হজ্ব করার নির্দেশ না দিলে; সে ক্ষেত্রেও কিরান ও তামাত্তু যে কোনোটি করা জায়েয। হানাফী মুতাআখখিরীন ফকীহগণের অনেকে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, প্রেরকের অনুমতি থাকলে বদলীকারী কিরান ও তামাত্তু যে কোনোটি করতে পারবে, ইফরাদ হজ্ব করা জরুরি নয়। যেমন-আল্লামা ফখরুদ্দীন হাসান ইবনে মানসুর আলউযজান্দী রাহ. (মৃত্যু : ৫৯২ হি.), আল্লামা রহমতুল্লাহ সিন্ধী রাহ. (মৃত্যু : ৯৯৩ হি.), আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী রাহ. (মৃত্যু : ১০৮৮ হি.), আল্লামা কাযী হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল গনী হানাফী রাহ. (মৃত্যু : ১৩৬৬ হি.) প্রমুখ। এছাড়া উপমহাদেশের বড় বড় অনেক মুফতী ছাহেব এই ফতোয়া দিয়েছেন। যেমন-মুফতী কেফায়েতুল্লাহ দেহলভী রাহ., মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ., মুফতী যফর আহমদ উছমানী রাহ., মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানবী রাহ., শাইখুল ইসলাম মুফতী তকী উছমানী দা.বা. প্রমুখ।

    এছাড়াও রিয়াদস্থ গবেষণা ও ইফতাবোর্ড এবং ভারতের ইসলামী ফিকহ একাডেমীর সিদ্ধান্তও অনুরূপ। দেখুন : ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৭; লুবাবুল মানাসিক ৪৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১১; ইরশাদুস সারী ৬৪৭; কেফায়েতুল মুফতী ৪/৩৪৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৫০৮; ইমদাদুল আহকাম ২/৫২৩; ফাতাওয়া উছমানী ২/২২২; ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ্দাইমাহ ১১/৮২

    মাসআলা : বদলী হজ্ব এমন লোককে দিয়ে করানো উচিত, যিনি নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছেন। যে ব্যক্তি নিজের হজ্ব আদায় করেনি সে যদি এমন হয় যে, তার উপর হজ্ব ফরয নয় তাহলে তাকে দিয়েও বদলী করানো জায়েয আছে। তবে তা মাকরূহ তানযীহি। আর যদি তার উপর হজ্ব ফরয হয়ে থাকে, কিন্তু সে এখনও তা আদায় করেনি তাহলে তার জন্য বদলী হজ্ব করা মাকরূহ তাহরীমী তথা নাজায়েয। তবে কেউ এমন ব্যক্তির দ্বারা বদলী হজ্ব করালে প্রেরণকারীর হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় তাকে বদলী করাতে হবে না।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে হজ্বের ইহরাম করার সময়-

    لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ

    (শুবরুমার পক্ষ থেকে লাববাইক) এভাবে বলতে শুনে বললেন, ‘শুবরুমা কে?’ লোকটি বলল, ‘আমার ভাই (বর্ণনাকারী বলেন) অথবা বলল, আমার নিকটাত্মীয় এক লোক।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি নিজের হজ্ব করেছ?’সে বলল, ‘না।’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আগে তোমার নিজের হজ্ব কর তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে কর।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৫২

    হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে-

    كان لا يرى بأسا أن يحج الصرورة عن الرجل.

    যে ব্যক্তি নিজের হজ্ব করেনি যে অন্যের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাকে তিনি দোষের বিষয় মনে করতেন না।

    বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ, হাসান বসরী ও সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব রাহ.ও এমনই মনে করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/১৮৯) দেখুন : মাবসূত, সারাখসী ৪/১৫১; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৩; ফাতহুল কাদীর ৩/৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৩

    মাসআলা : কাউকে এমনিই নেক কাজের নিয়তে হজ্ব করাতে চাইলে বা হজ্ব আদায়ে আর্থিক সহায়তা করতে চাইলে এমন ব্যক্তিকে করানো উত্তম, যিনি এখনও হজ্ব করেননি।-মাবসূত, সারাখসী ৪/১৫২; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৮; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৯

    মাসআলা : কোনো কোনো কিতাবে আছে যার উপর হজ্ব ফরয হয়নি এমন ব্যক্তি বদলী হজ্বে গেলে কাবা শরীফ দেখার দ্বারা তার নিজের উপর হজ্ব ফরয হয়ে যায়। যদিও সে গরীব হোক না কেন। সুতরাং তার জন্য জরুরি, হজ্বের পর পরবর্তী বছর হজ্বের সময় পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করা এবং হজ্বের নির্দিষ্ট সময় নিজের ফরয হজ্ব আদায় করা। যদি দেশে চলে আসে তাহলে পুনরায় নিজের ফরয হজ্ব আদায়ের উদ্দেশে মক্কা মুকাররমা যাওয়া জরুরি।

    এ বক্তব্য ঠিক নয়। বিশুদ্ধ মতানুসারে এমন গরীব ব্যক্তি বদলী হজ্ব করতে গিয়ে বাইতুল্লাহ শরীফ দেখার দ্বারা তার উপর হজ্ব ফরয হয় না। কেননা, সে অন্যের পক্ষ থেকে হজ্বের ইহরাম বাঁধার কারণে তৎক্ষণাৎ নিজের জন্য হজ্ব করতে সক্ষম নয়। আর পরবর্তী বছর হজ্বের সময় আসা পর্যন্ত তার পক্ষে সেখানে অবস্থান করা সম্ভব নয়। আবার স্বদেশে চলে আসার পর পুনরায় হজ্বের জন্য যাওয়ারও তার আর্থিক সামর্থ্য নেই।

    এইজন্য মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম উক্ত বক্তব্যটি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এ ধরনের গরীব বদলীকারীর উপর বাইতুল্লাহ শরীফ দেখার দ্বারা হজ্ব ফরয না হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন।-রদ্দুল মুহতার ২/৬০৪; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৮; জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৫০৭; ফাতাওয়া উছমানী ২/২২২

    মাসআলা : অন্যের বদলী হজ্ব করার দ্বারা নিজের ফরয হজ্ব আদায় হয় না। সুতরাং বদলী আদায়কারীর উপর হজ্ব ফরয হলে তাকে পৃথকভাবে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে ইহরাম করার সময়-

    لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ

    (শুবরুমার পক্ষ থেকে লাববাইক) এভাবে বলতে শুনলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, শুবরুমা কে? সে বলল, আমার ভাই বা (বলেছে) আমার এক আত্মীয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি নিজের হজ্ব করেছ? সে বলল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আগে তোমার নিজের হজ্ব কর। তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্ব কর। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৫২)

    যদি অন্যের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করার দ্বারা নিজের ফরয হজ্বও আদায় হয়ে যেত তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে আগে নিজের হজ্ব করতে বলতেন না। আরো দেখুন : মাবসূত, সারাখসী ৪/১৪৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৮; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৫২

    মাসআলা : উমরাহর বদলী করাও জায়েয আছে।

    হযরত আবু রাযীন আলউকায়লী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবা অতিশয় বৃদ্ধ মানুষ। তিনি হজ্ব ও উমরাহ করতে সক্ষম নয়। (আমি কী করতে পারি?)’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার বাবার পক্ষ থেকে তুমি হজ্ব ও উমরাহ আদায় কর।’ (জামে তিরমিযী ১/১১২) দেখুন : গুনইয়াতুন নাসিক ৩২০

    মাসআলা : মান্নত হজ্বের বদলী করা জায়েয। অর্থাৎ কেউ হজ্ব বা উমরার মান্নত করেছে, কিন্তু স্বয়ং তা আদায় করতে সক্ষম নয় বা আদায়ের আগেই তার মৃত্যু এসে গেছে তাহলে সে কারো দ্বারা এর বদলী করিয়ে নিবে বা বদলী করানোর অসিয়ত করে যাবে।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘জুহাইনা গোত্রের এক নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ‘আমার মা হজ্বের মান্নত করেছিলেন। কিন্তু হজ্ব আদায়ের আগেই তিনি মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব কর। যদি তোমার মায়ের কোনো অনাদায়ী ঋণ থাকত তাহলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে না? আল্লাহর ঋণও আদায় কর। আল্লাহর ঋণ আরো বেশি আদায়যোগ্য।’ (সহীহ বুখারী ১/২৫০)

    মাসআলা : যে ব্যক্তি নিজের ফরয হজ্ব আদায় করে ফেলেছে তার জন্য নফল হজ্ব করার চেয়ে উত্তম হল, অন্য কারো ফরয হজ্বের বদলী করা।

    হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মৃতের পক্ষ থেকে বদলী  হজ্ব করলে সেও মৃতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।’ (মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৬১৪; আলমুজামুল আওসাতের বরাতে)

    হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করবে তার জন্যও ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াবের আশা করা যায়।’

    হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন-

    إن الله لواسع لهما جميعا

    (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৭১১) দেখুন : আলবাহরুল আমীক ৪/২২৫৭; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৭

    ১৭ দেশের ডিমে বিষাক্ত পদার্থের সন্ধান: ইউরোপেরই ১৫ দেশ
    ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ইউরোপের ১৫টি দেশ এবং হংকং ও সুইজারল্যান্ডের ডিমে বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গেছে। ডিমে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ফিপ্রোনিল থাকার বিষয়টি চলতি মাসেই জানান বেলজিয়ামের কর্মকর্তারা। গত জুনেই তারা বিষয়টি জানতে পারলেও গোপন রাখেন। কমিশন জানিয়েছে, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে। তবে একে অপরের ওপর দোষ না চাপানোর আহবান জানিয়েছেন কমিশনের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান। খবর বিবিসি
    বেলজিয়ামের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছিলেন, নেদারল্যান্ডসের ফার্ম থেকে পাঠানো ডিমে বিষ থাকতে পারে, যা কীটনাশক জাতীয় বিষ হতে পারে। এমনটি তারা জুন মাসেই জানতেন। কিন্তু বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। যদিও জালিয়াতির আশংকা মাথায় রেখে তদন্তের কাজ শুরু করেছিল কর্তৃপক্ষ। দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র ক্যাটরেইন স্ট্রাগিয়ার জানিয়েছিলেন, ডিমে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ফিপ্রোনিল থাকার বিষয়টি গত জুন থেকেই জানা যায়। তখন এ বিষয়টি প্রকাশ না করে দ্রুত তদন্ত শুরু করা হয়। ফিপ্রোনিল নামের ওই বিষাক্ত রাসায়নিক মানুষের শরীরে ঢুকলে কিডনি, লিভার ও থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের ক্ষতি হতে পারে। ফিপ্রোনিল পোল্ট্রি জাতীয় প্রাণীর চামড়ার উকুন এবং অন্যান্য কীট মারার জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ কতদিন ধরে ডিমের তথ্য লুকিয়ে রেখেছিল।
    ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র ড্যানিয়েল রোসারিও জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং ফ্রান্সে অনেকগুলো ফার্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ইইউভুক্ত যুক্তরাজ্য, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া এবং ডেনমার্ক ছাড়াও ইইউভুক্ত নয় এমন দেশ সুইজারল্যান্ড এবং হংকংয়ের ডিমে বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গেছে। বেলজিয়াম, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের সুপারমার্কেট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ফিপ্রোনিলযুক্ত কোটি কোটি বিষাক্ত ডিম।
    জার্মানিতে ধ্বংস করা হয়েছে এক কোটি ডিম। ইউরোপে ডিমের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ নেদারল্যান্ডস। প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কোটির মতো ডিম উত্পাদন করে দেশটি। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই রপ্তানি হয় ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

    স্বর্ণ ব্যবহারে ক্যান্সার চিকিৎসা

    স্বর্ণের ক্ষুদ্র কণা ব্যবহার করে ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিপুল অগ্রগতি আনা সম্ভব বলে দাবি করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা। স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, স্বর্ণ ক্যান্সারের ওষুধের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে একটি জেব্রাফিশের ওপর এ সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সুনিশ্চিত ধারণা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এখনও মানবদেহে এর প্রভাব বিচার করে দেখা হয়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগীর দেহে স্বর্ণ ব্যবহারের আগে আরও অনেক কাজ বাকী।
    স্বর্ণ একটি নিরাপদ রাসায়নিক উপাদান। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বর্ণের টুকরাগুলো মূলত ‘গোল্ড ন্যানোপার্টিকেল’ নামে পরিচিত। এডিনবার্গের বিজ্ঞানীরা এগুলোকে একটি কেমিক্যাল ডিভাইসের মধ্যে স্থাপন করেন। পরে সেই ডিভাইসটি একটি জেব্রাফিশের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জেব্রাফিশের মস্তিষ্কের মধ্যে স্বর্ণের টুকরা বসিয়ে তারা দেখেছেন সেটি ওষুধের কার্যকারিতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য, এখন পর্যন্ত কোনও মানবদেহে এটি পরীক্ষা করে দেখেননি বিজ্ঞানীরা। তবে তারা আশা করছেন একদিন কেমোথেরাপির পাশ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে স্বর্ণের কণা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
    টিউমার বা ক্যান্সার ধরা পড়ার পর এর চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু স্বর্ণের ছোট কণা ব্যবহার করা হলে তা হবে না বলে আশা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, এ পদ্ধতিতে সুস্থ টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া যাবে।
    ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ড. আসিয়ের আনচিতি-ব্রোচেতা বলছেন, ‘আমরা স্বর্ণের নতুন বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছি যা আগে অজানা ছিল। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে এই ধাতুটির মাধ্যমে মানুষের টিউমারের ভেতরে অত্যন্ত নিরাপদে ওষুধ প্রয়োগ করা যায়।’
    ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট ড. আসিয়েরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, যদিও রোগীদের ওপর এটা প্রয়োগ করার আগে এটা নিয়ে আরো অনেক কাজ করার আছে। ড. আসিয়ের আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, টিউমারের ভেতর সরাসরি কেমোথেরাপিকে সক্রিয় করার সক্ষমতাসম্পন্ন একই ধরনের এমন একটি ডিভাইস একদিন মানুষের মধ্যেও স্থাপন করা যাবে। পাশাপাশি কেমোথেরাপি দেওয়ার কারণে মানবদেহে যে খারাপ প্রভাব পড়ে তেও কমিয়ে দেবে এই ধাতুটি।’
    যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট (সিআরইউকে) এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ফিজিক্যাল সাইন্স রিসার্চ কাউন্সিলের অর্থায়নে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে। এটির সমন্বয়ের করেছে স্পেনের ইউনিভার্সটি অব জ্যারাগোজার ন্যানোসাইন্স অব অ্যারাগোন ইনস্টিটিউট।

    হজ্ব বিষয়ক ভুল-ভ্রান্তি

    হজ্বই একমাত্র ইবাদত, যার নিয়ত করার সময়ই আল্লাহ তাআলার নিকট সহজতা ও কবুলের দুআ করা হয়। অন্যান্য ইবাদত থেকে হজ্বের আমলটি যে কঠিন তা এ থেকেই স্পষ্ট। হজ্বের সঠিক মাসআলার জ্ঞান যেমন জরুরি, তেমনি তা আদায়ের কৌশল এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে করণীয় বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখাও জরুরি। হজ্বে যে সকল ভুল হতে দেখা যায় তা সাধারণত উদাসীনতার কারণেই হয়ে থাকে। তাই নিম্নে সচরাচর ঘটে থাকে এমন কিছু ভুল উল্লেখ করা হচ্ছে। যেন হাজ্বীগণ এ সকল ভুল-ভ্রান্তি- থেকে বেঁচে সুষ্ঠুরূপে হজ্ব আদায়ে সক্ষম হন। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।

    ইহরামের দুই রাকাত নামাযের জন্য ইহরাম বিলম্বিত করা

    ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামায পড়ার নিয়ম আছে। তাই অনেককে দেখা যায়, এই দুই রাকাত নামাযের সুযোগ না পাওয়ার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি এ নামায পড়তে না পারার কারণে কেউ কেউ ইহরাম ছাড়াই মীকাতে র ভেতরে পর্যন- চলে যায় অথচ ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। তারা যেহেতু ইহরামের আগে দুই রাকাত নামায আদায়কে জরুরি মনে করে তাই তারা এমনটি করে থাকে। অথচ ইহরামের আগে নামায পড়া সকল মাযহাবেই মুস্তাহাব; জরুরি কিছু নয়। পক্ষান-রে ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা নাজায়েয। সুতরাং ইহরামের আগে নামাযের সুযোগ পেলে তো তা আদায় করা চাই, কিন্তু সুযোগ না পেলে সে কারণে ইহরাম বাঁধাকে বিলম্ব করবে না।-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১২৯০০; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১-৪৮২

    ইহরাম বাঁধার নিয়ম সংক্রান্ত- ভ্রান্তি-সমূহ

    অনেকে মনে করে থাকে যে, ইহরামের কাপড় পরে নামায পড়ার পর নিয়ত করলেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। এ ধারণা ভুল। এগুলো দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না। নিয়ত আরবীতে করা হোক বা বাংলাতে, সশব্দে করা হোক বা মনে মনে এর দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না; বরং নিয়তের পর তালবিয়া পড়লে ইহরাম পূর্ণ হয়। অতএব বোঝা গেল, ইহরাম সম্পন্ন হয় দুই বস’র সমন্বয়ে : ১. হজ্ব বা উমরার নিয়ত করা ও ২. তালবিয়া পড়া।-জামে তিরমিযী ১/১০২; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৫; মানাকি মোল্লা আলী কারী পৃ. ৮৯

    মক্কাগামীদের জন্য জিদ্দায় ইহরাম বাঁধা

    কেউ কেউ আগে থেকেই ইহরাম বাঁধা ঝামেলা মনে করে এবং ভাবে যে, ইহরাম বেঁধে নিলেই তো ইহরামের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়ে যাবে। বিমান যেহেতু জিদ্দায় অবতরণ করবে তাই জিদ্দায় ইহরাম বাঁধার ইচ্ছায় ইহরামকে বিলম্বিত করে। অথচ মীকাতের বাইরের হাজ্বীদের জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নেই। উপমহাদেশ থেকে গমনকারী হাজ্বীদের জন্য মীকাত হল কারনুল-মানাযিল ও যাতু ইরক যা অতিক্রম করেই জেদ্দায় যেতে হয়। যদি কেউ বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করে তবে তার জন্য পুনরায় মীকাতে ফিরে এসে ইহরাম বেঁধে যাওয়া জরুরি। যদি তা না করে তবে দম ওয়াজিব হবে। যেহেতু বিমানে থাকা অবস্থায় মীকাতের জায়গা নির্ধারণ করা কঠিন বা ঐ সময় ঘুমিয়ে পড়া, অন্যমনষ্ক থাকা ইত্যাদি হতে পারে। তাই বিমানে চড়ার আগে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরাম বেঁধে নেওয়ার কথা বলা হয়।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৭০২; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২১; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৭

    সেলাইবিহীন কাপড় বা চপ্পলের জন্য ইহরাম বিলম্বে বাঁধা

    কেউ কেউ ইহরামের কাপড় না পরে বিমানে উঠে যায়। অথবা মদীনা থেকে গাড়িতে উঠে পড়ে। এরপর যখন গাড়ি বা বিমানের মধ্যে পরিধানের কাপড় বদলিয়ে ইহরামের কাপড় পরা কষ্টকর হয় কিংবা কাপড় লাগেজে থেকে যায়। তখন তারা সেলাইবিহীন কাপড় পরতে না পারার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করে ফেলে। ফলে দম ওয়াজিব হয়ে যায়। অথচ মীকাত অতিক্রমের আগে সেলাইযুক্ত কাপড়ের অবস্থায়ই যদি ইহরাম বেঁধে নিত এবং গাড়ি বা বিমান থেকে অবতরণের পরেই ইহরামের কাপড় পরে নিত তবে তার অন্যায়টা দম ওয়াজিব হওয়ার মতো বড় হত না। ইহরাম অবস্থায় এ কয়েক ঘণ্টা (১২ ঘণ্টার কম) সেলাই করা কাপড় পরে থাকার কারণে একটি পূর্ণ সদকা ফিতর আদায় করে দিলেই চলত।-জামে তিরমিযী ১/১৭১; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৩০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৭

    ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যাবে না

    কেউ কেউ মনে করে, যে কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হয়েছে সে কাপড় হালাল (ইহরাম শেষ) হওয়ার আগ পর্যন- বদলানো যাবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। ওই কাপড় নাপাক না হলেও বদলানো যাবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫০১০, ১৫০১১; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৮; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৭১

    তাওয়াফের সময় ছাড়াও ইযতিবা করা

    অনেককে দেখা যায়, ইহরামের প্রথম থেকেই ইযতিবা (বাম কাঁধের উপর চাদর রেখে ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে পরিধান করা) করে থাকে এবং হালাল হওয়া পর্যন- এ অবস্থায় থাকাকে শরয়ী হুকুম মনে করে। এটি ভুল। এভাবে নামায পড়লে নামায মাকরূহ হবে। আবার কেউ কেউ তাওয়াফের সময় ইযতিবা করে এবং এ অবস্থায় সায়ীও করে থাকে এবং তাওয়াফের মতো সাঈতেও তা করা শরয়ী বিধান মনে করে। অথচ সাঈতে ইযতিবা’র বিধান নেই। এমনকি সকল তাওয়াফেও এটি সুন্নত নয়; বরং যে তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয় শুধু সেই তাওয়াফেই ইযতিবা করতে হয়। সুতরাং নফল তাওয়াফে ইযতিবা নেই। কেননা নফল তাওয়াফের পর সাঈ নেই।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ১২৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/২১৭

    ‘আজব’ সুপার কম্পিউটার বানাচ্ছে জাপান!

    যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী ‘কোরি’ নামের সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা ১৪ পেটাফ্লপস। অর্থাত্  এটি প্রতি সেকেন্ডে ১৪ মিলিয়ন বিলিয়ন (১ মিলিয়ন সমান ১০ লক্ষ আর ১ বিলিয়ন সমান ১০০ কোটি) হিসাব করতে পারে। একটি কম্পিউটারের এই ক্ষমতার কথা শুনে অনেকের চোখ কপালে উঠেছিল। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী ‘সেকোইয়া’ এবং ‘টাইটান’ নামের আরো দুটি সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা যথাক্রমে ১৭ এবং ১৮ পেটাফ্লপস। অনেকের ধারণা ছিল, সুপার কম্পিউটারের এই ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যাওয়া অন্য কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব হবে না।

    কিন্তু চীন সেই ‘অসম্ভবকে’ সম্ভব করে ছেড়েছিল। দেশটির বিজ্ঞানীরা তিয়ানহি-২ নামের একটি সুপার কম্পিউটার তৈরী করে যার ক্ষমতা ৩৪ পেটাফ্লপস। তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল অনেকে। কিন্তু আরো বিস্ময় নিয়ে হাজির করেছিল চীনে তৈরী সানওয়ে তাইহুলাইট নামের আরেকটি সুপার কম্পিউটার যার ক্ষমতা ৯৩ পেটাফ্লপস। তখনই গবেষকরা বলেছিলেন এটাই হতে পারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন সুপার কম্পিউটার।

    কিন্তু চীনের এই সুপার কম্পিউটারটির ‘সর্বশ্রেষ্ট’ তকমা কেড়ে নিতে যাচ্ছে জাপান। দেশটির বিজ্ঞানীরা এআই ব্রিজিং ক্লাউড নামের একটি সুপারকম্পিউটার তৈরীর কাজে হাত দিয়েছে যার ক্ষমতা হবে ১৩০ পেটাফ্লপস। অর্থাত্ এটি প্রতি সেকেন্ডে ১৩০ মিলিয়ন বিলিয়ন হিসাব করতে সক্ষম হবে! সহজ কথায় আমেরিকার সুপারকম্পিউটার ‘কোরি’র মতো ৯টি সুপার কম্পিউটার লাগবে       জাপানের এই সুপার কম্পিউটারের সমপরিমান কাজ করতে গেলে। জাপান আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যেই এটি তৈরীর কাজ শেষ করতে চায়।

    জাপানের অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ডিরেক্টর জেনারেল ছে কি গুচি বলেন, সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। তাছাড়া মিলিয়ন বিলিয়নের হিসাব সাধারণ মানুষের মাথাতেও ঢুকবে না। তাই একটি সহজ উদাহরণ দিলে তাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। একটি সুপার কম্পিউটার দিয়ে এক দিনে যে কাজ করানো সম্ভব সেই পরিমাণ কাজ আমাদের বাড়িতে যে ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটার আছে তা দিয়ে করাতে গেলে টানা ৩ হাজার বছর লাগবে। জাপানের এই সুপার কম্পিউটার রাখার জন্য ১ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ঘর লাগবে। ৪০টি প্রাইভেট কার পার্কিং করতে যে পরিমাণ জায়গা লাগে প্রায় তার সমপরিমাণ। সুপার কম্পিউটার সাধারণত বৈজ্ঞানিক খুব জটিল জটিল গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পূর্বাভাস, ওষুধের গবেষণা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন ইত্যাদি কাজেও ব্যবহার করা হয়।

    হিরোশিমা দিবসে পরমাণুমুক্ত বিশ্ব গড়ার আহ্বান

    বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক ঘটনার আজ ৭২তম বার্ষিকী। ১৯৪৫ সালের এই দিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা শহরে আণবিক বোমা হামলা চালায়।
    ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক হামলায় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ নিহত হয় যাদের সিংহভাগ ছিলেন বেসামরিক মানুষ। হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে শহরটির মেয়র বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও পরমাণু বোমা মুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে ৫০ হাজারের বেশি লোক অংশ নেয়। এদের মধ্যে ওই হামলায় যারা বেঁচে গিয়েছিলেন তারাও রয়েছেন। এছাড়াও শান্তি কর্মী, নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মানুষ এতে যোগ দেয়।
    নগরীর মেয়র কাজুমি মাৎসুই সেখানে উপস্থিত মানুষের সামনে শান্তির ঘোষণা দেন। তিনি পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে ‘সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাতে’ জাপান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মেয়র ১৯৪৫ সালে পরমাণু বোমার আঘাত নিয়ে যারা বেঁচে আছেন এবং যারা বোমাটির তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে আছেন তাদের জন্যে আরো সহায়তা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘তিনটি অ-পরমাণু নীতি (উৎপাদন নয়, প্রক্রিয়াকরণ নয় অথবা জাপানের ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্রের অনুমোদন নয়) যথাযথভাবে মেনে চলা এবং পরমাণু ও অ-পরমাণু উভয় দেশের প্রতি অব্যাহত আহ্বানের মাধ্যমে জাপান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
    এদিকে অ্যাবে যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, পার্কের চারপাশ থেকে তখন তার বিরুদ্ধে একদল বিক্ষোভকারী স্লোগান দিচ্ছিল। অ্যাবের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা জাপানের শান্তিবাদী সংবিধানে পরিবর্তন আনা। বিক্ষোভকারীদের মতে, সংবিধানে এই পরিবর্তন আনা হলে জাপান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

    হার্ভার্ডের ৩৮০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সংখ্যালঘু হতে যাচ্ছে শ্বেতাঙ্গরা

    বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সংখ্যালঘু হতে চলেছে শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীরা। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা এক পরিসংখ্যান বলছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরের শিক্ষাবর্ষে যারা ভর্তি হতে চলেছেন, তাদের অর্ধেকেরও বেশী হবেন অশ্বেতাঙ্গ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৫০.৮ শতাংশ নতুন ছাত্র বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আসছে। গত বছর এই হার ছিল ৪৭.৩ শতাংশ।

    পরিসংখ্যানে আরো দেখা যাচ্ছে, নতুন শিক্ষার্থীদের ২২.২ শতাংশ এশিয়ান-আমেরিকান। এরপর রয়েছে আফ্রিকান-আমেরিকান ১৪.৬ শতাংশ, হিস্পানিক বা ল্যাটিনো ১১.৬ শতাংশ এবং নেটিভ আমেরিকান বা বিভিন্ন প্যাসিফিক দ্বীপ থেকে আসা ২.৫ শতাংশ।এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ ও নিউইয়র্ক টাইমসের মধ্যে চলমান এক বিবাদে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে জড়ানোর কয়েকদিন পর।
    পহেলা আগস্টে ঐ পত্রিকায় বলা হয়, ভর্তির নীতিমালা শ্বেতাঙ্গ আবেদনকারীদের বিপক্ষে থাকার কারণে বিচার বিভাগ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বিচার বিভাগ থেকে বলা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতি-বর্ণের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করে এমন কোন অভিযোগ খতিয়ে দেখার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই।
    বিচার বিভাগ জানায়, যে নথির ভিত্তিতে নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্টটি করেছে, সেটি আসলে ২০১৫ সালে এশিয়ান-আমেরিকানদের পেশ করা একটি অভিযোগ, যাতে দাবী করা হয়েছিল হার্ভার্ড এবং অন্যান্য আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয় কোটা পদ্ধতি ব্যবহার করে ভালো ফলাফল করা এশিয়ানদের ভর্তি থেকে বঞ্চিত করছে। হার্ভার্ডের মুখপাত্র র‍্যাচেল ডেন বলেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’।
    তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে নেতা হতে হলে শিক্ষার্থীদের এমন সক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে করে তারা বিভিন্ন পটভূমি, জীবন-অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন মানুষের সঙ্গে কাজ করেতে পারে। হার্ভার্ডের ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক আবেদনকারীকে একজন সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট যে আইনি মান ঠিক করে দিয়েছে, আমরা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সবকিছু বিবেচনা করি।’ উল্লেখ্য, ম্যাসাচুসেটস ভিত্তিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যতজন পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তত জন হননি। বিবিসি।

    সেরা তিনে চোখ মুশফিকের ‘অস্ট্রেলিয়াকে হারানো অসম্ভব কিছু নয়’

    ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই নতুনভাবে আবির্ভূত বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে ফরম্যাটে হয়ে উঠে ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি। বর্তমানে যেকোন দলই বাংলাদেশের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নামে। ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগারদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফলাফল স্বরূপ অর্জন করে ক্যরিয়ারের সেরা ওয়ানডে র‌্যাংকিং। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে ছয়ে উঠে আসে বাংলাদেশ দল। তবে সেই স্থান বেশিদিন দখলে থাকে নি। ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্ট ক্রিকেটেও করছে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। অভিজ্ঞ ও তরুণ ক্রিকেটারদের মিশ্রণে দারুন কম্বিনিশন গড়েছে বাংলাদেশ।
    মুশফিকের মতে ধারাবাহিক পারফর্ম করতে পারলে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সেরা তিনে উঠা অসম্ভব কিছু না বাংলাদেশের জন্য। টেস্ট অধিনায়কের মতে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের পাশাপাশি জ্বলে উঠতে হবে তরুণ ক্রিকেটারদেরও। ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্ট ক্রিকেটেও র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশকে ছয়ে দেখতে চান মুশফিক, ‘আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে, তাতে ওয়ানডে ক্রিকেটে সেরা তিনে যাওয়া অসম্ভব কিছু না এবং টেস্ট ক্রিকেটেও সেরা যাওয়া অসম্ভব কিছু না আমাদের জন্য। দলের তরুণ ক্রিকেটারদেরও অনেক ভূমিকা পালন করতে হবে। দলকে যদি আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে ফলাফল অবশ্যই ভালো হবে।’
    অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। অস্ট্রেলিয়া আসুক কিংবা না আসুক নিজেদেরকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন ক্রিকেটাররা। শেষবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দুই দলের মুখোমুখি হয়েছিলো ২০০৬ সালে। দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারো অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। তবে আগের বাংলাদেশ ও বর্তমান বাংলাদেশ দলের মধ্যে অনেক ব্যবধান। মুশফিকের আশা ক্রিকেটারদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসটা রয়েছে সেটি মাঠে ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারলে ভালো কিছু আশা করা সম্ভব, ‘এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। শেষবার ওরা যখন আমাদের এখানে এসেছিল তখন পুরোপুরি অন্যরকম দল ছিল। অন্তত তারা যদি আসে তাহলে আমাদের টেস্টে উন্নতির গ্রাফটা তারা দেখতে পারবে। নিজেদের মধ্যে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস রয়েছে। যদি ওরা আসে তাহলে নিজেদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসটা রয়েছে সেটি কাজে লাগাতে অবশ্যই ভালো করা সম্ভব।’
    সামনেই আছে নতুন এক চ্যালেঞ্জ। আর সেটি পরীক্ষা উতরাতে হলে বাংলাদেশকে হারাতে হবে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি ও সবচেয়ে বেশিবারের বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। শক্তিমত্তার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়েও অস্ট্রেলিয়া আছে এগিয়ে। তবে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের বিশ্বাস, টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো অসম্ভব কিছু নয়, ‘আমরা ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারব কিনা সেটা নিয়ে ছিল সংশয়। কারণ, এর আগে ৫দিন যে ভালমতো লড়াই করা সেটাও কিন্তু পারিনি। কিন্তু গত দুই বছরে আমাদের দলে যোগ্য কিছু খেলোয়াড় এসেছে যারা এখন স্বপ্ন দেখায় যে কোন দলের বিরুদ্ধে টেস্ট জেতার। তো আমি মনে করি এই কন্ডিশনে যদি আমরা ইংল্যান্ডের মতোই নিজেদের মেলে ধরতে পারি এবং ঘরের সুবিধাটা নিতে পারি তাহলে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো অসম্ভব কিছু নয়। সেটার জন্যই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর মূল ব্যাপার হচ্ছে আমরা যদি আমাদের সেরাটা খেলতে পারি যে কোন দলকেই হারাতে পারি। বাংলাদেশ দলের সেই সামর্থ্যটা আছে।’
    অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশে আসা নিয়ে এতদিন সংশয় থাকলেও আপাতত দূর হয়েছে সেটি। মুশফিকও প্রত্যাশা করছেন, স্মিথ-ওয়ার্নাররা বাংলাদেশ সফরে আসবেন। সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া দল যদি আসে, আশা করছি অবশ্যই আসবে। সেক্ষেত্রে আমাদের এই প্রস্তুতিটা খুব কাজে লাগবে। এখনও প্রায় এক মাসের মতো আছে। আমার মনে হয় এটা খুব ভাল সুযোগ নিজেদের ভালভাবে প্রস্তুত করার। সবমিলিয়ে ২৮ জন আছি, সবাই বেশ ফিট এবং সবাই বেশ ভালো অবস্থায় আছি।’

    জাপানে নতুন প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ঘোষণা

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বৃহস্পতিবার দেশটির মন্ত্রীসভা পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে নতুন প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছেন। কিছু মন্ত্রীর দুর্নীতির কারণে সরকারের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নামে, সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও জনসমর্থন পাবার আশায় আবে এ পদক্ষেপ নেন।

    জানা গেছে, সাবেক প্রতিরক্ষা প্রধান ইতসুনোরি ওনোদেরাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। গত সপ্তাহে আবের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র তোমোমি ইনাদা এই পদ থেকে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন।
    সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে তারো কোনোকে দেশটির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান আবে ২০১২ সাল থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এএফপি।

     

    ‘পুতিন বিশ্বের শীর্ষ ধনী’

    গত সপ্তাহে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় কিছু সময়ের জন্য মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে ছাড়িয়ে যান আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
    বিল গেটস এবং জেফ বেজোসের প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ কম বেশি ৯০ বিলিয়ন ডলার। তবে মার্কিন প্রতিষ্ঠান হার্মিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী বিল ব্রাউডার জানিয়েছেন, বিল গেটস এবং জেফ বেজোস-এই দুইজনের সমন্বিত সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদ আছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের।
    বিল ব্রাউডার জানিয়েছেন, তার ধারণা পুতিনের সম্পদের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির কাছে ব্রাউডার এই দাবি করেন। পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পদ বিবরণী থেকে জানা যায়, তার বার্ষিক আয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলার। মস্কোতে অত্যাধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ব্রাউডার রাশিয়ার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত ব্যক্তি।
    তিনি ১৯৯০ এর দশকে রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সাবেক প্রতিষ্ঠান গ্যজপ্রেম এরও অংশিদার ছিলেন। পুতিন মূলত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করেই এত বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দা ব্রাউডারের। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও ফরচুন।

    খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হারুণার রশিদ খান মুন্নুর ইন্তেকাল

    বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বিশিষ্ট শিল্পপতি হারুণার রশিদ খান মুন্নু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার ভোরে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গিলন্ড এলাকার নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে হারুণার রশিদ খান মুন্নুর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

    মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আব্দুল আউয়াল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

    তিনি জানান, মুন্নু দীর্ঘদিন ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতা ও নিউরো সমস্যায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন তিনি। শিল্পপতি হারুণার রশিদ খান মুন্নু মৃত্যুকালে স্ত্রী হুরুন্নাহার মুন্নু, দুই মেয়ে আফরোজা খান রিতা, ফিরোজা মাহমুদসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

    আব্দুল আউয়াল বলেন, হারুণার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতা দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি ফেরার পর দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
    সাবেক এই মন্ত্রী মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া বন্ধ পত্রিকা ‘আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের শ্বশুর তিনি।

    উল্লেখ্য, হারুণার রশিদ খান মুন্নু ১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জ-২ (শিবালয়-হরিরামপুর) আসনে বিএনপি থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালেও তিনি ওই আসন থেকে এমপি হন। এরপর ২০০১ সালে একই আসনের পাশাপাশি মানিকগঞ্জ-৩ (সদর-সাটুরিয়া) আসনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুন্নু। এরপর তাকে দফতর-বিহীন মন্ত্রী করা হয়।

    হজ্জ্বঃ হাদীস ও আছারের আলোকে

    হজ্ব তিন প্রকার : তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ।

    মক্কার বাইরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা উপরোক্ত যেকোনো প্রকার হজ্ব করতে পারেন। এতে তাদের ফরয হজ্ব আদায় হবে। তবে উপরোক্ত তিন প্রকার হজ্বের মধ্যে সর্বোত্তম হল হজ্বে কিরান, এরপর হজ্বে তামাত্তু, এরপর হজ্বে ইফরাদ। নিচে প্রতিটির পরিচয় ও জরুরি মাসাইল উল্লেখ করা হল।

    এক. কিরান

    মীকাত অতিক্রমের পূর্বে উমরা ও হজ্বের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে উমরাহ ও হজ্ব উভয়টি আদায় করা। প্রথমে মক্কা মুকাররামা পৌঁছে উমরা করা অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজ্বের সময়ে হজ্ব করা এবং কুরবানী দেওয়া।

    দুই. তামাত্তু হজ্ব

    হজ্বের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররামায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পন্ন করার পর চুল কেটে বা চেঁছে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এই সফরেই হজ্বের ইহরাম বেঁধে হজ্বের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কুরবানী দেওয়া।

    তিন. ইফরাদ

    মীকাত থেকে শুধু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররামা পৌঁছে উমরা না করা বরং (সুন্নত তাওয়াফ) তাওয়াফে কুদূম করে ইহরাম অবস্থায় হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে হজ্বের আমলগুলো সম্পন্ন করা। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, বিদায় হজ্বে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ (তামাত্তুর নিয়তে প্রথমে) উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ (কিরানের নিয়তে) হজ্ব ও উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন এবং কেউ (ইফরাদের নিয়তে) শুধু হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বে ইফরাদের জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন। যারা শুধু হজ্ব বা একত্রে হজ্ব-উমরার (কিরানের) ইহরাম গ্রহণ করেছিলেন তারা ১০ যিলহজ্বের পূর্ব পর্যন্ত- ইহরাম থেকে মুক্ত হননি।-সহীহ বুখারী ১/২১২

    ইহরামের নিয়ম

    ইহরামের মূল বিষয় হচ্ছে হজ্ব বা উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ। এর দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাথায় সিঁথি করা অবস্থায় ইহরামের তালবিয়া পাঠ করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, এই বাক্যগুলোর অতিরিক্ত কিছু বলেননি।-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬তবে ইহরাম গ্রহণের সুন্নত তরীকা হল মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করবে। উত্তমরূপে গোসল করবে, গোসল সম্ভব না হলে ওযু করবে। পুরুষগণ দু’টি নতুন বা ধৌত সাদা চাদর নিবে। একটি লুঙ্গির মতো করে পরবে। অপরটি চাদর হিসাবে ব্যবহার করবে। পায়ের পাতার উপরের অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যাণ্ডেল পরবে। মহিলাগণ স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা পরার অবকাশ রয়েছে। ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর বা ঘ্রাণ ইহরাম গ্রহণের পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যার ঘ্রাণ ইহরামের পরও বাকি থাকে। মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামায পড়বে। অতঃপর যে হজ্ব আদায়ের ইচ্ছা সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে।

    নিচে ইহরামের প্রতিটি বিষয় দলীলসহ আলোচনা করা হল১. মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা। যে ব্যক্তি হজ্বে যেতে চায় তার শরীরের ক্ষৌর কার্য সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, এর অনুমতি আছে, এতে কোনো অসুবিধা নেই।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৯৯৮

    ২. ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা। হযরত যায়েদ বিন ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহরামের জন্য পরিহিত পোশাক খুলতে এবং গোসল করতে দেখেছেন।-জামে তিরমিযী ১/১০২ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে তখন তার জন্য গোসল করা সুন্নত।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৮৪৭ গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নেওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি উমরার জন্য অযু করলেন, গোসল করলেন না।- মাসআলা : ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব।-গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৯ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে পৌঁছলে গোসল করবে এবং ইহরাম গ্রহণ করবে। অতঃপর হজ্বের যাবতীয় কাজ করতে থাকবে। শুধু বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত।-সুনানে আবু দাউদ ১/২৪৩

    পদত্যাগ করলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

    জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগেই পদত্যাগ করলেন দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোমোমি ইনাডা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা- বিবিসির খবরে এর নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।
    বিবিসি জানাচ্ছে, দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বেশ ঘনিষ্ঠ এই নারী বিতর্কিত শান্তিরক্ষা স্থাপনার তথ্য ফাঁসের অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন। যদিও জাতীয়তাবাদী এই নারী নেত্রীকে শিনজো আবের কর্মকাণ্ডকে ছড়িয়ে দেয়ার মূল কাণ্ডারি বলে অভিহিত করা হতো।
    জানা গেছে, ৫৮ বছর বয়সী ইনাডার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী আবের নজরে আসায় এবং দেশটির অনেকেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণেই তিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তাকে ভবিষ্যৎ জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তার আগে, মাত্র একজন নারী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিবিসি।

    বাংলাদেশের বাইরে আরেক ‘বাংলাদেশ’

    বাংলাদেশের বাইরে আরেকটি ‘বাংলাদেশ’ আছে। আর সেই বাংলাদেশের লোকজনও ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচিত। অবিশ্বাস্য শোনালেও ঘটনাটি সত্যি। দ্বিতীয় এই বাংলাদেশের অবস্থান আর্মেনিয়াতে। দেশটির রাজধানী ইয়েরেভানের একটি শহরতলী এটি। জায়গাটির নাম কেন বাংলাদেশ হলো তা নিয়ে নানারকম মত আছে। ইয়েরেভানের মধ্যে অন্যতম জনবহুল এবং জনপ্রিয় এলাকা এই বাংলাদেশ। এরা ‘বাংলাদেশি’ নামে পরিচিত হলেও আসলে এরা আর্মেনীয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানকার মানুষ জানে যে বাংলাদেশ নামে একটি দেশ আছে এবং তারাও ‘বাংলাদেশি’। তবুও নিজেদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচয় দিতে তারা গর্ববোধ করে। এদের নিজস্ব আইন, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য আছে। এখানে আছে বড় বড় দোকানপাট, কারখানা, অফিস এবং পার্ক। এখানকার মানুষ খুব অতিথিপরায়ন, দয়ালু, কর্মঠ এবং সত্।

    এই ছোট্ট বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এদের ৯৯ শতাংশই আর্মেনীয়।  এখানে যারা বাস করে তারা এই এলাকা ছাড়তে চায় না। কারণ এলাকাটি বসবাসের জন্য অনেক সুন্দর। অফিসিয়াল নাম ‘মালাতিয়া সেবাস্তিয়া’ হলেও স্থানীয়দের কাছে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবেই এটি পরিচিত। বাসযাত্রী, দোকানদার, পুলিশসহ যাকেই বলুন না কেন সবাই চেনেন বাংলাদেশ নামেই। কোন বাংলাদেশি সেখানে গিয়ে ‘উই আর ফ্রম বাংলাদেশ’ বললে প্রথমে সবাই আর্মেনিয়ার বাংলাদেশের কথাই মনে করবেন!

    যাই হোক, গুগলে প্রাপ্ত একটি আর্টিকেল থেকে জানা গেলো এই এলাকার নাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ইয়েরেভানের অন্যান্য এলাকা থেকে তুলনামূলক নিচু স্থানে অবস্থিত, তুলনামূলক অনুন্নত, বাংলাদেশের মতো কিছুটা সবুজ অরণ্য ইত্যাদি মিলিয়ে এটির নাম বাংলাদেশ। একটি লেখায় বলা হয়েছে, আর্মেনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান থেকেও এমন নামকরণ করা হতে পারে।

    ৫৭ ধারা বিতর্ক

    তথ্যপ্রযুক্তি আইন মামলায় ১৬ সাংবাদিক আসামি

    ৫৭ ধারার অপরাধ স্পষ্ট করা হবে -আইনমন্ত্রী আনিসুল হক : এ আইন ব্যাপকহারে অপব্যবহার হচ্ছে -ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ : বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ -এড. খন্দকার মাহবুব হোসেন : ওই ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক -মনজুরুল আহসান বুলবুল : মত প্রকাশের স্বাধীনতা হনন -ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

    মালেক মল্লিক : ‘আইনের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য আইন’ প্রশ্নটি সর্বত্রই উঠেছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০১৩-এর ৫৭ ধারার জন্য মিডিয়া; নাকি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য বিতর্কিত এই ধারা? সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারাটি অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সংবিধানে ৩৯ অনুচ্ছেদে দেশের সব নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ এই ধারায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে অপছন্দের ব্যাক্তিকে দমন-পীড়নের দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে মানুষ আতঙ্কিক। সাধারণ মানুষ মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্বকারী বিতর্কিত ধারাটি বাতিলের দাবিতে সোচ্চার। ধারাটি বাতিলের দাবি করছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব), সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রেডিও-টিভির সর্বস্তরের সাংবাদিক এ ধারা বাতিলের দাবিতে সোচ্চার। এ প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিষযটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ৫৭ ধারার আইনের কতগুলো বিষয় সংশোধন করা উচিত। এটা এখন ব্যাপকহারে অপব্যহার হচ্ছে। ৫৭ ধারায় হয়রানির আশঙ্কা তো বাস্তবেই আমরা দেখছি।
    ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়/ ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে’ বাউল শিল্পী আব্দুল লতিফের এ গানটি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত। ’৫২ ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে ৭১ মুক্তিযুদ্ধ এমনকি ’৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও হাটে-মাঠে-ঘাটে গানটি শোনা যেত মানুষের মুখে মুখে। ওই গানটির মতোই তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০১৩-এর ‘৫৭ ধারা’ নিয়ে সারাদেশে চলছে বিতর্ক। এ আইনটি যেন হয়ে গেছে সবার ‘হৃৎকম্পন’। ক্ষমতাসীনরা এ আইনের মাধ্যমে মিডিয়া এবং মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়; অন্যদিকে মিডিয়া, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষ চায় বিতর্কিত ধারাটি বাতিল করে চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে আইনটি কার্যকর করা হয়েছে। অতপর আইনটি অপপ্রয়োগের অভিযোগ উঠায় সর্বমহলে আইনটি বাতিলের দাবি উঠেছে। শুধু মিডিয়ার স্টেক হোল্ডাররাই নয়; দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। চতুমূখী দাবির মুখে আইনমন্ত্রী বেশ কয়েক বার আইনটি কখনো সংশোধন কখনো বাতিল করা হবে বলেও প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ২৪ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০১৩-এর ৫৭ ধারা রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ হিসেবে অবিহিত করেন। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ছাড়া একটি রাষ্ট্র আগাতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী এখন সব কিছুই বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ থাকতে হবে।
    গত এক বছরে সারা দেশে অন্তত ৫০টি মামলা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অধীনে। অভিযোগ রয়েছে এর অধিকাংশই হয়রানিমূলক এবং প্রতিহিংসা পরায়ন। চলতি বছরেও অন্তত ৩৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে আসামী হয়েছে ১৬ জন সাংবাদিক। এছাড়াও আসামি হয়েছেন ছাত্র, শিক্ষক ও মৎসজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ। অনেক আবার জেলও খাটছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ভয়ংকর এই ৭টি শব্দবন্ধ আছে। সেগুলো হলো: মিথ্যা ও অশ্লীল, নীতিভ্রষ্টতা, মানহানি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি। যেকোনো নিরীহ কথাকেই এসব বিমূর্ত অভিযোগের ফাঁকে ফেলা সম্ভব। সবচেয়ে মারাত্মক হলো, এই ৭টি অপরাধ আদৌ করা হয়েছে কি না, আইনে তা নির্ধারণের ভার দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। পুলিশই অভিযোগ শুনে মামলা নিয়ে গ্রেফতারী পরোয়ানা পাঠাতে পারবে। তাহলে এই পুলিশ সদস্যকে একাধারে সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ, ভাষাবিদ, জনপ্রশাসনবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ধর্মবিশারদ এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ হতে হবে। সেটা কি আমাদের পুলিশ বাহিনীর পক্ষে সম্ভব?
    এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল আইন মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিষযটি নিয়ে আলোচনা চলছে। ৫৭ ধারা একটি অপরাধ; এটা সাইবার অপরাধ। এতদিন ৫৭ ধারা অপরাধের বিষয়ে স্পষ্ট ছিল না। আমাদের কাজ চলছে দ্রæত সময়ের মধ্যে ৫৭ ধারার অপরাধগুলো স্পষ্ট করা হবে। তিনি আরো বলেন, যে সব বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা ছিল সেগুলো নিরসণ করা হবে। আইসিটির অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বাতিল হবে কিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন কথা বলেনি।
    এ প্রসঙ্গে সাবেক আইন মন্ত্রী ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ৫৭ ধারার আইনের কতগুলো বিষয় সংশোধন করা উচিত। কারণ এটা এখন ব্যাপকহারে অপব্যহার হচ্ছে। বিশেষ করে মামলা হওয়ার আগে অভিযোগের বিষয়ে ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। তিনি বলেন, ৫৭ ধারায় হয়রানির আশঙ্কা তো বাস্তবেই আমরা দেখছি। ফেসবুকে কেউ একটা স্ট্যাটাস দিল, তাতে কি বলা হল, কেউ কারও অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কিছু লিখে দিল কিনা বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টটি সত্য ছিল কিনা- এসব তদন্ত না করে তো মামলা নেয়া উচিত নয়। তিনি আরো বলেন, সংবাদপত্রের সমালোচনা করলেই যদি মামলা হয়, তবে তা সংবাদপত্রের বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
    সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আইনটি সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের বাক স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এটি দেশের গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরুপ। ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সাংবাদিক সংবাদের যে কোন অংশ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহেনী ৫৭ ধারা মামলা করতে পারেন। এতে করে সাংবাদিকরা বস্তু নিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে ইতস্থবোধ করেন। এইভাবে স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। এর কারণে সবাই এ আ্ইনটির বাতিলের দাবি জানিয়েছে আসছে।
    সংশোধ করা হলে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি এই আইনটি সংশোধন না করে সরাসরি বাতিল করা হোক। এতে করে সংবিধানের স্বীকৃতি নাগরিকদের বাক স্বাধীনতাকে নিশ্চিত হবে।
    বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) এর সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য বিভিন্ন সময় দিয়েছি। আমাদের বক্তব্য একটাই তাহল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রধান মন্ত্রীও বলেছেন, ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের হরয়ানির জন্য নয়।
    ৫৭ ধারা বাতিল চেয়ে রিট আবেদন কারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–ঁয়া ইনকিলাবকে বলেন, আইনটি করা হয় মূলত মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হনন করার উদ্দেশ্যে। আমি শুরু থেকে এই আইনটির বাতিলের দাবি জানি আসছি। কারণ আমাদের সংবিধানেও নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। এখন তাহলে আবার ৫৭ ধারা কেন। এ ধারাটি সর্বমহলের ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করেছেন। রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন আদালত। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
    হাইকোর্টে রিট আবেদন : আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করে হাইকোর্ট, যা বর্তমানে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। রিট আবেদনে বলা হয়, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সংবিধানের ২৭, ৩২ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এই ৫৭ ধারা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে খর্ব করছে। আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা বাতিল করা উচিত।
    এ আইনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর শিকার হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন সাংবাদিকরা। সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে ধারাটি বাতিলের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে জোর দাবি ওঠে। আইনমন্ত্রী তখন ধারাটি বাতিলের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরপর গত ২ বছরে হয়েছে আরও বেশকিছু মামলা। এরপর মামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা, খুলনা ও হবিগঞ্জের ৪ সাংবাদিক। চারদিনের ব্যবধানে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা হয়। খুলনার সিএমএমের বিষয়ে রিপোর্ট করায় সিএমএমের পক্ষে ওই আদালতের নাজির তপন কুমার বাদী হয়ে ১৪ জুন খুলনা মেট্রোপলিটন সদর থানায় আলোকিত বাংলাদেশের খুলনা প্রতিনিধি মোতাহার রহমান বাবু ও স্থানীয় সময়ের খবরের স্টাফ রিপোর্টার সোহাগ দেওয়ানের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেন। এর তিন দিন আগে ১১ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের স্টাফ করসপন্ডেন্ট গোলাম মুজতবা ব্রুব’র বিরুদ্ধে এবং এর দুই দিন আগে ১২ জুন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ছাড়া ওয়ালটনের পণ্য নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জের ধরে ৫৭ ধারায় দায়ের হওয়া এক মামলায় স¤প্রতি অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুন সময় ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ রাজুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। দু’দিন কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। এছাড়াও চট্টগ্রমে দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর রিপোর্টার তৌফিকুল ইসলাম বাবর এবং দিনাজপুরে যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
    সর্বশেষ গত ৭ জুলাই দৈনিক সকালের খবরের রিপোর্টার আজমল হক হেলালের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে যদিও তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। এরপর থেকে সাংবাদিক নেতারা ৫৭ ধারা বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
    কর্মসূচির চলাকালে গত বৃহস্পতিবার এ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় যুগান্তরের সাংবাদিক হেলাল উদ্দিনকে জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে নিন্ম আদালত।
    ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তথ্য হচ্ছে, ২০১৫ থেকে এই আইনে সংগঠনের ৯ সদস্য এবং তাঁদের সঙ্গে আরও ৭ জনের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে। গত বছর এই ধারায় মোট মামলা হয়েছে ৩৬টি, এ বছরের জুন পর্যন্ত এই সংখ্যা ২৪।
    আসামি হয়ে কমপক্ষে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জেল খেটেছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছেন। সমালোচনা করে মামলার আসামি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছেন একজন মৎস্যজীবীও। প্রতি দিনই দেশের কোথাও না কোথায় এ ধারা মামলা হচ্ছে।
    গত ২০ জুলাই সম্পাদক পরিষদও এ ধারাটি বাতিলের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, এই ধারা সংবিধান পরিপন্থী এবং সংবিধানে রক্ষিত স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি। একই সঙ্গে তারা আইসিটি আইন থেকে ৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং নতুন কোনো আইনে এই ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এতে আরো বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সব বিষয় বিদ্যমান থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। সম্পাদক পরিষদ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হয় এমন সব বিধিবিধান বাদ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারা দেশে যত মিথ্যা মামলা করেছেন, তা প্রত্যাহারের এবং গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি করছে।
    সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া এসোসিয়েশনের (সাফমা) এর আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা প্রত্যাহার করে সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, গণতান্ত্রিক চেতনা ও মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্বকারী এই ধারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। তাদের মতে, ৫৭ ধারার মত কালো আইন থাকলে শুধু মিডিয়া জগতই নয়, সমাজের সব অংশেরই সুস্থতা ও বিকাশ বিঘিœত হবে। সরকারকে এটাই ভাবতে হবে যে তারা যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন এ কালো আইন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হবে।
    গত ২৪ জুলাই মতপ্রকাশের ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি অন্তরায় সৃষ্টি করে এমন কোন আইন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিক সমিতি নিউজপেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। এক বিবৃতিতে বলা হয়, বহুল অপপ্রয়োগের কারনে বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অবিলম্বে বাতিল এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ওই আইনে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সাথে নোয়াব বলেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং হয়রানিমূলক মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এগুলো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।