• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • বড়দিনে কুকুরদের বিরিয়ানি ভোজ

    বড়দিনের ছুটি একটু ধুমধাম করেই করা হলো। ব্যানারে লিখে দেয়া হলো ‘আজ আমাদের পিকনিক’। ১৫০ কেজি চাল আর ৫০ কেজি পনির দিয়ে রান্না হলো বিরিয়ানি। সেই বিরিয়ানি কিন্তু দেয়া হলো রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বেওয়ারিশ কুকুরদের! ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে বড়দিন উপলক্ষে গত সোমবার ওই ভিন্ন ধর্মী আয়োজন করা হয়। সেখানকার পশুপতি অ্যানিমেল লাভার্স সোসাইটি নামে একটি পশুপ্রেমী সংগঠন বিরিয়ানি রান্না করে শহরের বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে খাওয়ায়। পাঁচটি ভ্যানে বিশাল বিশাল পাত্রে বিরিয়ানি তোলা হয়। এরপর রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কুকুরদের খুঁজে বের করা হয়। ছোট ছোট পাত্রে দেওয়া হয় বিরিয়ানি। এভাবে এক হাজারেরও বেশি কুকুরকে খাওয়ানো হয়। তবে পথচারীদের চোখ আটকে গেছে ব্যানারে ‘আজ আমাদের পিকনিক’ লেখা দেখে। সকাল থেকে শুরু হয় এই কুকুর খাওয়ানো। তবে বিকেলের মধ্যেই বিরিয়ানি শেষ হয়ে যায়। ফের ২০ কেজি চাল ও ১০ কেজি পনির দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করা হয়। এরপর বিতরণ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অ্যানিমেল লাভার্স সোসাইটি অন্যতম কর্ণধার অর্পিতা চৌধুরী বলেন, আমরা একটু অন্যভাবে বড়দিন সেলিব্রেট করলাম। আমরা রাস্তার কুকুরদের সঙ্গেই পিকনিক করে ফেললাম বলতে পারেন। এনডিটিভি।

    জেরুজালেম নিয়ে ইসরাইলের নতুন ষড়যন্ত্র

    জেরুজালেম নিয়ে ইসরাইল নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জেরুজালেমে রাজধানী করার পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য অন্তত দশটি দেশের সাথে যোগযোগ করছে ইসরাইল সরকার। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পর গুয়েতোমালার সমর্থন পাওয়ার পর দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিজিপি হতোবেলি গতকাল মঙ্গলবার সরকারি বেতারে এ কথা বলেন। উপমন্ত্রী বলেন, রাজধানী স্থানান্তরের পক্ষে সমর্থনের জন্য আমরা ইউরোপীয় দেশসহ কমপক্ষে দেশটি দেশের সাথে কথা বলেছি। যদিও তিনি দেশগুলোর নাম বলেননি। তবে ইসরাইলের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি বেতার জানায়, ফিলিপাইন, হন্ডুরাস, রোমানিয়া, দক্ষিণ সুদান তাদের মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াঙ্ক সদস্য যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী স্থানান্তরের ঘোষণার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। জেরুজালেম নগরীকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে যে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ওই স্বীকৃতি প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে সাধারণ পরিষদের জরুরী অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাভুটিতে গৃহীত প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, এই নগরীর মর্যাদার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত অকার্যকর ও বাতিলযোগ্য। প্রস্তাবের বয়ানে বলা হয়েছে জেরুজালেম শহর নিয়ে যে কোনরকম সিদ্ধান্ত এই ভোটের মাধ্যমে বাতিল বলে গ্রাহ্য হবে। নামধাম লিখে রাখা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পরেও, ১২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৯টি দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল ৩৫টি দেশ। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সউদী আরব, জাপানসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ। ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে আমেরিকার সিদ্ধান্তকে অনেকটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য দেশ। যেসব দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে তাদের তালিকা তুলে ধরা হলো ঃ আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, আন্দোরা, অ্যাঙ্গোলা, আর্মেনিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বারবাডোস, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বেলিজ, বলিভিয়া, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনাই, বুলগেরিয়া, বুরকিনাফাসো, বুরন্ডি, কেপভার্দে, ক্যাম্বোডিয়া, চাদ, চিলি, চীন, কমরোস, কঙ্গো, কোস্টারিকা, আইভরি কোস্ট, কিউবা, সাইপ্রাস, উত্তর কোরিয়া, ডেনমার্ক, জিবুতি, ডোমিনিকা, ইকুয়েডর, মিশর, ইরিত্রিয়া, এস্তোনিয়া, ইথিওপিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্যাবোন, গাম্বিয়া, জার্মানি, ঘানা, গ্রিস, গ্রানাডা, গিনি, গায়ানা, আইসল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, জর্দান, কাজাখস্তান, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাওস, লেবানন, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, লিচটেনস্টেইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ। এছাড়া, প্রস্তাবের পক্ষে আরো ভোট দিয়েছে মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মাল্লীপ, মালি, মাল্টা, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মোনাকো, মন্টেনেগ্রো, মরক্কো, মুজাম্বিক, নামিবিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, নিকারাগুয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, পেরু, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্যা গ্রানাডিয়ান্স, সউদী আরব, সেনেগাল, সার্বিয়া, সিসিলি, সিঙ্গাপুর, সেøাভাকিয়া, সেøাভেনিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুদান, সুরিনাম, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, মেসিডোনিয়া, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, তানজানিয়া, উরুগুয়ে, উজবেকিস্তান, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন এবং জিম্বাবুয়ে। অন্যদিকে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার এই নয় দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, গুয়াতেমালা, হুন্ডুরাস, মাক্রেসয়া, নাইরু, পালাও, টোগো, মার্শাল দ্বীপ। মজার ব্যাপার হলো এগুলো কোন পরিচিত দেশ নয়। সবাই আমেরিকার দান খয়রাতে চলে। সুতরাং বলা যায়, পরিচিত কোন দেশ ইসরাইল আমেরিকার পক্ষে নাই। এছাড়া ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল এন্টিগুয়া-বারবুদা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাহামাস, বেনিন, ভুটান, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, ক্যামেরুন, কানাডা, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডোমিনিক্যান প্রজাতন্ত্র, ইকুইটোরিয়াল গিনি, ফিজি, হাইতি, হাঙ্গেরি, জ্যামাইকা, কিরিবাতি, লাটভিয়া, লেসেথো, মালাউয়ি, মেক্সিকো, পানামা, প্যারাগুয়ে, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রুয়ান্ডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ সুদান, ত্রিনিদাদ-টোবাগো, টুভ্যালু, উগান্ডা ও ভানুয়াতি। এএফপি।

    আদালতে খালেদা জিয়া

    Posted by admin on December 26
    Posted in Uncategorized 

    আদালতে খালেদা জিয়া

    জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে পৌঁছেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
    বিএনপির চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
    শায়রুল কবীর জানান, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন বেলা ১১টার দিকে তার গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে আদালতের উদ্দেশে রওনা দেন।

    উ. কোরীয় ফ্যান ক্লাব খুলেছে জাপানি নারীরা
    উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে যে হারে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে, তাতে যেকোনো সময় পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, এরকম একটি আতঙ্কের মধ্যে আছে জাপান। সেকারণে খুবই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে দেশটি। কিন্তু এর মধ্যেই কয়েকজন জাপানি নারী গড়ে তুলেছেন ‘উত্তর কোরিয়া ফ্যান ক্লাব’। এর সব সদস্যই নারী বলে জানা গেছে।
    উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির কারণে যে কয়েকটি দেশ সবচেয়ে বেশি হুমকি ও আতঙ্কের মুখে তার একটি হলো প্রতিবেশী জাপান। পিয়ংইয়ং যেসব ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় সেগুলোর বেশিরভাগই নিক্ষেপ করা হয় এই জাপানের উপর দিয়ে। তবে জাপানে উত্তর কোরিয়া ফ্যান ক্লাবের নেতা বলছেন, ক্লাবটি গঠন করার পর থেকে অনেকেই তাদের কড়া সমালোচনা করছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে তার দলের সদস্যদেরকে হুমকি-ধমকিও দেয়া হচ্ছে। এমনকি অনেকে এমন অভিযোগও করছেন যে, তারা নাকি কিম জং উনের গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করছেন।
    কিন্তু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, তারা উত্তর কোরিয়ার নেতার রাজনীতিকে সমর্থন করেন না। তবে এই কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের শিল্প সংস্কৃতি ও সঙ্গীতকে তারা খুবই পছন্দ করেন। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার সংস্কৃতিই তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে। তাই তারা উত্তর কোরিয়ার সামরিক পোশাকের আদলে জামা কাপড় পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার গান বাজনা ও শিল্প সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন।
    ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা চুনহুন বলেন, তারা যখন এই ক্লাবটি গঠন করেন তখন অনেকেই তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে মেসেজ দিয়েছিলেন। এসব মেসেজ তারা পেয়েছেন জাপানের দক্ষিণপন্থী বিভিন্ন গ্রুপের কাছ থেকে। উত্তর কোরিয়ার একটি নারী ব্যান্ড দল মোরানবং এর অনুসরণে এই ফ্যান ক্লাবটি তৈরি হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন এই মোরানবং ক্লাবের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকেন। মোরানবংকে দেখা হয় উত্তর কোরিয়ার ‘স্পাইস গার্লস’ হিসেবে। ক্লাবের প্রধান চুনহুন বলেন, জাপানে তাদের যেমন সমালোচক রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রচুর ভক্ত সমর্থকও। বিবিসি।

     প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার উকিল নোটিশ

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ নিয়ে বক্তব্য দেয়ার কারণে মঙ্গলবার এই নোটিশ পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, এই উকিল নোটিশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
    তিনি জানান, বিএনপির চেয়ারপারসের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন গতকাল ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এই উকিল নোটিস পাঠান। যেখানে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওই বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে ও তা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করতে বলা হয়েছে।

    যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রয়োগ

    আরব দেশগুলোর নিন্দা : মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ রাশিয়ার জেরুজালেম ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত এক খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার ও ওই শহরে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এই খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল।
    খবরে বলা হয়, এ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, সেটা আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল। গত ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করলো। নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল মিসর। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, জেরুজালেমের মর্যাদা প্রসঙ্গে যেকোনও সিদ্ধান্তের ‘কোন আইনি ভিত্তি নেই, এ সিদ্ধান্ত অকার্যর এবং একে প্রতিহত করতে হবে’।
    ট্রাম্পের ঘোষণার বিরোধিতা থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলেও এতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বা ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে জেরুজালেমের অবস্থান নিয়ে স¤প্রতি যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর ‘তীব্র নিন্দা’ জানানো হয় এতে।
    নিরাপত্তা পরিষদে ভোটগ্রহণ শেষে জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি নিক্কি হ্যালে বলেন, ‘আজ নিরাপত্তা পরিষদে যা দেখলাম, তা স্পষ্টতই অপমান। আমরা এটা ভুলে যাবো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘ যে ভালোর চেয়ে খারাপটাই বেশি করছে, এটা তারই আরেকটি প্রমাণ। ইহুদিদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মাতৃভূমি হিসেবে জেরুজালেম ছাড়া তাদের আর কোনও রাজধানী কখনোই ছিল না। তবে জেরুজালেম ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলেও মার্কিন মিত্রদেশগুলোসহ পরিষদের বাকি ১৪টি দেশই এতে সমর্থন দিয়েছে। এ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার পরই এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণা ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করবে বলেই আশঙ্কার কথা জানান বিশ্লেষকরা।
    জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘আমরা সবাই যখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শান্তিপূর্ণ একটি পরিকল্পনার প্রত্যাশা করছিলাম, তখন দেশটি শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ইসরাইলকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে আরও বেশি অপরাধ করতে এবং আমাদের ভূমিতে তাদের দখলদারি মনোভাব অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করবে।’
    ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একজন মুখপাত্রও যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্ত ‘অগ্রহণযোগ্য এবং এটা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ এটা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে অসম্মান করেছে।’
    তবে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্য নিক্কি হ্যালেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এক টুইটে নেতানিয়াহু বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত হ্যালেকে ধন্যবাদ জানাই। আপনি সত্যের আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করেছেন। আপনি একা হয়েও পরাজিত করেছেন অনেককে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনাকে ধন্যবাদ। নিক্কি হ্যালে, আপনাকে ধন্যবাদ।’
    উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান ট্রাম্প। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
    আরব দেশগুলোর নিন্দা
    জেরুজালেম প্রশ্নে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উত্থাপিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার সমালোচনা করেছে আরব দেশগুলো। প্রস্তাবটিতে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতিসহ যেকোনও ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা বলা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রদানের পর দেশটির সমালোচনা করেছে মিসর, ফিলিস্তিন, কুয়েত ও কাতার।
    মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ আবু যিয়েদ এক লিখিত বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রদান করায় মিসর দুঃখ পেয়েছে।’ জেরুজালেমের মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য জাতিসংঘে আরব দেশগুলো একত্র হবে বলেও উল্লেখ করেন আবু যিয়েদ।
    ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রদানের নিন্দা জানিয়ে একে ‘আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি উপহাস ও ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের সমর্থন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা এ খবর জানায়। আবু রুদেইনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের বিরক্তির উদ্রেগকারী এই ভেটো যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।’
    ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী আন্দোলনের সংগঠন হামাস একটি লিখিত বিবৃতিতে বলেছে, ‘জেরুজালেম চিরদিনই ফিলিস্তিনের রাজধানী। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সিদ্ধান্ত এই সত্যকে পরিবর্তন করতে পারবে না।’
    বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়, আরব ও ইসলামি বিশ্বের প্রতি জেরুজালেমকে সংরক্ষণের আহ্বান জানায় হামাস। একই সঙ্গে জেরুজালেমের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে ইসরাইলকে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয় সংগঠনটি।
    কুয়েত পার্লামেন্টের স্পিকার মারজুক আলী আল গানিম এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘জেরুজালেমকে ইসরাইলের বলে স্বীকৃতির একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত প্রমাণ করেছে আমরা একা নই। আমাদের আসল লক্ষ্য হলো একটি মুক্ত বিশ্ব।’ বিবৃতিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক গণভোটের মতো একটি প্রস্তাব উত্থাপন করায় মিসরকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
    আন্তর্জাতিক মুসলিম পন্ডিতদের সংগঠন-আইইউএমএস’র পক্ষ থেকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ‘সব দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও চ্যালেঞ্জ’। কাতারভিত্তিক সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আলী কারাদাঘি এক টুইট বার্তায় এ মন্তব্য করেন।
    ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেম নীতির বিষয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল নিন্দা ও প্রতিবাদ জারি রয়েছে। ফিলিস্তিন ও আরব দেশগুলোসহ মার্কিন অনেক মিত্র দেশও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
    এর আগে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রস্তাবটিতে নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্যেরই অনুমোদন জেরুজালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের অবৈধতা নির্দেশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভেটো জাতিসংঘকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেছে। তবে তুরস্ক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও এর জনগণের পক্ষেই অবস্থান নেবে।’
    জাতিসংঘে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ফ্র্যাঙ্কয়েস ডেলাট্রেও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই খসড়া প্রস্তাব যুগ যুগ ধরে জেরুজালেম প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মতৈক্যের প্রতিফলনকেই নিশ্চিত করেছিল। এটা পাস না হওয়াটা দুঃখজনক।’
    এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর পর ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘে দেশটির সহকারী রাষ্ট্রদূত ভøাদিমির সাফ্রোনকোভ বলেন ‘ইসরাইল-ফিলিস্তিনের সরাসরি সমঝোতার বিষয়টি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’ সে সময় তিনি ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি নেতাদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আহ্বান জানান। বৈঠকে রাশিয়া ‘একজন সৎ মধ্যস্থতাকারী’ হতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করে সাফ্রোনকোভ নিরাপত্তা পরিষদকে ‘মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ’ দেওয়ার আহ্বান ও জানান। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, এএফপি ও আনাদোলু।

    সু চির সম্মতিতেই রোহিঙ্গা নির্যাতন

    মিয়ানমারে মুসলমান সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের অনুমোদন সেদেশের নেত্রী অং সান সু চির অনুমোদনেই হয়েছে বলে ধারণা করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার যেইদ রাদ আল হুসেইন। এজন্য মিয়ানমারের নেতাদের একসময় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে তিনি বলছেন। বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়গুলো দেখভাল করে জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানটি, যার প্রধান মি. হুসেইন।
    বিবিসিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘যে মাত্রায় এবং যেভাবে সেখানে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে, তা অবশ্যই দেশের উঁচু পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন’।
    মি. হুসেইন বলছেন, ‘এজন্য মিয়ানমারের নেতাদের একসময়ে গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে’। যদিও এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি অঙ সান সু চি, যিনি একসময় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
    বিবিসির সংবাদদাতা জাস্টিন রোল্যাট বলছেন, ‘’মিয়ানমারের নেতাদের ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি দাড়াতে হতে পারে, জাতিসংঘের এই নজরদারি প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের এই বক্তব্য খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।’’
    এ মাসের শুরুর দিকেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেয়া বক্তব্যে মি.হুসেইন বলেছিলেন, মিয়ানমারে যে ব্যাপক বা পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, তাতে গণহত্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হলোকাস্টের পর জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে কোন গোত্রকে নিশ্চিহ্নকে করার চেষ্টাকে গণহত্যাকে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু তার এই বক্তব্যের পর কি অং সান সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা পারে?
    জাস্টিন রোল্যাট বলছেন, মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে কিনা, সেটি প্রমাণের দায়িত্ব যেইদ রাদ আল হুসেইনের নয়। কিন্তু তিনি হয়তো আন্তর্জাতিক একটি তদন্ত চাইতে পারেন।
    যদিও হাই কমিশনার বলছেন, সেটিও কঠিন একটি কাজ। তিনি বলছেন, ‘কেউ যদি গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনা করে, সেটি তো তারা কাগজ কলমে করবে না। হয়তো আপনি কোন নির্দেশনার প্রমাণও পাবেন না। তবে এখন আমরা যা দেখছি, তার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে কোন আদালত যদি এরকম কোন তদন্তের আদেশ দেয়, তাতে আমি অবাক হবো না’।
    অগাস্টে এই অভিযান শুরুর পর সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। শত শত গ্রাম পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সেখানে ব্যাপক হত্যা আর গণধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণের পর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বার্মার (মিয়ানমার) রাখাইন রাজ্যে গত দুইমাসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
    অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে আরো ৪০টি গ্রামের ভবনসহ বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে বলে সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে। ২৫শে অগাস্টের পর রাখাইনে এ নিয়ে ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

    বারী সিদ্দিকি স্মরণে জাপান প্রবাসিদের শোক সভা

    খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী , গীতিকার , সুরকার ও বাঁশী বাদক প্রয়াত বারী সিদ্দিকি’র স্মরনে শোক সভার আয়োজন করা হয়েছিল জাপান প্রবাসি বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে ।

    ১৭ ডিসেম্বর ‘১৭ রোববার টোকিওর কিতা সিটি আকাবানে কিতা কুমিন সেন্টার এ আয়োজিত একই শোক সভায় শোক জানানো হয় সদ্য প্রয়াত ঢাকা উত্তর এর অত্যন্ত জনপ্রিয় মেয়র আনিসুল হক , চট্টলাবীর খ্যাত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী , নায়ক রাজ রাজ্জাক , স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠ যোদ্ধ্বা শিল্পী আব্দুল জব্বার সহ বিজয়ের এই মাসে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ্বে বীর শহীদদের প্রতি ।
    সভার শুরুতেই তাঁদের সকলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধ্বা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় ।
    নীরবতা পালন শেষে গোলাম মাসুম জিকো’র গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় এবং মোস্তাফিজুর রহমান জনি’র সহযোগিতায় শিল্পী বারী সিদ্দিকি এবং মেয়র আনিসুল হক এর উপর এক প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয় ।
    এরপর প্রবাস প্রজন্ম জাপান সন্মাননা ‘১৪ প্রাপ্ত শিল্পী বারী সিদ্দিকির জাপান সফর কালীন স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্য রাখেন রাহমান মনি , কাজী ইনসানুল হক । এসময় বারী সিদ্দিকির পুত্র সাব্বির সিদ্দিকির সাথে টেলিফোনে কথোপকথন হয় যা , লাউড স্পীকারের মাধ্যমে সকলকে শুনানো হয় । টেলিফোনে সাব্বির সিদ্দিকি পুত্র জাপান প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন , আমার বাবার প্রতি আপনাদের সকলের এতো ভালোবাসা বাবা যদি দেখতে পারতেন তাহলে , বাবা কতোই না খুশী হতেন ।
    এরপর জাপান কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নুর খান রনি , এডভোকেট হাসিনা বেগম রেখা , আলমগীর হোসেন মিঠু , সালেহ মোঃ আরিফ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মোঃ বেলাল আহমেদ প্রমুখ ।
    এরপর শিল্পী বারী সিদ্দিকির প্রতি শ্রদ্ধ্বা জানিয়ে তার করা জনপ্রিয় গান গুলো পরিবেশন করেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পী রা ।
    প্রথমেই প্রবাস প্রজন্ম’র খুদে শিল্পী তনুতা ঘোষ শিল্পী বারী সিদ্দিকির একমাত্র মেয়ের জন্য করা ‘তুমি আইও পরাণের বন্ধু , আইও বাউল বাড়ি’ গানটি কচি কন্ঠের মিষ্টি গলায় গেয়ে শুনালে উপস্থিত দর্শক শ্রোতা মুদ্গ্ব হয়ে শুনেন । তনুতার মা পপি ঘোষ এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন কমিউনিটির পক্ষ থেকে এমন মহতী আয়োজনের জন্য ।
    এরপর উত্তরণ বাংলাদেশ কালচারাল গ্রুপ বারী সিদ্দিকির জনপ্রিয় গান গুলি পরিবেশন করে । গানের মাঝে মাঝে উত্তরণ শিল্পীরা বিভিন্নভাবে বারী সিদ্দিকিকে স্মরণ করেন । এ ছাড়া ও স্বরলিপি কালচারাল একাডেমীর বাদল বাদ্যযন্ত্রহীন খালি কন্ঠে শিল্পী বারী সিদ্দিকির অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘ শোয়া চান পাখী আমার’ গানটি গেয়ে শোনালে পিনপতন নিঃশব্দে দর্শক শ্রোতা তার মাধ্যমে বারী সিদ্দিকিকে অনুধাবন করেন ।
    মহতী এই শোক সভাটি পরিচালনা করেন বিশ্বজিত দত্ত বাপ্পা ।

    লাসভেগাস হত্যাকাণ্ড

    গত ১লা অক্টোবর রোববার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে ঘটল বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণের ঘটনা। ৬৪ বছর বয়েসী স্টিফেন ক্রেইগ প্যাডক নামক এক মার্কিন শ্বেতাঙ্গের নির্বিচার গুলিবর্ষণের এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৯ জন। আহতের সংখ্যা ৫২৭। পুলিশের ভাষ্যমতে লাসভেগাসের  মান্দালাই বে হোটেল এ্যন্ড ক্যাসিনোতে কনসার্ট দেখতে জড়ো হওয়া ২২ হাজার মানুষের উপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করে ঐ বন্দুকধারী। হোটেলের ৩২ তলার একটি কক্ষ থেকে সে গুলি করে যাচ্ছিল। পুলিশ পৌঁছার আগেই বন্দুকধারী অস্ত্র ঘুরিয়ে নেয় নিজের দিকে। ঐ কক্ষে পৌঁছে পুলিশ উদ্ধার করে তার গুলিবিদ্ধ লাশ। রোববার মধ্যরাতের এই হত্যাকা-কে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ‘মাস শুটিং’।

    সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ঘটনাকে অভিহিত করেছেন ‘খাঁটি শয়তানি কাজ’ বলে। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, এই খাঁটি শয়তানি কাজ এখন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা সাধারণ রীতি। নিয়মিত বিরতিতে তা ঘটে চলেছে। এফবিআইয়ের হিসাবে শুধু ২০১৭ সালেই স্বদেশবাসীর গুলিতে নিহত হয়েছে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ। গত বছর জুনের অরল্যান্ডো-হত্যাকা-ের পর এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৮৫ জন, আহত ২১৫৬ জন। (নয়া দিগন্ত, ১০ অক্টোবর, ২০১৭)

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট কি পারবেন তার দেশের  ভেতরের এই শয়তানি কাজ বন্ধ করতে? তিনি তো মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তার অজুহাতে গোটা উত্তর কোরিয়াকেই ‘টোটালি ডেস্ট্রয়’ করে  দেওয়ার ঘোষণা জাতিসংঘের সকল জাতি-গোষ্ঠীর মুখের ওপর দিয়ে আসতেও দ্বিধা করেননি, কিন্তু নিজের দেশের ভেতরের এই নিরাপত্তাহীনতা তিনি রুখবেন কীভাবে?

    আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, স্টিফেন প্যাডক বেশ প্রস্তুুতি নিয়েই হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে। শহরটির শেরিফ জানিয়েছেন, হোটেলটির ৩২ তলার ঐ কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৩ টি বন্দুক ও কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি। এছাড়া তার নেভাদার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরো ১৯ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক।

    এই ঘটনার পর সঙ্গত কারণেই কথা উঠছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান অস্ত্র আইন নিয়ে। এই আইনে নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র রাখার অধিকার দেয়া হয়েছে।

    পাঁচ বছর আগে কানেক্টিকাটের এক প্রাইমারি স্কুলে এক যুবকের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে ২৬ শিশুর মৃত্যুর পর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জোর দাবি ওঠে। গত বছর অরল্যান্ডোর নাইটক্লাবে বন্দুকধারীর গুলিতে ৪৯ জন নারী-পুরুষের নিহত হওয়ার পরও এই দাবি জোরালোভাবেই সামনে এসেছিল। এমনকি এ নিয়ে কংগ্রেস ডেমোক্রেটরা রাতভর আইনসভা কক্ষ ঘেরাও পর্যন্ত করে রেখেছিলেন। কিন্তু ফল কিছুই হয়নি। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সারা দেশের বেশির ভাগ মানুষ একমত হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিশ্লেষকেরা বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গান-লবি’। ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন বা এনআরএ আমেরিকার মানুষের অস্ত্র বহনের অধিকারের পক্ষে প্রধান গ্রুপ। কংগ্রেসের বিভিন্ন সদস্যকে প্রভাবিত করার জন্য এরা বছরে প্রায় ২৫ কোটি ডলার খরচ করে থাকে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে আগ্নেয়াস্ত্রের পক্ষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য এরা সরাসরি খরচ করেছে ৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। (দৈনিক প্রথম আলো, ৪ অক্টোবর, ২০১৭, পৃ. ১১)

    এটা হচ্ছে পশ্চিমা পুঁজিবাদী সমাজ-ব্যবস্থার এক অন্ধকার দিক। মুখে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি যা কিছুই বলা হোক, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর শান্তি ও নিরাপত্তা কার্যত শূলিবিদ্ধ পুঁজির শূলিদ-ে।১

    পশ্চিমা পুঁজিবাদ গোটা পৃথিবীটাকেই বানিয়ে রেখেছে যুদ্ধক্ষেত্র। সচেতন মাহলের অজানা নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র-নির্মাতা ও অস্ত্র-রফতানীকারক দেশ।

    স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে বিশ্বের সেরা কয়েকটি অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠা ও তাদের বিক্রয়ের পরিমাণের দিকে নজর দেয়া যাক।

    লকহিড মার্টিন : যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এ অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি বিমান, রাডারব্যবস্থা, ড্রোন ও বিমান উৎপাদন করে। এদের সবচেয়ে বিখ্যাত পণ্য এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও হারকিউলিস পরিবহন বিমান। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি তিন হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রি করে।

    বোয়িং : যাত্রীবাহী বিমান তৈরি করে খ্যাতি পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে মুনাফা করেছে ৫২০ কোটি ডলার। এফ-১৫, এফ-১৮, এফ-২২ যুদ্ধবিমান ও রকেট তৈরির জন্য বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি। তাদের মোট বিক্রয়ের ২৯ শতাংশ আসে অস্ত্র খাত থেকে।

    রেইথন : প্রধানত ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করে এ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে তাদের বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার।

    নরথ্রোপ গ্রুপম্যান : যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের এ প্রতিষ্ঠানটি ড্রোন, যুদ্ধবিমান ও রাডার উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ২০১৫ সালে বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

    জেনারেল ডায়নামিকস : মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত এম-১এ আব্রামস ট্যাংক উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটিও ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত। ২০১৫ সালে অস্ত্র বিক্রি করেছে এক হাজার ৯০০ কোটি ডলারের।

    এয়ারবাস গ্রুপ : ইউরোপভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটিও যাত্রীবাহী বিমান তৈরিতে বিখ্যাত। তবে ২০১৫ সালে এক হাজার ২৯০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে তারা, যা মোট বিক্রয়ের ১৮ শতাংশ।

    ইউনাইটেড টেকনোলজিস : যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের এই প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রয়ের ১৬ শতাংশ আসে অস্ত্র থেকে, প্রতি বছর যা প্রায় এক হাজার কোটি ডলার। মার্কিন বাহিনীর ব্যবহৃত ব্ল­্যাক হক হেলিকপ্টার এদের তৈরি।

    লিওনার্দো-ফিনমেকানিকা : যুদ্ধবিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান তৈরি করে ইতালির এ কোম্পানিটি। ২০১৫ সালে বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৯৩০ কোটি মার্কিন ডলার।

    এল-৩ টেকনোলজিস : নিউ ইয়র্কভিত্তিক এ মার্কিন কোম্পানিটি মূলত গোয়েন্দা নজরদারি, যোগাযোগ ও জননিরাপত্তাবিষয়ক অস্ত্র উৎপাদন করে। ৮৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে ২০১৫ সালে।

    এই পরিসংখ্যান সামনে রেখে চিন্তা করলে সহজেই বোঝা যায় বিশ্বব্যাপী গোলযোগ ও যুদ্ধাবস্থা কেন প্রয়োজন ও কাদের প্রয়োজন। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও ২০০ বছর ২   আগের সেই অস্ত্র আইন এখনো বলবৎ রাখা কাদের প্রয়োজন ও কেন প্রয়োজন।

    বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন নাগরিকদের মানসিক অস্থিরতা ও অপরাধপ্রবণতার যে চিত্র বিভিন্ন জরিপ ও পরিসংখ্যানে উঠে আসছে এর সাথে অস্ত্র বহনের অবাধ অধিকার নিঃসন্দেহে এক ভীতিকর ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্র যে সকল বিষয়ে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে এর একটি হচ্ছে কারাবন্দীর সংখ্যা। সংখ্যাটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫১ জন।

    হত্যাকারী স্টিফেন প্যাডক সম্পর্কে জানা গেছে তিনি একজন কোটিপতি। লাসভেগাসের উত্তর-পূর্বের মেসকাইট শহরের প্রবীণ নাগরিকদের একটি কমিউনিটিতে নিরিবিলি অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন। পরিবার-পরিজন বলতে ম্যারিলু ড্যানলি নামক এক বান্ধবীর সাথেই তিনি বসবাস করতেন। ঘটনার পর মার্কিন মিডিয়াতে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে লোন উলফ (নিঃসঙ্গ শিকারী) বলে। কী মসৃণ খেতাব! যেখানে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে অথবা মুসলিম নামের কারো দ্বারা একটু কিছু ঘটে গেলেই ‘জঙ্গি’ ‘আত্মঘাতী’ জিগির চলতে থাকে সারা বিশে^ মাসের পর মাস, সেখানে এত বড় হত্যাকা- সংঘটনকারী কত সুন্দর খেতাবই না অর্জন করলেন।

    পশ্চিমা সমাজ-ব্যবস্থায় প্রবীণ নাগরিকদের নিঃসঙ্গতাও এক ভয়াবহ ব্যাপার। তাদের কি কখনো মনে হয়েছে, এই নিঃসঙ্গতাই তাদেরকে ‘শিকারী’ করে তুলছে? নিঃসঙ্গতা মোকাবিলার জন্য পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আছে অনেক কিছুÑ মদ, জুয়া, নারী এবং বন্দুক। আলোচিত ‘নিঃসঙ্গ শিকারী’ চারটি উপায়ই ব্যবহার করেছেন।

    লাসভেগাসের এই হত্যাকা-ে আরেকটি বিষয়ও আলোচিত। বিশ্লেষকেরা ক্ষোভের সাথে বলেছেন, এই নির্মম হত্যাকা-ের পরও স্টিফেন প্যাডককে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হয়নি। মার্কিন মিডিয়ায় তাকে অভিহিত করা হচ্ছে গ্র্যান্ডড্যাড (দাদা মশায়), লোন উলফ (নিঃসঙ্গ শিকারী), জুয়ারি বা সাবেক হিসাব রক্ষক প্রভৃতি নামে। তাঁরা বলছেন, এই লোকটি যদি একজন কৃষ্ণাঙ্গ হত তাহলে অনেক আগেই তার নামের সাথে টেররিস্ট কথাটি যুক্ত হয়ে যেত। আর মুসলিম হলে তো কথাই ছিল না।

    এদিকে কোনো কোনো মিডিয়ায় এই তথ্য এসেছে যে, এই হত্যাকা-ের পরপরই আইএস এর দায় স্বীকার করেছে। এমন কথাও নাকি প্রচার করা হয়েছে যে, প্যাডক একজন মুসলিম, ঘটনার কয়েক দিন আগে সে ইসলাম গ্রহণ করে!!

    কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) এটাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, আইএস-এর শক্তি কতটুকু, কারা এর অর্থ জোগানদাতাÑ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে অনেক মতবিরোধ থাকলেও বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বড় কোনো ঘটনা ঘটার পর  আইএস যখন এর দায় স্বীকার করে তখন তদন্ত কর্মকর্তারা চোখ বুজেই তা গ্রহণ করেন এবং ঢালাওভাবে মুসলমানদের অভিযুক্ত করে থাকেন, কিন্তু এবারের লাসভেগাস হত্যাকা-ের পর আইএস তার নিজস্ব সংবাদমাধ্যম ‘আমাক’-এ বিবৃতি দিয়ে দায় স্বীকারের পরও এফবিআই এটাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়াতে মনে হচ্ছে, এবার হিসাব-নিকাশটা অন্যভাবে করা হচ্ছে। (দ্র. নয়া দিগন্ত, ৫ অক্টোবর, ২০১৭, পৃ. ৭)

    বিশ্বজুড়ে পর্দার সামনে ও পেছনে মুসলমানদের পক্ষে ও বিপক্ষে কী কী ঘটছে তার কতটুকুরই বা আমরা খবর রাখি বা রাখতে পারি। আমাদের তো নির্ভর করতে হয় প্রধানত ইহুদী-খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় পরিবেশিত তথ্য ও সংবাদের উপর।

    যাই হোক, কথা হচ্ছিল শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদ নিয়ে। বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন সমাজের বর্ণবাদী প্রবণতাও তাদের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও অবক্ষয় বৃদ্ধির এক বড় কারণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প কি এটা উপলব্ধি করেন? গত আগস্টের ভার্জিনিয়ার কুখ্যাত ঘটনাটি কিন্তু অন্যরকম বার্তাই প্রদান করে। পাঠকের হয়ত মানে আছে, ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে একটি শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সমাবেশের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন একদল বর্ণবাদবিরোধী মার্কিন নাগরিক। এ সময় তাদের উপর গাড়ি উঠিয়ে দেয় এক শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী। ওই ঘটনায় একজন নিহতও হয়েছিলেন। এই হত্যাকা-ের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের নিন্দা না করায় দেশে-বিদেশে তখন সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। জাতিসঙ্ঘে বৈষম্যদূরীকরণ কমিটি (সিআইআরডি) নামে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের যে প্যানেলটি আছে, যারা জাতিসঙ্ঘের বর্ণবৈষম্য-বিরোধী চুক্তিতে থাকা ১৭৭ টি দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখভাল করে থাকে, শার্লটসভিলের ঐ ঘটনার পর এক বিবৃতিতে বলেছিল, ‘বর্ণবাদীদের দমন করতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিকদের ব্যর্থতার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।’

    বিবৃতিতে সিআইআরডি প্যানেলের প্রধান অ্যানাস্তামিয়া ক্রিকলি বলেছিলেন, ‘শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী, নব্য-নাৎসি ও ক্লু ক্লাকস ক্ল্যানের বর্ণবাদী বিক্ষোভ-শ্লোগানে আমরা উদ্বিগ্ন, যা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদকে উসকে দেয়, জাতিগত বৈষম্য ও ঘৃণার বিস্তার ঘটায়।’

    মার্কিন জাতির এই অবক্ষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের সহমর্মী হওয়ার পাশাপাশি আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আমাদের দ্বীনকে, যে দ্বীনের উদার মানবিক শিক্ষা আমাদের মুক্ত রেখেছে এই অন্ধকার থেকে। যে দ্বীনের অনুসারী হওয়ার কারণেই আমরা হযরত বেলাল হাবাশী রা.-কে আমাদের অন্যতম আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণ করেও গর্ববোধ করি এবং তাঁর নামে আপন সন্তানের নাম রাখাকে সৌভাগ্য মনে করি। সকল প্রশংসা আল্লাহর।

    ইসলাম সেই চৌদ্দশ বছর আগেই আমাদের দান করেছে ঐ প্রাগ্রসর শিক্ষা, যে পর্যন্ত বিশ্বের ‘আধুনিক’ জাতিগুলো এখনও পৌঁছুতে পারেনি। ইসলামের এই শিক্ষা এবং মুসলিম সমাজের সাম্য ও উদারতার এই বৈশিষ্ট্য-বর্ণনা করে ড. ইকবাল বলেনÑ

    نہ افغانیم و نے ترک و تتاریم

    چمن زادیم وازیک شاخساریم

    تمیز رنگ وبوبرما حرامست

    کہ ما پروردۂ یک نوبہاریم

    অর্থাৎ আফগানি, তুর্কি, তাতারি কোনো প্রকারের জাতীয়তায় আমরা বিশ^াসী নই। কারণ সকল মানুষ এক মানব-বাগানেরই বিচিত্র ফুল এবং সকলেই বাবা আদমের সন্তান। আমাদের মুসলমানদের জন্য তো বর্ণবাদ সম্পূর্ণ হারাম। কারণ আমাদের চেতনা ও বিশ^াস গঠিত হয়েছে এক নতুন বসন্ত ইসলামের উদার শিক্ষায়।

    ইসলামের এই উদার মানবিক শিক্ষার যুক্তি ও যথার্থতা এক আরব কবির পংক্তিতে বাঙ্ময় হয়েছে এভাবেÑ

    ليس يزري السوادُ بالرجلِ الشهم

    ولا بالفتى الأديبِ الأريبِ

    إن يكن للسواد فيك نصيبٌ

    فبياضُ الأخلاقِ منكَ نصيبي

    অর্থাৎ গুণ ও যোগ্যতার শুভ্রতাই বড় শুভ্রতা আর চিন্তা-চেতনার কৃষ্ণতাই প্রকৃত কৃষ্ণতা। কাজেই মেধা, মনন ও চরিত্র-সুষমা যে অর্জন করেছে তার গায়ের কালো রং দোষের হতে পারে না। আর এ কারণেই তোমার গাত্র বর্ণ-নয়, আমি গুণগ্রাহী তোমার চারিত্রিক শুভ্রতার।

    আসলে বর্ণবাদই হচ্ছে এক ঘোর কৃষ্ণতা। এই কৃষ্ণতা থেকে যে মুক্ত সবাই তার শুভ্র উদার ব্যবহার লাভ করবে। কোনো কৃষ্ণ বর্ণের মানুষও তার সংকীর্ণ আচরণের শিকার হবে না। যদি হয় বুঝতে হবে তার ভেতরটা কৃষ্ণতামুক্ত। কাজেই ঐ কালো বর্ণের মানুষটির কৃষ্ণতার উপর নয়, তার মাতম করা উচিত নিজের ভেতরের কৃষ্ণতার উপর।

    দেখুন, পশ্চিমারা বিশ্বব্যাপী, বিশেষত মুসলিম দেশগুলোতে বিভেদ-বিভক্তির যে কূটচাল অব্যাহত রেখেছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মুসলিম জনপদগুলোতে যে আগুন প্রজ্জ্বালিত করেছে এ আগুন তাদের জনপদেও ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো। আসলে অগ্নি থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গই ঝরে, ফুল ঝরে না। প্রশ্ন হচ্ছে, নিজেদের প্রজ্জ্বালিত এই আগুন থেকে মার্কিনীদের কে রক্ষা করবে।

    মোটর গাড়ি উৎপাদনে জাপানি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরামর্শ

    বাংলাদেশে মোটর গাড়ি উৎপাদনে জাপানি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, জাপানের হোন্ডা কোম্পানি ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথ বিনিয়োগে মোটর সাইকেল উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এর ধারাবাহিকতায় মোটরগাড়ি উৎপাদন শিল্পেও জাপান বাংলাদেশ সরকারের সাথে যৌথ অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ করতে পারে।
    বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসিও ইজুমি রবিবার শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ পরামর্শ দেন। শিল্পমন্ত্রণালয়ে এ সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হয়।
    শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাপান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণ, পদ্মা সেতুর প্রাক-সমীক্ষা, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ উত্পাদনসহ বিভিন্ন প্রকল্পে জাপান অর্থায়ন করে আসছে। তিনি বাংলাদেশে সোলার গ্লাস উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে জাপানের রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
    আমির হোসেন আমু বলেন, বাংলাদেশ সব সময় জাপানি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তিনি মালয়েশিয়ায় জাপানি বিনিয়োগে স্থাপিত ও বর্তমানে বন্ধ থাকা সনি কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বাংলাদেশের জনবলের কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে জাপানের উদ্যোগে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পের মানোন্নয়নে একটি শিল্পপার্ক স্থাপনের সুযোগ রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
    রাষ্ট্রদূত বলেন, যৌথ বিনিয়োগে হোন্ডা মোটর সাইকেল উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণের পর বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতি জাপানি উদ্যোক্তাদের আকর্ষণ বেড়েছে। তিনি শিল্পায়নের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বাংলাদেশে মোটর যান উৎপাদন, জনবলের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পের গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।

    জাপানে স্কুলের মাঠে পড়ল মার্কিন সামরিক কপ্টারের জানালা

    জাপানের একটি স্কুলের খেলার মাঠে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক হেলিকপ্টারের জানালা খুলে পড়েছে। বুধবারের এ ঘটনায় ১০ বছর বয়সী এক জাপানি বালক সামান্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ।
    বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউএস সিএইচ-৫৩ই ট্রান্সপোর্ট হেলিকপ্টারটির জানালা খুলে মাঠে পড়ার সময় সেখানে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রায় ৫০টি শিশু খেলছিল। শিশুটি কীভাবে আঘাত পেয়েছে তার সঠিক কারণ পরিষ্কার নয় বলে ওকিনাওয়া প্রিফেকচারের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।  যুক্তরাষ্ট্র মেরিনের একটি বিমান ঘাঁটির কাছে ঘটনাটি ঘটেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বাহিনীটি।
    ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারটি ঘাঁটিতে ফিরে এসে ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট করেছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জাপানের মন্ত্রীপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা পাওয়ার পর সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ধরনের ঘটনা শুধু ওই স্কুলের সঙ্গে জড়িতদের না পুরো ওকিনাওয়াবাসীকেই ‘উদ্বিগ্ন করে’ এবং এ ধরনের ঘটনা ‘কখনোই ঘটা উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
    জাপানে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বড় ঘাঁটি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ওকিনাওয়ায়। কয়েক বছর ধরে এই ফুটেনমা ঘাঁটি নিয়ে জাপানের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ওকিনাওয়ার কর্তৃপক্ষের মতভেদ চলছে। জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির দায় তাদের বহন করতে হচ্ছে যাকে অন্যায্য বলে মনে করছে ওকিনাওয়াবাসী।
    এর আগে অক্টোবরে ওকিনাওয়ার উত্তরাংশে প্রশিক্ষণ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র মেরিনের একটি সিএইচ-৫৩ই হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণকালে বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। ওই ঘটনায় কেউ আঘাত না পেলেও এ ধরনের বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে মার্কিন সেনাদের জড়িয়ে পড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আছে দ্বীপবাসী। বিবিসি।

    বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ

    জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল : বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে আনন্দে উদ্বেল জাতি

    হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রং-বেরং এর ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিলো সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে আনন্দ-উদ্বেল জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করলো বীর শহীদদের। সর্বস্তরের মানুষের ফুলের ভালবাসায় সিক্ত হলেন জাতির সূর্য সৈনিকরা।
    গতকাল সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও এরপর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যারা প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। তখন শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। জাতির যে বীর সন্তানদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে একাত্তরের সেই শহীদদের স্মরণ করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী।
    পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবারো ফুল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    এরপরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ১৪ দল, তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ক‚টনীতিকবৃন্দ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে লাল সবুজের পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
    জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটা পরিচিত মুখ। আমরা অর্থনৈতিক অনেক অগ্রগতীসাধন করেছি এবং খেলাধুলাতেও অনেক অগ্রগতীসাধন করেছি। আমাদের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে যে উন্নয়নশীল দেশের ভিতরে আমরা সাংবিধানিক ও গণতন্ত্র চর্চা করতে পেরেছি। এবং দীর্ঘদিন পরে হলেও ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। মনে রাখতে হবে৭১ সালে যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিল তাদের বিরোধীতার মুখে এতো বছর পরও শেখ হাসিনা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাজা কার্য্যকর করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনেছে।
    এদিকে বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা উবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
    পরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
    বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মইন খান সাংবাদিকদের বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতা যাত্রা শুরু করেছিলাম দুটি আদর্শ নিয়ে একটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও আরেকটি হচ্ছে বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান তার খেটেখাওয়া মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে আদর্শ সেই আদর্শ নিয়ে।
    তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়ে ৪৭ বছরে যাচ্ছি সেই প্রশ্নগুলো এখন নতুন করে জেগে উঠছে। আমরা বিশ্বাস করতাম পাকিস্থানের যে কাঠামো সেই কাঠামোতে গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়, সেটাই কিন্তু একটা মূল উদ্দেশ্য ছিল। সেজন্যই আমরা অত্যান্ত জোর গলায় বলেছিলাম আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ চাই। অথচ বার বার বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিঘিœত হচ্ছে।
    আজকের যে সংসদ সেই সংসদের দিকে তাকিয়ে দেখুন, তৃনমুলের যে কোন একজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন এখানে জনগনের কেউ প্রতিনিধিত্য করে।
    ৩০০ আসনের ১৫৪ জন ভোট ছাড়া নির্বাচিত। বাকি ১৪৬ জন নির্বাচিত হয় শত করা ৫ শতাংশ ভোটে। এ কারণেই কি আমরা বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
    আজকে সত্যিকার অর্থে বহুদলীয় গণতন্ত্র এদেশে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, আমি বলবো স্বাধীনতা সময় লক্ষ লক্ষ লোক রক্ত দিয়ে এ দেশকে প্রতিষ্ঠা করেছিল আমরা তাদের আর্দশের প্রতি আমরা সত্যনিষ্ঠা থাকতে পারিনা।
    আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রতিটি মানুষের মনের কথা এটি। যে আমরা এ দেশে গণতন্ত্র করবো, খেটেখাওয়া মানুষকে একটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জীবন আমরা দিব, যাতে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
    এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পু®পস্তবক অর্পন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের, সরকারি কর্ম কমিশন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাগণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেডিসি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, সোনালী ব্যাংক, সচেতন নাগরিক কমিটি, বিআইডবিøউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষনা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র, সাভার প্রেসক্লাব, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, নজরুল ইন্সটিটিউট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গামের্ন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ), শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ তৃনমুল গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিট, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাবি কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, গণফোরাম, বিমান শ্রমিক লীগ, ইঞ্জিনিয়াস ইনস্টিটিউট, বাংলঅদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, প্রবাসী কল্যান ব্যাংক, বঙ্গবন্ধু ফিসারিজ পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব), বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ খৃষ্টান এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
    এদিকে ঢাকা জেলা কমিউনিটি পুলিশের উদ্যোগে আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ২৬টি বড় এলইডি প্রজেক্টর বসানো হয়েছে। এসব প্রজেক্টরের মাধ্যমে ১৯৪৭ থেকে ৭১ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহ দেখানো হয়। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধের ভেতরের মুক্তমঞ্চে ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
    প্রসঙ্গত; ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্থানি সেনা বাহিনী গণহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও যুদ্ধে সক্রিয় সহায়তাকারী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুলাহ খান নিয়াজী। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্থানি বাহিনীকে পরাজিত করার দিনটি প্রতি বছর উদযাপিত হয়।

    মায়ের কাছে ফেরা

    Posted by admin on December 16
    Posted in Uncategorized 

    মায়ের কাছে ফেরা

    হামিদুর ছেলেটা গায়েগতরেই বেড়েছেন। পেশল বাহু, চিতানো বুক, পেটানো হাত-পা। নাকের নিচে গোঁফের রেখা। আসলে তো কিশোরই। বয়স কত হবে? ১৮? কিংবা এক বছর কম বা বেশি। মনের বয়সে তিনি কিশোরই রয়ে গেছেন।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম বলেন, ‘সিপাহি হামিদুর।’

    ‘স্যার।’

    হামিদুর ক্যানভাসের জুতা মাটিতে ঠুকে স্যালুট দেন। নামের আগে সিপাহি পরিচয়টা তাঁকে খুশি করে তোলে।

    ‘তোমার হাতের ডাল রান্নাটা কিন্তু পৃথিবীর এক নম্বর। আমাদের লঙ্গরখানার বাবুর্চি আক্কেল আলীর ডাল যা হয়, তাকে ঠিক পাক করা বলে না। ওটা হলো ঘুঁটা। তোমারটা হলো পৃথিবীর এক নম্বর। কী বলো?’

    ‘স্যার। সিপাহি আপনার কথায় একটুখানি ওজর-আপত্তি করে স্যার।’

    ‘আমার কথায় ওজর! বলো কী!’

    ‘আপনি পারমিশন দিলে বলতে পারি স্যার।’

    ‘পারমিশন দিচ্ছি। বলো। শুনি তোমার কী আপত্তি!’

    সিপাহি হামিদুর তাঁর হাত দুটো একত্র করেন। বিনয়ের ভঙ্গি আনেন চেহারায়। হাত কচলাতে কচলাতে বলেন, ‘স্যার, পৃথিবীর সেরা ডাইলটা পাক করে আমার মা। আমার মায়ের হাতের পাক করা ডাইল যদি খেতেন, তাহলে স্যার কী যে বলতেন। জান্নাতি সুবাস। মায়ের হাতের ডাইলের কোনো তুলনা হয় না স্যার। আল্লাহ বাঁচি থুলে দেশ স্বাধীন হলে আপনাকে খাওয়াব স্যার। আপনার কথা মাকে কত বলিছি। মা অনেক দোয়া করিছেন। বলেছেন, তোর স্যারের এক শ বছর পরমায়ু হবে। নেকদার আদমি।’

    ‘তাহলে তুমি বোধ হয় ডাল পাক করার কায়দাটা মায়ের কাছ থেকেই শিখেছ। তোমার রান্নার হাতও খুব ভালো।’

    ‘স্যার। সেটি হয়তো ঠিক কয়ে থাকবেন। আমার মা তো পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে। চব্বিশ পরগনার ডুমিয়া থানার চাপড়া গ্রামে ছিলেন তাঁরা। পাকিস্তান হওয়ার পর ইন্ডিয়া থেকে এই পারে চইলে এসেছেন। আসার সময় আর তো কিছু সাথে করে আনতে পারেননি। ডাইল আর লাবড়া পাক করার কায়দাকানুন সাথে করে এনেছেন।’ বলে সিপাহি হামিদুর হাসেন। তাঁর দাঁতগুলো ঝকঝকে। তাঁর কচিমুখে দাঁতগুলোকেই সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ে। আর হাসলে তাঁর চোখের তারাও ঝিলিক তোলে। ক্যাপ্টেন কাইয়ুম স্নেহের চোখে তাকান। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে চাইছে। সেটা তাঁকে চেপে ধরতে হবে। তিনি সৈনিক। আছেন যুদ্ধের ময়দানে। এখানে মায়া-মমতার স্থান যে নেই বললেই চলে।

    ত্রিপুরার এক পাহাড়ের ঢালে তাঁদের ক্যাম্প। একটা মিউনিসিপ্যাল অফিসের লাগোয়া দুটো টিনে ছাওয়া পাকা ঘর। তারই পাশে ঘন গাছগাছালির আড়ালে তাঁবু। সেই তাঁবুর রংও ধূসর। দূর থেকে দেখে কেউ বুঝবে না এখানে ক্যাম্প গাড়া হয়েছে। মাঠে সবুজ ঘাস। এই এলাকায় বৃষ্টি হয় খুব বেশি। পশ্চিম দিকে শ্রীমঙ্গল। চা-বাগান সীমান্তের ওপার-এপার—দুই পারেই। সমান মাপে কাটা চা-বাগানের মাথার ওপারে ছায়াবৃক্ষের সারি।

    পশ্চিমাকাশে কে যেন হলদি গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়েছে। অস্তরাগ এসে পড়েছে হামিদুর রহমানের মুখের এক পাশে। চুলের এক পাশটায় রঙিন আলো ওর মুখে শৈশবের লালিত্যকে উসকে দিতে চাইছে। কিন্তু তাঁর শক্ত চোয়াল ফুটিয়ে তুলতে চাইছে সৈনিক জীবনের দৃঢ়তা। অবরুদ্ধ দেশকে শত্রুমুক্ত করতে তাঁরা লড়ছেন। ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে তাঁরা প্রায়ই ঢুকে পড়ছেন দেশের ভেতরে।

    হামিদুর বলেন, ‘স্যার। আপনার কথা শুনে আমার আরেকটা কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। বলি?’

    ‘বলো।’ কাইয়ুম বসে আছেন একটা টিপয়ের ওপর। মিউনিসিপ্যাল ঘরটার বারান্দায়। হামিদুর রহমান মাঠে।

    হামিদুর বলেন, ‘স্যার। আপনি বললেন না পাক করার কায়দার কথা। আমার মায়ের নামও স্যার কায়দা।’

    কাইয়ুম বলেন, ‘মানে?’

    ‘আমার মায়ের নাম স্যার কায়েদাতুননেসা। তাইলে স্যার কায়দাই হলো না?’

    ‘তা হলো।’

    ‘আর তোমার বাবার নাম?’

    ‘আমার পিতার নাম স্যার আক্কাস আলী মণ্ডল।’

    ‘তার দ্বারা কী বোঝা গেল?’

    ‘স্যার?’

    ‘তার দ্বারা বোঝা গেল, তোমার পিতা মোড়ল ছিলেন।’

    ‘না স্যার। জমিজমা কিছু নাই। সে আমাদের দাদা-দাদার দাদার কোনো দিন কিছু ছিল কি না, তা তো জানি না। কিন্তু আমাদের স্যার কিছু নেই তো। বাবা তো দিনমজুরি করে খায়। এই ধরেন আমাকে নিয়েই তাদের যত আশা। আমি তো স্যার বলেছি, তোমাদের চিন্তা করতে হবি না নে, আমার স্যার আছেন। আমাকে তিনি রান্নার কাজ থেকে প্রমোশন দিয়ে সিপাহি করেছেন। তোমরা দোয়া করো। দেশ স্বাধীন হলে তোমাদের অভাব থাকবি নে। কারও অভাবই থাকবে না। আমিও তো সিপাহি হয়েই গিয়েছি। দেশ স্বাধীন হলে স্যার মানুষ কি আর না খেয়ে কষ্ট পাবি স্যার?’

    ‘না। তা কেন পাবে?’

    ‘স্যার, মা বলিছেন, মা আপনের জন্যি অনেক দোয়া করেন। নামাজের শেষে নামাজের জায়গায় বসেই দোয়া করেন।’

    ‘কবে বললেন তিনি তোমাকে এত কথা?’

    ‘আমি স্যার গেলাম না মার্চ মাসের শেষের দিকে। চট্টগ্রাম থেকে চলে গেলাম তো ঝিনাইদহে। সেখান থেকে ধরেন আমাদের কালীগঞ্জের খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে। অল্পের জন্যে না সেই রাতে বেঁচে গেলাম। আপনিও বাঁচলেন, আমাদেরও বাঁচালেন। আগে থেকেই তো বলে রেখেছিলেন যে ওরা আক্রমণ করার আগেই আমরা রিভল্ট করব। তবু তো স্যার কত বাঙালি জওয়ান আর অফিসারকে পাঞ্জাবিরা মেরে ফেলল। আমরা না হয় আপনার অর্ডারে আর বুদ্ধি-বিবেচনায় সটকে যেতে পারলাম। তবে স্যার আমি প্রথমে বাড়ি গিয়েছিলাম।’

    ‘ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছিলে। তাই আমাদের বিদ্রোহী দলে না এসে ঝিনাইদহ চলে গেলে।’

    হামিদুর লজ্জা পান। গোধূলির আলোয় তাঁর মুখখানা আরও লাজরাঙা হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘না। ভ্যাবাচেকা খাই নাই। মায়ের মুখটা মনে পড়ে গেল। ঝিনেদাতে স্যার মুজাহিদ বাহিনীতে জয়েন করেছিলাম। লেখাপড়া তো বেশি দূর করিনি। ক্লাস ফাইভ পাস দিয়েছি। পরে গিয়েছিলাম হাইস্কুলে। পড়াশোনা করার সামর্থ্য তো ছিল না স্যার। বাবা দিনমজুর। বোঝেনই তো। জয়েন করলাম মুজাহিদ বাহিনীতে। সেখানেই দেখি, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকেরা ট্রেনিং করছে। কী সুন্দর মার্চ করে, পিটি-প্যারেড করে। খোঁজখবর নিয়ে আমিও জয়েন করে ফেললাম। সেখান থেকে ট্রেনিং করতে চলে গেলাম চট্টগ্রামে। ট্রেনিং আর কী। খালি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর। শেখ সাহেব তো দেশ স্বাধীন করে ফেলবেই। পাঞ্জাবিরা বিদায় নিবে। যদি দরকার হয় আমরা হাতিয়ার হাতে নিব। শেখ সাহেব একবার হুকুম দিলেই হয়। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। আমরা তো প্রস্তুত হয়েই ছিলাম স্যার। তাই ভ্যাবাচেকা খাই নাই। কিন্তু মায়ের মুখটা মনে পড়ল। মা তো স্যার। আমারে দেখতে চায়। চট্টগ্রামে মেস থেকে বের হব, দেখি হলুদ পোস্টকার্ড। মায়ের চিঠি। মা লেখাপড়া তেমন জানে না। তবু চিঠি লেখে। লিখছে, বাবা হামিদুর, তোমাকে কত দিন দেখি না। মনটা পোড়ে। দেশের পরিস্থিতিতেও তোমাকে নিয়া ভাবনা হয়। চিঠিটা পড়ে ভাবলাম, দেশের লাইগে যুদ্ধে তো যাবই। যাই, মায়ের মুখটা একটু দেখে আসি। মায়ের দোয়া হলো আসল দোয়া। কী বলেন স্যার।’

    ‘নিশ্চয়ই।’

    ‘আরেকটা প্রশ্ন ছিল স্যার।’

    ‘আরও একটা প্রশ্ন! রাতের বেলা ডালটা তুমি রাঁধবে তো, হামিদুর?’

    ‘অবশ্যই স্যার। ডাল রাঁধব। আজ রাতে রুটি না স্যার। ভাতই পাক করব স্যার। আপনে আমার হাতের পাক পছন্দ করেন। আপনি আমাকে বাবুর্চি থেকে সিপাহিতে প্রমোশন দিয়েছেন। আপনি যা বলবেন, আমি তা-ই করব স্যার। আপনি বললে এখনই জান দিয়ে দেব। ধরেন স্যার পাকিস্তানি ট্যাংক আসতেছে। আপনি বললেন, যাও হামিদুর, এই মাইন বুকে বেঁধে ট্যাংকের সামনে শুয়ে পড়ো। লাই ডাউন। আমি বলব, ইয়েস স্যার। থ্যাংক ইউ স্যার। জয় বাংলা। আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুয়ে পড়ব।’

    ‘তা তুমি করবে আমি জানি।’

    ‘চট্টগ্রামে ট্রেনিং একাডেমিতে আমাদের বাঙালি অফিসারদের আর জোয়ানদের স্যার ২৫ মার্চ রাতে যেভাবে ওরা পাইকারিভাবে ক্লোজ করে লাইন করে গুলি করেছে…আমাকে স্যার অর্ডার দেন, আমি এখনই চলে যাব…মাইন দেন…গ্রেনেড দেন…।’

    ‘ঠান্ডা হও হামিদুর। এক দিনে লড়াইয়ে জেতা যায় না। একটা একটা করে ব্যাটল লড়তে হয়। অনেক ব্যাটলে তুমি সামনে এগোবে। অনেক ব্যাটলে পেছনে হটবে। আসলে তুমি জিততে চাও ওয়ার। রাইট?’

    ‘ইয়েস স্যার।’

    ‘তোমার প্রশ্নটা কী ছিল যেন?’

    ‘স্যার। কঠিন একটা কথা বলব স্যার। রাগ করবেন না। মাতৃভূমি জিনিসটা কী স্যার। মাতৃভূমি মানে সবাই বলে মায়ের ভূমি। মাতৃভাষা সবাই বলে মায়ের ভাষা। আমার মায়ের ভূমি তো স্যার ইন্ডিয়া। আবার আমার দেশ তো বাংলা।’

    ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হামিদুর রহমানের কোম্পানির সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধে মুখোমুখি হয় ধলুইয়ের এখানেই, ২৮ অক্টোবর ১৯৭১

    সূর্যের আলো কমে আসছে। আকাশে ঝাঁক বেঁধে পাখিরা ঘরে ফিরছে। আর্মি ব্যাটালিয়নের মতো একজন তার পিছে দুজন তার পিছে তিনজন—এই অর্ডারে পাখিরা উড়ছে। মাথার ওপরে একটা কামরাঙাগাছ। টিয়া পাখি ঝাঁক বেঁধে হল্লাচিল্লা করা শুরু করেছে।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম বলেন, ‘শোনো। তোমার প্রশ্নের উত্তরটা আমি আগে থেকে জানি। তাই উত্তরটা দিতে পারলাম। মাতৃভূমি মানে মায়ের ভূমি নয়। মাতৃভূমি মানে দেশ আমার মা। মাতৃভাষা মানে মায়ের ভাষা নয়। মাতৃভাষা মানে ভাষা আমার মা।’

    সিপাহি হামিদুর রহমান, সৈনিক নম্বর ৩৯৪৩০১৪, হাঁ করে শোনেন।

    ‘ধন্যবাদ স্যার। আমি আমার মনের মধ্যে উথালপাতাল করা সওয়ালের জওয়াব পেয়ে গেছি।’

    ‘কী পেলে?’

    ‘বাংলাদেশ আমার মা স্যার। আমার মা আজ বন্দিনী। তাকে মুক্ত করাই আমার কাজ। এই জন্য নিজের জীবন দান করতে পারা গৌরবের কাজ হবে স্যার। আমার মা কায়েদাতুননেসাও তাইলে খুশি হবেন।’

    ‘যাও হামিদুর। আজকের রাতের খাবার রান্নাটা তুমি একটু টেককেয়ার কোরো।’

    ‘স্যালুট স্যার। আমি নিজ হাতে পাক করব স্যার।’

    হামিদুর লঙ্গরখানার দিকে যান। স্যারের জন্য তিনি আজকে ভাত রাঁধবেন। মুরগি জোগাড় করতে হবে। এই শিবিরে খাবারের অবস্থা তেমন ভালো নয়। রাতে দুটো করে রুটি আর খোসাসমেত ডাল। দুপুরে ভাত আর সবজি। মাছ বা মুরগি সপ্তাহে দুই দিন। নিজেদের প্রতিদিনের ভাতা থেকে চাঁদা দিয়ে তাঁরা মাঝেমধ্যে একটু ভালো খাওয়ার চেষ্টা করেন। কাইয়ুম বলেন, খাওয়া ভালো দরকার সৈনিকদের। তাহলে তারা যুদ্ধটা ভালোমতো করতে পারবে।

    অক্টোবর মাস। ২৮ তারিখ। হেমন্তের এই দিনেই এবার শীত পড়েছে ভয়ংকর। সারা রাত কুয়াশায় ঢাকা থাকে চা-বাগান, ছায়াবৃক্ষ আর পাহাড়ের ঢাল ভরে থাকা বিচিত্র বৃক্ষরাজি। এরই ফাঁক দিয়ে বয়ে যায় স্রোতস্বিনী পাহাড়ি ঝরনা। দুপুরের দিকে রোদ পড়লে দূর থেকে মনে হয় গলে যাওয়া রুপার বিছা যেন কোনো পাহাড়ি রমণীর শ্যামল কোমর ঘিরে ঝকমক করছে।

    সীমান্তের ওপারে শ্রীমঙ্গলের ধলুই। সেখানে পাকিস্তানি পোস্ট। ওই পোস্ট আক্রমণ করা হবে। দখলমুক্ত করা হবে ধলুই। সেখানে উড়বে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-হলুদ-সবুজ পতাকা।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের নেতৃত্বে চলেছে মুক্তিবাহিনীর দল। কুয়াশার আড়ালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে যাওয়া সহজ হবে। ওরা টেরও পাবে না। তিন দিক থেকে ঘিরে ধরবে ওরা শত্রুদের। পেছনের দিকটা খোলা রাখবে যাতে শত্রুরা পশ্চাদপসরণ করতে পারে।

    তাদের হাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ আছে পর্যাপ্ত। এই যুদ্ধে জয়লাভ না করার কোনো কারণ নেই। তবে যথাসম্ভব বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

    তাদের মুক্তিসেনার দলে এবার থাকছেন সিপাহি হামিদুরও। রান্নার কাজ থেকে প্রমোশন দিয়ে তাঁকে কাইয়ুম তাঁর রানার বানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে মুজাহিদের ট্রেনিং পাওয়া আর পরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ট্রেনিং তাঁর মনোবল আর সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি তাই সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া শুরু করেছেন। কোদালকাঠির যেখানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ, সেখানে কদিন আগে হঠাৎ আক্রমণ করেছিল পাকিস্তানিরা। মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সৈন্যদের লড়াই হলো। সেই লড়াইয়ে হামিদুর ভালো করেছেন। অল্প বয়স, শরীর-স্বাস্থ্য সুঠাম আর বেসিক ট্রেনিং অনেক এফএফের চেয়ে ভালো। যোদ্ধা হিসেবে তাই তাঁর ভালো করারই কথা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাঁর সাহস আছে, তিনি কথা শোনেন, যা বলা হবে তা-ই পালন করবেন। এমন সৈনিকই তো অধিনায়কদের প্রথম পছন্দের।

    কুয়াশার চাদরে ঢেকে তাঁরা ধীরে ধীরে পা রাখেন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে। ধলুই পোস্টটার চারদিকে গাছগাছালি কেটে তারা পরিষ্কার করে রেখেছে। সেটা ১৬০০ বর্গগজের বেশি জায়গা নয়।

    কিন্তু তার চারপাশে চা-বাগান, পাহাড়ের চড়াই-উতরাই, গাছগাছালি প্রচুর। আক্রমণ করার জন্য আদর্শ জায়গা। অসুবিধা হলো, নিজেদের পোস্টটা পাকিস্তানিরা বানিয়েছে উঁচুতে। সেখান থেকে গুলি ছুড়লে নিচের আক্রমণকারীরা অসুবিধায় পড়বেই।

    তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলা সম্পন্ন। কাইয়ুম প্রথম ফায়ারটা করবেন। তারপর তিন দিক থেকে একযোগে প্রচণ্ড আক্রমণ করবেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রথমেই প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করলে অনেক সময় কাজ হয়। শত্রুরা শক্তির প্রচণ্ডতা আঁচ করে সহজেই রণে ভঙ্গ দেয়।

    কিন্তু কুয়াশা এত নিচু হয়ে আছে যে ঠিকভাবে ওদের পোস্টটা দেখা যাচ্ছে না। গাছের ওপরে আলো ফুটে আছে। কিন্তু মানুষসমান উচ্চতায় কুয়াশা। তাঁরা সামনে কিছুই দেখছেন না।

    একটা উপায় আছে। একজনকে গাছে তুলে দেওয়া।

    তিনি ওপর থেকে দেখুন, ঠিক কোন জায়গায় পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘাঁটিটা।

    একজন মুক্তিবাহিনীর ছেলে উঠে পড়েন গাছে, ‘স্যার, ঠিক এই বরাবর স্যার।’

    বলতে না-বলতেই শত্রু বাহিনী গুলি ছুড়তে শুরু করে। মুহূর্তেই গর্জে ওঠে কাইয়ুমের রাইফেল। আর তিন দিক থেকে শত্রু বাহিনীর গুলির উৎস অভিমুখে একযোগে পাল্টা গুলি চালাতে থাকে মুক্তিবাহিনী।

    উভয় পক্ষ গুলি চালাচ্ছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী এগোতে পারছে না। ওদের এলএমজি পোস্টটা বড় জ্বালাচ্ছে। ঠিকমতো বসিয়েছে তারা এলএমজি। সেই এলএমজির নাগালের মধ্যে কিছুতেই ঢোকা যাচ্ছে না।

    না, আর তো সহ্য করা যায় না। আজ যে করেই হোক, ধলুই তারা শত্রুমুক্ত করবেই।

    একটাই করণীয়।

    একজনকে সাহস দেখাতে হবে। ক্রলিং করে যেতে হবে পোস্টের একেবারে হাতের নাগালে। হ্যান্ডগ্রেনেড ছুড়ে মারতে হবে এলএমজি পোস্টের বাংকারে। তাহলেই নিষ্ক্রিয় হবে শত্রুর এলএমজি। তারপর ধলুই দখল মুহূর্তকয়েকের ব্যাপার।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম তখন একটা নালার ভেতরে। দুপাশে নলখাগড়া, ঢোলকলমি, কলমিলতা, ধইঞ্চা, লজ্জাবতী, শটির ঝোপঝাড়। দু-একজন মুক্তিযোদ্ধার পায়ে জোঁক গেঁথে বসেছে। নলিনের কনুই ছিঁড়ে গেছে কাঁটা গাছে। রক্ত ঝরছে। কিন্তু যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে এগুলো কোনো খেয়াল করার মতো ব্যাপারই নয়।

    মাথার ওপর দিয়ে শাঁই করে শাঁই করে গুলি উড়ে যাচ্ছে।

    পাখিরা আর্তনাদ করে উড়ে উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে যেদিকে পারে।

    কাইয়ুম বললেন, একজন সাহসী জওয়ান আমার দরকার। কে যাবে? এলএমজি পোস্টে যাবে পেছন দিক দিয়ে। ক্রল করে, চা-পাতা, ঝোপঝাড়ের আড়ালে দ্রুত। দুটো গ্রেনেড দিচ্ছি সঙ্গে। বাংকারের ভেতরে গ্রেনেড ছুড়তে হবে। এলএমজিটা থামিয়ে দিতে পারলেই উই উইল ব্রেক ইন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তিন দিক থেকে একযোগে ঢুকে যাব। ওদের বাকি লোকেরা তখন পালানোর পথ পাবে না। ওদের এলএমজি পোস্ট হবে আমাদের এলএমজি পোস্ট। কে যাবে?

    হামিদুর বললেন, ‘আমি যাব স্যার।’

    সময় নেই। দুটো গ্রেনেড দ্রুত তুলে দেওয়া হলো হামিদুরের হাতে।

    হামিদুর ক্রল করছেন গুইসাপের মতো। কিন্তু দ্রুত। চা-পাতা নড়ছে। বিষকাটালির ঝোপ দুলছে।

    ডান দিক থেকে হঠাৎ আক্রমণ। শত্রু বিভ্রান্ত।

    বাইনোকুলার দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন কাইয়ুম। কুয়াশাটা কি আজকে যাবেই না, না যাওয়াই ভালো। তাহলে কুয়াশার আড়ালে হামিদুর পৌঁছে যেতে পারবেন শত্রুর পোস্টে।

    দ্রিম দ্রিম। দুটো গ্রেনেড চার্জের শব্দ।

    তারপর স্তব্ধতা। মানে এলএমজি পোস্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।

    এক দল মুক্তিবাহিনী ছুটে গেল এলএমজি পোস্টে। তখনো সেখানে ধোঁয়া উড়ছে।

    কিন্তু হামিদুর কই?

    এলএমজি পোস্টের ১০ গজ নিচে পড়ে আছেন হামিদুর। রক্তে তাঁর কাঁধ ভেসে যাচ্ছে। পেটের দিকটায় রক্তের বন্যা।

    কথা বলতে পারলেন না হামিদুর। স্তব্ধ হয়ে গেল সবকিছু।

    মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর দেহ কাঁধে তুললেন। নিয়ে এলেন তাঁকে আম্বাসার হাসিমারা ছড়ায়। ত্রিপুরা জেলায়।

    সেখানেই কবরস্থ করা হলো তাঁকে। কাঁচা মাটি দেওয়া হলো তাঁর দেহের ওপরে। দেশের মুক্তির জন্য তিনি শহীদ হয়েছেন।

    ২৮ অক্টোবর যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা শেষ হলো ১ নভেম্বর। ধলুই শত্রুমুক্ত হলো। সেখানে উড়িয়ে দেওয়া হলো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

    এরও বহুদিন পর হামিদুরকে মনে পড়ল কাইয়ুমের। মনে হলো, হামিদুর কি শেষ কোনো কথা বলতে চেয়েছিলেন অন্তিম মুহূর্তটিতে?

    একসময় হামিদুর তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মাতৃভূমি কী। তিনি বলেছিলেন, দেশই হলো মা।

    হামিদুর কি মায়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিলেন? তিনি কি চেয়েছিলেন তাঁর শেষ আশ্রয় হোক মায়ের কোলে? কবরটা হোক দেশের মাটিতে?

    শহীদ হওয়ার ৩৬ বছর পরে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর উত্তোলন করে ত্রিপুরা থেকে ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেওয়া হয়।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম—যিনি পরে মেজর হয়েছিলেন—তাঁর মনে হয়, হামিদুর তাঁর মায়ের কাছে ফিরে আসতে পেরেছেন।

    হামিদুর রহমান

    জন্ম

    ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩

    মৃত্যু

    ২৮ অক্টোবর ১৯৭১

    জন্মস্থান

    খর্দ্দ খালিশপুর, মহেশপুর, ঝিনাইদহ

    যোদ্ধা

    ১ম ইস্ট বেঙ্গলের সি কোম্পানি

    যুদ্ধ

    সিলেটের শ্রীমঙ্গলের ধলুই সীমান্তে

    পদবি

    সিপাহি

    সমাধি

    প্রথমে ত্রিপুরার হাসিমারায়।

    পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে

    দুই পা হারানো ফিলিস্তিনিকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা

    বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে দুই পা হারানো এক ফিলিস্তিনিসহ দুইজনকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এসময় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
    শুক্রবার জুমার নামাজের পর ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে বিক্ষোভের সময় এই হত্যাকাণ্ড চালায় দখলদার বাহিনী। আহতদের পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবর: আনাদোলু এজেন্সি।
    ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেন, শহীদদের একজন ইয়াসের সোকার (৩২)। অপরজন ইব্রাহিম আবু সাউরাইয়া (২৯)।
    উল্লেখ্য, ইব্রাহিম আবু সাউরাইয়া ২০০৮ সালে গাজায় চালানো ইসরাইলের সর্বাত্মক সামরিক অভিযানে দুই পা হারিয়েছিলেন। ওই যুদ্ধে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে দখলদার ইহুদি সেনারা।

    এদিকে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বিক্ষোভে বড় ধরনের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হন যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
    প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী এবং তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে।

    যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, ইরান, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা ট্রাম্পের এই একতরফা ঘোষণার নিন্দা জানায়।
    ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেয়। সর্বাত্মক প্রতিরোধের ডাক দেয় অপর সংগঠন ফাতাহ। এরপর বিক্ষোভে গুলি করে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে দখলদার ইসরাইলি সেনারা। আটক করে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনিকে।

    সাম্প্রদায়িকতা : চীনে ধর্মকর্মে বিধি নিষেধ

    চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে অব্যাহত রয়েছে মুসলিম নিপীড়ন। প্রকাশ্যেই লঙ্ঘন করা হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার। কয়েক মাস আগে এ বছরের ১লা এপ্রিল মুসলিম পুরুষদের লম্বা দাড়ি ও মেয়েদের বোরকা নিষিদ্ধ করেছিল চীনা কর্তৃপক্ষ। প্রদেশের আইন প্রণেতারাও এ নিষেধাজ্ঞায় সম্মতি দিয়েছিলেন এবং তা প্রদেশটির সরকারী ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছিল।  (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২ এপ্রিল, ২০১৭)

    এখন আবার আদেশ জারি করা হয়েছে, মুসলিমেরা নিজেদের কাছে কুরআনে কারীম ও জায়নামায রাখতে পারবেন না। জায়নামায, কুরআন মাজীদ, তাসবীহসহ সকল ধর্মীয় সরঞ্জাম পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। অন্যথায় কঠোর শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছে। শুধু হুকুম ও হুমকিই নয়, প্রদেশের পুলিশ গ্রামে-শহরে সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ

    উঠেছে। (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৪ অক্টোবর, ২০১৭)

    এ যেন একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়েও ইসলাম চর্চার উপর নিষেধাজ্ঞা। ইসলামের কোনো চিহ্নই কি এরা ধরে রাখতে দিবে না মুসলমানদের? চীনা প্রশাসনের এই অন্যায় পদক্ষেপের এক সাহসী জবাব দিয়েছেন সেনেগালের জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার ডেম্বা বা। এখন লোনে তুর্কির ক্লাব বেসিক তাসে খেললেও মূলত তিনি  চীনের ফুটবল লিগের ক্লাব সাংহাই সেনহুয়ার একজন খেলোয়ার। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘যদি তারা (চাইনিজরা) জানত যে, মুসলিমরা মেঝেতেই নামায পড়তে পারে এবং লাখ লাখ মুসলিম কুরআন না খুলেই মুখস্থ পড়তে পারে, তাহলে সম্ভবত তারা মুসলমানদেরকে তাদের হৃৎপি- খুলে হস্তান্তরের আদেশ দিত।’ (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৪ অক্টোবর, ২০১৭, পৃ.৫)

    তার এই জবাবটি হাজার হাজার বার রি-টুইট হয়েছে। ইতিহাসও বারবার এই সত্য প্রমাণ করেছে যে, জুলুম-অত্যাচার করে মুসলমানদের দমানো যায় না। খোদ গণচীনের ইতিহাসও কি এটাই প্রমাণ করেনি?। মুসলিমেরা কি চীনের ভয়াবহ ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবে’র যুগ অতিক্রম করে আসেননি? এইসব বিধি-নিষেধ চীনের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণœ করবে এবং এসবের দ্বারা সংখ্যালঘু মুসলিমদের বীতশ্রদ্ধ করা ছাড়া আর কোনোই লাভ হবে না।

    আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দশকের পর দশক ধরে জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিমদের উপর নানা প্রকারের জুলুম-অত্যাচার হলেও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য নেই। যেন মানবাধিকার, ধর্মীয় অধিকার ইত্যাদি কোনো কিছুই মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

    বিশ^ব্যাপী ইসলাম ও মুসলিম-বিরোধী প্রচার-প্রচারণা দ্বারা দেশে দেশে মুসলমানদের প্রতি এই যে শীতল মনোভাব তৈরি করা হয়েছে এটি বর্তমান সভ্যতার কপালে অঙ্কিত এক ‘কলংক-রেখা’। ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীর অন্য সকল জাতি গোষ্ঠীর তুলনায় মুসলিমরাই সবচেয়ে উদার ও মানবতাবাদী জাতি। ইসলামের শৌর্য-বীর্যের যুগে অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি মুসলিমেরা যে উদারতা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করেছেন তা অন্য কোনো জাতি-গোষ্ঠীর ইতিহাসে পাওয়া যায় না। চীনের যে অঞ্চলগুলোতে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে তা প্রধানত মুসলিম মুবাল্লিগণের উন্নত জীবনযাত্রা ও উন্নত আখলাকের দ্বারা হয়েছে। ইসলামে কাউকে ইসলামগ্রহণে বাধ্য করার বিধান নেই এবং তা করাও হয়নি। যেসকল অঞ্চলে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে তা ইসলামের সত্যতা ও সৌন্দর্যের কারণে বিস্তার লাভ করেছে বলেই সীমাহীন জুলুম-অত্যাচারের পরও ইসলাম সেখানে টিকে আছে।

    জিনজিয়াং-এর মুসলিমদের উপর সাম্প্রতিক বিধি-নিষেধ চীনের কম্যুনিস্ট শাসন ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সেই কুখ্যাত যুগের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, যার লৌহ যবনিকা থেকে চীনারা বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে বিগত আশির দশক থেকেই। চীনের ইতিহাসে প্রসিদ্ধতম মামলাটিও তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নৃশংসতা ও অরাজকতার বিরুদ্ধেই। আশির দশক থেকেই ওখানে মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যেসকল ‘সংস্কার’ সূচিত হয়েছে জিনজিয়াংয়ের মুসলিমদের উপর আরোপিত এই সকল বিধি-নিষেধ কি তাতে কালিমা লেপন করছে না?

    এখানেও মুসলিম নিপীড়িনে ব্যবহৃত হচ্ছে সেই বহুল ব্যবহৃত ‘জঙ্গিবাদ দমনের’ অস্ত্র। বলা হচ্ছে, আঞ্চলিক রাজধানী উরুমকিতে একের পর এক দাঙ্গায় প্রায় ২০০ লোকের প্রাণহানির পর ২০০৯ সালে চীন সরকার এ অঞ্চলের মুসলমানদের উপর…।

    এই সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামার যথাযথ তদন্ত হচ্ছে কি? সঠিক তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার ন্যায়সঙ্গত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, কিন্তু তা না করে একটি গোটা জাতির বিরুদ্ধে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণ কখনোই শান্তির অনুকূল ব্যবস্থা হতে পারে না।

    মনে পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার ‘ওয়ান নেশন’ দল থেকে নির্বাচিত উগ্রবাদী নারী সিনেটর পলিন হ্যানসনের ঘটনাটি। এ বছরেরই ১৭ই আগস্ট পলিন হ্যানসন বোরকা পরে সিনেটে যোগ দিলে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল জর্জ ব্র্যান্ডিস তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘সিনেটর হ্যানসন! আজ আপনার বোরকা পরে চেম্বারে অবির্ভূত হওয়ার বিষয়টি আমি এড়িয়ে যেতে পারছি না। কারণ, আমরা সবাই জানি, আপনি ইসলামের অনুসারী নন। আমি আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে সতর্ক করতে ও পরামর্শ দিতে চাই, আপনি অস্ট্রেলিয়ানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে যে অপরাধ করেছেন সে ব্যাপারে সতর্ক হোন।’

    জর্জ ব্র্যান্ডিস আরো বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে বিশ^াসী পাঁচ লাখ অস্ট্রেলিয়ান রয়েছেন আমাদের অস্ট্রেলিয়ায়। এদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, ভালো অস্ট্রেলিয়ান। আর সিনেটর হ্যানসন, চরমভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভালো অস্ট্রেলিয়ান আর কঠোর অনুসারী মুসলিম হওয়ার মাঝে কোনো দ্বন্দ নেই।’

    এর পর জর্জ ব্র্যান্ডিস ঐ সিনেটরকে লক্ষ্য করে যে কথাটি বলেছেনÑ তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে তার ‘প্রি-এমিনেন্ট পোর্টফলিও রেসপন্সিবিলিটি’ রয়েছে। আর গোয়েন্দা বাহিনীর পরামর্র্শও সুস্পষ্ট, চরমপন্থা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন ইসলামী সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা। এই কমিউনিটিকে উপহাস করা, এক কোণে ঠেলে দেয়া, এর ধর্মীয় পোশাক নিয়ে তামাশা করা ইত্যাদি হচ্ছে মর্মাহত করার মতো বিষয়। আমি আপনাকে বলব, আপনি আপনার আচরণের উপর নজর দিন। (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২১ আগস্ট, ২০১৭)

    পাঁচ লক্ষ মুসলিমের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় যদি জর্জ ব্র্যান্ডিসের মতো একজন সুবিবেচক  আইন কর্মকর্তা থাকতে পারেন তাহলে পাঁচ কোটিরও বেশি মুসলিমের দেশ চায়নাতে কি এরকম দু-চারজন জর্জ ব্র্যান্ডিসও নেই, যারা সংখ্যালঘু মুসলমানদের ব্যাপারে তাদের রাষ্ট্রকে সুপরামর্শ দিতে পারেন?

    পরিশেষে আল্লামা মুফতী তাকী উসমানীর একটি পরামর্শ এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। তিনি ১৯৮৫-এর নভেম্বরে চীন সফরের যে সফরনামা লিখেছেন তাতে এক জায়গায় লিখেছেনÑ

     

    ‘এইসব বিষয়ের সাথে এদিকটিও সামনে থাকা জরুরি যে, মুসলমানদের বর্তমান স্বাধীনতাটুকুও এসেছে দীর্ঘ নির্যাতন-নিপীড়নের পর। কাজেই আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা  উচিত হবে না, যা এই স্বাধীনতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এখন মুসলমানদের এগিয়ে যেতে হবে গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সাথে।’ (জাহানে দীদাহ, পৃ. ৪৭১)