• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখতে জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার মতৈক্য

    জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরমাণু মুক্ত করণের লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন।

    গতকাল ওয়াশিংটনে, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোও কোওনো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং গিয়োন হোয়া এক বৈঠকে মিলিত হন।

    তাঁরা, অতীতে অনুষ্ঠিত আলোচনা উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু মুক্ত করণের পথে ধাবিত না করায় দেশটির উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখা প্রয়োজনীয় বলে একমত হন।

    মিঃ কোওনো বলেন যে, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শকদের গ্রহণ করলে এজন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ব্যয় মেটানোর জন্য সহায়তা করতে জাপান প্রস্তুত রয়েছে।

    মিঃ কোওনো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জেইন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকে উত্তর কোরিয়ায় জাপানী নাগরিক অপহরণ সমস্যাটি তুলে ধরতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

    মিঃ কোওনো, সমন্বিত উপায়ে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অপহরণ সমস্যাগুলোর সমাধান কামনা করা জাপানের অবস্থান জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

    বিনোদন নারী হিসেবে পরিচিত সমস্যাটির বিষয়ে মন্ত্রীরা, এবিষয়ে তাঁদের দেশগুলো উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি ভবিষ্যতমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করবেন বলে একমত হন।

    বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে মিঃ কোওনো, উত্তর কোরিয়া পর্যায়ক্রমে পরমাণু মুক্ত করণের পথে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    তিনি, সমস্যাটি মোকাবিলায় জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে তাঁদের অবস্থানে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয় বলে উল্লেখ করেন।

    উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখতে জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার মতৈক্য
    জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরমাণু মুক্ত করণের লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন।

    গতকাল ওয়াশিংটনে, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোও কোওনো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং গিয়োন হোয়া এক বৈঠকে মিলিত হন।

    তাঁরা, অতীতে অনুষ্ঠিত আলোচনা উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু মুক্ত করণের পথে ধাবিত না করায় দেশটির উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখা প্রয়োজনীয় বলে একমত হন।

    মিঃ কোওনো বলেন যে, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শকদের গ্রহণ করলে এজন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ব্যয় মেটানোর জন্য সহায়তা করতে জাপান প্রস্তুত রয়েছে।

    মিঃ কোওনো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জেইন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকে উত্তর কোরিয়ায় জাপানী নাগরিক অপহরণ সমস্যাটি তুলে ধরতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

    মিঃ কোওনো, সমন্বিত উপায়ে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অপহরণ সমস্যাগুলোর সমাধান কামনা করা জাপানের অবস্থান জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

    বিনোদন নারী হিসেবে পরিচিত সমস্যাটির বিষয়ে মন্ত্রীরা, এবিষয়ে তাঁদের দেশগুলো উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি ভবিষ্যতমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করবেন বলে একমত হন।

    বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে মিঃ কোওনো, উত্তর কোরিয়া পর্যায়ক্রমে পরমাণু মুক্ত করণের পথে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    তিনি, সমস্যাটি মোকাবিলায় জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে তাঁদের অবস্থানে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয় বলে উল্লেখ করেন।

    আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

    প্রথম কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না এবারও। ভারতের বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফি টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে দুর্দান্ত একটা আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। ১৬৭ রানের টার্গেটে শেষ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল পাঁচ রানের। সেই বলে ছক্কা মেরে চার উইকেটের নাটকীয় জয় তুলে নেয় ভারত। তাই পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে ওঠেও বহুজাতিক টুর্নামেন্টে ট্রফি জেতার অপেক্ষায় থাকতে হলো টাইগারদের।
    ফাইনালে জয়ের জন্য ১৬৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারত দুর্দান্ত সূচনা করেছিল। ৩৭ রানের মধ্যে শিখর ধাওয়ান ও সুরেশ রায়নার উইকেট হারায়। এর মধ্যে রোহিত শর্মা ও লুকেস রাহুলের ব্যাটে প্রত্যাবর্তন করে ভারত। তবে হঠাৎই দুই উইকেট হারিয়ে ভারত চাপে পড়ে যায়। ৫৬ রান করে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও রাহুল (২৪) আউট হয়ে যান। ১৪ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় চার উইকেটে ১০৪ রান।
    এরপর সমান তালেই লড়েছে বাংলাদেশ। ১৮তম ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র ১ রান দিয়ে এক উইকেট তুলে নেন। শেষ দুই ওবারে ৩৪ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। কিন্তু পরের ওভারে রুবেল ২২ রান দিয়ে ভারতের কাজকে সহজ করে দেয়। যে কারণে শেষ ওভারে সৌম্য দুর্দান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েও জয় আটকাতে পারেননি। জয়ের মূল নায়ক বলতে হবে দিনেশ কার্তিককেই। শেষ দিকে মাত্র ৮ বল থেকে দুটি চার ও তিনটি ছক্কার মারে ২৯ রান করে ভারতের জন্য অসম্ভবকে সম্ভব করে দেন তিনি।
    এর আগে ভারতকে ১৬৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করেছে সাকিব আল হাসানের দল। দুর্দান্ত একটা সূচনার আভাস দিয়ে আউট হয়ে যান দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৭ রানে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে সুরেশ রায়নার হাতে ধরা পড়েন লিটন।
    ওয়ানডাউনে তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাব্বির রহমান। কিন্তু দলের স্কোরে কোন রান যোগ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে যান তামিমও। চাহালের বলে সীমানার দড়ির একেবারে উপরে শারদুল ঠাকুরের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৩৩ রানে আউট হন সৌম্য সরকার। চতুর্থ উইকেটে সাব্বিরকে আশা জাগাতে থাকলেও জুটিতে ৩৫ রান করে ফিরেন মুশফিকও। দলীয় ১০৪ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ (২১)। সাব্বিরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন তিনি। এরপর রান আউট হন অধিনায়ক সাকিব।
    আর দলীয় ১৪৭ রানে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান সাব্বিরও ফিরেন সাজঘরে। ৫০ বল থেকে সাতটি চার ও চারটি ছক্কায় সাব্বির করেন ৭৭ রান। দলীয় স্কোরে এক রান যোগ হতেই ফিরেন রুবেল হোসেনও। তবে শেষ দিকে মিরাজ কিছুটা উত্তেজনা ছড়ান। ৭ বল থেকে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ১৯ রান করেন মিরাজ।
    স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারত ও বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করে শ্রীলঙ্কা।

    স্বাধীনতার মাস মার্চ : ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

    সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

    ১৯৪০ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখ, তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের অন্যতম মহানগরী লাহোরে তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল : অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে তৎকালীন বাংলার অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। ওই প্রস্তাব মোতাবেক তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হতো বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশ মিলিতভাবে ১৯৪০ সালে ভৌগোলিক ও প্রশাসনিকভাবে যেমন ছিল, সেই বঙ্গপ্রদেশ নিয়ে। দ্বিতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র হতো বর্তমানের পাকিস্তান নামক দেশটি। তৃতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র হতো বাকি ভারতের অমুসলিম অংশটি নিয়ে। চতুর্থ বা পঞ্চম বা এ রূপ আরো স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির যৌক্তিকতা ও অবকাশ ওই প্রস্তাবে ছিল। ২৩ মার্চ ১৯৪০ তারিখে এই প্রস্তাবটি অত্যন্ত উষ্ণভাবে ও জোরালোভাবে সমর্থিত হয়ে পাস হয়েছিল। এই প্রস্তাবটি ইতিহাসে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে খ্যাত। আজকের (২০১৮) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর মহানগরীতে ‘মিনার-এ পাকিস্তান’ নামক একটি বিরাট স্মৃতিস্তম্ভ আছে ওই জায়গাতেই, পাকিস্তান প্রস্তাব পাস হওয়ার ঐতিহ্যস্বরূপ। এ পাকিস্তান প্রস্তাব বাস্তবায়ন হওয়ার পথে যখন ছিল, তখন তৎকালীন মুসলিম লীগের অভ্যন্তরে এবং তৎকালীন মুসলিম নেতৃত্বের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্র রচিত হয়। ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৪৬ সালে তৎকালীন অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উদ্যোগে, মুসলিম লীগের সভায়, পাকিস্তান প্রস্তাবটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত পাকিস্তান প্রস্তাব মোতাবেক, তৎকালীন (অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের) ব্রিটিশ-ভারতের পূর্ব অংশে অবস্থিত বঙ্গপ্রদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এবং তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের পশ্চিম অংশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশগুলো মিলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে যার নাম পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়; যার পূর্ব অংশ ছিল পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান। ২৩ বছরের মাথায় সেই পূর্ব পাকিস্তান, রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়, স্বাধীন বাংলাদেশে।
    স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করে রাখছি। পয়লা মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রতিশ্রæতি ভঙ্গের প্রথম পদক্ষেপ নেন; তিনি নবনির্বাচিত সদস্যসংবলিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন; ১৯৭১ সালের মার্চের ৩ তারিখ ছিল সেই অধিবেশনের তারিখ। ২ মার্চ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে, তৎকালীন ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রবের হাত দিয়ে, এক বিশাল ছাত্র সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ৩ মার্চ একই কলাভবনের সামনে তৎকালীন ছাত্রনেতা শাজাহান সিরাজের কণ্ঠ দিয়ে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। ৭ মার্চ ছিল অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক ভাষণের দিন; তৎকালীন ঢাকা মহানগরের রমনা রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখ লাখ মানুষের সামনে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণটি এখন ইউনেস্কোর সময়োপযোগী সৌজন্যে বিশ্ব মেমোরির ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ৭ মার্চের ভাষণ ছিল ওই মুহূর্তের প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। সেই দিকনির্দেশনার ভিত্তিতেই পরবর্তী দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়নে, ওই দিন তথা ১৯৭১-এর ৭ মার্চ তারিখে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা না থাকলেও, স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য সব ধরনের উপাত্ত ও ইন্ধন উপস্থিত ছিল। ১৯ মার্চ ১৯৭১-এর কথা বলি। তখনকার আমলে জায়গাটি প্রসিদ্ধ ছিল জয়দেবপুর নামে; এটি ছিল একটি থানা সদর দপ্তর এবং ইতিহাসখ্যাত ভাওয়াল রাজাদের রাজধানী বা আবাসস্থল। সেই আবাসস্থলের নাম ছিল জয়দেবপুর রাজবাড়ী। বর্তমানে সেখানে গাজীপুর জেলার সদর দফতর অবস্থিত। ওই ১৯ মার্চ তারিখে, ভাওয়াল রাজাদের রাজবাড়ীতে অবস্থানকারী দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট স্থানীয় বেসামরিক জনগণকে নিয়ে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তখন আমি ছিলাম ওই দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কনিষ্ঠতম অফিসার এবং বিদ্রোহীদের একজন।
    ২৫ মার্চের দিনের শেষে রাত্রি ছিল বাংলার ইতিহাসের কালরাত্রি, নিরীহ মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের রাত। ২৫ মার্চ দিনের শেষে পাকিস্তানিদের হামলার মুখে সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ হয়েছিল; প্রথম বিদ্রোহটি ছিল চট্টগ্রামে তার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও ঐতিহাসিক বিদ্রোহ হলো চট্টগ্রাম মহানগরের ষোলোশহরে অবস্থিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ওই রেজিমেন্ট কর্তৃক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা। একই ২৬ মার্চ তারিখে, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল-গাজীপুর থেকে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে; কুমিল্লা-মৌলভীবাজার-ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে। ২৬ মার্চ কাপ্তাই-চট্টগ্রাম-চুয়াডাঙ্গা ইত্যাদি এলাকা থেকে তৎকালীন ইপিআর-এর বাঙালিরা বিদ্রোহ করে। ২৬ মার্চ হলো মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিন তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিন। ২৭ মার্চ তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগরের অদূরে অবস্থিত কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে, তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা; তিনি প্রথমে নিজের নামে ঘোষণা করেন এবং কয়েক ঘণ্টা পরেই বঙ্গবন্ধুর নামে আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন; এ ঘোষণাটিই পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে শুনেছিল। তৎকালীন রংপুর জেলার সৈয়দপুর সেনানিবাসে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট কর্নেল, ফলে তারা বিদ্রোহ করার সময় প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তৎকালীন যশোর সেনানিবাসে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক একজন বাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল হলেও সিদ্ধান্তহীনতা বা যেকোনো কারণে তিনি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে পারেননি; ফলে দুই দিন বিলম্বে ২৯ মার্চ তারিখে তৎকালীন ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে, এ ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করে এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে যুদ্ধ করতে করতেই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়।
    বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস দুইটি পরিষ্কার স্বচ্ছ পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্ব হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাত্রি থেকে নিয়ে পেছনের দিকে বা অতীতের দিকে পাঁচ বছর বা সাত বছর বা উনিশ বছর বা ২৩ বছর ধরে ব্যাপ্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস দ্বিতীয় পর্বের শুরু হচ্ছে ২৬ মার্চ থেকে এবং শেষ হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে। প্রথম পর্বের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলো, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক দল ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্ব দুই ভাগে বিভক্ত। দ্বিতীয় পর্ব তথা ২৬ মার্চ ১৯৭১ পরবর্তী নেতৃত্বের একটা অংশ হলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দ্বিতীয় অংশ হলো মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সামরিক নেতৃত্ব। দ্বিতীয় পর্বের তথা ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে পরবর্তী নয় মাস রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করেছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে মুজিবনগর বা কলকাতাকেন্দ্রিক প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। দ্বিতীয় পর্বের তথা ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে পরবর্তী ৯ মাস রণাঙ্গনের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন, প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী এবং চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করেন সেক্টর ও ফোর্স কমান্ডাররা, সাবসেক্টর কমান্ডাররা, ব্যাটালিয়ন কমান্ডাররা, কোম্পানি কমান্ডাররা, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রæপ কমান্ডাররা, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা কমান্ডাররা, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের থানা কমান্ডাররা ইত্যাদি।
    স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস কোনোমতেই ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে নয় বরং আরো বহু বছর আগে থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস শুরু; এই কথা অতীতেও বহু কলামে বা আমার লেখা বইয়ে লিখেছি। আজ তার ব্যাখ্যায় যাবো না। যুদ্ধকালীন সময়েও, রণাঙ্গনে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন, তেমনই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরাও রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের পেছনে সহায়কশক্তি ছিলেন। বিগত ৪৬ বছরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পরিচয়ধারী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। কিন্তু রণাঙ্গনের যোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। একটি দুঃখজনক অনুধাবন বা মূল্যায়ন উপস্থাপন করছি। ৪৬ বছরের ক্রমাগত ও অব্যাহত চেষ্টার ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাসটিকে গৌণ ও প্রান্তিকরণ (ইংরেজি পরিভাষায় মার্জিনালাইজড) করে ফেলা হয়েছে। এই প্রান্তিকরণ বা মার্জিনালাইজেশন প্রক্রিয়া ১৯৭২-এর শুরুতেই আরম্ভ হয়েছিল। পরবর্তী অনুচ্ছেদে যৎকিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা আছে।
    সেই সময় বঙ্গবন্ধু সরকারের সামনে দুইটা রাজনৈতিক চয়েজ বা অপশন ছিল। একটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব দলের মানুষকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করে বাংলাদেশ শাসন করা। আরেকটি চয়েজ ছিল যেহেতু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে সেহেতু শুধু আওয়ামী লীগকে দিয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ শাসন করা। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় অপশন তথা আওয়ামী লীগের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেন। ফলে জাসদের জন্ম হয়; যদিও জাসদের জন্মের এটাই একমাত্র কারণ নয়। ১৯৭২ সালের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু সরকার আহŸান জানিয়েছিল রণাঙ্গনের সব মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য সব মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধের আগে তার যেই পেশা ছিল সে যেন ওই পেশাতেই ফিরে যায়। উদাহরণস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার মৎস্যজীবীরা, মুক্তিযুদ্ধের আগের স্কুল শিক্ষকেরা, মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার মুদি দোকানদাররা, মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার কৃষক-শ্রমিক-ছাত্ররা সবাই নিজ নিজ পেশায় ফেরত গেলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার পুলিশরা পুলিশে ফেরত গেলেন, ইপিআর ইপিআরে (নতুন নামে বিডিআর, বর্তমান নাম বিজিবি) ফেরত গেলেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সামরিক বাহিনীতে ফেরত গেলেন, সিএসপি বা ইপিসিএস বা পাকিস্তান আমলের অন্যান্য আমলা-ক্যাডারের কর্মকর্তা নতুন দেশ (বাংলাদেশের) ক্যাডারগুলোতে ফেরত গেলেন বা প্রশাসনে যুক্ত হলেন। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তথা বাংলাদেশের মাটিতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন এমন মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে, যুদ্ধ পূর্বকালের রাজনৈতিক কর্মী তুলনামূলকভাবে কমই ছিলেন; বেশির ভাগ রাজনৈতিক কর্মীই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন অথবা বিএলএফের সদস্য ছিলেন। বিএলএফ মানে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স; যার জনপ্রিয় নাম ছিল মুজিব বাহিনী। ওই বাহিনীর সদস্যরা অবশ্যই ছাত্রলীগ-যুবলীগের পরীক্ষিত কর্মী ছিলেন। সেই বাহিনীটি ১৯৭১-এর প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতির নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। বিএলএফ নামক বাহিনীর জন্ম, গঠন, লালন-পালন, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সব কিছুই ছিল ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। ১৯৭১ সালে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আপন ভাগিনা শেখ ফজলুল হক মনি। অতএব ১৯৭২ সালের শুরুতে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সাড়া দিয়ে, সব মুক্তিযোদ্ধা সাবেক রাজনৈতিক কর্মী, তাদের সাবেক পেশা তথা রাজনীতিতেই ফেরত গেলেন। অতএব ১৯৭২ সালের শুরু থেকেই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ শাসন করার জন্য পাওয়া গেল সাবেক রাজনৈতিক কর্মীদের এবং সাবেক আমলাদের যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। যেসব মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের শাসনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারলেন, তারা ছিলেন বিএলএফ। তাদের সাথে যুক্ত হলেন কিছুসংখ্যক নব্যরাজনৈতিক কর্মী, যারা কোনো প্রকারেই মুক্তিযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট হতে পারেননি এবং যুক্ত হলেন হাজার হাজার পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তারা যারা ৯ মাস যেকোনো কারণেই হোক যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সারমর্ম: রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের শাসনপদ্ধতি বা প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারেননি; ১৯৭২-এর শুরু থেকেই তাদের স্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারির মতো অবস্থানে বসানো হলো। তাদের চোখের সামনেই হয় বাংলাদেশ উন্নতি করছিল অথবা বাংলাদেশ স্থবির হয়েছিল অথবা বাংলাদেশের অবনতি হচ্ছিল। সন্তান জন্ম দেয়ার পর সন্তানের ভালো-মন্দ এবং লালন-পালনে সন্তানের মা-বাবারা যতটুকু আবেগের চেতনায় ও দায়িত্বের চেতনায় সক্রিয় থাকেন, ততটুকু বেতনভুক নার্স থাকতে পারেন না; এটাই স্বাভাবিক। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সেই আমলের বেদনা, সেই আমলের কোনো পর্যায়েই উপযুক্তভাবে মূল্যায়িত হয়নি। এই অবমূল্যায়নের খেসারত বাংলাদেশ অনেক দিয়েছে। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের প্রবীণত্বে এসে একান্ত কামনা আর যেন খেসারত দিতে না হয়।
    রাম ও অযোধ্যা বাংলাদেশের সাহিত্যে ও ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুপরিচিত শব্দ ও নাম। ইতিহাসের বা অতীতের কোনো কিছুর সাথে বর্তমানের বিচ্যুতি বা পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে অনেক সময় বাংলা ভাষায় প্রচলিত প্রবাদ ব্যবহার করা হয়। যথা: সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। রাম ও অযোধ্যার কাহিনী বা ইতিহাস হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্রগ্রন্থে (নাম : রামায়ণ) আছে। ২০১৮ সালে এসে রামের মতো পিতৃভক্ত ও ভ্রাতৃপ্রিয় এবং প্রজাঅনুরাগী শাসক যেমন পাওয়া যাবে না, তেমনই অযোধ্যার মতো শান্তি ও স্থিতিশীল নগরীও পাওয়া যাবে না। এটা ১৯৭২ না, তখনকার রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা এর সংখ্যাও আর অত নেই, ওই আমলের মতো সচেতনতাও আর নেই। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত ইতিহাস কেন পুনরাবৃত্তি করলাম? পুনরাবৃত্তি করার উদ্দেশ্য- এই কলামের তরুণ পাঠকরা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্নপর্যায়ের, বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাস বা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট কিঞ্চিৎ হলেও অনুধাবন করতে পারেন। যেহেতু আজকের তরুণ পাঠকেরাই, তরুণ রাজনৈতিক কর্মীরাই, যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের অনুঘটক হতে বাধ্য। যেই পুনরাবৃত্তি আমি করলাম, যেই বিচ্যুতিগুলোর কথা ওপরে তুলে ধরলাম, সেগুলো যদি অনুসরণ করি, ছাপার লাইনগুলোর মাঝখানে শূন্যস্থানের কথাগুলো যদি অনুমান করি, তাহলে, বর্তমান নিয়ে চিন্তা ও পরিষ্কার মূল্যায়ন করা সহজ হবে। সংক্ষিপ্ত কলামে কোনোমতেই পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা সম্ভব নয়।
    লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

    এবার সুপ্রিম বুলেট ট্রেন আনছে জাপান

    জাপানে বিকাশ করা উন্নত এবং উচ্চগতির রেল প্রযুক্তি শিনকানসেন। সর্বপ্রথম ১৯৬৪ সালে জাপান রেলওয়ে গ্রুপ শিনকানসেনের প্রথম সংস্করণ চালু করে। বর্তমানে জাপানের শিনকানসেন চালনার বিস্তার আড়াই হাজার কিলোমিটারের মতো। সময়ের সাথে সাথে শিনকানসেনের সংস্করণ উন্নত করছে জাপান রেলওয়ে। ২০২০ সালে জাপানে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপকে ঘিরেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় জাপান। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে জাপানে চালু হবে শিনকানসেনের নতুন সংস্করণ এন৭০০এস। এর আগে ২০১৩ সালে জাপানের সর্বশেষ উন্নত প্রযুক্তির ট্রেন ছিল সিনকানসেন এন৭০০এ। আগের মডেলের মতো এটির গতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার হলেও এই ট্রেনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা করতে চায় জাপান।

    জেআর টোকাই শিনকানসেনের পরিচালনা বিভাগের উপ-মহাপরিচালক মাসাউকি উয়েনো বলেন, নতুন সংস্করণটি বুলেট ট্রেনের প্রধান কারিগরি দিক এবং প্রযুক্তিগত উপকরণে সংস্কার করা হবে। উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া থাকবে ট্রেনটিতে। নতুন ট্রেনের সবচেয়ে বড় দিক হলো, ট্রেনটি হবে পরিবেশ বান্ধব এবং খুব কম শব্দ করে চলবে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে বাতাস ঠান্ডা করার প্রযুক্তি থাকবে এই ট্রেনে। ভ্রমণে বাড়তি আনন্দ পাবে যাত্রীরা। এটিকে সুপ্রিম বুলেট ট্রেন বলেও অবিহিত করা হচ্ছে। টানেলের মধ্যে ঢোকার সময় খুব কম পরিমাণ শব্দ হবে এবং বাতাসের সাথেও সংঘর্ষ কম হবে। আগের মডেলের চেয়ে এগারো টন ওজন কম হবে সুপ্রিম বুলেট ট্রেনে। ওজন কমানোর জন্য ট্রেনে ব্যবহার করা হয়েছে সিলিকন কার্বাইড সেমিকন্ডাক্টর। সব মিলিয়ে এই   ট্রেনে কম শক্তি ব্যয় হবে। সুপ্রিম বুলেট ট্রেন শুধু দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না জাপান। দেশের ট্রেন যাত্রীদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদেরও আকৃষ্ট করতে চায় তারা।

    নেপালে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিধ্বস্ত

    নিহত ৫০ : জীবিত ২০ : বø্যাক বক্স উদ্ধার : পাইলটকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগ : বিমানে ৪ ক্রু বাংলাদেশের ৩২ নেপালের ৩৩ মালদ্বীপ ও চীনের ১ জন করে যাত্রী ছিলেন : প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী : সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন।

    বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান গতকাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে (টিআইএ) বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট পৃথুলা রশিদসহ বাংলাদেশ ও নেপালের নাগরিকসহ কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন । বেঁচে গেছেন অন্তত ২০ জন। তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। নেপালের সেনা সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ত্রিভূবন বিমান বন্দরের মুখপাত্র প্রিম নাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতিতে জানা গেছে, বিমানটি অবতরণ করার সময় বিমান বন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এস২-এজিইউ নামের এ বিমানটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় এবং স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে টিআইএ অবতরণ করে। বিধ্বস্ত হবার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানবন্দরের উদ্ধারকারী দল এবং নেপাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে বিমানের বø্যাক বক্স উদ্ধার করেছেন এবং তা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ও ঘটনাস্থল নেপালে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেল সিভিল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা আজ কাঠমাÐুর উদ্দেশে উড়ে যাবেন। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা নিহতদের জন্য পরম করুণাময়ের শান্তি কামনা করেছেন এবং আহতের দ্রæত সুস্থতা কামনা করেছেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনাও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতি মুহূর্তের খবর নিচ্ছেন। তিনি তার সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ দেশে ফিরছেন।

    ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন প্রধান পাইলট আবিদ সুলতান। ইউএস-বাংলা এয়ালাইন্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা হলেন, ইমরানা কবির হাসি, কবির হোসেন, মেহেদী হাসান, রিজওয়ানা আব্দুল্লাহ স্বর্ণা সাঈদা কামরুন নাহার, শাহরিন আহমেদ, মো. শাহীন বেপারি, মো. রিজওয়ানুল হক, প্রিন্সি ধামি, সামিরা বায়জানকার, কিশোর ত্রিপাটি, হরিপ্রসাদ সুবেদী, দয়ারাম তামরাকার, কিষাণ পান্ডে, আশিস রঞ্জিত, বিনোদ পৌদাল, সনম সখ্য, দিনেশ হুমাগাইন, বসন্ত বহরা।

    বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পাইলট, কো-পাইলটসহ ৪ ক্রু ও ৬৭ জন আরোহীর মধ্যে ছিলেন ৩৭ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও দুইজন শিশু। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩২, নেপালের ৩৩ এবং মালদ্বীপ ও চীনের ১ জন করে যাত্রী ছিলেন। বিধ্বস্তের পরপরই ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নেপাল সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেমনাথ ঠাকুর জানান, ২৫ জনকে কাঠমান্ডু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্যে পাইলট পৃথুলা রশিদ ও ক্রু খাজা হোসেনের নাম রয়েছে। তবে অপর ক্রু’র সন্ধান পাওয়া যায়নি।

    নেপালের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র গোকুল ভান্ডারি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ৫০টি লাশ উদ্ধার করেছি। জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে’। ওই সেনা মুখপাত্র জানান,  নয়জনের এখনও কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

    নেপালের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক সঞ্জীব গৌতম বলেন, রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এটা দক্ষিণ দিকে নামার কথা থাকলেও উত্তর দিক দিয়ে নামে। তিনি বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

    আর্নিকো পান্ডে নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী নেপালের সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকাকে বলেছেন, রানওয়েতে বাঁক নেওয়ার সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তিনি বলেন, আমি সংযোগ সড়কে ছিলাম। দেখলাম বিমানটি টার্মিনালকে পেছনে ফেলে দক্ষিণ দিকে দ্রæত বাঁক নিলো। এরপরই রানওয়ে থেকে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বিশালাকার ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। তিনি জানান, খুব নিচে দিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারের ওপর দিয়ে বিমানটিকে উড়তে দেখেছিলেন।

    বিমানটির যাত্রীরা হলেন, উম্মে সালমা, মো. রফিকুজ্জামান, মো. নুরুজ্জামান, মো. অনিরুদ্ধ জামান, সৈয়্যদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, শেখ রাশেদ রুবায়েত, তাহিরা তানভীন শসী রেজা, পিয়াস রায়, ইমরানা কবির হাসি, কবির হোসেন, সানজিদা হক, হাসান ইমাম, রায়েনা আব্দুল্লাহ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মিনহাজ বিন নাসির, এসএম মাহমুদুর রহমান, মো. মতিউর রহমান, মেহেদী হাসান, রকিবুল হাসান, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, শাহীন বেপারী, আক্তারা বেগম, নুরুন্নাহার বানু, বিলকিস আরা, আলমিন নাহার অ্যানি আলিফুজ্জামান, ইয়াকুব আলী, শাহরিন আহমেদ, ফয়সাল আহমেদ, আলিফুজ্জামান, রিজওয়ানুল হক, আশনা সানিয়া, সানাম সানিয়া, কৃষ্ণ কুমার শাহানী, আঞ্জিলা শ্রেষ্ঠা, সারুনা শ্রেষ্ঠা, হরি প্রসাদ সুবেদী, দয়ারাম কর্মকার, বাল কৃষ্ণ থাপা, শ্বেতা থাপা, কিশোর ত্রিপাতি, অবদেশ কুমার যাদব, দিনেশ হিমাগায়েন, শ্রেয়া ঝা, পূর্ণিমা লোহানী, মিলি মেহেরজান, নেগা মেহেরজান, সঞ্চয় মেহেরজান, জেন মিং, আখি মনি, পেশব পান্ডে, প্রসন্ন পান্ডে, বিনোদ রাজ পদুয়াল, হরি শঙ্কর পদুয়াল, সঞ্চয় পদুয়াল, আশিষ রঞ্জিত, তাহাররা প্রিয়ন্বয়ী, এফএইচ প্রিয়ক, সাজানা দেবকোটা, বসন্ত বহরা, রবীন্দ্র বহরা, মিসেস গিয়ানি গুরুং, মিসেস প্রিন্সি ধাম, প্রবীণ চিত্রকর, সামিরা বায়ানজানকার, চারু বড়াল, আলগিনা বড়াল ও শিলা বাজগাইন।

    প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত, দেশে ফিরছেন আজ

    নেপালে বিমান দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে একদিন আগেই দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চার দিনের সফর শেষে আগামীকাল বুধবার দেশে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু কাঠমাÐুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের পর সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ মঙ্গলবারই শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

    দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে কথা বলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। সিঙ্গাপুর থেকে স্থানীয় সময় ৭টা ৫০ মিনিটে নেপালের প্রধানমন্ত্রী খাড়গা প্রসাদ শর্মা অলিকে ফোন করেন শেখ হাসিনা। ফোনালাপে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। খাড়গা প্রসাদ শর্মা অলি জানান, দুর্ঘটনা ঘটার পর তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিভূবন বিমানবন্দর খোলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাহায্যকারী দল নেপালে পাঠানোর কথা বলেন। এছাড়াও তিনি প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তার আশবাস দেন নেপালী প্রধানমন্ত্রীকে।

    কন্ট্রোল রুম থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছিল : ইউএস বাংলার সিইও

    নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুম থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার কারণেই ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আফিফ। তিনি দাবি করেন, এ দুর্ঘটনায় বিমানের পাইলটের কোনও গাফিলতি ছিল না। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বারিধারায় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করতে গিয়ে ইমরান আফিফ এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে সিইও বলেন, আমাদের ফ্লাইটটি অবতরণ করার আগের তিন মিনিটের একটি কথোপকথন আমাদের হাতে এসেছে। ফ্লাইটের পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের যে কথা হয়, তা রয়েছে ওই কথোপকথনে। এটা থেকে আমরা ধারণা করছি, দুর্ঘটনায় আমাদের পাইলটের দিক থেকে কোনও গাফিলতি ছিল না।

    সিইও ইমরান আফিফ আরও বলেন, ‘ফ্লাইট অবতরণের আগে কাঠমান্ডুর কন্ট্রোল রুম থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। কোন রানওয়ে দিয়ে অবতরণ করতে হবে, সে সম্পর্কে ওই তিন মিনিটের কথোপকথনে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে। অবতরণের তথ্য সঠিকভাবে না দেওয়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’

    ইউএস বাংলার সিইও আরও বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ১৬ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।

    নেপাল টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, ৭৮ জনকে ধারণে সক্ষম ওই বিমানে যাত্রীদের পাশাপাশি ৪ ক্রু ও ৬৭ যাত্রী মিলে ৭১ জন আরোহী ছিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন এ দুর্ঘটনায়। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৪১ জন নিহতের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

    নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার এয়ারলাইন্সের বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৩ শিক্ষার্থী। তারা সবাই নেপালি বংশোদ্ভূত। এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ওই ১৩ শিক্ষার্থী বাড়ি যাচ্ছিলেন। কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. মো. আবেদ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে দুর্ঘটনার পর এই শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

    উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় স্বজনরা

    ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এস২-এজিইউ ফ্লাইটের যাত্রীরা বাংলাদেশে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। তাদের প্রায় সবাই স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন সানজিদা বিপাশা, রফিক জামান রিমু ও তাদের ছয় বছর বয়সী ছেলে অনিরুদ্ধ। বিপাশার ভাই শাহরিয়ার মিঠুন বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১২টায় তাদেরকে তুলে দেওয়ার সময় সবশেষ কথা হয়েছিল। এরপর দুর্ঘটনার খবর শুনছি। আমরা খুবই আপসেট’।

    প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

    প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল পৃথক শোকবার্তায় তারা নিহতদের জন্য শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সিঙ্গাপুর থেকে জানান, চারদিনের সরকারি সফরে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।’

    প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের জন্য শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘনায় আহতদের দ্রæত আরোগ্য কামনা করেছেন।

    বিমান দুর্ঘটনার প্রাণহানিতে আরো শোকবার্তা দিয়েছেন, স্পিকার শীরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

    নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছাতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য মন্ত্রণালয়েও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের নম্বর ৯৫৪৫১১৫, ৯৫৪৯১১৬।

    নেপালে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি কাঠমান্ডুতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।  সোমবার ওই দুর্ঘটনার পর সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি ওই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানান।

    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই দুর্ঘটনায় ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

    এই দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। চালু হওয়ার পরপরই ইউএস-বাংলার ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রীদের আনতে রিজেন্টের একটি উড়োজাহাজ ঢাকা থেকে রওনা হয়। রিজেন্টের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের এজিএম (এয়ারপোর্ট সার্ভিস) মোহাম্মদ জাফরুজ্জামান বলেন, ‘সন্ধ্যে পৌনে ৭টায় রিজেন্ট এয়ার ওয়েজের আরএক্স ৭৯৫ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম, সিভিল এভিয়েশনের এক্সিডেন্ট এক্সপার্ট সারোয়ার ভুঁইয়া আর ইউএস বাংলার ক্যাপ্টেন লুৎফর রহমান নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করেন।”

    নেপাল থেকে ৩৫ জন যাত্রী ইউএস-বাংলার ফিরতি ফ্লাইটে আসার কথা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের রিজেন্ট নিয়ে আসবে’।

    ইউএস বাংলার মোট আটটি বিমান আছে, এর মধ্যে চারটি ড্যাশ এইট, চারটি বোয়িং। এর মধ্যে একটি ড্যাশ এইট নষ্ট থাকার কারণে কিছুদিন যাবত হ্যাঙ্গারে পড়ে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন গন্তব্য ছাড়াও কোলকাতা, কাঠমান্ডু, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, দোহা এবং মাসকট রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে ইউএস বাংলা। এছাড়া এপ্রিলে চীনের গুয়াংঝু শহরে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

    উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কোনো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৪ সালে। ওই বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশ বিমানের একটি ফকার এফ-২৭ বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হলে ৪৯ জন নিহত হন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, নেপালের ওয়েবসাইট।

    Untitled Post

    Posted by admin on March 12
    Posted in Uncategorized 

    আমেরিকায় মুসলমানদের অর্থবহ অবস্থান

    কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে ওই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত রয়েছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা কখনও আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হয় না এবং যে আদেশ তাদেরকে করা হয় তা-ই তারা পালন করে।’ (সূরা তাহরীম : ৬) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে সম্বোধন করেছেন এবং জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব সম্পর্কে সাবধান করে আদেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন নিজেরাও ওই আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে এবং পরিবার-পরিজনকেও রক্ষা করার চেষ্টা করে। আল্লাহ তাআলা এই আদেশ করেছেন তার বিশ্বাসী বান্দাদেরকে, বিশ্বাসী বলে সম্বোধন করে। তাই একদিকে যেমন জানা যাচ্ছে যে, এটি একটি ফরয বিধান যা পালন করা প্রত্যেক ঈমানদার নর-নারীর জন্য অপরিহার্য, অন্যদিকে তার তাৎপর্যও বোঝা যাচ্ছে। ঈমানদার বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার করুণা ও মেহেরবানীতে এই সম্বোধনটি সিক্ত। এই আয়াত থেকে প্রমাণ হয় যে, যে পরিমাণ দ্বীনদারী ছাড়া আখিরাতের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না ওই পরিমাণ দ্বীনদারী অর্জন করা এবং রক্ষা করা অপরিহার্য। তদ্রূপ যে পরিবেশে তা রক্ষা করা সম্ভব নয় সেই পরিবেশ পরিত্যাগ করাও অপরিহার্য। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের দৃষ্টান্ত- আমাদের সামনে রয়েছে। আমেরিকার মতো দেশে আমাদের যে মুসলিম ভাইরা বসবাস করেন তাদের জন্য এই প্রসঙ্গটা অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ। অন্য সকল বিষয়ের আগে আমাদেরকে নিজেদের ও স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের ঈমান-আমলের হেফাযতের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। আমরা যদি এ বিষয়ে সচেতন ও সচেষ্ট না হই, কিংবা যে পরিমাণ চেষ্টা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব তা না করি তাহলে কিয়ামতের দিন আমরা আল্লাহ পাকের জবাবদিহির মুখোমুখি হয়ে যাব। এটা ঠিক যে, অবস’ার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমদিকে এ অঞ্চলে মুসলিমরা ছিলেন নবাগত। বিভিন্ন সঙ্কটের মোকাবেলা তাদেরকে করতে হয়েছে। ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করার উপায় ছিল না, কিন্তু এখন তাঁরা তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন। নতুন নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। মুসলিম বসতি গড়ে উঠেছে। এগুলো ইতিবাচক দিক। কিন’ এখনও আমরা পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত নই। অন্যান্য প্রসঙ্গ তো রয়েছে, আদর্শিক প্রসঙ্গটাই গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের ঈমান-আমল নিশ্চিত না করি তাহলে-আল্লাহ না করুন-আমাদের দ্বীনী কর্মকাণ্ডের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আমাদের কষ্টোপার্জিত অর্থে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামিক সেন্টারগুলোর দায়িত্ব কি আমাদেরই আগামী প্রজন্মের হাতে ন্যস্ত- হবে না? দেখুন, আমেরিকায় এখন যত মসজিদ তার অনেকগুলোই আগে গীর্জা ছিল। মুসলমানরা তা কিনে মসজিদ বানিয়েছেন। প্রশ্ন এই যে, গীর্জাগুলো কারা বিক্রি করেছে? তারাই যাদের পূর্বপুরুষ অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে এগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিল। উত্তরপ্রজন্ম শুধু অর্থের জন্য তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করে দিয়েছে! এটা ভেবে দেখার মতো একটি দৃষ্টান্ত। অতএব আগামী প্রজন্মের দ্বীন ও ঈমান রক্ষায় অবশ্যই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। এ প্রসঙ্গে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা আমাদের জন্য সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। ১. নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ শিক্ষার ব্যবস্থা এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ঘরে বসিয়ে রাখতে পারব না। এখানে টিকে থাকার জন্যই তাদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। কিন’ আমরা যদি তাদেরকে প্রচলিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাই তাহলে তাদের ঈমান-আমল, আখলাক-চরিত্র সম্পর্কে শঙ্কাহীন হতে পারি না। অনেক দুঃখজনক দৃষ্টান্ত- আমাদের সামনে রয়েছে। এজন্য আলাদা মুসলিম স্কুল প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। যেখানে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষার পাশাপাশি পড়াশোনা, শৃঙ্খলা ও ব্যবস’াপনা সবকিছুই সর্বোত্তম মানের হবে। কিছু কিছু স্কুল ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরো মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। দেখুন, ইহুদীদের নিজস্ব স্কুল আছে। তারা আমেরিকার মূল স্রোতের মধ্যে থেকেও নিজস্ব বিশ্বাস ও সংস্কৃতি রক্ষায় অত্যন- সচেতন। তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে আমাদের কি সচেতন হওয়া প্রয়োজন নয়? এ প্রসঙ্গে ফান্ডের সমস্যার কথা বলা হয়ে থাকে। এটা খুব বড় সমস্যা নয়। আমরা যদি সংকল্প করি যে, কাজটা আমরা করবই তাহলে ফান্ড জোগার করা অসম্ভব নয়। হযরত মাওলানা মুফতী শফী রাহ. একটি দৃষ্টান্ত দিতেন। তিনি বলতেন যে, আপনি যদি এমন কোনো রাস-ায় চলতে থাকেন যার দুপাশে বৃক্ষের সারি, তাহলে সামনের দিকে তাকিয়ে আপনার মনে হবে, কিছু দূর গিয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন কেউ যদি সাহস হারিয়ে পথ চলা বন্ধ করে দেয় তাহলে সে গ পৌঁছতে পারবে না। কিন’ যদি সামনে অগ্রসর হয় তাহলে দেখা যাবে, যতই সে অগ্রসর হচ্ছে ততই যেন রাস্তা খুলে যাচ্ছে। এই অভিজ্ঞতাটা আমাদের অনেকেরই আছে। এজন্য হিম্মত ও সংকল্প করা গেলে এই সমস্যার সমাধান ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) ‘যারা আমার সন’ষ্টির জন্য সামর্থ্য ব্যয় করে অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথসমূহ দেখিয়ে দিব এবং আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন। (সূরা আনকাবূত : ৬৯) দারুল উলূম প্রতিষ্ঠা দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠারও প্রয়োজন রয়েছে। এমন একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, যেখানে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, উসূলে হাদীস, উসূলে ফিকহ, আরবী সাহিত্য ইত্যাদি সকল বিষয় পড়ানো হবে, যদি মানসম্মত একটি দারুল উলূম প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে এর মাধ্যমে গোটা আমেরিকার সাময়িক প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। এখানকার মুসলিম অধিবাসীরা যদি সংকল্প করেন যে, মুসলিম দেশগুলো থেকে নির্বাচিত আলিমদেরকে নিয়ে একটি মানসম্মত দারুল উলূম প্রতিষ্ঠা করবেন তবে তা কঠিন নয়। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারাই গোটা আমেরিকার সাময়িক প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। তবে মুসলিম স্কুল প্রতিষ্ঠা করা প্রত্যেক মহল্লার প্রয়োজন। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ২. মুসলিম বসতি প্রতিষ্ঠা এটা প্রথম বিষয়েরই কাছাকাছি। এরও গুরুত্ব অপরিসীম। এখানের মুসলিম অধিবাসীরা যদি দূরে দূরে বিচ্ছিন্ন না থেকে কাছাকাছি থাকেন তাহলে অনেক দিক দিয়ে এটা উপকারী। ইংল্যান্ডে এ বিষয়টা বেশ অগ্রসর। সেখানে অনেক মুসলিম মহল্লা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে পরস্পরে দেখা-সাক্ষাত হয়, খোঁজ-খবর নেওয়া যায়, সুখে-দুঃখে শরীক থাকা যায়। মোটকথা, পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক সহজ হয়ে যায়। মুসলিম স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্যও এটা সহায়ক হবে। দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে শিশুদেরকে এক স্কুলে একত্র করা কঠিন, কিন’ কিছু মুসলিম পরিবার কাছাকাছি থাকলে নিজস্ব স্কুল প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। মুসলিম বসতি গড়ে তোলার সহজ পদ্ধতি হল যথাসম্ভব মসজিদের কাছাকাছি ঘরবাড়ি কেনার চেষ্টা করা। সবাই চেষ্টা করতে থাকলে মসজিদ ভিত্তিক মুসলিম বসতি গড়ে ওঠা সম্ভব। ৩. আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন দ্বীন ও ঈমানের সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য এটা অনেক বড় উপায়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যনিষ্ঠদের সঙ্গে থাক।’ এখানে দুটো আদেশ করা হয়েছে : ১. আল্লাহকে ভয় করা। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। ২. সত্যনিষ্ঠদের দলভুক্ত হয়ে তাদের সাহচর্য অবলম্বন করা। অর্থাৎ যারা কথা, কাজ ও বিশ্বাসে সত্যের অনুসারী তাদের সঙ্গে থাকা এবং তাদের মতো হওয়া। কুরআন মজীদের অত্যন- প্রজ্ঞাপূর্ণ ভঙ্গি এই যে, কুরআন যখন কোনো কঠিন বিধান দান করে তখন এমন একটি পন’াও নির্দেশ করে, যার মাধ্যমে তা পালন করা সহজ হয়ে যায়। বলাবাহুল্য যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকওয়ার উপর থাকা সহজ নয়, কিন’ মানুষ যদি তাকওয়ার পরিবেশে চলে যায় এবং মুত্তাকীদের সাহচর্য অবলম্বন করে তাহলে এটা আর কঠিন থাকে না, সহজ হয়ে যায়। এজন্য আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য অবলম্বন করা চাই। বছরে মাস-দুই মাস, সপ্তাহ-দুই সপ্তাহ তাদের সাহচর্যে কাটানোর নিয়ম করা চাই। নিজ দেশে এমন কোনো ব্যবস’া না হলে পৃথিবীর যেখানেই হোক, কোনো আল্লাহ ওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা চাই। এখন যোগাযোগ ব্যবস’া অত্যন- উন্নত। মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর একপ্রান- থেকে অন্য প্রানে- যোগাযোগ করা যায়। প্রযুক্তির এই সুবিধাগুলোকে দ্বীনের কাজে ব্যবহার করা উচিত। তাবলীগ জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন উপরের কাজের জন্য এটা অত্যন- সহায়ক। আলহামদুলিল্লাহ, তাবলীগ জামাতের কাজ অত্যন- ব্যাপকভাবে হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। দ্বীনী সচেতনতা সৃষ্টিতে এই জামাত অত্যন- সফল। আমাদের তাবলীগ জামাত যে খিদমত আঞ্জাম দিচ্ছে তার কোনো নজির কোনো মিশনারী দলের মধ্যে পাওয়া যাবে না। খৃষ্টানরা তাদের ধর্ম-প্রচারের জন্য অঢেল সম্পদ ব্যয় করছে, গোটা পৃথিবীতে অসংখ্য সংগঠন মিশনারী কর্মকাণ্ডে তৎপর রয়েছে। কিন’ আমাদের তাবলীগ জামাত যে কাজ করছে তার সঙ্গে কোনো তুলনাই হতে পারে না ওইসব মিশনারী সংগঠনগুলোর। তাবলীগ জামাতের কোনো দফতর নেই, ব্যাংক ব্যালেন্স নেই, প্রচার-প্রচারণার আধুনিক কোনো ব্যবস’া নেই। কিন’ আজ এখানে যে সিদ্ধান- গৃহীত হচ্ছে তিন দিন পরেই আপনি তা শুনতে পাবেন হংকংয়ে, চায়নায়, আফ্রিকায় এবং গোটা পৃথিবীতে। শুধু আল্লাহর সন’ষ্টির জন্য কত মানুষ নিজের সামান নিজে বহন করছেন, নিজের খরচে দেশ-বিদেশে সফর করছেন এবং ঈমান-আমলের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন! এটা আমাদের বুযুর্গদের কাজ। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর মাধ্যমে এই কাজের সূচনা হয়েছে। আমাদের পাশ্চাত্যের ভাইদেরও কর্তব্য এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া। ঈমানী ও আমলী যিন্দেগীতে ইনশাআল্লাহ এর গভীর প্রভাব হবে। তাবলীগ জামাতের উপর আপত্তি তাবলীগ জামাতের উপর বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হতে দেখা যায়। কেউ বলেন, ‘এঁরা শুধু আমর বিল মা’রূফ করেন নাহী আনিল মুনকার করেন না!’ ঠিক আছে, আমর বিল মা’রূফ ও নাহী আনিল মুনকার দু’টোই তো শরীয়তের বিধান। তাঁরা যদি একটা করে থাকেন তো অপরটা আপনি করুন! কেউ বলেন, ‘তাবলীগ জামাতের লোকেরা অনেক বাড়াবাড়ি করে থাকে!’ আচ্ছা ভাই, আপনি ভালো কাজটুকু করুন, বাড়াবাড়িটা বাদ দিন। কিন’ তা-ও করতে রাজি নয়। আসলে যে বাড়াবাড়িগুলো কখনও কখনও চোখে পড়ে, খোঁজ নিলে দেখা যায় যে, তাবলীগের আলিম-ওলামা ও বুযুর্গরা এমন করতে বলেননি। কিছু অতি উৎসাহী নতুন তাবলীগী এ ধরনের কাজ করে থাকেন। স্ত্রী-সন-ানের হক্ব নষ্ট করেন আর গর্বের সঙ্গে বলেন, দ্বীনের জন্য স্ত্রীকে কুরবান করে দিয়েছি! স্ত্রী হসপিটালে আর আমি ‘আল্লাহর রাস-ায়’ বের হয়ে পড়েছি! খুব ভালোভাবে জেনে নিন, এগুলো দ্বীনের কাজ নয়। এগুলো অবশ্যই বাড়াবাড়ি, শরীয়তে এমন কাজের অনুমতি নেই। তবে আগেই বলেছি, এগুলো কিছু অতি উৎসাহী মানুষের কাজ, তাবলীগের মুরব্বীদের মূল নিয়ম এটা নয়। দেখুন, একটা কথা আছে যে, দুই ব্যক্তির রাতে ঘুম হয় না : এক. যে নতুন বিয়ে করেছে দুই. যে নতুন মুরীদ হয়েছে! যাই হোক, তাবলীগের কাজের সঙ্গে অবশ্যই সম্পৃক্ত থাকুন তবে ওই বাড়াবাড়িগুলো বাদ দিন। সকল ক্ষেত্রে আলিম-ওলামা ও বুযুর্গানে দ্বীনের পরামর্শ মতো চললে কাজকর্মে ভারসাম্য থাকে। ৪. দ্বীনী কিতাবপত্র অধ্যয়ন অবশ্যই দ্বীনী কিতাবপত্র সংগ্রহ করুন এবং সময় বের করে তা অধ্যয়ন করুন। এখন আলহামদুলিল্লাহ ইংরেজিতেও বেশ কিছু কিতাবপত্র তৈরি হয়েছে। এছাড়া উর্দূ ও বাংলাতেও দ্বীনী কিতাবপত্র আছে। আরবী ভাষা জানা থাকলে তো কথাই নেই। ব্যস-তা বেশি হলেও দ্বীনী কিতাবপত্র সংগ্রহরে ব্যাপারে অনাগ্রহী হওয়া ঠিক নয়। আপনি যদি পড়ার সুযোগ না পান আপনার স্ত্রী সুযোগ পাবেন, সন-ানরা সুযোগ পাবে। আর হাতের কাছে বইপত্র থাকলে একসময় না একসময় পড়া হয়েই যায়। ৫. হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকুন এটা অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রয়োজন। কিছু গুনাহ এমন রয়েছে, যা আরো অনেক গুনাহর পথ খুলে দেয়। হারাম উপার্জন এমনই একটি গুনাহ। আখিরাতের শাসি- তো রয়েছেই দুনিয়াতেও এর অসংখ্য কুফল প্রকাশ পায়। দ্বীনী কাজ-কর্মে অনীহা সৃষ্টি হয়, গুনাহের কাজে আগ্রহ বাড়ে। সন-ান-সন-তি অবাধ্য হয়ে যায়। এভাবে অসংখ্য পেরেশানী ও জটিলতা সৃষ্টি হয়। এজন্য হারাম উপার্জন পরিহার করা কর্তব্য। পাশ্চাত্যের দেশগুলো হচ্ছে সুদী কারবারের কেন্দ্র। এজন্য লেনদেনে সতর্ক হওয়া চাই। তদ্রূপ মদ্যপান থেকে বিরত থাকা চাই। এটা এমন অশুভ প্রবণতা যে এর দ্বারা মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনা একদম বিনষ্ট হয়ে যায়। মোটকথা, হারাম খাবার ও হারাম পানীয় থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। ৬. ঘরে মাতৃভাষাকে জীবন- রাখুন বাইরের কাজকর্মে ইংরেজি ভাষা ছাড়া উপায় নেই কিন’ ঘরে মাতৃভাষায় কথা বলুন। যেন আমাদের আগামী প্রজন্ম মাতৃভাষা ভুলে না যায়। নিজের দেশের আলিম-ওলামা, দ্বীনদার শ্রেণী এবং দ্বীনী রচনাবলির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার একটি সূত্র হল মাতৃভাষা। এজন্য কোনো সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, খালেছ দ্বীনী উদ্দেশ্যে মাতৃভাষার ব্যবহার অব্যাহত রাখা কর্তব্য। (বাংলাভাষায় রচিত দ্বীনী কিতাবপত্র এবং এদেশের দ্বীনদার আলেম-ওলামার সঙ্গে সেতুবন্ধন রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বাংলা ভাষা। এটা আমাদের মাতৃভাষা হওয়ার কারণে খুব সহজেই আমরা এই সূত্রটা রক্ষা করতে পারি। অতএব তা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।)-অনুবাদক ৭. সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন হুকুকুল ইবাদ বা বান্দার হক ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যের হক নষ্ট করা বা অন্যকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া অনেক বড় গুনাহ। অথচ এ বিষয়ে অবহেলা করতে দেখা যায়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এসব দেশে আমাদেরকেই মুসলিম জাতির প্রতিনিধি মনে করা হয়। আমাদের কাজ-কর্ম, আচার-ব্যবহারের দ্বারা অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে অনুমান করার চেষ্টা করে। এজন্য আমাদের অত্যন- সতর্ক ও সংযমী হওয়া চাই। পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মী এবং সাধারণ অমুসলিমদের সঙ্গেও ভদ্র ও শালীন ব্যবহার করা কর্তব্য। আমরা নিশ্চয়ই জানি যে, যেকোনো ধরনের জুলুম, অত্যাচার, ওয়াদাখেলাপী, আমানতে খেয়ানত যেমন একজন মুসলিমের সঙ্গে করা নাজায়েয তেমনি একজন অমুসলিমের সঙ্গেও। মানুষ তো মানুষ, কোনো পশু-পাখির প্রতিও অবিচার করা ইসলামে নিষেধ। এখানে কিছু করণীয় বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেগুলোতে সাধারণত অবহেলা হয়ে থাকে : ১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। ২. হৈচৈ, হট্টগোল থেকে বিরত থাকা। ৩. ট্রাফিকের নিয়ম-কানূন বিশেষত গাড়ি পার্কিংয়ের নিয়ম-কানূন মেনে চলা। ৪. প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। ৫. প্রতিবেশীদের সুবিধা-অসুবিধা সর্ম্পকে সচেতন থাকা। ৬. চুক্তি ও অঙ্গীকার পালন করা। ইত্যাদি। প্রতিবেশীর হক প্রতিবেশীর প্রসঙ্গ ইসলামে অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী মুসলিম হোক বা অমুসলিম, তাকে কোনোভাবেই কষ্ট দেওয়া জায়েয নয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত জিব্রীল আ. প্রতিবেশী সম্পর্কে এত বেশি তাকীদ করেছেন যে, আমার মনে হচ্ছিল তাকে মিরাছেরও অংশীদার বানিয়ে দেওয়া হবে। অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যার অনিষ্ট থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।’ এখানে একটি ঘটনা মনে পড়ছে। তাবলীগ জামাতের আমীর হযরত মাওলানা এনামুল হাসান ছাহেব রাহ.-এর কাছে বৃটেনের কিছু মুসলমান উপসি’ত ছিলেন। তারা কথা প্রসঙ্গে গর্বের সঙ্গে বলছিলেন যে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের মহল্লায় কোনো অমুসলিম নেই! যারা ছিল একে একে সবাই মহল্লা ত্যাগ করে চলে গেছে।’ তাদের কেউ কেউ আরো বললেন, ‘তারা বসবাসের জন্য সাধারণ শান- ও হট্টগোলমুক্ত এলাকা পছন্দ করে এবং বাড়িঘরের পাশে ময়লা-আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্নতা তাদের পক্ষে মোটেই সহনীয় নয়।’ হযরতজী মাওলানা এনামুল হাসান ছাহেব রাহ. তখন অত্যন- দুঃখ করে বললেন, ‘ভাই, তোমরা যদি এমন পরিবেশ তৈরি করতে যা তাদেরকে আকৃষ্ট করে! তারা কি বিরক্ত হয়েই ওই মহল্লা ত্যাগ করল? তোমরা যদি ইসলামের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ভদ্রতা ও শালীনতার আদর্শ পুরোপুরি অনুসরণ করতে তাহলে হয়তো তারা তোমাদের সঙ্গে মিশে যেত। হয়তোবা তাদের কারো ঈমানও নসীব হত!’ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস’ান করা এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও গোপনে থেকে যাওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। এটা অঙ্গিকার ভঙ্গ করার শামিল। কোনো অমুসলিমের সঙ্গেও কৃত অঙ্গিকার ভঙ্গ করার অনুমতি ইসলাম দেয় না। তদ্রূপ এখানে অবস’ান করে এখানকার নিয়ম-কানূন অমান্য করাও অঙ্গিকার ভঙ্গ করার মধ্যে পড়ে। যদি তাদের নিয়ম-কানূন পছন্দ না হয়, কিংবা আপনার পক্ষে তা পালন করা সম্ভব না হয় অথবা ইসলামের দৃষ্টিতে তা মানা আপনার জন্য বৈধ না হয় সেক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য স’ান পরিবর্তন করা। যেখানে আপনাকে ওইসব নিয়ম-কানূন মানতে হবে না সেখানেই বসবাস করা উচিত। কিন’ একটি দেশে অবস’ান করে সে দেশের নিয়ম-কানূন অমান্য করার দ্বারা একদিকে যেমন অঙ্গিকার ভঙ্গের গুনাহ হয় অন্যদিকে ইসলাম ও মুসলমানের বদনাম করারও গুনাহ হয়। আপনারাই হতে পারেন ইসলামী জাগরণের অগ্রপথিক উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি যদি আমাদের প্রবাসী ভাইরা মনোযোগ দেন এবং এগুলোর বাস-বায়ন শুরু হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে আশা করা যায় যে, আমাদের আগামী প্রজন্ম এই ভূখণ্ডে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে। এটা ঠিক যে, গোটা বিশ্বে বিশেষত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মুসলমানরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কিন’ একই সঙ্গে ইসলামের পুনর্জাগরনের সকল আলামতও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আল্লাহ করুন, পাশ্চাত্যের প্রবাসী মুসলিম ভাইরা যেন এই ভূখণ্ডের জন্য হেদায়েতের ওসীলা হয়ে যান। আমীন।

    টোকিওতে দূর্যোগে নিহতদের জন্য স্মরণ অনুষ্ঠান     

    টোকিওতে, ২০১১ সালের ১১ই মার্চে উত্তর পূর্ব জাপানে আঘাত হানা ভূমিকম্প ও সুনামিতে নিহতদের জন্য একটি স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

    আজ দুর্যোগের ৭ম বার্ষিকী পূর্তি দিবস উপলক্ষে সরকার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উল্লেখ্য, এই দুর্যোগের ফলস্বরূপ ফুকুশিমা জেলার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।

    রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানার সময় দুপুর ঠিক ২টা ৪৬ মিনিটে অনুষ্ঠিত মৌন প্রার্থনায় অন্যান্যদের সঙ্গে রাজকুমার এবং রাজকুমারী আকিশিনো এবং প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবে অংশগ্রহণ করেন।

    জাতীয় পুলিশ এজেন্সি, গত শুক্রবার পর্যন্ত ১২টি জেলায় মোট ১৫ হাজার ৮৯৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ৬টি জেলায় এখনও ২ হাজার ৫৩৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানায়।

    মিঃ আবে, দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলগুলোতে পুনর্নির্মাণ কাজের দৃঢ় অগ্রগতি প্রতীয়মান হয়ে চলেছে বলে উল্লেখ করেন।

    তিনি, জীবনযাত্রার পুনর্বাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিরবিচ্ছিন্ন সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সরকার পুনর্নির্মাণ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখে যাবে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি এসকল সহায়তার মধ্যে, আত্মিক পুনর্গঠন, দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া লোকজনের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সেবা, জীবনযাত্রার পুনর্বাসনের পরামর্শ এবং নতুন সমাজ গঠনে সহায়তা প্রদানের মত বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও জানান।

    রাজকুমার আকিশিনো, কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া লোকজনের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

    রাজকুমার, দেশের লোকজনের হৃদয় উপদ্রুত লোকজনের সঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় নিজেদের শান্তিপূর্ণ জীবন ফিরে পেতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    এরপর অংশগ্রহণকারীরা, নিহতদের উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

    কলম্বোয় বাংলাদেশের ইতিহাস

    তিন বলে দরকার এক রান। জয় নিশ্চিত জেনে সিমানা প্রাচীরে ম্যাচের নায়ককে অভিবাদনের অপেক্ষায় পুরো দল। থিসারা পেরেরার লো ফুলটস বলটা ঠান্ডা মাথায় মিডউইকেটে ফ্লিকের মাধ্যমে এক রান নিশ্চিত করেই পাগলা উদযাপন শুরু করে দিলেন মুশফিকুর রহিম। আকাশে ছুড়লেন ব্যাটের ঘুশি। আলতো ডানে ঘুরে ভেংচি কেটে পেরেরাকে জানিয়ে দিলেন ‘আমরাও পারি’। এরপর মিরপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজের নাজমুলের সেই নাগিন ড্যান্স।
    মুশফিকের এমন উদযাপনকে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু জয়ের তৃষ্ণায় ব্যাকুল বাংলাদেশের সামনে যখন রেকর্ড তাড়া করে জয়ের লক্ষ্য তখন তা পূরণের পর এমন উদযাপনও মনে হতে পারে মামুলি। শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ২১৫ রানের এভারেস্ট ২ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৩৫ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৭২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা মুশফিক।
    নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে দৃষ্টিকটভাবেু হারের পর দলকে উজ্জীবিত করতে এমন একটি জয়ই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। গেল মাসেই মিরপুরে নিজেদের সর্বোচ্চ ১৯৩ রান করেও এই লঙ্কানদের কাছেই হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার রেকর্ড তাড়া করে শ্রীলঙ্কাকে তাদেরই মাঠে হারালো টাইগাররা।
    ৬৩ বলে যখন জয়ের জন্য ১১৫ রান দরকার তখন মাঠে নামেন মুশফিক। এরপর একে একে তার পাশ থেকে বিদায় নেন সৌম্য, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির। কিন্তু অপর প্রান্তে ¯œায়ু ধরে রেখে প্রয়োজনীয় রান তুলে যান মুশফিক। ৮ বলে যখন দরকার ১৬ রান তখন নুয়ান প্রদীপের ¯েøায়ার মিডউইকেট দিয়ে আচড়ে ফেলেন গ্যালারিতে।
    মুশফিকের কাজটা সহজ করে যান লিটন দাস ও তামিম ইকবালের ৫.৫ ওভারে ৭৪ রানের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটি। সৌম্য সরকারের পরিবর্তে লিটনকে ওপেনে নামিয়ে বাজিটা ভালোমতই জিতে যান মাহমুদউল্লাহ। দুজনের কেউই অবশ্য ফিফটি করতে পারেননি। লিটনের (১৯ বলে ৪৩) পর দলীয় ১০০ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন তামিম।
    তবে সৌম্য-মুশফিকের ২৭ বলে ফিফটি রানের জুটিতে জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। রানের জন্য যুদ্ধ করতে থাকা সৌম্য শেষ পর্যন্ত ফার্নান্ডোর বাইন্সার পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। শুরু থেকে মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহও। অধিনায়ক দ্রæত আউট হলেও রানের চাকা সচল রেখে যান। বাংলাদেশের সামনে তখন ১৫ বলে ২২ রানের সহজ সমীকরণ। যে সমীকরণের সমাপ্তি হতে পারত সাব্বিরের হাত ধরে। কিন্তু ব্যর্থতার ধারা এদিনও বজায় রেখে ২ বলে কোন রান না করেই দৃষ্টিকটু রান আউট হয়ে নতবদনে সাজঘরে ফেনের সাব্বির। তবে অপর প্রান্তে মুফফিক ছিলেন অবিচল। যার চোখে-মুখে ছিল জয়ের আকুন্ঠ তৃষ্ণা। জয়সূচক রানের পর পাগলাটে উদযাপন কিন্তু সেই কথাই বলে।
    ‘জয়টা আসলেই অনেক দরকার ছিল।’ সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে ম্যাচ পরবর্তি অনুষ্ঠানে বলেন মুশফিক। এমন বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদের ¯œায়ু ধরে রাখার কৃতিত্ব দিয়ে ৩৫ বলের ইনিংসটি ৩৫ দিন বয়সী নিজের পুত্রকে উৎসর্গ করেন মুশফিক। তবে ‘দিন শেষে জয়টাই আসল।’ বলে জানান তিনি।
    সামনে বিশাল লক্ষ্য থাকলেও জয়ের ব্যাপারে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বসী ছিলেন বলে জানান টাইগার দলপতি মাহমুদউল্লাহ, ‘বিশ্বাস করুন, শুরু থেকেই আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। তামিম-লিটন দুর্দান্ত শুরু এনে দেন। এরপর মুশফিক ছিল অসাধারণ।’
    ব্যাটসম্যানদের প্রত্যবর্তনে বোলারদের ব্যর্থতা অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে। অবশ্য এমন ব্যাটিং উইকেটে তাদের কিছুই করার ছিল না।
    বৃষ্টির বাধায় কলম্বোর আর. প্রেমাদাশ স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হয় দেরিতে। দুই দলই মাঠে নামে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে। টস জিতে বল বেছে নিয়ে প্রথম ওভারেই ১৩ রান দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারেই ১ উইকেটে ৭০ রান তুলে ফেলে শ্রীলঙ্কা। ১৪১ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কুসল মেন্ডিস ফেরার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তুলে নেন টানা তৃতীয় ফিফটি। ৩০ বলে ৫ ছক্কায় ৫৭ রান করে মাহমুদুল্লার বলে সাব্বিরকে ক্যাচ দেন মেন্ডিস। এর আগে কুসল পেরেরার সঙ্গে গড়েন ৯ ওভারে ৮৫ রানের জুটি। পেরেরাও শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বলে থেমেছেন বটে কিন্তু তার আগে ৪৮ বলে ৮টি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৭৪ রান। পরে উপুল থারাঙ্গার ১৫ বলে অপরাজিত ৩২ রানের ঝড়ে মাত্র ৬ উইকেট হারিয়ে রানের চূড়ায় ওঠে স্বাগতিকরা। মুস্তাফিজ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিলেও গুনতে হয় ৪ ওভারে ৪৮ রান।

    শিনমোয়ে পর্বতে অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত

    দক্ষিণ পশ্চিম জাপানের একটি আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত রয়েছে।

    শিন মোয়ে পর্বতটি কাগোশিমা এবং মিয়াযাকি উভয় জেলায় বিস্তৃত রয়েছে।

    আজ দুপুর দেড়টা নাগাদ একটি অগ্নুৎপাতের ফলে ধুঁয়ার কুণ্ডলী প্রায় ৩ হাজার ২শ মিটার উঁচুতে উঠে যায়।

    এর আগে সংঘটিত অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ধুঁয়া প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মিটার উঁচুতে উঠে যায় যা ছিল চলতি মাসের ১ তারিখে অগ্নুৎপাত আরম্ভ হওয়ার পর সর্বোচ্চ। সেসময় জ্বালামুখ থেকে নির্গত বিশালাকারের আগ্নেয় শিলা প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দূরে পৌঁছায়।

    পিয়ংইয়ংকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানাবে দক্ষিণ কোরিয়া

    উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন এবং দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন এপ্রিলের শেষ দিকে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন।

    সউল স্বীকার করেছে যে, উত্তর কোরিয়া পরমাণু-মুক্ত কোরীয় উপদ্বীপের অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছে।

    দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান চং উই ইয়ং মঙ্গলবার বলেন, দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী সামরিকভাবে নিরপেক্ষ গ্রাম পানমুনজমে সেদেশের স্থাপনায় শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৭ সালের অক্টোবরের পর এটাই হবে আন্তঃকোরীয় প্রথম শীর্ষ বৈঠক।

    এক প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে পিয়ংইয়ং সফর শেষে চং সবেমাত্র দেশে ফিরেছেন। দুদিনের এই সফরে তিনি কিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

    চং বলেন, উত্তর কোরীয় পক্ষ তাকে জানিয়েছে যে, তাদের নেতৃত্বের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকলে এবং দেশের বিরুদ্ধে হুমকি সরিয়ে নেয়া হলে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের কোন প্রয়োজন নেই।

    উত্তর আরও জানিয়েছে, যোগাযোগ চ্যানেল খোলা থাকলে তারা পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাবে না।

    প্রেসিডেন্ট মুন সবসময় বলে এসেছেন, উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংলাপই শীর্ষ বৈঠকের শর্ত। চং বলেন, তিনি মনে করছেন, এই শর্ত পূরণ করা হয়েছে।

    বিল গেটসকে টপকে বিশ্বের সেরা ধনী জেফ বেজোস

    বিল গেটসকে হাটিয়ে ২০১৮ সালের শীর্ষ ধনীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন ডট কমের কর্ণধার জেফ বাজোস। ফোর্বস ম্যাগাজিন এবার ৭২টি দেশের ২ হাজার ২০৮ জন বিলিয়নিয়ারের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই ধনীদের সম্পদের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গড়ে একজন ধনীর সম্পদের পরিমাণ ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এবারো সবচেয়ে বেশি ধনকুবেরের বাস হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ৫৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর পর রয়েছে চীন ৩৭৩ জন।

    বিশ্বের সেরা ধনী জেফ বাজোসের নাম আগে আসলেও এবার ফোর্বসের তালিকায় তা পাকাপোক্ত হলো। কারণ সাবেক শীর্ষ ধনী বিল গেটসের চেয়ে তার সম্পদ ব্যবধান বেড়েছে। বাজোসের সম্পদের পরিমাণ ১১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাত্ শীর্ষ ধনী দুইজনের সম্পদের ব্যবধান ২২ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বস বলছে, ২০০১ সালের পর শীর্ষ পর্যায়ে সম্পদের এত ব্যবধান এটাই সবচেয়ে বেশি। তাই মনে করা হচ্ছে আমাজন ডট কমের কর্ণধার বাজোস এবার শীর্ষ আসনটি পাকাপোক্তা করতে সক্ষম হয়েছে। একবছরের ব্যবধানে বাজোসের সম্পদ বেড়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। তবে বিল গেটস এবার দ্বিতীয় অবস্থানে গেলেও তার সম্পদ আগের চেয়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। ২০১৮ সালের তালিকায় ওয়ারেন বাফেট ৮৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বার্নার্ড আরনল্ড ২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনো ইউরোপীয় হিসেবে তালিকায় চতুর্থ স্থান দখল করেছে। তার সম্পদের পরিমাণ ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বস এবারের তালিকায় ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির বিলিয়নিয়ারকে স্থান করে দিয়েছে। এবারের তালিকায় এরকম ২৫৯ নতুন ধনীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক বছরের মাথায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি কমে যাওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান ৭৬৬ তম। তার পূর্ব অবস্থান ছিল ৫৪৪ তম। তালিকার ৫ম স্থানে আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গ। এশিয়ার শীর্ষ ধনী চীনা ইন্টারনেট জায়ান্ট টেনসেন্টের সিইও মা হুটাং এর অবস্থান ১৭ তম।

    মঙ্গলে না গেলে বিলুপ্ত হবে মানবজাতি

     

    শৈশবেই তিনি তৈরী করেছিলেন এটম স্ম্যাশার। পরে তিনি হন স্ট্রিং থিওরি প্রণেতাদের একজন। বর্তমান বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত মুখ মিচিও কে কু। তিনি বিজ্ঞানের উপর অনেকগুলো ‘বেস্টসেলিং’ বই লিখেছেন। আর বিবিসি, ডিসকভারি ইত্যাদির মতো বিখ্যাত সব টিভি চ্যানেলে বক্তা হিসাবে হাজির হয়েছেন। সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, এই পৃথিবী একদিন মানুষের বসবাসের জন্য একেবারেই অযোগ্য হয়ে যাবে। তাই বিলুপ্তির হাত থেকে মানবজাতিকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই মঙ্গলে বসতি গড়ার চিন্তা করতে হবে।

    তার এই বক্তব্য কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। তারপরেও নিজের দাবিতে অনড় আছেন এই বিজ্ঞানী। তার মতে, এখন যতই তর্ক করা হোক না কেন, এটাই একদিন সত্য বলে প্রমাণিত হবে। তার সাড়া জাগানো ‘দ্য ফরচুন অব হিউম্যানিটি’ গ্রন্থে তিনি স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, মানুষের ভবিষ্যত পৃথিবীতে নয়—মঙ্গলে। এমন মন্তব্য তিনি কেন করলেন সে ব্যাপারে বলেন, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝেই কিন্তু বর্তমানের মাল্টি বিলিয়নাররা মহাকাশ পর্যটনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এলন মাস্ক স্পেস পর্যটনের ঘোষণা দিয়েছেন আরো আগেই। হয়তো আগামীতে মঙ্গল গ্রহেই ব্যালে ড্যান্সের আসর বসবে।

    পৃথিবীতে বসবাসের আশা ত্যাগ করার সময় আসলেই এসেছে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে বিভিন্ন কারণে। সবাইকে মনে রাখতে হবে মানুষও একটি প্রাণী—অক্ষয় জীবন পাওয়া কোনো বিশেষ সৃষ্টি নয়। অন্য প্রাণী বিলুপ্ত হলে মানুষের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটতে পারে। পরিবেশ প্রতিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারলে বিলুপ্তি থেকে রেহাই নেই। বহু বছর আগে বিশাল বিশাল ডাইনোসররাও যখন বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছিল তখন তারাও বাঁচার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। পৃথিবী ছেড়ে তাদের কোথাও যাবার যায়গা যদি থাকতো তবে এখনো হয়তো তাদের দেখা মিলতো।

    জিওগ্রাফিককে মিচিও বলেন, ডাইনোসরদের যুগে তাদের বিলুপ্তির পেছনে একাধিক কারণ ছিল। ভবিষ্যতে পৃথিবী থেকে মানব জাতির বিলুপ্তির জন্য বড় ভূমিকা পালন করবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, পরমাণু শক্তির লড়াই এবং জিনগত পরিবর্তন লাভ করা জীবানু। এ জাতীয় জীবানু একসময় এতই শক্তিশালী হবে যে কোনো এন্টিবায়োটিকও তাদের কাবু করতে পারবে না। তখন কারো শরীরে একবার আক্রমণ করলেই তাকে না মেরে ক্ষান্ত হবে না। বর্তমানে পৃথিবী থেকে বহু প্রাণের বিলুপ্তির ‘চক্র’ চলছে। একদিন মানুষেরও এই চক্রে পড়ার পালা আসবে। তাই ‘ব্যাকআপ প্ল্যান’ হিসাবে মানব জাতিকে মঙ্গলে স্থানান্তরের চিন্তা করতে হবে।

    তবে মঙ্গলে বসবাসের কিছু অসুবিধাও হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যা ছাড়াও  সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর মাত্র ৩০ শতাংশ। তাই পৃথিবীতে যেখানে কষ্টেসৃষ্টে শূন্যে একবার ডিগবাজি খেতে গেলে ঘাম ছুটে যায় সেখানে মঙ্গলে শূণ্যে ছয় সাত পাক দেয়া যাবে! তিনি বলেছেন, তার কথাগুলো আজ অনেকে হেসে উড়িয়ে দিলেও একদিন তাকে ধন্যবাদ জানাবে।

    মাত্রাতিরিক্ত আমদানি শুল্ক নিয়ে জাপান ও মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা

    এদিকে, জাপানের অর্থ, বাণিজ্য এবং শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী হিরোশিগে সেকো বলেছেন, ইস্পাত এবং এলুমিনিয়াম আমদানির উপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়ে জাপানের উদ্বেগের কথা তিনি তার যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিপক্ষের কাছে অবহিত করেছেন।

    প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সম্পর্কিত ঘোষণার পর গতকাল সিঙ্গাপুরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন মি: সেকো। উল্লেখ্য, ঐ ঘোষণায় মি: ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন ইস্পাত আমদানির উপর ২৫ শতাংশ এবং এলুমিনিয়ামের উপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করবে।

    মি: সেকো বলেন, মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের সংগে এক ফোনালাপে তিনি এ বিষয়ে জাপানের বড় ধরণের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন।

    মি: সেকো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক উৎপাদনের সংগে সংশ্লিষ্ট জাপানি কোম্পানি এবং মার্কিন নির্মাতাদের জন্য জাপানের ইস্পাত নির্মিত পণ্য যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা তিনি মি: রসকে জানিয়েছেন।

    এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক মার্কিন অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই সতর্কতা উচ্চারণ করে আমদানি বিধিনিষেধ থেকে জাপানি পণ্যকে বাদ দেয়ার অনুরোধ মি: সেকো এসময় মিঃ রস এর কাছে জানান।

    মহাকাশে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আবের আহ্বান

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবে, চাঁদে মানব বাহী মহাকাশ যান প্রেরণের একটি অভিযানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

    মিঃ আবে, আজ টোকিওতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা ফোরামের বৈঠকে প্রেরিত একটি ভিডিও বার্তায় উক্ত আহ্বান জানান।

    এই সমাবেশে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ প্রায় ৫০টি দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অংশগ্রহণ করে।

    মিঃ আবে, স্যাটেলাইট যোগাযোগ এবং পৃথিবী পর্যবেক্ষণের মত মহাকাশ ফ্রন্টিয়ারকে সাম্প্রতিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অপরিহার্য্য সামাজিক অবকাঠামোর অংশ বলে উল্লেখ করেন।

    তিনি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।

    মিঃ আবে, চাঁদে যাওয়া এবং আরও দূরে এগিয়ে যেতে বিশ্বের দেশগুলোকে হাতে হাত রেখে কাজ করে যেতে হবে বলে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

    তিনি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার একটি নতুন যুগের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা তরান্বিত করতে জাপানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

    প্রধানমন্ত্রী, চাঁদের কক্ষপথে পরিক্রমণকারী একটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র নির্মাণ এবং চাঁদে মানব বাহী একটি মহাকাশ যান প্রেরণের পরিকল্পনা নিয়ে যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।

    দু’টি অবহেলিত নিয়ামতের কথা

    সচেতন না হলে অনেক মূল্যবান বিষয়েরও সঠিক মূল্যায়ন হয় না। আর যে বিষয়টিকে মূল্য দেওয়া উচিত, সময় মতো এর মূল্য দিতে না পারলে পরিণতি হয় দুঃখ ও মনস্তাপ। এজন্য হাতের নাগালে থাকা মূল্যবান বিষয়গুলো সম্পর্কে সজাগ সচেতন হওয়া কর্তব্য। অধিকারে আছে বলেই কি অবহেলা করতে হবে এবং যথেচ্ছা ব্যবহার করে বিনষ্ট করতে হবে?

    হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। মানুষকে আল্লাহ যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলোর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নতি ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব, আর তার অন্যথা হলে অবনতি ও ব্যর্থতা এই সহজ সত্যটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের সামনে তুলে ধরেছেন। এক হাদীসে এ ধরনের দু’টি নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। (অর্থাৎ এ দু’টি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে তারা কল্যাণবঞ্চিত।) নিয়ামত দু’টি হল ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’।’

    এ দু’টি বিষয়ে আল্লাহর তাআলার কত বড় দান তা খুব ভালোভাবে বুঝে আসে যখন এগুলো হারিয়ে যায়। অসুস্থ মানুষের পক্ষে সুস্থতার মাহাত্ম্য বোঝা সহজ। আর নানা অবাঞ্ছিত ঝামেলায় জর্জরিত হলে তখনই বুঝে আসে অবকাশের মূল্য। কিন্তু তখন বুঝে আসলেও কিছু করার থাকে না।

    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘সেদিন তোমরা আল্লাহ তাআলার নিয়ামতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’

    হাদীসে শরীফে এসেছে- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হল, আমি কি তোমাকে একটি সুস্থ দেহ দেইনি? তোমাকে কি ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করিনি? অর্থাৎ এই নিয়ামত প্রহণ করে তোমার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? এই প্রশ্নের উত্তর মানুষকে দিতে হবে।

    একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম শরীর আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এ শরীর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অসীম কুদরতের মাধ্যমে। এক ঘনান্ধকার স্থানে, মাতৃজঠরে। মহাকুশলী আল্লাহ এমনই নিপুণতায় মানবদেহ সৃষ্টি করেছেন, যতই মানুষ তা চিন্তা করে ততই অভিভূত হয়। মানুষের নিজের স্বত্তায় রয়েছে সৃষ্টিকর্তার পরিচয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য অনেক নিদর্শন। আর রয়েছে তোমাদের নিজ স্বত্তায়। এরপরও কি তোমরা দেখবে না?’-সূরা যারিয়াত : ২১

    আল্লাহর পরিচয়, তাঁর জ্ঞান ও কুশলতার পরিচয় লাভের এত সহজ উপায় বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যদি আল্লাহর সঙ্গে পরিচিত না হওয়া যায় তবে এরচেয়ে বড় বঞ্চনা আর কী হতে পারে!

    মানবদেহে যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং যে নিপুণভাবে এগুলো কাজ করে যাচ্ছে তা এক মহাবিস্ময়। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাযথভাবে কাজ করে গেলেই মানুষ পূর্ণ সুস্থ থাকে। আর কোনো অঙ্গের কাজ সামান্য ব্যাহত হলে মানুষ হয়ে পড়ে অসুস্থ। তার প্রয়োজনীয় কাজ-কর্মও তখন স্থগিত হয়ে যায়।

    তাই সুস্থতা যেমন আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের নিদর্শন তেমনি তাঁর মহামূল্যবান নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন এই মহা নিয়ামতের হিসাব নেবেন।

    অপর নিয়ামতটি হল অবকাশ। আল্লাহ তাআলা যখন কারো জীবন চলার মতো হালাল জীবিকার ব্যবস্থা করে দিলেন তখন আর পেরেশানী থাকার কথা নয়। শোকরগোযারী ও অল্পেতুষ্টির যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে সেই শিক্ষার আলোকে মনমানস গঠিত হলে এ পরিমাণ জীবিকাই প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘সম্পদের প্রাচুর্য থেকে অমুখাপেক্ষিতা আসে না। এটা আসে হৃদয়ের প্রাচুর্য থেকে।’

    পার্থিব ধন-সম্পদ সম্পর্কে যখন সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ এ সত্যটুকু অনুধাবনের যোগ্যতা অর্জিত হয় যে, এই ধন-সম্পদ জীবনের পরম লক্ষ্য নয়, জীবনধারণের উপকরণ মাত্র; তখন মানুষের চিন্তাভাবনা ও মনমানসে ভারসাম্য আসে। আর তা প্রভাব ফেলে তার কাজ-কর্মে। মানুষ তখন সম্পদের পিছনে ধাবিত হয় না; বরং সম্পদ ব্যবহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হয়। বস্ত্তত জীবনের লক্ষ্যউদ্দেশ্য সম্পর্কে অভ্রান্ত ধারণা মানুষকে চিত্তশালী করে। তখনই মানুষের পক্ষে প্রশান্তমনে আল্লাহর তাআলার ইবাদত-বন্দেগী ও ইতাআত-আনুগত্যে নিবেদিত হওয়া সম্ভব হয়। এই যে আত্মনিবেদনের সুযোগ এরই নাম অবকাশ। এই অবকাশ আল্লাহ তাআলার অতি বড় নিয়ামত। একে কাজে লাগিয়ে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথে অনেক দূর অগ্রসর হতে পারে। তবে আশঙ্কা থাকে, মানুষ যদি অসচেতন হয় কিংবা অবহেলা প্রদর্শন করে তাহলে এই মূল্যবান সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই হযরত রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সাবধান করেছেন।

    তো এই দুই নিয়ামত- সুস্থতা ও অবকাশকে কাজে লাগানোই হল সফলতার পথ। প্রশ্ন হল, কীভাবে এগুলোকে কাজে লাগানো যায়? এখানে এসে চিন্তা ও দৃষ্টির পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন হয়। কেননা, ভ্রান্ত চিন্তা জীবনের সকল কর্ম ও সাধনাকে অর্থহীন করে তুলতে পারে। হয়তো সারাজীবন সে মরিচিকার পিছনেই ছুটল। তার এই ছোটাটা অর্থহীন হল। যারা তাদের জীবন নাচ-গান করে কাটিয়ে দেয় তারা তো এ কাজটিকে খুব গুরুত্বের সাথেই গ্রহণ করে। গালভরা কথা আর তত্ত্ব ও বুলির ফুলঝুড়ি দিয়ে এর অর্থবহতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব তো এক শ্রেণীর দর্শক-শ্রোতার মনোরঞ্জন ছাড়া আর কিছুই নয়। এ সবের জন্য কি একজন মানুষের গোটা জীবন নিবেদিত হতে পারে?

    তাই চিন্তার পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য একটিই হতে পারে। তা হল, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন আর অনন্ত জীবনের সফলতা লাভ। এই এক লক্ষ্যে সফল হওয়ার প্রেরণা জাগ্রত হলে জীবনের সকল মহৎ কর্ম সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়। কেননা, ইসলাম বলে আল্লাহর পথে চলেই তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে। এককথায় সে পথটি হল ইসলাম। ইসলামের সঠিক ও ব্যাপক মর্ম কর্মে ও বিশ্বাসে ধারণ করে মুসলিম হতে পারাটাই হল মানব-জীবনের পরম লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি জ্বিন ও ইনসানকে সৃজন করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য।’

    কুরআনের এই একটি আয়াতই মানুষের চিন্তার মোড়, অতঃপর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। আর আল্লাহমুখী ও আল্লাহনিবেদিত মানুষের মাধ্যমেই রচিত হতে পারে একটি সুন্দর সমাজ, নিরাপদ পৃথিবী।