• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • জাপানে তান্ত্রিক নেতাসহ ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

    আম শিনরিকিও তান্ত্রিক গোষ্ঠীর নেতা শোকো আশাহারাসহ ৭ জন বন্দীর মৃত্যুদণ্ড শুক্রবার গোপনে কার্যকর করেছে জাপান। জাপানের মুখ্য মন্ত্রী পরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা আশাহারার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর নিশ্চিত করেছেন। পরে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় একই দিনে আরো ৬ বন্দীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তথ্য নিশ্চিত করে। এছাড়া ওই গোষ্ঠীর আরো ৬ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় আছে।
    ১৯৯৫ সালের টোকিওর রেলস্টেশনের আন্ডারগ্রাউন্ডে এক ভয়াবহ রাসায়নিক হামলার জন্য তাদের এই সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়। ‘দ্যা সারিন অ্যাটাক’ খ্যাত ওই ভয়াবহতম হামলায় ১৩ জন মারা যান। হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হন।
    জানা যায়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে সব বন্দীই নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের শেষ সুযোগ পেয়েছে। বন্দীদের চূড়ান্ত আপিল নিষ্পত্তি হয় জানুয়ারি মাসে। এরপরই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।
    এদিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছ হামলায় আহত জাপানিদের স্বজনেরা। হামলায় নিহত রেলকর্মীর স্ত্রী শিজুই তাকাহাশি বলেন, ‘তার যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো এটাই সঠিক।’
    তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্বামীর পিতা মাতা ও আমার পিতা মাতা আজ মৃত। এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবরটা নিজ কানে না শুনে যাওয়ার জন্য তাদের আক্ষেপ থেকে গেছে।’
    ১৯৯৫ সালের টোকিওর রেল স্টেশনের আন্ডারগ্রাউন্ডে ভয়াবহ রাসায়নিক হামলায় নিহতকে ঘিরে স্বজনের আহাজারি।
    শোকো আশাহারা ও তার অনুসারীরা আরো কয়েকটি হত্যাকাণ্ড নিয়েও অভিযুক্ত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে উত্তর জাপানের একটি শহরে হামলার ঘটনায় ৮ জন মারা যান ও ৬০০ জন আহত হন। সে হামলারও মূল পরিকল্পনাকারী ছিল শোকা আশাহারা।
    আম শিনরিকিও
    আম শিনরিকিও মানে ‘সর্বোচ্চ সত্য’। ১৯৮০ সালে হিন্দু ও বুদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসীদের একটি আধ্যাত্মিক দলের হাতে এই গোষ্ঠী যাত্রা শুরু করে। শোকো আশাহারা গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা। তাকে চিজুও মাতসুমোতো নামেও ডাকা হয়। ১৯৮৯ সালে সরকারিভাবে তাদের ‘ধর্মীয়’ গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাপান। সে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী এই গোষ্ঠীর অনুসারীও বাড়তে থাকে। একসময় জাপানে ১০ হাজার মানুষ এই ধর্মের মতাদর্শী ছিল। রাশিয়াতে ছিল কমপক্ষে ৩০০০০ অনুসারী।

    সাম্বার ছন্দে মাতাবেন নেইমাররা!

    রাশিয়ার দৃষ্টিনন্দন কাজান শহরের অসাধারণ স্টেডিয়াম কাজান এরিনা। এই মাঠেই ফুটবল লড়াইয়ের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায় মাঠে নামবে সাম্বা কিং ব্রাজিল ও বেলজিয়াম। তবে ব্রাজিলের শৈল্পিক ফুটবলের বিপক্ষে ‘ফুটবল যুদ্ধে’র ঘোষণা দিয়েছে বেলজিয়াম। ব্রাজিলও জানিয়ে দিয়েছে তারা কাজানের মাঠে এক ইঞ্চিও ছাড় দেবে না। কাজানের পুরো মাঠের দখল চায় নেইমার এন্ড কোং। সাম্বা ছন্দে আজ দর্শক মাতাবেন তারা। কীভাবে মাঠের দখল বুঝে নিতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন দলের ‘হেডমাষ্টার’ তিতে। এই কোচ সব জ্বালানি তৈরি করেছেন বেলজিয়ামকে উড়িয়ে দিতে। কোচ তিতে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন বেলজিয়াম কেমন দল। ওরা সাপের মতো ফণা তুলতে পারে! তার প্রমাণও দিয়েছে জাপানের বিপক্ষে। ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে সেই খেলায় বেলিজয়াম জিতেছিল ৩-২ গোলে। বেলজিয়াম ফুটবলের ৪৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম দুই গোল হজম করে খেলায় ফিরে জিতেছে। কোচ তিতে বলেছেন, ‘আমি খেলাটা দেখেছি। বুঝতে পারি তারা কী করতে পারবে, আর কী পারবে না।’ এদিকে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে আজ রাত আটটায় মাঠে নামছে উরুগুয়ে ও ফ্রান্স।

    ইতিহাস বলছে বেলজিয়াম সব সময় ব্রাজিলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে। দুই দলের লড়াইয়ে সব সময়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল ২০০২ বিশ্বকাপ ফুটবলে, ব্রাজিল ২-০ গোলে হারিয়েছিল বেলজিয়ামকে। বেলজিয়ানদের ভুলে যাওয়ার কথা না। পেলের ফুটবল জীবনে যে কয়টি স্মরণীয় মূহুর্ত রয়েছে তার মধ্যে একটি ছিল বেলজিয়ামের বিপক্ষে ‘বাইসাইকেল কিক’ করে গোল করা।  ১৯৬৮ সালের সেই খেলায় পেলে হ্যাটট্টিক করেছিলেন। পেলেকে ভুলে যায়নি বেলজিয়াম। ভুলে যায়নি ব্রাজিল কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে মাঠের লড়াইয়ে।

    বিশ্বকাপের ইতিহাসে বেলজিয়ামের সেরা সাফল্য ৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান। আর ২০১৪ বিশ্বকাপের মঞ্চে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত লড়াই করে বাড়ি ফিরতে হয়। সেবার বেলজিয়াম ০-১ গোলে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নেয়। এবার তাদের বড় বাধা ব্রাজিল। ব্রাজিল গত আসরে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে লজ্জার হার নিয়ে বাড়ি গিয়েছিল। এবার সেই ফাইনালের টিকিট হাতে পেতে চায় ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।  হিসাব করলে দেখা যায় ৯৪ বিশ্বকাপ থেকে পরের সব আসরে কখনো কোয়ার্টার ফাইনাল হতে বাদ পড়েনি দলটি।

    কোচ তিতের ব্রাজিল জানিয়ে দিয়েছে এবার কেন তারা এই বিশ্বকাপ ফুটবলে ফেবারিট। গ্রুপ পর্বের খেলায় সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে একটি ড্র ছাড়া বাদবাকি যে কয়টি খেলা গেছে তার সবকটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে তিতের ছাত্ররা। কোষ্টারিকা, সার্বিয়াকে হারিয়েছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে ব্রাজিল দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে। সেই ধারাবাহিকতা আজও থাকবে। অবশ্য দলের মিডফিল্ডার ক্যাসিমিরো দুই হলুদ কার্ড পেয়ে আজ মাঠের বাইরে। তার জায়গায় বিকল্প ভেবে রেখেছেন কোচ তিতে। ইনজুরিতে থাকা মার্সেলোকে আজ মাঠে দেখা যেতে পারে।

    অন্যদিকে বেলজিয়ামের ৫ ডিফেন্ডার আছেন। যারা নেইমারকে আটকাতে মাকড়সার জাল বিছাবেন। জেন বার্টনগান, ভিনসেন্ট কোম্পানী, টবি আল্ডার উইল্ডরা নেইমারকে আটকাতে চাইবেন। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মুনিয়ের থমাস খেলবেন উপরে। এদের সব কিছু নেইমাইরকে ঘিরে। বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রমাণ হয়েছে তিতে বিশ্ব সেরা কোচ। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সঙ্গে ইউরোপীয়ান ধাঁচকে মেলাতে চেষ্টা করেছেন। তার পরিকল্পনা ভালোই এগুচ্ছে। এবার সেই টনিকটা ইউরোপীয়ান দল বেলজিয়ামের সঙ্গে কাজে লাগাবেন। ব্রাজিলের গত দুটি খেলায় অধিনায়ক ছিলেন ডিফেন্ডার থিয়েগো সিলভা। এবার তাকে পরিবর্তন করা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মিরানাডাকে। তিতের এটা এক ধরনের পরিকল্পনা। ম্যাচ বাই ম্যাচ দায়িত্ব দিচ্ছেন।

    বেলজিয়ামকে বলা হয় রেডডেভিলস। তারা গতকাল সকালে মস্কোতে অনুশীলন করে দুপুরে কাজানের বিমানে ওঠে। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে এটাই শেষ যাওয়া নয়। কাজান জয় করে তারা আবারও নতুন একটি শহরে যাবে। বেলজিয়াম ফুটবলের স্বর্ণ সময় যাচ্ছে এখন। তারা মাঠের লড়াইয়ে সেটা প্রমাণ করেছে। ব্রাজিল সেটা নষ্ট করতে পারবে কি-না তারও প্রমাণ হবে আজ।

    মোদ্দা কথা আজকে ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের খেলায় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই দেখা যাবে। উত্তেজনার পারদ ছড়াবে। লেনিনের দেশের ফুটবল মাঠে কঠিন একটা লড়াই দেখার অপেক্ষায় এখন গোটা ফুটবল দুনিয়া।

    জাপানে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো কি সহজ হবে?

    এবার সংবাদ বিশ্লেষণ। জুন মাসের মাঝামাঝি জাপানের মন্ত্রিসভা চলতি বছরের মৌলিক অর্থনীতি ও বাজেট বিষয়ক নীতিমালা অনুমোদন করেছে। আরও বেশি সংখ্যক বিদেশি কর্মী গ্রহণ করার লক্ষ্যে এই নীতিমালায় জাপানে বসবাস সংক্রান্ত একটি নতুন নীতি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জাপানে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো’র প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত কিছু সমস্যাদি’র ওপর আলোকপাত করছেন এন এইচ কে’র ঊর্ধ্বতন ভাষ্যকার রেইকো সাকুরাই।

    “এতদিন পর্যন্ত জাপানের নীতি ছিল বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের বেশি ক’রে গ্রহণ করা । তবে সেই ব্যবস্থায় আর কাজ হচ্ছে না। এখন জাপান সরকার, দেশে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। নতুন শর্তে বলা হয়েছে, বিদেশি কর্মীরা যদি অনায়াসে দৈনন্দিন জীবনের কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত যথেষ্ট জাপানি ভাষা আয়ত্ত করতে পারেন এবং বিভিন্ন শিল্প জোট দ্বারা নির্ধারিত জাপানি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন, সেক্ষেত্রে তাদের সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত জাপানে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। যারা বর্তমানের সরকার-পৃষ্টপোষিত ইনটার্নশিপ প্রোগ্রাম সফলভাবে শেষ করতে পারবেন, তারা জাপানে থাকার মেয়াদ সর্বোচ্চ আরও ৫ বছর বাড়িয়ে নেওয়ার অনুমতি পাবেন।

    সরকার বলছে, এই কর্মীদের স্থায়ীভাবে জাপানে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, এই কর্মীদের পরিবার নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না। পাশাপাশি শিল্পখাতকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে, যেখানে নতুন ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে। সরকার কৃষি, নার্সিং পরিষেবা, নির্মাণ খাত, হোটেল শিল্প এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্প যেখানে শ্রমিক ঘাটতি বিশেষ ভাবেই তীব্র, সেখানে কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

    কথা হচ্ছে, নতুন ব্যবস্থার অধীনে অ-জাপানি কর্মীরা জাপানে এসে কাজ করতে আগ্রহী হবেন কি না। এ ব্যাপারে জাপান তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন।

    এর কারণ, বিগত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া’য় কর্মীদের ন্যুনতম মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব দেশে কর্মীদের কর্ম পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটেছে।

    দক্ষিণ কোরিয়া, বিদেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক কর্মী নেওয়ার জন্য ২০০৪ সালে এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম প্রবর্তন করে। চীনেও বয়োবৃদ্ধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত। নার্সিং পরিষেবা ও কৃষি’র মত খাতে কর্মী ঘাটতি’র সমস্যা কেবল জাপানেরই রয়েছে, তা নয়।

    দক্ষ কর্মীশক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে ব’লেই মনে হয়। বিভিন্ন দেশ যেমন কর্মী গ্রহণের ব্যাপারে নিজস্ব শর্ত নির্ধারণ করছে, তেমনি কর্মীদেরও পছন্দ মত কর্মস্থল বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। চাকরির সন্ধানরত বিদেশি কর্মীরা জাপান’কে কাজ করার জন্য আকর্ষণীয় দেশ ব’লে মনে করবেন কি না, তারা জাপানে এসে কাজ করতে আগ্রহী হবেন কি না, সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন”।

    সংবাদ বিশ্লেষণ শেষ হোল । জাপানে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো’র প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত কিছু সমস্যাদি’র ওপর আলোকপাত করলেন এন এইচ কে’র ঊর্ধ্বতন ভাষ্যকার রেইকো সাকুরাই।

    বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল ব্রাজিলের

    জার্মানিকে ছাড়িয়ে যায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা

    আর্জেন্টিনার বিদায়

    দশ মিনিটের ছোট্ট এক ফরাসি টর্নেডো। তাতেই লন্ডভন্ড আর্জেন্টিনা রক্ষণ। লন্ডভন্ড সময়ের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্নও। এমবাপে-গ্রিজম্যানদের তোপে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে উড়ে গেছে আর্জেন্টিনা। জোড়া করেছেন কিলিয়ান এমবাপে।
    এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচও হয়ত এটি। গোল আর পাল্টা গোলের ম্যাচে ৫৭ মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্দের গোলে ফ্রান্সের সমতায় ফেরা, এরপর চার মিনিটের এমবাপে ঝলক। ফাঁকা রক্ষণের সুযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে জোড়া গোলে স্কোরলাইন ৪-২ করে দেন ১৯ বছর বয়সী তারকা। বাকি সময়ে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক বনে যাওয়া ফরাসি রক্ষণের পাশে মেসি-ডি মারিয়াদের নিষ্প্রভ ঘুরে বেড়ানো। এর মাঝে মেসির দলকে সইতে হয়েছে পাল্টা আক্রমণের ঝটকাও। আর যোগ করা সময়ে মেসির ক্রস থেকে করা বদলি খেলোয়াড় আগুয়েরোর হারের ব্যবধানই কমানো গোল। ম্যাচজুড়ে ফরাসিদের পাল্টা আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে পাঁচজনকে দেখতে হয়েছে হলুদ কার্ড। আর্জেন্টিনার পোস্টে মোট চারটি শট নেয় ফ্রান্স, চারটিই সফল। এই ছিল গতকাল কাজান অ্যারেনার সংক্ষিপ্ত চিত্র।
    ১০৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও কোচ হিসেবে রেকর্ড ৮০তম ম্যাচে এবারই প্রথম আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হন দিদিয়ের দেশম। প্রথম সাক্ষাতেই ইতিহাস। ইতিহাসই তো, বিশ্বকাপে যে এই প্রথম আর্জেন্টিনাকে হারালো ফ্রান্স।
    স্ট্রাইকার ছাড়াই খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। ফল স্বরুপ বলের দখল রাখলেও ঘুমপাড়ানি ফুটবলে প্রথম ৪০ মিনিট প্রতিপক্ষের পোস্টে কোন শটই নিতে পারেননি মেসি-ডি মারিয়া-পাভনে গড়া হোর্হে সাম্পাওলির আক্রমণভাগ। বিশেষ করে একজন স্ট্রাইকারের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পায় আর্জেন্টিনা। হিগুয়েইন-আগুয়েরো তখন বেঞ্চে।
    পক্ষান্তরে পাল্টা আক্রমণে ত্রাস ছড়ান এমবাপে-গ্রিজম্যান-জিরুদরা। তেমনি এক ভয়ঙ্কর পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের ১২তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় ফ্রান্স। বল নিয়ে দ্রæতগতিতে এগুচ্ছিলেন কিলিয়ান একমাপে। ডি বক্সে তাকে অবৈধভাবে বাধা দেন মার্কোস রোহো। এজন্য হলুদ কার্ডও দেখতে হয় রোহোকে। গোলের এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি অঁতোয়ান গ্রিজম্যান।
    ২০তম মিনিটে লম্বা পাসে বল পেয়ে একই রকম ভয়ঙ্করভাবে আর্জেন্টিনার ডি বক্সের দিকে এগুচ্ছিলেন এমবাপে। এ যাত্রায় হলুদ কার্ডের বিনিময়ে পিএসজি তারকাকে থামান তাগলিফিকো। ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেয়া পল পগবার ফ্রি-কিক ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। ৩৯তম মিনিটে গ্রিজম্যানের ক্রসে বেঞ্জামিন পাভার্দ মাথা লাগাতে পারলে ব্যবধান বাড়াতে পারত ফ্রান্স।
    এর দুই মিনিট পর সম্ভবত আসরের দর্শনীয় গোলটি করেন ডি মারিয়া। যে গোলে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। এভার বনেগার পাস ধরে ২৫ গজ দুর থেকে বাঁ-পায়ে নেয়া ডি মারিয়ার আচমকা শট ঠেকানোর কোন সুযোগই পাননি গোলরক্ষক হুগো লরিস। ডান কোনা ঘেঁসে বল আশ্রয় নেয় জালে। আকাশি-নীল গ্যালারীতে ওঠে উল্লাসের ঢেউ। যে উল্লাসের একজন ছিলেন দেশটির কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনা। ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যিনি এদিনও গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন প্রাণের দলকে সমর্থন দিতে। বিশ্বকাপে ৩২ বছর পর ডি বক্সের বাইরের শটে গোল খায় ফ্রান্স।
    দ্বিতীয়ার্ধের রোহোর বদলি নামেন ফেদেরিকো ফাজিও। বিরতির পর তৃতীয় মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসির নেয়া শট গ্যাব্রিয়েল মার্কাদোর পা ছুঁয়ে জালে আশ্রয় নেয়। আকাশি-নীল গ্যালারীতে ওঠে উল্লাসের ঢেউ। দশ মিনিট না পেরুতেই সেই ঢেউ থামিয়ে দেন পাভার্দ। দুরপাল্লার বাঁকানো ভলিতে স্কোরবোর্ডে সমতা আনেন ২২ বছর বয়সী তরুণ ডিফেন্ডার। এর ছয় মিনিট পর কাজান অ্যারেনার আকাশী-সাদা দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয়া এমবাপের সেই গোল। ভিড়ের মধ্য থেকে বল বের করে বাম প্রান্ত থেকে জোরালো শটে গোলরক্ষক আরমানিকে পরাস্থ করেন তিনি। চার মিনিট পর করেন বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় গোল।
    তাতেই শেষ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। সেই সাথে জন্ম নেয় বেশ কয়েকটি প্রশ্নও। আন্তর্জাতিক ফুটবলে থাকছেন তো মেসি? আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে সাম্পাওলির ভবিষ্যৎ-ই বা কি?

    বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় জাপানের কয়েকটি জায়গা

    ইউনেস্কোর একটি কমিটি, জাপানের খ্রিষ্টানদের নির্যাতনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

    আজ বাহরাইনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, বিশ্ব ঐতিহ্য বিষয়ক কমিটি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

    নাগাসাকি অঞ্চলের গোপন খ্রিষ্টান ধর্মীয় স্থানগুলোর ১২টি অংশ, জাপানের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা নাগাসাকি ও কুমামোতোয় অবস্থিত।

    এগুলোর মধ্যে, হারা দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, ওউরা গির্জা এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের উপস্থিতি থাকা গ্রামগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

    এই জায়গাগুলো, সপ্তদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে খ্রিষ্টান ধর্ম পালন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের গোপনে ধর্ম পালনের ইতিহাস প্রদর্শন করছে।

    সেসময় লোকজন, প্রচলিত জাপানী সমাজ এবং বিদ্যমান ধর্মগুলোর সঙ্গে সহাবস্থান করার পাশাপাশি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে খ্রিষ্টান ধর্মীয় বিশ্বাস হস্তান্তর করে এসেছে।

    উল্লেখ্য, বর্তমানে জাপানে ১৮টি সাংস্কৃতিক এবং ৪টি প্রাকৃতিক সম্পদসহ মোট ২২টি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থান রয়েছে।

    ‘ফরযে আইন ইলম শেখা ছাড়া ঈমান শেখা হয় না’

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    হাম্দ ও ছানার পর :

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ قُوْلُوْا قَوْلًا سَدِیْدًا  یُّصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕوَ مَنْ یُّطِعِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِیْمًا.

    একটি মাসআলা আমরা সবাই শুনেছি, দ্বীনী ইল্ম হাছিল করা ফরয। হয়ত অনেকে এভাবে শুনেছি যে, ফরযের দুটো স্তর। ফরযে আইন, ফরযে কেফায়া। কিছু পরিমাণ ইলম ফরযে আইন, কিছু পরিমাণ ইলম ফরযে কেফায়াহ। ফরযে আইন ইলম বলতে বোঝায়, যে পরিমাণ ইলম সবার জন্য শেখা ফরয। আর ফরযে কেফায়া ইলম হল সেটা দ্বীনের ইলম, যা সবার জন্য শেখা ফরয নয়, তবে কিছুসংখ্যক আলেম এমন থাকা জরুরি যারা ফিকহ ও দলীল-আদিল্লা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। যাতে কারো প্রয়োজন হলে তাঁদের কাছ থেকে শিখতে পারে ও জানতে পারে।

    আজকে আমরা ফরযে আইন ইলম সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

    প্রথমেই ঈমান, ইসলাম শিখতে হবে। এই শেখাটার প্রথম স্তর হল ফরযে আইন ইলম। আপনি যদি বলেন ঈমান শিখব, ইসলাম শিখব- এর মানেই হল যতটুকু ইলম ফরযে আইন ততটুকু শিখতে হবে। শেখার দুটি স্তর আছে। এক হচ্ছে, জ্ঞান অর্জন করা, আরেকটা হল প্রায়োগিক শিক্ষা। যা শিখবেন ওটার প্রয়োগ করার অনুশীলন করতে হবে। শুধু জ্ঞান অর্জন করলাম তাহলে এই শেখা পরিপূর্ণ হল না। ফরযে আইন যতটুকু ইলম, এর মধ্যেও দুটি স্তর আছে। একটা হল, জ্ঞান অর্জন আরেকটা হল, সেটার প্রায়োগিক শিক্ষা-অনুশীলন। তাহলে ফরয আদায় হবে। অন্যথায় ফরয আদায় হবে না। এই যে একটা শব্দ আমরা বলি, ‘ঈমান শেখা’ খুব দামী, কঠিন এবং গভীর একটা শব্দ। তো ঈমান শেখা বলতে গেলেই আমাকে ফরযে আইন ইলম শিখতে হবে। ফরযে আইন ইলম শেখার ব্যবস্থা না করে যতই ঈমান শেখার কথা বলি, ঈমান শেখা হবে না। এমনকি ফরযে আইনের উভয় পদ্ধতিতে; জ্ঞান অর্জন আর প্রায়োগিক অনুশীলন -এই উভয় স্তরের ফরযে আইন পরিমাণ ইলমের উপর মেহনত করলে ঈমান শেখা হবে, ইসলাম শেখা হবে।

    এখন বুঝতে হবে, ফরয আইন ইলমের অধ্যায়গুলো কী কী।

    ফরযে আইন ইলমের দুটো স্তর। জ্ঞান অর্জন ও প্রায়োগিক অনুশীলন। এখন বলছি ফরযে আইন ইলম দুই প্রকার। প্রথম প্রকার ইলম শুরু হয় ঈমান আনার পরেই। যে আল্লাহর মেহেরবানীতে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে সে শুরু থেকেই ঈমানওয়ালা, ইসলাম ওয়ালা। তো ঈমান আনার পর থেকে, ইসলাম সম্পর্কে বোধ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এই অংশের ইলম অর্জন শুরু করতে হবে। এক দিনের এক সপ্তাহের এক মাসে আমি শিখে শেষ করতে পারব না। ঠিক আছে। এক সপ্তাহে সব শিখে ফেল- শরীয়ত এটা বলে না। কিন্তু শিখতে থাকতে হবে। বাদ দেওয়া যাবে না। এমনিই তো আমরা ছুটি পাই। যেমন, আজকের দিন পুরা ইলমের জন্য আমরা ওয়াক্ফ করেছি, কিন্তু এর মধ্যেও কি ছুটি পাইনি আমরা? ছুটি দিতে হবে। ছুটি না দিলে আমরা লাগাতার কীভাবে কাজ করব? আমরা রোযা রাখি। তাতে কি ছুটি নেই? প্রথম ছুটি তো ইফতার। ইফতারের পর থেকে আবার সেহরীর শেষ পর্যন্ত ছুটি। নামায ফরযে আইন। কিন্তু ছুটি আছে। ফজরের নামাযের পর থেকে লম্বা ছুটি যোহর পর্যন্ত। যোহরের পর থেকে আছর পর্যন্ত মোটামুটি লম্বা ছুটি। আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ছুটি। মাগরিবের পর থেকে ইশা পর্যন্ত। আমাদের দেশে তো ইশা আগে আগে পড়ে, এজন্য কম ছুটি। ইশা আরো দেরীতে পড়লে আরো ছুটি। আর ইশার পর থেকে একেবারে ফজর পর্যন্ত ছুটি। আল্লাহ তাআলা কত আসান করেছেন। দ্বীন বুঝার, দ্বীন শেখার এবং দ্বীনের উপর চলার যদি কারো ইচ্ছা থাকে, নিয়ত থাকে তাহলে কি কঠিন? নিয়ত না থাকলে তো সহজ থেকে সহজ বিষয়ও কঠিন। যাই হোক, বলছিলাম দ্বীন শিখতে থাকতে হবে। দ্বীন শেখা বাদ দেওয়া যাবে না। মানে হল, আপনি ভুলে যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহে একটু শিখলেন, তারপর আর খবর নেই, ভুলে গেছেন। আমাদের ফরয ইলমের যে অনেক বাকি আছে, তার খবর নেই। ভুলেই গেছে। এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হবে না। চলতে থাকতে হবে। ছুটি নিতে পারব, কিন্তু একেবারে ভুলে যেতে পারব না। এক সপ্তাহ একটু শিখলাম তারপর তিন দিনের ছুটি বা আরো এক সপ্তাহের ছুটি, ঠিক আছে, এক সপ্তাহ পর আসুন। আরেকটু শিখুন। কিন্তু একদিন একটু শিখলাম, তারপর মাসকে মাস পার হয়ে গেল, বছরকে বছর পার হয়ে গেল, আর কোনো খবর নেই, এটা কি ছুটি নেওয়া হল, না ভুলে যাওয়া হল? ভুলে যাওয়া যাবে না। ফরযে আইন ইলমের যতক্ষণ একটা অংশও বাকি আছে, যেটা আমি শিখিনি, ততক্ষণ পর্যন্ত ভুলে যাওয়া যাবে না। চালিয়ে যেতে হবে। অবহেলা করতে পারবেন না। এটা হল এক প্রকার ফরয ইলম।

    আরেক প্রকার, যখন যে কাজ তখন সেটা শেখা ফরয। দেরি করা যাবে না। আগের প্রকার তো বললাম, সেটা ছুটি নিয়ে নিয়ে শিখতে থাকেন। কিন্তু অবহেলা করে ভুলে যাওয়া যাবে না। আরেক প্রকার ফরযে আইন ইলম হল, যেটা নগদ দরকার সেটা নগদ শিখতে হবে। দেরি করা যাবে না। একজন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু ব্যবসার মধ্যে তো দু’প্রকার আছে, হালাল ও হারাম। আরেক প্রকার আছে হারাম ও হালালের মিশ্রণ। এখন আমাকে জানতে তো হবে যে, এটা হালাল, এটা হারাম, এটা সন্দেহযুক্ত। এমন কিছু যদি করি যাতে হালাল-হারাম মিশ্রিত- এটা করা যাবে না। কিছু ব্যবসা আছে যা আগাগোড়াই হারাম। কাজেই কোনটা হালাল, কোনটা হারাম তা জানতে হবে। আমি ব্যবসা শুরু করব এখন আর শিখব এক বছর পর, এক বছর শেখা ছাড়াই ব্যবসা চালাব, এটা হয় না।

    ব্যবসার কিছু বিষয় আছে কৌশলগত। কিছু আছে ব্যবস্থাপনাগত। ব্যবস্থাপনাগত বিষয় আপনি অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীর কাছে শেখেন বা কিছুদিন বড় ভাইয়ের দোকানে বসে তার কাছ থেকে শেখেন। কিন্তু হারাম-হালালের বিষয়গুলো আলেমের কাছ থেকে শিখতে হবে। ব্যবসা খুলে দিলেন কিন্তু ব্যবসার হারাম-হালাল জানলেন না, ফরযে আইন লংঘন হল। ব্যবসায় ঢুকেননি তাহলে ব্যবসার হালাল-হারাম সম্পর্কে আরো দেরিতে জানলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু যখন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন তখন আর দেরি করার সুযোগ নেই। ব্যবসা শুরু করবেন এই সপ্তাহে, ব্যবসার হালাল-হারাম জানবেন কি এক সপ্তাহ পর, একমাস পর?  না এখনই। তো এটা হচ্ছে আরেক প্রকারের ফরযে আইন ইলম। মানে যা আমাকে এখনই জানতে হবে। দেরি করা যাবে না।

    একজন হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছে। তো হজ্বের পদ্ধতি শিখতে হবে না? এটা নগদ দরকার, দেরি করা যাবে না। হজ্বের ইহরাম বেঁধে ফেললাম, রওয়ানাও হয়ে গেলাম। কিন্তু খবর নেই যে, ইহরাম কাকে বলে। অনেকে মনে করে, সাদা দুটো কাপড় পরিধানের নামই ইহরাম। লোকে বলে ইহরাম বাঁধা। আর মনে করে কাপড় বাঁধাই হল ইহরাম বাঁধা। যেমন বলা হয় নামাযের নিয়ত বাঁধা। ওখানে কী বাঁধে? হাত বাঁধে। আসলে নিয়ত বাঁধা মানে নিয়ত করা। এই না যে, কোনো কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলা। তো ইহরাম বাঁধার মানে হল, হজ্বের ইহরাম করা। কীভাবে তা করবে আর এর কারণে নতুন কী কী বিধান আসবে, এগুলো জানতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, অনেকের এগুলো কিছুই জানা থাকে না।

    একবার বিমানবন্দরে গেলাম একজনকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। হজ্বে যাচ্ছিলেন। ওখানে একজন জিজ্ঞাসা করল, এক বেচারা ইহরামের কাপড় লাগেজে দিয়ে দিয়েছে। লাগেজ চলে গেছে ভেতরে। সঙ্গে ছোট ব্যাগে ইহরামের কাপড় রাখেনি। বাড়ি থেকে ইহরাম বেঁধে যায়নি। এটা ঠিক যে ইহরাম বাড়ি থেকে বেঁধে না আসারও অবকাশ আছে। ইহরাম বাঁধার শেষ একটা জায়গা আছে। যে যে দেশ থেকেই মক্কা শরীফে আসুক। একটা শেষ সীমানা আছে। ওখানে এসে ইহরাম বাঁধতেই হবে। ইহরাম না বেঁধে ওই মীকাত অর্থাৎ ঐ জায়গা অতিক্রম করা যায় না। বিমান ঢাকা থেকে রওয়ানা হলে পাঁচ ঘণ্টা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মত সময় লাগে। জিদ্দা পৌঁছার আগেই ঐ জায়গাটা এসে যায়। তো এখন কেউ বাসা থেকে ইহরাম বাঁধল না, বিমান বন্দর থেকেও করল না, কিন্তু জেদ্দায় পৌঁছার ঘণ্টা খানিক আগে তার ইহরাম বাঁধতে হবে। নতুবা তার ঐ সীমানা অতিক্রম করতে হবে ইহরাম ছাড়া; এটা নাজায়েয। এমন হয়ে গেলে কী করতে হবে সে মাসআালাও আছে। তো চাইলে এই অবস্থাতেও ইহরাম বাঁধা যায়, নিয়ত করে লব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক… বললে ইহরাম হয়ে গেল। কিন্তু সে তো সাধারণ পোষাক পরে আছে। ইহরাম অবস্থায় পুরুষ এই সাধারণ পোষাক পরে থাকতে পারে না। এখন করবে কী? এটা কি নগদ মাসআলা হল না? এটাও শিখেনি, হজ্বে রওয়ানা করেছে। এখন কে বলবে মাসআলা? তো একজন মুফতী সাহেব ছিলেন, বলে দিয়েছেন মাসআলা- যে আপনি বিমানে বসে ঘণ্টা দুয়েক পর নিয়ত করে তালবিয়া পড়বেন। আপনার ইহরাম শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এই ২/৩ ঘণ্টা ইহরামের পরিপন্থী হালতে থাকবেন এটা ওযর। এখন করবেন কী, ভুল হয়ে গেছে। ইস্তেগফার পড়তে থাকবেন আর ওখানে গিয়ে কাপড় হাতে পাওয়ার পরপরই ইহরামের কাপড় পরে নিবেন। আর কয়েকঘণ্টা ইহরাম পরিপন্থী হালতে ছিলেন এর জন্য যে জরিমানা আসে তা আদায় করবেন।

    তো ভালো যে, মুফতী সাহেবকে পেয়েছেন। না পেলে তিনি কী করতেন? অনেকে ইহরামের জন্য কাপড়কেই মূল মনে করে। কাজেই সে ভাবত যে, কাপড়ই যেহেতু নেই আমি আর কী করব? জিদ্দায় যাই, তারপর ইহরাম বাঁধব। অথচ ওটা করলে ডবল গুনাহ হত।

    তো আমি বলছিলাম, যে ইলম আপনার এখন দরকার, সেটা আপনাকে এখনই শিখতে হবে। একেক জনের একেক যরুরত। যে ব্যবসায় নামবে তার ব্যবসারটা দরকার। যে হজ্বে যাচ্ছে তার হজ্বেরটা দরকার। এরকম একেক জনের একেক বিষয়ের ইলম দরকার।

    একজন চাকরি নেবে, আগে কোথাও চাকরি করেনি। এই প্রথম চাকরি; তাকে চাকরির মাসায়েল জানতে হবে। আমি একজন চাকরিজীবি হিসেবে, একজন কর্মচারী বা কর্মকর্তা হিসেবে যেই স্তরের হই না কেন- আমার উপর তো কিছু দায়-দয়িত্ব আসে। কী কী দায়িত্ব আসে? সকাল এতটায় যেতে হবে, এতটায় ফিরতে হবে। অফিস সময়গুলো বলে দিল। এ সময়টা অফিসের দেওয়া সময়। এটা পালন না করলে শুধু কর্তা নারায হবে, মালিকপক্ষ নারায হবে, এইটুকু? না, এ সময়টা  অফিসে না দিলে আল্লাহও নারায হবেন? এই বিষয়টা তো আমাকে জানতে হবে। যার যে পেশা সেই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট বিধান জানতে হবে।

    একজন সেলুন খুলছে। এটা তার পেশা। কিন্তু কেউ কি সেলুন খোলার পর মুফতী সাহেবের কাছে যায় যে, হুযুর আমি একটি সেলুন  খুলেছি, এটা আমার আয়ের উৎস। আমাকে এ সংক্রান্ত মাসায়েল বলুন? কারণ হুযুরের কাছে গেলে হুযুর বলবেন যে, কারো দাড়ি কামাতে পারবে না। মানুষ এসে ভীড় করুক দাড়ি কামানোর জন্য, তুমি পারবে না। দাড়ি কামালে তো টাকা দেয়, সেটা হালাল না হারাম, কী হুকুম? এগুলি জানতে গেলে তো অসুবিধা! একজন দোকানদার কত পণ্য-সামগ্রী তার দোকানে রাখে। কোনটা দোকানে রাখা ও বিক্রি করা জায়েয, কোনটা জায়েয নয়- মাসআলা জানতে হবে। জানতে আসলেই হয়ে যায়। আমি যে আয়াত পড়লাম-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً

    হে ঈমানদারগণ! (যারা ঈমান এনেছো), তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮

    পূর্ণ ইসলামকে বিশ্বাস কর। পূর্ণ ইসলামকে গ্রহণ কর। পূর্ণ ইসলামকে মান। গ্রহণ করতে, মানতেই যদি অসুবিধা তাহলে তো ঈমান হল না। আর যদি গ্রহণ করে, মানে কিন্তু আমল করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যায়। বিভিন্ন কারণে করতে পারে না। নিজেকে অপরাধী মনে করে, তাহলে ঈমান আছে কিন্তু আমলের ত্রুটি। আর যদি গ্রহণই না করে এবং বলে নামায রোযার কথা হুযুররা বলে, ঠিক আছে, এখন দেখি আমার একটা সেলুন আছে, হুযুররা এটার উপরও কথা বলা শুরু করেছে, এটাও নাকি আমার হুযুুরদের কাছে শিখতে হবে? এটা তো শিখব ভালো নাপিতের কাছে। হুযুরদের কাছে এটা শেখার কী?

    শুনুন, ভালো নাপিতের কাছে শিখবেন, কীভাবে কাঁচি ধরবেন, কীভাবে চালাবেন- এগুলো। এটা নাপিতের কাছে যাওয়া ছাড়া শেখা যাবে না। একটা কিসসা বলি। এক নাপিত বাদশার চুল-মোঁচ ঠিকঠাক করত। একদিন বাদশা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তো  নাপিত এসে বাদশাকে ঘুমের মধ্যে রেখেই চুল কাটা শুরু করল। এবং যেভাবে করা দরকার করে দিল। ঘুম থেকে উঠে বাদশা আশ্চর্য হয়ে গেলেন, আরে! নাপিত এসেছিল? কীভাবে করল সে? আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, টেরই পেলাম না, ঘুমও ভাঙ্গল না! এ তো নাপিতদের বাদশা। হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. কিসসাটা বর্ণনা করেছেন। ঘটনা তো ঘটনাই্, সম্ভবত এটা বাস্তব ঘটনা হবে। তো বাদশা যখন সনদ দিলেন যে, ‘নাপিতদের বাদশা’, তো বাদশাহর কথা নাপিতের জন্য খুব সম্মানের বিষয়। কথাটা খুব মশহুর হয়ে গেল। এখন অন্যান্য নাপিতের স্ত্রীরা এসে এ নাপিতের বউকে, মোবারকবাদ জানাচ্ছে যে, বাদশা তোমার স্বামীকে ‘নাপিতের বাদশা’ বলেছেন। তখন এই নাপিত বা তার স্ত্রী মন্তব্য করল, বাদশা তো বাদশাই। কোন্ নাপিত তার পেশাতে বড়, এটা বাদশা বুঝবেন না, এটা তার বিষয় না। এই পেশার যারা গুরু তারা কেউ এই সনদ দিলে এর মূল্য ছিল। কিন্তু এই সনদ দিয়েছেন দেশের বাদশা। এটা তো তাঁর বিষয় নয়।

    বুঝতে পেরেছেন? বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান ছাহেব দা. বা. এই ঘটনা অনেক বলেন। আমরা বলি না যে, অমুক হুযুর অনেক বড় আলেম, অমুক হুযুর অনেক বড় বুযুর্গ। আমি কী বুঝি- তিনি অনেক বড় আলেম না ছোট আলেম। এটা তো আরেক আলেমই বুঝবেন। তো আমি বলছিলাম এই যে, এত পারদর্শিতা সে অর্জন করেছে যে, ঘুমন্ত অবস্থায় একজনের চুল-মোঁচ কেটে দিয়েছে, ঘুম ভাঙেনি, এটা কি ছোটখাট কোনো পা-িত্য? এটা কোনো হুযুরের কাছে শিখতে হবে? সেলুনওয়ালাদেরকে আমরা বলি না যে, এটা হুযুরের কাছে শিখতে আস। এটা তো নাপিতের কাছেই শিখতে হবে। হুযুুরের কাছে যা শিখতে হবে, তা হল, সেলুনের জন্য যদি সে দোকান ভাড়া নিয়ে থাকে সে ভাড়া সংক্রান্ত মাসআলা জেনে নিবে। একজন মহিলা এসে তার চুল ছোট করে দিতে বলল, এটা করা তার জন্য জায়েয হবে, নাকি হবে না- হুযুরের কাছে জানতে হবে। নাপিত হলো পুরুষ, এসেছে মহিলা; তাও আবার মাথার চুল ছোট করার জন্য?!

    চুলের বিভিন্ন ঢং দেখবেন সেলুনে। বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন ঢং ভালো লাগে। এগুলোর অনেকগুলোই অনুত্তম। কিছু কিছু আছে, নাজায়েয। ঢালাওভাবে সবগুলোকে না জায়েয বলা যায় না। আমরা যেভাবে চুল রাখি, হয় বাবরী চুল আর না হয় ছোট করে সামনে পেছনে বরাবর করে রাখি। একেবারে স্বাভাবিক। এটা হল সুন্দর পদ্ধতি। এর ব্যতিক্রম হলে হারাম হবে- তাও বলছি না। কিন্তু ব্যতিক্রমের মধ্যে যা যা আছে, সবগুলো জায়েয ফ্যাশনে পড়ে না। কিছু না জায়েযও আছে, সেটা জানতে হবে। যে এমন ফ্যাশন করতে চায় তারও জানতে হবে আর যে এমন ফ্যাশন করে দেবে তারও জানতে হবে।

    বিউটি পার্লার আছে না? ওখানে কী কী কর্মকা- হয়? কোনো পার্লারওয়ালা তো দারুল ইফতায় আসে না। ফরযে আইন লংঘন। আরে ভয় পাওয়ার কী আছে? তুমি মাসআলা জান। আমল যদি করতে নাই পার নিজেকে অপরাধী মনে কর। নিজেকে অপরাধী মনে করলেও তো গুনাহ কমল। কিন্তু না জায়েযকে জায়েয মনে করে করা? মানুষ জানতে ভয় পায়। জানতে ভয় পাওয়া ঠিক নয়। হালাল হারামের খোঁজ-খবর নেওয়া দরকার। আমলের মধ্যে যদি ত্রুটি হয়েও যায়, নিজেকে তো অন্তত অপরাধী মনে করব। এটুকু লাভ তো হল। কিন্তু যদি আমি না-ই জানি তাহলে তো হারামকে হালাল মনে করব। নাজায়েযকে জায়েয মনে করব। এটা তো আরো বড় সমস্যা। এজন্যই বললাম, যার যেটা পেশা, যার যেটা কর্মক্ষেত্র তাকে ঐ বিষয়ের ইলম অর্জন করতে হবে। তদ্রূপ যার যেই হক এখন তার উপর এসেছে- সে সম্পর্কে জানতে হবে।

    বাবা হয়ে গেলাম কিন্তু কোনো মাসআলা জানারই যরুরত মনে করলাম না। একজন স্বামী হয়ে গেল, কোন মাথাব্যাথা নেই তার মাসআলা জানার ব্যাপারে। মেয়েকে যখন বিয়ে দেওয়া হল, স্ত্রী হিসেবে তার উপর কী কী মাসআলা আসছে জানার যরুরত মনে করা হল না। বাবা ইন্তেকাল করেছে, মীরাসের মাসআলা জানার যরুরত মনে করা হল না। এরকম কত ক্ষেত্র, কয়টা বলব? কয়েকটি উদাহরণ দিলাম। যে যে পেশায় থাকুক সে পেশা সংক্রান্ত শরীয়তের মাসআলা থাকবে। কেউ কৃষক; এ বিষয়ে কত মাসআলা। আবার কেউ আইনজিবী; তারা শুধু লয়ারদের কাছেই প্র্যাকটিস করতে যায় কিন্তু তাদের কম লোকই হয়ত হুযুরদের কাছে আসা জরুরি মনে করে। আমার যদি মজবুত মাধ্যম থাকত সব আইনজিবী-উকিলদের কানে এই আয়াতের পয়গাম পৌঁছে দিতাম-

    وَ لَا تَكُنْ لِّلْخَآىِٕنِیْنَ خَصِیْمًا

    আর তুমি খেয়ানতকারীদের পক্ষ অবলম্বন করো না। -সূরা নিসা (৪) : ১০৫

    যদি উকিলরা এই বিধানটির উপর আমল করত তাহলে যেসব ক্ষেত্রে বাদি-বিবাদির এক পক্ষ নিশ্চিত জালিম, তার কি নিজের জন্য উকিল পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল?

    আমি একটা ইবাদত শুরু করলাম, কীভাবে করব? যে কাজ আমি করতে চাই, সে কাজের ক্ষেত্রে কী কী বিধান আছে, জীবনের কোন্ অবস্থায়  কী বিধান-  আরবীতে এটাকে বলে ‘ইলমুল হাল’, মানে নগদ অবস্থায় তোমার কী বিধান জানা দরকার; কী বিধান তোমার উপর আরোপিত হচ্ছে, সে বিধান সম্পর্কে জানা ফরযে আইন।

    নগদ ফরয। এটা ফরযে আইন ইলমের এক প্রকার। আরেক প্রকার যা এখনের বিষয় না, তখনের বিষয় না, সব সময়ের বিষয়। সেটা আস্তে আস্তে শিখে ফেলতে হবে। সেটা হল আকীদার বিষয়। এক নম্বরে আকীদা। এটা জানা ফরযে আইন। দ্বিতীয় নম্বর হল ফরযসমূহ; ইসলাম কী কী বিষয় ফরয করেছে। ফরযের তালিকা জানা থাকতে হবে। ইসলাম কী কী জিনিস হারাম করেছে, হারামের তালিকা জানতে হবে। তাহলে এক নম্বরে হল আকীদাতুল ইসলাম, যা মক্তবে পড়ে এসেছেন; ঈমানে মুজমাল-

    آمَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بأسمائه وَصِفَاتِه.

    আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম, আল্লাহ তাঁর নামসমূহ ও  গুণাবলীসহ যেভাবে আছেন। وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ أَحْكَامِه وَأَرْكَانِه এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম আমি মেনে নিলাম। এটা হল সংক্ষিপ্ত। আরেকটু বিস্তারিত হল ঈমানে মুফাসসাল-

    آمَنْتُ بِاللهِ، وملائكته، وَكُتُبِه، وَرَسُلِه، وَالْيَوْمِ الْاخِرِ، وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى، وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ.

    এগুলো ইসলামের আকীদা। আমরা চাই যে মক্তবে উস্তাদযী আমাকে যে আকীদার শুধু নামগুলো শিখিয়েছেন, ব্যস ঐটুকু নিয়েই কবরে যেতে। আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেশতার প্রতি ঈমান, কিতাবের প্রতি ঈমান এগুলো তো শুধু শিরোনাম। এগুলোর অর্থ কী? কী অর্থ আল্লাহর প্রতি ঈমানের? এই  যে বললাম كَمَا هُوَ بأسمائه وَصِفَاتِه ‘যেমন আল্লাহর নাম ও গুণাবলী’ সেভাবে আমি ঈমান আনলাম। কিন্তু সেই নাম ও গুণাবলী কী? মক্তবে তো তা বলা হয়নি। আর আপনি চাচ্ছেন এভাবেই কবরে চলে যেতে। এই আকীদার প্রত্যেকটি নামের অধীনে এর বিশ্লেষণ আছে। ঈমান বিল্লাহ কী? ১-২-৩-৪-৫ এগুলো সবকটা মিলে ঈমান বিল্লাহ। কুরআনের প্রতি ঈমান মানে কী? ১,২,৩,৪,৫ এই কতগুলো বিষয় নিয়ে কুআনের উপর ঈমান। বিস্তারিত আকীদা যদি অন্তরে থাকে তাহলে আল্লাহর প্রতি ঈমান হল, কুরআনের প্রতি ঈমান হল।  ভাই বলুন দেখি আল্লাহর প্রতি ঈমান মানে কী? তা তো জানি না। তো আকীদার শুধু নামগুলোই মুখস্থ করে কি কবরে যেতে চাই? কুরআন ও হাদীসে প্রতিটির যে বিশ্লেষণ আছে তা কি জানতে হবে না? এটা হল ‘আকীদাতুল ইসলাম’।

    ফরযে আইন ইলমের প্রথম বিষয় হল আকীদাতুল ইসলাম। দ্বিতীয় কথা ‘ফারায়েযুল ইসলাম’। কুরআন-হাদীসে আল্লাহ আমার উপর কী কী জিনিস ফরজ করেছেন, একজন মুসলিমের উপর কী কী জিনিস ফরয এগুলো জানতে হবে। তৃতীয়ত, ইসলাম তার অনুসারীদের উপর কী কী জিনিস হারাম করেছে? সগীরা গুনাহ, কবীরা গুনাহ সবই তো গুনাহ। হারাম, মাকরূহে তাহরীমী, মাকরূহে তানযীহী সবই তো বর্জনীয়। কিন্তু বর্জনীয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ কী? হারাম এবং মাকরূহে তাহরীমী। এগুলোর তালিকা আমার জানা থাকতে হবে না? তা হল- আকীদাতুল ইসলাম, ফারায়েযুল ইসলাম, মাহারিমুল ইসলাম এই বিষয়গুলো।

    আরেকটি শিরোনাম হচ্ছে ‘আদাবুল ইসলাম’-ইসলামের আদব। কোন্ ক্ষেত্রে কী আদব-কায়েদা ইসলাম জানিয়েছে এগুলো শিখে ফেলতে হবে। বলে, হুযুর আদব তো আর ফরয না। কোনো কোনো আদব আছে ফরযেরও দাদা। আদব পরিপন্থী কোনো কিছু করাকে কী বলে? বেয়াদবী বলে। সব বেয়াদবী কী জায়েয? কত বেয়াদবী আছে তো হারাম, কত বেয়াদবী আছে এর কারণে ঈমানই চলে যায়। তাহলে আদব শেখা কি মামুলী কথা, না গুরুত্বপূর্ণ কথা? ইসলামের আদবগুলো শিখতে হবে। কোন ক্ষেত্রে কী আদব শিখিয়েছে ইসলাম তা জানতে হবে। প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব আদব রক্ষা করা সব সময় জরুরি নয়। ফরয নয়। কিন্তু আদব জানা থাকা, ইসলামের আদব জানা থাকা ফরয। সব আদব এক মাপের নয়। কিছু আদব আছে ফরয, কিছু আদব আছে মুস্তাহাব। মুস্তাহাব যেটা সেটাতো আর ফরয নয়। কিন্তু আপনার জানা তো থাকতে হবে যে ঐ আদব ফরয আর এই আদব মুস্তাহাব। মুস্তাহাবটা দৈনিক আমল না করলে না করলাম। যেমন জামা গায়ে দেওয়ার সময় ডান হাত আগে ঢুকানো এটা মুস্তাহাব। ভুলে বাম হাত আগে ঢুকে গেছে এতে ফরয বা ওয়াজিব লংঘন হয়নি। কিন্তু মুস্তাহাব লংঘন হয়েছে। কিন্তু সওয়াব আছে না এতে? ইচ্ছাকৃত আদব পরিপন্থী কাজ করা কি ভালো? কিন্তু এটা মুস্তাহাব। আপনার জানা তো থাকতে হবে। আপনার জানা না থাকলে সব সময় তো উল্টা করবেন। মসজিদে ঢোকার সময় ডান পা আগে দেওয়া আদব এটা মুস্তাহাব। সুন্নত। ফরয ওয়াজিব নয় কিন্তু জানা তো থাকতে হবে। জানা না থাকলে দেখা যাবে বেশির ভাগই বাম পা আগে যায়। বের হওয়ার সময় ডান পা আগে বের হয়। এটা কি মুসলিমের জন্য ভালো, সেজন্য অনেকে ধারণা করে যে, এটা তো মুস্তাহাব, এটা তো নফল, না জানলে কী হবে? আরে মুস্তাহব ও নফলের ইলম অর্জন করাও কি শুধু মুস্তাহাবই, না একটি জরুরি কাজ?

    وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

    মেসি যাদু বনাম ফরাসি চমক- আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স টিকে থাকার লড়াই আজ
    ফ্রান্সের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সব ধরনের সম্পর্ক ভালো। একে অপরের সঙ্গে সব সময় সহযোগিতার হাত ধরে চলছে দুই দেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলে আজ এমন এক পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় বন্ধুত্বের কোনো মূল্য থাকবে না! রাশিয়ার কাজান স্টেডিয়ামের দুই গোলপোষ্টের মাঝে ১২০ গজে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ফুটবল লড়াই দুই দেশের শত বছরের পুরোন সম্পর্ক ভুলিয়ে রাখবে ৯০ থেকে ১২০ মিনিট পর্যন্ত। উভয় দল জানিয়ে দিয়েছে তারা ১২০ মিনিট পর্যন্ত খেলাটাকে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ কেউ কাউকে দেবে না। ৯০ নিমিটের আগেই নিশ্চিত করতে চায় কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার টিকিট।
    নকআউট পর্বের এই ম্যাচ উভয় দলের জন্যই হবে অগ্নি পরীক্ষা। মেসি যাদু না ফরাসি চমকে মুগ্ধ হবে সারাবিশ্ব-সেটাই এখন দেখার বিষয়। দুই দলের ফুটবল লড়াই উপভোগ করার জন্য বাংলাদেশের কোটি দর্শকও মুখিয়ে আছে। সমর্থকদের প্রত্যাশা-সি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স আজ ফরাসি ফুটবলের মোহনীয় সৌন্দর্য মেলে ধরবে। মেসি, মাচেরানো, ডি মারিয়াদের ঘায়েল করতে চমক দেখাবে মিশেল প্লাতিনি, জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরী সেমুয়েল, পগবা, গ্রিজম্যান, অলিভার, রাফায়েলরা। ফ্রান্সের আছে তারুণ্যের শক্তি, আছে স্পিড। গ্রুপে দুর্দান্ত লড়াই করে ফ্রান্স খুব ভালো মুডে আছে। কোনো খেলায় হারেনি। অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটা মাত্র গোল হজম করলেও সেটি পেনাল্টি  থেকে এসেছে।
    অন্যদিকে আর্জেন্টিনার অভ্যন্তরে যতই কোন্দল থাকুক তারা যে কোন সময় জ্বলে উঠতে পারে, চোখ রাঙ্গানি দিতে পারে! ফ্রান্স সেই ছবিটা দেখেছে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। কিভাবে ছোঁ মেরে খেলাটা নিয়ে গেল মেসিরা। ইউরোপীয়ান আর লাতিন আমেরিকার ফুটবলে পার্থক্য থাকলেও মেসিদের দলে যারা খেলেন তাদের সবাই প্রায় বছরজুড়ে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে খেলেন। তাই ইউরোপের পাওয়ার ফুটবলকে ঘায়েল করার মন্ত্রটা তাদের জানা থাকারই কথা। মেসি তো দুই দিন আগেই জানিয়েছেন ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ‘ফাইনাল ম্যাচ’ খেলবে। এ-ও বলেছেন দুই দলের ফিফটি ফিফটি চান্স থাকবে। মেসি যাই বলুক চাপে থাকবে তার দল।
    রাশিয়ায় ভলগা ও কাজানাক নদীর তীর ঘেষে কাজান শহর। সবুজ নির্সগ ঘেরা এর স্টেডিয়াম। মস্কো কিংবা সেন্ট পিটারসবার্গে যেমন ঠান্ডা ছিল কাজানে ঠিক তার উল্টো, খুবই গরম। কাজান শহরে সাড়ে তিন লাখ মুসলিম বসবাস করেন। আধুনিক এই শহরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবল লড়াই দেখার জন্য দর্শকের ভিড় বাড়ছে। কাজান জয় করতে ফ্রান্সের বিপক্ষে মেসিরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে গতকাল দুপুরেই পৌঁছেছে। দেশকে কিছু দিতে হবে। ট্রফি ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না তারা।
    ৭৮ ও ৮৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং ৯৮ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ১৯৩০ ও ১৯৭৮ সালে দুই বার বিশ্বকাপ ফুটবলে মুখোমুখি হয়েছিল। দুইবারই আর্জেন্টিনার জয় হয়েছে। আর্জেন্টিনার কোচ সাম্পাওলি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পাওয়া জয়ের পর সেই পুরোন একাদশটাই ধরে রাখতে চান। তার হিসাবে কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ১৪টি ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা। একাদশটাকে সেভাবেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে। ২৩ ফুটবলারের মধ্যে ১৯ জনকে খেলানো হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার সবেচেয়ে বড় দুর্ভাবনা হচ্ছে তাদের দলে হলুদ কার্ডের সংখ্যাটা। মেসি-মাচেরানোসহ ৬ জন হলুদ কার্ড দেখেছেন। আজকে ফ্রান্সের বিপক্ষে কেউ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেলেই পরের খেলায় (পর্তুগাল অথবা উরুগুয়ের সঙ্গে) সে আর নামতে পারবে না।

    ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ড পেল সুইডেনকে

    শেষ ষোলোতে প্রতিপক্ষ হিসেবে মেক্সিকোকে পেল ব্রাজিল। অপরদিকে এই গ্রুপ থেকে নকআউটপর্বে যাওয়া অপর দল সুইজারল্যান্ডকে খেলতে হবে সুইডেনের বিপক্ষে।
    বুধবার রাতে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে সাত পয়েন্ট নিয়ে ই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোতে পা রেখেছে পাঁচবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। কোস্টারিকার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়েছে সুইজারল্যান্ড। এখন এফ গ্রুপ থেকে নকআউটপর্বে যাওয়া দুটি দলকে মোকাবেলা করতে হবে এই দুটি দলের।
    বুধবার রাতে এর আগেই কোরিয়ার কাছে হেরে এফ গ্রুপ থেকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায় হয়ে গেছে। দিনের অপর ম্যাচে মেক্সিকোকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে সুইডেন। এই ম্যাচ হেরেও সুইডেনের সঙ্গী হিসেবে মেক্সিকো গিয়েছে নকআউট পর্বে। দু’দলই সমান ছয় পয়েন্ট করে অর্জন করলেও মেক্সিকো গোল ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে। তাই সুইডেন হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং মেক্সিকো রানার্সআপ।
    IMG0
    সেই হিসেবে ই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে মোকাবেলা করতে হবে এফ গ্রুপ রানার্সআপ মেক্সিকোর। অপরদিকে এফ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন সুইডেন খেলবে ই গ্রুপ রানার্সআপ সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে।

    জাহাজ কর্মচারীকে বিয়ে করতে পরিবার ছাড়ছেন জাপানের রাজকুমারী

    একজন জাহাজের কর্মচারীকে বিয়ে করতে রাজপরিবার ত্যাগ করছেন জাপানের রাজকুমারী আয়াকো। গত দুই বছরে দুইজন রাজকুমারী একই ঘোষণা দিলেন যারা সাধারণ নাগরিককে বিয়ে করছেন। খবর সিএনএনের
    জাপানের সম্রাট আকিহিতোর ভাতিজি এবং প্রয়াত প্রিন্স তাকামোদের তৃতীয় কন্যা আয়াকো গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, জাহাজ কোম্পানি এনওয়াইকে লাইন এর কর্মচারী ৩২ বছর বয়সী কেই মোরিয়াকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন তিনি। এক বছর আগে তাদের পরিচয় হয়। আগামী ১২ আগস্ট তাদের দুইজনের মধ্যে আংটি বদল হবে। ২৯ অক্টোবর টোকিওর একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিয়ে হবে।
    মোরিয়ার সঙ্গে আয়াকোর পরিচয় হয় মা প্রিন্সেস তাকামোদের মাধ্যমে। একটি সমাজ কল্যাণ সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে মোরিয়ার মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় প্রিন্সেস তাকামোদের। এরপর তাদের পরিবারের সঙ্গে রাজপরিবারের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
    এর আগে গত মে মাসে আরেক রাজকুমারী মাকো একই সিদ্ধান্ত নেন। রাজপরিবারের বিধান অনুযায়ী, নাগরিকদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করলে রাজপরিবারের উত্তরাধিকার ত্যাগ করতে হয়।

    সামুদ্রিক দূষণ মোকাবেলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে জাপান

    জাপানের চীফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সু’গা বলেছেন তার দেশ প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্যের ফলে সৃষ্ট সামুদ্রিক দূষণ মোকাবেলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

    মিঃ সু’গা সোমবার জাপান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবেশ মন্ত্রীবর্গের বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান।

    মন্ত্রীবর্গ চীনের সুচৌ শহরে রোববার বৈঠকে মিলিত হন এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিকসহ সামুদ্রিক আবর্জনার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মোকাবেলায় সহযোগিতা করার ব্যাপারে একমত হন।

    মিঃ সুগা চলতি মাসের শুরুতে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবের করা একটি মন্তব্যের উদ্ধৃতি দেন।

    মিঃ আবে বলেন, বিশাল পরিমাণের প্লাস্টিক বর্জ্য জাপানের সমুদ্র উপকূলে ভেসে আসছে।

    মিঃ আবে আরো বলেন, একটি দেশ একক প্রচেষ্টা চালিয়ে কিংবা সব শিল্পোন্নত দেশ একত্রে কাজ করেও সমুদ্র দূষণ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তিনি বলেন, এই সমস্যাটিকে মোকাবেলা করতে হলে উন্নয়নশীল দেশসহ সব দেশের জন্য একে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

    মিঃ সু’গা বলেন, জাপানের সরকার পুনর্ব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছে।

    তিনি বলেন, আগামী বছর জাপানে অনুষ্ঠেয় ২০ জাতি গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলনের আগে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কর্মকৌশল ঠিক করবে সরকার।

    আর্জেন্টিনার স্বপ্ন জিয়নের ম্যাচ

    হতাশা ভুলে স্বরূপে ফেরার রসদটা কি পেয়ে গেলেন লিওনেল মেসি?
    রোববার ছিল বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় তারকার ৩১তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে সতীর্থ-ভক্তদের অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হয়েছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক; বন্ধু, সতীর্থদের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রেরণাদায়ী বার্তা। তাতে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ভরাডুবির হতাশা কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিশ্চয় ভুলে থাকতে পেরেছেন ফুটবল জাদুকর। এবার নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বিশ্ববাসীর কাছে আবারো নিজেকে মেলে ধরার পালা।
    বিশ্বকাপের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে সেন্ট পিটার্সবার্গে আজ জিততেই হবে মেসিদের। শুধু জিতলেই অবশ্য হিসাবটা মিলে যাচ্ছে না, তাকিয়ে থাকতে হবে একই সময়ে রস্তভে অনুষ্ঠেয় আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিকে। সেখানে আইসল্যান্ড জয়হীন থাকলেই মিলবে আর্জেন্টিনার শেষ ষোলর টিকিট। আর আইসল্যান্ড জিতে গেলে চলে আসবে গোল ব্যবধানের হিসাব, যেখানে এক গোলে পিছিয়ে আর্জেন্টিনা। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে তাই বড় জয়ই কাম্য হোর্হে সাম্পাওলির শিষ্যদের।
    ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লজ্জাজনক ভরাডুবির পর মেসিকে কম সমালোচনা শুনতে হয়নি। তবে ফুটবল বোদ্ধারা কিন্তু আঙ্গুল তুলেছেন মেসি নয়, দলের কোচ সাম্পাওলির দিকে। ক্রোয়েট ম্যাচে তার পরিকল্পনা সমালোচকদের তোপের মুখে পড়ে। ফুটবলের চিরায়ত নিয়মই হলো দলের সেরা খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে এবং সে যেভাবে খেলতে পছন্দ করে সেভাবে পরিকল্পনা সাজানো। কিন্তু সাম্পাওলি হেঁটেছেন পুরোপুরি উল্টো পথে। যে কারণে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পাওয়াই যায়নি মেসিকে। পক্ষান্তরে ৩-৪-৩ ফর্ম্যাশনে দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে আর্জেন্টিনার জালে তিনবার বল পাঠান মড্রিচ-রাকিটিচরা। এছাড়া সাম্পাওলির দল নির্বাচনও বার বার হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
    রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর সাম্পাওলিকে এত বেশি সমালোচনা শুনতে হয়েছে যে তিনি সেচ্ছায় দায়ীত্ব থেকে সড়ে দাঁড়াতে চান বলেও খবর প্রকাশিত হয়। দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গেও নাকি তার সম্পর্ক ভালো নয়। তবে এসব খবর উড়িয়ে দিয়েছেন দলের সিনিয়র খেলোয়াড় হাভিয়ের মাচেরানো। সাম্পাওলির সঙ্গে দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্ক আগের মত বলেই জানান তিনি। নাইজেরিয়া ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেছেন, ‘সাম্পাওলির সঙ্গে সম্পর্কটা স্বাভাবিকই আছে, তবে আমরা যদি কোন ব্যাপারে অস্বস্তি বোধ করলে তাকে জানাই। এটা যেসব খেলোয়াড় বেঞ্চে থাকে এবং যারা মাঠে থাকে তারা সবাই করে।’ মাচেরানো আরো বলেন, ‘আমরা জানি পরিস্তিতিটা জটিল। আমাদের মতামত প্রকাশে এবং দল যাতে ভালো অবস্থায় মাঠে নামে এজন্য সম্ভব্য সব কিছু করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
    মাচেরানোর এমন বার্তাই খুশি হতে পারেন ভক্ত-সমর্থকরা। আর্জেন্টাইন সমর্থকরা খুশি হতে পারেন আরো একটি খবরে। এই ম্যাচে থাকছেন না আগের ম্যাচের অন্যতম খলনায়ক বারায়েরো। তার পরিবর্তে দেখা যাবে ফ্রাঙ্কো আরমানির। বিশ্বকাপ দিয়ে আর্জেন্টিনা দলে অভিষেক হতে যাচ্ছে রিভার প্লেটের ৩১ বছর বয়সী গোলরক্ষকের। এছাড়া একাদশে ফিরতে যাচ্ছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও মার্কোস রোহো। তবে বেঞ্চে বসে থাকতে হচ্ছে সার্জিও আগুয়েরো ও ক্রিশ্চিয়ান পাভোনকে।
    আগের ম্যাচের ছক বদলে মেসির প্রিয় ৪-৩-৩ ফর্ম্যাশনে খেলা হবে বলেও শোনা যাচ্ছে। রোহো ও ওটামেন্ডির সঙ্গে রক্ষণের দায়ীত্বে থাকবেন ত্যাগলিয়াফিকো ও সালভিও। মাঝমাঠ সামলাবেন বানেগা, মাচেরানো ও পেরেজ। বাম উইংয়ের দায়ীত্ব থাকবে ডি মারিয়ার কাঁধে। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শানাবেন মেসি। বল জালে পৌঁছে দেয়ার দায়ীত্ব থাকবে হিগুয়েইনের উপর। তবে ভালো কিছুর জণ্য যে আর্জেন্টিনাকে দল হিসেবে খেলতে হবে সেটা আরো একবার মনে করিযে দেন মাচেরানো, ‘প্রতিপক্ষ আমাদের ভোগাতে পারে, কিন্তু আমাদের দলীয়ভাবে লড়তে হবে।’
    এমন ম্যাচে দলের প্রাণভোমরা মেসিকেই যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে তা হয়ত না বললেও চলে। সকল সমালোচনা বুক পেতে নিয়ে নিজেকে জানান দিতে প্রস্তুত মেসিও। দুই বছর আগের সেই অবসরের ভাবনা পেছনে ফেলে জন্মদিনে দৃড়প্রতিজ্ঞা করেছেনÑবিশ্বকাপ না জিতে তিনি অবসরে যাবেন না। এজন্য বিশেষ দিনে বাড়তি প্রেরণাও পেয়েছেন বার্সা তারকা সাবেক সতীর্থ-বন্ধুদের কাছ থেকে। এই তালিকায় আছেন বিশ্বকাপ নিয়েই ব্যস্ত থাকা নেইমার-সুয়ারেজরা। সবচেয়ে বেশি প্রেরণাদায়ী বার্তা পেয়েছেন সাবেক বার্সা সতীর্থ কার্লোস পুয়েলের কাছ থেকে। সাবেক স্প্যানিশ তারকা টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন লিও! কখনোই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ো না, তোমার অর্জন করা হাজারো সাফল্যের সঙ্গে এই বিশ্বকাপ জয়ের সাফল্যটাও তোমার প্রাপ্য! আলিঙ্গন তোমাকে, দিনটা উপভোগ করো।’
    এতো এতো অভিনন্দন বার্তা মেসিকে প্রেরণা না জুগিয়ে পারেই না। প্রয়োজন কেবল আবারো বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে মেলে ধরার।
    তবে মেসিকে একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি কিন্তু দিয়ে রেখেছেন নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা আহমেদ মুসা। তার দৃষ্টিনন্দন জোড়া গোলেই আইসল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলর স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে আফ্রিকান সুপার ঈগলরা। ২৫ বছর বয়সী লেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘যখনই আমি আর্জেন্টিনা অথবা মেসির বিপক্ষে খেলি তখনই গোল করি। চার বছর আগে আমি জোড়া গোল করেছিলাম। যখন আমি লেস্টার সিটিতে যাই তখনও বার্সেলোনার (মেসির) বিপক্ষে দুই গোল করি। তাই আমি আশা করছি পরবর্তি ম্যাচেও এটা ঘটবে। সম্ভবত আমি আবারো জোড়া গোল করতে যাচ্ছি।’
    বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত চারবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল; চারবারই জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা। সর্বশেষ সাক্ষাতটা ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ম্যাচটি ৩-২ গোলে জেতে আর্জেন্টিনা। মেসি ও মুসা দুইজনই করেন দুটি করে গোল। মার্কোস রোহোর গোলে জয় নিশ্চিত করে সেবারের ফাইনালিস্টরা।

    এক গোলে দুই রেকর্ড গড়লেন নেইমার

    বাজে ধরণের ইনজুরি কাটিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে স্বরূপে দেখা দিতে পাচ্ছিলেন না ব্রাজিল সুপারস্টার নেইমার। অবশেষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে গতকাল শুক্রবার গোলের দেখা পেলেন তিনি। কোস্টারিকার বিপক্ষে ইনজুরি টাইমে কুতিনহোর গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জয়সূচক গোলটি করেন এই ২৬ বছর বয়সী তারকা। এই এক গোলেই তিনি দুটি দারুণ রেকর্ড গড়ে ফেললেন।

    ‘ই’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হেক্সা মিশনে থাকা ব্রাজিলকে ৯০ মিনিট আটকে রেখেছিল কোস্টারিকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেদের রক্ষণদুর্গ অটুট রাখতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৯১ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোল করেন ফিলিপ কুতিনহো। টানা দুই ম্যাচে গোল করলেন এই বার্সা তারকা। এরপর ম্যাচের ৯৭ মিনিটে গোল করেছেন নেইমার। ওই গোলে একটি ব্যক্তিগত, অন্যটি ফুটবল বিশ্বকাপের রেকর্ড গড়ে ফেললেন বিশ্বের সবচেয়ে দামী এই ফুটবলার।

    নেইমার ইনজুরি থেকে ফিরে ৪ ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন তার তিনটিতে। প্রীতিম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করে নেইমার রোমারিও থেকে এক গোল পেছনে ছিলেন। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে গোল করে উঠে যান রোমারিওর সমানে। আর রাশিয়া বিশ্বকাপে এসে নিজের প্রথম গোলে ব্রাজিলের হয়ে রোমারিওর ৫৫ গোলের রেকর্ড ভেঙে ৫৬ গোল করে ফেললেন নেইমার। ব্রাজিল তারকাদের মধ্যে তার সামনে এখন দুই সাবেক রোনালদো (৬২) এবং পেলে (৭৭)।

    এছাড়া নেইমার কোস্টারিকার বিপক্ষে ৯৭ মিনিটে যে গোলটি করেছেন তাতে হয়েছে বিশ্বকাপের এক রেকর্ড। সেকেন্ডের হিসেব ধরলে নেইমারের গোলটি ছিল ৯৬ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে হয়েছে। বিশ্বকাপে ১৯৬৬ সালের পর ৯০ মিনিটের ম্যাচে এর থেকে বেশি সময়ে গোল হয়নি আর।

    এই জয় না পেলে বিশ্বকাপে টানা ৪ ম্যাচে জয়হীন থাকার রেকর্ড হতো ব্রাজিলের, ছুঁয়ে ফেলত নিজেদের ইতিহাসে বিশ্বকাপে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়হীন থাকার রেকর্ড। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপ মিলিয়ে এর আগে ৪ ম্যাচ জয় বঞ্চিত ছিল ব্রাজিল।

    এ যেন অচেনা আর্জেন্টিনা

    ইমামুল হাবীব বাপ্পি : পুরো আর্জেন্টিনা তো বটেই, এমনকি বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকদের প্রতিনিধি হিসেবে একবুক স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ার পা রাখেন লিওনেল মেসি। লক্ষ্য বিশ্বকাপ অতৃপ্তি ঘোঁচানো। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খায় সেই স্বপ্ন। নিঝনি নভগোরোদে এসে পড়ল তা মুখ থুবড়ে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের ভাগ্য এখন আর নিজেদের হাতে নেই; এখন তা নির্ভর করছে অনেক ‘যদি-কিন্তু’র উপর।
    কিন্তু কেন এমন হলো? আর্জেন্টিনা কি গ্রæপ পর্বেই বাদ পড়ার মত দল? যে দলে রয়েছেন মেসি-আগুয়েরো-ডি মারিয়া-দিবালার মত বিশ্বের সেরা সব তারকরা সেই দলে কি এমন সমস্যা ছিল যে খাঁদের কিনারে গিয়ে ঠেকেছে? আসরের দুই ম্যাচেই দলের প্রধান তারকা মেসি ছিলেন নিষ্প্রভ। কিন্তু কেন? এর উত্তর একটাইÑ হোর্হে সাম্পাওলি।
    চিলি ও স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার হয়ে সাফল্যই আর্জেন্টিনার কোচ হতে সহায়তা করেছিল সাম্পাওলিকে। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ও বিশ্বের নামজাদা সব খেলোয়াড় হাতে পেয়েও দলটাকে গুছিয়ে নিতে পারেননি ৫৮ বছর বয়সী কোচ। খেলোয়াড়দের গাঁথতে পারেননি এক সুঁতোয়। বিশ্বকাপের মত আসরে এসেও তাকে ভাবতে হয় কোন ফর্ম্যাটে তিনি দলকে খেলাবেন!
    তার পরিকল্পনারই অংশ হিসেবেই পরশু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লুকাস বিলিয়া ও মার্কোস রোহোদের মত পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের একাদশে জায়গা হয়নি। বনেগা-লো সেলসোদের মত মিডফিল্ডারকেও পুরো সময় বসিয়ে রাখেন বেঞ্চে। এক কথায় যে খেলোয়াড় যেখানে খেলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তাদেরকে সেখানে খেলানো হয়নি। এছাড়া ফুটবলের প্রথা মেনে দলের তারকা খেলোয়াড়কে ঘিরেও রচিত হয়নি ম্যাচের পরিকল্পনা। তার খেসারত সাম্পাওলিকে দিতে হয়েছে ক্রেয়োশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে নাকানিচুবানি খেয়ে।
    আর্জেন্টিনা দলটি বড় ধাক্কা খায় তাদের এক নম্বর গোলকিপার সার্জিও রোমেরোকে হারিয়ে (ইনজুরির কারণে)। এদিন একাদশে ছিলেন উইয়ি কাবায়েরোকে। চেলসি বদলি গোলকিপার একসময় ভালো খেলোয়াড় ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই, বিশেষ করে যখন তিনি মালাগাতে খেলতেন। কিন্তু ৩৬ বছর বয়সে এসে তিনি যে কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছেন তার প্রমান তিনি দিয়েছেন সাম্পাওলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে।
    এদিন ৩-৪-৩ ফর্ম্যাশনে খেলেছে আর্জেন্টিনা। আধুনিক ফুটবলে যে কৌশল বড়ই অকেজো। কোচের এই কৌশলে যে খেলোয়াড়রা খুশি নন তা বোঝা গিয়েছিল ম্যাচ শুরুর আগে দলীয় সংগীতের সময়। এসময় বার বার ক্যামেরা খুঁজে নিচ্ছিল মেসির চিন্তিত মুখকে। ম্যাচ শেষেও কারো সঙ্গে মোলাকাত না করে একাকী সবার আগে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন ৩০ বছর বয়সী।
    মাঠেও এদিন মেসি ছিলেন একা। আর্জেন্টিনার কোন মিডফিল্ডারকে এদিন মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে হয়েছে তিনজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলছে আর্জেন্টিনা। শুনতে অবাক মনে হলেও প্রথমার্ধে মাঝমাঠ থেকে মেসির কাছে বল দেওয়া হয়েছে মাত্র দুইবার! ৬০০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে মেসি কখনো পড়েছেন বলে মনে হয় না। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক যা কয়েকবার বল পেয়েছেন সেটাও ক্রোয়েটরা সামলে নিয়েছে শক্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই। মাঝমাঠ থেকে বলের যোগান না পেলে কিভাবে আক্রমণে যাবেন মেসি? এই সহজ হিসাবটা সাম্পাওলি কেন মেলাতে পারেননি সেটা বড় একটা বিষ্ময় বটে।
    ম্যাচ শেষে বিবিসি ফুটবল বিশ্লেষণ কক্ষে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেসিরই একসময়ের ক্লাব সতীর্থ ও স্পেন মিডফিল্ডার সেস ফ্যাব্রিগাস। আর্জেন্টিনাকে তিনি ‘ভগ্ন দল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘মনে হলো তারা একে অন্যের জন্যে নয়, বিপক্ষে খেলছে।’ চেলসি তারকা বলেন, ‘এটা মেসির জন্য কঠিন। তার পিছনে তেমন কোন খেলোয়াড়ই ছিল না। সত্যিই সে এভার বনেগা অথবা গিওভানি লো সেলসোর অভাব বোধ করেছে।’ ফ্যাব্রিগ্যাস বলেন, ‘তার (মেসির) এমন কারো দরকার ছিল যে তাকে একটু হলেও সহায়তা করবে, খেলাটা গড়ে দেবে। আপনি সব সময়ই চাইবেন যত বেশি সম্ভব আপনার সেরা খেলোয়াড়কে বলের যোগান দিতে।’
    কিন্তু বাস্তবে মেসি কাল বলে পাঁ ছোঁয়াতে পেরেছেন মাত্র ৪৯বার! স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা আগুয়েরো ৫৪ মিনিট মাঠে থেকে বলে পা লাগাতে পারেন মাত্র ১৬বার! যে কারো কাছে যা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হওয়ারই কথা। পরিসংখ্যানটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। কৌশলের অংশ হিসেবে আক্রমণের ডান প্রান্তে ছিলেন মেসি, বাঁ প্রান্তে মেজা, মাঝে আগুয়েরো। নিয়ম মেনে মেসির দিক থেকেই বার বার আক্রমণে উঠা উচিত ছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু সাম্পাওলির কৌশল ছিল ভিন্ন। বার বার তাদেরকে মাঠের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করতে দেখা গেছে। যে কারণে মেসি ডান প্রান্তে শুধু হেটেই বেড়িয়েছেন বলের আশায়, কিন্তু পাননি। সাম্পাওলির পরিকল্পনা ছিল মেসিকে সামলাতেই ব্যস্ত থাকবে ক্রোয়েট রক্ষণ, সেই ফাঁকে তারা বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করবে। আইসল্যান্ড ম্যাচের পরে তিনি এমনটা জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনাটা যে ছিল একেবারেই যাচ্ছেতাই তা না বললেও চলে।
    এদিকে রক্ষণও ছিল ফাঁকা নড়বড়ে। কোচের পরিকল্পনায় ছিলেন তিনজন সেন্টারব্যাক। অথচ সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলতে অভ্যস্ত কেবল অটামেন্ডি। তাগিøয়াফিকো ও মার্কেদোরা হলেন ফুলব্যাক। ফুলব্যাক হয়ে সেন্টারব্যাকের কাজ তারা কিভাবে সামলাবেন তার চিন্তা কি করেননি সাম্পাওলি? যে কারণে বার বার তাদের রক্ষণ ফাঁকা হয়েছে। ফুলব্যাকের কাজই তো একটু উঠে গিয়ে আক্রমণে সহায়তা করা। মানজুকিচের মিস কিংবা ম্যাচের গোল তিনটার দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন কতটা অরক্ষিথ ছিল তাদের রক্ষণ। লুকা মড্রিচ ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছেন আয়েশি ভঙ্গিমায় ইচ্ছামত জায়গা তৈরী করে নিয়ে। রাকিটিচের সামনে তো গোলকিপারও ছিল না। আর প্রথম গোলটি তো ‘মিসটেক অব ফুটবল বিশ্বকাপ’ বললেও ভুল হবে না। এমনকি ক্রোয়েশিয়া আরেকটু আক্রমনাত্মক মানসিকতা নিয়ে খেললে গোলের সংখ্যা বাড়াতেও পারত।
    সাবেক আর্জেন্টাইন রাইট ব্যাক জাবালেতার তো নিজ দলের এমন পারফর্মান্স মানতেই পারছেন না, ‘এমন পারফর্ম্যান্স আমি মানতেই পারছি না। দলকে খুব অসহায় দেখাচ্ছিল। তারা এদিন কিছুই করতে পারেনি।’ আর সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালেন শিয়েরার বলেন, ‘মাঠে আর্জেন্টিনার কোন পরিকল্পনাই ছিল না।’
    এমন ভুলের পর সাম্পাওলির সমালোচনার মুখে পড়াটাই ছিল স্বাভাবিক। দেশটির গণমাধ্যম তো তাকে ধুয়ে দিচ্ছে। দলে মেসির মত তারকাকে কাজে রাগাতে না পারার কারণেও তাকে শুনতে হচ্ছে নানান সমালোচনা। অথচ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় শঙ্কায় পড়ার পর উল্টো খেলোয়াড়দের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন সাম্পাওলি!
    ম্যাচ পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু এই পরাজয় আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি পরিষ্কারভাবে খেলাটা পড়তে পারিনি। আসলে সব কিছুই হয়েছে দল ও দলের খেলোয়াড়দের দ্বারাই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোনো পরিকল্পনাই কাজ করেনি।’ তবে তিনি মেসিকে রেখেছেন আলাদা পাত্রে। তার মতে, দলের বাকিদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য না পাওয়াতেই মেসি প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাম্পাওলি বলেন, ‘বাস্তবতা হলোÑ লিও অকেজো ছিলো, কারণ তার সঙ্গে দলের অন্যদের যেভাবে পারফর্ম করা উচিত সেভাবে তা হয়নি।’
    কোচের এ বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলটির ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তার (সাম্পাওলি) যা ইচ্ছা বলতে দিন!’ চিন্তিত বদনে ৩০ বছর বয়সী বলেন, ‘আমার রাগ ও দুঃখ হচ্ছে। অবশ্য এখনো আমাদের সুযোগ আছে।’ এরপর কোচের প্রসঙ্গে আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি আগুয়েরো।
    একইসঙ্গে ব্যর্থতার দায় নিজের বলেও স্বীকার করেছেন সাম্পাওলি, ‘এটা আংশিক দায়িত্ব নয়, পুরো দায় কোচের। গোলকিপার উইলি কাবায়েরোর সমর্থনেও কথা বলেছেন সাম্পাওয়ালি। তিনি বলেন, ‘তাকে (গোলরক্ষক) দোষ দিয়ে লাভ নেই। যদি আমি ভিন্ন কিছুর পরিকল্পনা করতাম, তবে ভিন্ন কিছুই হতো। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তেমন কিছু করার আগেই গোল খেয়ে দল মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমাদের মূল চালিকা শক্তি লিও। কিন্তু দল তার কাছে বল পৌঁছাতে পারেনি। বলা যায় প্রতিপক্ষ তার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। তিনি বলেন, ‘এটা (পরাজয়) দেশ ও দলের জন্য লজ্জা ও কষ্টের। এটা আর্জেন্টিনার মানুষ আশা করেনি। দেশের হয়ে আমি এটা অনেক বছর থেকেই অনুভব করছি, আবারও তেমন কিছুই হতে যাচ্ছে। এটা আসলেই কষ্ট দেয়। দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারি না। আর্জেন্টিনার ভক্তদের খুশি করার পরিকল্পনা নিয়েই রাশিয়ায় এসেছিলাম। আমি আমার সামর্থ্যরে সবটুকুই দিয়েছি।’
    সাম্পাওলি অবশ্য নাইজেরিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে কোচ হিসেবে থাকবেন কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ম্যাচ শেষে নাকি দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা সাম্পাওলির অধীনে আর খেলতে চান না। অন্যথায় তারা অবসরে চলে যাবে। টুইটারে জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকজন ফুটবল সাংবাদিক।

    কম্পিউটার গেম মানসিক রোগ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

    কম্পিউটারে গেম খেলার প্রতি নেশাকে একটি মানসিক রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১১তম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডিতে এটিকে ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত খসড়া দলিলে এই গেমিং আসক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক ধরণের আচরণ হিসেবে, যা জীবনের আর সবকিছুর আকর্ষণ থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে নেয়। বিশ্বের কিছু দেশে গেমিং আসক্তিকে ইতোমধ্যে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
    যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশে তো ইতোমধ্যে এর চিকিত্সার জন্য প্রাইভেট এডিকশন ক্লিনিক পর্যন্ত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি তৈরি করেছিল। নতুন গাইডলাইনটি প্রকাশিত হবে এ বছরই।-বিবিসি।