• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব

    বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম স্কলার ও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারক মুফতি তাকি উসমানি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। রয়েল ইসলামিক স্ট্যাট্রেজিক স্টাডিজ সেন্টারের জরিপে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
    জর্ডানকেন্দ্রিক রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার প্রতি বছর শীর্ষ ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ২০২০ সালের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করেছেন এ ইসলামি পন্ডিত। গত বছরের তালিকায় তিনি ছিলেন ষষ্ঠ নাম্বারে।

    ৭৪ বছর বয়সী বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব সামগ্রিক জ্ঞান-অভিজ্ঞানে অগাধ পান্ডিত্য, কর্মখ্যাতি ও পারিবারিক আভিজাত্যের বিবেচনায় তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিনি হাদিস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ ও অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ। এছাড়া এই বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরিয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের শরিয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। উর্দু, বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় তার গ্রন্থাদি রয়েছে।

    ২০১৯ সালের প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকায় ইরানের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সাইয়েদ আয়াতুল্লাহ আলী আল-খোমেনি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন আবু ধাবির মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি ক্রাউন প্রিন্স এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার। মুসলিম ম্যান অব দ্য ইয়ার-২০২০ মনোনিত হলেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তালিকায় মুসলিম উইমেন অব দ্য ইয়ার হয়েছেন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভ‚ত রাশিদা তালিব।

    জাপানের সরকার বিদেশিদের জন্য কর্ম পরিবেশ উন্নত করবে

    জাপানের অভিবাসন এজেন্সি জাপানে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চালু করা নতুন ধরণের একটি কর্ম-ভিসার প্রচারের জন্য আরও উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। গত ছয় মাসে মাত্র ৩শ ব্যক্তি এই ভিসা পেয়েছেন।

    গত এপ্রিল মাসে ক্যাটেগরি-১ নামক এই ভিসা কার্যকর হয়। এটি কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন বিদেশীদের নার্সিং সেবা এবং নির্মাণ’সহ মোট ১৪টি খাতে কাজের অনুমোদন দেয়। সরকারের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার পূর্বে সর্বোচ্চ ৪৭ হাজার ব্যক্তি ক্যাটেগরি-১ ভিসায় আবেদন করবেন।

    তবে, অভিবাসন পরিষেবা এজেন্সি বলছে যে গতমাসের ২০ তারিখ নাগাদ ২ হাজার ৬২ ব্যক্তি আবেদন করেন এবং তার মধ্যে মাত্র ৩শ জন ঐ ভিসা গ্রহণ করেছেন।

    এজেন্সি বলছে, বিদেশি কর্মী গ্রহণের খাতের সংখ্যা আরও বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার পরিকল্পনা তারা করছে।

    আইনমন্ত্রী কাৎসুইউকি কাওয়াই বলেন, জাপানি সমাজের সদস্য হিসেবে বিদেশি কর্মীদের গ্রহণ করার দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি কাজের পরিবেশ আরও উন্নত করতে চান যাতে ভবিষ্যতে আরও বেশি লোক জাপানে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

    জাপানে ভোগ্যপণ্য কর ১০ শতাংশে উন্নীত

    জাপানে আজ ভোগ্যপণ্য কর ৮ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরকার বলছে, ক্রমবর্ধমান বিপুল সরকারি ঋণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বহনে সহায়তার জন্য এই বৃদ্ধি আবশ্যক ছিল।

    খাদ্য এবং পানীয়ের মত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে এই কর ৮ শতাংশেই বহাল থাকবে। এলকোহল জাতীয় পানীয় এবং বাড়ির বাইরে আহারকৃত খাদ্যপণ্যের উপর এই উচ্চহারের ১০ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে। জাপানে এবারই প্রথম নানা পণ্যের উপর নানান মাত্রার কর আরোপ করা হল।

    এদিকে, এই পরিবর্তনের ধাক্কা প্রশমনের পাশাপাশি নগদ-বিহীন বিনিময়ের প্রসার ঘটানোর জন্য একটি পয়েন্ট-ভিত্তিক প্রণোদনা কর্মসূচিও চালু করা হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড এবং ইলেক্ট্রনিক মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি ব্যবহার করা ভোক্তারা ভবিষ্যতে ছাড় পাবার জন্য আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত পয়েন্ট পাবেন।

    টোকিও’র একটি সুপারমার্কেটে দোকান খোলার আগে ক্যাশ রেজিস্টার কর্মীরা বিক্রয় রশিদে নতুন করের হার সঠিকভাবে মুদ্রিত হয় কিনা, সেটি শেষ বারের মত যাচাই করে নেন। দোকান খোলার পর পয়েন্ট ভিত্তিক প্রণোদনা কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন করা ভোক্তাদের সামাল দিতেও তাদের বেশ ব্যস্ত দেখা গেছে।

    পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটি হল প্রথম ভোগ্যপণ্য করের বৃদ্ধি। সর্বশেষ এই বৃদ্ধি জাতীয় বাজেটে প্রায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি ইয়েন বা ৫ হাজার ২শ কোটি ডলারেরও বেশি রাজস্ব কর বৃদ্ধি করবে।

    অতিরিক্ত এই রাজস্বের অর্ধেকেরও বেশি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা’সহ বিনামূল্যে শিশু পরিচর্যায় ব্যয় করা হবে যা অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে উচ্চ শিক্ষার আর্থিক চাপও সহজ করবে। অবশিষ্ট অর্থ ব্যবহার করা হবে দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের পুনর্গঠনে।

     

    হাত ধুতে বলায় ‘উন্মাদ’ আখ্যা পেয়েছিলেন যে চিকিৎসক

    উনিশ শতকের আগেও জীবাণু সম্পর্কে সামগ্রিক কোনও ধারণা ছিল না আর হাসপাতালগুলোকে মনে করা হতো ‘মৃত্যুর ঘর’। তেমনই সময়ে হাঙ্গেরির চিকিৎসক ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ প্রথম শনাক্ত করেন যে, পরিচ্ছন্নতা হলো জীবন বাঁচানোর উপায়। কিন্তু এই তথ্য প্রতিষ্ঠা করতে তাকে ব্যাপক মূল্য দিতে হয়েছিল।

    উনিশ শতকের হাসপাতালগুলি ছিল সংক্রমণের কেন্দ্র এবং অসুস্থ ও মৃত্যুপথযাত্রীদের সেখানে কেবল সেকেলে চিকিৎসাই দেয়া হতো। তখন প্রকৃতপক্ষে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করাটাকেই মনে করা হতো নিরাপদ, হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন মৃত্যুর হার তখন বাসাবাড়িতে রেখে চিকিৎসার তুলনায় ছিল তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি। হাসপাতালগুলোতে প্রস্রাব, বমি এবং শরীর থেকে নির্গত অন্যান্য তরল সবকিছু মিলে এমন উৎকট গন্ধ তৈরি হতো যে কর্মীদের অনেক সময় নাকে কাপড় বা রুমাল বেধে চলাফেরা করতে হতো। চিকিৎসকদের তাদের হাত কিংবা চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ধোয়ার ঘটনা ছিল বিরল। এবং চিকিৎসকরা যেমন নোংরা-অপরিষ্কার থাকতেন, অস্ত্রোপচার কক্ষগুলোও তেমনই ছিল। ফলাফলস্বরূপ, হাসপাতালগুলোর পরিচিতি ছিল ‘মরণ ঘর বা মৃত্যুর ঘর’ হিসেবে।

    সেই বিশ্বে যখন জীবাণু কি সে সম্পর্কে ধারণা নেই, সেখানে ইগনাজ স্যামেলওয়াইজই প্রথম বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা শুরু করেন। হাঙ্গেরিয়ান এই চিকিৎসক ১৮৪০ সালে ভিয়েনাতে, মেটার্নিটি ওয়ার্ডগুলোতে মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে হাত ধোয়ার প্রচলন করার উদ্যোগ নেন। এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ব্যর্থ একটি উদ্যোগ, কারণ যেহেতু তিনি সহকর্মীদের দ্বারা অসহযোগিতার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি মায়েদের ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান।

    উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জীবাণু বিষয়ক তত্ত্বের সাফল্যের আগে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যে হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখছে সে সম্পর্কে অনেক চিকিৎসকেরই টনক নড়েনি। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন যারা তাদের মধ্যে প্রসূতি মায়েরা, বিশেষ করে যাদের প্রসবের সময় যৌনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়-উন্মুক্ত ক্ষতস্থান ব্যাকটেরিয়ার আদর্শ আবাসস্থল, প্রায়ই যার বাহক ছিলেন চিকিৎসক এবং সার্জনরা। প্রথম যে বিষয়টি মিস্টার স্যামেলওয়াইজ নোটিশ করেন সেটি হলো, ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালের ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত দুটি ক্লিনিকের মধ্যকার মজার একটি অসামঞ্জস্য, কিন্তু ক্লিনিকই দুটির সুযোগ-সুবিধা ছিল অভিন্ন। একটি পরিচালিত হতো পুরুষ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দ্বারা, অন্যটি ছিল মিডওয়াইফদের তত্ত্বাবধানে।

    পুরুষ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ক্লিনিকটিতে ১৮৪৭ সালে প্রতি এক হাজার প্রসবের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু হার ছিল ৯৪.৪ (চুরানব্বই দশমিক চার)। আর দ্বিতীয় ক্লিনিক যেটি মিডওয়াইফদের দ্বারা পরিচালিত হতো সেখানে এই হার ছিল প্রতি হাজার প্রসবের ঘটনায় মাত্র ৩৬.২ (ছত্রিশ দশমিক ২)। এই ভারসাম্যহীনতার জন্য অতীতে মনে করা হতো, রোগীদের সাথে মিডওয়াইফদের তুলনায় পুরুষ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কঠোর আচরণ দায়ী। তখন বিশ্বাস করা হতো যে, পুরুষ ডাক্তারদের এই কঠোর আচরণ মায়েদের শারীরিক এমন পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেত যা তাদের পিউরপেরাল জ্বরের দিকে ঠেলে দিতো-আর সন্তান-প্রসবের পরবর্তী প্রজনন-পথের সংক্রমণ আর সেই হাসপাতালটির সমস্ত মাতৃমৃত্যুর কারণ ছিল এটি।

    কিন্তু স্যামেলওয়াইজ এই ধরনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। এমন প্রেক্ষাপটে সেই একই বছর, তার একজন সহকর্মী মারা যান। সেই সহকর্মীটি একটি ময়নাতদন্ত করার সময় হাত কেটে যাওয়ার পর থেকে ভুগছিলেন-আর এটাই হাঙ্গেরিয়ান চিকিৎসক সেমেলউইজের সামনে এনে দেয় সেই ক্লু বা সমাধান সূত্র যা তিনি খুঁজছিলেন। লাশ ব্যবচ্ছেদের ছুরি দিয়ে যেকোনো ক্ষত হলে বা চামড়ায় কোন কাটা-ছেড়া হলে, তা যত সামান্যই হোক না কেন, সেটা ছিল মারাত্মক বিপদজনক, এমনকি বেশ অভিজ্ঞ অ্যানাটমিস্টদের জন্যও। ভিয়েনাতে নিজের সহকর্মীর মৃত্যুর পরে, সেমেলউইজ এটা বুঝলেন যে, তার উপসর্গ এবং পিউপেরাল ফিভারে ভোগা নারীদের উপসর্গ খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি ভাবলেন এটা কি হতে পারে যে, ময়নাতদন্ত শেষে ডাক্তারেরা সেখান থেকে ‘কাডাভেরাস পার্টিকেল’ তাদের সাথে বহন করে তা প্রসব কক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন?

    তার পর্যবেক্ষণে উঠে আসে যে, অনেক মেডিকেল শিক্ষার্থী অটপসি (শবদেহ ব্যবচ্ছেদ) শেষ করে সরাসরি চলে যাচ্ছে মেটার্নিটি ওয়ার্ডে নারীদের চিকিৎসা দিতে। যেহেতু সেইসময় মরদেহ ব্যবচ্ছেদ করার সময় কেউই হাতে গ্লোভস বা অন্য কোন ধরনের সুরক্ষামূলক উপকরণ ব্যবহার করতো না। মিডওয়াইফরা অটপসি বা শবদেহ ব্যবচ্ছেদ করতেন না। আর তাদের দ্বারা পরিচালিত ক্লিনিকে মৃত্যুহারও ছিল তুলনামূলক অনেক কম।

    জীবাণু তত্ত্ব সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভের আগে, হাসপাতালগুলোতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করার বিষয়টি ছিল খুবই দু:সাধ্য কাজ। মৃতদেহ থেকে ‘সংক্রামক বস্তু বা উপকরণ’ থেকেই পিউপেরাল জ্বরের ঘটনা ঘটছে- সে বিষয়ে উপসংহারে পৌঁছানোর পর, হাসপাতালে তিনি ক্লোরিনের সাহায্যে হাত ও উপকরণ জীবাণুমুক্ত করার জন্য বেসিন চালু করেন। যেসমস্ত ডাক্তারেরা ময়নাতদন্ত কক্ষ থেকে প্রসব কক্ষে যেত তাদের রোগীদের সেবা দেয়ার আগে অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়া হলো। এর ফলে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ডে মৃত্যুর হার কমে ১৮৪৮ সালের মধ্যে প্রসবের ক্ষেত্রে ১২.৭ শতাংশে নেমে আসে।

    যদিও সেমেলউইজ এর সহকর্মীরা এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত হয়নি যে, পিউপেরাল জ্বরের ঘটনা মৃতদেহের সংস্পর্শ থেকে আসা সংক্রমণের কারণে ঘটছে। তারা এজন্য সেমেলউইজের সমালোচনা করেন। এই বিষয়ে প্রকাশ করা একটি বইয়ের প্রচুর নেতিবাচক পর্যালোচনার পর, সেমেলউইজ তার সমালোচকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যেসমস্ত চিকিৎসক হাত পরিষ্কার করতেন না তাদেরকে ‘ঘাতক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

    এরপর সেমেলউইজ নিজ দেশ হাঙ্গেরিতে ফিরে যান। তিনি বুদাপেস্টের একটি হাসপাতালে প্রসূতি-বিদ্যা বিভাগে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে অবৈতনিক পদে যোগ দেন। সেখানে এবং ইউনিভার্সিটি অব পেস্ট-এর মেটার্নিটি বিভাগে কাজ করেন। সেখানে তিনি পিউপেরাল জ্বরের বিস্তার নিয়ে শিক্ষা দেন। কিন্তু তার তত্ত্বের সমালোচনা থামলো না, এবং তার প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়ে সহকর্মীদের অনীহা সেমেলউইজের ক্রোধ বাড়িয়ে দেয়। ১৮৬১ সাল নাগাদ তার আচরণে অসঙ্গতি দেখা দেয় এবং চার বছর পরে সেমেলউইজকে মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। অস্ত্রোপচারের আগে ক্লোরিনযুক্ত পানিতে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিতেন ইগনাজ সেমেলেইউজ। একজন সহকর্মী তাকে একটি নতুন একটি মেডিকেল ইন্সটিটিউট দেখানোর নাম করে ভিয়েনিজ অ্যাসাইলামে রেখে আসে। যখন সেমেলউইজ বিষয়টি বুঝতে পারলেন তখন তিনি সেখান থেকে পালাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু কারারক্ষীরা তাকে পরিয়ে দেয় স্ট্রেটজ্যাকেট (ভয়ংকর কোন অপরাধী অথবা মানসিক রোগী যাতে অন্যকে আঘাত করতে না পারে সেজন্য বিশেষ পোশাক)। এবং এরপর তাকে অন্ধকার সেলের ভেতর আটকে রাখা হয়। তার ডান হাতের ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়। এবং দুই সপ্তাহ পরেই মারা যান ৪৭ বছর বয়সী সেমেলউইজ।

    শক্তিশালী ঝড় মিতাগ সাকিশিমা দ্বীপপুঞ্জের দিকে ধেয়ে আসছে

    আগামীকাল শক্তিশালী মৌসুমি ঝড় মিতাগ, জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ওকিনাওয়ার সাকিশিমা দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    জাপানের আবহাওয়া সংস্থা, আজ সন্ধ্যা ৬টা অনুযায়ী মৌসুমি ঝড় মিতাগ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিবেগে ফিলিপাইনের পূর্বে সমুদ্রের উপর দিয়ে উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানায়।
    এই শক্তিশালী মৌসুমি ঝড়ের অভ্যন্তরে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১শ ২৬ কিলোমিটার এবং ঝড়ো বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১শ ৮০ কিলোমিটার।
    আগামীকাল সাকিশিমা দ্বীপপুঞ্জের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় মিতাগ শক্তি সঞ্চয় করার ফলে প্রবল বাতাস এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সমুদ্র উত্তাল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    এসময় ঘণ্টায় ১শ ৮ থেকে ২শ ১৬ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড়ো বাতাসসহ ইয়ায়েইয়ামা দ্বীপপুঞ্জে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১শ ৪৪ কিলোমিটার, মিয়াকো দ্বীপে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার এবং ওকিনাওয়ার মূল দ্বীপে ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    আগামীকাল, সাকিশিমা দ্বীপপুঞ্জের উপকূল বরাবর সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১০ মিটার হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
    ঝড়টির চারপাশে থাকা বৃষ্টির মেঘ, আগামীকাল সাকিশিমা দ্বীপপুঞ্জে ঘণ্টায় প্রায় ৮০ মিলিমিটার পরিমাণ তীব্র বর্ষণ বয়ে নিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    ঝড়টি আগামী বুধবার পশ্চিম জাপানের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবহাওয়া কর্মকর্তারা, নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা, প্রবল বাতাস, উঁচু ঢেউ, নদী ফেঁপে ওঠা, বজ্রপাত এবং ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে লোকজনদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।

    বিদেশীদের ভ্রমনের অনুমোদন দেবে সৌদি আরব

    সৌদি আরব, বিদেশী পর্যটকদের জন্য দেশের দুয়ার খুলে দিয়ে প্রায় ৫০টি দেশ ও অঞ্চলের জন্য একটি নতুন ভিসা পরিকল্পনা আরম্ভ করতে যাচ্ছে। এখন ধর্ম ও পর্যটনের মধ্যকার ভারসাম্য বজায় রাখার উপায়ের উপর লোকজনের মনোযোগ নিবদ্ধ রয়েছে।

    সৌদি আরব সরকার, গতকাল থেকে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনসহ প্রায় ৫০টি দেশ ও অঞ্চলের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিসার আবেদন গ্রহণ আরম্ভ করেছে। আবেদনের একই দিন ভিসা প্রদান করা হবে।

    সৌদি আরবে, কঠোর ইসলামী বিধান অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালিত হয়। দেশটি প্রধানত ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ড ছাড়া অন্যান্য বিদেশী নাগরিকদের জন্য দেশটিতে ভ্রমণ সীমিত করে রেখে এসেছে।

    সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে সরকার এই প্রথমবারের মত পর্যটকদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

    তবে এখনও পবিত্র শহর মক্কায় অমুসলমানদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে।

    আবার বিদেশী নাগরিকদের মদ পানের উপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকাসহ নারীদের স্থানীয় সামাজিক রীতিনীতি বিবেচনা করে পোশাক পরিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

    বর্তমানে সৌদি আরব সফরে থাকা অল নিপ্পন এয়ারওয়েজের কর্মকর্তা শিনইচি নাকামুরা, এই পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন।

    জাপানী বিমান কোম্পানিটি, এই মুহূর্তে ফ্লাইট পরিচালনা আরম্ভের কোন পরিকল্পনা না থাকলেও বাজারটির উপর ঘনিষ্ঠ নজর রেখে যাবে বলে জানায়।

    আমাজনের বলিভিয়া অংশে ২৩ লাখ প্রাণী পুড়ে ছাই

    আমাজন বনের শুধু ব্রাজিল অংশই পুড়ছে না। মাইলের পর মাইল পুড়ে ছাই হচ্ছে প্রতিবেশী বলিভিয়ার অংশও। এভাবে গত কয়েক মাসে দেশটির ৪২ লাখ একর বনভ‚মি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ওইসব এলাকায় বসবাসকারী বিরল প্রাণী জাগুয়ার, পুমা ও লামাসহ ২০ লাখেরও বেশি পশু-পাখি। বুধবার এসব তথ্য জানিয়েছে বলিভিয়া সরকার। দাবানল নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে বন রক্ষা চুক্তিতে সই করেছে দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ। দেশগুলো আমাজন নদী অববাহিকা রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়। দেশগুলোর মিলিত প্রচেষ্টাতেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না আগুন। চলমান দাবানল সীমান্ত অতিক্রম করে বলিভিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলিভিয়ার চিকুইতানিয়া গ্রীষ্মমÐলীয় সাভানা অঞ্চল ও সান্তা ক্রুজ প্রদেশের সুরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকা ও বনভ‚মি। এখানকার বিশাল এলাকাজুড়ে শুধু ভস্মীভ‚ত গাছপালা ও ছাই পড়ে আছে। আগুনে পুড়ে মারা গেছে লাখ লাখ পশু-পাখি। সান্তাক্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সান্দ্রা কুইরোগা বলেছেন, আগুনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আমরা জীববিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, চিকুইতানিয়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অন্তত ২৩ লাখ প্রাণী পুড়ে মারা গেছে। ল্যাটিন আমেরিকার ওসলোট, পুমা ও জাগুয়ারের মতো বনবিড়াল ছাড়াও হরিণ, লামা এবং অ্যান্টইটার, ব্যাজার, তাপির ও রোডেন্টের মতো ছোট প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া ওইসব প্রাণীর ছবি প্রকাশ করেছে। লাতিন আমেরিকার আটটি দেশব্যাপী বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম চিরহরিৎ বন আমাজন। বেশ কিছু দিন ধরে আগুনে পুড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ এ বন। সা¤প্রতিক পরিসংখ্যান মতে, অতীতে কখনও আমাজনে এত অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেনি। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে আমাজনে রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লেগেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত আমাজনে অন্তত ৮০ হাজার অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে। সূত্র : এএফপি।

    টোকিও’র গবেষণাগারে প্রাণঘাতী ভাইরাস

    জাপানের সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছেন, তারা আগামী বছরের টোকিও অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমসের প্রাক্কালে সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ জোরদার করার উপায় খুঁজে দেখার জন্য সম্ভাব্য প্রাণঘাতী ভাইরাস আমদানি করেছেন।

    জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি ইন্সটিটিউট জানাচ্ছে, ৫টি মারাত্মক ভাইরাসের স্ট্রেইন তাদের মুসাশি-মুরাইয়ামা শহরের শাখা অফিসে এসে পৌঁছেছে। এগুলো বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যবহার করা হবে।

    এগুলো হচ্ছে এবোলা, সাউথ আমেরিকান, লাসসা, ক্রিমিন-কঙ্গো এবং মারবার্গ ভাইরাস।

    কর্মকর্তারা বলছেন, এইসব ভাইরাস সর্বোচ্চ জৈব-নিরাপত্তা পর্যায় ৪’এর অধীনে একটি গবেষণাগারে রাখা হবে যার অর্থ হচ্ছে এই গবেষণাগার সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাস সামাল দিতে সক্ষম।

    সিলেটের মাহজাবীন নাসায় নিয়োগ পেলেন

    যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বাসিন্দা সিলেটের মেয়ে মাহজাবীন হক যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তার এ সাফল্যে সিলেট ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।

    মাহজাবীন এ বছরই মিশিগান রাজ্যের ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামে। তারা সিলেট নগরের কাজীটুলার হক ভবনের স্থায়ী বাসিন্দা।

    পেইন্টিং ও ডিজাইনে পারদর্শী মাহজাবীন হক ২০০৯ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। কর্মসূত্রে বাবা সৈয়দ এনামুল হক সিলেটে অবস্থান করলেও সঙ্গে আছেন মা ফেরদৌসী চৌধুরী ও একমাত্র ভাই সৈয়দ সামিউল হক। সৈয়দ সামিউল হক ইউএস আর্মিতে কর্মরত।

    মাহজাবীন হক ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালে দুই দফায় টেক্সাসের হিউস্টনে অবস্থিত নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ইন্টার্নশিপ করেন। প্রথম দফায় তিনি ডাটা অ্যানালিস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে মিশন কন্ট্রোলে কাজ করেন।

    মাহজাবীন হক জানান, দুই দফায় আট মাস দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করেন তিনি। এই কাজের মাধ্যমে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। নাসা অ্যামাজনসহ বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা কোম্পানি থেকে তিনি চাকরির অফার পেয়েছেন। এর মধ্যে নাসাকেই বেছে নেন তিনি।

    জাপানে ২০ হাজার বিদেশি শিশু হয়তো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

    জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, এখানে বসবাসরত বেশি হলে ২০ হাজার বিদেশি শিশু স্কুলের শিক্ষা পাচ্ছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    মন্ত্রণালয় ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৪৯টি ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদেশি শিশুকে শনাক্ত করে যারা মে মাসের হিসেব পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন মহানগর ও পৌরসভার বাসিন্দা হিসেবে নিবন্ধিত রয়েছে।

    নিশ্চিত করা হয়, এদের মধ্যে, ১ হাজার জন কোন রকম প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুনিয়র হাইস্কুল বা আন্তর্জাতিক স্কুলে যায়নি।

    ১৮ হাজার ৬৫৪টি শিশুর শিক্ষাগত অবস্থা অনিশ্চিত রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, নগর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা ফোন করা বা বাড়ি পরিদর্শন বা অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করেও তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারেননি। অন্য কিছু ক্ষেত্রে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মকর্তারা সমীক্ষা সমাপ্ত করতে ব্যর্থ হন।

    সৌরজগতের বাইরে মিলল নতুন ধূমকেতু

    দুই বছর পর আবারো একটি মহাজাগতিক ধূমকেতুর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সদ্য আবিষ্কৃত এই বস্তুটির নাম দেওয়া হয়েছে ধূমকেতু সি/২০১৯ কিউ ৪ (বোরিসভ)। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনর প্লানেট সেন্টার (এমপিসি) এই আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য প্রথমে এই ধূমকেতুটির নাম দেওয়া হয়েছিল জিবি ০০২৩৪।

     গত ৩০ আগস্ট বাখচিসারাই-এর ক্রিমিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবজারভেটরি থেকে একজন অপেশাদার জ্যোতির্বিদ প্রথম এটিকে শনাক্ত করেন। তার নাম গেন্নাদি বরিসভ। ওই সময় এটির অবস্থান ছিল সূর্য থেকে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন বা ৪৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। মহাজাগতিক বস্তুটির একটি ‘হাইপারবোলিক’ কক্ষপথ রয়েছে। এ কারণেই প্রমাণ হয় এটি আমাদের পরিচিত জগতের বাইরের একটি মহাজাগতিক বস্তু। হাইপারবোলিক কক্ষপথ পূর্ণ বৃত্তের পরিসরের আকার সব সময় মেনে চলে না। এটির আকার গোল হলেও তা সব সময় বৃত্তের মতো হয় না। একটি নিখুঁত বৃত্তের কেন্দ্রের কৌণিক পরিমাণ হয় শূণ্য ডিগ্রি। বহু গ্রহ, গ্রহাণু এবং ধূমকেতুর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের কেন্দ্রীয় দূরত্ব ১ থেকে ০ পর্যন্ত হয়। এর আগে ২০১৭ সালে আবিষ্কৃত হয় দীর্ঘায়িত মহাজাগতিক বস্তু ‘ওমুয়ামুয়ার’। সৌরজগত-বহির্ভূত এই বস্তুগুলোকে বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে ‘ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

    ধূমকেতুতে সাধারণত ‘কমা’র মতো মাথা ও লেজ থাকার কথা। কিন্তু ২০১৭ সালে আবিষ্কৃত মহাজাগতিক বস্তু ‘ওমুয়ামুয়ার’র ক্ষেত্রে লেজ এবং মাথার উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু সি/২০১৯ কিউ ৪ (বরিসভ) একটি সক্রিয় ধূমকেতু দৃশ্যমান হয়েছে লেজ এবং মাথার আকৃতি নিয়ে। ‘ওমুয়ামুয়ার’ আকৃতিতে অনেক ছোট হলেও নতুন আবিষ্কৃত ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট অনেক বড় প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং উজ্জ্বল।

    ‘ওমুয়ামুয়ার’ সূর্যের একেবারে নিকটবর্তী অবস্থানে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হয়েছিল। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এটি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য উদঘাটনের আগেই সেটি দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়। কিন্তু নতুন আবিষ্কৃত ধূমকেতুটি পেরিহেলিয়ন অঞ্চলে পৌঁছাবে এ বছরের ১০ ডিসেম্বর। এখন থেকেই এটিকে আমাদের সৌরমন্ডলে দেখা যাচ্ছে। মাইনর প্লানেট সেন্টার (এমপিসি) থেকে এটির প্রতি লক্ষ্য রাখতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। এমপিসির হিসেব অনুযায়ী, অপ্রত্যাশিতভাবে বিলীন বা অদৃশ্য না হয়ে পড়লে এটিকে অন্তত এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। দূরবর্তী কোনো তারকা থেকে উত্পন্ন বস্তু হিসেবে এটি পর্যবেক্ষণে বহু তাত্পর্যপূর্ণ তথ্য মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

    টেক্সাসের সান আন্তোনিও’র সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সাইমন পোর্টার টুইট করে বলেন, ধূমকেতুটির উজ্জ্বল অগ্রভাগ থাকার কারণে আমরা কিউ ৪-এর খুব চমত্কার বর্ণালী পাবো এবং আশা করি এর ফলে আইসোটোপিক অনুপাত বের করা সম্ভব হবে। একই রাসায়নিক উপাদানের বিভিন্ন রূপকে বলা হয় আইসোটোপ। মি. পোর্টারের মতে, আমাদের সৌরমন্ডলের ধূমকেতুর চেয়ে এটির আইসোটপিক অনুপাত ভিন্ন হতে পারে।-বিবিসি

     

    এক সন্তান নীতি বিপজ্জনক : গবেষকরা

    যৌথ পরিবার আমাদের শহুরে সমাজ থেকে বহুদিন আগেই বিদায় নিয়েছে। ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবারে’র চেনা গতে এখন ‘আমাদের দুজনেরও… দুটি’ও ঠাঁই পাচ্ছে না। তার বদলে ঘরে ঘরে চোখ রাখলে দেখা যায় ‘আমাদের দুজনের এক’-এর ছবি। বদলে যাওয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক সন্তান নীতি কি আপনার সন্তানের জন্য সত্যিই মঙ্গলজনক? বিজ্ঞান কিন্তু সে কথা বলছে না।

    ভাই বা বোনের সঙ্গে বেড়ে ওঠা একটি শিশুর জীবনে অত্যন্ত আনন্দদায়ক বলে জানাচ্ছে গবেষণা। তার মধ্যেও বিশেষ ভাবে বিজ্ঞানীরা বলছেন বোন থাকার কথা। ছেলে হোক বা মেয়ে, তার যদি একটি বোন থাকে তো সেই জীবনের আনন্দই আলাদা বলে গবেষণায় প্রকাশ। তাই এখনো কন্যা সন্তান জন্ম নিলে যাদের দুঃখের শেষ থাকে না, তারা দেখে নিন যে আপনার মেয়ে আপনাকে কতভাবে সাহায্য করতে পারে।

    ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে উঠেও বোনই হতে পারে সবচেয়ে কাছের বন্ধু। নিজের বোন থাকলে সেই শিশুর মধ্যে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার মতো গুণ সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়। ম্যাচিওরিটিও তাড়াতাড়ি আসের বোনের প্রভাবে। এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। ৩৯৫টি পরিবারের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন ব্রিংহাম ইয়ং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। এমনকি ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়াও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

    লেনদেনে পরিচ্ছন্নতা

    আহমাদুল্লাহ বিন রুহুল আমীন

    আলোচ্য শিরোনামটি ইসলামের মুআমালাত অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মুআমালাত ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাওলানা মনযূর নোমানী রাহ. তাঁর ‘মাআরিফুল হাদীস’ গ্রন্থে এর পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- বেচাকেনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত-খামার, শিল্প, দেনা-পাওনা, আমানত, হাদিয়া, দান-ছদকা, ওসিয়ত, শ্রম, ভাড়া, মামলা-মোকাদ্দমা, সাক্ষ্যদান, ওকালতি ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত বিষয়কে এককথায় ‘মুআমালাত’ বলে।

     

    ইসলামে মুআমালাতের মর্যাদা ও অবস্থান

    ইসলামী শরীয়তে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হচ্ছে ঈমান-আকীদা, যা শুদ্ধ না হলে একজন ব্যক্তি মুসলমানই হতে পারে না। ঈমান-আকীদার পর সবচে গুরুত্বপূর্ণ হল ইবাদত-বন্দেগীর অধ্যায়। এর পরেই মুআমালাত ও মুআশারাতের স্থান। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের অধ্যায়গুলোর একটিকে আরেকটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। সকল অধ্যায় একই সুতোয় গাঁথা। হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন-

    مَا خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ خُطْبَةً قَطّ إِلّا قَالَ: إِنّهُ لا إِيمَانَ لِمَنْ لا أَمَانَةَ لَهُ وَلا دِينَ لِمَنْ لا عَهْدَ لَهُ.

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি -(স্বাভাবিকভাবে) এ কথাটি বলতেন- ‘যার আমানতদারি নেই তার ঈমান নেই। যার প্রতিশ্রুতির ঠিক নেই তার দ্বীন নেই।’ -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৩৮৩

    অনুরূপভাবে মুসলিম শরীফের এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, যার উপার্জন হারাম আল্লাহ পাক তার দুআ কবুল করেন না। (হাদীস ১০১৫)

    অন্য এক হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন,

    لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ.

    ওযু ছাড়া নামায কবুল হয় না; আর আত্মসাতের (অর্থাৎ অবৈধভাবে উপার্জিত) সম্পদের ছদকাও কবুল হয় না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ১

    সুতরাং ঈমান-আকীদা ও ইবাদতের সাথে মুআমালাতের যোগসূত্র অতি গভীর ও সুদৃঢ়। ইসলামী শরীয়তে অনেক দিক থেকেই মুআমালাতের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। এই সীমিত পরিসরে শুধু চারটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

    এক. মুআমালাত অধ্যায়টি শরীয়তে ইসলামীর একটি বিস্তৃত অধ্যায়। ইসলামী আইনশাস্ত্রের (ফিকাহ শাস্ত্র) গ্রন্থাদি খুললেই দেখা যাবে, এই অধ্যায়ের আলোচনা কতটা বিস্তৃত।

    একজন মুসলমানের গোটা জীবনে মুআমালাতের বিধি-নিষেধ সবচে বেশি পরিমাণ দরকার পড়ে। কারণ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে চলতে হলে তাকে সবার সাথে ওঠা-বসা, লেনদেন করেই চলতে হয়। লেনদেনের মাধ্যমে জীবন যাপন করা ছাড়া কারো পক্ষে ঠিকমতো ইবাদত-বন্দেগী পালনও সম্ভব নয়। তাই ইসলামী শরীয়তে মুআমালাত ও লেনদেনের গুরুত্ব অনেক বেশি। এর জন্য বিপুল পরিমাণে স্বতন্ত্র বিধান দেওয়া হয়েছে।

    দুই. ইসলামী শরীয়তে হকসমূহ (অধিকার ও দায়-দায়িত্ব) দুই ভাগে বিভক্ত। ১. আল্লাহ পাকের হক। ২. বান্দার হক। আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে যদি বান্দার কোনো ত্রুটি হয়ে যায়; আর সে তওবা করে নেয় অথবা ক্ষেত্র বিশেষে তওবা ছাড়াও যদি আল্লাহর মর্জি হয়; তবে সে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু বান্দার হকের ব্যাপারে কেউ ত্রুটি করলে সেটা আল্লাহ ক্ষমা করেন না; যতক্ষণ না অপরাধী নিজেই হকদারের সাথে লেনদেন সাফ করে নেয়।

    তিন. ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মুআমালাতের বিধি-নিষেধ মেনে চললে ইসলাম তার জন্য আলাদা পুরস্কার ও সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

    التّاجِرُ الصّدُوقُ الْأَمِينُ مَعَ النّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشّهَدَاءِ.

    সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী, ছিদ্দীক ও শহীদদের সাথে থাকবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৯; সুনানে দারেমী, হাদীস ২৫৪২

    চার. ইসলামী শরীয়তে মুআমালাতের  বিশেষ গুরুত্বের আরেকটি দিক হল, এটি আল্লাহ কর্তৃক বান্দার পরীক্ষার এক কঠিন ময়দান। কেননা অন্যান্য ময়দানের তুলনায় এখানে বান্দার পার্থিব কল্যাণ ও প্রবৃত্তির চাহিদা একটু বেশিই বিদ্যমান। ফলে শরীয়তের বিধি-বিধানের সাথে নফসের মোজাহাদা ও দ্বন্দ্বও হয় বেশি। উদাহরণ স্বরূপ : ব্যবসা-বাণিজ্যে বান্দার নিজস্ব উপকারিতা বেশি নজরে আসে। প্রবৃত্তির টানও এই থাকে যে, সত্য-মিথ্যা, জায়েয-নাজায়েযের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে যেভাবে লাভ বেশি হয় সেই পন্থাই অবলম্বন করা। কিন্তু আল্লাহ তাআলার বিধান বলে, খবরদার! বাহ্যিকভাবে তোমার বিরাট ক্ষতি হয় হোক, তবুও তুমি মিথ্যা, ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল অথবা কারো সাথে প্রতারণা করতে পারবে না। আল্লাহ পাক তোমার জন্য যে পন্থা হালাল করেছেন তুমি সেটাই অবলম্বন করবে।

    কুরআন মাজীদে লেনদেনে পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ

    কুরআন-হাদীসে অতি গুরুত্বের সাথে লেনদেনে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে ও নানা আঙ্গিকে এ ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। এখানে তার কিছু নমুনা পেশ করা হল।

    সূরা মুতাফ্ফিফীনের শুরুতেই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন-

    وَیْلٌ لِّلْمُطَفِّفِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَی النَّاسِ یَسْتَوْفُوْنَ، وَ اِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّ زَنُوْهُمْ یُخْسِرُوْنَ، اَلَا یَظُنُّ اُولٰٓىِٕكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ، لِیَوْمٍ عَظِیْمٍ،  یَّوْمَ یَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعٰلَمِیْنَ.

    দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের নিকট থেকে যখন মেপে নেয়, পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন অন্যকে মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তাদেরকে এক মহা দিবসে জীবিত করে ওঠানো হবে? যেদিন সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে। -সূরা মুতাফ্ফিফীন (৮৩) : ১-৬

    ইয়াতিমদের সম্পদ সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে কুরআন মাজীদে লেনদেনের অনেক বড় মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

    وَ اٰتُوا الْیَتٰمٰۤی اَمْوَالَهُمْ وَ لَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِیْثَ بِالطَّیِّبِ  وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَهُمْ اِلٰۤی اَمْوَالِكُمْ  اِنَّهٗ كَانَ حُوْبًا كَبِیْرًا.

    ইয়াতিমদেরকে তাদের সম্পদ দিয়ে দাও। আর ভালো মালকে মন্দ মাল দ্বারা পরিবর্তন করো না। তাদের (ইয়াতিমদের) সম্পদকে নিজেদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে খেয়ো না। নিশ্চয়ই তা মহাপাপ। -সূরা নিসা (৪) : ২

    এক আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আল্লাহ পাক ঘোষণা দিয়েছেন-

    اِنَّ الَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْیَتٰمٰی ظُلْمًا اِنَّمَا یَاْكُلُوْنَ فِیْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا  وَ سَیَصْلَوْنَ سَعِیْرًا.

    নিশ্চয়ই যারা ইয়াতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে; তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভর্তি করে। তারা অচিরেই এক জ¦লন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। -সূরা নিসা (৪) : ১০

    এক আয়াতে পরস্পর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে বেচাকেনাকে বৈধতা দিয়ে সম্পদ উপার্জনের অন্য সব অন্যায় পদ্ধতিকে হারাম ঘোষণা করেছেন। বলেছেন-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ .

    হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কোনো ব্যবসা করা হলে (তা জায়েয)। -সূরা নিসা (৪) : ২৯

    কোনো সম্পদ শুধু বিচারকের কাছ থেকে নিজের নামে ফায়সালা করে নিলেই তা বৈধ হয়ে যায় না; বরং পন্থাও বৈধ হতে হয় এবং বাস্তবেই নিজে ঐ সম্পদের হকদার হতে হয়। এ বিষয়ে কুরআনের এক আয়াতে নির্দেশনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

    وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَ تُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَی الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِیْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

    তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৮

    ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন সময় আমরা যে চুক্তি করি তা পূর্ণ করার ব্যাপারে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ.

    হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গিকার পুরা করো। অর্থাৎ লেনদেনের বিভিন্ন অঙ্গিকার ও অন্যান্য অঙ্গিকার। -সূরা মায়েদা (৫) : ১

    অনেকে আমাদের কাছে বিভিন্ন জিনিস আমানত রাখে। আবার বিভিন্ন সময় নানা প্রয়োজনে আমরাও অনেক কিছু ধার-কর্জ করি। অথবা যে কোনোভাবে অপরের কোনো জিনিস আমাদের কাছে থাকে; এ অবস্থায় পাওনাদারের জিনিস বিশ্বস্ততার সাথে তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

    اِنَّ اللهَ یَاْمُرُكُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَهْلِهَا، وَ اِذَا حَكَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ اَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِ،  اِنَّ اللهَ نِعِمَّا یَعِظُكُمْ بِهٖ،  اِنَّ اللهَ كَانَ سَمِیْعًۢا بَصِیْرًا.

    (হে মুসলিমগণ!) নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা আমানত ও পাওনা তার হকদারকে আদায় করে দেবে। আর যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে; ইনসাফের সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। -সূরা নিসা (৪) : ৫৮

    খাঁটি মুুমিনদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে দুই জায়গায় ইরশাদ করেছেন-

    وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ، وَ الَّذِیْنَ هُمْ بِشَهٰدٰتِهِمْ قَآىِٕمُوْنَ.

    এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের সাক্ষ্য যথাযথভাবে দান করে। -সূরা মাআরিজ (৭০) : ৩২-৩৩; সূরা মুমিনূন (২৩) : ৮

     

    লেনদেনে অস্বচ্ছতার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর হুঁশিয়ারি

    উপরে উল্লেখিত আয়াতগুলোতে যে বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, মাপে কম না দেওয়া, ভালো মালের সাথে খারাপ মাল না মেশানো, ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ না করা, অন্যায়ভাবে কারো সম্পদে দখলদারি না করা, ক্রয়-বিক্রয়সহ মুআমালাতের বিভিন্ন চুক্তি যথাযথভাবে পুরা করা, আমানতসমূহ তার হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও মুআমালাতের বহু ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোতে সঠিকভাবে আদায় করা একজন মুমিনের কর্তব্য। কেননা মুআমালা বান্দার হক। তাতে ত্রুটি হওয়ার অর্থই বান্দার হক নষ্ট করা। তার প্রতি যুলুম করা। আর জুলুম ও অপরিচ্ছন্ন মুআমালার ব্যাপারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে পাকে কঠিন সতর্কবাণী শুনিয়েছেন। এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হচ্ছে।

    হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ، فَلْيَتَحَلّلْهُ مِنْهُ اليَوْمَ، قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ  دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ، إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ.

    যেই ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের সম্মানহানির মাধ্যমে বা অন্য কোনো প্রকারে তার উপর জুলুম করেছে। সে যেন আজই তার সাথে মুআমালা সাফ করে নেয়; সেই দিন আসার পূর্বেই, যেদিন তার কাছে কোনো দিনার-দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না। সেদিন যদি তার কাছে কোনো নেক আমল থাকে তবে তার যুলুম পরিমাণ সেখান থেকে নিয়ে নেওয়া হবে (এবং পাওনাদারকে আদায় করা হবে।) আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে তাহলে যার উপর যুলুম করেছে তার পাপের বোঝা যুলুম অনুযায়ী তার ঘাড়ে চাপানো হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৪৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪১৯

    একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? তারা বললেন, যার অর্থ-সম্পদ নেই আমরা তো তাকেই নিঃস্ব মনে করি। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের ময়দানে নামায, রোযা, যাকাত(সহ অনেক নেক আমল) নিয়ে হাযির হবে; কিন্তু সে হয়ত কাউকে গালি দিয়েছে বা কারো উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে বা কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে বা কাউকে খুন করেছে অথবা কাউকে আঘাত করেছে। ফলে প্রত্যেককে তার হক অনুযায়ী এই ব্যক্তির নেক আমল থেকে দিয়ে দেওয়া হবে। যদি কারও হক বাকি থেকে যায় আর এই ব্যক্তির নেক আমল শেষ হয়ে যায় তাহলে হকদার ব্যক্তির পাপ পাওনা অনুসারে এই ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সে এই পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে যাবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮১; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪১৮

    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের ময়দানে কোনো বান্দা তার এক পাও নড়াতে পারবে না; যতক্ষণ না তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে- ১. সে তার জীবন কোন্ পথে শেষ করেছে। ২. যতটুকু ইলম শিখেছে তার উপর কতটুকু আমল করেছে। ৩. সম্পদ কোন্ পথে আয় করেছে। ৪. এবং কোন্ পথে ব্যয় করেছে। ৫. নিজের যৌবনকে কোন্ পথে শেষ করেছে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪১৭

    সুতরাং আমরা যখন সম্পদের আয়-ব্যয়ের হিসাব করি তখন কোন্ পথে আয় করছি এবং কোন্ পথে ব্যয় করছি সেটারও হিসাব নেওয়া দরকার।

    হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    وَالّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ، فَيَذْهَبَ إِلَى الْجَبَلِ، فَيَحْتَطِبَ، ثُمّ يَأْتِيَ بِهِ يَحْمِلُهُ عَلَى ظَهْرِهِ، فَيَبِيعَهُ فَيَأْكُلَ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النّاسَ، وَلَأَنْ يَأْخُذَ تُرَابًا فَيَجْعَلَهُ فِي فِيهِ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَجْعَلَ فِي فِيهِ مَا حَرّمَ اللهُ عَلَيْهِ.

    আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর কসম, তোমাদের কেউ মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম হল সে তার রশি নিয়ে পাহাড়ে যাবে এবং কাঠ সংগ্রহ করবে। অতপর তা পিঠে বহন করে এনে বিক্রি করবে এবং আহারের ব্যবস্থা করবে। আর তোমাদের কেউ হারাম খাওয়ার চেয়ে উত্তম হল নিজের মুখের মধ্যে মাটি ভরা। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৪৯০, শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৫৭৬৩

     

    অন্যের অবৈধ সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কঠোরতা

    কোনো মুমিন নিজে তো অস্বচ্ছ ও অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করবেই না। এমনকি অন্যের অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদও সে ব্যবহার করবে না।

    হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    مَنِ اشْتَرَى سَرِقَةً، وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهَا سَرِقَةٌ، فَقَدْ شُرِكَ فِي عَارِهَا وَإِثْمِهَا.

    যে ব্যক্তি জেনেশুনে চুরি করে আনা মাল ক্রয় করল, সেও চুরির পাপের মধ্যে শামিল হল। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২২৫৩

     

    লেনদেনে অস্বচ্ছতার কারণে দুআ-ইবাদত কবুল হয় না

    আমরা নামায-রোযাসহ অন্যান্য ইবাদত পালন করি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আর তিনি সেই আমলের দ্বারাই সন্তুষ্ট হন, যে আমল তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য। যে ব্যক্তি অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ থেকে তার প্রয়োজন পুরা করে; আল্লাহ পাক তার ইবাদত-বন্দেগী ও দুআ-মুনাজাত কবুল করেন না। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    أَيّهَا النّاسُ، إِنّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلّا طَيِّبًا، وَإِنّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: يَا أَيّهَا الرّسُلُ كُلُوا مِنَ الطّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيم وَقَالَ: يَا أَيّهَا الّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ثُمّ ذَكَرَ الرّجُلَ يُطِيلُ السّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟

    নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র (আমল) ছাড়া গ্রহণ করেন না। তিনি রাসূলগণকে যে আদেশ করেছেন; একই আদেশ করেছেন মুমিনদেরকে। তিনি বলেছেন-

    يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا.

    (হে রাসূলগণ! আপনারা উত্তম (হালাল) রিযিক থেকে আহার করুন এবং নেক আমল করুন।)

    তিনি মুমিনদেরকেও বলেছেন-

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ.

    (হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার প্রদত্ত হালাল রিযিক থেকে আহার কর।)

    অতপর নবীজী একজন লোকের বর্ণনা দিলেন; যে দীর্ঘ সফর করেছে। চুলগুলো এলোমেলো, শরীর ধূলি ধূসরিত। আসমানের দিকে হাত উত্তোলন করে দুআ করছে- হে আমার রব! হে আমার রব!! অথচ তার খাদ্য-পানীয় হারাম, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম; তাহলে কীভাবে তার দুআ কবুল হবে? -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৮৯

    ইবনে রজব হান্বলী রাহ. হাদীসটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এই হাদীসে উদাহরণস্বরূপ শুধু দুআর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। নতুবা হারাম দ্বারা প্রতিপালিত হলে তার কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। -জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম, পৃ. ১৮৫

     

    আল্লাহ তাআলা অবৈধ সম্পদের দান কবুল করেন না

    ইসলামের সুস্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে কেবলমাত্র নেক আমলই বদ আমলকে নির্মূল করে। বদ আমল কখনো অন্য বদ আমলকে নির্মূল করতে পারে না। অর্থাৎ আমরা দান-সদকা, যাকাত-ফিতরা আদায় করি, যাতে আমাদের পাপ মোচন হয় এবং সম্পদ পবিত্র হয়। কিন্তু এ কাজ পাপের পথে অর্জিত সম্পদ দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করাই একটি পাপ। সুতরাং সেই পাপ দ্বারা অন্য পাপ মাফ হওয়ার আশা নেই। তেমনই অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ অপবিত্র, সুতরাং তা দ্বারা নিজের সম্পদ পবিত্র করাও অসম্ভব। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

    لَا يَكْسِبُ عَبْدٌ مَالًا مِنْ حَرَامٍ، فَيُنْفِقَ مِنْهُ فَيُبَارَكَ لَهُ فِيهِ، وَلَا يَتَصَدّقُ بِهِ فَيُقْبَلَ مِنْهُ، وَلَا يَتْرُكُ  خَلْفَ ظَهْرِهِ إِلّا كَانَ زَادَهُ إِلَى النّارِ، إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ لَا يَمْحُو السّيِّئَ بِالسّيِّئِ، وَلَكِنْ يَمْحُو السّيِّئَ بِالْحَسَنِ، إِنّ الْخَبِيثَ لَا يَمْحُو الْخَبِيثَ.

    এমন হবে না যে, কোনো বান্দা হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করবে অতপর তা থেকে (বৈধ ও নেক কাজে ) খরচ করবে আর তাতে বরকত দান করা হবে। সে তা থেকে সদকা করবে আর তা কবুল করা হবে। বরং ঐ ব্যক্তি ঐ সম্পদ (মিরাছ হিসাবে) তার মৃত্যুর পর রেখে গেলেও তা তাকে আরো বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পাপ দ্বারা অপর পাপকে নির্মূল করেন না। তবে নেক আমল দ্বারা পাপকে নির্মূল করেন। নিশ্চয়ই নাপাক বস্তু অপর নাপাক বস্তুর নাপাকি দূর করতে পারে না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৬৭২; মুসনাদে বায্যার, হাদীস ২০২৬

    হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةً بِغَيْرِ طُهُورٍ، وَلَا صَدَقَةً مِنْ غُلُولٍ.

    আল্লাহ পাক পবিত্রতা ব্যতীত নামায কবুল করেন না এবং আত্মসাতের মালের ছদকা কবুল করেন না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ১; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ১৩৯

    এর বিপরীতে হালাল ও বৈধ সম্পদ সদকা করার ব্যাপারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    مَنْ تَصَدّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاّ الطّيِّبَ، وَإِنّ اللهَ يَتَقَبّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوّهُ، حَتّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ.

    আল্লাহ পাক কেবল (হারামের মিশ্রণ থেকে) পবিত্র বস্তুই কবুল করেন। যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে এক মুষ্ঠি খেজুরও দান করে আল্লাহ পাক তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। অতপর তা ঐ ব্যক্তির জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেমন তোমাদের কেউ উটের বাচ্চা প্রতিপালন করে। বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় ঐ সামান্য খেজুরমুষ্ঠি পাহাড়সম হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৪

    হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

    إِذَا أَدّيْتَ زَكَاةَ مَالِكَ، فَقَدْ قَضَيْتَ مَا عَلَيْكَ فِيهِ، وَمَنْ جَمَعَ مَالًا حَرَامًا، ثُمّ تَصَدّقَ بِهِ، لَمْ يَكُنْ لَهُ فِيهِ أَجْرٌ، وَكَانَ إِصْرُهُ عليه.

    যখন তুমি তোমার সম্পদের যাকাত আদায় করলে তখন তুমি এ সম্পদের ব্যাপারে তোমার অবশ্যকরণীয় বিধান পালন করলে। যে ব্যক্তি হারাম মাল উপার্জন করবে অতপর তা সদকা করবে সেই সদকায় তার কোনো সওয়াব হবে না; বরং অবৈধ উপার্জনের পাপের বোঝা তার ঘাড়ে চেপেই থাকবে। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩২১৬; আলমুনতাকা, ইবনুল জারূদ, হাদীস ৩৩৬; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৪৪০

    তাবেঈ কাসেম বিন মুখায়মিরাহ রাহ. (সাহাবীর মধ্যস্থতা উল্লেখ না করে সরাসরি রাসূলের থেকে) যেসকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তার একটি হল, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো পাপের পথে সম্পদ উপার্জন করল অতপর তা  আত্মীয়তা রক্ষায় খরচ করল বা সদকা করল অথবা তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল; তাহলে (কিয়ামতের মাঠে) এসবকিছুই একত্রিত করা হবে অতপর তা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। -কিতাবুল মারাসীল, আবু দাউদ, হাদীস ১৩১

    বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হল, যে ব্যক্তি এখন নেক আমল করছে; তবে পূর্বে যুলুম-অত্যাচার করত এবং হারাম গ্রহণ করত। এখন সে নেকদিলে তওবা করে পূর্বের সেই সম্পদ দিয়ে হজ্ব করল, গোলাম আযাদ করল এবং আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করল (তার ব্যাপারে কী বলেন?)। জবাবে তিনি বললেন, নিশ্চয়ই নাপাকী অপর নাপাকীকে দূর করতে পারে না। -মুসনাদে বায্যার, হাদীস ৯৩২

    সুতরাং যারা হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে আর মনে মনে ভাবে, এখান থেকে কিছু সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেব;  ব্যস, সাত খুন মাফ, তাদের উচিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণীগুলো ভালোভাবে স্মরণ রাখা।

    এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর একটি বড় শিক্ষণীয় ঘটনা আছে। তাঁর সময়ে বসরার আমীর ছিল আব্দুল্লাহ বিন আমের। সে মুসলমানদের বায়তুল মাল থেকে তার প্রাপ্যের চেয়ে বেশি গ্রহণ করত। কিন্তু তার স্বভাব ছিল, সে এসব সম্পদ গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিত, মসজিদ নির্মাণের কাজে খরচ করত, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করত। যখন সে মৃত্যুশয্যায় উপনীত হল তখন লোকজন তার চারপাশে ভিড় জমাল এবং তার দান-দাক্ষিণ্য ও মানুষের প্রতি তার অনুগ্রহের ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগল। কিন্তু ইবনে ওমর রা. চুপচাপ রইলেন। যখন বসরার আমীর ইবনে আমের স্বয়ং তাঁকে কথা বলতে ও নিজের জন্য দুআ করতে আবেদন করল; তখন তিনি তাকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস শোনালেন-

    إِنّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَا يَقْبَلُ صَدَقَةً مِنْ غُلُولٍ.

    আল্লাহ পাক আত্মসাতের মালের ছদকা কবুল করেন না। অতপর তাকে বললেন, তুমি তো বসরা শহরেরই আমীর ছিলে। অর্থাৎ আমি তোমার কীর্তি-কর্ম সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত যে, তুমি বায়তুল মালের সম্পদ না-হকভাবে গ্রহণ করতে। সুতরাং কীভাবে তোমার এসকল দান-সদকা কবুল হবে? আর তোমার জন্যে দুআ করলে সেই দুআই বা কীভাবে কবুল হবে? -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৭০০, ৫৪১৯; জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম, পৃ. ১৮৯

    হারাম হতে সৃষ্ট শরীর জান্নাতে যাবে না

    হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

    إِنّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْت، النّارُ أَوْلَى بِهِ.

    এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৪৪১; মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদীস ২০৭১৯; মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদ, হাদীস ১১৩৮

    নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হযরত কা‘ব বিন উজরাহ রা.-কে ডেকে বললেন, হে কা‘ব! শুনে রাখো, ঐ দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম হতে সৃষ্ট। কেননা জাহান্নামের আগুনই তার অধিক উপযোগী। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৬১৪; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, ১৯/২১২

    হারাম মাল সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করার প্রসঙ্গ

    ইসলামের অমোঘ বিধান তো হল, কেউ হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করবে না। কিন্তু এরপরেও যদি কেউ শয়তােেনর ধোঁকায় অন্যায় পথে সম্পদ উপার্জন করে ফেলে অথবা কোনোভাবে যদি হারাম সম্পদ কারো কাছে জমা হয়ে যায়। তাহলে তার জন্য এই পাপ থেকে তওবা করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে তওবার অপরিহার্য একটি শর্ত হল, যার হক নষ্ট হয়েছে তার হক যথাযথভাবে আদায় করে দেওয়া। এ অবস্থায় তওবাকারীর সামনে স্বাভাবিকভাবে কয়েকটি ছুরত  আসে। এক. তওবাকারী নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির হক নষ্ট করেছে। এক্ষেত্রে সে যেভাবেই হোক পাওনাদারের হক তার কাছেই পৌঁছে দেবে। বিখ্যাত তাবেঈ হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন,

    مَنِ احْتَازَ مِنْ رَجُلٍ مَالاً، أَوْ سَرَقَ مِنْ رَجُلٍ مَالاً، وَأَرَادَ أَنْ يَرُدّهُ إلَيْهِ مِنْ وَجْهٍ لاَ يَعْلَمُ فَأَوْصَلَهُ إلَيْهِ : فَلا بَأْسَ.

    যে ব্যক্তি কারো কোনো সম্পদ (অন্যায়ভাবে) কুক্ষিগত করল, অথবা কারো থেকে কোনো কিছু চুরি করল অতপর এমন পদ্ধতিতে সেই সম্পদ তার  কাছে পৌঁছে দিতে চাইল যাতে সে জানতে না পারে; তাহলে সে তা করতে পারবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস ২৩৫৯৬

    দুই. সুনির্দিষ্টভাবে কারো হক নষ্ট করেনি বরং জনগণের সম্মিলিত হক নষ্ট করেছে। তাহলে আল্লামা ইবনুল জাওযী রাহ.-এর ভাষ্যমতে যেই খাত থেকে অন্যায়ভাবে নিয়েছে সেখানেই হক পৌঁছে দেবে। যেমন: রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়ে থাকলে সেখানে পৌঁছে দেবে। এই সম্পদ গরিবদের মাঝে সদকা করলে হবে না। -জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম, পৃ: ২৬৬

    তিন. কারো হক নষ্ট করা ছাড়া শরীয়ত কর্তৃক হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদের মালিক হয়েছে। যেমন: শূকর, মদ ইত্যাদি বিক্রয় করা সম্পদ। জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ। শরীয়তের  অনুনোমোদিত পন্থায় ক্রয়কৃত সম্পদ। এক্ষেত্রে বিধান হল, ঐ সম্পদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দেবে।

    চার. তওবাকারী কার থেকে বা কোন্ খাত থেকে নিয়েছে তা জানে না। তার পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। তাহলে পূর্বের ছুরতের ন্যায় এক্ষেত্রেও সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দেবে।

    এক ব্যক্তি বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমি যখন অল্প বয়স্ক ছিলাম তখন এমন পন্থায় মাল উপার্জন করতাম, যা আমি এখন পছন্দ করি না (অর্থাৎ অবৈধ পন্থায়)। আমি তওবা করতে চাই। তখন তিনি তাকে বললেন,

    رُدّهَا إلَى أَهْلِهَا ، قَالَ : لاَ أَعْرِفُهُمْ، قَالَ : تَصَدّقْ بِهَا، فَمَا لَكَ فِي ذَلِكَ مِنْ أَجْرٍ، وَمَا أَدْرِي هَلْ تَسْلَمُ مِنْ وِزْرِهَا أَمْ لاَ ؟

    তুমি এ মাল তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দাও। সে বলল, আমি তো এখন তাদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। তিনি বললেন, তাহলে তা সদকা করে দাও। এতে তোমার কোনো সওয়াব হবে না। তুমি এর গোনাহ থেকে মুক্তি পাবে কি না তাও বলতে পারব না। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস ২৩৫৯৪

    হযরত মুজাহিদ রাহ. থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ হারাম মাল সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দিবে। তবে এই সদকার বিধান তখনই প্রযোজ্য যখন হকদারের কাছে তা পৌঁছানো সম্ভব হবে না। নতুবা আসল বিধান হল পাওনা তার হকদারকে পৌঁছে দেওয়া।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে লেনদেনে পরিচ্ছন্ন হওয়ার এবং বান্দার হকের বিষয়ে সচেতন হওয়ার তাওফীক দান করুন। হালাল উপার্জনে বরকত দান করুন, হারাম থেকে রক্ষা করুন।

    জাপানের মৎস্য শিল্প

    Posted by admin on September 25
    Posted in Uncategorized 

    জাপানের মৎস্য শিল্প

    মাছ হচ্ছে জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার বা ওয়াশোকু। কাঁচা মাছের সাশিমি বা সুশি, এবং রান্না করা, শুষ্ক কিংবা ঝলসানো সামুদ্রিক খাদ্য উৎসব আয়োজনের খাদ্য তালিকার অংশ ছাড়াও হচ্ছে নিয়মিত খাবার।

    জাপানের মাছ ধরা এবং মৎস্য চাষ শিল্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামুদ্রিক খাদ্য ভিত্তিক খাদ্য সংস্কৃতি হিসেবে দ্রুত বিস্তৃত হয়। সরকারি এক জরিপে দেখা যায়, ১৯৮৪ সালে বার্ষিক ১ কোটি ২৮ লক্ষ ২০ হাজার টন শিকার নিয়ে সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল। তবে এর পর থেকে মৎস্য শিকার কমে এসে ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ সীমার এক তৃতীয়াংশে নেমে যায়। জাপানের আশপাশের সমুদ্রে সম্পদ হ্রাস পাওয়ার জন্য জাপান সরকার মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াকে দায়ী করছে। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যে দিয়ে দেশের ভেতরে ধরা মাছের ঘাটতি পূরণ করে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে জাপানে বিক্রি হওয়া মাছের অর্ধেক বিদেশ থেকে আসছে।

    এদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান দিতে মাছের বৈশ্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাথা পিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ এখন হচ্ছে অর্ধ শতক আগের প্রায় দ্বিগুণ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, বিশ্বে মাছের মজুতের প্রায় ৩৩ শতাংশ মাত্রাতিরিক্ত শিকারের লক্ষ্য হচ্ছে।

    এর থেকে পশ্চিমের দেশগুলোতে সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ধারণা বিস্তার লাভ করে।

    গত বছর ডিসেম্বর মাসে জাপানের সংসদ মাছ ধরা আইনের একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে। সংশোধনীতে মৎস্য সম্পদের ব্যবস্থাপনা জোরদার করে নেয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বেসরকারি সংরক্ষণ গ্রুপ বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিল ডব্লিউ ডব্লিউ এফ জাপানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ব্যাপক আলোচনা এবং ক্ষুদ্রাকারের মৎস্যজীবীদের স্বার্থ বিবেচনা করে দেখার পর সরকার বিশ্বের সামনে কার্যকর একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা মডেল উপস্থাপন করতে পারবে বলে তাঁর সংগঠন উচ্চ আশা পোষণ করছে।

    পানির নিচে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গিয়ে মৃত্যু

    তানজানিয়ায় ছুটি কাটানোর সময় বান্ধবীকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন এক আমেরিকান নাগরিক। খবর বিবিসির।

    বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টিভ ওয়েবার ও তার মেয়ে বন্ধু কেনেশা অ্যান্টোয়াইন পেম্বা দ্বীপের মান্টা রিসোর্টের একটি অর্ধনিমজ্জিত ক্যাবিনে অবস্থান করছিলেন।

    ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওয়েবার পানির নিচে থেকে তার মেয়ে বন্ধুকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন। ওয়েবার হাতে লেখা একটি প্রস্তাব যখন মিজ অ্যান্টেোয়াইন দিচ্ছিলেন তখন তিনি ক্যাবিনের ভেতর থেকে ঘটনার ভিডিও করছিলেন।

    ফেসবুক পোস্টে ওয়েবারের মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করে অ্যান্টোয়াইন লেখেন যে তিনি ‘আর ঐ গভীর পানি থেকে উঠে আসেন নি।’

    মান্টা রিসোর্টের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে ওয়েবার ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্ডারওয়াটার রুম থেকে একা ডাইভ করার সময় দূর্ভাগ্যজনকভাবে ডুবে গেছেন।’

    রিসোর্টটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গভীর দু:খের সাথে আমরা জানাচ্ছি যে বৃহস্পতিবার ১৯শে সেপ্টেম্বর মান্টা রিসোর্টে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

    ওয়েবার এবং অ্যান্টোয়াইন রিসোর্টের আন্ডারওয়াটার রুম চার রাতের জন্য ভাড়া করেন। রুমটি তীর থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত। পানির ১০ মিটার নীচে অবস্থিত ক্যাবিনটির ভাড়া প্রতি রাতে ১৭০০ ডলার।

    লুইজিয়ানার ব্যাটন রুজের অধিবাসী ওয়েবার তাদের অবস্থানের তৃতীয় দিনে সাঁতারের পোশাক পড়ে পানির নীচে নেমেছিলেন হাতে একটি চিরকুট নিয়ে। ভিডিওতে দেখা যায় চিরকুটটির লেখা রুমের ভিতর থেকে ভিডিও করতে থাকা অ্যান্টোয়াইনকে দেখানো সময় একটি আংটিও বের করেন ওয়েবার। এরপরই সাঁতরে দূরে চলে যেতে দেখা যায় তাকে।

    রিসোর্টের প্রধান নির্বাহী সাওস বিবিসিকে জানান যে পানিতে ‘কিছু একটা সমস্যা হয়েছে’ বলে তার কর্মীরা তাকে জানান, কিন্তু তারা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছান তখন ‘আর কিছুই করার ছিল না।’

    পানির নিচে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গিয়ে মৃত্যুফেসবুক পোস্টে অ্যান্টোয়াইন লেখেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে যেটি আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন হওয়ার কথা ছিল, সেটি সবচেয়ে দু:খজনক দিনে পরিণত হলো।

    মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে তানজানিয়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তি মার্কিন নাগরিক।