• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • পশ্চিম টোকিওতে বিমান দুর্ঘটনায় জন নিহত

    পশ্চিম টোকিওতে একটি ছোট বিমান দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৫ জন।

    রোববার সকাল ১১টার দিকে বিমানটি চোফুর একটি আবাসিক এলাকাতে বিধ্বস্ত হয়, আহত বিমানের ৫ আরোহীর ভেতর পাইলটও রয়েছেন।

    টোকিও দমকল বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন ভূমিতে ৩টি বাড়ি ও ২টি গাড়িও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ ছাড়াও অন্য দু’টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    টোকিও পুলিশ বলেছে বিমানের ২ জন নিহত হন। বিধ্বস্ত একটি বাড়ির ভেতর থাকা এক মহিলা নিহত হয়েছেন এবং অপর দু’জন আহত হন। তাদের আঘাত কতোটা গুরুতর সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

    বিরল রেকর্ড মুস্তাফিজের বৃষ্টি কেড়ে নিল বাংলাদেশের স্বপ্ন 

    চতুর্থ দিনেই তৈরি হয়েছিল চিত্রনাট্য, প্রথম তিন দিন দারুণ কিছুর সম্ভাবনা দেখানো ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৭৮ এবং তৃতীয় দিন শেষে ১৭ রানে বাংলাদেশের লিডের পরও যে বেরসিক বৃষ্টি বাধিয়েছে বাগড়া। এমন সম্ভাবনা দেখানো ম্যাচের  পরিণতি যে ধাবিত হচ্ছে ড্র-এ। চতুর্থ দিনের পুরোটা খেলাহীন কেটে যাওয়ায় সে পূর্বাভাসই দিয়েছিল চট্টগ্রাম টেস্টে। ম্যাচের চতুর্থ দিনে গড়ায়নি একটিও বল, পঞ্চম দিনের কাহিনীও এক। চতুর্থ দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে ম্যাচ রেফারী ক্রিস ব্রডকে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে, পীচ কাভার খোলা যেখানে সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে দেরি করে লাভ কি? কাঁটায় কাঁটায় দুপুর ১২টায় তাই ৫ম দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষিত হওয়ায় ড্র-এ নিষ্পত্তি হলো চট্টগ্রাম টেস্ট। লাকি ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী  স্টেডিয়ামে টানা ৪টি টেস্টের একটিতেও ব্যর্থ হতে হয়নি। নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকার বিপক্ষে ড্র গর্বের ড্র-এর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়, সর্বশেষ সাফল্যটি প্রোটিয়াদের বিপক্ষে  ড্র। ৯৩তম টেস্টে ৭ জয়ের পাশে ১৪তম ড্র এটি। বৃষ্টি বিঘিœত টেস্টে ড্র’র এটি ৮ম দৃষ্টান্ত। তবে  এক সময় বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে হাসাতো বাংলাদেশকে। এখন কাঁদায় বৃষ্টি। ইতোপূর্বে বৃষ্টি বিঘিœত ৭টি টেস্টের মধ্যে কেবল  ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে কর্তৃত্ব নিয়ে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের লিডে দারুণ কিছুর সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন খেলাহীন চট্টগ্রাম টেস্টে বৃষ্টি বাধায় অবশিষ্ট তিন দিনের পুরোটা হয়নি খেলা। চতুর্থ ইনিংসে ২২৬’র চ্যালেঞ্জের মাঝপথেই ড্র’র প্রস্তাব দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪ বছর পর সেই জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামেই দারুণ কিছুর সম্ভাবনার অপমৃত্যু ডেকে এনেছে বৃষ্টি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে নিজেদের সর্বোচ্চ ৭৮ রানের লিড,  মুস্তাফিজুর (৪/৩৭), জুবায়েরের (৩/৫৩) বোলিংয়ে প্রথম দিনেই টেস্টের নাম্বার ওয়ানদের অল আউটে বাধ্য করা ম্যাচে যেখানে তৃতীয় দিন শেষে ১৭ রানের লিডে নাটকীয় কিছুর আভাস, উইকেট থেকে স্পিনাররা যেভাবে পেয়েছে তৃতীয় দিন টার্নÑতাতে সাকিব, তাইজুল, জুবায়ের, মাহামুদুল্লা যখন রাঙাচ্ছে চোখ প্রোটিয়াদের, তখন চট্টগ্রাম টেস্টের সব উত্তেজনাই যে কেড়ে নিল বৃষ্টি! প্রথম তিন দিনে ৫২ ওভার ম্যাচহীন থাকার হিসেবটা শেষ ২ দিনে মেলানোর সুযোগটাও যে দিল না বাংলাদেশকে বৃষ্টি। তবে বাংলাদেশের স্বপ্ন বৃষ্টি কেড়ে নিলেও বৃষ্টি বিঘিœত এই ম্যাচে বিশ্বরেকর্ড কিন্তু দেখেছে বিশ্ব। দুই ভার্সনের ক্রিকেটে অভিষেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের কৃতিত্ব নেই কারো। ওয়ানডে অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ মুস্তাফিজুর টেস্ট অভিষেকেও এমন কৃতিত্বে নতুন ইতিহাস করেছেন রচনা। ২ বছর আগে এই ভেন্যু থেকেই সোহাগ গাজীর বিস্ময় অল রাউন্ড দ্যুতিতে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব বিশ্বরেকর্ড। সেঞ্চুরির পাশে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেটের সেই রেকর্ডে এখনো একা সোহাগ গাজী। মুস্তাফিজুরের রেকর্ডটিও এলো সেই ভেন্যু থেকে। তবে ড্রেসিংরুমের সামনে  পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নেয়ার দৃশ্যটি যে দেখতে পারলো না দর্শক। বাংলাদেশের এই ১৯ বছরের তরুণের কৃতিত্বে হাততালিও যে দিতে পারল না কেউ। এমন দৃশ্য দেখার অন্তরায়ও বৃষ্টি ! টেস্ট অভিষেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচে এক ভেন্যু থেকে দ্বিতীয় বাংলাদেশীকেও যে দেখালো জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁ হাতি স্পিনার  ইলিয়াস সানির (৬/৯৪) কৃতিত্বের ৪ বছর পর টেস্ট অভিষেকে মুস্তাফিজুর বিস্ময়ে (৪/৩৭) আর একজন অভিষিক্ত ম্যান অব দ্য ম্যাচকে যে দেখল বিশ্ব। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্ট অভিষেকে ৪ কীর্তিমানের ম্যাচ সেরার তালিকায় জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু (২০০১এ বুলাওয়ে টেস্ট) এবং আশরাফুলের (২০০১এ কলোম্বো টেস্ট) পর ইলিয়াস সানি এবং মুস্তাফিজুরের নাম হয়েছে যুক্ত। তবে প্রথম ২ জনের কৃতিত্বের ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ, শেষ ২ জনের কৃতিত্বপূর্ণ ঘটনায় ড্র’Ñএবং ২টিই আবার বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে !

    বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল ফুটলো জাপানে

    পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো ও বড় প্রজাতির ফুল ফুটেছে জাপানের টোকিওর একটি পার্কে।
    টোকিওর জিন্দাই বোটানিকাল গার্ডেনে প্রস্ফূটিত টাইটান আরুম নামে এই বিশালাকার ফুলটি দেখতে ভিড় জমছে লোকদের।
    বিবিসি’র খবরে প্রকাশ করা হয়েছে, পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ফুটেছে এই ফুল।
    প্রায় দুই মিটার বা সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম টাইটান আরুম। কদাচিত এটি ফোটে।
    ফোটার পর ফুলটি দেখার জন্য আগ্রহী শত শত দর্শনার্থীর কথা ভেবে জিন্দাই বোটানিকাল কর্তৃপক্ষ প্রদর্শনীর সময় বাড়িয়েছে।
    জাপানের কিয়োডো সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, এই ফুল প্রস্ফূটিত অবস্থায় এক-দুই দিনের বেশি থাকেনা।
    ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ হল এই ফুলের প্রজাতির আদি নিবাস।
    সুমাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের ৪০০ থেকে ১২০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের ধাপে জন্মায় এই ফুলের গাছ। এটি এখন বিলুপ্তির পথে।

    অলিম্পিক প্রস্তুতির কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন আবে

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের প্রতি ২০২০ টোকিও অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমস’র প্রস্তুতির জন্যে কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

    শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স বৈঠকে মিলিত হয়।

    প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এখন থেকে ঠিক ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।

    আবে আশা প্রকাশ করে বলেন অলিম্পিক গেমটি বিশ্বের সকল মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার ভাগ করে নেয়ার একটি অনুষ্ঠানে পরিণত হবে। তিনি বলেন, জাপান ২০১১র বিপর্যয় যে পুরোপুরি ভাবে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে সেটিও বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার সুযোগ এটি।

    তিনি যথাসময়ে যাতে নতুন জাতীয় স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রীদেরকে নির্দেশ দেন।

    টাস্ক ফোর্স সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং সাইবার হামলা ঠেকানো সহ সার্বিক একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে।

    প্রধান দুই দলের চালচিত্র হতাশায় ডুবছে বিএনপি 

    বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী বলে অভিহিত করেন অনেকে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এই এলাকার গুরুত্ব সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির কর্মকা-ের ওপর নির্ভর করে নগরীর সার্বিক পরিস্থিতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুই প্রধান দলের বন্দরনগরীর রাজনীতির হালচাল কেমন এবং অদূর ভবিষ্যতে তা কোন দিকে গড়াতে পারে এ সব বিষয় তুলে ধরেছেন রফিকুল ইসলাম সেলিম। হতাশায় ডুবছে বিএনপিচট্টগ্রাম মহানগরীতে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাও এখন খুবই নাজুক। বড় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিরোধে কর্মীরাও বিভক্ত। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জুলুম-নির্যাতন আর মামলা-হামলার শিকার হয়ে বিপর্যস্ত দলের নেতাকর্মীরা। ৫ জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে চট্টগ্রাম অচল হলেও তার সুফল পায়নি বিএনপি। বরং মামলা, হুলিয়া আর জেল-জুলম জুটেছে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভাগ্যে। গেল ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা তিন মাসের আন্দোলনেও এখানকার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে মাঠে ছিলেন। ফল হিসাবে মামলা আর হুলিয়ার সংখ্যাই শুধু বেড়েছে। কারাবন্দি হতে হয়েছে শত শত নেতাকর্মীকে। একদিনেই তিনশ’ নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে সরকার। মামলা হুলিয়া নিয়ে শত শত নেতাকর্মী কারাগারে কিংবা আদালতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের অভিযোগ দলের নেতাদের কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। নেতাদের কেউ কেউ এসব মজলুম কর্মীদের সাথে দেখাও করছেন না। সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে এই দলটি। এরপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলের পক্ষে আছেন। তারা কখনো মাঠ ছেড়ে যাননি। এই চরম দুঃসময়েও নেতাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি প্রকট। আন্দোলনের সময়ে চট্টগ্রামের অনেক বড় বড় নেতাকে রাস্তায় দেখা যায়নি। তাদের কেউ ঢাকায় বসে কীভাবে আন্দোলন ভ-ুল করে দেওয়া যায় সে অপকৌশল গ্রহণ করেন। আন্দোলনে সব নেতা এক কাতারে মাঠে নামতে পারলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো বলেও মনে করেন কর্মীরা। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় নেতাদের প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থাও প্রকট। নগর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠোমোও এখন নড়বড়ে। বিগত ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ৫ সদস্যের নগর কমিটি গঠন করে দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটির সহ-সভাপতি দস্তগীর চৌধুরী মারা গেছেন। এখন ৪ সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে নগর বিএনপি। বেশ কয়েকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরোধে ওই কাউন্সিল প- হয়। সেই থেকে ওই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ লেগেই আছে। মেয়র নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনজুর আলমের পক্ষে দুই নেতা একসাথে মাঠে নামলেও নির্বাচনের পর ফের তারা দুই মেরুতে। কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও আবদুল্লাহ আল নোমান নগরীতে বিএনপির অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এসব অনুষ্ঠানে নগর বিএনপির কোনো নেতাকে দেখা যায় না। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথেও নগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সম্পর্ক শীতল। ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে দুই নেতার অনুসারীদের বিরোধ প্রকাশ পায়। দলের অপর কেন্দ্রীয় নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গোলাম আকবর খোন্দকার, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমও নগর বিএনপিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তাদের অনুসরারীর সংখ্যাও কম নয়। তবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান এখানকার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গরহাজির। নেতাকর্মীরাও তাকে খুঁজে পান না। কর্মীদের অভিযোগ দলের সুসময়ে যেসব নেতা শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন দুঃসময়ে তারা এখন নিজেদের আড়ালে রেখেছেন। তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, বিএনপির সাংগঠনিক ভিত অতীতে কখনো তেমন মজবুত ছিল না। এই দলের প্রাণশক্তি হলো কর্মী-সমর্থক তথা জনগণ। নেতারা এককাতারে এসে জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারলে জনতা তাদের পেছনে কাতারবন্দি হবে। আর তখনই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।

    ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

    একটি মসজিদে ‘ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ’ শিরোনামে একটি তালিকা নজরে পড়ল। তাতে কিছু আছে ইসলামে স্বীকৃত মহিমান্বিত দিবস-রজনী, আবার কিছু আছে আবিষ্কৃত রসম-রেওয়াজ এবং ইসলামী ইতিহাস বিষয়ে না জানার ভুল। সমাজের বিভিন্ন মহলে এসব দিবস-রজনী বিশেষভাবে পালিত হতেও দেখা যায়। কোনো কোনো দিবস এমন আছে, যেগুলোতে সরকারী ছুটি থাকে অথচ ইসলামে সে সকল দিবস স্বীকৃত নয়। আর এসব দিবস-রজনী বিভিন্ন অনির্ভরযোগ্য পুস্তক-পুস্তিকায়ও দেখা যায়। তাই তালিকাটির উপর একটি পর্যালোচনা সংগত মনে হল। এ পর্যালোচনায় তালিকার ভুলগুলোও যেমন উল্লেখ করা হয়েছে তেমনি ইসলামে স্বীকৃত দিবস-রজনী বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কথাও আলোচনা করা হয়েছে। যাতে স্বীকৃত বিষয়েও কেউ ভুলের শিকার না হন। প্রথমে তালিকাটি উল্লেখ করছি।

    ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ

    (যেমনটা ঐ তালিকায় দেওয়া হয়েছে)

    ১. ১ লা মুহাররম : হিজরী নববর্ষ

    ২. ৯ ই মুহাররম : আশুরার রোযা

    ৩. ১০ ই মুহাররম : আশুরা

    ৪. সফরের শেষ বুধবার : আখেরী চাহার শোম্বাহ

    ৫. ১২ই রবিউল আউয়াল : নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম ও ওফাত দিবস

    ৬. রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার  : লায়লাতুর রাগায়েব

    ৭. ১৫ই রজব : শবে এস্তেফতাহ

    ৮. ২৭ শে রজব : লাইলাতুল মিরাজ

    ৯. ১৫ই শাবান : লাইলাতুল বরাত

    ১০. ২১, ২৩, ২৫,২৭ ও ২৯ শে রমযান : লাইলাতুল কদর

    ১১. ১লা শাওয়াল : ঈদ-উল-ফিত্র

    ১২. ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব : আইয়ামে তাশরীক

    ১৩. ৯ই যিলহজ্ব : ইয়াওমুল আরাফা হজ্ব দিবস

    ১৪. ১০ই যিলহজ্ব : ঈদ-উল-আযহা

    ১৫. প্রতি মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ : আইয়ামে বীজ (রোযা রাখা সুন্নত)

    এই তালিকার শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল, ‘ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী’। কারণ প্রতিটি দিনই পবিত্র, কোনো দিনই অপবিত্র বা অশুভ নয়। হাঁ, দিনসমূহের মধ্যে ঐ দিনগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ, কুরআন হাদীসে যেগুলোর বিশেষ ফযীলত উল্লেখিত হয়েছে। সুতরাং পবিত্র না বলে ফযীলতপূর্ণ বলা উচিত। নিচে এই তালিকার উপর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা পেশ করা হল ।

    ১. ১ লা মুহাররম : হিজরী নববর্ষ

    প্রথম কথা হল, ১লা মুহাররম হিজরী বর্ষের প্রথম দিন। কিন্তু এটা ‘ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ’ বা ‘ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী’ শিরোনামে আসবে কিনা সেটা ভাববার বিষয়। ইসলামী ফযীলতপূর্ণ দিবস হতে হলে কুরআন-সুন্নাহয় তার আলাদা ফযীলত উল্লেখ থাকতে হবে।  এছাড়া এখানে হিজরী নববর্ষ শব্দ থেকে কেউ বুঝতে পারে যে, অন্যান্য জাতি যেমন নববর্ষ উদযাপন করে, হিজরী নববর্ষও মুসলমানদের জন্য সে রকম উদযাপনের দিবস। অথচ ইসলামে নববর্ষ, বর্ষপূর্তি কিংবা জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার কোনো বিধান নেই।   তবে চান্দ্রমাস ও বছরের সাথে যেহেতু  রোযা, হজ্ব, ঈদুল ফিত্র, ঈদুল আযহা ও যাকাতসহ বহু ইবাদাত ও শরয়ী বিধিবিধান সম্পৃক্ত এ জন্য এর হেফাযত ও চর্চা রাখা ফরযে কেফায়া। এবং এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করা জাতীয় আত্মমর্যাদাবোধ হ্রাস বা বিলুপ্তিরই নামান্তর।

    ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোযের দিন (নববর্ষের দিন) আলী রা.-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোয উপলক্ষে ফলে) আলী রা. বললেন, ‘‘নওরোযুনা কুল্লা ইয়াওম’’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। (আখবারু আবি হানিফা,সয়মারী) অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে।

    ২-৩. ৯ ই মুহাররম : আশুরার রোযা, ১০ ই মুহাররম : আশুরা

    এই উপস্থাপন থেকে মনে হয় যে, ৯ই মুহাররম আশুরার রোজা আর ১০ই

    মুহাররম শুধুই আশুরা;এই দিনে রোজার কোনো বিষয় নেই। আসলে আশুরার রোযা তো মূলত ১০ই মুহাররমের রোযা। কারণ সেদিনই হল আশুরা। তবে ইহুদীদের সাদৃশ্য থেকে বাঁচার জন্য হাদীসে আশুরার দিনসহ তার আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে দুইটি রোজা রাখার কথা এসেছে। (দ্র. সহীহ মুসলিম ১/৩৫৯; মুসনাদে আহমাদ ১/২৪১)

    উল্লেখ্য, ১০ ই মুহাররমের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথা বলে থাকেন। যেমন, এ দিনে হযরত ইউসুফ আ. জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইয়াকুব আ. চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। অনেকে বলে, এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইদরীস আ.কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে ইত্যাদি। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। -আল আসারুল মারফুআ, আবদুল হাই লখনবী ৬৪-১০০; মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ ফী আয়্যামিস সানাহ ২৫৩-২৫৭

    এ দিনের একটি সহীহ ঘটনা হল, আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুদরতে বনী ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরেছেন।-সহীহ বুখারী ১/৪৮১

    আর এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হুসাইন রা.। বলাবাহুল্য, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয় । কিন্তু একে কেন্দ্র করে তাজিয়া, শোকর‌্যালি, শোকগাঁথা পাঠ, বুক চাপড়ানো, হায় হোসেন হায় হোসেন করা -এগুলো সবই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত হোসাইন রা. ও আহলে বাইতের আদর্শের পরিপন্থী।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা মুখ চাপড়ায়, কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলী যুগের কথাবার্তা বলে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা.৪৩৬১

    ৪. সফরের শেষ বুধবার : আখেরী চাহার শোম্বাহ

    বহু মানুষ সফর মাসের শেষ

    বুধবারকে একটি বিশেষ দিবস গণ্য করে এবং এতে বিশেষ আমল আছে বলে মনে করে। ‘মকসুদুল মোমিনীন’ ও ‘বার চান্দের ফযীলত’ এবং এ জাতীয় যেসব অনির্ভরযোগ্য পুস্তক-পুস্তিকা এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তাতে এই বিষয়টি রয়েছে।

    (মকছুদুল মুমিনীন, বার চান্দের ফযীলত জাতীয় অনির্ভরযোগ্য বইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী) সফর মাসের শেষ

    বুধবারকে আখেরী চাহার শোম্বাহ বলে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে একবার এক ইহুদীর যাদুর কারণে ভীষণ অসুস্থ হন এবং এই দিনে একটু সুস্থতা বোধ করেন এবং গোসল করেন ও মসজিদে জামাতে শরিক হন। খুশি হয়ে হযরত ওসমান রা. তাঁর নিজ খামারের ৭০টি উট জবাই করে গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। খুশিতে আত্মহারা সাহাবীগণ আনন্দ প্রকাশ ও শুকরিয়া আদায় করেছিলেন রোযা রেখে, নফল নামায পড়ে এবং হামদ-নাত গেয়ে। সুতরাং এটা মুসলমানদের খুশির দিন এবং তা উদযাপনের একটি দিবস।

    এ ছাড়াও এ জাতীয় বইগুলোতে এ দিনের বিভিন্ন করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন যেমনটি ভিত্তিহীন উপরোক্ত বিবরণ। কারণ-

    ১. হাদীস বিশারদ ও ইতিহাসবিদ কারো মতেই সুস্থতার তারিখ সফরের আখেরী চাহার শোম্বা ছিল না। (দ্র. ফাতহুল বারী ১০/২৩৭ : আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ২/১৫৪; শরহুয যুরকানী ৯/৪৪৬-৪৪৭)

    ২. জাদুর ঘটনা হাদীস ও সীরাত-গ্রন্থসমূহে বিস্তারিতভাবে এসেছে। কিন্তু কোথাও জামাতে শরীক হতে না পারা ও জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার পর গোসলের কথা নেই।

    ৩. রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়েছে সোমবারে। এর চার-পাঁচদিন পূর্বে তাঁর সুস্থতার জন্য যে সাত কুঁয়া থেকে সাত মশক পানি আনা হয়েছিল এবং সুস্থতার জন্য তার দেহ মোবারককে ধৌত করা হয়েছিল তা কি বুধবারের ঘটনা না বৃহস্পতিবারের? ইবনে হাজার ও ইবনে কাছীর একে বৃহস্পতিবারের ঘটনা বলেছেন। (দ্র. ফাতহুল বারী ৭/৭৪৮, কিতাবুল মাগাযী ৪৪৪২; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/১৯৩; সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী ২/১১৩)

    ৪. যদি বুধবারের ঘটনা হয়ে থাকে তবে সফর মাসের শেষ বুধবার কীভাবে হচ্ছে? রসমের পৃষ্ঠপোষকতাকারীগণ সকলে ইন্তেকালের তারিখ বারো রবিউল আওয়াল বলে থাকেন। সোমবার যদি বারো রবিউল আওয়াল হয়ে থাকে তাহলে এর পূর্বের বুধবার তো সফর নয়, রবিউল আওয়ালেই হচ্ছে।

    ৫. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অনেক মুসিবত এসেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নাজাত দিয়েছেন। তায়েফ ও অহুদে আহত হয়েছেন, আল্লাহ তাকে সুস্থ করেছেন। একবার ঘোড়া থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছেন, যার কারণে মসজিদে যেতে পারেননি, আল্লাহ তাঁকে সুস্থ করেছেন। তাঁর সুস্থতা লাভের এই সব আনন্দের স্মৃতিগুলোতে কি দিবস উদ্যাপনের কোনো নিয়ম আছে? তাহলে আখেরী চাহার শোম্বাহ, যার কোনো ভিত্তি নেই, তা কীভাবে উদযাপনের বিষয় হতে পারে?

    আলকাউসার মার্চ ২০০৮ সংখ্যায় ‘প্রচলিত ভুল’ পাতায় ‘আখেরী চাহার শোম্বাহ কি উদযাপনের দিবস’  শিরোনামে এ বিষয়ে আরো   বিস্তারিত  লেখা হয়েছে।

    ৫. ১২ই রবিউল আউয়াল : নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম ও ওফাত দিবস

    ইতিহাস ও সিরাতের কিতাবের উপর যাদের নযর আছে তারা জানেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাতের তারিখ কোনোটিই নিশ্চিতভাবে ১২ রবিউল আওয়াল বলা ঠিক নয়। অনেক গবেষকই জন্মতারিখ ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার ও ওফাতের তারিখ ২ রবিউল আউয়াল সোমবার-কে তারজীহ দিয়েছেন (সবচেয়ে সহীহ বলেছেন)। (দ্র. ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসকালানী খ. ৮ পৃ.৭৬৩ কিতাবুল মাগাযী,বাব ৮৩; রাহমাতাল লিল আলামীন, কাজী মুহাম্মাদ সুলাইমান সালমান মানসুরপুরী খ.১ পৃ.৩৫; আসাহহুস সিয়ার পৃ.৫৫০-৫৫২; মাকালাতুল কাউছারী পৃ. ৩৬২-৩৭০;আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া খ. ৪ পৃ. ২২৭-২৩০

    সে যাই হোক ইসলামে জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করার কোনো অনুমতি নেই। কোনো সাহাবী, তাবেয়ী, ইমাম, উলামায়ে উম্মাহ কেউ এমনটি করেন নি; বরং করাকে বিদআত বলেছেন। সুতরাং তা পরিত্যাজ্য। আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার রসম-রেওয়াজ ও বিদআত থেকে হেফাজত করুন। এগুলোর পিছনে না পড়ে পুরোপুরি সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন।

    ৬. রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার  : লায়লাতুর রাগায়েব

    এটা একটা আবিস্কৃত রজনী। শরীয়তে এর কোনো  ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে প্রথম কথা হল, এখানে বৃহস্পতিবারকে লাইলাতুর রাগায়েব বলা হয়েছে। অথচ ‘লাইলাতুন’ অর্থ রাত। ফলে একটি ভুল বিষয় বলতে গিয়ে আরেকটি ভুল করেছেন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত-এর স্থলে সরাসরি বৃহস্পতিবার বলে দিয়েছেন। আর যে ভিত্তিহীন বর্ণনার আলোকে তা আবিষ্কার করা হয়েছে তা এই-

    ১. যারা রজব মাসে রোযা রাখে তাদের গুনামাফীর জন্য ফেরেশতাকুল রজবের প্রথম জুমআর রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুআয় মগ্ন থাকেন।

    ২. যে ব্যক্তি রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার রোযা রাখে অতপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে দু’ রাকাত করে (বিশেষ পদ্ধতিতে) বার রাকাত নামায আদায় করে তার সকল প্রয়োজন  পূরণ করা হয় এবং তার সকল গোনাহ মাফ করা হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, বালুকণা, পাহাড়ের ওজন এবং বৃক্ষের পাতার সমপরিমাণ হয়। আর কিয়ামতের দিন সে তার পরিবারের সাতশ গোনাহগার জাহান্নামের উপযোগী মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

    এ দুই বানোয়াট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রয়োজন পূরণের কথিত এ রাতের নাম রাখা হয়েছে ‘লাইলাতুর রাগায়েব’ আর বিশেষ পদ্ধতির নামাযের নাম রাখা হয়েছে ‘সালাতুর রাগায়েব’।

    ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেছেন, সালাতুর রাগায়েব ও এর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস বানোয়াট ও মিথ্যা। আবু ইসমাইল আনসারী, আবু বকর সামআনী, আবুল ফযল ইবনে নাসির, ইবনুল জাওযী সকলেই এ সংক্রান্ত রেওয়ায়াতকে ভিত্তিহীন বলেছেন।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১; মা সাবাতা বিস্সুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ,পৃ. ১৮০

    ৭. ১৫ই রজব : শবে এস্তেফতাহ

    ‘শবে এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করার রজনী। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করা।

    এখানেও ১৫ রজব বলতে ১৫ এর দিবস উদ্দেশ্য নয়; বরং রাত। অর্থাৎ ১৪ই রজব দিবাগত রাত।

    একটি জাল বর্ণনার উপর ভিত্তি করে এ রাতের আবিষ্কার। বর্ণনাটি হল, ‘এ রাতে চার রাকাত নামায বিশেষ নিয়মে আদায় করে নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরূদ, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল আদায় করলে আল্লাহর পক্ষ হতে তার নিকট এক হাজার ফেরেশতা পাঠানো হয়। যারা ঐ ব্যক্তির জন্য নেকী লিখতে থাকেন এবং ঐ রাত পর্যন্ত যত গুনাহ সে করেছে সব মাফ করে দেন। অবশেষে তার কাঁধে হাত রেখে একজন ফেরেশতা বলেন, তুমি নতুন করে আমল শুরু কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন …।’

    গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নতুন করে আমল শুরু করার এই বানোয়াট বর্ণনার কারণেই সম্ভবত এই রাতের নাম রাখা হয়েছে   ‘শবে ইস্তেফতাহ’।

    উল্লেখিত বর্ণনা ছাড়াও এ রাত সম্পর্কে এ ধরনের আরো ভিত্তিহীন বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল, শরীয়তে ‘শবে ইস্তেফতাহ’ নামে বিশেষ কোনো রাতের অস্তিত্বই নেই। ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন, রজব মাসের বিশেষ পদ্ধতির নামাযের কোনো বর্ণনাই প্রমাণিত নয়।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১

    ৮. ২৭ শে রজব : লাইলাতুল মিরাজ

    এ রাতকে লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ বলা হয়ে থাকে। কোনো কোনো পুস্তক-পুস্তিকায় স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে তা প্রসিদ্ধ যে, মিরাজের ঘটনা রজব মাসের ২৭ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। এ কথাটি শুধু ইতিহাসের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যার সনদ সহীহ নয়। অন্যথায় এটি কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস দ্বারাও প্রমাণিত নয়, হাদীস শরীফ কিংবা কোনো সাহাবীর উক্তি দ্বারা তো নয়ই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুধু এটুকুই পাওয়া যায় যে, মিরাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মাস, দিন, তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল নেই।

    অনেক আলেম বলেছেন, মিরাজের রাত নিঃসন্দেহে একটি বরকতময় রাত ছিল কিন্তু এই রাতে যেহেতু বিশেষ কোনো আমল বা ইবাদত উম্মতের জন্য বিধিবদ্ধ হয়নি তাই  এর দিন-তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত থাকেনি। -আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, ইমাম ইবনে কাছীর ২/৪৭১; লাতাইফুল মাআরিফ, ইমাম ইবনে রজব ১৩৪; ইসলাহি খুতুবাত, আল্লামা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ১/৪৬-৪৮

    রজব মাস যেহেতু কুরআনে বর্ণিত চার সম্মানিত মাসের একটি সুতরাং এর পুরোটাই বরকতময়। তাই এ মাসের সবকটি দিন ও সবকটি রাতেই ইবাদাত বন্দেগীর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ। কিন্তু এর ২৭ তারিখ যেহেতু শবে মিরাজ হিসেবে প্রমাণিত নয় তাই এ রাতকে বিশেষ ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট না করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রসম রেওয়াজও ত্যাগ করা উচিত।

    ৯. ১৫ই শাবান : লাইলাতুল বরাত

    ১৫ই শাবান অর্থাৎ ১৪ই শাবান দিবাগত রাত। হাদীস শরীফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ বলা হয়েছে। এর ব্যাপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান  হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে তার সবগুলোকে ‘মওযূ’ বা ‘যয়ীফ’ মনে করা যেমন ভুল তেমনি এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও একটি ভিত্তিহীন ধারণা। বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি কোনটিই উচিত নয়। যতটুকু ফযীলত প্রমাণিত এ রাতকে ততটুকুই গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং এ কেন্দ্রিক সকল রসম-রেওয়াজ পরিহার করা উচিত।

    এ রাত ও তার আমল সম্পর্কে হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা নিম্নরূপ :

    ১.

    عن مالك بن يخامر عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميعخلقه إلا لمشرك أو مشاحن، رواه ابن حبان وغيره ورجاله ثقات وإسناده متصل على مذهب مسلم الذي هو مذهب الجمهور فيالمعنعن ولم يجزم الذهبي بأن مكحولا لم يلق مالك بن يخامر كما زعم وإنما قاله على سبيل الحسبان، راجع : سير أعلام البلاء.

    মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’- সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

    হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিববান একে ‘কিতাবুস সহীহ’এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘হাসান’ বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

    ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন, আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১১৮, ৩/৪৫৯; লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫; শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১

    বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা’’ ৩/১৩৫-১৩৯-এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন-

    وجملة القول أن الحديث يمجموع هذه الطريق صحيح بلا ريب والصحة تثبت بأقل منها عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كماهو الشأن في هذا الحديث.

    ‘‘এ সব রেওয়ায়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়।’’ এরপর শায়খ আলবানী রাহ. ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোনো ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই।

    ২. ‘‘হযরত আলা ইবনুল হারিস রাহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

    هذه ليلة النصف من شعبان إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمينويؤخر أهل الحقد كما هم.

    ‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’-শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩

    ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন-

    هذا مرسل جيد

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওযীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাআত হতে হবে, প্রতি রাকাআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়, হাদীস শরীফে এসব নেই; এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকাআত করে যত রাকাআত সম্ভব হয় এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইসতেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমানোর প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

    ১০. ২১, ২৩, ২৫,২৭ ও ২৯ শে রমজান : লাইলাতুল কদর

    এখানে বলা উচিত, ২১ থেকে ৩০ এর রাত পর্যন্ত শবে কদর অন্বেষণ ও ইতিকাফ।

    অনেকের মনে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সাতাশের রাতই হচ্ছে শবে কদর। এই ধারণা ঠিক নয়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। তাদের ওই ঝগড়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হতে পারে, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলত) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০২০, সহীহ মুসলিম ১১৬৫/২০৯

    অন্য হাদীসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর  তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫

    তাই সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।

    রমাযানের শেষ দশকের ফযীলতই সবচেয়ে বেশি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭১

    ১১. ১লা শাওয়াল : ঈদ-উল-ফিত্র

    ১২. ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব : আইয়ামে তাশরীক

    এটি ঠিক যে, ৯ই যিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ই যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর প্রত্যেক বালেগ নর নারীর উপর একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। তাকবীরে তাশরীক হল,

    الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد

    তবে এই সবগুলো দিনকে পরিভাষায় ‘আইয়ামুত তাশরীক’ বলে না। পরিভাষায় নয় যিলহজ্বকে ইয়াওমু আরাফা-১০ যিলহজ্বকে ইয়াওমুন নাহর এবং ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্বকে আইয়ামুত তাশরীক বলে। (দ্র. উমদাতুল কারী শরহু সহীহিল বুখারী খ. ৬ পৃ. ২৮৯; রদ্দুল মুহতার, খ. ৬ পৃ. ৩১৬; আলমিসবাহুল মনীর, পৃ. ১৬২; আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত, খ. ৭ পৃ. ৩২০)

    ১৩. ৯ই যিলহজ্ব : ইয়াওমুল আরাফা হজ্ব দিবস

    আরবী ব্যাকরণের হিসেবে ‘ইয়াওমুল আরাফা’ বলা ঠিক নয়। বলতে হবে, ইয়াওমু আরাফা। আর এর সাথে ইয়াওমু আরাফা (৯ই যিলহজ্বের) রোযার কথা বলে দিলে ভালো। হাদীস শরীফে এসেছে, আরাফার দিনের (৯ই যিলহজ্ব) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মিটিয়ে দিবেন। -সহীহ মুসলিম হাদীস ১১৬২

    ১৪. ১০ই যিলহজ্ব : ঈদ-উল-আযহা

    ১৫. প্রতি মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ : আইয়ামে বীজ (রোযা রাখা সুন্নত) অর্থাৎ প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ।

    উপরোক্ত তালিকায় সমাজে প্রসিদ্ধ সহীহ বা ভুল দিবস-রজনীর অধিকাংশ এসে গেছে। এর বাইরেও কিছু আছে যা এই তালিকায় আসেনি। যেমন-

    * আশারায়ে যিলহজ্ব (যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন)।

    আল কুরআনুল কারীমে সূরা ফাজর-এর শুরুতে আল্লাহ তায়ালা এই দশ রাতের শপথ করেছেন (তাফসীরে ইবনে কাছির ৪/৫৩৫) হাদীস শরীফে এসেছে- আল্লাহর নিকট যিলহজ্বের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোন দিনের আমল নেই…। – সহীহ বুখারী, হাদীস: ৯৬৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ২৪৩৮

    * ইয়াওমুল জুমুআ (প্রতি সপ্তাহের জুমার দিন)

    আল কুরআনুল কারীমে জুমার দিনের আলোচনা এসেছে এবং ‘সূরা জুমুআ’ নামে একটি আলদা সূরাও রয়েছে। জুমআর দিনের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে বহু হাদীস এসেছে।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমুআর দিন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। -সহীহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৪

    *এ ছাড়াও সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবারের ফযীলত ও রোযার কথা হাদীস শরীফে এসেছে।

    রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমি চাই যে, আমার আমল পেশ করার মুহূর্তে যেন আমি রোযা অবস্থায় থাকি। -জামে তিরমিযী, হাদীস.৭৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস.৭৬৩৯

    আরেক হাদীসে আয়েশা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। – জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৩৮

    আর এ তালিকার বাইরে কিছু ভুল দিবস-রজনী বিভিন্ন পুস্তিকায় পাওয়া যায়। যেমন-

    * ফাতিহায়ে ইয়াযদহম (রবিউস সানীর ১১ তারিখ)

    ‘ইয়াযদাহম’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘একাদশ’। আর ফাতিহায়ে ইয়াযদাহম অর্থ রবীউস সানীর এগারো তারিখে কৃত ফাতেহা বা ইসালে ছওয়াব মাহফিল। বলা হয়ে থাকে, এ তারিখে শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রহ.-এর ইন্তেকাল হয়েছিল। এজন্য তাঁর ওফাতদিবস পালন করার উদ্দেশ্যে এই রসমের সূচনা করা হয়। ওই আল্লাহর বান্দারা চিন্তা করেনি যে, ইসলামে না জন্মদিবস পালন করা হয়, না মৃত্যুদিবস। না শায়খ জীলানী রহ. তাঁর কোনো শায়খের জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস পালন করেছেন, না তার কোনো খলীফা বা শাগরিদ তা পালন করেছেন।

    এদিকে মজার বিষয় এই যে, গিয়ারভীর এই রসম এ তারিখে এ জন্যই পালন করা হয় যে, এটা শায়খ জীলানীর ওফাতদিবস। আল্লাহর কী শান, এই ভিত্তিহীন রেওয়াজের উদযাপন দিবসের জন্যও একটি ভিত্তিহীন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।

    আমরা তারীখ ও রিজালের অনেক গ্রন্থে শায়খ জীলানীর জীবনালোচনা পড়েছি। কোথাও এগারো রবীউস সানীর কথা নেই। আট, নয় বা দশ রবীউস সানী ৫৬১ হিজরীর কথা উল্লেখিত হয়েছে।

    -(দেখুন : সিয়ারু আলামিন নুবালা,  যাহাবী ১৫/১৮৯; আলমুনতাযাম, ইবনুল জাওযী : ১৮/১৭৩; যায়লু তবাকাতিল হানাবিলা, ইবনে রজব ১/২৫১; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/৩৯৫; শাযারাতুয যাহাব, ইবনুল ইমাদ ৪/২০২; তারীখুল ইসলাম, যাহাবী ৩৯/৬০)

    মোটকথা, এ তারিখ যদি সহীহও হতো তবুও তো জন্মদিবস-মৃত্যুদিবস পালন করার কোনো অনুমতি ইসলামে নেই।

    * ফাতিহায়ে দোয়াযদহম (রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ)

    দোয়াযদহম অর্থ দ্বাদশ। ফাতিহায়ে দোয়াদহম অর্থ রবীউল আউয়ালের ১২ তারিখে কৃত ফাতেহা বা ইসালে ছওয়াব মাহফিল। এটা আরো গর্হিত বেদআত।

    উপরের আলোচনায় দুই ধরনের দিবস-রজনীর কথা এসেছে : এক. শরীয়তের দলীল দ্বারা যেগুলোর আলাদা ফযীলত ও বিশেষত্ব প্রমাণিত। দুই. যেগুলোর আলাদা বিশেষত্বের ধারণা ভুল ও নবউদ্ভাবিত। নীচে দুইটি আলাদা তালিকায় তা উপস্থাপিত হল :

    সঠিক দিবস-রজনী

    ১. ইয়াওমু আরাফা (৯ই যিলহজ্ব,রোযা রাখা সুন্নত)

    ২. ঈদুল-আযহা (১০ই যিলহজ্ব)

    ৩. আইয়ামে বীজ (প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ,রোযা রাখা সুন্নত)

    ৪. লাইলাতুল বারাআত বা লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান (১৫ই শাবান)

    ৫. লাইলাতুল কদর অন্বেষণ ও ইতিকাফ  (রমযানের শেষ দশক)

    ৬. ঈদুল-ফিত্র (১লা শাওয়াল)

    ৭. আইয়ামে তাশরীক (১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব)

    ৮. আশুরা (১০ ই মুহাররম; ৯-১০/১০-১১) তারিখে রোযা রাখা সুন্নত)

    ৯. আশারায়ে যিলহজ্ব (যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন)

    ১০. ইয়াওমুল জুমুআ (প্রতি সপ্তাহের জুমার দিন)

    ১১. সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার (রোযা রাখা সুন্নত)

    ভুল দিবস-রজনী

    ১. আখেরী চাহার শোম্বাহ (সফরের শেষ বুধবার)

    ২. লায়লাতুর রাগায়েব (রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার)

    ৩. শবে এস্তেফতাহ (১৫ই রজব)

    ৪. লাইলাতুল মিরাজ (২৭ শে রজব)

    ৫. ফাতিহায়ে ইয়াযদহম (রবিউস সানীর ১১ তারিখ)

    ৬. ফাতিহায়ে দোয়াযদহম (রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ)

    ৭. ১২ই রবিউল আউয়াল।

    জাপান বিএনপির আয়োজনে ইফতার মাহফিল

    গত রোববার ১২ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, জাপান শাখা আয়োজিত ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় টোকিওর আরাকাওয়া কু’র ওগু ফুরিআইকান এ। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী এই মাহফিলে সমবেত হন এবং ইফতারে অংশ নেন। ইফতারির পূর্বে ইসলামি বয়ান, দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। ইফতার শেষে তারাবির নামাজের জন্যে কিছুটা তড়িঘড়ি করে সবাইকে রাতের খাবারে আপ্যায়িত করা হয়।

    আয়োজনক একটি রাজনৈতিক দল হলেও অনুষ্ঠানে দলমত নির্বিশেষে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। মিডিয়ার প্রায় সকলকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। বিষয়টি অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। একজন ভিন্ন দলের প্রবাসী বললেন, “আমরা এখানে সবাই প্রবাসী -সেটাই আমাদের প্রধানতম পরিচয়। রক্তের সাথে সম্পর্কহীন প্রবাসীরা ২০,২৫ এমনকি ৩০ বছর ধরে বসবাস করছে। ধর্ম, রাজনৈতিক বিদ্বেষ ভিন্ন হলেও সম্পর্কটা আত্মিক। ইফতার একটি ধর্মীয় আয়োজন। -এখানে রাজনীতি বিবেচ্য নয়।

    ক’দিন আগেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাপান শাখা আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপি ঘরনার এক-দু’জনের উপস্থিতি ছিলো। জাপান প্রবাসী হিসেবে এটি একটি ব্যতিক্রম। দলীয় রাজনীতি ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের এই যে উদারতা জাপান প্রবাসীরা তার উজ্জ্ব্ল দৃষ্টান্ত।

    একই দিনে চীবা প্রিফেকচারের অনুষ্ঠানের কথা উঠলেই বলা হয় সময় স্বল্পতার জন্যে বোধ হয় এমনটি হয়েছে। তবে দু’একজনের কাছে ভিন্ন মতামত শোনা গেছে। উল্লেখ্য প্রতি শনিবার ও রোববার টোকিও ও তার আশেপাশের প্রতিতটি মসজিদেই ধর্মীয় ঐতিহ্য মতো ইফতার ও তারাবির আয়োজন চলছে। জাপান আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাপানের আরেকটি অংশের দাবিদারও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলো।

    বিএনপি জাপান শাখার সদস্য ও কর্মীরা প্রচুর পরিশ্রম করে এই আয়োজনটি করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মীর রেজাউল করিম রেজা দলমত নির্বিশেষে ইফতারে শরীক হওয়ার জন্যে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

    Untitled Post

    Posted by admin on July 13
    Posted in Uncategorized 

    ইউ টার্নে সিরিজে ফিরলো বাংলাদেশ

    দ.আফ্রিকা ঃ ১৬২/১০ (৪৬.০ ওভারে) বাংলাদেশ ঃ ১৬৭/৩ (২৮.৪ ওভারে) ফল ঃ বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ীশামীম চৌধুরী :  সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ থেমেছে ১৬০-এ, দ্বিতীয় ম্যাচে দ.আফ্রিকাকে থামিয়েছে ১৬২ তে! প্রথম ম্যাচে ৫৩ বল হাতে রেখে সফরকারীদের ৮ উইকেটে জয় দেখেছে বাংলাদেশ দল, দ্বিতীয় ম্যাচে সেই সফরকারীদের বিপক্ষে বদলার ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৭ উইকেটে, ১৩৪ বল হাতে রেখে! সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের জয়ে উইনিং শটটি ছিল রুশোর বাউন্ডারি, রুশোকে জবাব দিতে গতকাল  ইমরান তাহিরকে স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে মেরেছেন সৌম্য ছক্কা! একেই বলে ইউটার্ন! এই একটি ইউটার্নে ২০১৭’র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও যে নিশ্চিত করতে পেরেছে বাংলাদেশ। হোমে টানা ৪র্থ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আবহও হয়েছে তৈরিÑমঞ্চটা এখন চট্টগ্রামে, চোখ এখন ১৫ জুলাই বাংলাদেশের লাকি ভেন্যুতে। শাসন করা তাকেই মানায়, সোহাগ করে যে, বাংলা এই প্রবচনটি যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যÑ বিসিবি বস সেই কাজটিই করেছিলেন গত পরশু। অনুশীলনের চেয়েও শাসনটা তার কাছে ছিল জরুরি, ক্রিকেটারদের ছন্দে ফেরাতে তার সতর্কবার্তা টনিকের মতো করেছে কাজ। দ.আফ্রিকার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের ২ ম্যাচে হেলায় হেলায় হাতছাড়া করেছে ম্যাচ বাংলাদেশ দল, সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ দলকেই দেখেছে দর্শক। সেই ছন্নছাড়া দলকে ছন্দে ফিরিয়ে আনতে টিম ম্যানেজমেন্টের বাইরে পরামর্শকের ভূমিকায় টেকনিক্যাল কমিটিÑ বাংলাদেশের ক্রিকেটে চার মুরব্বী স্থানীয় ক্রিকেট ব্যক্তির পরামর্শে একাদশে পরিবর্তনকে যদি কেউ হস্তক্ষেপ বলে গন্য করে, তাহলে এমন হস্তক্ষেপও দলের জন্য ভাল। বিসিবি সভাপতির সতর্কবার্তায় আড়মোড়া ভেঙে অন্য এক বাংলাদেশকে ঠিকই দেখেছে দর্শক ম্যাচের শুরু থেকে। ফিল্ডিংয়ে ফিরে পেয়েছে সুনাম। নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের উপর হস্তক্ষেপ করে তিন পেস বোলার তত্ত্বে ফিরিয়ে এনে মুস্তাফিজকে দিয়েছে সাহস। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে বিশ্বরেকর্ডের (৩ ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট)পর দ.আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে উইকেটহীন কাটানোর কষ্ট বয়ে বেড়াতে হয়নি। বাংলাদেশকে সিরিজে ফেরাতে কাটার মাস্টার ফিরেছেন ছন্দে (৩/৩৮)। তার প্রথম স্পেলে ডি কক ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। বাধ্যতামূলক পাওয়ার প্লেতে রানের লাগাম (৩৮/১) টেনে ধরতে পেরেছে বাংলাদেশ সেখানেই। একাদশে ফেরা রুবেল নিজের দ্বিতীয় ওভারে হাশিম আমলার অফ স্ট্যাম্প শূন্যে পাঁচ চক্করে উড়িয়ে প্রোটিয়াদের মনোবলে দিয়েছেন ধাক্কা। সেই ধাক্কা সামাল দিতে পারেনি তারা। ইনিংসের মাঝপথে প্রোটিয়াদের স্বল্প স্কোরে বেঁধে ফেলতে নাসির, মাহামুদুল্লাহরা অধিনায়কের নির্দেশনা পালন করেছেন অক্ষরে অক্ষরে। দ্বিতীয় জুটির ২৯ ছাড়া প্রোটিয়াদের উল্লেখ করার মতো পার্টনারশিপ শেষ ২টিতে, ২২ করে।  বোলার নাসিরে রূপান্তর হওয়া ছেলেটি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন গতকাল (৮-০-২৬-৩)। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন উইকেটের ইনিংসের তিনটিই ব্রেক থ্রু। ইনিংসে নিজের প্রথম বলেই সফল নাসির। প্রকৃত অর্থে অফ স্পিন যাকে বলে, সেই ডেলিভারি দিয়েই সফল তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের ২টি এবং ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য তিন ইনিংস (৩১, ১৯ ও ৪৫) শেষে রুশো থেমেছেন (৪)। তাকে থামিয়েছেন নাসির দারুণ এক অফ স্পিনে, অফ স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়ে! টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ম্যাচ উইনিং নট আউট ৭৯ এবং ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের স্বস্তির জয়ে অবদান রাখা (৬৩ নট আউট) ডু প্লেসিসকে (৪১) মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আসতে বাধ্য করেছেন নাসির । প্রথম স্পেলে ৭-০-২৩-২! ৪২ বলের মধ্যে ২৩টিই ডট। দ্বিতীয় স্পেলেও বিফল হননি। ১-০-৫-১, এই স্পেলে তার শিকার অ্যাবট।৪ বছর আগে চট্টগ্রামে তার ২-০-৩-২, এমন বোলিংয়ে হতভম্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬১তে অল আউট করে হেসেছে বাংলাদেশ। ৪ বছর পর তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে (৭-০-২৭-৩)  ৮ বছর আগে গায়ানার আবহ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২শ’র নিচে স্কোর এটাই প্রথম দ.আফ্রিকার। এমন একটি দিনে মুস্তাফিজুরের ১০-১-৩৮-৩, রুবেলের ৯-২-৩৪-২ অবদানও কিন্তু কম নয়। জানেন এমন এক ম্যাচে ২৭০ বলের মধ্যে ১৭৫টিই ডট! দ.আফ্রিকাকে ১৬২ তে ফিরিয়েও কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য ছিল শংকা। ২শ’র নিচে প্রতিপক্ষদের গুটিয়ে ফেলার পরও অতীতে ৭ ম্যাচ হারের অতীত আছে বাংলাদেশের। যার মধ্যে গতবছর এই মিরপুরে শ্রীলংকাকে ১৮০ তে বেঁধে ১৩ রানে এবং ভারতকে ১০৫ রানে অল আউট করে ৪৭ রানে হার দুঃসহ স্মৃতি হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে কিছুটা সময়। অভিষেকে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেটে বিশ্বরেকর্ড করা রাবাদাকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে তামিমের প্লেড অন (৫) এবং সেই রাবাদার দ্বিতীয় ওভারে শর্ট বলে লিটনের বোল্ড আউটে (১৭) স্কোর শিটের চেহারা যখন ২৪/২, তখন শংকা পিছু নেয়াই যে স্বাভাবিক। তবে রাবাদাকে ফ্লিক শটে ওয়েলকাম বাউন্ডারিতে মাহামুদুল্লাহর ছন্দে ফেরা ইনিংসে পার্টনার সৌম্য’র বড় ইনিংস খেলার সুতীব্র বাসনায় তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৮ বলে ১৩৫ রানের পার্টনারশিপে জয়কে উৎসবমুখর করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ক্যারিয়ারের ৩য় ফিফটিকে সৌম্য টেনে নিয়েছেন নট আউট ৮৮ পর্যন্ত। ১৩টি চার এবং ১টি ছক্কার মধ্যে মরিস, ডুমিনি এবং ইমরান তাহিরকে পর পর ২ বলে ২টি করে বাউন্ডারি আছে তার। আছে মরিসের নো বলে প্রাপ্ত ফ্রি হিটকে ওয়ান বাউন্স বাউন্ডারি শট! ১২১ তম ওয়ানডে ম্যাচে ১৩তম ফিফটিটি মাহামুদুল্লাহ উদযাপন করেছেন অ্যাবটের শর্ট বলে বাউন্ডারিতে। পরের বলে শর্ট মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে থেমেছেন রিয়াদ (৫০), তখন জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে বাংলাদেশ। প্যাডটা খুলতে হয়নি, জয়টা উদযাপনে অপেক্ষা মাত্র ৩ মিনিট। ৮ বছর আগে গায়ানা ফিরে পাওয়া জয়টির মহাত্ম অনেক। কারণ, ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সেরা দলগুলোর মধ্যে ১৩৪ বল হাতে রেখে এমন জয়কে যে উপরেই রাখতে হচ্ছে।

    জাপান জুড়ে অব্যাহত প্রচন্ড গরমঃ সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বানঃ বিভিন্ন স্থানে মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত

    জাপানে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো প্রচন্ড গরম অব্যাহত রয়েছে। অনেক স্থানে মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থানে রোববার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। পশ্চিম হোক্কাইদো থেকে শুরু করে জাপান সাগর পর্যন্ত গরমের দাবদাহ চলছে।

    জাপানের আবহাওয়া বিভাগ সকলকে হিটস্ট্রোক থেকে সতর্ক থাকার উপদেশ দিয়েছে। তাইফুন ৯ এর প্রভাবে ব্যাপক ভাবে উচ্চচাপের বায়পূর্ণ অঞ্চল হতে ঘূর্ণায়মান বাতাসের প্রবাহ উত্তর এবং পূর্ব জাপানে বিস্তৃত হয়েছে। এর ফলে তোকাচি অঞ্চল এবং পূর্ব হোক্কাইদো ও জাপান সাগর সংলংগ্ন হনশু দ্বীপে তাপমাত্রা ব্যপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

    রোববার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো হোক্কাইদোর আশোরো এবং ওবিহিরো অঞ্চলে ৩৬.৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গুনমা প্রিফেকচারের তাতেবাইয়াশি’তে তাপমাত্রা ছিলো ৩৬, ফুকুই শহরে ৩৫.৫, হিয়োগো প্রিফেকচারের তোইয়োওকা’তে ৩৫.১, ফুকুশিমা ৩৪ নাগোয়া শহরে ৩৩ ডিগ্রি ছিলো। রাজধানী টোকিও’র কেন্দ্রস্থলে তাপমাত্রা ছিলো ৩২ ডিগ্রি।

    জাপানের আবহাওয়া বিভাগ সকলকে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্যে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দিয়েছে, সব সময় ঠান্ডা স্থানে অবস্থান করা, প্রচুর পানি বা তারল গ্রহণ করে নিজেকে আর্দ্র রাখার উপদেশ দিয়েছে।

    এদিকে তাইফুন ৯ এর প্রভাবে ওকিনাওয়ার দক্ষিণ থেকে প্রবাহিত আর্দ্র উষ্ণ বাতাস চুগোকু-শিকোকু অঞ্চলে এসে অস্থিতিশীল বায়ুমন্ডলীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ফলে সে সব অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সোমবারও এ সকল স্থানে অনুরূপ অস্থিতিশীল বজায় থাকতে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সকল স্থানে প্রবল বর্ষণ থেকে ভূমিধস, বন্যা ও নদী প্লাবন দেখা দিতে পারে।

    বিদায় রমযান, বিদায় ঈদ : কী পেলাম, কী হারালাম

    রমযান মাস পুরোটাই কল্যাণ ও বরকতের মাস। এই মাস আমাদের উপর মেঘমালার মতো সুশীতল ছায়া দান করছিল, এ মাসের রোযা তাকওয়ার অনুশীলন দান করছিল। মেহরাবগুলোতে হাফেয সাহেবদের সুমধুর তেলাওয়াতের ধ্বনি, যা মূলত মুমিনদের উদ্দেশ্যে রাহমানুর  রাহীমের আহবান, মস্তিষ্ককে সুশোভিত আর অন্তঃকরণকে আলোকিত করছিল, তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ, যিকির ও দুআ অন্তরকে আল্লাহর নৈকট্যের অনুভূতিতে সিক্ত এবং চোখ থেকে খোদাভীতির অশ্রু ঝরাচ্ছিল।

    দেখতে দেখতেই এই ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তি ঘটল। যেন ইবাদতের সেই বিশেষ রুখ পরিবর্তিত হল এবং ১ শাওয়ালে রোযা নয়, ইসলামী শিক্ষা মোতাবেক ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নির্দেশ এল এবং এরই মাধ্যমে বান্দা তার গোলামির পরিচয় তুলে ধরার নির্দেশ পেল।

    শাওয়ালের ২ তারিখ থেকে এক বছরের জন্য এই দুই নেয়ামত রমযান ও ঈদ আমাদের কাছ থেকে চলে গেল। যদি হায়াত পাই আর আল্লাহ তাআলার তাওফীক হয় তাহলে পুরো এক বছর পর আবার এই দু্ই নেয়ামত আমরা ফিরে পাব।

    এ পর্যায়ে একজন মুমিনের ভেবে দেখা উচিত যে, রমযান ও ঈদ থেকে সে কী পেল এর কী কী প্রভাব ও ক্রিয়া অন্তর ও মস্তিষ্কে, বোধ ও বিশ্বাসে, কর্ম ও চরিত্রে অবশিষ্ট রইল এবং রমযানের বিদায়ে কী কী খায়ের-বরকত সে হারাল।

    এটা বাস্তব যে, যে ব্যক্তি রমযানের হক যত বেশি আদায় করেছে, রমযানের আদবসমূহের প্রতি যত বেশি যত্নবান থেকেছে সে তার কর্মজীবনে রমযান ও ঈদের প্রভাব ও ক্রিয়া ততবেশি অনুভব করবে। আর যে ব্যক্তি ত্রুটি করেছে সে তার ত্রুটির মাত্রানুপাতে প্রভাব ও ক্রিয়াতেও ত্রুটি উপলব্ধি করবে।

    রমযানের সবচেয়ে বড় প্রভাব (যদি রোযা রাখা হয়ে থাকে এবং রোযাকে গুনাহমুক্ত রাখা হয়ে থাকে) তাকওয়া, যা বান্দাকে প্রতিমুহূর্তেই রাহনুমায়ি করে, কল্যাণের দিকে আহবান করে, কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং অকল্যাণের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। অকল্যাণ থেকে বিরত থাকার তাগিদ সৃষ্টি করে। তাকওয়ায় পরিপূর্ণ অন্তর নসীহত দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয় এবং সামান্য সতর্ক করার দ্বারা অমঙ্গলের পথ থেকে ফিরে আসে।

    আমরা যদি রমযান ও রোযার পুরো হক আদায় না করে থাকি তাহলে তাকওয়ার সেই বিশেষ স্তর আমাদের অর্জিত হয়নি। তবুও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা, প্রতিটি মুমিনের অন্তরে সামান্য পরিমাণে হলেও তাকওয়ার স্ফুলিঙ্গ অবশ্যই থাকে। আর রোযার মাধ্যমে তাতে কিছু না কিছু বৃদ্ধি অবশ্যই ঘটে থাকে। এখন যদি তা সযত্নে লালন করা হয় এবং সে মোতাবেক ধীরে ধীরে আমল করা হয় তাহলে এগুণ দৃঢ়তর এবং উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকবে। গুণাবলি ও যোগ্যতাসমূহের এটাই সহজাত নিয়ম এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টিকারী সৎগুণাবলির ব্যাপারে একথা অধিক সত্য এবং অধিক প্রযোজ্য।

    আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে নিজেই ইরশাদ করেছেন, আমার বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা রাখে আমি তার সাথে সেরূপ আচরণ করি এবং বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গী হই। যদি সে আমাকে একাকী স্মরণ করে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। যদি সে আমাকে জামাতে সমবেতভাবে স্মরণ করে আমিও তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জামাতে স্মরণ করি। যদি বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হই তাহলে আমি তার দিকে চার হাত অগ্রসর হই। আর যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।-সহীহ মুসলিম ২/৩৪১

    এখন যদি অন্তরে কোনো নেক কাজের আগ্রহ সৃষ্টি হয় বা নেক কাজের দিকে অন্তর ধাবিত হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রভাব। এর কদর করতে হবে এবং কালবিলম্ব না করে এই আগ্রহ মোতাবেক আমল করতে হবে। তেমনিভাবে কোনো গুনাহর ব্যাপারে যাতে আমরা দুর্ভাগ্যবশত লিপ্ত রয়েছি, যদি অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি হয়, তা পরিহার করার তাগাদা যদি অন্তরে উপলব্ধি হয় তাহলে বুঝতে হবে এটা অন্তর্নিহিত তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রভাব। এর কদর করা এবং সাথে সাথেই সে গুনাহ পরিত্যাগ করত খাঁটি মনে তাওবা করে নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে কালবিলম্ব করা এজন্যও ভয়াবহ যে, দুর্বল তাকওয়ার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং বার বার অন্তরের এরূপ আগ্রহকে কদর না করলে তা আরো দুর্বল হয়ে যায়, যা একজন মুমিন বান্দার জন্যে খুবই দুভার্গ্যের বিষয়।

    মোটকথা, তাকওয়ার গুণ যার যতটুকুই অর্জিত হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণ করা, সযত্নে তা লালন করা করে সেটি আরো শক্তিশালী করাই হবে রমযানের নেয়ামতের যথার্থ হক ও শোকর আদায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে  তাওফীক দান করুন। আমীন।

    আল্লাহর যেসব বান্দা রমযানের রোযাও রাখেনি এবং ঈদও ভিনজাতির মতো কেবল অনুষ্ঠান-সর্বস্বরূপেই পালন করেছে, রমযানের শেষ দশক, যা পুরো মাসের রূহ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় সময়, একেও যারা ঈদ-মার্কেটের পেছনে ক্ষয় করেছে, তাদের কাছে এখন রমযান ও ঈদের কিছু থেকে থাকলে আছে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আর জুতো এবং বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু গিফট আর ঈদ কার্ড!

    তেমনি যারা রমযানে জিনিসপত্রের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রোযাদারদের থেকে অন্যায়ভাবে অধিক মুনাফা লুটে সম্পদের পাহাড় গড়েছে অথবা বিতাড়িত শয়তানের শৃঙ্খলিত থাকা সত্ত্বেও যারা এই মুবারক মাসে অন্যায়-অপরাধ, দুর্নীতি-সন্ত্রাস ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিল-এদের জন্য এখনও পথ খোলা রয়েছে। রাববুল আলামীন অসীম দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর দয়ার দুয়ার সব সময় বান্দার জন্য খোলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত বাণীটি একটু হৃদয়ের কান দিয়ে শুনুন-আল্লাহ তাআলা রাতে তাঁর রহমতের হাত প্রসারিত করেন (বান্দার তাওবা কবুল করার জন্য উন্মুক্ত থাকেন) যাতে দিনের অপরাধী তওবা করে (কৃতকর্মের ব্যাপারে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে) এবং আল্লাহ তাআলা দিনে তাঁর রহমতের হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের অপরাধী তওবা করে। যত দিন না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয় (কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এ সুযোগ অবারিত)।-সহীহ মুসলিম ২/৩৫৮

    তাই কোনো রকম বিলম্ব না করে এই সূবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। খাঁটি মনে তওবা করে কল্যাণের পথে প্রত্যাবর্তন করা উচিত এবং আগামী রমযানের কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য নিজেকে প্রস্ত্তত করা উচিত।

    এ ব্যাপারে শেষ কথাটি হল, আমরা রমযান মাসে যেমন আল্লাহর বান্দা ছিলাম এখনও আল্লাহর বান্দা। তাই তখন যেমন গুনাহ পরিহারের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতাম, নামাযের প্রতি খেয়াল রাখতাম, জামাতের সাথে নামায আদায়ের চেষ্টা করতাম সে ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রাখা উচিত।

    গুনাহ যখনই করা হোক তা গুনাহ। তাই রমযান মাস চলে গেলে গুনাহর কাজে লিপ্ত হওয়া যায় এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। তাছাড়া নামায তো রোযার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ফরয এবং প্রতি দিনের আমল। ঈমান ও ইসলামের নিদর্শন। যে মুমিন অন্তত এটুকু চিন্তা করবে যে, নামাযের মাধ্যমে মাটি দ্বারা সৃজিত এই দুর্বল মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা ও মালিকের দরবারে হাজিরা দিতে পারছে, তার প্রিয় প্রেমাষ্পদ রহমান ও রহীমের সঙ্গে কথোপকথনে সক্ষম হচ্ছে, তার পক্ষে নামাযের ব্যাপারে কোনো শিথিলতা প্রদর্শন করা সম্ভব হবে না; বরং অতি দুর্লভ অথচ সহজপ্রাপ্তি ভেবে মনেপ্রাণে নামাযের ব্যাপারে যত্নশীল হবে।

     

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুন। নামাযের গুরুত্ব বোঝার এবং একে জানদার বানানোর প্রচেষ্টায় আমাদের নিয়োজিত রাখুন। আমীন ইয়া রাববাল আলামীন।

    ইওয়াতে প্রিফেকচারে . মাত্রার ভূমিকম্প

    শুক্রবার ভোরে ইওয়াতে প্রিফেকচারে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্প থেকে সুনামির কোনো ঝুঁকি নেই বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।

    দমকল বাহিনী জানিয়েছে প্রিফেকচারের রাজধানী মোরিওকা’তে ৭০ বছরের এক নারী ভূমিকম্পে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন এবং ৬০ বছরের অপর এক মহিলা কাঁধে আঘাত পেয়েছেন। তাদের কারো আঘাতই তেমন গুরুতর নয়।

    ভোর ৩টা ৩২ মিনিটে উপকূলের নিকট মাটির ৮৮ কিলোমিটার গভীর থেকে ভূমিকম্প আঘাত হানে। ০ থেকে ৭ মাত্রার জাপানি স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৫ এর কিছু কম।

    বিদায় রমযান, বিদায় ঈদ

    রমযান মাস পুরোটাই কল্যাণ ও বরকতের মাস; এই মাস মেঘমালার মতো আল্লাহর বান্দাদেরকে শীতল ছায়া দান করছিল; মেহরাবগুলোতে হাফেয সাহেবদের সুমধুর তেলাওয়াত, যা মূলত মুমিনের উদ্দেশ্যে রাহমানুর রাহীমের আহবান, হৃদয় ও মস্তিষ্কে আলো দান করছিল; যিকির ও দুআ এবং তেলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ, অন্তরকে আল্লাহর নৈকট্যের অনুভূতিতে সিক্ত করছিল এবং চোখ থেকে খোদাভীতির অশ্রু ঝরাচ্ছিল।

    দেখতে দেখতেই এই ধারাবাহিকতার সমাপ্তি ঘটল; যেন ইবাদতের এই বিশেষ রোখ পরিবর্তিত হল এবং পয়লা শাওয়ালে রোযার পরিবর্তে ইসলামী শিক্ষা মোতাবেক ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নির্দেশ এল এবং এরই মাধ্যমে বান্দা তার পরিচয় তুলে ধরার নির্দেশ পেল।

    শাওয়ালের ২ তারিখ থেকে এক বছরের জন্যে এই দুই নেয়ামত রমযান ও ঈদ আমাদের নিকট থেকে বিদায় নিল। যদি হায়াত পাই আর আল্লাহ তাআলার তাওফীক নসীব হয় তাহলে পুরো এক বছর পর আবার এই দুই নেয়ামত আমরা ফিরে পাব।

    এ পর্যায়ে একজন মুমিনের ভেবে দেখা উচিত, রমযান ও ঈদ থেকে তিনি কী আহরণ করলেন এবং এর কী প্রভাব তার হৃদয় ও মস্তিস্কে, বোধ ও বিশ্বাসে এবং কর্ম ও চরিত্রে অবশিষ্ট রইল। রমযান থেকে তিনি কী পেলেন এবং রমযানের বিদায়ে কী খায়ের-বরকত হারালেন।

    এটা বাস্তব সত্য যে, রমযানের হক যিনি যত বেশি আদায় করেছেন, রমযানের আদবসমূহের প্রন্তুি যিনি যত বেশি যত্নবান থেকেছেন তিনি তার কর্মজীবনে রমযান ও ঈদের প্রভাব তত বেশি অনুভব করবেন। পক্ষান্তরে যিনি যেমন ত্রুটি করেছেন ত্রুটির মাত্রানুপাতে প্রভাব ও ক্রিয়াতেও ত্রুটি উপলব্ধি করবেন।

    আমরা যদি রোযা ও রমযানের পুরা হক আদায় করে থাকি তাহলে রমযানের সবচেয়ে বড় প্রভাব (যদি রোযা রাখা হয়ে থাকে এবং রোযাকে গুনাহমুক্ত রাখা হয়ে থাকে) তাকওয়া; যা বান্দাকে প্রতি মুহূর্তে পথনির্দেশ দান করে; বান্দাকে কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং অকল্যাণের প্রতি বিরূপ করে। তাকওয়াপূর্ণ অন্তর নসীহত দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয় এবং সামান্য সতর্ক করার দ্বারা অমঙ্গলের পথ থেকে ফিরে আসে।

    আর যদি রমযানের পুরা হক আদায় না করে থাকি তাহলে তাকওয়ার সেই বিশেষ স্তর আমাদের অর্জিত হয়নি। তবুও নিরাশ হওয়ার কিছুই নেই। কেননা প্রতিটি মুমিনের অন্তরে সামান্য পরিমাণে হলেও তাকওয়ার স্ফুলিঙ্গ অবশ্যই থাকে; আর রোযার মাধ্যমে তাতে কিছু না কিছু বৃদ্ধি অবশ্যই ঘটে থাকে। এখন যদি তা লালন করা যায় এবং সে মোতাবেক ধীরে ধীরে আমল করা যায় তাহলে এই বৈশিষ্ট্য দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর এবং উজ্ঝল থেকে উজ্ঝলতর হতে থাকবে। গুণাবলি ও যোগ্যতাসমূহের এটাই সহজাত নিয়ম। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টিকারী সৎগুণাবলির বিষয়ে এ কথা আরো বেশি সত্য।

    আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ করেছেন, ‘‘বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা রাখে আমি তার সাথে সেরূপ আচরণ করি এবং বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গী হই। যদি সে আমাকে একাকী স্মরণ করে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। যদি সে আমাকে জামাতে সমবেতভাবে স্মরণ করে আমিও তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জামাতে স্মরণ করি। যদি বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে চার হাত অগ্রসর হই। আর যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’’-সহীহ মুসলিম ২/৩৪১

    এখন যদি অন্তরে কোনো নেক কাজের আগ্রহ সৃষ্টি হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রভাব; এর কদর করতে হবে এবং বিলম্ব না করে এই আগ্রহ অনুযায়ী আমল করতে হবে। তেমনি কোনো গুনাহের বিষয়ে, যাতে আমরা দুর্ভাগ্যবশত লিপ্ত রয়েছি, অন্তরে যদি ঘৃণা সৃষ্টি হয় এবং তা পরিহার করার তাগাদা উপলব্ধি হয় তাহলে বুঝতে হবে এটা সেই অন্তনির্হিত তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রভাব। এর কদর করা এবং সাথে সাথেই সে গুনাহ পরিত্যাগ করে খাঁটি মনে তওবা করে নেওয়া জরুরি। এব্যাপারে বিলম্ব করা এজন্যেও ভয়াবহ যে, দুর্বল তাকওয়ার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং বার বার অন্তরের এরূপ আগ্রহকে অবহেলা করলে তা আরো দুর্বল হয়ে যায়; যা একজন মুমিনের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়।

    মোটকথা তাকওয়ার গুণ যার যতটুকু অর্জিত হয়েছে তা সংরক্ষণ করা এবং সযত্ন পরিচর্যার মাধ্যমে আরো শক্তিশালী করাই হবে রমযানের নেয়ামতের যথার্থ শোকর আদায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন, আমীন।

    আল্লাহর যেসব বান্দা রমযানের রোযাও রাখেনি এবং ঈদও পালন করেছে ভিনজাতির মতই অনুষ্ঠান-সর্বস্বরূপে; এবং রমযানের শেষ দশক-যা পুরো মাসের রূহ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ সময়, একেও যারা ঈদ-মার্কেটের পেছনে নষ্ট করেছে; তাদের কাছে রমযান এবং ঈদের চিহ্ন যদি কিছু থাকে তাহলে আছে নতুন ডিজাইনের পোশাক আর জুতো এবং বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে পাওয়া কিছু গিফ্ট আর ঈদ কার্ড !!

    তেমনি যারা রমযানে জিনিসপত্রের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রোযাদারদের থেকে অন্যায়ভাবে অধিক মুনাফা লুটে সম্পদের পাহাড় গড়েছে অথবা বিতাড়িত শয়তানের শৃঙ্খখলিত হওয়া সত্ত্বেও যারা এই মুবারক মাসে অন্যায়-অপরাধে ও দুর্নীতি-সন্ত্রাসে লিপ্ত ছিল- এদের সবার জন্যে এখনও পথ খোলা রয়েছে; আল্লাহ রাববুল আলামীন অসীম দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর দয়ার দুয়ার সব বান্দার জন্য খোলা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্মোক্ত বাণী একটু হৃদয় দিয়ে শুনুন-

    ان الله عز وجل يبسط يده بالليل ليتوب مسيئ النهار ويبسط يده بالنهار ليتوب مسيئ الليل حتى تطلع الشمس من مغربها.

    ‘‘আল্লাহ তাআলা রাতে তাঁর রহমতের হাত প্রসারিত করেন (বান্দার তওবা কবুল করার জন্যে উন্মুক্ত থাকেন) যাতে দিনের অপরাধী তওবা করে (কৃতকর্মের ব্যাপারে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে) এবং আল্লাহ দিনে তাঁর রহমতের হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের অপরাধী তওবা করে; যত দিন না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয়। (কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এ সুযোগ অবারিত)।’’-সহীহ মুসলিম ২/৩৫৮

    তাই বিলম্ব না করে এই সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত; খাঁটি মনে তওবা করে কল্যাণের দিকে প্রত্যাবর্তন করা উচিত এবং আগামী রমযানের কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্যে নিজেকে প্রস্ত্তত করা উচিত।

    এ বিষয়ে শেষ কথা এই যে, রমযান মাসে আমরা যেমন আল্লাহর বান্দা ছিলাম এখনও আল্লাহর বান্দা। তাই তখন যেমন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দিতাম, নামাযের দিকে খেয়াল রাখতাম, জামাতের সাথে নামায আদায়ের চেষ্টা করতাম তা এখনও অব্যাহত রাখা উচিত।

    গুনাহ  যখনই করা হোক তা গুনাহ। তাই রমযান মাস চলে গেলে গুনাহর কাজে লিপ্ত হওয়া যায়-এই চিন্তা

    পরিহার করতে হবে। আর নামায তো রোযার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ফরয এবং প্রতিদিনের আমল। ঈমান ও ইসলামের নিদর্শন। যে মুমিন অন্তত এটুকু চিন্তা করবে যে, নামাযের মাধ্যমে মাটির মানুষ তার খালিক ও মালিকের দরবারে হাজিরা দিতে পারছে, তার প্রিয় রহমান ও রহীমের সঙ্গে কথোপকথনে সক্ষম হচ্ছে, তার তো নামাযের বিষয়ে শিথিলতা করা সম্ভব হবে না; বরং অতি দুর্লভ অথচ সহজপ্রাপ্তি ভেবে মনেপ্রাণে নামাযের বিষয়ে যত্নবান হবে।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সত্য উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুন নামাযের গুরুত্ব বোঝার এবং একে জানদার বানানোর চেষ্টায় আমাদেরকে নিয়োজিত রাখুন, আমীন।

    ছাড়া পেলেন টয়োটার সাবেক নির্বাহী জুলি হ্যাম্প

    টোকিওর প্রসিকিউটররা টয়োটা মোটর’র সাবেক নির্বাহী জুলি হ্যাম্প’র বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সন্দেহ করা হচ্ছিলো তিনি অবৈধ ভাবে নিষিদ্ধ ড্রাগ আমদানি করেছেন।

    গ্রেপ্তার করার প্রায় ৩ সপ্তাহ পর বুধবার তাকে মুক্তি দেয়া হয়। জুনের ১৮ তারিখ আন্তর্জাতিক ডাকের মাধ্যমে ৫৭টি বড়ি চোরাচালান করার সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

    তদন্তকারীরা বলছেন বড়ি গুলোতে অক্সিকোডোন নামের এক ধরনের মাদক ছিলো।

    টোকিওর প্রসিকিউটররা হ্যাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে তিনি সেগুলো আনেননি কারণ তিনি হাঁটুর ব্যাথার জন্যে বড়ি গুলো কিনেছিলেন। এক সপ্তাহ আগে টয়োটা হ্যাম্পের পদত্যাগের কথা জানায়। ৫৫ বছর বয়সী আমেরিকান ছিলেন টয়োটার প্রথম মহিলা ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা।

    Untitled Post

    Posted by admin on July 7
    Posted in Uncategorized 

    সাকিবের ওপর নির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ দল

    সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের স্পটলাইটটা এখন সৌম্য সরকারের দিকে। বিশ্বকাপ থেকে ব্যাটিংয়ে তার আগ্রাসী মেজাজটাই বাংলাদেশের চেহারা দিয়েছে বদলে। ১৩টি ওয়ানডে ইনিংসে গড়টাও তার ঈর্ষণীয়, ৪০.৫৮। অথচ, ওয়ানডের আক্রমণাত্মক টপ অর্ডার ক্যারিয়ারের প্রথম ২টি টি-২০তে মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে। রাবাদার বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে গত পরশু করেছেন মারাত্মক ভুল। ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে অপরিনামদর্র্শী শটে শুধু নিজেই আউট হননি, তার ওই আউটেই লড়াই থেকে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। দ. আফ্রিকার কাছে সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে (৫২ রানে) হেরে যাওয়ায় অপরাধবোধে তাড়িত এই বাঁহাতি ওপেনারÑ ‘সবাই বুঝছে, আমিও বুঝছি, আমার জন্য একটু খারাপই হচ্ছে। আমি থিতু হয়ে আউট হচ্ছি, এটা আমার চেয়ে দলের জন্যই বেশি খারাপ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমি অনেক কাজ ও পরিকল্পনা করছি।’  প্রথম ম্যাচে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারার মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ দল, তার জন্য অনুতপ্ত এই টপ অর্ডারÑ ‘সব কিছুই স্বাভাবিক ছিল। পরিকল্পনা ছিল, প্রথম ৬ ওভারের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ রান করে রাখলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। এই পরিকল্পনা নিয়েই চেজ করতে নেমেছিলাম। তবে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। শুরুতেই দুটি উইকেট হারিয়েছি। শুরুতে এই ধাক্কা খাওয়ার কারণে আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ফিল্ডিং, বোলিংয়ে সফল হয়েছে। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ব্যাটিং করতে পারলে হয়তোবা ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে আসতে পারতো।’ ১৪৯ রান চেজ করতে নেমে প্রোটিয়া অফ স্পিনার ডুমিনি এবং বাঁ হাতি স্পিনার ফাঙ্গিসো কেন ভয়ংকর হয়ে উঠবে? নিজেদের চেনাজানা স্পিন ফ্রেন্ডলি উইকেটে নিজেরাই উল্টো ফাঁদে পড়বে? এ প্রশ্ন সৌম্যর। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের মাঝপথে উইকেটে বাড়তি টার্ন পাওয়ায় পরিস্থিতিটা বদলে গেছে বলে মনে করছেন সৌম্যÑ ‘শুরুতে কিন্তু উইকেটে ততটা টার্ন ছিল না। যখন মুশফিক ভাই আউট হয়ে গেছে বা আমাদের একটু বেশি উইকেট পড়ে গেছে তখন আমরা পিছিয়ে গেছি। ঐ সময়ে উইকেটে একটু টার্ন বেশি ছিল। ব্যাটসম্যানরা চাপে থাকলে আর কন্ডিশন বোলারদের পক্ষে থাকলে এটা হতে পারে। ’ টি-২০তে টপ অর্ডারদের ভূমিকা একটু বেশি। সিরিজের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর তা উপলব্ধি করছেন সৌম্যÑ ‘সাকিব ভাই শেষ করে এলে বা দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের কেউ একজন শেষ করে আসতে পারলে ভালো হতো। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরা যদি বড় জুটি গড়ে দিয়ে আসতে পারতাম তাহলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য ম্যাচটা হাতে নেয়া সহজ হতো।’ টি-২০তে বাংলাদেশের একমাত্র স্পেশালিস্ট ক্রিকেটার সাকিব। তবে আইপিএল, বিগ ব্যাশ এবং সিপিএল’র পারফর্মার সাকিবের উপর বাংলাদেশ দল এখন নির্ভরশীল, তা মানতে নারাজ সৌম্যÑ ‘টি-২০তে সাকিব ভাই অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সব জায়গাতেই খেলেন। তবে আমরা উনার ওপরই নির্ভরশীল তা কিন্তু নয়। এখন সবাই পারফর্ম করছে বলেই আমাদের ফল ভালো হচ্ছে। উনি ভালো খেললে দলের জন্য অনেক ভালো কিছু আসে, কেননা উনি সব দিক দিয়েই অনেক শক্তিশালী।’ আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেট খেলেছেন মাত্র ২টি। এই দু’ম্যাচেই সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটের রসায়নটা জেনে গেছেন সৌম্য সরকার। টি-২০ ক্রিকেটে স্কিলের সঙ্গে মানসিক শক্তিটাও যে জরুরি, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে না পেরে সেই তাগিদা অনুভব করছেন সৌম্যÑ ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা মানসিক দিক থেকে অনেক কঠিন। গায়ের শক্তির চেয়ে মানসিক শক্তি দিয়ে অনেক বেশি খেলতে হয়। সব সময় হিসাব-নিকাশ করে খেলতে হয়। এটা যত বেশি খেলা যায় তত ভালো। আমাদের খেলা কম হচ্ছে, এটা বাড়ানো হলে আমাদের দলের জন্য ভালো হবে।’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাতে গোনা টি-২০ খেলার সুযোগ, ঘরোয়া ক্রিকেটেও টি-২০’র চর্চা নেই তেমন। সংক্ষিপ্ততম ভার্সনের ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলে আত্মপ্রকাশে পর্যাপ্ত সংখ্যক টি-২০ খেলার দাবি সৌম্যরÑ ‘আমরা সব সময় খেলার ভেতরে থাকতে চাই, তা যে ফরম্যাটই হোক। টি-২০ হলেও ভালো। যদি আমরা এখানে আরও উন্নতি করতে চাই, আমাদের আরও টি-২০ খেলানো উচিত।’একটানা ক্রিকেটে থাকায় আজ টি-২০ সিরিজের শেষ ম্যাচকে সামনে রেখে অনুশীলন করেনি বাংলাদেশ দল। সকালে টিম মিটিং শেষ করেই ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ক্রিকেটারদের ছুটি দিয়েছেন। সাড়ে ১১টার পর হোটেল সোনারগাঁও থেকে যে যার মতো বেরিয়েছেন। ব্যতিক্রম কেবল মুশফিকুর রহিম ও লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন। দলের অন্যরা যখন বেরিয়েছেন ঘুরতে, তখন হোটেল থেকে বেরিয়ে জুবায়েরকে সঙ্গে নিয়ে মুশফিকুর গেছেন হোম অব ক্রিকেট শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। ইনডোরে জুবায়েরের বলে প্রায় ঘণ্টাখানেক ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন মুশফিক। জুবায়ের ছাড়াও অনুশীলনে নেট বোলার পেয়েছেন মুশফিকুর। সংবাদ সম্মেলনের জন্য সৌম্যকে প্রস্তুত রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

    ইউনেস্কো হ্যারিটেজ মর্যাদা পেলো মেইজি শিল্প বিপ্লব সাইট

    ইউনেস্কো’র একটি প্যানেল কয়েকটি শিল্প এলাকার সমন্বয়ে গঠিত একটি জাপানি শিল্প সাইটের গ্রুপকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

    রোববার জার্মান শহর বন এ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ৮টি প্রিফেকচারের ২৩টি সাইটকে এর ভেতর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

    এসব সাইট গুলো জাপানের শিল্প বিপ্লবের গোড়ার দিককার স্থান। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর গোড়াতে মেইজি সময়ে জাপানের যে শিল্পয়োন্নয়্ন ঘটে এসব স্থান গুলো সেগুলোর সাক্ষী বহন করে চলেছে।

    প্যানেল স্বীকার করে সাইট গুলো একটি অ-পশ্চিমা দেশে পশ্চিম থেকে শিল্পায়নের প্রথম সফল বিস্তার। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সমন্বয় জটিল হয়ে ওঠায় চুড়ান্ত আলোচনা রোববার পর্যন্ত একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

    দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা দাবি করেন কোরিয়ানদেরকে এসব সাইট গুলোকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আনা হয়েছিলো।

    দক্ষিণ কোরিয় সরকারের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদেরকে বলেন প্যানেলের চুড়ান্ত বৈঠকে তারা জাপানের সাথে মতৈক্যে পৌঁছেছেন।