বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাবি ও বুয়েট

বিশ্বসেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে দেয়। প্রতিবছর বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। সংস্থাটির প্রকাশিত তালিকাকে বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য র‌্যাঙ্কিংগুলোর একটি বলে মনে করা হয়।

‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ২০২১’ শীর্ষক এই র‌্যাঙ্কিংয়ে এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। তালিকার ৫০০-এর পরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রকাশ করা হয় না এই র‌্যাঙ্কিংয়ে। গতবারের জরিপেও একই অবস্থানে ছিল দেশের এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮০১-১০০০ তম অবস্থানে জায়গা পেল ঢাবি ও বুয়েট। এর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই র‌্যাঙ্কিংয়ে স্থান পেয়েছিল। ওই বছরের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৭০১-৭৫০ মধ্যে। গত দুই বছর তা পিছিয়ে ৮০১-১০০০তম অবস্থানে চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ওই তালিকায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ২১টি ও পাকিস্তানের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিয়েছে। সার্কভুক্ত অন্য ৫টি দেশ থেকে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় স্থান পায়নি। এশিয়া থেকে অন্যদের মধ্যে চীনের ৫১টি, জাপানের ৪১টি, মালয়েশিয়ার ২০টি, সৌদি আরবের ১০টি, ইরানের পাঁচটি, ইসরায়েলের ছয়টি ও সিঙ্গাপুরের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ইউরোপ থেকে অন্যদের মধ্যে জার্মানির ৪৫টি, ইতালির ৩৬টি, ফ্রান্সের ২৮টি, নেদারল্যান্ডসের ১৩টি ও ফিনল্যান্ডের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে এই তালিকায়। কিউএসের এই র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে পাঁচটিসহ মোট ১৫১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। শীর্ষ দশে চারটিসহ যুক্তরাজ্যের মোট ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এই তালিকায়।

এই র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়টি সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান নিরূপণ করা হয়। এগুলো হলো একাডেমিক খ্যাতি (একাডেমিক রেপুটেশন), চাকরির বাজারে সুনাম (অ্যামপ্লয়ার রেপুটেশন), শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত (ফ্যাকাল্টি-স্টুডেন্ট রেশিও), শিক্ষকপ্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতি (সাইটেশনস পার ফ্যাকাল্টি), আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত (ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি রেশিও) ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাত (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রেশিও)। ছয়টি সূচকের মোট স্কোর ১০০। এর মধ্যে একাডেমিক সুনামে ৪০, চাকরির বাজারে সুনামে ১০, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে ২০, শিক্ষকদের গবেষণার উদ্ধৃতিতে ২০ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাতে ৫ করে স্কোর থাকে। তালিকায় থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের স্কোর প্রকাশ করেনি কিউএস।

তালিকায় শূন্যতার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের কাছে গবেষণার চাইতে পদের স্বাদটা বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন গবেষণার চাইতে পদ গুরুত্ব হয়ে ওঠে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়।’

গবেষণা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন শিক্ষকরা নিজেদের গবেষণা পড়ে না, কোন সমালোচনা করে না। এতে অন্য একজন শিক্ষক কখনো উৎসাহিত হয় না। এসবের কারণে গবেষণা হার কমে যাচ্ছে।’ এ সময় শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, যেসকল প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রকাশ করে তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এসব র‌্যাঙ্কিংয়ে নির্ধারণ করে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বাস করে না। তিনি দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগের চাইতে ভালো করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ গবেষণার প্রতি আগের চাইতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকরা এখন বিশ্বের সেরা-সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি আনছেন। সেজন্য টিচিং কোয়ালিটি নিম্নগামী হবার বিষয়টির সঙ্গে একমত হবার কারণ নেই।