প্রযুক্তিতে বদলে যাচ্ছে বিশ্ব
পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও
আমাদের দেশেও দিন দিন বাড়ছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে আজকের প্রজন্ম। গোটা দুনিয়াটাকে অনুমিত হচ্ছে হাতের মুঠোয় মার্বেলের চেয়েও ছোট কিছু! হাতে হাতে অপার প্রযুক্তির সৃষ্টির সম্ভার। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী শহর চলছে প্রযুক্তির হাত ধরে। অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির সমপ্রসারণ হচ্ছে ব্যাপক হারে। স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত সবার জীবন বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। আগে অজপাড়া গাঁ বলতে যা বুঝানো হতো তা এখন আর দেখা যায় না গ্রামাঞ্চলে। ঘরে ঘরে আজ প্রযুক্তির ছোঁয়া। আগামী বছরগুলোতে এই গতি আরও বাড়বে। তখন পৃথিবীর চেহারা বদলে যাবে। আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনাচারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে।
মোবাইল ফোন যবনিকা ঘটিয়েছে চিঠি-ঘড়ি-টর্চলাইট যুগের। টেরিস্টরিয়াল বা ডিস লাইনে টিভির পতন ঘটাচ্ছে তারহীন ডিটিএইচ। অললাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিংয়ের দ্রুত প্রসার প্রতিটি বাড়িতে জীবন ধারা বদলে দিয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব বিনোদনের দুনিয়া বদলে দিয়েছে। সময়ের পরিবর্তন ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে মানুষের পছন্দ এবং খাদ্যাভ্যাস। যেমন বদলে গেছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবন ব্যবস্থা। অনেকের ঘরের খাবারের চেয়ে বেশি পছন্দ হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার আর ফাস্টফুড। তাদের জন্য ফুডপান্ডা জাতীয় সরবরাহ প্রতিষ্ঠান অনিবার্য হয়ে উঠেছে। অ্যামাজান ও গুগলের পর ভার্চুয়াল সহকারীকে ডিভাইসের মাধ্যমে এনেছে আলিবাবা। আছে দারাজের মত বহু অনলাইন শপিং অ্যাপস। কোন কিছু চাহিবা মাত্র পাওয়া যাবে। আর এই অনলাইন মার্কেটিংয়ের প্রভাব এতটাই যে বিশ্বের সব খুচরা শপগুলোর শাটার টানতে হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপ বিশ্লেষণী সংস্থা ‘অ্যাপ অ্যানি’র তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে ১২ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছেন। স্মার্টফোনে কথা বলার চেয়ে জিফ, ইমোজি, ভিডিও কলকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন মানুষ। মানি ব্যাগে এখন মানি রাখার বদলে থাকে ক্রেডিট কাডর্, ট্রাভেল কার্ড।
আধুনিক যান্ত্রিক প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে কৃষিকে। জমি কর্ষণ থেকে ফসল লাগানো, ফলানো, কাটা, বাজারে আনা পর্যন্ত সব কিছু করছে যন্ত্র। ড্রোন এনেছে বিপ্লব। দুর্গম এলাকায় চিকিত্স সেবা দিচ্ছে। জেলেরা সাগরে মাছ ধরছে আধুনিক প্রযুক্তিতে। অনলাইনেই আছে গোটা পৃথিবীর আদ্যপান্ত। ইন্টারনেটে গুগলে সন্ধান করলেই চাহিবা মাত্র সব পাওয়া যায়। কাগজের বইয়ের জায়গা নিচ্ছে ইলেক্ট্রনিক বুক (ই-বুক)। কোন কিছু সন্ধানের পরিবর্তে এখন হাতের মুঠোয় গুগল, মজিলার মত অসংখ্য সার্চিং সাইট। যেখানে একটি শব্দ লিখে সার্চ করলে মিনিটে উদ্ভাসিত হয় তথ্যভান্ডার। পাঠ্যপুস্তক, লাইব্রেরি স্টকে থাকা বস্তা বস্তা বই পড়তে অতটা ধৈর্য্য নেই এই প্রজন্মের অনেকের। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম এখন অনলাইনে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকান্ড, নিবন্ধন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, নোটিশ, চাকরি নিবন্ধন থেকে শুরু করে যেকোন বার্তা অনলাইনের মাধ্যমে সেরে নেওয়া হচ্ছে।
মোবিক্যাশ, বিকাশ, রকেট, মাইক্যাশ, ইউক্যাশ এর মত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় আজকের মানুষদের টাকা-পয়সা নিয়ে ঝুঁকিতে শংকিত থাকতে হয় না। সামান্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সিমের একটি নম্বরে আজকের প্রযুক্তি মানুষকে বহু টাকার রাখার গোপনীয় ব্যবস্থা দিয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইন মানি ট্রান্সফার এবং এক দেশ থেকে অন্যদেশের টাকা স্থানান্তরের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনলাইন, ই-ব্যাংকিং (যেমন- ওয়েস্টার্ন মানি ট্রান্সফার, মানি একপ্রেস) এর মতো সুবিধা ভোগ করছে এখন মানুষ। রয়েছে নানা অ্যাপ। গাড়ি ডেকে পাঠাতে, খাবার অর্ডার করতে, গান শুনতে, কোনো কিছু কিনতে, এমনকি সঙ্গী খুঁজতেও এখন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন মানুষ। বিনামূল্যের অ্যাপ ব্যবহারের পাশাপাশি পয়সা খরচ করেও অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন অনেকে।
স্মার্টফোন আসার পর বদলে গেছে অনেক কিছুই। মানুষ এখন আগের উপায়ে অনেক কাজ না করে, নতুন বিকল্প উপায় খুঁজে নিতেই পছন্দ করেন বেশি। মানুষ এখন আর আগের মতো ফোনে কথা বলতে পছন্দ করেন না। গবেষণা সংস্থা ইমার্কিটারের তথ্য অনুযায়ী, মানুষ এখন সোফায় বসে সরাসরি সমপ্রচার দেখেন কম, স্মার্টফোন চালান বেশি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টিভি বিজ্ঞাপনের আয়কে ছাড়িয়ে গেছে মোবাইল বিজ্ঞাপনের আয়। ভিডিও কনফারেন্স ও নানা ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে সরকারি কাজ দ্রুত ও সহজ হয়ে গেছে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই মিলছে জরুরি সেবা। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ই-কমার্সের সেবা। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, টেলিভিশন ডিভাইসসহ বহু প্রযুক্তি জীবনকে অভাবনীয় করে তুলেছে। ১৬২৬৩ নম্বরে ডায়াল করে ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাচ্ছে চিকিত্সা পরামর্শ। এখন বিতর্ক চলে স্টিভ জবস, বিল গেটস নাকি এলন মাস্ত- প্রযুক্তি বিশ্বে কার প্রভাব বা অবদান বেশি।
বিশ্বের সর্ববৃহত্ ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস ওডেস্কের মতে, ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আউটসোর্সিং নগরী। প্রজন্মের চোখ এখন অনলাইনে। ক্যানালিস রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে পাঁচশ’ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহূত হচ্ছে। ২০১০ সালে বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩০ কোটি। ২০১৯ সালে ওই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটিতে। সবমিলিয়ে এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে বিশ্বে বর্তমানে মোট মানুষের চেয়ে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা ও সেবা।