হাগিবিসে লন্ডভন্ড জাপান মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই

জাপানে সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। শক্তিশালী ওই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কানাগাওয়া, টোচিগি, গানমা, মিয়াগি, সাইতামা, ফুকুসিমা, ইওয়াতে, চিবা, শিজুকা এবং ইবারাকি এলাকায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে সৃষ্ট বৃহৎ ঘূর্ণিঝড়ে ১৬ জন নিখোঁজ রয়েছে, এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১৬৬ জন। জাপানের কেন্দ্রীয় অঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও ভূমিধস আঘাত হেনেছে। সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে। দেশজুড়ে ২৭ হাজার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার এসডিএফ (সৈন্য) উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। আমরা জনগণকে জন্য সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’ ‘টাইফুনের ব্যাপকতা কমে এলেও আমরা এখন বন্যার কবলে পড়েছি। সবাইকে সতর্কভাবে চলার অনুরোধ করছি।’

এর আগে জাপানের ইতিহাসে এমন প্রলয়ঙ্করী ঝড় দেখা যায় ১৯৫৮ সালে। সে বছর টাইফুন কানোগাওয়ার এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। রাজধানী টোকিও ও পূর্বাঞ্চলের ওপর ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়েছে সুপার টাইফুন হাগিবিস। প্রলয়ঙ্করী এই ঝড়ের তান্ডবে টোকিওর কিছু অংশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জাপানের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচার মাধ্যম এনএইচকে বলছে, সুপার টাইফুন হাগিবেসের তান্ডবে নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ১৬ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো দেড় শতাধিক মানুষ। জাপানের মধ্য এবং পূর্বাঞ্চলের নিচু এলাকার ওপর দিয়ে এই ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এতে এসব অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঝড়ের তান্ডবে টোকিও ও এর আশপাশের এলাকার প্রায় ৫ লাখ বাড়িঘর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এনএইচকে বলছে, টোকিওর নারিতা ও হানেদা বিমানবন্দরে বিমানের উড্ডয়ন এবং অবতরণ বাতিল করা হয়েছে। এতে প্রায় ৮শ’ ফ্লাইটের ওঠা-নামার সূচিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত ৬০ বছরের মধ্যে এটাই জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে রাজধানী টোকিওর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ইজু দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভ‚মিধস আঘাত হানে। স্থানীয় উপক‚লরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, টোকিও উপসাগরে পানামার একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। এতে ১২ ক্রু সদস্য ডুবে মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের, সাতজন চীনের এবং দু’জন ভিয়েতনামের নাগরিক।

অপরদিকে স্থানীয় সময় রোববার সকালে অপর একটি জাহাজের চার ক্রু সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। খবরে বলা হয়, প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ শনিবার থেকে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। প্রায় ষাট লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করলেও এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। উদ্ধার তৎপরতা চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা আপাতত জরুরি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা লেবেল-৫ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। স্থানীয় কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে টোকিও সাগরে ১২ জন ক্রুসহ পানামানিয়ান নামের একটি কার্গো ডুবে যায়। গতকাল সকালে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও আরও ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। টেলিভিশন ফুটেজে নাগানো প্রদেশে চিকুমা নদীর আশে-পাশে বাড়িঘর জলমগ্ন দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বয়ে চলছে। সূত্র : এনএইচকে, কিওডো, বিবিসি, রয়টার্স।