বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে: আইএমএফ

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। উপকূলীয় অঞ্চলের ভাঙনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি হারাতে হতে পারে। ফলে খাদ্য উত্পাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। বাংলাদেশের ওপর আইএমএফের করা এ বছরের কান্ট্রি রিপোর্টে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টটি বুধবার প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা: জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ বিষয়ে একটি আলাদা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলা এবং প্রকৃতির বৈরিতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর অভিঘাত মোকাবিলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জলবায়ুর পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ছয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেলের পূর্বাভাসে বলা হয়, সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলে ভাঙনে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৭ শতাংশ ভূমি হারিয়ে যেতে পারে। এতে বসত হারানো মানুষের ভিড়ে শহরে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়বে।

আইএমএফের আর্টিকেল-৪ মিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করে ওয়াশিংটনে ফিরে তাদের মূল্যায়ন তৈরি করেন। সংস্থার নির্বাহী পর্ষদ সম্প্রতি এর ওপর আলোচনা শেষ করেছে। নির্বাহী পরিচালকদের মতামতের ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। এতে সামাজিক এবং পরিবেশগত ব্যয় কমবে। জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবিলায় আইএমএফের আরেক পরামর্শ হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়ানো। এতে কার্বন কর আরোপেরও সুপারিশ করেছে আইএমএফ। আইএমএফের মতে, জিডিপির ১০ শতাংশের কম রাজস্ব জলবায়ুর ক্ষতির মোকাবিলায় অবকাঠামোসহ বিশাল ব্যয় বহনের জন্য যথেষ্ট নয়।

কয়েকটি সূচকের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৮-২০১৭ সাল মেয়াদে চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনায় আক্রান্ত শীর্ষ দশ দেশের একটি বাংলাদেশ। এই ধরনের ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ১৯৯০-২০০৮ মেয়াদে আনুমানিক বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ। নির্দিষ্ট জ্বালানি পণ্যে ধারাবাহিকভাবে কার্বন ট্যাক্স চালুর বিষয়টি বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

প্রতিবেদনের আরেকটি অংশে আইএমএফ উল্লেখ করেছে, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে অগ্রগতি খুব সীমিত থাকা এ দেশের অর্থনীতির জন্য অন্যতম ঝুঁকি। দাতারা মানবিক প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছেন। তবে এ সম্পৃক্ততা ভবিষ্যতে কমে যেতে পারে। এ অবস্থা হলে বাংলাদেশের বাজেটের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ধীরগতি সামাজিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।